বাংল। সাহিত্যে স্বদেশগ্রেম

ভঃ শ্রীমতী অঞ্জলি কাজিলাল এম্‌. এ. পি-এইচ. ডি- অধ্যাপিকা শ্রীশিক্ষায়তন কলেজ, কলিকাতা, প্রাক্তন অধ্যাপিক! প্রসন্দেব উইমেন্স কলেজ, জলপাইগুড়ি

মভার্ণ বুক এজেন্সী প্রাইভেট লিমিটেড ১০১ বঙ্কি্ন চ্যাটার্জী স্ট্রাট কলিকাতা-৭.৬ ০৭৩

৪৮-5েতিপ ভর্ভীচার্ষ্য, বি. এ. অভার্ণ বুক এজেন্সী প্রাইভেট লিমিটেড ১০, বঙ্কিম চ্যাটার্জী ্রাট কলিকাতা-৭০০ ০৭৩

মুক্রীকর £ জীধীরেন্রশাথ বাগ নিউ নিরাল। প্রেস

৪, কৈলাস মুখার্জী লেন কঙসিকণতা-৭ ০৬০ ০৬০৬

পরম পৃঁজনীয় বাবা উ্রীজগদীশচজ্জ চক্রবর্তী

পরম পূজনীয়া মা শ্রীমতী শাস্তিময়ী চক্রবর্তী প্রীচরশেষু

ভূমিক।

আমার ছাত্রী কল্যাণীয়া শ্রীমতী অঞ্জলি কাঞ্জিলাল (চক্রবর্তী) কলিকাতা বিশ্ববিচ্ভালয়ে আমীর অধীনে পি-এইচ ভি উপাঁধির জন্য “উনবিংশ শতাব্দীর বাঁংল। সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম' বিষয়টি নিয়ে গবেষণা শুরু করে |

ছাত্রী-জীবন থেকেই দেখে আসছিলাম, শ্রমতী কাঞ্জিলালের মধ্যে কেবল মাত্র যে গতানুগতিক একটি সাহিত্য-প্রীতি ছিল. তাই নয়, স্াহিত। সমাজ-দর্শনের সে একজন প্রকৃত বোদ্ধা ছিল। সাহিত্যেরই হোক, কিংবা! সমাজ-নীতিরই হোক অনেক দুরূহ ধিষয়ও অতি সহজেই সে বুঝতে পারত ; সেইজন্য তার প্রতি আমার বিশ্বান ছিল, কারণ, আমি জানতাম যে, যে-বিষয়টি সে তার গবেষণার জন্য নির্বাচন করেছে, তা নিতান্ত সহজপাধ্য নয়

্ীযুক্ত প্রবোধচন্ত্র সেন এবং স্বর্গত ডঃ নীহাররঞরন রায় প্রমুখ বিশিষ্ট অধ্যাপকগণ তার গবেষণা-পত্র পরীক্ষা করে লেখিকাকে উচ্চ প্রশংসা করেন ত্বারাই গবেষণা- পত্রটি মুদ্রণের পরামর্শ দিয়েছিলেন তথাপি মুদ্রণ কার্যে অনেক বিলম্ব হয়ে গেছে। গবেষণা-গ্রস্থটি প্রকাশ করবার পূর্বে তার একটি ভূমিকা লিখে আমি আনন্দের সঙ্গে পাঠক সমাঙ্জে তাকে উপস্থিত করে দেবার ভার নিয়েছি

ইংরেজি 'প্যা্রিয়” এবং পাাট্রিয়টিজম্‌” শব্ধ ছুটির বাংলা কোনো প্রতিশব্দ নেই। সাধারণভাবে কাজ চালানোর মত দ্টো শব্দ আমর। তাদের জন্য ব্যবহার করি 'স্বদেশপ্রেমিক' এবং শ্বিদেশপ্রেম' কিন্তু “দেশপ্রেম কথাটি ইংরেজি 'প্যাট্রিয়টিজম্‌ কথাটি থেকে অনেক বিস্তৃত বা ব্যাপক অর্থবহ ; তার তুলনায় 'প্যাট্রিয়টিজম্‌” শবটির অর্থ অনেক সঙ্কীর্প। ইংরেজিতে 'প্যাটিয়ট” শব্দটির অর্থ যে ব্যক্তি স্বদেশের স্বাধীনতা রক্ষাকারী কিংব৷ তার অন্ধ সমর্থক। কিন্তু স্বদেশপ্রেম' শব্ঘটিতে কেবল মাত্র দেশের রাঁজনৈতিক স্বাধীনতার কথাই বলা হয় না, তার রাজনৈতিক স্বাধীনতা না থাকলেও আরো বহুবিধ কার্ষে স্বদেশের প্রতি প্রীতি ভালবাস! প্রকাঁশ পেতে পারে, তার জন্যও জীবন উৎসর্গ করবার দৃষ্টান্তও আছে, তাতে তাঁও বুঝায়। দীর্ঘকাল পরাধীন এই দেশে আমাদের স্বদেশের স্বাধীনতা৷ লাভের চিন্তা কিংবা কর্ম কোনটিই বেশীদিনের নয়, কিন্তু স্বদেশপ্রেম বু দিনের কোন আধুনিক রাজনৈতিক চিন্তাধারার সঙ্গে যুক্ত হবারও বহু পূর্ব থেকেই স্বদেশপ্রেম আমাদের জীবনে সত্য হয়েছিল

স্বদেশপ্রেমের মধ্যে দীর্ঘকাল যাবং রাজনৈতিক চিন্তার কোনো স্থানই ছিল না। জননীর সঙ্গে জন্মভূমির তুলনা করার মধ্য দিয়েই এই বিষয়টি বুঝতে পারা মবাচ্ছে

চু

গর্ভধারিনী জননীর সঙ্গে যেমন কোন রাজনৈতিক ধ্যানধারণার * সম্পর্ক নেই, জন্মভূমি বা দেশের মাটির সঙ্গেও তেমন বহুদিন পর্যন্ত আমাদের কোন রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। ক্রমে বহুকাল পর জাতীয় চেতন! উন্মেষের লগ্নে জন্মভূমির সঙ্গে যখন রাজনৈতিক চেতনা এসে যুক্ত হল তখন থেকেই জননী জন্মভূমি একাকার হয়ে গেল। তার পূর্ব পর্যস্ত জননী এবং জন্মভূমি নিজেদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করেই বর্তমান ছিল। রাজনৈতিক চেতন জন্মলাভ করবার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের দেশে মাতৃভূমির চেতনাও জন্মলাভ করল, ক্রমে এই ভাবন। সাহিত্যের মধ্যে প্রবেশ করে তা একটি ভাবযৃতি গড়ে তুলল। য] ছিল প্রত্যক্ষ, তা অপ্রত্যক্ষ ভাবাদর্শে পরিণত হল। ষাতৃভূমি হলেন বঙজননী, ক্রমে তিনিই ভারতমাঁতা হলেন। তাতে রাজনৈতিক আন্দোলন দেশব্যাপী একটি অখণ্ড এবং সংহত রূপ পেল সত্য, কিন্ত যে প্রত্যক্ষ জননী এবং জন্মস্ূমিকে আশ্রয় করে একদিন সমাজে শ্রদ্ধা এবং ৫রমের বাস্তব ভাঁবনা গড়ে উঠেছিল, তা কেবল মাত্র ভাবমৃতির উপাঁসনা করতে গিয়ে শক্তিহীন হয়ে পড়ল-_ কারণ তা নিরাকার আদর্শ

রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “আইডিয়। যত বড়োই হউক, তাহাকে উপলদ্ধি করিতে হইলে একটা নিদিষ্ট স'মাবদ্ধ জায়গায় প্রথম হস্তক্ষেপ করিতে হইবে | তাহ। ক্ষুত্র হউক, দীন হউক, তাহাকে লঙ্ঘন করিলে চলিবে না দূরকে নিকট করিবার একমাত্র উপায় নিকট হইতে সেই দূরে যাওয়া ভারতমাতা যে হিমালয়ের দুর্গম চূড়ীর উপরে শিলাসনে বসিয়া কেবলই করুণ হরে বীণা বাজাইতেছেন, কথা ধ্যান করা নেশ! করা মাত্র। কিন্তু ভারতমাঁতা যে আমাদের পল্লীতে পঙ্কশেষ পানাপুকুরের ধারে ম্যালেরিয়ণজীর্ণ প্রীহারোগীকে কোলে লইয়। তাঁহার পথ্যের জন্তা আপন শুষ্ক ভাগ্ডারের দিকে হতাশ দৃষ্টিতে চাহিয়া আছেন, ইহা! দেখাই যথার্থ দেখা ।”

(রবীন্দ্র রচনাবলী, শিক্ষা, ১১ খণ্ড, ১৩৬৮, পৃ. ৫৫১)

যতদিন আমরা প্রকৃতই দেশপ্রেমিক ছিলাম, ততদিন আমাদের জননী এবং জন্মভূমি আমাদের চোখের সামনে সত্য ছিল, তাই আমর! ততদিন জননীকে, শ্রন্ধাভক্তি করেছি, দেশের-সমাজের নানাভাবে সেবা করেছি, তার প্রত্যক্ষ সেবার কার্ধে আমরা আত্মোৎসর্গ করেছি। কিন্তু যেদিন থেকে আমরা পাশ্চাত্য পপ্যাট্িয়টিজমে' দীক্ষা লাভ করেছি, সেদিন থেকে আমরা আমাদের জন্মগত সংক্কীরলন্ধ যে স্বদেশপ্রেম তা বিসর্জন দিয়েছি। কারখ, স্বদেশপ্রেমই আমাদের জন্মল্ধ সংস্কার, 'প্যাট্রিয়টিজম্‌* নয় তাই আমাদের সাহিত্যে স্বদেশপ্রেমের আত্ম- প্রকাশ ধত সহজে হয়েছে, “প্যা্রয়টিজমে'র প্রকাশ তত সহজ এবং স্বাভাবিক হয়নি প্রক্কভই হয়েছে কিনা তাঁও বিতর্কের বিষয়

[ ]

সমগ্র ভারতবর্ষের কথা বাদ দিয়ে শুধু বাংলাদেশের কথাই যদি ধর] যায়, তা হলেও দেখতে পাই বাঙ্গালী জাতি স্বভাবতই স্বদেশপ্রেমিক, তার স্বভাবের মধ্যে এই গুণটি আছে এবং এই গুণটি থাকবার কতকগুলো কারণও আছে, একেবারে অকারণেই তা হয়নি। বাঙ্গালী তার দেশকে ভালবাসে কথা এই জাতির জীবনের একটি মৌলিক সত্য। জন্মস্থত্রেই সে স্বদেশপ্রেমিক | এই স্বদেশপ্রেমিক কিন্ত 'প্যাট্রিয়ট' (98071090 নন | বাঙ্গালী তার দেশকে ভালবাসে, ইতিহাসের কোনে যুগে এমন দেখা যায় নি যে বাঙ্গালী স্বেচ্ছায় স্বদেশ ত্যাগ করে অন্যত্র গিয়ে বসতি স্থাপন করেছে তারপর সে নিজেই যে দেশকে ভালবেসে তাঁর মধ্যে বাস করেছে তাই নব, বাইরে থেকে যখনই যে এখানে এসে বাস করতে চেয়েছে, তাঁকেওসে বাঁধা দেয়নি, তাকেও সে বাঁস করতে দিয়েছে, তার সঙ্গে সে প্রতিবেশীরপে বাস করেছে, তার কিছুদিন পর একদিন বাইরে থেকে যে এসেছিল, তাঁরা তাঁদের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে, কোনোদিন এই নিয়ে কোনে! বিরোধের ৃষ্টি হয়নি মধ্যযুগে একটি প্রচলিত কথ] ছিল, বাংলাদেশে ঢোকবাঁর পথ আছে, কিন্তু তা থেকে বেরিয়ে যাবার পথ নেই বেরিয়ে যাবার পথ প্ররুতই ছিল ন] তা নয়, কিন্তু এই দেশের এতই আকর্ষণ ছিল যে এখাঁনে কেউ একবার এলে আর তাঁর বেরিয়ে যাঁবার ইচ্ছা হতো না। এদেশে এসে প্রবেশ করা যেমন সহজ ছিল, বাঁস করাও তেমনি সহজ ছিল, এই নিয়ে বাঙালী কোন দিন বিরোধ করেনি

কারণ, জীবনের উপকরণের দিক থেকে এদেশে জিনিসের প্রাচুর্য ছিল, নিরুপদ্রব লঘু পরিশ্রমে প্রচুর খাগ্যশত্য এখানে স্থলভ ছিল, তাঁর ফলে এদেশে বাইরে থেকেও যখন যেই এসে বাস করেছে সেও জীবনের বিশেষ কতকগুলো সহজসাধ্য কর্মে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে তাঁর ফলে তার চরিত্র এবং মানসিকতা একভাঁবে সকলের সঙ্গে গড়ে উঠেছে। দেশপ্রেম তার মধ্যে প্রধান। ক্রমে তা এদেশের মানুষের একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠল। প্রেম বিশেষ কোনো স্তরের ভালোবাসা শয়, তা সর্বস্তরের ভালোবাসা, এমন কি জড় পদার্থ এবং জীবমাত্র অবলম্বন করেও তা গড়ে উঠতে পারে যে চাষী মাটি চাষ করে, বিশ্রামের সময় যে গাছের ছায়ায় বসে সে বিশ্রাম করে, যে পুকুরের জল পান করে, যে গাছের সে ফল খায়, যে কুটারে যাদের ন্নেহচ্ছায়ায় সে প্রতি দিন রাত্রি কাটায়, যে জননী তাকে অসহায় শৈশব থেকে সংসারের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করবার হুযোগ করে দেন, সকলেই তার ভালোবাসার পাত্র হয়ে দাড়ায় তা] থেকে প্রতিবেশীর উপকার করবার প্রেরণা সে পায়, বৃহত্তর সমাজ সেবার প্রেরণাঁও তা থেকেই আসে। এই প্রেমই প্রাথমিক শ্বদেশপ্রেম, তার

[ ১০ -

উপরই মহত্বর সাধনার প্রথম সোপান স্থাপিত হয়। এদের সঙ্গে 'প্যাট্রিয়টিজম্‌-এর কোনে! সম্পর্ক নেই

সেকন্ত সেদিন ধারা দেশপ্রেমিক ছিলেন, তাঁরা দেশের মাটিকেই একান্তভাবে আঁকড়ে ধরেছিলেন বলে দেশের সিংহাসন নিয়ে ধারা কাঁড়াকাঁড়ি করতেন, সে দিকে দৃষ্টিপাত করতেন না। দেশের সীমানা কতদুর বৃদ্ধি পেল, কতখানি হ্রাস পেল, সে বিষয়েও তাদের কোনও উছ্দেগ ছিল না এমন কি সেদিন তারা দেশপ্রেমের সাধনায় বিদেশী শাপকদের সহায়তা গ্রহণেও কোনো সঙ্কোচ প্রকাশ করেননি রাজা রামমোহন রায় ইংরেজ শাঁসকের সহায়তায় আইন করে সতীদাহ প্রথা রোধ করলেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিছ্ভাসাগরও ইংরেজের দ্বারস্থ হয়ে আইন প্রণয়ন করে বিধবা বিবাহের প্রবর্তন করলেন দেশের কল্যাণই ছিল তাঁদের প্রত্যক্ষ কর্মযজ্ঞের মুখ্য উদ্দেশ্য, দেশ সম্পকিত কোনে। আদর্শবাদ তাঁদের কোনো কল্পনাকে অবলম্বন করতে পারেনি দেশের স্বাধীনতা-সংক্রান্ত কোনে রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত না থাকা সব কিংবা বিদেশী শাঁসক-গোষ্ঠীর সহায়তা গ্রহণ করেও রাজ রামমোহন রায়, কিংবা ঈশ্বরচন্দ্র বিগ্ভালাগর যে স্বদেশপ্রেমিক, তা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন ন]1।

ইংরেজিতে “ফিল্যাঁনথে,ফি' (917119161)10125) নামে একটি কথা আছে, বাংলায় তাকে লোক-হিতৈষণা বলা] যেতে পারে ধার! স্বদেশপ্রেমিক তারা স্বদেশের লোকহিতৈষী, কিন্তু লোকহিতৈষণা কোনে! দেশের সীমায় আবদ্ধ থাকে না, তা৷ দেশ বিদেশেও সমান ভাবে বিষ্তার লাভ করতে পারে ডেভিড হেয়ারকে ত্বদেশ- প্রেমিক বলা কতদূর সঙ্গত তা৷ জানি না, কারণ বাংলা তার স্বদেশ নয়, যদিও সমগ্র জীবনই তিনি দেশের শিক্ষার সেবায় ব্যয় করেছেন, তাঁরও এদেশের প্রতি প্রেমের কিছুমাত্র অভাব ছিল না। স্ৃতরাং স্বদেশপ্রেম নিজের মধ্যে সীমিত, তা সাধারণভাবে 'লোক-হিতৈষণা” ব] কবির ভাষায় “বিশ্বপ্রেম” নয়। স্বদেশপ্রেমের অবলম্বন স্বদেশ, লোক-হিতৈষণার অবলম্বনও বিশেষ কোনো দেশ, “বিশ্বপ্রেমে'র কোনো অবলঘন নেই, তা একটি ভাবাঁতিত ধারণ। মাত্র, শ্বদেশপ্রেম সত্য এবং বাস্তব ক্রমে “পেট্রিয়টিজমে'র নেশা লেগে আমাদের স্বদেশপ্রেম আচ্ছন্ন হ'য়ে গেল। রবীন্দ্রনাথ এই অবস্থাটিকেই একটু কঠিন ভাষায় নিন্দা করেছেন, তিনি লিখছেন,

মাতালের পক্ষে মগ্ঠ যেরূপ খাগ্ভের অপেক্ষ! প্রিয় হয়, আমাদের পক্ষে দেশহিতৈষার নেশা স্বয়ং দেশের চেয়েও বড়ো হইয়া উঠিয়াছিল যে দেশ প্রত্যক্ষ তাহার ভাষাকে বিস্বত হইয়া, তাহার হতিহাসকে অপমান করিয়া, তাহীর হুখ-ছঃখকে নিজের জীবনযাত্রা হইতে বু দূরে রাঁখিয়াও আমর দেশহিতৈষী হইতেছিলাম। দেশের সহিত লেশমাত্র লিপ্ত না হইয়াঁও বিদেশীয় রাজদরবারকেই দেশহিতৈধিতার একমাত্র

[ ১১ ]

কার্ধক্ষেত্র বলিয়া গণ্য করিতেছিলাম এমন অবস্থাতেও এমন ফাকি দিয়াও, ফললাভ করিব, আনন্দ লাঁভ করিব, উৎসাহকে বরাবর বজায় রাখিব, এমন আশ] করিতে গেলে বিশ্ববিধাতার চক্ষে ধুলা দিবার আয়োজন করিতে হয়। (প্রাঙুজ্তঃ পৃঃ ৫৫১)

বর্তমান গ্রন্থের লেখিকা ইতিহাসের ক্রম অনুসরণ করেছেন বলে ত্বার “উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম' নামক গ্রন্থে স্বদেশপ্রেমের কথাই বলছেন অত্যন্ত বিস্তৃত, ব্যাপক অর্থে তা সাহিত্যের অনেকখানি অংশ জুড়ে আছে, সেইজন্য বিচিত্রমুখী বহু বিষয় তাঁর অন্তভুণক্ত করতে হয়েছে কথাও সত্য যে, আমাদের দেশে সাহিত্যে যেদিন থেকে প্যাট্রিয়টিজমে'র অনুপ্রবেশ ঘটেছে সেদিন থেকেই যে স্বদেশপ্রেমের ধারাটি সম্পূর্ণ রুদ্ধ হয়ে গেছে, তাও নয়; অনেক সময় দেখা গেছে ছুই-ই সমান্তরাল ভাবে চলেছে। বরং ম্বদেশপ্রেমের তুলনায় প্যাট্রিয়টিজমের ধারাটিই ক্রমে প্রবল হয়ে পড়েছে তবে তা বিংশ শতাব্দীর বিষয় বলে বর্তমান গ্রন্থের অগ্ততু্তি হয়নি

প্রাচীন মধাযুগ থেকেই লেখিক! তীর গ্রস্থরচনার স্থুত্রপাত করেছেন, কিন্তু কথা সকলেই জানেন, সে যুগে বাঙ্গালীর রাজনীতি চর্চার কিছুমাত্র অবকাশ না থাকলেও স্বদেশপ্রেম ছিল | সেই প্রেমের প্রকাঁশ হয়েছে তার সে যুগের সাহিত্যে, সঙ্গীতে, নৃত্যে, চিত্রশিক্পে, ধর্মীয় ধ্যান-ধারণাঁয়। সব কিছুরই যে একটা বঙ্গীয় বা গৌড়ীয় রীতি উদ্ভাবিত হয়েছিল তরি কারণ এই যে, তাতে স্বদেশপ্রেম সত্রিয় ছিল, তাই পরের অন্থকরণ তাতে স্থান পেতে পারেনি জাতির মধ্যে তখন থেকেই একটা আত্মাহ্গসন্ধান আত্মপ্রত্যয় সুষ্টি হয়েছিল বাঙ্গালী যা ভাবে, যা স্থষ্টি করে তার যে একটি স্বকীয়তা আছে এই বোধ তার মধ্যে জাগ্রত হয়ে তাকে একট] নিজস্ব' মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছিল জয়দেবের 'গীতগোবিন্দ', বড়, চণ্ডীদাসের গ্রীকৃষ্ণকীর্তন” মালাধর বস্থর ভাঁগবতের অন্ুবাঁদ শ্রীকৃষ্ণ বিজয়', এমন কি কৃত্তিবাস রচিত বাঁন্ীকি-রামায়ণের অন্থবাঁদের মধ্যেও বাঙ্গালী তাঁর নিজের জীবনের রূপ মুদ্রিত করে দিয়েছে সেই পথ ধরেই আবির্ভীব ঘটল চৈতন্যদেবের | তীর ধর্মীয় আন্দোৌলনের' মধ্য দিয়ে কেবল মাত্র নৈর্ব্যক্তিক কৃষ্ণপ্রেমেরই ব্যাখ্যা শুনতে পাওয়া যায় নি, তার মধ্য দিয়েও তীর স্বদেশপ্রেমের কথা বা] দেশের ছেঁট বড় সকল শ্রেণীর মানুষের কথাই ব্যক্ত হয়েছে লেখিক তাঁর এই গ্রন্থ রচনায় সেজন্য শ্রীচৈতগ্ঘদেবকে যথার্থই একটি প্রধান স্থান দিয়ে এই বিষয়ে তার ভূমিকার কথা বিশেষভাবে আলোচনা করেছেন

শ্রীটৈতন্তদেবের ধর্মান্দোলনের মধ্যে যে একটি রাজনৈতিক চেতনাও প্রচ্ছন্ন ছিল, তা অনেকেই মনে করেছেন। বন্ুধীবিভক্ত সমাজ ক্রমে খণ্ডিত হয়ে হয়ে ঘে ভাবে হতবল হয়ে পড়েছিল, তাদের একটি অখণ্ড সংগঠনের মধ্যে নিয়ে এসে

[ ১২ ]

শক্তিশালী করে গঠন কর] তীর আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল। সৃতরাঁং বাংল! সাহিত্যে রাজনৈতিক চিন্তার এখানেই উন্মেষ দেখা যাঁয়। স্বদেশ এবং স্বজাতির প্রেমের বশবর্তী হয়েই চৈতগ্যদেব এই সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক ভাবনা তার মনে স্থান দিয়েছিলেন বলে মনে করা যেতে পারে গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ম শতধ! বিচ্ছিন্ন সেদিনকার বাংলার সমাজকে যে এক নাম এবং এক আচরণ দিয়ে এক অখণ্ড সংগঠনে পরিণত করবার প্রয়াস পেয়েছিল, তার মধ্যে তাঁর প্রবক্তার সে দ্িনকার দেশের অবস্থায় স্বদেশপ্রেম গোপন থাঁকবাঁর কথা নয় এই বিষয়টির উপর লেখিকা যথার্থই বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। কিন্তু তা সত্বেও দেখা যায় এই রাজনৈতিক চিন্তা চৈতন্যদেবের একান্ত ব্যক্তিগত। কিন্তু জাতিগতভাঁবে বাঙ্গালী মূলতঃ শাক্ত এবং তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্ম যে উড়িস্তায় খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী কিংবা মহারাজ অশোকের সৃময় থেকেই যেরকম দৃঢ়মূল হয়ে গড়ে উঠেছিল, বাংলাদেশে তা কখনো হতে পারেনি, তাই উড়িফ্যায় মধ্যযুগে যে সামরিক শক্তিরই বিকাশ হোক না কেন, তার ভিত্তিমূলে বৌদ্ধধর্মের অহিংসাঁর বীজ ছিল তাই চৈতন্যধর্ম মধ্যযুগে সেখানে গিয়ে যখন প্রচার লাভ করল, তখন তা অঠি সহজেই জনসাধারণের মধ্যে গৃহীত হলো উড়িস্যাতেও ইতন্ততঃ বিক্ষিপ্তভাবে তান্ত্রিক ধর্ম যে না ছিল তা নয়, কিন্তু তাঁও বৌদ্ধধর্মের সর্বব্যাপী 'আহিংসা-ধর্মের ভিত্তির উপরই তাঁর আসন স্থাপন করে নিয়েছিল, সেইজন্য তাঁও সেখানে তাঁর ভিত্তিযুল স্বদূঢ় করতে পারেনি | শেষ পর্যন্ত চৈতন্যধর্মের কাছে তাকেও পরাজয় স্বীকার করতে হলো বৌদ্ধধর্মে অহিংসা, মৈত্রী এবং করুণার বাণী প্রচার লাত করেছিল, তা এখানে এসে পৌছুতে পাঁরেনি। স্থতরাং বাংলাদেশের মূল ধর্মীয় ভিত্তিটিই শাক্ত কিংবা তান্ত্রিক উপাদানে গঠিত হয়েছিল। চৈতন্যদেবের ভাব এবং ভাবনা নান! দিক দিয়ে বাঙ্গালীকে প্রভাবিত করলেও জাতির জীবনের বহিমুখী আচরণে তাঁর ধর্ম ব্যাপক স্থান লাঁভ করতে পারেনি কেবল মাত্র কিছু কিছু গোষ্ঠী এবং বিচ্ছিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে তা সীমাবদ্ধ হয়ে আছে, উড়িস্যার মত সর্বাত্মক জাতীয় ধর্মরূপে তা! গণ্য হতে পারেনি

আগেই বলেছি, বাঙ্গালী জাতি স্বভাবত: দুর্বল বলেই ধর্মীয় ধ্যান-ধাঁরণায় শক্তির উপাসনা করে তার দৈহিকশক্তির অভাব পূর্ণ করতে চেয়েছে খ্রীতীয় ত্রয়োদশ শতাববীতে তুর্কী আক্রমণের পর থেকে দুর্বল বাঙ্গালীর মধ্যে অসহাঁয়তা বোধ আরো শতগুণ বেড়ে গেল, দৈহিক শক্তির প্রত্যক্ষ প্রয়োগ দিয়ে সেই অবস্থা থেকে মুক্তি প্রাভের তার কোন উপাঁয় ছিল না। সাহিত্য অবলম্বন করে সেই মনোভাব প্রকাশ করবার স্থযোৌগ দেখা দিল, তার ফলেই শাক্ত দেবীর মাহাত্ব্য-তুচক কাব্য রচিত হতে লাঁগল। ধর্ম সে যুগে সাহিত্যকে অবলম্বন করেছিল, রচন৷

[ ১৩ ]

করেছিল, ছুটি ধারা-_একটি ধারার বৈষ্ণব সাহিত্য জন্ম লাভ করে সমাজ জীবনের চরম দুর্গতির দিনে ভগবানের কাছে আত্মসমর্পণের মধ্যে আত্মবিস্থৃতির সন্ধান করতে চেয়েছিল, আর একদিকে শীক্ত সাহিত্য তার বিরুদ্ধে কল্পিত এক হিংস্র প্রতিশোধ গ্রহণ ক'রে সেই অক্ষমতার মধ্যে অসহায় জীবনের সাত্বন! সন্ধান করেছিল। তাই মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যও পরোক্ষে রাজনীতি চর্চা করেছে। সেযুগের রাষ্্শক্তির অত্যাচারের স্বরূপটি অত্যাচারী দেবদেবীর চরিত্রের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে, সেই অত্যাচারের বিরুদ্ধে যে দেশবাসীর কি মনোভাব ছিল, তাও এই সকল কাব্যের মধ্যে গোপন থাকেনি

কোন কোন সময় বিদেশী শাঁসকদিগের দেশবাসীর উপর অত্যাচারের ঘটনাও মঙ্গলকাব্যের কাহিনীর অন্তভুক্তি হয়েছে ; তাতে নানা বাধা এবং বিপদের আশঙ্কা সত্বেও মনসা-মঙ্গলের মত একটি বহুল প্রচলিত মঙ্গলকাব্যে হাঁপান হোসেন পালার মত বিধর্মীর একটি অত্যাচারের প্রসঙ্গ কাহিনীর অন্তভূক্ত হয়েছে যথার্থ স্বদেশপ্রেম না থাকলে জাতীয় কাব্যে বিদেশীর অত্যাচার সম্পর্কে এত বাস্তবধর্মী বর্ণনা থাকতে পারত না। কাহিনীর মধ্যে শেষ পর্যন্ত যে দৈব সাত্বনার কথা আছে, তা শক্তিশালী অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দুর্বলের পরাজয়ের অসহায় স্বীকৃতি, তা ছাড়া আর কি হতে পারে ?

স্থতরাং মধ্যযুগ থেকেই একভাবে না একভাবে যে বাংল সাহিত্যে স্দেশপ্রেমের উন্মেষ হয়েছে, তা স্বীকার করতেই হবে, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে সেই স্বদেশপ্রেমকে করব1র কখনে। “পেট্রিয়টিজম্‌* বলে মনে করা যেতে পারে না। সে প্রেম প্রত্যক্ষভাবে প্রকাশ উপায় ছিল না, কিন্তু তা সব্বেও, সে প্রেম প্রকাশ করবার কোনে বাধা মানেনি নানা রূপক অবলঘন করেও তা প্রকাশ কর] হয়েছিল | দীর্ঘকাল বিদেশী এবং বিধর্মী রাষ্ট্রশক্তির অধীনে এই ছুর্গতির মধ্যেই পরোক্ষে এবং রূপকের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের ম্বদেশপ্রেম প্রকাশ করতে হয়েছে এমন কি, ইংরেজ আমলেও বিদেশী শক্র ইংরেজের বিরুদ্ধেও অনেক কথাই আমাদের শ্বদেশপ্রেমিক সাহিত্যিকদের নানারকম পরোক্ষ উপায়ে প্রকাশ করবার প্রয়োজন হয়েছে সে দিন দেব-দেবীর সাহায্য পাওয়! যায়নি সত্য, কিন্ত বাধা হয়ে ইতিহাসকে বিকৃত করতে হয়েছে। কারণ, স্বদেশপ্রেমই যেখানে মুখ্য, সেখানে এঁতিহাসিক তথ্য বিসর্জন দিতে আমাদের স্বদেশপ্রেমিক সাহিত্যিকগণ বিন্দৃষ্নাত্র ছিধাবোধ করেননি

মঙ্গলকাব্যগুলোর মধ্যে পরোক্ষে দেশপ্রেমের কথা থাকলেও অন্ততঃ একখানি মঙ্গলকাব্য আছে, তার মধ্যে দেশপ্রেম প্রত্যক্ষ হয়ে উঠেছে, তা ধর্মঙল। তা! লেখিক! যথার্থই লক্ষ্য করেছেন

[ ১৪ ]

ধর্মমঙ্গলেই বনু বলিষ্ঠ নরনারীর বান্তবধর্মী চরিত্রের একসঙ্গে সদর্প পদধ্বনি আমর] শুনতে পেলাম তাদের সকলেই দেশরক্ষায় প্রাণ উৎসর্গ করেছেন, কবি তাদের কারে! কারো হৃদয়ে দেবতার প্রতি ভক্তি-শৃম্ততার জন্য ছুঃখ করলেও তাদের বীরত্বের জন্য গৌরব প্রকাশ করেছেন, বীরত্ব প্রকাশের ব1 প্রতিপক্ষের সঙ্গে তাদের যুদ্ধের খু'টিনাটি বর্ণন] দিয়েছেন, সে বর্ণনা সহানুতভূতিপূর্ণ নয়, সে কথ। বলা যায় না। এই সকল চরিত্রের মধ্যে স্ত্রীচরিত্রও বাদ যায়নি, অথচ এই সকল স্ত্রীচরিত্র নিয়শ্রেনীর ভোমজাতীয় | তাদের মধ্যেও যে শক্রর আক্রমণ কালে দেশরক্ষার পবিত্র দায়িত্ববোধ আছে, তা ক্মরণ করেছেন ; সেই দায়িত্ববৌধে উদ্ধদ্ধ হয়ে শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করে তার প্রাণবিসর্জন করেছে মাতা পুত্রকে যুদ্ধে অস্ত্রসঙ্জায় সজ্জিত করে পাঠিয়েছেন থে যুদ্ধে মাতার এক পুত্র নিহত হয়েছে, সেই যুদ্ধে আর এক পুত্রকে যুদ্ধসজ্জায় সঙ্ভিত করে পাঠিয়েছেন, এক হাতে চোখের জল মুছেছেন, আর এক হাতে একমাত্র অবশিষ্ট পুত্রের যুদ্ধযাত্রীকালে অন্ত্রসঙ্জা করেছেন ।* তারপর সেই -পুত্রও যখন আর ফিরল না, তখন নিজে সেই জলন্ত অগ্নিকুণ্ডের মত যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে শক্রহস্ত থেকে দেশরক্ষা করবার অন্তিম চেষ্টা করেছেন। যে কবি এই কথা লিখেছেন, তিনি ইংরেজি সাহিত্যের 'প্যা্রিয়টিজম্‌” কি তা জানেন না, তাঁর কাব্য তিনি সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে লিখেছেন, সৃতরাং ইংরেজি সাহিত্যের সঙ্গে তার কোনে পরিচয় ছিল না। লেখিকা এই প্রসঙ্গটির উল্লেখ করেছেন, মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্য আমাদের দেশের শিক্ষিত সমাজের নিকট অবহেলিত, বিশেষ কেউ তার মর্মকথা জানে না, তাই বিষয়টির উপর সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমাদের সাহিত্যে স্বদেশপ্রেমের মৌলিক রূপটি কি ছিল, তা 'বোঝাবার চেষ্টা করা গেল। কারণ, অনেকেরই ধারণা স্বদেশপ্রেম অন্ঠান্য অনেক বিষয়ের মত আমাদের ইংরেজি সাহিত্যের কাছে ধার করা। কিন্তু আমি বল্‌্তে চাই যে স্বদেশপ্রেম আমাদের ধার করা বিদ্ধা নয়, প্রকৃতপক্ষে 'প্যান্রিয়টিজম্‌, বিদ্ভাটিই আমাদের ধাঁর করা, স্বদেশপ্রেম আমাদের নিজন্ব।

লেখিকা মধ্যযুগের ইতিহাসে উল্লিখিত 'বারোভু'ইঞা'র কথাও উল্লেখ করেছেন। তারা আঞ্চলিক তৃস্বামী ছিলেন, দেশের দূরত্ব, অবস্থান, পরিবেশের স্থযোগ নিয়ে অনেক সময় দিল্লীর সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করবার প্রয়াস পেয়েছেন, অনেকেই সাময়িকভাবে কিছু কিছু সাঁফল্যও লাভ করেছেন। কিন্ত প্রকৃত দেশপ্রেমিক বলতে যা! বুঝায় তা তারা প্রকৃত কতদূর ছিলেন, তার কোন পরিচয় পাওয়া যাঁয় না।

তুর্কী পাঠান মোগলের পরাধীনতার মধ্য দিয়েই বাঙ্গালী আর এক কঠিনতর

| ১৫ ]

বিদেশী পরাধীনতার শৃঙ্খল গলায় তুলে নিল, তা ইংরেজের পরাধীনতা। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই দেখা গেল, তার রূপ এবং স্বাদ একটু ভিন্ন প্রক্কতির। ইংরেজ শাসনের পরাধীনতার মধ্যেই রামমোহন রায়ের আবির্ভীব হল। সমাজের যে সকল ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের কোন ভাবন। ছিল না, তিনি তারই মধ্যে আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, সেগুলো কিভাবে আমাদের মনুষ্যত্ব বিকাশের অন্তরায় সৃষ্টি করছে। আমরা দেশকে এতদিন ভাঁলোঁবেসেছি সত্য, কিন্তু অন্ধ ধর্মীয় আচারের নিকট মানুষকে বলি দিতে সঙ্কোচ বোধ করি না, স্কতরাং ভালোবাস! সর্বসংস্কার মুক্ত স্বাধীন ভালোবাস! নয়, জননী এবং জন্মভূমিকে স্বর্গের চাইতেও গরীয়সী বলে মনে করেও কতকগুলো! হুদয়হীন নিষ্ঠুর আচারের নিকট জননীকেও নি:সঙ্কোচে বলি দিয়েছি। রামমোহন যখন সে ভুল আমাদের ধরিয়ে দিলেন, তখন আমাদের যাবৎ দেশপ্রেম ঘে কতখানি সঙ্কীর্ণ ছিল তা আমর! বুঝতে পারলাম রামমোহন যথার্থ দেশপ্রেমিক ছিলেন, কিন্তু তিনি যদ্দি 'পেট্রিয়ট” হতেন তবে আগে দেশ স্বাধীন করে ইংরেজকে দেশের সীমানা থেকে দূর করে তারপর সতীদাহ প্রথা দূর করতে আসতেন, কিন্তু তিনি দেশপ্রেমিক ছিলেন বলেই বিদেশী ইংরেজের সাহায্য নিয়েও সমাজের বুক থেকে সতীদাহের নির্মম প্রথা দূন্ন করলেন। কারণ, সেদিন সেই মুহূর্তেই তা একান্ত আবশ্যক হয়েছিল, বিলঘে অগ্রগতির সকল পথ আমাদের সামনে রুদ্ধ হয়ে যেত।

তারপর এই পথেই এলেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তিনিও দেশপ্রেমিকই ছিলেন, 'পেত্রিয়ট, ছিলেন না। মধ্যযুগের নিধিচার অত্যাচার এবং স্তুপীকৃত কুসংস্কারের ভারে নিম্পেষিত নারীসমাজের লাঞ্ছনার পাপ থেকে দেশপ্রেমিক ঈশ্বরচন্দ্র সমাজকে মুক্ত করবার দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। তাদের প্রেরণায় উৎ্দ্ধ হয়ে আরো অনেক দেশপ্রেমিক এই পথে এগিয়ে এলেন তার! একদিকে প্রত্যক্ষ কর্মের মধ্য দিয়ে আর একদিকে তাঁদের রচিত সাহিত্যের মধ্য দিয়ে বিশেষতঃ প্রবন্ধাকারে তাদের বক্তব্য এবং চিত্তীধাঁরাঁকে প্রকাশ করে সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম প্রচার করলেন আবার কেউ প্রত্যক্ষভাবে সমাঞ্জ সেবার কোঁন কর্মের মধ্যে লিপ্ত হওয়াঁর পরিবর্তে কেবল মাত্র সাহিত্য রচনার মধ্য দিয়েই তাদের স্বদেশপ্রেমমূলক ভাবনাকে রূপ দিতে লাগলেন সেযুগের এই বিষয়ে শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার কেবল মাত্র প্রবন্ধ নয়, বহু উপস্তাসও বাঙ্গালীর স্বদেশপ্রেমের উৎস স্বরূপ হয়ে আছে।

বর্তমান গ্রন্থখানি “উনবিংশ শতাব্দীর বাল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম” নিয়ে লেখা, স্থতরাঁং বিংশ শতাব্দীর কোন বিষয়ই তার অন্তভূক্ত হয়নি। কিন্তু একদিক থেকে দেখ! যায়, স্বদেশপ্রেমযূলক বাংল! সাহিত্য উনবিংশ শতাব্দী অতিক্রম ক্রমে বিংশতি

[ ১৬ ]

শতাবীর প্রথম দশকে সামান্ঠ কিছু দূর অগ্রসর হলেও তারপর অর্থাৎ বিংশ শতাববীতে আর উল্লেখযোগ্য ভাবে অগ্রসর হ'তে পারেনি কারণ, উনবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশ ছিল স্বদেশপ্রেমের ভিত্তি, স্বদেশী আন্দোলন ছিল তার শেষ পরিণতি, তারপর বিংশতি শতাব্দীতে স্বদেশী আন্দোলনের পর মহাত্বা গাঙ্ধকীর অসহযোগ আন্দোলনের সময় থেকে সমগ্র ভারতবর্ষ হল স্বদেশপ্রেমের ভিত্তি স্বদেশী আন্দোলনের পরই প্রকৃত স্বদেশপ্রেম আমাদের মধ্য থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়ে 'প্যাট্রিয়টিজমে'র ভাব-ন্বপ্ন আমাদের অন্তর অধিকার করে নিয়েছে তার মধ্যে স্বদেশী ভাবন। আর প্রবেশ করতে পারেনি

আধুনিক বাংল! সাহিত্যে বাঙ্গালীর জীবন নেই, বাঙ্গালীর ভাষ! নেই, বাঙ্গালীর সমাজ নেই, তাঁর সংস্কীর নেই, তার ধর্ম নেই, সে তার জাতীয় বিশেষত্ব বিসর্জন দিয়ে কেবল মাত্র তার দেহটি নিয়ে বেচে আছে। তার দেশ নেই, তাই দেশের প্রতি তার প্রেমও নেই। তার দেশ আজ 'বিশ্বা। বিশ্বের ভাবন] তার মাথা ভুড়ে খসে আছে, দেশ থাকলেও সে প্রাদেশিক লঙ্কীর্ণতার অন্য নিন্দার ভয়ে দেশপ্রেমের কথা ভাঁবতেও পারে নাঃ কারণ, সে নিজেকে দেশের মানুষ বলে ভবে না, বিশ্বের মাহুয় বলেই ভাবে সেইজন্য প্রেমও তার যদি কিছু থেকেও থাকে, তা অবাঁয়বীয় “বিশ্বপ্রেম” | তাই দেখা যায়, স্বদেশী আন্দোলনের মধ্যেই বাঙ্গালীর স্বদেশপ্রেমের সমাধি হয়েছে এমন কি, তাকেও রবীন্দ্রনাথ শেষ পর্যন্ত সমর্থন জানাতে পারলেন ন1। তবু আমরা ইতিহাসের দিক থেকে সেই ঘটনাকেই বাঙ্গালীর সাহিত্যে স্বদেশপ্রেমের শেষ পরিণতি বলে নির্দেশ করতে পারি

-সটু০৩ ঠা িত

৩২, বি. আর. চ্যাটার্জি রোড কলিকাতা বিশ্ববিদ্ালয়ের বাংলা সাহিত্যের কলিকাতা-_৩৪ প্রাক্তন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অধ্যাপক এবং বৈশাখ, ১৩৭৫ আধুনিক ভারতীয় ভাষা বিভাগের অধ্যক্ষ

নিবেদন

প্রাচীন মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে আধুনিক তথ। উনবিংশ শত্তান্দীর বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য পার্থক্যের মধ্যে একটি হল এই যে, প্রাচীন মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম নামক কোন বিশিঃ্ চেতনা সুস্পষ্ট হয়নি-_-অথচ আধুনিক বাংল! সাহিত্যের শুরু থেকেই সর্বস্তরের বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেমের স্পন্গন অনুতৃত হয়েছে। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গেলে বাংল! সাহিত্যের সামগ্রিক পরিবর্তনের হেতুটি নির্ণয় করা দরকার যেহেতু অন্তান্ত অনেক পরিবর্তনের মধ্যে স্বদেশপ্রেমের অন্ুভৃতিকেই আমরা আধুনিক বাংলা সাহিত্যের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য অভিব্যক্তি এবং গভীরতম উপলব্ধি বলে প্রত্যক্ষ করেছি। বাংল! সাহিত্যের আধুনিকতার ভিত্তিযূলে যুক্তিবাদ, আত্মপ্রত্যয় ব্যক্তিসচেতনতার মনোভাবটিই সক্রিয় হয়েছে, অনেকদিনের গতান্ুগতিকতা, দৈব-নির্ভরতা, নিলিপ্ড নিশ্চিন্ত বিশ্বাসের প্রতি অটল আহ্বগত্যের পরে বাংলা সাহিত্য সেদিন আত্মপ্রত্যয় সম্বল করে, আত্মশক্তি নির্ভর করে মাঁনবতাবাঁদকেই সাহিত্যে অবলম্বন করেছে--মোটীমুটিভাবে সেই যুগ থেকেই বাংল৷ সাহিত্য “আধুনিক' সংজ্ঞা লাভ করেছে। উনবিংশ শতাব্দীর প্রারস্ত লগ্নে বাংল! সাহিত্যের চরিত্রে একই সঙ্গে এত মহিমা একযোগে প্রকাশিত হয়েছিল এই সময়েই স্বদেশ চেতনার অস্পষ্ট অনুভূতিও বাংলা সাহিত্যে অন্থুসদ্ধান করলেই পাওয়া যাবে বস্তৃতঃ আত্মসচেতন পরিবেশ সচেতন সাহিত্যে সমাজ, মানুষ দেশের প্রসঙ্গ স্বত-স্ফুর্ততাবেই প্রকাশিত হয়ে থাকে এবং লেখকের বিন্দুমাত্র আন্তরিকতায় সেটুকুই স্বদেশপ্রেমের মহিমা লাভ করে। বাংলা সাহিত্যে যেদিন আত্মপ্রত্যয়শীল লেখক পরিবেশসচেতন মন গভীর সহাম্ুৃতৃতিসম্পন্ন হৃদয় নিয়ে সমান মানুষের দিকে দৃষ্টিপাত করেছেন সেদিন থেকে সাহিত্যে স্বদেশপ্রেমের হুচনা হয়েছে বলা যেতে পারে। তবে এখানে “স্বদেশপ্রেম' শব্দটিকে একটু বিশ্লেষণ করে নেওয়া দরকার | ইংরাজী 7911017577-এর বাংল অহ্থবাদ হিসেবে স্বদেশপ্রেম শব্দটি বাংলা ভাষায় প্রচলিত রয়েছে তবে এও সত্যি যখন ই'রাঁজী ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষার যোগাযোগ ঘটেনি তখন ঠিক এই ভাবোদ্দীপক কোন বাংলা শষের বহুল প্রচলন ছিল না। সংস্কৃত সাহিত্যে জন্মভূমিগ্রীতির অজত্র দৃষ্টান্ত রয়েছে, কিন্ত বাংলা সাহিত্যে ঠিক স্বদেশপ্রীতিযূলক কোন লক্ষণীয় অংশের বর্ণনা কিংব) স্বদেশাত্মক শষ্ের জনপ্রিয়তা দেখা যায়নি “ম্বদেশ' শব্ঘটির চেয়ে অনেক বেশী অর্থবহ শব্দই সংস্কৃতে গৃহীত হয়েছিল। সংস্কৃত সাহিত্যের অত্যন্ত গভীর দেশাত্মবোধক

(থ)

[ ১৮ ]

পংক্িটি “জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়লী।” একদিক থেকে স্বদেশপ্রেমের অভিধানের সর্বাপেক্ষা মুল্যবান উক্তি বলে মনে হয়েছে। শুধু শবপ্রয়োগের বৈচিত্রেই নয় ভাবের সম্পদেও জাতীয় শ্লোক তুলনাহীন | কিন্তু বাংলা ভাষায় সাহিত্যে সম্ভবতঃ স্বদেশপ্রেমাত্বক কোন অংশ রচিত হয়নি বলেই কোন সঠিক শবও ব্যবহৃত হ্য়নি। প্রসঙ্গে জার্মান সাহিত্যের স্বদেশপ্রেম প্রসঙ্গে লেখ! একটি অংশ উদ্ধৃত করলে দেখা যাঁবে শুধু বাংল! সাঁহিত্যেই এই অভাব ছিল না।

লেখক জার্মান সাহিত্যের প্রসঙ্গে বলেছেন-_

6 00111750116 61510991001) 06106001 %6516]1) 9101151)661111610 0695917 0 50997, 11700 03610791195 001 11) 512191] 11%711615,) ০০৮ 117 01098 11918 9170 %101)11 ৪. 09110011 (106 10651190619] 02,01%12101593 01 (116 ০০০19 119 0991 09৬9100109... ,.*.,, 70206161659 ০0001610179 €1)6 91916951011 01 109610719119510) 16107211760 001701760 109 (106 11665126016, 06170508119 & ₹6081071509109 07 1105 70941109110 80111015০01 81701018109 1620 17) 5০100], 09161 016 11110917096 01 152191191) 2170 17191)01) %/116515. 71105 1801 0 [91161021 096117069 17206 119916 611 9৮91]. 110 11661981016 15611: ৬111 50019065 101 98116 811 8100110, (0011181] 11691810016 0৬610190. 179161101 ৪. 001101091 590119 001 ৪. %15010805 [08(10610 101059.৯

স্বদেশগ্রীতিকে মুখ্য বিষয়রূপে চিন্তা করার যে প্রয়োজন আজকের সাহিত্যে দেখা দিয়েছে প্রাচীন যুগে সে প্রয়োজনটিই ছিল অন্পস্থিত। প্রসঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে উনবিংশ শতাব্দীতেই। পরাধীন জাতির জীবনে স্বদেশপ্রেমের অনুভূতি পরিস্থিতির দাঁন হিসেবে অনিবার্য হয়ে উঠে কিন্তু স্বাধীন জাতির জীবনেও অন্থভূতি জাগতে পারে | স্বদেশপ্রেমিক নিজের জাতি সমাজ, ধর্ম সংস্কৃতিকে আন্তরিকভাবে ভালবাসেন, কিন্ত সেই আবেগ তরঙ্গায়িত হয়ে ওঠে প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে সংঘর্ষের ফলেই। 'বাংল৷ সাহিত্যের আদি মধ্যস্তরে স্বদেশ- চেতলার অভাব ছিল, কিন্ত তার অর্থ এই নয় যে, সেযুগের মানুষ দেশের জলবামু, মাটি, ভাষা সংস্কৃতিকে প্রাণের সঙ্গে ভালবাসতেন না। কিন্তু সাহিত্যের উপাদান হিসেবে স্বদেশপ্রেম যে ব্যবহৃত হয়নি তার কারণ আছে। জ্বার্যান সাহিত্য লমালোচকের মতে রাজনীতির সঙ্গে মানবজীবনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের অভাব খাকলে স্বদেশপ্রেম সাহিত্যে সোচ্চার হয় না। বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রেও এই

১০189015 15০01 216 1425 2198508302১ ৩৬ ০৫০) 1951, 7,345.

[ ১৯ ]

সমালোচন প্রযুক্ত হতে পারে রাজনীতির প্রতি অসীম ওঁদাসীন্ত সেযুগের লেখকের চরিত্রে এতই প্রকট যে ব্যাপারে আর কাউকেই দৌষারোপ ন1 করে বাঙ্গালী লেখকের আত্মমগ্ন নিষ্পৃহ স্বভাঁবকেই দায়ী করতে হয় খুব বেশী বিরক্ত না হলে কোন লেখক সে যুগের রাজনীতির জটিলতার মধ্যে প্রবেশ করেননি যুকুন্দরামের উংপীড়িত মনই শুধু মঙ্গলকাব্যের আধারে রাজার অত্যাচার কাহিনী বর্ণনা করে ছন্দপতন ঘটিয়েছে

্বদেশপ্রেমের সত্যকার অর্থ নির্ণয়ের চেষ্টা করলে দেখা ঘাবে শব্দটির নিজস্ব অর্থ- গৌরব যতটুকু আছে তার চেয়েও বেশী রয়েছে শব্দটির ব্যঞ্রনা। স্বদেশের প্রতি ভালবাসার অকুত্রিম অমলিন প্রকাশকেই যদি স্বদেশপ্রেম আখ্যা দিই তাহলে অর্থ- গৌরবটুকু ব্যক্ত হয়েছে বলে মনে করা যেতে পারে যে অর্থে বঙ্কিমচন্দ্র স্বদেশপ্রীতি' প্রবন্ধটিতে ধলেছেন-_

“বস্ততঃ; জাগতিক প্রীতির সঙ্গে, আত্ম প্রীতি বা স্বজনপ্রীতি বা দেশপ্রীতির কোন বিরোধ নাঁই।”

এই অর্থে স্বদেশশ্রীতির মধ্যে রয়েছে সর্বজনীন, তথা বিশ্বব্রনীন প্রীতির স্পর্ণ। কিন্ত উনবিংশ শতাব্দীর স্বদেশপ্রেম অবশ্যই বিশ্বপ্রেম বা নিছক জাগতিক প্রীতিমাত্র ছিল না! উনবিংশ শতাব্দীতেই যে শব্ধ বাংল! ভাঁষায় গৃহীত হয়েছে-__তাঁতে রয়েছে উনবিংশ শতাব্বীর একট বিশেষ অর্থব্গ্রনা। স্বদেশপ্রীতির উপলব্ধি সেষুগের বাঙ্গালীর জীবনে একটি নবলন্ধ অনুভব | বাঙ্গালীর জীবনের যে সর্বাঞ্গীণ পরিবর্তন উনবিংশ শতাব্দীতেই দেখ! গেছে_তারই আভাস শুধু স্বদেনী সাহিত্যের মধ্যেই পাওয়া যাবে সমগ্র বিশ্বেও এই বিশেষ শব্ঘট আধুনিক যুগেই অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল তার প্রমাণ প।ওয়। যায় একট স্থচিপ্তিত উক্তিতে--3০ 70:019870, ৪০ ৫918111901175) 210 59 ৮168 15 6106 561356 01 18610912911 8 005 01656101 08% (1191 16 19 ৫1001011000 19০00511196 (1226 16 19 1500 2 10120:8127017091 2180 [911171015০ 10511700 01 1/017051) 080৩১ ০86 ৪. 19016 01 910 2০দা(1) কা1)055 09৮61077912 15 900)606 10 ৪. 0001098170. 11790151099 দা1)101) 178

1210 10 4৫616০6 16, 2121711011906 10 01, 02. 05 ০001861 11800, 119 0099191 10, ৫1760 10 01105 16 60 005 টিএ10100. 01 & 520160. 19. 001010510,২ এই

1917 02859202105 2266 272 22০7 2179--4% 22187155820 2/2 05575 27%2. ০৮০24% 07 4222৮508257) [-0180015 919) 0০199,

শপ পিস

[ ২০ ]

যথার্থ স্বদেশপ্রেম তীব্রতর অর্থে গৃহীত, বন্ধিত স্বত:স্চৃর্ত আবেগে প্রকাশিত হয়েছে উনবিংশ শতার্ধীতেই | পূর্বেই বলেছি পরিস্থিতি মানুষের মনের এই স্বদেশচেতনাকে বাড়িযে তোলে কোনো কোনো জাতির জীবনে এই আবেগ যত বেশী আবেদন হৃঠি করে-_সর্বক্ষেত্রে ঠিক তেমনটি দেখা যায় না কোন জার্ধান সমালোচক বলেছিলেন--"0 মহ 1)92715 161081 ০0010 ৪৮ 016 17816 [91176118110. 171)19 19 0608056 0116 08111701 02 9101] (0001)60 0১ 50179018170 ₹71)101 0176 118101% 10008, 01 10105 1090 116616...11) 001 0856 (15 18116 [81116118110 5 001 81 117518101008116 580701)0) 10 116 চ২01721) 01 (176 01591. 16 50170601119 (176 1)98106 01 70610৬60১১৩

আমাদের জীবনে স্বদেশপ্রীতির অতি উচ্ছবীসকে ব্যাখ্যা করলে দেখা যাবে হয়ত 1$00178]9 (09001)60 9010117108-এর অভাব ছিল বলেই যে অনুভূতি ছিলি নু্ু-_তাই আজ পরিস্থিতির সঙ্গে সংঘর্ষে উচ্ছৃসিত হয়ে উঠেছিল আমাদের জীবনে স্বদেশপ্রেম সম্পর্কে বিশিষ্ট সমালোচকের মতামত আলোচনা করলে দেখা যাবে রাঁজনীতি-সচেতন জাতীয়চেতনার পারিভাষিক অভিধা হিসেবে ত্বদেশপ্রীতি শব্টিকে গ্রহণ করা হয়েছে সর্বত্র এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকাঁতে 7৯৪17101157 শব্দটির বিস্তৃত কৌন ব্যাখ্যা দূরের কথা, শব্টির উল্লেখমীত্রও নেই দেখে বিস্মিত হয়েছি। কিস্ত [86107981157 সম্বন্ধে যে আলোচনা রয়েছে তা পঠি করলে বোঝা যায় চ৪01909) সম্বদ্ধে পূথক আলোচনার প্রয়োজন নেই। আধুনিক রাজনীতিবিদও 780191197-কে 81017911977-এর অন্তর্গত একটি উচ্ছাস বলেই বর্ণনা করেছেন [18701 1:85] বলেছেন-_ 79(1011510, (116 10956 ০07 01098 1961010, 1178৬ 5012 1160 ৫9%1909 [9811155 9৮ 26 99610910১10 590109 ৪, £1011015 11190100016 67015581010 0 101091)10 ৮101) 2. 01)09613 £0010 11981 19 ৫6110918661 5%01051%0 10 1617019618

অন্ভত্রও তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেছেন ৪/0005) 19 00116 2) 10810 1101) 6106 21689110905 109017701 01 10810) 8100 111 10810 100) 12010119] 69116 001

611-20617216200,৫

৮১৪01001517 সম্পর্কে এই আলোচন। তার গ্রন্থের ৪0097081151, 8110. 001511178-

17275 15011547176 426. ০) 92479%51:5%1” [5৬ ০৮, 1951, 0.376. ৪. 1181010 0. 19561) 4 072%1786? 22012105) [+07001, 1925. 0,221, ৫» [1010 0,227,

[ ২১ ]

000 অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে--যেখানে লেখক বারবারই রাঁজন্ীতিসচেতন গোঠীর সামগ্রিক জাতীয় চেতনাকেই 7৪:30037) আখ্যা দিয়েছেন একটু তলিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে বিভিন্ন সমাজতাত্বিক প্রদত জাতীয়তাবোধের সংজ্ঞার সঙ্গে স্বদেশপ্রেমের যুলতঃ কোন পার্থক্য নেই। ্বদেশপ্রেমের ব্যাপক অর্থটি [ বন্ধিম ব্যাখ্যাত অর্থ ] কোথাও গৃহীত হয়নি-_-এবং সর্বত্রই রাষ্ট্রচেতনার সঙ্গে দেশপ্রেমের যোগাযোগের কথাই জোর দিয়ে বল! হয়েছে। স্থতরাং কখনও কখনও স্বদেশপ্রেম, জাতীয়তাবোধ, জাতীয় চেতনা, শব্গুলিকে সমার্থক বলেই মনে করা হয়েছে প্রসঙ্গে কোন সমালোচক [ঘ৪0018110 সম্পর্কে যা বলেছেন তা উদ্ধার করি তিনি বলেছেন, “15 00০ 0186 006 1062, 01 17901019116 1185 2190 0961 89500918060. চা 101) 106219 01 001161081 70900107...]1) 00301 ছা0৫9, ৪. 119.0101 19 8 8000] 01 [9601016 %/1)09 001791091 (16171991599 (0 09 8৪172610105 17692910115 0116107- 58195 2 995910019119 81110 11 (1617 56817081705 ০01 ০07000 9110. ০9116? [176 469116 1০9 9092601 01617 ০0%1) 5০9০18] 116 11) 16116102) 127 2120 [7009110105৬

এই মন্তব্যের সঙ্গে স্বদেশপ্রেমের কোন পার্থক্য আছে বলে মনে হয় না। স্থতরাং জাতীয়তাবোধ বা জাতীয় চেতনাই যে পরোক্ষভাবে স্বদেশপ্রীতি তাতে সন্দেহ নেই। পৃথক শব্ব হলেও অর্থগ্যোতনায় স্বদেশপ্রীতি জাতীয়তাবোধের সঙ্গে প্রায় সমার্থক। সেজন্য গ্রন্থে স্বদেশপ্রেমের সঙ্গে জাতীয়তাবোঁধ বা জাতীয় চেতনাকে পৃথকভাবে দেখাবার চেষ্টা কর হয়নি--পৃথক কর] যায় না বলেই। উনবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশে রাজনীতি সচেতন বাঙ্গালীর মনে যে স্বদেশচিন্তা জাগ্রত হয়েছিল তারই প্রতিফলন পড়েছে সমগ্র বাংল! সাহিত্যে। এই নতুন উপলব্ধিকে নবজাগরণ বা রেনেসী যাই বলি না কেন- জাতীয় চেতন। বা' স্বদেশপ্রীতি এই উপলব্ধিরই ফলমাত্র |

17005 91910989018 1311021017102-তে শি ও010091150 সম্বন্ধে যে সংজ্ঞা দেওয়। আছে-_ আমাদের সাহিত্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে তাঁর অর্থটি স্পষ্টতর হবে। 90101791151 হচ্ছে &. 56206 01 10110 11) 11101) 1176 901011072 10958109 0? (176 11011007181] 19 161 (0 05 009 10 [05 790017-50805, 1000051) 90901010061708 09005 09055 5011, 0 08160021 080100105 ৪100 0০ 9918101191)50 [65111001191 800110116195 118৬5 09610; 10001 [11101151707 1150019, 10 0219 86 0196 200. 01 0155 1800 ০5000190780 11901011981191

৬, 7225015 ৬4০ 00181, 222027%4£ 209/461022 270%57) ১০0০০ 19345 0,441.

1. ২%

০5291 00 ৮০০০2) 5612619119 15905101250. 9910601050 17700101115 000119 8100 70115866116 8110 0106 ০1 (179 81696 1 3106 06 &98659% 817616. 0616170113176 900019 01 1)1500175,?

উনবিংশ শতাবীতে সমগ্র বাঙ্গালীর মনে এই পরিবেশটিই সৃষ্টি হয়েছিল-. সাহিত্যে তাঁকেই রূপ দিয়েছেন কবি-নাট্যকার-ওউপন্তাসিক | সাহিত্যে যে স্বদেশপ্রেমের জোয়ার দেখা গেছে সেটাও ঠিক ইচ্ছাকৃত বা চেষ্টারুত কিছু নয়। স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ সমগ্র মানুষের চিত্তকে যখন গ্রীস করে ফেলে সাহিত্যে তাঁর প্রকাশ অনিবাধ হয়ে ওঠে। সম্মগ্রের বাঁণীকে সাহিত্যিকই রূপ দিতে পারেন এব্যাপারে সমগ্রের বাণীকে প্রত্যেকের কাছে পৌছে দেওয়ার দায়িত্বও নিয়ে থাকেন সাহিত্যিকই | সাধারণতঃ সাহিত্যিকের রচনায় দেশপ্রেম এমন একটি আসন লাভ করে যাঁর প্রতিক্রিয়] ঘটে দ্রতগতিতে সম্পর্কেই যথার্থই বলা হয়েছে-_

[1) 171917% 02963 [00615 2100 90110919815 6101011951250 00117179] 41)91101)21- 1917) 1156.11065% 1910117760 0116 119610109] 1817577856, 9169৮216 10109 16 [91010 01 8 1166141% 18108119809, ৫061৮০৫ 061 11710 6116 11911091091] 7951) 1105 [01010211178 0176 00170211075 001 1116 70001101081 01581275 001 17121101298] 868(০190 5001. (0 ০৪ [91560 0% 7601016 1) জ/1)0]) (1769 1090 1:170160 019 50111 01 0810101911510),৮

উনবিংশ শতাব্দীতে বাঙালীর সর্বাঙ্গীণ জাগরণের মূলে সাহিত্যিকের লেখনীই সক্রিয় হয়েছিল। রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার আনো লন এবং সিদ্ধিলাভ পর্যন্তই কবির লেখনী অক্রান্তভাঁবে সজশের ভার গ্রহণ করেছিল। প্রথম যুগে অস্পষ্টভাবে যে আকৃতি সাহিত্যে স্পন্দিত হয়েছে-_ক্রমশঃ প্রচণ্ড কলরবে তা আমাদের চিত্বকে অধিকার করেছে। স্বদেশপ্রেমের ইতিবৃত্ত আলোচনা করলে দেখা যাঁবে যুগে যুগে তা শুধু তীত্রতা লাভ করেছে। রাজশত্তির রক্চক্ষুকে ভয় পায়নি সে-_প্রকাশ্ঠে-পরোক্ষে ব্যাহত গতিতে চলেছে স্বদেশপ্রেমিক লেখকের অপ্রতিহত লেখনী সমগ্র উনবিংশ শতাব্দীর সাহিত্যের মূল স্থর অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে-_স্বদেশপ্রেমই একমাত্র বন্তব্য যা প্রতিভীবাঁন কিংবা স্বল্পমেধাসম্পন্ন সব অ্টাকেই আন্দোলিত করেছে। মধুহদন থেকে বঙ্কিমচন্দ্র পর্যন্ত স্বদেশপ্রেমের অব্যাহত গতি--পরবর্তাকালে স্বাধীনতা লাভের পুব মুহুর্ত পর্যন্ত প্রচবেগে তা সকলেরই চিভুলোৌক অধিকার করে আছে। উনবিংশ শতাব্দী জুড়ে যে উপলব্ধি যে কোন বুদ্ধিজীবীকেই ভাবিয়ে

৭... 70901015019 87109170109) (৬০1-16), [1.5 £৯-১1965. ৮. 1010

[ ২৩ ]

তুলেছে বিংশ শতাব্দীতে প্রকাশ্য রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তার বেগ হয়েছে ভ্রততর |

সাহিত্যে স্বদেশপ্রেষের প্রাধান্য একটি বিশেষ সাময়িক পরিস্থিতির ফলেই ঘটে থাকে কারণ চিরত্তন সর্বজনীন আবেদন ব্বদেশপ্রেমের মত ব্যক্তি-নির পেক্ষ ভাবোচ্ছাসে থাকতে পারে না। সাহিত্যের যে স্বীকৃত রসোপকরণ স্বদেশপ্রেম তার মধ্যে অন্যতম বা একতম নয়। স্থায়ী রসের চিরন্তনত্ব নেই বলেই স্বদেশপ্রেমের আবেগে রচিত সাহিত্যেরও চিরম্তন মূল্য নেই। স্বদেশপ্রেমিকতামাত্র সম্বল করেই যে সাহিত্যিকের আবির্ভাব সাহিত্যজ্রগতে তার আসন চিরস্থায়ী না হলে খুব বেশী অবাক হওয়া যাঁয় না চিরন্তন বা সর্বজনীন আবেদন না থাকলে সে সাহিত্যও চিরস্থায়ী হতে পাঁরে না তাই চিরন্তনত্বের নিরিখে স্বদেশপ্রেমাত্মরক সাহিত্যের বিচার চলতে পারে না সাময়িক উচ্ছাসের ঢেউ স্থায়ী আলোড়ন তোলার আগেই যেমন বিলীন হয়ে যায় উনবিংশ শতাব্দীর স্বদেশপ্রেমাত্বক সাহিত্যও আজকের মান্ষের মনকে আর তেমন করে আলোড়িত করে না। সমস্যার সমাধানের সঙ্গে সঙ্গে সেই সাময়িক আবেগটিও চিরতরেই বিলীন হয়ে গেছে। স্বতরাং স্বদেশপ্রেমাত্মক সাহিত্যের মূল্য বিচাঁরকালে একথা সর্বাগ্রে ক্মরণ রাখ! দরকার যে, সাময়িক সাহিত্য রূপেই এর অন্তিত্ব। সম্পর্কে একজন ইংরেজ সাহিত্যিক ত্বদেশপ্রেম নামক আবেগটর স্থান নির্ণয়কালে বলেছেন, 4১৪01091157), 01 1058 ০1 ০0811(]9) 19 & 15176 07861083096 179101% 1685 91851118109 11051910016 (181) (6 60911791 110910119010175 01 1)6 589850175, 2100 1709200955 [7099511)6, 2100 (19 81100109901) 01 06861, 01106 10৮০ 0 ৮/01791) 11991. 901079111799) 11 13 (00০, (176 109৬6 01 ০০005 (9195 010. 2 90121755 200 211090 0111200171- 59019 ০178717,0091,+৯

মানব মনের গভীর ভাবগুলি অলংকার শাস্ত্রে ব্যাখ্যাত হয়েছে-_সাহিত্যে উৎকৃষ্ট রসস্ষ্টির উপকরণ সেই ভাবগুলিতে বর্তমান। স্বদেশপ্রেমকে কোনমতেই সেই ভাঁববাহী বলে মনে করা যায় না। কিন্তু ব্যক্তিনিরপেক্ষ ভাব হলেও সাময়িক পরিস্থিতির প্রয়োজনে এই গৌণ অনুতৃতিই দীর্ঘদিন ধরে সাহিত্যিকের চেতনা অধিকার করতে পারে উনবিংশ শতাব্দীর বাংল সাহিত্যই তার প্রমাণ উনবিংশ শতাব্দীর সমগ্র বাংল। সাহিত্যে স্বদেশপ্রেমই একটি সাধারণ যোগন্ত্র--প্রথম শ্রেণীর প্রতিভা থেকে সর্বস্তরের প্রতিভাকে তা প্রভাবিত করেছিল। কবির কাব্যে,

৯1010 10171015061 22227106257 2 £%9/275) [50100075719 234) 0.5

[ ২৪ -

মাঁট্যকারের নাট্যরচনায়, উপক্তাসের পাত্র-পাব্রীর চরিত্রে, প্রবন্ধের বকতব্যক়পে শ্বদেশপ্রেম সর্বত্র পরিবেশিত হয়েছে, তবে স্বদেশপ্রেমের পূর্ণ স্বরূপে হয়ত নয় কোথাও তা নিছক স্বদেশচেতনারই নামাস্তর-_দেশের ভাষা, সংস্কৃতি সমাজ- প্রীতিকে অবলম্বন করে কোথাও অস্পষ্ট স্বদেশচেতনার পরিচয় পেয়েছি--আঁবাঁর কোথাও প্রকাশ্যে বা ইঙ্গিতে রাজনৈতিক স্বাধিকারের বাসনা পোষ করেছে। কোথাও স্বদেশপ্রীতি শুধুই বঙ্প্রীতি _কোঁথাঁও ব1 ভারত চেতনায় রূপলাঁভ করেছে কিন্ত যে ভাবেই হোক না কেন--স্বদেশপ্রেমী সাহিত্যিক দেশ জাতির কথা যে চিন্তা করেছিলেন-_-তাতে কোন সন্দেহ নেই। সমগ্র উনবিংশ শতাব্দীর সাহিত্যে স্বদেশচেতনার বাণী নানাভাবে-নানাভাষায়-নান। রূপকে-ব্যগ্রনায় মূর্ত হয়ে উঠেছে।

স্বদেশপ্রেমিকতা অষ্টার চরিত্রের লক্ষণীয় কোন প্রতিভা নয়, স্বদেশপ্রেমিক নন অথচ বিশ্বজয়ী সাহিত্যিকরাই তার প্রমাণ। অনেক সময় স্বদেশপ্রেমিকতা লেখকের অন্যান্য বিশেষ ক্ষমতাকে আচ্ছন্ন করে রাঁখে। সাহিত্যের চিরন্তন যুল্যবিচার কালে এই স্বভাঁটিকে অনেক সময় বিশেষ বোঝাস্বরূপ মনে হয়। বঙ্কিমচন্দ্রের উপস্তাস সম্পর্কে একথা বারবার মনে হয়েছে বঙ্কিমচন্ত্রের স্বদেশচেতন৷ অনুপস্থিত থাকলে “মৃণালিনী", “দেবী চৌধুরানী', “আনন্দমঠেরঁ আবেদনই অন্যরকমের হত। চরিত্র বিশ্লেষশে কিম্বা কাহিনীর গ্রস্থনায় ওপম্কাসিক আরও বেশী সচেতন হতে পারতেন, তার ফলাফল অবশ্যই অন্যরকম হত উপন্তাসে উপন্তাসিক আরোপিত স্বদেশচেতনার বানী অনেক জায়গাতেই বেমানান মনে হবে, এটাই স্বাভাবিক | আবার ্বদেশচেতনার অতিপ্রভাব যখন কোন সার্কতার সম্ভাবনাকেইঃ বিনষ্ট করে দেয় তখন লেখকের স্বদেশপ্রেমিকতাঁকে দায়ী করা হয়। অবশ্য সবের জন্য স্বদেশ- চেতনাকে দায়ী না করে লেখকের রসস্থষ্টি বা রসরৃষ্টিরি অভাঁবকেই অভিযুক্ত কর! যাঁয়। চিরন্তন যূল্য বিচারকালে যে-কোন সাহিত্যিকের যে-কোন প্রবতারই অসার্থক প্রয়োগের সমালোচনা হতে পারে রসস্যঙির দায়িত্বের কথা বিস্বত হয়ে প্রবণতার দ্বারা অভিভূত হওয়াকে নিশ্চয়ই অষ্টার ক্রটি বলেই গণ্য করা উচিত। সাহিত্যের চিরন্তন যূল্যবিচার প্রসঙ্গে 99171501% বলেছিলেন--*76 ০110081 05656102 ৪9000 0086 13 1900, 15 16 51006169 [৮ 15011817021 55515 10 01115, 09 ৪0৫ 015 00161 ?5 0 “10 3 00960091 1 770 0015 9085961010১ 11) 0105 9৪56 91 01০ ্লা1575 01 (119 [10661581) সাত ০21) 0111 8125614৭599 00. 1196 81650 09০08519205, ল10) 50106 11691690101 5৮91, 220. ছ10] 90115080% 8110৮181709. ১০

১৬, (9501৫৩ 510890400, 71,6227767 25%415522/05) [,07৫005 29০7, 05265.

[ ২৫ ]

স্তরাঁং স্বদেশপ্রীতিকেই সেই দিক থেকে প্রতিবন্ধক রূপে দেখার যুক্তিও খুব নেই। সমগ্র উনবিংশ শতাবীর সাহিত্য স্বদেশচেতনার বোঝা নিয়েও মাঝে মাঝে হুসাহিত্য হতে পেরেছে, এমন কি শুধু স্বদেশচেতন। সম্বল করেই কেউ কেউ সে যুগের জনপ্রিয়, শক্তিমান প্রতিভাবান কবিরূপে গণ্য হয়েছিলেন--তারও প্রমাণ রয়েছে প্রসঙ্গে হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যাঁয়ের নাম করা যায়। হেমচন্দ্রের স্থায়ী কীতির আলোচন! কালে আধুনিক সমালোচকবর্গ তার মহাকাব্য অসংখ্য কাব্যকে গণ্য না করে স্বদেশচেতনামূলক আন্তরিকতাপূর্ণ কবিতার মধ্যেই তা অনুসন্ধান করেছেন কারণ স্বতঃস্ফুর্ত কবিত্বের আবেগেই হেমচন্ত্র স্বদেশপ্রেমের কবিতাগুলি রচন৷ করেছিলেন একালেও শ্বদেশপ্রেমিকতাই তাঁর কাব্যের একমাত্র আন্তরিক উপাদান বলে গৃহীত হয়েছে

নিছক স্বদেশপ্রেম অবলম্বন করেই সে যুগের অসংখ্য কবি-নাট্যকার পন্য সিকের আবির্ভীব হয়েছিল নাটকে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের উপন্যাসে রমেশচন্দ্রের নাম প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। স্বদেশপ্রেমিকতাঁই এদের মৌলিক রচনার মূলে বিদ্যমান

উনবিংশ শতাব্দীর সমগ্র সাহিত্যে দেশপ্রেমের এই অতি উচ্ছ্বাসের হেতু নির্ণয় কালে দেখা যাঁবে- প্রাচীন সাহিত্যের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য একটি পার্থক্য রচনায় স্বদেশপ্রেমকে অনেক জায়গায় মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে সে যুগের বাঙ্গালী যে চিন্তাধারায় আদর্শে প্রাীনত্বের গণ্ডী অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছিল-_ দেশভাবনার মাধ্যমেই সে কথ প্রমাণ করেছেন তারা নিতান্তই নিজের ভাবনা! নয় সমগ্রের চিন্তায় তারা উৎকণ্ঠিত। লেখক সম্প্রদায়ের আধুনিক মনোভাবের প্রতিফলন স্বদেশপ্রেমাত্রক সাহিত্যেই স্পষ্ট হয়েছিল। ঈশ্বর গুপ্ত রঙ্গলালের কবিভাবনায় দেশপ্রেম যখন বিশিষ্ট বক্তব্য রূপে পরিবেশিত হয়েছে তারও আগে গগ্ধ সাহিত্যে রামমোহন-বিগ্যাসাগর ব্বদেশচিন্তার পরিচয় দিয়েছেন আর যে-কোন নতুন কথাই সাগ্রহে অন্থকরণ করার একটা প্রবণতা সবযুগেই দেখ! যায়, যতর্দিন পর্যন্ত বহু ব্যবহারে তা জীর্ণ নাহয়। উনবিংশ শতাব্দীতে মৌলিক দেশপ্রেমাত্মক রচনা যা পেয়েছি তার সংখ্যা খুবই কম, কিন্ত নিছক অনুকরণপর্বন্ব রচনার পরিমাণই বেশী দেশপ্রেমাত্বক বক্তব্যে বৈচিত্র্য সম্পাদনের স্থযোগও খুব বেশী থাকে না, আঁবেগসর্বস্ব এই জাতীয় রচনায় যথার্থ সোন্দর্যস্ষ্টির অবকাশও কম। স্বদেশপ্রেমাত্রক যে-কোন রচনার মূল্য নির্ণয়ের আগে এসব কথা মনে রাখা দরকার

বাংল! সাহিত্যে স্বদেশভাবনা যে অভিনব উপলব্ধি সে কথা আমরা অস্বীকার করতে পারি না, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই উপলব্ধি যখন উত্তরোত্তর বেড়েই চলে তখন তার সঠিক কারণ নির্ণয় কর! দরকার হয়ে পড়ে উনবিংশ শতাব্দীতে নবন্ধাগরণের

[ ২৬ ]

সবব্রপাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঙ্গালী আত্ম-আবিফারে সক্ষম হয়। স্বদেশচেতনার স্ত্রপাতও একই সঙ্গে হয়েছিল। উনবিংশ শতাব্দীতে এই আত্ম অনুসন্ধানের ্রচেষ্টাটি ক্রমশ: প্রবল হয়ে ওঠে সমগ্র শতাব্দী জুড়ে বাঙ্গালীর সব সাধনাই এই আদর্শকে কেন্দ্র করে আবতিত হয়। ততরাং দেশপ্রেমের আবেগটিও ক্রমশঃ উচ্্ুসিত হয়ে উঠেছিল সমগ্র উনবিংশ শতাব্দীর সাহিত্যে তার অজশ্র প্রমাণ দেখতে পাই আমরা এই শতাব্দীর প্রথমার্ধে দেশসাধনা যখন ধর্মসংস্কার কিংবা সমাঁজসংক্কারেরই চেষ্টায় পর্যবসিত সাহিত্যেও এই বক্তব্যই পরিবেশিত হয়েছে। রামমোহনের প্রবন্ধ কিংবা বিদ্যাসাগর-রাজনারায়ণের প্রবন্ধাবলীতে স্বদেশপ্রেম সমাঁজচিন্তারই নামান্তর কিন্ত এই শতাব্দীর ঘিতীয়ার্ধে স্বদেশচর্চার গুরুত্ব অনেক বেশী বেড়েছে। নিছক সমাঁজকল্যাঁণের আদর্শের সঙ্গে বিদেশী শাসনের তয়াবহতার উপলব্ধি যুক্ত হওয়ায় সমগ্র বাঙ্গালী সেদিন মহাক্ষোৌভে পরাধীনতার বেদনা হৃদয়ঙ্গম করেছে। এই ক্ষোভটি দ্রুতগতিতে প্রাণে প্রাণে সঞ্চারিত করে দিয়েছিলেন সে যুগের স্বদেশপ্রেমী লেখকগোষ্ী। উনবিংশ শতাব্দীর শেষাঁংশে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাক মুহূর্তে স্বদেশপ্রেম শুধু সাহিত্যেই নয় জীবনেও আবেগ সৃজন করেছে। এই শতাব্দীর সাধনাই ছিল আত্মমুক্তির সাধনা লেখক সম্প্রদায় নানাভাবে এই অন্ুভবটি জাগিয়ে রাখার ব্রত নিয়েছিলেন পরাধীন জাতির জীবনে স্বাধীনতাঁলাভের বাসনা যখন জাগ্রত হয় সাময়িক ভাবে তা এমনি প্রবল?হয়ে ওঠে বলেই উনবিংশ শতাব্দীর সব কথা ছাপিয়ে স্বদেশপ্রেমের কথাটিই বড়ো! হয়ে উঠেছিল। বিশ্ব ইতিহাসেও এর নজির মিলবে শুধু উনবিংশ শতাব্দীর বক্তব্য হিসেবেই নয়_-যত দিন পর্যন্ত ভাঁরতবাসী রাষ্ট্রীয় স্বাধীনত। পায়নি ততদিনই স্বদেশচর্চার প্রয়োজন তীব্রতর হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর স্বদেশপ্রেমযূলক সাহিত্যের আলোচনা! থেকেই তা প্রমাণিত হবে আমাদের আলোচনা উনবিংশ শতাব্দীতেই আবদ্ধ। বিংশ শতাব্দীর অর্ধাংশ জুড়ে যে বিপুল স্বদেশপ্রেমাহ্বক রচনার জন্ম হয়েছিল-_-আপাঁততঃ সে আলোচনায় প্রবেশ করিনি আমরা তবে বিংশ শতাব্দীর স্বদেশপ্রেমমূলক রচনায় অতিরিক্ত কৌন রহস্য নেই। উনবিংশ শতাব্দীর সাহিত্যিক- গোষঠী যেকথা সাঁড়ঘ্বরে প্রচার করেছিলেন- পরবতী শতাব্দীর রচনাকারের। তারই সঙ্গে মিলিয়েছেন। সিদ্ধি লাভ না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম সাধন! থেমে থাকে না। উনবিংশ শতাব্দীতেই স্বদেশপ্রেমের সঙ্গে বাঙ্গীলীর নতুন পরিচয় ঘটেছে-_তাই অরে আবেগটিই শতধারে উৎসারিত হয়েছিল_-পরবর্তীকাঁলে তা নিতান্তই গতাহছগতিক হয়ে গেছে। স্বদেশপ্রেমমূলক রচনার স্বর্ণযুগ হিসেবে উনবিংশ শতাবীকেই বেছে নেবার যুক্তি এখানেই।

[ ২৭ ]

উনবিংশ শতাব্দীর সম্নগ্র সাহিত্য ইতিহাসনই আলোচনার জন্য প্রয়োজন; হয়েছে সবিম্ময়ে লক্ষ্য করেছি যে, এই শতাব্দীর যিনি যত বড় লেখক তিনি তত, বড়ো স্বদেশপ্রেমিক | উনবিংশ শতাবীর যুগন্ধর কবি মধুক্ছদন সাহিত্য সম্রাট বহ্কিমচন্দ্র সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়েই সত্যটি স্পষ্ট হয়েছে উনবিংশ শতাব্দীতেই সাহিত্য জীবন শুরু করেছেন এবং অজঅ স্বদেশাতক্সক রচনায় দেশপ্রেম ব্যক্ত করেছেন এমন বহু কবি-ওপন্াসিক-প্রীবন্ধিক সম্পর্কে আলোচনা করতে পারিনি, তাঁর কারণ বিংশ শতাব্দীতেই গ্রস্থগুলি প্রকাশিত হয়েছিল যেমন প্রাবন্ধিক দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, শিবনাথ শাস্ত্রী স্বামী বিবেকানন্দের রচনাবলী এমন অনেক কবির রচনাও আলোচনায় স্থান পাঁয়নি, কারণ তার প্রতিভার উপযুক্ত স্বদেশপ্রেমাত্মক রচনাঁংশের সবই প্রায় পরের শতাব্দীতে লেখা কবি দ্বিজেন্্রলালের ্বদেশপ্রেমমূলক রচনা কারণেই আলোচনায় বাদ দিয়েছি! পরবর্তী শতাব্দীর ্বদেশপ্রেমিক লেখকরূপে এদের সকলেরই বিশিষ্ট পরিচয় রয়েছে গ্রন্থে যেসব লেখকের স্বদেশপ্রেমযূলক রচন। আলোচনার স্থান পেয়েছে তাদের সামগ্রিক সাহিত্য- কীতির সঙ্গে একাকার করে জাতীয় রচণার বিচার করতে পারিনি বোধহয় তা করাঁও উচিত নয়। কোনো লেখকের সামগ্রিক চিন্তাধার1 একটি বিশেষ সাময়িক প্র ণতার আলোকে ম্পঞ্টরূপে প্রতিভাত হয় না বিশেষতঃ যে প্রবণতাকে চিরন্তন হৃদয়াবেগের স্বতংস্ফুর্ত অভিব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা যাঁয় না। স্বদেশপ্রেমের মত অস্থায়ী সাময়িক উপলন্ধিকে কোনো লেখকের লেখকসতাঁর পুর্ণ পরিচয় হিসেবে গণ্য করাই অন্কুচিত। সুতরাং স্বদেশপ্রেম চিন্তাধারাটিকে বিচ্ছিম্নভাবেই আলোচনা করার চেষ্টা করেছি কোনো কোনো লেখকের জীবনাদর্শের প্রতিফলন হয়ত জাতীয় রচনার সঙ্গে ওতপ্রোত হয়ে আছে সে প্রসঙ্গটিও অগ্রাহ করিনি স্গতরাঁং আলোচনায় স্বদেশপ্রেমিক পাহিত্যিককেহ খুঁজে পারার চেষ্টা করেছি মাত্র, তা অকপটে স্বীকার করি। সেজন্য দেশপ্রেমমূলক রচনাংশের সঙ্গে পাঠক সাধাঁরণের পরিচয় ঘটানোর জন্যই প্রত্যেক লেখকের উৎকৃষ্ট স্বদেশপ্রেমাত্মরক অংশ উদ্ধার করেছি যথাসাধ্য | অনেক সময় উদ্ধৃতির বাহুল্য বলে মনে হবে, কিন্তু স্বদেশপ্রেমিক লেখকের স্বদেশভাবনায় বৈচিত্র্যের সন্ধান পেতে হলে উদ্ধৃতির সাহাষ্য নেওয়া ছণড়া গত্যন্তর নেই। বহক্ষেত্রে একই মনোভাব, একই অভিব্যপ্তি একাধিক লেখকের রচনায় ধর] পড়েছে | তার কারণ নিতান্তই সাময়িক এমন একটি অনুভূতির প্রকাশ- ভঙ্গিতে বৈচিত্র্যের স্থযোগই ব1 কোথায়? তাছাড়া পরবর্তী লেখক অনেক সময়, পূর্ববর্তী লেখকের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকেন। নাটকের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষ্য করেছি। একই চরিত্র অবলম্থনে একাধিক নাট্যকার নাট্যকাহিনী

[ ২৮ ]

বচন] করেছেন ফলে মৌলিকত্ব দেখাবঁর চেষ্টা না করে এরা অন্থকরণেরই চেষ্টা করেছিলেন-_-সহজে সেকথা প্রমাণিত হয় তবু এই বিপুল স্বদেশপ্রেমযূলক সাহিত্যে অনুধাঁবনযোগ্য, লক্ষণীয় বন্থ বৈচিত্র্য খুঁজে পেয়েছি জাতীয়তাবোধের দ্বার! অনুপ্রাণিত এই লেখকগোরঠী দেশপ্রেমের বানী প্রচারকে তাদের বিশেষ কর্তব্য বলেই গ্রহণ করেছিলেন-_শ্বপ্ন রচনা করেছেন আগামী ভবিষ্যতের এবং তা সফলও হয়েছে স্বাধীন ভারতের জন্মদান করেছেন এরাই--সেদিক থেকে জাতীয় জীবনের একটি মহৎ কর্তব্য পালনে এর! অগ্রণী হয়েছিলেন সেদিক থেকেও এদের স্মরণ করার প্রয়োজনীয়ত। রয়েছে

গবেষণা ব্যাপারে শতাব্দীজড়িত এই বিশাল সাহিত্যকীতি আলোচনার খণ্ডাংশ- মাত্রই যেখানে পর্যাপ্ত, সেখানে আমার পরমশ্রদ্ধেয় অধ্যাপক গবেষণা নির্দেশক প্রীআশুতোষ ভট্টাচার্য আমায় নিরপ্তর উৎসাহ দান করেছেন সমগ্র শতাব্দীর পটভূমিকায় বিষয়টির প্রশ্ফুটনে। তিনি আমার গ্রন্থটির একটি যূল্যবান ভৃমিকা রচন। করে আমায় অশেষ ন্নেহপাশে বদ্ধ করেছেন। আমার শ্রদ্ধেয় গবেষণাপরীক্ষক প্রীপ্রবোধচন্দ্র সেন এই বিষয়ে পরবর্তা শতাব্দীকেন্দ্রিক খণ্টিও আমায় রচন1 করার উৎসাহ দান করেছিলেন গ্রন্থ রচনা প্রসঙ্গে এই উৎসাহ আমার পরম প্রাপ্তি বলেই মনে করি

গ্রন্থ প্রকাশনার ব্যাপারে শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনীরাঁয়ণ ভট্টাচার্যের যে আন্কৃল্য অকুপণ সহযোগিতা পেয়েছি তাতে আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ | জাতীয় গ্রস্থ প্রকাশের বহু বাঁধা সত্বেও শ্রীভট্রাচার্ষের সর্বাঙ্গীণ সহযোগিতায় গ্রন্থ প্রকীশ সম্ভব হোলো নিউ নিরালা প্রেসের সর্বাধ্যক্ষ প্রধীরেন্্র নাঁথ বাগ কর্মীরাও ব্যাপারে আশাতীত সহযোগিতা করেছেন-_-আ'মার কৃতজ্ঞতা তাদের সকলের কাছেই।

প্রচ্ছদ অংকনে স্বনামখ্য'তা স্থপতি শিল্পী আমার সহকমিনী অধ্যাপিকা উমা সিদ্ধান্তের সহযোগিতায় আমি অত্যন্ত আঁনন্দিত। আমার বান্ধবী অধ্যাপিকা মঞ্ুগ্র সিন্হা শ্রীছায়। বিশ্বাস আমাকে নাঁনা বিষয়ে সাহাধা করেছেন-_তাঁদেরও ধন্যবাদ জানাই যাঁরা আমাকে সর্বদাই সাহায্যের হাত বাঁড়িয়েছেন- ধাদের সহযোগিতা ধন্ঠবাদের অপেক্ষা রাখে না তারা হলেন, প্রমনোজ চক্রবর্তী ( অনুপ ), শ্রমতী ফান্ধনী মুখোপাধ্যায়, শ্রচিত্বরঞ্ন কাঞ্জিলাল কুমারী মহানন্দ কাঞ্জিলীল

মুদ্রনের ক্ষেত্রে কিছু কিছু অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি থেকেই গেলো বলে আক্ষেপও থেকে গেলো

সূচীপত্র

প্রথম অধ্যায় প্রাচীন মধ্যযুগের বাংলাদেশে রাজনীতিচর্চা ১--৩৯ বাংলার আদি ইতিহাসে লক্ষণসেন মুহম্মদ্বিন্‌ বখতিয়ার খিলজি ২, বল্লালসেন সনাতন দমাঁজব্যবস্থা-_বাঙ্গালী স্বভাবের বৈচিত্র্য ৪, চৈতন্যদেব বাংলার সামাজিক রাজনৈতিক জীবন ৫-৬, চৈতন্যচরিত্রে জননেতা স্থবলভ গুণাবলী- বাঙ্গালী জীবনে বৈষ্ণবধর্মের প্রতিফলন ৭-১, মঙ্গলসাহিত্যে প্রতি- ফলিত বাংলার আদিম জীবনযাত্রা ৯, ধর্মমঙ্গলে প্রতিফলিত রাষ্্রবিবরণ ১০-১২, মনসামঙ্গল বাঙ্গালী চরিত্রের ব্যতিক্রম টাদসওদাঁগর ১৩, সপ্তদশ শতাবীর, যুদ্ধসংকুল বাংলাদেশ বারোভুইঞাদের বিক্রম কাহিনী ১৪-১৮, প্রতাঁপাদিত্য রাঁয় ২০-২৩, সীতারাম রায় ২৩-২৫, সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজ অধিকার ২৬-৩০, ইংরেজ রাজত্বের প্রীরস্তলগ্নে বাংল! দেশের গোলযোগ সংবাদ ময়মনসিংহে সন্্যাসীবিদ্রোহ ৩৫, কীরভূমে চোয়াঁড়বিদ্রোহ ৩৬-৩৭ |

দ্বিতীয় অধ্যায় উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে রাজনীতিচর্চ। ৪০__ ৫৯ ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ স্থাপন প্রথম যুগের বাংলাগ্ভ রচনায় দেশসচেতনতা ৪১-৪২, রামরাঁম বস্থ রাঁজীবলোচন মুখোপাধ্যায়ের ইতিহাস চেতনা ৪২-৪৬, মৃত্যুগ্জয়ের রচনায় সমীজচেতনা ৪৭, কলকাতা রামমোহন ৪৮-৫৩, রামমৌহনই প্রথম আন্দোলণ অগা বাঙ্গালী ৫২-৫৯।

তৃতীয় অধ্যায় £ প্রবন্ধ ৬০--১৭৬ নবজাঁগরণের স্চনালগ্ন সমাজ-সংস্কার ব্রতী রামমোহন বিদ্যাসাগর ৬০-৬১, জাতীয়তাবোধ আত্মসন্নীনবোঁধের দীক্ষাদীনে রামমোহন বিদ্যাসাগর ৬১-৬২, বিদ্যাপাগরের সমাজ-সংস্কার ব্রত তদছুদ্ধেশ্টে সাহিত্য রচনা ৬৪-৬৯, দেবেন্দ্রনাথ তার আত্মচরিতে প্রকাশিত দেশগপ্রীতি +:-৭৫, অক্ষয়কুমার দত্ত তার সাহিত্যে দেশপ্রেম ৭৫-৮৩, রাজনারায়ণ বস্থ--ডিরোজিও ইয়ংবেক্ষল গোষ্ঠী ৮৩-৮৪, রাজনারায়ণের দেশপ্রেমাত্মক প্রবন্ধ-সাহিত্য ৮৪-১০১, তৃদেব মুখোপাধ্যায়-__দামাজিক প্রবন্ধ ওস্বপ্রলৰ ভারতবর্ষের ইতিহাস ১০২-১২৬, যুদ্ধ- পর্বের নায়ক বঙ্ধিমচন্ত্র বিবিধপ্রবন্ধের স্বদেশপ্রেম ১২১-১৪৫, রজনীকান্ত গুপ্ত সিপাহীযুদ্ধের ইতিহাস ১৪৫-১৬১, ছিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বদেশীসাহিত্য ১৬২- ১৬৪, চন্দ্রনাথ বস্থ ১৬৫-১৬৭, দেবে্্রনাথ মুখোপাধ্যায় ১৬৭-১৭০, হরিমোহন বন্দোপাধ্যায় ১৭০-১৭৬।

[ ৩০ ]

চতুর্থ অধ্যায়ঃ কাব্য ১৭৭---৩৯০ ঈশ্বরগুপ্তের কাব্যে প্রথম স্বদেশচিন্তার প্রকাশ ১৭৭-১৮২, কবিতা সংগ্রহ ১৮২- ২০১, রক্গলাঁল বন্য্যোপাধ্যায়--পদ্মিনী উপাখ্যান]২ ১৩-২১৫, কর্মদেবী ২২৫-২২৭, মধুস্থদন তৎকালীন সমীজ ২২৮-২৩৮, মেঘনীদবধ কাব্য ২৩৯-২৪৮, চতুর্দাশ- পদী কবিতাঁবলী ২৪৯-২৬০, হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যাঁয়কে জাতীয় কবির মর্যাদা- দান ২৬৩-২৭৪, বীরবাহু কাব্য ২৭৪-২৮১, বৃত্রসংহার কাব্য জাতিবৈরিতা ২৮৪-২৮৬, কবিতাঁবলী বিশুদ্ধ ্বদেশভাবনার উৎসার ২৮৯১-৩১৬, নবীনচন্দ্র সেন আমার জীবনে কবিপ্রদত্ত বক্তব্যের সমীলোচন1 ৩১৬-৩১৯, অবকাঁশ-রঞ্জিনী | ১ম ভাগ ] ৩২৩-৩৪৫, পলাশীর যুদ্ধ - নবীনচন্দ্রের দেশসাধনার সিদ্ধি সাফল্য ৩৪৬-৩৬৬, অবকাশবঞ্জিনী | ২য় ভাঁগ ] ৩৬৭-৩৮০, রঙ্গমতীকাব্য ৩৮১-৩৮৯ |

পঞ্চম অধ্যায় নাটক ৩৯১-_৫০০ বাংলানাটকের প্রথম যুগে জাতীয়চেতন। ৩৯১-৩৯২, রামনারায়ণ তর্করত্ব প্রথম সমাঁজ-সচেতন বাঁংলা নাঁটক কুলীনকুল সর্বস্ব ৩১২-৩৯৬, মধুত্ছদন ন্যাশনাল খিয়েটরের পরিকল্পনা ৩৯৭-৩৯৮, মধুস্দনের প্রহসন ইয়ংবেঙ্গল সম্প্রদায় ৩১৮-৪০২, নাটকে দেশচেতনার প্রথম উপলব্ধি মধুক্ছদনের কৃষ্ণবুমীরী নাটক ৪০৩-৪০৬, দীনবন্ধু মিত্র নীলদর্পণ ৪০৬-৪১২, কিরণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ৪১৪-৪২৩, হ্রলাল রায় সর্বপ্রথম স্বদেশাত্মক চিন্তাধারণয় পূর্ণাঙ্গ নাটকের পরিকল্পনা ৪৩৩-৪৩৭, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দুমেলা ৪৩৮-৪৪১, জ্যোতিরিন্দ্রনীথের মৌলিক নাটকে স্বদেশসর্বস্ষ ভাঁব ৪৪২-৪৮১, উপেন্দ্রনাথ দাস ৪৮২-৪৮৮, রাজনৈতিকতার কবলে বাংলা নাটক ৪৮৮-৪৯০, উমেশচন্দ্র গুপ্ত ৪৯৪, গঙ্গাধর ভট্টাচার্য ৪১৯ |

ষষ্ঠ অধ্যায় উপন্যাস ৫০১--৬৪৫

ভৃদেব মুখোপাধ্যায় এঁতিহাসিক উপন্তাসে স্বদ্দেশচিন্তার উৎস ৫০২-৫১৯, বঙ্কিমচন্দ্র উপন্যাস সাহিত্যে স্বদেশপ্রেমের জোয়ার-_ছুর্গেশনন্দিনী-_ণাঁলিনী _ চন্ত্রশেখর- _রাজসিংহ--আনন্দমঠ-_দেবী চৌধুরানী-_সীতারাম ৫২০-৫৭৭, রমেশচন্দ্র দত্ত বঙ্ষিমপ্রভাব-_বঙ্গবিজেতা-_মাধবীকঙ্কণ- মহারাষ্ট্র জীবন- প্রভাত- রাজপুত জীবনসন্ধ্যা ৫৭৭-৬০৩, প্রতাপচন্ত্র ঘোষ বঙ্গাধিপ পরাজয় ৬০৩-৬০৭, স্বর্ণকুমারী দেবী-_স্বদেশচিন্তার 'মৌলিকত্ব__দীপনির্বাঁণ__ছিন্নমুকুল -মিবাররাজ--বিদ্রোহ ৬০৭-৬২৩, দামোদর মুখোপাধ্যায় ৬২৩-৬২৬ হারাণচন্ত্ রক্ষিত-_বঙ্গের শেষবীর ৬২৬-৬৩৩, চণ্তীচরণ সেন-_শতবর্ষপূর্বে বঙ্গের সামাজিক অবস্থা-_ঝালীর রাণী-_দেওয়ান গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ ৬৩৪-৬৪৫ |

| ৩১ ]

সগুম অধ্যায় ব্যঙ্গাত্বক রচনা ৬৪৬--৭০৪ ভবাঁনীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়- রক্ষণশীলতা বনাম দেশপ্রেম--বাঁংলা গগ্ের নতুন ভঙ্গিমা--কলিকাতা কমলালয় ৬৪৬-৬৫০, প্যারীচাদ মিত্র ৬৫০, কাঁলীপ্রসন্ন সিংহ-_-হুতোম প্যাচার নকৃসা ৬৫১-৬৫৪, বহিমচন্দ্র বঙ্গদর্শন-_ লোকরহস্ত ৬৫৪-৬৬৫, কমলাকান্ত ৬৬৭-৬৭৫, ইন্ত্রনাঁথ বন্দ্যোপাধ্যায় ভারত- উদ্ধার কাব্য ৬৭৫-৬৮২, ক্ষদিরাম--পাঁচুঠাকুর গ্রন্থাবলী ৬৮৪-৬৯৬, যোগেন্ত- চন্্র বহু-_বাঙ্গীলীচরিত কাব্য ৬১৮-৭০০, হ্রনাঁথ ভঞঙ-_স্থরলোকে বঙ্গের পরিচয় ৭০১-৭০৪ |

শব্দসূচী

৭০৫

প্রথম অধ্যায় প্রাচীন মধ্যযুগেন্স বাংলাদেশে ক্বাজনীভিচর্চ৭

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গে বাংল! সাহিত্যের যোগাযোগ এত ক্ষীণ যে সাহিত্যের পাতা থেকে সে যুগের রাজনৈতিক ।পরিবেশটিকে আঁবিফার কর! প্রায় অসস্ভব। সেজন্য ইতিহাসের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই আমাদের, কিন্তু ধতিহাসিকও যখন সঠিক তথ্যের অভাবে অসহায় বোধ করেন--তখন ব্যাপারটি হয় জটিলতর | বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাঁস ধারা লিখেছিলেন তাঁরা ছিলেন বিজয়ী শাসকুগোষ্ঠীর প্রতিনিধি এরা বাংলাদেশ বাঙ্গীলীকে দেখেছিলেন তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিতে _তা৷ থেকে বাঙ্গীলীর সত্যকাঁরের রাজনৈতিক জীবন সম্বন্ধে পূর্ণ ধারণা গড়ে ওঠে না। কিন্তু বাক্ধালীর লেখ! ইতিহাসের অভাব থাঁকলেও,_ বাঙালী যে রাজনীতির প্রভাব থেকে সম্পূর্ণভাবে বিশ্লিষ্ট একটি জীবন যাঁপন করেছিল তাও হতে পারে না। বাঙ্গালী সম্পর্কে বিদেশী এতিহাসিকের লেখা বিবরণ থেকে খানিকটা ইঙ্গিত মিলবে তার। বাঁকীটুকু আধুনিক এঁতিহাসিকের মতামত নির্ভর করেই জানতে পারি আমর]।

বাঙ্গালী সম্পর্কে একটি সর্বজনীন ধারণা এই যে, জাতি হিসেবে তাঁরা শান্তিপ্রিয় _ভাঁববিলাসী কঙ্পনাপ্রবণ এই ধারণাটি যে অসত্য নয় বাঙ্গালীর রাজনৈতিক ্গীবনযাত্রার ইতিহাসই তার প্রমাণ। ভৌগোলিক আবেষ্টনী বাঙ্গালীর চরিত্রে এই দরাতীয়স্বভাঁব সৃষ্টিতে সহায়তা করেছিল সম্ভবতঃ | কিন্তু বাঙ্গালীর জীবনের এই গান্তিময় পরিবেশ বারবারই বিদ্বিত হয়েছে। গঙ্গা-বন্দপুত্র বিধৌত এই বঙ্গভূমির উর্বর পলিমাঁটিতে শশ্বাপ্রাচূর্য ছিল, অনায়াঁস জীবনযাপনের স্বপ্নময় পরিবেশ ছিল ঠকই-_ছিল না শুধু স্থখসস্ভোগের নিশ্চিন্ত অবসর। বিধাতার এক নির্মম রীসিকতা--তবু মনে হয়, এর ভিতরেই বোঁধকরি কোন গভীর তাৎপর্য ছিল। বিধাতার অজন্র আশীর্বাদে ধন্য এই বাঙ্গীলীজীবন যদি চিরদিনই রাজ্যলোলুপ বিদেশীদের দৃষ্টির আড়ালে থাকত--তবে আজ তা আর নতুন করে আলোচনার পামত্রী হোত নাঁ। ইতিহাসে বাঙ্গালীর মৃত্যু ছিল আরও অনেক অনালোচিত প্রাগেতিহাসিক জাতির মতই অবধারিত কিন্তু বাঙ্গালীর জীবনে নান! ঘটনাঁবৈতিত্র্য একদিক থেকে বাঙ্গালীর গুরুত্ব বাড়িয়েছে, নানা ঘাত-প্রতিঘাতে সে সঞ্চয় করেছে অনেক অভিজ্ঞতা আর অঙ্গিত জীবনীশক্তি। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ

উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

লোলুপের মনে বাসনার ইন্ধন জুগিয়েছে--বাংলার শান্তনির্জন জনপদের শান্তিপ্রিয় অধিবাসীদের মনে আতঙ্ক সঞ্চার করেছে বারবার বাঞ্গালী বিদেশী অত্যাচারীদের ঘারা উৎপীড়িত-লাঞ্চিত হয়েছে__ইতিহাসেই সে প্রমাণ মিলবে কিন্তু বালী কেন এই বহিঃশক্রকে প্রতিরোধ করেনি তাঁর কারণ আত্মরক্ষার শক্তি তাঁদের ছিল না। আরও একটি যুক্তি হতে পারে যে, বাঙ্গালীর জাতীয় চেতনা বলে কোন অনুত্তি ছিল না। শক্তিহীনতা এবং জাতীয় চেতনার অভাঁব লক্ষ্য করেই বিদেশী শক্রর। এদেশে অনায়াসে প্রবেশ করেছে আঁর বিদেশী এতিহাঁসিক বাঙ্গালীর চরিত্রে লেপন করেছে গাঢ় কলঙ্ককালিম।

ইতিহাসের প্রথম পর্ব থেকেই বাঙ্গালীর পরণজয়ের প্রসঙ্গটিই মুখ্য হয়েছে বলেই আত্মরক্ষায় অসমর্গ _রাঁজ্যরক্ষাঁয় ব্যর্থ বাঙ্গালীর চরিত্রে বীরত্বের ভূমিকা নেই। তবে বিদেশী অধিকাঁরেরও আগে শৌর্য-বীর্যে রাঁজ্যজয়ে বাঙ্গালীর কিছু গৌরব কাহিনীর অস্তিত্ব যে ছিল সে কথাও অনস্বীকার্য জাতি হিসেবে সেদিন কিছু বিশিষ্টতার পরিচয় হয়ত ছিল কিন্তু পরের যুগে তা মুছে দিয়েছে বাঙ্গালীই তরু সপ্তদশ অশ্বারোহীর বঙ্গবিজয়ের গল্পকথাকে প্রতিবাদ করার যথেষ্ট যুক্তি এতিহাসিকের ছিল। পরাজয় সত্য, কিন্তু গল্পকথাটি বানানে মতটি এতিহাসিকের--“13150015 0025 1806 19001:0. 93751019 1১0 2190. 161) 006 0০165 01 0390 আ10) 19200016200. 00181065 £01601552610155 £6]11 €0 06 1917062 88101)099,1,

বিদেশী অধিকৃত বাংলাদেশে রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গে বাঙ্গালীর যোগ এমনি করেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। বাঙ্গালী ফিরে গেছে তার নিশ্চিন্ত গৃহ্বলীভুকৃ পারাবতকৃজিত নির্জন গৃহকুটিরে-সেখানে বসেই ধর্মচ্ঠা সমাজচর্চা করেছে একান্তমনে গৌড়ের হিন্দুরাজত্বের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসের যে অধ্যায় শুরু হল দীর্ঘদিন ধরে তারই জের চলেছে ত্রয়োদশ শতাব্দীর রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চ থেকে বিদায় নিয়ে যে বাঙ্গালী গৃহজীবনে আবদ্ধ হয়েছিল বিশ্ব ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় না ঘটলে সেই পূর্বকাহিনী বুঝি বারবারই পুনরাবৃত্ত হোঁত।

হতরাং আদিইতিহালের সঙ্গে বাঙ্গালীর সম্পর্ক ছিন্ন করে মুহম্মদ বিনূ বখতিয়ার খিল্জি একটি স্থায়ী কীতি অর্জন করেছিলেন। লক্মণসেনের লক্ষণাবতী'_ বল্লাল সেনের 'বল্লালবাড়ী'র গৌরব চিরদিনের মতই বিলীন হয়ে গেল কাঁলগর্ভে। যদিও পূর্ববর্দে গৌরবের শৌর্যের সঙ্গে রাজ্য

১,:0268780) উ2হলোত 21501 0 13676জ] (৮০10৩ ]] ), 1302009, 1948, ৮৯৪,

প্রাচীন মধ্যযুগের বাংলাদেশে রাঁজনীতিচর্চ।

শাসনের চেষ্টা করেছিলেন লক্ষণ সেনের বংশধরেরা, কিন্তু গৌড় হারানোর ছুঃখ তাতে ভোলা যায় না। রাঢভূমি গৌড়বঙ্গ বাংলার কেন্দ্রভূমি _বাঁংলা সাহিত্যচর্চার আদিপীঠ জয়দেব-বৌদ্ধ-সহজিয়া সাঁধকদের বিহারস্থল। গৌড়ের গৌরবন্র্ষের সঙ্গে বাঙ্গালীর নামও মুছে গেল দীর্ঘদিনের জন্ত | ভাগীরধীর পশ্চিম তটেই বাঙ্গালী একদিন সমৃদ্ধ সীংস্কৃতিক-সাহিত্যিক রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্ট করেছিল, পরাঁজিত বাঙ্গালীর হাত থেকে সহজেই ত৷ ছিনিয়ে নিয়ে গেল বিদেশী অত্যাচারী শীসক-_-এ বেদনাটিও সেদিন বাঙালীর মনে জাগেনি। আসলে সেই চেতনাটিই যখন একটি জাতির চরিত্রে আত্মপ্রকাশ করে তাকেই আমরা বলি জাতীয়তাবোধের বা স্বদেশচেতনার উপলব্ধি ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বাঙ্গালীর জীবনে এই উপলব্ধি ঘটেনি--ইতিহাঁসই সে কথা প্রমাণ করেছে

বাঙ্গান্থী জাতি বর্তমান বাংলাদেশের যে সাম্প্রতিক রূপ অতীত ইতিহাসের স্দে তাঁর যোগাযোগ খুবই ক্ষীণ। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে যে সম্ভাবনার আলোকে সমগ্র বাঙ্গালীজীবন আলোকিত তাঁর পশ্চাৎপট হিসেবে অনুসন্ধান করার জন্ত আমরা ইতিহাসে ফিরে যেতে পারি, কিন্তু পুলকিত হতে পারি না। বিগত দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অধিনায়কত্ব করার সবরকম স্থযোগ থেকে বঞ্চিত-বিতাঁড়িত বাঙ্গালীর কিছু কিছু আলোড়নের ইতিহাস যে নেই তা নয়, কিন্তু মধ্যযুগের পরাঁধীনতা বিপর্যয়ের আঘাতে আঘাতে তা ক্ষীণ হয়ে গেছে শুরুতেই তবু আলোড়নের কোনো-না-কোনো প্রভাব বা তাৎপর্য আছেই, সেটুকুই বা অগ্রাহ করব কেন? রাজনীতি ক্ষেত্রে অধিনায়কত্ব করার মত শক্তির অভাব খাকলেও বাঙ্গালীর আকম্মিক শক্তির দ্ফরণ দেখেছি বাঙ্গলার সামন্তশক্তির পারস্পরিক সংঘর্ষের কাহিনীতে, বাঁরোভুইঞাদের শৌর্য-বীর্ষের মধ্যে, সপ্তদশ শতাব্দীর শেষাংশে ইংরেজের সঙ্গে আঞ্চলিক সংঘর্ষের বিবরণে এসব কাহিনী এতই বিচ্ছিন্ন, ইতিহাস-অসমখিত কক্সনাভিত্তিক যে জাতীয় ঘটনা থেকে সমগ্রজাঁতির অস্থির অন্তরাত্মাটিকে পূর্ণরূপে আঁবিফার করা যায় না। কিন্তু এই ঘটনাগুলিতেই বাঙ্গালীর রাজনৈতিক জীবনের স্পন্দন ধরা পড়েছে। নিস্তরঙ্গ রাঞ্গালী জীবনের মাঝখানে এই ঘটনাঁগুলিই একমাত্র সশব্দ ব্যতিক্রম

উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমে আমর। যে জাতীয়চেতনার ক্ষীণ আভাস পাই তার মধ্যে বাঞ্গালীত্বের চেতনাটি বেশ স্পষ্ট ছিল। জাতীয়ত্ব বা! স্বদেশবোধের প্রথম স্তরে জাতিগত চেতনাটি প্রধানভাবে বর্তমান থাকে কিন্তু মধ্যযুগের বাঙ্গালীদের মধ্যে বাঙ্গালিত্বেরে চেতনাটি মোটেই স্পষ্ট ছিল না। অধীনতায় অভ্যস্ত হবার পর রাজপ্রসাদপুষ্ট যে বাঙ্গালীসমাজের বনিয়াদ গড়ে ওঠে এরা পুচ্ছগ্রাহী

উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

রাঁজকর্মচারী, বিধর্মী রাজার রাজসভায় স্থান করে নেবার আগ্রহ এদের কিছুমাত্র কম ছিল না। বল্লালসেনের কৌলিন্প্রথায় সনাতন সমাজব্যবস্থায় যে রক্ষণ- ্লীলতা ছিল শুধু অর্থ আর প্রতিপত্তির লোভে অনায়াসে তা একশ্রেণীর বাক্গালীরা পরিত্যাগ করেছিল। মোঘল শাসনে কিংবা তুকী শাসনেও বাংলাদেশে শাস্তি প্রতিঠিত হয়েছিল,- উচ্চবর্ণ থেকে নিম্নবর্ণের সমস্ত প্রসাদপুষ্ট বাঙ্গীলীর। তাতেই ছিল সন্তষ্ট। এরা বিদেশীশক্তির কাছে আত্মনিবেদন করেছে, পরিবর্তে নানা খেতাব প্রশংসা মিলেছে ব্রাহ্মণ ছেড়েছে যজন-যাঁজন-অধ্যাপনা, সরকারী মহলে এদের নতুন পদবী নতুন মর্যাদা ঘোষিত হয়েছে মজুমদার, সরকার, খান, রায়, তালুকদার, তরফদার পদবীগুলি ত্রাক্ষণদের মধ্যে অনায়াসেই প্রচলিত ছিল সেযুগে, আজও এর] কেউ শান্তির পরিবর্তে বিদ্রোহ ঘটাতে চাননি, অনায়াসবশ্য বলেই এদের হ্থুনাম ছিল। শাঁসকগোীর অত্যাচারের বিবরণও যেমন পেয়েছি-_ চারিত্রিক উদারতার দৃ্টান্তও তেমনি উজ্জ্বল। ডিহিদার-খাজনা আদায়কারীদের দৌরাত্ম্যে সাধারণ বান্গালীজীবন বিপর্যস্ত হলেও রাজান্ুুকৃল্য ঘটেছে গুণীজনের কপালে একাধিক বিদেশী শাসক বিজিতদের ভাষা সাহিত্যের যোগ্য সমাদর করেছেন কৃত্তিবাঁস, মালাধর বস্থ, রূপ সনাতন, চৈতন্দেবও সে যুগে রাজসমর্থন লাঁভ'করেছিলেন | বাঙ্থীলীস্বভাবের গভীরে যে কক্পনাপ্রবণতা, সাহিত্যপ্রতিভা মহত্ব রয়েছে, গুণী-রসিক বিদেশী রাজারা তা হৃদয়ঙ্গম করেছিলেন এমনি করে পরাধীনতার তীব্র অনুভূতি খানিকট। স্তিমিততেজ হয়েছিল-_-তা আর কাউকেই তেমন করে চঞ্চল করেনি তবুও বলব, কোঁন জাঁতির জীবনে এই শীরব রাজান্বগত্য নিবিচারে প্রশংসনীয় নয়। প্রখর আত্সসম্মান স্বাধীনচেতনা যে জাতির চরিত্রে দীপ্ত মহিমা সঞ্চার করে-_এই আত্মবিলীন স্বভাঁব তাঁদের দৃষ্টিতে সর্বদাই নিন্দনীয় কিন্তু বাঙ্গালীর জীবনে এই এ্তিহাঁসিক সত্যের বহু প্রমাণ বর্তমাঁন। ধর্ষের প্রভাবও খানিকটা দায়ী এজন্য | এই সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আলোচন। করলে দেখা যাঁবে জনজীবনের প্রচণ্ড লাঞ্চনীতেই প্রতিবাদের ভাষা স্তব্ধ হয়ে আছে,_রাঁজনৈতিক স্বাধীনতার স্বাদ সম্পূর্ণকূপে ভুলে গেছে বাঙ্গালী তাঁদের শেষ সম্বল ছিল ধর্ম,__ছুঃখে-বিপদে-বিপর্যয়ে তার] ধর্মের আশ্রয় প্রার্থনা করেছে,__ অত্যাচার ছণিবার হলেও প্রার্থনা ছাড়! অন্ত কোন পথ তাদের জান! ছিল না। যুগের সাহিত্যের মধ্যেও তার পরিচয় মিলবে | ধর্মীয় সাহিত্য হলেও মঙ্গলকা ব্য গুলি সে যুগের হংস্পন্দনের ইতিকথা। মঙ্গলকাঁব্যের দর্পণে অতিস্বচ্ছভাবে ধরা পড়েছে সে যুগের রাজনৈতিক ঘটনার সত্য ইঙ্গিতগুলি। মর্গলকাঁব্যের প্রসঙ্গে আমরা সে আলোচনা করব কিন্তু বাঙ্গালীর ধর্মজীবন কিভাবে তাদের চারিত্রিক

প্রাচীন মধ্যযুগের বাংলাদেশে রাঁজনীতিচর্চা

শক্তির স্বাভাবিক ক্ফুরণকে ব্যাহত করেছিল তার-মূলে চৈতন্যের আঁবিত্ীবের প্রসঙ্গটি বিশেষভাঁবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে হয়। চৈতন্যের ধর্ম বাঙ্গালীর ভীরু স্বভাবকে আরও ভীরু করেছে 'ভৃণাদপি স্থনীচেন তরোরিব সহিষ্ণুণা” দর্শনের বাণী হিসেবে অনেক মহৎকিস্ত শক্তিদীন জাতির আত্মপরীক্ষা পর্বে এর কোনো যূল্য নেই। নবদ্ধীপে চাঁদকাজির অত্যাচারে অতিষ্ঠ, মুসলমাঁনের শাঁসনে বাঙ্কালীজীবন যখন শঙ্কার সমুদ্রে ভাসছে-চৈতন্য এলেন বদ্ধাঞজলি হাতে ক্ষমার মন্ত্র নিয়ে। এর মধ্যে সাহাত্্য নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু ঘটনার মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে সমগ্র বাঙ্গালী স্বভাবের ভীরুতা দুর্বলতার লক্ষণ নিপীড়িত মানুষকে রক্ষার অভয় বাণী নিয়ে সেদিন যদি কোনো শক্তিমান বীরপুরুষের আঁবি9ভ্ভীব হোতো। ইতিহাঁসটাই হয়ত অন্যরকম হয়ে যেতো

অবশ্য চৈতন্যদেবের আঁবিতভাঁব বাংলাদেশের সামাজিক জীবনে, ধর্মজীবনে এমনকি রাজনৈতিক জীবনেও একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিন্দুসমাঁজের আভ্যন্তরীণ অনৈক্যের দিনে, বিপন্ন বাংলার ছুদ্দিনে, অবতার চৈতন্যের আবির্ভীবের ফলাঁফলও হয়েছিল সদূরপ্রসারী সমাঁজজীবনের এঁক্য বিনষ্ট হলে গৃহবিবাদ তখন অনিবার্য হয়ে ওঠে, তাঁর ওপর মুসলমানের অত্যাচারে হিন্দুধর্ম হিন্দুসমাজও সেদিন মুমুযু” চৈতম্যদেবের আবির্ভীব সেই আন্তরবিক্ষু্ বহিঃশক্র-লাঞ্চিত বাংলাদেশে সমাজ তখন সঠিক কর্তব্য জানে না,__ধর্মজগতেও একটা দিশাহারা প্লাবন,_-একটা। সর্বাত্মক পতনের সংকেত যখন আসন্ন_-সম্তবামি যুগে যুগে'র প্রতিক্রতিই যেন পাঁলন করতে এলেন চৈতন্যদেব--বর-অবতার রূপে সেই যুগটি সম্পর্কে নিষ্বোদ্বৃত মন্তব্যটি স্মরণ করি-_7)5 9957846 99581158. 2170 1039601510 200. ৪1005 0179965 0608.22120 780901)1510 2190 11210110890), 01 10101) 009 00817616 0£131000150 ৪৩ (0:00) 01099510110 9002150106005 11063 ৪1) 20901000081 019.50106959 10101) 72215917090. 0102 11016110650 50100591105 0 1319170)9171500 23 ৪. 161151010--15100156 01025 আ০1ত 5001) 25 1529060. &, 1০009110091: 2157. ৪2,৬1001:,২

সেই পরিত্রাতা হলেন শ্রচৈতন্তদেব | ধর্মজীবনের পুনরুথানের ইতিহাঁসে চৈতচ্যের আবির্ভাব সার্থক হয়েছিলো আপাতদৃষ্টিতে রাজনৈতিক ইতিহাঁসের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগ নেই বটে, কিন্তু গভীরভাবে চিন্তা করলে চৈতন্য আবির্ভাবের সঙ্গে

২, 01, 5. ৮১025, 8:09 7156975০005 219252. 0 200 01০৮6095000 82175591, 0910009, 1942, ৮2৩,

উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

বাঙ্গালীর রাষ্ট্রচেতনারও একটা যোগাযোগ আবিষ্কার করা সম্ভব ষোড়শ শতাব্দীর অগ্রগতির পথে ধর্মই সেদিন মুখ্য, ভূমিকা গ্রহণ করেছিল ।-_ধর্ম জাগরণই জনচিত্বকে উদ্বোধিত করেছে নবতর জীবনাদর্শ, নতুন করে জীবনের মৃল্যায়নও শুরু হয়েছে এই নবজ্জাগরণের সঙ্গে সে যুগের রা'্তীয়জীবনের প্রত্যক্ষ যৌগ ছিল না, কিন্তু একটা অম্পষ্ট জাতীয়চেতনার উপলব্ধি এই নবজাগরণের মূলে আবিফার করা যায় ! ধর্ষ- আন্দোলন রাষ্র-আন্দোলন সম্পূর্ণ পৃথক ব্যাপার, কিন্তু একেবারে যৌগঙ্থত্র বিহীন বলা যায় না উনবিংশ শতাব্দীর জাঁতীয়চেতনা এই ধর্যান্দোলনকে কেন্দ্র করেই ঘনীভূত হয়েছিল। চৈতগ্যযুগের এই নবজাঁগরণের সঙ্গে রাষ্ইচেতনার যোগ নেই _ ধর্মান্দোলনের নাঁয়করূপেই সারা ভারতে চৈতন্যদেব স্বীকৃতি পেয়েছিলেন তকে চৈতগ্দেব সমাজচেতন। সঞ্চার করেছিলেন বাঙ্গালীর প্রাণে কুসংস্কার দেশাঁচারে মগ্ন, কৌলিগ্কপ্রথার বিষে জর্জরিত হিন্দুসমীজের সামনে চৈতন্যদেব মানবত্ঠার নতুন বাণী শোনালেন বল্লালী গোৌঁড়ামী, ত্রাক্ঘণ্যশাঁসনের নিষ্ঠুরতার হাত থেকে মুক্তি পাবার আকুতি ছিল মানুষের মনে, চৈতন্যদেব সেই বাণীই প্রচার করলেন সে- যুগের সমাজজীবনে এর চেয়ে বড়ে। বিপ্রবের খাঁনী আর কী-ই-বা হতে পারত? শুধু হিচ্দুসমীজের গৌড়ামীই নয়_ হিন্দু-মুসলমাঁনের ভেদকেও উপেক্ষা করে মানুষের সত্য আত্মার জয়ঘোঁষণা চৈতগ্যযুগের সবচেয়ে বড়ে| সমাজ বিপ্লবের বাণী বহন করেছে অহিন্দু মুসলমাঁন চৈতগ্যভক্ত হতে পেরেছে, ধর্মীয় রীতি নীতির এই অনাবিল উদারতাঁর মধ্যে সমাজ পরিবর্তনের একটা নিশ্চিত ইঙ্গিত লুকিয়েছিল। সমাজ বিবর্তনের এই সীমারেখা শুধু ধর্মজীবনেই আবদ্ধ নয়, রাই্রজীবনেরও ক্ষচন! করেছে বলা যেতে পারে চৈতন্যধর্মের পলিমা'টিতেই এঁক্য রাষ্চেতনার প্রথম বাণী উচ্চারিত হয়েছিল ঠিকই, কিন্ত একথাও সত্য যে সেই যুগের ধর্মীয় জয়োল্লাসের মধ্যে তা ডুবে গেছে। চৈতন্যদেব শুধু সর্বশ্রেণীর মানুষকে একাকার করে যাননি - মানুষের প্রচণ্ড শক্তির একটা ধারণাঁও পেতে চেয়েছিলেন সামাজিক ভেদবুদ্ধির উর্ধ্বে সম্মিলিত মানুষের সংঘবদ্ধ শক্তির মধ্যে তিনি একটি অলক্ষ্য এক্যের শক্তিও প্রত্যক্ষ করেছিলেন। ধর্মের ডাকে যারা এক হতে পারে-_অন্য কোন অনুভূতির আহ্বানেও তারা একদিন মিলিত হতে পারে--একথা যেন সকলেই বুঝেছিল। চৈতন্যদেবের প্রবতিত এই ধর্যান্দোলনের অন্ত কোনে ব্যাখ্যা হয়নি। নিতান্তই ধর্মভীরু মানুষ নামগানে মীতোয়ার? হয়ে আছে--এর আর অন্য কি ব্যাখ্যাই বা হতে পারে ? কিন্তু অহিচ্ছু শীসকগেণঠী এই এঁক্যের শক্তিকে নজরে দেখেনি-_তারাই এর অস্ত মানে খু'জে পেয়েছিল নবদ্ধীপে কাঁজির অত্যাচার যখন চূড়ান্ত আঁকার ধারণ করেছে চৈতন্য শিষ্যদের মনে তখন একটি অদৃষ্পূর্ব শক্তিকেই প্রত্যক্ষ করেছি আমরা

প্রাচীন মধ্যযুগের বাংলাদেশে রাজনীতিচর্চা

এতদিন অত্যাচারের হাত থেকে পলায়নের পথ খুঁজেছে যাঁরা তারাই আজ সংঘবদ্ধ শক্তিকে সম্ঘল করে প্রকাশ্যে বুক পেতে দিয়েছে, উদ্যত শাঁসকের সামনে যে মনোবলের পরিচয় দিয়েছে,_ইতিহাঁসে তার নজির আর কোথাও নেই

চৈতন্যদেব সহনশীলতার প্রতিযৃত্তি | বিপদ-বাঁধা তুচ্ছ করে সহাশক্তির যে পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি নিজের জীবনে, ভক্তরাঁও সে পথ অনুসরণ করেছে চৈতন্য শিষ্য সম্প্রদায়ের ওপরে এই সহাণক্তির পরীক্ষা হয়েছে বাঁরবার। লাঞ্ছনার ভীতিকে অগ্রাহ্ করে যে মনোঁবলের পরীক্ষায় চৈতন্যশিষ্ঠর1! সসম্মানে উত্তীর্ণ, সমগ্র জাতির অন্তরে তা এক প্রচণ্ড উদ্দীপন] স্বজন করেছিল তাই দেখি, চৈতন্যদেবের ধর্মান্দোলন বাংলাদেশের প্রথম জন-আন্দোলন ; সর্বশ্রেণীর সর্বস্তরের মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেছে। বাঙ্গালীর জীবনে এই আন্দোলন একট] অচিন্ত্যপূর্ব ইতিহাসের উদ্বোধন এই এ্রতিহাসিক দ্টত্তরাঁধিকাঁর বাঙ্গালীর জীবনে ব্যর্থ হয়নি চৈতন্যযুগের এই মহিমাঁকে শুধু স্মতির সামগ্রী বলে বন্দনা করলেই এর সবটুকু মর্যাদা দেওয়া হয় না। বস্ততঃ এই যুগ এসেছিলে! বলেই বাঙ্গালী একদিন ভারতসভায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল মহান ব্যক্তিত্ব থেকে শুধু প্রত্যক্ষ উপকারই পাই না আমরা, পরোক্ষ- ভাবে সামাজিক রাষ্রনৈতিক ক্ষেত্রেও প্রভাবিত হই জাতির চিস্তীধারাকে একটি পরিণতির দিকে চালনা করে নতুন ভবিষ্যতের দ্ারোদঘাঁটন করেছিলেন চৈতন্যদেব শুরু ধর্মযজ্ঞের হোতা বা অবতাররূপেই নয়,__সর্বযুগের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করলে দেখা যাবে চৈতন্যদেব জাঁতিঅষ্টা উনবিংশ শতাব্দীর জাতীয় জাগরণের মুহুর্তে ষোড়শ শতাববীর এতিহাসিক জাগরণের চিত্র স্বভাবতই আমাদের মনে পড়ে-কিস্তু ইতিহাসে ঘটনার কোনো ছায়াঁপাঁত নেই

চৈতন্যদেবের ধর্মের কোমল দিকটি সে যুগে বিশেষ প্রতিক্রিয়৷ সঞ্চার করেছিলো _সে সম্পর্কে পূর্বেই বলেছি চৈতন্য শিষ্তসম্প্রদায় আদর্শে সহনদক্ষতায় অবিচল ছিলেন কিন্তু সাধারণ মানুষ ক্ষমা, প্রেম বিনয়ের দ্বারা বিগলিত হতে চেয়েছে,__ চারিত্রিক দৃঢ়তা অর্জন করেনি | ভক্তিগঙ্গার জলে পবিত্র হয়ে, নির্বেদ বৈরাগ্যে মত্ত হয়ে থাকার মধ্যে জাতীয়স্বভাবের দৃঢ়তার পরিচয়টিই অন্কুপস্থিত। তাই শ্রীচৈতন্থ যখন বদ্ধাঞ্জলি হাতে সমগ্র জাতির সামনে এসে দীঁড়ালেন--ভক্তির অলৌকিক মাহাত্্যে ক্ষত্রিয় রাজধর্ম ভূলে, হিংসা-ঘ্েষ বর্জন করে পরম সাধু হল, তার সামাজিক প্রতিক্রিয়া শুভ হতে পারে না। পরাধীন জাতির অসাড় অনুভূতিতে আরও কয়েক স্তর নিদ্্িয়তার ধুলো জমে উঠল এই স্থযোগে চৈতন্যদেব রাঁজদরবারের সঙ্গে প্রতিদ্বন্কিতা করেননি- কিন্ত তারই প্রভাবে হোসেনশাহার ছজন প্রভাবশালী অশাত্য বিষয়কর্মত্যাগ করে সন্ন্যাসী জীবন বেছে নিলেন, এতে গৌড়রাঁজ খুশি হননি

উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

নিশ্চয়ই তাই এ্রতিহাসিক চৈতন্যপ্রবতিত ধর্মের সমালোচনা করে বলেছিলেন €0০0 5016 09 ০07300106 09010081 06651০6*৩ চৈতন্তের ধর্ম বাঙ্গালীর ভাবুক চিত্তকে আরও খানিকটা ভাবুক করে তুলেছিল একথা সত্য শক্তি শৌর্ষের কোনো জাঁগরণস্বপ্ন যদি বা থেকেও থাঁকে, চৈতন্তের ক্ষমা প্রেমের বন্যায় তা ভেসে গেল। রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার কোনে! মুমৃষু স্বপ্নও আর বেঁচে রইল না। উত্তেজনা সঞ্চার করতে পারে এমন খাছ গ্রহণে অপারগ হল বৈষ্ণবরা। মাছ মাংস আহারের রুচি কমে গেল, ক্ষত্রতেজ দৈহিকশক্তি স্তিমিত হল, সাধারণ মানুষ হরিভজনীকেই প্রত্যক্ষ মোক্ষলাভের একমাত্র উপায় হিসেবে গ্রহণ করে নিশ্চিন্ত রইল।

চৈতগ্যধর্মের এই দিকটি বাঙ্গালীর জাতীয় জীবনের শক্তিষ্ফুরণের অন্তরায় বলে মনে কর অসমীচীন হবে না দেশের জনগণের মধ্যে শক্তিচর্চার একটা প্রশস্ত ক্ষেত্র থাঁকা অপরিহার্য বলে যদি গণ্য করা যায়__ চৈতন্তযুগে সেই ধারণার বিন্তুপ্তি ঘটেছিল। শ্রচৈতন্ের ধর্ম পরোক্ষভাবে বাঙ্গালীর স্বভাঁবগত নিক্ক্রিয়তা বৃদ্ধি করেছে সম্বন্ধে তিহাঁসিক মতাঁমতটি এই-_...[€ 16195%:50. 015 91555 01179019709] ০102158০621 17) 59 96107 2০007) 05005 16 00007006515 0:0209660. 17015 11৮11075 ৪14 1)0016 0101010705,8

সম্বন্ধে আরও একটি উল্লেখযোগ্য তথ্য এই যে, বৈষ্ণবধর্ম গ্রহণ করে বহু রাঁজ পরিবার হিংসা-দেষের মত রাঁজোঁচিত স্বভাব বর্জন করে ক্ষমা প্রেমধর্মের উপাসক হয়ে উঠেছিলেন বৈষ্ণবতা রাজখর ধর্ম ছুটিই একত্রে পালন করা অসম্ভব) তাই ক্ষত্রধর্মচ্যত হয়ে এর] জাতীয়শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। বৈষ্ণবধর্মে শক্তির প্রশংলা নেই-_কিস্ত বিদেশী রাজশক্তির কাছে প্রেমধর্মের মহত্ব বর্ণনা আর অরণ্যে রোদন কর সমান। এজন্যই দেখতে পাই আসামরাঁজ গদাধরসিংহ বৈষ্ণব ধর্ম চারের বিরোধিতা করেছেন। বৈষ্ণব গোস্বামীদের সংস্পর্শে এলে তার সৈম্দলের মধ্যে অহিংস মনোভাবের উদয় হবে এবং রাজ্যরক্ষার মত সবচেয়ে গুরুতর ব্যবপারেই অবহেলা দেখা দেবে, এই ভয় ছিল তাঁর। এই শংকায় তিনি বৈষ্ণব বিরোধী হয়েছিলেন ইতিহাসের বিবরণটিও লক্ষ্যণীয়--“039901791 91156165215 06 010551091 0662110796100 61586101616 2506 1611715 0০00] ০0০০5৪৫ 0০ 100005০6102 0৫ 6136 (30521705215 2050810790 2000 65801051005 651) ০৫ ০8৮05, 106 800. 00৯19 200 £:010 17001810610) 50:0126 0110155.৮৫

উর

৩.:080017907821277 171560 06 9৩0881 €(৬০1--]] ), 09০০৪, 1948, 1222. ৪, 1010, 2222, ৫, 151, 07722275255,

প্রাচীন মধ্যযুগের বাংলাদেশে রাঁজনীতিচর্

ধর্মান্দোলনের নেতাঁরূপেই ধার প্রসিদ্ধি সেই চৈতন্যদেবও রাষ্নায়কদের চিন্তার কারণ হয়ে ধ্ড়িয়েছিলেন | পরাধীনতার স্পর্শ থেকে স্বাধীন অস্তিত্বরক্ষায় যাঁরা প্রয়াসপী-তারা আত্মরক্ষার জন্যই শক্তির উপাসনা করে থাকে এখানেই বৈষ্ণবধর্মের সংগে শক্তি উপাঁসকদের বিরোধ | বাংলাদেশেও চৈতন্যের তিরোভাবের অল্পকালের মধ্যেই চৈতন্তধর্ষের আবেদন আর তেমন প্রচণ্ড ছিল নাঁ। খুব অল্গকাঁলেই তা প্রায় নিঃশেষিত হয়ে গেছে

চৈতন্তোত্তর যুগের রাষ্রবিবরণ পেতে হলে আমাদের মঙ্গলকাব্যের সাহীষ্য নিতে হবে। ষোড়শ সপগ্ুদশ শতাব্দীর এই সাহিত্যেই যুগজীবনের প্রতিচ্ছবি ধর! পড়েছে পরাধীন বাংলাদেশের পটভূমিকায় কাব্যের জন্ম; পরাধীন কবির মনোবেদন। যা কিছু মেলে তা এই মঙ্গলকাব্যেই অনার্ষ-অধ্যষিত বাংলার সমাজজীবঝর, বৈশ্যশাসিত বাংলাদেশের সত্য ইতিহাসের দলিল হিসেবে মঙ্গলকাব্য- গুলির কিছু মূল্য স্বীকার করতে হবে পাল সেন রাজাদের আমলে বাংলাদেশের আদিম অনার্য অধিবাসীদের সংস্কৃতির সংগে এ্তিহ্ৃমপ্ডিত আর্ধসমাজের অতলান্তিক বৈসাধৃশ্য বর্তমান ছিল। এই অনার্য আদিবাসীদের আদিম প্রক্কৃতি তখনও ছিল অবিক্কৃত তাঁরা ছুরধধর্ষ-বন্ত। কিন্ত স্বাঁধীনপ্রক্কতি এই অনার্য বাঙ্গালী সেদিন আর্য সভ্যতা সংস্কৃতির কাছে মাথা নত করেছিল বাংলাদেশের আঁধীকরণ পর্যায়ের যদি কিছু উদাহরণ প্রামাণ্য বলে গ্রহণ করতে হয় তবে মঞ্গলকাব্যেই তা অনুসন্ধান করতে হবে চণ্ডীমঙ্গল, মনসামঙ্গল ধর্মমঙ্জল সময়ের দিক থেকে পরবর্তীকালের রচনা হলেও আদিবঙ্গদেশের প্রকৃত রূপ বর্ণনাই এর বিষয়-_-আদিযুগের বাঙ্গালীরাই এর কুশীলব

মনসামঙ্গল কাব্যটিতে অবশ্য আধাঁকৃত বাংলার স্পষ্টরূপ আছে কিন্তু চণ্ডীমঙ্গল ধর্মমঙগলের কাহিনী সম্পূর্ণভীবেই বাংলাঁদেশের নিজস্ব কাহিনী ঠিক এই ধরনের সমাঁজজীবন সে যুগের বাংলাদেশ ছাঁড়া অন্যত্র বিরলদৃষ্ট ভারতবর্ষের সর্বত্র যখন ব্রাহ্মণ্য শাসিত হিন্দুসত্যতাঁর জয়পতাকা উড্ডীন, অনার্ষের বাসভূমি বাংলার পথেঘাটে তখনও ফুল্পরা-নিদয়! মাংসের ঝুড়ি কাখালে নিয়ে হাটে চলেছে দ্রতগমনে | চগ্ডীমঙ্গল- কাব্যে আমরা যে সমাঁজের বর্ণনা পেয়েছি তার নায়ক বন্য কিরাত শবর শ্রেণীর _-সাদাঁবাংলায় ষাঁদের নাঁম ব্যাধ। যুদ্ধবিদ্ভার অপরিসীম পারদর্শিতা না! থাকলেও দৈবক্কপাঁবলে এর! পাশ্ববর্তী রাজার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণ। করেছে, মঙ্গলকাব্যের বিষয় বলে এই কাঁহিনীই আমরা পাঠ করে আঁসছি। কেন চণ্ডীমঙ্লের নায়ক একজন বিশুদ্ধ বাংলার আদিবাঁপী, কেনই বা তার শৌর্য-বীর্য কাহিনীই মঙ্গলকাব্যের মুখ্য বিষয় তা আমরা জানি না প্রামাণ্য ইতিহাসের অভাবেই। এই আদিবাসী নায়কদের কোনে।

১০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

রাজনৈতিক ইতিহাঁস নেই-কিস্ত বৈদেশিক আক্রমণকাঁরীদের কাছে এরা বিনাদিধায় আত্মসমর্পণ করেছিল-_-একথা মানতে পারি না। সংঘবদ্ধতা বা একতার অভাবও যে ছিল না তাত নানাস্থানেই দেখেছি ঃ--তাছাঁড়া জাতি হিসেবেও এর ছিল দুর্ধর্ষ বন্য, বাঁঘ-সিংহকে স্থকৌশলে বধ করার নেশা এদের উত্তরাধিকারগত শক্তি, অথচ এরাই ভীরু মানুষের মত বিদেশীকে ভয় করেছে বা সহজে আত্মসমর্পণ করেছে সেটা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে নাঁ। চণ্ডীমঙ্গলকাব্যের কালকেতু এক অমিতশক্তিমান বন্য পুরুষ, কিন্তু কোথাও বীরোচিত কুশলতা এর ছিল নাঁ--হয়ত এই অবোঁধ সারল্যই এদের শক্তিহীনতার-সহজবশ্যতার যূলকারণ | বুদ্ধিবৃত্তির সাধারণ স্তর থেকেই এরা জীবনকে দেখেছে, তার মূলে কোনো কৃটনীতিকে প্রশ্রয় দেয়নি |

কিন্তু ধর্মমর্গল কাব্যখানিকে ঠিক পর্যায়ের রাজনীতি চেতনাশৃন্য কাব্য বলে অভিহিত করা যায় না। মুখ্যতঃ রাঁজনীতিই এর প্রধাঁন অবলম্বশীয্প বিষয়। যুদ্ধের দামামা আর নবলক্ষ সেনাঁদলের অমিত বিক্রমের বর্ণনা এর পাতায় পাতায়, আর কিছু রাজনৈতিক মাঁরপ্যাচের কাহিনীও এতে মিলবে সপ্তদশ শতাব্দীর যুদ্ধমুখর মুহূর্তে ধর্মমঙ্গলের শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার ঘনরাম চক্রবর্তী অন্ত্যজদের দেবতাঁকে নিয়ে এই যুদ্ধ বর্ণনীকীর্ণ কাব্যখানি লিখেছিলেন এর সমসাময়িক একজন কবিই আবার একাব্য লেখার অপরাধে ব্রাহ্মণ্যসমাঁজে ভ্রষ্ট বলে অভিহিত হয়েছেন | ঘনরাম চক্রবর্তী কিন্ত বাঁধানিষেধ না! মেনে আদি বাংলার গৌরৰ গাথাকে তার কাব্যের বিষয়ীভূত করেছেন নির্তীকচিত্তে। সে যুগের রাজনৈতিক আকাশে যুদ্ধের ঘনঘটা, বারভূইঞাঁদের সংগে মোঘল সম্রাটের প্রেরিত সেনাঁপতিদের যুদ্ধ চলেছে, তখন কবি নিভৃত গৃহকোণে নিজেকে আবদ্ধ করে রেখেছেন আরও একটি যুদ্ধবর্ণনায় ঘটনাস্থল গৌড় যা সেষুগেও বিগতগৌরবশ্শ্রীহীন আর যে পাত্রপাত্রী তার কাব্যের নায়ক-নায়িকা তারাও বহুদিনই অবলুপ্ত | রাজধানী গৌড়ে ধর্পালের শেষতম বংশধরটিকেও আমরা বাংলাদেশের কোনে। লুক্কায়িত গুহ! থেকেও অনুসন্ধান করতে পারব না। অথচ ঘনরাঁম চক্রবর্তী ধর্মকীব্যের পটভূমিকায় এই অতীতচারী গৌড়পাঁলের কীতিগাথা৷ রচনায় উৎস্ক হলেন কেন সে এক আশ্চর্য রহস্য আর এই ধর্মমঙ্গল কাঁব্যেরই কোন একটি মানুষের মুখে আমরা এমন এক-একটি আশ্চর্য অনুভূতির সাক্ষাৎ পাই যার মধ্যে স্বদেশচেতনার পুরোপুরি প্রকাশ রয়েছে গৌড়যাত্রীর পালায় রাশী প্রিয়তম পুত্রকে গৌড়ে পাঠাবার সময় বলছেন-_

“পরাধীন পরাঁণ বিফল হেন গণি ॥»

রাণী পুত্রবিচ্ছেদে শঙ্কাতুরা-বিষাদপ্রতিমা কিন্তু পরাধীনতার অভাবে যে জীবনই বিফল-অর্থহীন সত্য তিনি বিস্বত হননি আর পরাধীন শব্দটির সঙ্গে পরাণের

প্রাচীন মধ্যযুগের বাংলাদেশে রাঁজনীতিচর্চা ১১,

বফলতার গোতন! সপ্তদশ শতাব্দীর ইতিহাস সমধিত এক অত্যাশ্চর্য সত্যঅন্থভব, বহুপরে যাঁর সত্যতা উপলব্ধ হয়েছে ; আরও ছুটি কি তিনটি শতাব্দীর প্রয়োজন হয়েছে তারজন্য উনবিংশ শতাব্দীতে যা আভাষমাত্র সঞ্চদশ শতাবীর এক বিস্বৃত মুহূর্তে সেই আভাষই যেন অলক্ষ্যে উচ্চারিত হয়েই থেমে গেছে এই উচ্চারণের মধ্যে কোন এক শুভলগ্নের হুচনা দেখা যেতে পারত- কিন্তু আমাদের গা অবচেতনার খোলস সে ভাঙ্গতে পারেনি রাণী রঞ্জাবতীর মনোবেদনায় এই অসীম অর্থবহ পংক্তিটি কথায় কথায় মিলিয়ে গেছে মাত্র ধর্মমঙ্গল কাব্যের মধ্যেই পচেতন রাঁজকাহিনীর অবতারণা করা হয়েছে এখানে রাজা আছেন, অমাত্য আঁছেন, মন্ত্রী আছেন ; আশ্রিত বিশ্বাসী প্রজা অত্যাচারিত প্রজারও সাক্ষাৎ পাই। মৃখ্যতঃ এটি রাজার কাহিনী--যার সঙ্গে যুদ্ধ শব্দটি প্রায় জড়িয়ে থাকেই। মামরা রাজাকে জানি তাঁর যুদ্ধসামধ্যের মাঁপকাঁঠিতে, শক্তির পরিচয়েই তার আত্মপ্রতিষ্ঠা। অন্তান্ত মঙ্গলকাব্যগুলিতে রাজকাহিনী নেপথ্যে কিন্তু ধর্মমঙ্গলে নাজাই প্রধান ব্যক্তি প্ধর্মপাল নাঁমে ছিল গৌড়ের ঠাকুর” এবং এই গৌড়রাজ প্রত্যেকটি চরম মুহূর্তের সঙ্গে জড়িত রাজকাহিনীই ধর্মমন্গলের মুখ্য বিষয় রাজা, স্ত্রী, মহাপাত্র, আশ্রিত সামন্তরাঁজ এর মুখ্য নায়কগো্ঠী |

সপ্তদশ শতাব্দীর ইতিহাসে আমরা দেখেছি এক চূড়ান্ত বন্ব__বার তুইঞাদের বক্রমকাহিনীর পরিচয়ও অন্থত্র রয়েছে। বিস্ত লক্ষ্য করেছি--যুদ্ধবিক্রমের দামামায় বাংলার প্রতিটি অঞ্চল যখন মুখরিত, ্যন্দরবনের গহন অরণ্যেও যে যুদ্ধমশীল জলে টঠেছে,_ পর্ত,গীজ দক্থ্যদের অমিত বিক্রমে জলস্থল যখন আন্দোলিত তখন াহিত্যষ্টাদের আসর সে ব্যাপারে একেবারে নীরব | একমাত্র ধর্মগীতি হিসেবে কিছু 'বঞ্চব কবিতা পেয়েছি পূর্ববর্তী গৌড়যুগের নিছক অন্থসরণই যেখাঁনে প্রধান [গচিহ্ের কোন ছায়াপাত সে যুগের কোন কাঁব্যেই দেখা যায়নি ধর্মের আবরণে কছু প্রকাশ করা যদিবা সম্ভব ছিল- প্রকাশ্ট ভাষা সেখানে অকল্পনীয় কিন্ত গুদশ শতাব্দীতে বাঁন্তবজীবনের যুদ্ধকেই সাহিত্যের বিষয় করে ঘনরাম চক্রবর্তী দ্বার পাত্র হয়েছেন। ধর্মমঙ্গলের শ্রেষ্ঠ রচনীকার হিসেবে তার প্রসিদ্ধি অন্য টারণে | তিনি ধর্মমাহাত্্য বর্ণনায় পটুত্ব দেখিয়েছেন বলেই তার প্রশংসা কিন্ত ন্থটির প্রায় অর্ধাংশ জুড়ে যে যুদ্ধ বর্ণনা করেছেন, সে যুগের যুদ্ধস্বতিকে জীবন্ত করে [লেছিলেন সেকারণে তার বাস্তবদৃষ্টির প্রশংসা হয়নি ধর্মমঙ্জলে লক্ষ্যণীয় যুগ- বশিষ্ট্য অনেক ধরা পড়েছে কাব্যেই দেখি বিন। দৌষে অত্যাচারী মন্ত্রী নিরীহ মহুগত প্রজ্ঞার সর্বনাশ সাধন করেছে কবি বন্দী সোমঘোঁষকে দেখলেন-_“বিপাকে ৎসর বন্দী আছে কর্মদোষে কারণ “সম্প্রতি সামর্ধ্য নাই রাজকর দিতে 1 সোমঘোষের

১২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে ব্বদেশপ্রেম

ছুরবস্থায় ধর্মপাল আশ্রিত হিসেবে অন্য এক শক্তিমান সামস্তরাঁজার কাছে পাঠালেন-- কিন্ত সোমঘোষের শক্তিমান পুত্র ইছাই ঘোষ পিতৃ অপমানের প্রতিশোধ নিলেন আশ্রয়দাঁত1 সামন্তরাঁজ। কর্ণসেনকেই বিতাঁড়িত করে সপ্তদশ শতাব্দীর ঘটনাবর্তের স্পষ্ট ছায়াপাত এখানে, আশ্রিত রাজাই শক্তিসামর্ধের অধিকারী হয়ে বিনাক্ণারণে আশ্রয়দাতাকে বিতাড়িত করছে কিন্তু সোঁমঘোঁষতনয় ইছাই ঘোঁষের বলিষ্ঠ যুক্তি ছিল__ অবিচারে অনাহারে, গোৌড়ে বন্দী কারাগারে-_ দুঃখ ভাবে ছিল মোর বাঁপ। একি শুধুই প্রতিশোধ মাত্র 1 পিতৃ অপমান লাঞ্ছনার এতিবাদে ইছাই ঘোষ দুর্বার হয়ে উঠেছে শক্তিমান কখনও স্থযোগের অপব্যবহার করে না, তাই প্রয়োজনে আশ্রয়দাতাকেই উৎখাত করেছেন তিনি ইছাই ঘোষের আচরণের প্রথমাংশকে আমরা সম্পূর্ণ ভাবেই সমর্থন করি; পিতৃ অপমানের প্রতিশোধ যোগ্যপুত্রই নিতে পারে কিন্তু এর পরের ঘটনাকে সমর্থন করি না। আমাদের স্বাভাবিক ধর্মবেধ আশরয়দাতার অপমানের সমর্থন করে না, লেখকও করেননি এখাঁনেই ইছাই ঘোষ সম্পূর্ণরূপেই একটি অপরিচিত চরিত্র। আমাদের পরিচিত পৌরাণিক সংস্কারের সমর্থনবিহীন এক অমিত শক্তিধর বিশ্বাসঘাতক পুরুষ। বীরত্ব, শোর্ষবীর্য, স্বাধীনতাপ্রিয়তার প্রপর্ধ ঘনরামেয় উপলব্ধ সত্য, সপ্তদশ শতাব্দীর সমাজজীখন থেকেই তা আহত ইছাই ঘোঁষ পৌরুষের প্রতীক একটু আবরণ- বিহীন করে দেখলে আমরা ইছাই ঘোষের মধ্যে যবন অত্যাচারীদের আত্মাকে অনুসন্ধান করে দেখতে পারি ইছাই ঘোষ কি ভুইফোড় শক্তি নয়? সে শুধু স্বযোৌগ সন্ধানের স্থব্যবহাঁর করেছে মাত্র রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইছাই ঘোষকে চিনে নিতে পারি একমুহূর্তেই মোঘল শক্তির সঙ্গে এদেশীয় শক্তির বন্দে এমন অনেক অজ্ঞাত শক্তির আবির্ভীব সম্ভব হয়েছিল মে যুগেই। এদের অনেকেই নিয়শ্রেণীর সমাজ উদ্ভূত ইছাই ঘোষ সম্পর্কে ঘনরমের পরবর্তী উল্লেখটিও লক্ষ্যণীয়__

"দৈববলে গড়ে গোপ রাজা হইল পাঁটে

দেবতা দানব ডরে শাহি চলে বাটে

সেইরূপে গোয়ালা ব'ড়িল দৈববলে।

সেনের সম্পতি লুটে নিল বলেছলে ইছাই ঘোষ প্রসন্গে রচনাকারেরও সহানুতৃতি ছিল না- এই অংশটি তার প্রমাণ

সা

প্রাচীন মধ্যযুগের বাংলাদেশে রাজনীতিচর্চা ১৩

অবশ্য ধর্মমঙ্গলের মূল উদ্দেশ্টটি লেখক স্ৃকৌশলে ব্যক্ত করেছেন। রাজনৈতিক ঘটনার ফাঁকে লেখক ধর্মপ্রচার করেছেন বারংবার আর ইছাই ঘোষ-এর মত একটি চরিত্রের মধ্যেও তিনি ধর্মের অবতারণা করেছেন ইছাই ঘোষ পার্বতীর সেবক -আর দৈববলের মাধ্যমেই সে জয়ী

ধর্মমঙ্গলের ইছাঁই ঘোষ অধ্যায়টিকে সে যুগের রাজনৈতিক ঘটনার রূপক হিসেবে প্রতিষ্ঠা কর সম্ভব নয় ;--আঁর সচেতনভাবে রাজনীতিকে প্রেক্ষাপটরূপে ব্যবহার না করে ঘনরাম চক্রবর্তাও একটা চিরাঁচরিত পথেরই অনুসরণ করেছিলেন মাত্র

সে যুগের রাষ্্রচেতনার যে প্রত্যক্ষ পরিচয় ধর্মমঙ্গলে পেয়েছি__অন্ঠান্য মঙ্গলকাঁব্যে তা নেই। তবে মনসামঙ্গলের চাঁদসওদাঁগর চরিত্রে পৌরুষ ব্যক্তিত্বের যে সমাবেশ দেখি-ছূর্বল বাঙ্গালীচরিত্রের মাঝখানে সেও একটা ব্যতিক্রম মনসা- মঙ্গলের এই চরিজ্রটিকে আমরা দৈবের সঙ্গে লড়াই করতে দেখি--কিস্ত সে যুগের সমাজে এমন কোঁন চরিত্র কি সত্যিই ছিল না-_ভাগ্যের পরিপার্ের বিরুদ্ধে যে অনমনীয় দৃঢ়তা প্রদর্শনে সক্ষম ? হয়ত ছিল বা হয়ত ছিল না কিন্তু তা সত্বেও অমিত শক্তিমান চন্দ্রধর আমাদের ছূর্বল চিত্তে একটা বিশেষ আবেদন জাগায় ধর্মীয় সাহিত্য হলেও মঙ্গলকাব্যে সে যুগের হংস্পন্দন ধর! পড়েছিল,_বিপর্যস্ত জনজীবনের কথা নানা রূপকে অলংকারেও ঢাঁকা পড়েনি মুকুন্দরামের ভালুকের উক্তি আমরা স্মরণ করতে পারি এখানে নিয়োগী চৌধুরী না হয়ে সে শুধু সাধারণ মানুষের মত শান্তিতে বাঁচতে চেয়েছিল কিন্তু তা থেকেও বঞ্চিত হয়েছিল সে। মুকুন্দরামই একমাত্র আত্মস্থ কবি-_-কাব্যের ছকবীধা কাহিনীর ফাঁকে নিতান্ত ব্যক্তিগত শ্বখ-ছুঃখের কথা যিনি বলেছিলেন ডিহিদারতাড়িত বাস্তত্যাগী কবি সে যুগের রাজনৈতিক বিপর্যয়ের কথাটুকু না বলে পারেননি-_-কারণ তাঁকেও সময়ের শিকার হতে হয়েছিল। সমগ্র মঙ্গলসাহিত্যে মুকুন্দরামই রাজনীতি সচেতন কবি। মনসামঙ্গলের কবি চন্দ্রধরকে যেভাবে চিত্রিত করেছেন-_ছুর্বল মেরুদগুবিহীন বাঙ্গালী চরিত্র থেকে অনেক প্রেরণা পেতে পারে ধর্মের কাছে নিধিচারে আত্ম- সমর্পণ করতেই অভ্যস্ত আমরা, সেদিক থেকে চন্দ্রধরই প্রথম বিদ্রোহী পুরুষ; -গতানুগতিক বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যে একদিন প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেছে। ঠাদসওদাগরের সঙ্গে দেবী মনসার বিবাদের কাহিনীটি একটু হেরফের করে নিলেই সে যুগের বিপর্যস্ত মানুষের নীরব প্রতিবাঁদের গুঞ্জন যেন শোনা যায়। াদসওদাগর বণিক না হয়ে যদি কোনো শক্তিশালী রাঁজদ্রোহী হতেন,--€দবী মনসাঁর বদলে বিদেশী অত্যাচারীকে যদি কল্পনা করে নিই, তবে চন্দ্রধর মনসাঁর আঁজীবনব্যাঁপী সংগ্রামের মধ্যে যেন সে যুগের অত্যাচার লাঞ্নার ছবিটিই স্পষ্ট হয়ে ওঠে

১৪ + উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

কিন্ত মনসামঙ্গল রূপক কাব্য নয়, চন্দ্রধরও রাজদ্রোহী নন এর! গতানুগতিক ধারণা থেকেই জন্ম নিয়েছিল। তবু বলব, চাদসওদাগর সেযুগে মর্গলকাব্যের সববাপেক্ষা সজীব পুরুষচরিত্র-লোঁক সহাহুভূতিতে যে ধন্য হয়েছে। জনপ্রিয়তায় কাব্য যে অন্তান্য মপ্লকাব্যকে ছাপিয়ে গেছে অনবগ্ নায়ক চরিত্রটি তাঁর অন্যতম আকর্ষণ আরও আশ্র্য এই যে, দেবতা বিরোধী হলেও চাদসওদাগর মানব দরদ থেকে বঞ্চিত হয়নি,_মনসার যুক্তিহীন পীড়নে আমরা দেবতার ওপরই শ্রদ্ধা হারিয়েছি সমস্ত মঙ্গলকাব্যেই দেবতা উৎপীড়ক -- মানুষ পীড়িত। এও যেন সে যুগের বিপর্যস্ত মানুষের নিখুত চিত্র। রাঁজশক্তি যাঁদের স্থখ-শাস্তিতে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে--সেই দুঃখ ভারাক্রান্ত কবি যখন কাঁব্যরচনায় মনোনিবেশ করেন আত্মপরিচয় দিতে গিয়ে সর্বস্বান্ত বিপর্যস্ত মানুষের কথাই বারবার বলেন। কিন্তু মঙ্গলকাব্যের প্রচলিত রাীতিনির্ভর এই রচনাকে অন্য কোনো দৃষ্টি- ভঙ্গি থেকে বিচার করাও যায় না। কিন্তু কবি যে সমসাময়িক যুগ পরিবেশ থেকেই কাব্যোপাদান সংগ্রহ করেন -সে কথা মনে করলে অনেক তথ্যই স্পষ্টতর হতে পারে

বাংলাদেশে মৌঘল, শাসন স্প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেই বাংলাদেশের শক্তিমান ভূম্বামীদের যে চমকপ্রদ ইতিহাস পাই-_বাঙ্গালীর রাজনীতিচর্চার ইতিহাসে সে ঘটনাই সর্বাপেক্ষা মূল্যবান | বাংলাদেশে বিদেশী অত্যাচারীরা অবাধে গুবেশ করেছে, সেদিন কোন শক্তিই তাদের গতিরোধে সক্ষম ছিল না। কিন্তু শর্তি- সামর্থ্য অর্জন করার পরও নিবিচারে পরের অধীনতা মেনে নেবার মত কাপুরুষ ছিল না বাক্গীলী। সেই সময়েই বারে ভুইঞার আবির্তীব ঘটেছে বাংলা দেশে তবে এদের বিবরণ ইতিহাসে লেখা নেই, যেটুকু পেয়েছি তাঁও সর্বদা সমর্থন- যোগ্য নয়। শক্তিমান শাসকগোষ্ঠীর হাত থেকে আপন স্বাতন্ত্র্য রক্ষার তাগিদে ধারা একদিন আত্মপ্রকাশ করেছিলেন তাদের বিবরণ আমাদের অজানা বলে আজ আক্ষেপ করতে পারি মাত্র। তবে আধুনিক এতিহাসিক কিছু কিছু তথ্য পরিবেশন করেছেন। বারে! ভূইঞাঁদের আবিতীবকাঁল সম্বন্ধে যে তথ্য পাই তা এই-_ +006 215০ ০06 0005 132158-91)0158159 06 27052] 15 0015 99690. £1000 1576 4১1, 006 5687 0৫6 005 বি] ০0610800176 1556 [28172121 [106 06 82789], ঢঙে £১599.00 10150015, আন] 0086 আ1)20 006 ০৮61: 18170 01529628190 01: 09০80056৪10, ৪. 0010961০966 0131955 2035 230 12০971706

41505021596756,10015610 1 50200300 87996115007 ভ৪3 10215-13121595,

প্রাচীন মধ্যযুগের বাংলাদেশে রাজনীতিচর্চা ১৫

1020 11) 1576, অ10 006 21] 06 10900) ০0101610105 06081006 51001121110 820821১1800 0095 006 10950500606 510195 01326 22092 17) 73012628] 010102905 15০5120. 006081060৫6 8419-031)01585,৮৬*,

প্রসঙ্গে একটি কথা মনে রাঁখতে হবে- বারো তুইঞ্াদের মধ্যে প্রত্যেকেই বাঙ্গালী জমিদার ব1 খেতাঁবধারী রাজ। নন,_ এদের সঠিক সংখ্যাও পাঁওয়া যায়নি। বারে ভুইঞাদের মধ্যে ধাদের নাম দিধাহীনভাবে গৃহীত হয়েছে তারা হলেন-_ ওসমান, মাসুম কাবুলি, ইসাঁখান, মসনদ-ই-আলি, কেদার রায়। আশ্চর্য এই যে, বারো তুইঞা হিসেবে যে নামটি আমাদের মধ্যে প্রচলিত _যশোহরের প্রতাঁপাদিত্যের নামই সেই তালিকায় মেলেনি প্রসঙ্গে এই উক্তিটি উদ্ধৃতিযোগ্য-_-4১5 45৪1 ৪3 [179৬০ 962 21015 60 800619:21)0. 200 516 015001010০9] 5%167506, [1১9৮০ 09681732010 610015 09 913০7 0080 18990991658. ০৮০1 £908130 510 05 101569 ০৫ £১0917 00809090108 0৫ 0255015 200 £17916917271]08. 0 30010980068: 60 0062 6০ 12৬০ 10051) 002 10021781501: 06 9150 ৪00 406 19১6 (006 11 1912 24 1613 17 0136 15150. 00817813611 13610. 0065 1080. 00 00062 150০0909156 006 60 2210 2100 0365 ০120 00 11) 076 ০070696.৭

অথচ প্রতাপাদিত্য সম্পর্কেই বহু জনপ্রবাদ আমরা পেয়েছি; তার ওপর ভিত্তি করে প্রতাপাঁদিত্য সম্বন্ধে বাঙ্গালী গৌরববোঁধ করেছে,__-বহু মতামতের বাঁধা অতিক্রম করেও প্রতাপাঁদিত্য সার্থক শক্তিমান বাঙ্গালীরূপে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন প্রতাপাদিত্যই মঙ্গলকাব্যে বন্দিত হয়েছেন, তার অজত্র প্রশংসায় মুখরিত হয়েছে বাঙ্গালী | ইতিহাঁসে যিনি অনাদূত-বাঙ্কালীর কল্পনায় তিনি আদর্শ নায়ক--এর হেতুটিই জটিল। কেদাররায় প্রতাপাঁদিত্যের শৌর্যবীর্য স্বদেশচেতনার কাহিনী নিয়ে পরবর্তী- কালে বন্থ উপন্তাস-নাটক রচিত হয়েছে,__বাক্ষালীর জীবনে অতীতচর্চা যেদিন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠেছিল।

যে যুগে এই সব শক্তিমান বাঙ্গালীর আঁবি তব ঘটেছিল-_তখনও বাংল! দেশে পরাধীন বাঙ্গালী অনাদৃত- আত্মদৈন্যে অনৈক্যে ছিধাভক্ত তবু মাঁঝে মাঝে এই জাতীয় কিছু কিছু প্রচেষ্টার সংবাদ যখন কাঁনে আসে-_তার মধ্যেই গুরুত্ব আবিফারের চেষ্টা করি আমরা নিছক নিন্দার পটভূমিকায় যেন খানিকটা আত্মপ্রতিষ্ঠার

৬, 81171 12009 03105055521 4352891 000525 5098£1৮5, 301785] 2550 ৪170

18551001928 (021৮৯120080, গ5. 11010,

১৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

চেষ্টা এই জাতীয় ঘটনার মূলে রাষ্ট্রবিপ্লবের প্রসঙ্গ ছিল না- জাতীয় চেতনাও অনুপস্থিত কিন্ত তবু দেখছি ইতিহাঁসের সমর্থনের অপেক্ষা না করেই প্রতাঁপাদিত্যের মত বীরবাঙ্গালীকে অবলম্বন করে আত্মগৌরবে ন্ফীত হয়েছি আমরা কোন কোন উত্তেজনার মুহূর্তে সামান্তও কিভাবে অসীম হয়ে ওঠে-_এ তারই নিদর্শন মোঘল শক্তির সঙ্গে একজন বাঙ্গালীর বিরোধের পটভূমিকায় অনেক কিছু কল্পনা করে নেওয়াটা খুব শক্ত কিছু নয়। এই অবান্তর আত্মপ্রশংসাঁর সমালোচন। করে ধতিহাসিক যছুনাথ সরকার বলেছেন -4১ 9152 070৮10618] 080000510 1793 190 00006] 32105911 10215 00 £101065 606 83218. 13100015895 73217691] ৪85 0০ 01781001960105 ০0৫6 178610178] 117062159271)06 9£91756 01615 119520215.৮

বারোভুইঞা হিসেবে ধাঁদের আমরা গৌরবে ভূষিত করেছি-_সত্য *ইতিহাসের সাহাধ্য নিলে দেখা যাবে সংগ্রামপ্রচেষ্টার মধ্যে কোন বীরত্ব ছিল না। অনেক সময়-ই তা নিছক অপারগ সংগ্রাম, বিজেতা রাঁজশক্তির বিরাঁগভাঁজন বলেই কিংবা সন্ধির কোন স্বাভাবিক উপায় ছিল না বলেই সংগ্রাম অপরিহার্য হয়েছে-_যাঁর একমাত্র ফলাফল নিশ্চিত পরাজয় বিশেষ করে প্রতাপাদিত্য সন্বন্ধেই "আমাদের উচ্্কাস একটা চূড়ান্ত আকৃতি লাভ করেছে এর একটি কারণ আবিষ্কার করেছেন এতিহাসিকরা বাংলার নবজাগরণ লগে মেবাঁরের স্বাধীনচেত' রাঁণ৷ প্রতাপসিংহের আদর্শে মুগ্ধ বাঙ্গালী বাঙ্গীলার ইতিহাস থেকে অনুরূপ একটি চরিত্র পন্ধান করতে চেয়েছিল, প্রতাঁপাদিত্য এই স্থযোগেই প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন বলে এঁতিহাঁসিকদের ধারণা 7102 1801510 06 20501716515 152,016]. 12] ০001: 01907021050 ০৪11 10190909.01052, 06165501523 61১০ ০0066179876 02 14091791272 77908091051 0: ০৬2, [6 15, 01)5190016) 10650995215 00 20001 0176 130776911 107210+ 105 69100105006 0 11106 06 10150015018 10110,৯

যাই হোঁক, মধ্যযুগের বাঁঞ্লা দেশে কিছু শক্তিমান ভূম্যধিকাঁরীর আবির্ভাবের ঘটনাটি একেবারে উপেক্ষণীয় নয়,_অতিরঞ্রন কিছু হয়েছে কিন্তু আসল ঘটন। একেবারে ভিত্তিহীন নয়। এ'রা রাজনৈতিক দাঁবী নিয়ে আবিভূত হয়েছিলেন তাঁও সত্য। প্রতাঁপাঁদিত্য তাঁদেরই একজন | দ্য জারিকের ইতিহাসে আমরা যে তিনজন হিন্দুরাজীর বারোভুইঞ। হিসেবে নাম পাই-_ প্রতাঁপাঁদিত্য তাদের একজন

৮৯000017290 ৯2127 [2150079 0113070871 (৮০]. 1] ), 10250091948, ৮--2255 ৯. 1010,

প্রাচীন মধ্যযুগের বাংলাদেশে রাজনীতিচর্চ৷ ১৭

প্রীপুর, বাকল ঠাদেকানের রাজাকে তিনি বারোভুইঞা বলে উল্লেখ করেছেন এর মধ্যে শ্রীপুরের রাজা কেদাররায় বাঁকলাঁর রাজা রামচন্দ্রের নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকলেও চাদেকানের রাঁজার কোন সঠিক উল্লেখ নেই। অথচ বাকলার রাজার সঙ্গে চাদেকানের রাজার আত্মীয়তার উল্লেখ আছে। বাঁকলার রাজা প্রতাপাদিত্যের নিকট আত্মীয় স্থতরাং উল্লিখিত ঠাদেকানের রাজ প্রতাপাদিত্য সগ্থন্ধে বিশদ বর্ণনায় অন্যান্য তথ্য সম্িবেশ করেছেন অথচ চাদেকানের রাজার সঠিক উল্লেখটিই করেননি

মাত্র জন হিন্দুরাঁজার উল্লেখই প্রমাণ করে অতীতের স্তিমিত শৌর্ষের সম্পূর্ণ সমাধি হয়েছে মনে হলেও হিন্দুরাজাদের অতীত শৌর্ষের শেষ বৈভব এ'দের মধ্যে মুহূর্তের জন্য উজ্জল হয়ে উঠেছিল। পরাধীনতার গ্লানিতে জর্জরিত জাতির অন্তরের বিক্ষুব্ধ ভাঁবটিরই সময়োচিত বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল বলা যাঁয়। শক্তির দীনতায় কোন জাতি আন্তরিক নিশ্চিন্ততা লাভ করতে পারে না-_-তাঁই মোঁঘল-পাঠান-তুর্কা আমলের অত্যাচারে ছিন্নমূল বাঙ্গালীর মনে শান্তি ছিল না নিশ্চিন্ততা ছিল না অথচ প্রত্যক্ষ সংগ্রামের কোন পথ খোলা নেই সংঘশক্তির অভাব, এঁক্যবোধ ধিখপ্ডিত হওয়ায় বাঙ্গালী সেদিনকার সমস্ত অন্তায় নীরবে সহ না করে কি-ই-বা করতে পারত 1 হয়ত গোপনে একটা তীব্র জ্বালা তাঁকে অস্থির করত। কিন্তু নিরুপায়ের মত সেদিন সবকিছু সহ্য করে যেতে হয়েছে তাদের |

চৈতন্যের তিরোভাবের পরই বাংলার রাজনৈতিক জীবনের পট পরিবতিত হলো ছোটখাট সামন্তশক্তিও আত্মরক্ষার জন্য সংগ্রামে অবতীর্ণ হলেন। জাহাঙ্গীরের রাজত্বের প্রারস্তে এই গোলযোগের শুরু আকবরের আমলেও এত বিদ্রোহ বা সংগ্রাম বাংল। দেশে হয়নি আকবর স্থশাসক ছিলেন, তার রাজত্ব সময়ে সমস্ত ভারতবর্ষ শান্ত, একমাত্র চিতোর ছাড়া প্রতাপসিংহের আমরণ সংগ্রাম যুগের এক বিস্ময়কর ইতিহাঁস। দিল্লীশ্বরের অতুলবৈভবের সামনে দাড়াবার কোন ক্ষমতা ছিল না' প্রতাপসিংহের- কিন্তু তাঁর অন্তরের জলন্ত স্বাধীনতা স্পৃহার উল্লাসে তিনি যুদ্ধ করলেন__এর নামই স্বাধীনতা সংগ্রাম প্রতাপসিংহের কাছেই মুমূযূ্ পরাজিত ভারত স্বাধীনতার নতুন অর্থ শিখেছিলো। তাঁর পরই জাহাঙ্গীরের রাজত্ব সময় এর সময়েই বাংলার ভূম্যধিকারীরাঁও স্বাধীন হওয়ার স্বপ্র দেখতেন। সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে অঞ্চল ভেদে অনেক শক্তিমান জমিদারদের আবির্ভাব প্রায় একই সময়ে ঘটেছিল এদের মধ্যে হিন্দু যেমন ছিলেন--তেমনি তুর্কা-পাঠানদের বংশধরও অনেকে ছিলেন। বঙ্গদেশে এদের বসবাস অনেক দিনের-_বাংলাতেই

এদের পৈত্রিক নিবাস সুতরাং বাংলার মাটিতে এরাও স্বাধীন অন্তিত্ব বজায় রাখার

১৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

সংগ্রাম চালালেন বাঁরোভুইঞা হিসেবে ধাদের নাম বিশেষভাবে ইতিহাসে স্থান পেয়েছে তারা সকলেই তুক্কা পাঠানের সঙ্গে সম্পক্কান্বিত রাজশক্তি | হিন্দু শাসকদের সঙ্গে এদের অসন্ভাব ছিল না, কিছু এঁতিহাসিক গুরুত্ব আছে এই সমন্বয়ের পেছনে ত্রয়োদশ থেকে সগ্তদশ-_এই চারশো বছরের অধিবাসী এরা, এই সমস্ত রাক্পুরুষের মধ্যে বাংলা গ্রীতি বাঙ্গলী প্রীতি থাকা অসম্ভব ছিলে না।

সেযুগের বাংলাদেশের হিন্দু বা মুসলমান সকলেরই লক্ষ্য এক ; নতুনাগত শক্তির কাছে কি ভাবে নিজের বহু কষ্টাজিত এই অস্তিত্ব বজায় রাখবেন কিন্তু ভারত বিজয়ী মোঘলশক্তির সামনে দাড়ানোর মত ক্ষমতা এদের মধ্যে কারোরই ছিল না।

তবু বাঙ্গলার ইতিহাসে দেখি, সেদিন সমগ্র বাঙ্গীলীই (হিন্দু মুসলমান ) যুদ্ধোন্ুখ বীরভূম বীকুড়াঁয় বীর হামীর, মেদিনীপুরে বীরভান বা চন্দ্রভান, যশোরে প্রতাপাদ্দিত্য, বাঁকলায় রামচন্দ্র, ভুলুয়ায় অনন্তমাঁণিক্য, ঢাঁক?র খলসিতে মধুরাঁয়, চাদপ্রতাপ পরগণাতে বিনোদ রায়, পাবনার রাঁজা রায়, ভূষণায় রাজা সত্রাজিৎ সথসঙ্গ-এর রাজা রঘুনাথ, এদের নাম সময়ে প্রবলপ্রতাপান্বিত মোঘল সেনাঁপতিদের কাঁছে ভীতিম্বরূপ হয়েছিলো | সারা বাংলায় এর ছড়িয়ে ছিলেন-_ সম্ভবতঃ একের সঙ্গে অন্যের কোন প্রকার যোগাযোগ ছিল না, গুত্যেকেই দিজের রাজ্যের গণ্ীটুকু রক্ষায় তৎপর ছিলেন মাত্র। তাছাড়া একে অন্যের সঙ্গে কোন প্রকার একতাক্ষত্রেও বদ্ধ ছিলেন না। এদের একক পরাক্রম মোঘলশক্তিকে প্রতিহত করার পক্ষে মোটেই যথার্থ ছিল না সেকথা সহজেই অনুমেয় তাই পার্খবর্তী যে কোন শক্তির সাহায্য দের সর্বদাই প্রয়োজন হত। হিন্দুরাজাঁদের পাশাপাশি বহু অহিন্দু শাসক ছিলেন এবং এদের পরাক্রম এইসব বিচ্ছিন্ন হিন্দু- রাজাদের চেয়ে অনেক বেশীই ছিল। শক্তিমান বারোভুইঞ] হিসেবে ধাদের প্রসিদ্ধি তারা হচ্ছেন-_মুসাখাঁন, খোঁজা ওসমান, মাহুমকাবুলি, ইসাখান। এদের মধ্যে মুসাখান ছিলেন সর্বাপেক্ষা শক্তিমান মোৌঘলের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ইনি যে পরাক্রম দেখিয়েছিলেন তাকেই যথার্থ বীরত্ব বলে আখ্য। দেওয়] যায় মোঘলশক্তির কাঁছে নিজের স্বাধীনতা বিসর্জন দেবার আগের মুহূর্ত পর্যত্ত ইনি বীরের মত যুদ্ধ করেছেন ঠিক এ-ধরণের যুদ্ধ আর কারোর সঙ্গেই হয়নি। এর কারণ অতি সহজেই তারা মৌঘলের আয়ত্তে এসে গেছেন। এর পরই ওসমানের নাম করা চলে একক শোর্ষের চূড়ান্ত শক্তি ইনিও দেখিয়েছিলেন বাংলাদেশের এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাঁপটটি আলোচনা করলে দেখ! যাবে যে স্বদেশচেতনাই দেশরক্ষার মহান ব্রত সম্বন্ধে সে যুগের কিছু শক্তিমান রাঁজাকে সচেতন সক্রিয় করেছিল,_-পরবর্তী যুগের কাছে এসব ৃষ্টান্তের সামাজিক রাজনৈতিক মূল্য অপরিসীম প্রতাপাদিত্য চাদরায়ের

প্রাচীন মধ্যযুগের বাংলাদেশে রাঁজনীতিচর্চা ১৯

মধ্যে তুলনায় টাদরায়ই যথার্থ অর্থে বারোভুইঞা। বলে গণ্য হয়েছেন--একথা বলেছি পূর্বে। প্রতাপাদিত্কে কেন এখানে ধরা হয়নি-তারও কারণ রয়েছে প্রতাঁপাদিত্য টাদরায় এরা উভয়েই কর বিনিময়ে রাজ্য রক্ষা করতেন উভয়েই সমৃদ্ধ ভূম্যধিকারী, প্রজা, সৈম্ যুদ্ধোপকরণ নিয়ে এর! সুসজ্জিত; আত্মশক্তিতেও আস্থাশীল ছিলেন মোঁঘলশক্তির কাছে সহজে আত্মসমর্পণ কর এদের পক্ষে অসম্ভব বলেও মনে করা যেতে পারে,_কাঁরণ এদের মধ্যে অনেকেই আপন অঞ্চলের সর্বাঙ্গীণ স্বাধীনতা রক্ষায় সর্বদাই তৎপর ছিলেন কিন্তু কার্ষক্ষেত্রে দেখা গেল স্বাধীনতার চেতনাকে লাঞ্ছিত করে প্রতাপাদিত্যই সর্বাগ্রে উপঢৌকন পাঠিয়ে বাংলার সগ্ভচ আগত ক্ুবাঁদার ইসলামখানের কাছে আপন মনোভাব ব্যক্ত করেছেন এই আচরণ থেকেই প্রতাপাদিত্যকে এতিহাঁসিকগণ বিচার করেছেন সেখানে তিনি বারোভুইঞাঁদের একজন নন,_-মোঁঘলশক্তির বিরুদ্ধে দীড়াবার কোন ইচ্ছা! তাঁর মধ্যে দেখা যায়নি অথচ এই প্রতাপাদিত্যের মধ্যেই আমরা অনমনীয় স্বাধীন চেতন! আবিষ্কার করেছি ইতিহাসের প্রতাপাদিত্য অন্তবর্ণে চিত্রিত। স্বাধীন- চেতনা বলতে আমর! যে মনোভাব বুঝি প্রতাঁপাঁদিত্যের মধ্যে তা মোটেও ছিল না!। কিন্তু এটাই একমাত্র সত্য ঘটনা যে, তাঁকেও মোঘলের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়েছিল ইসলামখানের সঙ্ষে সন্ষিসর্তের বিশ্বাসভঙ্গের অপরাধে প্রতাপাদিত্য অভিযুক্ত হয়েছিলেন দুরদশিতার অভাব না থাকলে তিনি হয়ত যোঘলশক্তির সন্ধিসর্ত রক্ষায় সচেষ্ট হতেন কিন্ত একাধারে দৌলাঁচল মনোবৃত্তি, অদুরদশিতা, নিবুদ্ধিত৷ তার চরিত্রে বর্তমান; গুণগুলিই স্বার্থান্বেষী প্রতাপাঁদিত্যকে কলঙ্কিত করেছে,__-তাই তাঁকে এঁতিহাঁসিকগণ বারোভুইঞার সম্মান দিতে কুণ্ঠিত হয়েছেন বারোভূইঞীর অন্ততঃ মৌঘলশক্তির বিরুদ্ধে আপন শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করেছেন ; রাজ্যরক্ষার অনমনীয় চেতনা তাঁদের ছুঃসাহসী করেছিলো, মোঘলের হাঁতে নিশ্চেষ্টভাবে আত্মসমর্পণ না করে তারা মোঘল এ্তিহাঁসিকের প্রণংসা অর্জন করেছেন-_বীরত্ব স্বাধীনচেতনার প্রণংস। তাঁদের ধন্য করেছে বারোতুইঞাঁদের পরস্পরের মধ্যে কোন সম্মিলিত এঁক্য প্রচেষ্টা ছিলো না, এককথায় জাতীয়তাবোধের কোন উপলব্ধি ছিলো না বলেই বিচ্ছিন্ন সংগ্রামে এরা প্রত্যেকেই বিনষ্ট হলেন শুধু নিস্তরঙ্গ জলে লোষ্টনিক্ষেপের মত মুহূর্তের জন্য একটা অস্পষ্ট শক্তিচেতনা এদের . বিমৃঢ় করেছিলো মাত্র, পরাঁজয় ছিলো যাঁর অবশ্যস্তাবী ফল; তবু এই চেতনাটুকুর জন্য তাঁরা ইতিহাসের শ্রদ্ধা পেয়েছেন এঁতিহাসিকের ভাষায় 75 20527,০5 ০: 156 501116 0£6 28601791165, 60০ 0166201521106 06 11%2115, 12910095 2190 19095611105 20901)856 06 22200175025 02 032 002 5136, 22০

| ০৯০ ৮৮৯

২০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

06 51010] 59021805601 015106. 2170. 201০? 001105 10109050 5 €5০ 1/021921 51521055020. 6106 00061: 5109, 2০০000 00:: 0015 90110021 085205.৯০

পরবর্তা যুগের সামনে যুগের অবদান আলোচনা করলে দেখ৷ যাবে যুগ প্রায়- ক্ষগ্ত বিগত শতাব্ীগুলির চেয়ে পৃথক, আগামী শতাববীর কাছে একটা নতুন কিছু বৈদেশিক আক্রমণ বাংলাদেশে প্রথম অভিনব নয়, £তবু সপ্তদশ শতাব্দীতে কিছু শক্তি ধাদের ছিলো .তীরা সাধ্যমত তা প্রয়োগ করার ক্রটি করেননি তুর্কী আক্রমণের প্রথম জয়োল্লাসের মধ্যে যে জাঁতি সম্পূর্ণভাবে স্তব্ধ হয়েছিলো-_সপ্তদশ শতাব্দীর রণভেরীতে তার প্রথম সশব্দ আত্মঘোষণা |

ঠাঁদরাঁয়, কেদার রায় ছাড়াও এমন বহু শক্তিমাঁন রাঁজপুরুষ যুগে ছিলেন ধারা রাজ্যরক্ষার ক্রটি রাখেননি প্রতাপাদিত্যের টৈভব ঘোঁষণাঁয় যথেষ্ট মুর্খর যুগের ধ্রতিহাসিকগণ আবুলহুসনের অনুচর হিসেবে বঙ্গদেশ ভ্রমণের সময়ে লতীফ, প্রতাপাদিত্য সম্বন্ধে বলছেন-_“এই প্রতাপাঁদিত্যের মত সৈন্য অর্থবলে বলী রাঁজ। আর বজদেশে নাই। তাহার যুদ্ধসামগ্রীতে পূর্ণ প্রায় সাতশত নৌকা, বিশহাঁজার পাইক [ পদাতিক সৈন্য ] এবং ১৫ লক্ষ টাকা আয়ের রাজ্য আছে ।১১৯ , প্রতাপাদিত্যের সংগ্রাম সামর্থ্য ছিলো--জল স্থলপথে সুরক্ষিত রাজ্য তিনি রক্ষা করেছেন। পার্ববর্তী অস্ত যেকোন শক্তির কাছে তিনি প্রায় অজেয় বলা যায়। দীর্ঘদিন বাঁদে বাংলাদেশের এককোণশে এই সংগ্রামী জমিদার আপন বৈভবে স্বনামখ্যাত হয়েছিলেন তদানীন্তন সম্রাটের কাঁনে পৌছেছিল তাঁর বৈভব সমৃদ্ধির বার্তা। শংকার হেতু হয়েছিলেন তিনি। দিল্লী থেকে বাংলার দূরত্ব কম নয়__ এই ছিল শংকাঁর প্রথম কারণ। দিল্লীশ্বরের ক্ষমতার পূর্ণপ্রভাব বাংলায় ছিল না এবং বারোভুইঞাঁদের একক শক্তির জাগরণের পক্ষে সেটাই অনুকূল হয়েছিলো ইসলাম খানের বাংলায় আগমন শুধু তৎকালীন বাংলার কিছু প্রত্যক্ষ পরিচয় সংগ্রহ করা,__হুসঙজ্জিতসৈন্য প্রস্ততমন নিয়ে তার বাংলায় আগমন তৎকালীন বাংলাদেশে যে শক্তি জেগে উঠেছিলো! প্রাঁণস্পন্দনের তীব্রতায়, শাসকের কাছে তা ভীতিজনক।

প্রতাপাদিত্যের সমৃদ্ধির বর্ণনা ইতিহাসে উজ্জ্বল। সাহিত্যের পৃষ্ঠায়ও তার মর্যাদা কমেনি যদিও এঁতিহাসিক বিবরণের সঙ্গে কোন মিল সেখানে নেই

১০০ 2০1, 7-72406, ৯১, বহুনাথ সরকার--প্রতাপাদিত্য সম্বন্ধে কিছু নূতন সংবাদ'--প্রবাসী আহিন। ১৩২৬)

প্রাচীন মধ্যযুগের বাংলাদেশে রাঁজনীতিচর্চা ২১

সাহিত্য প্রচলিত কাহিনী নির্ভর--ভারতচন্দ্রের “অন্দামঙ্গলে” প্রতাঁপাদিত্যের বৈভব বর্ণনা যশোর নগর ধাঁম প্রতাঁপ আদিত্য নাম মহারাজা বঙ্গজ কায়স্থ। নাহিমানে পাতসাঁয় কেহ নাহি আটে তায় ভয়ে যত ভূপতি দ্বারস্থ প্রতাঁপাদিত্যের বৈভবপ্রকাঁশে ভাঁরতচন্দ্রের বর্ণনায় বিন্দুমীত্র অতিশয়েোক্তি নেই। প্রতাঁপাদিত্যই দক্ষিণ বাঁংলাঁর অপ্রতিদন্্বী শক্তি “নাহি মানে পাতসায়”_-অংশটিতে প্রতাঁপাদিত্য চরিত্রের যে গুণটির প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে--তা লক্ষ্যণীয় স্বাধীনচেতা প্রতাপাদিত্য দিল্লীর বাঁদশাহকে অমান্য করেছিলেন--ভারতচন্দ্রের কঠে এখানে প্রশংসার সর কিন্ত সেযুগের এঁতিহাসিক জাগরণের যৃলক্থত্র ভারতচন্দ্র দেখতে পাঁননি। বাংলার অসীম শক্তিমান প্রতাপাদিত্যের প্রসঙ্গে পরের অংশেই তিনি বলছেন-_- বরপুত্র ভবানীর প্রিয়তম পৃথিবীর বায়ান্ন হাজার যার ঢালী যৌড়শ হলকাহাতী অযুত তুর সাথী যুদ্ধকালে সেনাপতি কালী “বরপুত্র ভবানীর” তাই প্রতাঁপাদিত্যের উতথান,_-মঙ্গলকাব্যানুলারী এই ধারণা যেমন অনৈতিহাসিক-_- তেমনি অযৌক্তিক তাঁর পরাজয়ের বর্ণনা-_- বিমুখী অভয়া কে করিবে দয়! প্রতাপ আদিত্য হারে | ক্তরাং কাব্যের প্রতাপাদিত্য আর বাস্তবের প্রতাপাঁদিত্য যেন ছুটি পৃথক চরিত্র | কাব্যে তাঁকে ভক্তিমান রূপে প্রকাশের চেষ্টা, বাস্তবে তার মধ্যে সেই অচলা ভক্তির সম্পূর্ণ সমাধি রচিত হয়েছে। তনু প্রতাঁপাদিত্য সে যুগের সর্বাধিক আলোচিত একটি বিচিত্র পুরুষ_-শক্তি সামর্থ্য, দূরদশিতা অদুরদশিতায় বুদ্ধিমত্তা বুদ্ধিহীনতায় প্রতাপাদিত্যের মধ্যে সে যুগের অস্থির আত্মার অপূর্ব রূপায়ণ ঘটেছে আরও একটি কারণে প্রতাপাদিত্য আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। নিস্তন্ধ বাংলাদেশের সজল শ্যামল আবেষ্টনীতে একটি প্রচণ্ড হুঙ্কারধ্বনি শুনলে হঠাৎ চমকে উঠতেই হয়,_অন্ততঃ অভ্যস্ত ক্রিয়াকর্মে স্তব্ধতা নেমে আঁসে। একটি বীরমান্ধষের কথা ভেবে মনের কোণে আশার আলে! জেগে ওঠে প্রতাপাদিত্য বাংলাদেশের বাস্তবজীবনের সঙ্গে যতটুকু জড়িত তাঁর পরিচয় দেবার চেষ্টা করেছি-_

২২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

কিম্ত এখানে তার সর্বাস্বক রূপ প্রকাশ পায়নি তিনি স্থপ্ত বাংলার অবচেতন সততায় উদ্ভাসিত এক জ্যোতির্ময় স্বপ্রপুরুষ ! বাংলার ঘরে ঘরে ভীতচকিত মানুষের সামনে তিনি ছিলেন একটি উজ্জ্বল জ্যোতিষ রাঁজনীতির রণদামীমা যাঁদের অন্তরে বিন্দুমাত্র উত্তেজন! সঞ্চার করেনি-_-তারাঁও অতিপরিচিত এই পরমপুরুষকে অন্তরের সঙ্গে শ্রদ্ধা জানিয়েছে সুতরাং এক হিসেবে রাজনৈতিক চেতন! বিহীন বাঙ্গীলীকে রাষ্সচেতনতার দীক্ষা! দেবার দায়িত্ব নিয়েছিলেন সেযুগের প্রতাপাদিত্য-টাদরাঁয়- কেদার রায়। তাঁদের সংগ্রাম সাফল্যের ইতিহাঁস হয়ত নিশ্চিহ্ন হয়েছে কিন্তু জাঁতির 'অন্তর্জীবনে যে স্বদেশপ্রেমের চেতন] তার] জাগিয়ে গিয়েছেন-_-তাঁর দীপ্তি কখনই নিভে যাবে না। সভ্যতার অস্তিত্বের সঙ্গে তারাও বেঁচে রইল। এখানেই তারা যথার্থ সার্ক সফল উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমে যে জাগরণের বন্া এসেছে সে কি শুধুই আকস্মিক কোন সছলব্ধ অনুভূতি? জাতির জীবনে ৎএই জাগরণ বন্যার পশ্চাতে ইতিহাস যে একেবারেই স্তব্ধ নয়-_- অন্ততঃ সপ্তদশ শতাব্দীর মোঘল পাঠান, মোঘল সামন্ত হিন্দুজমিদারদের সংঘর্ষ কাহিনীর মধ্যে তার স্পষ্ট ছায়াপাত রয়েছে বিদেশীরচিত রাক্্রবিবরণের মধ্যে সত্যানুসন্ধান অর্থহীন কিন্তু সত্য আবিষ্ষারের জন্য নিরপেক্ষ ইতিহাসের অভাব বড় প্রত্যক্ষ

বারোভুইঞাদের বিজয় অথবা পরাজয়ের মুহুর্তগুলিই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একমাত্র উজ্জ্বল মুহূর্ত, এর পরের ইতিহাসে আবার সেই গতানুগতিক আনুগত্যের বিবরণ শাহজাহান, আওরঙ্গজীবের আমলে বাংলাদেশ আবার একটি শান্ত স্তিমিত রাজনৈতিক জীবন যাঁপন করেছে। ছোটখাট যুদ্ধবিগ্রহ যা ঘটেছে তা দমনের জন্য কোন উল্লেখযোগ্য প্রয়াসের প্রয়োজন ঘটেনি অন্ততঃ দিলীর সম্রাটকে স্থদূর প্রান্তবর্তী এই দেশটির কথা বিশেষভাবে চিন্তা করতে হয়নি রাজশক্তিকেও য] ভাবিয়ে তোলে সেই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাই ইতিহাসে স্থান লাভ করে যুদ্ধবিগ্রহের ঘটনার মধ্যেই ধর। পড়ে একটা দুরন্ত জীবনাবেগ।

অষ্টাদশ শতাব্দীর বাংলাদেশে সে ধরনের কোন উল্লেখযোগ্য গোলযোগ ঘটেনি মুশিদকুলী খার শাসনে ব্যবস্থায় বাংলাদেশ আবার আপাতঃ শান্তির সন্ধান করেছে। মুশিদকুলী খাঁর রাঁজত্বকালের এতিহাসিক গৌরব আঁছে।__ এদেশীয় ভূম্বামীদের বশীভূত করার একটা চমৎকার পন্থা তিনিই কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছিলেন ; এদের রাজকীয় মর্যাদার উৎকোঁচে বশীভূত করে সংঘবদ্ধ জনশক্তির অত্যুদয়েপ্ন সম্ভাবনাকে এদেশ থেকে প্রায় বিনষ্ট করেছেন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোঠীতে বিভক্ত জমিদার সম্প্রদায় বিগত শতাব্দীর বিদ্রোহ বিপ্লবের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু সাবধানতা শিক্ষা করেছিলেন সহজেই বশ্যতা স্বীকার করে তার! নিশ্চিন্ত

প্রাচীন ষধ্যয়ুগের বাংলাদেশে রাজনীতিচর্চা ২৩

হয়েছিলেন কিন্তু আত্মদৈন্যের ল্জাটুকু তারা গোপন করতে পারেননি-__এখানেই তীর সম্পূর্ণ পরাজিত। প্রতাপাদিত্য কেদাররায়ের স্বপ্ন সফল হয়নি-কিস্ত পরের ইতিহাঁসে এমন ব্যক্তিত্ব আদর্শ নিয়ে ধারা এসেছিলেন তাঁদের সংখ্যাও খুবই অল্প

প্রতাপাদিত্যের পরেই আমর] যে তৃস্বামী রাঁজার সংগ্রামী মনোভাবের পরিচয় পেয়েছি তিনি সীতাঁরাম রায়। এর আঁবিতীব কাহিনী অজ্ঞাত -_কিন্তু শক্তি সামণ্যেই ইনি আপন শৌর্যের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। ইতিহাঁস এর সংগ্রাম সামর্যের পরিচয় দিয়েছে" 01196 ০৫ 0০061: 1১2 10010001650 2190 10১06. 06 91091101 29101100275 0 006 ০0100 00170 ৪1505000760 610011)5 21) 12৮2002 €0 61০ 3015310095%.১৯২

সীতারনি রায় শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন প্রতিবেশী শক্তিকে দমিত করে এই হঠকারিতা, অদূরদশিতার ব্যাখ্যা করা যাঁয় অনেক ভাবেই। শক্তিমানের স্বভাঁবই যদি এই--তবে সীতারাম শক্তিমান ছিলেন সন্দেহ নেই কিন্ত নিশ্চিত পতনের সোপান স্টটি করে যে শক্তি আপন ক্ষমতার সমাধি রচন। করে-_তার মধ্যে এক দুঃসাহসী আত্মার অনুসন্ধান না করলে সঠিক বিচার হয় না। বঙ্কিমচন্দ্রের “সীতারামের” এতিহাঁসিকতা৷ বিচার প্রসঙ্গে শ্রীযদুনাথ সরকার ভূমিকায় মন্তব্য করেছেন-__

বঙ্কিমচন্দ্র সীতারাম নামক রাঁজার জীবনের ঘটনা গুলির সেই যুগের বাংলার অবস্থার যে বিবরণ দিয়াছেন, তাহা অধিকাংশ একেবারে সত্য, ইহার কোন স্থানেই এতিহাসিক সত্যের প্রচণ্ড অপলাপ করেন নাই ।-”এর উপর সেই যুগে প্রজা শাসকের সম্বন্ধ, দেশের দশা, যুদ্ধবিগ্রহ প্রণালী বঙ্কিম অক্ষরে অক্ষরে সত্য করিয়া আকিয়াছেন, অর্থাৎ এই উপন্যাঁসখানির দৃশ্যপট একেবারে সত্য ।+৯৩__ইতিহাসের সামান্ত নজির থেকেই উপন্যাসের অবয়ব স্থষ্ট হয়েছে, শুধু তাই নয় ইতিহাঁসাহুগ পটভূমিকাকে বঙ্কিমচন্্র কাজে লাগিয়েছেন। যাই হোঁক, সীতারাঁমের অস্তিত্ব যেমন এতিহাসিক তেমনি তীর ছ্র্দমনীয় আত্মচেতনার কাহিনীটিও কাল্পনিক নয় স্ৃতরাঁং ইতিহাসের নজির থেকেই সীতা! রামের স্বাধীনচেতনার সাক্ষাৎ মেলে সীতারাঁম শক্তি সঞ্চয় করেছিলেন কোন্‌ উদ্দেশ্যে কে জানে! স্বাঁদীরশাসিত বাংলাদেশের একজন ভৃম্বামীর পক্ষে ক্ববাদারকে অগ্রাহ করার ছুঃসাঁহসও অকল্পনীয় মনে হয়ঃ অবশ্য স্ববাদার শাসনের

১২,15401720) 92102) [2156075 ০£ 890551 (৬০1, 11), 102০০2, 1948, [১7416 ১৩. বছুনাথ সরকার--সীতারাম গ্রন্থের ভূমিকা সাহিত্য পরিষদ প্রকাশিত

২৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

শিথিলতার একটা জোয়ার সে যুগে দেখা দিয়েছিল ভাঁরতসম্রাট দিলীহ্বরের আঁসনই সেদিন টলোমলো,_ নানাস্থানে বিদ্রেহ, বিশেষ ভাবে দক্ষিণ ভারতের মারাঠা বিদ্রোহে সম্রাট ব্যতিব্যস্ত সেই ক্ষুব্ধ ভারতবর্ষের সর্বত্র বুঝি তাই গোপন বিদ্রোহ-_স্বাধিকার স্থাপনের প্রয়াস অবশ্যস্তাবী হয়ে উঠেছিল বাংলার নিভৃত অঞ্চলের শক্তিমান পুরুষরাও সে স্বপ্ন দেখতেন তার প্রমাণ স্থানে স্বানে বিদ্রোহ রাঢ়ের অন্যত্র শৌভাঁসিংহ রহিমখানের বিদ্রোহ তথ্যও আমরা জানি। এরা প্রত্যেকেই রাজনৈতিক শিথিলতারই স্থযোগ গ্রহণ করেছিলেন ।-_ আর দুঃসাহসী সীতারামও ধীরে ধীরে আপন শক্তি শৌর্ষের পরিচয় দ্িলেন। সীতারাম প্রসঙ্গে শ্রীযদুনাথ সরকারের নিম্নোক্ত মন্তব্যটিও লক্ষ্যণীয়-_“আমলার পুত্র এইরূপে তালুকদার হইলেন, ক্রমে জমিদার হইবেন, রাজা হইবেন, অবশেষে বিদ্রোহী সামন্ত হইবেন, তাহার আয়োজন আরম্ভ হইল ।”১৪-_সীতারাম সে"হিসাবে সেই যুগেরই একটা সম্ভাবিত চরিত্র--কিস্তু একটা প্রচণ্ড ছুঃসাহসিকতাই তাঁর বৈশিষ্ট্য সীতারামের মধ্যে সেই ছুঃসাহসিকতা দেখেছি আমরা যাঁর অবশ্যস্তাবী ফলাফল নিশ্চিত অবলুষ্তি। নিশ্চিত ফলাফল জেনেও এই অপরিণাঁমদর্শী শক্তিকে যখন উদ্যত হতে দেখি তখন তাকে শ্রদ্ধা না জানিয়ে পারা যায় না। শক্তির দীনতা আমাদের ভূষণ, আর সাধারণ মানুষ ছুর্নাযের চেয়ে শান্তিকেই বেশী লোভনীয় বলে মনে করে সীতারাম সেই চিরাচরিত শান্তিকেই বিদায় দিয়েছেন সবাগ্রে, নিশ্চিত বিপদের ভূমিকা দিয়েই তাঁর জীবনারভ্ত। কিন্তু ইতিহাসের আঁলোচিত অধ্যায়ে সীতারাম একপ্রকার অনুষ্পেখ্য--কাঁরণ সীতাঁরাম দমনের ঘটনাকে প্রাধান্য দেবার কোন প্রশ্নই ক্বাদারের মনে জাগেনি। কিন্তু ইতিহাসে প্রীধান্ত না পেলেও কিংবদন্তী থেকেই সীতারাম বাংলা উপন্যাসের নায়ক পদে উন্নীত হয়েছেন রাতারাতি বস্তুতঃ সীতারাম মান্থষ হিসেবে, বিদ্রোহী হিসেবে, হয়ত নগণ্য,_-হয়ত হঠকাঁরী এই বিদ্রোহী পুরুষ শাসকসম্প্রদায়ের কাছে বিন্দুমাত্র প্রশংসা পাননি, তবু এ্রতিহাঁসিক পরিপ্রেক্ষীতে এই বিদ্রোহপ্রচেষ্টার মূল্যায়ন প্রয়োজন হয়েছিল। ক্ষণকাঁলের এই ুলিঙ্গই হয়ত আগামী দিনের পথরেখাকে চিহ্নিত করতে পাঁরে। ইতিহাসের বুকে যা উল্লেখমাত্র--কল্পনা আদর্শের ক্ষেত্রে তাঁর সাড়ঘর আত্মপ্রকাশ সম্পূর্ণভাবেই সম্ভাবিত। সাহিত্যসেবী বঙ্কিমচন্দ্রের স্বদেশপ্রেমমন্ত্র অসীম উৎসাহ এনেছে স্বাধীনতাকামী মানুষের প্রাণে বঙ্কিমচন্দ্র সীতারাম কাহিনীর মধ্যে এ্রতিহাসিক স্বদেশপ্রেমের রূপোঁদঘাটনের চেষ্টা করেছিলেন, স্বাধীনতা মন্ত্রত্র্টা) এই অমর

১৪, যছুনাথ সরকার--সীতারাম গ্রন্থের ভূমিকা সাহিত্য পরিষদ প্রকাশিত।

প্রাঈীন মধ্যযুগের বাংলাদেশে রাঁজনীতিচর্চা ২৫

উঁপন্তাসিকই সীভারাহকে প্রতিঠিত করার চেষ্টা করে গেছেন। ইতিহাঁসে অনাদৃত এই চরিত্রটির সাহিত্যিক ব্যাখ্যা কাক্গনিক হতে পাঁরে কিন্তু স্বাধীন চেতনার যে প্রকাশ সীতাঁরাম চরিত্রে দেখা গেছে-__সেটুকু ইতিহাসান্ঈগ সীতারাঁম ব্যর্থ হয়েছিলেন__সীতারাঁমের এই ব্যর্থতার চিত্রাঙ্কনে বঙ্কিমচন্দ্র তার সাহিত্যিক চিন্তা দুরদূশিতার যোগাযোগ ঘটিয়েছেন-_সেটুকু গল্পরচনার খাতিরে। তবে সাফল্য অসাফল্যের মধ্যে এঁতিহাঁসিক সীতীরামকে দীয়ী করার কোন যুক্তি নেই ।__ সীতারামের গ্রসঙ্গটি যথাঁষথ রেখেই তাঁকে কাহিনীর নায়করূপে প্রতিষ্ঠা করেছেন বঙ্কিমচন্দ্র--এখানেই তাঁর এতিহাসিক গুরুত্ব বঙ্ষিমনন্ত্রপ্রসঙ্গের আঁলোচনাকালে সীতারাম পুনরালোচিত হবে | বস্ততঃ মুসলমান রাজত্বে বাংলাদেশের রাষ্রচেতনার যে পরিচয় পাওয়া গেছে পরবর্তীকালের জাতীয় চেতনার অনেক উপাদান জাতীয় ইতিহাসে মিলবে

যুদ্ধ, স্বাধীনতা, আত্মঅধিকার সম্বন্ধে পূর্ণাঙ্গ ধারণার জন্য আকস্মিক কোন ঘটনাকে দায়ী করা চলে না। জাতির পুর্ণ জাগরণেরও বহু আগে এই ধারণাগুলির জাঁগরণ ঘটে, এবং বাংলাদেশেও সেই স্থত্রেই যে জাতীয়চেতন! দেখা দিয়েছিল কথা বিশ্বাসেরও হেতু আছে। জাতির স্প্ত স্বপ্নগুলি ইতন্ততঃ বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাঁকে, দানা বাঁধবাঁর মত কোন স্থযোগেরই অপেক্ষায় বিন্দুমাত্র স্ষুলিঙস্পর্শে দাঁরুবন যেমন দাঁবাঁগ্সি জেলে দেয় তেমনি শ্ফুলিঙ্বস্পর্শের স্বপ্ন দেখেছে উনবিংশ শতাব্দীর প্রতীক্ষিত মুহুূর্তগুলি। কিন্তু অন্তরের দারুবন বহু পূর্বেই তাঁর আম্বাদ পেয়েছিল, এর নজির আমাদের বিগত ছুটি শতাব্দীর রাষ্ট্রীয় ইতিহাঁস। অবশ্য একথাঁও সত্য যে, উনবিংশ শতাব্দীর রাষ্টচেতনা যেমন প্রতিটি মানুষকেই আলোড়িত করেছে এর পূর্বের রাষ্সংগ্রামগুলি সম্পূর্ণভাঁবেই তা থেকে পৃথক ছিল ব্যক্তিগত চেতনাসঞ্জাত বলে জনমনকে তা আলোড়িত করেছিল কি না তার কোন পরিচয় সাহিত্যে ইতিহাসে অনুল্লিখিত। সৈম্ভর1 দেশের কথা সচেতনভাবে যতটুকু ভাবে তার চেয়েও বেশী ভাবে তাদের কর্তব্যের কখা-_রাজাদেশের কথা কিন্তু গণজাগরণের পটভূমিকাঁয় সমগ্র দেশের অস্তিত্বের সঙ্গে প্রতিটি মানুষের অস্তিত্ব অঙ্গীভূত হয়ে থাকে একটি মানুষের চিন্তাধারায় একটি দেশের চিন্তাধারার প্রতিফলন পড়ে। দেশ মানুষ সেখানে একাঙ্গীভূত। উনবিংশ শতাঁবীর গণজাগরণের প্রস্ততিপর্বেও আমর] এই সত্যটিই প্রত্যক্ষ করেছি কিন্তু প্রতাপাদিত্য- টাদ্‌রায়-সীতারাম সেই এঁতিহাসিক চেতনার উৎসস্বরূপ |

মুসলিম শাসনের শেষভাগে বিশেষ উল্লেখযোগ্য কোন ঘটনার সাক্ষাৎ মেলে না-_ সমগ্রভারতে মোঘল সাম্রাজ্যের বনিয়াদ কিভাবে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল.সে ইতিহাস

২৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

সমগ্রভারতে ছড়িয়ে আছে। বণিকরূপে প্রবেশ করে কিভাবে শাসকরূপে আত্ম- ঘোঁষণা করতে হয় সেই ইতিহাস ছড়িয়ে আছে দক্ষিণ ভারতের উপকূলে উপকৃলে-__ বাংলায় _বোম্বাইতে _মাদ্রাজে ভারতের সোনার মাটি রাজ্যলোলুপ একটি জাতিকেই প্রলুদ করেনি--একই সঙ্গে এসেছে ওলন্দাজ ফরাসী ইংরেজ এদের অন্তদ্বন্দ্ের সংগ্রামও আমরাঁই দেখেছি, বহিঘ্ব“ন্দে আমাদের ভূমিক। ছিল নেপথ্যে কিভাবে শক্তির দ্বন্দ শক্তিমানকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে- শক্তিহীনকে বিলুপ্তি তার প্রতিটি চিত্র ভারতের যেকোন স্বানের এতিহাঁসিক চিত্র ভারতের যে দিকেই তাকাই শুধু দেখি একই নাট্যের অভিনয়, আর সেই অভিনীত প্রত্যেকটি ঘটন৷ থেকে একটি মাত্র সত্যই আঁমর। দেখতে পেয়েছি যে মোঘল পাঁঠানদের অভিনয় রজনীর শেষ ঘৃহুর্তটুক চলছে, শুরু হয়েছে এর পরের দৃশ্যপট পরিবর্তনের দ্রুত মহড়া ভারতের পক্ষে অভিজ্ঞতা নতুন নয়, ঠিক একই ভাবে একই নিয়মে শাসকগোষ্ঠীর পরিবর্তন দেখা গেছে বহুবার। একদিন স্থনীলজলধি থেকে সগ্ভজাগ্রত ভারতের বুকে দ্রাখিড়সভ্যতার পদধ্বনি অন্ুরণিত হয়েছিল--কিস্তব শক্তিমান আর্যদের কাছে তাদের অবলুপ্তি ঘটেছে সেই একই নিয়মে আর আজ মোঘল ইংরাঁজ দ্বন্দের মধ্যেও সেই একই ঘটনার প্রতিচ্ছায়া। শক্তিমানের সঙ্গে দুর্বলের পরিচয় এভাবেই হয়ে থাকে সমগ্রভারতে চলেছে-মোঘলশক্তির পরাজয় প্রস্ততি-_ সভ্যতার ইতিহাসের সেই অনিবার্য সত্য ইংরাঁজ-ফরাসপী-ওলন্দাজদের মধ্যে ক্ষমতার কাড়াকাড়ি,_দিল্লীশ্বর ভাবছেন কোন্‌ পথ অবলম্বন করলে শুধুমাত্র প্রাণে বেঁচে থাকা যায়। বাংলায় বসে সিরীজউদ্দৌলা ভাবছেন কোথায় গেলে শুধু শিশ্চিন্ত আর নির্ভয় জীবন পাঁওয়া যায় কিন্তু ইতিহাঁস যেমন দুর্বলকে ক্ষমা করে শা, রাঁজনীতির রথ যেমন শক্রধবংস না! করে থামে না_ তেমনিভাবেই দিললীশ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সিরাজদ্দৌলাকেও একই পরিণতির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে বেঁচে থাকতে হয়েছে ততদিন, যতদিন তারা মৃত্যুমণ্ুর না করে

পিরাঁজদ্দৌলার সঙ্গে ইংরাঁজ সংঘর্ষই বাংলার পরবর্তা রাজনৈতিক ইতিহাস নানাকারণে এই সময়টুকু ইতিহাসে প্রাধান্ত পেয়েছে_-যথেষ্ট গুরুত্ব আছে এই সংঘর্ষের বাংলার গতানুগতিক ইতিহাসে সরফরাজ-আলীবদ্ির নুতনত্ব নেই; এরা নিশ্চিন্তে দেশশাসনের যোগ্যতা দেখাবার সুযোগ পেয়েছেন আলীবদি বাংলার মসনদে বসে শাসনক্ষমতাঁর পরিচয় দিয়েছেন,_-বর্গাদমনের গৌরবলাভ করেছেন সত্য কিন্ত তার চেয়ে বেশী অপ্রশংস। পেয়েছেন চারিত্রিক দুর্বলতার জন্য ; নেহান্ধ আলীবদিকে কেউ ক্ষমা করেনি--না স্বদেশী না বিদেশী। সকলেই পিরাজদ্দৌলার অক্ষম নামের সঙ্গে তাকে অপমানই করেছেন৷ ইংরাজ ধ্রতিহাসিক

প্রাচীন মধ্যযুগের বাংলাদেশে রাজনীতিচর্চ। ২৭

505৬127-এর মন্তব্যটি ব্যাপারে লক্ষ্যণীয় সিরাঁজদলার প্রসঙ্গে তার সংক্ষিপ্ত গভীর মন্তব্যটি এই শুন আ৪3 1:67921159015 30 05০05৪06502 1019 06150] 2190 702101799 0৬6ণু 1019 10196010012 60 2 10915066ণ 90000801010, 2190 €)০ ৫02:078 £0101)659 01 1015 £17910:90061,, 2৫

সিরাঁজদ্দৌোলার অসাফল্যকে যদি আলীবদ্দির স্সেহান্ধতার পরিণাঁম বলে মেনে নিতে হয় তবে তা হবে পরিপ্রেক্ষিতকে--সম্ভীবিতকে অগ্রাহ্ করে ব্যক্তিগত অদূরদশিতাকে বড়ে! করে দেখা সিরাজদ্দৌল! যদি অসীম শক্তিমানও হতেন তবে দেশব্যাপী নিশ্চিত নির্ধারিত পতনকে তিনি কতটুকু রোধ করতে পারতেন ? শুধু তাই নয়, সিরাঁজদ্দৌলাঁর শক্তির ব্যর্থতা প্রমাণে তার দায়িত্ব কতটুকু ? মীরজাফর চক্রান্তের কাছে তার একক শক্তি-শৌর্ধ মৃল্যহীনহই হোতো। আলীবদির শীসনকালে* বর্গার উপদ্রব বাংলাদেশে একটি নতুন চমকপ্রদ ঘটনা। এই ঘটনাটির অভিনবত্ব এইখানে যে বর্গী নামধারী এই দক্ধ্যসম্প্রদায় উচ্চসম্প্রদায়ের ভারতীয় হিন্দু যদিও দস্থ্যতাই এদের লক্ষ্য কিন্তু অহিন্দু শাসক সম্প্রদায়ের কাছে অর্থদাবীই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ইতিপূর্বেই মগ ফিরিঙ্গী জলদস্থ্যদের অত্যাচারের স্মৃতি বাঙালীর মনে দৃঢমূল হয়েছিল সুতরাং বর্গীর উপভ্রবের আকম্মিকতায় চমকিত হবার কথ। নয়। তবু বর্গী নামধারী এই মাঁরাঠা দক্থযসম্প্রদায় তৎকালীন মোঘল শাসক সম্প্রদায়ের ভীতির কারণ হয়েছিলেন | দক্থ্যতার অন্য কোন প্রতিশব্দ নেই, উদ্দেশ্য যতই মহৎ হোক না কেন--জনসাঁধারণের মনে তাঁর অনুভব শুধু ভীতির মধ্যে দস্ধ্যতাঁর আবরণে যদি কোন মহৎ সম্ভাবনাময় উদ্দেশ্য থাকেও তবু তার ব্যর্থতা অবশ্যস্তাবী। জনগণকে অত্যাচার করে জনসমর্থনের সুদৃঢ় ভিত্তিকে তারা ন্ট করে দেয়। অথচ প্রয়োজনের তাগিদে এই দস্থ্যতাকেই আমরা সাহিত্যে আঁদর্শের উপকরণের কাঁজে না লাগিয়ে পারি না। বঙ্কিমচন্দ্রের “দেবী চৌধুরাী”, নিশিকান্ত বস্থরাঁয়ের “বন্ধেবর্গাই” তার প্রমাণ। প্রসঙ্গেও পরে আলোচিত হবে, এখন শুধু এটুকু বললেই যথেষ্ট হবে যে বগাঁদমন করে শান্তি শৃঙ্খলা স্থাপনের প্রচেষ্টা সফল হয়েছিলো | গ্রাম্যমাতার মুখে বর্গা আগমনের কাহিনী ছড়ার রূপ নিয়ে বেঁচে রইলো মাত্র কোনে। ঘটনার গুরুত্ববিচারের জন্য সময়ের প্রয়োজন » কালের পটভূমিকায় তার মূল্/বিচার হয়ে যায় আপনা থেকেই বর্গীর হাঙ্গামার কোন সদূরপ্রসাঁরী ভিত্তি পাওয়া যায়নি

সিরাজদ্দৌলাঁর রাজত্বকালের প্রথমার্ধ শাভতিপুর্ণ ;--তার রাজত্বের প্রথমদিকে

১৫০ (01850155 9655%2013150019 350£5151 051065625, 19935 1 ৮9০4

২৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

যতগুলি ঘটনার সাক্ষাৎ পাঁওয়া যায়_-কোনো ব্যাপারেই সিরাজদ্দৌলা নিজেকে অযোগ্য বলে প্রমাণ করেননি উপরস্ত বয়সোঁচিত চাঁপল্যের চেয়ে রাজনীতিবিদের দুরদশিতাই দেখা যাঁয়। তাঁর সম্বন্ধে যত অপবাদই থাঁক না কেন-_সিরাঁজদ্দৌলার সঠিক মূল্যায়ন হয়নি কোথাও নাট্যকার বা ওপন্তাসিকের তুলিকায় তিনি এক জলন্ত স্বদেশপ্রেমিক আবার এঁতিহাসিকের বিচারে তিনি অক্ষম--ব্যর্থ এক ভীরু শাসক | আর ছুয়ের মাঝখানে সত্যিকারের সিরাঁজদ্দৌলা অস্পষ্ট

সিরাজদ্বলার রাঁজত্বেই বাংলার রাজনৈতিক জীবনে স্থগভীর পরিবর্তনের বন্যা এসেছে--এ কথা সত্য শাসক হিসেবে ইংরাঁজের সাফল্যের কথাই এখানে বলা যাঁয়। তবে এঁতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে এর বিচার করা যাঁকৃ। দীর্ঘ আলোচনায় আমরা দেখেছি-মৌঘল আমলে বাংলাদেশ শীশ্ত ছিল না ;-- অসন্তোষ অসহযোগ ছিল জাতীয় চরিত্রের রন্ধে রন্ধে সুযোগের অপেক্ষায় বিদ্রোহ- যুদ্ধও এসেছে অনিবার্ধরূপে, জাতীয় জীবন আন্দোলিত হয়েছে, চঞ্চল হয়েছে। আর চাঞ্চল্যের আকর্ষণে মানুষের চরিত্রে এসেছে দৃঢ়তা এক্যবোধ। বাঙ্গালীর শক্তিহীনতার কথাই প্রবাদে পরিণত-_কিন্তু কথার প্রতিবাদ শুধু ইতিহাঁসই 'করতে পারে যথেষ্ট বাহিক বিপদ সংগ্রামের মধ্যেও এই জাতি আপনার বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে পেরেছে--এটাই বোধ করি শক্তির একটি প্রকট প্রমাণ বঙ্কিমচন্দ্র বাঙ্গালীর হাঁতে লাঠি দেখে গর্ববোধ করেছিলেন__কিন্তু ধিদেশী দস্থ্য অত্যাচারী শাসকের হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য বহুবাঁর বাঞ্গালীকে অন্ত্রধারণ করতে হয়েছে এটা এতিহাঁসিক সত্য। জীবন স্পন্দনের কোন দৈন্ত যদি থাঁকত তবে প্রতাঁপাদিত্যের একশত বৎসর পরে দক্ষিণ বাংলার বুকেই সীতারামের আবিতীব ঘটত না। বলা বাহুল্য যুদ্ধনিস্পৃহ বলে বাঙ্গালীর যে অপবাঁদ তার মধ্যে যুক্তি নেই-_ প্রচলিত ধারণারই অনুরণন ছড়িয়ে আছে

সিরাজদ্দোলার আমলে বাংলাদেশের বুকে বহু শক্তিমান জমিদার সম্প্রদায় বর্তমাঁন-_বংশানুক্রমে তাদের প্রতিপত্তি বেড়েই চলেছিলো। আপন সীমানায় এরা সর্বেসর্বা_-কিন্তু গৌড়েখবরের সঙ্গে আন্তর যোগাযোগ স্বাপনের কোন পথ ছিল না। এরা একক ভাবে ছিলেন, সমগ্র বাংলার জমিদার সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত একতাবুদ্ধি কোনদিনই দেখা যাঁয়নি। বরং সামান্ত কারণে এক্যস্থষ্টির চেয়ে শক্তিক্ষয়ের পন্থাকেই এরা বড়ো বলে মনে করতেন উপরস্ত সকলের লক্ষ্যই ছিল মোঘলসম্রাট তোঁষণ-_কাঁরণ তারা জানতেন শক্তিমান শক্র বলে যাকে গণ্য ' করা যায় তিনি মুশিদাঁবাঁদ সম্রাট

সিরাজদ্দৌলার সামগ্রিক পতন যখন আঁসম্ন তখন বাংলার জমিদাঁর সম্প্রদায়ের

প্রাচীন মধ্যযুগের বাংলাদেশে রাঁজনীতিচর্চা ২৯

করণীয় কিছুই নেই-_এটা আপাতদৃষ্টিতে অর্থহীন মনে হলেও তৎকালীন রাষ্টু- ব্যবস্থায় এটাই ছিল সত্য পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতা হ্র্য যখন অস্তমিত-_ বাংলার সর্বত্র জমিদার সম্প্রদায় তখন নীরব দর্শক মাত্র তাঁরা জানতেন মোঘল- ইংরাজ সংঘর্ষে তাঁর1 তৃতীয় পক্ষ, ঘটনাশোঁতে ভেসে যাওয়া ছাড়া আর কিছু করণীয় নেই | জমিদার সম্প্রদায়ের অতীত ইতিহাস গৌরবময় কিন্তু স্বাধীনতা আন্দোলনের নতুন ইতিহাসে, জনগণের নতুন জাগরণে, ইংরাঁজ রাজত্বের প্রথম থেকেই তাঁরা নীরব- কণ্ঠহীন। সিরাঁজদ্দৌলার ভাগ্যবিপর্যয়ের জন্য যেমন বাংলার জমিদার সম্প্রদায়কে দায়ী করা চলে না--তেমনি তৎকালীন যুগজীবনের কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকাতেই তাঁরা অংশগ্রহণ করেননি অথচ বাংলার সর্বত্র খণ্ড খণ্ড অংশে এদের একাঁধিপত্য বর্তমান ; রাজায় রাঁজায় যুদ্ধ চলে কিন্তু উলুখড় হিসেবে আপন অস্তিত্ব বিপন্ন করতে এরা রাজী ছিঙুলন না।

স্থতরাং সিরাঁজদ্দৌলার পতনকে শুধুমাত্র মুশিদাবাদ রাজবংশের পতনের প্রতীক হিসেবেই গ্রহণ করতে হবে। সিরীজদ্দৌলার পতনের জন্য আমরা একটি রাঁজ- পরিবারের রাজসভাঁর ষড়যন্ত্রকেই দায়ী করবো ।--বস্ততঃ বৃহত্তর জনসমাজ এই যুদ্ধ সম্পর্কে শুধু উদাসীন নয়--অজ্ঞ ছিল। সিরাজদ্দৌোল। যে রাজসভায় রাজ হয়ে বসেছিলেন--তাদের চিত্র নির্ভরযেগ্য ইতিহাঁস থেকে নেওয়া যাঁক-__ ৬৬17০ 0115 50001 20 0105 12৮7210, 741 05172] 001118586101) 190102001706 52100 001166, 15 1006518০5 102 £0900, 105 ৬6৮ 116 ৪5 £02)6, 20132 ০01905:5 2:000118156126101) 1790 0200205 10961655515 015101656 2150 11758012176 200 01061009895 0৫6 00০ 70600121084 10267). 190360. 0 106 06206956 0০৬61, 15001970220 00019] 06519096101 105 ৪, 50081], 92195517, 0:০0 2100 1)4010105 201105 ০1995...110106 200 আও 10006128 870 1)002%-00201960. 161) 006৪500.১৩৬

যোগ্য প্রজা বা যোগ্য সেনানী নেই পরিবর্তে বিশ্বাসঘাতকতা ষড়যন্ত্র রয়েছে স্থতরাং পলানীর যুদ্ধে সিরাঁজদ্দৌলার পতন হল অবশ্যস্তাকী মোঁঘল- শাসনের অবসানের এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তটি সমগ্র বাংলাদেশ বাঙালীকে কতখানি। প্রভাবিত করেছিল সেটাই বিচার্ধ। মুশিদাবাদ তখত, নিয়ে রাজ মন্ত্রীর কদর্য যুদ্ধ চলছিলই-_স্থচতুর ক্লাইভ শুধু বুদ্ধির সদ্যবহার করেছেন। পলাশীর যুদ্ধ বাংলার তথা ভারতের ইতিহাসের এক যুগান্তকারী সংগ্রাম, সে যুগে একমাত্র সিরাজদ্দৌলা

১৬,]5000790) 9581091, 51156019 861651 (৬০1, 1] ), 02০০৪, 1948, ৮৮492,

₹১০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

ছাঁড়া সেকথা কেউই বোঝেনি ;-_-আর তিনি যা বুঝেছিলেন তীর বিশ্বস্ত মন্ত্রীমগুলী তা বোঝেনি ! - আপন স্বার্থের প্রেরণায় তারা অন্ধ, এই মৃত্যুও জীবনের যুদ্ধকে তারা একটা কৌতুকের বিষয় বলে উপেক্ষা করেছেন-_-এর চেয়ে বড়ো দুঃখের কথা আর কী হুতে পারে? সিরাঁজের ব্যবহারে তারা বিরক্ত হতে পারেন কিন্ত বিদেশীর কাছে সিংহাঁসন বিক্রয় করে তাঁরা এক অতিনিন্দিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করলেন মাত্র এই হীন কদর্য ষড়য্ত্রই প্রমাণ করে দেশাত্মবোধ-জাতীয়তাবোধ সন্বন্ধে রাঁজপুরুষের ধারণা ছিল কতটুকু। ত্খত নিয়ে যে আত্মকলহ চলছিল, স্যৌগসন্ধানী ক্লাইভের দৃষ্টিতে তা দেখা দিল এক অত্যাশ্চর্য ভারতসাম্রাজ্যস্থাপনের হুড়ঙ্গপথ রূপে ক্কতরাঁং ইংরাজ আগমন মোঘলশীসন অবসানের এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার জন্য আমাদের দায়িত্ব ছিল না বিন্দুমাত্র জনগণের নেপথ্যলোকের অন্ধকার ষড়যন্ত্ররূপে এই যুদ্ধ জগতের সামনে শিক্ষণীয়-দর্শনীয় একটি ঘটনারূপে চিহ্নিত হল। “ভারত জয় করা যে এত সহজ, বুদ্ধিজীবী ইংরাঁজের কাছে তা এক পরম বিস্ময় বলেই মনে হয়েছে অন্ততঃ ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধ ইংরাঁজের ইতিহাসে লেখা যাঁবতীয় যুদ্ধ কাহিনীর এক চাঞ্ল্যকর ব্যতিক্রম বলে মনে করা যায় সহজেই

পূর্বেই বলেছি ইংরাঁজশাঁসনের প্রথমার্ধে বাংলাদেশের মানুষ এর ভবিষ্যৎ ব! বর্তমান নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তা করেনি ইংবাজ যে পাশ্চাত্য সভ্যতা সংস্কৃতির দৃতরূপে সত বিশ্ববিজয়ে চলেছে ধারণাও ছিল সাধাঁরণ-অসাঁধারণ সকল বাঞ্গালীর কাছে অজ্ঞাত শাসক পরিবর্তনের এই গুরুতর ঘটনাটি সম্বন্ধে বাংলাদেশ ছিল নিম্পৃহ দর্শক ;_অতীতকৌতৃহল বিস্বৃত, আগামী ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে অনিশ্চিত একটি ধারণা সমগ্র বাঙ্গালীকে পেয়ে বসেছে আর জনগণের প্রতিনিধি স্বরূপ যে আঞ্চলিক জমিদার সম্প্রদায় ছিলেন তারা নতুন শাসককে সহাশ্য আন্তরিক আশন্থগত্যে মুগ্ধ করেছিলেন বলেই ধরে নেওয়া যায়।

কিন্তু অঞ্চলবিশেষে নবাঁগন্তক শাসনকর্তাদের প্রতি বিরূপ বিক্ষুব্ধ মনোভাবও দেখা গেছে সে সম্বন্ধে আলোচনা করলে ইংরেজ রাজত্বের প্রথমার্ধে বাংলাদেশ বাঙ্গালী সম্পর্কে যথাযোগ্য ধারণা অবশ্য পাওয়। যায় না, কিন্ত আঞ্চলিক কিছু কিছু চমকপ্রদ বিবরণ পাওয়া যাঁয়। এই সব ছোটখাট সংগ্রাম থেকে জাতীয় সংগ্রামের উৎস সন্ধান একেবারে নিরর্থক বল! যায় না। কিন্তু সচেতন সংঘবদ্ধ স্বাধীনচেতনা থেকে এই সব বিদ্রোহ জন্ম নেয়নি শুধু তাই নয়, আঞ্চলিক শীসন- শৈথিল্যেই একধরণের দূর্দান্তপ্রকৃতি মানুষরা শক্তিশালী হয়ে ওঠে, অত্যাচারী বুঠনকারী হিসেবে এধরণের বহু সম্প্রদায়ের বিবরণ সর্বত্রই মেলে। বাঁংলাদেশে মোঁঘলশীসনের অবসান ইংরাঁজ রাজত্বের প্রারস্ত মুহূর্তে যে শাসনগত শৈথিল্য

প্রাচীন মধ্যযুগের বাংলাঁদেশে রাঁজনীতিচর্চা ৩১

দেখ দিয়েছিল, অত্যণচারী সম্প্রদায়ের কাছে তা একটা বিশেষ সুযোগ বলেই মনে হয়েছে। সুতরাং দলবদ্ধতাবে এরা এদের হুনিদ্দিষ্ট কর্মপন্থা অন্থুসরণ করে গেছে গৃহস্থজীবন হয়েছে বিপর্যস্ত, ভীতি আতংকে জীবন হয়েছে বিপন্ন-অসহায়। অনেক সময় এও দেখা গেছে, দলবদ্ধ এই অত্যাচারীকে শাসন করতে ভীত হয়েছে স্থানীয় জমিদার বা শাসকগোষ্ঠী তীরাঁও অর্থ উৎকোঁচ দিয়ে এদের উদ্যত আক্রমণকে বাধ! না দিয়ে অপ্রতিহত করতেই সাহাধ্য করেছেন। ইংরাজ শাসনের বিরুদ্ধে আক্রমণ করার কথা আসেই নাকিস্তু যখনই ইংরাঁজ এদের শাসন করতে গিয়েছে তখনই প্রচও বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। মারাত্বক অস্ত্রশত্ত্রে সঙ্ভিত এই দস্থ্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে ছোটখাট বহু যুদ্ধ হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশের নানাস্থানে |

মুসলমান রাজত্বের শেষভাগে শাঁসনশৈথিল্য সর্বজনস্বীকুত। মুণিদাবাঁদের রাঁজতখত, ম্নিয়ে রাজা মন্ত্রী যখন গভীরতর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত--হুদূর অঞ্চলের অত্যাঁচারীদের অত্যাঁচারের মাত্রা তখন বেড়েই চলেছে ইংরাজ এদেশ জয় করেই শখসনব্যবস্থার প্রথম কর্তব্য হিসেবে শান্তিরক্ষাঁয় তৎপর হয়েছে সতরাং দেশের সর্বত্র শান্তি শৃংখল] রক্ষার চেষ্টাও করেছে সর্বাগ্রে আঞ্চলিক অশান্তির কোন খবর পাঁওয়! মাত্রই কোম্পানীর সশত্ত্র সৈন্য সেখানে উপস্থিত হয়েছে এবং অধিকাংশ স্থানেই তারা অত্যাচারী এই দস্ধ্য সম্প্রদায়কে সম্পূর্ণভাবে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছে এট] অবশ্য শাসক হিসাবে তাদের শক্তি সামর্ধ্যেরও পরিচায়ক | তারা যে শাসন ব্যাপারে অনেক বেশী যোগ্য দূরদর্শা তারই অন্যতম প্রমাণ মোঘলশাঁসনের শৈথিল্যে বাঙ্গালী যখন বীতশ্রদ্ধ, জীবন সম্পত্তি যখন নিতান্তই অনিশ্চিত, তখন এই নতুন শাসকগোষীই এদেশে জীবন ধনমান রক্ষার আশ্বাস দান করেছে।

ইংরাজ রাজত্বের প্রথমেই বাংলাদেশের নানাস্থানে নানা গোলযোগের

খবাঁদ পাওয়া যায়। এখাঁনে ষশোহরের ইতিহাসের কতকাংশ তুলে ধরছি।

13617691 101561156 082965515-এ 1-9.850% ৪1155 লিখছেন --7055 60010559107 ০162115150৭ 51526 আ25 0132 09025516501 20 29101212% ঢ0০01102 55902100, [0 1781. 2 1006054. 49০016 ০02 10000101016 2:06] 17002100395, 0009525, (1) 001) 1১০ 99 50166196015 002 12101010619, ০১ 26 1610561 52060150. 5 27, 17200015211, 1873, ৮০৭৬ ০: "10002521006 2000 17) 100100021 2662,০060 21 2500৮ 20%25115 66531220010) 03170151518, 100105150. 50002 01 019০ 250020 250 80০০66৫- ৪৭ 10 08105175600 006 0595016, 2006 60996 10100215 অ1

৩২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

০87908150, 7) 1784, 21752019005 0554 ০8 00০ 51511 20115, 25 72190165015 117 1750০06110০ 128৮5 091 2 409০01£ 200 7060110005 015001597 01 062:09+7, 078 0102 000951010, 1৮11. 172101611 5170 2. 02165 ০৫ 52055 00 ০890016 10000 50061911522 1795105 1500 ০06 1715 0110৬7615৪0 3212115 10851001010 0152 520055 ৫০] 01)166 1)00015 200 06652.090. 01610.১5

এই উদাঁহরণটির সত্যতা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ নিঃসন্দেহ না হলেও মোটামুটিভাবে থেকে সে যুগের বিদ্রোহী মনৌভাবটির মৃলাহুসন্ধান করাটা সহজতর হয়। যণোঁহরের উপদ্রবকে নিতান্তই ডাকাতি বলে গণ্য কর] যায় কি? ধরণের সংঘবদ্ধ ডাকাতি সত্যিই সম্ভব ছিল সে যুগে ৩০০০ জন মিলে যে লুঠতরাঁজ ডাঁকাঁতি তাঁর লক্ষ্য ছিল দলীয় স্বার্থ, নিজস্ব এলাকায় প্রাধান্ত লাভের বাঁসনা | এমনকি স্থানীয় জমিদার-_[ কালীশংকর- নড়াইল বংশের প্রতিষ্ঠাতা ]__-এই দলের অন্যতম নেতা ইংরেজরা] অনেক সময়েই বিদ্রোহী দমনে প্রথমে সম্পূর্ণই অসমর্থ হয়েছে। কিন্তু শাসক হিসেবে ইংরাজ নিজের শক্তি সম্বন্ধে সচেতন হবার সুযোগ পেয়েছে সাময়িক অসাঁফল্যই তাঁদের দৃঢ়তর করেছে পরবতী সংগ্রাম দমনে | এধরণের একটি উদ্াহরণের দর্পণে সে যুগের ছোটখাঁট বিদ্রোহগুলির পরিচয় স্পষ্টতর হয়! ইংরাজ প্রতিহাসিকগণ সর্বত্রই এদের ডাকাত, চোয়াড় ইত্যাদি নামে অভিহিত করেছে আর অন্কোন ইতিহাসের অভাবে বিদেশী লিখিত এসব ইতিহাস থেকে সত্যাহুসন্ধান সর্বদাই যে অব্যর্থ হবে তা বলাষায় না। স্তরাং নিবিচারে সত্য বলে ইতিহাস মেনে নেবই বা কেন? ইংরাজরচিত ইতিহাঁসে যাঁরা ডাকাত কিংবা চোয়াড়,_সত্যকারের ইতিহাসে কোন অন্ততর চেতনার তাগিদ ছিল কি ন। সে সত্য আজ আর জানার উপাঁয় নেই। বাংলাদেশের অঞ্চলে অঞ্চলে প্রায় একই সময়ে বিচ্ছিন্ন স্বতঃপ্রণোদিতভাঁবে এই যে সংগ্রাম চলেছে এর পেছনে বৃহত্তর কোন পটভূমিকা ছিল না বলেই মনে হয়। যদিও এদের উত্তব কার্যকাল আশ্চর্যভাঁবে একই সময়ের মধ্যে সংঘটিত হয়েছে ১৭৮০-১৭৯৯ সালের মধ্যেই এই সব বিদ্রোহ গোলযোগ ঘনীতৃত- প্রকাশিত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে | কিন্তু স্থানে স্থানে অতকিতভাবে এইসব দলবদ্ধ শক্তিমান অত্যাচারীদের সংগ্রাম সামর্থের পরিচয় নিতান্ত অবজ্ঞার নয় যশোহরের দৃষ্টান্তটি বিচার করলেই বোবা যায়, এরা দূরদর্শী, সংঘবদ্ধ, স্থগঠিত যোগ্য নেতৃত্বাধীনে পরিচালিত

১৭৭ [৯০ ৯১0 91169-9017821 10550100 0522660665---] 55016, 081009, 0212, 2৮৮38.

প্রাচীন মধ্যযুগের বাংলাদেশে রাঁজনীতিচর্চ ৩৩

বাংলাদেশের সর্বত্রই ধরণের সগ্ জাগ্রত শক্তির পরিচয় পেয়ে পরবর্তী বাঙ্গালী ওঁপস্কাসিকগণ থেকেই স্বাধীনতা আন্দোলনের স্বপ্ন সত্য সন্ধান করেছেন উপন্যাসের জনপ্রিয়তা দেখেই অনুমান করা যায়--ঘটনার সত্যকে অগ্রাহহ করে কল্পনার সত্যকে নিবিড়ভাবে উপলব্ধি করতে আমাদের বিন্দুমাত্র বাধা নেই এঁতিহাঁসিক তথ্যকে অভ্রাীন্ত বলে জানি না সুতরাং ওউপন্তাসিক কল্পনাকে নিতান্তই বুদবুদ বলে উপেক্ষা করা চলে না। তাছাড়া সেই উপন্তাঁসই যদি শক্তিমানের লেখনীসম্ভৃত হয়, তাহলে রাতারাতি ইতিহাসের মিথ্যাই জনমানসের প্রচণ্ড উৎসাহে সত্যের বতিকা হয়ে ওঠে বঙ্কিমচন্দ্রের “আনন্দমঠের» সন্ন্যাসী সম্প্রদায়, “দেবী চৌধুরাণীর” ভবাঁনী পাঠক সম্প্রদায়ের কথা প্রসঙ্গে আলোচ্য | একদা “আনন্দমঠের” মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেরণা “আনন্দমঠের” পরিকল্পনা অভূতপূর্ব, জনমনে তার ন্বদৃঢ় প্রভাবও তাই সুদূরপ্রসারী | 'আনন্দমঠের” ত্যাগী সন্র্যালী সম্প্রদায় গোপনে গোপনে যে স্থবিশাল স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিচালনা করেছেন-যে কোন দৃষ্টিতেই বিচার করি না কেনতা পরাধীন লাঞ্ছিত ভারতবাঁসপীর মনে এনে দিয়েছে সংগ্রাম সামর্থ্য, আত্মদানের প্রেরণা বঙ্কিমচন্দ্র এই উপন্তাসটির মালমশল! সংগ্রহ করেছেন ইতিহাস থেকেই। সত্যিই সে সময়ে বাংলাদেশে একধরনের সন্্যাসী সম্প্রদায় আবির্ভূত হয়েছিলেন-_ ছড়িয়ে পড়েছিলেন সমগ্র বাংলাদেশে ময়মনসিংহ অঞ্চলেই এদের আস্তানা, কিন্ত এর সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে এদের কর্মক্ষেত্র প্রসারিত করেছে শক্তি সামর্থ্য এর উপযুক্ত, যখন.তখন ইংরাজ সৈন্যদের মুখোমুখি হতে যার। বিন্দুমাত্র ভীত হয় না। মুহূর্তের মধ্যে এরা আবিভূ্তি হয়, মুহূর্তে মিলিয়ে যায়। বঙ্কিমচন্দ্র এই সন্নাসী সম্প্রদায়ের মধ্যেই অতীত বাঙ্গালীর স্বাধীনতা সংগ্রামের পরিচয় দিয়েছেন, - কল্পনার মধ্যেই দেখেছিলেন তাদের আদর্শ দেশোদ্বারের স্বপ্ন বলা বাহুল্য, পরাধীন জাঁতির সামনে এই সংগ্রামের চিত্র মহীমূল্যবান,_-ভবিষ্যতের কর্মপন্থাকেই উজ্জীবিত করার স্থকৌশল এখানে প্রয়োগ করা হয়েছে ইতিহাসের আবরণে কিন্তু এ্রতিহাসিক দলিল পত্র থেকে যা পাওয়া যাঁয় তাতে সন্্যাপী সম্প্রদায়ের মহিমা! নেই | শুধু তাই নয় বহির্বাংলার একদল লু£নকারী সাঁধুবেশ ধারণ করে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে যে অত্যাচার শুরু করেছিল ইতিহাসে পাই শুধু তারই বর্ণনা 21)55] 121501156 0825665215-র ময়মনসিংহের ইতিহাস প্রসঙ্গে এই ভ্রাম্যমান সম্প্রদায়ের চমকপ্রদ বর্ণনা রয়েছে--+7016 17156015০0৫ 0106 09012 15 071110035. "01965 10172101600 18002 0095295 6102 ০0120 15176 90000 ০0:01) 11115 ০0£710520 2020 02091 00 (০101758.101065 £0 12090]

৩৪ উনবিংশ শতাবীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

2816৭, 0১০5 1১2৬০061006] 60705, 1,00965 1901 90011657000 10৬০

০017117000515 0012 01802 6০9 012০০, 165০7011005 0021 17101001061 10 002 [76281671956 ০0101101217 01025 ০৪0 56681] 117. (13০ ০০012000100 10101 €0০৩ 7859..10103 0025 215. 605 9:00990 21501070950 80612 00612 112 [0719. 19779 212. 10610179005 01365 815 21] 011501095 90019 25 (০ 391)58519--6106 59165 01 [71005010818.৮১৮

এই বর্ণনীতেই সন্যাসীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলিও ধরা পড়েছে। ইংরাজ প্রতিহাসিকদের বর্ণনীতেই-_এরা “50906556200. 10056 2.০66%2 2320 1 [7৭18” কিন্তু এই শক্তি তার! প্রয়োগ করেছে এদেশীয় জমিদার সম্প্রদায়ের ওপর ডাকাতি লুণঠন করেই শুধু তাই নয়,_জমিদারেরা এদের ভয় করে চলত সে শুধু শংকায়। হন্ন্যাসীদের সম্বন্ধে আরও বলা হয়েছে__ |

“শু2৩ 1600 8150 60 076 28001002520, 15210 00217 ০112179 ০০00]0

1506 72৩, 0০5 0210060 60£601361, 0101536760. 0106111100565 21১0 5014

0611 01011012107 1000 919৬615- ৯৯

সন্ন্যাসী সম্প্রদায়ের এই বীভৎস ক্রিয়াকলাপ দমনেই তৎপর হয়েছিল ইংরাজ। সন্ন্যাসীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বেধেছিল অনিবার্ষভাঁবে সন্্যাসীদের এই নিধিচার অত্যাচারকেই স্বাধীনতা আন্দোলনের মহিমায় ভাস্বর করে তোলা হয়েছে উপদ্াসে। কারণ ওউঁপন্তাঁসিক ইতিহাসকে ছাড়িয়ে গেছেন, তার ক্ষেত্র হয়েছে আরও বিস্তৃত। তবু বলি, সন্্যাসী বিদ্রোহ বাংলার সার্থক আন্দোলন নয়ই উপরস্ত স্বাধীনতা৷ আন্দোলনের মাহাত্স্যবজিত সম্পূর্ণ একটি আঞ্চলিক হাঙ্গীমী_ সন্ন্যাসীরা যাঁর নায়ক__ বাংলাদেশের বুকে যারা শুধু গায়ের জোরেই অত্যাচারের তাঁওব লীলা চালিয়েছে এদের দমন করতে ইংরাঁজকে যে বেগ পেতে হয়েছে সে সম্পর্কে বলা হয়েছে- 0 18097, 59081902 1095150:90915 (0০০0০1৮ 25 €968101191)60 26 [2911591756-91)2101 00 01890]. 06 012101175695 010 006 ১০:৭79২০ এবং তৎপরতার সঙ্গে সন্গ্যাসী দমন করে শান্তি শৃংখল! ফিরিয়ে আনার সমস্ত কৃতিত্ব ইংরাজ শাসকদেরই | ইংরাজদের শাঁসনদক্ষতা বুদ্ধি শাসন পরিচালনাকৌশল অনেক উচ্চাঙ্গের--সেই শক্তি দিয়ে বন্য অনগ্রসর যে কোন

পশলা » সি াপীপিল শপ শশী সপপীিসপী পা পিপিপি

১৮, তি £৯, নিবি লাত্র [01500106 0525655675--019 00675172175 0915865 1017. 7-28.

১৯, [010 77৮30,

২৯০, 1910 22,

প্রাচীন মব্যযুগের বাংলাদেশে রাঁজনীতিচর্চ' ৩৫

সম্প্রদায়ের উৎপাঁত সহজেই দমন করেছে। সম্ব্যাসীদের সঙ্গে ইংরাজদের সংঘর্ষও অত্যন্ত ভয়াবহ আঁকার ধারণ করেছিল, _কিন্তু সন্ন্যাসী পরবর্তীকালে সম্পূর্ণরূপে পরাভূত হয়েছে সন্গাঁসী-বিদ্রোহকে নিছক সম্প্রদাযগত ঘটনা হিসেবে ব্যাখ্যা করা যত সহজ বিদ্রোহী সম্প্রদায়ের সচেতন সংগ্রামরূপে এর ব্যাখ্যা কর। তেমনি অসম্ভব। পূর্বেই বলেছি সন্যাসী-বিদ্রোহ যখন রীতিমত ভয়াবহরূপ ধারণ করে তখন সর্বশক্তি নিয়োগ করে ইংরাঁজ এদের দমন করে দেশের পরম কল্যাণই সাধন করেছে। বিদ্রোহ যদ্দি জনগণের আন্তর সমর্থন না পায় তার সমাপ্তি ঘটে সাধারণতঃ এভাবেই বহির্বাঙ্লার একদল শক্তিমান লুণ্ঠনকারী সন্ন্যাসী সম্প্রদায়ও সেদিন জনগণের মনে ভীতির সঞ্চারই করেছে মাত্র--এর বেশী কোনও উল্লেখযোগ্য পরিচয় দিয়ে এদের চিহ্নিত কর যায়না। *

সন্ন্যাসী বিদ্রোহের মত আরও অনেক আঞ্চলিক বিদ্রোহ বাঙ্গলার নানাস্বানে প্রায় একই সময়ে একই পদ্ধতিতে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রসঙ্গে বীরভূমের আঞ্চলিক হাক্গীমা মেদিনীপুরের চোয়াঁড় সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করতে হয়। প্রথমটির কারণ ক্স্পষ্ট__47076 5৪115 9610৭. ০0৫ 8016151) ৪1001771508:000, আ৪$ ৪. 01006 000015 01 70100100009. আ29 02০৬9908620 05 91001086... [015662955 207 46561000101 000৮০ 010০ 00016 60 ৪,005 0: 18 আ15591)955 ৪2] 1012000, 110 10101) 01512)360 50101615 1216 2 111)105 10917)0, 1021595 09609165 58610511175 810176 002 ৮০562] 0010215 230 11) 0196 ]8176165 2.0109955 002 4৯১181৮০২১৯

বীরভূম আদিবাসী অধ্যুষিত প্রীচীন রাঁঢ়ভূমি ।--শৌর্য বীর্যে রাটের প্রাচীন ইতিহাঁস সথসমৃদ্ধ গৌরবাদ্বিত। পাঠান-আঁফগান শক্তিকে প্রতিহত করার জন্যও এদের প্রচেষ্টার অন্ত ছিল না। বীরভূমির গৌরব বারবার রক্ষা করেছেন কীর সন্তান সম্প্রদায় এর উল্লেখ মেলে মুসলমান এঁতিহাঁসিকের ইতিহাসে ;) [15929-9- ১৪120)-এ বলা হয়েছে-__-

“01 22210109215 026 98170150120 2150 13151770021 06126 0:905060 95 061)92 701539, 12001091195 200 131115, 080. 1706 02150189115 20068 026016 0)2 0280, 000 2200050. 11056520. 00617 25205 ৫০ ০2 012

২১, 1, 3. 850? &151105--7850851101560606 (552656066053 0000, 00562, 8910, 2-৮16--717,

৩৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

(20580610125 012 £)617 91592152100. 0101008810 015210 9560. 00 085 1 006 0909] 0150165, 702591)05 2100 £1665৮, ২২

বীরভূমের এই উপদ্রবের মূলেও সেই আদিম শক্তিরই প্রকাশ দেখি। ছুতিক্ষের পীড়নে আত্মজাগরণের প্রয়োজন দেখ] দিয়েছে- ক্ষুধার শান্তি যার উপশম | বাংলা দেশের বুকে এই দুভিক্ষ যে বীভৎস প্রচণ্তা৷ নিয়ে দেখা দিয়েছিল-_-তার পরিচয় মেলে বঙ্কিমচন্দ্রের “আনন্দমঠে" | শ্বণান বাংলার বুকে সেদিন জীবিত মানুষের মিছিল দেখা যায়নি অন্রহীন শক্তিহীন শবের মিছিলেও বিব্রোহী আত্মার গর্জন শুনেছি। সন্ন্যাসী বিদ্রোহেরও অন্যতম কারণ দুতিক্ষের ভয়াবহ আবি3তাঁব। বীরভূমের ঘটনার অন্তরাঁলেও সেই একই কারণ। একটা প্রচণ্ড বৈপ্রবিক চেতনা নিয়ে সেদিন মানুষ সমবেত হয়েছে মানবিক দাবী প্রতিষ্ঠার তাগিদে ছুভিক্ষ থেমে যাওয়ার পর এই ধরণের উৎপাঁতেরও সমাপ্তি ঘটেছে বীরভূম মেদিনীপুরের বিদদ্রাহে অংশ গ্রহণকারীদের মধ্যে আমর। আদিবাসীদেরই প্রাধান্য দেখি ইংরেজ এঁতিহাসিকের বিবরণে এরা “01110721,”- পার্বত্য অধিবাসী | মেদিনীপুরের যে বিদ্রোহ ঘটনাটি এখানে উল্লিখিত হবে সেটি ঘটনাবৈচিত্র্যে আরও অভিনব মেদিনীপুরের বিদ্রোহীদের ইংরাজপ্রদত্ত নাম 'চোয়াড়' এবং শব্দটির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে-- “1015 €ভাটেও। 51510186510 921052511 “আত 00012077151) £51107৮% 200 ৪৩ ৪0116 07191590015 60 0175 আ1]10 0010995 আ1)0 11015201050 006 ]810615 11217915 200 0106 05065 702501)ন 0106107%

এদের হিংসাত্মক ক্রিয়াকলাপ নানাভাবে আরম্ভ হয়েছে অষ্টাদশ শতাব্দীর একেবারে শেষার্ধে | “70০৬2105 চ)০ ০1992 0: 005 ০2126075616 00100819 010৮6 ০000 110 00210 12102111012 800 20217090. 01611: 79195 00 6106 1681 01002 01500106.110102 090015581- 02820 1 £১01011 1798, আআ) 0০ ড1112£25 212 0000 0০1) 1) 91199৮.২৩

দলবদ্ধ এই শক্তির অত্যাচারে সাধারণ মানুষের ধনপ্রাণ হয়েছে বিপর্যস্ত প্রতিরেধ করার মত সংঘবদ্ধতা বা একতা সে যুগের গ্রামবাসীদের মধ্যে দেখা যেত অল্ই যাঁও বা ছিল অত্যাঁচারীদের উদ্ভত খড়োর ভয়ে তার] নিস্তব হয়ে গেছে মেদিনীপুরের ঘটনাটিতে যে বৈচিত্র্যের কথ! বলেছি তা হল,_-এ অঞ্চলের শাঁসনকর্ীর অধীনে এই অত্যাচারী সম্প্রদায় হয়েছে আরও দুদ্ধর্ষ। সেকালে রাজা জমিদার

22, 1010, 23. 1৯. ৯701 8121155-706785110150806 055560575-71105975015, 05108065, 915. ৮4০,

গাঁচীন মধ্যযুগের বাংলাদেশে রাজনীতিচর্চা ৩৭

সম্প্রদায়ের অধীনে ধরণের ছুদ্ধর্ষ সৈম্তদল থাকত-_রাজ্যরক্ষার সহায়তা করাই যাঁদের কাজ বঙ্কিমচন্দ্রের “দেবী চৌধুরাঁনী”তে দেবী রানীর বর্ণন1 পড়েছি, ডাকাত সম্প্রদায়ের অধিনায়িকা দেবীরাঁনী পেয়েছে রাজ্য পরিচালনার সর্বময় কর্তৃত্ব। সম্পূর্ণ কাল্পনিক বলে একে অগ্রাহথ করব কী করে? মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলেও আমরা একজন রানীর সন্ধান পাই,_যাঁর অধীনে কুখ্যাত চোয়াড় সম্প্রদায় তাদের অত্যাচারের অভিযাঁন চালিয়েছে ফলে ইংরাঁজ শাসকের কোঁপে পড়েছে এই চোঁয়াড় দলের অধিনায়িকা। প্রসঙ্গে বলা হয়েছে_[ 0৩ ৬1০1065 ০£ 036 ০0 96 11101791090165 61)০16 ০:০2 00066 019095 1616 6102 (10099 25921770120. 117 00:06 ৮12. 73210908101, 98160171 2199. 12759891015) 005 1850 01509 02176 005 15510270702 0102 [২৪101 01 1$01017819016, 18092 22811017091 020 02210 01005106 90021: 1017951009185621702100,

12105010 00০ ৪0000110155 আ1০ 100৬০9৭ 00 200101. 4£১056921) 2100 9100 19170959111) আ০16 021217৪006০ 13271, আ1)0 ৪9 5520০650 00 10০ 1 162506 আ100 01000215 ৪5 01009510000 10101790015 25 2. 011501061 01) 610. £১111 1799...]16 85 5025720620 01020 002 01500102100625 ভা21০ 10106765015 006 5০1৬8106506 01০ 0150095925590 1৬101797016 [২9101 200 001)215, 006 606 00910 58056 6০ 00001681]0 80028.5 60 108৬০ 12212 65০ 15909 06 010:21:9 01 61)2 12910001012 0210. 1961 191005 17 6125 22810100211 01 02101৮২৪

মেদিনীপুরের চোয়াড় বিদ্রোহ দমিত হলো ১--বন্দী হলেন চৌয়াড় দলের অধিনেত্রী “রাণী” ইংরাঁজ বাংলার অঞ্চলে অঞ্চলে সুদৃঢ় শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করে তাদের শক্তি স্থাঁয়িত্বের শিকড় বুদুরপ্রসারী করতে সমর্থ হল। মোটামুটি ভাঁবে এই সব আঞ্চলিক বিদ্রোহের সবকটিই ইংরাঁজ দমন করতে সমর্থ হয়-_সে শুধু রণকৌশলী শক্তিশালী বলেই নয় সেইসঞ্গে ইংরাঁজের হুক্মদশিতারও সংমিশ্রণ রয়েছে যেখানে ওয়োজন হয়েছে সেখানেই তাঁরা কৃটনীতি-ভেদপীতির স্থক্ম চাঁতুরীর পন্থা অবলম্বন করেছে সেই সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্জগৎ--বহির্জগতের প্রতিটি অস্পষ্ট পিপির পাঁঠোদ্ধারে সমর্থ হয়েছে এই দেশের মানসিক চিস্তীধারা, চারিত্রিক গঠন দৈহিক সাম্যের সঙ্গে তাদের পরিচয় নিবিড়তর হলো। ১৭৫৭--১৮০০ সালের মধ্যে ইংরেজ পেলো তাদের পরবর্তী কার্ধধারার একটা সুস্পষ্ট

২৪. 1010, (বি

৩৮ উনবিংশ শতাবীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

নিশি এবং বাংলাদেশ দিল তাঁর অস্থিরচিত্ততার, _অনৈক্যের, অসঙ্গবদ্ধতার ইতস্ততঃ পরিচয়

এই সময়ের ইতিহাঁস থেকে বাঁংলাঁদেশের রাজনৈতিক চেতনার যে পরিচয় মেলে তা এককথায় অবিন্তন্ত-শিখিল, অদূরদশিতাঁয় ভরপুর | বাংলাদেশের সর্বত্র যে বিদ্রোহ বিপ্লবের বহিশিখা জলে উঠেছে সে আলোতে বাঙ্গালীর ঘর পুড়েছে কিন্ত আত্মবিসর্জনের অগ্নিতে শুদ্ধ হবার অবকাশ পায় নি তারা বস্ততঃ সমস্ত বিদ্রোহ বিপ্লবের সঙ্ষে উচ্চস্তরের সামাজিক জীবনের যোগাযোগ ছিল অঙি অল্পই তারা সভয়ে আত্মগোপন করেছে-_নিঃশব্দ শঙ্কায় গৃহকোণে আবদ্ধ থেকে সত্রী-পুত্র-কগ্াঁদের মানসম্ত্রম রক্ষা করেছে। এই সমস্ত উৎপাঁতের সঙ্গে তাঁদের কোনরকম যোগাঁযোগের কথা ভাবাই যায় না সাধারণতঃ আদিবাসী বহিরাগত দন্থ্যবলেই হান্গমাঁকারীদের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে--হুতরাঁং তাঁদের সঙ্গে বাংলাদেশের চিন্তাধারার যোগ কল্পনা করাই অসম্ভব আজকের দিনে যে বিশাল বাঙ্গালী সমাজের অস্তিত্ব দেখি হয়ত ১৬০ কি ১৭০ বংসর আগে তার আয়তন ছিল আরও সীমিত; কিস্তু সেই গোঠীবদ্ধ বাঙ্গালীসমাজ তখন রাজনীতির অন্তরালে সুস্থ জীবন শান্ত গৃহরচনায় নিমগ্র-_মাঝে মাঝে অত্যাচার লুগ্ঠনে দিশাহারা এইমাত্র সামাজিক জীবনে এরা মাঝে মাঝে একত্র হোত কিন্তু রাজনৈতিক কোন হেতু সেখানে ছিল না। জমিদারও রাজা বলে যে শক্তিমান বাঙ্গালী ভূত্বামীদের কথা শোনা যায় এবার তাদের কথায় আসা যাঁক। শক্তি শৌর্য-বীর্ষের যে উজ্জ্বল পরিচয় ষোড়শ সপ্তদশ শতাব্দীর বাংলাদেশে পাওয়া গেছে অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রারস্তে তা একান্তই নিপ্রভ ছ্যতিবিহীন | জমিদার ভূত্বামীদের যেটুকু পরিচয় পাওয়া যায় তাও নিতান্তই অনুল্লেখ্য। বিদ্রোহীদের লুঠনকাঁরীদের হ্ঠাঁৎ আক্রমণের হাত থেকে রাজ্যরক্ষার কোন সাম্যের অভাবেই এর তাদের প্রশ্রয় দিয়েছে, অর্থ রসদ সাহাঁধ্য করেছে এই কারণে অথচ বিদ্রোহদমনের কোন রকমের সংঘবদ্ধ আয়োজন বাংলাদেশের কোথায়ও দেখা যায় নি। ফলে ইংরাজ শাসকের কাছে বিনীত নিবেদনে এই ভূত্বামী সম্প্রদায় এদের অক্ষমতার অসামর্ঘযের কথাই জানিয়েছে বিনিময়ে লাভ করেছে ইংরাঁজ তরফ থেকে ধনমান বাচাবার আশ্বাস। এই ভাবেই সাম্রাজ্য লাভের প্রথম পঞ্চাশ বছরে ইংরাজ বাংলাদেশের জল, হাওয়া, মাটি মানুষ সম্বন্ধে একটা প্রগা় ব্যুৎপত্তি লাভ করেছে। অন্ততঃ এই দেশের সঠিক ইতিহাস পড়ে নিতে ইংরেজের কোনো অস্থবিধাই হয়নি বাংলা দেশ, বাঙ্গীলী বাংলার নিয়শ্রেণীর আদিবাসী, ইংরাঁজ শাসনের প্রথম পর্যায়ে এদের প্রত্যেকের সঙ্গেই ইংরাঁজের যোগাযোগ ঘটেছে একান্ত ভাবেই

প্রাচীন মধ্যযুগের বাংলাদেশে রাঁজনীতিচর্চা ৩৯

তবু বাংলাদেশ নিতান্তই নির্জীব হয়নি কোন কালে। লক্ষ্য করতে হবে, বাংলাদেশের জন্নমুহূর্ত থেকেই কোন না কোন চাঞ্চল্য এতে লেগেই আছে। সফল অসফল যাই হোঁক না কেন যুদ্ববি গ্রহ বারবার বাংলার ধৃহজীবনকে আন্দোলিত করেছে। নিশ্চিন্ত নিরুপদ্রব শান্তি কোনদিনই বাংলাদেশে ছিল 'না। বিদেশী লুঠনকারী কি স্বদেশীয় অত্যাচারী উভয়হন্তেই অত্যাচার লাঞ্না কপালে জুটেছে অনিবার্ষভাঁবে। কোনি না কোন বৈচিত্র্য চাঁঞ্চল্য এদেশের শান্ত স্সিগ্ধ প্রকৃতিকে ব্যন্ব করেছে বারংবার অথচ বাঙ্গালীর ভাবুক হিসেবে, কবি হিসেবে অধ্যাতি। যুদ্ধ বিপ্লবে সক্রিয় অংশগ্রহণ না করেও বাঙ্গীলী যে যুদ্ধ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে-মোটামুটি সেটা তুচ্ছ করার মত নয়। বলাবাহুল্য বাঙ্গালীর তাঁবজীবনে এই যুদ্ধঅভিজ্ঞরতার গ্রভাব পড়েছিল গভীরভাবে উনবিংশ শতাবীর প্রথমার্ধ থেকেই একটা স্থনিদিষ্ট চিন্তাধারায় তা পরিচালিত হয়েছে। উনবিংশ শতাঁীতে বাংলার ভাঁবজগতে যে আলোড়ন দেখা দিয়েছে তাতে নেতৃত্ব করেছে বাংলাদেশের উক্ত সম্প্রদায়_-যাঁরা এতদিন রাজনীতি যুদ্ধনীতিকে বর্জন করেই এসেছে। শুধু মনন চিন্তনের ক্ষেত্রেই যাঁদের পদার্পণ ঘটেছিলো--তারাই এবার সক্রিয় ভাবে দেশ জাতির সঙ্গে এক সমতলে এসে দধাঁড়িয়েছে। যুদ্ধ বিগ্রহ্র দীর্ঘ অভিজ্ঞতাকে দূর থেকেই অবলোকন করেছে এরা এবং এ৪ বুঝেছে যে, সত্যকারের শক্তি লাঁভ করতে গেলে আন্তরশক্তির বিকাশ ঘটাঁতে হবে সর্বাগ্রে নিছক দৈহিক ক্ষমতা দিয়ে যাকে লাভ করা যায় না আন্তর শক্তির দ্বারা তাঁকে জয় বরা যায় অনায়াসে বাংলাদেশের নানা অঞ্চলে যে সব ছোটখাট বিদ্রোহ ঘটেছে প্রায় সবকটির পরিণতির সঙ্গেই পরিচিত হয়েছে বা্ধালী। যে নিদারুণ ব্যর্থতায় তারা স্তৰ হয়েছে সে শুধু শক্তির সঙ্গে চিন্তার, খীরত্বের সঙ্গে বোধির, যোগাযোগ ঘটে নি বলেই। তাঁই, বাংলাদেশের অতীত ইতিহাসের শিক্ষা থেকে আধুনিক বাঙ্গালী নতুন জীবনের দীক্ষা গ্রহণ করেছে। বহু আগন্তক শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গেই তাদের পরিচয় বহুদিনের, ইংরাঁজ তাদের মধ্যে শেষ আঁগন্তক। কিন্ত শিক্ষার আলোকে, পাশ্চাত্য সভ্যতা সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড় পরিচয় লঁত করে বাঙ্গালীর যে আত্ম- জাগরণ ঘটল, সে জাগরণ অনির্বাণ দীপশিখার মতো৷ তাকে পরিচালিত করেছে নখজীবন শুরু করার মুহূর্তে

দ্বিতীয় অধ্যায় উনব্িবংশ শভাব্দীব্প প্রথমাণর্ধ স্লাজনী ভিচ্৭

১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধ শুধু মৌঘল শাসনের অবসান মুহূর্তেরই প্রতীক নয়, সম্পূর্ণ নতুন একটি রাজনৈতিক চেতনাঁরও জন্মদান করেছে_সেই জঙগ্ই অরণীয় ১৭৫৭। দীর্ঘদিন মৌঘলণাঁদনে অভ্যস্ত বাংলাদেশ ঠিক সেই মুহূর্তে বোঝে নি এর তাৎপর্য-_ কিন্তু ক্রমাঁগতই নব্য শাঁসনতন্ত্রের অভিনবত্ধে বিদ্মিত হয়েছে সবাই। মোঘলশাসন সমগ্র ভারতের অস্থিমজ্জায় প্রবেশ করেছিল বহুদিন আগেই, বাংলা- দেশের ব্যাপারেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। সংঘর্ষ হয়েছে, যুদ্ধানল জলে উঠেছে, কিন্ত সেই আলোকে একটি সত্যই ধর! পড়েছে বার বার, সে হল, আমরা পরাঁধীন- অসহায়; শাসক সম্প্রদায়ের কাছে আমাদের সত্তার কোন স্বীকৃতি নেই। তাই জমিদার থেকে সাধারণ প্রজ্ঞা সকলেই মোঘলসম্রাটের কুপাঁলাত করে নিশ্চিন্ত হতে চেয়েছিল। রাঁজদ্বারে সম্মীনের লোভে বিদেশীভীষার অধ্যয়ন ছিল গৌরবের-সম্পদের-সমৃদ্ধির অগণিত হিন্দুর ধর্যান্তর শুধু সামাজিক প্রতিষ্ঠার দাবীতেই নয়-_তার চেয়ে বড়ো ছিল রাজপৌঁষকতা নিছক অত্যাচার কিংবা বিধিনিষেধেও মানুষ কি ধর্যাস্তরিত হতে পারে যদি এর পেছনে রাজান্থকৃল্য না থাকে? তাই উনবিংশ শতাববীতে যে বাংলাদেশকে প্রত্যক্ষ করি তার সর্বাঙ্ে বিগত শতাবীগুলির স্থৃতিচিহ দীপ্যমান। মুসলমান প্রধান বাংলাদেশের পুজা- পার্ধপেন্উৎসবে-ব্যসনে হিন্দু মুসলমান সংস্কৃতির মধ্যে মিশ্রণ ঘটেছে। ধর্মেও এর অনুপ্রবেশ ঘটেছে। - হিন্দু মুসলমান উভয়েই একটি অখণ্ড সাঁমাজিকতার মধ্যে বাস করেছে। বলাবাহুল্য এই মিশ্র সাংস্কৃতিক জীবনের তিত্তিমূলে ছিল মুসলিম শাসনপ্রভাব কিন্তু তারই অভাবে হিন্দুসমাজ বোধকরি অলক্ষ্যে নিশ্চিন্ত হতে পেরেছিল। মুসলিম শাঁসনের কতগুলি জঘন্য ক্রিয়াকলাপ চিরদিনই হিন্দুর কাছে বণ্য- গোহত্যা নারীলোলুপতার বীভংসতায় চিরদিনই হিন্দুসমাজ ছিল সন্তস্ত। তাই নব্য শাঁসকসম্প্রদায়ের দিকে তাকিয়েছিল উৎস্ক বাঁংলাদেশ। কৌন প্রতিবাদ প্রতিক্রিয়ার সংবাদ পাঁওয়া যাঁয় নি। জমিদার-প্রজা সকলের বিশ্বয় ঘনীভূত হয়েছে নতুন শাসকগোঠী সন্বন্ধে।

দীর্ঘকাল ধরে ইংরাজশাসনের বর্ণনা প্রসঙ্গে আমাদের এঁতিহাঁসিকগণ নিরপেক্ষ প্রশংসা না করে পারেন নি।-_জ্বাতীয় ইতিহাসের কিংবা জাতীয়ত!র চেতনা থেকে নতুন এই বিদেশী শাঁসকশ্রেণী আমাদের সহাস্তৃতি দাবী করতে পারে

উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে রাজনীতিচর্চা ৪১

না। কিন্তু যে চেতন থাকলে শক্তিমান বৈদেশিক রাজশক্তিকে প্রতিহত করা যায় সেই চেতনা তখন কোথায়! দেশোদ্ধার-স্বাধিকাঁরতন্ত্-স্বায়তশালন--প্রত্যেকটি শব্দ তখন শব্ব-গৌরব অর্থ-গৌরব উভয়টিই হারিয়েছে সগ্ভধ আগত এই রাজতন্ত্রের কাছে বিনীত আন্গগত্য প্রকাশ করার চেষ্টা করে আমর আমাদের সেযুগেরই জাতীয় চেতনার পরিচয় দিয়েছি। আমাদের কাছে ইংরেজও যা, ফরাসীও তাই। কিন্তু এটুকুই আমাদের একমাত্র সৌভাগ্য যে ইউরোপের তৎকালীন শ্রেষ্ঠ শক্তি ইংরাঁজই আমাদের নতুন প্রভুর স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলো আমাদের এতিহাঁসিকগণ এই সৌভাগ্যেরই উচ্ছ্বসিত প্রশংপ! করেছেন | 4700০861090, 1166196016১ 30০16, 1621161010১ 170275:5 172170150115 800. 001161021 1115, ৪1] 2616 61) 12৬1151178 600০1. ০0 02705 ₹7 100766015 010 6106 ০5০. নস 00059 01 & 509:010225, 02121009] 90০1265 1068810 00 5015 26 2150 10055 01505 00 ৪100. 0: 2. 1)625217-52100 0085101819-১৯

১৭৫৭-১৮০০ সাঁল। সময়ের দিক থেকে এর স্থায়িত্ব মাত্র অর্ধ শতাব্দীর কিন্তু এর মধ্যেই বুদ্ধিমান ইংরেজ বাংলাদেশের প্রতিটি অন্ধকার কোণে জমে ওঠা দুর্বোধ্য- লিপিগুলি প্রায় পড়ে ফেলেছিলো বিগত শতাঁব্'র সমস্ত শীসনচিহ্ন থেকে মুক্ত করে নব্য বঙ্গ রূপায়ণের একটা কল্পনায় তৎকালীন ইংরাঁজ সরকার প্রায় ব্যস্ত বললেই চলে। নতুন পাওয়া গুগ্তধনের মতো হঠাৎ পাওয়া এই বিশাল সাম্রাজ্যকে ভেঙ্গেটুরে মনোমত করে গড়ে নিতে গেলে যতটুকু গভীর পরিকল্পনার প্রয়োজন কৃটনীতিক ইতরাঁজ গর্ভনরদের প্রত্যেকেই কিছু কিছু উপলব্ধি করে গেছেন ইংরাজচরিত্রের সম্পূর্ণ ব্যাখ্যায় নানা জনের নানা মত কিন্তু বাংলাদেশ ইংরাজকে অন্ততঃ মুসলমানের চেয়ে অনেক সহজে আপনার বলে ভাবতে পেরেছে--এর কারণ তার সহজাত বোধশক্তি। সাগরপারের এই সভ্য সমাজ সম্বন্ধে তৎকালীন বাঙ্গালীর ধারণা বেশ স্বচ্ছ ছিল বলা যেতে পারে

১৮০০ সালকে বাংলার নবজাগরণের প্রথম উষালগ্র বলে বর্ণনা করা যাঁয়। ইংরাজ শাসনের পূর্ণ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে প্রথম শিক্ষাঁয়তন প্রতিষ্ঠার বংসর এটি এই পরিকল্পনার অভিনবত্বে বাংলাদেশ সচেতন এই শিক্ষাঁয়তনই আমাদের অতীত অচলায়তন জীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গীর প্রাসাঁদকে ভেঙ্গে টুরে একাকার করে দিয়েছে। বাংলাদেশে অনেকদিন বাদে সত্যিকারের আলোকস্তস্তরূপী এই ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ আমাদের সঙ্গে নব্য শাসকের যে আন্তরিক সহযোগিতার কথা বলেছি

১০:150172৮ 920125 7156019 360551 (৬০1, 11), 1050059 1948), 77497.

৪২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

তার প্রমাণ ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে সনাতনপন্থী সংস্কৃতনিষ্ঠ হিন্দু পণ্ডিতেরও সাগ্রহে শিক্ষাদান ব্রত গ্রহ্ণ |

'উনবিংশ শতাব্দীর ইতিহাসের প্রথমার্য বাংলাদেশের পটপরিবর্তনের একটি নিশ্চিত সুহূর বলেই স্বীকৃত। ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ স্থাপনার সঙ্গে সঙ্গে বাংল গছচগার প্রথম সাঁড়গবর শুরু আর গগ্চর্চার অন্যতম অর্থ জীবনচর্চা। জীবনের যে সত্যকে প্রকাশ করার জন্য ভাখালু ছন্দোবদ্ধ কবিতা অচল, সেই সরল খজুসত্যকে প্রকাঁশ করতে পারে গগ্ধই। প্রতিদিনের ব্যবহারের-কথাবার্তার মধ্যে যে গণ্য সজীব প্রাণবাঁন, শুপু লিখিত রূপের অভাবেই তার শক্তি সম্বন্ধে আমরা ছিলাম শীরব উগ্ভমহীন। গগ্তকে সাহিত্যের ছাড়পত্র দেবার জন্য ইংরেজের যে সংঘবদ্ধ উদ্যোগ দেখেছি, তার মাধ্যমে ইংরেজী সভ্যতার স্বরূপ চিনে নিতে সাধারণ মানুষও ভুল করে নি--এর অনেক সমর্থনই দেখানো যায় সে যুগের উদাহরণ থেকে গঘ্ভরচনা গছ্যপঠনের সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্য জীবনের ওতপ্রোত সম্বন্ধটি আমর] চিনে নিলাম, জীবনের যেন একটা প্রচণ্ড অভাবের পুরণ ঘটল |

১৮০১ সালে রামরাম বস্থর প্রথম গগ্রচনার স্বত্রপাত “রাঁজ। প্রতাপাদিত্য চরিত্র” রচনার মাধ্যমে শুধু তাই নয় ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের বেতনভোগী পণ্ডিতসম্প্রদায়ের প্রত্যেকেই কিছু না কিহু গন্ধ রচনা না করে পারেন নি-_সেটা থানিকটা নতুন ভাবধারাঁর প্রেরণায়, কিছুটা প্রয়োজনে | উন্মুখ রসগ্রাহী ছাত্র সং্রদায়ের সামনে তাদের কিছু বলতেই হোত যেহেতু তাঁরা শিক্ষক স্থতরাং ক্ষমতা অক্ষমতার প্রশ্ন ওঠে না, ভালমন্দ বিচার নিরর্থক হয়ে পড়ে তাছাড়া পৃষ্ঠ- পৌঁধক ইংরাঁজদের একটা চুড়ান্ত নেশার মত পেয়ে বসেছিল এই নতুন প্রচেষ্টা রাজ্যস্থাপনের বণিয়াঁদ দৃঢ় করার জঙ্য এদেশবাপীর দৈনন্দিন ভাষার সঙ্গে দৃঢ় পরিচিতি দরকার; তার জন্য সত্যিকারের আন্তরিকতার অভাব দেখা যাঁয় নি। কের|)র নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ না করে অন্ততঃ বাংল! গণ্ভসাহিত্যের ইতিহাস লেখা যাবে না কোনদিন। বিদেশী এই সব মহীন্ুভব রাঁজকর্মচারীদের সঙ্গে আমাদের জাতীয়জীবনের নবজীগরণের অলক্ষ্য যৌগ রয়ে গেছে_সেট! দ্বিধাঁহীন সত্য

ফোট উইলিয়ম কলেজের গগ্চর্গর দ্রুত প্রসার সম্ভব হয়েছিল নান] কাঁরণে”_ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যটি হচ্ছে মুদ্রণ সৌভাগ্যলাভ। রামরাম বন্গর প্রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র” প্রথম মৌলিক গগ্ভরচনা যা মুদ্রিত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন ' করেছে। সেই সঙ্গে ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের পণ্ডিতসম্প্রদায় গন্ধ রচনার প্রেরণা

উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে রাজনীতিচর্চা ৪৩

উৎসাহ লাভ করেছেন।-_শাঁসক সম্প্রদায়ের অর্থান্ুকৃল্য আন্তরিকতায় বাংলাদেশের প্রথম গছ্ভরচনাকার গোী হয়ত বিম্মিতও হয়েছিলেন রচনার অভিনবত্বের দিকে দৃষ্টি দেবার সময় তখন কোথায়? হাতের কাছে যা এসেছে সানন্দে সাগ্রহে ইংরাঁজ প্রতিষ্ঠিত বি্ভালয়ের বিদেশী কর্তৃপক্ষ তা ছেপেছেন,_-পঠন পাঠনের স্থযোৌগের দিকে লক্ষ্য রেখে জাতির জীবনে এই হঠাৎ পাওয়া পৃষ্ঠপোষকতায় এক যুগান্তকারী আনশীর্বাদের বন্যার মত ভাপিয়ে দিয়ে গেছে আমাদের জীবন, তার উর্বরা পলিতেই ভবিষ্যতের সাহিত্য মহীরুহ পেয়েছে বাচার উপকরণ ১৮০০ শতাব্দীর সেই মহত্প্রাণ বিদেশীদের প্রণাম না জানালে সত্যের অপলাপ হয়--মহতের মাহাত্ম্য অনির্ণাত থেকে যাঁয়। ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের সেই শুতপ্রচেষ্টা বাঙ্গালীর নতুন জীবনচেতনা-_একই সঙ্গে এদের যোগাযোগ বিচার করতে হবে

সেই সময়কার গগ্ভ সাহিত্যের মধ্যে জাতীয়চেতনার স্থত্রপাঁত অনুসন্ধান করতে গেলে সে যুগের সাহিত্যস্ষ্টির মধ্যে অনুপ্রবেশ করতে হবে ; __কিস্ত তার চেয়েও বেশী করে অন্্ধাবন করতে হবে সেই সময়ের শিক্ষাব্যবস্থার অগ্রগতির ইতিহাসটুকু। ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের গছ্সাহিত্য অষ্টাদের মধ্যে সাহিত্য প্রতিভার পরিচয় যতটুকু পেয়েছি তার চেয়েও বেশী করে পেয়েছি তাঁদের পণ্ডিতী প্রতিভা তারা সাহিত্যসরষ্টা--একথার চেয়ে তাঁরা সাহিত্য শিক্ষক একথা অনেক বেশী অর্থবহ। গগ্ঠ সাহিত্যের বিরাঁট দুতিক্ষের ক্ষুধা মেটাঁতেই তাঁরা লেখনী ধরেছেন-শিক্ষক হয়েছেন সাহিত্যিক। তাই এদের সাহিত্যসম্ভার নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করলেই দেখতে পাই স্থজনী ক্ষমতার চেয়ে শিক্ষাদান প্রবণতাই এদের মধ্যে বেশী। ফোট উইলিয়ম কলেজের সাহিত্যকে একটু খু'টিয়ে বিচার করলে কয়েকটি ভাঁগে “ভাগ করা যায়;-_রচনার উৎস সন্ধান করলে দেখা যাবে, তাতে রয়েছে-_

(১) পাঠ্যপুস্তক- উপদেশ স্লিত কাহিনী রচন1।

(২) খুব বেশীদিনের ইতিহাস নয়--এমন এতিহাসিক চরিত্র থেকে রচনার উপাদান বেছে নেওয়া

(৩) রাজবংশের ধারাবাহিক বিবরণের মধ্যে ইতিহাস রচনার উপাদান আবিফার করা।

(৪) অভিধান রচনা

যে সমস্ত পণ্ডিতের রচনায় ফোট উইলিয়ম কলেজীয় সাহিত্য গড়ে উঠেছে__ এদের সকলের প্রবণতার মধ্যে একটা মোটামুটি রকমের সঙ্গতি আছে। প্রথমেই

8৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

রামরাম বন্ুর প্রতাপাদিত্য চরিত্র রাজীবলোচন মুখোপাধ্যায়ের মহারাজ “কিষচন্দ্ রায়ের জীবন চরিত্র' নিয়ে আলোচনা করা যাঁক। এ'র! দুজনেই প্রায় একই ধারণ! থেকে উপরোক্ত গ্রন্থ ছুটি রচনার প্রেরণা পেয়েছেন, -উদ্দেশ্যও প্রায় একই | স্বজাতীয় চরিত্রের মধ্যে আপন এতিহ্ের অনুসন্ধান করার এই প্রবণতাঁটি বিশেষ ভাবে লক্ষ্যণীয় রাজা! প্রতাপাদিত্য বাংলার এক উল্লেখযোগ্য জাতীয় চরিত্র-_ বাঙ্গালী হিসেবে রামরাঁম বস্থ সত্যটি উপলব্ধি করেছেন--সেজন্য তাঁকে ধন্যবাঁদ দিতেই হয়। প্রতাপাদিত্য রচনার পম্চাঁতে রামরাঁম বহ্থর এই প্রবণতার মৃল্যটি অন্ততঃ সে যুগের পটভূমিকায় অপরিসীম বল! চলে কিন্ত গ্রস্থটর মূল্যবিচারে দেখা যাবে, আর কোন উল্লেখযোগ্য বিষয়ের অবতারণ! নেই প্রতাঁপাদিত্যের অপরিসীম প্রতাপ কিংবা নির্ভেজাল স্বদেশপ্রেম কোনটিই গ্রন্থে নেই,__শুধু গতানুগতিক বিবরণ ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোন সত্যের স্বাক্ষির নেই,-_জাতীয়তা কিংবা স্বাধীনতার কোন স্বপ্ন ভুলেও আত্মপ্রকাশ করে নি__এটাই আশ্চর্য অথচ সত্য হোক, মিথ্যাই হোক, প্রতাপাদিত্য বাংলাদেশে স্বাধীনতার পূজারী বলেই আদৃত হয়েছিলেন ।-_-পল্লী বাংলার গ্রামে গ্রামে প্রতাপাদিত্য বীরপুরুষ বলেই প্রসিদ্ধ। স্ৃতরাং প্রতাপাদিত্য চরিত্র ব্যাখ্যায় শুধু বিষয় নির্বাচন ছাড়া আর অন্ত কোন কৃতিত্ব রামরাঁম বস্থর নেই শুধু তাই নয় ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের যে ছাত্র সম্প্রদায় পাঁঠ গ্রহণ করেছে তারা অত্ততঃ গ্রন্থ থেকে কোন নতুন চেতনা লাভ করে নি। আর লক্ষ্যণীয় এই যে প্রতাপাদিত্য রচনা করতে বসে রামরাম এতিহাঁসিক সত্যের মর্যাদা দিয়েছেন 1__ সম্রাট আঁকবরধিদ্ধেষী বাংলার নবাব দাউদের প্রসঙ্গে পঞ্চমুখ হয়েছেন তিনি,__ দাউদের উত্তিই তার প্রমাণ-..এখন আমার সামন্ত প্রচুর দিল্লীতে আমার কর দেওনের আবশ্যক নাই ধনভাগ্ার পরিপূর্ণ এবং আর কতক অর্থ সঞ্চয় করিতে পাঁরিলে তাহা দিয়া সেন! রাখিব তবে যদি দিল্লিপতি অন্যায় করিতে প্রবর্ত হন 'আমিও তদন্ুযায়ী করিলে ক্ষেতি কি।

স্বাধীন চেতনার যে স্তিমিত প্রকাশ তা দাউদ প্রসঙ্গেই, প্রতাপাঁদিত্যের চরিত্রে এই দৃঢ়তা নেই। উপরস্ত আত্মগোপন কাঁলে দাউদের ভূত্য তাঁকে সংবাঁদ দিচ্ছে__ এক্ষণ সটের কাল পড়িয়াছে__তাহাতে তাহার হিন্ুলোক অতি নষ্ট স্বভাব নিজে কর্তৃত্ব ভার পাইলে এক্ষণকার সহিত আর বিষয় কি” ।২

প্রতাপাদিত্য চরিত্র রচনায় রামরাম বস্থর এতিহাসিক নিষ্ঠার সঙ্গে বঙ্গালীপ্রীতির সংকীরর্তা৷ নেই $--একে হয়ত উদ্দীরতা বলে অভিনন্দিত করতে পারি কিন্তু জাতীয়

২, রাম রাম বহু, রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র, শ্রীরামপুর, ১৮*২, পৃঃ--১৫

উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে রাজনীতিচর্চ। ৪৫

চেতনার ক্ষীণতম প্রয়াসও যে এযুগে ধরা পড়ে নি,__রাঁমরাঁম বস্ছর "রাজা প্রতাপাঁদিত্য চরিত্র” এর একটা প্রামাণ্য সাহিত্যিক নিদর্শন বাঙ্গীলীয়ানা_স্বাজাত্যবোঁধ জাতীয়চেতনা সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র চিন্তাবোঁধ সে যুগের রচনায় দেখা যায় নি, তাহলে প্রতাপাদিত্য চরিত্র প্রসঙ্গে অন্ততঃ সেই নিভূত চিন্তাধারা স্কীত হয়ে উঠত। জাতীয় চরিত্রের প্রতি বিন্দুমীত্র সচেতনতা অলক্ষ্যে প্রতাপাদিত্য চরিত্রের মুখ্যভিত্তি গঠন করতে পারত কিন্ত প্রতীপাদিত্য চরিত্র একটা এঁতিহাসিক সামন্ত চরিত্র, এর বেশী কোন কিছুই রামরাম বস্থ আবিষ্কার করতে পারেন নি।

এর সঙ্গেই যে গ্রন্থটির আলোচনা করতে হয় তা “মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রাঁয়স্য চরিত্রং৮ ।- বোধকরি, রামরাম বস্থর “প্রতাপাদিত্য চরিত্র”ই এই গ্রন্থ রচনার প্রত্যক্ষ প্রেরণ দিয়াছে রাঁমরাম বস্থর মত-_“স্বশ্রেণী একই জাতি” বলেই মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়কেই উপযুক্ত চরিত্র বলে বেছে নিয়েছিলেন রাঁজীবলোচন মুখোপাধ্যায় এবং একই জাঁতি বংশের এই চরিত্র রচনায় তিনি ছিলেন অতি আগ্রহী তার নিজস্ব ধারণার দর্পনেই চরিত্রাঙ্কন করে গেছেন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র এবং তার পূর্ব- পুরুষদের | সমসাময়িক উদ্পপনার চমৎকার ছাপ আছে গ্রস্থটিতে। ইংরেজ অধিকারের প্রথম পর্বে বাংলার সামাজিক অবস্থার স্বন্দর বিবরণ পাওয়া যাঁবে ্রন্থটিতে এবং তা' প্রীমাণ্যও বটে। মোঁঘলের অত্যাচারের সঙ্গে বাংলাদেশে বর্গার অত্যাচার সন্ন্যাসীদের অত্যাচারের বর্ণনাও আছে,- সর্বোপরি আছে লেখকের দেশসচেতণতা-_

দেশের উপর বুঝি ঈশ্বরের নিগ্রহ হইয়াছে নতুবা এককালীন এত হয় না প্রথম যিনি দেশাধিকারী ইহার সর্ব! পরানিষ্ট চিন্তা এবং যেখানে শুনেন সুন্দরী স্ত্রী আছে তাহা বলক্রমে গ্রহণ করেন এবং কিঞ্চিৎ অপরাধে জাতি প্রাণ নষ্ট করেন দ্বিতীয় বরগী আসিয়া দেশ লুট করে তাহাতে মনোযোগ নাই তৃতীয় সন্স্যাসী আসিয়া যাহার উত্তম ঘর দেখে তাহাই ভাঙ্গিয়া কান্ঠ করে তাহা কেহ নিবারণ করে না অশেষ প্রকার দেশে উৎপাত হইয়াছে-_-৩

এই বর্ণনাঁটির বিশেষত্ব এই যে সমগ্র বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ অত্যাচারের একটি নিখুত ছবি একেছেন লেখক অথচ এই অত্যাচার বর্ণনায় গতানুগতিক বিশ্বাসকেই প্রাধান্য দেওয়1 ছাড়া গত্যন্তর ছিল না লেখকের | অত্যাচার যেমন ঈশ্বরের নিগ্রহে ঘটেছে তেমনি যে নতুন শাঁসক এদেশে শাসনের ভার গ্রহণ করেছেন তাতেও ঈশ্বরের অভিপ্রাঁয়ই লক্ষ্য করেছেন লেখক এর নাম অন্ততঃ সচেতন দেশগ্রীতি,

৩. রাজীবলোচন মুখোপাধ্যায়--মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়স্ত চরিত্রং, কলিকাতা, ১৮*৫

৪৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

নয়। বস্তরতঃ যে অনুভূতি অত্যাচারের প্রতিবাদে মুখর হতে চাঁয়, উত্তেজন। সঞ্চারে সহায়তা করে, জনমত গঠন করে, আন্দোলন গড়ে তোলে, ফোট উইলিয়ম কলেজের লেখকগোষ্ভীর মধ্যে সে চেতনাটুকু আবিক্ষার করা কোন মতেই সম্ভব নয়। এর! যুগসন্িক্ষণের নিশ্রাণ দ্রপ্রীমাত্র, ঘটনার জোঁতে এরাই তবু লক্ষ্যণীয় ব্যক্তিত্ব স্বদেশচেতনার অস্পষ্ট আভাস দের লেখায় মাঝে মাঝে প্রকাশিত হয়েছে কিন্তু তাঁকে স্বদেশপ্ত্রতি বলে চেনাই যায় না। ইংরাঁজ অভ্যর্থনার এক স্থন্দর উপায় গ্রন্থে সন্নিবেশিত করেছেন লেখক, বোধ করি ধন্ত মনে করেছেন নিজেকে রাজা যদি উৎপীড়ক হন প্রজা! জমিদার উভয়ের পক্ষেই তা হয় অশুভ। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র মোঘল অত্যাচার প্রসঙ্গে বলেছেন-_“দেশের কর্তা জবন থাঁকিলে কাহাঁরু ধর্ম থাকিবে না এবং জাতিও থাঁকিবে না অতএব ঈশ্বরের নিগ্রহ না হইলে এত উৎপাঁত হয় না” এবং এই অত্যাচারের হাঁত থেকে রক্ষা পাবার জন্য প্রার্থনা করছেন-_“বিপীতে নিবাস জাতি ইঙ্গরাঁজ কলিকাতায় কোঠি করিয়া! আছেন যদি তাহারা রাজ্যের রাজ! হন তবে সকল মঙ্গল হবেক |5

বলাবাহুল্য এই রাঁজপ্রশস্তির মধ্যে প্রভূভক্তির নিদর্শন যত প্রকট ততই অনাবৃত। রাজ কৃষ্ণচন্দ্র প্রসঙ্গে এই ধরণের উক্তির মধ্যে কঞ্ণচন্দ্র চরিত্রকে অন্ততঃ ইংরাজ প্রভুদের চক্ষে মহান করে তোলার বাসনা স্প্ত ছিল। কিন্তু তা নিরাঁবরণ প্রশস্তির মতই শুনিয়েছে।

এই ছুটি গ্রন্থের মধ্যে সে যুগের চরিত্র অঙ্কন প্রচেষ্টার একটা সমত্ব প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। সেই সঙ্গে সে যুগের সাহিত্যঅষ্টাদের রাজনৈতিক চেতনার অস্পষ্ট আহুমানিক পরিচয়ও স্পষ্ট হয়ে ওঠে রাজা প্রতাঁপাদিত্য রাঁজা কৃষচন্ত্র_ছুজন সম্পূর্ণ বাঙ্গালী চরিত্র এই সময়ে সাহিত্যিক কল্পনাকে উদ্ুদ্ধ করেছিলেন-_এটুকুই সাত্বনা। জাতীয় চরিত্রকে জনগণের সামনে তুলে ধরার প্রচেষ্টা-_তা যতই অসফল হোক তা সাধু প্রচেষ্ট৷ সে বিষয়ে নিঃসন্দেহ |

ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের সাহিত্যসস্ভারে ছুটি সম্পূর্ণ বাঁজাঁলী চরিত্র ছুটি গ্রন্থের নায়ক পদে উন্নীত হয়েছিলেন__এটা জাতীয় চরিত্রেরই প্রতিষ্ঠা। বিদেশী ছাত্রদের সামনে বলার মত অন্ততঃ দুটি চরিত্রও আমাদের মধ্যে ছিল একথা রাঁমরাম রাঁজীবলোচন সপ্রমীণ করেছেন। প্রসঙ্গে এটাই সবচেয়ে বড়ো কথা উনবিংশ শতাব্দীর প্রীরস্ত মুহূর্তে বাঙ্গালী জাঁতিহিসেবে সংঘবদ্ধ এক্যবদ্ধ হতে শেখেনি, কিস্ত একত! সম্মিলনের একটা স্পই ধারণা তাঁদের মধ্যে তখনও ছিল। কৃষ্ণচন্দ্র

৪, রাজীবলোচন মুখোপাধ্যার, মহারাজ কৃষ্চন্ত্র রায়স্ত চরিত্রং, কলিকাতা, ১৮০৫

উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে রাঁজনী তিচর্চা ৪৭

যখন যবন অত্যাচারের কথ চিন্তা করছেন তখন তাকে বলতে শুনি-ধর্ধ জাতির কথা। এইচিন্তা পরোক্ষভাবে সমগ্র বাঙ্গালী জাতির প্রসঙ্গেই, যে জাতি যবন সম্প্রদায়ের সঙ্গে কোনদিনই সম্মিলিত হতে পারবে না এবং যাদের ধর্মবোধ পৃথক এই ধর্ম জাতির জন্য ভাবনা পরোক্ষভাবে সমগ্র বাঙ্গালী জাতির জন্যই চিন্তা যতই অস্পষ্ট হোক না কেন--সেই সময়েই জাঁতি ধর্ম সম্বন্ধে 'আমাঁদের চেতনা স্পষ্ট হতে চলেছে তাই দেখি, এর পরের পর্যায়ে বাংলাদেশে যত আন্দোলন সবই ধর্মকেন্দ্রিক। ধর্ম জাতির মধ্যে যে গভীর যোঁগ, আন্দোলনের মাধ্যমে সেই যোঁগ হয়েছে আরও গভীরতর সুদৃঢ় |

ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের পণ্ডিতসম্প্রদায় সে যুগের সমস্ত রাজনৈতিক কারণের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েছিলেন দেশের প্রধান প্রধান আন্দোলনে তারাও অংশগ্রহণ করেছিলেন প্রসঙ্গে সতীদাহ প্রথার কথা উল্লেখ করতে হয়। রামমৌহনেরও বহু আগে রাঁমরাম বস্থর মধ্যে পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধতা সতীদাহ প্রথার সমর্থনের অভাব দেখি--তবে রামমোহনের মত প্রচণ্ড প্রতিভা দুরন্ত সংস্কারত্রত রামরামে ছিল না। রামমোহন যা আদর্শ বলে সংগ্রাম হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন রামরাম বস্থ তা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাখা ঘামান নি। রামমোহনের সতীদাহ প্রথার পক্ষে রায় দিয়েছিলেন মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালকঙ্কার | ১৮১৭ খ্রীঃ সহমরণ সম্বন্ধে শাস্ত্রীয় মতাঁমত ব্যাখ্যা করতে অনুরুদ্ধ হয়ে মৃত্যুজ্ঞয় বলেছিলেন__

*চিতারোহন অপরিহার্য নয়, ইচ্ছাধীন বিষয়মাত্র অন্ষুগমন এবং ধর্মজীবন যাঁপন এই উভয়ের মধ্যে শেষটিই শ্রেয়তর | যে স্ত্রী অন্ুমৃতা না হয় অথবা অন্ুগমনের সংকল্প হইতে বিচ্যুত হয়, তাহার কোন দোঁষ বর্তে ন1৮৫ বিপক্ষে ছিলেন তারিণীচরণ মিত্র। ধর্মসভা স্থাপন করে দেশব্যাপী কুসংস্কারের স্বপক্ষে বলার মত মানুষও সে যুগে অজস্র ছিল ;-_তারিণীচরণ ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের শিক্ষক হয়েও দেশীয় কুসংস্কারকেই বড়ো বলে মনে করেছিলেন সুতরাং মতবাদের বিভিন্নতা মতপ্রকীশের স্বাধীনতা সে যুগে সকলেরই ছিল- ইংরাজী সভ্যতার প্রভাবেই কুসংস্কার মুক্তি এসেছে-_-এ ধারণা ভুল

দেশের মধ্যে জাগরণ বন্যার প্রথম উষালগ্নে ফোট উইলিয়ম কলেজের শিক্ষকবৃন্দ ছিলেন প্রথম সচেতন যাত্রী শিক্ষাদীনত্রত গ্রহণ করে তার ইংরাঁজের অঙ্গে প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে এসেছিলেন, কিন্তু নিজস্ব ব্যক্তিত্ব চেতনার দাবী ছিল

৫, সাহিতা সাধক চরিতমাল।। মৃত্যুঞ্জয় বিস্তালংকার থেকে উদ্ধ'ত।

৪৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

সকলের আঁগে। ইংরেজী শিখেও তারা মাতৃভাঁষার দাবীকেই বড়ো বলে মনে করেছেন, নিজস্ব ধর্ম বিশ্বাসের মর্যাদা রেখে গেছেন

মাতৃভাষার পঠন পাঠনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ বাঙ্গালী জাতির সপ্ত চেতনার জাগরণ ঘটেছিল,_রাঁজনৈতিক বা ধর্মকেন্দ্রিক, নৈতিক বা জাতীয় যে কোন আন্দোলনের তাৎপর্য বোঝাঁবাঁর প্রধান সেতু হয়েছে মাতৃভাষ! ; মাতৃভাঁষার মাধ্যমেই ঘটনার গুরুত্বকে মর্যাদা দিতে এগিয়ে এসেছে জনগণ - হাত মিলিয়েছে, দাবী প্রতিষ্ঠার জন্য সমবেত হয়েছে সভা সমিতি করে সমস্তার উপায় চিন্তা করতে শিখেছে,_ সমস্তই সে যুগের অগ্রগতির চিন্তাধারার অভিনবত্ব

মাতৃভাষা চর্চা ইংরাঁজী ভাষা শিক্ষা_একসঙ্গে প্রাচ্য পাশ্চাত্যের সমবেত অভিযাঁন চলেছে সেই যুগের বাংলাদেশে | এই জাগরণ বন্যার মুহুর্তে প্রতিটি মানুষ সচেতন অবশ্য সগ্স্থষ্ট নগরীতে এই জাগরণ লক্ষণ যত স্থম্পষ্ট পল্লী গ্রামে তা ছিল না। তাহলেও বাংলার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে কলকাতার প্রতিষ্ঠাপর্ব প্রায় সমাপ্তির পথে; দেশের সমস্ত ধনী সম্প্রদায়ের দৃষ্টি পড়েছে কলকাতার ওপরে, শিক্ষাদীক্ষ। রুজি-রোজগারের আশায় দলে দলে মান্বষ চলে আসছে কলকাতায় ।-_-এক আশ্চর্য নগরী এই কলকাতা; বাংলার জাগরণের সঙ্গে জন্মন্থত্রেই জড়িত এই নগরী-যার পরিকল্পনা সম্ভাবনার ছবি দেখেছিল বিদেশী ইংরাঁজ, যাঁদের দূরদৃষ্টিকে প্রশংসা ন। করে পারা যাঁয় না। এতিহাসিকের ব্যাখ্যায় এর পরিচিতি-_-4367898] 1780 ০০6] 025101520 2100. 10107131160 2. 50116] 11) 0102 ৬০০৫০ 25 005 12180. 11105 (8200. 7506 0: 10021) )) 11) 0102 2010 88 29 0005102 610০ 19£60135 17911056005 002 1560 0৫ 0106 ভ930211176 72009৬9 010010615 2100 112 €0০ 11021091 10065 25, 2 106]] /2]] 560901590. 41015101520. 80000 18021: 00 10002000106 30101510 01511159610 16 05০8006 2, 7801 ঠ)061 2180. ৪. 11510001115 00 6102 1290 0: [10019.৮৬

এই বাংলাদেশের সমস্ত পরিচয় একনিমেষেই যাওয়া যাবে শুধু কলকাতার ইতিহাস আলোচনা করলেই ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ, স্কুল বুক সোসাইটি, ওদিকে ধর্মীসভা, বড় বড় রাজা মহারাজাদের প্রাসাঁদ গড়ে উঠেছে কলকাতাতেই | নানা! ধরণের অভিনব অভিজ্ঞতায় নাগরিক সম্প্রদায় তখন প্রায় ভরপুর বললেই চলে ঠিক এমন সময়েই রামমোহন যাওয়া আসা করছেন কলকাতায় এবং সরকারী কর্ম পরিত্যাগ করে পৈত্রিক গ্রামে গিয়ে ধর্মমতের নব্য ব্যাখ্যা শুর করলেন তিনি অবশ্যস্তাবী .

৬, 098000790 ৯201515 12156017991 136085] (০1, হ7) 105055) 7938. ৮--493-

উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে রাঁজনীতিচর্চ৷ ৪৯

মনাত্তরের ফলে স্থির করলেন-_স্থায়ী বাঁসভবন নির্মাশ করবেন কলকাতাতেই-_সেই প্ররণীয় সালটি ১৮১৪

রামমোহন বাংলাদেশের নবজাঁগরণের মুহূর্তরূপী ১৮১৪ সাল নানাকারণে উল্লেখযোগ্য রামমোহন সেযুগের বাংলাদেশের মধ্যে যে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তা এই সময় থেকেই

রামমোহনকে আদর্শ বাঙ্গালী বলে আমরা যে গর্ববোধ করতে শুরু করেছি তা খুব বেশী দিনের কথা নয় রামমোহন তাঁর দেশবাসীর জন্য কি করেছিলেন তার আলোচনা হয়েছে রামমোহনের তিরোভাবেরও বহু পরে। মহামানবদের জীবনে ধরণের পরীক্ষা বহুবারই হয়ে গেছে, তাঁরা দেশের জন্য, জাতির জন্য যে চরম নিষ্ঠা একান্তিক প্রচেষ্টার স্বাক্ষর রেখে যান, ভ্রীন্ত জাতি সেই মুহূর্তে তাকে মেনে নিতে--চিনে নিতে পারে না। সাধারণ মানুষের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা সীমিত, স্থবিশাল প্রচণ্ড ধারণাকে তারা বুঝতে পারে না। রামমোহন এসেছিলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধে কিস্তু জাতির সঙ্গে তার জীবনান্ভৃতির কী প্রচ পার্থক্যই না ছিল! তার অনেক টিত্তাধারাই এমাণ করেছে-__তিনি বৈপ্লবিক শতাব্দীর যুগচিহ্ন ধারণ করে অপ্রস্তত দেশবাসীর কাছে অনেক আগেই আত্মপ্রকাশ করে ফেলেছেন। অন্ততঃ অষ্টাদশ শতাব্দীর কোন মান্ছষ বলে চিনে নেবার আগে আমরা থমকে দাড়াই ।--রামমোহন তার সমসাময়িক যুগের একটা বিরাট ব্যতিক্রম) কি চিন্তাধারায়, কি ক্রিয়াকলাপে, কি আদর্শে, কি বক্তব্যে যুগের সঙ্গে প্রথম থেকেই অসহযোগ পালন করে গেছেন তিনি, আমরণ ছিল তাঁর এই ব্রত। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগের- বাংলাদেশ যেন শেষরাতের নিদ্রার আলম্যে মুহ্যমান ;-- সাহিত্যচেষ্টায়-জীবনযাত্রায় একট] প্রচণ্ড ফাঁকি যেন সমাজের শতছিদ্র ক্ষুদ্রতার মধ্যে আত্মপ্রকাশ করছে। শিক্ষাদীক্ষাা কর্মক্ষেত্রের মধ্যে সে এক বিরাট [অসঙ্গতি ;-_পুরোন যা কিছু তার বাধন গেছে আলগ। হয়ে অথচ নতুন কিছু নিশানা পাওয়া যাচ্ছে না। সাহিত্যের আসরে নেমে এসেছেন কবিওয়ালারা ।-_ আখড়াই-__হাফ আখড়াই__টগ্পা খেউড়ে বাংলার আকাশ বাতাস মুখরিত অথচ জানি, এর মধ্যে স্থিতি নেই, সত্য সম্ভাবনার কোন ইঙ্গিত নেই। তখনও ফোর্ট উইলিয়ম কলেজে শিক্ষা-সংস্কতির নব্য চর্চ1 শুরু হয় নি,_বাংলাদেশের কোণে কোণে তখন পুজাপার্বণের অছিলায় শুধু অহেতুক মাতামাতি চলছে রাঁমমোহনের জন্ম এই আবছা আলোর সঙ্গমে কিন্তু কুয়াসা ভেদ করেও তার স্বচ্ছদৃষ্টি প্রবেশ করেছে আরও গভীরে | ষজ্জাগত শক্তি নিয়েই এই চিন্তানায়ক বিপ্রকী মানুষটির আবির্ভীব ঘটেছিল এই বিপ্লবের দীক্ষা তিনি পেয়েছিলেন আতন্তরশক্তির কাঁছে,

৫৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

কিংবা এই চেতনার উত্তরাধিকার তাঁর সহজাত শক্তির কাছেই পাওয়া রামমোহনের জীবনের সত্যচেতনার মূল্যায়ন করলে সেই অত্যাশ্চ্ধ শক্তিগুলির পরিচয় পাঁওয়] কঠিন হবে না।

রামমোহনের অনন্যসাধারণ প্রতিভার সম্যক বিচার আমার উদ্দেশ্য নয়--কিস্ত যুগাতিক্রান্তী যে বৈপ্লবিক প্রতিভার শ্ফুরণ তার চরিত্রে দেখেছি--তার আলোচনা না করলে নয়। স্বকীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে স্বদেশকে তিনি প্রত্যক্ষ করলেন এক গভীরতর দুর্যোগের মধ্যে। প্রাচীন প্রশ্বর্ষের ভগ্রাবশেষ ধারণ করে মুহমান এই দেশ রামমোহনের মনে এক গভীর আলোড়ন জাগিয়ে তুলল। পৎভ্রান্ত-আদর্শচ্যুত- চেতনাশূন্য এক নিঃসম্বল জাঁতির সামনে তাঁর সর্বপ্রথম কর্তব্য যে কী হবে রামমোহন প্রথমে তা ঠিক করতেই পারলেন না। ধর্ম, রাজনীতি, সমাজনীতি কিংবা ইংরাজতোষণ এর কোন্টিকে তিনি বেছে নেবেন সেই সমস্যায় হলেন বিত্রত। রামমোহন তাঁর কর্মজীবনের যাত্রা শুরু করতে আর দেরী করলেন না। অমিত উদ্যম নিয়ে এই শক্তিমান পুরুষ বেছে নিলেন চিরন্তন বিপ্লবীর পথ--দেশের আহ্বানে ঝাঁপিয়ে পড়লেন | প্রসঙ্গে শ্রীযতীন্দ্রকুমার মভুমদারের উক্তিটি লক্ষণীয়-- 4৯105661) 200 00010151776 59117050110 88৮০ 00 00০ 02001000220 170000100 106516 06 [২9001001021 0105 0156 60 12102011015 16101020806 0: 21081558170 030৮2032120, [7০ আ25 8150 0106 006]5 19.007591150 10100 1 105 01090550 921852. [015 009 01796 106 9600060100০ 11700000017 ০6 00৪ 1)5ত& 209 21211816506. 19595 280 106215 01086 01008100117 2 732 116 1 006 আ3০ 2120 151550. 00০ 17961015 00 105 1736151)6 ০01 ০1৮11153000, ৭. ....,

রামমোহনের স্বদেশপ্রীতির যে মহান চেতনার দ্বারা আমর! প্রভাবিত, স্বদেশ- চিন্তনের যে স্বচ্ছ দৃষ্টির আলোকে আমরা আলোকিত, এখানে সেই সন্বদ্ধেই আলোচনা করব। লক্ষ্য করতে হবে, যে স্বদেশচেতনার দ্বারা রামমোহন স্বদেশউদ্ধারের স্বপ্ন দেখেছেন-_সেখানে তিনিই সর্বপ্রথম সচেতন পথিক অষ্টাদশ শতাবীর ব্রান্ন মুহূর্তে কুয়াশাচ্ছন্ন বাংলাদেশের তিনিই সর্বপ্রথম স্বাধীনমন! বাঙ্গালী পুরুষ, প্রথম উষালগ্নের জ্যৌতির্যয় হূর্যালোক। তীর জীবনে অত্যাশ্র্য ঘটনা ঘটেছে অনেক; মহাপুরুষদের জীবনীতেই এই ঘটনাবলীর সাক্ষাৎ মেলে। অপরিসীম মেধা ছুরস্ত

৭,.:1910100828 1600021 উ151000057) 5২515. 02000001120 [০7 270 12108795515

210/6170675 101 [0055 48 55159097207 25০001৭5 (1775---7845) 021০9 002- 1041 ---7569,05,

উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে রাজনীতিচর্চা ৫১

অন্সন্ষিংস! বালক রামমোহন্র চরিত্রে এনে দিয়েছে দৃঢ়তা | ১৬ বৎসর বয়সেই পিতার সঙ্গে মতান্তরের ফলে তিনি গৃহত্যাঁগ করে চলে যান তিব্বতে ;-_অনেকে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাঁমমোহনের 'মতবাঁদকে ভিত্তি করেই। তাঁদের মতে বিদেশীয় অধিকারের প্রতি ঘ্বণাবশতঃই তাঁর ভারতত্যাগ কিন্তু সবার জীবনের অন্যান্য সমসাময়িক ঘটন। থেকেই প্রমাণ করা যায় ষে, বিদেশাগত প্রভুর প্রতি তাঁর আন্তরিক দ্বণা সতি/ সত্যি জাঁগবার মত কোনো কারণ তখনও ঘটে নি, কিন্তু ধর্ম সম্বন্ধীয় নান! প্রশ্ন তখনই তাঁর মনকে ব্যাকুল করে তুলেছিল ।--তিব্বতে বৌদ্ধধর্মের একটা সাধিক পরিচয় পেলেন কিন্তু মানসিক ব্যাকুলতার তৃপ্তি হল না রামমোহনের স্বদেশগ্রীতির জলন্ত অধ্যায়রূপে এই তিব্বত গমনকে বড়ো করে দেখার কোন কারণই নেই ;_ আর পরজাতিপ্রভূত্ব স্বীকারের প্রতি যদি প্রথমেই এতটা বিদ্রোহী হতেন তবে আমরা বিরাট রামমোহনের *অসংখ্য কীতিকলাপের পরিচয় পেতাঁম না রামমোহনের মধ্যে স্বজাতি- প্রীতির যে ঘনীভূত রূপ আন্তরগভীর সহানুভূতির পরিচর পেয়েছি তাঁর সুচনা আরও অনেক পরেই ঘটেছে রামমোহন কার্ষৌপলক্ষে ইংরাঁজের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এসেছেন, শুধু তাই নয়, ইংরাজীভাষা শিক্ষা করে পাশ্চাত্ত্য সংস্কৃতি সভ্যতার সঙ্গে নিবিড় পরিচয় লাভ করেছেন $-_রামমোহনের স্বদেশপ্রেমের শ্ষুরণ ঘটেছে এই সময়েই। বাংলাদেশের সত্যকারের সমস্যা তখন ধর্ষকেন্দ্রিক সমস্তা | ইংরাঁজ পা্রীদের খৃষ্টান ধর্ম প্রচারের মুহূর্ত সেটি, সেই সঙ্গে সনাতন হিন্দুবর্ষের নানা দৌধক্রট নিয়ে রামমোহন বাংলাদেশে প্রচণ্ড সোরগোঁল তুললেন। যে ধর্মকে তিনি আজন্ম ধরে দেখে আসছেন তার অনেক ক্রটবিট্যুতির ইতিহাস খুঁজতে খুঁজতে নতুনতর ব্যাখ্যা আবিষ্কার করলেন, এবং স্দূঢ় এই স্ব-মত প্রতিষ্ঠার জন্য করলেন চূড়ান্ত প্রতিজ্ঞা সমস্ত বাংলাদেশের বুকে সে এক চন্লম উত্তেঞ্জনালগ্ন ; রামযোহন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা অর্জন করলেন। রামমোহনের ধর্মান্দোলনের কতগুলি হথদূরপ্রপারী ভিত্তিব কথাই এখানে আলোচনা! করব,__পরবর্তী জাতীয় ইতিহাসে এই ভিত্তিমুলই কার্যকরী হয়েছিল সকলের আঁগে।

রামমৌহনের ধর্মীন্দোলনের ফলেই জাতীয়তা র-্বধর্মের-্বলমাজের প্রতি আস্থা অনান্থার প্রশ্ন বড়ো হয়ে দেখা দিয়েছিল সাঁধারণ-অসাধারণ সকল মান্ৃষের মধ্যেই। ধর্ম, যা জীবনের প্রতিক্ষেত্রের-প্রতিদিনের-প্রতিজনের স্বার্থ সম্পকিত বস্ত, তার মধ্যে প্রতিবাদের বিন্দুমাত্র স্পর্শ মান্ষকে বিচলিত করে ।_ সে যুগে বাগালীও ধর্মের নতুনতর ব্যাথ্যয় বিচলিত হয়েছিল।-্ধর্ধান্দেলনের মধ্যেই আমা! নেবে ইপাৰ ্বার্থরক্ষার প্রধানতম প্রনটিকে। ধর্ধান্দোপন পরোক্ষভাবে জাতীয় 25তন[বই সংখবান্ধ আঁতি। রামমোহন সেমুগের জ।তীয় চেতনাকে আঘাত করে পরোক্ষভাবে বেতের

উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

এক বিরাট অন্ধতার যূলেই আঘাত করেছিলেন উত্তেজিত করেছিলেন-_সংঘবদ্ধ করেছিলেন। আন্দোলন চেতনা-স্থষ্টিকারী প্রথম জাতীয় আন্দৌোলন--সচেতন এঁক্যবদ্ধ জীবনান্দোলন |

রামমোহন বাঙ্গলাদেশের প্রথম আন্দোলনঅষ্টা বাঙ্গালী যে বলিষ্ঠ চিন্তা দূ আদর্শ মাহুষকে কর্তব্যে অবিচল নির্ভীকতায় সাহসী করে তোলে রামমোহনের মধ্যে তারই ছায়াপাত। স্তরাং ধর্মান্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করে রামমোহন স্বীয় আসনটি প্রতিষ্ঠিত করেছেন ;__-শুধু বাংল কেন, বাংলার বাইরে সুদূর দিল্লীর তখ তের অধিকারী তৎকালীন মুঘলসম্রাটের কানেও এই আঁন্দোৌলনস্ৃপ্টিকারী নেতার সংবাদ পৌছেছিল | তেজস্বী এই জননায়ককে দূতপদে বরণ করার পরিকল্পনা করেছিলেন তারাই আবার শ্রীষ্টানসমাজেও ধর্শীন্দোলন অষ্টা রামমোহন চিহ্নিত হয়েছিলেন আপন মহিমায় |-_বীর্ষে গরিমায় এমন একজন বাঙ্গালী সেদিন সম্ঘগ্র দেশকে সচকিত করেছিলেন, সকলের শ্রদ্ধা সন্ত্রমে ধন্য হয়েছিলেন

অসংখ্য ক্রিয়াকলাপের মধ্যেও রামমোহনের চরিত্রে দেখা গিয়েছিল কতকগুলি বিশেষ চেতনা-_যা৷ একান্ত তীরই। স্পর্ধাতীত শক্তিতে তিনি সে যুগের মুখপাত্র রূপে যে চিঠিপত্র রচনা করেছেন,_যে কোন ভারতীয়ের পক্ষে বিদেশীয় প্রভুর দরবারে তা দাখিল করার কথা ছিল প্রীয় অচিন্ত্যনীয় ; কিন্তু স্বপ্রতিষ্ঠ মহিমা- ভাস্বর রামমোহন তা সহজেই পেরেছেন ধর্মান্দোলনের বাইরেও দেশের কথা, স্বাধীনতার কথা,_নিপীড়িত মানবাত্মার কথা তিনি কত গভীরভাবে চিন্তা করেছিলেন, তার অজতর প্রমাণ ইতন্ততঃ ছড়িয়ে আঁছে। ছুঃখের বিষয় তাঁর বক্তব্যের কথা সেযুগের বাঙ্গালীর কানে পৌছয়নি। ইংরাঁজীতে রচিত অসংখ্য চিঠিপত্রে তার স্বদেশপ্রেমিক যে আত্মাটির পরিচয় ছড়িয়ে আছে-_রচনাসামর্ঘযে প্রকাশ- চাতুর্ষযে তা সত্যিই অতুলনীয় সামাজিক বিধিবিধান, ক্ষমতারক্ষার চেষ্টায় তিনি ছিলেন অগ্রসর | সে যুগের দ্বিধা গ্রস্ত-আদর্শবিহীন জাতির কাছে তাঁর বক্তব্য স্পষ্ট ছিল না--তাই রামমোহনকে স্বধর্মবিরৌধী বলেই বিচার করা হয়েছে.।__ ধর্মান্দোলনের বাইরে যে স্থবিশাল কর্তব্যক্ষেত্রে তিনি প্রবেশ করেছিলেন__সাধারণ মানুষ সে খবর রাখেনি

রামমোহন প্রথম এক সচেতন শিক্ষিত বালী আধুনিকতার হুদস্পন্দনে যিনি আন্দোলিত-বিচলিত হয়েছিলেন ।__-যে-কোন আন্দোলনের পথ ধরে জাতির সামনে তার বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠা করার আদর্শে তিনি অবিচল ধৈর্যের পরিচয়. দিয়েছেন "

রামমোহনের কর্মজীবনের প্রধান প্রধান কার্যাবলীর দিক নির্ণয় করলে দেখ)

উনবিংশ শতাকীর প্রথমার্ধে রাঁজনীতিচর্চ ৫৩

যাবে--নীনাধরণের আন্দোলনের সঙ্গেই তিনি যুক্ত ছিলেন এবং প্রত্যেক ক্ষেত্রেই নায়কী ভূমিকায় ধর্মান্দোলন, রাজনীতি,_সমাজসংক্কার, শিক্ষাপ্রবর্তন সর্বত্রই তিনি অবিসংবাদিত নায়ক। ধর্মান্দোলন থেকে শিক্ষা প্রবর্তনের প্রত্যেকটি ধাপেই রামমোহন এগিয়ে গেছেন--কিস্ত লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, দেশগ্রীতির নিবিড় অন্ুরাগের আদর্শই তাঁকে সর্বত্র পরিচালিত করেছে কোন ব্যক্তিকেন্জ্রিক উদ্দেশ্য সেখানে ছিল না। সেযুগের আকাশে বাঁতাসে নিন্দায় প্রশংসায় শুধু একটি নামের পতাঁকাঁই পত্‌পত. করে উড়েছে-_-সে নাম রামমোঁহনের | তীর ধর্মান্দোলনের মধ্যে কয়েকটি বিষয় খুবই লক্ষ্যণীয়। সে যুগের প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসকে সমালোচনা করে রামমোহন সনাতন হিন্দুধর্ম প্রতিষ্ঠারই চেষ্টা করেছেন তার আলোচ্য বিষয় ছিল আমাদের ধর্মীলোচনার আদি গ্রন্থগুলি।-বেদ-উপনিষদের মূল সত্যের অনুসন্ধান ক্ষরে রামমোহন স্বধর্মচর্ঠার একটি বৈজ্ঞানিক পথ প্রদর্শন করেছিলেন আমাদের প্রচলিত ধর্মের মূল উৎসগুলি তিনি যুক্তি তর্কের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন, নিঃসন্দেহে এই প্রচেষ্টা অভিনব যথার্থ স্বাদেশিকতা স্বধর্মনিষ্ঠা না থাকলে রামমোহন স্বীয় ধর্ম নিয়ে এত প্রতিকূল সংগ্রামে অবতীর্ণ হতেন না।-- নিজের ধর্ম সম্বন্ধে তার জ্ঞানকে পরিপূর্ণরূপে যাচাই করে নেওয়াই ছিল তার উদ্দেশ্য | সেই হিসেবে রামমোহন এক অদ্বিতীয় কীতির অধিকারী আমাঁদের ধর্মের আদি গ্রন্থগ্ু'লর চর্চা বাংলা ভাষায় এর অন্ুব্দ হওয়ায় জনগণের মধ্যে এর প্রচার সম্ভব হয়েছিল ুতরাং জাঁতীয়ত৷ সৃষ্টির একটি প্রধান পথ রামমোহনই দেখিয়ে গেছেন। পরবর্তী যুগের কাছে রামমোহনের ধর্মান্দোৌলনের একটি হদূরপ্রসারী প্রভাব দেখেছি-_রামকুষ্ণ-বিবেকানন্দ পর্যায়ে ধর্ম যে জাতীয় জীবনের এক হ্ষদৃঢ় ভিত্তি-জনগণ বামমোহনের যুগ থেকেই সে বিষয়ে অবহিত হয়েছিল ১৮১৫ ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত বেদান্তগ্রন্থের প্রথমে উদ্দেশ্য বর্ণন। করে যে বিজ্ঞাপন দেওয়া হোত সেটি বেশ ভাৎপর্যপূর্ণ।--গ্রন্থের সত্যকারের উদ্দেশ্য বিজ্ঞাপনেই ব্যক্ত করা! হয়েছে”) 0০70691951012178190108 02 0০ ০৭৪0৮ 01 2০5010000 ৪1] 015 245 )1101)6 12056 02101052050 200. 15561%50 70110 [3:210129115152101)6010965) 65620119171076 00০ 101 0৫6 70106 59015005 3০117 2150. 01020 176 15 05০ 0015 001500 ভ্য0191310৮

হিন্দুধর্মের 1050 ০6158650. ৪0 1:5561560. ০1 হিসেবে তিনি বেদ বেদীস্তকেই আমাদের সামনে উপস্থাপিত করেছেন, এর মধ্যে কোন অযৌক্তিক

৮, রামমোহন গ্রন্থাবলী--বঙ্গীয় সাহিতা পরিষদ, বেধাস্ত গ্রন্থের ভূমিক11

৫৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

আত্মবিলাঁস ছিল না আদর্শকে প্রতিষ্ঠার জন্ত প্রচণ্ড পাণ্ডিত্য যুক্তিনিষ্ঠার আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন রামমোহন-_চিস্তাঁবিলাঁসের ফাঁপা বুদবুদ বলে যাঁকে উড়িয়ে দেওয়। যাঁয় না। পৌভ্তলিকতা বিরোধী রামমোহন গভীর শাস্তরচর্চার মাধ্যমে তাঁর বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন,--সেজন্ত খ্রীষ্টান ধর্ষকেও সমালোচনা না করে পারেন নি। যুক্তি নিষ্ঠার অভাবে যখন সাধারণ হিন্দু অনায়াসেই খ্রীষ্টান হয়ে যাচ্ছিল, যুক্তিবাদী রামমোহন (তখন গভীরভাবে তার প্রশ্নীচ্ছসন্ধান করেছেন আদি শাস্্গ্রন্থরাজির পাতায় পাঁতায়। অবশেষে দেখলেন, অবতারবাঁদকে নিন্দা করেও খ্রীষ্টানরা অবতার বাদী। তাঁদের মধ্যেও যিশু, মেরী অবতাঁরবাঁদেরই নামান্তর সে যুগের পটভূমিকায় শাঁসক সম্প্রদায়ের ভ্রকুটি অগ্রাহ করে তাঁদেরই ধর্মমতকে নির্ভীক ভাঁবে সমালোচনা করেছেন তিনি সুতরাং রামমোহনের ধর্মান্দোলন একটি নির্ভীক যুক্তিনির্তর- আন্দৌলন,--সে যুগের এই আন্দোলন বাঙ্গালী জাতির সামনে একটি জঙ্গন্ত দৃষ্টান্তের মতো আর সহত্র প্রতিকূলতার মধ্যেও রামমৌহনের মতো! নেতা স্বদেশে বিদেশে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন একথা! পূর্বেই বলেছি

ধর্মকে যদি রাজনীতির সঙ্গে সম্প্‌ক্ত করে আলোচন! করা যাঁয়_-তবে দেখ। যাঁবে রামমোহনের ধর্মসংস্কার আপাত অসম্পূক্ত হলেও রাজনীতির সঙ্গে এর যোঁগ ছিলই | ধর্মান্দোলনের মধ্যে রামমোহনের যে নির্ভীক জাতীয়তাবোধের পরিচয় - রাজনীতির ক্ষেত্রেও সেই একই নির্ভীকতীর প্রকাশ ইংরেজী সভ্যতা সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত রামমোহন স্বীয় মর্যাদা সম্পর্কে অবহিত হয়েছিলেন,__সেই স্বাভাবিক মর্যাদাজ্ঞান তীকে প্রয়োজনে নির্ভীক করেছে, অন্তায়ের কাছে তিনি মাথ1 নত করেন শিকোনদিন। প্রসন্দে লর্ড মিন্টোর কাছে পাঠানে। তার প্রতিবাদ পত্রা্ি স্মরণীয়। ফ্রেডাঁরিক হাঁমিলটনের সঙ্গে তাঁর সংঘর্ষ বীধে এই পদমর্ধাদা নিয়েই; বড়লাটের কাছে রামমোহন প্রতিকার চাইলেন--«[ট1780169, 01767210712 02562 ৪100 12151 5215 6010০ 50০1০০66৭00 0686002100 1101 000150 11069111015 01919019001 210 02£1806 €1)600, 106 010] 1051 056 09165 03611 ০0 16118100210 5০০1০, 006 8150 10010. 006 01016 0 01১০ 1771751157 50০12059 01 10161) 29020680111 1060 আ1)101) 00০5 1096 610০1700001 04 66106 00056 115612]]5 2100 2669015 ৪310165৭, 0১০ আ০০এ]ন 06 ড11009115 00306770170 00 01050 00015176106196 71017 00610170052 নি00 0 0152৭ ০0৫ 21176 85520166010 0102 565905 10) ০৮০] 5060169 0৫£ 1672010119 ৪00 06519.020107৯,৯

সপ রান

৯. সাহিত্য সাধক চরিতমালা- ব্রজেন্ত্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে উদ্ধ.ত [ রামমোহন রায় ]

উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে রাজনীতিচর্চা ৫৫

পত্রটিকে রামমোহনের প্রথম ইংরেজী রচনা বলে দাঁবী জানান হয়। এই ঘটনা থেকে দৃপ্ত নির্ভীক রামমোহনের পরিচয় মেলে। জাতির সামনে এধরণের নির্ভীক আত্মপ্রকাশ সেযুগে প্রায় অকল্পনীয় বল! চলে। দিল্লীর পাতশীহের তরফ থেকে যে আবেদনপত্র নিয়ে রামমোহন চতুর্থ জর্জের দরবারে পেশ করেন- সেটি তাঁরই রচনা পরাধীনতার মর্মজালা তাঁকে কিভাবে বিদ্ধ করেছিল পত্রটির মধ্যে তা অনাবৃতভাবে প্রকাশ পেয়েছে; ভারতের সহাঁয়সন্বলহীন রাঁজবংশধরদের প্রাপ্য দাবী আদায়ের প্রসঙ্গে তিনি যা লিখছেন, একটি ছুঃসাহসিক প্রচেষ্টা হিসেবে পত্রটিকে অভিনন্দিত করা চলে ।--পত্রারস্তে তিনি বলেছেন _-*[ 15556 €0 0৭. 0086 006 20011০5 ০৫ 006 5890 [02019 00120020200. 169 521:5290103 15 02100019620. 00 20116 30906 0015 50050196015 010996০৮ 2100 ] 52721060000 22015551005 5011152 ৪0১01)০ 17001018955 0102 0০050 01101500015 10 2৮০ 2065501019- 176 00০ 01510958615 ০0£ 00০ ০0৬৮1 10101 1095 ০৬০: 0921) €1)2 2০001252560 10010912800 10015001,,.[ 01519598701196 0015 1012 03০ 0001 0£111600015 10252 50155 আআ 0650130. 00611 521%8155 10 [15019 7100 022]5 ৮1018060 00611 015056 60 2. 91121) 20012870185. 30০৮ 696 011506015 015125910 0106 1550600 80. 21165181002 002 00 010211 0ভ্আাত ৪0ড61:216 0000851) 002 2০9৪1 17520. 0: ৪, 1015165 21019176”. ১০

আবেদনপত্র হিসেবেই শুধু নয়, পরাধীন ভারতবাসপীর পক্ষ থেকে রঁমমোহনের এক গভীর বেদনাসিক্ত অন্তরের ছবি এখাঁনে ফুটে উঠেছে। বক্তব্যের স্পষ্টতায়, ভাঁষার গানভীর্যে রামমোহনের ধরণের বনু পত্রই বিস্ময়কর স্বদেশপ্রীতির স্বাক্ষর স্বরূপ এই গভীর স্বদেশীল্থরগ তীর অন্তরেই জলে উঠেছে কিন্তু কোন রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁর রূপদাঁন ছিল প্রায় অসম্ভব রামমোহন যে অত্তরৃ্টি নিয়ে যুগকে অতিক্রম করেছিলেন সেই পথে তিনি একান্তই নিংসঙ্গ জনগণের পক্ষ থেকে, তবু যখনই কোন প্রস্তাব এসেছে--রামমোহন সকলের আগে এগিয়ে গেছেন 72558 £১০% সম্পর্কে রামমোহনই আবেদনপত্র রচনা করেছেন ”4৯ ঢা:571255 1789 [2৬6]: 526 588560 2 12ড০91061010 11 2125 02৮ ০0৫ 606 0110, 0202096, 17112 00217 020 22,3115 120125206 00০ 21195210595 2,1191135 010 00০ 0010000 013০ 1009] 20619011695 60 0102 5012102 00৮০1209176 200 €005 £96 (0600 1501:55590, 0০ £:001705 ৫1300170610 6026 ০০16০

১০, (050969৫2০10 £17051৮1০0617 2৪৬1৬ 19239 (02৮-7010)--21017012 চ২০৮%5 7১01160211119551017 60 50512100,

৫৬ উনবিংশ শতার্বীর বাংল! সাহিত্যে দেশপ্রেম

1৩010002216 121000560. ) 5/1721625, 71161৬ 150 £7620000 016 02655 65150602190 21155213065 50036006005 121081060 00120165610650 ৪0 00160125520, 1171001)2191012 16501000125 1795০ 66120 01805 1) ৪11 2975 0৫ 032 £1006 01 11015560660 05 006 81005010106 0৫ 01১6 33001000016, (006 7১০0016 ০01001)0160 1980৮ 00 123017206101)%, ৯১

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য এই দাবীর মধ্যে রামমোহন দেখেছিলেন ভবিষ্যতের সমস্ত সম্ভাবনা সংবাদপত্রই যে একদিন মানুষকে সংঘবদ্ধ সচেতন করে তুলবে সত্য তার দৃষ্ঠিতে ধরা পড়েছিলো! স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্ম সম্ভাবনার লমস্ত পথই রামমোহনের চিন্তাকে ভারাক্রান্ত করেছিল,_তাই আবেদনের ছত্রে ছত্রে তাঁর বেপ্লবিক চিন্তাধারার নির্জীক আত্মপ্রকাশ ।-তিনি আরও বলেছেন--1015 11 1000 0706 590000 0৮211000617054 15809018115 0৫516 0) 50071653107, 0৫ 80 £:5900100 0৫ 62016551010 13101 0315106 200 060 62052 10617 200 00 006 0010 17101) 2৮০1 ৪:0621745 613 €2:610152 ঠায়) 00912535102 2130. 06 21201002100 0365 00150817015 16506 00, 15 0980 005. 50158. ০৫ 10101538 13 09610490063 9319021১0০6 01 ৪] 10810100865 20000110.১২

প্রিভি কাউনসিলে রামমোহন তৎকালীন বাংলার মনীষীবৃন্দ প্রেস ভ্যানের বিরুদ্ধে লিখিত প্রতিবাদ পেশ করেছিলেন। জাতির জাগরণ বস্তার প্রয়োজনীয় পথ হিসেবে সংবাদপত্রের নির্ভীক মতামতের অপরিসীম মূল্য সম্বন্ধে রামমোহন ছিলেন সচেতন। প্রিভি কাউনসিলে রামমোহনের এই আপীলটি নাকচ হয়ে যাঁয়। তবু ভগ্রমনোরথ ন] হয়ে দাবী রক্ষার পরবর্তী উপায় চিন্তা করতে লাগলেন তিনি সম্বন্ধে মিঃ মনটাগোমারি মার্টিন বলছেন 80৮ 00 170 17501510081 15 (1০ 15018101655 00০. 26৪6 00115800209 0090. 0 00০ 197561560 1২910100178 [২0 200. 0১6 00110015061) [)ত215217801860:6,,৯৩

্বদেশপ্রিয়তার এমন অনেক দৃষ্টান্ত থেকে হিতৈষী রামমোহনের স্বরূপ চিনে নিতে কষ্ট হয় না।

১১, 005 (10056, 105 চ721197 ৮০75 ০? [9] হও যযা0102] ২০9, 0510865, 79০1, ৬০19০) [] 305,

১২, 1010, 1--"308,

১৩, 099০6601010 08 5799807 ০£ 1৮, [10706001679 0121017, ২2100070187 [২০৮ 95 1001778115৮ 2075 ০০০৭ 05৮15৮ 199, 1931.

উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে রাজনীতিচর্চা ৫৭

রাঁজা রামমোহন সংস্কারমুক্ত দ্র্টা; -তীক্ষ দূরদৃষ্টি দিয়ে তিনি সে যুগের সমাজজীবন প্রত্যক্ষ করেছিলেন আর বিন্দুমাত্র করণীয় কর্তব্য বলে যা তাকে উদ্ব,দ্ধ করেছে-_তাতে নির্ভীকচিত্তে প্রবেশ করতে দ্বিধা করেন নি। রামমোহনের পরবর্তী যুগেও ইংরাঁজী সভ্যতা সংস্কৃতির প্রতি একট] অন্ধ আহ্গত্য দেখেছি-_ কিন্তু গভীর স্বদদেশচেতনা, এঁকান্তিক আদর্শবৌধ রামমোহনকে কর্তব্যে স্থির করে রেখেছিল সমাঁজ স্বদেশের প্রতি স্থগভীর ভালবাসা না থাকলে রামমোহন অতি সহজেই ইংরাঁজ রূপা লাভ করতে পারতেন-_কিস্তু আগেই বলেছি যুগচিহ্ের সমস্ত লক্ষণকেই তিনি আপন স্বভাবে অতিক্রম করেছিলেন | স্বাধীনতার প্রতি তাঁর আকাক্ষাবোধকে ব্যাখ্যা করতে গেলে স্বীকার করতেই হয়, - পরবর্তীকালে যে চেতনার বিন্দুমাত্র স্পর্শ জনগণকে বিক্ষুন্দ করেছিল--রামমোহন তারও বহু আগে নিঃসঙ্গভাঁবে *সেই চেতনার অগ্নিতে দগ্ধ হয়েছেন। পত্র রচনার মধ্যে তাঁর সেই আতির এক ধুমায়িত আক্ষেপ জমে আছে। বাঁকিংহামের কাছে লেখা একটি পত্রে রামমোহন লিখছেন--ভা:0100 05০ 196 01010905159] 200 0011590 €0 05010017502 6020] 51781117006 1152 (0 926 11061 0151৮61981]5 15900164 €0 00০ 08.010105 06 1201002, 200 4৯918010198 01005, 25962019115 61309 61596 216 700100222 00100165, 00955659580. ৪. £192661 0925156০00০ 92796 17015255115 02217 1320 01095 100৮ 210)05...75176105165 €০ 11015 ৪100 £1০21003 €0 4530061500, 182 10252] 0622, 2150 065০1 11] 109, 51010096515 50005655601. (05. 110) 182]. ).১৪

ধরণের বহু ছিন্নপত্রে তাঁর স্বদেশচেতনার লিখিত প্রকাশ রয়েছে শুধু ভাষার অন্তরালে তা আত্মগোপন করে রয়েছে ।_-বলা বাহুল্য, রামমোঁহনের পত্রসাহিত্য রচনার এই অচিন্ত্যনীয় ক্ষমতা সম্বন্ধে আমরাও যাবৎ অচেতন কিন্ত বাংল! ভাষায় রচিত হলে এই বক্তব্যের প্রভাব থেকে আমরা দূরে সরে থাকতে পারতাম না। রামমোহনের বক্তব্য থেকে আমরা তদানীন্তন স্বদেশী আন্দোলনের বহু মুল্যবান প্রেরণাই পেতে পারতাম অবশ্য সচেতনভাবে রাষ্ট্রীয় আন্দোলনে রামমোহন কোনদিনই অংশ গ্রহণ করেন নি। সেই যুগে রাষ্্রীয় আন্দোলনের চিন্তাও ছিল প্রায় অসম্ভব | ধর্মান্দোলনের নেতৃত্ব নিয়ে ব্যস্ত সে যুগ রামমোহন তারই অবসরে তীর রাষ্ট্রচেতনারও পরিচয় রেখে গেছেন |

ভারতবর্ষ এর সনাতন সভ্যতা রামমোঁহনকে চিরদিনই বিদ্মিত করেছে--এর

১৪, 0.0. 20950, 17176 [072115৬৬০০০ ০৫ 1২519. 1২200000187 1২০৮ (৬০1 ]1) 2352.

৫৮ উনৰিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

প্রতি ছিল তাঁর অপরিসীম শ্রদ্ধা প্রাচ্য সভ্যতা সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠত্ব সম্বন্ধে তিনি ছিলেন নিঃসংশয় তবু আধুনিক পৃথিবীর সঙ্গে তারতবর্ষকেও এগিয়ে যাবার পরামর্শ তিনিই দিয়েছেন সর্বাগ্রে ১৮২৯ খ্রীষ্টাব্ষের ১৫ই ডিসেম্বর কলিকাতা টাউন হলের একটি সভাঁতে তিনি বলেছিলেন-_-ণন:00 0 061901921 62061160065] 200 17710165520 10 002 ০02৮1061010 0086 006 £55862] 001: 11051500156 ৮10) ঢ01096292 521701600017, 00০ £152661 11] 05 000 100101056105226 11) 11025) 500181 2170 001161081 2:28115+7৯৫

প্রাচ্যকে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে তাল ফেলে চলতেই হবে ।-_ সনাতন ভারতবর্ষের সমস্ত শক্তি সম্বন্ধে শ্রদ্ধান্বিত রাঁমমোহনের এই দূরদৃষ্টর মূল্য অপরিসীম সম্বন্ধে “নবযুগের বাংলা” গ্রন্থে মনীষী বিপিনচন্দ্র পাল মহাশয়ের বক্তব্যটি উল্লেখযোগ্য-_-“এত বড় একটা প্রাচীন জাতি এরূপ একটা সার্বজনীন্ব উদার সভ্যতা সাধনার অধিকারী হইয়া জগতের বিশাল ক্ষেত্রে আত্মপ্রতিষ্ঠা করিতে পারিবে না, এমন দুর্ঘটন! রাজার কল্পনীতেও স্থান পায় নাই। এই দিক দিয়া দেখিলে রাজ! রামমোহনকে আমাদের বর্তমান রাষ্ট্রীয় আন্দোলনেরও প্রবর্তকরূপে প্রত্যক্ষ করি |”

রাঁমমোহনও সে যুগের বাংলাদেশের একটা সম্মিলিত ধারণ! পাওয়া যাবে এখানে সেষুগে যে চিন্তাকে সাধারণের চিন্তা বলে গ্রহণ করা! চলে না__রাঁমমোঁহন কয়েকজন আদর্শবাদী চিন্তানায়ক দেশ সম্বন্ধে, জাতি সন্বন্ধে সে কথাই ভেবেছেন। পরবর্তা স্বাধীনতা আন্দোলনের যুগে সমগ্র জাঁতি যে আদর্শের স্বপ্ন দেখেছে_ রামমোহন সেই স্বপ্নই দেখেছেন বহু আগে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সচেতন পূর্বহ্ছরীরূপে রামমোহনের নাম করতে হয় সর্বাশ্রে-_কিন্তু স্বজাঁতি স্বসমাজ তাঁকে বিধর্মী বলে দুরেই সরিয়েছে-পরম বন্ধু কল্যাণকামীরূপে স্বীকৃতি দেয়নি, এটাই ছুঃখ। মুষ্টিমেয় শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যেই নিবদ্ধ ছিল তাঁর স্থবিশাল কর্মজীবনের রোমাঞ্চকর ইতিহাঁস। ত্রাঙ্মসমাজ অষ্টারূপে বাঞ্গালী তাঁকে যত চেনে, নব্য বাংলাদেশ বাঙ্গালী জাতির অগ্রারূপে ততটা চেনে না পরম আত্মীয় এই প্রতিভাদীপ্ত বান্গীলীকে বা্গালীরাই দূরে সরিয়ে রেখেছিল--এটা আমাদেরই ছুর্ভাগ্য আমাদের মুক্তি সাধনার চেতনায় যে আন্তরিক অগ্রিগর্ভ চেতনা তিনি যৌগ করেছিলেন পরবর্তী মুক্তিসাধনার ইতিহাঁসে তা প্রোজ্জল হবেই। রাঁমমোহনের প্রসঙ্গে শ্রীনরেশ সেনগুপ্ের এই বক্তব্যটি যূল্যবান। “0 10010951719 1311)

১৫, 110 121121151) ৮৬০৫5 06 [০12 [20009212 1২০5, 0.0. 17956, 1,200916 £15617 01) 15015 10060. 7829 ৪010৬ 1121], 02105 65,

উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে রাজনীতিচর্চা ৫৯,

00009, ০1221: 10695 250 1016 01011090915 গান 2০৮০ ৪1] 5168 90111 01 £72200100 01901151105 00100, 00 [08150 05 3161 101 ৪5906108610. €0520156 01010. 1715 ০0 1581009৮.৯৬

রামমোহন সে যুগের কাছে যা দিয়েছিলেন--তাতেই নতুন প্রাণসঞ্চার করেছেন পরবর্তী উত্তরসাধকগণ | বাংল! সাহিত্যের সঙ্গে রামমোহনের যোগ সামান্যই ধর্ম সংক্রান্ত তাঁর বিশাল রচনার অধিকাংশই জনগণের কাছে দুর্বোধ্য কিন্ত জাতীয় চেতনার মুক্তি কামনায় তাঁর আজীবন সংগ্রাম পরবর্তী যুগে এক অভিনব প্রাণরস সঞ্চার করেছিল! পরবর্তী 'সাহিত্যঅষ্টাগণ তদের রচনার প্রেরণ পেয়েছেন তার ভাবাদর্শের কাছ থেকে সংবাদপত্র নিয়েছিলো মুখ্য ভূমিকা আর বাংলাভাষার নব্যচ্চার সঙ্গে জীবনামগুভূতির গভীরতর স্পন্দন সহজেই যুক্ত হয়েছিল |

১৬, 27691) ০1, 967 08062. হি চিঞ)00120 209 81018, 175

০210862 [২6৮1৩%/,02702919 1934,

তৃতীয় অধ্যায় প্রবন্ধ

বাংলা সাহিত্যে গগ্ঠের আবির্ভাব একটি ম্মরণীয় ঘটনা -কাঁরণ বাংল! গঘের জন্মলগ্েই শুভহ্চন! হয়েছিল আমাদের জাতীয় জীবনেরও আটপৌরে গন্ধকে যতদিন একঘরে করে রেখেছিলাম ততদিন জীবনের সঙ্গে সাহিত্যের সত্যকার সম্বন্ধ স্থাপিত হতে পারে নি। কাব্যের তাবজগতে প্রাত্যহিক চিন্তার স্থান ছিল না, পরিমাঁজিত চিন্তাধারার স্থসম বিস্যাসে প্রাত্যহিক ভাবনা ছিল অনাদূত। ১৮০০ খ্রীষ্টাবে ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ স্থাপনার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাগঘ্ের পঠন-পাঠন,-শিক্ষাপদ্ধতি পাঠ্যপুস্তক নিয়ে বিত্রত পঙ্ডিতসম্প্রদীয়ের প্রসঙ্গ পূর্বেই আলোচনা করেছি এরা বাংলাদেশের প্রথম সংস্কারক গোঁঠী ;__-বাঁংলা ভাষ! চর্চাকে এরা নিতান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে মনে করেন নি-_বৃহত্তর বাঙ্গালী সমাঁজের স্বার্ও চিন্তা করেছিলেন। স্বদেশপ্রেম কি বস্ত তা সে যুগে চিন্তারও অতীত- কিন্তু স্বার্থনিমগ্ন বাঙ্গালী সমাজে ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের পণ্ডিতগোঁগীর কৃতিত্ব শুধু গণ্ভ সাহিত্যেই আবদ্ধ ছিল না_ এরা অন্যান্ত বিষয়েও সচেতনতার পরিচয় দিয়েছিলেন এই পণ্ডিতসম্প্রদাঁয়ের মধ্যে বৈপ্লবিক চিন্তাসাঁমধ্যের অভাব থাকতে পারে--কিন্তু সচেতনতার অভাব ছিল পা। স্বদেশপ্রেমের প্রথমঃস্তরে এই সচেতনতাঁরই প্রয়োজন সবচেয়ে বেশী। রামমোহনের প্রচ শক্তি যখন বালী সমাজের কুসংস্কারের যূলে আঘাত করেছিল -অচেতন মুমূযু জাতির ক্ষীণদেহে প্রাঁণসঞ্চার করেছিল--তখন এই প্ডিতগোষ্ঠীই স্বপক্ষে বিপক্ষে সমালোচনা করার অধিকার লাভ করেছিলেন উনবিংশ শতাঁদীর নবজাগরণের সুচনালগ্নে বাঁংলা গগ্ঠসাহিত্যের ভূমিকা সর্বোজ্জল। বাদান্বাদের স্বত্র ধরে সমগ্র জাতির চরিত্রে সচেতনতার উত্তেজন। তৃষ্টি করেছিলেন এরাই। স্বদেশপ্রেমের কোনো আঁদর্শ সেদিন তীঁদের সামনে ছিল না _-কাঁব্য- নাটক-উপন্তাসের কাছ থেকেও প্রেরণা সংগ্রহের উপায় ছিল না, কুসংস্কার অসংখ্য বীভৎস সামাজিক আচারের মধ্যেই এ'র! পালিত হয়েছিলেন স্বদেশচেতনা দুরের কথা, এরা পরিপার্খ, বর্তমান ভবিষ্যৎ সম্বন্ধেও ছিলেন অজ্ঞ। তবু বাংলা গছ্ের আশ্রয়ে আপন বিশ্বীস যুক্তি প্রদর্শনের শুভ সুচনা করেছিলেন এরাই মৃত্যুঞ্জয় বিদ্ভালংকারের অসংকোচ সমর্থন ছিল সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে রামমোহনকে সরাসরি অভিনন্দন জানাতে এগিয়ে এসেছিলেন এই প্রাচীনপন্থী

প্রবন্ধ ৬১

প্রবীণই | সহমরণ সম্বন্ধে শাস্ত্রীয় মতামত ব্যাখ্যা করতে অন্ুরুদ্ধ হয়ে মৃত্যুগ্রয় শীল্্ীয় রীতির বাংলা অন্ুবাঁদ করেছিলেন,_সচেতনতার সে নিদর্শনটি পুনরুল্লেখ করি,

*চিতাঁরোহণ অপরিহার্য নয়, ইচ্ছাধীন বিষয়মাত্র | অন্থগমন এবং ধর্ম জীবন যাপন__এই উভয়ের মধ্যে শেষটিই শ্রেয়তর | যে স্ত্রী অনুম্ৃতা নাহয় অথবা অনুগমনের সংকল্প হইতে বিচ্যুত হয়, তাহার কোন দৌষ বর্তে না।”১

এভাবে বাংলা গগ্ের মাধ্যমেই আপনাঁপন বক্তব্য পরিবেশনের আদর্শজাপনের রীতি প্রচলিত হয়েছিল। রামমোহন বিদ্যাসাগর সমাজ সংস্কারের উদ্দেশ্য ব্যাখ্য। করার প্রয়োজনেই প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন স্বদেশপ্রেমের আঁবেগেই ধর্মান্দোলন কুসংস্কার বিনষ্ট করার সংগ্রাম চালিয়েছিলেন এরা, প্রবন্ধ রচিত হয়েছে শুধু সেই বক্তব্যটি স্ধী সমাজের হাতে পৌছে দেওয়ার জন্যই |

রামমোহন বিদ্যাসাগরের বহুমুখী জীবন সাধনার প্রসঙ্গ আমাদের আলোচনার অঙ্গ নয়; শুধু প্রবন্ধ সাহিত্যে স্বদেশপ্রেমের যে পরিচয়ট্ুকু স্থায়ী রূপ পেয়েছে- তার আলোকে এদের মহিমা আবিষ্কারই আমার উদ্দেশ্য অথচ উভয় ক্ষেত্রেই দেখি, এদের চারিত্রিক মহিমা, বিপুল কর্মসাধনাকে সাহিত্যে ধরে রাখার কোন আয়োজনই এরা করে যান নি। বিগ্াসাগর কালের দিক থেকে রাঁমমোহনের অনেক পরের যুগের মানুষ ছিলেন বটে কিন্তু এদের জীবনধারার মধ্যে আশ্চর্যজনক মিল ছিল। রামমোহন ধর্মান্দোলনের নেতৃত্ব করেছেন,--ধর্ম-জিজ্ঞাসাঁই ছিল তার আন্তর প্রেরণা মানুষ রামমোহনের মধ্যে যে স্বতঃস্ফ্ত স্বদেশভাবনার পরিচয় পেয়েছি_স্বধর্মসংস্কারে, সমাজ সংস্কারে, প্রথর আত্মসচেতনতায় রাজনীতিজ্ঞানের মধ্যেই তা উদ্ভাসিত, হয়ে আছে। স্বদেশপ্রেমের মূর্তবিগ্রহ ছিলেন তারা_-অথচ এদের প্রবন্ধ সাহিত্যের যুক্তি আলোচনার গহন অরণ্য থেকে তাঁর প্রমাণ সংগ্রহ করার চেষ্টা করলে বিফল হতে হয় বিগ্াসাগর সম্বন্বেও একথাই প্রযোজ্য | বিদ্যাসাগরের যুগে স্বদেশচেতনা খুব অপরিচিত অনুভূতি ছিল না সভাঁসমিতির আলোচনায়, সাহিত্যে স্বদেশ প্রেম তখন একটি পরিচিত অবলম্বন অথচ তাঁর মত নিজের জীবনে স্বাদেশিকতার প্রেরণাঁয় উদ্ধদ্ধ হতে পেরেছিলেন কজন? স্বদেশপ্রেমের আবেগ বিদ্যাসাগরের প্রতিটি কর্মে প্রেরণা সঞ্চার করেছিল | মানবতাবোধের প্রজ্ঞা দিয়ে স্বদেশ-স্বসমীজ ও. প্রতিটি মানুষকে ভালবাসতে পেরেছিলেন তিনি | কুস্মমকোমল প্রেমে নারীর: প্রতি. গভীর সহাহ্ভৃতিতে তিনি অস্থির হতে পারেন আবার বস্তকঠোর ভঙ্গিতে বিদেশী;

১. সাহিত্য সাধক চরিতমালা, মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালংকার থেকে উদ্ধ'ত।

৬২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

শাঁসকের অন্তায়কে তীব্রভাষায় নিন্দা করতেও উদ্ভত হন। এই জাতীয় চরিব্রই একটি জাঁতির মনে নিরীঁকতা, দৃঢ়তা স্বদেশচেতনা জাগাতে পারে একজন প্রতাঁপসিংহই সমগ্র মেবাঁরবাঁদীকে স্বাধীনতাত্রতে দীক্ষা দিয়েছিলেন তেমনি একজন রামমোহন কিংবা একজন বিগ্ভাসাগরই সমগ্র বাঙ্গালীকে জাতীয়তাবোধের আত্মসম্মীনবোঁধের দীক্ষা দিয়েছিলেন এদের রচিত সাহিত্য থেকে অজস্র প্রমাণ দেওয়া হয়ত যাবে না, কিন্ত সমগ্র জীবন দিয়েই এ'রা শ্বদেশপ্রীতির আদর্শটি ব্যাখ্যা করে গেছেন সাহিত্য রচনার মাধ্যমে নয়,__ সমগ্র জীবনের প্রতিটি আচরণ দিয়েই এরা স্বদেশপ্রেমের আদর্শ তুলে ধরেছিলেন। সমালোচকবৃন্দ জীবনীকারগণও একথা দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন সাহিত্যিক রামমোহন, কর্মী-্বদেশান্থুরাগী-সমাজ- সংস্কারক রামমোহনের কাছে স্তন; বিগ্ভাসাঁগর সাহিত্যের জন্যই নয়,সমগ্র জীবন সাধনার জন্যই আমাদের কাছে প্রীতঃম্মরণীয় চরিত্র

প্রথম যুগের প্রাবন্ধিকদের রচন1 পাঠকালে সত্যটিই প্রকট হয়ে ওঠে যে, এরা মুত বড় স্বদেশপ্রেমিক ছিলেন ততবড় স্বদেশপ্রেমের ব্যাখ্যাতা ছিলেন না। প্রথম খুগের প্রবন্ধেও স্বদেশপ্রেম সম্পকিত রচনাঁংশের স্বল্পতা চোখে পড়ে। বস্ততঃ সমাজ সংস্কার ধর্মসংস্কার কিংবা ভাষাঁসংস্কারের মধ্যে দেশহিতৈষী ব্যক্তিটিরই পরিচয় পাই বটে-_কিন্তু স্বদেশপ্রেমের প্রত্যক্ষ ঘনীভূত আবেগ সেখানে অত্যন্ত ক্ষীণ উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে স্বদেশপ্রেম যখন দান] বাঁধে নি--তখনও দেশাম্রাগ ছিল, __স্বধর্মপ্রীতি স্বসমাঁজপ্রেম ছিল। দেশের সমস্ত দৈগ্য হৃদয়ঙ্গম করার বেদন। নিয়েই সমাজসংস্কারকের আবির্ভাব ; স্বদেশপ্রেমিক হয়ত ঠিক সেই পর্যায়ের বেদনা অনুভব করেন না__কিস্ত পরাধীনতার ছঃসহ জাল তিনি মর্মে মর্মে উপলদ্ধি করতে পাঁরেন। স্বদেশপ্রেমের প্রথম স্তরে পরাধীনতার এই চেতনাটি এতই অস্পষ্ট ছিল যে প্রবন্ধের বিষয়বস্ত প্রকাশভঙ্গি আলোচনাঁকালে তা সহজেই বোঝা যায়। প্রবন্ধ সাহিত্যের আঁবিত্ীবলগ্নে প্রবন্ধের লক্ষণীক্রান্ত রচনাগুলি মুখ্যত সমীজসংস্কার, ধর্ম- সংস্কার কিংবা ভাষাঁসংস্কার প্রসঙ্গ নিয়েই রচিত হয়েছিল। রামমোহন, বিদ্যাসাগর, দেবেন্দ্রনাথ, রাঁজনারায়ণ বস্থুর প্রবন্ধ গ্রন্থগুলির বিষয়বস্ত আলোচনা করলেই সত্য সমথিত হবে। স্বদেশপ্রীতির পরিচয় অনুসন্ধানের জন্ত এদের প্রবন্ধাবলীর সাহায্য নেওয়াটা অনেক ক্ষেত্রেই অবান্তর বলে মনে হবে। স্বদেশবাঁপীর জঙ্ আত্মস্বার্থ বিসর্জনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন এরাই। ইংরাজী শিক্ষার্দীক্ষার 'প্রভাবেই আত্মদর্শনে অভিলাষী হয়েছিলেন রা, সমাজ ধর্ষের পটভূমিকায় আত্ম- বিচারের এই চেষ্টা বাঙ্গালীর ইতিহাসে অভিনব অচিস্তিত। প্রসঙ্গে সেকাল 'আর একাল" প্রবন্ধে রাজনারায়ণ বস্থ বলেছেন-_ |

প্রবন্ধ ৬৩

«এই সময় হইতে ইংরাজী শিক্ষার প্রভাবে নবভাঁব হিন্দুসমাঁজে প্রবিষ্ট হয় সেইভাঁৰ এখনও কার্য্য করিতেছে কিন্তু হিন্দুসমাঞ্জের বর্তমান পরিবর্তনের যূল কারণ অনুসন্ধান করিতে গেলে কেবল ইংরাজী শিক্ষার প্রবর্তনা যে উহার একমাত্র কারণ বলিয় নির্দেশ করা যাইতে পারে এমত নহে আর একটি ঘটনা উহার একটি প্রধান কারণস্বরূপ গণ্য করা কর্তব্য অর্থাৎ রামমোহন রায় দ্বার ব্রাহ্মসমাজ সংস্থাপন ।২

রাজনারাঁয়ণ যুগান্থুগ পটভূমিকা বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যেই উদ্ধৃত অংশটির অবতারণা করেছিলেন ধর্মসংস্কার, সমাজসংস্কারের মধ্যেই প্রথম এই নবলনধ ভাঁবটি পরিক্ষুট হয়েছে সত্য কিন্তু জাতীয় অনুভূতির মধ্যে প্ররুত স্বদেশপ্রেমের আবেগটি লক্ষ্য করা যায় না বলেই তিনি যথার্থ স্বদেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে ডিরোজিও স্বদেশপীতি প্রসঙ্গে বলেছিলেন,_“ছুঃখের বিষয় এই যে--একজন ফিরিঙ্গী ভারতবর্ষকে এমন প্রেমের চক্ষে দেখিতেন কিন্তু এক্ষণকার কোন কোন হিন্দুসন্তানকে সেরূপ করিতে দেখ যাঁয় না » এ, পৃঃ ২৬॥

১৮৭৪ খ্রীষ্টাব্দে লেখা এই ইতিবৃত্ত মূলক গ্রন্থটিতে রাজনারায়ণ নিজের অভিজ্ঞতাঁকেই বিবৃত করেছিলেন এভাবে নবলন্ধ ভাবকে স্বীকার করেও তিনি স্বদ্দেশচেতনাকে একটি পৃথক বস্ত বলেই মেনে নিয়েছিলেন রাঁজনারায়ণ হিন্দু কলেজের ছাত্র হিসেবে সে যুগের আলোকপ্রাপ্ত প্রতিভাদীপ্ত বহু ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে এসেছিলেন কিন্তু শ্বদেশপ্রেমের আবেগ তিনি অধ্যাপক ডিরোজিওর কাছ থেকেই লাভ করেছিলেন |

রামমোহনের প্রবন্ধ পুস্তকের তাঁলিকাঁয় সতীদাহ প্রথা ধর্মমত [হিন্দু মুসলমান খ্রীষ্টান] সম্পকিত আলোঁচনাই প্রধান। সমাজ ধর্মসংক্কারকের কর্তব্য হিসেবেই তিনি উপলব্ধ সত্য প্রচার করেছেন। শিক্ষা প্রচারের উদ্দেশ্যেই গোঁড়ীস্ব ব্যাকরণ রচনা করেছিলেন কোথাও স্পষ্টভাবে প্রকাঁশিত না হলেও রামমোহন যে স্বাধীন স্বদেশের স্বপ্ন দেখতেন তার অজন্র প্রমাণ মিলবে মানুষের অন্তণিহিত শক্তিকে উদ্বোধিত করার প্রাথমিক কাজটি সম্পন্ন হলেই স্বাধীন মননের পথটি প্রশস্ত হতে পারে, এই ছিল তাঁর ধারণ চপ্লিশ বছরের মধ্যেই এদেশ থেকে ইংরাঁজ শাসক বিনুপ্ত হবে-_-এমন ধারণা তিনি কোনো মৌখিক আলাপে একদা ব্যক্ত করে- ছিলেন হয়ত। প্রসঙ্গে মনীষী বিপিনচন্দ্র পালের মন্তব্যটিও স্বীকৃত সত্যের মর্যাদা পাবে,

২. রাজনারারণ বনু, সেকাল আর একাল, কলিকাতা, ১৮৭৪, পৃঃ ২৩।

৬৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

রাজা কেবল স্বদেশবাঁসীগণের চিত্ত চিন্তাকে অন্ধ শান্ত্রীুগত্যের বন্ধন হইতে মুক্ত করিবার চেষ্টা করিয়াই 'ক্ষান্ত হন নাই। যেখানে বন্ধন সেখানেই তাঁহার শাণিত খড়া গিয়া পড়িয়াছে। ধর্মপ্রাণ হিন্দুকে স্বাধীনতামন্ত্রে দীক্ষিত করিতে হইলে সকলের আগে তাহার ধর্মকে স্বাধীন করিতে হয়।

[ নবযুগের বাঁংলা-যুগপ্রবর্তক রামমোহন ]

কিন্ত প্রবন্ধ সাহিত্যের কোথাও এই ধারণাটি স্পষ্টায়িত হয়নি বলে রামমোহনকে অভিযোগ করা যাঁয় না। সম্ভবতঃ সৃষ্টির চেয়েও শরষ্টার মহত দিয়েই এজাতীয় মহাঁপুরুষকে বিশ্লেষণ করাই শ্রেয়

বিদ্যাসাগরের প্রবন্ধ রচনার হেতু সামাঁজিক কুসংস্কার দূর করার জন্য যুক্তিগ্রাহ শীন্রসমথিত বক্তব্য প্রচার যথার্থ গগ্ধশিল্পী বিদ্যাসাগরের শৈল্পিকতা বিচার আমাদের লক্ষ্য নয় বলেই তাঁর অক্সপরিচিত উ্দেশ্যযুলক এবং তুলনায় অসার্থক রচনাই আমাদের আলোচনায় স্থান পেয়েছে স্বদেশপ্রেমিকতার প্রসঙ্গে তার স্বদেশ স্বজাতিসেবাঁর প্রসঙ্গটিই মুখ্য হবে নিশ্চয়ই কুসংস্কার জীর্ণতায় সমাঁজদেহ যখন মুমূষূর্ণ হয়, দৈবপ্রেরিত শক্তি নিয়েই যুগন্ধর মহাঁপুরুষের আগমন ঘটে সেদিন। অসামান্য পাণ্ডিত্য, সাহিত্য প্রতিভা, শিক্ষান্থরাগ অসংখ্য গুণ সমভাবে বিদ্ভাসাগর চরিত্রের উজ্জ্লতা বাড়িয়েছে, কিন্তু তিনি নিজে স্বীকার করেছেন বিধবা বিবাহ তাঁর জীবনের সর্বাপেক্ষা সৎকর্ম সমাজসেবাঁর প্রয়োজনেই রামমোহন বিদ্কাাগর তাঁদের অমিত কর্মশক্তি প্রয়োগ করেছিলেন--সাহিত্যস্থষ্টির তুলনায় সে কীতির মহিমা কিছুমাত্র কম ছিল না। সমাজ দেহের জড়ত্ব নাশ করে প্রগতি উদারতার বীজ বপন করতে পেরেছিলেন বলেই খুব অল্সসময়ের মধ্যে বাঙ্গালীর জীবনে নবজাগরণের হাওয়া লেগেছিল। বিদ্ভাসণগরের প্রধানকীতি বিধব1 বিবাহ প্রবর্তন হলেও হিন্দু সমাজের অধঃপতনের আরও কয়েকটি কাঁরণ তিনি বিশ্লেষণ করেছিলেন সমাজে নারীর যোগ্যমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত ন1 হওয়া পর্যন্ত জাতির তবিষ্যৎ কালিমালিপ্ত হয়েই থাঁকবে-__-এই সুস্পষ্ট অভিমতের দৃঢ়তায় অবিচল ছিলেন বলেই রামমোহনের মত বিগ্ভাসাগরও আজীবন সংগ্রাম চালিয়েছিলেন | বিগ্াসাগর রাঁজশক্তির সাহায্য ছাঁড়া সামাজিক সংস্কার অকল্পনীয় মনে করতেন। ব্যাপারে স্বদেশবাসীর ওপর বিন্দুমাত্র আস্থা ছিল নাতীর। এদের চরিত্র ব্যাখ্যা প্রসঙ্গ বিদ্বাসাগর সক্ষৌভে বলেছিলেন,-_

প্রস্তাবিত দেশহিতকর বিষয়মাত্র প্রতিপক্ষতা কর] ধাঁহাদের অভ্যাঁস ব্যবপাঁয় তাহারা কোনও মতে ক্ষান্ত থবকিতে পারিবেন ন1।...ঈদৃশ ব্যক্তিরা সামাজিক দোষ

প্রবন্ধ ৬৫

সংশোধনের বিষম বিপক্ষ তাহাদের অদ্ভুত প্রক্কৃতি অদ্ভুত চরিত্র, [নিজেও কিছু করিবেন না, অন্তকেও কিছু করিতে দিবেন না।৩ [ ভূমিকা, বছবিবাহ ]

স্বদেশবাঁপীর সমর্থন না পেলেও নির্ভীক নিষ্ঠ। নিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপ দিয়েছিলেন তিনি, এর প্রেরণাঁও পেয়েছিলেন আপন স্বদেশপ্রাণতার কাছ থেকেই। স্বজাতীয়রাই বিরোধিতা বিপক্ষতায় পধুদস্ত করেছিল তাঁকে-_কিস্তু দমিত হননি তিনি। বিধবা বিবাহ্‌ প্রবর্তনের সাফল্যের পরেও বহু বিরূপ সমালোচনায় বিক্ষত হয়েছিলেন তিনি। তবু এরপরও তিনি সামাজিক সমস্যা নিয়ে নতুন করে চিন্তা করার চেষ্টা করেছেন। বিধবাবিবাহের আন্দোলনের সঙ্গে হিন্ু সমাজের বাল্যবিবাহ প্রথ। বহুবিবাহ প্রথার বিরুদ্ধে যুক্তিপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন তিনি। আসলে বিদ্ভাসাগর একটি বলিষ্ঠ জাতির স্বপ্ন দেখছিলেন,_-যে জাতি কুসংস্কারের বেড়াঁজীল ছিন্ন করে আপন মহিমায় ভাস্বর হয়ে উঠবে এই অন্ুভৃতিটিই নিম্নলিখিত অংশটিতে প্রকাশ পেয়েছে-_

ভারতবর্ষে নিতীন্তই যে বীর্ষবন্ত বীরপুরুষের অসন্ভাব ছিল, এমত নহে, যেহেতু পূর্বতন ক্ষত্রিয়সন্তানেরা এবং কোন কোন বিপ্রসন্তানের। যুদ্ধবিগ্রহাদি কার্ষে প্রবল পরাক্রম অসীম সাহস প্রকাশ করিয়া এই ভূমগ্ুলে অবিনশ্বর কীতি সংস্বাপন করিয়া! গিয়াছেন, তাহাঁদিগের তত্তচ্চরিত্র পৌরাণিক ইতিবৃত্তে প্রথিত আছে, সেই সকল বীরপুরুষ প্রসব করাতে এই ভারতভূমিও বীরপ্রসবিনী বলিয়া বিখ্যাত, ছিল ।-..এতদ্দেশীয় হিন্দুগণ সেই জাতি সেই বংশে উৎপন্ন হইয়া যে এতাদৃশ দুর্বলদশা গ্রস্ত হইয়াছে, বাল্যপরিণয় কি ইহার মুখ্য কারণ নয়?-_এতদ্দেশীয়েরা। অন্নাভাবে জঘন্য বৃত্তিও স্বীকার করে, তথাপি কোন সাহসের পরা ক্রমের কার্ষে প্রবৃত্ত হয় না এই জন্যই রাঁজকীয় সৈস্তমধ্যে কখন বঙ্গদেশোৎপন্ন ব্যক্তিকে দেখা যায় নাই। (বাল্যবিবাহের দোঁষ )

বিদ্যাসাগরের চিন্তীধাঁরাঁটি অনুসরণ করলে খুব সহজেই তার স্বদেশপ্রেমিকতা। স্পষ্ট হয়ে ওঠে। জাতীয় জাগরণ লগে স্বদেশাত্রক কাব্য-কবিতা-নাটক-উপস্তাসে একটি বক্তব্যই ধবনিত হয়েছে, - তাঁতে ছিল বাঁঞ্ালীকে একটি বলিষ্ঠ জাতির আদর্শে অনুপ্রাণিত করার আপ্রাণ প্রয়া। জগতের ইতিহাসের দৃষ্টান্ত দিয়ে, অতীতের স্বপ্নজাল মেলে ধরে, ভবিষ্যতের হর্গিত দিয়ে বাঙ্গালীকে শুধু সচেতন করার সাধনায় মেতেছিলেন যুগের সাহিত্যসাধকেরা। বিদ্ভাসাগরের চিন্তাধারার সঙ্গে তাদের

৩. বিদ্যাসাগর গ্রস্থাবলী। সাহিত্য ।--রঞগ্রন পাবলিশিং হাউস, ফাল্ভতন ১৩৪৫, সম্পাদক শ্ীসুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়

গ৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

উপলক্ির সাদৃশ্য আবিফ্ষার কর1 মোটেই ছুরূহ নয়। শুরত্ব, বীরত্ব মানসিকতাই যে কোন জাতিকেই স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, সত্য বিদ্ভাসাগরের উদ্ধৃত বক্তব্যে অকপটে ধরা পড়েছে

দেশহিতকর যে কোন আন্দৌলনেই বিদ্যাসাগরের অকুগ্ঠ সমর্থন ছিল। কলিক।তার সনাতন ধর্মরঞ্ষিণী সভা বহুবিবাহ নিবারণকল্পে উদ্যোগী হয়েছিলেন এবং তাঁদের উৎসাহ বৃদ্ধির জন্যই “বহুবিবাহ” প্রবন্ধটি রচনা করেছিলেন বিদ্াসাঁগর | ভূমিকায় তার অভিপ্রায় জানিয়েছেন,_-

“তীহারা, সদভিপ্রায়প্রণোদিত হইয়া, যে অতি মহৎ দেশহিতকর ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করিয়াছেন, হয়ত সে বিষয়ে তাহাদের কিছু আহ্ুকৃল্য হইতে পারিবেক, এই ভাবিয়া, আমি পুস্তক মুদ্রিত প্রচারিত করিলাম ।৮৪ +

“বহুবিবাহ” প্রবন্ধটিতে বিদ্যাসাগরের নির্ভীক সমালোচনা লক্ষ্য করেছি বাঙ্গালীর অধঃপতনের নিখুত তথ্য পরিবেশনের জন্য তিশি জেলাওয়ারী পরিসংখ্যান গ্রহণ করে এবং বহুবিবাহকাঁরী ব্যক্তির নামধাম পরিচয় মুদ্রিত করে ষে দুঃসাহসিকতা প্রদর্শন করেছিলেন সমকালীন কোণ রচনায় ধরণের স্পষ্টবাঁদিতা খুঁজে পাইনি ।,; সমীজ সমালোচনার ক্ষেত্রে অগ্রণী ব্যক্তিদের মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্রের নীম সর্বাগ্রে উল্লেখ করা চলে। বঙ্কিমচন্দ্রও প্রকাশ্য সমালোচনার পথটি এড়িয়ে গেছেন। ব্যাপারে বিগ্ভাসাঁগরের দৃঢ়তা তুলনাহীন, বিদ্যাসাগর বিধবাবিবহ প্রবর্তনের জন্য সরকারী সাহাষ্য প্রার্থনা করেছিলেন কিন্তু বহুবিবাহ, বাল্য বিবাহ প্রথা রহিত করার জন্য সে জাতীয় উদ্োঁগ করেন নি। ব্যাপারে তার অভিমতটিও লক্ষ্যণীয়

“বছবিবাহ নামাজিক দোষ, সাঁমীজিক দোষের সংশোধন সমাজের লোকের কার্য, সে খিষয়ে গভর্নমেণ্টকে হস্তক্ষেপ করিতে দেওয়া কোনও ক্রমে বিধেয় নহে '""ফলতঃ কেবল আমাদের যত্ব চেষ্টায় সমাজের সংশোধনকার্ধ সম্পন্ন হইবেক, এখনও দেশের সে দিন, সে সৌভাগ্যদশা উপস্থিত হয় নাই, এবং কতকালে উপস্থিত হইবেক, দেশের বর্তমান অবস্থা দেখিয়া, তাহা স্থির বলিতে পারা যাঁয় না।

'”" আমাদের ক্ষমতা গভনমেণ্টের হস্তে দেওয়া উচিত নয়, একথা বলা বালকতা প্রদর্শনমাত্র। আমাদের ক্ষমতা কোথায়। ক্ষমতা থাকিলে ঈদৃশ বিষয়ে গভনমেন্টের নিকটে যাওয়া কদাচ উচিত আবশ্যক হইত ন।, আমরা নিজেই

৪. বিদ্যাসাগর গ্রস্থাবলী। সাহিত্য ।__রগ্রন পাবলিশিং হাউস, কফান্ভন ১৩৪৫, সম্পাদক শ্ীতনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়

প্রবন্ধ

সমাজের সংশোধন কার্য সম্পন্ন করিতে পারিতাম। ইচ্ছা নাই, চেষ্টা নাই, ক্ষমৎ নাই, স্থতরাঁং সমাজের দৌষসংশোধন করিতে পারিবেন না, কিন্তু তদর্থে রাজা আবেদন করিলে অপমানবোধ বা সর্বনাঁশজ্ঞান করিবেন, এরূপ লোকের সংখ্য বোঁধ করি, অধিক নহে, এবং অধিক না হইলেই দেশের সমাঁজের মঙ্গল ।” [ বহুবিবাহ--ষষ্ঠ আপতি

১৮৭১ খ্রীষ্টাব্দে “বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক বিচার _ প্রকাশিত হয়। রাজনীতিচর্চা দেশচর্চা সে সময়ে খুব অপরিচিত ব্যাপার ছি না_কিন্তু আভ্যন্তরীণ দুর্বলতা রীতিমতই প্রবল ছিল। বিগ্ভানাগর ভাবোচ্ছাসে পীড়িত না হয়েও আত্মসমালোচন! করেছেন নিভভলভাবে আমাদের ক্ষমতাদৈন্ত নিশ্চে্ুতার স্বরূপনির্নয়ে বিদ্যাসাগর অসাধারণ দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছিলেন কোনো ভাবাবেগ কিংবা কোনো প্রাচ্চ পাশ্চাত্য মতবাদের প্রেরণা দিয়ে স্বসমাজজকে বিচার করেননি তিনি,_স্বাভাবিক সহজ আয্মরুদ্ধি দিয়ে সমাজের খাঁটি চেহারাঁট দেখিয়ে দিয়েছিলেন ব্যাপারে সমাজের সঙ্গে তার ভাবগত পরিচয়ও হিল ঘনিষ্ঠ বিধবাঁবিবাহ আন্দৌোলনেই তিনি সমাজের প্রক্ত চেহারাটি দেখতে পেয়েছিলেন। এই সমাজের বীভৎস রীতিনীতি দেখে শিহরিত হয়েছিলেন যেমন--এর জন্য বেদনীবোধও কিছুমাত্র কম ছিল না। মানবহিতৈষণার আন্তর প্রেরণা সম্বল করেই বিদ্যাসাগর সমাঁজ-সংস্কারে ব্রতী হয়েছিলেন_-এ ছাড়া অন্ত কেনি প্রত্যক্ষ কারণ খুঁজে পাওয়া যাঁয় না। এই মানবতাবোধকেই *স্বদেশপ্রেমে রূপান্তরিত করা চলে। স্বদেশপ্রেমের উদ্দেশ্য স্বদেশকে ব্যক্তিস্বার্থের চেয়ে মূল্যবান বলে অন্তুভব করা। বিগ্তাসাগরও স্বদ্দেশীয় মানবসপ্প্রদায়ের স্বার্থচিন্তাকেই আত্মস্বার্থের চেয়ে মুল্যবান বলেই জ্ঞান করেছেন তীর এই মানবপ্রেম সমাজের কুপ্রথা সংস্কারেই ব্যয়িত হয়েছে। তার আক্ষেপ বেদনার ভাষাটিও স্বদেশ- প্রেমিকের আন্তর অভিব্যক্তি,

আমরা অত্যন্ত কাপুরুষ, অত্যন্ত অপদার্থ; আমাদের হতভাগা! সমাজ অতি কুংসিত দোঁষপরম্পরাঁয় অত্যন্ত পরিপূর্ণ দিকের চন্দ্র দিকে গেলেও এরূপ লোকের ক্ষমতায় এরূপ সমাজের দোষ সংশোধন সম্পন্ন হইবার নহে ।৫

[ বহুবিবাহ--ষষ্ঠ আপত্তি ] আক্ষেপ বিদ্যাসাগরের সমস্ত অন্তরমথিত অন্ুভবেরই প্রকাশ যাত্র।

৫, বিদ্যাসাগর গ্রস্থাবলী। সাহিত্য। রপ্রন পাধলিশিং হাউস, ১৩৪৫, অম্পাদক ভ্রীহৃনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়।

৬৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

যহ্িমচন্ত্র কমলাকান্তের দপ্তরে রূপকান্তরালে সমাঁজ সমালোচনার রীতি প্রবর্তন করেছিলেন। কিন্ত সমাজ-সংস্কারক বিদ্াসাগর স্বজাতীয়ের ছুঃখকে অকপটে প্রকাশ না করে পারেননি বিধবাবিবাহ দূর করার উদ্দেশ্যে লিখিত, “বিধব। বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্িষয়ক প্রস্তাব” নামক গ্রন্থের দ্বিতীয় পুত্তকে বিদ্যাসাগর আবেগে কম্পমীন হয়ে লিখেছিলেন,

“্গ্য রে দেশাচার! তোর কি অনির্বচনীয় মহিমা] তুই তোর অন্গভ ভক্তদ্দিগকে, দুর্তেছা দাঁসত্বশৃংখলে বদ্ধ রাখিয়া, কি একাঁধিপত্য করিতেছিস ! তুই, ক্রমে ক্রমে 'আঁপন আধিপত্য বিস্তার করিয়া, শাস্ত্রের মস্তকে পদার্পণ করিয়াছিস, ধর্মের মর্ম ভেদ করিয়াছিস, হিতাহিতবোধের গতিরোধ করিয়াছিস, স্ভাঁয় অগ্ভায় বিচারের পথ রুদ্ধ করিয়াছিস 1৮৬

দেশপ্রেমমূলক রচনাংশ হিসেবে উদ্ধত অংশটি অন্থপম বলেই মনে হয়। বিগ্াসাগরের আবেগের পরিচায়ক বলে অংশটুকুর মূল্য আরও বেড়েছে বিদ্যাসাগর পরাধীনতার জন্য আক্ষেপ করেননি, ছুঃখ করেছেন আত্মার স্বাধীনতা হারিয়েছেন বলে। ধর্মবোধ, স্তাঁয়অন্তায় চেতনা, হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে আমাদের সমাজেও দেশাচারের প্রতাপ ঘোষিত হয়েছে-_এর চেয়ে মর্মান্তিক ছঃখ আর কিছু হতে পারে না। বিদ্যাসাগর৪ মুক্তিসংগ্রামী -কিস্তু সে সংগ্রাম বিদেশী শাসকের বিরুদ্ধে নয়,_আত্বার পরাধীনতা মোচনই তার উদ্দেশ্য ছিল। বিদেশী শাসকের অত্যাচারে পিষ্ট ভারতবাঁসপীর পরাধীনতাবোধ জাগারও আগে আত্মবোধ আত্মজিজ্ঞাস৷ জাগার প্রয়োজন ছিল। তাই প্রথম যুগের স্বদেশপ্রেমিকের সাধনা ছিল আত্মমুক্তির সাধনা বিছ্য(সাগরও প্রাচীন ভারতের মহান এঁতিহা স্মরণ করে বেদনার্ত হয়েছেন। ভারতের সর্বাঙ্গীণ মুক্তিই ছিল তীর কাম্য আর সর্বাঙ্গীন মুক্তি সাধনার শুরু সমাজের সর্বস্তরের মঙ্গলসাধনা থেকেই বিগ্ভাসাগর আক্ষেপ করেছিলেন-_

“হা ভারতবর্ষ! তুমি কি হতভাগ্য! তুমি তোমার পূর্বতন সন্তানগণের আচার গুণে পুণ্যতৃমি বলিয়া সর্বত্র পরিচিত হইয়াছিল, কিন্তু তোমার ইদানীত্তন সন্তানেরা, স্বেচ্ছান্ুরূপ আচার অবলম্বন করিয়া, তোমাকে যেরূপ পুণ্যভূমি করিয়! তুলিয়াছেন, তাহা ভাবিয়া দেখিলে, সর্বশরীরের শোণিত শুফ হইয়া যায়। কতকালে তোমার দছরবস্থা বিমোচন হইবেক, তোমার বর্তমান অবস্থা দেখিয়া, ভাবিয়। স্থির করা যায় না”। [ উপসংহার, বিধব। বিৰাহ, দ্বিতীয় পুস্তক ]

৬. বিদ্যাসাগর ্রস্থাবলী। সাহিত্য রগ্রন পাবলিশিং হাউস, ফান্তন ১৩৪৫, সম্পাদক প্ীযুনীতিকুমার চটোপাধ্যায়।

প্রবন্ধ

বিদ্ভাসাগরের প্রবন্ধের জটিলতা শান্্রবিচারের মধ্যে প্রবেশ করার মত অধ্যয়ন ধৈর্য সেকালে কিংবা একালেও খুব বেশী লোকের নেই,_এ কথা 'অতিশয়োক্তি নয়। তাঁর বিপুলায়তন প্রবন্ধে যে গভীর শান্রজ্ঞান, তথ্যনিষ্ঠা, যুক্তিবমিতা মননশীলতা৷ রয়েছে- বিদ্ভাসাগরের পাণ্ডিত্য বোঝবার জন্যই তার শরণ নিতে হয়। কিন্ত মাঝে মাঝে দেশসচেতনতার আবেগেও যে তিনি অধীর হতেন উদ্ধৃত অংশগুলোই তার প্রম্ণাম। পাণ্ডিত্য যুক্তিধমিতার অন্তরালেও মহৎপ্রাপ বি্ভাসাগরের যে পৃথক পরিচয় রয়েছে--জটিল প্রবন্ধগুলির মধ্যে সে সতাটিই প্রতিফলিত হয়েছে বিদ্ভাসাগরের রসিকতার প্রমাণ স্বরূপ তীর 'ব্রজবিলাস” “অতি অল্প হইল”, “আবার অতি অল্প হইল”, শীর্ষক রচনাবলীর উল্লেখ করা যায়। তাঁর দেশসাধন। কিংবা সমাজসংস্কারের প্রতিক্রিয়া দেখ! দিয়েছিল নানাভাবে | লিখিত আক্রমণও সহা করর্তে হয়েছে তাকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যুত্বরের উদ্দেশ্যেই লেখনী ধারণ করলেন বিদ্যাসাগর কম্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপোশ্য ছদ্মনামে তিনি শ্রেণীর রচনা প্রকাশ করেন। 'ব্রজ্ববিলাসে” তার রসিকতা ব্যঙ্গ চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে ;-- ভাইপো আক্ষেপ করে বলেছে,__ ছঃখের বিষয় এই, আমরা স্বাধীন জাতি নহি? স্বাধীন হইলে, এতদিন, কোনকালে, বিদ্যাসাগর বাবাজি সশরীরে স্বর্গারোহণ করিতেন কারণ স্বাধীন সাধুসমাজের তেজীয়ান টাই মহোদয়ের, কখনই, অত্যাচার, অপমান, সম করিয়া, গায়ের ঝাল গায়ে মাখিয়া, চুপ করিয়া থাকিতেন না) বিদ্রোহী বলিয়া, বিচারালয়ে তাহার নামে অভিযোগ উপস্থিত করিতেন, এবং আপনারাই, ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরের হ্যায়, ধর্মাসনে বসিয়া, তাহাকে শুলে চড়াইয়া, যথোপযুক্ত আক্কেল- সেলাঁমি দিতেন হাঁয়রে সেকাল 11! হা জগদীশ্বর! তুমি, কতকাঁলে, সদয় হইয়া, এই হতভাগা! দেশকে পুনরায় স্বাধীন করিবে এরূপ যথেচ্ছাচার আর আমরা কতকাল সহা করিব 111" [ ব্রজবিলাস--পঞ্চম উল্লাস ] বিদ্াপাগরের ব্যঙ্গও এখানে অতলম্পর্শা মহিমা লাভ করেছে--পরাধীনতার গ্লানি অনুভব করেও রসিকতার আশ্রয়ে সমাজের প্রকৃত স্বরূপটিই ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। ম্বাধীনতার মর্যাদা হৃদয়ঙগম করা যে স্বাঁধীনতাঁলাভ করার চেয়েও অধিকতর প্রয়োজনীয় বস্ত,_বিগ্তাসাগর সত্যই প্রচার করতে চেয়েছিলেন

৭* বিদ্যাসাগর গ্রস্থাবলী। সাহিত্য রঞ্জন পাবলিশিং হাউস, ফাল্ধুন ১৩৪৫, জঅম্পাদক ্ীহুনীতিকুষার চট্টোপাধ্যায়

উনবিংশ শতাব্দীর বাংল সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

সম্ভবতঃ | রাস্্ীয় ্বাধীনতার মুল্য নির্ণয়ের ক্ষমতাটুকু অর্জন করার মত মাঁনসিকতাই সন্ধান করতে চেয়েছিলেন তিনি

রামমোহন-বিছ্ভাসাগরের প্রচেষ্টাকে পরবর্তীকালে ধার] হৃদয়ঙ্গম করেছিলেন, তাঁদের প্রদশিত পথে বিচরণ করার স্বাভাবিক প্রথণতাই ধার চরিত্রকে মহিমান্বিত করেছিল তিনি দেবেন্দ্রনাথ প্রচলিত অর্থে দেবেন্দ্রনাথকে শুধু স্বদেশপ্রেমী বল] যাবে না, কিন্ত পূর্বেই বলেছি দেশসাধনার বিচিত্র পন্থার মধ্যে যে কোন একটি অবলহ্গন করেছিলেন ধারা তাঁদের দেশগ্রেমকে অস্বীকার করলে দেশপ্রেমিকতার পূর্ণ স্বরূপনির্ণয়ে ভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে রামমোহন বিদ্ভাপাগর, একজন ধর্মসংস্কারক, অন্যজন সমাজসংস্কারক; এদের উভয়কেই প্রকৃত স্বদেশপ্রেমিক বলতে, আমাদের বাধা নেই। দেবেন্দ্রনীথ রামমোহনেরই ভাবশিস্য,-- ত্রাহ্মধর্ম প্রবর্তনেই তাঁর সমস্ত জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয়িত হয়েছে-_কিন্তু গভীর স্বদেশপ্রেমের প্রেরণা না থাকলে কিংবা শ্বদেশহিতৈষণার প্রবৃত্তি না থাকলে ধর্মের জন্ত আজীবন সংগ্রাম করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হোত না রামমোহনের প্রবতিত ত্রাহ্গধর্মের প্রচার প্রসারে তিনি যে নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছিলেন-_-তা এককথায় বিস্ময়কর সে যুগের পটভূমিতে নিছক ধর্শান্দোলনের প্রয়োজন তত ছিল ন।,-বস্ততঃ আত্মরক্ষার স্বাজাত্যবোধের গ্েরণায় ধর্মান্দোলন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। দেবেজ্নাথও স্বদেশসেবা ধর্মপ্রচারের মধ্যে কোন পার্থক্য দেখেন নি। ততুবোধিনী পত্রিকায় ধর্মমত সুষ্ঠু সাহিত্যাদর্শ গড়ে তোলার জন্য তিনি চিরস্থায়ী সন্মান পাবেন মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের তাঁদর্শ ছিল তার সব মিলিয়ে দেখলে মহষির দেশান্রাগী মনটিকে সহজেই আবিষ্কার করি আমরা এরা পথভ্রষ্ট-__আত্মঅচেতন বাঙ্গালীর শুভবুদ্ধি জাগানোরই চেষ্টা করেছিলেন। ্রীষ্টধর্ম প্রচারকের উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করার জন্য রামমোহন লেখনী ধারণ করেছিলেন, দেবেন্দ্রনাথ রামমোহন প্রবতিত বৈদান্তিক পনিষদিক ভাবাদর্শকে প্রচার করেছেন৷ দেবেন্দ্রনাথের এই উদ্দেশ্ঠের বাহন হয়েছে তত্ববোধিনী পত্রিকা-_বাংলা সাহিত্যক্ষেত্রের ইতিহাসে সার্থক সাহিত্যপত্রিকা হিসেবে যা পরিচিত। দেবেন্দ্রনাথ ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যেই লেখনী ধারণ করেছিলেন,_-তববোধিনী পত্রিকায় দেবেন্দ্রনাথের আধ্যাত্মিক প্রবন্ধ বক্তৃতা প্রকাশিত হোত। তার সাহিত্যিক প্রতিভার পরিচয় মিলবে স্বরচিত আ'ত্মচরিত-এ 1 প্রকাশিত এই সব সাহিত্যিক সৃষ্টির মধ্যে কোথায় কোথায় স্বদেশপ্রেমী দেবেন্দ্রনাথের পরিচয় স্পষ্ট হয়েছে--আপাতত তাঁর অন্ুসন্ধানই আমাদের কর্তব্য

মহষি দেবেন্দ্রনাথের স্বদেশপ্রীতির কিছু পরিচয় বজদেশের তৎকালীন মনীষীদের মতামতেও ধরা পড়েছে। রবীন্দ্রনাথ পিতৃদেব সম্বন্ধে যে বর্ণনা দিয়েছেন

প্রবন্ধ ৭১

সেখানেও শ্বদেশপ্রেষিক দেবেন্দ্রনাথ আত্মপ্রকাশ করেছেন এই অংশগুলি দেশপ্রেমিক দেবেক্দ্নাথকে নিঃসংশয়ে চিনিয়ে দেয়; সাহিত্যিক দেবেন্দ্রনাথের সৃষ্টিতে দেশচিন্তার আলোচনা অনুসন্ধানের কৌতুহল সৃজন করে কিন্তু জাতীয়, আলোচনাতেই দেবেন্দ্রনাথের দেশপ্রেমিকতা প্রমাণিত হয়েছে, তার দেশ প্রেমিকতার বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য “আত্মচরিতে' সাড়ম্বরে ঘোষিত হয় নি বলে অবাক হওয়াও উচিত নয় অথচ মহষি বাঁংলাভাষাকে সর্বপ্রধান ভাষ। বলে স্বীকার করার আন্দোলনেও অন্যতম প্রধান ব্যক্তি তৰবোধিনী পত্রিকাতেই তিনি বিষয়ে প্রথম আলোচনা শুর করেন। রাজনারায়ণ বস্থ “বাংল ভাষা সাহিত্য বিষয়ক বক্তৃতায় বলেছিলেন-__

“বাঙ্গালা ভাষায় বক্তৃতা করিবার উৎ্কষ্ট প্রণালী ব্রাহ্মসমাজের সভ্যের। প্রথম প্রবতিত করেন ব্রী্মষসমাঁজের বক্তৃতার মধ্যে শ্রীযুক্ত দেবেন্দ্রনীথ ঠাঁকুরের ব্যাখ্যান অতিপ্রসিদ্ধ। "উহা! তাড়িতের ন্যাঁয় অন্তরে প্রবেশ করিয়া আত্মাকে চমকিত করিয়া তুলে এবং মনশ্চ্কু সমক্ষে অমৃতের সোপান প্রদর্শন করে ।৮

মহধির মাতৃভাষানুরাগের কাহিনী রবীন্দ্রনাথের রচন। পাঠেও জানতে পারি, একদা ইংরাজীতে লেখ! চিঠির উত্তরে তিনি নীরবতা৷ পালন করে তার মনোভাব জ্ঞাপন করেছিলেন মাতৃভাষা ব্যবহার করতেই অভ্যস্ত ছিলেন তিনি৷ স্বাদেশিকতার আবহাওয়া মহধি তার আদর্শে পরিবারের প্রতিটি মান্গষের প্রাণে সঞ্চারিত, করেছিলেন | | স্বাদেশিকতা৷ | 'জীবনস্থতি” পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন,

“স্বদেশের প্রতি পিতৃদেবের ঘে একটি আন্তরিক শ্রদ্ধা তাঁহার জীবনের সকলপ্রকার বিপ্লবের মধ্যেও অক্ষু্ ছিল, তাহাই আমাদের পরিবারস্থ সকলের মধ্যে একটি প্রবল শ্বদেশপ্রেম সঞ্চার করিয়াছিল বস্তৃত, সে-সময়ট! স্বদেশপ্রেমের সময় নয়। তখন শিক্ষিত লোকে দেশের ভাষা এবং দেশের ভাব উভয়কেই দূরে ঠেকাইয়। রাখিয়াছিলেন। আমাদের বাড়ীতে দাঁদার। চিরকাল মাতৃভাষার চর্চা করিয়া আসিয়াছেন। আমার পিতাকে তাহার কোনো নূতন আত্মীয় ইংরাজিতে পত্র লিখিয়াছিলেন সে পত্র লেখকের নিকট তখনই ফিরিয়! আসিয়াছিল।”

মহধির স্বদেশপ্রেমের পরিচয় পেতে গেলে এই অংশগুলো আমাদের বিশেষভাবে সাহায্য করবে মহ্ধির স্বলিখিত আত্মজীবনীতেও তার দেশসেবার প্রসঙ্গ রয়েছে। সেধুগের আত্মসচেতন কোনে ব্যক্তির পক্ষেই স্বদেশপ্রসঙ্গ বিস্বত হওয়। সম্ভব ছিল শা। খ্রীষ্টান পাত্রীদের ধর্মপ্রচার বাসনা তখনো পুরোদমে সক্রিয়,-_নবোগ্মে প্রাীন

রাজনারারণ বন্ু--বাঙ্গাল। ভাষা সাহিত্য বিষয়ক ব্তুতা--কলিকাতা, ১৮৭৪, পৃ ৬% |

ণ২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

হিন্দুধর্মের আঁদর্শ প্রচার করেও তা নিবৃত্ত করা যাঁয় নি। মহধির আত্মজীবনীর একটি ঘটনার উল্লেখ করা যায়? রাঁজেন্দ্রনাথ সরকারের কনিষ্ঠ ভ্রাতা উমেশচন্দ্ সরকার সম্্রীক খ্রীষ্টান হওয়ার জন্য গৃহত্যাগ করেন, _রাঁজেন্্রনাথ তখন দেবেন্্নাথের শরণাপন্ন হয়েছিলেন ; দেবেন্দ্রনাথ অক্ষয়কুমারকে দিয়ে প্রবন্ধ রচনা করিয়ে 'তত্তবোধিনীতে তা প্রকাশ করেন এর বর্ণনা পাই আত্মজীবনীতে,_ ্রীযুক্ত অক্ষয়কুমার দত্তের প্রবন্ধ পত্রিকায় প্রকাশ হইল, আঁর আমি তাহার পরে প্রতিদিন গাড়ী করিয়া প্রাতঃকাল হইতে সন্ধ্যা পর্যস্ত কলিকাতার সকল সম্ভ্রান্ত যান্ত লোকদ্িগের নিকটে যাইয়। তাহাদিগকে অনুরোধ করিতে লাগিলাঁম ষে, হিচ্দু- সন্তানদিগের যাহাতে পাক্রীদের বিদ্যালয়ে যাইতে আর না হয় এবং আমাদের নিজের বিদ্যালয়ে তাহারা পড়িতে পারে, তাহার উপায় বিধান করিতে হইবে ।৯ [ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ--আত্মচরিত ] মহুধিকে এখানে স্বদেশসচেতন সমাজপ্রেমিক বলে মনে হবে। স্বকীয়ত্ব রক্ষার জন্য মহষির আত্তরিক প্রচেষ্টার বর্ণনাই পেয়েছি এখানে মহধি দেবেন্ত্রনাথের জীবনে ধর্মচেতন] সর্বদাই দেশচেতনার উর্ধ্বে স্বাপিত। ব্রাঁ্ম- সমাজে বক্তৃতাদান কালে একদা তিনি বলেছিলেন, “আমাদের মাতৃভূমি হিন্দুস্তান প্রিয়তরঃ কিন্ত ব্রাহ্মধর্ম প্রিয়তম ।৮ [ ১৭০৯ শকের ১১ই কাতিক, 'ত্রাক্মদিগের এঁক্যস্থান” সম্বন্ধে বক্তৃতা ] 'এই প্রিয়তম ব্রা্বধর্মকে তিনি স্বকীয়ত্ব জাতীয়তার উপরেই প্রতিষ্ঠা দিতে চেয়ে- ছিলেন, এখানেই তার ধর্মচিন্তা দেশপ্রেমিকতার যূল সংযোগ রক্ষিত হয়েছে | ব্রাহ্মধর্ষের মধ্যে স্বজীতীয়ভাব রক্ষার জন্য মহধির চেষ্টা ছিল অন্তহীন তাই কেশবচন্ত্রের সঙ্গে দেবেন্্রনাথের সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল মহধির দৃঢ়তা জাতীয়তাবোৌধের আদর্শ এই সংঘর্ষের ফলে আরও তীব্রতর হয়ে উঠেছিল মহত জাতীয়তা রক্ষার চেষ্ট৷ সম্পর্কে একটি মহি কথিত কাহিনীর প্রসঙ্গ আলোচনা কর দরকার কের্শবচন্দ্রের সঙ্গে মতবিরোঁধের ফলে মহষি আমাদের সংস্কার রক্ষার দায়িত্ব আরও তীব্রভাবে অনুভব করেছিলেন ধর্মরক্ষা স্বজাঁতীয়ভাব রক্ষা তাঁর কাছে সমান গুরুত্ব পেয়েছিল আত্মচরিত 'পরিশিষ্টে আছে,_- “কেশববাবু যখন নাঁনীপ্রকার গোঁলযোগে পড়িয়া ব্রান্মবিবাহের আইন পাঁস করিবার চেষ্টায় রাঁজঘারে আবেদন করিলেন ত্রাঙ্ম বিবাহের পরিবর্তে সিবিল ম্যারেজ আইন বিধিবদ্ধ হইল, তথন আমার প্রণীত বিবাহের অনুষ্ঠান পদ্ধতির

*. মহধি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বরচিত জীবনচরিত-_২য় সংস্করণ

প্রবন্ধ ৭৩

বিশুদ্ধতা বিবাহসিদ্ধি সম্বন্ধে কাশী, নবন্থীপ, বিক্রমপুর, ভাটপাড়া। প্রভৃতি স্থানের প্রসিদ্ধ অধ্যাপকগণের স্বাক্ষরিত মত সংগৃহীত করিয়া আনাইয়াছিলাম ।...এই অনুষ্ঠান পদ্ধতিতে ছুইদিক রক্ষা পাইয়াছে-স্বজাতীয় ভাব ব্রান্মধর্ম ।”৯০

ব্রাহ্মধর্ম প্রচারের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল খ্রীষ্টান ধর্মের কাছ থেকে আত্মরক্ষা কর!। বহু বক্তৃতায় মহধির এই উদ্দেশ্যটি তীব্রভাবে প্রকাশ পেয়েছে,

“্ীই্টানেরা যেমন আমাদিগের ধর্মনাশের নিমিত্তে জাল পাতিয়াছে এমন আর কোন জাতিতে দেখা যায় না কি আশ্চর্য, কি লজ্জার বিষয় যে অন্যদেশস্ব লোক আমাদিগের ধর্মনাশের নিমিত্তে এত চেষ্টা করিতেছে এবং কোন কোন স্থলে তাহা র- দিগের অসৎ কাঁমনাও সফল হইতেছে, আমর] সেই ধর্মরক্ষা করিবার নিমিত্তে কিছুমাত্র যত্বশীল না হই ।৯১

[ তত্ববোধিনী সভার দ্বিতীয় বাৎসরিক জন্মতিথি উৎসবের ভাষণ ] মহ্ধির জাতীয় সচেতনতার আরও একটি পরিচয় থেকে তার স্ব্দেশচেতন। সম্বন্ধে আমরা অবহিত হতে পারি। ১৭৮২ শকে পশ্চিম প্রদেশের ছুভিক্ষে মহধি চঞ্চল হয়েছিলেন। শকের ১২ই চৈত্র একটি বক্তৃতায় দেবেন্দ্রনাথের দেশগ্রীতি সহানুভূতি তীব্ররূপে দেখা যায় -

প্রীতিকে গ্সারিত করিয়া ভারতভূমিতে ব্যাপ্ত কর। যে প্রীতি সমুদয় পৃথিবীতে ব্যাপ্ত হইয়া ঈশ্বরের উদার প্রীতির ভাব ধারণ করিবে, তাহা কি এই সংকীর্ণ ভারত ভূমিতে ব্যাপ্ত হইবে না ।.*"দেখ, আমারদের দেশের কি প্রকার অবস্থা হইয়াছে পশ্চিমে যোজন যোজন ভূমি মরুভূমি হইয়া রহিয়াছে, হরিতবর্ণ আর কোথাও দেখা যায়না আমারদের এমন ভারতবর্ষ আরব্যদেশের মরুভূমি তুল্য জনশুন্ত মরুভূমি হইয়া গেল--ইহার আশ্রিত অগণ্য লোকদিগকে আর আহার দিতে পারে না-এ কি সামান্ত শোচনীয় বিষয়? চক্ষে দেখিলেই কি আমাদের দয়ার উদয় হইবে? এই সকল দেখিলে কি আমরা ক্ষণকালের জন্ত সুস্থ থাকিতে পারিতাম !

[ পরিশিষ্ট মহি দেবেন্দ্রনাঁথের স্বরচিত আত্মজীবনী পৃঃ ৬৮-৬৯ ] এই গভীর দেশচেতনাই মহ্ষিকে চঞ্চল করে তুলেছিল মহথি ছুভিক্ষের জন্ত ২২৭৩।৩/১০ টাঁকা চাঁদা সংগ্রহ করেছিলেন জাতীয় দেশসেবর আদর্শ পরবর্তী কালে বিপুলভাবে গৃহীত হয়েছিল | রামক্ষ্চ মঠ মিশনের দেশসেবাঁর আদর্শ

১০. মহধি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বরচিত জীবনচরিত-__২য় সংস্করণ। পরিশিষ্ট, প্রিয়নাথ শাস্ত্রী কর্তৃক লিখিত। ১১৯, মহধি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ম্বরচিত জীধনচরিত--২য় সংস্করণ পৃঃ ১৬৫-১৬৬ |

৭৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

আরশ করলে তা আমরা অনায়াসেই বুঝি__কিন্তু মহষির যুগে দেশসেবার জাতীয় আদর্শ খুব হুলভ ছিল না। তিনি যা করেছিলেন_-তা আপন অন্তরের আবেগ থেকেই করেছিলেন সাহিত্যিক দেবেন্দ্রনাথ, ব্রাহ্মধর্মপ্রচারক দেবেন্দ্রনাথের মধ্যে স্বদেশ্শপ্রাণ দেবেন্দ্রনাথও সংগোঁপনে আপন অস্তিত্ব রক্ষা করে চলেছেন, _খুব নিবি্উভাবে লক্ষ্য না করলে হয়ত সে পরিচয়টি সাধারণের অগোচরেই থেকে যাবে। মহথির নিজের রচন! থেকে বা বক্তৃতা থেকে তাঁর দেশসেবার প্রসঙ্গ পাওয়া সম্ভব নয়,-সে কারণেই সম্পর্কে বিস্তৃত কোন আলোচনাও সম্ভব নয়।

বাংলা প্রবন্ধসাহিত্যে অক্ষয়কুমার দত্ত একটি শ্রদ্ধেয় নাম। সাহিত্যসাধনা জীবনসাধনায় অনলসকর্মী অক্ষয়কুমার প্রতিটি কর্মে বিস্ময়কর নিষ্ঠার পরিচয় রেখেছিলেন বাংলাদেশের তৎকালীন ধর্মান্দোলনের পুরোধা ছিলেন অক্ষয়কুমার, - তত্ববোধিনী পত্রিকণকে কেন্দ্র করেই দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর অক্ষয়কুমার দত্ত মিলিত হয়েছিলেন সেযুগে বাঙ্গালীর জীবনে বৈচিত্র্য যা কিছু সব তত্বালোচনাঁতেই নিবদ্ধ ছিল,_-ধর্মতব্বব্যাখ্যা তারই বাদ প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছিলো সেদিনের বদদেশ অবশ্য জড়ত্বের হাত থেকে মুক্ত হবার জাতীয় প্রয়াসেও যথেষ্ট জীবনলক্ষণ বর্তমান তখনো আত্মলচেতনতা! নিয়ে গর্ববোধ করার সময় আসেনি-_শুধু সমাজসচেতনতা৷ ধর্মচেতন নিয়ে প্রগতির প্রথম ধাপটি অতিক্রম করছি আমরা। রামমোহন বাঙ্গীলীকে সংস্কারত্রতের দীক্ষা দিয়েছিলেন- দেবেন্দ্রনাথ অক্ষয়- কুমার তীরই উত্তর সাধক।

শিক্ষীবিস্তার, ধর্মসংক্কার-এর সঙ্গে দেশচেতনার যোঁগটি খুব প্রকাশ্য নয় কিন্তু ওতপ্রোত। দেশপ্রেমই বৃহত্তর মানবগোষ্ঠী সম্পর্কে সচেতন করে তোলে মানুষকে সমাজসংস্কার, শিক্ষা-বিস্তার ধর্মান্দোলন পরোক্ষভাবে দেশসাধনারই নামান্তরমাত্র তাই রামমোহন খাঁটি দেশপ্রেমিক, বিগ্ভাসীগর যথার্থ দেশসেবী। স্বাধীনতা আন্দোলনের সুদুর সম্ভাবনাকে ধার। প্রত্যক্ষ করেছিলেন তারাই নানাভাবে দেশ- সেবাত্রত গ্রহণ করেছিলেন। এদের দেশপ্রেম কর্মসাঁধন পরস্পর সংযুক্ত, কচিৎ তা সাহিত্যে প্রতিবিশ্বিত। অক্ষয়কুমার প্রমুখ প্রাবন্ষিকগণের সাহিত্যসাধনার মূলে শুধু দেশপ্রেম প্রচারই মুখ্য নয়,_-এরা গ্ভ সাহিত্যের সুদৃঢ় ভিত্তি স্বাপনের আদর্শ নিয়ে সাহিত্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। এদের লক্ষ্য ছিল বহুমুখী; উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ষে এই বহুমুখিতাঁর সাঁধনা একটি মাত্র আদর্শে রূপান্তরিত হয়েছিলসে আদর্শ স্বাধীনতালাভের একমাত্র সাধনা উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে সে চেতনাটি ধীরে ধীরে আত্মপ্রকাশ লাভ করেছে মাত্র অক্ষয় দত্তের রচনাতেই সে আভাস স্পট

প্রবন্ধ ৭৫

অক্ষয়কুমার দত্ত দেবেন্দ্রনাথের যুগ্ম প্রচেষ্টায় “তত্ববোধিনী পাঠশালা” স্থাপিত হয় ১৮৪০ খ্রীষ্টাব্বের ১৩ই জুন। অক্ষয়কুমার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিযুক্ত হলেন ধর্মসাধনার উদ্দেশ্যেই প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পন1--কিস্তু কর্ণধার হিসেবে অক্ষয়কুমার দাস্িত্ব নিছক ধর্মপ্রচারের দায়িত্ব বলে মনে করেন নি। তত্ববোধিনী পাঠশাল। বাঁশবেড়িয়াতে স্থানান্তরিত হয়েছিল। কিছুদিন পরে, সে উপলক্ষে অক্ষয়কুমার একটি বক্তৃতায় বলেছিলেন,

"ইদানীং কলিকাতা নগরে বঙ্গভাঁষা অনুশীলনের দ্বারা যে নানা প্রকাঁর বিদ্ভার পথ পরিষ্কৃত হইতেছে এবং তত্রস্থ মনুষ্তের। স্বদেশের মল বৃদ্ধির নিমিত্ত যেরূপ উ্দুযোগী হইতেছেন, তাহ দৃষ্টি করিয়া দেশহিতৈষী ব্যক্তি আহলাদে পরিপূর্ণ হয়েন. পরস্ত তৎপরক্ষণেই তিনি পল্লীগ্রামের প্রতি কটাক্ষপাত করিয়া অত্যন্ত ক্ষোভযুক্ত হয়েন |

'**তীহাদ্বিগের ভাষাই দেশের জাতীয় ভাষা হইবেক এবং তাঁহাদিগের ধর্মই এদেশের জাতীয় ধর্ম হইবেক, স্বতরাং ব্যক্ত করিতে হুদয় বিদীর্ণ হয়, যে হিন্দুনাম ঘুচিয়া আমাদিগের পরের নামে বিখ্যাত হইবার সম্ভাবনা দেখিতেছি ৮১২

[ তত্ববোধিনী পত্রিকা, ১লা আশ্বিন, ১৭৬৫ ] এই বক্তৃতাংশটুকু অনুসরণ করলে মনীষী অক্ষয়কুমারের চিন্তাধারার একটা স্বচ্ছ পরিচয় উদদঘাটিত হয়। শিক্ষক দেশপ্রেমিক এখানে একসঙ্গে আত্মপ্রকাশ করেছে অক্ষয়কুমারের চরিত্রে যথার্থ শিক্ষকের কর্তব্য সম্বন্ধে তিনি সচেতন, আদর্শ দেশসেবীর দায়িত্ববেোেধেও তিনি অনুপ্রাণিত তার মন্তব্যের শেষাংশ ফেযুগের উন্মা্গগাঁমী ইংরেজী শিক্ষিত যুবগো্ঠীর উদ্দেশ্যে ইয়ংবেহ্গল নামধেয় এই বঙ্গসন্তানদের আচরণে তীর বিক্ষু মনেঁভাব এখানে স্পষ্ট অভীক মনে প্রাণে স্বদেশীয়ীন। নিয়েই অক্ষয়কুমার শিক্ষাত্রতীর কর্তব্য সাঁহিতাসেবীর ব্রত পালন করেছেন

সে যুগে পাঠ্যোঁপযোগী পুস্তকের অভাব দূর করার জন্যই ১৮০০ খ্রীষ্টান্দের প্রথম থেকেই বাংলা গছ্যচর্চ শুরু হয়--কিস্তু ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের পণ্ডিত গোষ্ঠীর রচনা-সম্ভীর পাঠ্যপুস্তকের অভাব পুরোপুরি দূর করতে পাঁরে নি বলেই বি্ভাসাগর, কৃষ্ষমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, অক্ষয়কুমার .পাঠ্যপুস্তক রচনা! করেছেন পাশ্চাত্য শিক্ষার যথার্থ আলোক এদের অন্তরে প্রবেশ করেছিল, জ্ঞানের মন্দিরে ভাবী যুগের ছাত্রদের অবাধ প্রবেশ ঘটুক-_-এ ছিল তাদের আন্তরিক কামনা এর সকলে ভাবী বঙ্গসন্তানদের ভবিষ্যৎ তৈরীর কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন

০০০

১২. সাহিত্য সাধক চরিতমাল1। ১ম খণ্ড অক্ষয়কুমার দত থেকে অনুলিখিত

উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

১৮৪৫ খুষ্টাবে হেয়ার সাহেবের নাম ্মরণার্থ তৃতীয় সাম্বখসরিক সভায় বত্তৃতান্দান কাঁলে অক্ষয়কুমার বলেছিলেন,

“তিনি আমারদিগকে হীরক দেন নাই, স্বর্ণ দেন নাই, রজতও দান করেন নাই, কিস্ত তাহার অপেক্ষ। সহঅগুণ_ কোটিগুণ মুল্যবান বিদ্ভারত্ব প্রদান করিয়াছেন। তীহাঁর চেষ্টা দ্বার আমরা জ্ঞানের আন্বাদ প্রাপ্ত হইয়াছি, এবং তাহার চরিত্রের দৃষ্টা্ত দ্বারা দয়া সত্য ব্যবহার যে কি মহোপকারি, তাহা পূর্ণরূপে হদয়ঙ্গম করিয়াছি 1% ৯৩

এই মহৎ প্রেরণ গ্রহণ করার মত সুদৃঢ় চারিত্রিক ভিত্তি ছিল তার নমগ্র জীবন দিয়ে তিনি তাই শিক্ষাব্রতীর পুণ্যকর্তব্য নিষ্ঠার সঙ্গে পাঁলন করেছেন স্বদেশসেবা স্বজাতিসেবাঁর এই নির্মল দৃষ্টান্ত আমরা যুগেই পেয়েছি

প্রকাশ্য সভায় সেদিন অক্ষয়কুমার আমাদের চারিত্রিক ক্রটির উল্লেখ করেছিলেন। স্বদেশের মঙ্গলসাঁধনব্রত বিস্থৃত হয়ে আত্মদৈন্যে পীড়িত 'জাঁতির জন্য ঘুঃখপ্রকাশও করেছিলেন তিনি। পরাধীন জাতির স্বদেশপ্রেমিকের চরম লক্ষ্য নিশ্চয়ই স্বাধীনতালাভ, কিন্তু আত্মজাগরণ যেখানে ঘটেনি--স্বাধীন হওয়ার তাৎপর্য নির্ধারণেই তারা অক্ষম যুগের স্বদেশসাধকের সাধনার যূলে ছিল আত্মবিস্থৃত- অধঃপতিত একটি জাতির জীবনবোধ সঞ্চার করা। অক্ষয়কুমারের সমগ্র জীবনেও এই আদর্শটই মুখ্য ছিল। হেয়ার সাহেবের স্মথৃতিসভায় অক্ষয়কৃমার সেই উদ্দেশ্যেই বলেছিলেন-_

“আমরা কতকাল আক্ষেপ করিতেছি, যে স্বদেশের মঙ্গলচে্টা কর! যে মনুষ্যের প্রধান কর্ম তাহা ভারতবর্ষস্থ লৌকদিগের চিত্ত হইতে লুপ্ত হইয়াছে-_অহুৎসাহ, অল্প প্রতিভা, দ্বেষ, কলহ, বিচ্ছেদ আমারদিগের মহাঁশক্র হইয়াছে ।...আমরা বিদ্ভাবিষয়ে, লোকের উৎসাহ বিষয়ে, রাজনিয়ম বিষয়ে কত চর্চা করিয়াছি, এবং নানা প্রকারে স্বদেশের মঙ্গলোন্নতি জন্য কত আন্দোলন কত প্রস্তাব উত্থাপন করিয়াছি কিন্তু সে কেবল আন্দোলনমাব্র ইইয়াছে। দুই বিদ্বান ব্যক্তির পরস্পর সাক্ষাৎ হইলে স্বদেশের মঙ্গল তাহার্দিগের আলাপের প্রথম স্বত্র হইত, কিন্তু পৃথক হইলে চিত্বপটে সে সমুদয়ের চিহ্মমাত্র থাকিত না ।১৪ এই বন্তৃতাংশ থেকে অক্ষয়কুমারের দেশচিস্তার স্বচ্ছ রূপটি প্রতিভাত হয়।

স্পাচ আত পির সিকি স্পস্পী পক

১৩ শ্রীধুক্ত ডেভিড হেয়ার সাহেবের নাম ল্মরণার্থ তৃতীয় সাম্ৎসরিক সভার বক্তৃতা, কলিকাতা ১৮৪৫।

১৪. শ্রীযুক্ত ডেভিড হেয়ার সাহেবের নাম ল্মরণার্থ তৃতীয় সাম্বংসরিক সভার বল্ভতা, কলিকাত। ১৮৪৫

প্রবন্ধ ৭৭

যুগোঁচিত ধারণাশ্রয়ী বলেই পরবর্ভীযুগের উদ্দাম ভাবান্দোলনেরম্পর্শ এতে নেই কিছুমাত্র স্বদেশপ্রেমের প্রথম ক্ষরণ ঘটেছিল ঠিক এভাবেই | /

অক্ষয়কুমারের সাহিত্যসাধনার প্রসঙ্গই আমাদের আলোচ্য বিষয়। তার সাহ্ত্যকীতির অন্তরালে স্বদেশপ্রেমের স্বতোপ্রবাহিত ধাঁরটি বর্তমান ছিল সন্দেহ, নেই-__কিস্ত কদাচিৎ তা প্রকাশিত হয়েছিল শিক্ষক অক্ষয়কুমার পাঠ্যপুস্তক রচনার উদ্দেশ্য নিয়ে “চাঁরুপাঁঠ, রচন] করেছিলেন তিন খণ্ডে “চারুপাঠে সরল ভাষায় উপদেশাত্রক ভঙ্গিমীয় জ্ঞানের বিষয়ই আলোচনা করেছিলেন লেখক কিন্ত সহজাত গুণেই তা নীরস প্রবন্ধ হয় নি, _ক্থপাঠ্য রচনা হতে পেরেছিল অক্ষয়- কুমার বাংলা গন্ভে প্রাঞ্জলতা এনেছিলেন, যুক্তিধমিতা বৈজ্ঞানিক মনৌভাব অক্ষয়কুমারেরু রচনাবৈশিষ্ট্য | রজনীকান্ত গুপ্ত অক্ষয়কুমারের ভাষাবিচাঁর প্রসঙ্গে সঙ্গত উক্ভিই করেছিলেন,

'প্রণয়ীজনের সহিত যে ভাষায় আলাপ কর] যাঁয়, শ্লেহময়ী ধাত্রী বা বিশ্বস্ত পরিজনের সহিত কথোপকথনকাঁলে যে ভাষার ব্যবহার করা যায়, অক্ষয়কুমার সাধারণতঃ সে ভাষার আশ্রয় গ্রহণ করেন নাই ।-..যে নির্জীব নিশ্চেষ্ট জাতির বেদনাবোঁধ নাই, যে জাতি মহীপ্রাণতার অধিকারী হয় নাই, জাতীয় জীবনে সঞ্জীবিত, হইয়া উঠে নাই, উদ্দীপনার মর্ম পরিগ্রহ করিতে পারে নাই,.."অক্ষয়কুমার সেই জাতির ভাষায় প্রচণ্ড তাড়িতবেগ সঞ্চারিত করেন এবং সেই জাতির ভাষাকে স্থসম্বদ্ধ, স্থখব্য শব্দমালায় শোভিত করিয়া তুলেন | মিন্টন একটি নিত্যস্বাধীন মহাঁজাতিকে কোন মহাৰ বিষয়ে প্রবতিত করিবার জন্য উদ্দীপনাময়ী ভাষায় উপদেশ দিয় গিয়াছেন। চিরপরাধীন, চিরনিপীড়িত চিরনিগৃহীত জাতির মধ্যে অক্ষয়কুমারের ভাষা মিপ্টনের ভাষারও গৌরবম্পদ্ধী হইয়াছে ।৮৯৫ [প্রতিভা অক্ষয়কুমার দত্ত ] বাংল! গছ্যসাহিত্যের এই উদ্দীপনাময়ী ভাষার প্রবর্তয়িতা অক্ষয়কুমার | দেশাত্ম- বোধের আবেগই তাঁকে উদ্দীপিত করেছিল, সেই আবেগই সংহত ভাষায় আত্মপ্রকাশ করেছে “চারুপাঠ৮” ছাত্রদের সংশিক্ষা সৎ আদর্শদানের উদ্দেশ্যে রচিত হয়। স্বদেশপ্রাণ লেখক শিক্ষাদানের প্রথম স্তর থেকেই দেশশ্্রীতি বোঝানোর চেষ্ট। করেছেন বিদ্যাঅর্জনের সঙ্গে সঙ্গেই এই শিক্ষা! শিশুচিত্তে অনুপ্রবেশ করুক ইচ্ছা ছিল লেখকের 'বিদ্তাশিক্ষা” প্রবন্ধে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় নিবেদন করেছেন লেখক,

বিছ্যা। অযূল্য ধন। বিদ্ধ শিখিলে হিতাঁহিত বিবেচন। করিয়া! আপনার অন্যের

১৫, রজনীকান্ত গুণ, প্রতিভা, “অক্ষয়কুমার দত্ত” কলিকাতা ১৮৯৬।

উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

দুঃখহাস হ্থবৃদ্ধি করিতে পারা যায়।-..কিরূপে রাজ্যপালন স্বদেশের শ্রীবৃদ্ধি সাধন করিতে হয়, এই সমুদায় বিদ্যান্ুশীলন ব্যতিরেকে স্চারুরূপে জ্ঞাত হওয়া যায় না 1১৬

এখানে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্যটি ব্যক্ত করেছেন নেখক শিক্ষাই স্বাদেশিকতাবোঁধ জাগাতে পারে,_স্বদেশের শ্রীবৃদ্ধি সাধনের জন্যই শিক্ষালাভ। জ্ঞানব্রতী শিক্ষক অক্ষয়কুমার শিক্ষার মর্ধীর্থ অনুধাবন করেছিলেন বলেই দেশসেবার শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করেছেন ভাবী বংশধরদের

স্বদেশের শ্রীবৃদ্ধিসাধন” প্রবন্ধেও তাঁর দেশসেবার আদর্শটি স্পষ্ট হয়েছে। দেশপ্রেমিক লেখকের আন্তরিকতা প্রাঞ্জল গদ্ে রূপলাভ করেছে,_

“প্রতিদদিবস আপন আপন নিত্যকর্ম সমাপন করিয়া যৎকিঞ্চিৎ কাল যাহা অবশিষ্ট থাকে তাহা স্বদেশের শ্রবৃদ্ধি সাধনার্ধে ক্ষেপণ করা কর্তব্য যাহাতে স্বদেশীয় লোকের জ্ঞান, ধর্ম, হখ-স্থচ্ছন্দতা বৃদ্ধি হয়, কুরীতি সকল রহিত হইয়া ্ছরীতি সমুদাঁয় সংগ্থাপিত হয়, এবং রাজনিয়ম সংশোধিত সত্যধর্ম প্রচারিত হয়, তদর্থে সচে্টত হওয়া উচিত। স্বীয় পরিবার প্রতিপালনের স্থাঁয় স্বদেশের শ্রীবৃদ্ধি সম্পাদনার্থে যত্ব, পরিশ্রম বুদ্ধি পরিচালন করা যে মন্ুষ্যের অবশ্যকর্তব্য কর্ম, ইহা অনেকেই বিবেচনা করেন না ।-আপন আপন জীবিকা নির্বাহের উপায় চিন্তা কর! যে প্রকার আবশ্যক, সেইরূপ সময়ে সময়ে একত্র সমাগত হইয়া স্বদেশের দুঃখ বিমোচন সুখ সম্পাদনের পরামর্শ চেষ্টা করাও সর্বতোভাবে দ্রষ্টব্য 1৮১৭

উদ্ধত অংশটিতে দেশপ্রেমিক অক্ষয়কুমারকে খুব স্পষ্টভাঁবেই আবিফার করা যায়। উপদেশাত্মক ভঙ্গিমাটিই এখানে প্রকট হয়েছে সন্দেহ নেই, কিন্তু দেশপ্রেমের যে অনুভূতি লেখকচিত্তে গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে__সর্বসাশাীরণ সেই অনুভূতির অংশ লাভ করুক তাঁর দ্বারা অস্থপ্রাণিত হোক ছিল লেখকের উদ্দেশ্য বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্যের প্রথম পর্বে জাতীয় ছাত্রপাঠ্য গ্রস্থমালাতেও লেখক আপন আদর্শ প্রচার করেছেন অকপটে ভৌগোলিক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধমালা রচনা করে ছাত্রদের কাছে জ্ঞানের ভাগার উন্মুক্ত করাই তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল না, তাই আন্তরিক- ভাবে যে আদর্শ নিজের জীবনে অনুসরণ করেছিলেন _ছাত্রসমাজকেও সেই আদর্শের দীক্ষাই দিয়েছিলেন তিনি পরবর্তাকাঁলে বঙ্কিমচন্দ্র রূপক ব্যঙ্গের মাধ্যমে যে সত্য প্রচারে ব্রতী ইয়েছিলেন__অক্ষয়কুমার অকপট সারল্যের সঙ্গেই তা প্রচার করেছেন। আত্মস্বার্থ বিসর্জন দিয়ে পরের কল্যাণ সাধন যে ব্রত হিসেবে

১৬* অক্ষয়কুমার দত্ত, চারুপাঠ, ১ম ভাগ কলিকাত। ১৮৫৩ | ১৭ অক্ষয়কুমার দত্ত, চারুপাঠ। ২য় ভাগ। কলিকাতা ১৮৫৪।

প্রবন্ধ থ্উি

অবশ্যপাঁলনীয়,_-পাশ্চাত্্য মনীষীর। যে সত্য প্রচারে ব্যগ্রতা প্রদর্শন করেছেন, বঙ্কিমচন্দ্র 'কমলাকান্তের দণ্চরে' এই সত্যটিই চিনিয়ে দিয়েছিলেন। অক্ষয়কুমার বক্তব্য কত অনাড়ম্বর দৃঢ়তার সঙ্গেই না প্রচার করেছিলেন! ম্বীয় পরিবার প্রতিপালনের মতই অবশ্যপালনীয় কর্তব্য স্বদেশের শ্রীবৃদ্ধি সাধন, _অক্ষয়কুমারই এই যূল্যবান বক্তব্যের প্রথম প্রবক্তা

রামমোহন-বিদ্ভাসাগর সচেতন সমাজসংক্কারক। সে যুগের পটভৃমিকায় প্রখর ব্যক্তিত্ব অন্ুুভবশক্তি এবং সমগ্র উদ্ভম নিয়ে সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব করেছিলেন উভয়েই স্বদেশবোধের প্রেরণাই ষে সংস্কার ধর্মে উৎসাহ দিয়েছিল তাঁতে সন্দেহ নেই তবু এদের রচনায় স্বদেশপ্রসঙ্গ সমাঁজসংস্কীরবিষয়কে অতিক্রম করে নি কোথাও *বস্ততঃ এরা স্বসমাঁজ, আরও সংকুচিত ভাবে বলতে গেলে স্বসংসারের সন্গেই দ্বন্বে অবতীর্ণ হয়েছিলেন অতিপরিচিত আত্মীয় বন্ধুরাও যে সহজলত্য অনুধাবনে অক্ষম একথা বিগ্যাসাগর রাঁমমোহনের মত কেউ এমন বেদনার সঙ্গে অন্থভব করেন নি। সুতরাং সমাজদেহের দুরন্ত ব্যাধি দূর করার মত কঠিন দৃঢ়তা প্রদর্শন করে এরা স্থগভীর দেশপ্রীতিরই পরিচয় দিয়েছেন এদের প্রস্তত জমিতেই অক্ষয়কুমার স্বদেশের প্রতি কর্তব্য নির্দেশ করে দেশাত্মক প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন দেশ-পরিবার-ব্যক্তির মধ্যে একট! নিগুঢ় সম্পর্ক রয়েছে তার কোনটিই যে উপেক্ষনীয় নয়-_-এ সত্য প্রচারের নির্ভীকতা তাঁর চরিত্রে ছিল। প্রথম যুগের প্রবন্ধে দেশপ্রেমের অন্থভূতি যত ব্যক্ত অনাবৃত ভাবে প্রকাশিত হতে দেখি-_-পরবর্তা কালে সেই বক্তব্যই তির্যক ভঙ্গিতে প্রকাশিত হয়েছে। স্বদেশচেতনা যখন সম্পূর্ণরূপেই ব্যক্তি- গত উপলব্িতেই সীমাবদ্ধ,_বৃহৎ জনসাধারণ যখন সম্মিলিতভাবে দেশসেবাঁর ত্রতে এগিয়ে আসে নি,_তখন একান্তভাবে আপন আদর্শের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই অক্ষয়কুমার এই জাতীয়তাবাদ প্রবন্ধে প্রচার করেছেন “চারুপাঠ” ২য় খণ্ডটিতে জনগণকে দেশসাধনায় উদ্ব,দ্ধ করেছেন লেখক। শিক্ষণীয় বিষয় কি হওয়! উচিত সে প্রসঙ্গ বর্ণনা করতে গিয়ে দেশসাঁধনাঁও শিক্ষণীয় বিষয় বলে প্রচার করেছেন অদ্ধেয় ব্যক্তিদের তালিকায় পিতামাতার সঙ্গে স্বদেশহিতৈষীরও উল্লেখ রয়েছে। স্বদেশসাধনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেছেন,_

“যাহাতে স্বদেশে জ্ঞান ধর্ম প্রচারিত হয়, স্বদেশীয় কুরীতি সকল পরিবতিত সংশোধিত হয় এবং স্বদেশস্থ লোকের অবস্থা! উত্তরোত্তর উন্নত হয় তাহার উপায় উদ্যোগ করা অবশ্যকর্তব্য কর্ম। স্বদেশ আমাদের সকলের গৃহ স্বরূপ স্বদেশের শুভানুষ্ঠানে উপেক্ষা! কর। অধম লোকের স্বভাব

[ নীতিচতুষ্টয় চারুপাঠ, ২য় খও ]

উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

অক্ষয়কুমারের দেশগ্রীতির মধ্যে এমন একটি অনাড়ঘর সৌন্দর্য বর্তমান দেশপ্রেম তীর চরিত্রে ওতপ্রোত হয়ে আছে__-রচনাতেও তার স্বতক্ফুর্ত প্রকাশই লক্ষ্য করা যায়। নান। ধরণের শিক্ষণীয় বিষয়বস্ত আলোচনা করার সঙ্কে সঙ্গে চরিত্রের মূল উপাদান কি হওয়! দরকার__সে বিষয়টিও উপদেশচ্ছলে বর্ণনা করেছেন। স্বদেশের প্রতি মমত্ববুদ্ধিহীনের বিদ্ভাশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা খু'জে পান নি লেখক।

এই থণ্ডের একটি উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ “জন্মভূমি” লেখকের স্বদেশানুরাগ যেন উচ্ছুসিত হয়ে উঠেছে এখানে ঈশ্বরগুপ্ত থেকেই সমাজসচেতনতা রাজনীতি সচেতনতা প্রতিটি লেখকচরিত্রের বৈশিষ্ট্যরূপে ধরা পড়েছে অক্ষয়কুমারও সমাজ সচেতন লেখক জন্মভূমির ছুর্দশী অনুভব করে বেদনাবোঁধ করেছেন তিনি তখনও যে স্বদেশসচেতন লেখকবৃন্দ পরাধীনতার জালা হৃদয়ঙ্গম করেছেন- _অক্ষয়- কুন্নারের রচনা সে সাক্ষ্যই দেবে। “জন্মভূমি” প্রবন্ধটিতে অক্ষয়কুমার অকপটে আপন স্বদেশানুরাগ ব্যক্ত করেছেন,

"জন্মস্থান স্নেহের আম্পদ। যে স্বদেশান্ুরাগী চিরপ্রবাঁসী ব্যক্তি ভূম্বর্গস্বরূপ স্বদেশের কোন নদী বা সরোবর, প্রাচীন বৃক্ষ ব! প্রসিদ্ধ উৎসব ভূমি, প্রিয়বন্ধুর আবাস বা সবাপেক্ষা প্রিয়তর স্বীয় বাঁটী, প্রণয় -পবিভ্র মিত্রমগ্ডলী বা নিজ নিকেতনস্থ যৃতিমতী গ্রীতিত্বূপ মনোহর মুখমণ্ডল সকল সহসা ম্মরণ করিয়া, তাহাদিগকে নেত্রগোচর করিবার নিমিত্, একান্ত উৎস্ক হইয়াছেন, তিনিই জানেন, স্বদেশ কিরূপ প্রীতিভাজন স্বদেশীয় বস্তর কেমন প্রেমময় ভাব | "যে সমস্ত স্বদেশা- নুরাগী বীরপুরুষ ছুরত্ত শক্রর হস্ত হইতে জননী স্বরূপা জন্মভূমির পরিব্রাণ সাধনের নিমিত্ত, অন্লানবদনে, অকুতোভয়ে উৎসাহান্বিত হৃদয়ে আপন জীবন সমর্পণ করিয়। গিয়াছেন, তাহারাই জানিতেন প্রাণীপেক্ষা প্রিয়তর জন্মভূরমর সমীপে জীবন কি তুচ্ছ পদার্থ | চারুপাঁঠ--তয় খণ্ড ]

পরাধীনতার বেদনা লেখকচিত্তে যে আলোড়ন সৃঙি করেছিল তা উদ্ধাতিটির শেষাংশ থেকেই অনুমেয় ! স্বদেশোদ্ধারব্রত পালনের জন্য জীবনকেও তুচ্ছ মনে করা উচিত ধাঁরণাটিই পরবর্তীকালের লেখক কাব্য-নাটক-উপন্তাসে বিবৃত করেছেন প্রবন্ধ সাহিত্যের আদিযুগের সফল শ্রষ্টা অক্ষয়কুমীরের উপলব্িতেও এই যুল্যবান সত্যটি ধরা পড়েছিল। জন্মভূমির ছুঃখ মোচনের পবিত্র ব্রতে দীক্ষিত একটি নির্ভীক যুব সম্প্রদায়েরুই স্বপ্ন দেখেছিলেন কবি। স্বদেশপ্রেমিকের কর্তব্য পাঁলন করার জন্তই জন্মভূমির মহিম। ব্যক্ত করার প্রয়াস পেয়েছিলেন লেখক

অক্ষয়কুমারের অন্ান্ত প্রবন্ধগ্রন্থে শিক্ষণীয় বস্তর আলোচনাই মুখ্য জীবন- শিল্পী অক্ষয়কুমারের পরিণত রচনা-_বাহবস্তর সহিত মানব প্রক্কতির সম্বন্ধ বিচার”__

প্রবন্ধ ৮৯

জর্জ কুষ্বের 00306080015 0৫ 1৪1 গ্রন্থ অবলম্বনে রচিত হয়েছে গ্রন্থটির বিজ্ঞাপনে অক্ষয়কুমার তার বক্তব্য স্পষ্টভাষায় জানিয়েছেন গভীর জীবনবোধ প্রজ্ঞার সম্মিলনে লেখকচিত্ত যখন উত্ভাসিত--সেই সময়েই গ্রন্থটি রচিত হয়েছে। যুক্তি বিশ্বাস অকপটে ব্যক্ত করে অক্ষয়কুমার নির্ভীকতার পরিচয় দিয়েছেন ্রন্থটিতে ধর্মপথ অবলম্বন করার উপদেশ দিয়েছেন লেখক ;--গভীর জীবন- জিজ্ঞাসার প্রমাণ হিসেবে অভিজ্ঞ প্রাবন্ধিক অক্ষয়কুমার ধ্বপথটি চিনিয়ে দেবার স্বপক্ষে নানা যুক্তিও দেখিয়েছেন

লেখক প্রবন্ধে সাজ সংস্কীরকদের মূল্যায়ন করেছেন এভাবে,

“মধ্যে মধ্যে কোন কোন মহাত্মা স্বদেশহিতৈষী, স্তাঁয়পরতা অসামান্ত বুদ্ধি শক্তি প্রকাশপূর্বক স্বদেশ উজ্জ্বল করিয়। গিয়াছেন, কারণ তাহার ধর্মপরায়ণ ছিলেন |” ধর্ম্চতনাই সব সৎকর্মানুষ্ঠানের প্রেরণা জোগায় বিশ্বাস লেখকচিত্তে দুমূল। এই বিশ্বাস নিয়েই তিনি নির্ভয়ে ভারতবর্ষের সামাজিক রাজনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করেছেন,

“ইংরেজেরা যে সকল নিকৃষ্ট প্রবৃত্তির বশীভূত হইয়া আমেরিকাবাসিদিগের উপর অত্যাচার করিয়াছিলেন, সেই সকল প্ররবৃত্তিরই অন্ুবতি হইয়া ভারতবর্ষ অধিকার শাঁসন করিয়া আসিতেছেন বিরলে বসিয়া বিষয় আলোচনা! করিলে বিস্ময় সাগরে মগ্ন হইতে হয় ।*১৮

[ বিজ্ঞাপন- বাহ্বস্তর সহিত মানবপ্রকৃতির সম্বন্ধবিচার ]

পরাধীন ভারতের নাগরিক হয়েও অক্ষয়কুমার শাঁসকগোগীর সমালোচনা

করেছেন নির্ভীকভাবে ধর্মশুন্ততাই অত্যাচারীর সম্বল, ধর্মপথ বিচ্যুতিই সাময়িক

সযদ্ধির কারণ, কিন্ত চিরস্থায়ী সম্পদ শুধু ধর্মের দ্বারাই লাভ করা সম্ভব এই যুক্তির সাহাষ্যেই লেখক মুক্ত কঠে ঘোষণা করেছেন-_

“ইংরেজেরা অধর্ধ সহকারে ভারতবর্ষ অধিকার করিয়াছেন এবং অধর্ম সহকারে শীসন করিয়া আসিতেছেন। কিন্তু পরমেশ্বরের নিয়ম লংঘন করিলে অবশ্ঠযই তাহার প্রতিফল প্রাপ্ত হইতে হয় 1” [এ]

আজকের দৃষ্টিতে অক্ষয়কুমীরের এই উক্তিকে ভবিষ্যৎ বাণীর মতই মনে হয়। ইংরেজের অধীনে বসবাদ করেও স্বাধীন মন্টি লেখক হারিয়ে ফেলেন নি। সত্য বলার নির্ভীকতা অক্ষয়কুমারের রচনার সর্বাপেক্ষা বড়ো সম্পদ ইংরেজের এদেশ

১৮ অক্ষয়কুমার দত্ত, বাহবপ্তর সহিত মানব প্রকৃতির সন্বদ্ধ বিচার। ২য় তাগ। কলিকাত॥ | ১৮৫২।

৬২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

অধিকার সম্পর্কে লেখকের চিন্তাধারার স্পষ্টতাও এখানে লক্ষণীয় আর উপলব্ধির সত্যতা মুক্তকণে প্রকাশ করার কোনো সংকোচও নেই তাঁর রচনায়। কিন্ত অত্যাচারী হংরেজের অপকীতির নিন্দা করেও আত্মপক্ষ নিবিচাঁরে সমর্থন করেন নি তিনি ভাবতবাসীর স্বাধীনতা বিলুপ্তির কারণ নির্ণয়েও তিনি অপরিসীম দূরদশিতা নির্ভীকতা প্রদর্শন করেছেন ভারতবাঁসীর অধঃপতনের মূলেও তিনি ধর্মহীনতার হেতুটিই আবিষ্কার করেছেন, --

“কিস্ত ইহাও বিবেচনা করিতে হইবে যে পরাধীনলোকের অধর্ম না থাকিলে স্বাধীনত্ব নষ্ট হয় না। আপনার দিগের শারীরিক দুর্বলতা! এবং বুদ্ধিবৃত্তি ধর্মপ্রবৃন্তির হীনতাই তাহারদিগের এরপ দুর্ঘটনার মূল কারণ। বোধ হয়, একজাঁতির উপরে অন্তজাতির অত্যণচার করিবার ক্ষমতা এই অভিপ্রাঁয়ে প্রদত্ত হইয়। থাঁকিবেক, যে অত্যাচারিত জাতি নিতান্ত অসহিষ্ণু হইয়া আপনারদিগের পরিত্রাঁদীর্থ অধিকতর বলবীর্য প্রকাঁশে চেষ্টা করিবেক ।” [এ]

এঈ ভাবেই লেখক ভারতবাঁসীর চরিত্রবিচারে নিরপেক্ষ সত্যটিই প্রকাশ করেছেন। স্বদ্দেশচিন্তার মধ্যে সংকীর্ণ জাতীয়চেতনার চেয়ে সত্যধারণাকে প্রতিষ্ঠা করাই অক্ষয়কুমারের দেশপ্রেমের বৈশিষ্ট্য ইংরাজ অধিকারের মধ্যে যেমন তিনি অন্যায় অত্যাচারের প্রতিচ্ছবি দেখেছেন ইংরেজশাঁসনের ফলাফল বিচারে কিন্তু সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সত্যই তুলে ধরছেন

“কেহ কেহ বলি.ত পারেন যে, ইতিপূর্বেই হহা৷ সম্পন্ন হইয়াছে, ভারতবর্ষে ইংরেজদিগের অধিকারে যে প্রকার স্থখসৌভাগ্যের আলয় হইয়াছে, স্বকীয় রাঁজাদিগের অধিকাঁবকালে সেরূপ কখনই হয় নাই। কিন্তু কেবল ইংরেজদিগের কথা প্রমাণে বিষয় অবধারিত করিতে পারা যায় না, পরাধীন লোকদিগের বাক্য বারা ইহা কখনও সপ্রমাণ হইতে শুনা যায় নাই বিশেষতঃ, ইহা প্রসিদ্ধই আছে, যে আমর! হিন্দুদিগকে পরাধীন জাতি বিবেচনা করিয়া শাসন করি, এবং তদনুসাঁরে তাহারদিগকে সঘুদায় উচ্চ উচ্চ সন্ত্রান্ত পদলাভে বঞ্চিত রাঁখি | [এ]

অক্ষয়কুমারের নিরপেক্ষ বিচারনীতি সত্যান্নুসন্ধানেই ব্যস্ত--যুক্তি নীতির আলোকেই সত্যের স্বরূপ ব্যাখ্যার চেষ্টা এখানে প্রকট ইংরাজ অধিকার এদেশের পক্ষে আশীর্বাদ কি অভিশাপ--এ নিয়ে বাদান্বাদ প্রবল হয়ে উঠেছিল যে যুগে অক্ষয়কুমার তার চিন্তিত মতামত ব্যক্ত করেছিলেন তখন | দেশাহুরাগী সত্যসন্ধী লেখক অক্ষয়কুমার কর্মে, জীবনে সাহিত্যে একই আদর্শ প্রচার করে গেছেন

“ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদীয়' রচনার ৫পুরণাঁও ইংরাজী গ্রন্থ '/11507-এর 55855 ৪0012005755 07 006 [২০115107) 05 [71095 অক্ষয়কুমার

প্রখক্ধ ৮৩

তখন মানসিক স্থিরতা হারিয়েছিলেন সম্বন্ধেও রজনীকান্ত গুপ্ত “প্রতিষ্টা গ্রন্থে বলেছেন,

এই অস্থিরতার মধ্যে তাহার হৃদয়ে অনেক ভাবের ওদয় হইয়াছে বিশেষতঃ গরীয়সী জন্মভূমির শোচনীয় অধঃপতনের কথা যখন তীহাঁর মনে হইয়াছে, তখন তিনি তীব্র যাতনায় অস্থির হইয়া পড়িয়াছেন [ অক্ষয়কুমার দত্ত--প্রতিভা ]

প্রথম যুগের বন্ধ অষ্টাদের আদর্শ জীবনচরিত--ধর্মবোধ--কর্মনিষ্ঠ। প্রখর আত্ম- স্বাতন্ত্যচেতন! --শ্বদেশপগ্রীতি তাদের রচনায় প্রতিফলিত হয়েছে। এ'দের সাহিত্য হষ্টির যূলে ছিল সমাজকল্যাণপ্রচেষ্টা বঙ্কিমচন্দ্র যে আদর্শের কথা ঘোষণা করেছেন, এুগের প্রাবন্ধিকদের রচনা তা স্বতপ্রকাশিত।

বাংল! গঞ্ত সাহিত্যের দ্বিতীয় পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য প্রাবন্ধিকদের অগ্রগণ্য ছিলেন রাজনারায়ণ ্বন্ | প্রাবন্ধিক রাজনারায়ণ শুধু নন,--স্বদেশগ্রেমী প্রান্ধিক রাজনারায়ণহ আমাদের আলোচনায় স্থান পাবেন। হিন্দুকলেজের প্রখ্যাতনামা ছাত্র রাঙনারায়ণের বিচিত্র কর্মজীবনের স্তরভাগ করলে নানা তথ্য উদঘাটন কর! যাবে মধুস্থদন-ভৃদেব-মহধিদেবেপ্রনীথের বন্ধু হিসেবে-রাঁজনারায়ণের যে পরিচয় পেয়েছি, পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথের 'জীবনস্বতির' বর্ণনার সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে মোটামুটি একটা সঙ্গতি আবিফার করা অসম্ভব নয়। হিন্দু কলেজের স্বদেশপ্রেমিক শিক্ষক ভিরোজিওর স্থযোগ্য ছাত্র রাজনারাঁয়ণের জীবনে-কর্মে সাহ্ত্যরচনায় স্বদেশপ্রেমই প্রধান স্থান অধিকার করেছিল। হইয়ংবেক্গলের সদন হিসেবে তিনি বহু বিচিত্র চরিত্রেপ বৈপরীত্যের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন মধুহদনের প্রতিভাদীপ্ত ব্যক্তিত্ব, ভূদেবের প্রশান্ত গাভভীর্যও দেবেন্্রনাথের আধ্যাত্ি- কতাকে হৃদয়গম করে তিনি আত্মস্থ হতে পেরেছিলেন বরাজনারায়ণের অধিকাংশ রচনার শ্ূলাহুসন্ধান করলে দেখা যাবে, আত্মস্বতিযূলক বিবরণ লিপিবদ্ধ করে রাঞ্রনারাঁয়ণ সেই সংঘাতময় যুগটির প্রামাণ্য দলিল দাখিল করেছেন। যে গ্রন্থরচনা করে তিনি খ্যাতি সম্মানের অধিকারী হয়েছিলেন সেহ গ্রস্থসমষ্টিতে রাজনারায়ণ আপন অভিজ্ঞতারই বর্ণনা দিয়েছিলেন

রাজনারায়ণই প্রথম হিন্দু কলেজের শিক্ষক ডিরোজিওর স্বদেশপ্রেম প্রসঙ্গটি বিস্তৃত ভাবে আলোচনা করেন ডিরোজিওর স্বদেশপ্রেমের কবিতাটির মূল তর্জম! প্রকাশ করে তিনিই শিক্ষিত সমাজের কাছে আবেদন করেছিলেন স্বদেশভক্ত হওয়ার দেশপ্রেমিক ডিরোঁজিওর প্রভাবেই রাঁজনারায়ণও দেশপ্রেমের দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন স্বদেশের ভাবে অনুপ্রাণিত হয়েই তিনি সমগ্র জাতিকে যথার্থ স্বাদেশিকতার মর্যার্থ ব্যাখ্যা করেছিলেন। নিজের জীবনের উপল সত্য প্রচারে

৮৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

তিনি উৎসাহী ছিলেন রাজনারায়ণের স্বাদেশিকতার চেতনার মধ্যে একটি অনাড়স্বর পরিবেশ ছিল তাই নিজের বিশ্বীস সত্যকেই দৃঢ়তার সঙ্গে প্রচার করেছেন ১৮৮১ খ্রীষ্টাব্দে যুবকমনে স্বদেশপ্রেম স্ায়িভাবে উন্মেষিত করার জন্য তিনি ধর্ম পুরাতত বিদ্ভালয় স্থাপনের প্রস্তাব করে তত্ববোধিনী পত্রিকায় লিখেছিলেন,_

ঈশ্বরের প্রিয় কার্ষের মধ্যে স্বদেশের উপকার সাধন সর্বাপেক্ষা প্রধান ।--ভারতবর্ষ আমাদিগের জন্মভূমি, ভারতবর্ষের উপকার সাধনে আমরা গ্রাণপণে যত্ব করিব ।-"" যাহাতে ভারতবর্ষীয় আর্যকুলের আদি পুরুষ বৈবস্বত মনু হইতে রাজপুতানার বীরকুল চূড়ামণি প্রতাপসিংহের সময় পর্যন্ত ভারতের মহিমার প্রধান কথা অবলম্বন করিয়া হিন্দুজাতি উন্নতির মঞ্চে ক্রমে ক্রমে আরোহণ করিতে সমর্থ হয়, আমরা প্রাণপণে এরূপ চেষ্টা করিব |৯৯

উদ্ধত উক্তির আলোকে রাজনারাঁয়ণের স্বদেশপ্রেমের শ্বচ্ছ রূপটি আমাদের চোখের সামনে উদ্ভাসিত হয়। ঈশ্বর অনুসন্ধানের বাঁসনা ছিল না তার- কিন্ত ঈশ্বরের প্রিয় কার্ধসাধনে জীবন উৎসর্গ করার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন তিনি জন্মভূমির উপকার সাধনের জন্যই সাহিত্যসেবার ব্রত গ্রহণ করেছিলেন রাজনারায়ণ।

১৮৭৪ খ্রীষ্টাব্দে লেখা : হলেও “সেকাল আর একাল" গ্রন্থটিতে রাজনারায়ণ তাঁর ছীত্রজীবনের আত্মস্থতিই অবলম্বন করেছিলেন কিন্তু গ্রন্থরচনার একটি হেতু নির্ণয় করেছিলেন রাঁজনারায়ণ বহুদিন পর তত্ববোধিনী সভার সহবর্মী অক্ষয়- কুমার দত্তের সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার পর অক্ষয়কুমারের পরামর্শেই “সেকাল আর একালের" জন্ম হয়েছে বিজ্ঞাপনে রাজনারায়ণ একটি কারণ নির্ণয় করেছেন,-_

“ইংরাজী শিক্ষার ইষ্টবিষয়ে অনেক প্রবন্ধ লেখ হইয়াছে, তাহা হইতে যে সকল অনিষ্ট উৎপত্তি হইতেছে তদ্িষয়ে কেহ প্রবন্ধ লেখেন নাই, আমি সে বিষয়ে একটি প্রবন্ধ লিখি, পূর্বে আমার এইরূপ মানস ছিল ।৮ [ সেকাল আর একাল ]

এই উদ্দেশ্যটি যে স্বদেশহিতৈষী রাজনারায়ণের নিবিড় দেশচিত্তারই ফলাফল মাত্র সেকথা সহজেই বোঝা যায়। ইয়ংবেহগল সম্প্রদায়ের ইংরাজী শিক্ষাদীক্ষাপ্রীতি তাদের জীবনের আচরণেও প্রতিফলিত হয়েছিল। রাজনারায়ণ যখন প্রৌঢত্বে উপনীত-__তখন -ইয়ংবেঙ্গল সম্প্রদায়কে একটা নিরপেক্ষ দৃষ্টিতঙ্ষি দিয়ে বিচারের স্থযোগ পেয়েছিলেন শিক্ষাজীবনে তিনি নিজেই ইয়ংবেঙ্গলের কর্ণধার ছিলেন-_ যদিও সেকাল আর একালে' তার পরিশুদ্ধ অনুভব এবং মহৎ দেশভাবনার স্পষ্ট

১৯, সাহিত্য সাধক চরিতমাল1। ৪র্থ থণ্ড। রাজনারারণ বন্থ থেকে উদ্ধাত।

প্রবন্ধ ৮৫

স্বাক্ষর রয়েছে ইংরাজী শিক্ষার ফলে কিছু অনিষ্ট যে স্ঙ্টি হয়েছিল-_রাঁজনারায়ণ “সেকাল আর একালে' সেকথাই আঁলোচন। করেছেন

ইংরাজী শিক্ষার ফলে বাংলাসাহিত্য, বাংলাভাষা, বাঙ্গালীর পোষাকগত পরিবর্তনের যে রূপটি প্রত্যক্ষ করেছিলেন তিনি “সেকাল আর একালে” তার প্রকাশ্য সমালোচনা করেছিলেন স্বদেশপ্রেমী রাজনারায়ণ স্বকীয়ত্বের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্তই চেষ্টা করেছেন। ইংরাজীশিক্ষার প্রভাবে আমাদের কুসংক্কার বিনষ্ট হোক তার আন্তরিক কামনা হলেও সে যুগের পটভূমিকায় এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে রাজনারায়ণ পূর্ণ মাত্রায় অবহিত ছিলেন-_কিন্তু সর্বগ্রাসী কিংবা আত্মনাশী অন্ুকরণের মোহ থেকে বাঙ্গালীকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন বলেই উচ্চকণ্ঠে সমালোচন৷ করেছেন। রাজনারায়ণের স্বদেশপ্রেমের ভিত্তি সম্পূর্ণভাবে স্বসমাঞ্জপ্রীতির উপরেই প্রতিঠিত ছ্িল-_কিন্তু তাকে অতিমাত্রায় রক্ষণশীল বলে মনে করার কোন কারণ নেই। রাজনারায়ণ ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের তুলনামূলক আলোচনা! থেকে উভয়ের আদর্শগত পার্থক্যটি স্পষ্ট হবে

ইংরাজী শিক্ষার প্রারস্তিক অবস্থায় ভূদেবের রক্ষণশীলতাই তাঁকে অন্থান্তি সহাধ্যায়ীদের থেকে পৃথক করে রেখেছিল। রাজনারায়ণ নিজেকে অন্থান্ সহাধ্যায়ীদের সঙ্গে এক বলে ধরে নিয়েছিলেন নতুন তরঙ্গে তেসে গিয়েও অকৃল সমুদ্রে দিশাহারা হয়ে পড়েন নি, এখানেই ছিল রাজনারাঁয়ণের বিশিষ্টতা | দেবেন্তর- নাথের ধর্মীচুরাগ, অক্ষয়কুমারের শিক্ষাত্রত, ভৃদেবের রক্ষণশীলতা৷ রাজনারায়ণে পাওয়া যাবে না-_অথচ দৃষ্টিভঙ্গীর অসীম উঁদার্যে তিনিও ছিলেন আদর্শ পুরুষের প্রতীক। দেশপ্রেমের আলোক তাঁর চিত্তের গভীরে প্রবেশ করেছিল, দেশই ছিল তার আরাধ্য বন্ত। সাহিত্যে-কর্মে-জীবনে দেশচিন্তাই স্থান পেয়েছে সবার ওপরে রাজনারায়ণ সম্পর্কে সাহিত্য সাধক চরিত-মালাকাঁর বলেছেন,

“পাশ্চাত্ত্য শিক্ষায় বিভ্রান্ত বাঙ্গালী সমাজকে রাঁজনারায়ণ বরাবর আত্মস্থ হইতে উপদেশ দিয়াছেন এবং আজীবন জাঁতির সত্যকার উন্নতির পথ নিরূপণ করিতে চেষ্টা করিয়াছেন। মাতৃভাষার অনুশীলনে রাঁজনারায়ণের প্রধত্ব সর্বজনবিদিত | বাঙ্গালী তথা ভারতবাসীর জাতীয়তা একটি স্বতন্ত্র ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত জাতীয়তা সৌধ গড়িতে হইলে স্বদেশীয় শিক্ষা, সংস্কৃতি, এঁতিহ্‌, ভাষা, সাহিত্য, খা, পৌঁষাকপরিচ্ছদ, শিল্পসম্পদ প্রভৃতির মূল ঠিক রাখিয়া প্রত্যেকটিরই উৎ্কট সাধনা যে আবশ্যক, তাহা তিনি প্রতিনিয়ত স্বদেশবাসীর কর্ণকৃহরে ধ্বনিত করিয়াছেন ।”

[ সাহিত্য সাধক চরিতমালা, উপক্রমণিকা--যোৌগেশচন্দ্র বাঁগল ]

৮৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

রাজনারায়ণের দেশচিস্তীর এই বৈশিষ্ট্য যে-কোন সমালোচকই লক্ষ্য করেছেন স্বদেশপ্রেমের বিশুদ্ধ প্রেরণাই তাঁর সজনী প্রতিভার যূলে বিরাজমান | রাজনারায়ণই স্বদেশপরায়ণতা ব্যাখ্যা করে স্বদেশীয়দের মনে জাতীয় চেতনার সঞ্চার করেছিলেন জাতীয় গৌরবেচ্ছা সঞ্চারিনী সভার উদ্ভাবক রাজনারায়ণই যে চৈত্রমেল! বাঁ হিন্দুমেলার প্রেরণা দান করেছিলেন, রাঁজনারায়ণের লেখা “আত্মচরিতে' সে প্রসঙ্গ বণিত হয়েছে এই হিন্দুমেলাকে কেন্দ্র করেই জাতীয়ভাব সমগ্র জাতির চেতনায় প্রতিবিদ্বিত হয়েছে! সেদিক থেকে বিচার করলে রাজনারায়ণকে স্বাদেশিকতা জাতীয়ভাবের প্রথম প্রবস্কা বলা যেতে পারে রাজনারায়ণ শ্বদেশপ্রেমকে বাস্তবতার ভূমিতে নামিয়ে এনেছিলেন। প্রাতাহিক জীবনের প্রতিটি কর্মে-চিন্তায় ্বদেশপ্রেমের আবেগ সঞ্চারিত না হলে নিছিক বক্তৃতায় সাহিত্যে স্বদেশপ্রেমের উচ্ভ্বাস শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হতে বাঁধা রাজ্জনারায়ণ তাই দেশসেবাঁঃক আচরণের সীমানায় প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন রাজনারায়ণের প্রবন্ধ আলোচনাঁকালে াঁর চিন্তার ক্থত্রটি এভাবেই বিশ্লেষিত হতে পারে

রাজনারায়ণ বাঙ্গলাভাষাঁর বিশুদ্ধতা রক্ষার উদ্দেশ্যে বহুবার আবেদন করেছেন মধুক্দনের আবাল্য বন্ধু রাজনারায়ণ ইংরাঁজী শিক্ষার কৃফল বর্ণনা করেছিলেন আপনার অভিজ্ঞতা থেকেই ভাঁষাপ্রীতি যে স্বদেশশ্রীতিবই নামাত্তর--মধুস্ছদনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাজনারায়ণের চেয়ে সত্য এমন তীব্রভাবে কেউ হৃদয়ঙ্গম করেন নি। এই ভাষাপ্রীতির অভাবই মধুক্দনকে পথভ্রষ্ট করেছিল-_রাঁজনারায়ণ একথ। বিশ্বীস করতেন ভাষার বিশুদ্ধতা রক্ষার দাবী প্রথম রাজনারায়ণই উখ্াপন করেছিলেন জাতীয়তাবোঁধের উন্মেষ লগ্গে এজাতীয় মনোভাবের মধ্যে উদারতার অভাব লক্ষ্য করার চেয়ে জাতীয় স্বার্থরক্ষার মহত্ই আবিফাঁর কর! দরকার পিক্ষাঁদীক্ষার প্রভাবে বিদেশীয়ানার প্রাবল্যে এদেশে যে ধরণের বিরুত মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছিল “একেই কি বলে সভ্যতায়” মধুস্দন তা চিত্রিত করেছেন এই মনোভাবের অবসান না ঘটলে সত্যিকারের জাতীয়চেতনা জন্ম নেবে কি করে? রাঁজনারায়ণের দুরদশিতা৷ ছিল বলে জাতির অধঃপতন রোধ করার প্রাথমিক উপায় নির্দেশ করেছিলেন তিনি। রাজনারায়ণের যুক্তিও ছিল খুব সহজ সাঁধারণবোধ্য সেকাল আর একালে' তিনি বলেছিলেন,

বাঙ্গালা ভাষায় ইংরাজী শব্দ মিশাইয়া কথা কহার আমি সম্পূর্ণবপে বিরোধী

[পৃঃ ৪১]

তাঁর যুক্তি ছিল,

শুদ্ধ গ্রস্থলেখা কখোপকথনে হীন অনুকরণ দৃষ্ট হয়, এমন নহে, সকল

প্রবন্ধ

বিষয়েই হীন অন্থকরণ দৃষ্ট হয়। একটি সামান্য পত্র লিখিতে হইলে তাহ ইংরাজীতে লেখা হয় কোন ইংরাজ, ফ্রেঞ্চ অথবা! জার্মানভাষায় ত্বদেশীয় লোককে পত্র লিখে ?--" |

.-“যাহাতে জাতীয় গৌরবেচ্ছা সঞ্চারিত হয় তাহা কখন অকিঞ্চিতংকর হইতে পারে না। এই সকল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে জাতীয় গৌরবেচ্ছা সঞ্চারিত হইতে হইতে মহৎ বিষয়ে জাতীয় গৌরবেচ্ছা সঞ্চারিত হইবে 1 [সেকাল আর একাল ৫৪-৫৫ পৃঃ ]

“বাংল! ভাষা সাহিত্য বিষয়ক পত্রিকা'তেও রাজনারায়ণ কথোপকথনের ভাষার বিশুদ্ধতাঁর প্রসঙ্গ আলোচন] করেছেন। স্বাধীনতাপ্রাপ্তির আকাজ্ষা যে-কোন স্বদেশপ্রাণ মানুষেরই একান্ত কাম্য কিন্তু জাতীয়তাবোধ সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণার অভাব থাকলে রাজনৈতিক স্বাধীনতা আসতে পারে না। রাজনারায়ণ প্রমুখ স্বদেশসেবীরা জাতীয়তাবেঞ্ধ জাগানোর চেষ্টা করেছেন বলেই তাঁদের চিন্তাধারায় কিছু উদারতার অভাব চোখে পড়ে ভাষা সাহিত্য সংগ্রহ করেই সমৃদ্ধ হতে পারে কিন্ত দৈনন্দিন কথাবার্তায় সম্পূর্ণ দেশীয়ভাষা প্রয়োগের রীতিকে বর্জন করে স্থলভ খ্যাতি অর্জনের ছুরাশায় শিক্ষিত গোষ্ঠীর মনোবিকলনই সেষুগে প্রকাশিত হয়েছিল, রাজনারায়ণ তারই প্রতিবাদ করেছেন। প্রকৃত দেশহিতৈষীর আন্তরিকতা নিয়েই রাঁজনারায়ণ পথভ্রষ্ট শিক্ষিত বাঙ্গালীকে সচেতন করেছেন মাত্র |

অগ্ভাপি আমরা দেশীয় ভাষায় কথোপকথন করিবার সময় অধিকাংশ ইংরাজী শব্দ ব্যবহার করি। আমাদিগের কথোপকথনের ভাষার বিশুদ্ধতা সম্পাদিত ন! হইলে বাঙ্গলা বক্তৃতায় বিশেষ নৈপুণ্য জন্মিবার সম্ভাবনা নাই খাঁটি ইংরাজীতে কথোপকথন করিলে আমরা ইংরাজী ভাষায় উত্তমরূপে কহিতে শিক্ষা করিতে পারি, কিংবা খাঁটি বাঙ্গীলীতে কথোপকথন করিলে আমরা বাঙ্গালা ভাষা উত্তমরূপে কহিতে শিক্ষা করিতে পাঁরি। কিন্তু খিচুড়ি করিলে কোন ভাষাই উত্তমরূপে কহিতে শিক্ষা করিতে পারি না।২০

স্বদেশীয় ভাষান্শীলন প্রসঙ্গে রাজনীরায়ণ বক্তৃতায়, আলোচনায় তার অভিমত ব্যক্ত করেছেন নানাভাবে | হেয়ার সাহেবের শ্বতিসভায় একদা রাজনারায়ণ মন্তব্য করেছিলেন মাতৃভাষাপ্রীতি সম্পর্কে,

“যথার্থ বলিতে কি হোমর, প্লেটে! সফোর্রিস রচিত চারুতম নিরুপম কাধ্যরস পানের প্রভৃত স্থখ সম্ভোগ করি, কিম্বা চরিত্র বর্ণনা নৈপুণ্যের পরাকাষ্ঠ। প্রদর্শক সেকৃসপিয়ারের অমৃত ধর্মপ্রাপ্ত নাটক সকল অধ্যয়ন করিয়া অত্যন্ত উল্লাসিত হই,

পাশ সি শশী শশা পিপীপি্পশ পপপপিপীশাপীশিসপীপ পাপাপিশীশাপপাশ পা শা পীশপিশিশীিল শি

২*. রাজনারারণ বনু, বাংলা ভাব! সাহিত্য বিষয়ক বন্ৃতা, কলিকাতা, ১৮৭৪, পৃঃ ৬৬

৮৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

কিন্বা অদ্ভুত কল্পনা শক্তিসম্পন্ন গেটে শিলরের কাব্য পাঠ করিয়া আশ্চর্্যার্ণবে অগ্প হই তথাপি এক আঁশা অসম্পূর্ণ থাঁকে, -এক তৃষ্ণা অনিবৃত্ত থাকে, সেই আশা স্বদেশকে জগঙজ্জনপৃজ্য বিশীলখ্যাতি গ্রন্থকারদিগের যশঃ সৌরত ঘ্বার প্রফুন্ন দেখিবার আশা, সে তৃষ্ণা স্বদেশীয় সমীচীন কাব্যক্ষরিত অমৃত ধার পান করিবার তৃষ্ণা ।২৯ [ বিবিধ প্রবন্ধ, প্রথম খণ্ড, স্বদেশীয় ভাষানুশীলন ]

এখানে স্বদেশপ্রেমের সমস্ত আবেগ মাতৃভাষাপ্রীতি সাহিত্যশ্রীতিরূপে প্রকাশ পেয়েছে রাজনারায়ণ মাতৃভাষার একনি সাধকরপে প্রবন্ধের বিষয়বস্ত নির্বাচন করেছেন | এটি এমন সময়,-যার মাধ্যমে স্বদেশপ্রেম জাগানে সম্ভব মাতৃভাষ। গ্রীতিকে তিনি স্বদেশগ্রীতিরই নামান্তর বলে মনে করতেন। যে-কোন প্রসঙ্গেই যাতৃভাষাস্ততি সম্পফিত বিষয়কে অবলম্বন করে রাঁজনারায়ণের উচ্ছাস দেখেছি বাংলা সাহিত্য সম্পকিত আলোচনার উপসংহাঁরেও তার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন

"যখন আমরা দেখিব যে, তাহারা কথোপকথনের ভাষার বিশুদ্ধতা সম্পাদন করিতে সচেষ্ট হইয়াছেন, যখন আমরা দেখিব যে দেশীয় ভাষাতে পত্র লিখিতে তাহার! হেয় বোধ করেন না, যখন আমরা দেখিব যে, তাহার ইংরাজী ভাষা অপেক্ষা বাঙ্গাল! ভ।ষায় বক্তৃতা করিতে বিশেষ মনৌধোগী হইয়াছেন, তখন আমর। বলিতে পারিৰ যে, স্বদেশের প্রতি ত্বাহাদিগের প্রকৃত প্রেম উদ্দিত হইয়াছে ত্াহার। নিশ্চয়ই জাঁনিবেন, জাতীয় ভাষায় উন্নতিসাধনের প্রতি জাতীয় উন্নতি নির্ভর করে ।»

| বাংলা ভাষা সাহিত্য বিষয়ক বক্তৃতা পৃঃ ৭৪ ] মাতৃতাষাগ্রীতির অজক্র প্রমাণ রাঁজনারারণের সমগ্র প্রবন্ধ সাহিত্যেই বিক্ষি হয়ে আছে। তার সমস্ত বক্তব্যের সারসংকলন কর] কিছু দুরূহ নয়- কিন্তু একই বিষয়ের পুনরাঁবুত্তির প্রবণতার আলোকে রাজনারায়ণের স্বদেশপ্রেমিকতাই বড়ে। হয়ে দেখা দিয়েছে। ভাষাপ্রীতির সঙ্গে মাতৃভূমির প্রতি অগাধ ভালবাসার পরিচয়ও তিনি ব্যক্ত করেছেন নানাভাবে ১৭৭৮ শকে হেয়ার সাহেবের স্মরণার্থ স্বৃতিসভায় তিনি বলেছেন-_“প্রত্যেক ব্যক্তির সম্বন্ধে পৃথিবীর সকল স্কান অপেক্ষা কোন এক বিশেষ স্থান সর্বাপেক্ষা মনোহর ঞধবতারার প্রতি যেমন দিগদর্শনের শলাকা লক্ষিত থাকে, তেমনি বিদেশীগত পুরুষের চিত্ত সেই স্থানের প্রতি লক্ষিত থাকে সেই স্থান তাহার স্বদেশ সেই স্থানের সহিত তীহার বাঁলসখিত্ব, সেই স্থান তাহার প্রাণপ্রিয় জনদিগের আবাস। সেই প্রিয় মনোহর স্বদেশ নিকুর্বর প্রমোদজনক দৃষ্ঠশৃন্ত

২১, রাজনরায়ণ বনু, বিবিধ প্রবন্ধ ১ম খণ্ড কলিকাতা ১৮৮২।

প্রবন্ধ ৮৯

হইলেও উৎকৃষ্ট অন্য কোন দেশ--এমন কি কাশ্শীরের নির্ধল হুদ মনোহর উদ্যান সিরাজের হচারু গোলাবপুষ্পের উপবন নেপলস সন্নিহিত জলের তটের নয়ন বিষুগ্ধকর শোভায় হাশ্যমান বিখ্যাত উপসাঁগর পর্য্যন্ত তাঁহার মনকে আকৃই করিয়া রাখিতে পারে না, এমন স্বদেশ স্বদেশীয় ভাষার প্রতি ধাহার অনুরাগ নাই, তাহাকে কি মনুষ্য বল! যাইতে পারে?” [ বাংল! ভাষা সাহিত্য বিষয়ক বক্তৃতা পৃঃ ৭৩ ]

উদ্ধৃত অংশে রাঁজনারায়ণের দেশপ্রীতির গভীরতা উপলব্ধি করে বিস্মিত হই এজাতীয় আন্তরিক অনুভূতিও প্রবন্ধের বিষয় করে তুলেছেন লেখক। এতে দেশাহুরাগী রাজনারায়ণকেই বিশেষভাবে আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে বাংলা প্রবন্ধের গঠন পর্বের লেখক হিসেবেই রাজনারায়ণের আবির্তীব | ' প্রথম যুগের প্রাবন্ধিকদের রচনায় বিষয়নিষ্ঠার প্রাধান্থই লক্ষ্য করেছি,__রাজনারায়ণের প্রবন্ধকে কিন্তু এর ব্যতিক্রম বলতে হবে আত্মদর্শনের প্রতিফলন প্রবন্ধগুলির বৈশিষ্ট্য দেশপ্রেমের গভীর আবেগ প্রবন্ধের মধ্যে যে বিশেষ রসের সঞ্চার করেছে তা সহজেই অনুভব করা যায়। অবশ্য প্রবন্ধের অধিকাংশই কোন না কোন অনুষ্ঠানের ভাষণ হিসেবে লিখিত প্রচারিত হয়েছিল বিজ্ঞাপনে রাজনারায়ণ বলেছেন,

*এই বক্তৃতায় যাহা আছে, তাহা কেবল বাংল! সাহিত্যের এতিবৃত্তিক বিবর্রশ বিষয়ক পুস্তক হইতে সংগৃহীত হইয়াছে, এমত নহে, আমার নিজের জীবনের দর্শনও অনেক সহকাঁরিতা করিয়াছে, ইহা বলা বাহুল্য 1৮২২

বক্তৃতার ভাষণে প্রবন্ধের বক্তব্যে খুব বেশী পার্থক্য দেখি না,_ মনীষী রাজনারায়ণের মৌলিক চিন্তাধারার স্থস্পষ্ট পরিচয় উভয়টিতেই ব্যক্ত হয়েছে। সাহিত্যে জীবনে দেশপ্রেমের ঘে নির্মল অনুভূতির দ্বারা তিনি অন্ুপ্রাণিত হয়েছিলেন বক্তব্যেও সেই বিষয়টিই তিনি সে যুগের শিক্ষিত বাঙ্গালীর কাছে নিবেদন করেছিলেন

রাজনারায়ণের দেশপ্রীতির আদর্শ মাতৃভাষার সমর্থনে সোচ্চার, মাতৃভূমির প্রেমে তদগত, আবার জাতীয়তাসঞ্চারের উদ্দেশ্যে পোষাক পরিচ্ছদেরও স্বকীয়ত্ব সৃষ্টিতে তিনি চেষ্টা করেছেন। জাতীয়তাবোধ সঞ্চারের জন্য তিনি পরানুকরণের নিন্দা করেছেন ব্যাপারে রাজনারায়ণ পাশ্চাত্যের উৎকৃষ্ট গ্রহণীয় পন্থাকে গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছেন নিছক পরানুকরণের মধ্যে যে নীচতা বুদ্ধিহীনতারই পরিচয় প্রকাঁশ পাগ্ন এই সত্যটি শিক্ষিত সম্প্রদায়ের সামনে প্রমাণ করার উদ্দেশ্য পরোক্ষভাবে জাতীয়তার দীক্ষায় অনুপ্রাণিত করা - তা সহজেই অন্মান করা যার। বন্তত; সব তুচ্ছবিষয়ের চিন্তাতে রাজনারায়ণ অযথ1 কালক্ষেপণ করেন নি,

২২. রাজনারায়ণ বহু, বাংলা ভাষা সাহিত্য বিষয়ক বক্তৃতা, কলিকাত। ১৮৭৪, বিজ্ঞাপন

রর উনবিংশ শতাব্ীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

দেশপ্রেম সম্পর্কে সম্পূর্ণ অচেতন একটি জাতিকে তিনি সচেতন করে তোঁলার ব্রত গ্রহণ করেছিলেন রামমোহন বিদ্যাসাগর সামাজিক বীভৎস প্রথাগুলি দূর করে অশেষ উপকার সাধন করেছিলেন,_তারাও চেয়েছিলেন শ্বসমাজ শ্বদেশের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কিন্তু পাশ্চাত্য শিক্ষার কুপ্রভাবে সেই স্বকীয়ত্বই যখন নিন্দিত বজিত হতে চলেছে-_রাজনারায়শ তার বিরুদ্ধেই লেখনী ধারণ করেছিলেন। ব্যাপারে উপদেশ দেওয়ার অধিকারও তাঁর ছিল। পাশ্চাত্য শিক্ষার কুফলে একদা তিনিও আত্মবিস্ত হয়েছিলেন )--যে মুহূর্তে তার চৈতন্য ফিরেছে-_-উপদেষ্টার আলনে এসে আপন অন্তরের নিগুঢ় অভিজ্ঞতার বাণী পরিবেশনে তিনি বিন্দুমাত্র দেরী করেন নি। রাজনারায়ণের ভপ্চিটি ছিল উপ.দষ্টার, আন্তরিকতাই ছিল তর প্রধান অবলম্বন পরবর্তীযুগে বহ্কিমণ্দ্রও সমাজসংশোধনকার্যহ জীবনের প্রধান ব্রত বলে গ্রহণ করেছিলেন-কিন্তু তাঁর ভঙ্জিটি ছিল সম্পূর্ণ পৃথক রাজনারায়ধ সমালোচক নন, --সমব্যঘী ।-- বঙ্কিমচন্ত্র উৎকৃষ্ট সমীলোচকের পন্থা অবলম্বন করেছিলেন বলেই তার বক্তব্যের তীব্রতা রূপকে খ)ঙ্গে নির্মম হয়ে উঠেছিল বাঁজনারায়ণের গভীর দেশপ্রেম শান্ত স্তিমিত আবেদনে পর্যবসিত হয়েছিল

সমাজে সভ্য হ্রন্দর প্রথা প্রবতিত হোক অভিলাষ তিনি ব্যক্ত করেছেন পরিপূর্ণ এদেশীয় সনাতন পথকেই তিনি আশ্রয় করতে চাঁন নি;_-যে পথ অবলম্বনে আমাদের উজ্ভ্ল ভবস্যৎ গডে ওঠার সম্ভাবনা আছে- সেই পথটিই তিনি নির্ণয় করেছিলেন। “জাতীয় গৌরবেচ্ছা সঞ্চারিন; সভার” কার্যক্রমের পরি 'ল্লনাটি আলোচনা করলেই রাঁজনারায়ণের উদ্দেশ্য খানিকটা স্পষ্ট হয়। ইংরাজী শিক্ষার স্থফল হুদয়ঙ্গম করেছিলেন বলেই__-আশ] করেছিলেন সেই আদর্শে আমাদের ভবিষ্ৎ গড়ে উঠুক। "হিন্দু বা প্রেসিডেন্সি কলেজের ইতিবৃত্ত__আত্মস্মতিযূলক এই আলোচনা গ্রন্থটি সে যুগের একটি অমূল্য দলিল। গ্রস্থটিতে রাজনারায়ণ নির্ভয়ে বলেছিলেন,

ইংরাজী শিক্ষার প্রর্কত ফল এখনও ফলে নাই। ইংরাজী শিক্ষার প্রকৃত ফল তখন ফলিবে, যখন ইংরাজদিগের স্তায় আমরা শারীরিক বললাভ করিব, সাহসী হইব, অধ্যবসায়শীল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হহব এবং স্বাঁধীনতাপ্রিয় হইব 1৯২৩

স্বাধীনতাপ্রিয় জাতিই রাজনৈতিক অধিকার লীভের বাসনায় অস্থির হতে পারে। বাঙ্গালী জাতির চরিত্রে স্বাধীনতা্রীতি সঞ্চার করার মহৎ উদ্দেশ্য না থাকলে জাতীয় গ্রন্থ রচনার উপযোগিতাও থাকত না। রাজনারায়ণ_ দেবেন্দ্রনাথ _-অক্ষয়-

লব সপ

নস পাপ স্পট

২৩. পরনারায়ণ বনু, বিবিধ প্রবন্ধ, “হিন্দু অথবা প্রেসিডেন্সি কলেজের ইতিবৃত্ত, কলিকাতা ১৮৮২।

প্রবন্ধ ৪৯১

কুমার প্রমুখ মনীধিবৃন্দ স্বাধীনতার মর্ার্থ ব্যাখ্যায় লেখনী ধাঁরণ করেছিলেন,__ স্বদেশচেতনা জাগানোর আকাক্ষায় এরা সমগ্র জীবনকেই একটি আদর্শ পথে পরিচালনা করেছেন শিক্ষা এদের জীবনে সুফল দান করেছিল, নবীনচেতনা আদর্শে উদ্দীপিত হয়ে এ'রা সমগ্র জীবনই দেশ দশের চিন্তায় ব্যয় করেছেন

রাজনারায়ণের পরিকল্পন1 স্বপ্ন ছিল বিরাট “জাতীয় গগীরবেচ্ছা সঞ্চারিনী সভা” সংস্থাপনের প্রস্তাব তিনিই প্রথমে করেছিলেন সম্পর্কে তার হংরাজী রচনাটি ১৭৮ শকে প্রকাশিত হয়েছিল বিবিধ প্রবন্ধে তার বাংলা তর্জমাটি প্রকাশিত হয়। শিক্ষিত সমাজের জন্য তার বক্তব্য যে হংরাঁজীতে প্রকাশ করতে হয়েছিল এজন্য তিনি ছুঃখ প্রকাশ করেছেন এই সভা সংস্থাপনের প্রস্তাবটিতে লেখকের উদ্দেশ্যের সততা নিখুত পরিকল্পনা শঞ্তি প্রকাশ পেয়েছে দেশব্যাপী যে পরিবর্তনেরঞ্লক্ষণ দেখা যাচ্ছে-__তার প্রতিক্রিয়া ফলাফল ব্যাখ্য। করেছেন তিনি

"অধুনা ইউরোপীয় জ্ঞানীলোক বঙ্গদেশে প্রবিষ্ট হইয়৷ এতদ্দেশীয় জনগণের মনকে চিরনিদ্রা হইতে জাগরিত করিয়াছে বপীয় সমাজে অবিশ্রান্ত আন্দোলন চলিয়াছে। পরিবর্তন উন্নতির স্পৃহা সবত্রই দৃষ্টিগোচর হইতেছে ।...আমরা পূর্বপুরুষদিগের নিকট হইতে যে সকল স্বরীতি স্নীতি লাভ করিয়াছি তাহাও পাছে এই পরিবর্তনের ক্রোতে ভাসিয়া যায় আশঙ্কা হইতেছে যাহাতে শিক্ষিত দলের মধ্যে জাতীয় গৌরবোচ্ডাস সঞ্চারিত হইয়া এই ভয়ঙ্কর অমঙ্গল নিবারিত হয় এবং সমাজ সংস্কারসকল জাতীয় আকার ধারণ করে, তশ্নিমিত্ত এতদ্দেশীয় প্রভাবশালী মহোদয়গণ একাট সভা সংস্থাপন করুন। জাতীয় গোঁরবেচ্ছার উন্মেষণ বতীত কোঁন জাতি মহত্বলাভ করিতে পাঁরে নাই সমগ্র হতিহাঁস এই সত্যের সাক্ষ্য প্রদ।ন করিতেছে 1৮২৪

দেশপ্রেমিক রাজনারায়ণ ভাবীযুগের স্বপ্ররচনায় ব্যস্ত ছিলেন কিন্ত দুটির স্বচ্ছতা হারান নি। যদি এই আন্দোলন একটা স্থপরিকল্পিত লক্ষ্যের দিকে ধাবিত হয় তার পরিণতি যে বেদনাদায়ক হবে- বিষয়েও তিনি নিশ্চিন্ত ছিলেন নিছক ভাবাবেগে উন্মত্ত না হয়ে একটা গঠনযূলক পথে এই নবলন্ধ দেশচেতনাকে তিনি পরিচালিত করতে চেয়েছিলেন পরিবর্তনের শ্রোতে আমাদের এতিহোর আদর্শ ভেসে যাঁবার সম্ভাবনায় তিনি চিন্তিত হয়েছিলেন সম্ভবতঃ এই আশঙ্কার হাত থেকে মুক্তি পাবার উদ্দেশ্যেই এই সভাটির পরিকল্পনা করেছিলেন ।- এই সভাটি

২৪. রাজনারায়ণ বন্থ, বিবিধ প্রবন্ধ, 'হিন্কু অথব। প্রোণডেন্িি কলেজের ইতিবৃত্ত, কলিকাতা ১৮৮২ শিক্ষিত ব্গবাসিগণের মধ্যে জাতীয় গৌরবেচ্ছ। সঞ্চারিনী সভ। সংস্থাপনের প্রস্তাব

ঞ২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

শেষ পর্যন্ত জন্মলাভ করে নি বটে কিন্তু এই সভার আদর্শে হিন্দুমেলা জন্ম নিয়েছিল আত্রচরিতে রাজনারায়ণ বলেছেন, “শ্রীযুক্ত নবগোপাল মিত্র মহোদয় আমার প্রশীত 'জাতীয় গৌরবেচ্ছা সঞ্চারিনী সভার অহুষ্ঠানপত্র পাঠ করাতে হিন্দুমেলার ভাব তীহীর মনে প্রথম উদ্দিত হয় উহা! আমার প্রস্তাবিত জাতীয় গৌরবেচ্ছা সঞ্চারিনী সভার আদর্শে গঠিত হইয়াছিল 1৮২৫

সুতরাং হিন্দুমেলার প্রেরণা দান করে রাজনারায়ণ স্বদেশপ্রেমের আদর্শটিই বাস্তবে বূপায়িত করেছিলেন হিন্দ্রমেলা যে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম হচন1 করেছিল প্রসঙ্গান্তরে সে কথা বলেছি। বাঙ্গালীর মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক এক্যবোধ জাগিয়ে তোলার আদর্শেই এই মেলার পরিকল্পনা হয়েছিল। রাজনারায়শ এই মেলার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন ! ন্বদেশীয়ানা প্রচার স্বদেশের জন্য গঠনযূলক কোন কাজে আত্মনিয়োগ করার আনন এভাবেই তিনি লাভ করেছেন।

রাজনারায়ণের “জাতীয় গৌরবেচ্ছা সঞ্চারিনী সভার” নামকরণটিও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ নামকরণের মাধ্যমেই তিনি সভার উদ্দেশ্টাটি ব্যক্ত করেছেন এই সভার পূর্ব নাম ছিল “জাতীয় গৌরব সম্পাদনী সভা ।” জাতীয়চেতনা সঞ্চারের সম্ভাব্য উপায় আবিষ্ষার করা তার প্রয়োগরীতি ব্যাখ্যা করাই ছিল এই সভার উদ্দেশ্য |

রাঁজনারায়ণ ষে বাস্তব পন্থার নির্দেশ দিয়েছিলেন--পরবর্তী কালে সেই আদর্শ 'ষে গৃহীত হয়েছিল এমন প্রমাণ আছে। শারীরিক শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্টে জাতীয় ব্যায়াম চর্চার পুনরুদ্দীপনার্থ সর্বতোভাবে চেষ্টা করা জাতীয় গৌরবেচ্ছ। সঞ্চারিনী সভার সর্বপ্রথম কার্য বলে পরিগণিত হয়েছে প্রসঙ্গে রাঁজনারায়ণ-এর ধারণখটি আরও স্পষ্টভাবে বোঝা দরকার | বাঙ্গালীর শক্তিহীনতার অপবাঁদ দূর করার জন্ঠ বঙ্কিমচন্দ্র বাঙ্গালীর অতীত ইতিহাসের দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন শারীরিক শক্তি অর্জন করার প্রত্যক্ষ নির্দেশ বঙ্কিমচন্দ্র “আনন্দমঠ* «দেবী- চৌধুরানীতে” ব্যক্ত করেছেন রাজনারাঁয়ণের প্রচেষ্টা আরও আগেই শুরু হয়েছিল। বাঙ্গালীর ভীরুতা কাপুরুষতার দৃষ্টান্ত রাজনারায়ণের অন্য একটি রচনাতেও উল্লিখিত হয়েছে *আত্মীয়সভার সভ্যপ্দিগের বৃত্তান্ত নামক অভিনব পদ্ধতির রচনাটিতে তান তাঁর বন্ধুর [ অভয়চিত্ত বন্দোপাধ্যায় ] বর্ণনায় বলেছেন,__

শিব্যতত্ত্রের অনেক ব্যক্তি যেমন যেমন ইংরাজী আহার্য্য দ্রব্য ভক্ষণ করিতে

পান অন পি সপ রর

২৫. রাজনারায়ণ বহু, আত্মচরিত, ১৯৯৮, পৃঃ ২৯৮।

প্রবন্ধ ৯৩

বিলক্ষণ পটু, কিন্তু লাঁলবাজারের একজন গোর] তাড়ন। করিলে তাহার দশজন একত্র থাকিলেও পলায়ন পরায়ণ হয়েন, আমার বন্ধু তন্ত্রপ নহেন। বাল্যকালাঁবধি তলওয়ার খেলা বন্দুক ছোড়া প্রত্যহ ঘোরতর ব্যায়াম অভ্যাস অত্যন্ত পুষ্টিকর দ্রব্য আহার করাতে তিনি অতিশয় বলবাঁন সাহসী 1”২৬

এখানে রাজনারায়ণ শারীরিক দৌর্বল্যকে অত্যন্ত নিন্দা করেছেন এবং এই নিন্দাকে জাতির চরিত্র থেকে মুছে ফেলার অভিলাষ নিয়েই জাতীয় গৌরবেচ্ছা সঞ্চারিনী সভার সর্বপ্রথম কাজ হিসেবে ব্যায়ামচর্চার নির্দেশ দিয়েছিলেন | সংগঠন- মূলক দৃষ্টিভঙ্গি তীর প্রত্যেকটি পরিকল্পনাতেই লক্ষ্য করি।

এই সভার অন্যতম প্রধান কাজ হবে একটি তৌর্য্যত্রিক বিদ্যালয় স্থাপন - যার উদ্দেশ্য তিনি ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে,-

“এই স্ভী একটি হিন্দু তৌর্য্যত্রিক বিদ্যালয় স্থাপন করিয়া তাহার ছাত্রগণকে এরূপ সংগীতশিক্ষা দিবেন যদ্বারা নীতিগর্ত উপদেশ প্রদত্ত হয় এবং অন্তঃকরণে দেশহিতৈষিতা সমরান্ুরাগের সঞ্চার হইতে পাঁরে ।*২৭

রঙ্গ লাল বীররসের কবিতা রচনা করে স্বদেশবাঁসীর চিত্তে উত্তেজন। সঞ্চারের চেষ্টা করেছিলেন, __রাজনারয়ণ শুধু উত্তেজনা! নয়--চরম উত্তেজন। হৃষ্টি করতে চান তিনি সমরাহুরাঁগ সঞ্চারের কথাই প্রকাশ্যভাবে ঘোষণা করেছেন রাজনারায়ণের যুগেই গুপ্ত সভাসমিতির প্রচলন শুরু হয়। সমগ্র দেশবাসীকে একটি প্রত্যক্ষ সংগ্রামের নায়করূপে কল্পনা, করে তিনি তার বৈপ্লবিক দূরদ্শিতার পরিচয় দিয়েছেন প্রসঙ্গে শ্রাক্বকুমার সেনের মন্তব্যটি স্মরণ করি-__

শিক্ষিত বাঙ্গীলীর চিত্ত যখন স্বপ্তি সংকীর্ণ গ্রামের বেড়] ভাঙ্গিয়৷ বঙ্গদর্শনেই পরিতৃপ্তি লাভ করিয়াছে তখন রাজনারায়ণ তাহার তরুণ বন্ধুরা অখণ্ড ভারতের জাতীয় আদর্শখানি তুলিয়া ধরিলেন ধর্ম সমাজ চিন্তায়, শিক্ষা সাহিত্যে, দেশপ্রেমে রাষ্ট্রীয় চেতনায় সবদিক দিয়াই তিনি স্বদেশকে আগাইয়। দিতে ব্যগ্র ছিলেন ।»২৮

এই অদম্য প্রাণশক্তির আবেগই রাঁজনারায়ণ চরিত্রের বিশিষ্টতা নির্দেশ করছে। কিশোর রবীন্দ্রনাথ এই চিরতরুণ বৃদ্ধটির সংস্পর্শে এসে প্রাণের অদম্য শক্তিকে

২৬. রাজনারায়ণ বন, বিবিধ প্রবন্ধ, আত্মীয় সভার সভ্যদিগের বৃত্তান্ত

২৭, রাজনারায়ণ বন্ধ, বিবিধ প্রবন্ধ, আত্মীয় সভার সভাদিগের বৃত্তাত্ত। শিক্ষিত বলগবাসিগণের মধ্যে জাতীয় গৌরবেচ্ছ। সঞ্চারিনী সত! সংস্থাপনের প্রস্তাব।

২৮. স্বকুমার সেন, বাঙ্গাল! সাহিত্যের ইতিহাস। ২য় থ।। ১৩৬২, পৃঃ--২৬।

৯৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

হৃদয়্ম করেছিলেন জীবনস্মতির পাতায় চিরচঞ্চল বদ্ধটির অকৃত্রিম প্রাণবন্ত রি বর্ণন। পেয়েছি আমরা রাজনারায়ণের জীবনের সমস্ত কর্মে চিন্তায় ঠিক জাতীয় মনোভাবেবই পরিচয় স্পষ্ট। “জাতীয় গৌরবেচ্ছা সঞ্চারিনী সভাগ্র যে কার্ধধাঁরার পরিকল্পন] তিনি করেছিলেন-_তার একটা পূর্ণ অবয়ব ছিল। জাতীয় চরিত্রের সর্বা্শীণ বিকাশের চেষ্টাটিই নিখু ততাঁবে পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি ।-_ চিকিৎসাবিগ্ভালয় স্থাপন, নৃত্যগীত বিদ্যালয় স্থাপন করে সমরসংগীত শিক্ষাদান, প্রসিদ্ধ মহাঁক্াদের জীবনচরিত প্রকাশ, ইংরাজী শিক্ষাদাীনেরও আগে মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা, বাংলার সঙ্গে ইংরাজীর মিশ্রণ দূর করা, বাংলা ভাষায় পরস্পরকে চিঠিপত্র লেখা, বক্তৃতা করা তার পরিকল্পনায় প্রথম স্থান পেয়েছে মাতৃভাষায় শিক্ষাদান সম্বন্ধে বলেছেন তিনি,__

“্ধীহার মনে কিছুমাত্র স্বদেশান্ুর1গের ভাঁব আঁছে, তিনি স্বীয় 'সম্তানগণকে ইংরাজী শিখাইবার পূর্বে মাতভাষা একটুকু ভাল করিয়া শিক্ষা না দিয়] নিশ্চিন্ত থাকিতে পারেন না ।”২৯

ছাড়াও লেখকের আরও কিছু পরিকল্পন। ছিল

“গৌরবেচ্ছা সঞ্চারিনী সভা বাংলা ভাষার এরূপ পুস্তক সকল প্রকাশ করিবেন যাহাতে ভারতবর্ষে প্রাচীনকালে স্্রীশিক্ষা, স্ত্রীলোকের স্বাধীনতা, স্বয়ংবর বিবাহ, পূর্ণ বয়সে বিবাহ, বিধবা বিবাহ, অসবর্ণ বিবাহ, সমুদ্রযাত্র! ইত্যাদি উদার সভ্যপ্রথা প্রচারিত ছিল তাহার দৃষ্টান্ত প্রদশিত হইবে

যে সকল বিজাতীয় প্রথা দ্বারা সভ্যগণের মধ্যে জাতীয় গৌরবেচ্ছা সমুত্তেজিত হয়, ততপ্রচলনের চেষ্টা করিতে হইবে 1৮ [এ]

এই পরিকল্পন1 জাতীয়চেতনা জাগানোর সম্পূর্ণ অন্নুকৃল বলা যেতে পারে রাঁজনারায়ণকে বিদ্যাসাগরের মত সক্রিয় সমাজসংস্কারক বলতে পারি না বটে, কিন্তু হিন্দুসমাজের রক্ষণশীলতার মনোভাব দূর করার সদিচ্ছা যে তারও ছিল উদ্ধৃত উক্তিহ তার প্রমাণ। কুসংস্কারের বেড়াজাল ছিন্ন করার জন্য বিদ্যাসাগর বাল্যবিবাহ প্রথা দূরীকরণ, বন্থবিবাহ প্রথা রোধ বিধব1 বিবাহের প্রচলনে অগ্রধী ছিলেন। রাজনারায়ণ স্ত্রীস্বাধীনতার সমর্থন করেছিলেন সবার আগে। ব্যাপারে ব্রাহ্ম সমীজের প্রভাব হয়ত ছিল__কিন্তু তার চেয়েও বড়ো ছিল তার উদার দৃষ্টিভঙ্গী প্রাচীন ভারতের সমাজ ব্যবস্থায় নারীর স্থান ছিল সবার উপরে,_রাঁজনারায়ণ সেই

২৯* রাজনারায়ণ বহ, বিখিধ প্রবন্ধ, শিক্ষিত বঙ্গবাসিগণের মধ্যে জাতীয় শ্টেরবেচ্ছাঁ সঞ্চারিনী সভা সংগ্থাপনের প্রস্তাব

প্রবন্ধ ৪৫

ব্যবস্থাটিই ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন | স্বয়ংবর বিবাহ, অসবর্ণ বিবাহের সমর্থনেও রাজনারায়ণ উদারতারই পরিচয় দিয়েছেন দেশীয় প্রাচীন প্রথাঁর উজ্জীবন ঘটুক ছিল তাঁর প্রার্থনা__কিজ্ত বিজাতীয় হলেও অন্থকরণযোগ্য সুন্দর রীতি- নীতি প্রবর্তনেরও পক্ষপাতী ছিলেন তিনি বাঙ্গালীর জাতীয় জীবনে এক্যবোঁধ জাগাবার উদ্দেশ্যে পোষাঁকপরিচ্ছদ সম্পকিত চিন্তাও তিনি করেছিলেন | একটি জাতীয়তাবোধে উদ্বদ্ধ জাতির মধ্যে পৌষাকগত সাম্য তিনি লক্ষ্য করেছিলেন-_ হুতরাং বাঙ্গালীর সর্বজনীন পোষাক সম্পর্কে রাজনারায়ণ বলেন,__

আমাঁদিগের সমাজ এখনও প্রক্কতরূপে সংগঠিত হয় নাই তাহার একটি সামান্ত প্রমাণ দিতেছি প্রত্যেক জাতিরই একটি নিদিষ্ট পরিচ্ছদ আছেঃ সেইরূপ পরিচ্ছদ সেই জাতীয় সকল ব্যক্তিই পরিধান করিয়া থাকেন, কিন্তু আমাদিগের বাঁপালী জাতির একট নির্দিষ্ট পরিচ্ছদ নাই ।-."হহাতে একপ্রকার বোধ হয়, আমাদিগের কিঃমাত্র জাতিত্ব নাই। বস্ততঃ এ্রক্য ন। থাকিলে প্ররুত জাতিত্ব কিরূপে সংগঠিত হইবে | একাল আর সেকাল পৃঃ ৫৬-৫৭ ]

আমাদের প্রীত্যহিক জীবনযাপনের মধ্যেও জাতীয় চেতনার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েহিলেন রাজনারায়ণ জাতীয় আলোচন1 থেকে রাজনারায়ণের সংস্কারক মনোবৃত্তির দেশচেতনারই পরিচয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে সর্বপ্রকারে উদারতার হাওয়া প্রতিটি মানুষের মনে প্রবাহিত হোক--এই অভিলাষ ব্যক্ত করেছেন তিনি। স্বদেশপ্রেমিকতার মধ্যে শুধু স্বদেশীয় ভাব অনুশীলনের প্রতি অন্রাগহ এতদিন লক্ষ্য করেছি,_রাজনারায়ণের স্বদেশহিতৈষিতা আরও ব্যাপক আকারে আত্মপ্রকাশ করেছে। বিদেশীয় প্রথার স্ছফলটুকু গ্রথণ না করা পর্যন্ত সত্যকার জাগরণ ঘটা যে সম্ভব নয়--মনীষী রাজনারায়ণ তা বুঝেছিলেন এব্যাপারে তার স্পষ্ট মতামতটি তার স্বদেশপ্রেমিকতারহ পরিচায়ক, -

“যদি আমার্দিগকে অন্য জাতির অনুকরণ করিতে হয়, আমর দাসবৎ করিব না। আমর! নিজে আপনাদিগের পথ নিরূপণ করিব | এ]

এই দৃষ্টিভর্পির দৃঢ়তা বিবেকানন্দের ছিল আত্মবিশ্বাসে স্বাদেশিকতায় পূর্ণ হদয়ের অনুভূতি থেকেই জাতীয় ভাব ব্যক্ত হতে পারে কিন্তু বিদেশীয় প্রথার মধ্যে কয়েকটি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছলেন তিনি, মহৎ ব্যক্তির স্মরণে সভার আয়োজন, নববর্ষের সম্মিলনী সভায় পারস্পরিক প্রীতি বিনিময়ের প্রয়োজনীয়তাও ব্যাখ্যা করেছিলেন কোন সভাসমিতিতে মিলিত হলে ভাবের আদান-প্রদান বৃদ্ধি পেতে পারে,_এঁক্যবোধ জাগতে পারে, তাই এর উপযোগিতাও স্বীকার করতে হবে। উনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণ লগ্নে জাতীয় বক্তব্যের চিন্তাধারার

৯৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে দেশপ্রেম

প্রশংসাই করব ভূদেব বঙ্কিমচন্দ্র সমাজতত্ব বিশ্লেষণ করেছিলেন,_-সামাজিক উন্নতি ছিল এদের কাম্য রাঁজনারায়ণের চিন্তাঁধারাঁর বিশ্বয়কর উদারতা ব্যাপারে স্মরণীয় হয়ে থাকবে অথচ সমাজতান্বিক আলোচনাযূলক গ্রন্থরচনা করার গৌরব ত্বার নেই। প্রবন্ধের ইতস্ততঃ প্রসন্গেই তীর এই প্রশংসনীন্ন দৃষ্টিভঙ্গী ধরা পড়েছে। রাজনারায়ণের সমালোঁচনামূলক রচনাঁতেও একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাই

'বাংলা ভাষা সাহিত্যবিষয়ক পত্রিকা রচনার আদর্শ অন্ুসন্ধান করার সময় টাইটেল পেজের উদ্ধৃতিটি লক্ষ্যণীয় নিধুবাবুর ঞ্ুব উক্তিটিই স্থান পেয়েছে শিরোভ্ষণ রূপে”

নানান্‌ দেশে নানান ভাষা

বিনা স্বদেশীয় ভাষা পুরে কি আশা?

গ্রন্থের সমস্ত প্রবন্ধঈ বক্তৃতার জন্য রচিত। সাহিত্যসমালোচনাও স্থান পেয়েছে বক্তৃতায় মধুহ্দন বঙ্কিমচন্দ্র সম্পর্কে রাজনারাঁয়ণ বক্র আলোচনাটি প্রসঙ্গে লক্ষ্যণীয় তাঁর সাহিত্য সমালোচনার মানদণ্ড দেশপ্রেম, দেশপ্রেমিকতার অভাব খুঁজে পেলে তিনি পাহিত্যিককে অভিযুক্ত করেন | অবশ্থ স্বদেশপ্রেমী প্রাবন্ধিক রাঁজনারাঁয়ণের বিচারপদ্ধতিটি যুগে অচল বিশেষ করে, সাহিত্যবিচারে যুগাদর্শ ভাবাদর্শ যদি লঙ্ঘিত হয় সেই সমালোচনাকে ক্রি পূর্ণ বলতেই হবে মধুক্ষদনের কখিমানস বিচাঁরেও রাঁজনারায়ণ সথক্মদশিতাঁর পরিচয় দিতে পারেন নি। বস্ততঃ সাহিত্যে বিজাতীয়ভাব অনুসন্ধানে রাঁজনারায়ণ এত নিমগ্ন ছিলেন যে প্রক্কৃত বিচার সম্পূর্ণ হয় নি। মধুকুদনের অনুরাগী বন্ধু হলেও ব্যক্তি মধূক্থদনের খ্রীষ্টান হওয়া] কিংবা বিজাতীয় জীবনযাঁপনের মধ্যে তিনি দেশানহুরাঁগের অভাবই লক্ষ্য করেছিলেন স্বদেশপ্রেমিক রাঁজনারায়ণের পক্ষে খ্রীষ্টান মধুহদনকে স্বীকার করাও সম্ভব ছিল না। স্বদেশপ্রেমিকতা যে মনের একটি সংকুচিত সময়োচিত ভাবাবেগমাত্র--সে কথা আমর স্বীকার করেছি। ্বদেশপ্রেমের প্রাবল্য ঘটলে সত্য আবিষ্কার করাও অনেক সময় অসম্ভব হয়ে পড়তে বাঁধ্য। দিক দিয়েই স্বদেশপ্রেমী রাঁজনারায়ণ চরমপন্থী সমালোচক দেশাহ্রাঁগের বিচার করতে গিয়ে যে কবিসত্তার আরও গভীরে প্রবেশ করতে হবে-_রাজনারায়ণ সে বিষয়েও ছিলেন অসাবধানী ফলে মধুক্ষদনের কোটপ্যা্টমলন তার দৃষ্টিবিভ্রম ঘটিয়েছিল,__ যুগের সমালোচকের মত তিনি কোটপ্যান্ট,লনের অভ্যন্তরে মধুহ্বদনের বাঙ্গালী প্রাণটি আবিষার করতে পারেন নি। অবশ্য সমালোচনায় ত্রুটি যতই থাঁক রাজনারায়ণের দেশপ্রেমের আবেগটি এতে আরও স্পষ্ট হয়েছে রাজনারায়ণের মধুহদন সম্পকিত সমালোচনাটি এখানে উদ্ধৃত করা হলো!

প্রবন্ধ ৯৭

"জাতীয়ভাব বোধহয় মাইকেল মধুন্ছদনেতে যেমন অল্প পরিলক্ষিত হয়, অন্য কে।ন বাঙ্গালী কবিতে সেরূপ হয় না। তিনি ত্বাহার কবিতাকে হিন্দু পরিচ্ছদ দিয়াছেন বটে, কিন্তু সেই হিন্দু পরিচ্ছদের নিম্ন হইতে কোটপাণ্ট,লন দেখা যায়। আর্ষ্য রামচন্দ্রের প্রতি অনুরাগ প্রকাশ না করিয়া রাক্ষসদিগের প্রতি অন্থরাগ পক্ষপাত প্রকাশ করা, নিকুস্তিলা যজ্ঞাঁগারে হিন্দুজাঁতির শরদ্ধাম্পদ বীর লক্ষণকে নিতান্ত কাপুরুষের ন্যায় আচরণ করানো, খর দূষণের মৃত্যু ভবতারণ রামচন্দ্রের হাতে হইলেও তাহাদিগকে প্রেতপুরে স্থাপন,_বিজাতীয় ভাবের অনেক দৃষ্টান্তের মধ্যে এই তিনটি এখানে উল্লিখিত হইতেছে ।* [ বাংলা ভাষা সাহিত্যবিষয়ক পত্রিক] পৃঃ ৩৫ ]

এই সমালোচনায় দেশানুরাঁগী রাঁজনারায়ণকে আবিফার করি খুব সহজেই কিন্ত তাঁর সাহিত্যবিচাঁরে সস্তষ্ট হতে পারি না। জাতীয়ভাবের যে স্থগভীর আন্তরিক প্রকাশ মধুক্থর্দনের সাহিত্যে দেখি রাঁজনারায়ণ তা আবিফারে অক্ষম সেযুগোঁচিত ভুল ব্যাখ্যার একটি উত্রুষ্ট নিদর্শন রূপেই রাজনারায়ণের সমীলোচনাটিকে গণ্য কর! যেতে পারে মধুস্ছদনের সাহিত্যবিচারের আধুনিক পদ্ধতির সঙ্গে প্রাচীনযুগের সমালোচনার যে লক্ষ্যণীয় পার্থক্য রয়েছে-_-সেটিও এখানে স্পষ্ট হয়েছে তবে আশ্চর্যের বিষয়, নিজে স্বদেশপ্রেমিক হয়েও রাঁজনারায়ণ মধুক্থদনের সুগভীর দেশগ্রীতি হৃদয়ঙ্গম করতে পারেন নি। সেযুগের স্বদেশপ্রেমের উচ্ছাস অনেক সময় স্বাভীবিক বিচারবুদ্ধিকেও আচ্ছন্ন করে রাখত-__তাঁও প্রমাণিত হলো বস্ততঃ হচ্ছে আবেগাতিশায়নের একটি চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত। স্বচ্ছ উপলব্ধির সঙ্গে আবেগাঁধিক্যের ঘ্ন্ব থাঁকবেই-_দেশপ্রেম ছিল সে যুগের সর্বাপেক্ষা প্রবল আবেগ,__যুগধর্মের প্রয়োজনেই এই আবেগ একদা ছুরত্ত হয়ে উঠেছিল। তার ফলাফল হয়েছে দু'রকমের 7; অনাস্বাদিতপুর্ব দেশপ্রেমের আবেগেই বাঙ্গালী তথা ভারতবাঁসীর জীবনে এক্যবোধ জেগেছে, শক্তি সঞ্চারিত হয়েছে এবং স্বাধীনতার বাসনাটিও উচ্ছ্বসিত হয়েছে অগ্ত্দিকে দেখি, এই আবেগের আধিক্যে স্বচ্ছ সংগত বিচারবুদ্ধিও অনেক সময় উপেক্ষিত হয়েছে

রাজনারায়ণ আবেগধর্মী সমালোচক,_-তাঁর নিজের জীবনের প্রচণ্ড দেশপ্রেমের অনুভূতি সম্ঘল করেই তিনি সাহিত্যজগতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন তাই রাজনারায়ণের আলোচনায় আবেগ যতো বড়ো স্থান পেয়েছে--যুক্তি ততোট। নয়। রাজনারায়ণ যেমন নিখু'তি একটি দেশসচেতন জাতিগঠনের স্বপ্ন দেখতেন- _-সাহিত্যস্থট্ির মধ্যেও দেশচেতনা অন্থসন্ধানেরই চেষ্টা করেছেন ! রাজনারায়ণ সমসাময়িক সাহিত্য সম্বন্ধে মন্তব্য করেছিলেন,__

“এক্ষণকার অধিকাংশ কাব্য ইংরাজী ইংরাজী গন্ধ কহে। এক্ষণকার কোন

৯৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

কোন কাব্যে পূর্বকার কাব্য অপেক্ষা কোন কোন বিষয়ে অধিক ক্ষমতা প্রকাশিত 'আঁছে বটে, কিন্ত জাতীয় ভাব, সারল্য সহৃদয়তা৷ বিষয়ে হীন বলিতে হইবে ।” [ সেকাল আর একাল পৃঃ ৫১-৫২ ]

১৮৭৪ থুষ্টান্বে “সেকাল আর একাল” রচনার পূর্বেই বাংল! সাহিত্যে দীনবন্ধু মিত্রের 'নীলদর্পণ”, বঙ্কিমচন্দ্রের “ছুর্গেশনন্দিনী”, “ম্ণালিনী”, মধুহ্দনের “মেঘনাদ- বধ কাব্য” “চতুর্দশপদী কবিতাবলী”, হেমচন্দ্রের বৃত্রসংহার কাব্য” “ভারতসংগীত' প্রকাশিত হয়েছিল তবু রাজনারাঁয়ণ বাংল! সাহিত্যের অধিকাংশ কাব্যে জাতীয় ভাবের অভাব লক্ষ্য করেছিলেন কেন বলা মুক্ষিল। স্বদেশপ্রেমই সে যুগে আমাদের জীবনে নবলন্ধ অনুভব এবং বাংলা সাহিত্যে তার প্রকাশ ঘটেছিল অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যেই অত্যন্ত দ্রুতগতিতে | রাজনারায়ণ সম্ভবতঃ বাংলা সাহিত্যের ধারাবাহিক ইতিহাস মিলিয়ে সাহিত্যের প্রকৃতি নির্ণয়ের চেষ্টা করেন নি,__তা৷ হলে খুব সহজেই তিনি বাংলা সাহিত্যে জাতীয়ভাবের প্রাতুর্যই লক্ষ্য করে পুলকিত হতেন। আমাদের জাতীয়জীবনে যে ভাবটি প্রকাশের পথ খুঁজছে, সাহিত্যে বহুপুবেই তার আভাস পেয়েছি পরাধীনতার চেতনা অতি অল্প সময়ের মধ্যেই শিক্ষিত সচেতন বাঙ্গালীকে মর্মাহত করেছিল, একটু লক্ষ্য করলেই রাজনারায়ণ তা নির্ণয় করতে পারতেন | সাহিত্যসমালোচনা করতে বসে তিনি সব বিষয়ে অনবধানী হয়েছিলেন সম্ভবতঃ | কিন্তু তার নিজের মনের বিস্ময়কর দেশান্ুর/গের পরিচয় কোথাও অস্পষ্ট নেই,_এ জাতীয় সমালোচনার মূলেও স্বদেশপ্রাণ রাজনারায়ণই আত্মপ্রকাশ করেছেন

মধুক্দন সম্পর্কেও রাজনারায়ণ যেমন স্থবিচার করেন নি, বঙ্কিমচন্দ্র সম্পর্কেও তাঁর ধারণা স্বচ্ছ ছিল না। উদারপন্থী ত্রাহ্ম রাজনারায়ণের দৃষ্টিতে গৌঁড়া ব্রাহ্মণ_ স্বদেশপ্রাণ আদর্শবাঁদী বঙ্কিমচন্দ্রের বিচারও তদনুরূপ হয়েছিল কিন্তু কোট- পাণ্ট,লন পরিহিত মধুস্ছদনকে আবিষ্ষার করতে কিছু পরিশ্রমের প্রয়োজন থাঁকতে পারে, বক্ষিমচন্দ্রের বিচাঁরে সে বাধা ছিল না। তবু রাজনারায়ণ জাতীয় আন্দোলনের প্রুরোধা বঙ্কিমচন্দ্র সত্বন্ধে বলেছিলেন,

"কোন কোন স্থানে তাহার বর্ণনা স্থসঙ্গত নহে এবং কোন কোন স্থানে জাতীয় ভাবের অভাব আছে, অর্থাৎ যে বিদেশীয় ব্যক্তিরা আমাঁদিগের হিন্দুজাতির রীতিনীতি অবগত হইতে চাহেন, তাহার তাহার পুস্তক পাঠ করিয়া তাহা ঠিক অবগত হইতে পারেন না ।” [বাঙ্গালা ভাষা সাহিত্য বিষয়ক বক্তৃতা পৃঃ ৫৪ ]

বঙ্কিমচন্ত্র হিন্দু জাতীয়তার সমর্থক ছিলেন,__রাঁজনীরাঁয়ণ চেয়েছিলেন শুধুই জাঁতীয়চেতন। কিন্ত হিচ্দূসংক্কার বজিত জাতীয়তার কল্পনা রাজনারায়ণেও খুব প্পষ্

প্রবন্ধ ৯০১

নেই কোথাও মধুহুদন ভবতারণ রাঁমচন্দ্রকে পাঁপবিনাশক হিসেবে কল্পন। করেন নি বলে রাজনারায়ণ ক্ষু হয়েছিলেন ! হ্তরাং রাঁজনারায়ণের স্বর্দেশপ্রেমে আবেগ যত বড় স্থান পেয়েছে যুক্তির স্থান ছিল তাঁর নীচে তাই কোথাও কোথাও রাঁজনারায়ণের দেশচিত্তীয় কিছু স্ববিরৌধ দেখা যায়। বঙ্কিমচন্দ্র রচনায়

স্বদেশপ্রেমিক রাজনারায়ণ জাতীয়ভাবের অভাব লক্ষ্য করেছিলেন কেন-_ সেটাও খুব হুবোধ্য নয়

রাঁজনারায়ণের দেশপ্রেম সম্পর্কে আরও একটি তথ্য পরিবেশন করলে দেখা যাবে, রাষ্ট্রচেতনা জাতীয়চেতনার মধ্যে সংযোগ সাধনের কোন পরিকল্পনাও রাজনারায়ণের ছিল না। পরাধীন জাতির জাঁতীয়চেতন। প্রবল হলে তা অনায়াসে রা্্রবোধেরও জন্ম দেবে এটাই স্বাভাবিক রাঁজনারায়ণ সমগ্রজাতির চেতনা জাগাবার খে বিপুল পরিকল্পনা করেছিলেন সে আলোচনা করেছি-_-পরিশেষে রাজনারাঁয়ণের একটি বক্তব্য দিয়ে দেখানে। সম্ভব যে এই জাতীয়চেতনাকে তিনি রাষ্চেতনার সঙ্গে যুক্ত করতে চান নি। ধর্চেতনার স্বাধীনতাকেও তিনি প্রসঙ্গের সঙ্গে যুক্ত করতে অনিচ্ছুক ছিলেন। জাতীয় গৌরবেচ্ছা সঞ্চারিনী সভার কর্তব্য নির্দেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন,__

প্ধন্ম রাজনীতিসংক্রান্ত বিষয়ের আন্দোলনে জাতীয় গৌরবেচ্ছা সঞ্চারিনী সভার হস্তক্ষেপ করিবার প্রয়োজন নাই |

জাতীয়ভাব বস্তটি সম্পূর্ণরূপে ধর্ম ও' রাজনীতি নিরপেক্ষ হওয়াই বাঞ্ছনীয় ধারণা ছিল রাজনারায়ণের,-তাই ত্বাকে আবেগপ্রবণ বলেছি কারণ আঁবেগবান দেশপ্রেমিক ধর্ম রাজনীতির উর্ধধবেই তার দেশপ্রেমকে প্রতিষ্ঠা করতে চান যদিও পরাধীন জাতির স্বদেশচেতনা খুব তীব্র হয়ে উঠলে রাষ্্চেতনার সঙ্গে তা যুক্ত ইবেই। বিশেষ করে বাংলাদেশে নবজাগরণের স্চনায় যে স্বদেশচেতনা জন্ম নিয়েছিল সেখানে রাষ্্রচেতনা ছিল পুরোমাত্রায় রামমোহন কিংব1 ঈশ্বরগুপ্ত কেউই বিদেশী শাসনের ভয়াবহ দিকটিকে উপেক্ষা করতে পারেন নি,_অত্যাচার শাসকোচিত বর্বরতা প্রত্যক্ষ করেছিলেন উভয়েই প্রেস আ্যাঁকট-এর বিরুদ্ধে রাঁমমোহনের রাষ্ট্রচেতনা বিক্ষু্ধ হতে দেখেছি, নীলকর আন্দোলনে ঈশ্বর গুপ্ু আত্ম- সংযম হারিয়ে আক্ষেপ করেছিলেন রাষ্ট্রচেতনাকে বাদ দিয়ে কিংবা আমাদের অধিকারের সীমা না জেনে, আবেগ উচ্ছাস স্থল করে দেশপাঁধনা বা দেশপ্রেম কোনটাই সম্ভব ছিল লা। তবু রাঁজনারায়ণ দেশপ্রেমে মগ্ন হয়েও রাজনীতি ধর্ম- সংক্রান্ত বিষয়ের আন্দোলন থেকে সচেতনভাবে দূরে থাকারই চেষ্টা করেছেন স্বদেশপ্রেমের পুর্ণ পরিণতি সম্বন্ধে তখনও ঠিক একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারেন নি'

১০০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

বলেই হয়ত ধরণের প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন | বিদ্যাঁসাগরও রাজনীতির সঙ্গে তার অক্ত্রিম সমাজসেবাকে বিযুক্ত রেখেছিলেন

রাজনারায়ণের একটি রচনাঁয় কিন্তু তাঁর রাজনীতি সচেতন মনোভাবের কিছু পরিচয় মিলবে “আশ্চর্য স্বপ্র” নামক রসরচনায় রাজনারায়ণ স্বপ্নে যে একটি আশ্চর্য ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিলেন-_তারই বিবরণ দেবার প্রয়াস পেয়েছেন স্বগ্নটি অবশ্য অকল্পনীয় হাস্যকর | নিদ্রীর পূর্বে লেখক বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর যোগ্যতা বিষয়ে আলোচনা করছিলেন--কিস্তু বিদেশীর পরদেশশাসনের যোগ্যতা সমুদ্ধে নিঃসঙ্দেহ হয়েও তিনি মন্তব্য করেছেন

"তজ্ঞন্ত চিরপরাধীনতা৷ কি বাঞ্ছনীয় হইতে পারে 1” এই সংশয় রাজনারায়ণের রাষ্্রসচেতন মনোৌভাবেরই পরিচায়ক | “জাতীয় গৌরবেচ্ছা! সঞ্চারিনী সভাকে” ধর্ম রাজনীতি থেকে দূরে রাঁখতে চাইলেও রাজনারায়ণ নিজেও জাঁনতেন জাতীয় সভা- সমিতির সঙ্গে রাজনীতির যোগাযোগ অবিচ্ছিন্ন হয়ত রাজশক্তির হাত থেকে সহজ উপায়ে এই সমিতিটিকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন বলেই কৌশলের পথটি তিনি অবলম্বন করেছিলেন উদ্ধৃত উক্তির আলোকে স্বদেশপ্রেমিক রাজনারায়ণের প্রকৃত দেশসাঁধনার উদ্দেশ্বটিই ব্যক্ত হয়েছে জাতীয়চেতন। জাগার পরই পরাধীনতার চেতন! অনায়াসেই আমাদের উত্তেজিত করবে,_-এই আশায় জাতীয়তার বাণী প্রচার করেছিলেন তিনি

“আশ্চর্য স্বপ্নে” রাজনারায়ণের হীশ্তরসবোধ উচ্ছুসিত হয়ে উঠেছে রূপকার্থ বিশ্লেষণ করলে প্রবন্ধটিতে শিক্ষণীয় বিষয়ও বড়ো কম নেই। ভারতবর্ষের পরাধীনতা৷ স্বাধীন ইংলগুবাসীর স্কন্ধে আরোপ করে প্রথমেই তিনি বিশুদ্ধ হাশ্তরসের স্বষ্টি করেছেন বিজয়ী জাঁতি সর্বদাই নিজের প্রাধান্য মহত্বের প্রচারকার্য চালায়,__বঙ্গবাসীরাও তা করেছে বিজিত জাতি সর্বদাই ঘ্িয়মান হয়ে থাকে, আত্মশক্তির ওপর আস্থা হারায় নিজের মহত্বকেও চিনে নিতে পারে না বঙ্গ- বাঁসীদের জীবনযাপনের আদর্শ থেকে সহজেই সত্য উপলব হবে প্রাীনতার আদর্শ, জলবাঁযুর উপযোগী পোঁষাকপরিচ্ছদের সুপরিকল্পিত এঁতিহা সবকিছুই পরিত্যাজ্য বিদেশীয়ান৷ অনুপযোগী হলেও গ্রাহা হয়েছে এদেশে রাজনারায়ণ এই বিসদৃশ উৎকট নব্যতস্ত্রের স্বরূপ বিশ্লেষণের জন্যই প্রবন্ধটির পরিকল্পনা করেছিলেন--তা সহজেই বোবা যায়। অবশ্য মনোভাবটি পরাধীন জাতির জীবনেই প্রত্যক্ষ করি আমরা পরাধীন ইংলগবাঁসীরাঁও এই আদর্শে চিত্রিত হয়েছে যথার্থ হাশ্যরসের উৎস এখানেই পরাধীনতা মানুষকে কি হাশ্যকর জীবন যাঁপনে বাধ্য করে-_তাই প্রমাণ মিলবে প্রবন্ধটিতে। পরাধীন ইংলগুবাসীর।

প্রবন্ধ ১০১

আমাদের গ্রীষ্মপ্রধান দেশের উপযুক্ত পৌষাক পরিধানে অভ্যস্ত হচ্ছে-_-এ সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য,-- 4

“যখন আমি '্মরণ করিলাম যে, বঙ্গদেশে পরাধীনতার কালে সাহেবি পরিচ্ছদ পরিধান শ্রীন্মপ্রধান বঙ্গদেশে কষ্টকর জানিয়াও কোন কোন বাঙ্গালী তাহা পরিধান করিতেন তখন আমি ইহাতে আশ্চর্য্য হইলাম না|”

| আশ্চর্য স্বপ্র-_বিবিধ প্রবন্ধ ]

এমন হাশ্রসাত্মক রচন1 রাজনারাঁয়ণ খুব বেশী লেখেন নি বলে আক্ষেপ হয়। দেশপ্রেমিক রাজনারায়ণ রসরচণাতেও স্বদেশপ্রেম প্রসঙ্ঘটিরই অবতারণা করেছেন গুরুগন্ভীর উপদেশাত্মক প্রবন্ধ বক্তৃতায় স্বদেশবাসীদের দেশাস্মবোধে উদ্ব,দ্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি - “আশ্চর্য স্বপ্ন” তার ব্যতিক্রম! এখাঁনে তির্যক- ভঙ্গিতে স্কদশবাসীদের চরিত্র সমালোচনা করে তাদের চৈতন্য সম্পাদনের প্রচেষ্টাটিই মুখ্য শ্বদেশপ্রেমিকের প্রবণতাটি রাজনারায়ণের সমস্ত রকমের রচনাতে দৃষ্ট হয়। রসরচনার অন্ত একটি নিদর্শন রাঁজনারায়ণের “জেঠামো” প্রবন্ধটিও লক্ষ্যণীয় “সমাজ সংস্কার” প্রবন্ধে জাতিভেদ শিথিল করার পক্ষে গ্কার অভিমতটিও তার উদার সমাঁজনীতির আদর্শকেই ব্যক্ত করে।

রাজনারাঁয়ণের পূর্ণ ব্যক্তিত্বের স্বরূপ আমাদের আলোচনায় স্থান পাঁয় নি-_কিস্ত শদেশপ্রেমই তীর ব্যক্তিত্বের প্রধানতম অবলম্বন ছিল সত্যটি বারবার উপলব্ধি করেছি তিনি 'গৌরবেচ্ছা সঞ্চারিনী সভার” পরিকল্পনা মাত্র করেছিলেন কিন্তু হিন্দুমেলা' নামে এই আদর্শেই একটি গুতিষ্ঠান পরে জন্ম নিয়েছিল; বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদ প্রবর্তনে হিন্দুমেলার দান চিরম্মরণীয়। সেদিক থেকে রাঁজনারায়ণের বপ্ন বাস্তবে রূপলাভ করেছিল বলা যেতে পারে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত স্বদেশ- চিন্তাই তাঁর সর্বপ্রধান চিন্তা ছিল, নানাভাবে সেই আবেগ তিনি প্রকাশ করেছেন প্রবন্ধে রচনায় ঘ1 ব্যক্ত হয় নি-_জীবনে তা ব্যক্ত হয়েছিল। তাই সাহিত্যিক রাঁজনারায়ণ সম্বন্ধে একটি কথা নিঃসংকোচে বলা যেতে পারে স্বদেশপ্রেমিক রাজনারায়ণ প্রাবন্ধিক রাঁজনারায়ণের চেয়ে অনেক বড়ো ছিলেন | প্রবন্ধ রচনা করে তিনি যে স্বদেশত্রত পালন করেছিলেন-_তাঁর জীবনের সাধনা তাকে অতিক্রম করেছে অশায়াসে |

বাংলা সাহিত্যের প্রথিতযশ। প্রাবন্ধিক ভূদের মুখোপাধ্যায়ের স্বদেশপ্রেম তার জীবনদর্শন ওতপ্রোত হয়ে আছে হিন্দু কলেজের মেধাবী ছাত্র ভূদেব-রাজনারায়ণ- যধূুহদন বাংল সাহিত্যের চর্চা করেছেন বিভিন্ন মৌলিক আদর্শ প্রচারের জন্ত এ'রা সহপাঠী, কিন্তু চরিত্রধর্মে এদের বিন্দুমাত্র মিল নেই। একই অধ্যাপকের কাছ

১০২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিতোো ত্বদেশপ্রেম

থেকে পাঠগ্রহণ করেও মধুক্থদন, রাঁজনারায়ণ বিংব1 ভূদেবের আদর্শ গড়ে উঠেছিল স্বত্ব আদর্শেই। এদের বিভিন্নতার আদর্শটি নিপুণভাবে বিশ্লেষণ করলেই একটি নিখু'ত যুগচিত্রের সন্ধান মিলবে ইয়ংবেহ্গল গোর উন্মাদনার আবেগে রাজনারায়ণ নিজে চঞ্চল হয়েও পরবর্তা রচনায় ভূদেবের চরিত্র বিশ্লেষণ করেছিলেন এইভাবে,

“সে তরব্গে স্বল্লাধিক পরিমাণে বিচলিত হন নাই, ভূদেববাবুর সহাঁধ্যায়ীদিগের মধ্যে সেরূপ অতি অল্পই ছিলেন। তিনি এবং তাহার ন্যায় আর ছুই একজনই কেবল সাগর মধ্যস্থিত পর্বতের হ্যায় সেই প্লাবনের মধ্যে অটলভাবে দণ্ডায়মান ছিলেন 1৮৩০

এই উক্তিতে ভূদেবচরিত্র যত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে--সহপাঠীর চরিত্র বিশ্লেষণে প্রাবন্ধিক রাঁজনারায়ণের ক্ষমতাও ততখানি লক্ষ্যণীয় হয়েছে ভূদেবচরিত্রের পর্বত- কঠিন দৃঢতাই সমালোচক সম্প্রদায়কে বিশেষভাবে মুগ্ধ করেছিল। নবজাগরণের প্রবল শক্তি ধারণ করে এবং বিন্দুমাত্র চঞ্চল না হয়ে ভূদেব যুধিষ্ঠিরশ্বৈর্যের পরিচয় দিয়েছিলেন। তাঁর জীবনচরিত পাঠ করলে জানা যাবে চাঞ্চল্য ভূদেব চরিত্রেও ছিল-.কিস্ত পিতার আদর্শহই শেষ পর্যন্ত পুত্রের জীবনে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিল | নবজাগরণের প্রভাবকে অতিক্রম করে ভূদেব শেষে প্রবক্তার আঁসনেই অধিষ্ঠিত হলেন। মধুক্দন কাঁব্যে-নাটকে কালোত্তীর্ণ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন-_ ভূদেব প্রবন্ধ রচনার দায়িত্ব তুলে নিলেন। ভূদেবের প্রবন্ধ ভূদেবের আখত্মদর্পণ বলা যেতে পারে বাংল! কাব্যের যে অভাব পূর্ণ করার জন্য ধিদেশীয় উদ্যান থেকে পুঙ্গচয়ন করে মধুত্দন সাহিত্যদেহ সজ্জিত করলেন তার প্রতিভার উপযুক্ত কীতিরূপেই তা৷ গণ্য হবে। ভূদেবের প্রজ্ঞার গভীরতার সঙ্গে পরিচিত হতে হলে তার প্রবন্ধসাহিত্যের আশ্রয় নিতে হবে; বিদেশী শিক্ষার আলোকে স্বদেশীয় রীতিনীতি সমাজবিচারের সাধনায় মগ্ন হয়েছিলেন তিনি কর্মজীবনের সঙ্গে সাহিত্য জীবনের কৌন আপাত: সাদৃশ্য হয়ত ছিল না তবু ভূদেব রাঁজকর্ম নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেও সাহিত্যজীধনের ক্ষেত্রে নিজের স্বাধীন জীবনাদর্শের কথাই ব্যক্ত করেছেন নির্ভীক ভাবে “ভূদেবচরিত' পাঁঠে জানা যাঁয় টনি সাহেব একদা] মন্তব্য করেছিলেন, “ভূদেব বাবু সি, আই, ই, হইয়াছেন এবং মাসিক পনেরশত টাকা মাহিনা পান তথাপি ব্রিটিশ বিদ্ধেষ্টা 1৮

ভূদেখকে নিপুণভাবে বিশ্লেষণ করলে উদ্ধৃত মন্তব্যের সারবস্তা অবশ্যই স্বীকার করতে হয়। তীর প্রবন্ধে স্বদেশপ্রীতি এমন ভাবে উদচ্ছুসিত হয়েছে__যাক্ে সমালোচকরা রক্ষণশীলতা বলেই ব্যাখ্য। করেছেন বটে- কিন্তু রক্ষণশীলতার সঙ্গে যে

০০০০০

৩** তুদেব চরিত ১ম ভাগ থেকে উদ্ধত। ১৮৯৪ সালের জুন মাসে “দাসী” পত্রিকায় যোগীন্ত্রনাথ বসুর লিখিত প্রবন্ধে উদ্ধ'ত। চুচু'ড়া, ১৯১৭।

প্রবন্ধ ১৬৩

গভীর স্বদেশপ্রেমও যুক্ত হয়েছিল সেকথাঁও অস্বীকার করা যায় না। নিছক রক্ষণ- শীলতাঁর মহিম। অল্প কিন্তু রক্ষণশীলতা৷ স্বাদেশিকতার যুখা মহিমাই ভূদেবের সমগ্র সাহিত্য কীতিতে ধরা পড়েছে বলে আমাদের বিশ্বাস রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে ুক্ত না হয়েও _নিপুণভাঁবে রাজকর্ম নির্বাহ করেও আমাদের দেশের লেখক সম্প্রদায় রাজনীতির বাণী প্রচার করেছিলেন আঁশ্চর্যভাবে। এবিষয়ে প্রমথনাথ বিশীর স্থচিত্তিত মতামতটি উদ্ভৃত করা দরকার

“রাজপুরুষগণ বেশ নিশ্চিন্ত ছিলেন তাহার। জানিতেন না যে, কৃতী বিশ্বস্ত রাঁজপুরুষগণের লেখনীমুখ ভারতের মুক্তিজীহনবীর ভাষাপথ খনন করিতেছে নব্য বাংলাভাষা রাজনৈতিক চেতনার ধাত্রী, পরবর্তীকালে রাজনীতিকগণ ভাষাধাত্রীর কোল হইতে সেই শিশুকে গ্রহণ করিয়া সাবালক করিয়৷ তুলিয়াছেন বিষয়ে মূল কৃতিত্ব সাঁহিত্যিকগণের, স্থুল কৃতিত্ব রাজনীতিকগণের | এই যুল কৃতিত্বে ভূদেবের দাবী সামান্য নয়।৮৩৯

কাজেই ভূদেব প্রতিবাদ করলেও টনি সাহেব যে ভূদেবকে ঠিকমতই বিচার করেছিলেন তাতে আমাদের সন্দেহ নেই এই রাজকর্মচারী সাহিত্যিক সম্প্রদীয়ই রাজনৈতিক চেতনা সঞ্চার করেছেন সৃষ্টির মাধ্যমে, কারণ সাধারণ বাঙ্গালীর সঙ্গে বৃহত্তর কর্মক্ষেত্রের যোগাযোগ ছিল সামান্য কিন্ত উচ্চশিক্ষিত বাঙ্গালীই পেশা হিসেবে রাজকর্ণ করবার সুযোগ পেতেন অভিজ্ঞতাও ছিল এদের ব্যাপক তৃদেবের কর্মজীবন আলোচন। করলে দেখা যাঁবে, কত বিচিত্র পরিবেশে বিভিন্ন অবস্থার মধ্যে কাঁলযাঁপন করতে হয়েছিল ত্বাকে। প্রস্তত মন নিয়েই ভূদেব এই জীবন পরিবেশকে গ্রহণ করেছিলেন

ভৃদ্দেবচরিত্রের মূল ভিত্তি আলোচনা করলে দেখা যাবে দেশাদর্শ স্বদেশপ্রেম তীর নিজস্ব উপলব্ধি, অতি অল্প বয়সেই তা বিকশিত হয়েছিল তাঁর চরিত্রে | তৃর্দেব- চরিতকার বিষয়ে একটি প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন। হিন্দু কলেজের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র ভৃদেব রামগোপাঁল ঘোঁষ কর্তৃক আয়োজিত প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের জন্ত তাঁর সহপাঁদদের উৎসাহ দিয়েছিলেন সহপাঠীরা জাতীয় বিষয় সম্পর্কে উন্নাসিকতা প্রদর্শন করায় ভূদেব ছুঃখিতও হয়েছিলেন চরিতকার মন্তব্য করেছেন,

"এই সময় হইতেই তিনি ইংরাজী শিক্ষার তুঁষঝাঁড়িয়া লইতেছিলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে স্বজাতিপ্রীতিও তাহার অন্তঃকরণ মধ্যে ক্রমশঃ পরিবদ্ধিত হইতেছিল ।*৩১

৩১. ভূদেব রচন। সম্ত।র---প্রমথনাথ বিশী সম্পাদিত ভূমিক1।

৩২. ভুঁদেব চরিত। ১ম ভাগ মুকুন্দদেব মুখোপাধ্যায়, চড়া, ১৯১৭।

১৩৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

পরিণত জীবনে এই স্বদেশবাৎসল্যই উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছিল। তৃদেবের স্বধর্মানুরাগ স্বজাতিবাঁৎসল্য দেশপ্রেম একান্তই তীর নিজন্ব বৈশিষ্ট্য বলা যেতে পারে। বিদেশীসাহিত্য তিনিও পড়েছিলেন-কিস্তু বিদেশীয়ানার কোথাও অন্ুকরণযোগ্য কিছু খুঁজে পান নি। তিনি নতুন করে “পারিবারিক প্রবন্ধের মধ্যে হিন্দু সমাজের রীতিনীতি, আচারবিচারের সমর্থনে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠলেন তভৃদেবের এই মুগ্ধতাঁকে সমালোচকরা কখনও অনুদারতা কখনও রক্ষণশীলতা৷ গৌঁড়ামী বলেছেন আসলে দেশপ্রীতির আলোকে ভূদেবের জাতীয় অতিপ্রশংসার একটা ব্যাখ্যা চলতে পারে যা অন্য কিছু দিয়েই বোঝানো সস্ভব নয়। সে যুগের অন্তান্ত মনীষীরাঁও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোন একটি চূড়ান্ত আঁদর্শকেই গ্রহণ করতে চাইছিলেন মধুক্মদন-রাঁজনারায়ণ পরবর্তীকালে ভিন্ন আদর্শ বরণ করেও প্রাচীন হিন্ুসমাজের সঙ্গে যোগ রাখতে চাঁন নি। মধুহুদন ্রী্ান, রাজনারায়ণ ব্রাহ্ম হলেন, - এদের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য বজায় রেখে স্বধর্ম স্সমাজে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করলেন ভূদেব | ভূদেবের স্বধর্মপ্রীতির মধ্যেও তাই আবেগ উচ্দাসেরই প্রাধান্থ। স্বধর্ষের আদর্শ পালন করাও যে একটা বীরোচিত কর্ম, ভূদেৰ নিজের পরিপার্খশ থেকে এই মহাঁসত্যটিই আবিষ্কার করেছিলেন তাই মধুহুদন-কষ্থমোহনের মত কিংবা দেবেন্দ্রনাথ, রাজনারায়ণের মত ভৃূদেবও সে যুগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। স্বধর্মনিষ্ঠা যে যুগে প্রশংসিত হয় না-_বিদজ্জনেরা তথা শিক্ষিত ব্যক্তিরা অভিনব বক্তব্য অভিনবভাবে প্রকাশ করতেই যখন ব্যস্ত ভূদেব তখন নির্তীকতার সঙ্গে আপন সম্প্রদায়ের মহিম। প্রচারে ব্রতী হয়েছিলেন। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের পরিবেশে | ব্রাহ্ম মত সমর্থন না করে এবং বিধবা বিবাহ সমর্থন না করে] ভূদেবও যে সত্যিই আপন শক্তি মৌলিক আদর্শকেই গ্রহণ করেছিলেন তাতে বিস্ময়ের যথেষ্ট হেতু আছে

ভূদেবের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে সাহিত্য” সম্পাদক বলেছিলেন-_

“তাহার চরিত্রের যূল হ্ত্র তাহার মৌলিকতা। তিনি ইউরোপীয় সাহিত্য সভ্যতার পূর্ণ দীক্ষা গ্রহণ করিয়াছিলেন, কিন্ত কখনও আত্মবিসর্জন করিয়া, পাশ্চাত্ত্য পথের পথিক হন নাই। স্বদেশের ধর্মে, শাস্ত্রে, সমাজে, সংস্কারে, সাহিত্যে তাহার প্রভৃত আস্থা, অত্যন্ত অনুরাগ ছিল 1৩৩

এই মৌলিকতাই গভীর স্বদেশচেতনার আকারে উচ্ছুসিত হয়েছে ত্র প্রবন্ধে যুগবিচারে ভূদেব প্রাচীনপস্থী সন্দেহ নেই-_কিল্তু এই সচেতন প্রাচ্যাদর্শ ইতিপূর্বে

৩৩, সুরেশচন্ত্র সমাজপতি-সাহিত্য" জ্যেষ্ঠ, ১৩.১।

প্রবন্ধ ১০৫

কোনো বাঙ্গালীর চরিত্রে দেখা যায় নি বিদ্যাসাগর রামমোহন যে উদার আদর্শে সমগ্র জাতির প্রাণে আধুনিকতার স্পর্শ সঞ্চার করেছিলেন, ভূদেবের আদর্শ ছিল তার বিপরীত। তিনি সনাতন আদর্শের পূর্ণ পুনরুজ্জীবন চেয়েছিলেন হিচ্দু গৌরবের বিস্বত অধ্যায়ের আলোচনা করে ভূদেব বাঙ্গালী তথা ভারতবাসীকে আত্মসচেতন করে তোলার চেষ্টা করেছিলেন প্রসঙ্গে ইতিহাসপ্রেমিক বস্কিমচন্দ্রের আদর্শের কথ] উল্লেখ করা চলে বঙ্কিমচন্দ্র বাংলার অতীত ইতিহাস অনুসন্ধান আলোচনা করে অতীতের গৌরবময় যুগটিকেই পুনরুজ্জীবিত করার কথা চিন্তা করেছিলেন সাহিত্যক্ষেত্রে ভূদেবের আদর্শবাদের সঙ্গে বক্কিমচন্দ্রের দৃষ্টিভজির কিছু সাদৃশ্য লক্ষ্য করি দুজনেই বাঙ্গালীর চারিত্রিক বিশুদ্ধি আত্মবোধ জাগাতে চেষ্টা করেছিলেন এবং এজন্য বাঙ্গালীর এতিহাই অন্নুসরণ করেছিলেন জাতীয়তাবোধের চেতনার মূলেই যে স্বজাতিচেতন! স্বধর্মচেতনা প্রবলভাবে সক্রিয় তথ্য উভয়ের রচনাতেই মিলবে | তবে স্বাধীনতার আন্দোলন ভূদেবের কল্পনাতেও স্বান পাঁয় নি, বঙ্কিমচন্দ্র আসন্ন স্বাধীনতা আন্দোলনের চিত্রটিই “আনন্দমঠে” বিস্তৃতভাবে ব্যাথ্য। করেছেন | বিদেশী শিক্ষাদীক্ষা ব্যাপারে তীকে গ্রাস করে নি, সহায়তাই করেছিল 'ভূদেবরচিত' অবতরণিকায় জীবনী লেখকের মন্তব্যটি স্মরণযোগ্য |

“তিনি স্বধর্মপালন, স্বদেশপ্রীতি, সহৃদয়তা, সদাচার, সৎকর্মে সম্মিলন, স্বাবলম্বন এবং সাত্বিক উদ্যমের প্রচারক | ..এই সকল সাত্বিক উদ্যমের মহৎ শিক্ষা, তাহার ্রন্থাবলীতে, এবং নিজের জীবনে দিয়া ভূদেববাব্‌ পূর্ণ সর্বাঙ্গ সনাতন হিন্দুধর্মের পুনরুখান সহ বৈধ স্বদেশীযুগের প্রবর্তন করিয়া গিয়াছেন।”--এ মন্তব্যটি যথার্থ ভূদেবের লেখা প্রবন্ধসমষ্টি আলোচনাকালে তার মনোভাব আরও স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হবে। ভূদেবের প্রবন্ধই বাংল সাহিত্যের প্রথম সার্থক প্রবন্ধ রূপে গণ্য হয়। ছাত্রপাঠ্য রচনার বাইরে-_সমাজের সাধারণের জন্য কিছু সাহিত্যিক প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন তিনি |

১৮৫৬ সালে ভৃূদেবের শিক্ষাবিধায়ক প্রস্তাব” [শিক্ষাবিষয়ক প্রস্তাব ?] প্রকাশিত হয় এই গ্রন্থটিতে শিক্ষাব্রতী ভূদেবের বাস্তব অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে শিক্ষাপদ্ধতি যত নিখুত হবে--দেশের ভবিষ্যৎ তত বেশী আশাপ্রদ হয়ে উঠবে ইংরাজী শিক্ষাদীক্ষার প্রবর্তন প্রসারে ভৃদেব খুশী কিন্তু শিক্ষাপদ্ধতি যত বাস্তবাহুগ দেশোঁপযোগী হয় তারই পরামর্শ দিয়েছেন তিনি প্রবন্ধগ্রস্থটিতে প্রথম শিক্ষকদেরও উপযুক্ততার প্রসঙ্গ আলোচনা করেছেন তিনি। “বজদেশের উন্নতি সাধনকল্লে এমন স্থযৌগ আর কখন হয় নাই ।*-_ভূদেব শিক্ষাব্যবস্থার সুষ্ঠু আয়োজনে সেজন্যই উদ্যোগী হয়েছিলেন | শিক্ষা যত ব্যাপকভাবে জ্ঞানলাভের উপযোগী হবে

১০৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাঁংল। সাহিত্যে ব্বদেশপ্রেম

ততই তা সার্থক ব্যাপারে একটি দৃষ্টান্ত সম্বন্ধে আলোকপাত করা দরকার ইতিহাঁসশিক্ষা বিষয়ে ভূদেবের পরামর্শটি লক্ষ্যণীয় বাঙ্গালী ছাত্র বাংলার ইতিহাস সম্বন্ধে সঠিক তথ্য লাভ করুক ছিল তৃদেবেরই পরামর্শ হুতরাং ইতিহাসশিক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বঙ্গে যবনাঁধিকারের বৃত্তান্তটিই নির্বাচন করেছেন-_-এবং শিক্ষণীয় বিষয়রূপে গণ্য করেছেন বঙ্কিমচন্দ্র বাংলার ইতিহাসের প্রকৃত তথ্য নির্ণয় করারও বহু আগে প্রকৃত ইতিহাঁস ভূদেব অকপটে বিবৃত করেছেন এই গ্রন্থটিতে

বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিক্ষাব্রতীরূপে আজীবন ভূদেব আদর্শ শিক্ষকের জীবন যাঁপন করেছিলেন,-_“ভূদেব চরিতে' তাঁর উল্লেখযোগ্য বিবরণ আছে “এডুকেশন গেজেট” “শিক্ষাদর্পণে” ভূদেব বন্ধ প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন এই জাতীয় ক্ষুদ্র প্রবন্ধেও ভূদেব বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা বিবিধ বিষয় নিয়ে যে আলোচনা করেছিলেন-_-পরবর্তীকালে তা “বিবিধ প্রবন্ধের শিরোনামে পৃথকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। এই প্রবন্ধ রচনার প্রেরণ এসেছিল নানাজাতীয় বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে জীবনচরিতে ভূদেবের সমগ্র কর্মজীবনের যে চিত্র পাই তাতে আদর্শবাদী ভূদেব প্রতিটি কাজে কি ভাবে জীবনাদর্শ রক্ষা করে চলতেন তাঁর বিনরণ আছে।

"ভিন্ন ধর্মীবলম্বী এবং ভিন্ন সমাজের লোকের মুখে তাহার প্রগাঢ় ভক্তির আধার আর্্যশাস্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধার অভাবজনিত--কোনওরূপ তাচ্ছিল্যের কথা পাছে শুনিতে হয়, এই ভয়ে তিনি নিজে শাস্ত্রের উল্লেখ করিতেন ন11%

| ভূদেবচরিত প্রথম ভাগ পৃঃ ২৬২ 7

আত্মরক্ষীর জন্য, সম্মনি রক্ষার জন্য, ভূদেব উত্তেজিত হতেন না-সংযম পালন করতেন প্রতিবাদের প্রয়োজন হলে প্রতিবাদ করতেন তীব্রভাবে | স্বধর্মরক্ষা রাঁজকর্ম রক্ষা একই সঙ্গে উভয়টিই রক্ষা কর। সে যুগে কঠিন ব্যাপার ছিল তৃর্দেব অবশ্য উভয়টিই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে রক্ষা করতে পেরেছিলেন

স্বদেশপ্রেম না থাকলে এই প্রখর চেতনাঁটিই থাকত না। ভৃদেবের সঙ্গে সে যুগের সরকারী বেসরকারী বহু গণ্যমান্ত ইংরেজের আলাপ ছিল। তীব্র স্বধর্ম- চেতন রক্ষা করে তিনি কি ভাবে সকলের শ্রদ্ধাভাজন হয়েছিলেন তার পরিচয়ও অনেক রয়েছে সে যুগের ইংরেজ আমাদের বিচার করত যেভাবে তার একটি দৃষ্টান্ত 'ভূদেব চরিত” থেকে উদ্ধার করা যায়। একদা রেভারেও হিল ভূদেবকে বলেছিলেন,

“যে ভাষায় যে বিষয়ের ঠিক প্রতিশব্দ নাই, সে জাতির মধ্যে সে ভাবও নাই। আর বাঙ্ষালায় যখন পেষ্রিয়টিস্ম [ স্বদেশহিতৈষিতা ] কথার অনুরূপ বাক্য ইংরাজাগমনের পূর্বে ব্যবহৃত ছিল না, তখন দেশে এঁ ভাবও ছিল না বলা যাইতে পারে 1৮ [ ভূদেবচরিত -_পৃঃ ১১৪ ]

প্রবন্ধ ১৬০৭

জাতীয় উক্তি থেকে ভারতবাসী সম্বন্ধে ইংরেজের মনোভাবটিই প্রতিবিদ্বিত হয়েছে বক্তব্য প্রতিবাঁদযোঁগা বলেই উত্তর দিয়েছিলেন ভূদেব,--

“ভারতবাঁসীর ধর্মপরায়ণতা বরাবরই স্বজাতিবাৎসল্য অপেক্ষা অধিক ধর্মাধর্ম নিবিশেষে স্বজাতিবাঁৎসল্য--স্বজাতির জন্য অধর্মও করা যায় এভাঁব-_-এদেশে ইংরাজী শিক্ষা প্রবেশের পূর্বে বোঁধহয় কখন শোৌনাই ছিল না, তবে জন্মভূমিকে জননীর সহিত তুলনা করিয়া এদেশের লোক স্বদেশের প্রতি গভীর ভক্তি প্রকাশ করিত বটে 1৮৩৪

জাতীয়তাবোধ বা স্বদেশপ্রেম সম্পর্কে আমরা যত রকম আলোচনা করেছি তার মধ্যে ভূদেবের এই উক্ভিটির একটি বিশেষ মূল্য স্বীকার করতে হয়। স্বদেশপ্রেম বা স্বজাতিবাঁৎসল্য বলতে যে ঠিক কি বোঝায় এবং পাঁশ্চাত্যদেশীয়রা বিষয়টিকে যে ভাঁবে গ্রহণ করেছে--প্রাচ্যাদর্শে ঠিক সেটি গৃহীত হয় নি__হওয়া উচিতও নয়-_এ ছিল তার মত্বু। কারণ প্রাচ্যাঁদর্শ যে ধর্মকে আরও বড় স্থান দিয়েছে--তা৷ মানবধর্ম, দেশধর্মের চেয়ে অনেক গভীর বস্ত। ভূদেব দেশপ্রেম এবং ধর্ম উভয়টিকেই পৃথক ভাবে গ্রহণ করেছেন এবং ধর্মরক্ষার প্রনোদনা তীর চরিত্রের গভীরে প্রভাব বিস্তার করেছিল বঙ্কিমচন্দ্রও পাশ্চাত্য পোট্রিয়টিজ ম-এর প্রশংসা করেন নি,_ভৃদেব আরও অনেক আগেই এই বিষয়টিই আলোচনা করেছেন ধর্মভিত্তিক দেশপ্রেম ভূদেব চরিত্রের সহজাত অন্থভব-_শুধু দেশপ্রেম বলে কোন বিশেষ অনুভূতির প্রসঙ্গ তাঁর আলোচনায় স্থান পায় নি। তবে সেষুগে নিছক দেশপ্রীতিব আবেগটিও জাঁতির চরিত্রে লক্ষ্য করেছিলেন ভূদেব একটি প্রবন্ধে তিনি বলেছিলেন-_.

“যখন হিন্দু কলেজে পড়িতাম তখন সাহেব শিক্ষক বলিয়াছিলেন যে, হিন্দু জাতির মধ্যে হদেশীনুরাগ নাই। কারণ, ভাবার্থ প্রকাণক কোন কার্্যই কোন ভারতবর্ষীয় ভাষায় নাই তাহার কথায় বিশ্বাস হইয়াছিল এবং সেই বিশ্বাস নিবন্ধন মনে মনে যৎপরোনাস্তি ছুঃখান্ুভব করিয়াছিলাম। এক্ষণে জানিয়াছি যে আধ্য- বংশীয়দিগের চক্ষৃতে বায়ান্ন পীঠ সমন্বিত সদুদায় মাতৃভূমিই সাক্ষাৎ ঈশ্বরীদেহ 1৮৩৫

[ অধিকারী ভেদ স্বদেশান্থরাগ, বিবিধ প্রবন্ধ ২য় ভাগ ]

এই উক্তিতে দেশপ্রেম ধর্মচেতনীর সমন্বয় দেখা যায়। এদেশবাসীর মনে দেশপ্রেমের অনুভূতি ছিল না, এই অপবাদে ভূদেব একদা মুহমাঁন হয়েছিলেন কিন্তু যে মুহূর্তে ধর্মচেতনার সঙ্গে দেশপ্রেমের সম্পর্ক আবিষ্কার করেছেন সে মৃহূর্তেই তাঁর সমন্ত দ্বিধা দ্বন্দের অবসান ঘটেছে এই নবলন্‌ স্বদেশচেতনাই ভূদেব চরিত্রের

৩৪. ভূদেব চরিত ! ২য় ভাগ। মুকুন্দদেব মুখোপাধ্যায়,_পৃঃ--১১৪ ৩৫. তৃদেব মুখোপাধ্যায়, বিবিধ প্রবন্ধ ২য়ভাগ। হুগলী, ১৮৯৫

১০৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেষ

বিশিষ্টতা নির্দেশে করছে উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের স্বদেশপ্রেম কল্পনায় ভূদেবের এই অভিমতটির পৃথক আবেদন রয়েছে বিদেশী সাহিত্যের স্বদেশপ্রেষ ধর্মনির্ভর প্রক্কত দেশচেতনার পার্থক্টি ভূদেব প্রবন্ধনাহিত্যে যুক্তি তর্কের সাহায্যে প্রতিপন্ন করেছেন। ভূদেবের শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ গ্রন্থটিতে এই আলোচনাই স্থান পেয়েছে “সামাজিক প্রবন্ধ” ভূদেবের দেশচেতনা, ধর্মচেতনা জাতীয়চেতনাঁর স্বরূপ প্রকাশ করেছে সেদিক থেকে বাংলা সাহিত্যে এই প্রবন্ধ গ্রন্থটি অসাম্বান্ত সংযোজন বলা যেতে পারে গ্রন্থে বিশিষ্ট দেশচিন্তার আলোচনাই মুখ্যত স্থান পেয়েছে-স্বদেশপ্রেম ভিত্তিক জাতীয় আলোচন! গ্রন্থের প্রয়োজনও সে যুগেই ছিল। কিন্ত এই গ্রন্থটি ছাড়া দ্বিতীয় কোন আলোচনা গ্রন্থ বাংল! প্রবন্ধসাহিত্যে নেই বলে ভৃদেবের গ্রন্থটিকে বিশেষ মূল্য দিতে হয়। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল ভূদেবের জীবিতকালে প্রকাশিত সর্বশেষ এই গ্রন্থটি আলোচনা করলেই স্বদেশপ্রেম সম্পর্কে শিক্ষিত-প্রজ্ঞাবান-স্যদেশপ্রাণ বাঙ্গালীর মনোভাব ধরা পড়বে “বিবিধ প্রবন্ধের অনেক রচনায় ভূদেবের দেশচিত্তার স্বচ্ছরূপ ধরা পড়েছে-কিন্ত “সামাজিক প্রবন্ধে অত্যন্ত পারদশিতার সঙ্গে তৃদেব সমস্ত বক্তব্যের, এককথায় তাঁর সারাজীবনের আদর্শের সার সংকলন করেছেন। প্রাবন্ধিক ভূদেবের অেষ্ঠত্ব অনুসন্ধানের জন্য যেমন “সামাজিক প্রবন্ধ” সমালোচনার প্রয়োজন, দেশপ্রেমী ভূদেবের বৈশিষ্ট্য অনুসন্ধানের জন্য তেমনিই “সামাজিক প্রবন্ধের'ই শরণাপন্ন হতে হয় | “সামাজিক প্রবন্ধে সে যুগের যথার্থ সামাজিক অবস্থা মানসিক চিন্তাধারার পরিচয় পাঁওয়। যাবে মানসিক চিস্তাধারাই সমাজের গতি নিয়ামক ভূদেব উনবিংশ শতাব্দীর একমাত্র চিন্তা, জাতীয়তার চিন্তাকেই গ্রন্থে বিশ্লেষণ করেছেন 'ভূদেব রচন। সম্ভারের' ভূমিকায় সার্থক সমালোচনায় প্রমথনাঁথ বিশী বলেছেন-_

“এই গ্রস্থে লেখক 'জাতীয়ভাব, শব্দের দ্বারা জাতীয়তা বা ন্তাশনালিজমকে বুঝবিয়াছেন | জাতীয়তা সম্বন্ধে যুগে সকলকেই চিন্তা করিতে হইয়াছে, রাজনারায়ণ, বঙ্কিম, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ-_-সকলেই জাতীয়তা সম্বন্ধে অভিমত প্রকাশ করিয়াছেন ভূদেবের মতের সঙ্গে তাহাদের মতের মৌখিক মিল আছে সত্য মত প্রকাশে ভূদেব রাঁজনারায়শ ছাড়া অন্ত সকলের পুরোবর্জী। কিন্তু ভূদেবের শ্রেত্ব এই যে তাহার অভিমত পূর্ণাঙ্গ, সর্বতোব্যাঁপী | আর সকলে যাহা খণ্ডশ প্রকাশিত ভূদেবে তাহা সর্ব অবয়ব সমন্থিত। ভূদেবের জাতীয়তা সম্বন্ধে ধারণাঁকে অনায়াসে উনিশ শতকের বাঙালী মনীষীর ধারণ! বলিয়া গ্রহণ করা যাইতে পারে ।”

[ ভূদেব রচন। সম্ভার পৃঃ ১/০ 7

প্রবন্ধ ১০৪৯

“সামাজিক প্রবন্ধ৮ রচনার উদ্দেশ্য গ্রন্থের আভাষে লেখক ব্যক্ত করেছেন “জাতীয়ভাব” ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যেই গ্রন্থের পরিকল্পন। এবং বিদেশী শাসনের ফলাফল ও, ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে সমাজকে একটি স্থনিয়ন্ত্রিত এবং স্থচিত্তিত পথে চালনা করাই লেখকের উদ্দেশ্য গ্রন্থটির কোনে! সর্বজনীন আবেদন থাকতে পাঁরে না $-_ শুধুমাত্র আমাদের সমাজের প্রকৃত অবস্থার পটভূমিকায় যে গ্রন্থের কল্পনা--তার সঙ্গে অন্য দেশ অন্য জাতির কোন সংশ্রব ন। থাকাই স্বাভাবিক তাই তিনি বলেছেন, “একখানি সর্বদেশ সাধারণ সমাজতত্ গ্রন্থ প্রণয়নের উদ্দেশে, অথবা রাজনৈতিক কোনো প্রকার আন্দোলনের সহকারিতা কারবার নিমিতে, এই প্রবন্ধগুলি লিখিত, হয় নাই [ গ্রন্থের আভাষ ] জাতীয়তা সম্বন্ধে এমন স্চিস্তিত প্রবস্গ্রন্থ রচনা করেও লেখক কোনো নতিক অঞ্ন্দোোলনের কল্পনাও করতে পারেন নি। পরাধীন জাতির মধ্যে তীয়তার চেতন! সঞ্চারের অবশ্বস্তাবী ফল রাজনৈতিক আন্দৌোলন। লেখক ভিপূর্বেও রাঁজনৈতিক আন্দোলনের প্রসঙ্গে ধরণের মন্তব্য করেছেন,_তিনি. উজবিদ্বেষ কল্পনা করতে পারেন নি একটি প্রবন্ধে ইতিপূর্বে তিনি মনোভাব: কত করেছেন, “এ দেশীয় সাধারণ প্রজা সকল অবস্থাতেই রাজভক্ত আছে এবং নিজের গুণেই রকাল তাহা থাকিবে |” [ রাঁজভক্তি, বিবিধ প্রবন্ধ ২য় ভাগ ] তৃদেবের গ্রন্থে আন্দোলন স্থষ্টির মত উত্তেজক আলোচনা নেই এবং লেখক নিজেই ান্দোলন সমর্থন করতেন না। কিন্তু লেখকের অভিমত যাই হোক না কেন-__ দীতীয় ভাব” অংশটিতে পরোক্ষভাবে আন্দোলনের যূল বাঁণীই প্রচার করেছেন। সে গর প্রত্যেক লেখকই শেষ পর্যন্ত রাঁজাহ্ুগত্য প্রদর্শন করেছিলেন প্রথাগত ভাবে, গাোতে আন্তরিকতার অভাবই সর্বত্র লক্ষ্য করেছি ভৃদেবেও তার ব্যতিক্রম ছিল না াচীন বাংলা সাহিত্যের দেবদেবী তুষ্টির প্রথাগত রীতি লঙ্ঘন করার উপায় ছিল না, -উনবিংশ শতাবীর স্বদেশপ্রেমিক লেখকরাও ইংরাঁজ তুষ্টির রীতি লঙ্ঘন করেন নি। টাতে আন্তরিকতার অতাব ছিল অবশ্যই কিন্তু রাজরোষ এড়িয়ে যাওয়ার উৎকৃষ্ট পস্থা ইসেবেই গণ্য করা চলে একে 'সামাজিক প্রবন্ধের” প্রথম অধ্যায়ে "জাতীয় ভাব বস্তটি ব্যাখ্যা করেছেন লেখক। কানো শ্রদ্ধেয় ইউরোপীয়ের সঙ্গে কথোপকথনচ্ছলে তিনি অংশটির অবতারণা রেছেন। নিছক প্রবন্ধ রচনায় সাধারণত যে রীতি অবলম্বিত হয় ভূদেব সে পথ

করেছিলেন এতে বিষয়বস্তটি অনেক সহজেই আকর্ষণীয় হতে পেরেছে আলোচনাঁতে ভূদেবের স্বদেশচিন্তীর একটি শ্বচ্ছ ধারণা লাভ করি। সমগ্র

১০৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

'বিশিষ্টতা নির্দেশে করছে উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের স্বদেশপ্রেম কল্পনায় ভৃূদেবের এই অভিমতটির পৃথক আবেদন রয়েছে বিদেশী সাহিত্যের স্বদেশপ্রেম ধর্মনির্ভর প্রকৃত দেশচেতনার পার্থক্যটি ভূদেব প্রবন্ধসাহিত্যে যুক্তি তর্কের সাহায্যে প্রতিপন্ন করেছেন ভূদেবের শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ গ্রন্থটিতে এই আলোচনাই স্থান পেয়েছে “সামাজিক প্রবন্ধ ভূদেবের দেশচেতনা, ধর্মচেতনা জাতীয়চেতনাঁর স্বরূপ প্রকাশ করেছে সেদিক থেকে বাংলা সাহিত্যে এই প্রবন্ধ গ্রন্থটি অসামান্ত সংযোজন বলা যেতে পারে গ্রন্থে বিশিষ্ট দেশচিন্তার আলোচনাই মুখ্যত স্থান পেয়েছে--স্বদেশপ্রেম ভিত্তিক জাতীয় আলোচনা গ্রন্থের প্রয়োজনও সে যুগেই ছিল কিন্তু এই গ্রন্থটি ছাড়া দ্বিতীয় কোন আলোচনা গ্রন্থ বাংল প্রবন্ধসাহিত্যে নেই বলে ভূদেবের গ্রন্থটিকে বিশেষ যৃল্য দিতে হয়। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল ভূদেবের জীবিতকালে প্রকাশিত সর্বশেষ এই গ্রন্থটি আলোচনা করলেই স্বদেশপ্রেম সম্পর্কে শিক্ষিত-প্রজ্ঞাবান-স্বদেশপ্রাণ বাঙ্গালীর মনোভাব ধরা পড়বে | “বিবিধ প্রবন্ধের অনেক রচনায় ভূদেবের দেশচিন্তার স্বচ্ছরূপ ধরা পড়েছে-কিন্তু “সামাজিক প্রবন্ধে" অত্যন্ত পারদশিতার সঙ্গে ভূদেব সমস্ত বক্তব্যে, এককথায় তাঁর সারাজীবনের আদর্শের সার সংকলন করেছেন। প্রাবন্ধিক ভূদেবের শ্রেষ্ঠত্ব অনুসন্ধানের জন্য যেমন "সামাজিক প্রবন্ধ” সমালোচনার প্রয়োজন, দেশপ্রেমী ভূদেবের বৈশিষ্ট্য অনুসন্ধানের জন্য তেমনিই “সামাজিক প্রবন্ধের"্ই শরণাপন্ন হতে হয় “সামাজিক প্রবন্ধে সে যুগের যথার্থ সামাজিক অবস্থা মানসিক চিন্তাধারার পরিচয় পাওয়া যাবে যাঁনসিক চিন্তাঁধারাই সমাজের গতি নিয়ামক তভৃদেব উনবিংশ শতাব্দীর একমাত্র চিন্তা, জাতীয়তার চিন্তাকেই গ্রন্থে বিশ্লেষণ করেছেন। 'ভূদেব রচনা সম্তারের” ভূমিকায় সার্থক সমালোচনায় প্রমথনাথ বিশী বলেছেন-_

“এই গ্রন্থে লেখক “জাতীয়ভাব' শব্দের দ্বারা জাতীয়তা বা স্তাঁশনালিজমকে বুঝিয়াছেন জাতীয়তা সঙ্বন্ধে যুগে সকলকেই চিন্তা করিতে হইয়াছে, রাজনারায়ণ, বঙ্কিম, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ--সকলেই জাতীয়তা সম্বন্ধে অভিমত প্রকাশ করিয়াছেন | ভৃদেবের মতের সঙ্গে তাহাদের মতের মৌখিক মিল আছে সত্য মত প্রকাশে ভূদেব রাঁজনারায়ণ ছাড়া অন্ত সকলের পুরোবর্তা। কিন্তু ভূদেবের 'শেষ্টত্ব এই যে তাহার অভিমত পূর্ণাঙ্গ, সর্বতোব্যাপী আর সকলে যাহা খণ্ডশ প্রকাশিত ভূদেবে তাহা সর্ব অবয়ব সমন্থিত। ভূদেবের জাতীয়তা সম্বন্ধে ধারণাকে '্অনায়াসে উনিশ শতকের বাঙ্গালী মনীষীর ধারণা বলিয়া গ্রহণ করা যাইতে পারে ।”

[ ভূদেব রচন। সম্ভার পৃঃ ১/০ ]

প্রবন্ধ ১০৯

“সামাজিক প্রবন্ধ” রচনার উদ্দেশ্য গ্রন্থের আভাষে লেখক ব্যক্ত করেছেন "জাতীয়ভাব* ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যেই গ্রন্থের পরিকল্পনা এবং বিদেশী শাসনের ফলাফল ও, ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে সমাজকে একটি স্বনিয়ন্ত্রিত এবং সুচিন্তিত পথে চালনা করাই লেখকের উদ্দেশ্য গ্রন্থটির কোনো সর্বজনীন আবেদন থাঁকতে পারে না ;-_ শুধুমাত্র আমাদের সমাজের প্রকৃত অবস্থার পটভূমিকায় যে গ্রন্থের কল্পনা--ভার সঙ্গে এন্ত দেশ অন্য জাতির কোন সংশ্রব ন৷ থাকাই স্বাভাবিক তাই তিনি বলেছেন,

"একখানি সর্বদেশ সাধারণ সমা'জতত্ব গ্রন্থ প্রণয়নের উদ্দেশে, অথবা রাজনৈতিক কোনো! প্রকার আন্দোলনের সহকারিত। কারবার নিমিতে, এই প্রবন্ধগুলি লিখিত, হয় নাই ।” [গ্রন্থের আভাষ ]

জাতীয়তা সম্বন্ধে এমন স্থচিস্তিত প্রবস্ধগ্রন্থ রচনা করেও লেখক কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনের কল্পনাও করতে পারেন নি। পরাধীন জাতির মধ্যে জাতীয়তার চেতনা সঞ্চারের অবশ্যস্তাবী ফল রাজনৈতিক আন্দোলন। লেখক ইতিপূর্বেও রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রসঙ্গে ধরণের মন্তব্য করেছেন,_তিনি রাঁজবিদ্বেষ কল্পনা করতে পারেন নি একটি প্রবন্ধে ইতিপূর্বে তিনি মনোভাব ব্যক্ত করেছেন,

“এ দেশীয় সাধারণ প্রজা সকল অবস্থাতেই রাজভক্ত আছে এবং নিজের গুণেই চিরকাল তাহা থাকিবে 1৮ [ রা'জতক্তি, বিবিধ প্রবন্ধ ২য় ভাগ ]

ভূদেবের গ্রন্থে আন্দোলন সৃষ্টির মত উত্তেজক আলোচনা নেই এবং লেখক নিজেই আন্দোলন সমর্থন করতেন না। কিন্তু লেখকের অভিমত যাঁই হোক না কেন-_ 'জাতীয় ভাব” অংশটিতে পরোক্ষভাবে আন্দোলনের মূল বাঁণীই প্রচার করেছেন। লে যুগের প্রত্যেক লেখকই শেষ পর্যন্ত রাঁজান্ুগত্য প্রদর্শন করেছিলেন প্রথাগত ভাবে, তাতে আন্তরিকতার অভাবই সর্বত্র লক্ষ্য করেছি ভূদেবেও তার ব্যতিক্রম ছিল না। প্রাচীন বাংল। সাহিত্যের দেবদেবী তুষ্টির প্রথাগত রীতি লঙ্ঘন করার উপায় ছিল না, --উনবিংশ শতাব্দীর স্বদেশপ্রেমিক লেখকরাও ইংরাজ তুষ্টির রীতি লঙ্ঘন করেন নি। তাতে আন্তরিকতার অভাব ছিল অবশ্যই কিন্তু রাজরোষ এড়িয়ে যাওয়ার উৎকৃষ্ট পন্থা হিসেবেই গণ্য কর চলে একে

সামাজিক প্রবন্ধের” প্রথম অধ্যায়ে জাতীয় ভাব" বস্তুটি ব্যাখ্যা করেছেন লেখক। কোনে শ্রদ্ধেয় ইউরোপীয়ের সঙ্গে কথোপকথনচ্ছলে তিনি অংশটির অবতারণা করেছেন। নিছক প্রবন্ধ রচনায় সাধারণত যে রীতি অবলম্িত হয় ভৃদেব সে পথ বর্জম করেছিলেন এতে বিষয়বস্তটি অনেক সহজেই আকর্ষণীয় হতে পেরেছে এই আলোচনাঁতে ভূদেবের স্বদেশচিন্তার একটি স্বচ্ছ ধারণা লাত করি। সমগ্র

১১৩ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

প্রবন্ধটিতে উদ্ধৃতিযোগ্য এমন অনেক উল্লেখযোগ্য অংশ রয়েছে-_উদ্ৃতি বাহুল্য ঘটার আশঙ্কা থাকা সত্বেও তা মোটামুটি উপস্থাপনের চেষ্টা করব পূর্বের আলোচনায় দেখেছি, ভূদে স্বদেশপ্রেম বলতে পাশ্চাত্য দেশাত্মবোধক গ্রহণ করেন নি। স্বকীয় মতামত দিয়ে পাশ্চাত্য দেশপ্রেমকেও ব্যাখ্যা করে এদেশীয় লোকের যথার্থ স্বদেশ- চেতনার স্বরূপ নির্ণয় করেছিলেন তিনি

ভূদেবের সমসাময়িক যুগে সর্বসাধারণের কাছে দেশপ্রেম একটি মহৎ উপলন্দি ছিল, __কাব্যে-নাটকে-উপন্তাঁসে এই ধারণাঁটিই উচ্ছ্বসিত হয়েছে এই দেশপ্রেম একট। আবেগের ঘারাই সৃষ্ট পরাধীনতার চেতনা যুক্ত হয়ে দেশপ্রেম মুখ্যতঃ অতীত ইতিহাস অতীত স্মৃতিকে অবলম্বন করেছিল আর্য ইতিহাসের সঙ্গে বঙ্গ ইতিহাস বিচ্ছিন্নতা হারালেও কবি সাহিত্যিকগণ সেই স্থদূর অতীতকেও যূর্ত-প্রাণবন্ত প্রত্যক্ষ করে তুলেছিলেন আর্যমহিমাঁর দ্বারা উ্ধদ্ধ হয়ে বর্তমান বাংলাদেশের মাটিতে হারা যে ব্বদেশপ্রেমের উদ্বোধন ঘটিয়েছিলেন-__ভূদেব ঠিক সে উপলব্ধির ছারা প্রভাবিত নন। “সামাঁজিক প্রবন্ধ” রচনীরও বহু আগে বাক্গলাদেশে হিন্দুমেলা, জীতীয় নাট্যশালা-_-'আনন্পমঠ “বন্দেমীতরম্‌” সমগ্র বাঙ্গালীকে মাতিয়ে তুলেছিল ভূদেব যে এজাতীয় আবেগের দ্বারা আন্দোলিত বা উচ্ছুসিত হয়েছিলেন এমন কোন প্রমাণ পাই না। বস্ততঃ আবেগের চেয়ে যুক্তিধর্মী বিচারবোধেই ছিল তার আস্থা-_ তাই তার মননশীলতায় যুধিষ্ঠিরস্থৈ্ষের প্রমাণ ব্যাপারেও পেয়েছি এই আবেগকেও তিনি সমালোচন? করেছেন | কাঁব্যে-নাটকে যখন আন্দোলনের স্পষ্ট আহ্বান -“্থরেন্্র বিনোদিনী” বা "শরৎ সরোজিনী নাটকে', “আনন্দমমঠ' “দেবীচৌধুরানী”, “সীতারামে” যা পেয়েছি !-__-তখনও ভূৃদেব তাঁর বক্তব্যে অটল হয়ে আছেন “সামাজিক প্রবন্ধের ইউরোপীয় বলেছেন,_

«১৮৪৮ অব্দে সমুদয় ইউরোপে যে ব্যাপক রাষ্ট্রবিপ্লব হইয়াছিল, সেই বিপ্লবের একটা ঢেউ আয়র্লণ্ডে আসিয়া লাগে এবং তথায় উপদ্রব জন্মীয় আঁমি কয়েকজন সহাধ্যায়ীর সহিত এই উপদ্রবে যোগ দিয়াছিলাম। আমাদের মনে জাতীয় ভাবের অত্যধিক উদ্রেক হইয়াছিল ।”

| জাতীয় ভাব, উপক্রমণিক] ] উত্তরে ভূদেব বলেছেন-__

“তোমাদের মনে যেমন জাতীয়ভাবের উদ্রেক হয়, অমনি তোমরা ইংরেজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করিয়া বৈপ। আমাদের মনে জাতীয়ভাবের উদ্রেকে আমরা রাজবিদ্রোহ করিতে চাই না। [এ]

ভূদেবের যুক্তিটি তার নিজস্ব। বস্ততঃ জাতীয়ভাঁবের উদ্রেক হলে পরাধীন

প্রবন্ধ ১১১

জাঁতির মনে সাধারণতঃ যে ভাবটি সক্রিয় হয়--তার ফলে রাজজবিদ্রোহই অবশ্যস্তাবী হয়ে ওঠে।

ভূদেব তথ্য অস্বীকার করেছেন কেন বোঝা মুক্ষিল। আমাদের জাতীয় চেতন। আত্মপ্রকাশের জন্য কিভাবে পথ খু জছিল “সামাজিক প্রবন্ধ" প্রকাশের কয়েক বৎসরের মধ্যেই তা দেখেছি বঙ্গভঙ্গ / ১৯০৫ ] আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সমগ্র জাতি সেদিন সংঘবদ্ধ বিদ্রোহ প্রদর্শন করেছিল ভূদেবের আদর্শের সঙ্গে বাস্তব সত্যের অমিল এখানেই জাতীয়ভাবের উদ্রেক হওয়ার পর রাজবিদ্রোহ করার জন্যই সমগ্রজাঁতি প্রস্ততির সাধনায় মগ্ন ছিল, আদর্শের স্বপ্নলোৌক থেকে মনীষী ভূদেব তা দেখতে পাঁননি। কারণ বিদ্রোহ প্রকাশ্যে জন্ম নেয় না, দৃষ্টির অগোচরে ধীরে ধীরে তা শক্তি সংগ্রহ করে ।--১৮৯২ সালেও ভূদেব সমগ্র জাতির প্রবণতার ইতিবৃত্ত সংগ্রহ করতে পারেন নি _ তার প্রমাণ “সামাজিক প্রবন্ধে মিলবে আত্মসমীলোচনা করে ভূদেব অবশ্য একট আদর্শ ভারতীয় মহাঁজাতি গঠনের চেষ্টা করেছেন--প্রাচীন ভারতীয় আদর্শ থেকে যে জাতি প্রাঁণরস গ্রহণ করবে কিন্তু উনবিংশ শতাব্দীর শেষ লগ্গে সমগ্র জাতি একটা বাস্তব আদর্শ ইতিমধ্যেই খুঁজে পেয়েছেসে আদর্শ দেশোদ্ধারকেই প্রাথমিক কর্তব্য বলে মেনে নিয়েছিল। ভূদেব যখন মহাঁজাতি সংগঠনের স্বপ্ন দেখছেন--সমগ্র জাতির জীবনে তাঁর পরীক্ষা হয়ে গেছে ইতিপূর্বেই | কিন্ত ভূদেব স্বাতন্ত্রিকতা চেয়েছিলেন আন্দোলন বাদ দিয়ে

ভূদেব বলেছেন,_“আমরা বাঁচিয়া থাঁকিতে চাই, একেবারে ইংরাজের জিনিষ হইয়া! যাইতে চাহি না”

“শিক্ষাদর্পণ” পত্রিকাতেও ভৃূদেব আপন স্বকীয়ত্ব রক্ষার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন-_ “যেমন গ্রীকেরা কখন আপনাদের জাতীয়ভাব পরিত্যাগ করে নাই,-রোঁমীয়েরাঁও করে নাই এবং ইংরাঁজেরাঁও করিতে ইচ্ছুক নহেন, আঁমাদিগেরও সেইরূপ থাকা উচিত সাহেবদের স্থানে শিক্ষা করায় হানি নাই, অনেক উপকাঁরই আছে, কিন্ত একেবারে সাহেব হইবাঁর চেষ্টা করা নিতান্ত 'আত্মগৌরববিহীন ব্যক্তির কার্য”__

| ভূদেব চরিত ১ম ভাগ, পৃঃ ৩০৩ ] কিন্ত তার পরের উক্তিটিই ভূদেবের নিজস্ব আদর্শের কথা-_“বুঝিতে পারিবে

না যে, আমর] ইংলও্ হইতে স্বাতন্ত্রিকতা চাহি না, অন্ততঃ বনুকালের জন্য তাহ! চাহি না।”

এই উক্তিটিকে সে যুগের সমগ্র জাতির বক্তব্য বলে মনে করা যায় নাঁ। বক্তব্য তদেবেরই | আমরা শুধু মানসিক স্বাঁতন্ত্রিকতা নিয়েই খুশী হই নি, আমরা রাজনৈতিক স্বাধিকারের স্বপ্নও দেখেছিলাম ভৃদেবের জাতীয়তার আদর্শের সঙ্গে এখানেই

১১২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

সাধারণের প্রবণতার প্রচণ্ড অমিল ভূদেবের চিন্তাশীল প্রবন্ধে স্বদেশপ্রেমের ফে আদর্শ বণিত হয়েছে তার মূল্য স্বীকার করেও সত্য প্রচার করা যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে স্বকীয় মতাঁমত সম্বন্ধে দৃঢ়তাই জাতীয় আদর্শের জন্ম দেয়,_ সাময়িক পরিবেশের পটভূমিকায় তার আবেদন যাই হোক না কেন। কোন ইংরেজ সমালোঁচকের উদ্ধৃতি প্রসঙ্গে স্মরণ করি

[135 0০৩] ০0: 61901601012 2100 217৮1101210)0106 12 09956০11105 02010125]1165 15 10001101615 8097. 10090 10101015 2101660৮501) 150191 200109£1505. 09010209115, 1:89 00001) 25 010০1: 670165102৬০ 10221) ৫12000 60 80:21750062 18:০০-00130101151)693, 11019, 23 আ০ 108৬6 2112805 5261, 19 15216 210. 1061021006 0৫ 60০ 20৬10101061, 1615 000 1802 1591 10100 15 2. 90601 17109801008] 05৮61010706) 000 2 92152 0৫ 005 আচে ০0: 0000096 91111075106 0000. 9900160. 021 ০0 19.০-৩৬

ভূদেবও বিশুদ্ধ জাতীয়ভাব ব্যাখ্যা করেছেন, বাস্তবে জাতীয়তাবোধের প্রবণতা প্রকৃতি বিচার করেন নি। সেদিক থেকে “সামাজিক প্রবন্ধ” গ্রন্থটির সাময়িক মূল্যের চেয়ে চিরন্তন যূল্য বেশী। একজন উচ্ছাসপ্রবণ দেশপ্রেমিকের আবেগ গ্রন্থে প্রকাশ পায় নি, সত্যসন্ধানী প্রীবন্ধিকের বিচক্ষণতাই প্রকাশ পেয়েছিল ভূদেবের দেশপ্রেমের মহান আদর্শ পরবর্তীকালে বহু মশীষীর ছারা অন্ুস্থত হয়েছিল এই কারণেই তিনি মানবপ্রেমিকতাকে দেশপ্রেমিকতার চেয়ে সর্বদাই বড়ো বলে মনে করেছেন এখানে ভূদেবের উদার মানবতার বাণী শোন। যায়,

“মুসলমানকে নেড়ে বলিয়া, পশ্চিমের লোককে মেড়ুয়া বলিয়া দক্ষিণাঞ্চল- বাসীদিগকে কদাঁকার বলিয়! অশ্রদ্ধা কর। অতিশয় দৃষ্য মনে করি-_ আর সন্তান সন্ততিকে দৃঢ়কায়, পরিশ্রমী, বিদ্বান এবং স্বধর্মনিষ্ঠ স্বজাতির মুখাপেক্ষী করিবার নিমিত্ত প্রাণপণ যত্ব করি | [ জাতীয় ভাব, উপক্রমণিকা ]

এই সর্বভারতীয় মানবতাবাদের আদর্শ প্রচার ভ্ূূদেবের অসামান্য উদারতারই নামান্তর ভারতবাসীমাত্রকেই একটি মহাঁজাতির অংশ বলে প্রচার করেছিলেন তিনি। এই উদার মানবতার আদর্শের প্রথম সার্থক প্রবক্তা ভূদেব। বঙ্কিমচন্দ্র মানবতার আদর্শকেই গ্রহণ করেছিলেন কিন্ত কোথাও কোথাও ভৌগোলিক সংস্কার তাঁকে আচ্ছন্ন করেছিল। ভূদেবের দৃষ্টি সর্বদাই স্বচ্ছ। ভারতের রাজনৈতিক

৩৬, 0010 00520590105 05০5 2170. বিজ 0110 চাণুওগাস ম6০ 0161 021217, 210 00/0 ০৫ 72000019005 [70000175 1910, 2৮4৪,

প্রবন্ধ ১১৩

স্বাধীনতার আন্দোলন যখন জন্ম নিচ্ছে ঠিক সেই মুহুর্তে ভূদেবের এই উদাঁরদার্শনি- কতার পূর্ণ অর্থ হৃদয়ঙ্গম করা সম্ভবপর হয় নি। স্বাধীনতা আন্দোলনের পূর্বাহ্ে বঙ্কিমের “আনন্দমমঠ' 'বন্দেমাতরম” যত বেশী কার্যকরী হয়েছে-_ভূদেবের সামাজিক প্রবন্ধ” ততটা কার্যকরী হয় নি। ভূদেবের গভীর জীবনাদর্শ উত্তেজনার মুহূর্তে বোধগম্য না হওয়াই স্বাভাবিক ছিল। তাছাড়া ভূদেব কালান্ুসারী নয়, কালাতিক্রমী বক্তব্যকেই প্রাধান্ত দিয়েছিলেন “সামাজিক প্রবন্ধে | ভূদেব সে যুগের আন্দোলনে আস্থাবান ছিলেন ন৷ তার প্রমাণও রয়েছে। “ওগুলি ইংরাজাধি- কারে ইংরাজী শিক্ষার অবশ্যস্তাবী ফল, এবং নিরবচ্ছিন্ন অন্ছচিকীর্যা প্রত, এইজছ্যে কিয়ংপরিমাণে অবশ্যই অন্তঃসারশৃন্য 1”__এই ছিল তীর অভিমত | কিন্তু স্বদেশ- প্রীতি যে স্হুজাত বস্ত একথ! তিনি সর্বদাই উচ্চক্ঠে ঘোষণা করেছেন “জাতীয়ভাব” শব্দটির দ্বারা তিনি যে কথা বোঝাতে চেয়েছিলেন তা হল এই,_

“বস্ততঃ স্বদেশের এবং স্বজাতির প্রতি অনুরাগ কাঁহারই কখন একেবারে যাইতে পারে না -একদেশজাত এবং একদেশপালিত ব্যক্তিদিগের পক্ষে বাহা প্রকৃতির একরূপ হওয়াতে এবং একদেশজাঁত জনগণ পরম্পর সংসৃষ্ট থাকাতে তাহাদিগের অন্তঃকরণবৃত্তিও একরূপ হইয়া যায়। এই একরূপতাই স্বদেশের এবং স্বজাতির প্রতি ভালবাসার গুঢ় কারণ এবং সেই কারণ, পুরুষ পরম্পরাক্রমে কার্যকরী হওয়াতে, জীতীয় ভাবটি মনুষ্বের অন্তরা ত্বাকে অতি গৃঢ়তররূপেই অধিকার করিয়া থাকে ।”

| জাতীয় ভাব, ইহার উপাদান ]

এই জাতীয়ভাবকেই ব্বদেশপ্রেম বলা যাবে কি না সেটাই আমাদের বিচার্ষ

বিষয় ভূদেব কথিত জাতীয়ভাব ভাবমাত্র, এই ভাব যখন চিত্তে প্রবল হয়ে

ওঠে তাঁর বাহাপ্রকাঁশকেই স্বদেশপ্রেম বললে সম্ভবতঃ বিষয়টি স্পষ্ট হয়। শ্বদেশ-

প্রেমের মধ্যে ভাবটাই আবেগের স্তরে উন্নীত হয়| স্তরাং ভূদেবের আলোচনা

ভাব থেকে আবেগের স্তরে ওঠে নি বলেই আন্দোলনের কল্পনাও করতে পারেন নি তিনি

ভৃদেব ইংরেজ শাসনের ব্যাখ্যা করেছেন অত্যন্ত নিরপেক্ষ ভাবে,__

“সমস্ত ভারতবর্ষের রাঁজ্যশাসন এক্ষণে সর্বতোভাবে এক হইয়া উঠিয়াছে। ইংলগ্ডের ঈশ্বরী এখন ভারতেশ্বরী হওয়াতে আমর] সকল ভারতবর্ষায় এক সম্রাটের অধীনে এক মহাসাম্রীজ্যবাসী বলিয়া আপনাঁদিগকে হুস্পষ্টর্ূপেই জানিয়াছি। এক্ষণে আমাদের সাধারণ সুখ, ছুঃখ, আশা, ভরসা, আকাঙ্ষা এবং নিরাশ, এক সবত্রে সম্বন্ধ হইয়া উঠিয়াছে ।” [ঞঁ]

বিদেশ শাসনের পরোক্ষ ফলাফল তৃদেবকে সন্ভই করেছে--কিন্ত উনবিংশ

১১৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে দেশপ্রেম

শতার্ধীর শেষের দশকে দেশব্যাপী যে ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব অত্যন্ত প্রকট হয়ে উঠেছিল তার পটভূমিকায় ভূদেব যে নিরপেক্ষ বিচার দূরদ্শিতারই পরিচয় দিয়েছিলেন তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কিন্তু এই সর্বজনীন এঁক্যের ভাবী ফলাফল সম্বন্ধে ভূদেব নীরব ছিলেন সর্বজনীন জাতীয়চেতনার আলোকেই সেদিন সমগ্র ভারতবাসী ভবিষ্যৎ দর্শন করেছিল, ভাবী সংগ্রামের প্রস্তুতিও চলেছে তখন থেকেই স্বদেশপ্রেমই ছিল তাদের পাথেয়। ভূদেবের চিন্তা তখনও ভাঁবজগতেই আবদ্ধ।

ভূদেবের স্ব্দেশচিস্তায় নীতিজ্ঞানের প্রাধান্য অনেক ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করেছি। ভারতবর্ষে হিন্দু মুসলমানের পারস্পরিক অবস্থানের এতিহাসিক হেতু নির্ণয় করে ভূদেব ইংরাজের ভেদনীতির সমালোচন1 করেছেন হিন্দুদের আদর্শ পালনের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য শাসনের জন্য হিন্দু মুললমানের মধ্যে ভেদ ষ্টির যে চেষ্টা ইংরাঁজ সর্বদাই করে এসেছে তৃদেব সেই প্রবৃত্তির নিন্দামাত্র করেছেন-_কিন্ত এর পরিণতি সম্পর্কে তিনি নীরব তিনি উপদেশ দিয়েছেন ইংরাঁজদের ৩,

“রী সকল হংরাজের এই কৌশলটি যে অপরিণামদশিতার ফল তাহা নিঃসন্দেহ, কারণ যদিও রোমীয়দিগের এরূপ রাজনীতি থাকা সত্য হয়, তথাপি সে রাজনীতির বলে রোম সাম্রাজ্য চিরস্থায়ী হয় নাই অতএব এই রাজনীতি সর্বতোভাবে দৃষ্য। কিন্তু উহা যতই দৃষ্য হউক ভারতবর্ষীয়দিগের বিশেষ সতর্ক হওয়া উচিত ।”

| জাতীয় ভাব, ভারতবর্ষে মুসলমান ]

এই দুরৃষ্টি ইংরেজের কানে অবশ্য পৌছয় নি-_কিস্তু এই কৌশ্‌লটি যে ব্যর্থ হয়েছে ভৃদেবের উদ্ধৃত মন্তব্যই তার প্রমাণ ভূদেব এই ধুরন্ধর বিদেশীশাসকের প্রকৃতি নির্ণয় করেছিলেন অন্রান্তভাবে, কিন্তু তবু এর আশু ফলাফল সম্বন্ধে তিনি আগাগোড়াই নীরব থেকেছেন ইংরেজশাসনের অপকৌশলই অবশেষে হিন্দু যুসলমাঁন নিবিশেষে সমস্ত ভারতবাসীর মধ্যে একটি অখণ্ড জাঁতীয়তাবোৌধের চেতনা সঞ্চার করেছিল ভৃদেব যে যুগে “সামাজিক প্রবন্ধ" রচনা করছেন-- সে যুগের পক্ষে কোন উপদেশাত্মক রচনার চেয়ে উত্তেজনাকর রচনাই অনেক বেশী মূল্য পেয়েছিল- তাই ভূদেবের ইংরাঁজ আনুগত্যের নিদর্শন মানসিক স্বাধীনতা রক্ষার 'আপাতঃ অসম্ভব উপদেশ সে যুগে কার্যকরী হয় নি। “সামাজিক প্রবন্ধে" ভূদেব জাতীয় ভাব সম্পর্কে বৃহৎ তথ্যপূর্ণ আলোচনা করার আগে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নিবন্ধে 'এসব আলোচনা করেছেন,__“বিবিধ প্রবন্ধে” তা সংকলিত হয়েছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের কোন আবেগ তার চরিত্রে ছিল না-- তাঁর হেতুও ছিল স্প& | স্ৃদেব ধ্আত্মিক স্বাধীনতার বেশী মুল্য দিয়েছেন, ভাই রাজনৈতিক অধীনতার তীব্র জালা

প্রবন্ধ ১১৫

তিনি অনুভব করেন নি। এই বিষয়টির ওপর তিনি অত্যন্ত জোর দিয়েছেন স্বাধীনতা লাঁভের যে প্রেরণ! সেযুগের ভারতবাপীকে উত্তেজিত করেছিল তার মূলে পরাধীনতার তীব্র বেদনাবোধ ছিল। বাঙ্গালী কবি সাহিত্যিকের কে যে বেদনার বাণী নানাভাবে ব্যক্ত হয়েছে--ভৃদেব তা অনুভব করেন নি। আত্মিক স্বাধীনতা স্বাতস্ত্রিকত! পালনের মধ্যেই জীবনের চরম সার্ধকতা লাভ করেছিলেন বলে স্বধর্ম রক্ষা! জাতীয় ভাবের আলোচনাতেই তীর প্রন্ট্রো আবদ্ধ ছিল। তাই সেযুগের স্বদেশপ্রেমিক সাহিত্য্রষ্টার সঙ্গে ভূদেবের স্বদেশচেতনার একটা পার্থক্য লক্ষ্য করি। তৃদেবও স্বদেশপ্রাণ কিন্তু পরাধীনতার বেদনা তাঁকে অধীর করে নি-তিনি আপন স্বভাবের প্রচণ্ড স্বাতন্ত্রিতার আদর্শটই গ্রহণ করে সন্তষ্ট ছিল্নে। এই মনোভাব তার “স্বাধীন চিন্তা” প্রবন্ধে খুব চমৎকারভাবে ধরা পড়েছে,

“আমাদের মধ্যে স্বাধীন চিন্তা ছিল এবং এখনও আছে একথা ইংরেজী শিক্ষিতদিগের কর্ণে বড়ই বিলদূশবোধ হইবে, এইজন্ত স্বাধীন এবং স্বাধীনচিন্তা এই ছুইটি কথার অর্থ একটু স্থ পষ্টরূপে বুঝিবার চেষ্টা করা উচিত। আমরা যখন বলি ইংরাজেরা স্বাধীন জাতি তখন এই কথাই বলিতে চাহি যে, উহার! ভিন্ন জাতীয় অধিনায়কদিগের অধীন নহেন, স্বজাতীয় রাজপুরুষদ্দিগের অধীনে এবং স্বজাতির ব্যবস্থার অধীনে পরিচালিত। ইহাই স্বাধীনতা | .*ইংরাজ যখন বাইবেল মানেন, স্বদেশীয় রীতিনীতি মানিয়া চলেন তখনও তিনি স্বাধীন চিন্তাণীল হইতে পারেন আমরা আপনাদের ধর্মশান্তর এবং কুলাচার মানিয়াও তন্ত্রপ স্বাধীন চিন্তাশীল থাকিতে পারি | তাহাতে পরাধীনতা ঘটে ন11..*চেষ্টা করিলেই এরূপ প্রকৃত স্বাধীনচিন্তার বলে তথ্য জীনিতে পারিবে এবং বুঝিবে যে ধাহারা আপনার শাস্ত্র মানে তাহারাই-ম্বাধীন তাহাদের মন পরাধীন হয় নাই |”

[ বিবিধ প্রবন্ধ, ২য় ভাগ ] এই মানসিক স্বাধীনতার আনন্দ ভূদেবকে রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে দূরে টেনে নিয়ে গেছে। তাই সে যুগের কাব্য-উপন্তাস-নাঁটকের প্রত্যক্ষ উত্তেজন! ভূদেবের চিন্তাজগতে প্রভাব ফেলতে পারে নি। তিনি প্রজ্ঞা বিচারবুদ্ধি দিয়ে মানসিক স্বাধীনতার মাহাত্ন্য নির্ণয় করেছেন “সামাজিক প্রবন্ধ” সেদিক থেকে একটি পৃথক সুরের প্রসঙ্গ উাপন করেছে উত্তেজনাবিহীন দেশপ্রেমের স্বরূপ নির্ণয়ের চেষ্টাটাই গ্রন্থে আভাসিত। ভৃদেবের স্বদেশপ্রেমের আদর্শ নির্ণয়ে অনুরূপ দেবী বর্লেছিলেন,__ */ভূদেব বাবুর চরিতে কেমন করিয়া! মানুষ সমাজ স্বজবপ্রেমকে বজায়

১১৬ উনবিংশ শতাববীর বাংল! সাহিত্যে দেশপ্রেম

রাখিয়। প্ররুত বিশ্বপ্রেমিক হইতে পারে তাহার জলন্ত দৃষ্টান্ত দেখিতে পাওয়? যায় 1”৩৭

ভূদেব একটি মহৎ আদর্শের স্বপ্ন দেখেছেন, পাশ্চাত্য স্বদেশপ্রেম স্বাজাত্যবোধ কোনদিনই তাকে আকষ্ট করে নি। তাই ভূদেবের স্বদেশচেতনাকে সমসাময়িক উত্তেজনার স্পর্শবিহীন একটি পূর্ণাঙ্গ অন্থভব বলা যেতে পাঁরে। প্রমথনাথ বিশী তূদেবের স্বদ্দেশচিন্তাকে “উনিশ শতকের বাঙ্গালী মনীষীর ধাঁরণা', বলে চিহ্িত, করেছেন

পাশ্চাত্য ভাবের মূলে যে অহংচেতনা রয়েছে--ভারতের সনাতন আদর্শের সঙ্গে তার বিরোধটিই ভূদেব নিভুদলিভাবে নির্ণয় করেছিলেন তাই "জাতীয় ভাব' সম্বন্ধে ভারতবাসী কোনদিনই সচেতন ছিল না। জাতীয় ভাব নিয়ে পাশ্চাত্য দেশের লৌক সর্বদাই গর্বোন্মত্ত ভাঁরতবাসী বিষয় সম্পূর্ণ অচেতন। তভৃদেব নিরপেক্ষভাবে উভয় আদর্শ বিচার করেছেন

“ইংরাজ সর্বদাই স্বজাতীয়ের স্বার্থান্ুসন্ধানে মনোযোগী, স্বজাতীয়ের প্রশংসাবাদে শতমুখ, স্বজাঁতীয়ের নিন্দাবাদে ক্রুদ্ধ উদ্তপ্রহরণ। তাহার চরিত্র হইতে 'এই স্বজাতি বাঁৎসল্যটি শিখিতে পারিলে ভারতবর্ষে ইংরেজের সমাগম হিন্দুর পক্ষে ধর্মবদ্ধক হইতে পারে | ইহার কতকটা বাহালক্ষণ সম্প্রতি দেখা দিতেছে এঁ লক্ষণগুলি ক্রমশঃ জনগণের হদয়ের অন্তনিবিষ্ট হইয়া গেলে ভারতবাসীর অনেক ছুঃখ ঘুচিবার পথ মুক্ত হইবে যাহাকে ইংরাজের উন্নতি বলা যায় তাহার হেতু ইংরাজের স্বার্থপরতা নয়, ইংরাজের স্বজাঁতিবাঁৎসল্য ইংরাঁজের যদ্দি অবনতি হয় তাহা এঁ স্বার্থপরতার জন্যই হইবে অতএব ইংরাজের গ্তায় স্বার্থপর হইয়া কাজ নাই। ওরূপ স্বার্পরত। আমাদের স্বভাবের বিপরীত। হিন্দু যদি ইংরাজের গ্ভাঁয় স্বজাতিবৎসল, স্বজাতি গুণগ্রাহী, স্বজাতি দোষ প্রচ্ছাঁদক হইয়া উঠেন, তাহা হইলেই যথেষ্ট হইবে |”

[ পাশ্চাস্তযভাব, স্বার্থপরতা ] এই দীর্ঘ উক্তিটি বিশ্লেষণ করলে তৃদেবের সত্য বিচারের হস্্ম ক্ষমতাটি সম্পর্কে আমর! অবহিত হই। ভূদেব পাশ্চাত্য স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ নির্ণয় করেছেন অভ্রান্ত- ভাবে স্বার্থপরতা ছাড়া অন্য কোন সংজ্ঞা দিয়ে সঠিকভাবে বোঝানো যায় না অনুভূতিকে কিন্তু তবুও ইংরেজের অন্থকরণযোগ্য গুণের প্রশংসা করতেও দ্বিধা করেন নি। ভূদেব ভারতবাসীর শ্বজাতিবিদ্বেষ স্বধর্মবিছেষেরও তীব্র সমালোচন। করেছেন। “এই স্বদেশী বিদ্বেষ পাপের স্থালনের জন্য ভগবান হ্বদেশপ্রেমিক শ্রেষ্ঠ ইতরাক্জকে ভারতে প্রেরণ করিয়াছেন”-_এমন মন্তব্যও ভূদেবেরই |

৩৭, ভুদেব চরিত ২য় তাগ। “নিবেদন'- অনুরূপ দেবী

প্রবন্ধ ১১৭

বস্ততঃ স্বদেশপ্রেম যে যুগে অতিউচ্ছুসিত আবেগের দ্বারা চালিত একটি সর্বসাধারণ অনুৃতিতে পরিণত হয়েছে-_-তখনও ভূদেব যুক্তি দিয়ে এর অন্তনিহিত মহিমার দিকে আমাদ্রের দৃষ্টি ফেরাতে চেয়েছেন পাশ্চাত্য স্বদেশহিতৈষিতার মধ্যে যেটুকু পরিবর্জনীয় তার সমালোচনা করেছেন। তৃদেব শুধু রাজনৈতিক মুক্তির কথা কখনও চিন্তা করেন নি, তাঁর সাধনা পূর্ণ মানবতা লাভের সাধনা অন্ধ আবেগে ইংরাজী রীতির অন্থসরণকে তিনি সর্বদাই আন্তরিক ভাবে বর্জনের উপদেশ দিয়েছেন |

*আমর] ইংরাঁজ রীতির প্রতি অতি ভক্তিমান হইয়াছি এবং ভারতবর্ষকে কিরূপে ইংলণগ্ড করিয়া তুলিব তাহা ভাবিয়] ব্যস্ত হইয়া পড়িয়াছি বটে, কিন্তু ইউরোপীয় দর্শনশান্ত্বিদেরা পুনঃ পুনঃ বলিতেছেন যে. ইউরোপ নিতান্ত অস্থথময় হইয়। উঠিতেছে, ছ্খানে একটা অতি ভয়ানক সমাঁজবিপ্লব অবশ্যই ঘটিবে |”

[ পাশ্চাত্য ভাব, ইংরাজ সমাগম ]

এই প্রজ্ঞা দৃষ্টির যিনি অধিকারী তীর পক্ষে নিছক রাজনৈতিক মুক্তির উপায় মাত্র

চিন্তা কর! সম্ভব ছিল না রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, বিবেকানন্দ যে শাশ্বত ভারতবাণী

প্রচার করে গেছেন ভূদেবকে তাদের পূর্বক্রী বলে অভিনন্দন জানাতেই হবে মানব

সমাজের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা! করতেন ভূদেব, নিতান্ত সাময়িক একটি উত্তেজনাকে তিনি খুব বেশী গুরুত্ব দিয়েছিলেন বলে মনে হয় না।

“বিবিধ প্রবন্ধের কোথাও কোথাও তৃদেব পরাধীনতাকে প্রকৃত মনুষ্যত্ব অর্জনের প্রতিবন্ধক বলে ব্যাখ্যা করেছেন,__মনুষ্যত্ব অর্জনের সাধনা করলে পরাধীনতার বাধাকে অতিক্রম করা সম্ভব তিনি বলেছেন-_“যেখানে জাতিভেদ নাই এবং পরাঁধীনতা আছে, সেখানে পরাধীনতার অতিবিষময় ফলই ফলে, সেখানে আত্মগৌরব একেবধরেই বিলুপ্ত হইয়া যায়, মন ক্ষুদ্র হয় এবং প্রকৃত মনুষ্যত্ব জন্মিবার কোন পথই থাঁকে ন1।৮৩৮ | বঙ্গ সমাজে ইংরাঁজ পূজা, বিবিধ প্রবন্ধ ২য় ভাগ ]

অবশ্য জাঁতিভেদ প্রথার স্বপক্ষে ভূদেবের যুক্তি ছিল এই যে,“ প্রথা থাকাতে লোকে স্বজাতীয়দিগের মধ্যেই বড়লোক দেখিতে পায়, বিদেশীয় রাঁজপুরুষকেই সর্ববিষয়ে সর্বোপরি দেখে না এবং সেই জগ্ উহাদিগের প্রতি অযথা ভক্তিও করে না।” [এ]

ভূদেবের মতাঁমতে কিছু বিশিষ্টতা ধরা পড়লেও জাতিতেদের মহিমা অনুসন্ধান করে পরাধীনতাকে তিনি সহনীয় বলে মনে করেছিলেন বলে খুব আশ্চর্য লাগে।

৩৮. ভূদেব মুখোপাধ্যায়, বিবিধ প্রবন্ধা। ২য় ভাগ, হুগলী ১৮৯৫।

১১৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

আমাদের মনোভাবের সবকিছুই যে উত্তম--একথা মনে করে আত্মপ্রসাদ লাভের ব্যগ্রতা ভূদেবেরই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বলা চলে। “সামাজিক প্রবন্ধেও' বলেছেন,

“জাতিভেদ প্রথা প্রত্যেক বর্ণের স্বাতস্্রিকত স্থাপন করিয়া সকলেরই অনেকটা আ'ত্বগৌরব রক্ষা করে | অতএব পরাধীন জাতির পক্ষে এই প্রথা বিশেষ শ্রেয়ক্করী 1৮

[ পাশ্চাত্যভাঁব-_সাম্য

এই জাতীয় আলোচনায় ভূদেবের চিন্তী শক্তির উদীরতাই ধর পড়েছে। তৃদেব

কখনও আত্মদৈগ্তের দ্বার! পীড়িত হতেন না। পরাধীনতা ত্বার মনের সমৃদ্ধি ক্ষণ

করতে পারে নি- মাননিক স্বাধীনতার আনন্দে তিনি এমনই মগ্র ছিলেন রজনীকান্ত গুপ্ত ভূদেব সম্পর্কে বলেছেন,

“তিনি বিদেশীয় জ্ঞানভাগারের সহিত স্বদেশীয় জ্ঞানভাগারের তুলন] করিয়া, অধঃপতিত আত্মজাতিকে জাতীয় ভাবে শক্তিসম্পন্ন করিবার জন্যই আত্মোৎসর্গ করিয়াছিলেন। তাহার স্বদেশহিতৈষিতা,*তীহাঁর স্বজাতিপ্রিয়তা, তাহার কর্তব্যবুদ্ধি এইরূপ বলবতী ছিল ।...তাহাঁর জাতীয় ভাবপ্রবাহের প্রখরবেগে বিজাতীয় ভাবের সঙ্কীর্ণ, পঙ্কিলপ্রবাহ একেবারে শিশৃহ্য হইয়াছিল

কিন্ত ভূদেব স্বদেশের কোনো বিষয়ে স্বকীয় সমাজের কোনো স্তরে পাশ্চাত্ত্য- ভাবের রেখাঁপাঁত করিতে প্রস্তত হয়েন নাই তিনি যেমন ইংরাঁজীতে স্থপপ্ডিত ছিলেন, সেইরূপ সংস্কৃত শাস্ত্রেও অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছিলেন, যেরূপ ইংরেজ সমাজের তব্বজ্ঞ হইয়াছিলেন, সেইরূপ শ্বদেশীয় সমাজেরও অভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়াছিলেন ইংরেজের জাতীয় প্রকৃতির সহিত আঁপনাঁদের জাতীয় প্রকৃতি মিলাইয়া লওয়াই তাহার উদ্দেশ্ট ছিল ।৮৩৯ রর [ প্রতিভা-_ভূদেব মুখোপাধ্যায় পৃঃ ৯২-৯৩ ]

ভূদেব “সামাজিক প্রবন্ধের" উপসংহারে স্বদেশপ্রেমকে হৃদয়ের সর্বোচ্চ ভাব বলে ্বীকার করেন নি। জাতীয় ভাবের চরম উৎকর্ষের সাধনাই ভারতবাঁসী করে এসেছে চিরদিন | তাই সঙ্কীর্ণ দেশবাৎসল্য তাকে আকুষ্ট করে নি। স্বদেশপ্রেম সম্বন্ধে ভূদেবের চিন্তাশীল গবেষণার সার অংশ হিসেবে এই স্তবকটি উদ্ধৃত করা দরকার |

“ইউরোপীয় সমাজের সহিত ভারত সমাজের তুলনায় প্রবৃত্ত হহয়] ধাহার। ভারত- বাসীর জাতীয় ভাবটি পরিশ্ফুট হয় নাই মনে করেন, তাহার! ভাবের তথ্যটি ভাল করিয়। বুঝেন বলিয়া বোধ হয় না জাতীয় ভাবটি মনুষ্য হৃদয়ের খুব উচ্চভাঁব বটে, কিন্তু উহা সর্বোচ্চ ভাব নয়। জাঁতীয়ভাব একটি মিশ্র পদার্থ ইহাতে ভাল এবং

৩৯. রজনীকান্ত গু, প্রতিভা, ভূদেব মুখোপাধ্যায়, কলিকাতা, ১৮৯৬

প্রবন্ধ ১১খ

মন্দ, প্রশস্ততা এবং অপ্রশস্ততা দুইই আছে কোন ভাবের সহিত তুলনায় ইহা অতি উদার ভাব, আবার কোন ভাবের সহিত তুলনায়, ইহা অপেক্ষাকৃত সঙ্কীর্ণ ভাব ।--. একজন ইউরোপীয় পণ্ডিত বলিয়াছেন-_স্বদেশান্রাঁগের যুল অভিমান, ইহার শাখা প্রশাখা এবং পত্র বিটপাদি বাহ আড়ম্বর, ইহাঁর কাণ্ড পরজাতির প্রতি বিদ্বেষ, ইহার ফল পুষ্পাদ্দি যেমন স্বদেশের সমৃদ্ধি, তেমনি পরদেশের পীড়ন, ইহা! একটি দোঁষেগুণে জড়িত উপবর্মমাত্র |”

স্বদেশপ্রেমের চেয়েও বড়ো ধর্ম যিনি নিজের জীবনে অবলম্বন করেছিলেন তীকে যুগোপযোগী আদর্শের মাপকাঠিতে বিচার করলে সম্পূর্ণভাবেই অবিচার করা হবে। ভূদেব শাশ্বত ভারতবাণী প্রচার করেছিলেন বলেই তিনি নিতান্তই সাময়িক চিন্তাকে খুব সহজেই অতিক্রম করতে পেরেছিলেন স্বদেশপ্রেমের আবেগ সম্বল করে আমর সহজেই উত্তেজিত হতে পারি,_-আন্দোলন করতে পারি,_এমন কি রাজনৈতিক স্বাধিকার লাভে সমর্থ হতে পারি, কিন্তু আত্মিক মুক্তি লাভ সম্ভব হয় না ভূদেবের মত দূরদর্শী প্রাবন্ধিকের চিন্তাধারার মহিমা এখানেই তিনি যুগান্ুগ চিন্তাকে অতিক্রম করে যুগোত্ীর্ণ বা শাশ্বত সত্য অনুসন্ধানেই ব্যস্ত ছিলেন তাই “সামাজিক প্রবন্ধের” মত এমন সমাজতত্বমূলক মূল্যবান গ্রন্থ রচন। করা সম্ভব হয়েছিল। সনাতন ভারতের চিরন্তন আদর্শকে নতুন করে বিচার করেছেন তিনি। অবশ্য উনবিংশ শতাব্দীর মনীষীরাও স্বাধীনতা আন্দোলনের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিঃসন্দেহ ছিলেন না। এর প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে নানাভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনের আদর্শ নিয়ে মত পার্থক্য চিরদিনই ছিল। বিষয়ে ভূদেব দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন,__

"আমার দৃঢ় প্রতীতি এই যে, যতদিন আমাদের মধ্যে তাদৃশ কোন নেতৃ- মহাপুরুষের আবির্ভাব না হইতেছে, তাবংকাল আমরা ধৈর্যাবলম্বনপুর্বক ভারত গভর্ণমেন্টকেই রাজনৈতিক বিষয়ে আপনাদিগের সর্বোৎকৃষ্ট সহায় স্বরূপে লইয়া চলিলে নিতান্ত অরুতকার্য হইবে না।

'**ভারতবালীর ক্ষমতা ন্যুন হইয়া গিয়াছে ভারতবাঁসী আপনাকে বহিঃশক্র হইতে রক্ষা করিতে অশক্ত, আপনার সুশাঁসনে আপনি অক্ষম, নিজের দেশটিকে নিজে মিলাইয়া এক করিতে পারেন নাই এখন সমস্ত দেশ একচ্ছত্রে মিলিত হইয়াছে, তথাপি উহাকে স্বশক্তিতে একত্র করিয়া রাখিতে পারেন বলিয়া মনে করিতে পারেন না। স্তরাং ভারতবাঁসীর পক্ষে অপরের সাহাষ্য অত্যাবশ্যক |”

[ ভবিষ্যবিচার--তাহার উপসংহার ] তৃদেবের মতটি যথেষ্ট অর্থপূর্ণ ভূদেব খণ্ড-বিচ্ছিন্ন জাতির মানসিক প্রবণতা

১২০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল৷ সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

নির্ণয় করেই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন। সে যুগের আন্দোলনের প্রবাহও তিনি লক্ষ্য করেছিলেন কিন্ত তাকে কেন্দ্র করেই ভারতের ভবিষ্যতের কল্পনা কর! তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তিনি “কর্তব্য নির্ণয়_নেতৃপ্রতীক্ষা” অংশটিতে তীর ভবিষ্যৎ আশার কথা ব্যক্ত করেছিলেন আন্বোলন তখনই সার্থক হবে যখন এদেশের জলবামু- মাটিতে একজন খাঁটি ভারতীয় নেতার আবির্ভীব ঘটবে | ভূদেবের এই ভবিষ্যুৎ- বাণীরও ষথার্থ তাৎপর্য রয়েছে আন্দোলন যে স্বাধীনতা আনে নি সে সত্যি কথাই,_অসীম শক্তিমান যুগন্ধর ব্যক্তির নেতৃত্বই আঁমাদের ঈপ্ষিত স্বাধীনত! দান করেছিল। ভূদেব বলেছিলেন,-_

"ইংরাজ নেতার প্ররোচনায় ইংরাজীশিক্ষিত লোকেরা এদেশে আন্দোলন আরম্ত করেন এবং আপনাদের সমর্থনের উদ্দেশ্যে লৌক সংগ্রহের চেষ্টা করেন। আমার বিবেচনায় প্রণালী এদেশের অনুপযোগী | অতএব ইংরাঁজ নেতৃত্বে এখান সমীচীন কার্য হইতে পারে না, অর্থাৎ ইংরাজ সব্েও ভারতবর্ষে দেশীয় নেতারই সমূহ প্রয়োজন হইয়৷ আছে ।» | ভবিষ্যবিচার--তাহার উপসংহার ]

'সামাজিক প্রবন্ধের আলোচনা থেকে সত্য স্পষ্ট হয়েছে যে, ভূদেব আগামী ভবিষ্যতে আসন্ন একটি গণ-অভ্যুতথানের স্বপ্ন দেখেছিলেন বটে কিন্তু স্বপরিচালিত না হলে এই অভ্যুথান বিফল হতে পারে-_-এমন আশঙ্কাও পোষণ করেছেন। ভাঁবাবেগে আন্দোলিত না হয়ে তিনি যুক্তির আশ্রয় নিয়েছিলেন। তথাকথিত আন্দোলনের উদ্দীপনার দ্বারা অভিভূত না হয়ে ভূদেব সার্থকতার কারণ অহুসন্ধানেই ব্যন্ত ছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র সাজ সমালোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা উদ্দীপনা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন,_এ ব্যাপারে কমলাকান্ত-বঙ্কিমচন্দ্র তীব্র নির্মম ব্যজের হাতিয়ার প্রয়োগ করেছেশ। তৃদেব সর্বদাই স্পষ্টবাদী উপদেষ্টা। সমাঁজের বিভিন্ন দিক নিয়ে যুক্তিপূর্ণ সমালোচনা! করে তিনি যে সিদ্ধান্তে পৌছেছিলেন সামাজিক প্রবন্ধের “কর্তব্যনির্ণয় নেতৃপ্রতীক্ষা” অংশটিতে তার আভাদ আছে,__

“ভারতবাসীর যত প্রকার ক্রটি দেখিতে পাওয়া যায়, সকলগুলিই সন্মিলন- প্রবণতার ন্যনতা হইতে সম্ভৃত। তারতবাসী রত্ুপ্রসবা ভারতের ক্রোড়ে থাকিয়াও দরিদ্র ভারতবাসী শ্রমশীল হইয়াও উদরান্্নে বঞ্চিত। ভারতবাঁসী বুদ্ধিমান হইয়াও অন্তের পরিচালনার অপেক্ষী। ভারতবাঁসীর মৃত্যুতয় স্বল্প হইলেও তিনি তীকু বলিয়া জগতে প্রসিদ্ধ এই সকল এবং অপরাপর সকল দোঁষের একমাত্র যূল, সন্মিলনে অক্ষমতা

কোন স্বদেশীয় মহাপুরুষ কর্তৃক ইহার উপায় উত্তাবিত না হইলে '্আমাদের এই মৌলিক দোষ দূর হইবে না। ভাদৃশ মহাঁপুরুষের যাহাতে

প্রবন্ধ ১২১

আবির্ভাব হয় তাহার কোন পথ আছে কি না, ইহাই এক্ষণে ভাবিরা স্থির করিবার প্রয়োজন 1” কর্তব্যনির্ণয়-_নেত্‌ প্রতীক্ষা! ]

ভূদেবের এই প্রতীক্ষা। পূর্ণ হয়েছিল সত্যই ভারতবাসী যোগ্য নেতৃত্ব লাভ করেছে এবং স্বাধীনতা লাভের পূর্বাহে সমগ্র ভারতবা1সী একদা! এ্রক্যন্থত্রে মিলিত হয়েছে ভবিষ্যৎ ভারতের সম্বন্ধে আশাপুর্ণ মন্তব্য করেছেন ভূদেব তার কারণ বর্তমানের উত্তেজন৷ তাঁকে স্পর্শ করেনি বলে তিনি হতাশ হন নি। “সামাজিক প্রবন্ধে' ভৃদদেবের প্রজ্ঞাদৃষ্টি ভাবদৃষ্টির সমন্বয় সাধিত হয়েছে,-_স্বদেশপ্রেমিক ভূদেব যতে। নিশ্চিন্ত মনে এই গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন, গ্রন্থে সীধকোঁচিত ষে নির্ভীকতা অল্লান বিশ্বাসের পরিচয় দিয়েছেন তাঁর অন্ত রচনায় তা হুলত নয়। স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রত্তিপর্বে এই জাতীয় সুষ্ঠ, চিন্তাধারার সঙ্গে জনসাধারণের যোগাযোগ প্লটেছিল বলেই স্বাধীনতা আন্দোলন শেষ পর্যন্ত একটা স্থপরিকল্লিত আদর্শ বহন করেছে

“বাংলার ইতিহাসে”ও ভূদেব নিরপেক্ষভাবে তদানীন্তন বৃটিশ শাসকের বিবরণ দান করেছেন,_কোথাঁও এতিহাসিকের নিষ্ঠা তিনি লংঘন করেন নি। পরাজিত নিগৃহীত হয়েও ভূদেব মনোজগতে স্বাধীন ছিলেন। আপাতঃ দৃ্িতে এই সংযম- শক্তির মহিমা চেনা যাঁয় না কিন্তু ভূদেবের সম্পগ্রজীবন আলোচনা করলে তা স্পষ্ট হয়। সে যুগের প্রতিটি কবি-নাট্যকার ওঁপস্তাসিকের চরিত্রে চিন্তায় ষে বিক্ষুব্ধ মনোভাবের পরিচয় পেয়েছি-__তা হচ্ছে সাময়িকতারই প্রতিচ্ছবি | ভূদেখের নির্বেদ শান্ততাকে মাঝে মাঝে ব্যতিক্রম বলেই মনে হয়। ভূদেব আবেগশুস্ ছিলেন না কিন্ত সে আবেগ স্বধর্মপ্রীতি স্বসমাজরক্ষাতেই সীমিত ছিল তাঁর “পারি- বারিক প্রবন্ধ” “আচার প্রবন্ধে” সেই আবেগ লক্ষ্য করেছি বিদেশীয় শাসকদের নিষ্টনরতা উদারতার ইতিহাস বর্ণনাতে ভূদেবের সংযম আদর্শ লক্ষ্যণীয়। এক্ষেত্রে শিক্ষাব্রতী ভূদেবের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পেয়েছে শিক্ষাদর্পণে' ছাত্রদের লক্ষ্য করেই তিনি উনবিংশ শতাব্দীর রাষ্ট্র ইতিহাস রচনা করেছেন। শুধু গ্রন্থের পরিশিষ্টে আপন মনোভাবের কিছু পরিচয় পাই

“ইংরেজ অধিকারে দেশ নিরুপদ্রব হইয়াছে, সর্বত্র যাতায়াতের সুবিধা হইয়াছে, এবং সাময়্িকপত্রে সমস্ত দেশের সংবাদ সকলে সহজে পাঁইতেছে একই ভাবের শাসন সর্বত্র চলিলে, স্থখ, ছুঃখ একই ভাবের হইলে, দেশের লোকের পরস্পরের সহিত সহজেই সহানুভূতি জন্মে স্বধর্মনিষ্ঠ মুসলমানেরা এখন সযত্বে উহাদেরও মাতৃভাষা বাঙ্গালার অনুশীলন আরভ্ত করায় এবং নিষ্ন বর্ণের বাঙ্গালীর। উচ্চবর্ণের অচুকরণে আচার ব্যবহার পরিচ্ছন্নতা সম্বন্ধে কতক উন্নত হওয়ায়-_বর্ণ ধর্ম নিবিশেষে

১২২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

বাঙ্গালী মাত্রের মনে একট] জাতীয় ভাব অস্কুরিত হইতেছে তবে জাতীয় উন্নতি কি উপায়ে ঘটিবে তৎ সম্বন্ধে মতভেদ আছে।”৪০ | পরিশিষ্ট, বাঙ্গালার ইতিহাস ]

এখানেও তৃদেব জাতীয় জীবনে একটা নতুন ভাবের অঙ্কুর লক্ষ্য করেছেন কিন্তু কোথাও এই জাগরণকে তিনি স্বদেশপ্রেম বলতে চান নি। বাঙ্গীলীর জীবনে এই নতুন ভাবের আবির্ভাব হয়েছে যে চেতন! থেকে ভূদেব তাকে বড়জোর “জাতীয় ভাব'_-এই নামে চিহ্নিত করতে পারেন “সামাজিক প্রবন্ধে” তিনি এই ভাবটিকেই বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন

প্রবন্ধে ভূদেব দেশচিন্তার যে স্বচ্ছ পরিচয় দিয়েছেন তার অন্তান্ত রচনাতে তা নেই। “স্বপ্রলন্ধ ভারতবর্ষের ইতিহাঁস” “পুষ্পাঞ্জলি”তেও ভূদেবের দেশচিন্তা আছে-_কিস্তু কোথাও ভা স্পষ্ট হয়নি। প্রবন্ধের ।দেশচর্চ”! আরস্তভ করারও আগে তিনি এঁতিহাসিক উপন্যাসে মারাঠাবীর শিবাঁজীর চরিত্র অবলম্বনে দেশভক্তির আদর্শ তুলে ধরেছিলেন শিবাঁজীকে নায়ক কল্পন1 করে প্রথম গল্প রচনার কৃতিত্বও তার ১৮৫৭ সালে “এতিহাসিক উপন্তাঁস' রচনণর দার্খদিন পরে শিবাজীর বংশধরদের নিয়ে ১০৯৫ খ্রীষ্টাব্দে তিনি “স্বপ্নলন্ূ ভারতবর্ষের ইতিহাস” রচনা করেন। ইতিহাস রচনার প্রবণত৷ ভূদেবের বর।বরহ ছিল। ছাঁত্রপাঠ্য ইতিহীস গ্রন্থও তিনি লিখেছেন নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ত্দানীগন বৃটিশ শাসকবর্গের বিবরণ রচনাও তৃদেবেরই কীতি। কিন্ত “ন্বগ্রল্ধ ভারতবর্ষের ইতিহ।স" গতান্ছগতিক ইতিহাস নয়। নামকরণ থেকেই গ্রন্থটির বিষয়গত বৈচিত্র্যের আভাস মেলে কোঁন আত্মীয় রচিত ভারতবর্ষের ইতিহাঁস থেকে “তৃতীয় পাঁনিপথের যুদ্ধ” বৃত্বান্তটি পাঠ করে লেখকের চিন্তাজগতে আলোড়ন ৃষ্টি হয়েছিল ভূমিকায় গ্রন্থকার বলেছেন, “যেদিন তাহার অন্ধবাঁদিত তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধ পাঠ করি সেইদিন হঠাৎ আমার কঠতালু বিশুফ হইতে লাগিল, শরীর পুনঃ লোমাঞ্চিত হইল, পুস্তক পাঠ যেন মহাঁভার হইয়া পড়িল। পাঠ নিবৃত্ত করিয়া এঁ তৃতীয় পাঁনিপথের যুদ্ধ অন্যরূপে পরিসমাপ্ত হইলে কি হইত, এবিষয় ভাবিতে লাগিলাম।”৪ [ ভূমিকা, স্বপ্রলব্ধ ভারতবর্ষের ইতিহাস।

গ্রন্থটি এই ভাবনারই ফলাফলমাত্র স্বপ্নে তিনি ভিন্ন ইতিহাস দর্শন করেছিলেন “তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধ” কালীন ভারতবর্ষের ইতিহাস একটি অরাজকতার অধ্যায় মাত্র সমগ্র ভারতে খগ্বিচ্ছিম্ন শক্তির যুদ্ধ ইতিপূর্বেও বহুবার হয়েছে ভারতবাঁসীর অনৈক্যের দুর্বলতার ইতিহাস যে কোন স্বদেশপ্রেমী ব্যক্তিকেই পীড়া দেয়।

৪*. ভুদেষ মুখোপাধ্যায়, বাংলার ইতিহাস, চু'চুড়া, ১৯,৩। ৪১, ভুদেঘ রচনা সন্ভার, প্রমখনাধ বিপী সম্পাদিত। ১৩৬৪।

প্রবন্ধ ১২৩

স্বরৃত পাপের ইতিবৃত্ত স্বদেশপ্রেমী ভূদেবকেও চঞ্চল করেছিল তৃতীয় পাঁনিপথের যুদ্ধের নায়ক আহাম্মদ শাহের কাছে কাশীরাঁজের উক্তিটি লক্ষ্যণীয় যবন অধিকারের প্রথম পর্বে হিন্দু নাঁয়ক পৃথিরাজ যে মহত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন, তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধে জয়ী মহারাস্ই সেনাপতিও অনুরূপ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেছেন কিন্তু জাতীয় মহত্বও পরাধীনতার অভিশাপ বহন করে এনেছিল মহারাষ্্র সেনাঁপতির বক্তব্যটি উপস্থিত করে কাশীরাজ বলেছেন,__

“সাহেবুদ্দিন মহম্মদ ঘোরি প্রথমে ভারতবর্ষ আক্রমণ করিতে আসিয়া চোহান বংশাবতংস মহারাজ পৃ্বীরাঁজ কর্তৃক বন্দীরুত হইয়াছিলেন। পৃথ্ীরাঁজ অনুগ্রহ করিয়া তাহাকে ছাড়িয়া দেন কিন্তু পরবর্ষে স্বয়ং বন্দীকৃত হইলে সাহেববুদ্দীন কর্তৃক নিহত হইয়াছিলেন। পূর্বে হিন্দুরা! মুসলমানদিগের প্রতি কিরূপ ব্যবহার করিয়াছেন+* এবং মুসলমানেরাঁও হিন্দুদিগের প্রতি কেমন আচরণ করিয়াছেন, তাহা এঁ বিবরণেই প্রকাশিত হইতেছে ।”

[ পানিপথের যুদ্ধ, স্বপ্রলন্ধ ভারতবর্ষের ইতিহাস ] এই কল্পিত কাহিনীর নায়ক মহাঁরাষ্র সেনাঁপতির ব্যবহারে সন্তষ্ট হয়ে আহম্মদ

শাহ কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যবহার করেছেন,__ “দত! তুমি মহারাই্ই সেনাপতিকে গিয়া বল, আমি তাহার উদার ব্যবহারে একাত্ত মুগ্ধ হইলাম- আর কখনও ভাঁরতবর্ষআক্রমণে উদ্ধম করিব না।” . [শ্রী]

ক্ষতরাঁং মহারাষ্ট্র অধিনায়ক রাজা রাঁমচন্দ্রই পুনরায় ভারতে অখণ্ড স্বাধীনতা- শান্তি-এঁক্য স্থষ্টি করবার দায়িত্ব নিয়ে ইন্দপ্রস্থে অধিরূঢ় হলেন এই ইতিহাঁসটিই ভূদেবের স্বপ্রলব্ধ ইতিহাস স্বপ্ন সত্য হয় না কিন্তু জাতীয় স্বপ্নে কিছু আনন্দলাভ হয়। তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধ শেষে ভারতবর্ষে হিন্দু শক্তি সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে যে আদর্শ প্রচার করেছিলেন--তার মর্ধার্থ এই, “আমাদিগের এই জন্মভূমি চিরকাল অন্তবিবাদানলে দগ্ধ হইয়া আসিতেছিল, আজি সেই বিবাঁদানল নির্বাপিত হইবে আজি ভারতভূমির মাঁতৃভক্তিপরায়ণ পুত্ররা সকলে মিলিত হইয়| ইহাঁকে শান্তিজলে অভিষিক্ত করিবেন |” [ সাম্রাজ্যের পরিবর্তন ]

ভূদেবের কল্পিত স্বপ্রৃষ্ট ভারতের ভবিষ্যতের ছবি এটিই | হিন্দুশক্তি স্বপ্রাচীন ভারতের সিংহাসনে আরোহণ করুক বাসনাটি তিনি অন্ততঃ অংশে গোপন করেন নি। তিনি প্রাচীন আদর্শের পুনরুজ্জীবন পুনঃপ্রতিষ্ঠা চেয়েছিলেন - তাই স্বিপ্রলব্ধ ভারতবর্ষের ইতিহাসের” মত এমন কল্পিত ইতিহাসের চিত্র রচনা কর! ভুদেবের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল। কল্পিত ভারতবর্ষের শাঁসন ব্যবস্থায় নতুন বিধান রচনাতেও ভৃদেবের আদর্শে প্রতিফলন রয়েছে। দীর্ঘদিন মোঘলশাসনের ফলে

১২৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

মুসলমান সম্প্রদায়ও এদেশের অধিবাসী রূপেই গৃহীত হয়েছেন ।-__সার্থকতা! আসবে হিন্দু মুসলমানের সম্মিলিত সাধনায়,

“ভারততৃমি যদিও হিন্দুজাতীয় দিগেরই যথার্থ মাতৃভূমি, যদিও হিন্দুরাই ইহার গর্ভে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, তথাপি মুসলমানেরাও আর ইহার পর নহেন, ইনি উহাদিগকেও আপন বক্ষে ধারণ করিয়! বহুকাল প্রতিপালন করিয়া আসিতেছেন। অতএব মুসলমানেরাঁও ইহার পালিত সন্তান

“অতএব ভারতবর্ষ নিবাসী হিন্দু এবং মুসলমানদিগের মধ্যে পরস্পর শ্রাতৃত্বসন্বন্ধ জন্মিয়াছে বিবাদ করিলে সেই সম্বন্ষের উচ্ছেদ করা হয়। আর আমাদিগের মধ্যে কি পৃর্যের যত বিবাদ চলিবে 1” [ প্রা

ভূদেব হিন্দু মুসলমানের সম্মিলন চেয়েছিলেন, উভয়ের সম্মিলিত এঁক্যশক্তিতেই বর্তমান ভারত তার প্রাচীন মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবে--এ ছিল “ঠার বিশ্বাস 'সেই যুগের জন্য এমন বলিষ্ঠ উদার চিন্তাধারার প্রয়ৌোজনও ছিল জাতীর়তাবোধের ছক্রছায়াতলে সংকীর্ণ ধর্মীন্ধতা বলি দিতে হবে উপদেশ মনীষী ভূদেবের গভীর অন্তরূষ্টিকেই চিনিয়ে দেয়। দন্বপ্নল্ধ ভারতবর্ষের ইতিহাসে” ভূদেবের রাজনৈতিক চিন্তাধারার স্থস্পঈ পরিচয় রয়েছে তিনি ভবিষ্যৎ ভারতের চিত্ররচনা করেছিলেন এভাবে,

“এক্ষণে সকলকে সম্মিলিত হইয়া! মাতৃদেবীর সেবার ভারগ্রহণ করিতে হইবে। কিন্ত সকলের কর্তা একজন ন1 থাকিলেও সম্মিলন হয় না কোন্‌ ব্যক্তি আমাঁদিগের সকলের অধিনায়ক হইবেন ?” [এ]

“সামাজিক প্রবন্ধে*ও এই ভাবী নেতার প্রতীক্ষা করতেই বলেছিলেন ভূদেব রাজনৈতিক জীবনের পরিচালনাভার স্থযোঁগ্য নেতার হস্তে অপিত হলেই ভূদেবের সমস্ত হতাশা! দূর হতে পারে; আন্দোলনে তাঁর বিশ্বাস ছিল না কিন্তু হুষোগ্য অধিনায়কের আবিতর্তীবকে তিনি অভিনন্দন জানিয়েছেন সবার আগে। কিন্ত প্রশ্ন এখানে থেকেই যায় যে ভূদেবের কল্পিত নেতা কাদের পরিচালনা করবেন ? সেখানেই সংঘবদ্ধ আন্দোলনের ছবিটিই মনে পড়া স্বাভাবিক এটি ভূদেবের চিন্তার পারস্পরিক বিরোধিতারই চিত্র। অন্যদিকে হিন্দু সমাজের জাঁতিতেদ প্রথার দৃঢ় সমর্থন করেও তিনি সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী মুসলমানকেও ভাতৃত্বন্ধনে আবদ্ধ করার কথা বলেছেন। হিন্দুদের ভেদবুদ্ধি জাতিভেদ প্রথার অবদান বললে খুব বেশী বাড়িয়ে বলা হয় না। জাতিভেদ প্রথা মানবতাবোধের অন্তরায় বলেও বিবেচিত হয়েছে ভূদেবও মানবতাবাদী সংস্কারক | সুতরাং জাঁতিভেদ প্রথার সমর্থনকারী ভূদেবের বক্তব্য স্ববিরোধী বলেই মনে হয়েছে জাঁতিভেদের হুফলবিচার কালে ভূদেব বলেছিলেন,__

প্রবন্ধ ১২৫

“এ প্রথা থাকাতে লোকে স্বজাতীয়দিগের মধ্যেই বড়লোক দেখিতে পায়, বিদেশীয় রাজপুরুষকেই সর্ববিষয়ে সর্বোপরি দেখে না এবং সেইজন্য উহ্াদিগের প্রতি, অযথা ভক্তিও করে না 1” [ বঙ্গসমাঁজে ইংরেজ পুজা, বিবিধপ্রবন্ধ, ২য় ভাগ ]

কিন্তু মানবতাবাঁদের প্রচার হবার পরে মানুষ আত্মদর্শন করতেই শেখে-_শুধু জাতিবুদ্ধি বিচারের মাপকাঠি হতে পারে না। জাতিতেদপ্রথা জাতীয়তাবাদ একই সঙ্গে ছুটোই প্রবলভাবে সমাজে স্থান পেতে পারে না। অন্ততঃ প্রবল জাতীয়তাবাদ জাতিভেদের কঠোরতার ভিত্তিকে দুর্বল করে দেবেই। বাস্তবেও তা হয়েছে সুতরাং এই আপাতঃ বিরোধী চিন্তার কথা স্মরণ রেখেও ভূদেবের উদার রাজনীতিকে প্রশংসা জানাতেই হয় ভৃদেব সম্মিলিত এঁক্যবদ্ধ একটি অখণ্ড ধর্মাশ্রয়ী মহাজাতির বন দেখেছিলেন, _-” স্বপ্রলন্ধ ভারতবর্ষের ইতিহাস” পাঠ করলে সেই ধারণা আরও' দুঢ় হবে। ভারতবর্ষের প্রাচীনসংক্কার রক্ষা করেও তিনি আধুনিক জাতীয়তাবোধের স্বপ্ন দেখেছিলেন দুয়ের মিলন সম্ভব ছিল না।-কিছু ত্যাগ' করেই কিছু পেতে হবে-শকিস্তু ভূদেব এই আদর্শের বানীটিই প্রচার করে গেছেন রক্ষণশীলতার সঙ্গে উদারতার সমন্বয়েই ভূদেবের আদর্শ গড়ে উঠেছিল

ভূদেবের আত্মবিশ্বীস স্বধর্মচেতনার ওপর গভীরতর আস্থার কতকগুলো যুক্তি- সংগত কারণ আবিফার করা যায়। বিদেশীইতিহাস, ধর্ম, সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করে ভূদেব আপন সামাজিক আচারব্যবহার ধর্ম সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠতা আবিফাঁর করেছিলেন। স্বধর্মনিষ্ঠার আত্যন্তিকতার মূলে এই চেতনাই কার্যকরা, হয়েছিল। প্রসঙ্গে ভূদেবের ধারণার পরিচয় পাঁওয়া যাঁবে বিদ্যাসাগর সম্বন্ধে তার সমালোচনা থেকেই ভূদেব বিদ্যাসাগর এই উভয় মনীষীর আদর্শগত পার্থক্যটিও এতে স্পষ্ট হবে। সমন্ধে সমালোচক প্রমথনীথ বিশী নিখুত বিচার করে বলেছেন,-__

“বিদ্যাসাগর ভূদেবের সমান্তরাল জীবনকথা মনে উদিত হওয়া অসম্ভব নয়, ছুয়ে এত মিল আবার এত অমিল। একই বিধাতা ছুই জনকে সৃষ্টি করিয়াছিলেন বুঝিতে কষ্ট হয় না, কিন্ত এক মেজাজে নিশ্চয় সে সৃষ্টিকার্য হয় নাই

বিদ্যাসাগরের আস্থা নব্যশিক্ষিতগণের উপরে, ভূদেব সে বিষয়ে নীরব হিন্দু আচার সম্বন্ধে ভূদেব অসীম রক্ষণশীল, সেগুলি ঝাঁটাইয় বিদায় করিবার জন্যই যেন বিদ্কাসাগরের জন্ম, তিনি কিছুই মানিতেন না।” [ ভূমিকা, ভূদেবরচনা সম্ভার ]

বিদ্ভাসাগর রামমোহনকে জাতীয়তাবাদের অগ্রদূত,__প্রগতিবাদের সমর্থক বলে ব্যাধ্যা করেছি; তৃদেবকে সে তুলনায় রক্ষণশীল বলাই সঙ্গত তবে স্বদেশচর্চার ক্ষেত্রে এই ভিনজনকেই একই নামে অভিহিত কর] যায় এর! সকলেই ্বদেশ-

১২৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

প্রেমিক, শুধু পথ মতের পার্থক্য রয়েছে মাত্র। দেশপ্রেমিক রামমোহন বিদ্ভাসাগর প্রগতিকে সমর্থন করে সমগ্র দেশে ষে প্রাণবন্ত] তৃঙজন করেছেন-_-তাতে অবগাহন না করলে ভূদেব হয়ত এই অনড় রক্ষণশীলতাকে নতুন করে আকড়ে ধরতে পারতেন না। এই ছুটি ভিন্ন আদর্শ সাঁমনে ছিল বলেই স্বদেশচর্চার ক্ষেত্রে নব্যপন্থীদের অস্বিধে হয় নি। বিগ্ভাপাগর রামমোহনের দেশেই ভৃদেবের আবির্ভীব এই বৈপরীত্য থেকেই সত্য উদ্ধার সহন্ততর হয়েছিল। ভূদেবের দেশাদর্শ সম্পূর্ণ প্রাচীন ভিত্তিকেই আশ্রয় করতে চেয়েছিল দেশের মাটিতে দেশীয় মনোঁভাঁবই তিনি সমর্থন করেন বিগ্ণসাগরকেও তিনি সমালোচনা করেছিলেন,__

“তাহার ভদ্রঘধরে বিধবাবিবাহ প্রবর্তন চেষ্টা এবং স্কুলপাঠ্যগ্রন্থে এদেশীয় বালক- দ্দিগের নিকট শুধু বিদেশীয়দিগের চরিত্র ব্যবহারকে আদর্শভুবে দেখান, স্বসমাজের ক্ষতিকর এই ছুইটি কার্য স্থায়ী হইবে না, অল্পকাল মধ্যেই এরূপ বিধবা বিবাহ এরূপ কয়েকখানি স্কুলপাঠ্যপুস্তক অপ্রচলিতপ্রায় হইয়া লোকের ত্বরণপথের অতীত হইয়া যাইবে |” " [ ভূদেবচরিত, ১ম ভাগ ]

ভূদেব পাশ্চাত্য মহাত্সাদের অদর্শ এদেশীয় সমাজে অচল বলে মনে করতেন, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যাঁও উক্ত গ্রন্থে রয়েছে। জাতীয় আদর্শকে নিছক রক্ষণশীলতা বলা যায় না; আসলে ভূদেব প্রগতির সঙ্গে বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গির সংযোগ সাধন করারই চেষ্টা করেছিলেন যে বৈপ্লবিক সংস্কীরব্রত নিয়ে রামমোহন বিদ্যাসাগরের লমগ্রজীবন সাধনা-_ভূদেব সেখানে নিষ্ক্রিয় সমালোচক মাত্র এদের মধ্যে সম্ভবতঃ তুলনামূলক আলোচনা চলতে পারে না।

ভূদেবের দেশপ্রেমের আদর্শ তাঁর রচিত গ্রন্থাবলীতেই আবদ্ধ ছিল,_--বাস্তবক্ষেত্রে তাঁর প্রয়োগ করার বিন্দুমাত্র চেষ্টা তিনি করেন নি। তিনি প্রাবন্ধিক, চিন্তাক্ষেত্রেই তার অধিকার সীমাবদ্ধ ছিল। তবে এমন বিস্তারিত দেশপ্রেম সম্পকিত আলোচনা লে যুগে ভূদেবই করেছিলেন দেশপ্রেম, জাতীয় চেতনা ইত্যাদি অনুভূতির বহুল আলোচনার প্রয়োজনও ছিল। সর্বত্রই ভূদেব প্রাবন্ধিকের মতই আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন “ত্বপ্লল ভারতবর্ষের ইতিহাস” যদিও প্রবন্ধগ্রস্থ নয় কিন্ত আভ্যন্তরীণ আলোচনায় প্রবেশ করলে দেখা যাবে ভূদেবের গতানুগতিক প্রবন্ধ রচনার রীতি এখানেও অন্ুস্থত হয়েছে কাঁজেই রসহৃষ্টির তাগিদে নয়,-আপন বক্তব্যের 'যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যাতেই ভূদেব সর্বদা ব্যস্ত।

“পুষ্পাঞ্জলি” তৃদেবের পৃথক স্বাদের রচনা “পুষ্পাগ্রলি”তে ভূদেবের স্বদেশ চিন্তার নতুন একটি রূপ দেখি জন্মভূমিকেও ভূদেব সাক্ষাৎ ঈশ্বরীদেহ বলেই মনে করতেন “আর্যবংশীয়দিগের চক্ষৃতে বায়ান্ন পীঠ সমন্বিত সমুদায় মাতৃভূমিই সাক্ষাৎ

প্রবন্ধ ১২৭

ঈশ্বরীদেহ”--একথা ভূদেব আগেই বলেছেন 'পুষ্পাঞ্জলিতে' সেই পীঠস্থান দর্শন বর্ণনাই স্থান পেয়েছে পুরাণ রচনার আদর্শ অবলম্বন করেই গ্রন্থটি লিখিত হয়েছে। কিন্ত এই গ্রন্থের চরিত্র লোকোত্তর হলেও বিষয়বস্ত বাস্তব। ভূদেব বলেছেন,--

কিন্ত মনে কর, বেদব্যাস স্বজাতি অনুরাঁগের মার্কণেয় জ্ঞানরাশির এবং দেকী মাতৃভূমির প্রতিরূপ স্বরূপ বর্ণনা করা গিয়াছে, তাহা হঈলে আর এঁ সকল বর্ণন। লোঁকোত্তর বলিয়া বোধ হইবে না।"*অনন্তর দেশের পুরাবৃত্তের স্বরণে আশা এবং প্রজ্ঞার সংস্কৃতির উপায় উদ্ভাবন, এবং প্রীতির উদারতা অনুভূত হওয়া! সাহজিক ব্যাপার বলিয়াই প্রতীত হইবে...পরিশেষে নিজ সমাঁজের প্রতি একান্তিক ভক্তির যূল নিরূপিত হইলে যে অপর কোন বিভীষিকার উপদ্রব থাকিতে পারে না, এবং স্বজাতীয়ান্ুরট্গ তাহার প্রীতিভাজন পদার্থের সহিত তন্ময়তা প্রাপ্ত হইয়া আপন অভীষ্ট সাধনের উদ্দেশ্যে সঙ্গোপিত কাযা নুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হইতে পারে ইহাঁও লৌকিক যুক্তির বহিভূত বলিয়া বোধ হয় না।৪২ [ গ্রন্থের আভাস, পুষ্পাঞ্জলি |

ভূদেবের উদ্দেশ্য উদ্ধৃতিতেই ব্যক্ত হয়েছে গ্রস্থটিতে এক একটি অধ্যায়ের শিরোনাম থেকেও রচয়িতার উদ্দেশ্য ব্যক্ত হয়। যেমন সঞ্চম অধ্যায়ের শিরোনাম-_ “ঘ্বারাবতী--স্থষ্টির উপাদান --সম্মিলনোপায়--প্রীতি”-_দ্বারাবতী দর্শনের প্রাক্কালে দর্শকচিত্তে যে মনোভাব জেগেছে--সেই অন্ুভবকে শিরোনামে ব্যক্ত করেছেন লেখক দ্বারাবতী বন্দরে একটি বাম্পীয় পোত থেকে আগত যে শুভ্রকায়, রক্ত পরিচ্ছদধারী সৈনিকদের ক্রিয়াকলাপ লক্ষ্য করলেন এবং সে প্রসঙ্গে যে আলোচন। করেছিলেন তার ভাবধার। কিন্তু সম্পূর্ণ অন্য অর্থ বহন করেছে। পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখলে এজাতীয় মন্তব্যের মধ্যে নীতিবিরোধী আলোচন! আছে-_ যেমন-_

“এই জন্যই একজন পুরুষসিংহ সহস্র সহত্র সামান্য ব্যক্তির উপর কর্তৃত্ব করিতে পারেন --এই জন্যই একটি প্রবল জাতি বহুল দুর্বল জাতির প্রতি ক্ষমতা প্রয়োগে সমর্থ হয়। অধীন পুরুষেরা অথবা অধীন জাতীয়রা সম্মিলিত হইয়] বিপক্ষতা করিলে অবশ্যই কর্তৃ-ত্বশীলী পুরুষকে কিংবা জাতিকে পরাভূত করিতে পারে,”

[ সপ্তম অধ্যায়--পুষ্পাঞ্জলি ]

জাতীয় আলোচনা অত্যন্ত নিরপেক্ষ ভাবেই করা হয়েছে যদিও-_তবু অর্থ বিশ্লেষণে দেখা যাঁয় যে গুরুতর সত্যটিই প্রকাশিত হয়েছে

'পুষ্পাঞ্জলিতে” সমগ্র ভারতবর্ষের মধ্যে মৃন্সয়ী দেশকে নয়, চিন্ময়ী মাতাকেই

৪২. ভূঁদেব রচন। সম্ভার, প্রমধনাথ বিশী সম্পাদিত ১৩৬৪

১২৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

প্রত্যক্ষ করেছি আমরা- সেদিক থেকে বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমমঠে বণিত দেশমাতৃ রূপের সে ভূদেব চিত্রিত তীর্থমহিমাময়ী ভারতমাতার প্রশ্বর্যময়ী যৃতির সাদৃশ্য রয়েছে "পুষ্পাঞ্জলিশ্র বর্ণনাভঙ্গী ভাষার জটিলতা ভেদ করে এবং রূপকার্থ অনুসন্ধান কর দুরূহ বলে-_সে যুগে এবং যুগেও জাতীয় গ্রন্থ বুলভাবে সমাদৃত হয় নি।

ভৃদেবের স্বদেশচচ্চণ তাঁর লিখিত সাহিত্য থেকে অনুসন্ধান করা হলো কিন্ত ভূদেবের আত্মমর্যাদীবোধ আত্মবিশ্বাসের প্রসঙ্গও তাঁর রচনার অন্যত্র ধরা পড়েছে শাসক ইংরেজকে তিনি অত্রান্তভাবে চিনে নিয়েছিলেন;_তাঁর কোনো প্রবন্ধে বলেছেন,_

“ইংরাজ যতই ভোজখাঁউন, মদেরগ্লাস হাতে করিয়া যতই লম্বাচৌড়া বক্তৃতা করুন, উনি আপনার কাজ ভুলিবার লোক নহেন।*বার প্রককতিক ইংরার্নেরওরপ পূজা

নিতান্ত অফল পুজা ।৮ [ বঙ্গ সমাজে ইংরাজ পুজা,_বিবিধ প্রবন্ধ ২য় ভাগ ] এই যুল্যবিচার ভূদেবের সচেতনতারই পরিচায়ক আপন ক্ষমতার শক্তি সম্বন্ধে পূর্ণসচেতন ভূদেব তাই পরান্ুকরণের নিন্দা করেছেন,

“ইংরাজেরা যেমন সকল কথাতে এবং সকল কাজে স্বজাতীয় লোকের সম্মান এবং মর্যাদা রক্ষ। করিয়। চলেন, বাঙ্গালীদের এখনও সেরূপ শিক্ষাটা পাঁকিয়া' উঠে নাই। কিন্ত ভাবিয়৷ দেখ দেখি, যে সকল বাঙ্গালী ইংরাজীভাষা এবং ইংরাজী বিদ্ভা এমন উত্তমরূপে শিখিয়াছেন যে বিজাতীয় ভাষায় অনর্গল লিখিতে এবং বন্তৃত৷ করিতে পারেন, তাহাদের ক্ষমতা কি অল্প। অপর কোন ভাষায় ওরূপ লিখিতে অথবা বক্তৃতা করিতে কয়জন বড় ইংরাঁজ সমর্থ

যে দেশে শিরোমণি এবং জয়দেব এবং চৈতত্যমহী প্রভু জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, সে দেশের লোক কখনই জন, চার্লস, হনরি, মাথু হইতে নিকৃষ্ট হইতে পারে না।

[ ঈর্ষ প্রবণতা, বিবিধ প্রবন্ধ, ২য় ভাগ - এই আত্মমর্যীদীবৌধ বাঙ্গালীর প্রাণে সঞ্চারের বাসনা থেকেই উদ্ধৃত মন্তব্য করেছিলেন ভূদেব | তার দেশপ্রেমের মূল কথাঁটিই এই ? --আত্মশক্তি নির্ভর করে, স্বধর্ম স্বসমাঁজের প্রতি আস্থা রেখে পূর্ণ মানবতার পথে এগিয়ে যাঁওয়া। স্বাধীনতা প্রার্ধিকেই জীবনের চরম উদ্দেশ্য বলে মনে করেন নি বলেই তার দেশপ্রেমের উপলদ্ধি সে যুগের গতানুগতিক দেশপ্রেমের উপলব্ধি থেকে আলাদা কিন্ত নিজস্ব আদর্শ 'অবলম্ষন করে ভূদেব ষে বিশাল দেশপ্রেমযুলক প্রবন্ধসাহিত্য রচনা করেছিলেন, _ তা তুলনারহিত। স্বজ্জাতিশ্রীতি স্বধর্মনিষ্ঠাকে স্বজাত্যবোধ ত্বদেশপ্রেমের নায়ান্তর বলে ব্যাখ্যা করেছি বলেই ভৃদেবের স্ব্দেশচর্চার বৈশিষ্ট্য বৈচিত্র্য 'ামাদের বিস্মিত করেছে।

প্রবন্ধ ১২৯

বস্কিমচন্দ্রের সমগ্র সাহিত্যজীবনকে ব্রজেন্দ্রনাথ “চারটি পর্বে বিভক্ত করেছেন--. আদিপর্ব, উদ্যোঁগপর্ব, যুদ্ধপর্ব শীস্তিপর্ব। প্রাবন্ধিক বঙ্কিমচন্ত্রকে বিচার করতে গেলে ব্রজেন্দ্রনাথ নির্দেশিত যুদ্ধপর্বের অধিনায়ক বঙ্কিমচন্দ্রকেই আবিফার করতে হবে কিন্তু সাহিত্যসেবীর জীবনে “যুদ্ধপর্ব” কথাটির তাৎপর্য বিশ্লেষশে করলেই ত্বদেশ- প্রেমিক প্রাবন্ধিক বঙ্কিমচন্দ্রকে আবিষ্কার করা সহজতর হবে। প্রসঙ্গে বহ্কিম জীবনীকারের ভাবাবেগপুর্ণ একটি মন্তব্য স্মরণ করি,

“তুমিই একদিন তরবারি হস্তে মহারাইই প্রদেশে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলে আজ কপালদোৌষে লেখনী হস্তে বঙ্গভূমে অবতীর্ণ হইলে একদিন তোমাকে রাঁজপুতানার দুর্ভে্ গিরিমালার মধ্যে উরহ্গজেবের সম্মুখীন হইতে দেখিলাম, আর একদিন বাঙ্গালার নিবিড় জঙ্গলের মধ্যে অশ্বরবিদারী তোপমুখে ফ্ীড়াইয় “হরে মুরারে মধুকৈটভীরে"গায়িতে শুনিলাম ।৮৪৩

জীবনীকাঁর খুব বেশী অতিশয়োক্তি করেন নি,_স্বদেশপ্রেমিক বঙ্কিমচন্দ্র সম্বন্ধে শ্রেণীর উচ্ছাস সব সমালোচকেরই আছে এবং তা অহেতুক নয় উপস্তাস আলোচনাকালে দেশ সম্বন্ধে জাঁতি সম্বন্ধে ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বঙ্কিমচন্দ্রের যথার্থ ধারণার প্রসঙ্ ব্যাখ্যা করেছি। বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্যের ধারাবাহিক আলোচনায় বঙ্কিমচন্দ্রের স্থাননির্ণয় কালেও ব্বদেশপ্রেমিক ব্ধিমচন্দ্রকেই নতুনরূপে প্রত্যক্ষ করি “ছুর্গেশ- নন্দিনী” থেকে “দীতাঁরাম'-এ বঙ্কিমচন্দ্রের দেশচর্চার প্রবহমীন ধারাটিকে লক্ষ্য করেছি কোথাও তার দেশপ্রেম প্রকাশ্য-সোচ্চার কোথাও তা পরোক্ষ-স্তিমিত। কিন্তু প্রবন্ধের পর্বভাগ করলে দেখা যাঁবে যে, প্রথম-যুগে দেশপ্রেমের যে তীত্র আবেগ ব্যর্জে-বিন্পে ফেটে পড়েছে পরবর্তী কালে সে তীব্রতা একটা পরম প্রশান্তির মধ্যেই বিলীন হয়ে গেছে

প্রাক বঙ্কিমযুগের প্রবন্ধসাহিত্যে দেশধারণায় উচ্ছাস আছে কিন্তু দেশপ্রেমের লক্ষ্য ভবিষ্যৎ নির্ণয়ের চেষ্টা নেই রামমোহন-বিদ্ভাসাগরের সমাজসংস্কীর ব্রতই কখনও ধর্মসংসক্কার আন্দোলনে কখনও সংস্কৃতির পুনর্জীগরণ আন্দোলনে পর্যবসিত, হয়েছিল। এরাও স্বদেশপ্রেমিক-কিস্তু এদের স্বদেশতাবনায় ভাবী বিপ্লবের আসন্ন সংকেত ধ্বনিত হয়নি উনবিংশ শতাব্দীর স্বদেশচিস্তার প্রাথমিক স্তরে দেশপ্রেম ছিল এমন একটি আবেগাত্মক উপলব্ধিমাত্র রাজনারায়ণের প্রবন্ধ আলোচনা করলেই প্রাকবঙ্কিমপর্বের স্বদেশপ্রেমাত্বক আলোচনার মূল স্থরটি স্পষ্ট হয়। রাজনাঁরায়ণ ভাষা-সংস্কৃতি, আচাঁর-ব্যবহাঁর শিক্ষাপদ্ধতির স্বদেশীয়ানা সঞ্চারের

৪৩, শটীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, স্বর্গীয় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবন চরিত ১৯১১। পৃঃ ১৯7২৭

১৩০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন ভূদেব মূলতঃ স্বধর্মনিষ্ঠ ভাবুক, স্বাজাত্যবোধেরন্যধর্মনিষ্ঠার অতিরিক্ত কোন বিপ্রবাত্মক ভাবনায় তার আস্থা ছিল না। বঙ্কিমচন্দ্রই স্বদেশ- ভাবনার ক্ষেত্রে নতুন বক্তব্য নতুন ভঙ্গির প্রবর্তয়িতা

নিছক ভাবাত্মক দেশপ্রেমের মধ্যে তিনি অতিরিক্ত এমন একটি শক্তি সঞ্চার করেছিলেন, যা ইতিপূর্বের প্রবন্ধে অভাবিত ছিল পূর্বের প্রবন্ধসাহিত্যের ইতন্ততঃ বিক্ষিপ্ত চিন্তাকে বঙ্কিমচন্দ্রই সংহতমাকারে, বলিষ্ঠভাষায়, তীব্রঝংকারে ব্যক্ত করেছিলেন আবেদন নিবেদনের ভাষাটি প্রথমীবধিই পরিত্যাগ করেছিলেন তিনি পরিবর্তে একটা প্রচণ্ড ছুঃখবেদনার অভিব্যক্তি তাঁর ভাষাঁকে-বক্তব্যরে অনেক বেশী শক্তিদীন করেছে | বঙ্কিমচন্দ্র যূলতঃ উপস্তাসশিল্পী, প্রবন্ধেও সে তথ্য সহজেই উদঘাটিত হয়। তার প্রথম উপন্যাসে দেশচিস্তার যে উপাদান পেয়েছি -সেই বাঙ্গালী প্রাণতাকে প্রবন্ধেও আবিফার করি প্রথমেই একটি সংঘবদ্ধ, অতীত/স্বতি সচেতন, --আত্মনির্ভরশীল বাঙ্গালীজাতিকে বঙ্কিমচন্দ্র অনুসন্ধান করে গেছেন চিরকাঁল। এই কল্পনা বাস্তবের সংস্পর্শে এসে বারবার ভেঙ্গে গেছে, বঙ্ধিমচন্দ্রও প্রচণ্ড হতাশায় ক্ষোভে অস্থির হয়েছেন বস্গিমচন্দ্রের দেশপ্রীতি পরোক্ষভাবে বাঙ্গালীপ্রীতিতেই পর্যবসিত-_কিন্তু বৃহত্তর ভারতগ্রীতি কিংবা মহত্তর মানবপ্রীতিকে বাদ দিয়ে এই চেতনার কোন ভিত্তি থাকতে পারে না তাই ভারতপ্রীতি মানবপ্রীতির স্থানিক সংস্করণ হিসেবে বঙ্কিমচন্দ্রের বাঙ্গালীগ্রীতিকে গণ্য করা দরকার প্রথম যুগের প্রবন্ধে বাঙ্গালীপ্রীতিই পরিশেষে সর্বমানবতার বাণীরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে ধীরে ধীরে, সে প্রনঙ্গও যথাকালে আলোচিত হবে বহ্কিমচন্ত্রই প্রবন্ধ-উপন্তাঁসে সর্ব- প্রথম সম্পগ্র বাঙ্গীলীজাতির মনে অখণ্ড এঁক্যবোধের সঞ্চার করেন ব্যাপারে তীর পরিকল্পনাও ছিল বিচিব্র--তিনি বর্তমানের বাঙ্গীলীকে অতীতের দিকে দৃষ্টি ফেরাতে বলেছেন ইতিহাসের আলোকে আত্মদর্শনের উপদেশ ইতিপূর্বে অন্ত কোন মনীষীর কণ্ঠে উচ্চারিত হয় নি। বঙ্কিমচন্দ্রই মনের নৈরাশ্য, ধর্মচেতনার অব্যবস্থিত ভাব হীনমন্যতার ব্যাধি থেকে বাঙগলীকে মুক্তির উপায় নির্দেশ করেছিলেন উপস্তাসে মনোহর অতীতচিত্র রচনা! করে আত্মবিশ্বাস অর্জনের পরিবেশও স্কট করেছিলেন তিনি। অতীত এতিহ্ের পটভূমিকাঁয় নিজের অস্তিত্ব আবিফারের পথটি ইতিপূর্বে বাংলাসাহিত্যে এমনভাবে কেউই বলেন নি। অবশ্ট বিচ্ছিন্নভাবে এই অনুভূতি অন্থান্তি প্রাবন্ধিকের রচনাতেও ধর পড়েছে মাঝে মাঝে কিন্তু তা স্পষ্ট বক্তব্য হয়ে ওঠে নি। বঙ্বিমচন্দ্রই এতিহ্াশ্রয়ী আত্মমর্যাদাবোধের চেতনাটি জাগিয়ে দিয়েছিলেন সংঘবদ্ধ একপ্রাণ বাঙ্গালীর কেই সম্মিলিত সুরে মাতৃবন্দনার গান শ্রবণ করতে চেয়েছিলেন তিনি

প্রবন্ধ ১৩১

বঙ্কিমচন্দ্র চিন্তার ক্ষেত্রে সমসাময়িক স্বদেশপ্রেমী লেখকদের প্রতিনিধিত্ব করে- ছিলেন বল! যেতে পারে | কোথাও পরোক্ষ ব্যঙ্গে কোথাও প্রকাশ্য বিদ্রপে কোথাও গভীর ছুঃখে বঙ্কিমচন্দ্র বাঙ্গালীজাতির স্থপ্ত চৈতন্যটিকেই জাগিয়ে দিতে চেয়েছেন সামশ্রিক জাগরণ না ঘটলে আসন্ন আন্দোলনের যথার্থ তাৎপর্য হৃদয়ঙ্গম করাই যে অসম্ভব বঙ্ষিমচন্দ্রই তা গভীরভাবে অন্নভব করেছিলেন এই প্রসঙ্গে কোনো সমালোচক বলেছেন,--

"কবিগণ সমাজের নবোঘ্,দ্ধ রাষ্ট্রীয় চৈতন্থকে একটা ধরিবার ছু'ইবার যোগ্য আকার দান্ব করিয়1! দেশমধ্যে একটা জাতীয় ভাবের বস্তা বহাইয়।৷ দিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন কবির কল্পনা অশরীরী হইলেও শক্তিহীন নহে। তাই তাহাদের কলিত 5188601,-গলি কৃত্রিম হইলেও তাহাদের উদ্দেশ্য সফল হইয়াছিল |”

[ পৃঃ ৩১৩ |

“বঙ্কিম বুঝিয়াছিলেন, বাঙ্গালী আগে বাঙ্গালী হউক, আগে আপনাকে চিনিয়া লউক, আপনাদের জাতীয়ত্ব ফুটাঁইয়! তুলুক, তারপর যদি সমগ্র ভারতবর্ষের চিন্তা করিতে যায় বা সমগ্র ভারতবর্ষকে সেবা করিতে চায়, তবেই তাহার চিন্তা বা সেব! ফলপ্রদ হইবে 1৮5৪ | পৃঃ ৩২৪]

উদ্ধৃত উক্তিদ্বয়ের মধ্যে সাদৃশ্যটি স্পষ্ট হলে সে যুগের কাব্যের বক্তব্যের সঙ্গে বস্কিমের আদর্শের মিল খুঁজে পাওয়া যাবে কিন্তু বাংলা প্রবন্ধসাহিত্যের ধারার পঙ্দে মিলিয়ে বঙ্কিমচন্দ্রের স্থান নির্ণয়কীলে আমাদের একাট কথা মনে রাখ! দরকার বাংল! প্রবন্ধ রচনার ক্ষেত্রে দেশচিন্তাঁর যে দুটি ধারা লক্ষ্য করেছি ত্বার সঙ্গে বঙ্কিম মননের যোগ খুবই কম। রাঁমমোহন-_বিদ্াঁসাগর রাঁজনারায়ণের নিছক সংস্কার ব্রত স্বদেশপ্রেমের চূড়ান্ত মহিমা পায় নি আবার তৃদেবের রাজশীতি-বিবজিত জাতীয় ভাবের আলোচনাতেও স্বদেশচিস্তার পূর্ণরূপ আভাসিত হয় নি। কিন্তু বন্ধিমচন্ত্ তন্ত্র পথ অবলম্বন করেছিলেন। প্রত্যক্ষ দেশসেবার আহ্বান, আন্দোলন সৃষ্টির আবেদন বঙ্কিম প্রবন্ধে উচ্চারিত হয়েছিল-_যা৷ ইতিপূর্বে অব্যক্ত বস্তুতঃ বঙ্ধিম- চন্দ্রের প্রবন্ধের চেয়ে তাঁর উপন্তাঁসেই এই বক্তব্য অনেক বেশী জোরালো শুধু প্রাবন্ধিক হিসেবে বঙ্কিমচন্দ্রের বিচার করাও অস্থবিধেজনক, কারণ উপগ্যাঁস- শিল্পী বঙ্কিমচন্দ্ররে আবেগ প্রবন্ধেও ব্যক্ত হয়েছে। তাই প্রথম যুগের প্রবন্ধ সাহিত্যের সঙ্গে বঙ্কিম মননের যদি কোন সংযোগ না থাকে তাতে আশ্চর্য হওয়! যায় না।

৪৪, অক্ষয়চন্ত্র দত্তগুপ্ত--বন্গিমচন্ত্র, ১৩২৭ সাল

১৩২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

বাংল৷ প্রবন্ধ সাহিত্যের প্রথমযুগে সমাজ সংস্কার চেষ্টাই প্রধানরূপে দেখা যায়; - বঙ্কিমচন্দ্র সমাজ-সংস্কারক কিন্তু সমাজচেতনার চেয়ে দেশচেতনাই তাঁকে অধিকমাব্রাঁয় চঞ্চল করেছিল সম্মগ্রভাবে বিচার করলে দেখা যাঁবে--দেশচেতনাকে তিনি ধর্মচেতনা মাঁনবতাবোধের সঙ্গে একত্রিত কবে একটি শাশ্বত জীবনবাণীই প্রচার করেছেন অবশেষে | দেশপ্রেমের মূলে যে সন্ক্িয় মানবপ্রেম বর্তমান বঙ্কিমচন্দ্র সে তথ্য উদঘাটন করেছেন বঙ্কিম জীবনের শেষ পর্বে উদার মাঁনবতাবাঁদের সঙ্গে ভগবৎচিন্তাও মিলিত হয়েছে- সে পর্যায়ে দেশ মানব সম্পকিত সমস্ত চিন্তাধারাই ভাগবতী মহিমীয় লীন হয়েছে

প্রাবন্ধিক বঙ্কিমের সমগ্র প্রবন্ধসাঁহিতাকে ছুটি পর্যায়ে ভাগ করলে দেখা যাবে - প্রথম পর্যায়ের রচনায় সমীজসমাঁলোচনা দেশপ্রেম উভয়ভাবই প্রবল। এই পর্যায়ের রচনা, লৌকরহস্য [১৮৭৪ ], কমলাঁকান্ত [ ১৮৭৫ ] মুচিন্নাম গুড়ের জীবনচরিত [ ১৮৮৪ ]| বঙ্কিমপ্রতিভার একটি নতুন দিক এই পর্যায়ের রচনায় উদঘাঁটিত। দেশপ্রেমিক বঙ্কিমের উচ্ছ্বাস এখানে যত প্রবল অন্যত্র তা নয়। ব্যঙ্গাত্রক রচনা প্রসঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্রের উদ্ধৃত গ্রন্থত্রয়ের আলোচন1 করেছি অন্য অধ্যায়ে '

দ্বিতীয় পর্যায়ের যে জাতীয় রচনাকে নিঃসংশয়ে প্রবন্ধ বলা চলে--তা৷ থেকে বঙ্কিমচন্দ্রের স্বদেশচিন্তার মুল স্থত্রটি আবিষ্কার করার চেষ্টা করব এই অংশে। বঙ্কিমচন্দ্র প্রবন্ধ হিসেবেই কিছু রচনা “বঙ্গদর্শন” প্রচারে” প্রকাশ করেছিলেন পরে তা “বিবিধ প্রবন্ধে [ ১ম ২য় ভাগ ] সংগৃহীত হয়েছে এই পর্যায়ের রচনায় প্রবন্ধশিক্পী বস্কিমের পূর্ণ পরিচয় মিলবে | প্রবন্ধের তথ্যনিষ্ঠত৷ যুক্তিধর্মিতা প্রবন্ধ পমষ্টিতে পাঁওয়! যাবে- তছুপরি দেশপ্রেমিক বঙ্কিমের জীবনজিজ্ঞাসার পরিচয়ও প্রবন্ধগুলিতে মিলবে। প্রথম পর্যায়ের রচনাঁভঙ্গিতে যে অভিনবত্ব রয়েছে--এ পর্যায়ের রচনায় তা অনুপস্থিত কিন্তু বক্তব্যের উপস্থাপনায় প্রবন্নশিল্পী বঙ্কিমের দৃঢ় আত্মপ্রত্যয় বিশ্বাস জাতীয় রচনার সম্পদ বলে মনে করা যাঁয়। তাছাড়া প্রবন্ধগুলিতে বঙ্কিমচন্দ্র বাললীদেশ বাঙ্গীলির উৎপত্তি, বাঙ্গীলীর ইতিহাস বাঙ্গালীর বাহুবল সংক্রান্ত কতগুলি অম্পষ্ট বিঘজ্ঞন অবহেলিত অতিপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করেছেন বঙ্কিমচন্দ্র বাংলার জাঁগরণ লগ্নে আবিভূি হয়েছিলেন--কিন্তু জাগরণপর্বেও কোন কোন অভি আবশ্যকীয় বিষয় সম্বন্ধে আমাদের অপরিসীম অজ্ঞতা ওদাসীন্য বঙ্কিমচন্দ্রকে বিশ্মিত করেছিল। তাই প্রবন্ধের বিষয়বস্ত নির্বাচনে বঙ্কিমচন্দ্র গতানুগতিকতা বর্জন করে কিছু মৌলিক আলোচনার চেষ্টা করেছেন দেশপ্রেম আবেগাত্মক অন্ুতৃতি হলেও বিচার

প্রবন্ধ ১৩৩

বুদ্ধিকে তা যে আবৃত করে না-_ছিতীয় পর্বের প্রবন্ধ পাঠ করলেই সত্য প্রমাণিত হয় উচ্চশিক্ষিত বঙ্কিমচন্দ্র পর্বে সত্যবিচার করতে বসেছেন,--ণিছক আবেগ তাকে চঞ্চল করে নি, তীব্র বেদন। তাঁকে বিহ্বল করে নি। বিবিধ প্রবন্ধের জাতীয় প্রবন্ধগুলি আলোচনা কালে বস্কিমচন্দ্রের যে মনেভাঁবটি স্পষ্ট রূপে আবিষ্কার করি তা হল এই,--১। অকপট সত্য প্রচারে তার আগ্রহ, ২। বাঙ্গালী জাতি সম্পর্কে তার সর্বাঙ্গীণ গবেষণা, ৩। পাশ্চাত্ত্য মতামত অভ্রীস্ত বলে গ্রহণ না করে যুক্তিনিষ্ঠা প্রদর্শন, ৪। প্রাচীন ভারতবর্ষ সম্পর্কে অকুঞ শ্রদ্ধাপ্রদর্শন কিন্ত এই সামগ্রিক মনোভাবের মূলে স্বদেশপ্রেমেরই প্রণোদনা বর্তমান

“বিবিধ প্রবন্ধে" বঙ্কিমচন্দ্রের স্বদেশচিত্তার কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। ইউরোপীয় সমাজ-ব্যবস্থার সঙ্গে ভারতীয় সমাজ-ব্যবস্থা, জীবনযাত্রা চিন্তাধারার যে লক্ষ্যণীয় পার্থক্য রয়েছে সেটুকু স্পষ্ট করলেই অনেক জটিল সমস্যার সরল মীমাংস৷ হওয়া সম্ভব ভারতীয় সমাজব্যবস্থ৷ মূলতঃ প্রাচীন ধর্ণ অনুশাসন নির্ভর বলে ভারতবর্ষের রাষ্টজীবনেও তার প্রভাব পড়েছে পুরোমাত্রায়। ইউরোপীয় ইঞ্তিহণসিকরা ভারতবর্ষ সম্পর্কে গবেষণার ক্ষেত্রে অনেক সময় এই সত্যটিই বিস্মৃত হয়ে যাঁন। দীর্ঘদিনের পরাঁধীনতা ভারতবাসীর চরিত্রে যে কলঙ্ক লেপন করেছে বিদেশী এঁতিহাসিকেরা সেই দৃষ্টান্তকেই অবলম্বন করে থাঁকেন। বিদেশী এতিহাসিকদের ভ্রান্ত ধারণ! দূর করার জঙ্য যে বিপুল তথ্যজ্ঞান, পাণ্ডিত্য, বিচাঁরশক্তি সর্বোপরি নির্ভীক সমালোচনার দক্ষতা প্রয়োজন-_বঙ্কিমচন্দ্রের তা ছিল। পাশ্চাত্য জ্ঞানের ভাগ্ডারে তীর অবাঁধ গতিবিধি ছিল “বিবিধ প্রবন্ধের” বিচিত্র বিষয়ের আলোচনায় তা প্রতিফলিত পাশ্চাত্য অগ্রগতির সঙ্গে বঙ্গসংস্কৃতির নবজাঁগরণকে মিলিয়ে দেওয়ার যথাসাধ্য সাধনাই প্রাবন্ধিক বঙ্কিমচন্দ্রের একান্ত কাম্য ছিল আমাদের আলোচনায় স্বদেশপ্রীতির প্রসঙ্গটিই গৃহীত হয়েছে-স্বদেশপ্রাণ বঙ্কিমচন্দ্র যা আপন শ্বভাবের শক্তিতেই লাভ করেছিলেন এজন্য উনবিংশ শতাব্দীর অনুকূল পরিবেশের কাছেই তাঁর যা কিছু খণ। রাজনারায়ণ-দেবেন্ত্রন'থের মতো ডিরোজিওভক্তিই বঙ্কিমচন্দ্রের স্বদেশপ্রেমের একমাত্র অবলম্বন ছিলো না। অজজ স্বদেশচর্চার পথ মতের সঙ্গে পরিচিত হয়ে বঙ্কিমচন্দ্র শেষ পর্যস্ত মৌলিক পন্থা নিজেই আবিষ্ষার করে নিলেন। উনবিংশ শতাব্দীর ভাবজগত থেকে স্বদেশপ্রেমকে তিনি ইতিহাসের ভিত্তির উপর স্থাপন করলেন উপন্তাসে ষে অনুভূতিকে তিনি অতীতচারী করেছেন-_ প্রবন্ধে তারই সুস্পষ্ট সমালোচনা পেয়েছি মানবপ্রেমিক লেখকই স্বদেশপ্রেমিক হতে পারেন। ধর্মতত্বের শ্রীতিবিষয়ক প্রবন্ধসস্ভারে বঙ্কিমচন্দ্র প্রীতির হ্বরূপনির্ণস় করেছেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে। “কমলাকান্তের দর্চরের” “একা, প্রবন্ধেও বঙ্কিমচন্দ্র

১৩৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

বলেছিলেন,_-“প্রীতি সংসারে সর্বব্যাপিনী--ঈশ্বরই প্রীতি গ্রীতিই আমার কর্পে এক্ষণকার সংসার সংগীত। অনস্তকাল সেই মহাঁসংগীত সহিত মনুষ্য হৃদয়তন্ত্রী বাঁজিতে থাকুক। মনুষ্যজাতির উপর যদি আমার প্রীতি থাকে তবে আমি অন্ত সখ চাহি না।” এই অকপট স্বীকারোক্তি মানবপ্রেমী বঙ্কিমচন্দ্রের সমগ্র অন্তর জুড়ে যখন এই প্রীতিই রাজত্ব করছে-_তার মাঝখানে স্বদেশপ্রীতির জন্য বঙ্কিমচিত্তের একটি ক্ষুদ্র প্রদেশকেই মাত্র নির্দেশ করতে পারি আমর1। স্বদেশপ্রীতি একটি সাময়িক উচ্ছ্বীস__ যুগধর্মে যা অতিমাত্রায় ফেনাঁয়িত হয়েছে শাশ্বত মানবপ্রেমের সাধক বঙ্ষিমচন্দ্রে উপন্যাস প্রবন্ধে আমরা যে স্বদেশশ্রীতির প্রসঙ্গ পেয়েছি--তা যে কেবল যুগ প্রয়োজনে সেকথা অনস্বীকার্য, কিন্তু যুগধর্মের উর্ধে শাশ্বত নিত্যকালের মাঁনবপ্রেমিক বঙ্কিমচন্দ্রকে আবিষ্কার করা ঘত সহজ- যুগ প্রয়োজনে বিকশিত বঙ্কিমসত্তীর একটি ভগ্ন খগ্ডাংশকে আবিষ্কার করা তত সহজ নয়। তাই পাশ্চাত্ত্য 220196150)-এর সমালোচক বঙ্কিমচন্দ্রই স্বদেশপ্রেমের প্রচীরকার্য চালিয়েছেন কোথাও তিনি মানবপ্রেমী- শক্রমিত্র নিবিশেষে সনাতন ভারতীয় গ্রীতিবাঁদে বিশ্বাসী কোথাও আত্ম- রক্ষার প্রয়োজনে শক্রদলনের প্রস্ততির পরিকল্পনা করে চলেছেন। এর মধ্যেযে বিরোধের সম্ভাবনা রয়েছে_সেটুকু মীমাংসার অতীত। একই বঙ্কিমচন্দ্র “ধর্মততে' নিষাম প্রীতির সমর্থক তিনিই আবার “কমলাকান্তের” কুম্ুর জাতীয় পলিটিশ্যনদের চরিত্র ঘ্বণাভরে উদঘাটন করেছেন অবশ্য যুগধর্মের সঙ্গে শাখতধর্সের প্রকাশ্য বিরোধ বঙ্কিমসাহিত্যে নেই যথাসাধ্য ভারসাম্য বজায় রেখেই বঙ্কিমচন্দ্র শাশ্বত মাঁনবধর্ষ স্বদেশপ্রেম প্রচার করেছেন। কোন সমালোচক 'ই বিষয়টিই ব্যক্ত করেছেন, বঙ্কিমচন্দ্র শাশ্বত দেবতার স্তায় যুগদেবতার নিকটও মস্তক নত করিয়াছিলেন কিন্ত এই শাশ্বত দেবতার ধর্মের সঙ্গে যুগধর্মের প্রক্কতপক্ষে কোন বিরোধ নাই বিশ্ব মৈত্রী শাখত দেবতারঘ্ধর্ম, স্বদেশপ্রীতি স্বাজাত্যবোধ যুগধর্ম,_যখন আমাদের স্বদেশপ্রেমে পরপীড়ন থাকে না যখন আমাদের স্বাজাত্যাভিমান সঙ্কীর্ণ “পোট্রয়টিজমে' পরিণত হয় না, তখনই যুগপৎ এই উভয় দেবতার উপাসন। করা হয় 1৪৫ [ পৃঃ ১১] যে স্বদেশপ্রেমে পরপীড়নটাই মুখ্য কথা--সেই শ্বদেশপ্রেমকে বঙ্কিমচন্দ্র গ্রহণ করেন নি। পরপীড়নের প্রশ্নটাই পীড়িত ভারতবাসীর পরাধীনতার পরিপ্রেক্ষিতে

৪৫. অ্রিপুরাশংকর সেনশাস্তী--বন্ষিমচন্্রের দিগ্দর্শন, ১৯৩৯

প্রবন্ধ ১৩৫

অবাস্তব কল্পন৷ শাসকগোষ্ঠীর উদ্ভত অত্যাচারের প্রতিক্রিয়ারূপে যে স্বদেশাভিমান একদা সমগ্র জাতির জীবনে জেগেছিল-_তাঁতে পরপীড়নের চেয়ে আত্বরক্ষার তাগিদ ছিল বেশী ইউরোপীয় £20:29090) এদেশে পূর্ণ অর্থে প্রয়োগ করার স্থযোগও নেই। উনবিংশ শতাব্দীতে ভারতবাসীর স্বদেশপ্রেম সর্বদাই আত্মমর্যাদা রক্ষার অস্ত্র --আত্মরক্ষার একমাত্র উপায়

“বিবিধ প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র অকপট সত্য প্রচার করেছেন পরাধীনতার মূল কারণ অনুসন্ধানে “ভারত কলঙ্ক” “ভারতবর্ষের স্বাধীনতা পরাঁধীনতা” প্রবন্ধ ছুটি প্রসঙ্গে আলোচ্য ভারতবর্ষ পরাধীন কেন ?1-_ভাবাবেগবজিত যুক্তি দিয়ে এর কারণ নির্ণয়ে বঙ্কিমচন্দ্র নির্ভতীকতার পরিচয় দিয়েছেন পরাধীন ভারতবর্ষের ইতিহাস রচনার দায়িত্ব ছিল বিজয়ী শক্তির হাঁতে। তাঁদের বর্ণনা পক্ষপাতিত্ব দৌধযুক্ত ব্কিমচন্্র ইংরাঁজ মুসলমান উভয় এতিহীসিকদের একই অভিযোগ করেছেন,

“মনুষ্য চিত্রকর বলিয়াই চিত্রে সিংহ পরাঁজিতশ্বরূপ লিখিত হয়। যেসকল ইতিহাসবেত্বা আত্মজাতির লাঘব স্বীকার করিয়া, সত্যের অনুরোধে শক্রপক্ষের যশঃকীর্তন করেন, তাহারা অতি অল্পসংখ্যক। অপেক্ষারুত মূ, আত্মগরিমাপরায়ণ মুসলমীনদিগের কথ। দূরে থাকুক, ক্ৃতবিদ্য, সত্যনিষ্ঠাভিমানী ইউরোপীয় ইতিহাস- বেতার এই দোষে এরূপ কলঙ্কিত যে, তাঁহাদের রচন। পাঠ করিতে কখন কখন ঘ্বণ। করে ।৮৪৬ এই মিথ্যা ইতিহাঁসের বলিষ্ঠ প্রতিবাদ করেছিলেন নির্ভীক স্বদেশপ্রাণ বঙ্কিমচন্দ্র “ইতিহাঁস চাই” বলে তিনিই প্রথম আন্দোলনের হুচনা করেন। নবজাগরণের লগ্নে অতীত ইতিহাস আমাদের যে শক্তি দান করবে-_অন্ত কিছু তা দিতে পারবে না। বঙ্কিমচন্দ্র ইতিহাসের অনুরাগী হয়েছিলেন নান! কারণে প্রথমতঃ বদেশী লিখিত মিথ্যা ইতিহাসের প্রতিবাদ করার প্রয়োজনীয়তা তিনিই উপলব্ধি করেন-_দ্বিতীয়তঃ শিক্ষিত বাঞঙ্গালীকে তিনি অতীতের দিকে দৃষ্টি ফেরাবাঁর নির্দেশ দেন।

“যে জাতির পূর্ব মাহাত্ব্যের এতিহাসিক স্থৃতি থাকে, তাহার! মাহাত্ম্য রক্ষার চেষ্টা পায়, হারাইলে পুনঃপ্রাপ্রির চেষ্টা করে | ক্রেসী আজিনকুরের স্বতির ফল ব্লেনহিম্‌ ওয়াটান-_-ইতাঁলি অধঃপতিত হইয়াও পুনরুখিত হইয়াছে বাঙ্গালী আজকাল বড় হইতে চায়, -হাঁয়! বাঙ্গালীর এঁতিহাসিক স্থৃতি কই?”

[ বিবিধ প্রবন্ধ,__বাংলার ইতিহাস সম্বন্ধে কয়েকটি কথা-২য় খণ্ড]

৪৬. বঙ্কিম রচনাঘলী। ২য় থণ্ড। সমগ্র সাহিতা, যোগেশচন্ত্র বাগল সম্পাদিত। সাহিত্য সংসদ, ১৩৭১

১৩৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

এমন হম্পষ্ট উপদেশ প্রবন্ধ শিল্পী বঙ্কিমচন্দ্র অন্য কোথাও উচ্চারণ করেন নি। নবঙ্াগরণ লগে বঙ্কিমচন্দ্র ইতিহাস অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছিলেন পৃথিবীর অন্ভান্ত জাতির অগ্রসরণের দৃষ্টান্ত দেখে অবশ্য কাব্যে-নাটকে এই ইতিহাস চর্চা শুরু হয়েছে পুরোমাত্রায় বঙ্কিমচন্দ্রেরে আগ্রহ ছিল-_বাঙ্গালীর জীবনে বাঙ্গালীর ইতিহাসের আদর্শ গৃহীত হোক! সেই আদর্শের চিত্র আছে “দুর্গেশনন্দিনী” 'ষুণালিনীতে' |

“ভারতকলঙ্কে* সমগ্র ভারতবাঁপীর পরাধীনতার হেতু বিচক্ষণতার সঙ্গে নির্ণয় করেছিলেন তিনি

"প্রথম, ভারতবর্ষীয়েরা স্বভাবতই স্বাধীনতার আকাজ্ষা রহিত। স্বদেশীয় স্বজাতীয় লোকে আমাদিগকে শাসিত করুক, পরজাতীয়দিগের শাসনাধীন হইব না, এরূপ অভিপ্রায় ভারতবর্ধায়দিগের মনে আইসে না।...হিন্দুরা স্বাধীনতাপ্রিয় নহে, শান্তিস্খের অভিলাষী, ইহা কেবল জাতিগত স্বভাঁববৈচিত্র্যের ফল, বিম্ময়ের বিষয় নহে ।৮

স্থতরাং পাশ্চাত্য “ম্বদেশপ্রেম' এদেশে নতুন কথ বঙ্কিমচন্দ্রই প্রসঙ্গত স্পষ্টতভাবে তা স্বীকার করেন। *স্বাতন্তর্, স্বাধীনতা, সকল নূতন কথা ।” উনবিংশ শতাব্দীর ইংরাজী শিক্ষা্দীক্ষা লাভের ফলে যে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আয়ত্ত করেছি আমরা স্বদেশপ্রেম সেই স্রত্রেই পাওয়া কিন্তু পাশ্চাত্য স্বদেশপ্রেম এদেশের মাটিতে রোপণ করার পক্ষপাতী ছিলেন না বলেই পরপীড়নকে স্বদেশপ্রেমের সীমানা থেকে নির্বাসিত করার উপদেশ দিয়েছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র মহামনীষী বঙ্কিমচন্দ্র সনাতন ভারতীয় আদর্শের সর্বৰ্যাপক উদারতার মহিমায় আচ্ছন্ন ছিলেন তাই পাশ্চাত্য স্বদেশপ্রেমের উচ্জ্বীসের চপলতাকে মানবজীবনের একমাত্র সাধনা বলে মনে করতে পারেন নি। বস্ততঃ ভারতীয় স্বদেশপ্রেমিকদের পক্ষে নিবিচারে পাশ্চাত্য স্বদেশপ্রেমের জয়গান কর কোনমতেই সম্ভব ছিল না- ভূদেব, ৰঙ্কিমচন্দ্র, বিবেকানন্দ, রবীন্দনাথ, গান্ধীজীর জীবনবাঁণী তারতীয় সনাতন আদর্শের ওপরেই ধ্াঁড়িয়ে আছে। এ'র৷ ভারতীয় আদর্শের ধ্ব্জা বহন করেছেন | বঙ্কিমচন্দ্র মুক্তকণ্ে ঘোষণা করেছেন,__

"ইংরেজ ভারতবর্ষের পরমোপকারী। ইংরেজ আমাদিগকে নূতন কথ। শিখাইতেছে। যাহা আমরা কখন জানিতাম না, তাহা জানাইতেছে, যাঁহা কখন দেখি নাই, শুনি নাই, বুঝি নাই, তাহা দেখাইতেছে, শুনাইতেছে, বুঝাইতেছে, যে পথে কখন চলি নাই, সে পথে কেমন করিয়া চলিতে হয়, তাহা দেখাইয়া দিতেছে সেই সকল শিক্ষার মধ্যে অনেক শিক্ষা অযৃল্য যে সকল অযূল্য রত্ব আমরা ইংরেজের চিত্বভাগ্ডার হইতে লাভ করিতেছি, তাহার মধ্যে ছইটির আমর এই প্রবন্ধে উল্লেখ

প্রবন্ধ ১৩৭

করিলাম-_স্বাতন্ত্প্রিয়তা এবং জাতি প্রতিষ্ঠা | এই প্রবন্ধে জাতি শবে ব900291165 বা [৪০০ বুঝিতে হইবে | হহা কাহাকে বলে, তাহা হিন্দু জানিত ন1।” [ ভারত কলঙ্ক ] এই নবলব স্বদেশপ্রেমের আবেগে সমগ্র জাঁতি যখন আত্মহারা, বস্কিমচন্দ্রই তখন তাঁর মূল্য বিচার করেছিলেন প্রবন্ধের মাধ্যমে স্বদেশশ্রীতির এমন প্রাঞ্জল ব্যাখ্যা ইতিপূর্বে আমর] পাঁই নি। কাব্যে-নাটকে-উপস্তাসে স্বদেশোচ্ছাস প্রত্যক্ষ করেছি, সেখানে ব্যাখ্যা করার স্থযোগও ছিল না। বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য বঙ্কিমের হাতেই পরিণতি লাত করেছে। স্বদেশপ্রেমিক বঙ্কিম নান! প্রবন্ধে সে যুগের উপযোগী জাতীয় বিষয়গুলির উপর আলোকপাত করেছিলেন। “ভারতকলঙ্কে” বঙ্কিমচন্দ্র ভারতবাসীর পরাঁধীনতার অন্য একটি মূল্যবান হেতু নির্ণয় করেছেন। ভারতবর্ষে জাতিগত, বর্ণগত, আচাঁরগত পার্থক্য বর্তমান সুতরাং সর্বভারতীয় এক্য-চেতনা এদেশে কোনদিনই ছিল না। ভারতবাসীর দীর্ঘদিনের পরাধীনতার এটিই সম্ভবতঃ মূল কারণ বঙ্কিমচন্দ্র কারণ নির্ণয়েও যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন__

“এই ভারতবর্ষে নানাঁজাঁতি, বাসস্থানের প্রভেদে, ভাষার প্রভেদে, বংশের প্রভেদে, ধর্মের প্রভেদে নানা জাঁতি। বাঙ্গালী, পাগ্রাবী, তৈলঙ্গী, মহীরান্্রী, রাজপুত, জাঠ, হিন্দু, মুসলমান, ইহার মধ্যে কে কাহার সঙ্গে একতাযুক্ত হইবে |

তবে বঙ্কিমচন্দ্র আগামী দিনের ভবিষ্যতের চিত্রটিও কল্পনা নেত্রে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। গণজাঁগরণের ছু* একটি ইতস্ততঃ ঘটনা থেকেই বঙ্কিমচন্দ্র আশ! প্রকাশ করেছিলেন

প্রবন্ধে ভারতবর্ষের অতীত গণজাগরণের এঁতিহাসিক তৃষ্টাত্ত বর্ণনা করেছেন,_-

"ইতিহাস কীতিত কাঁলমধ্যে কেবল ছুইবার হিন্দু সমাঁজমধ্যে জাতি প্রতিষ্ঠার উদয় হইয়াছিল। একবার, মহারাষ্ট্রে শিবাজী এই মহামন্ত্র পাঠ করিয়াছিলেন। তাহার সিংহনাদে.মহারাই জাগরিত হইয়াছিল

..-দ্বিতীয় বারের ইন্দ্রজালিক রণজিৎ সিংহ, ইন্ত্রজাল খাঁলসা | জাতীয় বন্ধন দৃঢ় হইলে পাঠানদিগের স্বদেশেরও কিয়দংশ হিন্দুর হস্তগত হইল শতক্র পারে সিংহনাদ শুনিয় নির্ভীক ইংরেজও কম্পিত হইল 1”

এই বর্ণনায় বঙ্কিমচন্দ্রের আশ! আকাঙ্ষার ক্ষীণ ঝংকার শুনতে পাই। পূর্ণ আশাবাদী বঙ্কিমচন্দ্রের অভিলাষও ব্যক্ত হয়েছে__

“যদি কদাচিৎ কোন প্রদেশখণ্ডে জাতি প্রতিষ্ঠার উদয়ে এতদূর ঘটিয়াঁছিল, তবে সমুদয় ভারত একজাতীয় বন্ধনে বন্ধ হইলে কি না হইতে পারিত ?”

১৩৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

বঙ্ধিমচন্দ্রের ভবিষ্যৎ কল্পনা ব্যর্থ হয় নি। স্বদেশপ্রেমিকের মুক্তির স্বগ্রও সফল হয়েছিল।

“ভারতবর্ষের হ্বাধীনতা পরাধীনতা” প্রবন্ধটিতেও বঙ্কিমচন্দ্র দেশচেতনার মনোভাব প্রতিফলিত স্বাধীনতা পরাধীনতার মধ্যে মৌল পার্থক্যটি নির্ধারণে ভাঁরতবাঁসী সক্ষম ছিল না বহুদিন | স্বতন্ত্রতা সম্বন্ধে ভারতবাঁসীর উদাসীনতা সম্পর্কে ভারত কলঙ্ক" প্রবন্ধে পূর্বেই আঁলোচন1 করেছেন বঙ্কিমচন্দ্র। এই মনোৌভাবকে তিনি প্রশংসনীয় গুণ বলে মনে করেন ন1 বলেই প্রবন্ধটির নামকরণেই তীর আভাস রয়েছে “ভারত কলঙ্কের” বক্তব্যের সঙ্গে “ভারতবর্ষের স্বাধীনতা পরাধীনতার” কিছু যৌগন্ত্র রয়েছে। প্রবন্ধে স্বাধীনতা পরাধীনতার অর্থ বিচার করেছেন প্রাবন্ধিক | পাশ্চাত্য সাহিত্য পাঠ করেই যে নতুন শব্দ ভাব গ্রহণ করেছে শিক্ষিত বাঙ্গালী বঙ্কিমচন্দ্র সে প্রসঙ্গে বলেছেন, |

“বাঙালি ইংরেজি পড়িয়া! বিষয়ে ছুইটি কথা শিখিয়াছেন --1[190” গু1036061,0610০”, তাহার অনুবাদে আমরা স্বাধীনতা এবং স্বতন্ত্রতা ছুইটি কথা পাইয়াছি।”

পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাব স্বীকার করেই বঙ্কিমচন্দ্র আলোচনা শুরু করেছেন স্বাধীনতা সম্বন্ধে ভারতবাসীর উদাসীনতা ভারতপ্রাণ বঙ্কিমচন্দ্রের মনেও খানিকটা ক্ষোভ সঞ্চার করেছিল প্রবন্ধটিতে তাঁর পরিচয় পাওয়া যাবে তবে প্রচ্ছন্ন অভিযোগের অন্তরালে স্বদেশপ্রেমিকের আত্মগোপনচেষ্টা হিসেবে গণ্য করতে হবে তাঁকে প্রাচীন ভারতের স্বাধীনত1 স্বতন্ত্রতা বিশ্লেষণে বঙ্কিমচন্দ্র স্প্টভাবেই বলেছেন,__

"আধুনিক ভারতবর্ষে দেশী বিলাঁতিতে যে বৈষম্য, তাহা প্রাঈীন ভারতে ব্রাহ্মণ শুদ্রের বৈষম্যের অপেক্ষা] কি গুরুতর 1” জাতীয় বক্তব্যে সমালোঁচকের নিষ্ঠা প্রকাঁশ পেয়েছে নিঃসন্দেহে বঙ্কিমচন্দ্র অবশ্য স্বীকার করেছেন,-_

“ভিন্নদেশীয় লোক, কোন দেশে রাজা হইলে একটি অত্যাচার ঘটে। ধাহারা রাজার স্বজাতি, দেশীয় লোকাপেক্ষা তাহাদিগের প্রাধান্ত ঘটে। তাহাতে প্রজ। পরজাতিপীড়িত হয়। যেখানে দেশীয় প্রজা, এবং রাজার স্বজাতীয় প্রজার এইরূপ তারতম্য, সেই দেশকে পরাধীন বলিব। যে রাজ্য পরজাতি পীতন শুন্য, তাহা স্বাধীন

ইংরাজ রাজত্বে প্রজ্াপীড়ন চরমে উঠেছে বহু ঘটনাকে কেন্দ্র করে। সিপাহী বিদ্রোহের অন্যতম কারণ যে পরজাতি পীড়ন বঙ্ষিমচন্দ্রের হাতের কাছেই সে দৃষ্টান্ত ছিল। তবু বঙ্কিমচন্দ্র পরিশেষে প্রাচীন ভারতের ব্রাহ্মপশক্তির পীড়নের প্রসঙ্গ

প্রবন্ধ ১৩৯

উত্থাপন করেছেন | এই প্রবন্ধে স্পষ্টবাঁদী বঙ্কিমচন্দ্র পরাধীন ভারতবাসীর মনে কিছু সাত্বনা দান করেছেন বটে কিন্তু এই সাত্বনীয় মনের ক্ষোভ ঢাকা পড়ে নি। প্রবন্ধের উপসংহাঁরেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে,

*অনেকে রাগ করিয়া বলিবেন, তবে কি স্বাধীনত। পরাধীনতা তুল্য ? তবে পৃথিবীর ভাবজ্জাতি স্বাধীনতার জন্য প্রাণপণ করে কেন? ধাহারা এরূপ বলিবেন, তীহার্দের নিকট আমাদের এই নিবেদন যে, আমরণ সে তত্বের মীমাংসাঁয় প্রবৃত্ত নহি। আমরা পরাধীন জাতি -অনেক কাল পরাধীন থাকিব--সে মীমাংসায় আমাদের প্রয়োজন নাই ।”

এই অংশটি পাঠ করলেই বঙ্কিমচন্দ্রের অভিপ্রায় স্পষ্ট হয় জাতীয় প্রবন্ধের মুক্তিজীল ভেদু করলে দেখা যাবে স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থই তিনি নির্ণয় করেছেন কিন্তু পরাধীনতার পক্ষ সমর্থন করে কিছু আলোচনা আছে বলেই স্বাধীনতার মৃল্য- বিচারে তিনি অসমর্থ কথা বলা চলে না। সে যুগের স্বাধীনতাপ্রিয় প্রাবন্ধিক যখন স্বদেশগ্রীতি আলোচনা করেন -উচ্ছীসের আধিক্যে যুক্তি লাঞ্চিত হয়। বঙ্কিমচন্দ্র সম্ভবতঃ অতি উচ্ছাসের গতিরোধ করে কিছু নতুন কথা শোনাতে পেরেছিলেন

“বাঙ্গালীর বাহুবল” প্রবন্ধটি আলোচনা করলেও বঙ্কিমচন্দ্র স্বদেশপ্রেমের ধারণাটি স্পষ্টতর হবে বাঙালির জীবনে মনে যে নবভাবের আলো! দেখা দিয়েচে-_-তাতে উৎসাহ সঞ্চার -এ প্রবন্ধ রচনার উদ্দেশ্য বলে গণ্য করা খুব অসঙ্গত নয়। এখানেও বঙ্কিমচন্্র প্রচলিত মতামত ভিত্তি করেই আলোচনায় অগ্রসর হয়েছেন এ্রতিহাঁসিকের বৃত্তান্ত অঙ্গীকার করতে গেলে কিন যুক্তি প্রদর্শন করতে হবে। বহ্কিমচন্দ্রও এখানে যুক্তিনিষ্ঠা প্রদর্শন করেছেন প্রবন্ধেও বিদেশী ধতিহাসিকের মতামত স্বীকার করে সবিনয়ে কিংব1 সক্রোধে তিনি বাঙ্গালীর চরিত্রে আরোপিত অপবাদের সত্যতা স্বীকার করেছেন বল্লাল সেন, মহীপাঁল লক্ষ্ষণ- সেনের বিজয় ইতিহাঁসের প্রসঙ্গ বর্ণনা করেই ঈষৎ বক্কোক্তি করেছেন বঙ্কিমচন্দ্র,

“অতএব পূর্বকালে বাঙ্গালির যে বাহুবলশালী ছিলেন, এমত কোন প্রমাঁশ নাই। পূর্বকালে ভারতবর্ষস্থ অন্যান্ত জাতি যে বাহুবলশালী ছিলেন, এমত অনেক প্রমীণ আছে, কিন্ত বাঙ্গালিদিগের বাহুবলের কোন প্রমাঁণ নাই 1৮

অংশ পাঠ করলে বঙ্কিমচন্দ্রের ব্বদেশাঁভিমানই অনুভব করি আমরা বিদেশীর ইতিহাঁস সত্যকে বিকৃত করেছে আর নিবিচারে সে সত্য গ্রহণ করেছি আমরা, স্বদেশপ্রেমী বঙ্কিমের অভিমান সেখানেই বাঙ্গালির বাহুবল প্রমাণ করতে পারেন নি বঙ্কিমচন্দ্র, কিন্তু কৌশলে বাঙ্গালির সামনে কয়েকটি মূল্যবান তথ্য তুলে

১৪০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

ধরেছেন। বাহুবলই যে জগতে উন্নতির একমাত্র পথ নয়-_সে কথা প্রমাণ করে তিনি বলেছেন,---

“আমরা যাহা বলিতেছি, বাঙ্গালার সর্বত্র, সর্ব নগরে, সর্ব গ্রামে সকল বাঙ্গালির হৃদয়ে তাহা লিখিত হওয়া] উচিত বাঙ্গালি শারীরিক বলে দুর্বল, তাহাদের বাহুবল হইবার সম্ভাবনা নাই -- তবে কি বাঙ্গালির ভরসা নাই? প্রশ্নে আমাদিগের উত্তর এই যে, শারীরিক বল বাহুবল নহে

--*উদ্যম, এঁক্য, সাহস এবং অধ্যবসায়, এই চাঁরিটি একত্রিত করিয়া শারীরিক বল ব্যবহার করার যে ফল, তাহাই বাহুবল যে জাতির উদ্যম, এক্য, সাহস এবং অধ্যবসায় আছে, তাহাদের শারীরিক বল যেমন হউক না কেন, তাহাঁদের বাহুবল আছে। এই চারিটি বাঙ্গালির কোন কালে নাই, এজন্য বাঙ্গীলির বাহুবল নাই।”

বঙ্কিমচন্দ্র স্থকৌশলে মিথ্যা অপবাদের প্রতিবাদ করেছেন, অন্তর্দিকে আগামী ভবিষ্যতে আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবতীর্ণ বাঙ্গালিকে পথ চিনিয়েছেন, এই দিক থেকে বিচার করলে বঙ্কিমচন্দ্র স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব করেছিলেন বাঙ্গালি চেষ্টা করলেই মিথ্যা অপবাদের গ্লানিমুক্ত থেকে হতে পাঁরে বলেই বঙ্কিমচন্দ্রের দৃঢ় ধারণা ইংরাজী শিক্ষার আলোকে আত্ম-আবিষ্ারের পাল! সঙ্গে করে বাঙ্গালি যখন আতত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছে, সেই মুহুর্তে বঙ্কিমচন্দ্রের উদ্দীপনা ময়ী ভাষা যুক্তিপুর্ণ বক্তব্যের আবেদন কত গভীর হতে পারে সহজেই তা অনুমেয় বান্গালীর জীবনে স্থযোগ পূর্বে কখনও আসে নি--বঙ্কিম সেকথাঁও বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন লঘু প্রবন্ধের ব্যঙ্গ বিন্রপে তিনি যেকথা প্রচার করেছেন “বিবিধ প্রবন্ধের" প্রকাশ বক্তব্যও প্রীয় অন্থরূপ। কিন্তু এখানে বঙ্কিমচন্দ্র উপদেষ্টা বখঙ্গীলির ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে বাঙ্গীলিই_-শুধু বহ্কিমচদ্র দিশীরীর ভূমিকায় অবতীর্ণ,

“যদি কখন ১। বাঙ্গালির কোন জাতীয় সখের অভিলাষ প্রবল হয়, ২। যদি বাঙ্গালি মাত্রেরই সেই অভিলাষ প্রবল হয়, ৩। যদি সেই প্রবলতা এরূপ হয় ষে, তদর্থে লোকে প্রাণপণ করিতে প্রস্তত হয়, ৪। যদি সেই অভিলাষের বল স্থায়ী হয়, তবে বাঙ্গালির অবশ্য বাহুবল হইবে 1৮

বার্গালির বাহুবল, প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র যে পথ নির্দেশ করেছেন__তার হুচন। হয়েছে ইতিপূর্বেই কিন্তু এমনভাবে প্রবন্ধের বক্তব্য হিসেবে তা প্রচারিত হয় নি। বঙ্কিমচন্দ্র প্রতিটি বাঙ্গালির প্রাণে এই উৎসাহ এমনভাবে সঞ্চার করার চেষ্টা করেছেন যাঁর ফলে বাঙ্গালি শুধু বাহবলই অর্জন করবে না, একটি স্থায়ী জাতীয় মনোভাব গড়ে তুলবে এবং জাতীয় মনোভাব সম্মিলিতভাবে আত্মপ্রকাশ করলে যে কোন বিপ্লব ঘটে

প্রবন্ধ ১৪১

যাঁওয়াট। কিছুমীত্র বিচিত্র নয় বঙ্কিমচন্দ্রের উদ্ধৃত মন্তব্যে সেই বিপ্লবের আভাস সঙ্কেতিত হয়েছে বললে খুব অতিশয়োক্তি হয় না। প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র যে ত্বদেশ- চিন্তাকেই সমগ্র জাতির প্রাণে সঞ্চারিত করেছেন-_এই প্রবন্ধটি তারই নিদর্শন |

“বিবিধ প্রবন্ধে'র [ ১ম খণ্ড] প্প্রাচীনা নবীনা” প্রবন্ধটিতে গুরু প্রবন্ধের মৌড়কে লঘু প্রবন্ধেরই রসসঞ্চার করেছেন। বিশেষ করে এই প্রবন্ধের শেষে যে তিনটি মহিলার প্রতিবাদ পত্র প্রকাঁশিত হয়েছে তাতে গুরুগন্ভীর প্রবন্ধের রস বিক্ষিপ্ত হয়েছে বটে কিন্তু উপভোগ্যও হয়েছে বঙ্কিমের আলোঁচন! নারী প্রগতির স্বপক্ষে ছিল না বলেই প্রতিবাদ পত্র তিনটিতে বঙ্গীয় পুরুষ সম্প্রদায়ও আক্রান্ত হয়েছেন পত্র রচনাঁতেও বঙ্কিমীরীতি অন্ুহৃত-_বিশেষ করে তৃতীয় পত্রের শেষাংশে ছী রসময়ী দাসীর মোক্ষম মন্তব্যটিতে আমরা জাতীয় চরিত্র সমালোচক বঙ্গিমচন্দ্রের কথম্বর শুনতে পাইথ্খ পরাধীন বাঙ্গালির কোন বিষয়েই গৌরবের অধিকার নেই ছিল বঙ্কিমের ধারণা যাঁরা স্বাধীনতাই বিসর্জন দিয়ে আত্মমর্যাদা হারিয়েছে__-সেই বাঙ্গালি ক্ষমার অযোগ্য বহু প্রবন্ধে এই ধিক্কীরবাঁণী বঙ্কিমচন্দ্রের কে উচ্চারিত হয়েছে-_-এখাঁনেও তাই,

যাহারা সাতশত বৎসর পরের জুতা মাথায় বহিতেছে, তাহীর৷ আবার পুরুষ! বলিতে লজ্জা করে ন1?” তীত্র ভৎসনা যে বঙ্কিমচন্দ্রের, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকে না। এই অপবাদ থেকে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত বাঙ্গালি জাতি বন্ধিমের সহানুভূতি লাভে বঞ্চিত হবে | নিজে বাঙ্গালি হয়েও বঙ্কিমচন্দ্র যা অনুভব করতেন-__ প্রবন্ধে সে বক্তব্যই প্রচণ্ডভাবে বিস্ফোরিত হয়েছে মাত্র “বিবিধ প্রবন্ধের [২য় ভাগ] বিষয়বস্ত মুখ্যতঃ বাঙ্গালীর ইতিহাস, বাঙ্গালীর অতীত, বর্তমান ভবিষ্যতের আলোচনায় সীমিত। কিছু কিছু অন্য প্রসঙ্গ আছে মুখ্যতঃ উদ্ধৃত প্রবন্ধ- গুলোকেই কেন্দ্র করে আমাদের আলোচন] | বিবিধ প্রবন্ধে ভারত কলঙ্ক” প্রকাশের প্রায় ১২ বৎসর পরে "বাংলার কলঙ্ক” প্রকাশিত হয় ব্বদেশপ্রেমী বস্কিমের এই প্রবন্ধগুলি সম্বন্ধে বত্িহাঁসিকের উল্লেখযোগ্য মন্তব্য,-_

"এই যুগে বন্ছিমচন্দ্রের লেখনী হইতে কতকগুলি এঁতিহাসিক সত্য নিঃস্থত হইয়াছিল, বিগত অর্ধ শতাব্দীর শত শত নূতন আবিষ্ষারেও তাহাদিগের সত্যতা সম্বন্ধে কাহারও সন্দেহ উপস্থিত হয় নাই। বঙ্ষিমচন্ত্র এই এঁতিহাসিক সত্যগ্তলি মহাজন উক্তির মতন বলিয়া যান নাই, এখন আমরা যেমন করিয়া এতিহাঁসিক সত্য প্রমাণ করিবার চেষ্টা করি, বছ সত্যাসত্যের মধ্য হইতে যেমন করিয়া এতিহাসিক সার সত্যটুকু বাঁছিয়া লইতে যত্ব করি, তিনিও তেমনি করিয়া সেইরূপ প্রণালী অবলম্বনেই তাহার উক্তিগুলির সত্যতা প্রতিপাদন করিয়া গিয়াছেন। তাহার “ভারত

১৪২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

কলঙ্ক" প্রবন্ধ প্রকাশের পর বিয়াল্লিশ বৎসর অতীত হইয়া গিয়াছে এবং “বাঙ্গালীর কলঙ্ক” প্রকাশের পরে ত্রিশ বৎসর অতীত হইয়াছে, কিন্তু অগ্যাবধি যে সমস্ত প্রমীণ আবিষ্কৃত হহয়াছে তাহার কোনটিই বঙ্কিমচন্দ্রের বিরুদ্ধবাদী বলিয়। বোঁধ হয় না।”

[ শ্ররাখালদীস বন্দ্যো, নারায়ণ, বৈশাখ ১৩২২]

“ভারত কলঙ্কের” সঙ্গে “বাঙ্গালীর কলঙ্ক*-এর আদর্শগত মিল আছে। “বাঙ্গালীর “কলঙ্কের' ভূমিকায় তিনি উদ্দেশ্যের কথা ব্যক্ত করেছেন ।--

“যখন বঙ্গদর্শন প্রথম বাহির হয়, তখন প্রথম প্রবন্ধে মঙ্লাঁচরণস্বরূপ ভারতের চিরকলঙ্ক অপনোদিত হইয়াছিল আজ প্রচার সেই দৃষ্টান্তাহুসারে প্রথম সংখ্যার প্রথম প্রবন্ধে বাঞ্গালার চিরকলঙ্ক অপনোদনে উদ্ভত | জগদীশ্বরও বাঙ্গাীলার হুসন্তানমীত্রেই আমাদের সহায় হউন [ বাঙ্গালার কলঙ্ক

যে কলঙ্ক বাঙ্গালির চরিত্রে আরোপিত কিন্তু সত্য নয়-__তাঁর প্রাতিবধদে বঙ্কিমচন্দ্র সমগ্র বাঙ্গালীর সাহায্য চেয়েছেন বাঙ্গালীর ভীরুতার অপবাদ, দুর্বলতার অপবাদ, শক্তি দৈম্নের অপবাদ মিথ্যা ইতিহাসে বিস্তারিত বর্ণনায় পল্লপবিত হয়েছে এখানে বঙ্কিমচন্দ্র সেকথা অস্বীকার করেছেন, উপেক্ষা করেছেন। ইংরেজ ইতিহাস লেখকের বর্ণনার প্রতিবাদ না করে তিনি সরাসরি তা উপেক্ষাই করেছেন | “বিবিধ প্রবন্ধে [১ম খণ্ড 7 তিনি কোথায়ও বিশীত প্রতিবাদ করেছেন -এখানে তিনি স্পষ্টতই বিরুদ্ধতার আশ্রয় নিয়েছেন,

“বাঙ্গালীর চিরছুর্বলতা চিরভীরুতায় আমরা কোন এ1তহাসিক প্রমাণ পাই নাই। কিন্তু বাঙ্গালী যে পুবকালে বাহুবলশালী, তেজন্বী, বিজয়ী ছিল, তাহার অনেক প্রমাণ পাই ।”

এখাঁনে সত্য নির্ঁয়ে তিনি নির্ভীক মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন *বাঙ্গলাঁর ইতিহাস সম্বন্ধে কয়েকটি কথা” প্রবন্ধে বহ্কিমের বিক্ষু্ধ উত্তেজিত মনের পরিচয় পাই। এখানে তিনি ক্ষমাহীন সত্যসন্ধী। খাঙ্গীলার বাঁপালীর সত্য ইতিহাস নির্ণাত না হলে বঙ্কিমচন্দ্র শান্ত হতে পারেন না। প্রবন্ধে, বহ্কিমচন্দ্রে স্বদেশান্থরাগ সৎসাহস উভয়টই প্রকাশ পেয়েছে। মুসলমান রচিত ইতিহাসকে তিনি ধণাভাবে উপেক্ষা করেছেন, “যে বাঙ্গালী সকলকে বাংলার ইতিহাস বলিয়। গ্রহণ করে সে বাঙ্গালী নয়। আত্মজাতি গৌরবান্ধ, মিথ্যাবাদী, হিন্দুদ্বেষী মুসলমানের কথা যে বিচার না করিয়া ইতিহাঁস বলিয়া গ্রহণ করে সে বাঙ্গালী নয়।»

বাঙ্গালীপ্রাণ বঙ্কিমচন্দ্রের প্রচেষ্টায় অনেক সমালোচক সংকীর্ণভার গন্ধ 'আবিফার করেছেন কিন্ত বহ্িমচন্দ্র ব্যাপারে স্পষ্ট মতামত দিয়েছেন প্রথমে

প্রবন্ধ ১৪৩

বাঙ্গালীকে বাচার পথ দেখাবেন তিনি--পরে সম্গগ্র ভারতবাঁসীর প্রসঙ্গ চিন্তা করবেন যদিও “ভারত কলঙ্ক” প্রসঙ্গে তা বহু পূর্বেই আলো চন! করেছেন বঙ্কিমচন্দ্র | ভারতবর্ষের স্বাধীনতা পরাধীনতার কারণ নির্ণয় সমাথ করেই তিনি বাঙ্গালার ইতিহাস অনুসন্ধান শুরু করেন

বাংলার ইতিহাসের কলঙ্ক দূর করে নূতন ইতিহাস রচনার দায়িত্ব তিনি সমগ্র বাঙ্গালি জাতির ক্ষন্ধে গ্যত্ত করতে চান শ্বদেশপ্রেমিক বঙ্কিমচন্দ্রের আহবান ধ্বনিত হয়েছে এখানে,

“তুমি লিখিবে আমি লিখিব, সকলেই লিখিবে। ষে বাঙ্গালী তাহাকেই লিখিতে হইবে মা যদি মরিয়া যান, তবে মার গল্প করিতে কত আনন্দ আর এই আমাদিগের সর্বসাধারণের মা জন্মভূমি বাংলাদেশ ইহার গল্প করিতে কি আমাদিগেক্ব আনন্দ নাই ?”

এখানে জননী জন্মভূমিকেই তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন সেই মৃতা জননীর সম্মান রক্ষার দায়িত্ব সম্পর্কে বাঙ্গালিকে সচেতন করেছেন বঙ্কিমচন্দ্রের আবেদনের ভাষা অত্যন্ত মর্মস্পর্শী দেশের ইতিহাসের প্রসঙ্গেও বঙ্কিমচন্দ্রের ত্বদেশপ্রাণ হুদয়টিকেই আবিফার করি আমর1।

বঙ্কিমচন্দ্রের ভারতপ্রেম বঙ্গপ্রেমের নিদর্শন প্রবন্ধগুলিতে রয়েছে। পাশ্চাত্য সভ্যতার সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনাঁকালে বঙ্কিমচন্ত্র স্থপ্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার মহিমাই আবিফার করেছেন স্থতরাং পাশ্চাত্য সভ্যতার পদতলে আত্মনিবেদনের সমালোচনা করা তার পক্ষে সহজতর হয়েছে বঙ্কিমচন্দ্রের স্বদেশপ্রেম সব প্রসঙ্গে উদিত হয়ে উঠেছে।

"ইউরোপ সত্য কতদিন ? পঞ্চদশ শতাব্দীতে অর্থাৎ চারিশত বৎসর পূর্বে ইউরোপ আমাদিগের অপেক্ষা অসভ্য ছিল।”

স্বদেশপ্রেমিক বঙ্কিমচন্দ্র স্পষ্টভাঁষায় সত্য প্রচারে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন নি। বঙ্কিমচন্দ্রই প্রবন্ধরচনাব প্রথমপর্বে পরোক্ষ রচনারীতির আশ্রয়ে আত্মরক্ষার উপায় খু'ঁজেছিলেন--কিন্ত ক্রমশঃ তার ভাষা প্রকাশভন্দিতে অনেক বেশী নির্ভীকতা দেখা গেছে বাঙ্গালীর প্রাচীন ইতিহাস বর্ণনায় তিনি বলেছেন,

“আমাদের এই [২০75815521906 কোথা হইতে 1 কোথা হইতে সহসা এই জাতির এই মানসিক উদ্দীপ্তি হইল 1 এর রোশনাইয়ে কে কে মশাল ধরিয়াছিল? ধর্মবেত্তা কে? শান্্রবেত্তা কে! দর্শনবেত্তা কে? ন্তায়বেত্া কে? কে কবে জন্মিয়াছিল ? কে কি লিখিয়াছিল? কাহার জীবনচরিত কি? কাহার লেখায় কি ফল? আলোক নিবিল কেন ?”

১৪৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

বাঙ্গালীর দৃষ্টিকে অতীতমুখী করে বঙ্কিমচন্দ্র আত্মঅনুসন্ধানের নেশা জাগিয়ে দিলেন আমাদের চরিত্রে! অতীতচচ্চা বঙ্কিমচন্দ্র আগেই শুর হয়েছে কিন্ত বঙ্কিমচন্দ্র স্বদেশপ্রেম জাগানোর মুখ্য উদ্দেশ্য নিয়ে প্রবন্ধে সে আলোচন!র স্থত্রপাত করেছেন ।_উপন্ভাসে অতীতের কল্পিত মহিমার দিকে শিক্ষিত বাঙ্গালীর মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন দেশপ্রেমের উত্তাল তরঙ্গে সমগ্র জাতি যখন আন্দোলিত বঙ্ষিমচন্দ্রই তখন যুক্তিধমিতা বজায় রেখে শিক্ষিত বাঙ্গালার পূর্ণ চৈতন্য জাগ্রত করেছেন স্বদেশপ্রেমের অনুভূতি যত তীব্র হয়েছে অষ্টা বঙ্কিমচন্দ্রও সেই অনুভূতি জাতির প্রাণে সঞ্চারিত করেছেন “বিবিধ প্রবন্ধের” “বাহুবল বাক্যবল' প্রবন্ধটিতে বঙ্কিমচন্দ্র বাক্যবলের ক্ষমতা প্রমাণ করেছেন। সাহিত্য রচনার উদ্দেশ্য যে লৌককল্যাঁণ_-এ কথা বঙ্কিমচন্দ্র পূর্বেই বলেছেন স্থৃতরাং প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি যে যথার্যই লোককল্যাণের চেষ্টাই করেছিলেন তাতে সন্দেহ নেই। প্রবন্ধে বঙ্কিম বলেছেন, “সাধারণ মনুষ্যগণ অজ্ঞ, চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ তাহাদিগকে শিক্ষা দেন। সেই শিক্ষাদীয়িনী উপদেশমাঁল৷ যদি যথাবিহিত বলশালিনী হয়, তবেই তাহা সমাজের হৃদয়ঙ্গমতা হয়। যাহা সমাজের একবার হদগত হয় সমাজ আর তাহা ছাঁড়ে না-_তদনুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হয়। উপদেশবাক্য বলে আলোড়িত সমাজ বিপ্ুত হইয়া উঠে [ বাহুবল বাক্যবল ]

সমগ্র প্রবন্ধ সাহিত্যের মাধ্যমে বঙ্কিমচন্্র এই লোককল্যাণ সাধনেরই চেষ্ট করেছেন। স্বদেশভাবাত্মক রচনাবলীরও উদ্দেশ্য সর্বসাধারণকে স্বদেশপ্রেমে উদ্ধদ্ধ জাগরিত করা এই উদ্দেশ্যের সততা আদর্শের বিশুদ্ধতা বঙ্কিম-প্রবন্ধের বিশেষ মূল্য দান করেছে। বঙ্কিমচন্দ্র তাই শুধু সাহিত্যিক হিসেবেই বন্দিত হন নি। সমালোচকের ভাযায়,--

বাস্তবিকপক্ষে বহ্কিমচন্দ্রের মধ্যে সে যুগের বিক্ষিপ্ত চিন্তাধারা, সে যুগের আশা, আকাঙ্ষা, সংহত কেন্দ্রীভূত হইয়াছিল, তাই তাহাকে আমরা ঘ্ুগমানব” আখ্যা দিতে পান্ধি। [ বঙ্ধিমদর্শনের দিগদর্শন-_ত্রিপুরাঁশংকর সেন শাস্ত্রী পৃঃ ১১]

প্রত্যক্ষভাবে শ্বদেশচিত্তীর পরিচয় বঙ্কিমপ্রবন্ধে যেমন পাওয়া যায় পরোক্ষ- ভাবে সমাজের সর্বাজীণ কল্যাণ সাধনের চিন্তাও তাঁকে নিরন্তর নতুন নতুন রচনার প্রেরণ দান করেছে! পাশ্চাত্য সমাঁজতাত্বিকদের আলোচনার সারাংশ বাঁংলা প্রবন্ধের মাধ্যমে প্রচারের চেষ্টা বিশ্লেষণ করলেও দেখা যাবে বঙ্কিমচন্দ্র একটি আধুশিক প্রগন্তিবাদী বলিষ্ঠ জাতিগঠন করতে চাঁন। সমাজবিপ্রবের যূল উপায় তিনিই আলোচনা করেছেন রূপকধর্মী রচনা “বিড়ালে'। মিল এর সাম্যবাদ-এর সঙ্গে এদেশীয় সাধারণের পরিচয় ঘটাবাঁর ,চষ্টী করে তিনি অশেষ উপকার সাধন

প্রবন্ধ ১৪৫

করেছেন যে কোন জাঁগরণই সমাজের সর্বস্তরে ব্যাপ্ত হওয়া প্রয়োজন বঙ্গদেশের কৃষকে' তিনি বাংলার ছুঃস্থ কৃষকের দিনযাঁপনের গ্লানি চিত্রিত করেছেন--সমাঁজবিপ্রবের পক্ষে সমস্ত প্রবন্ধের পরোক্ষপ্রভাব কেউই অস্বীকার করতে পারেন না। “সাম্য” প্রবন্ধের বক্তব্যটিও স্বাধীনতা আন্দোলনের সচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেছিল

বঙ্কিমচন্দ্র বাংলার সত্য ইতিহাস অনুসন্ধানের যে অনুরাগ সঞ্চার করেছেন--সেই আঁদর্শকেই মনে প্রাণে বরণ করে বাংল! প্রবন্ধ সাহিত্যের ক্ষেত্রে রজনীকান্ত গুপ্তের | ১৮৪৯--১৯০০ ] আবির্ভাব হয় স্বদেশীয়ানাই বঙ্কিমচন্দ্রকে সত্য ইতিহাস সন্ধানের প্রেরণা দিয়েছে রজনীকান্তও দেশপ্রেমিক বলেই বঙ্কিমপ্রদশিত পথেই বিচরণ করেছেন বাঙ্গলা প্রবন্ধের ক্ষেত্রে রজনীকান্ত সিপাহি যুদ্ধের এতিহাঁসিক বৃত্তান্ত বর্ণনা করেইস্থায়ী আসন লাভ করেছেন সমসাময়িক ইতিহাস অবলম্বন করে এমন নিষ্ঠার সঙ্গে সত্য উদঘাটনের প্রয়াস আমর রজনীকান্তের মধ্যেই প্রত্যক্ষ করেছি। এতিহাসিকের নিষ্ঠা দেশপ্রেমিকের আবেগ সম্বল করেই তিনি বাঙ্গলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে আবিভূতি হয়েছিলেন সাহিত্য সরস্বতীর একনিষ্ঠ সেবক রজনীকান্ত সম্পর্কে “সিপাহী বিদ্রোহের ইতিহাসের” [তৃতীয় ভাগ ] ভূমিকায় রামেন্দ্্ন্দর ব্রিবেদী বলেছেন,__

"বাংল সাহিত্যের জন্য রজনীকান্ত যে কার্য করিয়াছেন, তাহার মূলে একটা কথা পাওয়া যায়,_স্বজাতির প্রতি তাহার আন্তরিক অনুরাগ এই অন্রাগই প্রথমতঃ তাহাকে পুরাতত্ব আলোচনায় প্রবৃত্ত করিয়াছিল। এই অন্থরাগই তাহাকে পরে ভারতবর্ষের আধুনিক ইতিহাসের স্বাধীন সমালোচনায় প্রবৃত্ত করে ।...র্নীকান্ত যেমন একদ্দিকে আমাদের জাতীয় চরিত্রের কলঙ্ক কালিম! প্রক্ষালিত করিতে উদ্যত হইয়াছিলেন, অন্যদিকে আমাদের প্রাচীনকালের মহাঁপুরুষগণের চরিত্রের চিত্র উজ্জ্বল বর্ণে চিত্রিত করিয়া, স্বজাতির গৌরব খ্যাঁপনের সহিত জাতীয় ভাবের উদ্দীপন! করিয়া আপনাকে সম্মান শ্রদ্ধা করিতে শিখাইতেছিলেন ।8৭

রামেন্দরক্থন্দরের আলোচনাতে রজনীকান্তের দেশচেতনার প্রসঙ্গটিই ব্যক্ত হয়েছে এডুকেশন গেজেট” “বঙ্গবালী” পত্রিকার লেখকরূপেই রজনীকান্ত সাহিত্য জীবন শুরু করেন। বাঙ্গল! দেশের দুজন স্বদেশপ্রাণ সম্পাদক পত্রিকা! ছুটি পরিচালন করতেন, তাঁর! রজনীকান্তের রচনার মুল্য স্বীকার করেছিলেন 'বঙ্গবাঁলীতে”" তার

৪৭, বাসেন্্রক্ুন্দর ত্রিবেদী সম্পাদিত, সিপাহী বিদ্রোহের ইতিহাস। তৃতীয় ভাগ। ভূম্বিক', ১৩১৭ সাল ১৩

১৪৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে দেশপ্রেম

প্রথম রচনা “আর্যকীতি' প্রকাশিত হয়। “আর্যকীতি', রচনার উদ্দেশ্য ছিল বাঁলকপাঁঠ্য গ্রন্থপরিকল্পনা | এই গ্রন্থের [১ম ভাগ] ভূমিকায় রন্নীকান্ত বলেছিলেন,

"বৈদেশিক সভ্যতা-স্রোতে আমাদের সমাজে অনেক বৈদেশিক ভাব বৈদেশিক রীতিনীতি আসিয়া প্রবিষ্ট হইয়াছে পাঠশালার ছেলেরা এখন বিদেশের কথা বিদেশী লৌকের জীবনচরিত পড়িয়াই নীতিশিক্ষা করে। ইহাঁতে তাঁহাদের কোমল হৃদয়ে স্বদেশহিতৈষণ। বা স্বজাতিপ্রেমের আবির্ভাব হয় না। বালককাল হইতে বিদেশের কথা পড়িতে পড়িতে পাঠকের হৃদয় এমন বিকৃত হইয়া যায় যে, স্বদেশের বিষয় একবারও তাঁহার মনোযোগ আকর্ষণ করে না। "স্বদেশের দুঃখে স্বদেশের বেদনায় তাহার মনে দুঃখ বা বেদনার আবির্ভাব হয়না! সমাজের এই শোচনীয় অবস্থার মধ্যে আর্যকীতি প্রকাশিত হইল হহাতে ক্রমশঃ আর্ধগণের কীতি- কলাপের কাহিনী বিবৃত হইবে ।৮৪৮

এই অংশ থেকেই রজনীকান্তের মনোভাব স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে শ্বদেশীয়ানায় অত্যন্ত হতে হবে নিতান্তই বালাকাল থেকে হুতরাং বালকপাঠ্য রচনাঁতেই স্বদেশপ্রেম প্রসঙ্গটি আলোচিত হওয়া দরকার ইতিপূর্যের বালকপাঠ্য রচনায় বিদেশ প্রসঙ্গের আধিক্য থাকায় স্বদেশের কাহিনী অবহেলিত হতো | রজনীকান্ত অবশ্য স্পষ্ট করে বলেন নি। বিদ্যাসাগরের “চরিতাবলী* বিদেশীদের জীবন অবলম্বনে উপদেশীত্রক ভঙ্গিমায় রচিত হয়েছিল এতে শিক্ষণীয় বিষয়ের অপ্রানর্য ছিল না কিন্ত স্বদেশের আদর্শের সঙ্গে ছাত্রদের পরিচয় ঘটার স্থখোঁগ ছিল ন]1 বলে ভূদেব মুখোপাধ্যায় বিদ্ভাসাগরের “চরিতাবলীর” সমালোচনা করেছিলেন ভূদেব মুখোপাধ্যায় বিদ্াসাগরের উপরোক্ত রচনাকে সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর বলে বর্ণনা করেছেন। রজনীকান্তের বক্তব্যও ভূদেবানুগ শ্বদেশের ছুঃখবেদনা জাগিয়ে তোলার প্রচেষ্টাই রজনীকান্তের এসব রচনার উদ্দেশ্য | শ্বদেশের বীর পুরুষ নারী চরিত্রের বীরত্ব মহিম! সম্বন্ধে সচেতন করে তোলার আয়োজন করেছেন লেখক। লেখক এখান নিছক বর্ণনাকারী নন--তিনি উপদেষ্টা সমালোচক | অবশ্য এজন্ত রজনীকান্তের খুব বেশী মৌলিকত্ব নেই _কাব্যে-উপগ্কাসে-নাটকে বন্ৃভাবে এসত্য ব্যক্ত হয়েছে রজনীকান্তও বীরচরিত্র অনুসন্ধানের জন্য রাজস্থানের ইতিহাসের আশ্রয় নিয়েছেন তারাবাঈ রচনাটিতে লেখক রাজপুত বীর সুরতন রাঁওএর মনোবল ব্যাখ্যা করেছেন “তারাবাঈ' এর পিতা সরতন রাওএর মনোবল প্রকাশিত

০০০ শপ সত শশা সি

৪৮, রজনীকান্ত গুপ্-_আর্ধবীতি ১ম খণ্ড বিজ্ঞাপন, কলিকাতা, ১৮৮৫ |

প্রবন্ধ ১৪৭

হয়েছে তারাবাঈ-এর বিবাঁহ্প্রার্থী জয়মল্লের প্রপঙ্গে। লেখক এখানে নিজের মনোভাব গোঁপন করেন নি। স্বদেশপ্রেমিক লেখক উচ্ছুসিত হয়ে বলেছেন,_

“বীরভূমি রাজপুতনা বাঙ্গালা দেশ নহে রাজপুত বীর বাক্ষালারস্তায় পাত্র খু'জিয়া বেড়ান না এখনকার বাঙ্গালীর স্যাঁয় ধনশালির জড়পিগবৎ অকর্মণ্য পুত্র বা বি, এম, এ, উপাধিধারী বিলাসী যুবক পাইলেই রাজপুতবীর আহ্লাদে গলিয়। যায় না।

'-*প্রক্ৃত বীরের চরিত্র এইরূপ উচ্চভাবে পূর্ণ প্রকৃত বীর এইরূপ মহাপ্রাণতা 'তজত্বিতায় অলংকৃত। এই মহাপ্রাণতা তেজন্বিতার সমুচিত সম্মান করিতে পারেন, আজ এই বিশাল ভারতে এমন কয়টি প্রকৃত কবি বা প্রকৃত এঁতিহাসিক আছেন? আর কি চারণগণ অতীত গৌরবের গীতি গাইয়া চিরনিদ্রিত ভারতকে জণগাইবে না ?” [ তারাবাঈ ]

এই অশটতে রজনীকান্তের দেশপ্রেম কতখানি উদ্বেলিত হয়ে উঠেছে--ভাষায় প্রকাঁশভঙ্গিতেই তা৷ বাক্ত হয়েছে রাজপুত বীরের সঙ্গে বাক্ষালীর তুলনাটিও অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে স্বদেশপ্রেমী লেখক বাঙ্গালীর অধঃপতনের চিত্রটিই তুলে ধরেছেন তথাকথিত উচ্চশিক্ষাপ্রাপ্ত বঙ্গীয় যুবকদের চরিত্রে দেশানুরাগের অভাব লক্ষ্য করে লেখক ছুঃখবোধ করেছেন। একদিকে স্বজাতির ছুরবস্থা দেখে তিনি চিন্তিত, অন্যদিকে যথার্থ বীরত্বের দৃষ্টান্ত উপস্থিত করে তিনি পরোক্ষ ভাবে দেশাহ্ছরাগ সঞ্চারের চেষ্টা করেছেন। রজনীকান্ত প্রকৃত স্বদেশপ্রেমী ছিলেন বলেই চারণের বৃত্তি গ্রহণে তীর অদম্য স্পৃহা লক্ষ্য করেছি “আর্যকীতির” কাহিশীগুলি মুখ্যতঃ অতীত ভারতের বীরনারী বীরপুরুষের চরিতচিত্রণ। মাঝে মাঝে উদ্দীপন! সঞ্চারের জন্য উত্তেজনাপূর্ণ স্বগতোক্তিরও অবতারণ করেছেন তিনি )--

“বীরবালক বীররমণী” প্রবন্ধটিতে পুত, পুত্তের মাতা-পত্বী-বণিতার অসম্ব- সাঁহসিক বীরত্বের কাহিনী বর্ণনা করে অবশেষে লেখক মন্তব্য করেছেন,

“এ অপূর্ব দৃশ্যের অনন্ত মহিমা আজ কে বুঝিবে ? ভারত আজ নির্জীব, ভারত আজ বীরত্বরহিত, ভারত আজ জাতীয়জীবনশৃন্য | ভারত আজ বীরবালক বীরাঙ্গনার পবিত্র বীরত্বের পুজা করিবে কি!”

এখানেও লেখকের স্বদেশপ্রেমী অন্তর ভারতের বর্তমান দুরবস্থায় খ্রিয়মান হয়ে পড়েছে। “ভারত আজ জাতীয়জীবনশৃন্ত” এই আক্ষেপোক্তি উনবিংশ শতাব্দীর শ্বদেশপ্রেমিকের | কিন্তু জাতীয় জীবনের জাগরণের লগ্নে সমগ্র দেশবাপীর অন্তরে যথার্থ স্বদেশপ্রীতি জাগিয়ে তোঁলার জন্যই তাঁরা জাতীয় উক্তি করেছিলেন প্রাচীন ভারতের আদর্শের চিত্র মানসপটে স্বাপিত করে নবীন ভারত গঠনের সঙ্কল্পটি সমগ্র ভারতবাসীর মনে তীব্রভাবে অনুপ্রবেশ করিয়ে দেওয়াই লেখকের উদ্দেশ্ঠ £

১৪৮ | উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

যদিও রজনীকান্তের এই ধরণের প্রচেষ্টাকে খুব কিছু অভিনব বলে মনে হয় না কিন্ত যে-কোন সাহিত্যেই প্রথমপর্বের মৌলিক ভাবনা পুনরারুত্তির ফলে একঘেয়ে মনে হয়। কিন্তু স্বদেশপ্রেমিক লেখকের দেশপ্রীতি প্রকাশের বিচিত্র বিভিন্ন উপায়ও খুব বেশী থাঁকে না,___পুনরাবৃত্তির আশ্রয়েই ফিরে আসতে হয় তাদের রজনীকান্তের একেবারে প্রথম দিকের রচনাতেও তাই খুব বেশী মৌলিকত্ব নেই কিন্তু ক্রমণঃ তিনি স্বকীয় বক্তব্য মৌলিক চিন্তাধারার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন পরবর্তী রচনাগুলোতে প্রবন্ধ মাল (১৮৭৭ ) কিংবা কীরমহিমা (১৮৮৬) ইত্যাদি গ্রন্থে কষুত্র ক্ষুত্র প্রবন্ধে রজনীকান্ত বীরচরিত্র অঙ্কন করেছেন বহু আলোচিত এই ধরণের চরিত্ররচনায় মৌলিকত্ব দেখাবার সুযোগ নেই-কিস্ত মাঝে মাঝে প্রাবন্ধিক অত্যন্ত ভাবাবেগপীড়িত হয়েছেন রাজস্থানের প্রতাপসিংহ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেমিক রূপে বন্দিত হয়েছেন কাব্যে-উপন্তাসে-নাট.ক-প্রবন্ধে | ভারতবর্ষের পরাধীনতার কলঙ্ক মোচন করেছিলেন তিনি | হতাশা-পীড়িত জাগরণ- প্রয়াসী ভারতবাপীর মনে তিনিই অনির্বাণ উৎসাহ অগ্নি জালিয়ে দিয়েছিলেন রজনীকান্তও দেশপ্রেমী প্রাবন্ধিকের কর্তব্য পালন করেছিলেন প্রতাপসিংহের মহিমা স্তব করে। রজনীকান্ত হলদিঘাঁটের নায়ক প্রতাপসিংহের উজ্জ্বল বর্ণনা দিয়েছেন

*এইরূপে হলদ্িঘাট সমরের অবসান হয়, এইরূপে চতুর্দশ সহস্র রাজপুত হলদিঘাট রক্ষার্থ অঙ্নানবদনে, অসঙ্কুচিতচিত্তে আপনাদিগের জীবন উৎসর্গ করে। ইতিহাসের আদরের ধন ভারতবর্ষ এই লোকাতীত বীরত্বের জন্য চিরপ্রসিদ্ধ ।'-হলদিঘাট কিছু সামান্য যুদ্ধক্ষেত্র নহে, প্রতাপসিংহ কিছু সামান্ত যুদ্ধবীর নহেন, যদি পৃথিবীতে কোন পুণ্যপুঞ্ময় মহাতীর্থ বর্তমান থাকে, যদি পবিত্র স্বাধীনতার, পবিত্র ধবজার কোন বিলাসক্ষেত্র থাকে, তবে তাহা সেই হলদিঘাঁট, যদি কোন বীরপুরুষ বীরেন্দ্রসমাঁজে প্রীতির পুষ্পাঞ্জলি পাইয়া থাকেন, যদি কোন অদীন পরাক্রম মহাপুরুষ আলোক- সামান্য দেশান্ুরাঁগ জন্থা অমর সমিতিতে স্তত হইয়! থাঁকেন, তাহা হইলে তিনি সেই প্রতাপসিংহ 1৮৪৯

উদ্ধৃত অংশ পাঠ করলে প্রাবদ্ধিকের দেশপ্রেমিকতার পরিচয়টিই প্রকাশিত হয়। হলদিঘাট স্বদেশপ্রেমিকের তীর্ঘভূমি | স্বদেশপ্রাণ প্রাবন্ধিক সে তীর্থমহিমা কীর্তন

করেছেন এখানে শিখ জাতির অস্ত্রশিক্ষার্ডরু, গুরু গোবিন্দসিংহের চরিত মহিমাও ব্যাখ্যা

৪৯. রজনীকান্ত ওগ---প্রবন্ধমাল।, প্রতাপসিংহ, কলিকাতা, ১৮৭৮।

প্রবন্ধ ১৪

করেছেন লেখক শিখের বীরত্ব ভারতবাসীর গর্বের বস্ত। স্বদেশপ্রেমিক হিসেবেই গুরু গোবিন্দসিংহ প্রবন্ধমাঁলায়' আলোচিত হয়েছেন,_-

“শিখ সমিতিতে হরগোবিন্দ অন্ত্রশিক্ষার প্রথম প্রবর্তক কিন্তু গোঁবিন্দসিংহ এই মন্ত্রের সহিত এমনই তেজ প্রসারিত করিয়াছেন যে, তাহাতে সমস্ত শিখসমাজ তেজস্বী, সাহসী স্থযোদ্ধা বলিয়া ইতিহাসের আদরণীয় হইয়াছে

যাহা হউক, গোবিন্দসিংহ এই অল্প বয়সে অল্প সময়ের মধ্যে শিখসমাঁজে যে জ্রীবনীশক্তি, যে তেজ, ষে ওজস্বিতা প্রসারিত করেন, তাহারই বলে নির্জীব, নিশ্চেষ্ট, নিষ্ক্রিয় ভারতে শিখগণ আজ পর্যন্ত সজীব রহিয়াছে, তাহারই বলে রামনগর চিলিয়ানওয়ালার নাম আজ পর্যন্ত ইতিহাসহৃদয়ে বিরাঁজিত রহিয়াছে ।৮

রজনীকান্ত সাহসী-বীর্যবাঁন-নির্ভীক ভারতবাঁসীর স্বপ্ন দেখেছেন,__তাই যেখানে শক্তি বীর্ষের পরিচয় পেয়েছেন-_তাঁরই আলোচনায় আগ্রহী হয়েছেন কীরমহিমা ১৮৮৬ ] রচনারও মূল উদ্দেশ্য বীরচরিত্রের আলোচনা করে পরোক্ষভাবে দেশ সচেতন হতে সাহাধ্য করা। “বীরমহিমায়” ধারা আলোচিত হয়েছেন-_“যুদ্ধবীর চরিতে নারী চরিতে” তাঁদের পৃথকভাঁবে ভাগ করা হয়েছে প্রতাপসিংহ, গোবিন্দসিংহ, শিবাঁজী, রণজিৎসিংহ, কুমারসিংহ যুদ্ধবীর রূপে বন্দিত হয়েছেন নারীচরিত্রে আছেন- মীরাবাঈ, সংযুক্তা, দুর্গাবতী লক্ষমীবাঈ | লক্ষমীবাঈ প্রসঙ্গে রজনীকান্ত “সিপাহী বিদ্রোহের ইতিহীসে” বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এখানে দ্র প্রবন্ধে লক্ষ্মীবাঈএর আত্মত্যাগ স্বদেশ হিতৈষণাঁর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন তিনি জাতীয় চরিত্রবর্ণনায় লেখকের ভাবাঁবেগ কতটা উদ্বেল হয়ে উঠত তার প্রমাণ মিলবে,

“পরাধীনতার শোচনীয় সময়ে নির্জীব, নিশ্চে্ট নিক্ছ্িয় ভারতবাঁপীর মধ্যে এইরূপ জলন্ত পাবকশিখার আবির্ভাব .হইয়াছিল। ভারতের যুবতী বীররমণী যৌবনের বিলাস পরিহার করিয়া এইরূপ ভয়ঙ্করী যূতি ধারণ করিয়াছিলেন ।"*" লক্মীবাঈয়ের জীবননাটকের শেষঅঙ্ক কি গভীর ভাবের উদ্দীপক! আপনার ষাধীনতার জন্য যুবতী বীররমণীর এইরূপ অসাধারণ আত্মত্যাগ কি গভীর উপদেশের পরিপোষক |” |

সর্বত্রই লেখকের স্বাধীনতাপ্রিয় মনের পরিচয়ই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে দেশাস্্- বোধের আবেগ জাতীয় প্রতিটি রচনার সঞ্চারিত রজনীকান্তের ভাবাবেগপূর্ণ বচন সম্পর্কে কোনো সমালোচক বলেছেন, _

“অক্ষয়কুমার দত্তের ওজন্বিত বিদ্যাসাগরের মনোজ্ঞতা একত্র রজনীতে বর্তমান ছিল। অপরের ভাঁষা অগ্যহিসাবে শ্রেষ্ঠ হইতে পারে, কিন্ত রজনীবাবুর ভাষ!

১৫৩ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

ওজ্ম্ষিতা মনৌগুঞতাগডণে বড়ই মনোরম শএ্রতিহাসিক সাহিত্য লেখার তিনিই পথপ্রদর্শক ।৮৫০

এতিহাসিকের দৃষ্টিভঙ্গিতে স্বদেশপ্রেমের আধিক্য ঘটলে যথার্থ ইতিহাস সম্ভবত রচিত হতে পারে না। রজনীকান্ত কিন্তু নিষ্ঠাবান স্বদেশগ্রেমিক হলেও ইতিহা” অবলম্বন করেছিলেন তাঁর জাতীয় রচনার মধ্যে ভারতকাহিনী [ ১৮৮৩ ভারত প্রসঙ্গ ১৮৮৮ ] সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস ১৮৭৯--১৯০০ ] প্রধান।

“ভারত প্রসঙ্গের” লেখক বর্তমান ভারতইতিহাস অবলম্বন করেছিলেন ইংরাজ অধিকৃত ভারতবর্ষের ইতিহাঁস ইংরাঁজ রাজত্বে বসে রচনা করার ছুঃদাঁহসিকতা রজনীকান্তের ছিল। কিন্তু রজনীকান্ত সত্য ইতিহাস সম্পর্কে সমগ্র জাতিকে সচেতন করতে চেয়েছেন। ইংরেজ অধিকারের বিবরণ সম্পর্কে সচেতন হলে জাগরণের আলোকে আত্মদর্শনের কিংবা কর্তব্য নির্ধারণের স্থবিধাই হবে। সেপ্দিক থেকে জাতীয় গ্রন্থের মূল্য আছে “ভারত প্রসঙ্গের” স্কচীতে আছে-_ভারতাক্রমণ, বঙ্গে ইংরেজাধিকার, ভারতে ব্রিটিশাধিকার, ভারতে ইংরেজরাজত্ব পরিশিষ্ট

বিচক্ষণ এতিহাসিকের দৃষ্টিতে বিষয়টি আলোচনা করেছেন তিনি স্বদেশপ্রেমিক হলেও যুক্তিহীন আত্মশ্লাঘা কৌঁথাও নেই, কিংবা আত্মদোষ গোপনেরও কোথাও কোনে চেষ্টা করেননি লেখক, উপরন্ত ইংরেজ রাজত্বের প্রশংসনীয় দিকটিও বর্ণনা করেছেন “ভারতে ইংরাঁজ রাঁজত্ব” অংশটিতে লেখক বলেছেন, “সমগ্র ভারতবর্ষ জাতীয়ভাবে সমৃদ্ধ ছিল না। ইলরেজ কোনরূপ জাতীয়শক্তি বিন করিয়া আপনাদের রাজত্ব স্থাপন করেন নাই নানা কারণে ভারতবর্ষ পূর্বেই বন্ধনী বিষুক্ত হইয়! পড়িয়াছিল। ইঙ্গরেজ এই বিচ্ছেদের চূড়ান্ত অবস্থায় ভারতবাসীর সাহায্যে আপনাদের অধিকার স্থাপন করেন | স্থতরাঁং ইহাতে ইঙ্গরেজের অলৌকিক শক্তি বা অচিস্ত্যপূর্ব মহিমার পরিচয় পাওয়া যাঁয় না।৮৫১

বিচ্ছিন্ন জাতীয়ভাব শুন্য স্বদেশবাসীর চারিত্রিক অধঃপতনের স্থযোগেই বিদেশীরা এদেশে এসেছে এবং সহজেই জয়লাভ করেছে __-এ সত্য যে-কোন সত্য-ইতিহাঁসেই স্বীকৃত। লেখক রজনীকান্ত জাগরণ এঁক্যের মহিমা সম্বন্ধে সচেতন জাতীয় আন্দোলন সংগঠনের পরিকল্পন। সম্বন্ধে অবহিত ছিলেন বলেই এই অবস্থার সম্দে ভারতবর্ষের দুর্দশীর চিত্রটি এমনভাবে উপলন্ধি করেছিলেন,

“ঙ্গরেজের পদার্পণ সময়ে ভারতবর্ষ এমন কতকগুলি লোকের আবাসক্ষেত্র ছিল

৫*, ব্লজনীকান্তের শোকসভায় হীরেন্ত্রনাথ দত্তের ভাষণ লাহিত্যসাধক চরিতমালা। ৬ষ্ঠ খণ্ড।

বজনীকাস্ত গুপ্ত থেকে সংকলিত ৫১, রজনীকান্ত গ%--ভারত প্রসঙ্গ, ১২৯৪ সাল।

প্রবন্ধ ১৫১

যে, একের ধারণা অন্তে হদয়ঙ্গম করিতে পারিত না, একের চিন্তায় অপরে চিন্তাশীল হইত না, একের স্বার্থ অপরের স্বার্থের সঙ্গে মিশিয়া যাইত না, একের অভাবে অপরের অভাববোধ করিত না। ইঙ্গরেজ পরের সাহায্যে এই বিচ্ছিন্ন, বিষুক্ত লোকদিগকে আপনাদের অধীন করিয়াছেন।”

এখানে সমগ্রজাতির চারিত্রিক ক্রটির সমালোচন। করেছেন লেখক ভারত- বাসীর চরিত্রের এই দুর্বলতা! বিচারের প্রয়োজনীয়তাঁও দেখা দিয়েছিল এই গুরুত্বপূর্ণ হূর্তটিতেই রজনীকান্ত ধারাবাহিক ইতিহাস আলোচন! কালে এই ক্রটির কথাই বার বার বলেছেন সম্ভবতঃ ত্রুটি সম্বন্ধে অবহিত করে তোলাই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল,__ সংশোধনের স্থযোগও ঘটবে এতে

এই গ্রন্থের বঙ্গে ইঙ্গরেজাধিকার' অংশটিতে লেখক ইংরাঁজদের চাতুরী কপটতার কথাই প্রকাশ্যটভীবে বলেছেন,__

"বাঙ্গালায় ইঙগরেজাধিকীরের কথা কেবল চাতুরী, প্রবঞ্চনা অবাধ্যতায় পরিপূর্ণ এই চাতুরীময়, প্রবঞ্চনাময় অবাধ্যতাময় কথার প্রসঙ্গে আমরা সিরাজউদ্দৌলাঁর পরিচয় পাই এই পরিচয়ে সিরাজটদ্দৌলার চরিত্রে যত দোষ দেখা না যায়, তাহার প্রতিঘন্্ী ইঙ্গরেজের চরিত্রে ততোহধিক দৌষ দৃষ্ট হইয়া থাঁকে [ ভারত প্রসঙ্গ ]

রজনীকান্ত এখানে সিরাজউদ্দৌলার প্রতি সমবেদনা প্রদর্শন করেছেন সত্য- বিচার কালে এই সমবেদন1 জাগাই স্বাভাবিক রজনীকান্ত স্বদেশপ্রেমিক এতিহাঁসিক ছিলেন বলেই ইংরেজকে অযথা দোষারোপ করেন নি,_তিনি যুক্তিবাদী-সত্যনিষ্ঠ এঁতিহাসিকের কর্তব্ই পাঁলন করেছিলেন। সেযুগের কাব্য-উপন্তাসে-নাঁটকে প্রত্যক্ষভাবে সত্যকথনের হুযোগ ছিল না$- বঙ্কিমচন্দ্র সমালোচনার জন্য তির্যধক ভর্গ অবলম্বন করেছিলেন,--রজনীকাস্ত কিন্তু যথেষ্ট সাহসিকতারই পরিচয় দিয়েছিলেন অবশ্য সত্যইতিহাস রচনার আবেদন জানিয়েছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র, রজনীকান্ত সেই আদর্শটিই অনুসরণ করেছেন

“ভারত কাহিনীতেও' রজনীকান্তের দেশপ্রেমের পরিচয় রয়েছে “ভারত কাহিনী” তিনি উৎসর্গ করেছিলেন দেশপ্রেমিকের হাতে,

"ভারতহিতৈষী শ্রদ্ধাস্পদ হুহৃৎ শ্রীযুক্ত বাবু রেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় যহোদয়ের স্মরণীয় নামে “ভারত কাহিনী* উৎসর্গীকৃত হইল 1৮৫২

বিজ্ঞাপনের বক্তব্যেও লেখকের স্বদেশচেতনা স্পষ্ট__“ধাহারা ভারতবর্ষকে হৃদয়ের

৫২, রজনীকান্ত গুপ্ত--ভারত কাহিনা, ১৮৮৩ সাল।

১৫২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে ্বদেশপ্রেম

সহিত ভালবাসেন, ভারতের ইতিহাঁসঘটিত কথ শুনিতে ইচ্ছা করেন, 'ভারত কাহিনী, যদি তাহাদের আমোঁদবর্ধনে সমর্থ হয়, তাহা হইলেই চরিতার্থ হইব |”

দেশপ্রেমিক লেখকের বাসনাটিতেও দেশপ্রেমেরই অকপট উচ্ছ্বাস ব্যক্ত হয়েছে। প্রাচীন ভারতের প্রতি শ্রদ্ধা বর্তমান ভারতের পরাধীনতায় গ্লানিবোধ ভবিষ্যতের জন্য আত্মপ্রকাশ গ্রন্থটিতে ক্রমান্বয়ে ব্যক্ত হয়েছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রবন্ধে লেখক এখানে ভার ব্যক্তিগত মতামতই প্রকাশ করেছেন। কোনো কোনে প্রবন্ধে ইংরেজের সৎকর্মকে সাধুবাদ দিয়েছেন, কোথাঁও বাঙ্গালীর চরিত্র সমালোচনা! করেছেন। স্বদেশগ্রীতি অবলম্বনে লেখ! প্রবন্ধে বিষয়বস্তরর বৈচিত্র্য অনুসন্ধান করলে ব্যর্থ হতে হয়। মোটামুটি গতানুগতিক বিষয় অবলম্বনে কোথাও আক্ষেপ, কোথাও উৎসাহ সঞ্চারের চেষ্টাই জাতীয় প্রবন্ধে পাঁওয়। যাঁয় |

“ভারতের ইতিহাস অধ্যয়ন”-__ প্রবন্ধটিতে ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনী'রতা ব্যাখ্যা করেছেন লেখক ভারতের বর্তমান ছুরবস্থার সঙ্গে ভারতের আর্ধমহিমাঁর চিরাচরিত তুলন1 দিয়ে লেখক নৈরাশ্যবোধ করেছেন

“ভারতের সে জ্ঞান, সে ধর্ম নাই, সে জীবনীশক্তি নাই, সে একতা, সে আত্মত্যাগ নাই। প্রাচীন ভারতের সভ্যতার ত্রষ্টা আর্য মহধষিগণের বিলাসভূমি, গিরিকন্দর অবিরত রহিয়াছে, পুণ্যসলিল! সিন্ধু সরস্বতী যথাগতি প্রবাহিত হইতেছে, কিন্তু অগ্ ভারত শ্মশান। ভারতের সে গৌরবস্র্য এক্ষণে অনন্ত জলধিতলে ডুবিয়াছে। সে সাহস, সে বীর্ধবস্তা, সে রণোন্মাদ, সে একতা, সে আত্মত্যাগ এক্ষণে কেবল আভিধানিক শব্দে পরিণত হইয়াছে অগ্ভতন ভারত এইরূপ ছুরবস্থায় পতিত। অগ্ঠতন ভারতের সন্তানগণ এইরূপ নিশ্চেষ্ট নিক্ষিয় নিস্পৃহ |”

এঁতিহাসিক রজনীকান্ত ইতিহাস আলোচনার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেছেন কিন্ত সেইসঙ্গে দেশকে ভালবাসার কথাও স্বরণ করিয়ে দিয়েছেন,

“আর্ধপূর্ব পুরুষগণ এঁতিহাঁসিক বলিয়া পরিচিত হউন বা না হউন, এক্ষণে তদ্িষয়ের অনুশীলন অপেক্ষা আমাদিগের স্বদেশীয় ইতিহাসের অনুশীলনই অধিকতর আবশ্যক হইয়া উঠিয়াছে। যদি কেহ স্বদেশের ব্যথায় নির্জন প্রদেশে শীরবে বসিয়া একবিম্কু অশ্রপাঁত করিয়! থাকেন, যদি কেহ অত্যাচার পীড়িত জন্মভূমির সথখশাস্তি বাড়াইতে ঘত্বপর হন, ষদি কেহ মহাজন মুখবিনিঃহৃত “জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী" বাক্যের মর্মজ্ঞ হইয়! স্বদেশের হিতের তরে স্বীয় প্রাণ উৎসর্গ করেন, তাহা হইলে সকলের আগে তাহার স্বদেশের ইতিহাস অধ্যয়ন করা উচিত। স্বদেশের ইতিহাস না পড়িলে তিনি স্বদেশের বেদনার প্রকৃত কারণ অনুভব করিতে পারিবেন না।”

প্রবন্ধ ১৫৩

স্বদেশহিতৈষণা জাগিয়ে তোলার একমাত্র কারণ ইতিহাস অধ্যয়ন, কথাটি উনবিংশ শতাব্দীর প্রত্যেক স্বদেশপ্রেমীরই বক্তব্য। তবে রঙ্নীকান্তের দেশ প্রীতির আবেগ উদ্ধৃত মন্তব্যের মধ্যে উপদেশের মতো! শোনায় নি--ত। যেন দরদীর আবেদন। “ভারত কাহিনীর» “ভারতে মুদ্রণ স্বাধীনতা” প্রবন্ধটিতে ইংরেজের সংকাজের প্রশংসা আঁছে_-আবাঁর সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর আরোপিত আইনের সমালোচনাও আছে ইংরেজ্কের ছুরভিলন্ধির প্রকাশ্য সমালোচনা লেবকের নির্ভীক মনোভাবের পরিচয় দেয়। লর্ড মিণ্টোর আমলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ছিল না এর কারণ বর্ণনাকালে লেখক বলেছেন,

“সে সময়ে ভারতবর্ষীয়দিগকে অজ্ঞানে কুপংস্কারে আচ্ছন্ন করিয়া রাখাই ইংরেজ গভর্নমেপ্টের একমাত্র নীতি ছিল যদি স্বাধীন রাজ্যে অথব1 সাধারণ প্রজাদের মধ্যে জ্ঞানের কোনরূপ বিকাশ দেখিতে পাওয়! যাইত তাহা হইলে কিয়ংপরিমাণে জ্ঞানোন্নতির সম্ভাবনা আছে দেখিয়াই, মিন্টোর গভর্নমেন্ট সংবাদপত্রের অবস্থা উন্নত কর্পিতে কিছুমাত্র যত্ব করেন নাই ।”

বিদেশী শাসন আমাদের যথার্থ প্রগতিতে বাঁধা দিয়েছে-_এ সত্য প্রচার করাই লেখকের উদ্দেশ্য ছিল। দেশের প্রতি অগাঁধ প্রেম যার আছে তিনি দেশের অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করেন না। 'এই বিদ্বেষের ভাবকেই জাঁতিবৈর বলে এক সময়ে বাংলাদেশে তুমুল আন্দোলন জমে উঠেছিল এই শব্দটিকে কেন্দ্র করে। বঙ্কিমচন্দ্র অক্ষয়চন্ত্র সরকার ছিলেন প্রধান আলোচক দেশপ্রেমে জাতি-বৈরিতা থাকা উচিত কিনা_-এ আলোচনার ভাবগত দিকটি নিয়ে আমাঁদের সমালোচকরা বাক্য- ব্যয় করেছিলেন- কিন্তু বাস্তবতাভিত্বিক আলোঁচন1 কাঁলে দেখ! যাবে, যে দেশপ্রেমিক দেশের ক্ষতিসাধনকারীকে কখনও ক্ষমা করতে পাঁরেন না। বঙ্কিমচন্দ্রও মিথ্যা ইতিহাসরচনা প্রচারের জদ্য ইংরেজ এতিহাসিককে ক্ষমা করেন নি। 'সীতারামের মীর মার শক্র মার” স্পষ্টতই শক্র নিধনের ইঙ্জিত দেয়__সেখানেও জাতিবৈরিতাই প্রকাশ পেয়েছে রজনীকান্ত মেটকাফের প্রশংসা করেছিলেন কিন্তু মিন্টো গভর্নমেণ্টকে দোষারোপে করেছিলেন বিদ্বেষের ভাঁবটি এখানেও গোপন করতে পারেন নি তিনি

রজনীকান্তের শ্রেষ্ঠ যুগান্তকারী রচনা হিসেবে “সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাসের” উল্লেখ করতে হয়। দীর্ঘ পাচ খণ্ডে লেখা এই গ্রন্থে স্বদেশপ্রেমিক রজনীকান্তের ছুঃসাহসিক প্রচেষ্টা অপরিসীম দেশপ্রীতির পরিচয় মেলে। সিপাহী বিদ্রোহ ইরেজ আমলে সর্বাপেক্ষা আলোড়নকারী ঘটনা সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে এই ঘটন। দাবাগ্নির মত্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু এই ঘটনার প্রামাণ্য বিবরণের জন্ত যে

১৫৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

সব ইংরাঁজ এঁতিহাসিকের দ্বারস্থ হতে হয়_-ঠাদের মত নিবিচারে মেনে নেওয়া ছাঁড়া গত্যন্তর থাকে না। তাছাড়া বাংলাভাষায় সিপাহীযুদ্ধের প্রামাণ্য ইতিহাসও ছিল না-_রজ্রনীকান্ত সে অভাব দূর করতে চেয়েছিলেন রজনীকান্তের দৃষ্টিভঙ্গি পুরোঁপুবি এতিহাসিকের, কিন্ত মনটি ছিলো স্বদেশপ্রেমিকের রজনীকান্ত সিপাহী যুদ্ধের ঘটনা প্রসঙ্গে ইংরেজ এতিহাসিকের রচনাই অন্ুপরণ করেছিলেন, কিন্তু যেখানে এতিহিকের বক্তব্য মেনে নিতে দ্বিধাবোধ করেছেন সেখাঁনে নিজের মতামতের ওপরেই নির্তর করেছেন তিনি। ট্পাহী যুদ্ধ সম্পর্কে সেষুগের সাধারণ লোকের ধারণার সঙ্গে আজকের গবেষণার পার্থক্য আছে। ঈশ্বরগুপ্ডের কবিতায় সিপাহি- বিজ্রোহের যে চিত্র পেয়েছি আমরা, তাতে সিপাহীদের স্বাধানতার সৈনিক বলে কল্পনা করাও যাঁয় না। একই শতাব্দীতে লেখা বজনীকান্তের গ্রন্থ পাঠ করলে সিপাহী বিদ্রোহ সম্বন্ধে আমাদের ধারণা সম্পূর্ণ পরিবতিত হবে রজনীকান্ত স্বদেশ- প্রেমিকের সহানুভূতি নিয়ে সিপাহীবিদ্রোহের ঘটন। ব্যাখ্যা করেছেন ঈশ্বরগুপ্তের ধারণার যূলে সত্যনির্ণয়ের চে! ছিল না. ছিল রাজভক্তি আনুগত্য প্রদর্শনের বাসনা এই স্বতোবিরোধ সে যুগের অনেক স্বদেশপ্রেমিকের চরিত্রেই দেখা গেছে। কিন্ত রজনীকান্ত যথাসাধ্য সত্য নির্ণয় করছিলেন সিপাহী ধিদ্রোহের তথ্যভিত্তিক আলোচনা কালে রজনীকান্ত দেখেছেন ক্রমাগত অতাচার অবিচারের ধৃমায়িত প্রতিবাঁদরূপেই এবন্রোহ অতি দ্রতবেগে বিস্তারিত হয়েছে একে হয়ত বুক্তির সংগ্রাম বল চলে না, কিন্তু আত্মরক্ষা ধর্ষরক্ষার সংগ্রাম বলা চলে অনায়াসে | রজনীকান্তের আলোচনাও আভ্রকের পরিপ্রেক্ষিতে একটু প্রাচীন বলে মনে হবে। অতিরিক্ত ভাবাবেগ রচনায় যে স্বদেশপ্রেমের অনুভূতি সঞ্চার করেছে সেইটুকু আজকের এঁতিহাঁসিকের রচনায় হয়ত বজিত, কিন্ত রজনীকান্ত যুগোপযোগী ভাবের দ্বারা প্রাণিত হয়েছিলেন বলেই রচনা।টতে পৃথক বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হয়েছে রজনীকান্ত শুধু ইতিহাস বর্ণনা করেন নি._-তিনি প্রাপ্ত ইতিহাসের সমালোচনাও করেছেন স্থদীর্ঘ পাঁচ খণ্ডে লেখা গ্রন্থটির প্রথমভাগে লেখক শুধু সিপাহী বিদ্রোহের কারণ নির্ময়ের চেষ্ট। করেছিলেন দেশে ইংরেজ রাজত্ব স্থাপনের প্রথমাংশে নানা অন্জুহাতে রাজ্যগ্রাসের যে অবাধ লীলা চলেছে-_লর্ড ডালহৌসীর নীতিই সেজন্ত মুখ্যতঃ দায়ী লেখক আবেগময়ী ভাষায় এই অন্যায় ঘটনাগুলি বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করেছেন। বিনাকারণে রাজ্যচ্যুত-_সম্মানবঞ্চিত এই রাজন্যবর্গের অসন্তোষ ক্রমশঃই বৃদ্ধি পাচ্ছিল। সিপাহিদের অসন্তোষ যখন বিদ্রোহের আকার ধারণ করে তখন তা সমগ্র ভারতের সৈম্মাবীসগুলিতেই বিস্তারিত হয় নি-_জনগণও এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত হয়েছে। অনেক জায়গায় রাজান্ুকৃল্যও লাভ করেছে সৈনিকেরা। ইংরেজকে মান্

প্রবন্ধ ১৫৫

করে, ইংরেজের আন্ুকৃল্য অন্ুগ্রহ লাভ করে যে সব রাজা বা রাঁজপ্রতিনিধিরা বাঁচতে চেয়েছিল তারাও ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত আত্মরক্ষার জন্য বিদ্রোহী হয়েছে। প্রথম খণ্ডেপাঁঞজাব থেকে বাংলা --এই সমগ্র ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সমালোচন। করে রজনীকান্ত আবেগময়ী ভাষায় বিদ্রোহের পটভূমিকা বিশ্লেষণ করেছেন। ইংরেজের প্রতি বিরূপ মনোভাব শুধু সিপাহীদেরই ছিল না_যার। বঞ্চিত-অত্যাচারিত- নিগৃহীত প্রত্যেকেরই কিঃ কিছু অসন্তোষ বর্তমান ছিল, যদিও তা প্রকাশের কোন উপায় ছিল না। কিন্তু সিপাহীদের মধ্যে যখন তা দ্রুতগতিতে বিস্তৃত হয়েছে -তাঁরই সঙ্গে ব্যক্তিগত রোষ এসে মিলিত হয়েছে কাজেই রজনীকান্তের দৃষ্টিতে আন্দোলন একেবারেই আকনম্ষিক বা অচিস্তিত নয়। মুক্তির সংগ্রাম হিসেবে চিহ্নিত করা না৷ গেলেও সিপাহী বিদ্রোহ ইংরেজের বিরুদ্ধে ভারতের প্রথম সংঘবদ্ধ সম্মিলিত প্রতিবাদ রজনীকান্ত এই ঘটনাকে বিপ্লব বলেই চিহুত করেছেন সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাসে বিপ্লবের যে বর্ণনা পাঁই-লেখকও সিপাহী বিদ্রোহকে সেই জাতীয় গুরুত্ব দান করেছেন ইংরেজের বর্ণনায় সিপাহী বিদ্রোহ ঠিক বিপ্লবের মহিমা লাভ করে নি। এই তথ্যটি ভিত্তি করেই রজনীকান্ত সমগ্র ইতিহীসটি লিপিবদ্ধ করেছেন.

"উপস্থিত বিপ্লবের স্থচনা একদিনে বা একসময়ে হয় নাই। একদিনে বা একসময়ে সমগ্র সিপাহীদলে অসন্তোষ বিরাগ বদ্ধমূল হইয়া উঠে নাই। নিরক্ষর জনসাধারণও একদিনে বা! একসময়ে কোম্পানির রাজত্বের উচ্ছেদের জন্য উত্তেজিত সিপাহিদিগের অনুবর্তী হয় নাই বিপ্লবের বীজ বন্ুপূর্বে রোপিত হইয়াছিল ধীরে ধীরে উহার অঙ্করোদগম শাখাপ্রশাখার বিস্তার ঘটিয়াছিল। শেষে যখন উহার বিষময় ফল প্রত্যক্ষীভূত হইল, তখন ইংরেজগণ তীব্র জালায় অধীর হইয়া পড়িলেন। তাহাদের ধৈর্য সহিষ্ণুতা অন্তহিত হইল ।”৫৩ [পৃঃ ১৫২ - ১৫৩]

রজনীকান্ত নিরপেক্ষ বিচার করেছেন --তার প্রমাণ গ্রন্থের অন্যত্রও রয়েছে পঞ্চম ভাগের বিজ্ঞাপনে তিনি বলেছেন, -

"ইংরেজ লেখ গণ যেমন আপনাদের চা আকুষ্ট হইয়া, সিপাহী সু যুদ্ধের ইতিহাস লিখিয়াছেন, উপস্থিত ইতিহাসে ইংরেজের সংগৃহীত উপাদানের প্রয়োগকালে, আমিও সেইরূপে আমাদের জাতীয় ভাবের দিকে দৃষ্টি রাখিয়াছি।

রজনীকান্ত আংশ্লিক সত্য উপলব সত্যকে পাশাপাশি রেখে পূর্ণসত্য উদ্ধারের চেষ্টা করেছিলেন গ্রন্থে জাতীয়ভাবের মুখরক্ষা করতে গিয়ে ইংরেজ যে আংশিক

৫৩. রজনীকান্ত গুণু--সিপাহী বিজ্রোহের ইতিহাস ৪র্থ ভাগ বেঙ্গল মেঙক্যাল লাইব্রেরী প্রকাশিত

১৫৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

সত্য প্রকাশ করেছে-_রজনীকান্ত ইংরেজইতিহাস আলোচনা কালে বারবার তা উপলব্ধি করেছেন সিপাহীযুদ্ধের প্রকৃতি নির্ণয় করে একটি নিরপেক্ষ ইতিহাস রচন। করা ইংরেজ বা ভারতীয় উভয়ের পক্ষেই অসম্ভব | মন্ুয্যচিত্রকর হলেই সিংহ চরিত্র লাঞ্চিত হবেই- সিংহের অভিমত তাই। রজনীকান্তের পরেও সিপাহীযুদ্ধের নিরপেক্ষ ইতিহাস রচিত হয়েছে, কিন্তু ইংরেজীতে লেখা হলেও ইংরেজ এঁতিহাসিকের সঙ্গে তার মিল নেই লঙ্গত কারণেই রজনীকান্তও জাতীয়ভাব রক্ষা করেই “সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস” রচনা করেছেন উনবিংশ শতাব্দীর স্বদেশপ্রেমের আবেগ রজনীকান্তের জীবনে প্রবলভাবে দেখা গেছে-_জাতীয়ভাব উদ্দীপনের জন্যই তিনি মুখ্যতঃ সাহিত্য ক্ষেত্রে আবিতূ্ত হন। তবু *সিপাহীযুদ্ধের ইতিহাসের” নিরপেক্ষতা লঙ্ঘন করেন নি লেখক।

এই হ্দীর্ঘ ইতিহাস রচনাকালে রঞ্জনীকান্তের শ্বদেশপ্রেম নানাভাবে প্রকাশ পেয়েছে। স্বাভাবিক মমত্ববোঁধ থেকেই লেখক সহানুভূতি প্রদর্শন করেছেন সিপাহী সপ্প্রদায়কে পরাধীনতার বেদনা লেখকচিত্তে গভীর ক্ষোভের সঞ্চার করেছে _বন্ছু বর্ণনায় তা উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছে

প্রথমভাগের স্থচন] বর্ণনায় রজনীকান্তের ক্ষুৰ ব্যথিত চিত্তের পরিচয় পেয়েছি প্রতিহাসিকের নিষ্ঠা দিয়ে অন্ধকৃপহত্যার ঘটনাটি তিনি সমর্থন করেছেন, কিন্তু পাঞ্াবকেশরী রণজিৎসিংহের পত্বী বিন্দনের নির্বাসনের বর্ণনায় তার দেশাত্মবোধ জাগ্রত হয়েছে,_

“পাঞ্জাব অবাতবিক্ষোভিত জলধির স্তায় ধীরভাবে স্বীয় অধিষ্ঠাত্রী দেবীর এই শোচনীয় নির্বাসন চাহিয়া দেখিল, একটি মাব্রও বারিবিন্দু তাহার নেত্র বিগলিত হইয়া দেহ অভিষিক্ত করিল না, ষে বহ্ছি ধীরে ধীরে শরীর দগ্ধ করিতেছিল, সময়ে তাহ'র একটি ক্ফুলিও উখিত হইয়া অনলব্রীড়! প্রদর্শন করিল না. পঞ্জাব ষোগনিদ্রাভিতৃত বিরাট পুরুষের ম্যায় জাড্যদোষে আচ্ছন্ন হইয়! রহিল কিন্তু এই জড়ত্ব প্রকৃত জড়ত্বের লক্ষণাক্রান্ত নহে, এই নির্জীবত্ব প্রকৃত নির্জীবত্বের পরিচায়ক নহে। ইহা গভীর ক্রোধ, গভীর আশঙ্কার গভীর নিস্তব্ধতা ।৮৫৪ [ পৃঃ ১৬, ১ম ভাগ]

এই অংশে রজনীকান্তের দূরদূশিতা, স্বদেশপ্রেম এতিহাঁসিক সত্য নির্ণয়ের আগ্রহ দেখা যার। সিপাহী বিদ্রোহের হুচন। প্রত্যক্ষ করেছিলেন লেখক প্রত্যেকটি ঘটনার মধ্যে। সেতারা, ঝাঁন্সী, নাগপুর, নিজামের রাজ্য, অযোধ্যা, বাংলা জুড়ে এই অত্যাচার প্রতিটি মানুষের মনে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। রজনীকান্ত অত্যাচারের

৫৪. রজনীকান্ত ৩গ--সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস ১মভাগ। হুচন। ১৮৮৬।

প্রবন্ধ ১৫৭

নিখুত বর্ণনা তার প্রতিক্রিয়ার আভাস দান করেছেন | সেতাঁরার দত্তক পুত্রকে অস্বীকার করে ডালহৌসী সেতারাঁর শাসনভার গ্রহণ করলেন,__রজনীকান্তের গভীর ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে এখানে,__

“সেই অবধি যোগরত ভারতীয় আর্যতাপসগণের গভীরজ্ঞানের চিহম্বরূপ ভারতমান্ঘ শ্রুতি স্মৃতির হৃদয়ে কুঠারাঘাত আরস্ত হয় এবং সেই অবধিই ইঙ্গলণীয় রাজপুরুষদিগের উত্ভাবিত দত্তকগ্রহণের অসিদ্ধতাসমর্থক আইনের বলে মিত্র রাঁজ্য- সমূহ তাঁরত মানচিত্রে লোহিতরেখায় অঙ্কিত হইতে থাকে ।% [পৃঃ ৬৫, ১ম ভাঁগ ]

ইংরেজের রাজ্যগ্রাসের নীতির ফলেই এই অসন্তোষ বিশেষভাবে দেখা দেয়। ম্যায়নীতির কগ্ঠরোধ করে এবং ক্রমাগত শক্তিপ্রয়োগ করে ইংরেজ চাতুরীও কৌশলের চূড়ান্ত সীমায় পৌছেছিল এবং ভারতীয় মাত্রই ইংরেজের এই কৌশলের স্বৰপ চিনেফেলেছে নিজামের রাজ্য জোর করে দখল করার প্রলঙ্গে লেখকের ক্ষোভ ছুঃখ উচ্ছ্বসিত হয়েছে,__

“দুরন্ত সাইলক অবলীলাক্রমে নিরীহস্বভীব আন্টোনিওর দেহ হইতে মাংস কাটিয়া লইল, একটি পোঁসিয়াও সময়ে উপস্থিত হইয়। স্তাঁয়ের সম্মীন রক্ষা করিতে সমর্থ হইল ন11” [ পৃঃ ৯৯, ১ম ভাগ]

ধরণের কাব্যোচ্ছাস ইতিহাসে বেমানান, কিন্ত রজনীকান্ত অনেক জায়গায় আবেগ দমন করেন নি। ইতিহাসের দৃষ্টান্ত উদ্ধার করে বিষয়বস্তকে ব্যাখ্যা করার প্রবণতাও রজনীকান্তের ছিল। এক একটি অধ্যায়ে রজনীকান্তের মুগ্ধ মনোভাব প্রকট হয়ে উঠেছে - অযোধ্যারাজ্য অধিকারের প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন,

“অযোধ্যা অধিকার ভারতক্ষেত্রে লর্ড ভালহৌসীর শেষ সর্বপ্রধান কীতি। জনৈক ইতিহাস লেখক ডালহৌসীর এই কার্য রাজ্যাধিকারের ওয়াটারলু বলিয়! উল্লেখ করিয়াছেন যদি আমাদের মত জিজ্ঞাস করা হয়, তাহা হইলে আমরা অয্লানবদনে উহা মহাঁপাতকের চরমসীমা ম্মিথফিন্ডের অগ্নিকাণ্ড বলিয়! নির্দেশ করিব মোহান্ধ মেরী নির্দোষ প্রোটেস্টান্টদিগকে জলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করিয়া! ধর্মের বিনিময়ে পাঁপরাশি উপার্জন করিয়াছিলেন, লর্ড ডালহৌসী নিরীহ ওয়াজিদ আলির হৃদয়ে তুষানল উৎপাদন করিয়া স্বনামের বিনিময়ে অপকীতি সঞ্চয় করিলেন |”

[ পৃঃ ১৩১, ১ম ভাগ]

রজনীকান্তের নির্ভীক সমালোচনার নিদর্শন হিসেবেই উদ্ধৃত অংশটিকে গণ্য করা যায়। সিপাহী বিদ্রোহের বর্ণন। গ্রন্থের দ্বিতীয় ভাঁগ থেকে শুরু হয়েছে। কিন্ত প্রথমভাগের হুচনায় সারা ভারতব্যাপী অত্যাচার অন্ায়ের নিদর্শন তুলে ধরেছেন লেখক | বাংলাদেশেও লাখেরাজ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হওয়ায় প্রজাদের

১৫৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে দেশপ্রেম

মধ্যে অসন্তোষ তীব্রতর হয়েছিল। রঙ্জনীকান্ত বাঙ্গালীর চরিত্র বর্ণনা করেছেন এখানে, “বাঙ্গালী চিরকাল রাঁজভক্ত, বাঞ্ালী চিরকাল বেদনাবোধহীন এবং বাঙ্গালী চিরকাল আপনাতে আপনি লুক্কাঁয়িত। তাহারা নীরবে এই দণ্ড গ্রহণ করিল, নীরবে সংহারক বিধির নিকট অবনত মস্তক হইল এবং নীরবে দীর্ঘনিশ্বীস ত্যাগ করিয়। পূর্বস্বতির সমুদয় চিহ্ন বিলুপ্ত করিয়া ফেলিল |” | পৃঃ ১৫৪, ১ম ভাগ.

বাঙ্গালীর চরিত্রে সাহস খীর্ষের স্ষুরণ ঘটেনি তখনও-_সত্য ইতিহাস গোঁপনের কোনে! চেষ্টাও করেননি লেখক কিন্তু এই আপাঁতঃ শান্তা ভয়ঙ্কর ঘটনারহ পূর্বাভীস মাত্র, সেকথাও লেখক বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। স্বভাবতই শীণ্তিপ্রিয়-নিরীহ হলেও পরিস্থিতি অনেক সময় মানুষের চরিত্রকে প্রভাবিত করে! বিপ্লবের পূর্বইতিহাস সংগ্রহ করলে দেখা যাঁবে, উন্মত্ততা কোনো মানুষের স্বাভাবিক চরিত্র লক্ষণ হতে পারে না। কিন্তু পারিপাখিক ঘটনাচক্র মীনুষের চরিত্রে অকল্পনীয় দৃঢ়তা এনে দিতে পারে রজনীকান্ত সমগ্র ভারতব্যাপী আন্দোলনের সুত্র অনুসন্ধান করেছেন বিচক্ষণতার সঙ্গে সিপাহীবিদ্রোহের যূলে শুধু সিপাহীসম্প্রদায়ের অসম্তোষই ঘে একমাত্র কারণ নয় সম্ভবতঃ রজনীকান্ত সেকথা প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন তিনি যুক্তি প্রদর্শন করেছেন,_-বিস্তৃত পট ইমিকার শিত্র অঙ্কন করেছেন,__সিপাহীবিদ্রোহের ইতিহাস রচনায় তিনি যথার্থ সাঁমধ্যেরই পরিচয় দিয়েছেন।

সিপাহীদের অসন্তোষ যে অনেকস্থলে ব্যর্থ হয়েছিল রজনীকান্ত তা স্বীকাঁর করেছেন। সার্থক অত্যুতথীনের মূলে যে সংগঠন পরিচাঁলন শক্তির প্রয়োজন হয়__ সিপাহীদ্দের পরিচালনার জন্ত সে জাতীয় কোন নেতার আঁবি9ীব হয় নি ফলে সিপাঁহীরা পরাঁজিত হয়েছিল বৃটিশ শক্তির কাছে রজনীকান্ত বলেছেন,__

“সিপাহীযুদ্ধের ইতিহাসের আলোচনা করিলে আর একটি বিষয় জানিতে পারা যায়। উত্তেজিত সিপাহীর। ইঙ্গরেজদিগের সহিত প্রকৃষ্ট পদ্ধতিক্রমে ধারাবাহিক রূপে যুদ্ধ করে নাই। কোন কোন যুদ্ধে তাহারা অসাধারণ পরাক্রম দেখাইয়াছে। সাহস বীরত্বের যথেচিত পরিচয় দিয়াছে, কিন্ত তাহার দেশের এক প্রান্ত হইতে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত, একজন সুদক্ষ সেনাপতির অধীনে পরিচাঁলিত হয় নাই ।*৫৫

[ পৃঃ ২৪১, দ্বিতীয় ভাগ | সিপাহীযুদ্ধের ঘটনাটি পলাশীর যুদ্ধের ঠিক একশ বছর পরের ঘটনা লেখক

৫৫. রজনীকান্ত ৩গ্ত---সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস ২য়ভাগ। ২য় সংক্করণ, ১৮৮৬1

প্রবন্ধ ১৫৯

এই গ্রন্থে বারবার পলাশী যুদ্ধের ঘটনাটি স্মরণ করেছেন নিতান্ত ক্ষোভের সঙ্গে। পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের যে হেতুটি লেখক অকুতোভয়ে ব্যক্ত করেছেন --তাতে ইংরেজ পক্ষকে নানা অভিধোগে যুক্ত কর! হয়েছে,__

"যেদিন পলাশীর প্রশস্ত ক্ষেত্রে শক্রর ষড়যন্ত্রে হতভাগ্য সিরাজউদ্দোলার অধঃপতন হয়, লর্ড ক্লাইভের চাতুরীতে যেদিন বাঙ্গালার ব্রিটিশ কোম্পানির আধিপত্য বদ্ধমূল হইয়া উঠে, তাহার পর একশত বৎসরের মধ্যে আর কখনও এইবূপ ভয়ঙ্কর ঘটনার আবিতাব হয় নাই, আর কখনও তরিটিশ শাসনের যূলভিত্তি এইরূপ কম্পিত হয় নাই, ইংরেজগণ আর কখনও এইরূপ বিপদাপন্ন হয়! মৃহূর্তে মুহূর্তে সংহারিণী শক্তির ভৈরবমৃতি দেখেন নাই 1৮ [ পৃঃ ১০৫-১০৬, ২য় ভাগ !

সিপাহীযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত যে সব বিখ্যাত ব)ক্তির নাম পাঁওয়া যায় লেখক তাদের হীইউবুত্ত নিষ্ঠার সঙ্গে ধর্ণনা করেছেন নানাসাহেব, তাত্যাটোঁপে, লক্ষমীবাজি, কুমারসিংহ, এদের সকলের বিস্তৃত বিবরণ থুব সতর্কতার সঙ্গে লিপিবদ্ধ হয়েছে কাঁউকেই তিনি স্বদেশপ্রেমিক নেতা হিসেবে চিত্রিত করেন নি। কিন্তু যে পরিস্থিতির চাপে শেষ পর্যন্ত এরা ইংরেজ বিরোধাঁ আন্দোলনের নেতৃত্বভার গ্রহণ করেছিলেন তার বর্ণনা অত্যন্ত যুক্তিনিষ্ঠ হয়েছে সিপাহীবিদ্রোহকে স্বাধীনতার সার্থক সংগ্রাম হিসেবে গ্রহণ করেননি লেখক-- স্থতরাং নানাসাহেব কিংবা লক্ষমীবাঈকেও স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা হিসেবে বর্ণনা করেননি এ'দের ইতিহাস পাঠ করলে দেখা যাবে ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষিত হয়নি বলেই রা ক্ষুন্ধ, উত্তেজিত হয়ে শেষ পর্যন্ত প্রাঁণত্যাগ করে সন্মানরক্ষা করেছিলেন নানাসাঁহেবের কার্যকলাপ পাঠ করলে জানা যাবে, সরকার তার বৃত্তি বন্ধ করা সত্বেও তিনি হংরাঁজআন্ুগত্য প্রদর্শন করছেন, কিন্ত শেষ পর্যন্ত লাঞ্ছনার চরম সীমায় উপনীত হয়ে তিনি আত্মসন্মান রক্ষায় উদ্যোগী হয়েছিলেন লক্ষ্মীবাঈ সম্পর্কেও তথ্য প্রচার করেছেন ; আধুনিক এতিহাসিকও বলেছেন,__

18179 98110 0182015602৪ 015 00125017205 95 01016119112 11) 01721906213 006 2:৫09690 90৮ ০01 8811 1২90 5261005 00 1)8%৩ 018560 ৪. 70810 101 10100516 210156.71052 2৮9119516 2৮1321)52 ৪150 0095 180 1050165 006 ৬15 01020 002 22101 01 01091051 1090169050. 0136 56059 €0 0000 2100 00 2, ০6101 ০5626 01015 ৪9 2150 6200 01 [81021 91021

0 811021,৫৬

৫৬, 3. 9, 070৬0170157 0111 £২61011101) 1 016 [00120 11000165) 091০0609, 1957, ৮--24

১৬০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

কিন্ত রজনীকান্ত এদের আত্মদানের মহিমাকে অনেক বড়ো করে দেখেছেন। বিদেশী শীসকের অত্যাচারই দের স্বদেশচিন্তা জাগিয়ে তোলে-_মৃত্যুকে তুচ্ছ করে এর জীবন দান করেছিলেন _ এই মহিমাটুকুই স্বদেশপ্রাণ রজনীকান্তকে মুগ্ধ করেছে। লক্ষ্মীবাি, কুমারসিংহ প্রভৃতির কাহিনী তিনি অগ্তাত্রও বর্ণনা করেছেন স্বদেশপ্রেমিক চরিত্রূপে একদিকে ইংরাজশাসনের ক্রটি বর্ণনায় তিনি অকপট অন্তদিকে এটি নিবারণে ধারা চেষ্টিত তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনে তিনি তৎপর, উভয়টিই রজনীকান্তের তীব্র স্বদেশচেতনারই স্বাক্ষর রজনীকান্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে সমালোচকের দায়িত্ব পালন করেছেন,__

“আপনার বৃত্তি বন্ধ হওয়াতে নানাঁসাহেব ব্রিটিশ গভর্নমেণ্টের পরম শক্র হন, বাঁনসী অধিকৃত হওয়াতে লক্মীবাঈর হৃদয়ে নিদারুণ ক্রোধাগ্নির সঞ্চার হয় এবং অযোধ্যা কোম্পানির মুন্থুক হওয়াতে বাাঁলার সিপাহিগণ দারুণ মর্মপীড়ায় অধীর হইয়! পড়ে ডাঁলহৌসী এইরূপে ধীরে ধীরে ভারতীয় ক্ষেত্রে ভবিষ্যবিপ্রবের বীজ বপন করেন, এবং অগৌরব অনুদারতায় ভারতসাম্্রাজ্য ক্রমে ভারাক্রান্ত করিয়া! তুলেন ।” [ পৃঃ ২২৬, ১ম ভাগ ]

রজনীকান্তের অনুমান সঙ্গত যুক্তিনিষ্ঠ। সিপাহীদের অভ্যুত্থানের ঘূলে আকম্মিকতা ছিল ন]৷-ঘটনাপরম্পরা এই বিপ্লব সম্ভাবিত হয়েছিল--লেখক সেকথাই বোঝাতে চেয়েছেন কিন্তু সিপাহীদের অসার্ক পরিকল্পনশবিহীন অভ্যর্থানের প্রসঙ্গেও রজনীকান্ত যথার্থ মন্তব্য করেছেন সিপাহীযুদ্ধ ভারতবর্ষের একটি অভিনব জাঁগরণ,--তা স্থপরিকল্পিত না হলেও একেবারে অহেতুক নয়। তিনি বলেছেন,

"তাহাদের স্বাধীনতাম্পৃহা থাকিতে পারে, দেশহিতৈষিতার জন্য একাগ্রতা থাকিতে পারে, স্বধর্মরক্ষার জন্য একপ্রাণতা থাকিতে পারে, কিন্তু তাহার! যে, অনেক সময়ে গভীর উত্তেজনায় সভ্যতার চিহ্ন সকল বিনষ্ট করিয়৷ ফেলিয়াছিল তদ্বিষয়ে মতদ্বৈধ নাই ।...কিন্ত কেবল ভাঁরতের ইতিহাঁসেই ভয়াবহ বিপ্লবের এইরূপ লোমহ্র্ষণ চিত্র পরিদৃষ্ট হয় না। এগুলি বিপ্লবের অবশ্থস্তাবী ফল ।৮৫৭ [ পৃঃ ১১৫, তৃতীয় ভাগ ]

রজনীকান্তের উদ্ধৃতি থেকে যেমন তাঁর বক্তব্য আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে-_ তীর র্নাভঙ্গিটিও তেমনি উপভোগ্য হয়েছে সিপাহীযুদ্ধের ইতিহাস তার বিশিষ্ট রচনা,_দেশপ্রেমিকতা ইতিহাঁসনিষ্ঠা রচনার সৌন্র্যসঞ্চার করেছে। সিপাহী বিদ্রোহের সুচনা, বিস্তার সিপাহীবিদ্রোহের ফলাফলও তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে বর্ণনা

৫৭* রামেন্দ্রনুনার তিবেরী সম্পাদিত সিপাহী বিজ্রোহের ইতিহাস তৃতীয় ভাগ ১৩১৭ সাল।

প্রবন্ধ ১৬১

করেছেন। কিন্তু উচ্দভবাসের আবেগে সত্যকে অতিরঞ্জিত না করে অসাধারণ সংযমেরই পরিচয় দিয়েছিলেন পরবর্তীকালের জাতীয় আন্দোলনে ধাঁর। নিবিচারে স্বেশপ্রেমিক বলে কীতিত হয়েছিলেন__সেই নানাসাহেব, লক্ষমীবাঈ এবং কুমারসিংহ সম্বন্ধে সম্পূর্ণ তথ্যাশ্রয়ী বর্ণনা দিয়েছিলেন তিনি লক্ষ্মীবাঈ সম্বন্ধে তীর অভিমত,_

“ইংরেজের অবিচার তাঁহাকে বিদ্রোহে প্রবতিত করিয়াছিল, তিনি তাহার দেশের জন্য প্রাণধারণ করিয়াছিলেন, দেশের জন্যই প্রীণত্যাগ করিয়াছেন রাণী প্রতিহিংসার আবেগে অন্ত্রধারণ করিতে পারেন, কিন্তু তান যে শক্তি দেখাইয়াছেন, তাহার প্রতিপক্ষগণ বা তাহার চরিত্র সমালোচকগণের মধ্যে কেহই সেই মহাশক্তির প্রতি অসম্মান প্রকাশ করেন নাই 1৮৫৮ [ ৫ম ভাগ, পৃঃ ৪২৫]

রক্জনীকল্বন্তের ইতিহাঁসনিষ্ঠার এমন অনেক দৃষ্টান্ত এখানে মিলবে | নানাঁসাহেব বা তাত্যাটোপে সম্বন্ধেও তীর বর্ণনা ইতিহাসানুগ এদের ব্যক্তিগত সংগ্রামসামঘ্য শক্তির প্রশংসা করলেও দের স্বদেশপ্রেমিক হলে বন্ধনী করেননি কোথাও যদিও, তাত্যাটোপের মৃত্যু মুহূর্তটি বর্ণনায় লেখক অত্যন্ত বিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন। কুমার সিংহের বিস্তৃত বিবরণটিতেও রজনীকান্ত যথাসাধ্য তথ্যান্থগ ছিলেন। এতে রজনীকান্তের রচনার সংযম গুণটিই প্রকাশ পেয়েছে কারণ স্বদেশশ্রীতি যদি সত্য প্রকাশের অন্তরায় হয়ে দীড়াত, তবে গ্রন্থটির যূল্য নির্ধারণে অস্থবিধার সৃষ্টি হোত। অথচ তথ্যনিষ্ঠতা৷ বজায় রেখেও রজনীকান্ত যে স্বদেশপ্রীতির পরিচয় দিয়েছিলেন এমন প্রমাণও অজতর রয়েছে

কোন কোন বিষয়ে লেখকের স্বদেশগ্রীতির উচ্ছাস ধরা পড়েছে যেমন, সিপাহীদের অসার্থক অভ্যুত্থানের বর্ণনা দানকালে লেখক যেন মর্মপীড়া অন্গভব করেছেন মর্পপীড়ার পরিচয় আছে সিরাজদ্দৌলার পরাজয়ের বর্ণনা উপলক্ষ্যে সিরাঁজদ্দৌলার পরাজয়ের ঠিক শতবর্ষ পরে সংঘটিত অত্থযতথানের অর্থ অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছেন লেখক-__-এখানেও তিনি খাঁনিকট] উচ্ছুসিত !

“১৭৫৭ অন্দে ২৩শে জুন পলাশীর বিস্তৃত আম্রকাননে মীরমদন মোহনলালের অধঃপতনের সহিত হতভাগ্য সিরাঁজউদ্দৌলার সৌভাগ্যরবি অন্তমিত হইয়াছিল ইরেজ দিনে আপনাদের বিস্তৃত সাম্রাজ্যের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন উহার শতবর্ষ পরের ২৩শে ভুন ইংরেজেরা ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্কানে নিরতিশয় ছুর্দশাগ্রন্ত ইয়েন” [ পৃঃ ৭৯, ৪র্থ ভাগ]

সিরাঁজদ্দৌলার অধঃপতনের সঙ্গে স্বদেশপ্রেমিক মীরমদন মোহনলালের ঘর্ডাগ্যের কথাটি যিনি স্মরণ করেছেন_তার দেশপ্রেম তর্কাতীত।

৫৮. রজনীকান্ত গুপ্ত, সিপাহী বুদ্ধের ইতিহাস €মভাগ। ১৯** সাল। ১১

১৬২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা লাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

বস্কিমচন্দ্রের তীব্র স্বদেশান্ুভৃতি বাংল প্রবন্ধে প্রকাশিত প্রচারিত হবার সঙ্গে সন্ধে স্বদেশচেতনা অবলম্বন করে বহু প্রাবন্ধিক রচনা প্রকাশ করছেন সে যুগের পত্রপত্রিকায় এজাতীয় প্রবন্ধ ছাপা হোত, সম্পীদকও উৎসাহ দান করতেন ধরণের প্রবন্ধে অভিনবত্ব বা বৈচিত্র্য ছিল না_কিন্ত এর আবেদন ছিল জাতীয় আন্দোলন তখন ঘনীভূত হয়েছে__রাষীয় স্বাধীনতা লাভের আকাক্ষাও ক্রমশঃ তীব্রতা লাভ করেছে। প্রথমযুগের প্রবন্ধে যে গসঞ্গ শুধুমাত্র ' ব্যক্তিমনে স্বদেশচেতনা সঞ্চারের উদ্দেশ্যেই অলোচিত হয়েছে ক্রমশঃ তার আবশ্যকতাও ফুরিয়ে গেছে। স্বদেশপ্রেমের আবেগাত্মক বক্তবাটি কাব্যে-নাটকে-উপন্াসে নানাভাবে পরিবেশিত হওয়ার ফলে প্রবন্ধে অভিনবত্ব স্থষ্টির কয়েকটি স্ুনিদ্দি্ই রীতি ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিল নাঁ। ব্যঙ্গে-বিদ্রপে, বূপকহ্ছিতে, সমালোচনার মাধামে কিংবা উপদেশাত্বক ভঙ্গিমায় স্বদেশচেতন। জাগানোর ধপদীরীতির প্রায় প্রত্যেকটিই বঙ্কিমচন্দ্র দ্বারাই অন্ুণলিত। পরবর্তী প্রাবন্ধিকদের রচনায় বঙ্ষিমপ্রজ্ঞার অভাব যেমন প্রকট- উদ্ভাবনীশক্তির দৈন্ধও তেমনি পরিশ্ফুট | স্তরাঁং উনবিংশ শতাব্দীর স্বদেশপ্রেমিক প্রাবন্ধিকগোষ্ঠীর পুরোভাগের উজ্জ্বল গ্রহ বঙ্কিমচন্দ্রই অন্যান নক্ষত্রকে আবৃত করে আছেন কয়েকজনের বিশিষ্টতা অবশ্যস্বীকার্য হলেও গ্রন্থীকারে এদের রচনা উনবিংশ শতাবীসীমায় প্রকাশিত হয় নি ;১--এদের মধ্যে আছেন ছিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, শিবনাথ শান্্রী স্বামী বিবেকানন্দ দ্বিজেন্দ্রনাথের একটি রচনা প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে পাঁরি-উনবিংশ শতাব্দীকালেই ঘে রচনাটি শ্রস্থাকারে প্রচারিত হয়েছিল ছ্বিজেন্দ্রনাঁথের স্বদেশচিন্তার স্বচ্ছপ্রবাহ রচনাটিতে ধরা পড়েছে

*“আর্ধামি এবং সাহেবিআনা” প্রবন্ধটিতে দ্বিজেন্দ্রনাথ সে যুগের তাবান্দোলণ সম্পর্কে বিচক্ষণ মতামত দিয়েছেন ঠাঁকুরবাড়ীর পরিবেশে স্বদেশীয়ানার ধারণাটি স্বতস্ফুর্তভাবেই বিকশিত হয়েছিল দ্িজেন্্রনাথের চরিত্রে রাজনাগাঁয়ণ বন প্রনুখ স্বদেশসাধকদের ঘনিষ্ঠ সান্সিধ্যে আসার ফলে দেশপ্রেমের উপলব্ধি তার চরিত্রের গভীরে প্রবেশ করেছিল। কিন্তু স্বকীয় চিন্তাধারার আদর্শ বজায় রেখেছিলেন তিনি। হিন্দুমেলার পৃষ্ঠপোঁধকতায় ঠাকুর পরিবারের অন্যান্যদের মতই দ্বিজেন্দ্রনাথং ছিলেন অগ্রণী আত্মস্থতিতে তিনি স্পষ্টভাবে সমালোচনা করেছেন দেশ' প্রেমিকদের,

“আমি চিরকাল স্বদেশী | বিদেশী পোষাক পরিচ্ছদ, ভাব ভাষা আমার চক্ষের বালাই রঙ্গলালই বল, আর রাজনারায়ণবাবুই বল, তাহাদের চ200106%510-এর বার আন বিলাতি, চার আন! দেশী ইংরেজ যেমন 7৪019 আমিও সেইরকম 15019 হব--এই ভাবটা ভীদের মনে খুব ছিল। বল দেখি, আমি তোমার মও

প্রবন্ধ ১৬৩

চ৪01০৮ হইব কেন? আমি আমার মত 7৪৮০ হইতে না পারিলে কি হইল 1৮৫৯

এই সমালোচন। দ্বিজেন্দ্রনাঁথের স্বদেশপ্রেমের বৈশিষ্ট্যই নির্দেশিত করে প্রখর আত্মম্বাতন্ত্য চেতনাই দ্বিজেন্্রনাথের স্বদেশভাঁবনার মূলে সক্রিয় ছিল। অবশ্য জাতীয় আত্মবুদ্ধি সম্পর্কে সচেতন করে তোলার অক্লান্ত প্রয়াস ছিল বস্কিমচন্দ্রের | বিলিতি 790006150-এর নিন্দা করে বঙ্কিমচন্দ্রই প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন দ্বিজেন্দ্রনাথ সেই আদর্শই অনুসরণ করেছিলেন ছিজেন্দ্রনাথের স্বদেশচিত্তার অন্যান্য বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, পাশ্চাত্ত্যসত্যতাঁর অভিমান বিবজিত প্রাচ্য ধতিহ্বেই তাঁর বিশ্বাস ছিল। ভারতীয়ত্ব এবং সনাতন ভারতীয়আদর্শ তিনি অনুসরণ করেছিলেন। দ্বিজেন্্রনীথের সম্পূর্ণ স্বদেশী সাহিত্য আমাদের আলোচনার অন্তভূক্ত নয় বলেই আমরা সে সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনায় প্রবেশ করতে পারি না। দ্বজেন্দ্রনাথ বলিষ্ঠ আঁদর্শবাঁদ নিয়েই স্বদেশপ্রেমমূলক প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন *আর্ধীমি এবং সাহেবি আনা” প্রবন্ধটি ১২৯৭ সালে চৈতন্য লাইব্রেরীর অধিবেশনে পঠিত হয়েছিল। ১৮৯০ খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত এই প্রবন্ধটিতে লেখক নব্যপন্থী স্বদেশপ্রেমী প্রাচীনপন্থী দেশসাঁধকদের ক্রটিগুলি বর্ণনা করেছেন-_-দ্িজেন্দ্রনাঁথ প্রবন্ধের নামকরণেই বিষয়বস্তর আভাস দিয়েছেন আর্ধামির অহঙ্কীর কিংবা সাহেবিআনার বড়াই__উভয়টিই প্রকৃত দেশচেতনার প্রতিবন্ধকতা হৃি করে। অন্তঃসারশুন্যতা৷ নিয়ে আর্ধামির আস্ফালন কখনও ফলপ্রসব করতে পারে না, অন্যদিকে সাহেবিআনাঁও আর্ধামির বিরোধিতা করে না। দ্বিজেন্দ্রনাথ যে- কোন অগভীর অনুভূতিকেই সমর্থন করেন নি। যে-কোন উদারনীতিই তিনি সমর্থনের পক্ষপাঁতী। দার্শনিক কবি হিসেবেও দ্বিজেন্ত্রনাথের পরিচয় আছে--তার দেশপ্রেমেও সেই ভাঁবদৃষ্টির প্রলেপ লেগে আছে। তার রচনার স্বচ্ছন্দতাঁয় উদারস্বদেশচিন্তা বেশ উপভোগ্য হয়েছে প্রবন্ধটিতে তিনি বলেছেন,

“কে বলে আর্ধামি একটা রোগ, বরং তাহা একটা গুরুতর রোগের মহৌষধ-_তা সাহেবিআন। রোগের মহৌষধ ।...সাহেবিআনার উঁষধ স্বতন্ত্র-_ইংরাজদিগের বাহা আকার প্রকার ভাবভঙ্গীর অন্ুকরণই সাহ্বিআনা, আর, ইংরাজদিগের বিজ্ঞান, শিল্প, কার্যনৈপুণ্য, কর্মনিষ্ঠতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, তেজস্বিতা, এইগুলির নাম উনবিংশ শতাব্দীর সভ্যতা এই উনবিংশ শতাব্দীর সভ্যতাই সাঁহেবিআনা রোগের মহৌষব,

৫৯. সাহিত্য সাধক চরিতমালা। খণড। দ্বিজেল্রনাথ ঠাকুর থেকে উদ্ধত

১৬৪ উনৰিংশ শতাব্দীর বাংল সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

তা ভিন্ন আর্ধামিও সাঁহেবিআনা রোগের ওঁষধ নহে, সাহেবিআনাও আর্য রোগের ওষধ নহে ।৮৬০

এই সমালোচনাটি উনবিংশ শতাবীর ত্বদেশচর্চার ক্ষেত্রে বিশেষ অন্ুধাবনযোগ্য বক্তব্য বলেই মনে হয়েছে আমাদের | বস্ততঃ বাংলাদেশের স্বদেশপ্রেমের জোয়ারে আর্যামির পুনরুজ্জীবন ঘটেছিল সঙ্গত কারণেই- কিন্তু বৃথা আক্ষালন হলে এই অহ্ভূতিটি তার স্থগভীর মহিমা হাঁরাবে-_ ধারণা ছিল লেখকের দ্বিজেন্দ্রনাঁথ আর্য মহিমা সচেতন হবার উপদেশ দিয়েছেন, |

“সত্য সত্যই যদি তোমরা আর্য হইতে চাঁও, তবে পূর্বে আমরা যাহা করিতাম তাহাই কর, লৌকিক এবং পৌরাণিক ভ্রান্তমতের বিরুদ্ধে জ্ঞান ধর্মের জয়ন্তস্ত প্রতিঠিত কর। তোমাদের মধ্যে রামমোহন রায়ের গ্ভাঁয় প্রকৃত আর্যদিগের জন্মগ্রহণ যেন নিগ্ষল না হয় আর্যামি করিলে কিছুই হইবে না। নিশ্চিত জানিও যে “আর্যামি একট সংক্রামক এবং মারাত্মক মহাব্যাধি, আর তাহার একমাত্র উষধ আর্ষোচিত কার্য ।” [এ]

দ্বিজেন্দ্রনাথের এই উপদেশ মৃল্যবাঁন কিন্তু এই ব্যাপক উদারদৃষ্টির অনুশীলন যে সহজসাধ্য নয়--তা সহজেই বোঝা যায়! সাঁহেবিআনার মধ্যেও গ্রহণযোগ্য অংশ আছে-_কিন্ত সেই সারবস্তর অনুসন্ধান সাধারণ লোকের বোধগম্য হয় না। আর্যামির বুথ দভ্তটুকু বাদ দিয়ে শাশ্বত ধর্মের অন্ুশীলনও সেকারণেই সহজসাধ্য নয়। কিন্ত দ্বিজেন্দ্রনাথ উদার স্বদেশধর্মের দীক্ষালাভ করেছিলেন-_-তার কাছে সাহেবি- আনার গ্রহণযোগ্য বিষয়টুকুও মর্যাদা পেয়েছে, অন্যদিকে আর্ধামিও আশ্ফালনশুন্ হলে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছিল বস্ততঃ উভয়ের মিলনই ছিল দিজেন্দ্রনাথের কাম্য | এই পূর্ণতার সাধনায় উৎসাহিত করেছেন দ্বিজেন্দ্রনাথ |

বঙ্কিমোত্তর প্রবন্ধ সাহিত্যে স্বদেশচর্চা চলেছিল পুরোমাত্রায়--য্দিও বৈচিত্র্য বা অভিনবত্ব ধরণের সাহিত্যে বিন্দুমাত্রও ছিল না। জন্মভূমির প্রতি প্রেমে ধারা আত্মহারা, তারাই রচনার মাধ্যমে সেই মনোভাবটি সর্বসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাঁন। এই প্রবণতা সব দেশে সব যুগেই ঘটে থাকে অধ্যাত্ম সাধকদের মত স্বদেশ সাধকরাও একে কর্তব্য বলেই মনে করেছেন গতানুগতিক আধ্যাত্মিক পদাবলীর সাময়িক প্রচার জনপ্রিয়তার মতই স্বদেশপ্রেমিকের লেখা প্রবন্ধও সে যুগে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এপব গ্রন্থের বক্তব্য আছে, অভিনবত্ব থাক বা না থাক সর্বোপরি প্রাবন্ধিকের ব্যক্তিগত উপলন্ধির আন্তরিকতার গুণেও রচনার

৬৯. দ্বিজেন্্রনাথ ঠাকুর--আর্ধামি সাহেবি আন1। প্রবন্ধমালা। ১৮৯

প্রবন্ধ ১৬৫

মূল্য বেড়েছে এজাতীয় কিছু প্রবন্ধগ্রস্থ আলোচনা করলে বঙ্কিমোত্তর প্রবন্ধ সাহিত্যে স্বদেশচর্চার সুত্রটি আবিষ্কার কর] সহজ হবে।

চন্দ্রনাথ বস্থর লেখা কঃ পন্থাঃ (১৮৯৮) কিংবা বর্তমান বাঙ্গালা সাহিত্যের প্রকৃতি ( ১৩০৬ ) গ্রন্থ ছুটিতেও গ্রন্থকর্তার শ্বদেশপ্রেমের পরিচয় পেয়েছি

বর্তমান বাংলা সাহিত্যের প্রকৃতি আঁবিফার করতে গিয়ে লেখক জাঁতিগঠনে সাহিত্যের দান সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। সাহিত্যের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে তার মতামত, “কোনে! জাতির মধ্যে সাহিত্য লোকসাধারণের যত উপযোগী হয় উহা ততই জাতীয় ভাবাক্রান্ত হইতে থাঁকে এবং যাঁহাদিগকে লইয়! সেই জাঁতি তাহাদেরও মনে এক জাতীয়তার ভাব তত উদ্রিক্ত পরিবধিত হইতে থাঁকে। সমগ্র জাতির মঙ্গলের শুতি দৃষ্টি রাখিয়া সাহিত্য রচনা করিলে সাহিত্যের সাহায্যে বড় বৃহৎ, বড় স্বন্মর, বড় পবিক্র কার্য করিতে পার] যাঁয়। সাহিত্য বড় সামীহ্য সামগ্রী নহে, বড় সহজ সামগ্রীও নহে। স্প্রণালীতে রচিত হইলে, উহা জাতি গড়িবার কার্ষে যেমন সহায়ত! করে, কুপ্রণালীতে রচিত হইলে জাতি ভাঙ্গিবাঁর পক্ষে তেমনই কার্যকর হয়, জাতি গঠনের তেমনিই প্রতিবন্ধকতা! করে ।...সে সাহিত্যের ফল কদর্য বিষময়, যে সাহিত্য জাতি ভাক্ষে বা জাতি গড়িতে দেয় না, তাহা জাতীন্ন সাহিত্যও নহে, প্রকৃত সাহিত্যও নহে ।৮৬৯

উদ্ধত আলোচন। থেকে সত্য স্পষ্ট হয় যে সাহিত্যের প্রকৃত উদ্দেশ্য নির্ণয়ে লেখক ভ্রান্ত ধারণার পরিচয় দিলেও স্বদেশপ্রেমের নিখুত পরিচয় অংশটিতে ব্যক্ত হয়েছে। সাহিত্যের উদ্দেশ্য জাতিগঠন, জাতীয় মতামত বঙ্কিমোত্তর প্রবন্ধ সাহিত্যে খুব অভাবিত কিছু নয়। স্বদেশপ্রেমের আলোকেই সাহিত্যবিচারের চেষ্টা করেছিলেন চন্দ্রনাথ বন্ধ | স্বদেশপ্রেমিক লেখকের ধারণাটিই তিনি প্রকাশ্যে ঘথোষণ] করেছেন

এই প্রবন্ধগ্রন্থের অন্তত্রও চন্দ্রনাথ বস্থ বাংল! সাহিতে) স্বদেশপ্রেমের প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন স্বদেশপ্রেম বাংলা সাহিত্যে অভিনবত্ব এনেছিল যদিও মাঁনবমনের গভীরতম ভাবের রূসরূপ স্বদেশচিত্তা হতে পারে না যুগোপযোগী একটি আবেগই বাংলা সাহিত্ প্রাধান্ত পেয়েছিল। সম্পর্কে চন্দ্রনাথ যে মতামত দিয়েছেন তাও লক্ষ্যণীয়

পস্বদেশানুরাগ, স্বজ্জনপ্রিয়তা, প্রীতি, ভক্তি, দয়া, পরোপকার-প্রিয়তা প্রসৃতি মানব হৃদয়ের উৎকৃই ভাব সকল আমাদের নাই কিন্তু আমাদের লেখা পড়িলে

৬১, চন্দ্রনাথ বহ-_বর্তসান বাংল! সাহিত্যের প্রকৃতি, পৃঃ ৫-৬, ১৩*৬

১৬৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

অপরে মনে করিতে পারে যে, আমাদের হ্যায় স্বদেশানুরাগী শ্ীতিভক্তি পরায়ণ, দয়ালু, পরোপকার প্রিয় পৃথিবীতে আর কোথাও হয় নাই এবং হইবে না। যখন ক্কুলে পড়িতাম তখনও কাহাকেও ভারতমাতার জন্য কাঁদিতে শুনি নাই, ভারতমাতীর, পূর্ব গৌরবের আশ্ষালনে আকাশ পাতাল বিকম্পিত-প্রতিধবনিত করিতে দেখি নাই কিছুদিন পরে দেখিলাম এক ব্যক্তি একটি কবিতা লিখিলেন এবং আর এক ব্যক্তি একটা মেলা বসাইলেন আর অমনি ভারতমণতাঁর জন্য কান্নার রোল উঠিল এবং তাহার উদ্ধারের উদ্দেশে বীরত্বের বিকট চিৎকার শুনা যাইতে লাগিল স্বদেশাঙ্ছরাগের যে একটা ভান আরম্ভ হইল, উহা দেখিয়া ভক্তি, প্রীতি প্রভৃতি হৃদয়ের অন্যান্য শ্রেষ্ঠতম ভাঁবগুলির ক্রমে ক্রমে এরূপ ভান কর হইতে লাগিল ।» [পৃঃ ৯১০, এ]

সাহিত্যে স্বদেশপ্রেমের স্থান সম্পর্কে এমন সুস্পষ্ট সমালোচন। অগ্ত্র পাই নি স্বদেশপ্রেম সগ্ত্ষ্ট অনুভূতি হলেও যুগ প্রয়োজনে তা এতখানি বিস্তারলাভ করেছিল যে উনবিংশ শতাব্দীতে তা সর্বসাধারণের বক্তব্য হয়েছে, _সাহিত্যকে প্রায় আচ্ছন্ন করে ফেলেছে বর্তমান গ্রন্থে প্রবন্ধকারের বিশ্লেষণ তার অন্যতম প্রমাণ গ্রন্থের অগ্থাত্র চন্দ্রনাথ স্বদেশপ্রসঙ্গহ ষে সাহিত্যে মুখ্যস্বানি পাঁওয়! উচিত তাঁর সমর্থনে বলেছেন,

“বস্ততঃ বর্তমান বাঙ্গাল। সাহিত্যের যে লক্ষণের কথ। কহিতেছি স্বদেশের লোক- সাঁধীরণের সম্বন্ধে অবজ্ঞা, অনাস্থা সহানুভূতি শুন্যতাই তাহার উৎপত্তির অন্যতম কারণ এবং প্রবলতার প্রধানহেতু। আমর] স্বদেশাহুরীগ বা স্বদেশবাসীর সহিত সহানুভূতির যতই আক্ষালন করি না কেন, প্ররুতপক্ষে দুইয়ের একটাও আমাদের নাই | বর্তমান বালগীল! সাহিত্য যে প্রকৃত সাহিত্য নহে, উহা যে জাতীয়ভাবে গঠিত অনুপ্রাণিত হইতেছে না, উহা! যে একতা সাধন পক্ষে সাহায্য না করিয়া আমাদের ভিতর বিরোঁধ বিদ্বেষ, বৈষম্য বাঁড়াইতেছে পার্থক্যের পরিপুষ্টি সাধন করিতেছে, ইহাই তাহার একটি প্রবল কারণ ।» [ পৃঃ ৩৯-৪০ |

স্বদেশগ্রীতি চন্দ্রনাথের সমগ্র দৃ্নিকে প্রভাবিত করেছিল তার প্রমাণ গ্রন্থটির সর্বত্র রয়েছে স্বদেশীভিমানী সমালোচক সাহিত্য বিচারের মানদণ্ড হিসেবে স্বদেশগ্রীতিকে গ্রহণ করেছিলেন বলেই স্বদেশপ্রসঙ্গের অধিকতর আলোচনার পক্ষপাতিত্ব দেখিয়েছেন অবশ্য বঙ্কিমচন্দ্রও জাতীয় আলোচনার স্থত্রপাত করে গেছেন বনু পুর্বেই বর্কিমচন্দ্রের পরোক্ষ ব' প্রত্যক্ষ প্রভাব সে যুগের প্রাবন্ধিকের ওপর গভীর ভাবে প্রতিফলিত-_বিশেষতঃ শ্বদেশপ্রেমী-প্রাবন্ধিক . স্বদেশপ্রেমিক বঙ্কিমচন্দ্রকেই অবচেতন মনে গুরুর পদে বরণ করেছিলেন

প্রবন্ধ ১৬৭

চন্দ্রনাথের মধ্যেও ভারতপ্রীতি লক্ষ্য করেছি “হিন্দু” নামে একটি পৃথক গবস্ধগ্রন্থ রচন1! করছিলেন তিনি ভারত্রীতি চন্দ্রনাথের চরিত্রে কত গভীর মোঁহসঞ্চার করেছিল তার প্রমাণ পাওয়া যাবে “কঃ পন্থা? গ্রস্থটিতে একশ্রেণীর পরাধীন ভারতবাসীর মনে আধ্যাত্মিক স্বাধীনতার সাত্বনা ছিল-_চন্দ্রনাথের মধ্যেও তা প্রবলভাবে বর্তমান ইউরোপের এঁহিকতা জীবন উপভোগের তৃষ্ণাকে তিনি নিন করেছেন প্রাচীন ভারতের ত্যাগের আদর্শে অনুপ্রাণিত লেখক আধ্যাত্মিক সাধনতার আস্ফালনও করেছেন ।--পাশ্চাত্য দেশের অবস্থার পর্যালোচনা করে তিনি বলেছেন,»

“লোক বলে তাহার! বড স্বাধীন হিন্দুদিগের স্তায় তাহার1 বিদেশীয় রাজার অধীন নয় বটে, তাহাদের আপনাদের রাজ। বা শাসক সম্প্রদায় তাহাদের চলাফেরা আহার বিহ্বপর আমোদ আহ্লাদ পড়াশুনা বেচাকেনা প্রভৃতি সম্বন্ধে তাহাদের ইচ্ছা স্চ্ছাগতির এতটুকু সঙ্কৌচ সাধন করিবার চেষ্টা বা উদ্যোগ করিলে তাহারা বিদ্রোহী র্যন্ত হহয়৷ উঠে সত্য। কিন্ত প্রকৃত স্বাধীনতা যাহাকে বলে তাহা তাহাদের নাই। যে পৃথিবীর মোহে মুগ্ধ, পাঁথিব বাসনায় বিহ্বল, তাহার আপনার উপর আপনার আধিপত্য নাই, সে নিজে নিজের রাজা নয়। সে নিতান্ত পরাধীন, পৃথিবীতে তাহার মত ক্রীতদাস আর নাই 1”৬২

জাতীয় আধ্যাত্মিক স্বাধীনতার আনন্দ নিয়ে লেখক উচ্ছ্বীস প্রদর্শন করেননি --এ ছিল তীর গভীর বিশ্বাস স্বদেশপ্রেমের এহিক পটভৃমিকাটি অগ্রাহ করে লেখক আধ্যাত্বিক জগতে প্রবেশ করে ষে ভারতশ্্রীতির পরিচয় দিয়েছেন নিঃসনেহে »৷ স্বদেশপ্রেমাত্মক প্রবন্ধের একটি নতুন বক্তব্য আধ্যাত্মিক স্বাধীনতার প্রসঙ্গ নিয়ে পরাধীন ভারতবাসীর গর্বের হেতু অন্ুসন্ধীন করলে দেখা যাবে হিন্দুর আধ্যাত্মিকতার প্রশংসায় "্ফীত হয়েই স্বদেশপ্রেমিক এই অহংকার গোপন করতে পারেন নি। যদিও আধ্যাত্বিক স্বাধীনতার মত অচিন্তনীয় নিতান্ত ব্যক্তিক উপলদ্ধি নিয়ে কোন জাতির মহংকার করার কারণ থাঁকতে পারে না। তবুও স্বদেশপ্রেমের আবেগ স্বাভাবিক চন্তাধারাকে কতখানি প্রভাবিত করে তার প্রমাণ এতে মিলবে

উনবিংশ শতাব্দীতে প্রকাশিত আরও কয়েকটি স্বদেশাত্মক প্রবন্ধগ্রন্থের আলোচনা কালেও কিছু কিছু নতুনত্ব দেখা যাঁয়। ১৮৯৫ খুষ্টান্দে প্রকাশিত জাতীয় একটি ্রস্থের নাম-_-“্জাতীয় সাহিত্যের আবশ্যকতা উন্নতি”। গ্রস্থকর্তা দেবেন্দ্রনাথ [খোপাধ্যায় সাবিত্রী লাইব্রেরীর অধিবেশনে এই প্রবন্ধটি পাঠ করেছিলেন, পরে ত! ্রন্বাকারে প্রকাশিত হয়

৬২, চঞ্ণাথ বহ--কঃ পস্থাঃ, প: ৫১৫২ ১৮৯৮

১৬৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

ব্ধিমচন্ত্রপ্রণৃখ প্রাবন্ধিকের শ্বদেশচর্চার মূলে জাতীয় চেতনা সৃষ্টির প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়| গ্রন্থকার বিষয়টির ওপর আলোকপাত করেছেন,

“যে জাতীয় ছুর্গতি কীর্তন করিতে চায়, সে পরোক্ষভাবে জাতীয় উন্নতি চায়-_ অভ্যুত্থান চায় | নচেৎ সে দুর্গতির কথা কীর্তন করিতে যাইবে কেন 1৬৩ [ পৃঃ ১]

সমগ্র স্বদেশাত্বক প্রবদ্ধরচনাঁর যূলে যে জাতীয়উন্নতি কামনা রয়েছে--এই সত্য উপলব্ধি তিনি ব্যক্ত করেছেন জাতীয়জাগরণ লগ্নে স্বদেশপ্রেমিক যখন সাহিত্যে দেশপ্রসঙ্গ উত্থাপন করেন- কোন না কোন উপায়ে স্বদেশপ্রেমে উদ্বোধিত করাই তার আত্তরকামনা বলে মনে করা উচিত। বঙ্কিমচন্দ্র, রাজনারায়ণ, বিদ্যাসাগর প্রমুখ অষ্টার জাতীয় রচনার যূল উদ্দেশ্য আমরা পূর্বেই আলোচনা করেছি, আমাদের সিদ্ধান্তই সেযুগের কোন কোন প্রাবন্ধিকের রচনায় ব্যক্ত হয়েছে। সেদিক থেকেই আলোচ্য গ্রন্থটির বক্তব্য স্মরণীয়। প্রবন্ধকার “দেবেন্দ্রনাথ বলেছেন,

আমি স্বীকার করি, আমাদিগের জাতীয় সাহিত্য এখন শক্ি সম্পদাংশে অনেক পশ্চাতে পড়িয়া! রহিয়াছে তাহা হইলেও কি আমর কবিকঙ্কণ ভারতচন্দ্ এবং মাইকেল হেমচন্দ্রের নামে স্পর্ধা করিতে পারি না? এবং রামমোহন, অক্ষয়- কুমার, বিদ্ভাসাঁগর, কালী প্রসন্ন, বঙ্কিমচন্দ্র, চন্দ্রনাথ, রজনীকান্ত দ্বিজেন্দ্রনাথ প্রভৃতির নামে আমাদের গৌরব পতাকা একবারের জন্যও আন্দোলিত করিতে সমর্থ হই না? অতএব বাঙ্গালি যদ্দি জাতীয় গৌরব রক্ষা করিতে ইচ্ছ। কর, তাহা হইলে কায়মনে জাতীর সাহিত্যের সেবায় প্রবৃত্ত হও [ পৃঃ ২২--২৩ ]

বক্তব্যে যে আবেদন রয়েছেতা দেশবালীকে স্বদেশাত্মক সাহিত্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলারই প্রচেষ্টা প্রকাশ্য কোনে! অধিবেশনে লেখক যখন মন্তব্য করেন-_ লেখকের দেশচেতন। সদিচ্ছার পরিচয়টিই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। জাতীয়সাহিত্য বহুল পরিমাণে রচিত হোক-_এ ছিল তার কামন' কিন্তু সেই সঙ্গে তিনি জাতীয়সাহিত্যের বহুল প্রচারও কামনা করেছেন- এখানে তাঁর নিজস্ব দেশভাবনাই প্রতিফলিত। এই গ্রন্থটিতে লেখক জাতীয়সাহিত্য, জাতীয়ভাব, জাতীয়গৌরব ইত্যাদির ব্যাখ্যা করেছেন জাতীয়সাহিত্যের সঙ্গেই জাতীয়ভাব মিশ্রিত থাকে বিজাতীয় ভাবপ্রবাহ থেকে স্বদেশকে রক্ষা করার আবেদন জানিয়েছেন লেখক | 19০:-এর একটি সার্থক উক্তি উদ্ধৃত করে লেখক প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে জাতীয় অভ্যুত্থান জাতীয় ভাবের অনুশীলন ছাড়া অসম্ভব | [9238 0991: সম্বন্ধে

৬৩. দেবেন্রনাথ মুখোপাধ্যায়, জাতীয় সাহিত্যের আবগ্তকতা উন্নতি,_-১৮৯৫

প্রবন্ধ ১৬৪ 31002 বলেছিলেন -9০ 961751016 আভ1০ 61১০ 00325 01 61) 10:0061706

01 006 121760855 ০৮০] 119.010081 102101615, 01726 16 5৪5 01361171909 5611005০215 6০0 5%:6600 আ101) 055 0105:598 06 01091 81005, 6156 5 0: 00617802 00086056.

লেখকও এই আদর্শ অনুসরণের উপদেশ দিয়েছেন জাতীয়ভাবের অনুশীলন ছাঁড়া জাতীয় অভ্যুত্থান অসম্ভব বলেই তিনি মনে করেন।

“আমাদিগের এই অধ্ঃপতিত পরপদদলিত জাতির উদ্ধার করিতে হইলে জাতীয় সাহিত্যের নিতান্ত প্রয়োজন | আমাঁদিগের এই বছ শতাব্দীর নিদ্রিত জাতির নিদ্রাতঙ্গ করাইতে হইলে, ইহাকে একট তেজে সম্পন্ন শক্তিসম্পন্ন জাতিরূপে পরিণত করিতে হইলে, জাতীয় সাহিত্যের যারপরনাই প্রয়োজন [পৃঃ ২,এ]

এই "অনুভব সেযুগের প্রতিটি দেশপ্রেমিকের অনুভব | স্বদেশপ্রাণতা জাতির মঙ্গলচিন্তায় অন্ুপ্রীণিত করেছে তাঁকে উনবিংশ শতাব্দীতে জাতীয়চেতন। সম্পাদনের বিচিত্র আয়োজন হয়েছিল--তবু একশ্রেণীর জাতীয় চেতন'শুন্য মানুষ লক্ষ্য করেছিলেন তিনি | বিজাতীয় ভাব-ভাষ।-আচারের অন্ধ অন্ুকরণকাঁরী এই সম্প্রদায় স্বদেশপ্রেমী লেখকের নিন্দার পাত্র হয়েছেন সঙ্গত কারণেই কখনও রূপকে, কখনও ব্যঙ্গে এদের চরিত্র মসীলিপ্ত | বঙ্গিমচন্দ্রই তীব্র লেখনী চালিয়েছিলেন এই সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে। দেবেন্দ্রনাথ আঁক্ষেপ করেছেন,__

"যে জাতীয়ভাবের অভাবে জাতীয় দুর্গতির অবসান হয় না,_যে জাতীয় ভাবের সম্বর্ধনা সমাদর ব্যতিরেকে জাতীয় অভ্যুত্থান কোন কালেই হইতে পারে না, নিতান্ত ছুঃখের বিষয় যে, সেই জাঁতীয়ভাব আমাদিগের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের ভিতর হইতে দিনদিনই অন্তহিত হইয়া যাইতেছে আমার কঠ যতদূরে উঠিতে পারে, ততদুরে উঠাইয়া আমি বলিতেছি,__এই বিজাতীয় ভাবপ্রবাঁহ হইতে আমাদিগের দেশ সমাজকে রক্ষা করিতে হইলে--আমাদিগের মধ্যে জাতীয়তার উদ্বোধন আরধনা আরও করিতে হইলে, আমাদিগের পক্ষে জাতীয় সাহিত্যের আলোচন। যারপরনাই আবশ্যক |” [ পৃঃ ২১২২]

জাতীয় সাহিত্যের আলোচনার মাধ্যমে জাতীয়তাবৃদ্ধির উপীঁয়টি তিনি জনসাধারণের অন্ুশীলনযোগ্য বলে মনে করেন

বিজাতীয় ভাবান্গসরণকে তিনি আন্তরিকভাবে নিন্দা করেন-_-এই মনেভাবটি স্বদেশপ্রেমিকের বাংলা ভাষ! অনুশীলনের প্রতি অধিক মনোযোগী হওয়ার উপদেশ দিয়েছেন লেখক ভাবাবেগে পুত হয়ে তিনি বলেছেন, __

“আমি বলি বাঙ্গালীর নাঁম পর্যন্ত বিলুপ্ত হউক তাহাতে আমার আপত্তি নাই,

১৭৬ উনবিংশ শতাবীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

কিন্তু বাঙ্গালীর ভাষা ইংরাজি হউক, তাহাতে আমার ঘোর আপত্তি আছে।"* বাঙালীর ভাষ! ইংরাজি হইয়] যাঁউক, তাহাতে আমার একান্ত আক্ষেপ আছে ।”

ভাঁরতবাঁপীর পক্ষে সর্বাপেক্ষা অপদার্ধতার পরিচয় যদি কিছু থাকে, তবে তাহা এই যে, ভারতবাসী ইংরাজের লোহিত বর্ণ পতাকার নিয়ে আপনাদিগের হৃদয়ের চিন্তা মনের ভাব পর্যন্তও উৎসর্গ করিয়াছেন ভারতবাসী বহির্দশ্যে হিন্দু হইলেও অন্তরে ইংরাঁজ হইয়াছেন কেন হইয়াছেন? তাঁহার উত্তরে আমি বলি, ইংরাজি সাহিত্যের অবিশ্রান্ত আলোঁচনাই তাহার প্রধান কারণ ।” [পৃঃ ৫৫]

দেবেন্দ্রনাথের এই স্বদেশগ্রীতি বঙ্কিমচন্দ্রের দেশপ্রীতিকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। “লোকরহস্তের" ব্যঙ্গাত্মক রচনায় ইংরাজী আচারব্যবহারে অভ্যস্ত বাঙ্গালী সম্প্রদায় সম্পর্কে বঙ্কিমচন্দ্র তার মনৌভাব ব্যক্ত করেছিলেন এখানে দেবেন্দ্রনাথ অবশ্য অকপট সত্য ব্যক্ত করেছেন ইংরাজী ভাঁষা সাহিত্যের আত্যন্তিক অুরাগের নিন্দা করেছেন তিনি। স্বদেশপ্রেমের প্রথম উচ্ছাস মাতৃভাষাপ্রীতিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল জাতীয় আন্দোলনের চরম লগ্গেও দেশপ্রীতি মাতৃভাষাকে অবলম্বন করেই ফেনায়িত হয়েছে

উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম পর্ব থেকেই দেশপ্রেমমূলক প্রবন্ধ সাহিত্য রচিত হয়েছে --দেবেন্দ্রনাথ শুধু সেই সাহিত্য সম্পর্কে তাঁর মতামত ব্যক্ত করেছেন | দেশপ্রেমমূলক সাহিত্য বহুল পরিমাণে প্রচার করার বাসন। নিয়ে বন্তৃতাকারে বিষয়টি তিনি প্রকাশ্য সভায় আলোচনা করেন জাতীয় জাগরণের মুহূর্তে জাতীয় সাহিত্যের আলোচনা! কুফল প্রসব করবে, _এই ধারণাটি যথার্থ | সম্ভবতঃ এই গ্রন্থটিতে তিনি তীর ব্যক্তিগত মতটিকেই প্রচার করতে চেয়েছিলেন সে কারণেই তীর বক্তব্যে দশসেবকের আদর্শ প্রতিফলিত হয়েছে

এই শতাব্দীর প্রবন্ধ গ্রন্থে ্বদেশভাবনার যে অজ পরিচয় পেয়েছি--হরিমোহন বন্দোপাধ্যায় রচিত 'ভারতকাহিনী' গ্রন্থটিতেও তার প্রমাণ মিলবে ১৩০৭ সালে গ্রন্থটি প্রকাঁশিত হয় দেশপ্রেম অবলম্বন করেই গ্রন্থকার “ভারত কাহিনী” গ্রন্থটির অবতারণ করেছেন গ্রন্থটির আগাগোড়া লেখকের দেশপ্রীতির স্বাক্ষর বহন করছে "জননী জন্মসূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী” উদ্ধৃতি দিয়ে লেখক ভারতমাতার পাঁদপদ্ে গ্রন্থটি অর্পণ করেছেন বিজ্বাপনে লেখকের উদ্দেশ্ট ব্যক্ত হয়েছে,_-

"দেশের বিছ্ধৎ সমাজে একজন লেখক কিংবা গ্রস্থকর্তা বলিয়া পরিচিত হইবার উচ্চকাজ্ষা আমাদের নাই এবং তদ্বিষয়ে সামর্থ্যের নিতান্ত অভাব, তবে এই পুস্তক, প্রণয়ন করিবার আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য এই ষে ইহাতে যে সমস্ত বিষয় লিখিত হইল, আমাদের বঙ্গীয় কৃতবিদ্ধগণ তাহার আলোচন1 করুন এবং স্বদেশের উন্নতি

প্রবন্ধ ১৪১

সাধন করিতে ষত্ববীন হউন ইহা! পাঁঠ করিয়া যদি একজনমাত্র বঙ্গীয় কৃতবি ছযেরও মন আকৃষ্ট হয়, তাহাদের একজনও স্বজা;ত এবং স্বধর্মের প্রতি শ্রন্ধাসম্পন্ন হইয়া দুঃখিনী জন্মত্মির সেবা করিতে কৃতসঙ্কল্প হয়েন, তাহা হইলেই আমাদের সমস্ত শ্রম সফল হইবে

এই মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই লেখক গ্রন্থ রচনায় মনোনিবেশ করেছেন ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দলিল প্রস্তুত করেছেন লেখক এবং জাতীয়ত্ব রক্ষার কেংব] বৃদ্ধির উপায়ও বর্ণনা করেছেন গ্রন্থটি চিন্তানীল রচনা দেশের লোকের চৈতগ্ঘ সম্পাদনের ইচ্ছ! থেকেহ প্রবন্ধের জন্ম হয়েছে- সুতরাং দেশপ্রেমই রচনাটির সূল অবলম্বন | তাছাড়া গতান্ুগতিকভাবে বিচার না করে লেখক যুক্তিসঙ্গত কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছেন বিদেশীপ্রভাব স্বীকার করার মনোবৃত্তি এদেশীয় লোকের চরিত্রে রয়েছে-যাঁকে আমর! জাতীয়চেতনার অভাব বলব লেখক বলেছেন,_-“আমাদের দেশে বিদেশীয় দ্রব্যাদির এত বহুল প্রচার যে কেবলমাত্র তাহা সম্ভা এবং স্বন্দর কিংবা কার্ষোপযোগী বলিয়াই হইয়াছে, তাহা নহে, আমাদের মনুষ্যত্ব এবং স্বদেশহিতৈষীতার অভাবও তাহার একটা প্রধান কারণ ।”৬৪

বঙ্কিমচন্দ্র হিন্দুর ভাক্র্য নিয়ে উচ্ছাস প্রসঙ্গে আমাদের চীনাপুতুল প্রীতির শিন্দা করেছিলেন এখানে লেখক সরাসরি অভিযুক্ত করেছেন। দেশচেতনার অভাবই আমাদের ব্যবহারে প্রতিধ্বনিত। এতদিন প্রকাশ্যে একথা অনেকেই বলেননি-_লেখক অকপটে তা ব্যক্ত করেছেন। ভারতবাসী দেশসচেতন নয় বলেই অতি সহজে তার! প্রভাবিত হয়--জাতীয়চেতন৷ থাকলেই তারা আত্ম- মর্যাদা রক্ষায় সচেষ্ট হতে পারত | এই সমালোচনাকে পরোক্ষভাবে চরিত্রশৌধনের চেষ্টা বলা যেতে পারে। লেখক বিশেষভাবে যা অনুভব করেছিলেন- তাই ব্যক্ত করেছেন,

আমাদের আচরণ এইরূপ যে আমাদের নিজের দেশ পক, হাজুক মরুক-_ রসাতলে যাঁউক, তাহাতে ক্ষতি নাই, বিলাতী জিনিষে যে ছুই এক পয়সা বাঁচে হখ এবং সৌখিনীর প্রবৃত্তি পুর্ণমাত্রায় পরিতৃপ্ত হয়, তাহার লোভ সম্বরণ করিতে আমরা সমর্থ নহি।” [পৃঃ ২৭ এ]

কোন জাতির দেশচেতন৷ দৈনন্দিন আচীর ব্যবহার মনোভাবের মধ্যেই প্রতি- কলিত হয়। ইংরেজ বা রোমান জাতির স্বদেশহিতৈধিতা৷ জগদিখ্যাত কিন্ত তার যূলকারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে সেখানে শুধু সমষ্টিগত্ত ভাবেই নয় প্রতিটি

৬৪. হরিমোহন বন্দোপাধ্যায়, ভারত কাহিনী, পৃঃ ২৬, ১৩০৭ সাল।

১৭২ উনবিংশ শতার্বীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

ব্যক্তির আচরপেই তা প্রকাশিত হয়। দেশপ্রেম একটি স্বতঃস্ফুর্ত অভিব্যক্তি, দেশপ্রেমী সাড়ম্বরে তা প্রচার করেন না; তার ব্যক্তিচরিত্রের মূলেই এই ভাবটি সক্রিয় থাকে লেখকের অভিযোগ আমাদের চরিজ্রের দীনতা সম্পর্কে। ইংরাজ চরিত্রের আঁদর্শটি লেখক হুদয়ঙ্গম করেছেন কিন্তু ছঃখপ্রকাশ করেছেন ইংরেজের চারিত্রিক দৃঢ়তা স্বদেশপ্রেম আমাদের চরিত্রে নেই বলে। শিক্ষিত সম্প্রদায় গ্রহণযোগ্য সদৃগুণের দ্বারা প্রভাবিত না হযে ব্যর্থ অনুকরণ করেছেন অবাঞ্ছিত গুণাবলীর লেখকের অভিযোগ সেযুগের স্বদেশপ্রেমী মাত্রেই অভিযোগ একটি বলিষ্ঠ জাতিগঠনের স্বপ্ন ধারা দেখছেন তীদের পক্ষে জাতীয় মনোবেদনা প্রকাঁশ করাই স্বাভাবিক লেখক বলেছেন, “আজকাল আমাদের কৃতবিদ্ধদের মধ্যে এই প্রবৃত্তি কিছু বিশেষ বলবতী দেখা যাঁয় বটে, কিন্তু আমরা বলি কচি আমাঁদের যে কিছু হয় না কিবা হইল না, তাহাতে আমরাই সম্পূর্ণ দোষী আমাদের আসলে কোন পামর্থ্য নাই, চেষ্টা নাই, উদ্যম নাই, স্বদেশহিতৈষণ। নাই, আত্মসম্মীনজ্ঞান নাই, নিজ ছুর্দশায় ঘ্বণা নাই, ভাল হইবর ইচ্ছা নাই, স্বাধীন হইয়া জীবনযাত্র! নির্বাহ করিব তাহার ঘত্ব নাই। মোট কথা আদৌ আমাদের স্বজাতীয়ত৷ নাই, স্বজাতিপ্রিয়তা নাই অথবা প্রকৃত যোগ্যতা শাই, তাহাতেই আমাদের এরূপ দুর্দশা, তাহাতেই এমন রাঁজার অধীনস্থ হইয়া, সেই রাজচরিত্রে এমন বিপুল উদ্যমশীলতা, সাহস এবং স্বজাতীয়তার জলন্ত এবং জীবন্ত দৃষ্টান্ত সন্দর্শন করিয়াও আমরা কিছু করিয়া উঠিতে পারিতেছি না। [এঁ। পৃঃ ৪৬]

প্রকাশ্যে এই জাতীয় দোৌষকীর্তনের মূলে লেখকের গভীর স্বদেশচিন্তাই প্রকাশ পেয়েছে গতানুগতিক হলেও লেখকের বক্তব্যে যথেষ্ট দৃঢ়তা আন্তরিকতা রয়েছে। শিক্ষিত লোকের তৃষ্টিতঙ্গিকেও লেখক পঙ্গালোচনা করেছেন কারণ অশিক্ষিত দেশবাসীর মনে ধারা সত্যিকারের দেশপ্রীতি সঞ্চার করতে পারেন তারাই পথভ্রান্ত হলে আক্ষেপের কারণ ঘটে গ্রন্থে লেখকের স্থগভীর দেশচিস্তার পরিচয় নানাভাবে প্রকাশ পেয়েছে স্বদেশপ্রীতি স্বাধীন মনোবৃত্তি জাগিয়ে তোলে-_কিস্ত অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের ওপরেই যথার্থ রাঁজনৈতিক স্বাধীনতা নির্ভর করে। স্বদেশপ্রেমের ভাবাত্রক আলোচনাই সাহিত্যে প্রধানভাবে স্থান পেম্পেছে, কিন্ত “ভারতকাহিনী” রচয়িতা হরিমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় গঠনাত্মক পরিকল্পনার স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বদেশপ্রীতির সঙ্গে সঙ্গে দেশের যথার্থ পরিস্থিতি সম্বন্ষেও সচেতন করে তোলার দায়িত্ব পালন করেছেন লেখক,-_

“এক্ষণে দেখ, তুমি তোমার পুত্রকে বি, পাশ করিয়াছে বলিয়! ক্লষিকার্ষে নিযুক্ত করিতে সংকোচ করিয় থাক, মনে কর সেটা নীচ কর্ম, কিন্তু বিলাতে স্বয়ং

প্রবন্ধ ১৭৩

মাটপুত্রও সে কার্যে নিযুক্ত হইতে লজ্জা বোধ করেন না। সাঁধেকি ইংলগ্ড ইংলগ ইয়াছে, আর আমাদের আজকালকার ভারত পথের কাকঙ্গালিনী হইয়া উদরান্নের নয পরমুখাঁপেক্ষিনী হইয়া রহিয়াছে? হে ভারতবাসি ভ্রাতগণ তোমাদিগকে বেণী কি বলিব, তোমার্দিগকে ধিকৃ, শত ধিকৃ, তোমাদের বিদ্যাতেও ধিক্‌, বুদ্ধিমত্তাতেও ধিকৃ, মনুম্যাত্বেও ধিকৃ।» [ পৃঃ ৫৩]

কোন স্বাধীন দেশের মনোৌবৃত্তির সঙ্গে পরাধীন ভারতবাঁসীর মনোভাবের তুলনা [লক আলোচনাকালে লেখক যে সত্য উদঘাটন করছেন-_-অন্ক কোথাও আলোচনা পাওয়া যায়নি। অংশে লেখক জাতীয় মনোভাবের মূলে যে অহুদাঁর দৃষ্টিতঙ্দি রয়েছে তারই সার্থক সমালোচনা করছেন শিক্ষালাভ করেও এই মনোভাব দূর করা যায় নি-এটা আরও বেশী আক্ষেপের কথা। ভারতবর্ষের বর্তমান পরাধীনতার মূলে জাতীয় চরিত্রের কলঙ্কই মুখ্যতঃ দায়ী কথা বিশেষভাবে আলোচনার দিন এসেছে জাতীয় আন্দোলন যখন ধীরে ধীরে রূপ লাভ করছে-_ আত্মদর্শনের জন্যও অন্ততঃ জাতীয় আত্মসমালোচনার প্রয়োজন রয়েছে শুধু ভাবাত্মক আলোচনার সাহায্যে বিষয়টি স্পষ্ট কর! সম্ভব নয়-__লেখক এখানে যথার্থ গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছেন

বাঙ্গালীর চাঁকুরীপ্রীতিকেও তিনি জাতীয় মনোভাববিরোধী বলে মনে করেছেন | স্বাধীনতার স্বপ্নকে একটি বাস্তবভূমিতে স্থাপন করার বাসন নিয়ে লেখক বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন দীর্ঘ আলোচনায় তিনি চাকুরীজীবী সম্প্রদায়ের মনোবিশ্লেষণ করেছেন- পর্বদীই যে সে বিচার যথার্থ হয়েছে-_-এমন বলা যায় না। চাকুরীপ্রাণ বাঞ্গালীর নিন্দা করে লেখক প্রমাণ করেছেন চাকুরী স্বদেশপ্রীতির অন্তরায় স্বরূপ

"বাস্তবিক চাকুরী কার্যটা যে ঘোর দাসত্ব ইহাতে আজীবন নিযুক্ত থাকিলে মহুষ্যের সর্বপ্রকার মহৎ এবং উচ্চপ্রবৃত্তি নিয়ে যে একেবারে ডুবিয়া যাঁয় তাহাতে কিছুমাত্র সন্দেহ নাই। তোমার সাহস উৎসাহ বুদ্ধি বিগ্কা। এবং স্বদেশহিতৈষীতা খুব আছে, কিন্তু তুমি দিনকতক চাকুরী কর সে সমস্ত গুণ একটি একটি করিয়া ক্রমশঃ অদৃশ্য হইয়া যাইবে, তুমি মনুষ্য হইয়া একটি জড়যন্ত্রে পরিণত হইবে | চাকুরীতে হাজার তোমার পদোন্নতি হউক, পরসা হউক, মান সম্ভ্রম হউক, তোমার দ্বারা আর দেশের কোন উপকার হইবে না” [ পৃঃ ১৯৫ ]

এই বক্তব্যের সত্যতা সন্দেহাতীত | তবে এর ব্যতিক্রম ঘটেছে শুধু প্রতিভাবানদের পক্ষেই সে যুগের বুদ্ধিজীবী লেখকগোষ্ঠী চাকুরীজীবী ছিলেন কিন্তু চাকুরী এ'দের

দশবধোধ বিনষ্ট করে নি। এ'রাই সমগ্র জাতির জাতীয়চৈতন্য জাগিয়েছিলেন

১৭৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

শক্তিশালী রচনার মাধ্যমে | হেমচন্দ্র-নবীনচন্ত্র বা বঙ্কিমচন্দ্রের নাম ব্যাপারে স্মরণযোগ্য তবে এদের কেউই আন্দোলনের নেতৃত্ব করেন নি,_-এ বিষয়টিহ লেখকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল তিনি ছুটি দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন রমেশচন্দ্র এবং স্বরেন্্রনাথ উভয়েই বিলাত থেকে সিভিলিয়ান পরীক্ষান্তে দেশে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন লেখকের বক্তখ্য,--

"সথরেন্্রনাথের জীবন পর্যালোচনা করিয়া দেখ। বাংলা অথব। সমগ্র ভারতবর্ষের সৌভাগ্য যে প্রথমাবস্থাতেই তাহার চাকুরী গিয়াছিল। কেন না, স্বাধীন হইয়া বিগত ২৫৩০ বৎসর মধ্যে তিনি দেশের হিতের জন্য যে পরিমাণ কার্য করিয়াছেন, তাহার ভুলন। হয় নাহ-'.যে অসামান্ত বিছ্যাবুদ্ধি এবং সাহস উদ্ভোগ কর্তৃক তাহার সচ্চরিত্র সুশোভিত চাকুরী করিলে সে সমস্ত চাঁপিয়া থাঁকিত, যেমন রমেশচন্দ্রে সম্পর্কে ঘটিয়াছে। | পৃঃ ১৯৫ এবং ১৯৭

রমেশচন্দ্র আন্দোলনের নেতৃত্ব করেননি বলেহ লেখকের আক্ষেপ কিন্তু রমেশচন্দ্রের অবদানও বড় কম ছিল না। দেশাত্ম বোধের আবেগে প্রাণিত হয়ে তিনি যে এ্রতিহাসিক উপন্তাঁস রচনা করেছিলেন- সক্রিয় আন্দোলনের নেতৃত্বদানের চেয়ে ৩| কম গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করাযায় না। লেখক আন্দোলন পরিচালনাকেহ শিক্ষিত বাঙ্গালীর প্রধান বর্তব্য ৭লে মনে করেছিলেন বলেই এই ভ্রান্ত ধারণ জন্ম নিয়েছিল

গ্রন্থে লেখক আরও কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন যা পরোক্ষভাবে আমাদের দেশচেতনা বাড়িয়ে তুলবে আত্মনির্ভর স্বদেশপ্রাণ জাতি বিদেশী দ্রব্যের প্রতি অন্ুরক্তি প্রকাশ করে না। স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম শুরে বিদেশীদ্রব্য বর্জনের আন্দোলন অত্যন্ত প্রবল হয়েছিল--সেদিক থেকে হরিমোহনের আলোচনাঁটি অত্যন্ত মূল্যবান। লেখক একেই বলেছেন দেশহিতৈষিতা, -

*বিলাতী জিনিষ ব্যবহারে আমাদের যে ভয়ানক আগ্রহ, তাহা! কম হওয়। উচিত।**মোট কথা দেশজাত অথব] দেশীয় দোকানে বিক্রীত দ্রব্যাদি ব্যবহার করা সম্বন্ধে আমাদের জাতি সাধারণের একটু জিদ থাকা উচিত। তাহাহ প্রত দেশহিতৈধিতা। কিন্তু দুরদৃষ্টবশতঃ আামাদের ব্যবহার ইহার সম্পূর্ণ বিপরীত... দেশীয় জিনিষ, হাজার সম্ভা এবং মজবুত হউক, তাহা দ্বণিত। একট কোন নূতন জিনিষ খরিদ হইয়া আসিলে, ইহা বিলাতি বলিয়া! আমরা গৌরব প্রকাঁশ করিয়া থাকি, দেশী শুনিলেই শ্রোতার বিমর্ষ হইয়া পড়েন [ পৃঃ ২৩০ |

আমাদের চরিত্রের এই লক্ষ্যণীয় ক্রটির সম্বন্ধে ইতিপূর্বে এমন স্বচ্ছ আলোচনা চোখে পড়ে নি। স্বাধীনতা আন্দোলনের মূলমন্ত্র বিচক্ষণ চিন্তাঁবিদের মনে বহু পূর্বেই জেগেছিল, আলোচনা থেকে সেটুকুই প্রমাণিত হয়। বিদেশীয়ানাযর অভ্যস্ত

প্রবন্ধ ১৭৫

সহজেই প্রভাবিত কোনজাতির চরিত্র থেকে জাতীয় দোষ ক্রটি অপসারিত করা খুব সহঙ্গ নয়__কিস্ত সাহিত্যিক সমাজবিদ তাঁদের সাধ্যমত এ. প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন _-“ভারত কাহিনী" গ্রন্থটি তাঁর প্রমাঁণ। এই গ্রন্থটিতে সমাজচিস্তার গুরুতর কথাও লেখক ব্যক্ত করেছেন ইংরেজ রাজত্বের অবসান আসন্ন, এমন ইঙ্ছিত তার রচনায় কোথাও কোথাও ধরা পড়েছে সংঘবদ্ধ স্বাধীনতাপ্রিয় জাতি একদিন স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়বে, এমন আভাসও তিনি দিয়েছেন লেখকের উপদেশ,

“অতএব আমর! বলি, তুমিও দল বাঁধিতে শিখ, যদি দেশের উন্নতি করিতে চাহ, পতিতা জন্মভূমিকে আবার উঠাইতে চাহ, তাহা হইলে দল বীধ। দল ব্াধিবার জলন্ত স্্টাত্তও তুমি আজকাল নিজ সন্মুখেই পাইয়াছ, থুষ্ঠীয় উনবিংশ শতাব্দীর দেদীপ্যমান সভ্যতা তোমাকে তাহা সহ রকমে শিক্ষা দিতেছে, তোমার রাজা ইংরাজ আজ তোমাকে তাহা শিক্ষা দিবার জন্যই তোমার ঘরে বর্তমান, যদি খুষ্টায় উনবিংশ শতাব্দির গ্ায় এমন স্থসময়ে এবং ইংরেজ হেন কৃতী অথচ প্রজাবৎমল এবং দয়াময় রাজার অধীনস্থ হইয়া! তুমি আপনার কিছু করিয়া লইতে না পার, তবে আশর তোমার আশা কোথায় 1৮ [ পৃঃ ২৯৭--২৯৮ ]

এই সংঘবদ্ধতার প্রত্যক্ষ আহ্বান প্রবন্ধে হ্বকৌশলে ব্যক্ত করেছেন লেখক

১৯০০ খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত এই প্রবন্ধ গ্রন্থটিতে উনবিংশ-বিংশ শতাব্দীর মানসিক চিন্তাধারার ষথার্থ অগ্রগতির সংবাদ রয়েছে গ্রন্থকারের নির্ভীকতা পূর্বের প্রবন্ধে প্রকাশিত হতে পাঁরে নি--তাঁর বনু কারণ বর্তমান হরিমোঁহন যে সংঘবদ্ধতার কথা প্রকাণ্ঠে বলেছেন-_স্বাধীনতাকামীবাঙ্গীলী সংগঠনের মাধ্যমে দেশোদ্ধারের চেষ্টা ইতিপূর্বেই করে চলেছিল--লে সংবাদ খুববেশী গোপনও ছিল না। বঙ্কিমচন্দ্রের “আনন্দমঠে যে ইঙ্গিত ছিল-_বাস্তবজীবনে তার রূপায়ণের জন্য একটা সচেষ্টতা জাতির চরিত্রে প্রত্যক্ষ করেছিলেন লেখক। তাই এঁক্য, পুনরুখান স্বাধীনতার সংগ্রামের আহবান প্রবন্ধে ধবনিত হয়েছে প্রকাশ্যভাবে | গ্রন্থটির বিশেষত্বও এখানে তবে স্বদেশপ্রাণ লেখক আশাবাদ পোষণ করেছেন আবার জাতীয় চরিত্রের দৈম্যও তাঁকে পীড়া দ্রিয়েছে মহৎ আদর্শের দ্বারা অনুপ্রাণিত লেখক আ্যানি বেশান্তের জীবনাদর্শের কথা শুনিয়েছেন,

“তিনি স্ত্রী, আর আমরা পুরুষ, তিনি পরদেশ এবং পরজাতির জন্য নিজের প্রাণ বিসর্জন করিতে প্রস্তত, আঁর আমরা পুরুষ, শৃহে গৃহিণীর অঞ্চলের নিধি হইয়া, বাহিরে মুনীবের নিমকের চাঁকর হইয়া, পর প্রসাদলব অন্ন বন্ত্রের বারা, ছার পাঁশবিক জীবন অতিবাহিত করিয়া, আপনার ধর্মকর্ম পরিত্যাগ পূর্বক মেটিয়াফুস সাজিয়া, ফুলুট

১৭৬ উনবিংশ শতাবীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

হারযোনিয়ম বাজাইয়া এবং থিয়েটর সনীর্শন করিয়া কালহরণ করিতেছি হায় ভারত এবং হায় ভারতবাসির দেশহিতৈষীতা। | পৃঃ ৩০২]

সমালোচনা করে জাতীয় চরিত্র সংশোধনের চেষ্টা স্বদেশপ্রেমিকের রচনায় দেখ যায়। হরিমোহনও সবদেশপ্রেমিক দেশের সর্বাঙ্ীণ উন্নতিই তাঁর কাম্য_স্বদেশের উন্নতিতে তিনি আনলিত-_স্বদেশবাসির অধঃপতন তিনি ম্্যান্তিক ছুঃখিত। সুদীর্ঘ এই প্রবন্ধ গ্রন্থে হরিমোহন সমসাময়িক বন্ধদেশ বাঙ্গালীর জাগরণের যে তথ্য পরিবেশনের চেষ্টা করেছেন ভধ্যের দিঁক থেকে তা মূল্যবাঁন। সামাজিক দুর্নীতি বাঙ্গালীর স্বভাবগত দুর্বলতার সমালোচনা করে লেখক গরোক্ষভীবে জাতীয় অনুরাগ বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেছেন

চতুর্থ অধ্যায় কাব্য

ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত-_

যুগচিহ্কের সমস্ত লক্ষণ নিয়েই উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলা কবিতার চর্চা চলেছে। সাহিত্যের আসরে এই কাব্যকবিতাই ছিল এতদিন একচ্ছত্র রাজত্বের অধিকারিণী,_-ধর্মতত্ব থেকে শুরু করে নির্ভেজাল উপদেশামৃত কিংবা গভীরতম প্রেমতব্ব থেকে চুল হৃদয়াবেগের রহম্যকথাকে প্রকাশ করে কাব্য তখনও স্বচ্ছন্দগতি তটিনী--কলোচ্ছাসে মুখর | রামায়ণ-মহাভারত-বৈষ্ণবপদাঁবলী--মঙ্গলকাব্যের সমস্ত গভীর সত্য, অগভীর চিত্রাঙ্কনে সাবলীল বাংলা কবিতার প্রকাশক্ষমতায় আমরা নিঃসন্দেহ আঁলংকারিক যে কোন রস প্রকাশেরও কোন রকম বাধাই ছিল না। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন মধ্যযুগের কখিকুলের সমস্ত হৃদয়াবেগ ধারণ করে বাংলা কাব্যসস্তার এতদিন রসিক জনকে তৃপ্তি দিয়ে এসেছে

কিন্ত উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম পাদে সৌন্দর্যসমৃদ্ধ কাব্যলক্ষমীর দৈন্যদশা আমাদের দৃষ্টি এড়াঁয়নি। বিষয়বস্তর একঘেয়েমি, বক্তবেযর পৌনঃপুনিকতা, কল্পনার গতানু- গতিকতায় আমর! প্রায় বিরক্ত আর প্রতিভাদীপ্ত কবির বদলে কাব্যব্যবসায়ী কবিওয়ালাদের সদর্প পদচারণায় কাব্যলক্্মীর মুমূযু মৃহ্র্ত প্রায় সমাগত এমন সময়ে দৃষ্টিতপ্ীর নতুনত্ব নিয়ে, বক্তব্যের বৈশিষ্ট্য নিয়ে জশ্বরগুপ্তের আবির্ভাব কবিওয়ালাদের উত্তরসাধকরূপে এর পরিচিতি থাকলেও বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে এর বিশেষ বক্তব্য কিংবা বক্তব্যের নতুনত্ব মনকে ন। ভাবিয়ে পারে না। ইংরেজ রাজত্বের প্রতিষ্ঠাযুগে জন্মেছিলেন বলেই প্রাচীন ভাবধারার সঙ্গে নবলব রাজনৈতিক চেতনাকেও ইনি জন্মস্থত্রেই লাভ করেছেন পূর্বেই বলেছি রাজনৈতিক চেতনাশূন্য যে অতীত ইতিহাসের মধ্যে আমাদের সাহিত্যের শৈশব কৈশোর কেটেছে উনবিংশ শতাব্দীতে তার অস্তিত্ব ভুলে থাকার কোন উপায়ই ছিল না। যে স্বদেশচেতনা এতদিন অত্যন্ত স্বাভাবিক কারণেই নিরুদ্ধগতি স্তব্ধবাক হয়েছিল-_ইংরাঁজী শিক্ষাীক্ষার আলোকে নতুন ভাবে তাকেই সাহিত্যের উপজীব্য করে তুলতে আমরা প্রায় বাধ্যই হয়েছিলুম বিশেষ করে সংবাদপত্রসংশ্লিষ্ট কোন সাহিত্যসেবীর পক্ষে স্বদেশচেতনা বিস্মৃত হয়ে কোন কিছু রচনা করা প্রায় অসম্ভবই ছিল। শ্বরগুপ্তের সাংবাদিক সততায় জাতীয়- চেতনার উন্মেষ ঘটেছিলো! আর তাঁর কবিতায় সেই চেতনাটিই প্রায় একাত্মরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে দৃষ্টিতঙ্জির এই বিশেষত্ব বাংল। কাব্যের ক্ষেত্রে প্রথম প্রয়োগ:

১২

১৭৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

করেছেন ঈশ্বরগুপ্তই --তার স্বদেশপ্রেমসম্পকিত কবিতাবলীর আলোচনায় তাঁকে অন্ততঃ এক্ষেত্রে প্রথম আগন্তক হিসেবে মেনে নিতে হবে

যে বিশুদ্ধ সৌন্দর্যবোধের প্রেরণার কাব্য-সাহিত্যের জন্ম-_-দেশপ্রেম বা জাতীয় চেতনাকে সেই অলৌকিক, রহস্যময়, অনির্বচনীয় প্রেরণা বলে দাবি কর! যায় না। সাহিত্যের মধ্যে দেশপ্রেম আসে সাময়িকতাঁর দাবি নিয়ে আবার সাময়িকতার দাঁবিটুকুই একমাত্র সম্বল বলেই সাহিত্যে দেশপ্রেমের স্থান সঙ্কুচিত। সাহিত্যবিচাঁরে একে খুব বড়ো মর্ধাদীও দেওয়া হয় না। বাংল! সাহিত্যে স্বদেশগেম স্থান লাভ করেছে ঈশ্বরগুপ্তের যুগেই | বিশুদ্ধ সৌন্দর্যবোধের প্রেরণায়, অলৌকিক রহশ্যবোঁধের হাতছানিতে নিশ্চিন্তমনে কলম ধর! সে যুগে প্রায় অসস্ভাবিত ছিল। রাঁজপোঁষকতায়, ধর্মচেতনায় আত্মসমাহিত হয়ে কিংবা জনগণের কাছে সংগীতাকারে কাব্য পরিবেশনের সেই নিরবকাশ স্থযোগের পথ রুদ্ধ হয়েছিলো বহুদিন রাঁজনৈতিক চেতনার ক্ষীণতনন প্রভাবও সেদিন কবিচিত্তকে আলোড়িত করে নি, কারণ জনসাধারণের জীবনের সঙ্গে শাসক সম্প্রদায়ের কোনরকম ভাঁববিনিময়ের প্রয়োজনও ছিল না। শাসক শাঁসিতের জীবনে কোন যোগাযোগ না থাকলেও অস্থবিধা ছিল না, কিন্ত শাসকের প্রতি নিষ্ঠা আনুগত্যের অভাঁববোঁধ যে জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, বিপ্লব 'ঘটাতে পারে বিষয়ে কোন মানুষেরই জ্ঞানীভাব ছিল না তাই নিবিচার আঙ্গত্য, অপরিসীম রাঁজপ্রীতি প্রদর্শন করেই সে যুগের সাধারণ মানুষ অভ্যন্তজীবন নির্বাহ করেছে। মধ্যযুগের কাব্যসম্ভার রাঁজাচ্ছগত্যে আনত ন] হলেও রাঁজপ্রসঙ্গে অপরিসীম নিম্পৃহ মনোভদ্গী প্রদর্শন করেছে কিন্তু উনবিংশ শতাব্দীর সাংবাদিক ঈশ্বরপুপ্ত যখন কাব্যরচনায় প্রবৃত্ত হলেন তখন তিনি পূর্ণমাত্রায় দেশসচেতন | বাংলা কাঁব্যেও এই দেশসচেতনতার পরিচয় দান প্রসঙ্গে কেণি সমালোচক মন্তব্য করেছেন,__

১৮৩০ হইতে ১৮৯৬ পর্যন্ত পর্বের বাংল। কাব্যকে জাতীয় আন্দোলনের কাব্য বলা যাইতে পারে যুগের কাব্যের লক্ষ্য অনির্দেশ্য সৌন্দর্যলোকে নয়, জাতীয় আদর্শ প্রচারের গুরুদার়িত্ব অর্পশ করিয়া এই যুগের কাব্যের লক্ষ্যকে তিন্নমুখী কর! হইয়াছে যে কাব্য লঘুপক্ষ বিস্তার করিয়া শূন্ভাভিমুখী হইবে সেই কাব্যের ক্ষন্ধে গুরু বন্তভার ঝুলাইয়া দিয়া তাহাকে বাস্তব জগতের দিকে টানিয়া রাখা হইয়াছে।

[ আধুনিক বাংল! কাব্যের ভূমিকা-_তাকক্পদ মুখোপাধ্যায় ]

ঈশ্বরগুণ্ডের যুগে সমাজের প্রাচীন জীবনধারার বনিয়াদ অবিস্তস্ত বিপর্যস্ত রাঁজ।

প্রজ! যুগে মুখোমুখি এসে দঈীড়িয়েছে। জীবনযাপনের কোন ক্ষেত্রেই রাজা প্রজার সম্বন্ধ ভুলে থাকলে চলে না। বিশেষতঃ নগরজীবনে শাসক শাসিত

কাব্য ১৭৪

অনেক ক্ষেত্রেই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে--সভাসমিতি, আইন সম্বন্ধে জনচেতনা সংগ্রহ, শিক্ষার্দীক্ষাক্ষেত্রের সর্বত্রই শীসক জনগণের মুখোমুখি এসে দীড়িয়েছে বিশেষতঃ সংবাঁদপত্রই দেশের সর্বত্র শীসক শাসিতের সম্পর্ক সম্বন্ধে সচেতন করে দিয়েছে মানুষকে | পল্লীগ্রাম সম্পর্কে একথা সত্য না হলেও নগরকেন্দ্রিক জীবনে এই সম্বন্ধকে নিষ্পৃহ ভঙ্গিমায় ভুলে থাকার কোন উপাঁয় ছিল না ঈশ্বরগুপ্ত নগরজীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন বলেই তৎকালীন রাজনীতিতে তার সব্র্িয় চেতনা যুক্ত করেছিলেন। সাংবাদিকের দায়িত্বের সঙ্গে কবিমনের ভাবনাকে যুক্ত করতে তিনি দ্বিধা করেন নি।

প্তরাঁং প্রাচীন মধ্যযুগে ভাবমগ্ন সৌন্দর্যতৃষ্টিতেই কবিরা আত্মনিমগ্ন | কাব্যসস্তাবেক্স অতুলনীয় রস আস্ব(দনে রসিকমন তৃপ্ত ঈশ্বরগুপ্তের পরেও কবিচিত্বের একান্ত নিবিড় অন্ত্ৃষ্টির সাক্ষাৎ আমর! পেয়েছি__কিস্তু জীবন, বিশেষ করে নগর- জীবন সচেতনতা থেকে তা মুক্ত নয়। ৰাঁংল। কাব্যের অতি গাঢ় রহস্য প্রকাশের মধ্যেও কবিচিত্তের সেই চণ্ডীদাসী নিমগ্রতা কিংবা মুকুন্দরামী নিস্পৃহতা নেই। সমাজ রাষ্্ট সচেতনতার ছায়াপাত কবিচিত্তকে দেশ-কাল নিরপেক্ষ নিদ্বন্দ-নিশ্চি্ত মনে কাব্যরচনার অবসর দেয় নি। ঈশ্বরগুঞ্ত অবশ্য রাষ্ট্রচেতনার বেদীমূলে কবিচিত্তের কোমল স্বপ্রবিহীরীসত্তাকে বলি দিয়েছেন অথবা কোঁন কোন সমালোচকের মতে তাঁর মধ্যে স্বপ্নময় কবিসত্তা অলৌকিক কাব্যক্ষমতার অভাব ছিল। তবুও, কাব্যের ক্ষেত্রে নাগরজীবনচেতনার তীক্ষ অন্ুভূতিরসে তার কবিতা আঁকীর্ণ। বিশুদ্ধ দেশপ্রেমের কাব্য হিসেবে তীর সমগ্র কাব্যকে বিচার করা যায় না কিন্ত সাহিত্যের ক্ষেত্রে, কাব্যের ক্ষেত্রে প্রথম রাষ্ট্রসচেতন দেশপ্রেমী কবি হিসেবেই ঈশ্বরগুপ্তের কাব্যবিচার করব। প্রসঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্রের ঈশ্বরগুপ্ত সম্পকিত আলোচনার কিয়দংশ উদ্ধার করি

প্ধীহার1 বিশেষ প্রতিভাশালী, তাহার প্রায় আপন সময়ের অগ্রবর্তী ঈশ্বরগুপ্ুও আপন সময়ের অগ্রবর্তী ছিলেন। আমরা ছুই একটি উদাহরণ দিই--প্রথম, দেশ- বাৎসল্য পরমধর্ম, কিন্তু ধর্ম অনেকদিন হইতে বাংলাঁদেশে ছিল না। কখনও ছিল কি না, বলিতে পারি না। এখন ইহা সাধারণ হইতেছে, দেখিয়া আনন্দ হয়, কিন্তু ঈশ্বরপগুপ্তের সময়ে, ইহা! বড়ই বিরল ছিল। তখনকার লোকে আপন আপন সমাজ, আপন আপন জাতি, বা আপন আপন ধর্মকে ভালবাসিত, হহা৷ দেশবাৎসল্যের ন্যায় উদার নহে অনেক নিকৃষ্ট | মহীত্বা রামমোহন রায়ের কথা ছাড়িয়া দিয়া রামগোপাল ঘোষ হরিশ্চন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে বাঙ্গালা দেশে দেশবাৎসল্যের প্রথম নেত! বলা যাইতে পারে ঈশ্বরগুপ্তের দেশবাৎসল্য তীহাদিগেরও কিঞ্চিৎ পূর্বগামী ঈশ্বরগুপ্তের

১৮০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

দেশবাংসল্য তীহাদের মত ফলপ্রদ না হইয়াও তাহাদের অপেক্ষা তীত্র বিশুদ্ধ 1৮১ বঙ্কিমচন্দ্রের মন্তব্য থেকে এটুকু বোবা যায় যে ঈশ্বরগুপ্তের দেশবাঁংসল্য সে যুগের পটভূমিকায় প্রথম উচ্চারিত একটি বলিষ্ঠ অনুভূতি | -ঈশ্বরগুপ্ের সক্ষে সে যুগের সক্রিয় রাজনীতিবিদদের তুলনা প্রসঙ্গেও একথা মেনে নেওয়। হয়েছে যে, ঈশ্বরগুপ্ত তার এই নতুনতম অনুভূতির ক্ষেত্রে এবং কাব্যে তা প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রথম যুগের সমালোচকও একথা মেনে নিয়েছেন বিনা দ্বিধায় “ঈশ্বরপ্তপ্তই প্রথম সমাজ, রাষ্ট্রসমস্যা এবং কাব্যকে একক্বত্রে গ্রথিত করেন, কিন্ত বাহত ১৮৯৬ শ্রীষ্টাব্দের পর হইতে কাব্য রসপ্রধাঁন হইল |” [ এ, তারাপদ মুখোপাধ্যায় ] কখনও কখনও এই চেতনাপ্রকাশে তিনি তীত্র বলিষ্ঠ মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন তার দেশপ্রেমযূলক কবিতাঁগুলির মধ্যে নিবিড় আতন্তরিকতারও অভাব ছিল না। গতান্থগতিক ধারাবাহিক বাংল! কাব্যের ক্ষেত্রে ঈশ্বরগুপ্ডের আবিভাবকে একদিকে যেমন অভিনব বলে মনে হয়, অন্যদিকে তার এই অভিনব মনোভঙ্গিমাকে স্বাভাবিক বলে বিশ্লেষণ করা যায় সহজেই। এজন্য ঈশ্বরগুপ্ডের আবিতভাবকে অনেকেই অবশ্যস্তাবী অমোঘ ৰলে মেনে নিয়েছেন বাংলা সাহিত্যে ঈশ্বরগুপ্তের কবিকীতিকে অন্ততঃ এই একটি ক্ষেত্রে অভাবনীয় বলে মনে হয়। ঈশ্বরগুপ্তের দেশপ্রীতিকে সহজাত বলে মেনে না নিলেও সাহিত্যপ্রীতিকে সহজাত বলেই স্বীকার করতে হয়। দেশপ্রেমকে মাঁনবহৃদয়ের গভীরতম অনুভূতির সঙ্গে এক করে দেখার উপায় নেই--কারণ দেশপ্রেমের অনুভূতির সঙ্গে আত্মিক ছন্দ বা গ্রীতির কোন স্বাভাবিক সংযোগ নেই মানবচিত্তের আশা-নৈরাশ্ব, প্রেম, ভালবাসার নিগুঢ় আনন্দবেদনাঁকে তাই গভীরতর উপলব্ধির সঙ্গে সহজেই মিশিয়ে দিতে পারি-_কিন্তু দেশপ্রেমকে ঠিক ততখানি অন্তর্লান আঁলোড়নসমর্থ অনুভূতির মর্যাদা দিতে পারি না। তবে দেশপ্রেম বা বিশ্বপ্রেম মানবচিত্তের চিন্তাভাবনার একটি প্রধান অংশ হয়ে উঠতে পারে কোন কোন ক্ষেত্রে। যেমন ঈশ্বরভক্তি কিংবা অধ্যাত্সচেতনাও-_ জীবনের অপরাপর অনুভূতিকে তুচ্ছ করে সম্পূর্ণরূপে বৃহৎ ভূমিকা নিয়ে, প্রচণ্ড আবেদন নিয়ে উপস্থিত হতে পারে ; এবং তা হয়েছেও ।- বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে

১। বহ্িম রচনাবলী সমগ্র সাহিতা। গশ্বরগুপ্তের জীবনচরিত কবিত্ব। সাহিত্য সংগদ, কলিকাত। ১৩৭১।

কাব্য ১৮১

বিশুদ্ধ দেশপ্রেম কিংবা অধ্যাত্সপ্রেমও সাহিত্যের বিষয় হয়েছে তবু মনে হয়, হৃদয়ের নিগৃঢ় রহস্যানুভৃতি, সৌন্দর্যপ্রীতির সঙ্গে দেশপ্রেমচেতনা কখনই সাহিত্যের ক্ষেত্রে সমান স্থান দাবি করতে পারে না। খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করে প্রসঙ্গে একজন সমালোচক বলেছেন, 78601061500, 0: 109৬2 0: ০0185) 15 2. 01021702 00801059062), 08100]5 1595 21591517500 11061956015 6220 006 2তে 09] 11550118601) 0৫6 002 952250175 200 092055 0899106, 200 010০ 2001:09,01) ০1 ৫6861), 01 606 10০ ০0: 01002) 105610,--

9০92009010025 16 15 610০, 66 102 0: 500105 68155 010 ও. 502102 2,00 8108056 0012008£101921016 01098.0661,

ঈশ্বরগ্ুপ্তের স্বদেশপ্রেমচেতনার বিশুদ্ধতার কতকগুলি নিঃসংশয় প্রমাণ আছে। সাহিত্যতৃষ্টির সহজাতশক্তি নিয়ে আবিভূতি হয়ে তিনি সাহিত্যপ্রীতিরও পরিচয় দিয়েছেন নানাভাবে | মাতৃভাষার নিখাদ স্পর্শমণি দিয়ে তিনি শ্লথ অলংকার- পীড়িতা বাঁংলাভাষাকে সঞ্জীবিত করবার প্রয়াস করেছেন। তাই ঈশ্বরগুপ্তের বাংলা “খাঁটি বাংলা” এবং ঈশ্বরগুপ্তও "খাটি বাঙ্গালী” কবি বলে পরিচিত। তৎকালীন যুগে মাতৃভাষার মর্যাদায় বিশ্বাসী ঈশ্বরগুণ্ডের দেশচেতনার স্প&তর প্রথম প্রমাণ এটি তাছাড়া সাহেবীয়ানার প্রতি মোহ, স্বেচ্ছাচারের প্রতি দ্বিধাহীন কটাক্ষপাঁতে তিনি সর্বদাই মুখর আপাতঃদৃষ্টিতে সামাজিক দোষ-ত্রটির প্রতি ইঞ্জিতময় এই কবিতাগুলিকে নিছক সাংবাদিক মনোবৃত্তিসঞাত বলেই মনে হতে পারে কিন্তু সামগ্রিক বিচারকালে এই সামাজিক কবিতাগুলির উৎসযূলে অপ্রচ্ছন্ন এখং স্পষ্ট দেশচেতনাও চোখে পড়ে বৈকি তাছাড়া প্রাচীন কাব্যাঙ্গিকের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েও ঈশ্বরগুপ্ত সহৃদয়চিত্তে তাঁর পূর্বস্থরীদের জীবন-বৃত্ান্ত প্রকাশের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তাঁকে কবিওয়ালাদের শেষ প্রতিনিধি বলে অভিহিত করলেও কবিওয়ালাঁদের সঙ্গে একাসনে বসিয়ে তার কাব্যবিচার কিংবা কবিমীনসের বিচার চলে না। কিন্তু সাহিত্যাকাশে ক্ষণকালের আগন্তক এই কবি- গোষ্ঠীকে জনসমক্ষে প্রতিষ্ঠা করে ঈশ্বরগুপ্ত বার্গালীপ্রীতি, বাংলাসাহিত্যপ্রীতির এক শতুন নিদর্শন স্থাপন করেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র ঈশ্বরগুণ্তের স্বদেশপ্রেম প্রসঙ্গে তার স্বাজাত্যপ্রীতির চরম নিদর্শন হিসেবে প্রসঙ্গটির ওপরই জোর দিয়েছেন | বলা বাহুল্য ঈশ্বরগুপ্ডের প্রাপ্য সম্মানই তিনি লাভ করেছেন

ঈশ্বরগুণ্চের কাব্যবিচার প্রসঙ্গে তার স্বদেশচেতনার পরিচয়দাঁনই আমাদের

২। 10170 10171120675 ৮2010961500 171716512500065) 15900015 2924) ৮2,

১৮২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

উদ্দেশ্য কিন্তু তার মনোভঙ্ষিমার বিশিষ্টতা থেকেই স্বদেশপ্রাণতার ছাঁপটি কুস্পষ্- রূপে আবিফার করা যায় ; সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেই প্রখ্যাতযশ। ঈর্বরগুপ্খের আবির্ভীব | সাংঘাদিক-সাহিত্যিক হিসেবেই তাঁর অনন্য পরিচয় সংবাদপত্র পরিচালনার ক্ষেত্রেই স্বভাবজ্জ কবিপ্রতিভার স্বত:স্ফুর্ত আত্মবিকীশপর্ব তাঁর অগণিত কবিতা সংবাদপত্রে ইতস্ততঃ ছড়িয়ে আছে-_-কিস্তু “কবিত সংগ্রহে যে কবিতাগুলি স্থান পেয়েছে তার বিচার করলেই মোটামুটি স্বদেশপ্রেমিক ঈশ্বরগুপ্তের পরিচয় সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। বঙ্কিমচন্দ্র স্থনিপুণ সম্পাদনায় ঈশ্বরগুপ্তের কবিতা সংগ্রহের প্রথম খণ্ডটি প্রকাশিত হয়, পরে সেই আদর্শেই দ্বিতীয় খণ্ডটিরও আত্মপ্রকাশ ঘটে ইশ্বর- গুণের কবিতা-সংগ্রহের মধ্যে যে বিচিত্র সম্ভার, তা আমাদের আলোচনার অন্তভূক্ত নয়__কিন্ত স্বদেশপ্রেমের বাণীবহনকারী কবিতাগুচ্ছই আমাদের "আলোচ্য হিসেখে তাঁর কবিতাকে ছুটি ভাগে ভাগ কর চলে। ?

১। বিশুদ্ধ স্বদেশপ্রেমের কবিতা, ২। প্রচ্ছন্ন স্দেশপ্রেমের কবিতা

১। বিশুদ্ধ স্বদেশপ্রেমের কবিতা-_-যে কবিতা পড়লে সেই মুহূর্তের জন্য স্বদেশ- চিন্তার বিশুদ্ধতায় মন পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে__ঈশ্বরগুথের সেই কবিতাগুচ্ছকেই আমর] বিশুদ্ধ স্বদেশপ্রেমের কবিতার অন্তভূক্ত করতে পারি যে কবিতায় কবির আত্মপ্রকাশ কুষ্ঠিত নয়,_স্বতঃস্ফর্ত প্রেরণাতে নির্ভীক কবিকণ্ঠ যেখানে দেশপ্রেমোচ্ছল হয়ে উঠেছে, সেই কবিতাগুচ্ছই ঈশ্বরগুপ্তের দেশপ্রেমের জলন্ত নিদর্শন হয়েছে ধরণের কবিতার সংখ্যা তার বিপুল সৃষ্টির তুলনায় নগণ্য বলা যায়। সচেতন ভাবে দেশপ্রেমে উদ্বেল হয়ে ওঠার পক্ষে একজন পরাধীন সাংবাদিকের যত বাধা থাকে, ঈশ্বরপ্ুপ্তেরও সেই বাধা ছিল। স্থতরাং বিপুল আবেগে যে কথা বলবার জন্বা স্বদরেশপ্রেমিক ঈশ্বরপ্তপ্ত আকুল হয়েছিলেন-_সাঁংবাদিক ঈশ্বরগুপ্ের সাঁবধানতায় তিনিই আবার সন্ত্রস্ত সংকুচিত হতে বাধ্য হয়েছেন কবিকর্ষের সিদ্ধির পথেও এই দ্বিধাখপ্ডিত চেতনা বাধাত্বরূপ হয়ে দীড়িয়েছে।

বিশুদ্ধ স্বদেশচেতনার দ্রবরসে সিক্ত কবিচিত্টি বারবারই বাস্তব চেতনার আঘাতে নির্জীব হয়ে গেছে সুতরাং ঈশ্বরগুপ্তের বিশুদ্ধ স্বদেশপ্রেমের কবিতাতেও সেই অজগর নির্ঘোষ নেই, নজরুলী ভুহুংকার দৃবের কথা! সেই যুগের প্রেক্ষাপটে সবদেশচিন্তার নিবিড় আবেগ আশ! করা অগ্ঠায় স্বদেশচিস্তার মধ্যে খানিকট। আক্ষেপ, খানিকট। হতাঁশ। এই ছিল যথেষ্ট | এই জাতীয় কবিতার মধ্যেও যে জনচিত্ত আলোড়নের প্রচণ্ড শক্তি নিহিত থাকতে পারে-_-কবিরা অন্ততঃ সে সম্বন্ধে সচেতন ছিলেন না। ঈশ্বর- গুপ্তের বিশুদ্ধ স্বদেশপ্রেমমূলক কবিতার মধ্যেও দেখি একটা দৈম্যবোধ, হতাশা, নৈর্ব্যক্তিক নিললিপ্তি। স্বদেশচিন্তার বিশুদ্ধতা সে কবিতায় মেলে- কিস্তু তার বেশী

কাব্য ১৮৩

কিছু নয়। স্বদেশপ্রেমের প্রসঙ্গ কবিতায় প্রকাশ করার একান্তিক বাসনাটুকুই কবিতাপগ্তলিতে সোচ্চার,_এ ছাড়া কবিমনের অন্কোন পরিচয় স্পষ্ট হয়নি কোথাও সমাঁলোচকের ভাষায়,_-“এ জাতীয় কবির কাব্যে-_তাহাদের সমগ্র শক্তি ষেন সুলভ উচ্ছবীসবহুল দেশাত্মবোধের বাণী প্রচারেই নিঃশেষিত হইয়াছে» [ প্র, তারাপদ মুখোপাধ্যায় ]

যেন এই চিন্তা নিতান্তই আত্মকেন্দ্রিক-ব্যক্তিগত কিছু স্বদেশপ্রেম ব্যক্তিগত অনুভূতি হতে পারে কিন্তু স্বদেশপ্রেমীর মধ্যে বহুচিত্তের চিন্তাভীবনা মিলিত হয়ে থাকে ব্যক্তিগত নিলিপ্ডির মধ্যে আত্মনিমগ্ন থাকাট। সেখানে সম্ভব হয় না,ব্যক্তি নিবিশেষ আবেদনে তা ভাস্বর ঈশ্বরগুপ্ঠের অনন্য দেশপ্রেম উদ্ভাবনী শক্তি থেকেই এই শ্রেণীর দেশপ্রেমের কবিতাগুলি জন্ম নিয়েছিল-_কিস্তু কবি নিজেও জাতীয় কবিতার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সচেতন ছিলেন না। ঈশ্বরগুপ্ডের স্বদেশপ্রেমের নিগুঢ় দ্রবরসে পরিষিক্ত কবিতাগুলির সংখ্যা খুব বেশী নয়! তার মধো মাতৃভাষা, স্বদেশ, ভারতের ভাগ্যবিপ্রব, ভারতের অবস্থা, কুরীতি সংস্কার ইত্যাদির নামই উল্লেখযোগ্য |

মাতৃভাষা প্রসঙ্গে ঈশ্বরগুপ্ত আশাবাদী সদ্ধচিত্ত। ইংরাঁজীভাষার প্রসার প্রচারে বীতরাগ না হয়েও ঈশ্বরগুপ্ত মাতৃভাষার প্রেমে মগ্ধ ছিলেন ইতিপুর্বেও বিদেশী ভাষার সংস্পর্শে এসেছি আমরা ;-ফারসী, আরবী, উদ” শিক্ষার প্রচলন তখনও সর্বত্র ভারতচন্দ্রের নিবিড় সংস্পর্শ ঘটেছিল আরবী, ফারসীর সঙ্গে কিন্তু ইংরেজী শিক্ষার প্রথম পর্ব থেকেই ইংরাজী ভাষা সাহিত্যের প্রতি যে আগ্রহ দেখা দেয়__ফারসী আরবীর তুলনায় তা অভূতপূর্ব বা অচিত্তিত বলা যায় ইংরাজী ভাষা সাহিত্য শিক্ষার যে বিপুল আয়োজন দেখা গেছে-_তাতে প্রথমদিকে মাতৃভাষার প্রাধান্য বা মর্যাদা কোনটাঁকেই বড়ো বলে মনে করা হয় নি। বিশেষ করে ইংরাজসরকার প্রতিষ্ঠিত হংরাঁজী বিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থায় যেভাবে ইংরাজীর প্রচলন শুরু হয়েছিল তাতে মাতৃভাষা বাংলার দৈম্তাবস্থা বেশ স্পষ্টভাবেই দেখা যেত। ইংরাজীভাষায় কিছু জ্ঞান লাভ করে মাতৃভাষাকে অবজ্ঞা করার মতো বাচালতাও সেযুগে বিরলদৃষ্ট ছিল না। স্থতরাং কবিদের মধ্যে মাতৃভাষাশ্রীতির নিদর্শন স্বরূপ মাতৃভাষার মহিমা প্রচারের প্রয়োজন তখন নিশ্চয়ই ছিল। দেশপ্রেমের সর্বপ্রথম স্তরে মাতভাষাপ্ত্রীতি তাই কবিতার বিষয়বস্ততে পরিণত হয়েছে ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের পণ্ডিভ সম্প্রদায়ের মধ্যে কেউ কেউ আবার মাতৃভাষার মূল্যের উপর গুরুতর প্রবন্ধ বা' প্রস্তাব রচনা করেছেন ঠিক সেই কারণেই জশ্বরগঞ্ বোধহয় মাতৃভাষার মর্যাদাবোধ জাগানোর জন্যই বলেছেন,”

১৮৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

“মাতিসম মাতৃভাষা! পুরালে তোমার আশা, তুমি তাঁর সেবা কর স্থখে |” [ মাতৃভাষা ] কিংবা "স্বদেশ কবিতায় বলেছেন, "বুদ্ধি কর মাতৃভাষা পুরাঁও তাহার আশা, দেশে কর বিগ্ভাবিতরণ।” ইঈশ্বরগুপ্ত মাতৃভাষা সাহিত্যের একনিষ্ঠ সেবক ছিলেন | বহু ব্যঙ্গকবিতাঁয় তিনি আধা ইংরাজী বুলির নিন্দায় পঞ্চমুখ আর €সজন্যই মাতৃভাষার মহিমা প্রচারের দায়িত্ব, স্বদেশের মহিম প্রচারের কর্তব্য তাঁদের ওপরে ন্যস্ত ছিল। অবশ্য ঈশ্বরগুপ্ত খাঁটি বাঙ্গালা ব্যবহারেই স্বচ্ছন্দ,_তাঁর কৃতিত্বও সেখানে স্বদেশের প্রতি ভালবাসার নিখাদ অন্ধভৃতি থেকেই তাঁর “স্বদেশ: কবিতার জন্ম

“জান নাকি জীব তুমি, জননী জনম ভূমি, যে তোমারে হদয়ে রেখেছে থাকিয়া মায়ের কোলে, সন্তানে জননী ভোলে

কে কোথায় এমন দেখেছে?

মিছা মণি মুক্তা হেম, স্বদেশের প্রিয় প্রেম, তার চেয়ে রত্ব নাই আর স্ধাকরে কত সুধা, দূর করে তৃষা ক্ষুধা, স্বদেশের শুভ সমাচার হৃদয়াবেগের নিবিড়তার মধুর স্পর্শ হয়ত নেই-_কিন্ত মাতৃভূমির প্রতি শান্ত সশ্রদ্ধচিত্ত ঈশ্বরগুপ্তকে এখানে অত্যন্ত স্পষ্টরূপে দেখি কোন গুরুতর হ্যায়নীতি সম্পকিত ৰত্তৃত! নয়, আত্ম উপলব্ধির গভীরতায় মণ্ডিত একটি নিবিড় অভিব্যক্তিই সমস্ত কবিতার প্রাণকেন্্র তাই পাঠকচিত্তও সহজেই রসাবেশে মুগ্ধ হয়৷ ঈশ্বরগুপ্তের স্বদেশগ্রীতির এই অকুষ্টিত প্রকাশকে অভিননগন জানিয়েই বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছেন, “মাতৃসম মাতৃভাষা সৌভাগ্যক্রমে এখন অনেকেই বুঝিতেছেন, কিন্তু ঈশ্বরগুণ্রের সময়ে কে সাহস করিয়া একথা বলে ?”- বিশুদ্ধ স্বদেশপ্রেমের কবিতা রচনার পথে যে ভীতির বাধা ছিল কথা কবি মর্মে মর্মে জাঁনতেন-_তাই দেশের প্রতি ভালবাসায় অবিচল হয়েও তার অকু্ঠ প্রকাশে যথেষ্ট তৎপর | কবি অত্যন্ত সচেতন ভাবেই তাঁর 'দেশগ্রীতি প্রকাশ করেছেন এখানে কোনে! কোনে কবিতায় কবি নিখাদ ব্বদেশ- প্রেমের বাণী প্রচার করতে গিয়েও তা করেন নি;--প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গীন্তরে চলে যাওয়ার এই সযত্ গুয়াস তাঁর সতর্ক মনৌভঙ্গীকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। “হ্বদেশ' কবিতায় এই সাবধানী দেশপ্রেমিককে প্রত্যক্ষ করি

কাব্য ১৮৫

স্বদেশের প্রতি ভালবাসাকে কবি অমূল্য একটি রত্বের সঙ্গে তুলন। করেছেন-_ কিন্তু স্বদেশপ্রেম প্রসঙ্গ উল্লেখ করেই মুহুর্তের মধ্যে প্রসঙ্গীস্তরে চলে গেছেন তিনি, মিছা মণি মুক্তা হেম, স্বদেশের প্রিয় প্রেম, তার চেয়ে রত্ব নাই আর। স্থধাকরে কত স্থধা, দূর করে তৃষ্ণা ক্ষুধা স্বদেশের শুভ সমাচার কতরূপ স্নেহ করি, দেশের কুকুর ধরি বিদেশের ঠাকুর ফেলিয়া [ স্বদেশ ] স্বদেশপ্রেম' স্বদেশের শুভ সমাঁচারেই পর্যবসিত- এখানে কবির বক্তব্যও কিঞ্চিৎ অশ্বচ্ছ রলে মনে হয়। দেশগ্রীতিই যে বড়, দেশপ্রীতর প্রাবল্যে সামান্ি কুকুরকেও যে নিতান্ত আপন মনে হয়--এ একটা নিখাদ অনুভূতির মত সত্য প্রকাশ তঙ্গিমার অন্তরালেও কবির দেশপ্রীতির জলন্ত স্বাক্ষর রয়েছে এখানে এই বিষয়টির সঙ্গেই. কবির মাতৃভাষা প্রসঙ্গ উল্লেখে খানিকটা বিষয়ান্তরে যাঁওয়ার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করি। মাতৃভাষ! প্রসঙ্গের অবতারণার সঙ্গে সঙ্গে কবি যেন তার উত্তাপহীন দেশগ্রীতিকেই জনসমক্ষে প্রচারের জগ্ ব্যগ্র। অনুভূতির গাঁটরসে নিমগ্ন হওয়ার আগেই কবি আসল বক্তব্যের গভীরতাকে খানিকটা গতাচ্ছগতিক ভাবাঁবেগের প্রলেপ দেবার চেষ্টা করেছেন না হলে, দেশকে ভালবাসার কথা এত দরদ দিয়ে বলেই যেখাঁনে কবিতার সমাপ্তি হতে পাঁরত-_সেখাঁনে মাতৃভাষা প্রসক্গটি আনার সার্থকতা কি? পরিশেষে যেন খানিকট1 উপদেশের মতো ব্যক্ত করেছেন, বৃদ্ধি কর মাতৃভাষা, পূরাঁও তাঁহার আশা, দেশে কর বিদ্যাবিতরণ। [এ] মাতৃভাষার মহিমা বর্ণনায় কবি খানিকট। গতানুগতিকতার আশ্রয় নিলেন, অথচ প্রসঙ্গে তার উল্লেখযোগ্য অন্য কবিতা আছে মাতৃভাষাপ্রীতি দিয়ে দেশপ্রেমের নির্মল নিখাদ অনুভূতিকে আবৃত করা যাঁয় না, তাই স্বদেশ" কবিতার শেষাংশের তুলনায় প্রথমাংশটি অত্যন্ত আবেদনশীল ; প্রথমারস্তে কবি দেশপ্রেমকে সুস্পষ্টরূপে প্রকাশ করেছেন জান নাকি জীব তুষি, জননী জনমভূমি ঘে তোমারে হৃদয়ে রেখেছে [এ] এই দেশের প্রতি অকুপণ ভালবাসায়ই কবি উচ্ছুসিত হয়ে উঠেছিলেন কোন কোন কবিতায় [ ভারতের ভাগ্যবিপ্রব, ভারতের অবস্থা | কবি দেশের ঘুর্দশায় মান ভারতের দুর্দশায় কবি মুহ্মান ;১--এমন কোন আশার বাঁনীও নেই ঘা

১৮৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেষ

কবিকে খানিকট! স্বস্তি দিতে পারে প্রচণ্ড হতাশার বেদনায় ঈশ্বরগুণ্ের আক্ষেপাকীর্ণ দেশপ্রেম এখানে উচ্ছৃসিত হয়েছে। “দেশের দারুণ ছুঃখ, ভাবিয়া বিদরে বুক, চিন্তায় চঞ্চল হয় মন | লিখিতে লেখনী কাদে শ্লান মুখ মসী ছাদে শোক অশ্র করে বরিষণ কি ছিলো কি হলো, আহা. আর কি হইবে তাহা ! ভারতের ভব ভরা যশ। | ভারতের ভাগ্যবিপ্রব ] বিশুদ্ধ স্বদেশপ্রেমে কবির সমগ্র অন্তর এক প্রচণ্ড বেদনায় ম্লান হয়ে আছে ভারতের দুর্দশীয় কবির ক্ষোভের হয়ত ব্যক্তিগত কোন হেতু নেই- কিন্তু যে কোন স্বদেশপ্রাণ ব্যক্তিই দেশের স্বখছঃখের মধ্যে ব্যক্তিগত স্থখছুঃখ অন্থুভব করেন কিন্তু সেযুগের বাংলা সাহিত্যে এই অনুভবের প্রকাঁশ এতই অচিস্তিত যে, ঈশ্বরগুপ্ের আগে আর কোন বাঙ্গালী কবির রচনায় ঠিক জাতীয় উপলদ্ধি খুঁজে পাওয়া যাঁয় না। সাহিত্যে দেশপ্রেম যে অভিনবত্ব সঞ্চার করেছিল--ঈশ্বরগুপ্তই তার প্রথম বক্তা দেশের এই দুর্দশার হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে জাগতে হবে সমগ্র দেশবাসীকে, ঈশ্বরগুপ্তই সে কথা বলেছেন,__ ভারতভূমির মাঝে, হিছু আছে যত। অলস অবশ হোয়ে, রবে আর কত? এখনে ভাঙ্গেনি ঘুম, করিছ শয়ন ? এখনো রয়েছে সবে, মুদিয়া নয়ন? [ কুরীতি সংস্কার ] আহ্বানও বাংলা সাহিত্যের অভিনব | জশ্বরগুপ্তের কবিতায় জাতীয় বিশুদ্ধ দেশপ্রীতির প্রকাশ ঘটেছে খুব অল্প এবং সম্ভবতঃ দেশপ্রীতির পূর্ণ আলোচনাও ইতিপূর্বে হয় নি, তাই ঈশ্বরগুপ্তের দেশভাবনার পূর্ণ স্বরূপ এখনও উদ্ৃঘাঁটিত হয়ণি ; বরং বিরূপ সমালোচনায় তিনি জর্জরিত। কিন্ত এমন বিশুদ্ধ দেশপ্রেমের প্রকাশ বাংল সাহিত্যে ছিল না বলেই ঈশ্বরগুপ্তকে অভিনন্দিত করার সময় এসেছে ঈশ্বরগুণ্ের স্বদেশপ্রেম সম্পকিত কবিতার দ্বিতীয় পর্যায়ের নাম দেওয়া হয়েছে - প্রচ্ছন্ন স্বদেশপ্রেমের কবিতা প্রচ্ছন্্র স্বদেশপ্রেমই কবিতাগুলির রচনার উৎস অথচ স্পষ্টভাবে সেকথ প্রকাশ করার পথেও প্রচণ্ড বাধা স্বতশীং কখনও ব্যঙ্গে, কখনও রঙ্গে, কখনও হাঁসির চাবুকে, কখনও উপহাঁসের মৃদ্রতায় কবি দেশপ্রীতির বিপুল অন্তরাবেগকে দমিত করেছেন। ধরণের সৃষ্টির পরিমাণও বিপুলতম | স্বদেশ- প্রেমের প্রসঙ্গ বঙ্গের রসিকতার শাণিত অস্ত্রে ঝবিকমিক করে উঠেছে যেন। সে

কাব্য ১৮৭

যুগের রাজনৈতিক আবহাওয়ার স্পর্শ অত্যন্ত নিপুণতার সঙ্গে বাচিয়ে চলেছেন কবি। অথচ একটু বিশ্লেষণ করে দেখলে কবির মনোভাবের ঘোঁমটাঁটি খসে পড়ে সহজেই আপাতঃ হাস্যরসের আড়ালে সমালোচনার চেহারাটি আত্মগোপন করে আছে সেখানে সুতরাং রঙ্গব্যঙ্গের মধ্যেই যে কবিতার শুরু, তা সার। হয়েছে প্রচণ্ড আক্ষেপে-হতাশায়-বেদনায় | কিন্তু এই বেদনাঁবোধের পশ্চাতে অন্য কোন সহানুভূতি- সিক্ত মনের সঙ্গ পান নি বলে কবিচিত্ত নিঃসন্গতায় ম্লান পাঁঠকসমাজ যখন তার মধ্যে বিদূষকের চপলতা প্রত্যক্ষ করেছে কবির অন্তর সেই সমাদর গ্রহণে নিতান্তই বিমুখ কবির উদ্দেশ্টকে আড়াল করে বিদৃষকসত্তাই যদি সমাদর পাঁয় কাবির পক্ষে তার চেয়ে বেদনাময় অনুভূতি আর কি থাকতে পারে? ঈশ্বরগুপ্ের প্রচ্ছন্ন স্বদেশপ্রেমের কবিতার বিষয়বস্তও অত্যন্ত নিপুণভাবে আহত ;-_সমীজের প্রত্যেকটি কোণ থেকে আলোকিত রাজপথ কিছুই আলোচনা! থেকে বাদ যায় নি- রাজনীতি, সমাজনীতি, সংকীর্ণতা উদ্দারতা, অন্ুদার শীসননীতি বিচারের নামে অবিচারের প্রহসন | হ্ুবিপুল সম্ভাঁরে স্তরে স্তরে সে যুগের সামগ্রিক সমাঁজচিত্তাকে সাংবাদিকের হুনিপুণতা দিয়ে পরিবেশন করেছেন ঈশ্বরগপ্ত। সামাজিক ব্যঙ্গ প্ধায়ের বহু কবিতার মধ্যেই প্রচ্ছন্ন স্বদেশপ্রেম রয়েছে তাছাড়া যুদ্ধ, রাজনৈতিক প্রসঙ্গেও তার অনেক চিন্তা আপাতঃ অসংলগ্প হলেও গভীরতর চিন্তাধারা প্রস্থত তার রাঁজনৈতিক চিন্তার সঙ্গে স্বদেশপ্রেমের যৌগ কবিতায় নেই;-_যাণ্ বা আঁছে বিশুদ্ধ চাটুকীরিতার মতো শোনায় সে কথা অথচ রাজনীতি সম্পর্কে কিছু স্বাধীনচিত্ত। যে ঈশ্বরপ্তপ্তের ছিলো সে কথাও স্বীকার্য। কোন কোন সময় ঈশ্বরগুঞ্ প্রত্যক্ষভাবে রাজবন্দনা করেছেন ইংরাজী রাজত্বের প্রথম পর্যায়ের গঠনমূলক চিন্তাধারার মধ্যে মীনবকল্যাণের সম্ভাবনাকে প্রত্যক্ষ করে কবি অনেক সময়ই পুলকিত হয়েছেন, উচ্ছ্বসিত হয়েছেন এবং সেই উচ্ছাসের বনু স্বাক্ষর কবিতায় স্পষ্টভাবেই দেখা যায়--যা আপাততঃ ইংরেজস্তরতির মত শোনায়, পরিশেষে কবি সম্বন্ধে ধারণাই পালটে দেয়। ইংরেজপ্রশস্তির এই সুবিপুল স্বাক্ষর দেখেই ঈশ্বরপগুপ্তের গভীর দেশপ্রেম উপলব্ধি করতে আমাদের অস্থবিধা হয়। ঈশ্বরগুপ্তের এই রাজনীতিক সত্বাটি নিয়েই যত বিরোধের তৃষ্টি। একদিকে কবি স্বদেশপ্রেমে উদ্বেল অন্যদিকে শাসক ইংরেজের প্রতি অরুপণ প্রশংসায় পঞ্চমুখ এই দিধাথপ্ডিত কবিভাবনা থেকে ঈশ্বরগুপ্তের সঠিক মুল্যবিচাঁর বিপর্যস্ত হওয়াই স্বাভাবিক। কবি সেই যুগের স্বাধীনতা সংগ্রামের তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারেন নি $--নানা- সাহেব, তাত্তিয়াটোপী, ঝাঁপীররাণী লক্ষমীবাঈয়ের সম্মিলিত স্বাধীনতাযুদ্ধের সঠিক ব্যাখ্যা কবি কোথাও দেননি ঈশ্বরগুপঞ্ের ভাবনায় এরা ঠিক বিপরীত চরিত্র

১৮৮ উনবিংশ শতাবীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

বূপেই অঙ্কিত হয়েছে নাঁনাসাহেব লক্মীবাঈ--স্বাধীনতা! সংগ্রামের ইতিহাসে প্রথম ছুটি উজ্জ্বল নাম; স্বদেশপ্রেমিক ঈশ্বরগুপ্তের তুলিকায় নিতান্তই নগণ্য দেশদ্রোহী বলে আখ্যাত হয়েছে অবশ্য এর জন্য ঈশ্বরগুপ্ডের চিন্তাধারার অদুর- দৃগিতাই দায়ী, তার হ্বদেশপ্রেম নয়। সেযুগের সাংবাদিক ঈশ্বরগুপ্ত যুদ্ধ-বিগ্রহের মধ্যে শুধু ক্ষমতা লোভকেই প্রত্যক্ষ করেছেন ।-যুদ্ধবিক্ষত ভীরতবর্ষের শেষ সক্ষম প্রতিনিধি ইংরেজ ঈশ্বরগুপ্টের যুগে স্বমহিমায় প্রতিঠিত ইংরেজরাঁজত্ব দেখে অনেকেই নিশ্চিন্ত হয়েছেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা-মুক্তির স্বপ্ন দেখাট৷ অন্ততঃ ঈশ্বরপুপ্তের যুগে ভাবাই যেত না,_কল্পনাতেও বাড়াবাড়ি বলে মনে হতে পারত স্তরাং স্বাধীনতার সংগ্রামে এগিয়ে আঁসা এই দুই বীর- সৈনিককে যখোপযুক্ত ভাবে বিচার করার ক্ষমতা৷ কি সেযুগে সম্ভব ছিল ?,. ঈশ্বরগুণ্ঠ যুগাতিক্রমী দূরদশিতা দেখাতে পারেন নি কোথাও, আপাত ফলাফল তাঁর প্রতিক্রিয়ার বর্ণনাই তার কবিতায় মুখ্য তিনি দৃষ্ট প্রত্যক্ষ সত্যউপলব্ধিকেই কবিতায় স্থান দিয়েছেন। সিপাহীযুদ্ধের মর্শীর্ঘ উদ্ধারে সেযুগে কজনই ব1 সক্ষম ছিলেন? ঈশ্বরগুপ্ত দেশচিত্তার সমস্ত গভীরতা দিয়েও সেই যুদ্ধের স্বরূপ ব্যাখ্যা করতে পারেন নি। এবং যুদ্ধের হাত থেকে আত্মরক্ষার অন্যকোন পথ না দেখে সক্ষম শাসকগোষ্ঠীর জয় প্রার্থনা করে ঈশ্বরগুপ্ত অনেকখানি স্বাভাবিক যুক্তিসঙ্গত পথই অবলম্বন করেছিলেন ইংরাজপ্রশস্তি ছাড়া ক্ষেত্রে করণীয়ই বা কি ছিল? দেশপ্রেম-তা যত গভীর হোঁক না কেন সাধারণ মানুষ সিপাঁহীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে একত্রে ইংরেজকে রাজ্যচ্যুত করবে এমন কথা চিন্তাতীত ছিল বলেও অস্যুক্তি হয় না। ঈশ্বরপগুপ্ত অবশ্য সরাসরি ইংরেজপক্ষ অবলম্বন করেছেন,-_ এদেশের বড় ফের পাপীদের দাপে। ঢলঢল, টলমল, ধরাঁতল কাপে হও মূল অনুকূল, শ্বেত কুল পক্ষে সণুচয়, শত্রক্ষয়, তবে হয় রক্ষে॥ [ সিপাহীয়ুদ্ধে শাস্তি প্রার্থনা? এখানে ঈশ্বর গুপ্ত ভগবানের কাছে কাতর প্রার্থনা করেছেন। এদেশের এই নিত্য সংগ্রামের হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে ভগবানের কাছে কবি এই প্রার্থনাই জানাঁতে পারেন দেশকে স্বাধীন করার যে মহান ত্রতে আমরা একদিন দীক্ষিত হয়েছিলাম -ঈশ্বরগুপ্তের অন্ুভাবনার কোথাও তার স্পর্শ নেই-_এজগ্য সেয়ুগের মানসিক প্রস্তুতির অভাবকেই দায়ী করতে পারি মাত্র। সে যুগের দ্নেশভাবনার অবিকৃত রূপটি পাই ঈশ্বরগুপ্টের কবিতায় | তিনি নানাসাহ্বকে দোষারোপ করেছেন,-__লক্ষীবিয়ের

কাবা ১৮৯

বীরত্ব ত্বাকে মুগ্ধ করেনি। স্বাধীনতাকামী এই সৈনিকের প্রতি কবি অসন্তষ্ঠ ছিলেন-_-শুধু তাই নয় এ'দের সম্পর্ক নিয়ে কদর্য ইন্ষিত করতেও ছাড়েন নি। ঈশ্বর- গুপ্তের এই অদূরদশিতার সঙ্গে তার দেশভাবনাও লাঞ্ছিত হয়েছে,_সেজস্যই বহু সমালোচক ঈশ্বরগুপ্ত সম্পর্কে একটি সত্য আবিফার করেই থেমেছেন,_ইংরেজ প্রশস্তির এই বর্ণচ্ছটাঁর মধ্যে তার নির্ভেজাল মনের অকৃপণ সত্য প্রমাণের জন্য আরব্যস্ত হননি। কিন্তু একটি বিষয়ে তাঁর দূরদশিতার প্রশংসা না করে পারা যাঁয় না ইংরেজের বিরুদ্ধে নানাসাহেব লক্ষমীবাঈয়ের ছৈত সংগ্রাম-প্রচেষ্টার মধ্যে তিনি উল্লেখযোগ্য সংবাদের মালমশল1 পেয়েছেন এদের নিন্দা করেই হোঁক, ভৎ“সনা করেই হোক, গুরুত্ব না দিয়ে পারেন নি | স্বাধীনতা সংগ্রাম ইতিহাসের ধারা প্রথম নায়কনায়িক! তাদের সম্পর্কে কবি নীরব থাকেন নি, কবিতায় স্থান দিয়েছেন এদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মূল্যবিচারে হয়ত তিনি যুগাতীত দুরদৃষ্টির পরিচয় দেন নি কিন্ত এদের জনপ্রিয়তার দ্বারা কবিও কম আলোড়িত হন নি। এদের নিয়ে প্রথম কবিতারচনার কৃতিত্ব তারই “কানপুরের যুদ্ধে জয়” শীর্ষক দীর্ঘ কবিতায় নানাসাহেবের সম্পর্কে কবির চিন্তাধারণর পরিচয় পাঁওয়। যাঁয় ;--আশ্রিত নানাঁসাহ্ব&ইংরেজের বিরোধিতা করলেও তার আশ্রয়দাতা সম্পর্কে কবির কোন রোষ নেই, “বাজীরাঁও পাসা ধিনি, . বাজীরাও পাস যিনি, সাধু তিনি, মান্ধ নানা মতে। মহারাষই, মহারাই পূজ্য জগতে ! ছেড়ে সে নিজ দেশ, ছেড়ে সে নিজ দেশ, রাজবেশ, বাঁচিবার তরে আত্মসমর্পণ করে ব্রিটিসের করে [ কানপুরের যুদ্ধে জয় ] কারণ 'বাচিৰাস তরে তিনি ইংরেজের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন যেখানে বাঁচার অন্য পথ খোঁল। নেই,__বাধা দেবার শক্তি বিলুপ্ত, সেখানে আত্মসমর্পণ ভীরুতা কাণপুরুষতা হতে পারে কিন্তু নান্ত পন্থা বিদ্যাতে শুধু প্রাণে বেঁচে থাকার ব্যগ্রতা দেখি এখানে বীচার মধ্যে কোন অগৌরব দেখিনি সেদিন। শাসনের শোষণের যন্ত্রে পিষ্ট হতে হতেই আমাদের আত্মবোধ,_মৃল্যবোধ জেগে উঠেছে, সত্য ইতিহাসের তার আগে শুধু প্রাণেই বেঁচেছি আমরা ঈশ্বরগুপ্তের যুগে নিছক বাচার জন্ভ এর চেয়ে উৎকৃষ্ট কোনো পন্থা আবিষ্কৃত হয় নি। হৃতরাং ঈশ্বরগুগ্ধ বাজীরাঁও পাঁসার আত্মসমর্পণের মধ্যে নিন্দনীয় কিছু খুজে পাননি কিন্ত

১৯০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

তারই আশ্রিত নানাসাঁহেব যখন আত্মসমর্পণে অনিচ্ছুক তখন তার বিস্ময়ের সীমা নেই। দীর্ঘ কবিতাটিতে তিনি নানাসাহেব প্রসঙ্গ নিয়ে সমালোচনা করেছেন-_ কিন্ত বাজীরাও এর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেবার জন্ত এই একটি স্তবকই যথেষ্ট কবিতায় কুমারসিংহ, মানসিংহ, অমরসিংহ প্রসঙ্গে কবির কিছু কিছু উক্তি আছে কিন্তু নানাঁসাঁহেবই যুদ্ধের নায়ক- এবং লক্ষ্মীবাঈ তাঁরই সহযাত্রিনী--একই আদর্শের ধবজাধারী; কথাটিতে কবি জোর দিয়েছেন নানাসাহেব প্রসঙ্গে কবি বলেন, কোথাকার মহাপাপ, কোথাকার মহাপাপ, বলে বাপ, পুত্র হল নানা কাকের বাসায় যথ। কোকিলের ছান। আর লক্ষ্ীবাঈ প্রসঙ্গে-- হাদেকি শুনিরাণী? হাঁদে কি শুনি রাণী, ঝাঁসির রাণী, ঠেোঁটকাটা কাকী মেয়ে হয়ে সেন! নিয়ে, সাঁজিয়াছে নাকি? [এ] 'এখানে নারী প্রগতিবিরোধী ঈশ্বরগুপ্তের পরিচয় প্রকট | অথচ লক্ষ্মীবাঈয়ের মৃত্যু প্রসঙ্গে তার উক্তির মধ্যে কাঁতরতা আছে,_ হয়ে শেষ নানার নানী, মরে রাণী, দেখে বুক ফাটে কোম্পানীর বুলুকে কি বগিগিরী খাটে? অজ অশ্রদ্ধেয় উক্তির মধ্যেও রাণীর মৃত্যুতে কবির বুকফাটার কথ! শোনাতে ভোলেন নি? নিছক অন্ত্যান্থপ্রাসের খাতিরে কবির এতটা কাতরতা প্রকাঁশেরও কোনো যুক্তি নেই। এই কবিতাটি পড়তে পড়তে বারবারই কবিচিত্তের অস্থিরতা লক্ষ্য করেছি রাণী লক্ষীবাঈয়ের যুদ্ধ কাহিনীর বর্ণনায় কবি নিতান্তই গতানুগতিক, কিন্ত অকস্মাৎ তারই স্বত্যুতে এতটা শোকাবিষ্ট হওয়ার কোনে সঙ্গত যুক্তিও নেই। আরও একটি প্রসঙ্গে কবি বলেছেন, লেখনী থাকো থেমে লেখনী থাকো থেমে, নিত্য প্রেমে, মত্ত হতে হবে। [ কানপুরের যুদ্ধ ] আক্ষেপ কিসের? এই কবিতায় কবি কি তবে ইচ্ছার লাগাম টেনে ধরেছেন ? অথচ স্পষ্ট কোনে ইজিতের অভাবে সমস্ত পংক্তিগুলো প্রায় অর্থহীন!

কাব্য ১৯১

কুমারসিংহ প্রসঙ্গেও কবি নিজের কথা বলেন নি, সকলের কথাই তুলে ধরেছেন ; শুধু রাজঘ্েষী বলেই শিশুহত্যা না করেও নারীহত্যা না করেও, কুমারসিংহকে অতার্থচারী বলতে হবে ) কারণ এটাই প্রথা-_ তবু অত্যাচারী, তবু অত্যাচারী, হত্যাকারী, বোলতে তারে হবে। রাজদ্বেষী মহাঁপাপী কবেই কবে সবে [ কানপুরের যুদ্ধ] কবিতাটির সর্বত্রই ধরণের ক্ষুব্ধ মনোভাবের স্বাক্ষর আছে কবি যা বলতে চান নি তাই তাকে বলতে হয়েছে--কারণ এটাই প্রথাঁসিদ্ধ। অথচ নানাসাঁহেব, লক্্মীবাঈ সৃম্পকিত উল্লেখযোগ্য সমস্ত সংবাদই কবিতায় মিলবে এখানে ইংরেজ প্রশস্তি আছ্ছে, রাজাচুগত্য আছে কিন্ত সবই যে প্রাণহীন সেটাও অত্যন্ত স্পষ্ট কোম্পানির মুলুকে কি বগিগিরী খাটে ? | শ্রী] তাই সংগ্রাম অসামথ্যে এরা পবাহ পরাজয় বরণ করেছিলেন কিন্ত তাদের প্রচেষ্টার মধ্যে কিছু বক্তব্য ছিল--এবং ঈশ্বরগুপ্ত তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিলেন বলেই সময়োচিত বৈশিষ্ট্য নিয়ে কবিতাটি রচিত হয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনের এই ছুই শহীদকে কবি প্রচ্ছন্নতভাঁবে তার কাব্যে প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন অন্ততঃ “সংবাদ প্রভাকরের' পাঠকবর্গের কাছে কানগুর যুদ্ধের এক দিত শক্তির, এক ইংরেজবিরোধী নেতার চিত্র, এক পরম সাঁহসিকা নারী সৈনিকের সংগ্রাম কাহিনী বর্ণনা করেছেন। কবিতাটি তার প্রচ্ছন্ন অনুভূতির প্রকাশ্য আত্মনিগ্রহের বেদনায়িত প্রতিরূপ যুদ্ধ পর্যায়ের আর যে সমস্ত কবিতা আছে--কোনটিতেই নতুনত্ব কিছু নেই। ইংরেজ প্রশস্তির চুড়ান্ত রূপ সখ কবিতায় এত স্পষ্ট প্রত্যক্ষ যে রাজভক্তির পরাকাষ্ঠীর আড়ালে অন্ত কিছু কটাক্ষপাত যদি থাকেও তবে তা প্রাণবস্ত হতে পারে শি। “শিখযুদ্ধে ইরাঁজের জয়” বার্তা কবি সাড়ম্বরে দিয়েছেন কিন্তু শিখের প্রতি অন্থকম্পার ভাবটুকুই স্পষ্ট শ্পাঞজাবীয় শিখদের আশা ছিল মনে ব্রিটিশ বিনাশ করি জয়ী হব রণে সমুদয় অস্ত্র লয়ে হয়ে অগ্রসর | করি শিবিরে আসি সন্মুখ সমর এই প্রচেষ্টাকে অনুকম্পায় লিঞ্চ করতেও কবি দ্বিধা করেন নি ।--বিদ্রপের স্থরে কবি উচ্চারণ করেছেন,-_ “বাস্থফি করিতে বধ বাঞছ৷ করে বক। [এ]

১৯২ উনবিংশ শতার্বীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

এবং প্রজাদের উৎসাহিত করেছেন সেইসঙ্গে, দেশের প্রজা! সব এক্য হয়ে সুখে রাজার মঙ্গল গীত গান কর মুখে [এ]

ঈশ্বরগুপ্ডের সহজ বুদ্ধিতে যুদ্ধভীতির চেয়ে নিরুপদ্রব শান্তি অধিকতর লোভনীয় এই মনোভাবের অন্থবর্তী হয়েই শক্তিহীনতার সহজ সত্যটুকু মেনে নিয়েই কবি ব্রিটিশ পক্ষপুট আশ্রয় না করে পারেন নি। শক্তির দৈহ্যকে লৈখিক আস্ফীলনে রঞ্জিত না করে কবি তাঁর সহজ সরল মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন। আত্মপ্রকাঁশের ছলনা কিংবা দৈচ্যের কুথাকে লোভনীয় করে সর্বসমক্ষে প্রচার করার লোভ তিনি সংবরণ করেছিলেন অন্ততঃ মানসিক কোন অস্থিরতার [ যা সেযুগে প্রায় অস্পষ্টই ছিল] চাপে দেশপ্রেমের প্রগাঁড অনুভূতিকে জটিল করে তোলেন নি। তিনি দেশকে ভালবাসেন, বিপক্ষীয় শাসনের অত্যাচারে ক্ষুব্ধ কবি মর্মপীড়ায় আহত হন কিন্তু দেশের কাছে, দেশবাঁপীর কাছে বলবার মত কোন সত্য তাঁর ছিল না, কিন্তু এই সহজ সত্যটি বলবার মত সৎসাহস ত্ভার ছিল। ইংরেজের সঙ্ষে যুদ্ধ করে তাদের দেশ ছাঁড়া করবেন এমন কথ] কল্পনাতেই হাঁসির উদ্রেক করতে পারত | শক্তি সামথ্যে, অনৈক্যে, বিছেষে, আত্মকলহে খণ্ডিত ভারতবাঁপী সম্বন্ধে কবি কোন কাঙ্গনিক আশাও করতে পারেন নি, তাই ইংরেজবিরোধী যুদ্প্রচেষ্টার কোন সমর্থন তার কবিতার কোথাও নেই। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভ বস্তটির সামগ্রিক কল্পন। সে যুগে অস্বাভাবিক বলেই মনে হোত। বুদ্ধি চাতুরী সম্বল করে যারা এদেশের মানুষকে বশীভূত করেছে তাদের সাম্রাজ্যবিস্তারের পথে বাধাসুষ্টি করার শক্তি ছিল না কারোই ইংরাজের এই চাতুরীটুক্ক কবি ধরতে পেরেছিলেন--তাই আত্মসমর্পণ ছাড়া জীবনধাঁরণের সহজ পথ তিনি দেখতে পাঁননি “শিখঘুদ্ধে ইংরাঁজের জয়” প্রসঙ্গে কবি একটি স্তবকে ভার মনোভাবটি স্পষ্ট করেছেন,

আমাদের সেনাদল বাহুবল বাড়ে

বিকট বদনে ঘোর সিংহনাদ ছাড়ে

বেঁধে হৌপ করে কোপ দিলে তোপ দেগে। নাহি রব পরাভব গেল সব.ভেগে যতদল হতবল প্রতিফল পেলে

রেজিমেণ্ট করে সেন্ট তাবু টেণ্ট ফেলে ঘেষ ছেড়ে দেশে গিয়া মানে পরাজয়

গেল বিপক্ষের ভয় গেল বিপক্ষের ভয়

কাব্য ১৯৩,

এখানে যুদ্ধ-বর্ণনাটি অতি বাস্তব |-__-*আমাঁদের সেনাঁদল” যদ্দি এদেশীয় সৈম্ত হয়, তবে শক্তি সংগ্রামের অসামধ্যে “নাহি রব পরাতব” কথাটি কি আন্ফাঁলনের মত শোনায়ণি ? পরাভবের হাত থেকে মুক্তি সংগ্রহ করতে গেলে যে গভীর জীবনাদর্শ জাতির সামনে জীবন্ত হয়ে ওঠে তারই অভাবে এই সমস্ত খণ্ড খণ্ড যুদ্ধবি গ্রহে এসেছে নতুনতর পরাভব, তা নির্মম হাস্যকর | আর “দ্বিতীয় যুদ্ধ” কবিতায় ইংরেজ প্রশস্তির আরও একমাত্র বাড়িয়ে কবি আমাদের ইংরেজের স্বপক্ষে এবং শিখদলের বিপক্ষে অস্ত্রধারণ করিয়েছেন,-_ অধিকার যদি পাই শিখদের ক্ষিতি | আমাদের প্রতি হবে ভূপতির প্রীতি সাহসে করিবে যুদ্ধ যত বুদ্ধি ঘটে কোন ক্রমে নাহি বাবে গোলার নিকটে

আমাদের শক্তিহীনতা, ছুর্বলতা, জীবন প্রীতির প্রতি নির্মম কটাক্ষপাঁতে ঈশ্বরগুপ এখানে স্বমহিমীভাস্বর | যুদ্ববিষয়ক কবিতায় জশ্বরগুপ্তের স্বভাঁবসিদ্ধ ব্যজরঙ্গ রসিকতাই প্রকাশ পেয়েছে তাই ইংরাজপ্রশস্তির সঙ্গে আত্মসমালোচনা মিলিয়ে, তিনি এক অনবদ্য যুদ্ধচিত্র ফুটিয়েছেন দিল্লীর যুদ্ধে” তীর ইংরাজপ্রশস্তির নতুণতর পরিকল্পনা,__

১০

ভারতের প্রিয়পুত্র হিন্দু সমুদয় মুক্তমুখে বল সবে ব্রিটিসের জয় জয় জয় জগদীশ করুণা নিধান। কপাময় কেহ নয়, তোমার সমান কাবুলের যুদ্ধ, ব্রহ্মদেশের সংগ্রাম শুধু বর্ণনীয় নয়__এঁতিহাঁসিক সত্যতায় সিদ্ধ ।' কাবুলযুদ্ধে কাবুলীদের শক্তি ইংরাজদের প্রতিহত করেছিল- সেখানে কবি অকপটে সেই সত্য চিত্রটি তুলে ধরেছেন,_ “কাপ্ডতেন কর্ণেল কত, বিপাকে হইল হত, স্বর্গগত ডবলিউ এম রাজদুত ধারে কয়, কোথা সেই এনবয়, কোথায় রহিল তার মেম ? দুর্জয় যবন নষ্ট, করিলেক যানভ্রষ্ট সব গেল ব্রিটিসের ফেম কেড়ে নিলে তীর টেপ্ট, হতবল রেজিমেন্ট, হায় হার কারে কব সেম॥

%

১৩

১৯৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

শুকাইল রাঙ্গামুখ ইংরাঁজের এতছুখ, ফাটে বুক হায় হায় হার়। [ কাবুল যুদ্ধ] ইংরাজপ্রশস্তি এখানেও, কিস্তু অশ্রুসিক্ত চিত্তের বেদনা এখানে নির্মম রসিকতার মত শোনায় ।' তবে যবনের এই স্পর্ধাকেও কবি সমর্থন করেন নি-_কারণ হিন্দুপ্রীতির প্রলেপ দিয়ে যাঁবনী ক্ষমতার প্রতি কবির স্বভাবসিদ্ধ বিরাগ প্রকাশ করেছেন আর সেজন্যই সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন, ফলে কিছু নহে অন্য নিশ্চয় মরণ অন্ত, উঠিয়াছে পিপীড়ার ডেন। যবনের যত বংশ, একেবারে হবে ধ্বংস সাজিয়াছে কোম্পানির সেনা [এ] “যুদ্ধ শান্তি কবিতাটির মধ্যে ঈশ্বরগুণ্ডের ইংরাজপ্রশস্তির আর একটি পরোক্ষ কারণ চোখে পড়ে মোঘলশাসনের অত্যাচারের ইতিহাস সম্বন্ধে কবি সদাঁসচেতন-_ আর সেজন্যই মোৌঘলশক্তির দুর্দশায় কবি এতটুকু ছুঃখ প্রকাশ করেননি বস্ততঃ মোগলশক্তিকে নিছক মিত্রপক্ষ হিসেবে চিন্তা করার কোন হেতু ছিল না। পরাধীনতার মার এসেছে যাদের দিক থেকে--একযুগে যাঁরা ভয়ঙ্করের মতো আমাদের শান্তিসাচ্ছন্দ্য কেড়ে নিয়েছে তাঁদের প্রতি দীর্ঘদিনের রোষই কবি প্রকাশ করেছেন। দিল্লীর বাদশাঁহের অন্তিম হাহাঁকাঁরের চিত্রটি রচনা করতে বসে কবি যদিও সহানুভূতি পুরোপুরি হারাননি, যদি হারাতেন তাহলেও সাধারশ দেশপ্রেমিকের স্বীভাবিকত্বই প্রকাশ পেতো। ঈশ্বরগুপ্তের যবনবিদ্বেষের যূলে প্রত্যক্ষ কিছু কারণ নির্ণয় করা যাঁয় সহজেই মোঘলসম্প্রদায় দীর্ঘদিন বাংলাতে বসবাঁস করে আসছে এবং বাঙ্গালীত্ব যাদের অর্জন করা হয়েছে বলেই ধরে নিতে হবে তবু হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষরা! একাত্ম হয়ে ওঠেনি কখনও | উনবিংশ শতাব্দীর গণজাগরণের মুহূর্তেও মুসলমান সম্প্রদায় সাড়া দেয়নি প্রথমাবধি। এই সময়েই মুসলমানদের মধ্যে আত্মবোঁধ আত্মাধিকার সম্পর্কে সচেতনতা আসে। ওয়াহাবী বিদ্রোহীদের ছারা পরিচালিত ক্ষিপ্ত, উন্মত্ত কিছুসংখ্যক মুসলমানকে দুর্ধর্ষ নেতা তিতুমীরের নিয়মাধীনে জাগ্রত হতে দেখি তিতুমীরের নেতৃত্বে মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে এক্যস্থষ্ট হয়নি, বরং বিভেদটাই প্রকট হয়ে ওঠেছিল। একে গণজাগরণ, আত্মজাগরণ কোনো নামেই অভিহিত করা চলে না; নিছক সাশ্প্রদায়িক মনোভাবের ফলাফল বলেও বিদ্রোহকে ব্যাখ্যা করা ঠিক নয়। বস্ততঃ সমগ্র ভারতের মুসলিম গণ- জাগরণের ঢেউ এসে স্বদূর বাংলার একটি শক্তিমান নেতাকে উত্তেজিত করেছিল

কাব্য ১৯৫

ধনী সম্্রান্ত মুসলমান সম্প্রদায়ের সহায়তা না পেয়েও বাংলায় মুসলিম ধর্মপ্রতিষ্ঠ। রাজ্যপ্রতিষ্ঠার স্বপ্র দেখে গেছেন তিনি পরবর্তী পর্যায়ে হিন্দু জমিদারের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধার ফলে হিন্দুনিধনেও তিনি উৎসাহী হয়ে ওঠেন উনবিংশ শতাব্দীর নবক্তাগ্রত রেনেসীর আন্দোলনে এর ভূমিকা! নেই-কিস্ত মুসলমান সম্প্রদায়ের সঙ্গে হিন্দুর ভীতির সম্পর্কটা নতুন করে তিতুমীরই সৃষ্টি করেন তবে লক্ষ্য করতে হবে যে, ইংরাঁজ বিতাড়নের স্বপ্রটাও সেই সঙ্গে প্রকাশ্য ভাবে দেখা দিয়েছিল এদেশীয় ধন্দুকে শীসনক্ষমতাট্যুত করে, আগস্তক ইংরাঁজকে বিতাড়িত করে নবীন উৎসাহে নৃতন সাম্রাজ্য স্থাপনের স্বপ্রটি কাল্পনিক হলেও মুসলমানবা চিন্তা করত বিগত শতাব্দীর প্রাচীন ইতিহাসের নজীর থেকে। ঈশ্বরগুপ্তের পর থেকে রঙ্গলালেও ষবন বিদ্বেষ প্রসঙ্গ তাই বারংবার দেখা দিয়েছে। এরা আবার সমগ্রভারতে হিন্দু নামাজ্য স্থাপনের স্বপ্নটাই দেখেছিলেন মুসলমান অত্যাচারের হাত থেকে আত্মরক্ষার পর্নাট তাই স্বাদেশিকতার চূড়ান্ত দৃ্ান্তত্বরূপ গৃহীত হয়েছিল।

ইংরাজশক্তির প্রতি কবি যে আস্থা বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন তার মূলেও অবচেতনভাবে পূর্বনিগ্রহের ইতিহাসই পরোক্ষ প্রেরণা শক্তির ব্যবহাররীতিই এই, ক্ষমতাবানের অত্যাচার আমাদের চিরদিনের প্রাপ্তি সুতরাং যবনশীসনের নাগপাশ থেকে মুক্তি পেয়ে কবি খাঁনিকট। নিশ্চিন্ত দিল্লী অধিকারের সেই জীবন্ত চিত্রটি বর্ণনা করে তিনি পরিশেষে সনাতন সত্যের প্রতিষ্ঠা করেছেন,_-

“অগ্ভাপিও ধর্ম এক করেন বিহার

তিনি কি কখনো সন এত পাঁপভার ? [ যুদ্ধশাত্তি ] বাদশ! বেগমের লাঞ্ছনায় সমব্যথী হয়েও কবির ক্ষুব্ধ ক% শোন! যায়, কোথা সেই আস্ফালন কোথা দরবার ? না একেবারে ঝাড়ে বংশে হল ছারখার [এ]

যুগে যুগে যে দীর্ঘ অত্যাচারের ইতিহাসে আমর] নীরব দর্শক, এই মুহূর্তে শাসক

ইংরেজকে খুশী রাখার এই প্রচেষ্টাকে তাই আর অসন্গত বা অর্থহীন বল! যায় না। ইতিহাসের অত্যাচারের দৃষ্টান্তে আমর শিহরিত, ভবিষ্যতের শান্তির আশায় কবি তাঁই দিল্লীর নতুন সম্রাটকে স্বাগত জানিয়েছেন,

ভয় নাই আর কিছু ভয় নাই আর

শুভ সমাচার বড় শুত সমাচার

পুনর্বার হইয়াছে দিল্লী অধিকাঁর।

বাদশা বেগম দেহে ভোগে কারাগার এ?

১৯৬ . উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

ইংরেজশাসনে ঈশ্বরগুপ্তের খুশীর কতকগুলি সঙ্গত কাঁরশ আমর! অতি সহজেই পেয়ে যাই এবং এজছ্যই তাঁর ইংরাজপ্রশন্তিকে দেশপ্রেমের বিরোধী বলে মনে করার কোনো সংগত কারণ নেই দেশকে ভালবেসেও তিনি ইংবাজ প্রশস্তির নিশ্চিন্ততায় মগ্ন হয়েছেন আর সেখানেই তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির বৈচিত্র্য, আত্মপ্রকাশে অকুঃ, সহজ সাঁরল্যে উচ্চকিত। কিন্ত প্রচ্ছন্ন স্বদেশপ্রেম বিষয়ক যে কৰিতা তিনি রচন। করেছেন-_ত্রিটিশ শাসনের আলোচনা সেখানে লক্ষ্য করার মত | ব্রিটিশ শাসনেও অত্যাচারের মাত্রা কমে নি, _-নানাভাবে আমাদের স্বাধীন জীবনযাত্রা! নিয়ন্ত্রিত হয়েছে,_কবি তা অকপটভাবে প্রকাশ করেছেন “ত্রিটিস শাসন” কবিতাটিতে কবির ধরণের মনোভাব-- আক্ষেপ হতাশ একই সঙ্গে প্রকাশ পেয়েছে ব্রিটিশ শাসন:ত্তীকে যে খুশী করেনি, গভীর মনোবেদনায় কবি তা ব্যক্ত করেছেন একশ্রেণীর অন্ষগত রাজার প্রত্তিও ব্রিটিশদের অন্তায় সর্তারোপ দেখে কবি বিদ্মিত ;--আত্মবিক্রয়ের লাঞ্ছনা আছেই কিন্তু তার ওপরেও অত্যাচারের কোন যুক্তি নেই। ঈর্বরগুপ্ত জালা যন্ত্রণায় দৌঁলায়িত হয়ে সে উপলব্ি প্রকাশ করেছেন,__ ইঙ্গিত করিলে যার। ওঠে আর বসে। নত হোয়ে সন্ধি করে, সদ! আছে বশে তাদের নিগ্রহ করা উচিত কি হয়? রাজধর্ম নয় সে তো! রাজধর্ম নয় [ব্রিটিশ শাসন ] বিচার প্রার্থনায় এর চেয়ে গভীর আতি সে যুগে অন্ত কেউই জানাতে পারেন নি ঈশ্বরপ্তপ্ত ছাড়া একই সঙ্গেই শাসন বাণিজ্যের বোঝা মাথায় চাপিয়ে ইংরাজ আমাদের জীবনে যে হাহাকার সৃষ্টি করেছে ক্ষুব্ধ কবিচিত্ত সেখানে মর্মাতুর | যে দেশের রাজ। করে বাণিজ্য ব্যাপার সে দেশের প্রজাগণ, করে হাহাকার প্রমাণ প্রত্যক্ষ তার এদেশে এখন কোম্পানীর একচেটে অফিম লবণ রাজার অন্তায় লোভে প্রজা যায় মারা। [এ] ইংরেজ শাসনের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে এসে দিনে দিনে আমাদের মগ্রচৈতন্ত জাঁগরিত হয়েছে। শাসনের নামে শোঁষণের এই নিষ্ঠুর পীড়নে কবি যে মর্মাত্তিক আঘাত পেয়েছেন কবিতাটির ছত্রে ছত্রে তার অনেক প্রমাণ পাওয়া যায় যেন “বণিকের মানদণ্ড দেখা দিল রাজদণ্রূপে'--র মত রবীন্দ্রবানীর উচ্চারণ ! ইংরাজ বিদ্বেষী হয়ে সশন্ত্রসংগ্রাম-কল্পনা অসহায় ভারতবাসীর কাছে যখন নিতান্তই দুরাশ। তখন

কাব্য ১৩১৭

দশ্বরপুপ্ত তাঁর অসহায়ত্বের কথা সোচ্চারে না বলে পারেন নি। অথচ কিছু করার গত শক্তি, বিদ্রোহী হবার মত মনোবল সে যুগে অসম্ভাবিত। দেশচেতনা বা রাজনৈতিক জাগরণ কোন সময়েই আকদ্মিকতা থেকে আসে না। বন্ৃচিত্তের সপ্ত দাবানল যখন অকম্মাৎ ক্ষুলিঙ্গ হয়ে দেখ! দেয়, তখন আমরা ধরেই নিতে পারি এর গভীরে যে অন্তর্দাহ চলছিল তার প্রস্ততিপর্ব অনেকদিনের আইরিস গণজাগরণ কিংবা ফ্রান্সের আত্মজাগরণ অথবা! রাশিয়ার জনবিদ্রোহের যূলেও বহুষুগ সঞ্চিত ধাঁনির কালিমা জলে ওঠার মুহূর্ত যখন আঁসে তখন দেখা যাঁয় সমিধসম্ভার বহনের দায়িত্বটি পূর্বহ্থরীর1 অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গেই সম্পন্ন করেছেন যজ্ঞ সমাপ্তির জন্য সমস্ত আয়োজন তারাই করেছেন অলক্ষ্যে। আমাদের জীবনে রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে উঠারও বহু আগে ঈসশ্বরগুপ্ত আন্দৌলনযজ্ঞের সমিধসম্ভারই বহন করেছেন। ক্ষুব্ধ চিত্তের সমস্ত গ্লানি দিয়ে তিনি শুধু মৌখিক ছুঃখ প্রকীশই করেছেন-_ পরাধীনতার গ্লানিতে কবি মান, ঘ্বশা বেদনায় কবি যেন সংকুচিত। কবিতাটির এক স্থানে ঈশ্বরগুপ্তের আত্মধিক্কার বাঁণী উচ্চারিত হয়েছে,_

ধিক ধিক অধীনতা।, ধিক তোরে ধিকৃ।

ফুকরে কাদিতে হয়, লিখিতে অধিক

বোধ আর কোনোরূপে, প্রবোধ না ধরে।

হৃদয় বিদীর্ণ হয়, মনে হোলে পরে [এ]

সেযুগীয় বাংলা কবিতায় দেশচেতনার এই আত্মধিকৃত কাব্যবপ কোথাও দেখ!

যায়নি কৃত্রিম প্রথাসিদ্ধ রচনায় অভ্যস্ত ঈশ্বরগুপ্তের লেখনীতে যেন এক অসস্ভীবিত অনগ্ত বিস্ময়। অধীনতায় কবি যে কতখানি বিষূঢ়চিভ্ত হয়েছেন উপরোক্ত ছত্রগুলিতে তার সমৃদ্ধ অথচ অতলান্ত গন্ভীর স্পষ্ট অভিব্যক্তি রাঁজরোষ অনায়াসেই এই পীড়িত, ক্ষুব্ধ মর্মস্থানটির ওপর শাঁসনাথাঁত প্রয়োগ করতে পারতো হ্মচন্দ্রের কবিতায় যে প্রকাশ্য রাঁজবিদ্রোহিতা শাসক সম্পদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল ঈশ্বরগুপ্তের কবিতায় বহু আগেই তা অক্রজলে, আত্মধিক্কারে, ক্ষোভে, ছুঃখে একটি অপূর্ব রূপ গ্রহণ করেছে প্ররচ্ছন্্র স্বদেশপ্রেমের কবিতার মাঝে মাঝে ধরণের গভীর দেশপ্রীতি কবিধর্মের মৌল চেতনাকে চিনিয়ে দেয়। উশ্বরগপ্তকে স্বদেশপ্রেমিক কবি বলে চিহ্িত করার জন্ভ এই কবিতাগুলির সাহায্য নিতে হবে | রাজনীতির সমা- লোচনার সন্ধে পীড়িত অত্যাচারিত দেশবাসীর অন্য কবির সমবেদনাও উচ্ছৃসিত |

এইমত ভয়ংকর রাজ অত্যাচারে

দুঃখী প্রাণী প্রজা আর বাঁচিতে না পারে [এ]

এবং সুগভীর আতন্তরিকতায় কবি এই পীড়ন অত্যাচারের আঘাত বেদন।

১৯৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

প্রকাশ করেছেন নির্ভীকতাবে প্রর্জার পীড়নে কৰি অস্থিরচিত হয়েছেন, বেদনায় যৃক হয়েও কবি কাব্যে তা বাগয় করে প্রচার করেছেন ঘরে ঘরে বঙ্কিমচন্দ্র মত স্থনিপুণ তীক্ষধী সমালোচক বোধকরি ঈশ্বরগুপ্তের কবিচিত্তের এই বেদনাঘন অন্তরাত্মাটি প্রত্যক্ষ করেই উচ্ছুসিত হয়েছেন,__প্রশংসা করেছেন তাঁর অমলিন দেশপ্রেমকে 1 বঙ্কিমচন্্র ঈশ্বরগুপ্তের প্রসঙ্গে যে কথাটি বলেছেন--তীর প্ররচ্ছন্ স্বদেশপ্রেমূলক কবিতার এসন্গে তা অতিসত্য, “মৃূলকথা, তাঁর কবিতার অপেক্ষা তিনি অনেক বড় ছিলেন তাঁহার প্ররুত পরিচয় তাহার কবিতায় নাই।” ইঙ্বব- গুপ্তের সাহিত্যচর্চায় তার চিন্তা-ভাঁবনাঁর যথাষথ প্রতিলিপি মেলে না, নতুবা সে যুগের সমস্ত আতি মর্ষে মর্মে অনুভব করেও তিনি তার সংহত রূপদাণানে অসমর্থ হলেন কেন? ব্যঙ্গে, বিদ্ধেপে, ইয়ারকি তামাসায় তিনি তাঁর অপরিসীম সম্ভীবনীকে ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়েছেন, _কেন্দ্রবদ্ধ করে কাব্যে তা রসমগ্ডিত করতে'পাঁরেন নি অন্ততঃ তাঁর দেশপ্রেমচিন্তা সম্পর্কে একথা। সত্য বঙ্কিমচন্দ্র আক্ষেপ করেছিলেন তাঁর সম্ভাবনার বিনষ্ট দেখে চিন্তার ক্ষেত্রে প্রাগ্রসর হয়েও শুধু ভাব ভাষায় জনমনোরঞ্জন করেই কবি ক্ষান্ত হয়েছেন তীর চিন্তাভাবনা থেকে প্রতিভাশালী কবিসম্প্রদায় কিছুই গ্রহণ করতে পারেন নি-_-না আজিক, না ভাষা, না রীতি; ঈশ্বরগুপ্ধ রইলেন প্রাচীন আধুনিকের মাঝখানে প্রণালী হয়ে কিন্তু তার ভাবনা সমুদ্রের এক বিন্দুবারিও পরবর্তী যুগসমুদ্রের সঙ্গে মিশতে পারল না_-এ আক্ষেপ আমাদেরও |

ঈশ্বরগুপ্তের সমগ্র সাহিত্যের নিখুত বিচার না করে তার সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত মনোভাব পোষণ অসঙ্গত কিন্তু দেশচিন্তার ক্ষেত্রে তার স্থান নির্ণয় করা খুবই সহজ অন্ততঃ এই একটি ক্ষেত্রে তার দান উল্লেখযোগ্য ভাবেই আধুনিকতার পর্যায়ে পড়ে। ঈশ্বরগুপ্তের আগে রাজনীতি কিংবা রাজনীতির খুঁটিনাটি নিয়ে আর কেউই কবিতা- রচনার কথ! চিন্তা করেননি, _সামীজিক চিত্র বর্ণনার মধ্যেও রাজনীতির পরোক্ষ প্রভাব অন্থুভব করেননি সে যুগের কোন মানষ। রাজনীতি সমাজনীতিকে মিশ্রিত করে সমাঁজচেতনার আধুনিক ব্যাখ্যাও তাঁর কবিতা থেকেই মিলবে | অথচ দীর্ঘদিন সাহিত্যে যে সমাজচিত্র পেয়েছি রাজনীতির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বিন্দুমাত্র নেই। কোন কোন ক্ষেত্রে নিছক নিসর্গ বর্ণনাতেও সমাজ রাজনীতি এসে ঠাড়িয়েছে পাশাপাশি অথচ শক্তি শিক্ষার দীনতায় ঈশ্বরগুপ্তের কবিসতার মৌলিকত্ব কৌলিন্তের জয়টীক1 পায়নি _-পাঁবেও না

ঈশ্বরগুপ্ডের প্রচ্ছন্ন দেশপ্রেমযূলক কবিতার মধ্যে তার সামাজিক ব্যক্তকবিতার আলোচনা করতেই হয় প্রসঙ্বের কবিতাগুলি উপভোগ্যতায় অনেক কবিতাকেই

কাব্য ১৯১৯

টেক্কা দিতে পারে নীলকর, ছুভিক্ষ, বড়দিন, এগ্ীওয়ালা তপসে মাছ, বাবু চণ্ডতীচরণ সিংহের খ্রীষ্ধর্মান্ুরক্তি, ছদ্ম মিশনরি, বিধবা বিবাহ আইন, ইংরাজী নববর্ষ, বর্ষবিদাঁয় ইত্যাদি কবিতা অভিনব ভাবরসের, চিন্তা-ভাবনার কৌতুককর প্রকাশ কথার ফোয়ারা সৃষ্টি করে কবি তাতে আনন্দে অবগাহনের আকাঙ্ষা মিটিয়ে নিচ্ছেন | হাস্যকর পরিস্থিতি, উত্তট শব্দপ্রয়ৌোগে অচঞ্চল কবিচিত্ত যেন অবাধ ভুর্বার। এসব কবিতায় কাব্যরস নেই কিন্তু চিত্রকল্প আছে-_আর সেইসঙ্গে সমাজের বিক্ষিপ্ঠ মনোভাঁবটিকে কবি কয়েকটি কথায় অনবগ্ভতাবে ফোটাতে পেরেছেন শব্দ প্রয়োগে শ্লীলতা-অশ্লীলতা একাসনে বসেছে, গ্রাম্যতা৷ একচ্ছত্র আধিপত্য করেছে, সর্বোপরি বক্তবাপ্রকাশের জন্ধ কবি যে কোন শব্সাহীষ্য গ্রহণ করেছেন ; শুধু যেন কিছু বলতে হবে বলেই ফাব্যলক্ষ্মীর শরণাপন্ন হওয়া কাব্যসৌন্দর্য ৃষ্টির কোন তাগিদ নেই, সে ক্ষমতাও কবির আয়ত্াধীন নয়, শুধু বলবার জন্য বল আঁর বলার নেশায় পাঁওয় কবি যত্রতত্র থেকে বাক্যসংগ্রহ করেছেন কবিজনৌচিত মনোভঙ্গিমা গাভীর্য নেই, ভাবসমুদ্রের অনাস্বাদিত আনন্দ এখানে সৃষ্টির পক্ষে অপরিহার্য নয়-_ তবু তবক্তব্য। আর সমীজনীতি, রাঁজনীতি, স্বদেশীয়াঁনা, বিদেশীয়ানা মিশিয়ে এক বিমিশ্র কথামালা | ইংরাঁজী নববর্ষ বর্ণনায় ইংরেজীয়ানার প্রতি হিন্দুদের সতৃষঃ মনোভাবটি কথার আঁচড়ে মূর্ত কর। কবির পক্ষে অত্যন্ত সহজ এবং ধরণের পদ্া- রচনায় কবি সিদ্ধহস্ত, কিন্ত চিত্রকল্পনাটি প্রাণবন্ত,

রাঙামুখ দেখে বাঁব] টেনে লও হাম।

ডোন্ট ক্যায় হিন্দুয়ানী ভ্যাম ড্যাম ড্যাম

পি'ড়ি পেতে ঝুরে৷ লুসে মিছে ধরি নেম

মিসে নাহি মিস খায় কিসে হবে ফেম॥

সে যুগের ইংরেজীয়ানার প্রতি লুব্ধ দৃষ্টিপাতের সঙ্গে অর্থহীন বীরত্বের চমৎকার

মিশ্রণে চিত্রটি জীবন্ত কিন্তু ব্যঙ্গের বীঝে মিশে আছে একটি নির্মম সত্য-_“মিসে নাহি মিস খায় কি সে হবে ফেম' ছুটি বিপরীতধর্মী মনোভাবের প্রতি কটাক্ষপাত। ধর্মত্যাগে তৎপর সে যুগের ক্রীশ্চানী মনোভাবাপন্ন হিন্দুসম্প্রদায়ের প্রতি কবির নির্মম হান্যোক্তি-_

দিশীরুষ্ণ মানিনেক খষিকষফণ জয়

মেরিদাতা মেরিস্ত বেরি গুড বয়

যীশুর এই ব্যাখ্যাটিও অভিনব ।-_ক্রীশ্চানী হুল্লোড় দেখে যীশুকে “মেরি দাতা”

বলে ব্যাখ্যা করার লোভ সামলাতে পারেননি কবি। পরিহাসরসিকতার মধ্যে সমাজ, ধর্ম, নীতিরক্ষার জন্য এই ব্যঙ্গরঙের হাতিয়ার প্রয়োগ করে ঈশ্বরগুপ্ত তার

২০০ উনবিংশ শতার্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

সমাজপ্রীতি জাতিগ্রীতির পরোক্ষ পরিচয় দিয়েছেন | “সামাজিক ব্যঙ্গ" পর্যায়ে ধরণের অজস্ কবিতার মধ্যে ঈশ্বরগুপ্তের ক্ষমাহীন মনোভাব অক্ষম আক্রোশে গর্জন করে উঠেছে মাত্র

সমাজ, ধর্মরক্ষার জন্য ঈশ্বরগুপ্ত প্রগতিকে অস্বীকার করে নির্মম অন্থদারতারও পরিচয় দিয়েছেন এসবক্ষেত্রে দূরদশিতার অতাবে-_সমাজের প্রগতির যথার্থ প্রবণতা হৃদয়ঙ্গম ন। করে ঈশ্বরগুপ্ত নিন্দিত হয়েছেন সে যুগের সমাজচেতনার মূলে সংস্কারবৃত্তির বৈপ্লবিক প্রকাঁশ ঘটেছিল রামমোইন বিগ্ভাসাগরের চারিত্রিক শক্তিতে যুগোততীর্দ মনীষা সংগ্রামের অবিচল নিষ্ঠায় তীরা পর্বতসম, দেশপ্রেম তাঁদের দৃষ্টিকে নতুন প্রেরণ। সংগ্রামসামর্থ্য দীন করেছিল কিন্তু ঈশ্বরগুপ্ডের স্বভাবে ঠিক তার বিপরীত বৃত্তি লক্ষ্য করেছি তার ধারণা জীবনচর্ষা চিরাঁগত সংস্কীরকেই মেনে নিয়ে তৃপ্ত এটি নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি আত্যত্তিক নিষ্ঠা দেশগ্রীতির সাবেকী ভঙ্গিমা। উশ্বরগুষ্তের দেশপ্রেম সংস্কার চাঁয় নি;_-নিজের সমাজের সমস্ত ক্রটিকেও মহনীয় করে দেখার মধ্যে একটা আত্মগরিমা আছে, সেই অহমিকাই তাঁকে কোথাও কোথাও অচ্ছদার করে তুলেছে শ্রীস্থকুমার সেন প্রসঙ্গে বলেছেন-_“বাঙ্গালীর সংস্কৃতির প্রতি ঈশ্বরগুপ্ঠের টান ছিল আন্তরিক। তাহার গৌড়ামীরও প্রধান যূল ইহাই ।৮-_সেজগ্কই তিনি আভ্যন্তরীণ সংস্কারকে অভিনন্দন জানাতে পারেননি, বিরূপতায় মুখ ফিরিয়েছেন। অথচ প্রাচ্য পাশ্চাত্যের সার্থক মিলনের মধ্যে আমাদের ভাবীযুগের উদ্বোধন অপেক্ষমান,_সে যুগের এই সহজপ্রবণতাটি ঈশ্বরগুপ্ঠের দৃষ্টিভঙ্গিতে ধর! পড়েনি। যুগকে অতিক্রম করে রামমোহন হুদূর ভবিষ্যতের ছবি দেখেছিলেন, তার প্রকাশ্য বক্তৃতার একটি অংশের বক্তব্য,--ছ1029 005 02150128] 2506116006১ [ 200 10)001659960 0) 00০ 000৮1061010 6086 076 £65866] 000 10661500152 1610) চ0010962 8200160060) 006 2169661 11102 00 1090005620061/৮ 10 116510805, 50018] 20 00116091 8:68 ) 298০6 1১1০1) ০৪ 02 28911 010৮2 05 5012019210108 016 ০0201001 00052 0: 005 5000)05 00512 আ150 02৮৩ 21710550 015 ৪৬81068£6 আ10 0590 0৫6 00036 আ1)0 0001051780615 17855 006 1980 01090 90001001215” -৩

ঈশ্বরগুণ্ের প্রতি কোন কটাক্ষপাত এখানে আছে কি না৷ জানি না কিস্ত ঘদদি এটা সে যুগের আচারসর্বস্ব কোন দেশপ্রেমিকের প্রতি আরোপ করি তাহলেও খুব বেশী

৩, 1,0০5 00056, “7076 21851) ৬/০7005 ০1 £৪12 29007001720 009১ 15০0815 51৮2 00150710680, 1829 2৮10৬) 11511 0০2108005,

কাব্য ২০১

ভুল হবে না। ঈশ্বরগপ্ত “সংবাদ প্রভাকরের” মধ্যে যে দেশপ্রেমিকতার বস্তা বহিয়েছিলেন তাঁতে এই আচাঁরসর্বস্বতা কতক পরিমাণে ধরা পড়েছে বিশেষ করে, বিধবাঁবিবাহের প্রসঙ্গে নশ্বরগুপ্ের এই গৌড়ামী বড় বেশী প্রকট হয়েছে দেশপ্রীতির যে প্রলেপে এই গৌঁড়ামীও সমর্থনযোগ্য হয়ে ওঠে, বিধবাবিবাহের প্রতি কদর্য কটাক্ষপাঁতে তা অনেক সময়ই অসহনীয় মনে হয়। কিন্তু প্রসঙ্গ ছাড়া অগ্তাত্র এই ধরণের গোঁড়ামী সত্যিই চোখে পড়ে না। *বিধবা বিবাহে” ঈর্বরগুপ্তের অসম্ভব প্রস্তাব যে একদিন কালের দাবীতে সত্য বাস্তব হয়ে উঠবে এই ধারণা থাকলে হয়ত চ্যালেঞ্জ করার ছুঃসাহসকে তিনি দমিত করতেন বিধবাঁবিবাহ আইন প্রসঙ্গে তার চ্যালেঞ,-_

"গোপনেতে এই কথা বলিবেন তারে

জননীর বিয়ে দিতে পাঁরে কি না পারে

যদি পাঁরে তবে তারে বলি বাহাদুর

এমনি করিলে সব দুঃখ হয় দূর

সহজে যছ্ধপি হয় এরূপ ব্যাপার |

করিতে হবে না তবে আইন প্রচার

এই চ্যালেঞ্জের জবাব বিগ্ভাসাগরপন্থীদের একজন দিয়েছিলেন জননীর পুন-

বিবাহ দিয়ে। বাহাছ্রীর খেতাবও হয়ত লাভ করেছিলেন_ কিন্তু আইম করেও যে দেশাচার, সংস্কার রৌধ করা যাঁয় না-_-এ সত্যও অবধারিত হ্তরাঁং উনবিংশ শতাবীর প্লাবনবন্যার পলিমাটিতে দীর্ঘদিন ধরে যে সভ্যতা গড়ে উঠেছে, যুগচাঞ্চল্য স্তিমিত হয়ে যে সহজসত্য আত্মপ্রকাশ করেছে, সেখানে ঈশ্বরগুপ্তের চ্যালেঞ্জ এখনও এক বিরাট গ্রশ্ন। বাহীছুরী পাবার লোভ থেকে মুক্তি পেয়ে আমরা দেখেছি গৌঁড়ামীর মধ্যেও, আচারসর্বস্বতার মধ্যেও জাঁতিচরিত্রের একটি অনির্বাণ মৌলিকত্ত আছে-_ মুগ যুগ ধরে যা সমাজ লালন করে আসে- চাঁঞ্চল্যে তা স্থানচ্যুত হয় বটে কিন্তু অপহৃত হয় না। স্বতরাং এই আচারসর্বস্বতার মধ্যেও দেশপ্রীতির সুন্দর স্পর্শ আছে-_তা অস্বীকার করা চলে না। এই*গুসঙ্গে ঈশ্বরগুপ্তের গৌড়ামি সমর্থন ন' শা করেও উদারতারও অসংখ্য নিদর্শন দেখানো যাঁয়। কৌলিন্যের অসার গর্ব, সামান্য ধর্মীয় আচার উৎসব নিয়ে অহেতুক অসংগত মাতামাতির হুবহু চিত্র তিনিই লোকসমক্ষে তুলে ধরেছেন *কৌলীন্ত” কবিতায় দেশাচারের-লোঁকাচাঁরের প্রতি কবির বীতরাগের হ্বন্দর নিদর্শন আছে,__

মিছা কেন কুল নিয়া কর আটাঁআাটি।

যে কুল কুল নয় সারমাত্র আটি

২০২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেষ

কুলের গৌরব কর কোন অভিমানে মূলের হইলে দোষ কেবা তারে মানে কী গ্ঁ গ্ী ঝা কুলের সম্ভ্রম বল বলিব কেমনে শতেক বিধবা হয় একের মরণে বগলেতে বৃষকাষ্ঠ শক্তিহীন যেই। কোলের কুমারী লয়ে বিয়ে করে সেই ছুধে দাত ভাঙে নাই শিশু নাম যার পিতামহী সম নাঁরী দারা হয় তার [কৌলীন্ত। নিতান্ত অশৌভন, অসঙ্গত, যুক্তিহীন দেশাঁচারকে কবি কখনও সমর্থন করেননি এই দেশাচরের প্রতি তাঁর অভিযোগও অন্তহীন সে যুগের "মানযাত্রার” পর্বটি কবি চমৎকারভাবে চিত্রিত করেছেন, আমাদের এই বর্গ কোন ক্রমে নহে নানারীগ রঙ্গরসভরা চে ১১৪ গ্ঁ উচ্চ আর নীচ জাতি বাবু হোয়ে রাতারাতি, মাতামাতি করে কত রূপ। ফুলায় বুকের ছাতি যেন নবাবের নাতি হাতি কিনে হোয়ে বসে ভূপ। এবং দ্নানযাত্রীর অতিপরিচিত একটি জীবন্তচিত্র তুলে ধরে কবি তার শেষ মনোভাব প্রকাশ করেছেন এভাবে,__ আমি যে অভাগ! অতি, স্বভাঁবতঃ ক্ষীণমতি, কোন কালে মাহেশে না যাই। ইচ্ছ1 হেন থাঁকে জ্ঞান, করিয়া বিভুর ধ্যান, ঘরে যেন মুক্তিন্নান পাই 'পাঁটা* কবিতায় নানা প্রসজের অন্তরালে বৈষ্ণব ধর্মের নিতান্ত দৃষ্টিকটু রূপটিও চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন কোপ্পীধারী প্রেমদীল সেবাদাসী নিয়ে দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে খঞ্জনী বাজিয়ে হিন্দু কলেজের পঠনপাঠনরীতির সঙ্গে কলেজের নামকরণের কি নিদারুণ পার্থক্য! কবি নিয়ে রসিকতা না করে পারেননি

কাব্য ২৩৩

নগরে অনেক কেলে হিন্দুর কালেজ গেল তার হিন্দুনাম ঘুচিয়াছে তেজ

এরপরে মিসেনরি, রেতে জেলে সেজ খুলিবেন থিয়েটার বাইবেলের পেজ কাঁজ নাই নিয়ে আর ইংলিস নালেজ কালেজের নাম হোলো, খিচুরি কালেজ হিন্দু কলেজে খ্রীষ্টান ছাত্র ভি উপলক্ষ্যে কবির এই ব্যঙ্গ কবিতাটিও অনবদ্য আবার হিন্দুয়ানীর জগাঁখিচুড়ি দেখেও সখেদে কবি আঁক্ষেপ করেছেন, পিতাদেয় গলে স্থত্র পুত্র ফেলে কেটে বাঁপ পুজে ভগবতী বেটা দেয় পেটে ৰা নাঃ পাচ গা বুড়া বলে রাধাকুষ্ণ ছোঁড়া বলে ঈশু। হাঁসি পায় কান্না আসে কব আর কাকে ? যাঁয় যায় হি'ছুয়ানী আর নাহি থাঁকে [ আচারভ্রংশ 7 স্তরাং ঈশ্বরপগুষ্টের গৌঁড়ীমীর মূলে আন্তরিকতার অভাব ছিল না। দেশাচারের বিকৃতিকে এশ্রয় না দিয়ে সমাজের সনাতন নীতিনিয়মের প্রতি তার অগাধ আস্থাই প্রমাণ করে সমীজের কল্যাণচিন্তাই তার যূল ভাবনা সমাজচিন্তা তার কবিতাঁর একটি বিরাট অংশ জুড়ে আছে এবং সে কবিতাতে তাঁর অনায়াসপট্ত্বও সহজেই ধরা পড়েছে নীলকর প্রসঙ্গে ঈশ্বরপগুপ্টের বৃহৎ আয়তনের কবিতাটি প্রসঙ্গে আলোচনার যোগ্য নীলকরসাহেবের অত্যাচারে বাংলাদেশ জর্জরিত মুমৃষুপ্রায়। বাঙ্গালীর স্বপক্ষে 'এই সময়ে ধারা কিছু বলেছেন--তীরা নমস্য | নীলকর সাহেবদের অত্যাচার প্রসঙ্গটি আমাদের নিপীড়নের ইতিহাসের এক চাঞ্চল্যকর অধ্যায়; সাহিত্যে স্থান পেয়েই তার গুরুত্ব পরবর্তীকালে আরও লক্ষণীয় হয়েছে দীনবন্ধুর “নীলদর্পণ, সংগ্রামী মানুষের মনে প্রেরণা এনেছে, আন্দোলনের অর্থকে আরও ব্যঞ্জিত করেছে,_-সে ইতিহাস আঁলোচনাঁরই যোগ্য ঈশ্বরগুপ্তের সমাজদরদী হৃদয় এই অত্যাচারচিত্র রচনায় যে কতটা সংবেদনশীল হয়ে উঠেছিল -তার প্রমাণ এই স্বৃহৎ কবিতাটি ঈশ্বরগুপ্ের সমাজচেতনার প্রসঙ্গে দেখেছি তাঁর তাক্ষ দৃষ্টিনিক্ষেপের ভঙ্গিমা | প্রতিটি মুহুর্তেই তিনি সচেতনভাবে সমাজকে সমালোচনা করেছেন,-_-এ ব্যাপারে তার দ্বিধা নেই, মস্থরতা নেই। তিনি স্পষ্টবাকু খু নির্ভীক সত্যবাদী রাজনীতির ঘূর্ণাবর্তে জনজীবনের পিষ্ট-দলিত-নিপীড়িত চিত্র তুলে

২০৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল। সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

ধরতেও তাঁর বিন্দুমাত্র সংকোচ নেই,--তবে লক্ষ্যণীয় এই যে সমাজসমাঁলোচনায় ব্যঙ্গ আর বিন্রপের কষাঘাত যত তীব্র, রাজনৈতিক প্রসঙ্গে সেই ব্যঙ্গ সম্পূর্ণ অন্তহিত। রাজনীতির সমালোচনায় ঈশ্বরগুপ্ের আজিতে যেন অন্ুনয়ের মৃছুষ্পর্শ ; সমালোচনার তীব্রতা এখানে আতিরূপে প্রকাশিত রাজনীতি, শাঁসননীতির সমালোচনায় স্বভাবসিদ্ধ ব্যঙ্গ-বিভ্রপের অনুপস্থিতির হেতু সন্ধানে বেশীদুর যেতে হবে না। রাঁজ- নীতির নাগপাশে শৃঙ্খলিত আত্মার গর্জনধবনি সাময়িক রোষটুকু এড়াবার জন্যই মৃদ্ুতায় পর্যবসিত হয়েছে! বক্তব্যকে জনগণের সামনে তুলে ধরতে গেলে এই নতির কলঙ্ক স্বীকার না করাটাও ব্যর্থতারই নামান্তর ঈশ্বরগুপ্তের রাঁজপ্রীতির নিদর্শনরূপে এই বাঁগভঙ্গিমাকে সাক্ষী রাখা চলে কি না বিচার্য, কিন্তু বক্তব্যের গভীরে ঘনীতৃত বেদনাও পীড়নের মর্মস্তদ আর্তনাদ অতিসহজেই মর্মস্পর্শী হয়ে উঠেছে বাঁগ ভঙ্গিমার বিনতি দিয়েও অন্তরাত্মার আর্তক্রন্দন প্রতিহত হয়েছে কি? 'নীলকর” কবিতাটির মধ্যে একাধারে শাসন সমালোচনা, অত্যাচারের অনাবৃত বর্ণনা, বক্তব্যের তির্যক ব্যঞ্নার বিমিশ্ররূপ দেখা যাঁয়। নীলকর অত্যাচারের ছবহু চিত্রটি অঙ্কন করে ঈশ্বরগুপ্ত জনচিত্তকে অন্ততঃ দেশের আভ্যন্তরীণ শাসন সম্বন্ধে সতর্ক করেছেন | দীর্ঘ কবিতাটি তিনি কবিগানের ভঙ্গিতে রচনা করেছেন। জানি না গায়েনের কে এই অত্যাচার কাহিনীর বহুল প্রচারের কোন উদ্দেশ্যযূলক প্ররোচনা এতে ছিল কি না। কিন্ত অনুনয়ে, ক্ষোভে, ছুঃখে-বেদনাঁয়, কটাক্ষে হাহাকারে কবিতাটিকে একটি আশ্চর্য স্ষ্টি বলে মনে হয়। নীলকর অত্যাচার সম্ভব হয়েছিল আমাদের দুর্বলতার অসহায়তার রন্ধপথে পরাজিত-আত্মধিক্রীত জাতির জীবনে অত্যাচারের ঘটনায় নতুনত্ব কিছু নেহ; শাসকগোষ্ঠীর স্বেচ্ছাচারের অধিকারের সনদ আমরাই তাদের হাতে তুলে দিয়েছি জাতীয় চরিত্রের দুর্বলতা, অসহায়তার জীবন্ত সত্যকে কবিতায় তুলে ধরেছেন কবি,__

নামেতে শীলের কুটি হতেছে কুটি কুটি দুঃখী লোক প্রাণে মার! যায়। গং গং নীলকরের হদ্দ লীলে নীলে নিলে সকল নিলে, দেশে উঠছে এই ভাষ যত প্রজার সর্বনাশ কুটিয়াল বিচারকারী, লাঠিয়াল সহকারী, ১১৪ চে রী

হলে ভক্ষকেতে রক্ষাঁকর্তা ঘটে সর্বনাশ | [ নীলকর ]

কাব্য ২৬৫

উত্তেজন। সঞ্চারের পক্ষে এই চিত্রই অনবছ্ধ ;-কিস্তু উত্তেজনার আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আবেগ তখনও জাতীয় চরিত্রে আসেনি যখন “নীলে নিলে সকল নিলে'__ মান, সম্ভ্রম, স্ুখশীত্তি, নিরাপত্ত| হারালো ক্লান্ত মন তখনও বিদ্রোহী হয়ে ওঠেনি, অসহায়ভাবে মাথা পেতে নিয়েছে অত্যাচারের আঘাত নঈশ্বরগুধ্ আমাদের সর্ব- হারার আর্তনাদ শুনিয়েছেন এবং সকাতর অন্ুনয়ে জাতির এই দুঃখবেদনা লাঘবের আবেদন জানিয়েছেন হীশ্তকর অচিন্ত্যনীয় হলেও সেযুগে এই আতি প্রকাশ ছাড়া আর কিই বা করা যেতো যে সংঘবদ্ধ চেতনা! দেশভাঁবনা মানুষকে বিদ্রোহী করে-_-সেই চিন্তাভাবনার ক্ষেত্র তখনও অপ্রস্তত। ব্যঙ্ষের চাবুকে ঈশ্বরগুপ্ত জাতীয় চরিত্রের এই সহজ মর্মান্তিক সত্যটি তুলে ধরেছেন,__

বাঙ্গালী তোমার কেনা, কথা জানে কে না?

হয়েছি চিরকেলে দীস তুমি মা কল্পতর আমরা সব পোষা গরু শিখিনি শিং বাঁকানো, রি বাঁ শা নাঃ আমর] ভুসি পেলেই খুসি হব, ঘুসি খেলে বাঁচব না॥ [এ]

নির্মম হলেও এতে মিথ্যাভীস নেই এতটুকু জাতীয় চরিত্রের ছুর্বলতাকে এমন বথাঁধথ ভাঁবে তুলে ধরেছেন খুব কম কবিই আমাদের দাসত্ব প্রবণতার সঙ্গে পোষ। গরুর প্রভেদ কোথায় ! ঈশ্বরগুপ্তের কবিতায় মর্মীস্তিক আঘাত পেয়ে কেউ কবির কাছে প্রতিবাঁদপত্র পাঠিয়েছিলেন কি না! জানা যায় নি। সত্য অবিকৃত সত্য বলে বাঙ্গালী তা শিরোভূষণ করেছে এরও অনেক পরে স্বাধীনতা আন্দোলনের উদ্দেশ্য উৎসাহ প্রচারের জন্য স্বদেশপ্রেমী নাট্যকার আত্মশ্লাঘায় আত্মবিশ্বাসে নিশ্চিত হয়ে ঘোষণা করেছিলেন,

মান্য আমরা নহি মেষ !

মেষত্ব অস্বীকারের স্পর্ধা নিয়েই জাতিকে আন্দোলনের অর্থ সম্বন্ধে সচেতন করেছিলেন তিনি, কিস্তু মেষের সঙ্গে উপমার যে আভাস এখানে স্পট হয়েছে-_ তাতো অন্বীকার করা যাঁয় না নশ্বরপগ্ুপ্ত জাতীয় চরিত্রের সুক্মতম হৃৎস্পন্দন ধরতে পেরেছেন -এটা ক্কৃতিত্বেরই কথা। অথচ নীলকরের সর্বনাশ! অত্যাচারে মুমৃত্ বাংলা, কবিও নিরুপায় সখেদে কবি বলেন,

তোমার সাধের বাংল হল কাংলা সয় ন৷ অত্যাচার

২০৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

বেগারে হয় রেয়োৎ সারা, জমিদার পড়ে মারা, লাটের দিন খাজন] হয় না তাঁর [এ] অথচ দেশের এই অবর্ণনীয় ছুঃখ-দুর্দশায় আমরা নীরব সাক্ষী শক্তিহীনতায়, আত্মরক্ষার মূলমন্ত্র আমরা বিস্বত হয়েছি, আমাঁদের মেরুদণ্ড অত্যাচারে ভগ্রপ্রায়, চিত্ত অবসন্ন ঈশ্বরগুপ্ত বাজ বেদনীয়, হতাশ! ক্রন্দনে আক্ষেপ করেন,_- রাঁজবিদ্রোহিতা৷ কারে বলে, স্বপ্নে জানিনে, কেবল ঈশ্বরের নিকটে করি, তোমার জয়ের বাসন] [এ] আত্মসমালোচনার এমন দুঃসাহসিক স্বীকারোক্তি সাহিত্যে প্রায় ছুর্ভ, আর সচেতন মানবিকতায়, দেশপ্রেমে মগ্ন হয়ে যিনি প্রথম এই মর্মীত্তিক আত্মসত্য উদঘাটন করতে সক্ষম তিনি প্রতিভাঁশালী কবি না হলেও পরমাত্বীয়, ক্রান্তদর্শাঁ, দেশপ্রেমী, জাতিপ্রেমী নীলকর প্রসঙ্গ নিয়ে সাহিত্যে যে যুগান্তকারী আন্দোলন জনচিত্তকে আলোড়িত করেছিল--সেই 'নীলদর্পণ” নাটকের নাট্যকার ঈশ্বরগুপ্তের ভাবশিষ্ ছিলেন। অন্ততঃ ঈশ্বরগুপ্তের কবিতা একটি মহৎ স্ষ্ির প্রেরণা যে দিয়েছিল তাতে সন্দেহ নেই। ঈশ্বরগুপ্ত যে শব্দটিতে ভাবী যুগের ইঙ্গিত দিয়েছেন সেই রাজবিদ্রোহিতা। সম্বন্ধে তাঁর অন্ততঃ মানসিক অজ্ঞতা ছিল না। অথচ কি নিদারুণভাঁবে বদ্ধাঞ্জলি হাতে মহারাঁণীর কৃপাভিক্ষা করেছেন তিনি, -- এই রীজ্যটি করেছ ম1 খাস এসে দেশেতে বসৎ কর অন্নপূর্ণা যৃতি ধর, অন্নদানে বাচাও প্রজার প্রাণ সব অন্নভূমি কর তুমি, তুলে নিয়ে নীলের চাঁষ, হয়ে রাঁজরাজেশ্ববী কোথা ম1 পায়ে ধরি সম্তানে পূরাঁও অভিলাষ [এ] কিন্তু এই কৃপাভিক্ষা চাওয়ার মধ্যেও আত্মগ্লানির দ্রবরস ন! মিশিয়ে পারেন নি কবি --হুতরাঁং কবিভাবনার সম্পূর্ণতা৷ ভিক্ষার্থীর কাতরোক্তিতে সম্পূর্ণভাবে পাওয়। যায় না, সমগ্র কবিতাটির অন্তনিহিত ভাবসত্যের আলোকে তার সন্ধান করতে হবে। কবি যখন কথার কথ। হিসেবেও বলেন, আমার ধন গিয়েছে মান গিয়েছে এখন ম! প্রাণ লিয়ে সংশয় [এ] * তখন ধনের সঙ্গে মানের উল্লেখ না করে পারেন না)--অথচ মানের সঙ্গে ধন- প্রাণের সংযোগ নিতান্তই অল্প ধন প্রাণের অর্থ বুঝি, মান গিয়েছে বঙ্গে আমাদের

কাব্য ২০৭

ভাবের ঘরে, আশার ঘরে শুন্যতা যেন আহাশ্য করে ওঠে। ঈর্বরগুপ্ের নিতান্ত অচঞ্চল উক্তির মধ্যেও এধরণের আত্মঘাতী হাহাকার স্পষ্টভাবেই শোন! যায় অনেক শবতরঙ্গের মাঝখানেও অত্যাচারিতের আর্তনাদ ভেসে আমে কবির লেখনীতে,-_ বঙ্গবাসী শত শত বিপ্রোহেতে হল হত পরিবার ছিল যত, ধনে প্রাণে হল কাঙ্গালী নীলকর অত্যাচারে সরকারের নিক্ক্রিয়তা কবি বারবারই উল্লেখ করেছেন,-- নীলকরের করেতে হোল, মেজিষ্টরি ভার এর বাড়া ম৷ প্রজা লোকের বিপদ নাইক আর এবং সরকারের উদাঁপীনতায় অত্যাচারী নীলকর আমাদের ঘরে ঘরে যে ক্ষুধার্তের আর্তনাদ সৃষ্টি করেছে কবি তার প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন স্পষ্টভাবে,__ অন্ন বিনে ঘরে অনাহারে প্রাণে মরে, পরস্পরে উচ্চস্বরে, করে হাহাকার দিনান্তরে উদর পুরে অন্ন মেলা ভার আইন হয়েছে জারি, মার্তে আমাদের ইংরাঁজশীসনের গলদ শীসকস্থলভ হৃদয়হীনতার পরিচয় পেয়েই কবি স্ত্তিত। সভ্যতার সংস্কৃতির অন্তরালে হৃদয়হীন বর্বরোচিত শীসকমনোভাবটি গোপন করার কোন ইচ্ছাও ছিল না। শাসকের ধর্ম শক্তির দত্তপ্রদর্শন, আমরা হয়েছি তারই অসহায় বলি। নীলকর অত্যাচারের মধ্যেই ইংরেজদের শাঁসকবৃত্তির চরম নগ্ররূপটি প্রত্যক্ষ করেছি নিরীহ গ্রামবাসীদের অত্যাচারের আর্তনাদে ইংরেজ শাসক নীরব থেকেছেন, শাসনের ভার তুলে নিয়েছে নীলকর সাহেব সম্প্রদায় উদাসীনতা ক্ষমতার যথেচ্ছাঁচারিতা দিয়ে ইংরেজ তাঁর ক্ষমতালোভী বর্ধর অন্তরাত্বাটি আমাদের সামনে মেলে ধরেছে। সমসাময়িক ঘটনা হলেও ঈশ্বরগুপ্ত ইংরেজ শাসনের এই সত্যচিত্রটি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন অকপটে, চরম ছুঃসাহসিকতায় অন্ততঃ সে যুগের আর কোন লিখিত দলিলে এমন স্পষ্ট এঁতিহাসিক চিত্র পাই না। ঈশ্বরগুপ্ত দেশকে ভালবেসেই দেশবাসীর এই মর্মবার্তা প্রকাশ করেছেন,-কোন

২০৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে ব্বদেশপ্রেম

ভয়েই তিনি নীরব থাকেন নি। মাঝে মাঝে করজোড়ে ভিক্টোরিয়ার দোহাই পেড়েছেন ১--লাগরপারে রাণী ভিক্টোরিয়ার কানে সে বার্তা অশ্রুতই রয়ে গেছে। এই বিনতিটুকুর আশ্রয় গ্রহণ না করলে সে যুগের অত্যাচারের এই নগ্নতাঁকে ব্যক্ত করার কোন উপায় ছিলনা নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের হেতুনির্দেশেও নিভুল সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, _ সন্দেহে সংশয়েও তা৷ অনবদ্য যুক্তিনিষ্ট “সেফায়ে অবাধ্য হয়ে, যুদ্ধ করে বাহুবলে, দিয়ে উদোর পি বুধোর ঘাড়ে, বাঙ্গীলীকে কাটতে বলে।

১৮৫৭ সালে সিপাহীবিদ্রোহের অসম্ভাবিত ঘটনায় সম্গ্রভারতে সংগ্রামী সিপাহীদের স্থপরিকল্পিত যুদ্ধশক্তির কথা প্রকাশিত হয়ে পড়ে,_-ইংরেজশাসক অত্যন্ত নিপুণতার সঙ্গে তা দমন করলেও এদেশীয় মনোভাবের সঙ্গে তাদের একটা ক্ষণিক পরিচয় ঘটেছিলো। | বিদ্রোহী সৈনিক সম্প্রদায় স্ষুলিঙ্গের আভাস দিয়েছিলো মাত্র, কিন্ত দাবানলের প্রতিক্রতি সপ্ত ছিল। শাসকোচিত দূরদৃষ্টি দিয়ে ঠিক তার পরে ১৮৫৯ সালেই সম্মিলিত নীলচাধী-বিদ্রোহকে ইংরেজ শাসক অন্য ব্যাখ্যা দিয়েছে সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে নিপীড়িত নীলচাঁধীরা বিদ্রোহী হয়ে স্বিচার প্রার্থন! করেছিল। ঈশ্বরগুপ্ত খুব সংক্ষিপ্ত আকারে তারই প্রতি ইঙ্গিত করেছেন এখানে ঈশ্বরগুপঞ্তের অমলিন দেশপ্রীতির পরিচয়ট্ুক উদঘাটিত হয়েছে এবং তার ইংরাজ তোঁষণত্রত পালনের অর্থটিও ব্যাখ্যা করেছি কিন্তু ঈশ্বরগুপ্তের মত রক্ষণশীল দেশপ্রেমীও মহাত্মা ইংরাজদের প্রশংসা করেছেন,_এটুকু তার স্বচ্ছদৃষ্টির পরিচয় বহন করছে।

মহাত্বা ইংরেজসম্প্রদায়ের প্রসঙ্গে তার অপরিসীম শ্রদ্ধা, কিন্তু অত্যাচারী ইংরেজের বিরুদ্ধে তিনি রুট; 'নীলকর' কবিতায় তার দেশপ্রেমের উদার মহিমা ধর! পড়েছে --অসহায় জাতির সামনে এই মহাত্মা ইংরেজদের কথ1 তিনি অকপটে ব্যক্ত করেছেন, এদের প্রতি দোষারোপ যে কতখানি অনুদারত] তাও ব্যক্ত করেছেন,-_

বাজে সাহেব দ্বেষী যাঁরা, কত কটু কহে তারা, মাগো! কেবল তোমার চরণ করে স্মরণ, ভাসতে থাকি নয়নজলে ইংরেজ মহাত্বার প্রসঙ্গে তাঁর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা, হ্ালিডে আর বিডন আদি, ধর্মবাদী সত্যবাদী, মাগো

কাব্য ২৬৪৯)

ওমা, আমর কেবল বেচে আছি, এর দেশে আছে বলে

এদের গুণে আছে রাজ্য,

এদের গুণে চলছে কার্য, মাগো

এখন এমন বিধি কর ধার্য,

রাজ্যে যেন সোনা ফলে [এ]

পরবর্তী কালে বহু মনীষী ইংরেজমহাত্সাদের গুণকীর্তন করেছেন কিন্তু ঈশ্বরগুপ্তের মত অপবাদের বোঝ তাঁদের বহন করতে হয়নি | _বস্ততঃ উদার দৃষ্টিভন্দির অধিকারী না হলে সেযুগে শাসক ইংরাজদের স্বপক্ষে অকুণ্ঠ গুণকীর্তন করার পাহসও খুব কম লোকের ছিল। কিন্তু যুগেও ঈশ্বরগুণ্ডের সঠিক যূল্যবিচার হয়নি এট! আক্ষেপেরই কথা। একমাত্র সাহিত্যপ্রেমী বঙ্কিমচন্দ্র তাকে সাহিত্য জগতে অগ্টার আঁসনে সাদরে বরণ করেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্রের ঈশ্বরগুপ্ধ সম্পকিত অমূল্য আলোচনাটি না থাকলে ঈশ্বরগুপ্তের স্থান সাহিত্যইতিহাসে যথাষথ নির্ণাত হোত কি ন। সন্দেহ ঈশ্বরগুপ্ত একঘরে হয়ে থাকতেন,ত্ীর সত্যিকারের আন্তরিকতার মূল্য না পেলেও আশ্চর্য হবার কিছু ছিল না। বঙ্কিমচন্দ্র ঈশ্বরগুষ্টের খাঁটি কবিস্বভাবটি আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন বলেই তার জন্য ছুঃখ করেছিলেন কবিস্বতাবের যে বিরটি ্রশ্বর্যে তিনি ধনী ছিলেন, উপযুক্ত শিক্ষার অভাবে তা আত্মপ্রকাশের পথ পায়নি কিংবা যেভাবে তিনি আত্মপ্রকাশ করেছেন তা তার কবিভাবনার উপযুক্ত ছিল না। কিন্ত রাজনৈতিক ইতিহাসের সমসাময়িক ঘটনাবৈচিত্র্যের যে নিখুঁত বিবরণ তিনি রেখে গেছেন, এক হিসাবে তা অযূল্য এতিহাসিক দলিল বলে বিবেচিত হতে পারে

ব্যঙ্গে-রঙ্গেও ঈশ্বরণ্ুপ্ত তার স্বমত স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন। কবিচিত্তের দ্বিধাখ্ডিত মনোভাব এসব কবিতায় দেখা দেয় নি। একদিকে ইংরাজশাসনের প্রতি আ্ুগত্য প্রকাশে অকপট, ইংরাজী সভ্যতা অগ্রগতিতে সমর্থন জানিয়েছেন কবি, অন্যদিকে সেই শিক্ষা সভ্যতা যখন দেশীয় আচার আচরণে অসঙ্গতি সৃষ্টি করছে -_ঈশ্বরগুপ্ত তখন ব্যঙ্গের আঘাত হেনেছেন ;--একই সঙ্গে খু স্পষ্টবাক কবির স্বভাবটি বারবারই উকি দিয়েছে দেশীয় শিক্ষাসংস্কৃতির অনুকূলে. তিনি কখনও গভীর বিশ্বাসী আবার কখনও বিদেশীয় সংস্কতিমুগ্ধতায় আত্মমগ্ন কিন্তু চিন্তাশক্তির দুঃসাহসিক প্রকাশে তার ব্যঙ্গ কবিতাগুলি যেন নির্মম চাবুকের মতো সর্বব্যাপী নৈতিক শিখিলতার এক বীভৎস রূপ দেখে ঈশ্বরগপ্ত নির্ময ভাবে সমালোচনা করেছেন,

১৪

২১০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

কিন্ত জাতীয় চরিত্রের শিথিলতার প্রতি তার কটাক্ষপাতের বিচার হয়েছে সম্পূর্ণ অন্য অর্থে ঈশ্বরওপু প্রগতিবাদী নন বলেই ধিকুত হয়েছেন সমাজচিস্তার উদার আদর্শ সে যুগে আদৃত হয় নি তার বনু প্রমাণ আছে ।- কিন্তু ঈশ্বরগুপ্ত ব্যঙ্গের চাবুকে সামাজিক বিশৃঙখলার এই নগ্রক্ূপ প্রকাশ করে তার নিঃসীম সমাজগ্রীতির পরিচয়ই দিয়েছেন, প্রগতিবাদের পরিপন্থী বলে তার এই আন্তরিক সদিচ্ছাটুকুর অমর্যাদা করা অসঙ্কত। '“ছুতিক্ষ' কবিতায় ঈশ্বরগুপ্ত ইংরেজী সভ্যতার সংস্পর্শে আসা হঠাৎবিমৃঢ় এই আধুনিকতার বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন._- হোয়ে হি'ছুর ছেলে টণ্যাঁসের চেলে টেবিল পেতে খানা খাবে এর। বেদকোরাণের ভেদ মানে না খেদ কোরে আর কে বোঝাঁবে ? ঢুকে ঠাকুর ঘরে কুকুর নিয়ে জুতো পায়ে দেখতে পাঁবে | দুভিক্ষ ] অতিসামান্ত আচারআচরণের এই অসগতিটুকু কবির মনোজগতে এক বিপুল আলোড়নের সৃষ্টি করেছে সমাজচেতনীর মর্মযূলে বসে কবি যেন পুরাতনের সঙ্গে নবীনের এই বাহ পরিচয়টুকুর মধ্যে এক পীড়াদায়ক অসঙ্গতি লক্ষ্য করেছেন। অথচ ইংরাজী সভ্যতা ক্ষমতার প্রতি তীর পূর্ণ স্বীকৃতি আমরা দেখেছি ঈশ্বরগুপ্ডের কবিতা বিচাঁর করে তাঁকে গৌড়া কিংবা সেকেলে বলা কতদূর সঙ্গত সে প্রশ্ন থেকেই যাঁয়-_কিন্তু দেশগ্রীতির বিচারে তার মৌলিকত্ব সে যুগের পক্ষে বিচ্ময়কর বলে মনে হয়েছে একদিকে অসহায় কবি ইংরাঁজশীননের প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ করছেন অন্যদিকে পরাধীনতার অন্তজ্ঞীল! তার বেদনাহত চিত্তটিকে তুলে ধরেছে। একদিকে অঞ্রজলে তিনি তার অসহাঁয়তা প্রকাশ করেছেন, অন্যদিকে সমসাময়িক ইতিহাস বিচারে তিনি যুগোচিত বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করেছেন তবু তীর সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে যে মর্মবাণীর পরিচয় পেয়েছি অপরিসীম বেদনায় অধানতার কারাগারে সে যেন তার আর্ভক্রন্দন। ব্রিটিশ শাসনের যথার্থ উদ্দেশ্য তাঁর মত সে যুগে আর কেহ বা বুঝেছে? কেই ব1 বলেছে, ধিক ধিক অধীনতা, ধিক তোরে ধিকৃ। ফুকরে কাদিতে হয় লিখিতে অধিক | ব্রিটিশ শাসন ] অনেক প্রণস্তি দিয়েও সে যুগে পরাধীনতার মর্মজালাকে তিনি কোনমতেই নিরুদ্ধ করে রাখতে পারেন নি, লেখার মধ্যে তা কতটুকুই বা বলা যায়? তাই কবির এই ক্রন্দনসিক্ত অন্তরটির মধ্যে দেশপ্রেমের এক অমলিন সত্য সাহিত্যের সত্য হয়ে

কাব্য ২১১

উঠেছে দেশপ্রেম সাহিত্যের এক নতুন দিক পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে আত্মউপলব্ধির সেই মহিমায় ঈশ্বরগুপ্ত প্রোজল | 2২০31) যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন “1136 5962০0০150৫ 055 2027 আ1১0 51505 102. 5৬626 204 50006] 20008 0০ 195 ৫0 1015 116 011015০0000 18 01505551599 896৬1001% 0221) 2 0018502106 0102102 01 116618 00165, 9 ঈশ্বরগুপ্ের দেশপ্রেমও ঠিক সেভাবে সাহিত্যের এক নতুন অধ্যায়ের সুচনা

করেছে দেশভাবনার সাহিত্যরূপ দিয়ে ঈশ্বরগুপ্ত সাহিত্যের পরিসর বিস্তৃত করেছেন, সেই সঙ্গে আগামী দিনের পাথেয় সঞ্চিত করেছেন দেশপ্রেমী কবি ঈশ্বরগুপ্ত সম্বন্ধে ওয়া্উসওয়ার্থের কবিতাংশ যদি প্রয়োগ করি তবে তা খুব অসঙ্গত হবে না।

৬৬1০ ড1)261)21: 015152 0: 10100 2005 21] 6102 22101)

70] ০৮০1) 2130 60 00016 22205 £৪৮০ 01100,

007 102 170056 9911, 00 9162100 10006 1015 18009,

4৯00155852৪, 062.0. 00191080910) 1120)0--

[11009 00173101% 11) 1)109611 2100 17) 1315 02856 3

৯100 10116 00610001658] 00156 15 59 01027101775, ৫1275

[71501622001]. ০010021)02 01£ 1769৮215 2101912752 :

[71015 15 002 10205 ড2.0101৫

যুদ্ধসংগতি নিয়ে দেশের জন্য আত্মদানের মহ্মাকে সেযুগে কল্পনা করতেও

পারিনি তবু উশ্বরগুপ্তকে যেন সংগ্রামী সৈনিকের মতই অস্থির মনে হয় দশ- ভাবনা! থেকে বিচ্ছিন্ন করে ঈশ্বরগুপ্তের কবিসত্তাকে চিনে নেওয়া যায় না। নিতান্ত ব্যক্তিগত হলেও এই চিন্তা যেন সে যুগের পীড়িত আত্মার প্রতিধ্বনি ঈশ্বরগুপ্তের এই দেশগ্রীতিকে ব্যক্তিগত আখ্যা দেওয়ার কারণ, এই চিন্তাভাবনার সঙ্গে বৃহত্তর জনসমাজের যোগাযোগ নেই,__এখানেই তাঁর অপরিসীম মৌলিকত্ব কোন আদর্শের কাছ থেকে এই চিন্তার সম্পদ তিনি লাভ করেননি; তার স্বকীয় সম্পদ। পরবর্তী যুগের দেশভাবনার সঙ্গে এর বৈসাদৃশ্য প্রচুর ইংরাজী সাহিত্যে 217৪৪ £৪০০90199 বলে যা ব্যাখ্যা কর! হয়েছে, ঈশ্বরগুপ্ধের দেশশ্রীতি বোধ হয় তাই। শুধু ভালবাসার জন্য ভালবাসা, যা প্রতিটি নাগরিকের ধর্ম, “ম্বর্গাদপি গরীয়সী”

৪. (04০5৫ £072) 40090190150 10116151006 17000075 19245 ৮743"

৫, 08050 2070) 10108150652 91 05 51509 /501100) 05 56507100079505 /01055/016, ঠাঠোএা [১ 10. ১0120, 98801951915

২১২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্দেশপ্রেম

জন্মভূমির অন্য সার্বজনীন দেশপ্রেম ঘা প্রতিটি মানুষের মনে অপূর্ব এক ভাবানন্দ সজনে সক্ষম | ঈশ্বরগুপ্তের স্বদেশপ্রেম তাই উদ্দেশ্যহীন উপলব্ধি, গভীরতর অথচ শান্ত একে ব্যাখ্যা করা যায় এভাবে৩,--”07106 10৬6 ০0৫ ০0000 1095 178৮০ 17021) 09508510105 2100 1 ০201000 02 5810 61586 016 15 20121 0081 20001561,1001015 00000 15 1)০0100410101081 21901, 89101775 2100 0 [80010110515 192161021: 00016 1002 1255 আ০:6)% 0020 006 20005 521102 ৪190 598011802 3 1015 016616100৮৬

ঈশ্বরণ্ডধ তীর দেশবাসীকে আত্মউপলব্ধির বিষগ্নতা, ভাগ্যবিড়ম্বনার করুণ কাহিনী শুনিয়েছেন পরবর্তী যুগে তা পল্লবিত, সঞ্চারিত, বিধৃমিত হয়েছে অতি- সহজেই দেশপ্রেম জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, _দেশভাবনার মূল্য স্বীকৃত হয়েছে ঈশ্বরগুপ্তের সাহিত্যশিষ্যদের শিরায় শিরায় দেশপ্রেমের যে মাদকতা সঞ্চারিত হয়েছিল তাঁর প্রত্যক্ষ ভাবশিষ্য রঙ্গলালের কাব্যালোচনায় তা স্পষ্টভাবেই ধর। পড়ে «সংবাদ প্রভীকরের” পৃষ্ঠায় ধাদের পাহিত্যজীবনের স্থত্রপাঁত পন্নবর্তী- কালের সেই স্বনামধন্ত সাহিত্যসেবীদের মধ্যে রঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায়ের নাম করা যায় “সংবাদ প্রভাকর” সেমুগের শীর্ষস্থানীয় মুখপত্র, স্বয়ং সম্পাদক ঈশ্বরগ% রঙ্গলাল প্রসঙ্গে সংবাদ প্রভাকরের পৃষ্ঠায় লিখেছিলেন,

'রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় অস্মদ্দিগের সংযোজিত লেখকবন্ধু, ইহার সদৃগুণ ক্ষমতার কথ] কি ব্যাখ্যা করিব 1৮৭

সাহিত্যক্ষেত্রে রঙ্গলালের কৃতিত্বের বিচার না করে শুধু দেশপ্রেমী সাহিত্যঅষ্টা হিসাবে বাংলা সাহিত্য তার কাছ থেকে কী পেয়েছে সে বিচার করব সে প্রসঙ্গে রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ঈশ্বরগুপ্তেরই ভাবশিষ্য জশ্বরগ্ুপ্তের কবিচিত্তে যুগপ্রভাব যেভাবে প্রতিফলিত হয়েছে__পরবর্তী কবিসম্প্রদায়ের মধ্যে একমাত্র মধুহুদন ছাড়া প্রায় প্রত্যেকেই সমসাময়িক জীবনচেতন। রাজনীতির নিষ্পেষণে পীড়িত, তাঁদের কবিতায় সমকালীন জীবনযন্ত্রণার প্রকাশ স্মস্পষ্ট মধুক্মদনকে বাঁদ দেওয়ার কারণ, আমাদের সমকালীন জীবনযন্ত্রণার প্রভাব তীর জীবনে পড়বার অবসরই পায় নি,_- তিনি নিজের জীবনের সঙ্গে সে যুগকে মেলীতেই পারেন নি। যে ছুর্দ্মনীয় প্রতিভায় তিনি উদ্ভাসিত সেযুগের সংকীর্ণ পটভূমিকায় তাকে প্রকাশ করার জন্যই তিনি প্রাণপাত পরিশ্রম করে গেছেন কিন্তু রঙ্গলাল, হেমচন্দ্র, নবীনচন্দ্র তাদের সীমিত

৬৯ 001) 01171552057) 7501005 ঠ।11059150006) 15070001924, ৮7192, ৭* সাহিত্যসাধক চরিতমাল]। তৃতীয় খওড। রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে উদ্ধু ত।

কাব্য ২১৩

প্রতিতা নিয়ে সেধুগের পুঙ্খান্ুপুঙ্খ বূপবিশ্লেষণের চেষ্টা করেছেন এই দিক দিয়ে ঈশ্বরগুপ্ত তদের পথপ্রদর্শক, সাময়িক জীবনযন্ত্রণার সঙ্গে সাহিত্যের সেতু বন্ধন করে তিনি বাংলা সাহিত্যে রাজনীতির হাঁওয়৷ ঢুকিয়ে দিলেন,__সাহিত্যসাধনার নিরালম্ব মনোভাব চিরদিনের মত অন্তহিত হল ।--ঈশ্বরগুপ্তের পরবর্তী কবিসম্প্রদায় সেই অর্থে জীবনসচেতন-যুগসচেতন-আত্মসচেতন কবি সমাঁলোঁচকের ভাষায় *“সম- সামরিক সমাজের অনাচার, ব্যভিচার, চবিত্রদৈস্ত, আদর্শহীনতা ঈশ্বর শুপ্তকে যেমন পীড়িত করিয়াছে রহ্গলাল, বিহাঁরীলাল, হেমচন্দ্রকেও ঠিক তেমনি পীড়িত করিয়াছে ।৮

ঈশ্বরপুপ্ত প্রত্যক্ষভাবে যে প্রেরণা সঞ্চার করেছিলেন রঙ্গলালে তার পুর্ণ প্রকাশ ঈশ্বরগুপ্ডের সমগ্র সাহিত্যস্ষ্টির একাংশে তীব্র উত্তেজনায় তিনি দেশপ্রেমকে মুখ্য করে তুলেছিলেন কিন্তু রহ্গলালের সাঁহিত্যনৃষ্টির যূলসত্য দেশপ্রেম রূপেই বিকশিত তার প্রথম কাব্য বিশুদ্ধ দেশপ্রেমের প্রেরণাঁকীর্ণ, দেশপ্রেমে উদ্ধদ্ধ হয়েই তিনি স্বাধীনতা স্বপ্রের উপাদান সংগ্রহ করার জন্য রাজপুত ইতিহাসের প্রতি আকুষ্টচিত্ত। রঙ্গলালের সাহিত্যসাঁধনার যূলে অকৃপণ দেশভাবনার স্বাক্ষর রয়েছে প্রমাণ পরিচয় সমেত। 'পদ্মিনী উপাখ্যানের” ভূমিকারস্তে রক্ষলাল যে কথা বলেছেন, ”১২৫৯ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে একদ] বীটন সমাজের নিয়মিত অধিবেশনে কোন কোন সভ্য বাংলা কবিতার অপকৃ্ঠত প্রদর্শন করেন। কোন মহাঁশয় সাহস পূর্বক এরূপও বলিয়াছিলেন যে, বাঙ্গালীরা বন্কাল পর্যন্ত পরাধীনতা শৃঙ্খলে বদ্ধ থাকাতে তাহা্দিগের মধ্যে প্রকৃত কবি কেহই জন্মগ্রহণ করেন নাই ।”৯

এই উক্তির ভৎ“সন1 রঙ্গলালকে বিদ্ধ করেছিল ; তিনি একটি প্রবন্ধের মাধ্যমে সে যুগের কবি সম্প্রদায়ের প্রতি এই অন্যায় কটাক্ষপাতের যোগ্য প্রত্যুত্তর দিয়েছিলেন__ সেই প্রবন্ধটিও আমাদের আলোচ্য কিন্তু “পদ্মিনী উপাখ্যানে' তিনি সচেতনভাবে বাঁঙ্কালী কবিদের প্রতি আরোপিত এই যুক্তিহীন অভিযোগ শ্বালনের চেষ্টা করেন পরাধীনতার শৃঙ্খলে বদ্ধ থাকলেও কবি সমাজ যে হ্রপ্ত নন তারই প্রমাণ দেবার জন্ত 'পদ্মিনী উপাখ্যানে তিনি দেশপ্রেমকেই মৃখ্যভাবে অবলম্বন করেছেন। ক্থমহান রাঁজপুতএঁতিহ, রাজপুতজাতির স্বাধীনতাস্পৃহা সমগ্র ভারতবাসীকেই আকুষ্ট করেছে। বহু বাঙ্গালী সাহিত্যিকও পরবর্তীকালে রাঁজপুতইতিহাস অবলম্বন করেছেন-_কিস্তু রঙ্জলালের মধ্যে তা উত্তেজন! সঞ্চ করেছে পূর্ণমাত্রায় জাতিগত

৮" তারাপদ মুখোপাধ্যায়, আধুনিক বাংল! কাব্য, কলিকাত1, ১৩৬১ সাল, পৃ--২ »* ক্সঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলা কবিত। বিষয়ক প্রবন্ধ, ১৮৫২।

২১৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেষ

তাবে কবিসম্প্রদীয়ের প্রতি এই কটাক্ষপাতের বেদনায় রঙ্গলাল বিষৃঢ় হয়েছেন সচেতন গরিমায় রাজপুত এঁতিহের এই বীরত্বপূর্ণ বিষয়কেই কাব্যের উপাদাঁনরূপে গ্রহণ করেছেন পরাধীনতার শৃঙ্খলে বদ্ধ হয়ে কবিচিত্বের যে স্থগভীর আতি কবিতাকারে প্রকাশ পেয়েছিল-_এ সংবাদ না জেনেই ধাবা কবিসম্প্রদায়কে অভিযুক্ত করেছিলেন তদের সীমিত দৃষ্টির প্রশংসা করা যায় না। বিশেষ করে, “সংবাদ প্রভাকরের” পাতায় ঈশ্বরপগ্ুপ্ত যে ভাবে দেশপ্রেমের বাণীকেই আকারে ইঙ্গিতে স্পষ্ট করে তুলছিলেন,-সে সম্বন্ধে অজ্ঞতা না থাঁকলে প্রকাশ্য সভায় বাঙ্গালী কবিকুলের প্রতি অমর্যাদীকর এই উক্তি করা হয়ত সম্ভব হোত না। রঙ্গলাল তাঁরই প্রতিবাদ করেছেন স্বাধীনতার আদর্শে যে জাতি একদা আত্মত্যাগের চরমচিহন স্থাপনা করেছে- সেই রাজপুতক্কাতির ইতিহাঁস কাব্যাকারে প্রকাশ করে রঙ্গলাল একই সঙ্গে বাঙ্কালী কবির মুখরক্ষা করেছেন সুতরাং 'পদ্মিনী উপাখ্যান” রচনার মূলে রঙ্গলালের উত্তেজনা-ইদ্পীপনা, ক্ষোভ ছুঃখকে যেন একই সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দেয়। রঙ্গলালের অকৃপণ উদাঁর দেশপ্রেমকে স্মরণ করেই ব্রজেন্্রনাঁথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন,

“যে জাতীয়তাবাদী ওজস্বী কবিতা পরবর্তীকালে হেমচন্ত্র নবীনচন্দ্রকে সার! দেশময় প্রতিষ্ঠ৷ দান করিয়াছিল, প্ররুতপক্ষে রঙ্গলালই তাহার প্রবর্তক |”

[সাহিত্য সাধকচরিতমালা |

“পন্মিনী উপাখ্যান”কে সেই হিসেবে এক উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি বলেই অভিহিত করতে হয়। রঙ্গলাল পরাধীন দেশের কবি- কিন্ত স্বাধীনতার মূল্য তিনি মর্মে মণে উপলব্ধি করেন, স্বাধীনতা হীনতাঁয় জীবন যে কী ছুঃসহ সে সত্য তিনিই প্রথম শুনিয়েছেন | “পদ্মিনী উপাখ্যানের' রচনাপ্রসঙ্গে রঙ্গলাল যে প্রবন্ধটি রচনা! করেছেন তা এই প্রসঙ্গেই আলোচ্য রঙ্গলাল প্রাবন্ধিক নন, বাংলা সাহিত্যে কবি হিসেবেই তাঁর প্রতিষ্ঠা কিন্তু প্রয়োজনে তিনি যে প্রবন্ধটি রচনা করেছিলেন তা শুধু বক্তব্যকেই তুলে ধরার উদ্দেশ্যে নয়, সমগ্র দেশবাসীর কাছে যেন তার ক্ষুব্ধ প্রতিবাদ কবিকুলের মধ্যে মধুহ্বদন, হেমচন্দ্র, নবীনচন্ত্র তখনও আসেননি, রঙ্গলালই বাঙ্গালী কবিকুলের স্বপক্ষে এই প্রতিবাঁদের ঝড় তুলেছেন কবিজনোচিত আস্কীলনেই শুধু নয় _রঙলাল অত্যন্ত যুক্তি সহকারেই সে যুগের মাঁনসিক দৈন্যের সত্যকে তুলে ধরেছিলেন *বাংলাঁকবিতা বিষয়ক প্রবন্ধ” গ্রন্থটি সে হিসেবেই রঙ্গলালের একটি বিশেষ মনোৌভাবকে তুলে ধরেছে পরাধীনতা কবিপ্রতিভার অন্তরায় হয় কি না কবির জবানিতে সে কথার বিশেষ মূল্য আছে।

মদাত্সীয় বন্ধু বাবু কৈলাসচন্ত্র বস্থু গত সভায় কহিয়াছিলেন “স্বাধীনতা হণ্ণ

কাব্য ২১৫

বিহীনতায় মানসিক স্বাচ্ছন্দ্য বিরহ হয়, সুতরাং প্রমোদপরিচ্যুতচিত জাতির মধ্যে যথার্থ কবি কোঁনরূপেই কেহ হইতে পারেন না, অতএব বাঙ্গালীর! বহুকাল পর্যন্ত পরাঁধীনতা শৃঙ্খলে বদ্ধবিধায় তাহারদিগের মধ্যে প্রকত কবি কেহই জন্মগ্রহণ করেন নাই এবং কোন কালে জন্মিবেন, এমত বোধ হয় না, তিনি আরো কহিয়াছিলেন যে, ভারতবর্ষে যখন স্বাধীনতা সম্পদ ছিল, তখন বাল্সীকি, ব্যাস, কালিদাস, জয়দেব প্রভৃতি বিরাজ করিয়াছিলেন ।...যেহেতু স্বাধীনতা সহচরী বিরহে যগ্যপি কবিতা সমুদিতা প্রমুদিতা না৷ হন, তবে মৌঘল সাআজ্যের সময় জয়দেব কবি অগ্রদ্ধীপে জন্মগ্রহণ করিতেন না, আমার প্রিয়বর বন্ধু তাহাকে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা কালে প্রস্থাপিত করিয়াছেন, কিন্ত জয়দেব কবি প্রাচীন কবি নহেন, ইহা অনায়াসে সপ্রমাণ হইতে পারে এতব্যতীত ক্রদাস, তুলসাদাঁস প্রসভৃতি কবিগণ ধাহাঁরদিগের কবিত্ব ভিন্ন ভিন্ন জাতীন্ন মনুষ্যগণ বিশিষ্টরূপে স্বীকার করিয়াছেন, তাহারাও মোসলমান- দিগের রাজ্যকাঁলীন বিরাজমান ছিলেন অপিচ স্বাধীনতা বিহীনতা এবং অন্ন- দীনতা মানসী মলিনতাজন্য যগ্ধপি প্রকৃত কবির অভাব হইত, তবে কোন দেশেই প্রসিদ্দ কবি প্রসৃত হইতেন না, যেহেতু প্রীয় কোন যথার্থ কবিই স্বাধীন অথবা অন্নচিস্তাহীন তথা প্রচ্ুল্লচিত্ত ছিলেন না।১০

'"*রঙ্গলালের প্রধান বক্তব্যে অভিমান গ্রানি যুগপৎ আত্মপ্রকাশ করেছে দেশপ্রেমী কবি হিসেবে সর্বজনীন বিরূপতার সঙ্গে তাঁর পরিচয় শুধু তাঁকে বেদনাবিদ্ধ করেনি, তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন রঙ্গলালের কবিচিভ্তের এই নিখাদ দেশপ্রেম তাঁর প্রতিভার পরিচায়ক নয়-_কিস্তু দেশপ্রেমের স্বাক্ষর দেশকে ভালবাসেন বলেই অযথার্থ এই মন্তব্য তিনি মেনে নিতে পারেননি সাহিত্য বিচারে তিনি তখন দিধা গ্রস্ত -কিস্ঠ উপলব্ধির গভীরতায় তিনি ছুঃখিতচিত্ত

“যে জাতি পরাঁধীনতা শংখলে চিরদিনের জন্য বদ্ধ, যে জাতি আহার বিহার বাতীত সভ্যতার উচ্চাভিপ্রেত সকল সিদ্ধিকরণে অজ্ঞাত, যে জাতি জন্মভূমিকে গরীয়সী মানিয়া কপমণ্ডুপকবৎ অবরুদ্ধ আছে, তাহারদিগের যমনোমধ্যে উচ্চতর ভাবোদয় হওনের বিষয় কি? [ এ, পৃঃ ১১]

_-এই অভিযোগ তিনি মেনে না নিয়ে পারেন নি। সমগ্র জাতির বহুধাবিভক্ত দেস্তের মাঝখানে তীর পীড়িত আত্মার ক্রন্দন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। পরাধীনতার শুংখলে ধার] বদ্ধ তাঁরা দেশের এতিহা, সংস্কৃতি সভ্যতা! বিস্বত হয়, বারত্ব সম্বন্ধে তাদের নিস্পৃহতা৷ দেখা দেয় রঙ্গলাল “পন্সিনী উপাখ্যানে” আত্মবিস্বত

১৯. রঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায় বাংলা কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধ, ১৩৫২

২১৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

জাতির সামনে শৌর্য, বীর্য বীরত্বের জয়গান শোনাবার দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন জাতির সামনে তিনি অতীত মহিমা প্রচার করে স্থধ আত্মবোধ জাগাবার চেষ্টা করেছেন স্ৃতরাং রঙ্গলাল-এর উদ্দেশ্ট প্রণোদিত এই কাব্যরচনার মর্মমূলে সাহিত্য সৃষ্টির মৌলিক প্রেরণা অনুপস্থিত দেশভাবনার নিবিড় অন্ুভূতিকেই কাঁব্যস্ৃষ্টির আঁদি উৎস বলা যেতে পারে উনবিংশ শতাব্দীর এই আত্মোপলদ্গির মুহুর্তে আমরা এমন একজন কবিরও সাক্ষাৎ পাই-_যিনি শুধু সাহিত্যস্ষ্টির জন্যই সাহিত্য স্হজন করেন নি,_ দেশচিস্তাকে দেশবাসীর সাঁমনে তুলে ধরার বাঁসনা নিয়েই সাহিত্য জগতে প্রবেশ করলেন সুতরাং রঙ্গলালের কাঁব্যবিচারের মানদণ্ড প্রচলিত কাব্যবিচারের মাপকাঠিতে নয়, সাহিত্যন্ষ্টির সমস্ত অন্ুভাবনা বিচার না করে তাঁকে বিচার করা বিভ্রান্তিকর হবেই হৃষ্টিক্ষমতাঁর চূড়ান্ত বিকাঁশ তাঁর কাব্যে প্রতিফলিত হয়নি বলে আক্ষেপ করার অবসর তীর কাব্যবিচীবে নেই। তিনি যুগের স্পট, উনবিংশ শতাব্দীর দেশপ্রেমমূলক কাব্যধাঁরার উদ্বোধনের সাঁড়ঘ্বর আয়োজন তিনি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেছেন--একথা স্বীকার করতেই হবে। ঈশ্বরগপ্তের ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত, অস্পষ্ট বাক, দ্বিধাখগ্ডিত, বিক্ষিপ্ত চিস্তাঁভাবনাকে রঙ্গলাল ধীরতায়, উদাত্ততাঁয়, উপলব্ধির অখণ্ততায় একটি মাত্র পরিচয়ে প্রকাশ করেছেন ঈশ্বরগুপ্তের বোধি উপলব্ধির মধ্যে অস্বচ্ছতা ছিল, কিন্তু ইংরাজীশিশ্ষিত রল্গলাল সচেতন উপলব্ধিতে উদ্দীপিত হয়েই তার জীবন-সত্যকে কাব্যাকারে প্রকাশ করেছেন সিদ্ধি সাফল্যের মূল্যায়ন না করে যুগচেতন কবি রঙ্গলালের কাব্যসাধনার বিচাঁরই এখানে মুখ্য রঙ্গলাল সম্বন্ধে শ্ীকৃমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই স্থচিত্তিত উক্তিটি এখানে উল্লেখ করা যাক,

“রঙলালের প্রকৃত কবিত্ব হইল ষে তিনি সর্বপ্রথম বাংলা সাহিত্যে বীরযুগের সিংহদ্বার উন্মুক্ত করিয়াছেন ।৮১৯

রঙ্গলালের যুগোঁচিত চিন্তাধারার এই মৌলিকত্ব সত্যই প্রশংসনীয় ! বীরযুগের উদ্বোধনকালে রঙ্গলাল ষে কতটা প্রাণিত হয়েছিলেন তার প্রথম কাব্য *পদ্মিনী উপাখ্যানের” ভূমিকায় তার উচ্ছাসের পরিচয় আছে।

রঙ্গলালের কবিভাবনার মুখ্যপরিচয় দেশপ্রেমভাবনার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীতাবে যুক্ত ! জাতীয় চরিত্রের অবনতিতে তিনি বিক্ষুবচিত্ব, রুষ্ট এবং 'পদ্মিনী উপাখ্যানে" সেই পতিত জাতির সম্মুখে এক মহিমময় এতিহ্োর চিত্র তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টায় রঙ্গলাল মগ্ন। অবশ্য বীরযুগের দ্বারোদঘাটন করার মুহুর্তে ভারতইতিহাসের শৌর্যবীর্য- বীরত্বের জলন্ত অধ্যায় থেকে তিনি যে কাহিনী সংগ্রহ করেছেন, যেভাবে তাকে

১১. জ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় লিখিত ভূমিকা, আধুনিক বাংলা কাব্য

কাব্য ১৭

আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন, তার মধ্যে যুক্তি বা পারম্পর্যের, ঘটনাবিস্তাস আদর্শপ্রচারের মধ্যে অনেক অসঙ্গতি এসেছে, কাব্যবিচারে ঘা প্রথমেই নজরে পড়ে কিন্ত উদ্দেশ্যের অমলিন সৌন্দর্য “পদ্মিনী উপাখ্যানের' অনেক অসঙ্গতিও ঢেকে দিতে পারে রঙ্গলালের সচেতনতা “পদ্মিনী উপাখ্যানের* ভূমিকায় ব্যক্ত ১--কবির কোন উৎসাঁহদাঁতা কবির কাছে ছুঃখ করে লিখেছিলেন,-_- “আধুনিক যুবজনে, স্বদেশীয় কবিগণে বণ করে নাহি সহে প্রাণে বাঙ্গালীর মনঃপন্, কবিতা স্ধার সদ্ম এইমাত্র রাখ হে প্রমাণে রঙ্গলাল অনুরোধ রক্ষা! করেছিলেন কাব্যটি রচনা করে। রাজপুত ইতিহাসের উজ্জ্বল অধ্যায়টি থেকে কাব্যের উপাদান গ্রহণেও তিনি যুক্তিসিদ্ধ কারণের অবতারণা করেছেন ।-_“ভারতবর্ষের স্বাধীনতার অন্তর্ধানকাঁলাবধি বর্তমানসময় পর্যন্তয়েই ধারাবাহিক প্রকৃত পুরাবৃত্ত প্রাপ্তব্য এই নিদিষ্ট কালমধ্যে দেশের পূর্বতন উচ্চতম প্রতিভা পরাক্রমের যে কিছু তগ্মাবশেষ, তাহা! বরাজপুতান। দেশেই ছিল। বীরত্ব, ধীরত্ব, ধামিকত্ব প্রভৃতি নানা সদগুণালঙ্কারে রাঁজপুতের। যেরূপ বিমণ্ডিতা ছিলেন তীহাদিগের পত্বীগণও সেইরূপ সতীত্ব, বিছুষীত্ব এবং সাহসিকত্বগুণে প্রসিদ্ধ ছিলেন। অতএব স্বদেশীয় লোকের গরিম। প্রতিপাদ্য পদ্ভপাঠে লোকের আশু চিত্তাকর্ষণ এবং তদৃষ্টান্তের অনুসরণে প্রবৃত্তি প্রধাবন হয়, এই বিবেচনায় উপস্থিত উপাখ্যান রাজপুত্রেতিহাঁস অবলম্বন পূর্বক মৎকর্তক রচিত হইল |” রক্গলাল দেশপ্রেমের বাণী প্রচার করে, দেশের গরিমাঁকে পুনর্জীবিত করে, মানুষের

লুপ্ত এতিহাবোধ জাগ্রত করতে চেয়েছেন *স্বদেশীয় লোকের গরিমা প্রতিপাগ্ধ তরৃষ্টান্তের অনুসরণ প্রবৃত্তি প্রধাবন”--এই উভয় উদ্দেশ্য নিয়েই এই কাব্য রচিত হয়েছে রঙ্গলালের 'পদ্মিনী উপাখ্যানে' দেশপ্রেমের বাণী কিভাবে জাতীয়ভাব উদ্দীপিত করেছে--সেটুকু বিচার আবশ্যক ঈশ্বরগুপ্তের দেশ-ভাবনা আত্মপ্রকাশ- কৃ*__ আত্মরক্ষার তাগিদে বক্তব্য অকুণচিত্তে বলার সৌভাগ্য তার হয়নি রঙ্গলালের পদ্মিনী উপাখ্যানের অন্ততঃ একটি অংশের মধ্যে নির্ভীকভাবে তিনি তীর অনুভূতি প্রকাশ করেছেন চিতোঁরের এরশ্বর্ষয বীরত্বের কাহিনী বর্ণনা প্রসঙ্গে তিনি বারংবারই পুলকিত হয়েছেন, অতীত কাহিনীর গৌরবে তাঁর সমস্ত সত্তা আচ্ছন্ন,.__

“যেদিন ভারততভৃমি ছিলেন স্বাধীন

অসংখ্য বীরের যিনি জন্ম প্রদায়িনী |

কত শত দেশে রাঁজ বিধি বিধাঁয়িনী

২১৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেষ

এমন ছুর্তাগ্যে পরভোগ্যা পরাধিনী | যাঁতনায় দিন যায় হয়ে অনাথিনী কোথা সে বীরত্ব আর বিক্রম বিশাল? সকলি করেছে গ্রাঁদ সর্বভুক কাল ॥% ভারতের এই অতীতগৌরব তাঁকে ভবিষ্যতের প্রতি আশান্বিত করে তোলেনি হয়ত --কিস্তু বর্তমানের গ্লীনি থেকে মুক্ত হয়ে মুহুর্তের জম্যও তার মনে আশার আলোক দেখা গেছে বিগতদিনের শক্তি শৌর্ষের মধ্যে পরাভূত বর্তমানের ছুঃখ- মোচনের প্রয়াসও এখানে দেখা যাঁয়। চিতোরের রানী পদ্মিনীর আত্মবিসর্জন কাব্যের বিষয় হলেও রানা ভীমসিংহ ক্ষত্রিয় যোদ্ধাদের উৎসাহ দেবার উদ্দেশ্যে যে প্রসঙ্গটি অবতারণা করেছেন--কাঁব্যবিচ্ছিম্নভাবে বিচার করে দেখলে এই অংশটিকে একটি বিশুদ্ধ স্বদেশপ্রেমের কবিতারূপেই গণ্য করা যাঁয়। পরাধীন ভারতের দুঃখ দৈহ্যের চেতনায় জর্জরিত কবিচিত্তের আক্ষেপ-ব্যথা-বেদন৷ যেন এই অংশটিতে যূর্ত হয়ে উঠেছে রঙ্গলালের স্বদেশপ্রেমের স্বাক্ষররূপী এই কাব্যাংশটি থেকেই কবিচিত্তের আর্তনাদ-এর ব্যাখ্যা করতে হবে | 'পদ্মিনী উপাখ্যান” রচনার যূলীভৃত প্রেরণা দেশ- প্রেম এবং সমগ্র কাব্যের মধ্যে ইতস্ততঃভাঁবে দেশপ্রেমের মহিমা বারবারই প্রকাঁশ পেয়েছে দস্থ্য আলাউদ্দীনের হাত থেকে চিতৌর রক্ষার দীঁয়িত্ব, নারী পুরুষ নিধিশেষে সমস্ত চিতোরবাসীই তুলে নিয়েছে,--এই কল্পনাটিই আগাগোড়া দেশপ্রেমাত্মক সেই প্রসঙ্গেই ক্ষত্রিয়দের যুদ্ধপ্রীতি তাদের আত্মত্যাগের মহিমাঁও কীর্তন করা হয়েছে দুষ্ট যবনের আক্রমণে চিতোরের স্বাধীনত। বিপন্ন কিন্তু রাজা জানেন, __ “পরম পৌরুষ ধর্ম দেশ হিতৈষিতা | ক্ষত্রিয়ের বীরবৃত্তি চির প্রশংসিত স্তরাঁং ক্ষত্রিয়ের চিরাচরিত ধর্ম পালনে রাঁজ। তীর সন্তানগণ আত্মত্যাগে উন্মুখ রক্গলাসের দেশাত্মবোধের চরম প্রকাশ হয়েছে প্রবাঁদ তুল্য তার এই অনবদ্যকাব্যাংশটিতে,__ স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে কে ৰাচিতে চায়? দাসত্ব শুংখল বল কে পরিবে পাঁয় হে কে পরিবে পায়। গা রা গা দিনেকের স্বাধীনতা স্বর্গস্থথ তায় হে, স্ব্গস্থখ তায়।

কাব্য ২১৯ অই শুন! অই শুন! ভেরীর আওয়াজ হে

ভেরীর আওয়াজ সাজ সাজ সাজ বলে, সাজ সাজ সাজ হে, সাজ সাজ সাজ সার্থক জীবন আর বাহুবল তার হে, বাহুবল তার আত্মনাশে যেই করে দেশের উদ্ধার হে, দেশের উদ্ধার শীত চি নং রঃ পরহিতে, দেশহিতে, ত্যজিল জীবন হে, ত্যজিল জীবন স্মরহ তাদের সব কীতিবিবরণ হে, কীতিবিবরণ

এই অংশট্ুকৃতে রঙ্গলাল যেন তার দেশপ্রেমের সমস্ত আতি ঘনীভৃতভাবে প্রকাশ করেছেন আত্মনাশে দেশের উদ্ধার যে কত পুণ্যকর্ম রঙ্গলাল তা কল্পনা করতে পেরেছেন-_এটাই যথেষ্ট | ভবিষ্যতে আত্মনাশের মাধ্যমেই দেশমাতৃকার বেদীতলে আমরা আমাদের দেশপ্রেমের পরখ করেছি, _রঙ্গলালের কাছে তার মহিমা কত আগেই ন! ধর। পড়েছে ! ভারতের স্বাধীনতার রাজস্ুয়যজ্ঞ সমাপন করতে যে বিপুল আক্মোৎসর্জন করতে হয়েছিল রঙ্গলালের যুগেও তার তাৎপর্য ধর] পড়েছিল স্বাধীনতা- চেতনার অগ্রসরণের ইতিহাসে এই অংশের গুরুত্ব অপরিসীম রজলাঁল বলেছেন,_ দেশহিতে মরে যেই তুল্য তার নাই হে, তুল্য তার নাই। গণচিত্তের কাছে এই বক্তব্যের আবেদন স্বীকৃত হয়েছিল এমন প্রমাণ আছে। ঈশ্বরগুপ্ত আত্মউপল্ষির জালা প্রকাশ করেছিলেন-_-কিস্ত আত্মত্যাগের মহিমায় দেশের স্বাধীনতা অর্জনের কথা তিনিও চিন্তা করেননি পরাধীনতার অপরিসীম জাঁল। তাই ঈশ্বরগুপ্তের ক্রন্দনে ধ্বনিত, ধিক ধিকৃ অধীনতা৷ ধিকু তোরে ধিকৃ। ফুকরে কাদিতে হয় লিখিতে অধিক ক্রন্দন ব্যতীত ঈশ্বরগুপ্ত ত্বার অনুভূতিকে অন্তভাবে প্রকাশ করতে পারেননি রঙ্গলালের চাতুর্য তাঁর ছিল না। রঙ্গলাল কাব্যাকারে তার নিজস্ব বক্তব্যকেই তুলে

২২০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

ধরেছেন ; ঈশ্বরগুঞ্ত খও কবিতার শুধু ক্রন্দনই করে গেছেন। স্তরাং ঈশ্বরগধের কবিতায় নিতান্তই যা 508652961€ রঙ্গলালের কাহিনীতে তা সংকেতিত সত্য। ঈশ্বরগুপ্তের দেশপ্রেম গ্রতীকারের আশা দেখতে পায়নি, কিন্ত রঙ্গলাল আত্মোৎ- সর্জনের আহ্বান এনেছেন দেশপ্রেমচেতনাই ধীরে ধীরে ক্রমপরিণতির পথে কিভাবে এগিয়ে গেছে- ঈশ্বরপুপ্ত রঙ্গলাঁলের কাব্যালোচনায় তা সুন্দরভাবে ধরা পড়েছে। ইতিহাসের সত্য থেকে রঙ্গলাল আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন,_ পৌরাণিক বলে যার সত্যতায় সন্দেহ কর! চলবে না ভারতবর্ষের স্বাধীনতাহ্র্য শেষবারের মত কিরশ বিস্তার করেছে চিতোরেই চিতোরের গৌরব তাই ভারতবাঁপীরই গৌরব স্বাধীনতার মূল্য দিতে আত্মত্যাগের পথই যাঁরা বেছে নেয় তারা দেশ- প্রেমীদের আদর্শ রঙ্গলাল বলেছেন, হিন্দুর প্রতাপ লেশ, যাহ! কিছু অবশেষ, ছিল মাত্র চিতোর নগরে আমাদের পরাধীনতার মধ্যেও আত্মত্যাগের আদর্শেরই পুনরুজ্জীবন প্রয়োজন, রঙ্গলাল সত্য বুঝেছিলেন। তাই 'পদ্মিনী উপাখ্যানের' মধ্যে বীরত্বের-আত্মত্যাগের মহিমাকে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে অন্ততঃ সাহিত্যের মাধ্যমে আমাদের মনোজীবনে বীরযুগের উদ্বোধন তিনিই করলেন। রাজপুতানার ইতিহাসের এই জ্বলন্ত অধ্যায়টি তাঁর মনে নান কারণেই ছায়াপাঁত করেছে,- সেরূপ ভারত দেশে, স্বাধীনতান্খ শেষে, ছিল মাত্র প্লাজপুতানায় কি হইল খায় হায় সে নক্ষত্র লুণ্তকায়, নিবিল সে আলোক উজ্জ্বল স্বাধীনত। শব্দটি রঙ্গলাল তার কাব্যে অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে প্রয়োগ করেছেন ঈশ্বরগুপ্চ অধীনতার জ্বাল! বর্ণনা করেছেন-_স্বাধীনতার মহিমা সম্বন্ধে তার নীরবতা লক্ষ্য করার মত। রঙ্গলাল স্বাধীনতার সখের চিত্র অঙ্কন করে পরাধীনতার ছুঃখ বোঝাঁবার চেষ্টা করেছেন অন্ততঃ স্বাধীনতাকে আলোক হিসেবে কল্পন। করে পরাধীনতার কালিমা প্রতি ইঞ্চিত করে তিনি শব্দ ছুটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেছেন। পরাধীনতার ব্যাখ্য। প্রসঙ্গে রঙ্গলাল স্বীয় অভিজ্ঞতা দিয়েই বর্ণনা করেছেন,-_

কি আছে এখন আর, দাসত্ব শুংখল সার, প্রতি পদে বীধা পদে পদে। হুর্বল শরীর মন, অিয়মান হিন্দুগণ,

ভত্বহীন মত ঘেষমদে

কাব্য ২২১

রঙ্গলাল ইংরাজ শাসনের প্রসঙ্গেই একথ। বলেছেন, জাতির অধঃপতনের চিত্রটি তিনি আমূল তুলে ধরেছেন

'পদ্মিনী উপাখ্যানেই” রঙ্গলালের উচ্ছ্বসিত দেশপ্রেমের পূর্ণ প্রকাশ এই কাব্যের বচনার যূলেও দেশপ্রেম- কিন্ত 'পদ্মিনী উপাখ্যানের” শেষ স্তবকটির মধ্যে রঙ্গলাল, কী প্রকাশ করতে চেয়েছেন--বিচার করা যাক | চিতোরের রানী ভীমসিংহের পতনে স্বাধীনতার বিলুপ্ডি হয়েছে, _

“পরম পৌরুষ বল, সাহস স্থথের স্থল, স্বাধীনতা আনন্দ আকর

সেই স্বাধীনতা বিসর্জনের পর রঙ্বলালও চিরাচরিত প্রথীয় আশাবাদের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন ।--ভারতের সৌভাগ্য্র্য চিতোরের পতনের সঙ্গে সঙ্গে অন্তহিত হয়েছে কিন্ত বিদেশীশক্তির পদাঁনত ভারতবর্ষের পরাধীন মানুষ রঙ্গলাল এই মুহূর্ত দুটিকে একাকার করে ফেলেছেন। এই আচ্ছন্নতা দূর হবার কোন আশা তিনি প্রত্যক্ষ করেন নি--কিন্ত স্বাধীনতার জন্য ব্যাকুলতাটুকু ব্যক্ত করেছেন,__

ভারতের ভাগ্যজোর-_ দুঃখবিভাবরী ভোর, ঘুমঘোর থাকিবে কি আর ?

কিন্ত এই প্রশ্নের উত্তরাংশ হিসেবে যে কয়েকটি পংক্তির অবতারণা করেছেন, রাজনৈতিক চিন্তাধারার সমস্ত সংকেতিত অর্থ সেখানে স্থস্পষ্ট 1

ইংরাজের কপাবলে, মানস উদয়াচলে, জ্ঞানভান্ু প্রভায় প্রচার

হে বিভে৷ করুণাময় বিদ্রোহ বারিদচয় আর যেন বিষ না৷ বরিষে

সমগ্র কাব্যের যূল কাহিনী রাজপুতের বীরত্বে শৌর্ষে উদ্ভাসিত, সেই প্রসঙ্গে মান শক্তিহীন বর্তমানের কথা চিন্তা করে কবি ছুঃখিত | কিন্তু কাব্যের শেষাংশে ইরাঁজ রাজত্বের আগমনে কবি অপরিসীম আনন্দ লাভ করেছেন। কারণ “জ্ঞান ভানু প্রভায় প্রচার”-__এ প্রভা যার বিতরণ করছেন তাঁরা শাসক ইংরেজ | ইংরাজী শিক্ষিত ইংরেজী কাব্যের অন্গরাগীপাঠক রঙ্গলালও শাসক ইংরাজের কাব্য- সাহিত্যের স্থদূরপ্রসারী ফলাফল সম্পর্কে অবহিত দেশপ্রেমী কবি রঙ্গলাল সথেদে স্বাধীনতা! হীনতার কথা বলেছেন কিন্তু ইংরেজী সাহিত্যের রসাস্বাদন করে তিনি এতই যুদ্ধ যে ইংরেজবিদ্বেষ পোষণ করতে পারেননি ইংরেজী সাহিত্যের প্রতি অনুরাগই তাকে শাসক ইংরেজের প্রতি অনুরাগী করে তুলেছে

রঙগলালের প্রিয় কবি ক্কট-বাঁয়রণ,-ভিনি তাদের দ্বার অনুপ্রাণিত সত্য

২২২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

অস্বীকার করা যায় না। স্কট স্বদেশপ্রেমী কবি বলেই খ্যাত। শাসক ইংরেজ আমাদের উপর অত্যাচারের অভিষাঁন চালিয়ে যাবে, ছুঃখ-লাঞ্চনায় অধীর হয়ে আমরা স্বাধীনতার জয়গান করব অথচ স্বাধীনত! লাভের অন্য অনুপ্রাণিত হুব নী,-- এই ধরণের দেশপ্রেমের মহিম প্রচার সে যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ঈর্বরগুপ্ডেও আমরা হুবহু এই মনোভাব প্রত্যক্ষ করেছি,_আপাঁত-বিরোধী এই মনোভাঁব ঈশ্বরগুপ্তকে একই সঙ্গে রাঁজান্গগত অথচ বাযধিতচিত্ত করে তুলেছে,_র্লাঁলেও প্রায় সেই একই মনোভঙ্জিম। প্রত্যক্ষ করি। ইংরেজশাসনের প্রতি আন্ছগত্য নেই_ কিন্তু শিল্পী সাহিত্যিক হয়ে তিনি সাহিত্যপ্রেমী ইংরেজের জয়গান না করে পারেননি বিশেষতঃ রঙ্গলাল ইংরেজী সাহিত্যের বিষুদ্ধ পাঠক 'পদ্মিনী উপাখ্যানের' ভূমিকায় তা স্বীকার করেই তিনি বলেছেন, “আমি সর্বাপেক্ষা ইংলতীয় কবিতার সমধিক পর্যালোচনা করিয়াছি এবং সেই বিশুদ্ধ প্রণাঁলীতে বঙ্গীয় কবিতা রচনা করা আমার বছদিনের অভ্যাস ।...উপস্থিত কাব্যের স্থানে স্থানে অনেকাংশে ইংলত্ীয় কবিতার তাবাকর্ষণ আছে:-"হংলতীয় বিশুদ্ধ প্রণালীতে যত বঙ্গীয় কাব্য বিরচিত হইবে, ততই ব্রাড়াশুন্ত কদর্য কবিতাকলাপ অন্তর্ধান করিতে থাঁকিবে এবং তক্তাবতের প্রেমিক- দলেরও সংখ্য হাস হহয়া আসিবে |”

ক্তরাঁং দেখা যাচ্ছে একদিকে স্বাধীনতাখিহীন কবিসম্প্রদায়ের চিন্তাভাবনার উত্কষ্টতা প্রমাণের জন্য, অপরদিকে ত্রীড়াশুন্ কদর্য কবিতাকলাপের অন্তর্ধান কামনা করেই রঙ্গলাল কাব্য প্রণয়ন করেন সুতরাং বিষয়বস্ততে স্বদেশচিন্তার প্রাধান্থ পরিশেষে কাব্যপ্রেরণা যাদের কাছ থেকে এসেছে সেই ইংরাজ শাসক সম্প্রদায়ের প্রতি উচ্ছ্বসিত আহ্গত্য দেখানো হয়েছে জশ্বরগুপ্ত অবশ্য ইংরাজী সাহিত্য- পাঠ করেননি--কিংব। রঙ্গলাঁলের মত উৎকৃষ্ট পর্যালোচক বলে আত্মপ্রচার করেননি তবুইংরাজ শাসকের কঠোর নীতির কথা স্মরণ করেই তিনি আম্ুগত্য প্রকাশ করেছেন হৃতরাঁং রঙ্গলালের “পদন্মিনী উপাখ্যান” মিশ্র উদ্দেশ্য সাধন করেছে রঙ্গলালের শেষ আতি-_বিদ্রোহেরই বিপক্ষে | “বিদ্রোহ বারিদ চয় আর যেন বিষ না বরিষে*__বিদ্রোহই ইংরেজশাসনের অগ্রগাতর পথে একমাত্র বাধা, স্তরাঁং বিদ্রোহ তিনি সমর্থন করেন না যে বিদ্রোহকে পরবর্তী যুগে স্বাধীনতার প্রথম চেতনা যূলক সংগ্রাম বলে অভিহিত কর! হয়েছে-_ সেহ সিপাহীবিদ্রোহই সমসাময়িক সাহিত্যে নিন্দিত-অসমধিত। ঈশ্বরগুপ্ত যে বিদ্রোহীদের ব্যক্ষের চাবুকে, বিজ্রপে, উপহাসে ধূলিস্যাং করার চেষ্টা করেছেন, সেই নানাসাহেব-লক্ষ্ীবাঈকে ইতিহাস স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম বরেণ্য শহীদদরূপে বর্ণনা করেছে জশ্বরগুপ্ত-রঙ্গলালের বিদ্রোহ প্রসঙ্গে মতামত একই এখানেই রঙ্গলাল ঈশ্বরগুণ্ের ভাবশিস্য | কিন্তু পূর্বেই বলেছি, সিপাহীবিদ্রোহ

কাব্য ২২৩

সম্পর্কে যে চেতনা নিতান্তই আধুনিক সমালোচনার ফলাফল, তার ওপর অধিক গুরুত্ব দিয়ে রঙ্গলাঁল বা ঈশ্বরগুপ্ের দেশপ্রেমকে তুল ব্যাখ্যা করে লাভ নেই। এদের দেশপ্রেম সম্পূর্ণরূপেই উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যমভাগে সগ্ভবিকশিত স্বদেশচেতনার ঘাদিরপের বাহক পরিচায়ক | দেশচেতনাই যেখানে অনুপস্থিত সেই ক্ষেত্রে সেই পরিবেশে ঈশ্বরগুপ্ত রঙ্গলাল স্বাধীনতার কথা, স্বদেশের মাহাত্থ্য, মাতৃভাষার মহিমা, দেশের প্রতি আমাদের সশ্রদ্ধমনোভাব জাগ্রত করেছেন এটুকুই যথেষ্ট ঈশ্বরপুপ্তের ভাবশিষ্য রঙ্গলীলেও গুরুর আদর্শ দেশচিত্তা প্রবাহিত হয়েছে কালক্রমে পরবর্তী সমস্ত সাহিত্যে দেশপ্রেম মুখ্য হতে পেরেছে,_-এইভাবেই উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের মধ্যে দেশচেতন] দেশভাবনা অর্গাপীভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে

বঙ্গলালের মহৎ আদর্শ তার পদ্মিণী উপাখ্যানে' স্ন্দরভাবেই ব্যক্ত হয়েছে, রঙ্গলাল ব্যাপারে সচেতন স্রষ্টা কবিতার অসীমশক্তি সম্পর্কে অবহিত রঙ্গলাল ভূমিকায় আরও বলেছেন, _

"প্রাচীন জাঁতিদিগের মধ্যে এই এক রীতি ছিল, তাহার] বিগ্রহব্যসনাদিসমুদাঁয় , উৎসাহকর ব্যাপারে কবিদিগের সাহচর্য রাখিতেন কবিগণ উক্ত জাতিদিগের শৌর্বীর্য, গুণসম্পন্ন পূর্বপুরুষদিগের গুণানুবাদ গান করিতেন তাহাতে শ্রোতৃবর্গের- মানসে বীর, শীস্তি, রৌড্র প্রভৃতি ভাব সকলের সমুদ্তবে বিশেষোঁপকার হইত ।”

স্পষ্টাতঃ বোবা যাঁয় রঙ্গলাল এই নীতির সাহায্যেই দেশচিন্তা জাগ্রত. করার চেষ্টা করেছেন। তিনি যে সাফল্যঅর্জন করেছেন তার অজ প্রমাণ মিলবে স্বাধীনতার মূল্যবোধ প্রচারের জন্য তার বীররসাত্মরক কাব্যাংশটি অনবগ্য হয়েছে বলা যায়। 'পন্মিনী উপাখ্যানে'র কাব্যিক মৃল্যবিচারের ক্ষেত্রে নানা ক্রি আবিষ্কার করা যেতে পারে কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে বিচার করলে বীররসাশ্রিত এই কাব্যাংশের মূল্য অসাধারণ | স্বাধীনতার জন্য আকুলতা দেশপ্রেমীর যূলধন,__ রঙ্গলাঁলের অকৃত্রিম দেশপ্রেম এই কবিতায় ঝংকৃত হয়েছে সমগ্র পদ্মিনী উপাখ্যান" বিস্বৃত হলেও 'ছুঃখ করার কিছু নেই_-কিন্ত এই অপূর্ব কাব্যাংশটির একটি শব্দও আমরা হারাতে রাজী নই। ভাবের গভীরতায়, শব্দসম্পদে, বীররসপ্রকাশে, সর্বোপরি আন্তরিকতাঁয় কবিতাটি নিখু'ত হৃষ্টি বলা যেতে পারে পরবর্তীকালে সযৃদ্ধদেশপ্রেমমূলক কবিতার পাশেও রক্গলালের এই সৃষ্টিকে অভিনন্দন জানাতে হয়। বঙ্গলাল তাঁর এই একটি কবিতার জন্য সাহিত্যজগতে শ্রদ্ধার আসন পাবেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম যুগে দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত কবিকণ্ঠের এই আন্তরিক উপলন্ধিকে আমরা [136761:6 চ151)1-এর মন্তব্যটি দিয়েও ব্যাখ্যা করতে পারি

২২৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

0006 08000000020 1050 ভি 29196 15 0901060, 2065 2130. 01173]5 1806 001 17170956156 006 001 1015 ০0001705৮, ১২

রমলালের দেশচেতনার অন্তরালে সংচিন্তার প্রেরণ! যে ছিল রঙ্গলাল নিজেই তা ব্যাখ্যা করেছেন রঙ্গলালের 'পন্মিনী উপাখ্যান” অন্ততঃ কবির শুভপ্রচেষ্টারন ধারক। বিশুদ্ধ কাব্যপ্রেরণার আদর্শ থেকে সাহিত্য ৃষ্টি হয় কিন্তু বিশুদ্ধ দেশপ্রেম যে কাব্যের আদর্শ সে কাব্যকে সমালোচন! সহা করতে হয় অনেকদিক থেকেই। 'পদ্মিনী উপাখ্যান” সেযুগের কাব্যপ্রেমীদের ক্ষুপ্ন করেছে কিনা জানি ন' কিন্ত সাহিত্যাদর্শের বিশুদ্ধতা দিয়ে আজকের মাচ্ুষ 'পদ্মিনী উপাখ্যানের” রস আহরণ করতে পারে না। কিন্তু যুগবিচারে কাব্যকে অস্বীকার করাও যাঁয় না। মধুহদনের আগে রঙ্গলীলই কবিকুলের মুখ রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন,_-কবি- সম্প্রদায়ের প্রতি আরোপিত অপবাদ তুচ্ছ করে তিনিই প্রথম একই সঙ্গে দেশপ্রেম সাহিত্যপ্রীতির স্বাক্ষর রেখেছিলেন 'পদ্মিনী উপাখ্যানের” জনপ্রিয়তার মূলে ছিল রঙ্গলালের আন্তরিকতার আবেদন,--দেশপ্রেমের প্রলেপে যা একান্ত সময়োপযোগী হয়েছিল সেজন্যই রঙ্গলাল নিজেই পরবর্তী কাব্যের ভূমিকায় 'পদ্িনী উপাখ্যানের' সমালোচন! করেছেন, একে নিছক আত্মপ্রশংসা বলা যায় না 'পদ্মিনী উপাখ্যানের' রচনাগত উদ্দেশ্য সার্থক হয়েছিল বলেই কবির ধারণা তিনি সাধারণের উৎসাহ সম্বল করেই দ্বিতীয়বার যে কাব্যের স্চনা! করলেন-_ তাতেও বীররসের আধিক্য। নারীর চরিত্রগত মাধূর্ষের সঙ্গে অচিন্তনীয় কাঠিন্তের সমন্বয়ের ধারা 'পদ্মিনী উপাধ্যানের” পর “কর্মদেবী'তেও দেখা গেল। “কর্মদেবীর”, ভূমিকায় রঙ্গলাল বলেছেন,__

এক্ষণে পরম আহ্লাদসহকারে বক্তব্য এই যে, যে লক্ষ্যের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়। উক্ত কাব্যকুস্থম বিক্ষেপিত হইয়াছিল, সেই লক্ষ্য ব্যর্থ হয় নাই। সাহসপূর্বক বলিতে পারি পদ্মিনী প্রকাশের পর গতবৎসরব্ত্রয় মধ্যে আমাঁদিগের দেশীয়ভাঁষায় ভাষিতা বিমলাননদদায়িনী কবিতার প্রতি কথঞ্চিৎ দেশীয় লোকের অনুরাগ জন্মিয়াছে। কোন কোন প্রচুর মানসিক শক্তিশালী বন্ধু, ধাহারা প্রথমোগ্মে ইংলগীয় ভাষায় কবিতা রচনা অভ্যাস করিতেন, তাহীরা অধুনা মাতৃভাষায় উত্তমোত্তম কাব্যপ্রণয়ন করিয়াছেন, অতএব ইহাঁও সাধারণ আনন্দের বিষয় নহে ।”৯৩ “কর্মদেবীর” ভূমিকায় রন্গলালের এই উচ্ডাস সঙ্গত;-_-কারণ বাংলা-

১২, 1867027 8851367,1105 0০0000012৬৬ 531%, 0601৭) 7924, ৮-08, ১৩, রঙজলাল গ্রস্থাবলী, বনুম্তী সাহিত্য মন্দির

কাব্য ২২৫

কাব্যসাহিত্যের ক্ষেত্রে মধুকহদন রঙ্গলালের উত্তরসাধক | রঙ্গলালের 'পদ্মিনী উপাখ্যানের' প্রকাঁশকালের সঙ্গে সঙ্গেই মধুত্দন কাব্যক্ষেত্রে তার প্রচণ্ড তৃজনীশক্তি নিয়োগ করলেন- রঙ্গলালের উচ্ছ্বাস তাই সঙ্গত কিন্তু মধুক্ছদনের আত্মপ্রকাশ যে রঙ্গলাল প্রভাবিত নয়-_এও সত্য রঙ্গলালের উক্তিকে তাই অবিমিশ্র আত্মশ্লাঘা বলে মনে হতে পারে পরবর্তী সাহিত্যে রলালের প্রভাবকে অস্বীকার করা ঘায় সহজেই, তাই তার কাব্যসম্পকিত ধারণাকে ছুঃসাহসিক উক্তি বলে মনে হয়। কিন্ত নানাদিক দিয়ে বিচার করলে রক্গলালের উচ্ছুসিত উক্তিকে নিতান্ত অসঙ্গত বলা চলে না। রঙ্গলাল 'পদ্মিনী উপাখ্যানে' কাব্যচেতনার জড়ত্বকে মুক্তি দিয়েছিলেন বাংলাকাব্যে দীর্ঘকাল অবহেলিত বীররস ব্যবহার করে বীররসের উন্মাদনায়, শৌর্যবীর্ষের উচ্ছ্বসিত বর্ণনায়, আত্মনিগ্রহের স্পাষ্টোচ্চারণের মধ্যে সত্যিই রঙ্গলাল বাংলাসাহিত্যে উন্মাদনার জোয়ার এনেছিলেন উচ্চাঙ্গের কবিত্বশক্তির প্রকাশ তাঁতে ছিল না হয়ত, কিন্ত শ্লথ জীবনযাপনের গতানুগতিকতায় রঙ্গলালই প্রথন শুনিয়েছিলেন,__ ওই শুন! ওইশুন! তেরীর আওয়াজ হে ভেরীর আওয়াজ !

অন্ততঃ ভেরীর তৃর্যনিনাদ শ্রবণ করার জন্য আমাদের কাব্যামোদী মনকে তিনি আকুষ্ট করেছিলেন রক্গলালের “কর্দেবীর বিচারেও আমর একই বিষয়ের আয়োজন দেখি এখানেও ভেরীর আওয়াজ শোনাতেই কবি তৎপর | দীর্ঘদিন লালিত জড়ত্বের হাত থেকে মুক্তি পাবার বাসনায় আমরা অস্থির হয়েছিলাম তবু কাব্যাঙ্গিকের নতুনত্ব, ভীষার ওজস্ষিত শবৈশ্বর্ষের উন্মাদনাকে আমরা অভিনন্দিত করিনি। মধুহ্দনের কাব্য সম্ভীরের যথার্থ মূল্য সে যুগের জনসমাজ নির্ধারণ করতে পারেননি, - বহু বাগবিতগ্ডার মধ্যে শুধু সেষুগের জনচেতনার অস্থিরত্বই ধর! পড়েছে কিন্তু 'পদ্মিনী উপাখ্যান'কার রঙ্গলালের কাব্যেই শুধু যে বীররসাধিক্য ছিল ! নয়, মানসিক শক্তিতেও তিনি তেজন্বী সাহিত্যসাধক ছিলেন | স্থৃতরাং প্রচণ্ড উদ্ভমে তিনি কর্মদেবী, শুরুন্দরী রচনায় মগ্র হলেন রঙ্গলাল সাহিত্যবিচারের ভার নিজেই নিলেন,

"“সংকাব্যের যে দিন দিন সমাদর বৃদ্ধি হইতেছে, তাহাতে আর সন্দেহ মাত্র নাই, অতএব কর্মদেবী স্বীয় অগ্রজ! পদ্মিনীর স্ায় সাধারণের কিয়ৎ অন্ুগ্রহের পাক্রী হইবেন, এমত বিশ্বান হইতেছে ।”-_প্পদ্মিনী উপাঁখ্যানে” বীররস কাব্যপ্রেরণাই দিয়েছে কিন্তু পল্মিনীর চরিত্রচিত্রণে এই বীররস দানা বাঁধেনি।--কর্মদেবী কিংবা! হরন্ন্দরীতেও কাব্যরচনার এই মৌলিক ক্রটি ধর! পড়ে কিন্তু স্বদেশচিস্তার যে

১৫

২২৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

বিশুদ্ধত1 থেকে কবি প্রেরণা পেয়েছেন, সেই প্রেরণাই তাঁকে একই ভাবে পরবর্তী কাব্যরচনায় উৎসাহ দিয়ে আঁসছে। সাহিত্য সমালোঁচকের বির্ূপতাকে রঙ্গলাল গ্রাহ করেননি কিংবা সবার কাব্যের বিরূপ সমাঁলোচন! তাঁর যুগে হয়নি কোনটাই সত্যি হয়ত নয় কিন্তু “পল্সিনী উপাখ্যানের৮ অসংখ্য দৌধক্রটি, কবিত্বের শুন্যতা কোনটাই পরবর্তী কাব্যরচনার বাঁধ! সৃষ্টি করেনি, এটাই আশ্চর্য হৃতরাং ধরে নেওয়া যেতে পারে রঙ্গলাল অবিচ্ছিন্ন আত্মমগ্নতা নিয়েই কাব্য সাধনায় রত হয়েছিলেন ;__ তাঁর অমলিন কাব্যাদর্শ একইভাবে তার পরবর্তী কাব্যেও আত্মপ্রকাশ করেছে। “কর্মদেবীর” শৌর্যগাথা শোনাতে বসে কবি আবার অতীত ভারতবর্ষের খশ্বরস্বপ্নে মগ্ন হয়ে বীররসের স্থচনা করলেন,__বর্তমান গ্লানির বেদনাও সেখানে আছে-_ হায় কোথা সেই দিন, ভেবে হয় তন্থ ক্ষীণ, যে কাল পড়েছে বিষম সত্যের আদর নাই, সত্যহীন সব ঠাই, মিথ্যার প্রতুত্ব পরাক্রম বং ১৪ না হায় কবে দুঃখ যাবে, দশা বিলয় পাবে, ফুটিবেক হ্বদিন প্রস্থন কবে পুনঃ বীর রসে, জগৎ ভরিবে যশে, ভারত ভাস্বর হবে পুন ? কর্মদেবী ভারতের লুপ্ত গৌরবস্থতি কবিচিত্তে বেদনা সঞ্চার করেছে ।-_-বীররসের অভাব জাতিকে দুর্বল, শক্তিহীন করে--কবি বারংবার সেই খেদ প্রকাশ করেছেন পাঠান যখন সাঁধুর কাছে বাণিজ্য প্রস্তাব এনেছে, সাধুর যুক্তির মধ্যে যেন ভারতের সমস্ত বিদেশী অত্যণচারীদের স্বরূপ প্রকাশ পেয়েছে বাণিজ্যের ছলে এসে অবশেষে যাঁরা রাজ্যপাটের অধিকারী হয়েছিল, উনবিংশ শতাব্দীর পরিপ্রেক্ষিতে কাব্যের মধ্যে যুক্তি ষেন বড়ো বেশী দুঃসাহসিক বলে মনে হয় আত্মনিগ্রহের অন্তরালে নির্যাতিতের মর্মজাল1 কবি যেন উদঘাটিত করেছেন, - যে চেতনা একদিন আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে উৎসাহী করে তুলেছে, রঙ্গলা'ল সাধুর উক্তির মধ্যেই সেই প্রশ্ন তুলে ধরেছেন, কে হরিল সেই সব অযূল্য রতন ? কে হরিল সকল কুবেরের ধন? কে করিল পুণ্যতৃমি ছুঃখেতে নিক্ষেপ ? কে দিল তাহার দেহে যাঁতন! প্রলেপ ? অন্থপমা ভারতের পতিব্রতাগণ

কাব্য ২২৭

কে করিল তাহাদের মর্যাদা হরণ ? কে করিল নগর নিকর শোভা নাশ? তোমর] জান নাঁকি হে সেই ইতিহাস? [ এ] রঙ্গলালের ক্ষুৰ অন্তরের সঞ্চিত ব্যথ। যেন গর্জন করে উঠেছে এখানে | অত্যাচারী লুঠনকারীদের নির্মম নিষ্পেষণে আমর! হৃতসর্বস্ব, সোনার ভারত এরাই শতধাবিচ্ছিন্ন করেছে রঙ্গলাল স্পষ্টতই জানেন, _ এরূপ বাঁণিজ্যছলে কত জাতি এসে | করিলেন প্রভূত্ব স্থাপন নানাদেশে অতএব কিবা প্রীতি তোমাদের প্রতি ? অত্যাচারীর স্বরূপ রঙ্গলাল আবিষ্ার করেছেন এমন একটি মুহূর্তে যখন অত্যাচারী শাসকের স্বরূপ জনচিত্তে গভীর বেদনার সঞ্চার করেছে নীলকর অত্যাচারে জর্জরিত মানুষ অন্ততঃ শাসকগোষ্ঠীর স্বরূপ চিনে নিতে ভুল করেনি রর্গলাল ভারতের পুঞ্রাতণ মর্মব্যথাঁর কাহিনীকে নতুন ভাষায়, নতুন কথায় ব্যক্ত করলেন--কিন্ত তা৷ নির্মম ভঙ্কীরের মতই শোঁনাল যেন। কর্মদেবীর” কাহিনীতে আমরা যেন চিরদিনের হুঃখকেহ নতুনভাবে দেখতে পেলাম ।--আঁশ্চর্যের কথা, আমরাও সেই একই ছুঃখের অংশভাগী। এখনও ভারতের বুকে বাণিজ্যের ছলে বিদেশী দস্্য এসেছে, একই কৌশলে শোষণ করেছে সর্বস্ব রঙ্গলালের সচেতন চিন্তাধারায় এ্রতিহাসিক সত্য অত্যন্ত নির্মম বর্তমান হয়ে দেখা দিয়েছে “কর্ণদেবীর” কাহিনীতেও নারী চিত্তের কৌমল-কঠোর বীর্য একাকার হয়ে গেছে 1+-_পতিপ্রেমের সনাতন আদর্শ নারীকে বিপদে সাহস এনে দিয়েছে, আত্মোৎসর্জনের মহিমায় পন্মিনীর মত কর্মদেবীও মহিয়সী | রঙ্গলালের কাব্যের কাহিনী পরিকল্পনায় নারীমহিমা সর্বাগ্রে স্থান পেয়েছে-কীররস প্রকীশ পেয়েছে এহ কুলবাল৷ নারীদের আত্মত্যাগের শক্তিতে ফলশ্রুতি হিসেবে শুধু সনাতন নারীত্বের আদর্শহ যদি মুখ্যভাবে কাব্যে পাওয়া যেত তবে প্রসঙ্গে রঙ্গলীলের আলোচনার কোন সার্কতাই থাকত না। কিন্ত রঙ্গলালের গভীর দেশপ্রীতি বীররসের কক্সনার় উৎসারিত হয়েছে,__কাব্যবিচ্ছিম্ অনেক অংশেই তিনি তার নিখাদ দেশচিন্তীকে মুখ্যভাবে প্রর্ণীশ করেছেন। 'কর্ষদেবী'র উদ্ধত অংশটুকুর মধ্যে আমরা সেষুগীয় দেশচেতনার স্পষ্টরূপ প্রত্যক্ষ করেছি,__কাব্যাংশ হিসেবে যার বক্তব্য হয়ত সামান্যই | রঙ্গলাল প্রসঙ্গের আলোচনায় কবির বিশুদ্ধ দেশপ্রেমচিন্তাই আলোচিত হয়েছে। রঙ্গলাল নঈশ্বরপুপ্তের মত খণ্ড কবিতায় তার দেশপ্রেমাদর্শ প্রচার করতে চাননি বলেই কাব্য থেকে তার মানসচিন্তার আলোচনা করতে হয়েছে। ঈশ্বরগুপ্তের ভাবশিস্তরূপেই

২২৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

রক্ষলালের পরিচিতি এবং দেশপ্রেমের ইতস্ডতঃ বিক্ষিপ্ত চিন্তাও রহলাল ঈশ্বরগুধে প্রায় সমধমিতা লাভ করেছে বাংলা সাহিত্)ে একদা দেশপ্রেম প্রবলভাবে চিন্তার বিষয় বলে গৃহীত হয়েছিল ; কাব্যে নাটকে-সংগীতে গীতিকবিতায় প্রবলভাবে যা বিকশিত হয়েছিল তারই অস্বচ্ছ আঁদিরূপ অনুসন্ধান করতে গেলে ঈশ্বরগুপ্ত রঙ্গলালের অস্ফুট অর্ধবিকশিত এই কাব্যাংশের সাহাধ্য নিতেই হয়। কবিমানসের যে বিশেষ প্রতিফলন যুগমানসের আতিরূপে একদা আত্মপ্রকীশের পথ খু'জেছে-_ তার অনুসন্ধান করতে হবে এখান থেকেই

ঈশ্ব্রগুপ্তের সঙ্গে রঙ্গলালের দেশচিস্তার যে সাধর্ম লক্ষ্য করেছি-_-পরবর্তী যুগে মধুক্দন, হেমচন্দ্র, নবীনচন্দ্রের কাব্যে ঠিক সেই বস্তটি মিলবে ন! কিন্তু দেশচিন্তা এদের কাব্যচিন্তীয়ও স্থান পেয়েছে যুগপ্রয়োজনেই যুগান্ুগ চিন্তাভাবনার প্রতিফলনই সাধারণতঃ সাহিত্যের বিষয় হয়ে থাকে | উনবিংশ শতাব্দীর এই বিশেষ ভাবান্দোলন সেযুগের প্রতিটি বিদগ্ধ মনেই চিন্তার ঢেউ তুলবে এটাই স্বাভাবিক! মধুক্ুদন, হেমচন্দ্র, নবীনচন্ত্র--এর] প্রত্যেকেই মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে কাব্যক্ষেত্রে পদার্পণ করেছেন,_-যুগের উচ্জাসই এদের কাব্যকে স্ফীত, বিশিষ্ট করেছিল। দেশপ্রীতির আলোকে বাংলার কবিকুলের মহিমা বিচার করার প্রসঙ্গে রঙ্গলালের আলোচনায় শুধু সত্যটিই স্বীকৃত হবে যে, দেশপ্রেমিকতা রঙ্গলালের প্রধান অবলম্বন হলেও পরবর্তীযুগের স্বদেশপ্রেমিক কবিগোষ্ঠীকে তিনি খুব বেশী প্রভাবিত করেননি কিন্তু স্বদেশচিত্তার খাতটি তিনি খনন করেছিলেন বলেই সেই খাতে জলপ্রবাহের গতি একদ] ছুনিবার হয়ে উঠেছিল

কাব্যসাহিত্যে আধুনিক যুগের সন্ধিপীমানায় যদিও ঈশ্বরগুপ্তকে স্থাপন করা হয়েছে তবু আঁধুনিকত্ব বা সে যুগীয় প্রাণস্পন্দনের তুচ্ছতম সংবাদ মধুতদনের কাব্যেই স্পঞ্টোচ্চারিত হয়েছিল চিন্তার ক্ষেত্রে ঈশ্বরগুপ্$ যে কত সংকুচিত ছিলেন তার কাব্যে উচ্দ্ুসিত মনোবেদনার অবণুঠনই তা প্রমাণ করে দেয়। দেশচিত্তার অকৃত্রিম- মৌলধারণ] উপলদ্ধি করেও শুধু দ্বিধা সংশয় তাঁকে স্পষ্টবাক হতে দেয় নি। মধুক্ছদন সম্পর্কে আলোচনা করতে বসে ঈশ্বরগুপ্ের এই কুগ্ঠ। বড়ো বেশী স্পষ্টায়িত হয়ে দেখা দেয়। মধুক্দনের দেশপ্রেম অবশ্ট বাহিক বিচারে খানিকট। অসঙ্গতিমূলক -_কিন্তু দ্বিধা সংশয়ে কম্পিত হয়ে মানসিক আবেগকে তির্যক ভঙ্গিমায় প্রকাশ করার দীনতা মধুক্ছদনের কোনদিনও ছিল না1। মধুস্ছদন আত্মপ্রকাশের ক্ষেত্রে সর্যশৌর্ধের অধিকারী উজ্জল কিরণে বঙ্গসাহিত্যের তিমির তমসাঁকে আলোকিত করাই ছিল তাঁর আদর্শ সুতরাং তার কাব্যচর্চার মূলে প্রাচ্য পাশ্চাত্যের প্রভাবের প্রশ্ন বাদ দিয়েও কাব্য বিচারকালে মধুস্থদনের স্বকীয়ত্ব অন্বেষণ খুব অসহজ

কাব্য ২২৯

নয়। যে প্রতিভা নিয়ে মপুহ্নদন কুয়াশাচ্ছন্ন মাতৃভাষা সাহিত্যের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন--সে এক আশ্চর্য প্রতিভা সব কবি সাহিত্যপ্রেমিকই মাতৃভাষার মহিমাগ্জন মেখেই চোখ মেলেছেন-_কিন্ত ব্রন্মপাধনার মত নেতিবাদী পথ দিয়েই মধূস্থদন সাহিত্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হলেন অনাগ্রহ নিয়ে যাত্রা শুর করেও অবশেষে বাংলাসাহিত্যেই তিনি আত্মপ্রকাশের পথ খুঁজে পেলেন। স্বতরাং মপৃক্ছদনের মাতৃভাষা সাহিত্যপ্রীতির মধ্যে বৈপ্লবিক চিন্তা দর্শনের যে পরিচয় পাওয়া যায়-_বাংলাভাষায় আর কোন সাহিত্যসেবীর জীবনে সে অভিজ্ঞতা নেই তাই মধুহুদনের মাতৃভাষা সাহিত্যপ্রীতির মূল্য নির্ধারণ স্বাভাবিক রীতিতে করাই ক্টুকর | মাতৃভাষার প্রতি তার অন্থরাগের পূর্বনুহ্র্তেও কী প্রচণ্ড অনাস্থা দেখেছি তাঁর মধ্যে ।--অবিশ্বাস্ত রকমের নিস্পৃহতা দিয়ে তিনি মাতৃভাষাকে অগ্রাহা করেছিলেন যদিও এই অনাস্থা অবিশ্বাস পরে গভীর বিশ্বাসে পরিণত হয়েছিলো | সুতরাং মাতৃভীষাপ্রেমিকরূপে মধুস্থদনের যে পরিচয় মেলে সেইক্ষেত্রে তিনি একক তার দৃষ্টিতঙ্গী আমরা আর কোন বাঙ্গালী কবি সাহিত্যিকের মধো খুঁজে পাব না। স্ৃতরাং কী গভীর মাতৃভাষাপ্রেমে স্বদেশপ্রেমে তিনি মগ্র ছিলেন--তাও ঠিক অন্তান্ত সকলের মাপকাঠি দিয়ে বিচার করা যাবে না। মধুহদনের স্বদেশপ্রেম তীর সাহিত্যস্ষ্টির মতই অভিনব, আকম্মিক, অচিস্তিত, অনন্ত | তার সাহিত্যস্ষ্টির মূলে যে অমিত ভাবাবেগ, স্বদেশপ্রীতির মূলেও তারই পরিচয় মেলে | মধুহ্দনের স্বদেশপ্রেম, মাতৃভাষাপ্রীতি, সাহিত্যসত্যের মর্মমূলে তাঁর জীবনের উত্তরণপর্বের ষে পরিচয় নিহিত আছে,__অবিশ্বাস থেকে সমৃদ্ধ বিশ্বাসমার্গে উন্নীত হওয়ার সেই পর্বটি নানা কাঁরণেই বৈশিষ্ট্যময় মধুক্ছদনের স্বদেশপ্রেম এই অর্থেই নিখাদ--জীবনলব সত্য। কথার বুদবুদের মত তা শুধু কঞ্ঠোচ্চারিত নয়, মর্মোৎসারী | মধুহুদনের আক্মোপলব্ধির গভীরতা তাঁর সমগ্র সাহিত্যকর্মে বিধৃত হয়ে আছে,_ শুধু স্বদেশপ্রেমাত্বক অংশটি তা থেকে বেছে নিতে হবে

মধুক্ছদনের সাহিত্য জীবনের স্থাঁয়িত্বকাঁল দীর্ঘ নয় নিতান্তই স্বল্পকালের। কিন্তু তাঁর প্রস্ততিপর্বটি বহুদিনের বনুসাঁধনার। দেশবিদেশের রত্বসাগরে ডুব দিয়ে উপলন্ধির নিবিড়তম আনন্দে তিনি মগ্ন হতে পেরেছিলেন,--এই ছ্ুণভ সৌভাগ্য লাভ করতে তাকে প্রস্তুত হতে হয়েছে সাহিত্যক্ষেত্রে অবতরণের আগে সাধকোচিত এই প্রস্ততিই তাঁকে সাফল্য এনে দিয়েছিল। বাল্সীকির মতই ধ্যানলন্ধ মহিমায় মধুক্দনও উনবিংশ শতাব্দীর মহাকবি মাতৃভাষার সেবক হিসেবে যে মধুকদনকে পাই, মনে রাখতে হৰে সেই মধুক্ছদন অভিজ্ঞতা এশখর্ষের সমন্বয়ে এক আশ্চর্য যুগপুরুষ। অলৌকিক ক্ষমতা অন্কভবে তিনি সে যুগের এক উল্লেখযোগ্য

২৩০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেষ

ব্যতিক্রমী মানুষও আর এও সত্য যে, সাহিত্যজগতের মধুহদনের সঙ্গে পারিপাস্থিক জগতের মধুহদনের মিল নেই, লাহিত্যক্ষেত্রে তিনি একটি নির্জন ভাবলোক সৃজন করেছেন | হতরাং খ্রীষ্টান মধুক্ছদন, বিদেশী আদবকায়দাছরস্ত মধুত্দন, বাঙ্গালী কৃষ্টিবিচ্ছিন্ন, সমসাময়িক ঘটনাবিচ্ছিন্ন মধুক্দনের সঙ্গে 'মেঘনাঁদবধেশর কবি মধুহদনের, 'ব্রজাঙ্গনা+, 'কীরাঙ্গন। কাব্যের” মধুহদনের কিংবা “চতুর্দশপদী কবিতাবলী, রচয়িতা মধুহ্দনের কোন বাহা সাদৃশ্য নেই। মধুক্ছদনের স্বদেশপ্রেম আলোচনার আগে স্বদেশ সম্পর্কে ধারণার পরিচয় নিতে গেলে দেখা যাবে, মধুহদন সাময়িক ঘটনা সম্পর্কে অচেতন ছিলেন পুরোমাত্রায় সমালোচক প্রমথনীথ বিশী বিষয়টি সম্পর্কে বলেছেন, | মধুন্ছদন ১৮৫৬ সালে মাব্রীজ হইতে কলিকাতায় ফিরিলেন, আর ইংলগু যাত্রা করিলেন ১৮৬২ সালে এই কয় বৎসরে তিনি বন্ধুবান্ববকে বহু পত্র লিখিয়াছেন কিন্ত ১৮৫৭-৫৮ সালে যে সিপাহীবিদ্রোহ ঘটিয়৷ গেল কোথাও তাহার উল্লেখ নাই। আজ আমর ঘটনাটির উপরে যত রঙ চড়াই ন। কেন. তৎকালীন ইংরাজীশিক্ষিত বাঙ্গালীর চোখে উহাঁর একমীত্র রঙ ছিল রক্তিম, তাহাও আবার অবাঞ্ছিত। মধুক্থদনের চিঠিগুলি পড়িলেই বুঝিতে পারা যায় যে, তিনি ইতিহাস সচেতন ! আজকার ভাষায় সমাঁজ সচেতন | মনীষী ছিলেন, তাহার প্রধান প্রধান রচনাগুলির তলে ইতিহীস- চৈতন্তের অন্তঃসলিল] ধারা প্রবাহিত ছিল তৎসত্বেও যে তিনি এতবড় ঘটনাটাকে দেখিতে পান নাই, তার কারণ তাহাদের কাছে ঘটনাটা? এত বড় ছিল না। খুব সম্ভব তাহাদের কাছে ইহা ইতিহাসের সাময়িক পিছন ফেরা মনে হইয়াছিল | ধাহারা [২9008 2170 101৭ 178010195-কে ঘ্বণা1 করিতেন, ত্বাহার। 15129. 21701019 18010169-কে “নশ্চয় অভিনন্দনযোগ্য মনে করিতে পারেন না, ধাঁহাদের কাছে অনার্য [২৪৪7৪ [0019116 হইতেছে 01011059 150016, ব1০1701:010, 179৮5100] 09680 তাহাদের কাছে অবরেণ্য হইবে না ইহাই তো' স্বাভাবিক সেকালের তরুণবঙ্গ বজ্ঞাহত অন্তঃসারশৃন্য মুঘল সমাটের ব1 বর্গীর হাঁ্গীম' দ্বার! স্মরণীয় পেশবাঁর শাসনকে বিধাতার আর্শীবাদ মনে করিতে পারে নাই | তাহারা কায়মনোবাঁকো ইংরাজের শিক্ষা, সভ্যতা শীসনকে গ্রহণ করিয়াছিল | মাইকেল রচনা সম্ভার, ভূমিকা, শ্রীপ্রমথনীথ বিশী এই আলোচন! থেকে মধুস্থদনের ইংরেজ সভ্যতান্ুরাগ যেমন প্রমাণিত হয়-_ তেমনি সাময়িকতা সম্পর্কে তাঁর নীরবতার হেতুটিও নির্ণীত হয়। শুধু সিপাঁহ*- বিড্রোহই নয় সে যুগের নীলআন্দৌলনের প্রসঙ্গ নিয়ে সমগ্র শিক্ষিত বাঙ্গালী যখন বিদেশী শাসকের প্রতি বিরূপ তখনও মধুকদন নিবিকার এর কারণ সে যুগের প্রচণ্ড উত্তেজনার চেয়েও বড়ো 'উদ্ভেজন। ছিল তাঁর নিজের সাহিত্যজীবনেই। সাধকের

কাব্য ২৩১

গত আপন অন্তরের সেই সংগ্রামেই রত ছিলেন সৈনিক মধুত্দন | ধর্মগত এঁক্যসীমা, সমাগত সাধর্ম্য সীমায় না থেকেও মধুহদন কাব্যের ক্ষেত্রে এক অপূর্ব ভাবলোক কজন করেছিলেন | তাই দেখি “মেঘনাদবধ কাব্য” রচনা! করতে গিয়ে সীতা সরম পব অঙ্কনে তিনি মহাকবিস্লভ ক্ষমতার অধিকারী, মন্দৌদরী, রাবণ, ইন্দ্রজিত মনুষ্যত্ব ওমীনবত্বের আদর্শে বলীয়ান মধুহ্ছদন ভাঁবলোকে যে সত্য সন্ধান করেছেন _হোমার, মিষ্টন সেখানে তার পদপ্রদর্শন করেছেন, বাল্সীকি তাঁকে প্রেরণা দিয়েছেন তাঁর মহাকাব্যের নানাবিচার হয়েছে _কিন্তু এই মহাকাব্যের উপস্থাপনার অন্তরালে দেশপ্রেম ধারণার স্বচ্ছতা না থাকলে মেঘনাদের বীরত্ব, রাবণের শৌর্য, বীরবানর আত্মোৎসর্জন, লগর কীরত্বগৌরব প্রমাণ করা যেত না। এই দেশপ্রেম ধারণাটি দিয়েই 'মেঘনাদবধ কাব্যের শুরু -সমগ্র কাব্যটিতে বীররসের শৌর্য বীর্ষের অন্তরালে দেশপ্রেমের ফল্তধার প্রবহমান মিল্টন হোৌমাঁর ছু"য়ের কাছ থেকে আদর্শলাভ করেছিলেন বলেই দেশপ্রেমের মহান নেতৃত্ব বহন করেছে মেঘনাদবধের ছই মহান চরিত্র |

এখানেও দেখি উনবিংশ শতাব্দীতে শিক্ষিত বাঙ্গালীর দেশভাবনার সঙ্গে দুক্দদনের যোগ নেই, কিন্তু পাশ্চাত্যের দেশপ্রেমাদর্শের দ্বারা তিনি অন্ুভাবিত। 'মেঘনাদবধ কাব্যে” বীররসের আরোপ কিংবা ইন্দ্রজিতের চরিত্রে দেশপ্রেমের আবেগ পুরোপুরি পাশ্চাত্য মহাকাব্য থেকে আহত কিন্তু এই সংগৃহীত ভাবনা কভাবে আন্তরিকতার দ্বারা অভিষিক্ত হয়ে একটি স্থগভীর দেশচিন্তার মহিম। অর্জন চরেছিল 'মেঘনাদবধ কাব্যে'র প্রসঙ্গে সে কথা আলোচনা করব

মধুক্দনের দেশচেতনার মূলে প্রত্যক্ষভাবে সেযুগের দেশচেতনার প্রভাব আছে না বলা অবশ্যই কঠিন ইয়ংবেঙগল সম্প্রদায় ভিরোজিও শিষ্যবুন্দ দেশপ্রেমের তুন আবেগে যখন উন্মত্ত হয়ে আছেন - মধুক্ছদন তা৷ থেকে কি ভাবে আত্মরক্ষা চবেছিলেন জানা যায় না ;--কারখ কোন প্রামাণ্য দলিল নেই তার | রাজনারায়ণের দশহিতৈষিতার অকপট স্বীকারোক্তি “সেকাল আর একাঁলে* লিপিবদ্ধ হয়েছে,__ ধুহ্দদনের কোন স্বলিখিত আত্মজীবনী থাকলেও সে কথা স্পষ্টভাবে জানা যেত বে মধুস্থদনের সাহিত্যজীবনের দিকে তাকালে বারবারই মনে হয়, আত্মসমস্যা- ীীড়িত ষধুহদনের কাছে সাময়িক দেশের সমস্যা বা দেশপ্রেম কোনটাই বড়ো চিন্তা তৈ পারেনি চেতনার প্রথম মূহুর্ত থেকেই মধুক্ছদন বড়ো বেশী আত্মকেন্্রিক | ধুহ্দনের কাব্যে আমরা ষে আন্তরিকতা সমৃদ্ধ দেশপ্রসঙ্গ পেয়েছি তাতে মনে হয় [ভীরতর অনুত্ভৃতির ক্ষেত্রে কবিচিত্তের সাময়িক মত্ততা৷ ব। উত্তেজনার পরিচয়টুকুই ্বাপেক্ষা গৌশ- শান্ত জীবনলন সত্যই স্বপ্রকাশিত। বাংলাদেশের নবজাগরণের-

২৩২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে ্বদেশপ্রেম

বিচার করলে আত্বজ্াগরণের সঙ্গে এর মৌল বিভেদটুকু সহজেই ধর! পড়ে। বাংলাদেশের ভাবের জমিতে ইংরাজী শিক্ষা্দীক্ষার বীজ বপনের প্রত্যক্ষ ফলাঁফলই তৎকালীন নবজাগরণরূপে চিহ্নিত,_যার ধ্বজাধারণ করেছিলেন হয়ংবেঙ্গল সম্প্রদার সমস্ত দেশের চিত্তভূমিতেই এদের পদধ্বনির সাঙ্গীতিক রেশটুকু ধরা পড়েছে কিন্তু তৎকালীন রেনেসীকে যদি আত্মজাগরণের পূর্ণ প্রতিরূপ বলে ধরে নিই_তবে আমাদের স্বকীয় প্রবণতার সঙ্গে বিদেশীয় সংস্কৃতির অপূর্ব মিশ্রণের আশ্চর্য সত্য আবিষ্কার কর যাবে নাঁ। তাই দেখি, সে যুগেও বিমিশ্র ভাবাবেগ বিভিন্ন ভাবে আত্মপ্রকাশের চেষ্টা করেছে মাইকেলী উদ্ধত্য ভূদেকীয় নিষ্ঠার পাঁশাপাশি বিদ্ভাসাগরীয় আত্মগর্ব-_-একই সঙ্গে এই ত্রিধাবিভক্ত মনোভাব মিলিয়েই সেষুগীয় নবজাগরণের পূর্ণ পরিচয় মধুক্দনের অসহযোগী মনোবৃত্তির মধ্যেও উনবিংশ শতাব্দীর স্পধিত অবনমিত জাগরণ চিহ্ন বর্তমান মধুক্দনের সমগ্র সাহিত্য বিচারকালেও স্পর্ধা আত্মসমর্পণের মিশ্র অভিনবত্ব চোখে পড়ে দেশ- প্রেম প্রকাশ করতে গিয়েও সনাতন পথের পথিক হতে পারেননি মধুক্দন | ঈশ্বরগুপ্ত, রজলাঁল দেশভাবনার সঙ্গে আত্মসম্পর্ক অনুভব করেছিলেন, __মধুহদনের মধ্যে সেজাতীয় দেশসম্পকিত কোন ক্ুঢ আত্মঅন্থভব ছিল না--অথচ "শামা জন্মদে বলে যখন দেশজননীকে সম্বোধন করেছেন তখন তার দেশচিস্তার অকৃত্রিম উচ্ছ্বাসে আমরা মগ্ন হয়ে যাই। এই ধরণের আপাতঃ বিরোধ থেকেই মধুহ্দ্বনের কবিমানসের চিন্তাভাবনার বিচার করতে হবে মধুক্দণ সাঁময়িকতা সচেতন ছিলেন না, অভিযোগ নয়--সিদ্ধসত্য আনলে সমসাময়িকতার সঙ্গে মধুক্ছদনের নিজ জীবনের যোগাযোগ এত ওতপ্রোত যে তা৷ থেকে সাময়িক ঘটনাবলীকে আলাদা করে বেছে নেওয়া চলে নাঁ। বাংল! দেশের চিত্তভূমিতে যে পরিবর্তনের প্রাবন এসেছিল- মধুহুদন তাতে এতই অগ্ন ছিলেন যে, বহির্জগতের ঘটনার প্রভাব সেখানে পৌছতে পারেনি অথচ মধুস্দদনের যুগের আলোড়নের ইতিহাস দীর্ঘ। ১৮২৪ সালে মধুক্দনের জন্ম ১৮১৮ খৃষ্টাব্দে সংবাদপত্র প্রচলন হয়েছে, “সংবাদ প্রভাকরে' কবিষশপ্রার্থী কবিকুল যখন তাদের সৃষ্টিকে অক্ষম করার সাধনায় আপ্রাণ মগ্র, মধুক্ধদন তখন হিন্দু কলেজের অধ্যয়নে নিবিষ্টমনা_ইংরেজী সাহিত্যবোদ্ধারূপে তীর বিশিষ্ট পরিচয় তখন কলেজ চৌহদ্দির বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। লাময়িকতা অচেতন কবি হিসেবে মধুত্দনকে প্রতিষ্ঠা করতে গেলে সে যুগের রাজনৈতিক উত্তেজনার সঙ্গে অসম্পূক্ত অথচ সে যুগের আন্তর আকুতির ধ্যানে মগ্ন মধুহদ্রনের কথাই মনে পড়ে আমাদের তবে তার মনোজগতের অন্তর্লীনতাই তাকে ঘুগবিচ্ছিন্ন করেছিল ১৮৫৭ সালে পিপাহী বিদ্রোহ যখন সারা ভারতে দাবানলের মত ছড়িয়ে

কাব্য ২৬৩

পড়েছে- মাদ্রাজ প্রত্যাগত মধুক্দন তখন বাংলা ভাষা সাহিত্যের ক্ষেঙ্ছে বতুন কিছু সংযোজন চেষ্টায় মগ্ল। বলাবাহুল্য তার সাহিত্য জীবনের প্রারস্ত মুহূর্তের এই উত্তেজনার লগ্নে দেশব্যাপী রাজনৈতিক আন্দোলনের উত্তেজনাঁও অর্থহীন হতে বাধ্য হয়েছে আত্মস্থ মধুহ্ুদন [ মাদ্রাজবাসের অভিজ্ঞতার পর ] তখন ভাষার আঙ্গিক সম্পর্কে উত্তেজিত। [615 0306 131750956 19130177020, 0181655 0] 10200016 1915615 £10100 ১21751010--আলালের ঘরের ছুলালে'র ভাষা লম্পর্কে প্যারীচাদের সঙ্গে মধুক্ুদনের বিতর্ক নাটক রচনার নতুন রীতি প্রবর্তনে মগ্ন তিনি-_ [07010152 500 8 0195 61320 11] 856010151) 006 01711850915 1 0১০ 010 910802 01 78170105.

১০৫৯-১৮৬২ পর্যন্তই মধুস্থদনের সৃষ্টির চূড়ান্ত মুহূর্ত ;-__রাজনৈতিক উত্তেজন৷ মুহূর্তের প্রায় একই সঙ্গে আত্মপ্রকাশ করেছে স্বাভাবিক ভাবেই মধুক্বদনের আত্ম- মগ্রতায় রাজনৈতিক ঘটন! বিন্দুমাত্র প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি পারিপাশ্বিক জীবন জগতের সমস্যার চেয়ে তার অন্তর্পোকের ভাবলোকের সমস্যার পরিমাপ কি বড়ো কম ছিল? তাঁর একটি জীবনে যত সংঘাত, যত দ্বন্ব উত্তেজনার স্পর্শ লেগেছে-_সাময়িক সমন্তা সমগ্র জাতির জীবনে ততখানি উত্তেজন! সঞ্চার করেনি

মধুস্ছদনের সাময়িক ঘটনার প্রতি অমনোযোৌগের অভিযোগ হয়ত আরও অনেক যুক্তর অবতারণাঁয় খণ্ডিত হতে পারে সাহিত্য স্ৃঙ্ির ষে বিপুল আবেগ মধুস্ছদনেপ সমস্ত অন্তরাত্বা অধিকার করেছে, কাব্যের মাঝখানে রূপময় হয়ে দেখা দিয়েছে সেই সত্যহ। কাব্যবিচারের পর্বে সেই আত্মপরিচয় স্পষ্টায়িত হবে কিন্তু দীনবন্ধু 'শীলদর্পণ', অন্থবাদের যোগ্যতার পেছনে আত্তর অন্থভূতির প্রচ্ছন্ন সমথন না থাকলে ৩ৎকালান বাংলাদেশে পাত্রী লংএর কাঠগড়ায় দাড়ানোর প্রয়োজন হোঙ না। মধুহ্দনের এই অন্বাদ সদুর হংল্ডেও আলোড়ন শৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছে, শুধু কি অন্থবাদের জোরে ? সমাজচেতনা স্বদেশপ্রেম কবিচিত্তে প্রেরণা না ঘোগালে অচ্চবাদের শক্তিতে তা হতে পারত ন1।

মধুক্দদনের জীবনের সঙ্গে গতানুগতিক জীবনের পার্থক্য থাকায় সে যুগের ম্বান্ুষ তাকে সহজে চিনে নিতে পারে নি ;--সেজন্ মধুক্ুদনের যথার্থ ব্যাখ্য। হয়েছে আরও অনেক পরে। সাহিত্যত্র্ট। হিসেবে তার বিচার হয়েছে হয়ত, কিন্তু খ্যক্তি মধুব্দূন সম্বন্ধে বিচার প্রায়শঃই একটার পর একটা ভ্রান্তি সংশয় বৃদ্ধি করেছে কেউ তাকে বিজাতীয় বলে অপাংক্তেয় করেছে-_ব্যঙ্গ করেছে তার কাব্যকে, কেউ তাকে পানপাত্র দিযে উপহাস করেছে *বিগ্ধোৎসাহিনী সভার” পক্ষ থেকে “মেঘনাদবধ কাব্যের” যহাকবি মধুক্ছদনের সম্বর্ধনা! উপলক্ষ্যে রজতময় স্থরম্য পানপাত্র উপহার দেওয়ার

২৬৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

পরিকল্পনাটি কোন দিক দিয়েই উচ্চাঙ্গের পরিকল্পনা হয়নি যদিও মধুতহদন সেই সভায় প্রদত্ত ক্ষুদ্র বন্কৃতায় তাঁর স্বদেশবাঁসীকে বলেছিলেন,

“দেশের উপকার করা মানবজাতির প্রধান কর্ম। কিন্তু আমার মত ক্ষুদ্ নষ্ট হ্বারা যে এদেশের তাদৃশ কোন অভীষ্ট সিদ্ধ হইবেক, ইহা একান্ত অসম্ভবনীয়

[মধুস্থতি_-পৃঃ ১৩২ |

নানাদিক দিয়ে এই বক্তৃতাংশটি লক্ষণীয়। স্বদেশের উপকার করাই ষে মানবজাতির প্রধান কর্ম _একথা মধুক্ছদনের সমসাময়িক যুগে সর্বত্র শ্রুত সত্য। মানবজাতি স্বদেশের উপকার সম্পর্কে মধূহদনের ধারণা যে কত স্বচ্ছ ত] উক্তিটির গভীরেই নিহিত | থাকথিত স্বদেশের উপকার বলতে আমর] যা বুঝি,- যা প্রত্যক্ষ দৃষ্ট, সশৰে প্রচারিত, মধুহুদন জানতেন এর বাইরে স্বদেশচিন্তা যদিও ব1] থাকে- তার স্বীকৃতি তখনও প্রথাসিদ্ধ হয় নি। মোটামুটি স্বদেশপ্রেম সম্বন্ধে একট। সর্বজনগ্রাহথ ধারণ। অনেক আগেই গড়ে উঠেছিল। রামমোহন থেকে ঈশ্বরগুপ্ত পর্যন্ত সকলেই যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন এর মর্মবাণী জনগণের সামনে তুলে ধরার | মধুহৃদশও ষে সম্বন্ধে পুর্ণ সচেতন তার আভাস পাই এই ধরণের আত্মবিশ্লেষণে। মধুহদনের মধ্যে একদিকে এই জাতীয় সমাজ সচেতনতা অন্যদিকে সমাজ সম্পকিত ওদাসীন্ ধরা পড়েছে সে যুগের মানুষ তাঁকে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করছে _ এটুকু তিনি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিলেন !

কাব্য যদি কবির মনের যুকুর হয়-_-তবে আন্তর অনুভূতির সত চিনে নেবার জন্ তার সহায়তা গ্রহণ করাই বিধেয়। স্বদেশপ্রেম কোন কোন মুহূর্তে শুধু পরিস্থিতির অবদান ন? হয়ে গভীরতর উপলব্ধির পর্যায়ে পৌছতে পাঁরে। প্রকৃতিপ্রেম কিংবা অধ্যাত্মচিস্তার মতই কবিসত্তার সবটুকু স্থান সে অনায়াসেই গ্রহণ করে। মধুহৃদনের স্বদেশপ্রেম বিচার করতে বসেই এই সত্য স্পষ্ট হয়। ঈশ্বরগুপ্ত বা রঙগলালের স্বদেশপ্রেম যদি সে যুগীয় উন্মাদনার তরঙ্গায়িত সাগর হয় মধুস্বদনের স্বদেশপ্রেম তরলবিক্ষু সাগরের শাম্ব-স্সিপ্ধ অন্তঃস্থল | সচেতনভাবে যুগদাবীকে কাব্যে স্থান দিতে পারেননি বলেই মধুন্থদন তার মর্মজীত অনুত্তি জীবনবাণীকেই কাব্যরূপ দিয়েছেন। যুগের বিরুদ্ধে, সাঁমরিকতার বিরুদ্ধে, গতানুগতিকতার বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ তাঁর মধ্যে প্রত্যক্ষ করেছি প্রতি পদক্ষেপে শুধু অনিশ্চিতকে বরণ করার দুঃসাহস, অবলম্বনকে না পাওয়ার অঙ্গীকার কোন প্রতিভান্যুন কবির পক্ষে এই অনিশ্চিত পথযাত্রার অর্থ অবধারিতভাবে শুধু নিশ্চিতবিলুপ্তির প্রহরগোনা। দীপ্তশক্তির সদস্ভ আত্ম- ঘোষণ। শুধু মধুক্দনের পক্ষেই সম্ভব হয়েছিল |

সাহিত্যস্ষ্টির ক্ষেত্রে প্রতিকূলতার আঘাতে মধুক্দন আরও স্বপ্রকাশিত হতে

কাব্য ২৩৫

পেরেছেন। সৃষ্টি যেখানে গতাচ্ছুগতিকতারই নামান্তর, আত্মপ্রকাশের অনির্ধচশীয় আনন্নম সেখানে সীমাহীন হতে পারে না। মধুক্ছদনের সৃষ্টির উল্লাস তাই অভিনব--আতত্মপ্রকাশের বাণী এখানে এত স্পষ্ট আন্তরিক যে কাব্য পাঠকের সপ্ধানী চোখ সমবেদনাসিক্ত না হয়ে পারে না মধুস্ছদনের মত আন্তরিক আত্ম- উপলক্ধি সেযুগীয় সাহিত্যে দৈবাঁৎ দৃষ্ট। তাই স্বদেশপ্রেমের যদি কোন প্রকাশ তার কাব্যে "মেলে, মধুক্দনের গভীরতর উপলব্ধির সত্য সেখানে ধরা' পড়বেই ঈশ্বরগ্তগ্ত যখন মাতৃভাষার গুণগান উদ্দেশ্যে বলেন, বৃদ্ধিকর মাতৃভাষা পুরাও তাহার আশা, দেশে কর বিদ্ভাবিতরণ ভখন উপদেশামৃত হিসেবে তার যুগোঁপযোগী আবেদন হয়ত অগ্রাহা করা যায় না. কিন্তু মাতৃভাষার প্রতি গভীরতর অনুভূতি ব্যঞ্জিত হয় না। এরই সঙ্গে তুলনায় মধুক্বদনের “বঙ্গভাঁষা” যেন গভীরতর উপলব্ধির সত্য, ভাষাপ্রেমিকের আন্তর অনুভূতির অভিব্যক্তি, হে বঙ্গ, ভাগ্ডারে তব বিবিধ রতন, তা সবে, (অবোধ আমি ! ) অবহেলা করি, পরধন লোভে মত্ত করিন্ ভ্রমণ পরদেশে ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি মধুহদনের আত্মমগ্ন-ভাবগন্ভীর উপলব্ধির কাব্যিক রূপ তাই অনেক বেশী আন্তরিক শুধু কথার কথা নয়, শুধু সাময্িকতার যোগফল নয়, সেকাঁলীন পটভূমিকাঁয় অন্ান্তদের কাব্য-কবিতার পাশাপাশি মধুস্ছদনের কাব্যসম্ভার এক বিস্ময়কর ব্যতিক্রম | ভাবে, ভাষায়, প্রকাশে, রসসঞ্চারে স্ুকাব্যোচিত গুণসম্পন্ন মপূক্দনের এই কাব্য কিন্তু অচিস্তিত বা অস্বাভাবিক কিছু নয়। নাটকীয়ভাবে যুগচেতন। যদি কবিসভ্ভাকে নাড়া দিত তবে তা থেকে মাইকেলী সাহিত্যস্থষ্টি হওয়াটা ছিল অবশ্যস্তীবী কিন্ত যুগোচিত সংস্কারের অবলঘ্ন আঁকড়ে ধরতে হলে মধুহ্দনের মত প্রতিভা চাই। মধুক্ষদনের মধ্যে উনবিংশ শতাব্দীর একটি খাঁটি নব্যবঙ্গীয় যুবক আত্মপ্রকাশ করেছিলো প্রীচ্যসাহিত্যবিমুখ, প্রীচ্যসভ্যতা বীতরাগী একটি যুবক উনবিংশ শতকীয় প্রাণচাঞ্চল্যের সমস্ত স্বাদ অন্তরভরে গ্রহণ করেছিলো,--সে শুধু স্বকীষ ইচ্ছায় নয়। কোন ছলনার আশ্রয় না নিয়েই সে টাঞ্চল্যের সত্যতা যাচাই করেছে সুতরাং খাঁটি অর্খাটি বিচারের নিখুঁত সামর্ধ্য- সঞ্চয়ের সমস্ত গৌরব তীঁকে অভিনন্দিত করেছে রত্বাকাজ্ষী মন ছিল এরই

২৩৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

পশ্চাতে, ডুবুরীর মত দুঃসাহসিকতায় ঝাঁপ দিতে তাই এতটুকু কুণ্ঠা ছিল না তীর। সেজন্তেই বলেছি, উনবিংশ শতাব্দীর গরলাম্ত পান করে যে মধুকদন আত্মস্থ হয়েছিলেন_তীর অভিজ্ঞতালন্ধ বক্তব্যের অপরিসীম যুল্য রয়েছে তীর কাব্যের কথ তারই বিচিত্র জীবনচর্যার কথা, তার আত্মবিলাপ শুধু কল্পনার ভাবাতিরেক নয়, আঁত্বোপলদ্ধির কথা |

মধুহ্দনের কাব্যজীবনের মধ্যে কোন একটি বিশেষ ভাবসত্য মুখ্য নয়, উপলব্ধির বিচিত্রতায় তা সমৃদ্ধ। ঈশ্বরগ্তপ্ত রঙ্গলালে ঘে দেশপ্রেম বিশেষ বক্তব্য হয়েছে মধুহ্দনের সমগ্র কাব্যে তা ওতপ্রোত হয়ে আছে; কারণ উপলব্ধির বিচিত্রতা থেকে সেই বিশেষ ভাবটিকে কিছুতেই বিচ্ছিন্ন করা যায় না। দেশপ্রেম প্রচারের দায়িত্ব তিনি নেননি--কিংবা তথাকথিত দেশপ্রেমিকের ভূমিকা তিনি গ্রহণ করেননি__তবু তাঁর সমগ্র উপলব্ধির ক্ষেত্রে দেশপ্রেম প্রীধান্ত পেয়েছে আগেই বলেছি, এই স্বদেশপ্রেম যেমন আন্তরিক তেমনি বিচিত্র দুজ্ঞেয় রহস্যের মত বিধর্মী, বিজাতীয় মনোভাবাঁপন্ন মাইকেলের মধ্যে স্বদেশপ্রাঁণ, স্বভাষাপ্রেমিক, স্বসাহিত্যঅন্থরাগী মধুক্ছদন লুকিয়ে ছিলেন। এজন্যই তার কাব্যবিচার করতে বসে অনেক সমালোৌচকই যৌহিতলালের সঙ্গে একমত হয়েছেন,

“পাশ্চাত্য আদর্শ পাশ্চাত্য কাব্যকলার অন্থকরণে তিনি যে শব্য বাংল কাব্যের সষ্টি করিলেন, পরবর্তী বাঁংল। কাব্যে তদপেক্ষা উৎকৃষ্ট কলাকুশলতা কল্পনা গৌরব লক্ষিত হইলেও, খাঁটি বাঙ্গালীর কাব্যহিসাবে কেহ তাহাকে অতিক্রম করিতে পারে নাই ।” | কবি শ্রীমপুক্ছদন-_মোহিতলাল মন্ভুমদার

কিংব1 ভাবাবেগ মিশ্রিত সমালোচনা তেও যখন বল। হয়,

“চওীদীস, মুকুন্দরাঁম, ভারতচন্ত্র ঈশ্বরগুপ্তের পর এমন হিন্দুভাবান্ুপ্রাণিত কবিতা আর শ্রুত হইল না৮*-- মধুস্থতি, নগেন্দ্রনাথ সোম পৃঃ ২৭৬]

তখন খুব বেশী বাড়িয়ে বল! অতিরঞ্জনের মত শোনায় না। যে কোন একজন কবির স্বদেশপ্রাণতা৷ বিচারের ক্ষেত্রে ধরনের প্রশংসাই তাঁর যথার্থ প্রমাণ ।-- কিন্তু মধুকদনের স্বদেশপ্রাণতার মধ্যে যে সৌন্দর্য আছে--তা যে কোন প্রশংসার চেয়েও বেশী মূল্যবান, বেশী সত্য কোনো উত্তেজনা যখন কোনে বিশেষভাবের বাহন হয়, তখন যথার্থ সতা সেখানে লর্বদ! প্রতিবিদ্বিত হয় না। মধুহ্দনের স্বদেশপ্রাণতার মধ্যে উত্তেজনার চেয়ে হৃদয়াঁনুভৃতির স্বচ্ছধারাই গ্বহমান- সেজস্য স্থায়ীমূল্য দাবী করেছে অকুষ্ঠিতচিত্তে

প্রকৃত স্বদেশপ্রেমিক সম্বন্ধে একটি সমালোচনায় বলা হয়েছে---“ 150, 5০0৮

কাব্য ২৩৭

10৮6 ০০0৮ 195 13010 00 ৮৪ 01658151060 17) 006 11600 06 2 5681721175 101 02525107081] 2009 01 1)210150 00.0 ৪89 09119 90196] 1052.105%, ১৪

মধুহদনের স্বদেশপ্রেম তাহলে পাশ্চাত্য সমালোচনার মানদণ্ডেও স্বীকৃতি পাকে, কারণ “09115 5061 105810%-র অভাবে তাঁর কাব্যের মধ্যে নেই বললেই চলে স্বদেশপ্রেমের ক্ষেত্রে অন্ততঃ নেই। মধুক্ছদন দেশকে শুধু ভৌগোলিক সীমার আধাররূপে চিস্তা করেন নি; সংস্কৃতসাহিত্যে চিন্ময়ী সত্তারপে দেশকে অভিহিত করা হয়েছে, চিন্তাগভীর যধুক্ছদনও দেশের চিন্ময়ীযূতিকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন, ব্যাকুল সম্বোধনে তা বারবাঁরই ধ্বনিত হয়েছে কৈশোর যৌবনের সীমারেখায় মধুত্দনের মনে এক আককম্মিক ভাবের প্লাবন এসেছিলো, ঘর ছেড়ে মায়ের স্সেহ অস্বীকার করে তিনি আঅকম্িককে বরণ করার ছূর্বার প্রেরণ! পেয়েছিলেন কিন্ত তারপরই ঘরে ফেরার আকুতি নানাভাবে তাঁর কবিতায় করুণ সংগীতের মতই ধ্বনিত হয়েছে বারংবার একান্ত আপনজনের মতো! সমস্ত দেশ তাঁর অন্তরে উজ্জ্বল মাতৃমৃতিরূপেই প্রতিভাত হয়েছে বাংলাদেশ, বাংল! ভাষ! বাঞ্গালীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে মধুহদন তাঁর কাব্যে-কবিতায় বারবারই প্রসঙ্গ এনেছেন। দেশবন্দনা স্বতাষাপ্রেম স্বজাতিপ্রীতি মধুহ্থদনের কল্পলোকের ভাবনা অনুভূতিকে এতখানি নিবিড়তায় ভরিয়েছে। তাই সমগ্র সাহিত্য সৃষ্টিতে আমর ঘুরে ফিরে কয়েকটি শব্দ প্রয়োগের প্রতি তীর বিশেষ অনুরাগ লক্ষ্য করি। “গৌড়জন” “গৌড় স্থভাজন' মধুস্থদনের আত্মজন, তাদের কাছে “স্থবঙ্গ” “শ্যামা জন্মদ” "সুশ্যামাঙ্গ” “হবরদ” বঙ্গভূমির মনের কথা সাশ্রুনয়নে ব্যক্ত করেছেন মধু কবি।

স্বদেশপ্রেমের ্ঈগভীর ধারণাটি মধুক্দন পৃথকভাবে কোথাও প্রকাশ করেন নি, কাঁব্যস্থপির মূলসত্য হিসেবে স্বদেশপ্রেমকে স্থাপন করার কোন সচেতনতাও কোথাও' দেখ! যায়নি _তবু স্বদেশচেতনার গভীরতা অতি সহজেই প্রকাশিত হতে পেরেছে-_ এটাই আশ্চর্য রঙ্গলালের মতে স্বাধীনতার বাণীপ্রচার মধুহুদনের যূলোদ্েশ্য নয়__ মধুক্রদন আরও অনেক সমৃদ্ধ জীবনবাণীর কথা শোনাতে চেয়েছিলেন, নৃতনের আলোকে পুরাতন কাব্যসাহিত্যের নবায়নই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল 'মেঘনাদবধ কাব্যে, যুগজীবনের সমস্ত আতিই রূপাঁয়িত হয়েছে, _স্বদেশপ্রেম সেখানে প্রস্ফুট নয়,_অক্ফুটই রয়ে গেছে। রাবণের মহিমা, মেঘনাদের অমলিন চরিত্রাংকণ যেখানে মুখ্য স্বদেশচেতনার মত আংশিক একটি উপলব্ধির বাণী সেখানে স্থান পাবে কি করে? কিন্তু রাবণ ইন্্রজিতের চরিত্র মহিমার পশ্চাৎপট হিসেবে কিভাঁবে মধুস্থদন স্বদেশ চেতনাকে স্থাপন

১৪. 0)89£64 60028 4500109615100 1 11051264052 ৮739

নই৩৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

করেছেন তাও লক্ষ্যণীয় এই একটি মাত্র পটভূমির অভাবেই রাবণ ইন্দ্রজ্িতের মহিমাও বোধ হয় ম্লান হয়ে যেতে পারত স্বদেশচেতনার মহান লক্ষ্যই পৌরাণিক রাবণের সহত্র নিন্দাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে, ইন্দ্রজিতকে একটি আদর্শ নায়করূপে প্রতিষ্ঠা এনে দিয়েছে আবার নিতান্ত আত্মগত অনুভূতি চিন্তার কথা যখন তিনি “চতুর্দশপদী কবিতাবলী'তে প্রকাঁশ করেছেন সেখানেও শুধু দেশপ্রেমই সেই রচনাকে অনন্তায় মণ্ডিত করেছে; তীর অন্তান্ত কাব্যের মধ্যে মেঘনাদবধ কাব্য চতুর্দশপদী কবিতাবলীতেই দেশপ্রেম সম্পকিত ধারণার স্বচ্ছ প্রতিরূপ পাওয়া যাঁয়। আবার ছুটি কাব্যেই মধুক্ুদনের কবিসামর্থ্যের শ্রেষ্ঠতাকেও আমরা পেয়েছি অনেকের মতে “মেঘনাদবধ কাব্যের” কবিকে যথার্থ স্বরূপে আবার আবিফাঁর করা যাঁয় পচতুর্দশপদী কবিতাবলীর” মধ্যেই “তিলোত্মা! সম্ভবের” পর “মেঘনাদবধ কাব্যে' মহাকবি মধুহ্ুদনের কবিত্বশক্তির চুড়ান্তি প্রকাশ ঘটেছে, এই আকত্মিক শক্তিরই বিচ্ছুরণ ঘটেছে 'ব্রজাজনা “বীরাঙ্গনাঁয়”। চতুর্দশপদী কবিতাবলীর সঙ্গে পূর্বতন হৃষ্টির বিন্দুমাত্র সংযোগ নেই--তবু মধুস্ছদনের কবিচিত্তের সম্পূর্ণতা সাধন করেছে এই সমস্ত খণ্ড কবিতাবলীই মনন চিন্তনকে এমন অনাবতভাবে কোন কাব্যে মেলে ধরেননি কবি | দেশপ্রেম শুধু কাব্যজগতের উপলব্ধি নয় বাস্তব জগত জীবনের সঙ্গে এর যোগাযোগ রয়েছে, মনন চিন্তনের সম্বন্বয়ে সে সত্য রূপ নেয় অপরূপ হয়ে 'মেঘনাদবধ কাব্যে দেশপ্রেম কাব্যের স্বায়ীভাবের উদ্দীপন বিভাব কিন্তু *“চতুর্দশপদী কবিতাবলী'র মৃলভাবই স্বদেশচিত্তন_স্বদেশপ্রেমের স্বচ্ছ আবেগের তরঙ্গই যেন এক একটি কবিতার মধ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে মধুক্দনের স্বদেশপ্রেমের আলোচনায় ছুটি বিখ্যাত কাব্যেরই সাহীঘ্য নিতে হবে আমাদের মধুক্ছদনের কাব্যসাধনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য চমৎকারিত্ব নিয়ে “মেঘনাঁদবধের কাব্যের” জয়যাত্রা; এটি শুধু মধুক্ছদনের শ্রেষ্ঠ স্থ্টি নয়__মধুক্দন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্ সে যুগের ক্রান্তদর্শা এই তিন কবির যে কোন সৃষ্টির তুলনায় বিশিষ্ট সৃতরাং কাব্যের বিশিষ্টতার মধ্য দিয়ে সে যুগকে চিনে নেবার যত স্থযোগ এসেছে-_-অন্য কাঁব্যে তা আসে নি। দেশপ্রেমের অস্ফুট উচ্ছাস দিয়ে রঙ্গলাল বাংল! কাব্যের ক্ষেত্রে বীরযুগের উদ্বোধন করেছেন -মেঘনাদবধ কাব্যে'র আঙ্গিক উপস্থাপনায় তা মুখ্যভাবে স্থান পেয়েছে “*মঘনাদবধ কাব্যে” পরিকল্পনার বিভিন্নমুখী অভিনবত্বের অধ্যে দেশপ্রেম ধারণার অভিব্যক্তিও অন্যতম পৌরাণিক সংস্কার বিচ্ছিন্ন ম৫ুহুদন কাব্যের মর্মযূলে তার নিজস্ব ধ্যানধারণাকে স্থাপনা করেছেন,_-সোচ্চারে ব্যক্ত করেছেন তার স্বীয় উপলন্ধি অন্ুভববেগ্ সত্যকে | কাব্যে রামায়ণী কথা কাব্যের আদর্শ লঙ্ঘিত হয়েছে একথা যত বেশী সত্য- তার চেয়ে বেশী যুগসত্য

কাব্য ২৩৯

কাব্যের মধ্যে রয়েছে রামায়ণের কোথাও রাম-রাবণের যুদ্ধকে গর্বোদ্ধত আকুমণকারী আত্মরক্ষাঁয় সচেষ্ট দুটি বিরোধী শক্তির সংঘর্ষ বলে দেখানো হয় নি রাম ষে স্দূর অযোধ্যা থেকে স্বর্ণলঙ্কার বৈভব হনন করতে আসেন নি ধারণা অর্জনের জন্য 'মেঘনাদবধের” প্রথম সর্গই যথেষ্ট বীরত্ব, শৌর্য, বীর্য দিয়ে লঙ্কাঁর সংগ্রামী সেনাঁপতিরা যখন একে একে আত্মবিসর্জন দিয়েছেন স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর শহীদ বলে তাদের অভিনন্দন জানিয়েছে লঙ্কাবাসী - ধারণাও অনগ্তায় সমদ্ধ। “মেঘনাদবধ কাব্যের উপস্থাপনায় স্বদেশচেতনা ওতপ্রোত থাকার হেতু অনুলন্ধান করলে সেষযুগীয় উন্মাদনার প্রকাশ্য প্রভাব অস্বীকার করা যাবে না.__তবে মধুহদন নিজেকে নিরপেক্ষ রেখেই সাহিত্যের ক্ষেত্রে আত্মপ্রকাশ করেছেন, সাময়িক উত্তেজনার সঙ্ষে সংযোগ না রেখেও সে যুগের সর্বজনীন আতি তার কাব্যেই যথার্থ আন্তরিকতার সঙ্গে ব্যক্ত হয়েছে অবরুদ্ধ লঙ্কীর সঙ্গে পরাধীন ভারতের রূপক খুঁজে পাওয়া হয়ত অতি কল্পনা হবে - কিন্তু আধুনিক মন নিয়ে যিনি রামরাবণের সংগ্রামকে ব্যক্তিগত দ্বন্দের উর্ধে স্থাপনা করেছেন, তিনিই আবার নবতর ব্যাখ্যারোপের প্রয়োজনে সেই আত্মদন্ধকে দেশপ্রেমের মহিমায় ভূষিত করেছেন পাশ্চাত্ত্য প্রভাব বীররসের পশ্ফুটনে উদ্দীপিত করেছিল কবিকে কিন্ত স্বাধীনতা পরাধীনতার ব্যঞ্জনাটি মধুক্দনেরই পরিকল্পন। দেশপ্রেমযূলক সাহিত্যে এই কল্পনাটি অভিনব তাৎপর্য- পূর্ণ রাম রাবণের যুদ্ধ এখানে স্থাণিক আক্রমণ প্রতিরোধের চেষ্টা মাত্র অসংখ্য বীরদের আত্মোৎসর্জনের মধ্যে শুধু দেশপ্রেমেরই প্রেরণা সক্রিয় হয়েছে রাবণের সীতাহরণ এখানে কোন অপরাধমূলক ঘটনাই নয় যেন, রামের লঙ্কা আক্রমণই সবচেয়ে বড়ো ঘটনা লঙ্কাবাসীরা রাবণের অপরাধ বড় বলে মনে করতে পারেনি ওতো! শুধু রাজকীয় পৌরুষের একটা নমুনামাত্র, আর মধুহ্দনও কর্পনখার প্রসঙ্গটি প্রথমসর্গে অবতারণা করেই রাবণের অপরাধের বোঝা লাঘব করার চেষ্টা করেছেন হতর।ং রামের লঙ্কা আক্রমণ অপরাধ বলেই মনে করতে হবে এবং সেইজন্ই

সমুদ্রের বন্ধনদশ! দেখে রাবণের খেদ,__

“কি স্বন্দর মালা আজি পরিয়াছ গলে,

প্রচেতঃ! হা ধিক ওহে জলদলপতি !

এই কি সাঁজে তোমারে, অলজ্ঘ অজেয়

তুমি! | মেধনাদবধ কাব্য, প্রথমসর্গ ]

রামের.কাছে আত্মসমর্পণের মধ্যে রাবণ এক প্রচণ্ড দুর্বলতারই আভাস

পেয়েছে, - যে বীরোচিত রীতি নয় তাই সমুদ্রকে অপবাদ দূর করার উৎসাহ

২৪+ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

দেয় রাবণ__কারণ বীর রাবণ, মানীর অপমান, বীরত্বের গ্লানি সহ করবে কেমন করে 1 উঠ, বলি, বীরবলে জাঙ্গাল ভাঙ্গি, দূর কর অপবাদ। রামের লঙ্ক। আক্রমণের প্রত্যক্ষ কারণটির অন্ত ব্যাখ্যাই “মেঘনাদবধ কাব্যে” প্রাধান্ত পেয়েছে__-এবং এই স্থযৌগে অবরুদ্ধ, লঙ্কাঁবাঁসীর স্বদেশপ্রেম প্রতিষ্ঠা সহজতর হয়েছে মধুহদনের কল্পনীশক্তির অভিনবত্ব এখানে যত বেণী স্পষ্ট, তার নিজস্ব দেশচেতনা বোধ হয়ত ততখানি নয়। দেশচেতনার যে প্রত্যক্ষ প্রকাশ ঈশ্বরগুপ্ত রঙ্গলালে অনাবৃতরূপে দেখেছি মধুক্থদনের কাব্যের কোথাও তা নেই। রঙ্গলাল “পন্মিনী উপাখ্যানের” মর্মমূলে দেশচেতনাঁকে স্থাপন করেছেন, মধুক্ুদনের “মেঘনা দবধে" তা নেই। মধুহ্বদনের মহাঁকাব্যের মধ্যে আরও অনেক জীবন নির্ভর সত্যান্ৃভূতি প্রকাশ পেয়েছে--এর মহাঁকাব্যত্ব স্বধিশাল ক্ষেত্রে আপন মহিমায় ভাত্বর | কিন্তু 'মেঘনাদবধ কাব্যে'র প্রথম সর্গের মূলসত্য যে ভিত্তিকে আশ্রয় করেছে ভা নিঃসন্দেহে লঙ্কাবাসীদের দেশাত্মবোধের অকৃত্রিম প্রেরণা এই প্রেরণাই বীরবাহুর আক্দীনের মহিমা আবিষ্কার করেছে, এই প্রেরণাই রাবণকে আত্মশোঁক ভুলিয়েছে, যুদ্ধসাজে উৎসাহিত করেছে, এই প্রেরণাই ইন্দ্রজিতকে সচেতন করেছে এবং চিত্রাঙ্গদার যুক্তিসংগত অভিযোগকে একটা বিশেষ মহিমার প্রলেপে অর্থহীন বলে প্রমাণ করতে সমর্থ হয়েছে চিত্রাঙ্গদার উদ্ধত আক্রমণ রাবণকে তার এশখর্ষের, মহিমার আপন থেকে নামাতে পারে নি, সে শুপু রাবণের স্প্তশৌর্যবীর্যকে জাগরিত করেছে গুত্রশোকাকুল রাবণ চিত্রাঙ্গদার অভিযোগ মেনে নিয়েই যুদ্ধলাজে সঙ্জিত হয়েছে,_- “বীরশুন্য লঙ্কা মম কাল সমরে আর পাঠাইব কারে, “কে আর রাখিবে রাক্ষসকুলের মান? যাইব আপনি সাঁজহে বীরেন্দরবুন্দ, লঙ্কার ভূষণ রাবণের যুদ্ধসজ্জার মধ্যেও লঙ্কার মান, রাক্ষসকুলের মানরক্ষার প্রশ্নটিকে মধুস্দন স্থকীৌশলে আরোপ করতে সক্ষম হয়েছেন ; সেজন্যই বল! যায় 'মেঘনাদবধের' প্রথম সর্গের দেশপ্রেম ব্যঞ্জনার মাধ্যমে ঘটনা চরিত্র চিত্রণের অভিনব দক্ষতা দেখাতে পরেছেশ মধুক্দন | দেশীত্মবোধের প্রেরণাতেই বীরবাহুর আত্মদান, লঙ্কাবাঁসীর মুখে এই আবত্মদানের স্বীকৃতি ভগ্মদূতের মুখে বীরবাহুর আত্মত্যাগের মহিমা শ্রবণে উন্মুখ রাবণ, কারণ স্বৃত্যু বীরোচিত। ভগ্নদুতও জানে বীরবাহ্ছর জীবনাহুতির মহিমা,_-

কাব্য ২৪১

হাঁয়, লঙ্কাপতি,

কেমনে কহিব আমি অপূর্ব কাহিনী ?

কেমনে বণিব বীরবাহুর কীরতা !

শী রা

ধন্য শিক্ষা বীর বীরবানু!

কত যে মরিল অরি, কে পারে গণিতে ? তগ্নদূতের আক্ষেপাংশটিতেও দেশাত্ম বোধের চরমপ্রকাশ !

“কেনন। শুইন্ন আমি শরশয্যোপরি,

হৈমলঙ্কা--অলঙ্কীর বীরবাহুসহ

রণভূমে ? রাবণ পুত্রশোকাতুর, কিন্তু বীরপুত্রের বীরত্ব কাহিনী শ্রবণে তিনি উল্লসিত,

সাবাসি, দূত। তোর কথা শুনি,

কোন বীর হিয়া নাহি চাঁহেরে পশিতে

সংগ্রামে ? রাঁবণ সার্থক জন্মদীতা, বীর পুত্রের জনক হিসেবে রাবণের গৌরবও বড় কম নয়। তাই স্ৃত্যুশয্যাঁশীয়ী বীরবাহুকে দেখে রাবণের সগৌরব উক্তি,

“যে শয্যায় আজি তুমি শুয়েছ, কুমার

প্রিয়তম, বীরকুলসাঁধ শয়নে

সদ! রিপুদল বলে দলিয়! সমরে,

জন্মভূমি-রক্ষাহেতু কে ডরে মরিতে ?

যে ডরে, ভীরু সে মৃঢ় ; শতধিকৃ তারে রাবণের এই শোকোচ্ছাসের মূলেও যেন একটা সোচ্চার সাত্বনা,_"জন্মভূমি রক্ষা হেতু কে ডরে মরিতে 1” -বীরবাহু জন্মভূমির মানসম্ত্রমকে জীবন দিয়ে রক্ষা করেছে,_ দেশপ্রেমিকতাঁর এর চেয়ে বড়ো দৃষ্টান্ত প্রাক মধুহুদন সাহিত্যে হয়ত আছে কিন্তু 'মেঘনাঁদবধ কাব্যে এই দৃষ্টান্ত যতট] উজ্ভ্ল মহিমা লাভ করেছে অন্যত্র তা নেই। "মেঘনাদবধ কাব্যে” বীরবাহুর আত্মদানই লঙ্কীবাসপীর অতীত গৌরব ইতিহাস তুলে ধরেছে,_আমর। রাবণের মুখেই শুনেছি কুস্তকর্ণ অন্যান্য রাক্ষস-কুল-রক্ষণ যোদ্ধাদের বীরত্ব কাহিনী ; আত্মদাঁনের বিনিময়ে স্বাধীনতা সংগ্রামকে বারা উদসিপিত করেছে, প্রমাণ করেছে স্বাধীনতার মূল্য বীরবাহুর মৃত্যু সেই রতক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্য একটি অমূল্য বিনষ্টি এবং ভবিষৎ যোদ্ধাদের সামনে আর একটি জলম্ত দৃষ্টান্ত! রাঁবণও বীর কিন্ত আত্মজদের-প্রাণপ্রিয় সন্তানদের নির্ভীক আত্মদানের

৯৬

২৪২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

সংবাদ যখন তার কানে এসে পৌছয় সে মৃহ্র্তে শোক দুঃখে ভেঙ্গে পড়েন বটে কিন্তু পরমুহর্তে তিনিও আত্মস্থ”_ কোন বীর হিয়া নাহি চাহেরে পশিতে সংগ্রামে?

সাহিত্যে যথার্থ বীররসের ঝংকার মধুস্থদনই সৃষ্টি করলেন এক অপূর্ব বিপরীতমুখী ভাঁবস্থষ্টির মাধ্যমে বীরবাহুর মৃত্যুতে রাবণের নিঃশব ক্রন্দন শুধু পটভূমিকা মাত্র অনন্ত শক্তিমান রাবণের হুপ্ত বিচলিত শৌর্যবীর্য জাগিয়ে তোলার একটা অতুলনীয় মহ্ণকাব্যিক ভঙ্গিমা এটি করুণরসের সি'ড়ি বেয়ে যে বীররস জাগরিত হবে সেই সম্মিলনের মধ্যে বক্তব্যটি গভীরতর মহিমা লাভ করবে আত্মশক্তির বিশ্বাসে, বিনষ্টির বেদনায়, আত্মজ প্রিয়তমের মৃত্যুমুহূর্ত স্মরণ করে প্রতিহিংসায় প্রতিজ্ঞায় উন্মাদ সেই শক্তির উজ্জলচিত্র অঙ্কনের পূর্বে মধুক্ছদন তাঁর কবিত্ব শক্তি প্রকাশের চূড়ান্ত মুহূর্তে এসে পৌচেছেন। বাংলা সাহিত্যে যথার্থ বীররস স্ৃজনের এই সুযোগ সৃষ্টি করতে আর কাউকে দেখা যায়নি নিহত পুত্রের সামনে দীড়িয়ে পিতার প্রতিহিংসা বেদন। তাকে উন্মাদ করেছিল,__সাহিত্যে এই চিত্র যেমন বিরলদৃষ্ট তেমনি এই চিত্রাঙ্কনকে সার্ক করার প্রতিভাও কোটিকে গোটিক। মধুক্ছদন এই চরম পরীক্ষায় সসম্মীনে উত্তীর্ণ; তার মহাকাব্যে বীররস কৃজনের প্রতিজ্ঞাও সার্ক | দেশপ্রেমই প্রত্যক্ষভাবে এই বীরত্বের প্রেরণা এনে দিয়েছে

মধুক্সদনের “মেঘনাঁদবধ কাব্যের” ইন্দ্রজিৎ চরিত্রপ্রসঙ্গটি এখনও আলোচিত হয়নি, স্বদেশপ্রেমের উচ্ছ্বাস চরিত্র প্রসঙ্গে আরও স্পষ্টভাবে দেখা যায়। ইন্দ্রজিং কাব্যের নায়ক, -মধুহুদন তাঁর সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন চরিত্রটি প্রশ্ফুটনের জণ্ত। ইন্দ্রজিতের অমলিন ব্যক্তিত্ব, শৌর্যবীর্ঘ, তেজ, নিষ্ঠার তুলনা নেই,_-লঙ্কার পঙ্কজ রবি", ইন্দ্রজিৎ স্বদেশপ্রেমের মূর্ত বিগ্রহ কিন্তু মেঘনাদ প্রসঙ্গে আসার আগেই কাব্যের প্রথম সর্গে মধুক্ুদন দেশপ্রেম ভাবনাকে অনাবৃত ভাবে প্রকাশ করেছেন মধুহুদন প্রথম সর্গেই রাবণের স্বর্ণলঙ্কার বিপদের আভাস দিয়েছেন, ব্যক্তিগত ছন্দ অপরাধের প্রশ্নটি দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ভেদ করে কোথাও মুখ্য হতে পারে নি--যদিও চিত্রাঙ্গদ? প্রকাশ্য রাঁজসভান্ এসে লঙ্কা অযোধ্যার এই সংগ্রামের যুক্তিগ্রাহা সত্যপ্রকাশের আপ্রাণ চেষ্টা করেছে কিন্তু বোঝাই যায় এর চেয়ে নিক্ষল অরণ্যে রোদনের দৃষ্টান্ত খুব কমই আছে। চিত্রাঙ্গদ! তাঁর সমস্ত শক্তি সাহস সঞ্চয় করে রাজা রাবণকে অভিযুক্ত করছে, কোনো৷ আদর্শের মহিমা তার কাছে মূল্যহীন পুত্রশোকের বেদনা তাঁকে ছুঃসাহসী করেছে,--অন্তঃপুরের আগল

কাব্য ২৪৩

ভেঙ্গে পুত্রশোকাতুর] মাতা প্রতিকার ভিক্ষা করেছেন,-_নির্যমভাবে আদর্শের মুখোঁশ খুলে দিয়েছেন জনসমক্ষে,_

দেশবৈরী নাশে যে সমরে,

শুভক্ষণে জন্ম তাঁর ; ধন্ত বলে মানি

হেন, বারপ্রস্থনের প্রস্থ ভাগ্যবতী |

কিন্তু ভেবে দেখ, নাথ, কোথা লঙ্কা তব; কোথা সে অযোধ্যাপুরী ? কিসের কারণে, কোন লোভে, কহ, রাজা, এসেছে দেশে রাঘব?

শুনেছি সরযৃতীরে বসতি তাহার__ ক্ষুদ্র নর তব হৈমসিংহাসন আশে

কেন তারে বল, বলি?

দেশপ্রেমের যে প্রলেপ দিয়ে রাবণের সীতাহরণের অন্যায় গোপনের চেষ্টা চলেছে - চিত্রাঙ্গদা তাঁরই স্বরূপ তুলে ধরেন কিন্তু আগেই বলেছি শুধু চিত্রাঙ্গদার নিফল অরণ্যে রোদন,__সমগ্র লঙ্কাবাসী সে অপরাধ বিস্মৃত হয়েছে, চিত্রাঙ্গদার দপিত সত্য উক্তি শুধু নির্মম পরিহাসে পরিণত হয়েছে মধুস্থদন সত্য প্রকাশে অকুষ্ঠিত,---তাীর নব্যমহাঁকাব্যের মধ্যে আর যাই থাক না কেন সত্যের বিকৃতি নেই ;-- শুপু কল্পনা প্রকাঁশভঙ্গির অনন্য বলিষ্ঠতায় তা সমৃদ্ধ জীবননির্ভর কাব্য চিত্রাঙ্গদার দেশপ্রেমের মোঁহ নেই, মাতৃজেহের শক্তিই রাঁবণের যথার্থ স্বরূপ নির্ণয় করেছে অভ্রান্তভাবে রাবণ বিরোধিতার কোন ইচ্ছাও তাঁকে প্রণোঁদিত করেনি,-_- তাহলে বিভীষণপন্থী চিত্রাব্দদা কাঁব্যের বিশেষ একটি চরিত্র হয়ে উঠত। কিন্ত চিত্রা পুত্রহারা জননীর মতই জ্ঞানশৃহ্যা,__কোন মিথ্য। সম্মানের মোহ দিয়ে সত্যকে ঢাকবাঁর চেষ্টা করা তার পক্ষে অসম্ভব ছিল ;-__-এখানেই চরিত্রটির স্বাভাবিকত্ব। রাবণের বারবাহুপ্রশংসায় অবিচলিত চিত্রাঙ্গদা তাই ক্কুদ্ধা ফণিনীর মত গর্জন করে ওঠেন। মিথ্যা সম্মান কি মাতৃন্সেহের চেয়েও বড়? সমগ্র লঙ্কাবাসী চিত্ৰাঙ্গদার বক্তব্যের সুবিচার করে নি, চিত্রাঙ্গদা নীরবে যথাস্থানে ফিরে

২৪৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেষ

গেছে। কিন্ত প্রসঙ্গে রাবণের সাত্বনা বাক্য যেন খানিকট। আত্মশোধনের চেষ্টা,__ বীরশুন্তা লঙ্কা মম কাল সমরে, আর পাঠাইব কারে? কে আর রাঁখিবে রাক্ষস কুলের মান? চিত্রাঙ্গদা “এ কালসমর” আয়োজনের প্রশ্নটি তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন প্রাখ- পণে, কিন্তু রাবণমহিমা মুগ্ধ লঙ্কাবাসীরা নিয়ে মাথা ঘামায়নি। এইভাবে 'মেঘনাদবধ কাব্যে একটা পুরাঁণসম্মত অপরাঁধও নতুন একটা যুক্তির আলোকে পরিশুদ্ধ সত্য হতে পেরেছে মধুক্থদনের রাঁবণের মতই আমরাও যেন মনে প্রাণে বিশ্বাস করছি যে, সত্যিই লঙ্কার স্বাধীনতার প্রসঙ্গ ছাড়া প্রথম সর্গে অস্তান্য সমস্ত প্রশ্নই অবান্তর | মধুহুদনের “মেঘনাদবধ কাব্য” প্রসঙ্গে কোন একজন সমালোচকের সঙ্গে একমত হয়েএ বিষয়ে সত্যিই বলতে পারি,_ আমাদের পর শাঁসনপীড়িত, অনৃষ্ট বিড়ঘ্িত ব্যথাহত জীবনের সঙ্গে 'মেঘনাদবধ কাব্যের মানবীয় চরিত্রগুলির কোথায় যেমন মিল আছে--কাব্যটির সকরুণ গীতধর্মী অংশ যেমন মধুহদনের ব্যক্তিগত জীবনের, তেমনি জাতীয় জীবনের রোমাটিক মর্মলংগীত। [ পৃঃ ১৬-১৭, মধুক্দনের কাব্যবৃত্তব-_-জীবেন্দ্র সিংহরায় মেঘনাদের চরিত্র চিত্রণেও বীরত্বই মুখ্যকথা,_কিস্তু কোথাও কোথাও মেঘনাদ আমাদের জাতীয় জীবনের মর্মীতিকে, শক্তি বীরত্বের মধ্যে মুক্তি দিয়েছেন সাহিত্যেও অন্ততঃ একটি সজীব শক্তির মৃতি দেখতে পেয়েছি মেঘনাদ মধুক্ষদনের মাঁনসপুত্র,_-শক্তি সৌন্দর্য দিয়ে তিল তিল করে তিনি এই তিলোতম চরিত্র সৃষ্টির প্রয়াম পেয়েছেন ।--কিস্তু মেঘনাদের দেশাত্সচেতনা, আত্মদান স্পৃহা, বীরপণ। তাঁর অস্ভথান্য স্থকোমল গুণকে অতিক্রম করেছে সহজেই | মেঘনাদ কবীর,_বীর রাবণের যোগ্য পুত্র--এ পরিচয়টুকুই বৌধহয় কাব্যে মুখ্য | প্রথম সর্গে প্রমোদকাননে উৎসবমগ্র ইন্দ্রজিতের প্রথম চেতনাসঞ্চার মুহুর্তের চিত্র,__ হা ধিক মোরে! বৈরিদল বেড়ে ব্বর্ণলঙ্কা, হেথা] আমি রামাদল মাঝে ? [১মসর্গ] এখানেও শক্রর হাত থেকে স্বর্ণলঙ্কা উদ্ধারের আকুলতাই তাঁকে উদ্দীপিত করেছে, -মেধনাঁদ বলীর আবির্ভীব ঘটেছেও একই চেতন! থেকে ইন্্রজ্িত অভিষেকের মুহূর্ভেও বন্দীদের সময়োচিত বন্দনাগীতি,_

কাব্য ২৪৫

নয়নে তব, হে রাক্ষস-পুরি,

অক্রবিন্দু ; মুক্তকেশী শোকাবেশে তুমি ;

ভূতলে পড়িয়া, হায়, রতন-মুকুট,

আর রাজ-আভরণ, হে রাজহন্দরি,

তোমার! উঠ গো শোঁক পরিহরি, সতি !

রক্ষঃ-কুল-রবি ওই উদয় অচলে |

প্রভীত হইল তব ছুঃখ-বিভাবরী | | প্রথম সর্গ ]

পরাঁধীনা-শক্রবেহ্িতা লঙ্কাপুরীর এই ছূর্দশাচিত্র অঙ্কনের মধ্যে পরাধীন! ভারত

মাতার ছুরবস্থার রূপক অনুসন্ধান হয়ত অসমীচীন কিন্তু রঙ্গলাল বা ঈশ্বরগুপ্চ স্পষ্ট ভাবে যা ব্যক্ত করেছেন-_মধুস্দন তা করেননি বলেই একে স্পষ্টভাবে আরোপিত রূপক বলে মনে হয়না কোথাঁও। মধুক্দন অলংকারে, রূপকে তাঁর মহাকাব্যকে সমৃদ্ধ করেছিলেন কিন্তু রচনাগুণে তা স্থানিকতা বা সাময়িকতার উর্ধে এক অভিনব জাঁতীয়স্বপ্লের সম্ভীবনাকে চিত করেছে মধুহদনের যুগে আত্মত্যাগে উদ্ধদ্ধ দেশপ্রেমিকদের আবির্ভাব ঘটেনি বটে, মেঘনাদ শুধু কাব্যের মধ্যে তার দেশপ্রেম স্বাধীনতার জন্য জীবন বিসর্জন দিলেন কাব্যের যদি পরোক্ষভাবেও মানুষের মনে প্রভাব বিস্তার করার সামর্থ্য থাকে তবে ইন্দ্রজিতের এই আত্মত্যাগ নিশ্চয়ই ব্যর্থ হয়নি। স্বাধীনতার জন্য, মাতৃভূমির জন্য আত্মদান ইন্দ্রজিতের আজীবনের স্বপ্ন, তাই ষড়যন্ত্রের ফলে লক্ষণের হাতে তাঁর অসহায় মৃত্যুতে বারত্বপূর্ণ খেদোক্তি-_-

কিন্তু তোর অস্ত্রাথাতে মরিন্ধ যে আজি,

পামর, চিরছুঃখ রহিল রে মনে |

দৈত্যকুলদল ইন্দ্রে দমিন্থ সংগ্রামে

মরিতে কি তোর হাতে? [৬ষ্ঠ সর্গ]

ইন্দ্রজিতের মধ্যে স্বদেশনিষ্ঠা যেন বাগ্য় হয়ে উঠেছে,__এ তীর স্থগভীর দেশ- প্রেমের কথা বিভীষণকে ইন্দ্রজিং সেকথাই শুনিয়েছে,_ তব জন্মপুরেঃ তাত, পদ্দার্পণ করে

হাতির কহ তাঁত, সহিব কেমনে হেন অপমান আমি, ভ্রাতৃপুত্র তব ? তুমিও, হে রক্ষোমণি, সহিছ কেমনে ? [৬ষ্ঠ সর্গ] দেশপ্রেমিক মেঘনাদের কাছে বিভীষণের বিকুদ্ধাচরণ যেন এক হ্বপ্রাতীত, কল্পনাতীত বিস্ময়! ইন্দ্রজিতের শক্তি বীরত্বের সংবাদ এখানে অপ্রত্যক্ষ যষ্ঠ

২৪৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

সর্গে অসহায় নিরস্ত্র ইন্রজিতকে সশন্ত্র নির্মম শক্রর কাছে শক্তিপরীক্ষা দিতে হয়েছে মাত্র কিন্তূ,এই অংশেই মেঘনাঁদ তার শক্তির চরম পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীরধ -_মৃত্যুবরণের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত অমিতবিক্রমে তিনি আত্মরক্ষা সর্যোপরি লঙ্কার মুখরক্ষা করার সংগ্রাম করে গেছেন। বিশ্বাসঘাতক শক্রসমর্থক বিভীষণের ষড়যন্ত্রে বিস্ময়াহত মেঘনাদ শুধু একবারই মরমে মরে গিয়েছিলেন-_,

হে পিতৃব্য, তব বাক্যে ইচ্ছি মরিবারে |

রাঘবের দাস তুমি? কেমনে মুখে

আনিলে একথা, তাত, কহ তা দাসেরে !

ইন্দ্রজিৎ শক্রর ষড়যন্ত্রের তাৎপর্য বোঝেন কিন্তু লঙ্কাঁর স্বাধীনতাকে আক্রমণকারীর

হাতে তুলে দিয়ে তারই দাসত্ব স্বীকারের কথা তীর স্বপ্লেরও অগোচর। কিন্তু বিভীষণসেই হীনতম কাজ করতেও দ্বিধাবোধ করেননি, ইন্দ্রজিতের পক্ষে যে কত বড় স্বপ্নভঙ্গ, তা বুঝি তাঁর খেদৌক্তিতে | মৃত্যুমুহ্র্তেও ইন্দ্রজিৎ জ্ঞাতিত্ব-ভ্রাতৃত্ব দেশপ্রেমেরই মহিম! কীর্তন করে গেছেন | কিন্তু বিশ্বীসহস্তা-দেশদ্রোহী বিভীষণকে শোধন করার মুহূর্ত যে অতিক্রান্ত ইন্দ্রজিং তা জানতেন না-_-তাই শান্ত্রবাঁক্য, আগপ্তবাঁক্য শুনিয়েছেন,_

কোন ধর্মমতে, কহ দসে, শুনি,

জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব, জাতি,_-এ সকলে দিলা

জলাঞলি ? শাস্ত্রে বলে, গুণবান যদি

পরজন, গুণহীন স্বজন, তথাপি

নিণ স্বজন শ্রেয়: পর পর সদ]। | ৬ষ্ঠ সর্গ]

কিন্ত বিভীষণের কাছে এই শাস্ত্রবাক্যও মূল্যহীন রামায়ণের বাল্সীকি কপাধন্য

বিভীষণ এখানেও ধর্ম প্রসঙ্গেরর অবতারণ! করেছে বাল্সীকি রামায়ণের পাঠকরা বিভীষণের মহত্ই অনুসন্ধান করেছে কিন্তু মেঘনাদবধের পাঠক সম্প্রদায় বিভীষণের মধ্যে বিন্দুমাত্র মহত্ব খুঁজে পাঁয়নি। শুধু তিরক্ষার দ্বণা, লাঞ্ছনা গ্লানি বিভীবণকে ক্ষতবিক্ষত করতে চেয়েছে বিভীষণের অপরাধের কোন যুক্তি নেই, ক্ষমা নেই আত্মপক্ষ সমর্থনের যত কথাই বিভীষণ শোঁনাঁতে চেয়েছে_ লঙ্কাবাপী তা' স্বণীভরে অবহেলা করেছে বিভীষণ বিশ্বাসঘাতক, 'মেঘনাদবধ +কাব্যে' পরিচয় তাঁর পৌরাণিক সমস্ত মহিমাকে চূর্ণ করে দিয়েছে রাবণ, মন্দৌদরী, মেঘনাদ, মেঘনাদ-পত্বী প্রমীলা, সকলেই ধিক্কত করেছে বিভীষণকে রক্ষ-কুলাঙ্ষার, রাক্ষস- কুল-কলক্ক, দয়াশৃম্য বিভীষণ-_এই তাঁর বিশেষণ | বিভীষণ সম্পকে লঙ্কার সাধারণের মনোভাবও মধুস্দন ক্ষন্দরভাবে প্রকাশ করেছেন। প্রমীলাসখী নৃমুণ্মালিনীও বিভীষণকে লঙ্কীর চির শত্ররূপেই দেখে, বিভীষণকে তীত্র ভাষায় আক্রমণ করেছে,

কাব্য ২৪৭

ডাক সীতানাথ হেথা, লক্ষ্ণঠাকুরে, রাক্ষস-কুল-কলঙ্ক ডাক বিভীষণে ! রাম লক্ষ্মণ শক্রপক্ষ হলেও নৃমুণ্মালিনী তাঁদের প্রাপ্য সন্মান দিতে কার্পণ্য করেনি কিস্তু দেশদ্রোহী বিভীষণ তা থেকে বঞ্চিত। সমগ্র লঙ্কাবাপীর অভিশাপ বিভীষণকে লাঞ্ছিত করেছে বিভীষণ “মেঘনাদবধের” অষ্টা মধুহছদনেরও সহানুভূতি বঞ্চিত। স্বদেশপ্রেমী ইন্দ্রজিতের আত্মদীনের মহিমাঁবর্ণনা যেমন কাব্যরচনার প্রধান কারণ তাঁরই পাঁশে দেশপ্রোহিতার- বিশ্বীসঘাতকতার প্রতি ঘ্ণীবোধ জাগিয়ে তোলাও অন্যতম গৌণ উদ্দেশ্য | রঙ্গলালের কাঁব্যেব বীরত্ব, “মেঘনাঁদবধ কাব্যের, দেশপ্রেম বিচারই একমাত্র বিচার নয়,_চিতোর কিংবা লঙ্কার স্থানিক শৌর্ষবীর্ষের ঘটন। ভৌগোলিক সীমা অতিক্রম করে বাঙ্গালীর অন্তরের দুঃখ-বেদনা-পরাঁজয়ের গ্রীনিতে মিলেমিশে অদ্ভুত একটা রসের সৃষ্টি করেছে_শুধু বীররস বললে তাঁর সবটুকু বোঝানো যার না। এরসের আকাজ্ষা এসেছে জাঁতির অন্তরের সঞ্চিত তৃষ্ণা পথ বেয়ে তাই সে যুগের মানুষ মধুস্ছদনের সঙ্গে অসহষোগিতা করেও “মেঘনাদবধের' রস সামর্থ্যকে অভিনন্দিত করেছে যে দেশপ্রেম ইন্দ্রজিতকে আত্মদীনে উদ্দ্ধ করেছে, ইন্দ্রজিতপত্বী প্রমীলার মধ্যেও সেই একই চেতনা প্রত্যক্ষ করি। শত্রবেষ্টিত লঙ্কাপুরীতে প্রবেশের মুহূর্তে প্রমীলাও তার শক্তি দেশপ্রেমের পরীক্ষায় অবতীর্ণা। যুদ্ধকে প্রমীলা ভয় পাবে কি করে? ইন্দ্রজিৎ পত্রী প্রমীলা যে বীরাঙ্গনা নারী। মধুস্দন নারীর কোমল অন্তরেও শক্রর প্রতি প্রচণ্ড বীতরাগ জন করেছেন, _-শক্রর সঙ্গে যুদ্ধ করে, শক্তি পরীক্ষাক্ষেত্রে অবতরণেও প্রমীলার পূর্ণ সম্মতি রয়েছে অথচ পতিদর্শনের আকুলতাই তাঁর সংগ্রামসামধ্যের মূলে, ইন্্রজিতের বীরত্বের আঁদর্শই তার উৎসাহ প্রমীলার যুদ্ধসজ্জা সাহিত্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে,_কিন্ত বাস্তবেও তা কি অসম্ভব? সিপাহী বিদ্রোহের নেত্রী বাশির রানী লক্ষীবাঈ-এর বীরত্বের ঘটনা মধুক্ছদনের সমসাময়িক ঘটনা মধুন্ছদন তা থেকে প্রেরণা পেয়েছিলেন কি না৷ জানি না, কিন্ত প্রমীলা সদস্তে বলেছে,-- পশিব নগরে বিকট কটক কাটি, জিনি ভুজবলে রঘুশেষ্ঠে, প্রতিগ্তা, বীরাঙ্গনা, মম, নতুবা মরিব রশে__যা৷ থাকে কপালে [ তৃতীয় সর্গ ] সৃত্যুকে অস্বীকার করেই এই জয়যাত্রা ইন্দ্রজিৎ পত্বীর এই বীরত্বটুক্ক মহাঁকাব্যের

২৪৮ উনবিংশ শতারন্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

সৌষ্টব বৃদ্ধি করেছে মৃত্যুপণে সংগ্রামপ্রার্থন৷ জানিয়ে প্রমীলাও ইন্ত্রজিতের মত আত্মশক্তির কথা বলে,__ নাগপাশ দিয়া

বাঁধি লব বিভীষশে--রক্ষঃ-কুলাঙ্গারে !

দলিব বিপক্ষদলে, মাতঙ্গিনী যথা

নলবন। [এ]

বিভীষণকে প্রমীলাও ক্ষমা করে নি-কাঁরণ স্বামীর আদর্শের অন্ছগািলী প্রমীলা

জানে বিশ্বাসঘাতকতা -দেশদ্রোহিতার শাস্তি কি হতে পারে !

“পদ্সিনী উপাখ্যানে”-_বীরত্ব শৌর্ষে রানী যথার্থ পরীক্ষার সম্মুধীন কিন্ত রানী পদ্মিনী অন্তঃপুরিকাই মধূক্দনের প্রমীল! যুদ্ধপাজে সঙ্জিত হয়ে রণক্ষেত্রে 'অবতীর্ণা__মধুক্মদনের কল্পনায় শক্তি বীর্যবতী নারীর এক অনন্যরপ। আত্মসচেতন নারী চিত্রাঙ্গদার মধ্যেও যুক্তিনিষ্ঠ বিচাঁরশক্তি প্রত্যক্ষ করি. প্রমীলা ভাবাবেগ দেশচেতনা আরও তীত্র। যুদ্ধপ্রার্থনা করে শত্র-বিনাশের জন্য প্রমীলাও সুসজ্জিতা |

মধুক্থদূনের “মেধনাদবধ কাব্যের” সঙ্গে দেশ জাতির সম্পর্ক আপাতঃ দৃষট নয়। কিন্তু “চতুর্দশপদী কবিতাবলী” সম্পর্কে এত দ্বিধা নেই। জাতীয়তাবাদ কিংবা দেশচেতন। মাতৃভূমির প্রতি আন্তরিক ভালবাসা থেকৈই জন্ম নেয়। কোথাও তা স্বপ্রকাশিত কোথাও তা স্বতঃস্ফৃর্ত। দেশপ্রেমের স্বতঃস্ফৃর্ত অভিব্যক্তি সাহিত্যের শাশ্বত সত্য হতে পাঁরে। মধুস্ছদনের দেশপ্রেম ঠিক গতানুগতিক মাতৃভূমিপ্রীতি নয়,_স্বদেশপ্রেমী হওয়ার জন্যও মধুক্দনকে প্রস্তত হতে হয়েছে জীবনসংগ্রামের এক একটি পর্বে মধুঙ্ছদনের এক একটি সত্তা বিকশিত হয়েছে। সাহিত্যস্থষ্টির প্রথম পর্ব থেকেই তিনি জীবনযুদ্ধের সৈনিক | এক হাতে কলম অন্ত হাতে জীবনসংগ্রামের অস্ত্র তীকে তুলে নিতে হয়েছে ধর্মগত বাঁধা, এদেশীয় সংস্কৃতি, সভ্যতা গতান্- গতিকতার প্রতি প্রচণ্ড অনাস্থা নিয়ে তিনি আপন পরিধিতে নিজেই একটি রণক্ষেত্র প্রস্তত করে নিয়েছিলেন। সমসাময়িক উত্তেজনার স্পর্শমুক্ত হয়েও তিনি কত অবিশ্রাম আত্মসংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। “মেঘনাদবধ* রচনার মুহূর্তে_-বীরাঙ্গনা” সবষ্টিলগ্নে মধুহুদূন যে কতটা অস্থির হয়েছিলেন বন্ধুবাঁন্ধবকে লেখা কোন কোন পাত্রাংশে তার উল্লেখ আছে। একই সঙ্গে, “মেধনাঁদবধ কাব্য” পকৃষ্ণকুমারী” নাটক পবরজাঙ্গনা কাব্য৮ "নীলদর্পণের” অনুবাদ করে--অক্লান্ত পরিশ্রমে সাহিত্যের এক একটি বিচিত্র সস্তার স্থজন করেআত্মসংগ্রামে নিরন্তর ক্ষতবিক্ষত করেছেন নিজেকে |

এই অস্থিরতার মধ্যেই “নীলদর্পণ” নাটকের ইংরাজী অন্থবাদটি সাফল্যের সঙ্গ

কাব্য ২৪৯

সমাণ্ত করেন তিনি | মধুক্থদন সমসাময়িক ঘটনার সঙ্গে জড়িত হওয়ার মত অবসরই হাতে পাননি এই নাটকটি একসময়ে সমগ্র দেশবাসীকে বিদ্রোহী করে তুলেছিল, মধূন্বদনের মত শ্রীষ্টানও ইতরাঁজ পক্ষ অবলম্বন না করে এই বিদ্রোহে পূর্ণ সম্মতি জানিয়ে ছিলেন নীলকর অত্যাচারের অভিজ্ঞতা এতই বাস্তব নির্মম যে সমগ্র দেশবাসী নিজেদের অসহীয়তাকে প্রত্যক্ষ করে শিহরিত হয়েছিল। আন্তরিকতা প্রতিভাই অন্থবাদটিকে সার্থকতা এনে দেয় সমসাময়িক ঘটনায় জান যায়-_ মধুহদন আত্মগোপন করেও আত্মরক্ষা করতে পারেননি--কিছু লাঞ্ছনা তাকেও পেতে হয়েছে কিন্তু ঘটনা! এতই নিঃশবে সমাপ্ত হয়েছে যে মধুস্ছদনের নাম প্রসঙ্গে প্রায় অনুচ্চারিত। পাঁদরী লং স্বদেশপ্রেমী কালীপ্রসন্ন সিংহের নামের পাশে মধুহুদনের নামোল্লেখটুকুই যথেষ্ট নয়, তাঁর অনুবাদের শক্তিই দেশ বিদেশে চাঞ্চল্য এনেছে! স্বদেশপ্রেমী মধূক্ছদন এখানে নীরব দেশপ্রেমিক | তাঁর যোগ্য আলোচন। হওয়৷ দরকার

মধূক্ছদনের স্বদেশপ্রেম সর্বত্রই প্রকাশক এক আন্তর উপলব্ধি। “মেঘনাদবধ কাব্যের” উপস্থাপনায় স্বদেশচেতন৷ এই আন্তর উপলব্ধির জন্যই সাহিত্যের সত্য হতে পেরেছে সমসাময়িক উত্তেজনাকে বহন না করেও মহাকবি মধুস্ছদন দেশপ্রেমের উজ্জল দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন। “চতুর্দশপদী কবিতাঁবলীতে” মধুক্দনের প্রকাশকু অন্ুষ্ভৃতিগুলি আরও মর্মস্পর্শী; অতিভাষণের দৌষে-গুণে, নভোচারী কল্পনার রং-এ যা আপাতঃগল্ভীর সুন্দর, সহজ-সরল প্রকাশভঙ্গিতে তা অতি মনোরম আকুতি হতে পেরেছে দেশকে মধুক্দন ভাঁলবেসেছিলেন, আর সে ভালবাসা নীরব নিঃশব্দ ধর্ম আচারে যিনি দেশেরসংস্কৃতি অস্বীকার করেছেন, পোষাঁক পরিচ্ছদে যিনি দেশীয়সংস্কারকে মেনে নেননি, মাতৃভাষ। ব্যবহারের বিপক্ষে কৈশোরে যিনি রীতিমত উন্মত্ত হয়ে উঠেছিলেন, স্বদেশকে যিনি কোন এক ভাবাঁবেগের মুহূর্তে প্রবাসবলে যনে করেছেন সেই মধুক্থদনের মাতৃভূমিগ্রীতি, ন্বভাঁষাপ্রীতি, আপাতঃ বিরোধিতায় পূর্ণ হতেই পারে পাঠ্যজীবনের অসংখ্য রচন| তাঁর ইংরাজীতেই রচিত। কেন! জানে ইংরাজী ভাষাতেই দ্বিতীয় বায়রণ বা মিলটন হওয়ার জন্য তার আন্তরিক রাঁসনাঁর কথা ? নিজেকে অন্তর বাহিরে একজন বিদেশী করে তোলার নিখুত প্রচেষ্টায় তিনি ছুঃসাহসিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কোনসময়ে মুখে মুখে ইংরাজী কবিতা রচনা ধার পক্ষে নিতান্তই সাধারণ ঘটনা সেই মধুহ্ছদনের ভাবীজীবনের স্বপ্ন যে কিছু বিচিত্র অসাধারণ হবে তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। খ্রীষ্টান হওয়া, বিদেশিনীকে জীবন-সঙ্গিনীরূপে বরণ করার ঘটনা গুলি যেন সেই প্রবণতারই প্রামান্তয নিদর্শন মোটামুটি ইয়ং বেঙ্গলের প্রতিতূ, হিন্দুকলেজের সেরা ছাত্র মধূক্ষদনের

২৫০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

বাহিক পরিচয় এই ঘটনাগুলোর মধ্যেই মিলবে, কিন্ত সাহিত্যত্র্টা মধুহ্দন-_ মহাঁকবি মধুহ্দনের যথার্থ স্বরূপের সঙ্গে এসব ঘটনার যোগাযোগ নিতান্তই বাহ

“্চতুর্দশপদী কবিতাঁবলীর” কবি মধুহ্ুদন অ্টা হিসেবে প্রবীণ অভিজ্ঞ কিন্তু প্রথমদিককার রচলাতেও খ্রীষ্টান মধুস্ছদন কেন যে অদৃশ্য হলেন ভাবতে অবাঁক লাগে। সামান্তম উপমা অলঙ্কারের জন্য তিনি যে সম্পূর্ণই বাঙ্গালীয়ানার দ্বারস্থ সেকি শুধু রচনাকে একটা সঙ্গতি সৌঠ্ঠব দেবার অন্য ? কাব্যস্থির মুহুর্তে মধুহুদন তাঁর কৈশোর যৌবনের অভ্যস্থ অভ্যাঁসগুলোকে ভুলবেন কি করে? মধুক্ুদনের ইংরাঁজী কবিতাঁগুলোর মধ্যে তার ভাবপ্রবণতার সঙ্গে মগ্রচৈতন্যের যোগা- যোগ খুব দুর্পক্ষ্য নয় ;--কিস্ত ইংরাঁজী কবিতা আলোচিত হয়নি বলেই সে সম্পর্কে একট] সিদ্ধান্তে পৌছনে। যায়নি ।' যে কোন কবির সৃষ্টির আদিমুহুর্ত রহস্তময়,_- প্রতিভাধর অষ্টাদের ক্ষেত্রে এই বৈচিত্রাময় মুহূর্তগুলো প্রতিটি সুরেই নান। রহস্যের সন্ধান ইতস্তত: ছড়িয়ে থাকে মধ্ক্দনের পরিণত জীবনের ফলশ্রুতির বু অন্ফুট সত্য তাঁর এই ইংরাজী কবিতাগুলিতে মিলবে যেমন ১৮৪১ সালে হিন্দু কলেজের ছাত্র হিসেবে মধুহুদনের কল্পনার চিত্র,

1৬5 86061700606 51502] 21]

[০ 1092 106 2 102 01010 600 ০৮ 0: 0005 06817010995 17051) 200 991] ঢ01]0 00৮ 580 2525 1116 7110020500৮. 4৯00, 01) 11] 51618 001 £১1010105 50800 ১9 11 9102 ০1০ 1725 18612 1220 1১৫

ছাঁত্রজীবনের রঙ্গীন স্বপ্নের পাশাপাশি তার মনৌবিকলনের বিশ্লেষণই কবিতায় একই সঙ্গে বাঙ্গালী চঞ্চলমন মধুস্থদনকে চিনিয়ে দেয়

"4১11005 0156206 5015৮--এর স্বপ্নমগ্ কবির মগ্রচৈতন্তের ক্রন্দন দূরশ্রুত হলেও অস্পষ্ট নয়। আবার শৈশবের স্বপ্রমগ্ন কবির সৌন্দর্য বর্ণনাতেও স্থান পেয়েছে অনাবৃত প্রকৃতি প্রেম,_স্বদেশের প্রকৃণতকেই বন্দনা করছেন তিনি,

[10৬2 00০ 06810060019 1165100500৪,

00102 £2,1121705 0086 ৪1০00100105 6210700195 9151172 7 [10৮০ 6০0 1) 0065 00020] 1070801) 195

00৫ 5৮256 1201] 021006ন. 900 006 11705 2১৬

১৫, “মধুস্মতি'_ নগেন্দ্রনাথ সোম থেকে উদ্ধাত ১৩৬১ সাল, পৃঃ ১৩। ১৬, পৃঃ ১৭।

কাব্য ২৫৯

মধুস্থদনের প্রথম জীবনের স্বষ্টিতেই উচ্ডাস স্বপ্নের আধিক্য নয়,_তীর সমগ্র সৃষ্টিতেই তা ওতপ্রোত। তবে প্রথম সৃষ্টির লগ্নে মধুকুদন কল্পনা শক্তিকে অভ্রান্ত পথে চালিত করেননি--যা পরিণত মধুস্থদনের একটা বিশেষ গৌরব “চতুর্দশপদী কবিতাবলীতে, তিনি প্রথমযুগের ভ্রান্ত জীবনদর্শনের সর্গে অভ্রান্ত সত্যকথনের একটা এঁতিহাসিক সংযোগ স্থাপন করেছেন। একদা কলকাতায় বসে তিনি 4£১1101005 01928776 9105-এর জন্য ক্রন্দন করেছিলেন, ঘটনাচক্রে সেই স্থযোঁগ যখন হাতে পেলেন ছচোঁখ ভরা অশ্রজল নিয়ে তিনি তখন ফেলে আসা স্বদেশভূমির জন্যই ক্রন্দন করছেন দুটোই আতি--তবে ছুটি অবস্থার মধ্যে অসীম ব্যবধান তবে “্চতুর্দশপদী কবিতাবলীতে,” মধুস্ছদনের জীবনলব্ধ সত্যের সর্গে সাহিত্যিকসত্তার এক নিবিড় যোগাযোগ দেখতে পাই--য। তার অন্তান্ত রচনাতে প্রীয় দুর্লভ স্বদেশের প্রতি অক্কত্রিম একটি ভালবাসার সম্পর্ক মধুক্ছদনের বিচিত্র জীবনধারার প্রতিটি পর্বেই সমভাবে দেখা যাঁয়। নিতান্ত কৈশোরে যা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন জীবনের ঘাটে ঘাটে খেয়াতরী ভিড়িয়ে যে জীবনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছে-_ সেখানেও সর্বত্র সেই অকৃত্রিম উপলব্ধির সত্য উদ্ভাসিত মধুস্থতিকারের মন্তব্যটি এক্ষেত্রে যথার্থ “মপুক্ছদনের আজন্ম অন্তনিহিত, অকৃত্রিম স্বদেশীনুরাগ কি স্বদেশে, কি বিদেশে, কখনও ত্রাস হয় নাই ।...স্বজাঁতি স্বদেশপ্রেমের চিরকরুণ নিঝণরিনী তাঁহার হৃদয়ে বাল্য হইতেই সকল অবস্থাতেই প্রবাহিত হইত।”৮ | মধুস্মতি পৃঃ ৬৭]

দেশেরপ্রতি, জন্মভূমির «তি একটা সহজাত দাঁকর্ষণ নিয়েই মান্ষ জন্মীয়__ ক্ুতরাং সর্বজনীন অনুভূতির স্বতঃসিদ্ধতাঁকেই কবিরা যখন কাব্যে প্রকাঁণ করেন তাতে নতুন করে দেশপ্রেমিকতা আরোপ করা চলে কি নাবিচার্ধ বিষয়। মানুষ মাত্রই সে হিসেবে দেশপ্রেমিক কবিসম্প্রদায়কে আলাদ1 করে নিয়ে দেশ- প্রেমিকতা যাচাইয়ের প্রয়োজন হয় সেইকারণেই যেখানে কবি দেশসম্বন্ধে তার নিজের উপলদ্ধিকে সাহিত্যে স্থান নিয়েছেন দেশ সম্বন্ধে বিশেষ কোন বক্তব্য যখন সাহিত্য-পববাঁচ্য হবে তখন কবিকেও সেই কাব্যালোচনার মধ্য থেকে নতুন করে আবিফার করা সম্ভব হবে। স্থৃতপাঁং জন্মভূমিকে স্মরণ করার গৌরব ম্মরণাতীত কালের-_কিস্ত একাশভঙ্গির বৈচিত্র্যে প্রতিই পৃথক বাপারে ঈশ্বরগুপণ্ডেয় সঙ্গে রঙ্গলালের, মধুহদনের সঙ্গে হেমচন্দ্র, নবীনচন্দ্রের উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখ! যাবে ইংরাঁজীতে স্বদেশপ্রেমমূলক সাহিত্য বিচারের ক্ষেত্রে যাকে চ৪0106970, 0৫ ঢ19০€ বলা হয়েছে- জন্মভূমির প্রতি প্রেমের কথাই সে কাব্যের বিষয়বস্ত সহজাত, দেশগ্রীতি হলেও স্থানিক মহিমাকে কাব্যে অমর করার গৌরব তাদেরই প্রাপ্য। ইংলও তাই কোন কোন কবির স্বপ্ন কল্পনাকে আচ্ছন্ন করেছে, মুহূর্তের অদর্শন যাঁরা

২৫২ উনবিংশ শত।বীর বাংলা সাহিত্যে দেশপ্রেম

সহাতীত দুঃখ বলে মনে করেছেন। বন ইংরেজ কবি শুধু ইংলগু মহিমা, লগুন নগরীর প্রেমের কথা সোঁংসাহে বলেছেন-তীরা 28001005001 919০-এর কবি। আমাদের সাহিত্যেও মাতৃভূমির বন্দনাগাঁন কবিদের কাব্যের বিষয় হতে পেরেছে সেই নিয়মেই ব্যাপারে সব কবিরাই সমান প্রেমী, মাতৃভূমির সৌন্দর্যই কবিদের কল্পনাঁশক্তি পালন করে। স্থতরাং জন্মভূমির গৌরব প্রকাঁশে কবির] সর্বত্র অকুষ্ঠিত- উচ্ছৃসিত-আনন্দিত জন্মভূমিকে তারা শুধু জীবনদাত্রীর সম্মানই দেয় ন! ভালোবাসার গভীরতর প্রকাশ তীদের উচ্ছ্বসিত করে তোলে শ্রেম যে আন্তরিক, যে সাময়িক চাঞ্চল্য নয়,_এমন প্রমাঁণ ইতিহাসে সংখ্যাতীত। সেই প্রেমই কবিকে প্রেরণা দেয়, যোদ্ধাকে আত্মবিসর্জনের উৎসাহ দেয়, সাধককে আধ্যাত্মিকশঞ্তি জোগায় এই প্রেমের স্বরূপ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, 1910) 01510101505 00৫ 161151017 61026 501125 ৪]] 01095565 8130 10 1006215 9010600105 00016 01020 00275 29060806 60 62:60 101: 1021 116 51175 [0155 ১1601020175 0010, 01015 19110010915 50 00102800018 11) 00818151700, আ০ 212 79100010090 00 00950101 50006010095 010 ০10920661 01086 15 00000) 200 02150251৬619 5210. 00 015011750151)90 709.011001500,৮৯৭

এই স্বদেশশ্রীতি জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত হয়ে আছে, কবি তার কাব্যে যখন সেই সিদ্ধসত্যকেই রূপ দান করেন--কবির দেশপ্রেমিকতাঁও যাচাই হয়ে যায় এক্ষেত্রেও দেখা যায়, কাব্যই কবি স্বভাবের একমাত্র প্রামাণ্য দলিল, কাব্য দিয়ে কবির আত্তর সত্তার সত্য অসত্য যাচাই করা যত সহজ,--কবির ব্যক্তিজীবনের খু টিনাঁটি ঘটনাও- তত সহজে সত্য চেনাতে পারে না। হ্ৃষ্টির মধ্যেই কবি একাত্ম হয়ে থাকেন, কবিসত্তাকে বিচ্ছিন্নভাবে বিচার কর। সেখানে সম্ভব নয়। স্থতরাং যে কবির! কাব্য রচনার হাজারো উপাদান থাক সত্বেও জননী-জন্মভূমিকেই কাব্যের বিষয়রূপে নির্বাচন করেছেন তাদের স্বদেশপ্রেমী কবি বলতে বাঁধা নেই। কবিজীবনের ঘটনা প্রবাহ দিয়ে কবিস্বভাবকে যাঁচাই করতে গিয়ে সাহিত্যকে গৌণ করা চলে না। মধুহ্দনের কবি জীবনের সঙ্গে তার বাস্তব জীবনের বিরোধিতা এত প্রকট যে, মধুকুদনের স্বদেশপ্রেম যাচাই করার পক্ষে এক বিরাট প্রশ্ন এসে যায়। কিন্ত ব্যক্তি মধুক্ছদন কখনই কবি মধুক্ছদনকে আড়াল করতে পারেন নি, -এমনকি পর্বত প্রমাণ প্রতিকূল চা নিয়েও নয়। কৈশোর থেকে যৌবনে, যৌবন থেকে প্রোঢত্বে যে কবিকে আমরা কাব্যের মধ্যে পেয়েছি--স্বদেশচেতনা সেখানে সমপ্রবাহিত,_কোথাও তা স্পষ্ট-উচ্ছুসিত, কোথাও তা রূপকায়িত।

১৭৭ 70177 10110052197 68010090510 1 4651025650157 চা,

কাব্য ২৫৩

“চতুর্দশপদী কবিতাবলী”তে মধুক্ষদনের স্বদেশপ্রেম যত স্পষ্ট উচ্ছৃসিত অগ্ভাত্র তা নয়। “চতুর্ঘশপদী কবিতাবলী'র রচনাকাল ১৮৬৫-৬৬।১৮৬২ সালে কবি যুরোঁপ প্রবাসে যাত্রা করেন, ব্যারিষ্টারী পড়ার উদ্দেশ্যেই তাঁর ইংলগু যাত্রা। ইংলগ যাওয়ার বাসন। তার বহুদিনের কিন্ত স্বগ্নভঙ্গের পর সেই প্রচণ্ড আগ্রহ [][ 51 6০: £১1510725 4156506 513015 ] যে কতট। স্তিমিত তা যাত্রাকাঁলে রাঁজনারায়ণ বস্থকে লেখা পত্্রীংশ থেকে অনুমান করা যায় সহজে | যে যুগে মধুহুদন ইংলগও যাওয়ার জন্ত অকস্মাৎ ধর্মান্তিরত হতে পারতেন [ তার ধর্শীস্তরণের অন্ততম কারণ যদি তা হয় ] সেই ১৮৪৩ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারীর সঙ্গে ১৮৮২ সালের ৯ই জুনের কত পার্থক্য | দীক্ষা গ্রহণের পর বন্ধুকে পত্র লিখছেন তিনি,

“[ু ০৮ 59 00 87051910 1] 12061001021 02506, [2100 10 ৪০ €0 00005 2100 11৮2 100) 01196106106. 00103051901), [ 21281001 501106 10 5:0818170 100 11. 00621055005 90061 আ01270 8110৬ 038৮,১৮

ইংলও যাওয়ার প্রথম উন্মাদন। বাধা পেয়েছিলে। নানা দিক থেকে,_-আর সেই বাঁধার সঙ্গে, প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করেই মধুস্থদন শ্রষ্টা মধুহুদন হয়েছেন। কিন্তু ১৮৬২ সালে যাত্রার অব্যাবহিত পূর্ব মুহুর্তে মধুক্ুদন রাজনারায়ণ বসকে লিখছেন,__ *106115895 1] 5109]1] 60 00 [0519100 00230003012] 1 11155 60 00202 109,০15 51081] 70০০০) 16 006, 1720 ড1]1 [05 ০0010050061 52 2 000000160 ড০৪:5 1061006 |

ঢ০ 2৬295 8 2৬৪৮ চা0ো0 6106 12100. 106 10৬6৭ £০ ০1], 9166799 70617680) 03০ ০০01067 195৮, [ মধুস্বতি_-পৃঃ ২৪৫ ] এই পত্রাংশের মধ্যে মধুহ্ছদন তার প্রতিষ্ঠা গৌরব সম্পর্কে সচেতন নিজেকে স্বদেশপ্রেমিকরূপে প্রতিষ্ঠা করার কোন সচেতন চেষ্টা তাঁর কোনদিনও ছিল না, কিন্ত তবু তিনি জানেন সমগ্র দেশবাসী তীকে দেশপ্রেমিক রূপে স্বীকার করেছে। বন্ধুকে লেখা পত্রে তিনি; তার সেই গৌরবেরই উল্লেখ করেছেন না হলে পংক্তিটির কল্পনা খানিকটা অতিগৌরবীর সংলাপের মত শোনাত মধুক্ছদন জানতেন তাঁর দেশপ্রেম স্বীকৃতি পেয়েছে সম্ভবতঃ তাই তিনি লিখেছিলেন, 15 10৪৫ 3০ ৮০11» এখানে তার আনন্দিত মনেরই অভিব্যক্তি ইংলগ যাঁওয়ার লগ্গে দেশকেই তার মনে পড়েছে, যে দেশ তার মাতৃভূমি, যে দেশ তার কবিত্বকে পুজা করেছে-_ স্বীকৃতি

১৮, নধুশ্মতি'--লগেন্্রনাথ সোম থেকে উদ্ধত পৃঃ ৪৭ |

২৫৪ উনবিংশ শতাব্ধীর বাংল। সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

দিয়েছে তাঁর আন্তরিক স্থত্টিকে | তাই দেখি, বিদায়ের প্রাকৃকালে তাঁর অশ্রসজল নিবেদন, “বঙ্গভূমির প্রতি” কবিতাটি কবিতাঁটিতে দেশের প্রতি ভালবাসায় যেন তার বেদনামপ্ন অন্তরের অনবদ্ধ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন | বঙ্গভূমি যেন সত্যিই জননী-- তার কাছেই মধুক্দনের কাতর আবেদন বঙ্কিমচন্দ্র বন্দেমাতরম* কবিতায় যে 'দেশজননীকে বন্দনা করেছেন “বঙ্গভূমির প্রেতি” সেখানেও যেন প্রথম পথপ্রদর্শন করেছে মাঁতৃনামের মহিম। মধুক্ষদনই জানাতে চেয়েছেন যেন 080৬০ 1290, 300 121১1” 85190, উক্তিটির উদ্ধাতিতেও | কবি মধুক্দনের জীবনের যেন, এক করুণ বিদায়ের আভাঁস | দেশের কাছে, জন্মভূমির কাছে বিদায়পর্বে তাই তাঁর কাতর প্রার্থনা, | রেখো, মা, দাসেরে মনে, মিনতি করি পদে

দেশ এখাঁনে যেন চিন্ময়ী দেশমাতৃক1, সমস্ত মানুষকে যিনি স্নেহময়ী মাতার মত লালন করেছেন মধুক্ষদনের মন-গলানো কবিতাটি মাঁতারই উদ্দেশ্যে | মৃত্যু কি বড়ো ? মধুহ্দন অন্ততঃ মনে করেন শুধু মনে রাখার এঁ অস্বীকারটুকু সম্বল করে মৃত্যুকে হাসিমুখে বরণ কর। এমন কিছু অসম্ভব নয় তাই স্থির বিশ্বাসে মধুক্ছদন বলেছেন,

'প্রবীসে, দৈবের বশে, জীব-তার] যদি বসে দেহ আকাশ হ'তে-_নাহি খেদ তাহে, জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথ। কবে, চিরস্থির কবে নীর, হায়রে, জীবননদে ? কিন্তু যদি রাখ মনে, নাহি, মা, ডরি শমনে,”

মৃত্যুকে জয় করে মধুক্ষদন শুধু অমর কবি হতে চেয়েছেন তা নয়,__সর্বদ! তার এই প্রার্থনা “রেখো, মা, দাঁসেরে মনে 1,

এই দেশমাতৃকার সঙ্গে মধুক্দনের নিবিড়তর পরিচয় লাভের দুর্যোগময় মুহূর্তটি স্বরণ করেই বলতে হয়--অভিষ্ঞতার সেতু বেয়ে মপুক্ছদন আপল রত্বটি চিনে নিতে পেরেছিলেন কারণ অপরাধী পুত্রকে শুধু মা-ই পান পরম আদরে অভ্যর্থন। জানাতে | মবুহ্ছদন মে অভ্যর্থনা পেয়েছেন মপুহ্ৃদন-এর আন্তরিকতা! সেষুগীয় কাব্যে এক বিস্ময়কর প্রাপ্তি।

“চতুর্দশপদী কবিতাবলীতে” মধুক্ুদনের করুণ বিলাপ- দীর্ঘশ্বীস চিহৃ তাঁর প্রতিটি কবিতায় প্রকাশিত। ইংলগ গমনের পূর্বমূহূর্তেও তাঁর বেদনার্ত মনোভদ্ষিমারই পরিচয় পাই। স্বদেশপ্রিয় মণুষ্ছদনের এই নিবিড়তর পরিচয় হয়ত স্বদেশভৃমি পরিত্যাগ না করলে, আকন্মিক বিপদের মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা না থাকলে পাঁওয়া যেত না। ইংলও যাত্রার পূর্বেই স্বদেশপ্রেমী মধুহুদনের পরিচয় স্পষ্টায়িত-_

কাব্য ২৫৫

প্রবাসে শুধু সেই মাতৃভূমিপ্রীতি গাঢ় থেকে গাটতর হয়েছে। “চতুর্দশপদী কবিতাবলী"র উপক্রমের মধ্যে আত্মপরিচয় দিচ্ছেন মধুক্ছদন,__ সেই আমি, ডুবি পূর্বে ভারত-সাঁগরে, তুলিল যে তিলোত্তমা--সুকৃতা যৌবনে ১-- কবিগুরু বাল্সীকির প্রসাদে তৎপরে, গম্ভীরে বাঁজাঁয়ে বীণা, গাইল, কেমনে নাঁশিলা সুমিত্রাঁপুত্র লঙ্কার সমরে, দেবদৈত্য-_নরাতঙ্ক---রক্ষেন্র নন্দনে কল্পনাদূতীর সাথে ভ্রমি ব্রজধামে শুনিল যে গোপিনীর হাহাকার ধ্বনি, (বিরহে বিহ্বল! বাঁল। হাঁর। হয়ে শ্যামে ;) বিরহ-লেখন পরে লিখিল লেখনী যাঁর, পীরজীয়৷ পক্ষে বীর পতিগ্রামে, সেই আমি, শুন, যত গৌড়-চুড়ামণি ! তিলোত্তমা সম্ভব-মেঘনাদবধ-_ব্রজাঙ্গনা-বীবাঙ্গনার কবি মধুস্দনকেই কাব্যে অনুসন্ধান করতে হবে, যদিও জন্মভূমিচ্যুত মপুকবি প্রবাঁসে বসে পাহিত্য স্বজনে মগ্ন) তবুও তিনি, “সেই আমি শুন, যত গৌড়-চূড়ামণি |” স্তরাং ণ্চতুর্দশপদী কবিতাবলী” আলোচনার কোন সমস্যা নেই। স্বদেশপ্রেমী কবি এখানে সমগ্র গৌড় স্রতীজনের কাছে বিনীতভাবে সে প্রস্তাব পূর্বেই উত্থাপন করেছেন চিতুর্দশপদী কবিতাঁবলীর” সনেটগুচ্ছে পেতরণকা কবির পথান্ুসরণ করেও কবি গৌড় স্ভাজনের সমর্থনাকাজ্ফী | সমগ্র “চতুরদশপদী কবিতাঁবলী বিশ্লেষণ করলে আঁমীদের প্রথমেই মনে হয়, ধদেশীয় ভাব কল্পনায় মগ্ন মধুস্দন ফ্রান্সের ভার্পাইতেই অনুরূপ ভারতভূমি সজনে সক্ষম হয়েছিলেন সনেটগুচ্ছের বিষয়নির্বাচনেওত আশ্চর্যজনক বৈশিষ্ট্য চোঁখে পদে। ইংলগ পৌচ্ছোনোর মৃতুর্তে বন্ধু গৌরদাঁস বসাঁককে তিনি লিখছেন,_- “[958005 000, 1] 027 507170915 091165%2 0046] 200 2৮2 12010069 1০2.1106 6096 180 01 7101010 110৬৩ 01300510650 10001) 2৬212 17000 2 7009515090৭. 806 000 15 561 30621 01091), 100010107৯ গভীর পরিবর্তনই মপুস্দনকে আমাদের সাহিত্যে অনুরাগী করে তুলেছিল-_-আর

১৯. “মধুম্মতি'--নগেন্দ্রনাথ সোম থেকে উদ্ধত। পৃঃ ২৪৯।

২৫৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে শ্বদেশপ্রেম

চতুর্দশপদদী কবিতাবলী"তে মধুস্থদন সম্পূর্ণভীবেই বাঙ্গালী মধুস্দন | যে ইংলগ স্বীকে কৈশোরে কাব্য প্রেরণ! দিয়েছিল, _মধুস্থদন চাক্ষুষ দর্শন করেও কেন সেই ইংলণ্ডের মহিমাজ্ঞাপক একটি কবিতাও রচনা করলেন না--ভাঁবতে অবাক লাগে শুধু তাই নয়,_যুরোপ ভ্রমণরত মধুস্দন বিদেশের মনোমুগ্ধকর পরিবেশে কালযাঁপন করেও স্বদেশচিন্তায় মগ্র “চতুর্দশপদী কবিতাবলী'র ১০২টি সনেট তিনি ফ্রাঞ্সেই রচন! করেছেন কিন্ত মাত্র চারটি সনেটে বিদেশী কবি সম্পর্কে শ্রন্ধ! নিবেদন করেছেন একটিতে ফ্রান্সের ভরসেলস নগরীর বর্ণনা স্থান পেয়েছে--ইংলগ সম্পর্কে কোন কবিতা তিনি রচনা করেননি

“চতুর্দশপদী কবিতাঁবলী'তে মধুস্দনের স্বদেশগ্রীতির নিবিড়তর পরিচয় আঁছে। কল্পনানেত্রে তিনি স্বদেশভূমিকে প্রত্যক্ষ করেছেন এবং অতি সামান্ত বিষয়বস্তও কল্পনানেত্রে হন্দর হয়ে উঠেছে “নিশীকালে নদীতীরে বটবৃক্ষ-তলে শিবমন্দির” কিংবা “বউ কথা কও” পাঁধীটিও যে মধুস্দনের কক্সনীয় স্থায়ী আসন পেতে পারে, সনেটের বিষয়বস্ত হতে পারে, আশ্চর্য তথ্যটি প্রবাসী স্বদেশপ্রেমী মধুহদনই বাক্ত করেছেন। পরিচয়” কবিতায় কবি জন্মভূমির প্রশংসায় আত্মগর্বে পঞ্চমুখ-_

যে দেশে উদয়ি রবি উদয়--অচলে, ধরণীর বিদ্বাধর চুদ্বেন আদরে-_ প্রভাতে যে দেশে গেয়ে, হুয়ধূর কলে, ধাতার প্রশংসা-গীত, বহেন সাগরে জাহুবী;

নী নর সে দেশে জনম মম, জননী ভারতী ; তেঁই প্রেমদাঁস আমি, ওলো বরাঙ্গনে !

জন্মভূমিগ্রীতির এমন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মধুস্থদন স্থাপন করেছেন যা তাকে নিভূলভাবে চিনিয়ে দেয়। উনবিংশ শতাব্দীতে রঙগলাল-মধুস্দনের সম্মিলিত স্বদেশসাধনার ফলশ্রতি ইতিহাসের নব অধ্যায়কে এমনি করেই রূপময় করে তুলেছিল।

শ্চতুর্দশপদী কবিতাঁবলী”র প্রত্যেকটিতেই কোন না কোন ভাবে মধুকদন তার স্বদেশাচ্রাগেরই স্বাক্ষর রেখেছেন ! কোথাও কোথাঁও তা এত বেশী আন্তরিক যে স্বদেশপ্রেম সাহিত্যের স্থায়ীভাবের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে প্রেম-দ্্রীতি কিংবা আত্মবিশ্নেষণের স্তরপর্যায়ে স্বদেশচিস্তাকে স্থাপনা! করতে গেলে কবিচিত্তের আলোড়ন

কাব্য ২৫৭

ুহর্তটি ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন ? মধুহ্বদনের বিচিত্র জীবনাহ্ুভৃতি তার স্বদেশচিন্তাকে গভীরতর উপলব্ধির পর্যায়ে টেনে নিয়ে গেছে, সেখানে কবি ভাবমুগ্ধ স্বদেশোপাসক এবং এর চেয়ে স্প্টতর কোন পরিচয় আপাততঃ অন্ুপন্থিত। এই হিসেবে “তুর্দশপদী কবিতাবলীতে” মধুহ্ুদনের প্রথমতম পরিচয় স্বদেশপ্রেমিকরূপেই, অন্যান্য পরিচয় তার প্রথমতম পরিচয়েই বিধৃত হয়ে আছে নানাবিধ বিপর্যয়ে কবিচিত্ত স্বদেশের প্রিয়তৃমির জন্ত ব্যগ্র হয়েছিল সত্য জীবনালোচনীতেও সমথিত। তাই দেখি,--স্বদেশভূমির স্মৃতি কবিকে চঞ্চল করেছে,_-

“হায়, গতিহীন আমি দৈব-বিড়ম্বনে,_-

নিকুঞ্জ বিহারী পাখী পিঞ্জর ভিতরি !” [ কল্পনা]

“কি আনন্দ! পূর্বকথ। কেন কর়ে, স্মৃতি,

আনিছ হে বারিধারা! আজি নয়নে ?” [ আশ্বিন মাস ]

“তেই গো প্রবাসে আজি এই ভিক্ষ। করি,

দাসের বারত। লয়ে যাঁও শীপ্রগতি |” [ মেঘদূত |

«সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে

সতত তোমার কথ ভাবি বিরলে ;

সতত ( যেমতি লোক নিশার স্বপনে

শোনে মায়া-যন্ত্রধধনি তব কলকলে

জুড়াই কান আমি ভ্রান্তির ছলনে 1

বন্ছদেশে দেখিয়াছি বহ্ুনদ-দলে,

কিস্ত নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?

-**এ প্রবাসে মি প্রেমভাবে

লইছে যে তব নাম বঙ্গের সঙ্গীতে ! [ কপোতাক্ষ নদ 1

শুধু যে জন্মভূমির আঁকাশ-বাতাস নদ-নদীর স্বপ্নে তিনি বিভোর তা নয়” বাঙ্গাল! সাহিত্যের কোন কোন বিখ্যাত গ্রন্থ গ্রন্থকারের প্রতি সপ্রেম শ্রদ্ধানিবেদনও একই সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন কৃত্তিবাস, কাশীরামদাঁস, জয়দেব, ভারতচন্দের প্রতি অকুষ্ঠ প্রশংসাবানীর সঙ্গে সমসামগ্নিকযুগের ঈশ্বরচন্দ্রগণ্ের প্রশংসাও তাঁরই কে প্রথমৌচ্চারিত। মধুস্থদন মহাঁতারত-রামায়ণ কাহিনী, সীতা, দ্রৌপদী, স্থভ্রা, অর্জন, অভিমন্থ্য বধ, তীমসেন প্রসঙ্গ নিয়ে একাধিক কবিতা লিখেছেন ছুঃশাসন, হিড়িত্বাও বাদ পড়েনি মহাভারত রামায়ণ মধুস্থদনকে যেন ' আচ্ছন্ন করে রেখেছে,__রামায়ণের সীতা চরিত্র চিত্রিত করেও অতৃপ্ত কবি আরও একাঁধিক সনেটের অবতারণা করেছেন তিনি “সীতা বনবাঁসে” কবিতায় ১৭

২৫৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম সীতার দুঃখে আত্মহারা হয়েছেন সীতাদেবী কবিতায় শ্রদ্ধা ভক্তিতে বিনম্র কবিচিত্ত-_ “অনুক্ষণ মনে মোর পড়ে তব কথা, বৈদেহি 1” বন্থভাষাবিদ,__বহুসাহিত্য রসগ্রাহী মধুস্থদন সনেটের বিষয়বস্তু নির্বাচনে গতানু- গতিকতাঁরই আশ্রয় নিয়েছেন, নতুনভাবে নিসর্গ বর্ণনা কিংবা দেশভ্রমণের অভিজ্ঞতার আনন্দ তাঁর সনেটে অব্যক্ত অথচ সনেটে বিষয় বৈচিত্র্য স্প্টির অফ্লুরম্ত অবসর সময়েই তিনি লাভ করেছিলেন কিন্তু কাব্যে স্থান পেয়েছে--তীর স্বদেশের অতিতুচ্ছ অতি আলোচিত প্রসঙ্গগুলি পরাধীন ভারতবর্ষ প্রসঙ্গেও মধুস্দনের মনোভাব স্পষ্ট, রাজনৈতিক স্বাধীনতার অভাববোধ সমস্ত কবিতায় স্থব্যক্ত “ভারতভূমি' কবিতায় কবি বলছেন,_- “কে না লোভে, ফণিনীর কুন্তলে যে মণি ভূপতিত তারাঁরূপে, নিশাঁকাঁলে ঝলে? কিন্তু কৃতাত্তের দূত বিষদন্তে গণি, কে করে সাহস তারে কেড়ে নিতে বলে? হায় লো ভারতভূমি ! বৃথা ত্বর্ণজলে ধুইল! বরাঙ্গ তোর, কুরঙ্গ নয়নি, বিধাতা !, স্বাধীনতার আনন্দবঞ্চিত কবিচিত্বের আক্ষেপ কিন্তু পরাধীনতার তীত্র জালায় উচ্চকিত নয়_-তবু আক্ষেপটুকৃকে আন্তরিক বলা চলে পরাধীন ভারতবর্ষ শুধু ইংরেজদের কাছেই আত্মসমর্পণ করেনি, দীর্ঘ ইতিহাসে তার পরিচয় রয়েছে সেই ইতিহাস পাঠেই অভ্যস্ত ছিলাম আমরা, কিন্তু গভীর দীর্ঘশ্বাসে আত্মসচেতন মধুস্ছদন সমস্ত কবিতায় তার উপলব্ধি প্রকাশ করেছেন লক্ষ্যণীয় এই যে, পরাধীন ভারতবর্ষে চিন্তা আসেনি ; স্বাধীন ফ্রান্স, স্বাধীন ইংলগ্ডের প্রত্যক্ষ রূপই স্বাভাবিকভাবে কবিকে ব্যথিতচিত্ত করেছে “চতুর্দশপদী কবিতাবলী”তে “ভারতভূমি, সনেটের মধ্যে পরাধীন ভারতের দৈসম্তের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন কবি এবং “আমরা, কবিতাটি আত্মগ্লানিতে পূর্ণ ছুঃখ-জর্জরিত কবিকণ্ঠের মর্মভেদী হাহাকার চিত্র বলে গণ্য করা যেতে পারে আকাঁশ-পরশী গিরি দমি গুণ-বলে, নিম্মিল মন্দির যার! সুন্দর ভারতে ; তাঁদের সম্তান কি হে আমরা সকলে 1

কাব্য ২৫৯

আমরা- দূর্বল ক্ষীণ কুখ্যাত জগতে, পরাধীন, হা! বিধাতঃ, আবদ্ধ শৃঙ্খলে ?-_ স্বাধীনচেতন| যা মধুস্ৃদনের চরিত্রশক্তির মধ্যে ওতপ্রোত, আত্মসংগ্রামে তার

সবটুকুই প্রায় নিঃশেষিত হয়ে গিয়েছিল, তবু দেখি, দেশের জগ্য নিবিড় অনুভূতির মধ্যেও স্বাধীনসত্বার বিলাপ বিলাপ আত্মবিলাপ নয়, কিন্তু সর্বজনীন আতিকেই কবি স্বকীয় বেদনায় রূপান্তরিত করেছেন জীবনের আদিপর্বে সংস্কৃতিবিচ্ছিন্ন হলেও আপাঁতঃদৃষ্টিতে ভিন্নধর্ম, ভিন্নসংস্কারা ুরাগী মনে হলেও, মধুহ্বদন তাব চিন্তার জগতে সম্পূর্ণ ভাবেই আমাদের মধুক্ছদন --সে কথা সনেটের মধ্যেই বোধকরি প্রমাণিত হয়েছিল চতুর্দশপদীর' সনেটে মধুকবি যেন অজানিতেই আত্মচিত্র প্রকাশ করেছেন যা কবি মধুস্থদন-স্বদেশপ্রেমী মধুক্দনের কোন ভুল ব্যাখ্যার বলিষ্ঠ অন্তরায়স্বরূপ | স্বদেশপ্রেম তার অন্তরের নিভৃত কোণ জুড়ে এতদিন শুধু প্রবাহিত হয়েছে-_কিস্তু অস্থিরচিত্ত কবি তাঁর যুদ্ধ কলকল ধ্বনি শুনতে পাঁননি,কিস্ত বিদেশগমনই স্যোগ করে দিয়েছে “কপোতাক্ষ নদ” কিংবা “বিজয়া-দশমী” কিংবা “আমরা, বোধকরি ভারতবর্ষে লেখা অসম্ভব ছিল। আর কবিচিত্তের প্রেম বা অনুরাগ কাব্যাকারে না পাওয়া গেলে তাকে বিচারে স্থান দেওয়া যেত ন1)-_স্তরাং “চতুর্দশপদী কবিতাবলী'র সনেটগুচ্ছে কবি দেশপ্রেম বা দেশানুরাগ প্রকাশ করে কবিসম্পকিত ধারণ] অনুসরণের স্যোগদান করেছেন | বঙ্গতাষা” কবিতায় ভাষা প্রেম যা দেশপ্রেমেরই নামান্তর ) প্রত্যক্ষ করেছি-_কিন্তু “চতুর্দশপদী কবিতাবলীর* “ভাষা, কবিতায়ঃতিনি আরও বেশি আন্তরিক,

যূঢ় সে, পণ্ডিতগণে তাহে নাহি গণি,

কহে যে, রূপসী তুমি নহ, লো স্বন্দরি

ভাষা !--শত ধিক তারে ! ভূলে সেকি করি

শকুত্তলা তুমি, তৰ মেনকা জননী ?

রূপহীন] দুহিতা কি, মা যার অপ্সরী ?--

এখানে মধুন্দনের বঙ্গভীষাগ্রীতি তাঁকে দৃঢ় করেছে সংশয় নয়, গভীরতর

বিশ্বাসে তিনি মগ্ন। তাই বলতে পেরেছেন, শত ধিক তারে ভাঁষাপ্রেমী মধুহ্দদনের কে ভাষাপ্রেমের নিদর্শনটুকু সত্যি যেন অপরূপ | এখানে মাতৃভাষাঁপ্রেম কবিকে শক্তি দীন করেছে বঙ্গভাষার নিন্দাবাদ শুধু মধুহ্দনহ করেননি--সেঘুগের তির্যক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেশীয় রীতি সংস্কারের প্রতি কটাক্ষপাঁতই শুধু ছিল না, ভাষা সাহিত্যও পেয়েছে অকারণ লাঞ্চনা-_ অযৌগ্যের সমালোচনা কিন্ত অগ্নিশুদ্ধ '্অন্তর দিয়ে ভূলবিচারের প্রায়শ্চিত্ত করেছিলেন এক] মধুস্থদনই | প্রেমের উদাহরণ

২৬০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল সাহিত্যে দেশপ্রেম

বিরল-_-“চতুর্দশপদী কবিতাবলী"র সমস্ত কবিতা তাই কাব্যাবেদনের মাঁপকাঠিতেই উত্ভীর্ণ নয়-_-কবিচিত্তের পরিচয়স্বাক্ষরিত অনন্য সৃষ্টি। বাংলা সাহিত্যে মধুহদন সর্বপ্রথম মাতৃপূজাই প্রবর্তন করেন নি) মাতৃভাষায় অগাধ আস্থা স্থাপন করে মাতৃভাষাপ্রেমে মগ্ধ হয়েছিলেন বাঁংলাভাষাঁও সাহিত্যের ভবিষ্যৎ ধার চিন্তার একমাত্র বিষয় হয়েছিলো,--93611656 20১ [05 0921 6০110, 01: 736155511 15 2৬৪] 09800001 1205095, 16 0015 21005 10210 01 20105 00 00115) 10 100, 9001) 06 05 85, 05517760585 ৫66500%০ 2030201010, 10190 1666 10 200. 17852 16817000 0650156 10 916 00152121015 10126. 19 2 170161 101099 006 21610001015 012. £:52816 19157866111 ] 151) ০0010 02৬৮০962 10959216 00 10 ০9161৮86600,২9 পত্রটি ১৮৬৫ সালের ২৬শে জানুয়ারী ভার্সাই থেকে বন্ধু গৌরদাঁস বসাককে

লেখা__ত্ীর উজ্জল আদর্শ, অক্ত্রিম স্বদেশপ্রাণতারই নামান্তর “চতুর্দশপদী কবিতাবলী'র “সমাঞ্চে* কবিতাতেও মধুস্থদনের সকাতর আত্মবিলাপ সাহিত্যপ্রেমের একটি পরিচিত আন্তরিক নিদর্শন

বিসজিব আজি, মা গো, বিস্বৃতির জলে

( হৃদয়মণ্ডপ, হায়, অন্ধকার করি 1)

প্রতিমা ! নিবাহইিল, দেখ হোঁমানলে

মনঃকুণ্ডে অশ্রধারা মনোছুঃখে ঝরি !

শুখাইল ছুরদৃষ্ট সে ফুল্প কমলে,

যার গন্ধামোদে অন্ধ মনঃ, বিস্মরি

সংসারের ধর্ম, কর্ম ! ডুবিল সে তরি,

কাব্যনদে, খেলাইনু যাহে পদ বল্গে

অল্পদিন ! নারিম্ু, মা, চিনিতে তোমারে

শৈশবে, অবোধ আমি ! ডাকিল! যৌবনে ;

( যদিও অধমপুত্র, মা কি ভুলে তারে ?)

অন্তরজয়ী একটি অতিবিনীত অশ্রনত ভঙ্গি মধুক্দনের সমস্ত মনোভঙ্গির মধ্যে

প্রকাঁশমীন--সাহিত্যিকের আর্তনাদও যে উৎকৃষ্ট সাহিত্য হন্তে পারে প্রতি ক্ষণে সমস্ত কবিত৷ সেই সত্যই তুলে ধরে--বিশেষতঃ আতির প্রসঙ্গ যেখানে কল্পিত কিছু নয়, জীবনলব সত্য

২*,. “মধুম্মতি'-নগেল্সনাথ সোম থেকে উদ্ধত | পৃঃ ৩১১।

কাব্য ২৬১

মধুস্ছদনের পর বাংলা সাহিত্যে হেমচন্দ্রের আবির্ভাব নানাদিক দিয়েই সম্ভাবিত প্রত্যাশিত। প্রথম মহাকাব্য সৃষ্টি করে মধুহুদন সাহিত্যে ষে অভিনবস্বের স্বাদ নিয়ে এলেন-_-হেমচন্দ্রের মতো স্বদেশপ্রেমী কবিও অভ্রান্ত নিয়মে মহাকাব্যের বৃত্তে বিঘুণিত না হয়ে পারেননি শুধু এই একটি কারণেই মধুস্দনের সঙ্গে হেমচন্দ্রের যুগল আলোচন। বাদপ্রতিবাঁদে জটিল হয়ে অবশেষে বিবাদে পরিণত হয়-_কিস্তু শেষ মীমাংসায় পৌঁছনোর আগেই খুব লক্ষ্য করলে বোঝা যায় যে, এই দুই কবির কাব্যে কোন দিক দিয়েই কোন সমধমিত। নেই,__না৷ অনুভূতির ক্ষেত্রে, না তার প্রকীশ- ভক্কিতে | হেমচন্দ্রের কাব্যশক্তির বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে প্রথমাঁবধি তিনি মৌলিক সজনী প্রতিভাশক্তির পরিচয় দিয়ে আসছেন। স্বাধীনতার জন্য হেমচন্দ্রের যে স্থগভীর আকাজ্ষা আগ্ধন্ত তার সমগ্র কাব্যে প্রতিফলিত হয়েছে--যে কারণে তাকে সমালোচকমগ্ডলী একবাক্যে স্বদেশপ্রেমী কবি বলে বরণ করেছেন, সেক্ষেত্রে তিনি একক, মৌলিক অনন্য হেমচন্দ্রের স্বদেশপ্রেম বাংলাসাহিত্যের এক অমূল্য সংযোজন ঈশ্বরগুপ্ত থেকে মপুক্দন পর্যন্ত স্বদেশপ্রেমের বিচিত্র ধারার পরে হেমচন্দ্রের স্বদেশ প্রেম উজ্জ্লতায় সন্ধ্যাকাণের শুক্রগ্রহের মতোই বিশিষ্ট, প্রভাতের শুকতারার মতো উজ্জ্বলতম একক সৌন্দর্য

বস্ততঃ হেমচন্দ্র যে যুগে এসেছেন দেশের জনমনের চিত্ত তখন আর নিন্তেজ নিদ্রায় জড়ীভূত হয়ে নেই,_নানা ঘটনাবর্ত জনগণের চিত্তের ধন্ধ দুয়ার খুলে দিয়েছে। স্বদদেশচেতন। নামক তাত্র উত্তেজনাকর অনুভূতির রসে বার্গালা মন দ্রব-পরিষিক্ত। রঙ্গলালের স্বদেশপ্রেমবারি সিঞ্চনে আমরা দেশপ্রেমের গভীরতাকে অন্ততঃ উপলদ্ধি করেছি--এ কথা সত্য হেমচন্দ্রের আবির্ভাব, তীর প্রতিষ্ঠা তার জীবনবানীর মধ্যে এমন কোন জটিলতা নেই যা বিষ্ময়কর বা অভিনব, যা অচিত্তিত অদৃষ্টপূর্ব। হেমচন্দ্রের আখ্যান কাব্যের বীররস, দেশবন্দনা, জন্মভূমিপ্রীতি ইতিপূর্বে একাধিক কাব্যে স্থান পেয়েছে ।-_-হেমচন্দ্রের মহাকাব্যের বক্তব্য, আত্মত্যাগের মহিমাদর্শ অশ্রুত বা অভিনব বলে মনে করার হেতু নেই,_এমন কি “কবিতাবলী-তে খণ্ড খণ্ড কবিতাকারে হেমচন্দ্র যে বিশুদ্ধ দেশচেতনার, গভীর আন্তরিকতার কথা! বলেছেন-_. তাও ইতিপূর্বে ঈশ্বরগুপ্তের খণ্ড কবিতায় পেয়েছি মধুস্দনের মহাকাব্য অনুশতির ক্ষেত্রেও হেমচন্দ্রের সাফল্য সাময়িক খ্বীকৃতির মানপত্র পেয়েও যুগবিচারে স্থানচ্যুত। তবু হেমচন্দ্রকে জাতীয় কবির মর্যাদায় ভূষিত করার যখোঁচিত যুক্তি আছে। বাংলা কাব্যের ক্ষেত্রে হেমচন্দ্রের অসামান্য জনপ্রিয়ত।--সে যুগের মনীষী সমীলোচক- বুন্দের সম্মিলিত অভিনন্দনের হেতু অনুসন্ধান করলে খুব সহজেই বোঝা যাবে, সম্মান তার প্রাপ্য পরাধীন ভারতবাঁসীর দীর্ঘ দেশসাধনার ত্রতে আমরণ নিযুক্ত

২৬২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

ছিলেন কবি হেমচন্দ্র। এই দেশপ্রেমিকতা বহু কাব্যে বহুরূপে শ্রত হলেও হেমচন্্র তীর কবিজীবনের প্রারস্ত থেকে পরিশেষ পর্যস্ত এই একটি জীবনাদর্শের কথাই কাব্যে প্রকটিত করেছিলেন ।__সেয়ুগের স্বাধীনতাকামী দেশপ্রেমী সমাঁলোচকগণ তা! আবিষ্কারে ব্যর্থ হননি উনখিংশ শতাব্দীর জাতীয়জীবনে দেশদার্শনিকত। আমাদের অন্তান্থ চিন্তাকে যেভাবে াচ্ছাদিত করেছিল তার যুক্তিসিদ্ধ কতকগুলি কারণ ছিল। রামমোহন-বিদ্ভাসাগরের অনমনীয় চারিত্রিক শক্তির মধ্যে একদা যে জাতীয়চেতন। বিকশিত হয়েছিল-_সমস্তজাঁতির জীবনে তা সঞ্চারিত হয়েছিল, এটা আমাদের সৌভাগ্য এটুকু পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙ্গালীর সাবিক চিত্তোশ্নতিরই প্রমাণ তাতে সন্দেহ মাত্র নেই দেশচিন্তা ছাড়া অন্ঠান্ত মূল্যবান চিন্তাকে হৃদয়ে স্থান দেওয়শর মত অবসর বা বিলাস সে যুগে ছিল না। সমস্ত লক্ষণই আমাদের সাহিত্যের মধ্যে প্রকাশিত না হয়ে পারে নি তাই উনবিংশ শতাব্দীর আড়াগোড়াই বাংলা সাহিতোর মধ্যে যদি একটি মাত্র চিন্তার প্রীধ স্ ঘটে থাকে সেটা যেমন প্রতিভার বৈচিত্র্যহীনতার প্রমাণ নয়, আবার যথার্থ প্রতিভাবান কোন কবির রচনায় অজ্ঞাতসারে যদি স্বদেশচিন্তাই ঘূর্ত হয়ে থাকে সেটাও যুগপ্রভাবেই ঘটেছিল বলতে হবে। স্তরাঁং উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে সাহিত্যের স্বদেশপ্রেমাত্মক বিচিত্র সম্ভারকে স্বদেশপ্রেমী অষ্টাসম্প্রদীয়কে যদি অভিনন্দিত করতে না পারি তবে তাকে যথার্থ সাহিত্য সমালোচনা বলা যাবে না। অবশ্য সে যুগের কবিদের কাব্য সমালোচনাঁতেও এই বিষয়টিই প্রাধান্ত পেয়েছিল তার প্রমাণও রয়েছে রমেশচন্দ্র একদা হেমচন্দ্রের স্বন্ধে মন্তব্য করেছিলেন,

[715 501016597 ৮০196) £0]1 06 0.5 20 :561175, ০0 0109 2.000112- €107 01 0130 1290103 00110 2৮60 আ1)210 006 2006 01 11231003009 ০9 1] 60০ 85021309175 1015 08 0109010 [9110 00 [00128 15 1000 05 1)6816 00 2. 181৩ 017012 0:1 7122.0615.২

যুগের অষ্টারা সব সত্যকে বিস্মৃত হয়ে শুধু একটি সত্যকেহ প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন-_ সে সত্য দেশচেতনার ভিত্তিকে আশ্রয় করেই গড়ে উঠেছে রক্গলাল, হেমচন্দ্র, নবীনচন্দ্রের রচনার মধ্যে অজক্র ভাবনা থাকতে পারে কিন্তু সব চিস্তাকে আবৃত করে স্বাদেশিকতার সত্য অনুভূতি আমাদের আকৃষ্ট করেছে এর কারণটি অঙ্গু- ধাবনযোগ্য | হেমচন্দ্র চিন্তা তরঙ্গিনী” “আশাকাঁনন” “বুত্রসংহার” “দশমহাবিদ্ার" মধ্যে প্রত্যক্ষতঃ কোন স্বদেশপ্রেমের কথা বলেন নি- কিন্ত সবার বিচিত্র ভাবনার

২১, 1২০৫১651) 0152707210006695 009 140156515 01 8৪তাম্ততাত 2895১ 7218,

কাব্য ২৬৩

স্বাক্ষর রেখেছেন একমাত্র “বৃত্রসংহার' ছাড়া প্রতিটি কাব্যেই তার নতুন উত্ভাবনী ক্ষমতা, নতুন চিন্তার দান রয়েছে কিন্তু হেমচন্দ্র সম্পকিত আলোচনায় এসব কাব্যের উল্লেখমাত্রই স্থানি পায়, _বিস্তৃততর আলোচনা কিংবা ভাবাঁবেগ কম্পিত প্রশংসায় হেমচন্দ্রের স্বদেশপ্রেমাত্বক অংশটুকুই সব স্থান দখল করে নেয়। হেমচন্ত্র সম্পর্কে প্রথমতম প্রশংসা কিংবা শেষকথ। তীর স্বদেশচিন্তাকেই কেন্দ্র করে হয়ে থাকে হিসেবে উনবিংশ শতাব্দীর কাব্যে নিরবচ্ছিন্ন দেশসাঁধক হেমচন্দ্র-এর স্থান সর্বোচ্চে স্বদেশপ্রেমকে উপজীব্য করেই তিনি দেশবরেণ্য কবি-_সমালোচকের শ্রদ্ধার পাত্র। “হেমচন্দ্র' জীবনীকার মন্মসথ নাথ ঘোষ বলেছেন,..“বাংলার সেই সন্গিযুগে দেশবাসী “ভার * সংগীতের" স্বদেশপ্রেমিক কবির প্রতীক্ষা করিতেছিল যে কবির তুর্যশিনাদে ৃতপ্রাণ সঞ্জীবিত হইয়া ওঠে, যে কবির বীণার স্থরতরক্গ জাতীয় স্থখে উচ্ছ্বসিত, জাতীয় ছুঃখে বিষুচ্ছিত, জাতীয় গর্বে উদ্বেলিত, জাতীয় দৈন্যে সংক্ষোভিত হইয়। পড়ে, দেপবাসী সেই জাতীয় কবির প্রতীক্ষা করিতেছিল ৮১২

হেমচন্দ্রকে “জাতীয় কবির” আসনে বসিয়েছেন তার জীবনীকার এবং যতদূর জানা যায় সেষুগে এধুগের সমালোচনায় তা সমথিত হয়েছে কারণ সত্যিই তা সমর্থনযোগ্য “টব 55০091 ০০৩৮ বা জাতীয় কবি” হওয়ার পূর্ণ যোগ্যতা নিয়েই হেমচন্দ্রের আবির্ভীব এবং তিনি যেভাবে এই দায়িত্ব পালন করেছেন তা৷ সত্যিই বিষ্ময়কর ভারতপ্রেম কবির জীবনে দুর্যোগ এনেছে রাজরোষ তাঁর কঠরোঁধ করেছে,_ কিন্তু যে বিশুদ্ধ দেশচিন্তা একদা তার সমস্ত চিত্তকে আলোড়িত করেছিল আগাগোড়া তিনি সেহ ভাবটিই অবলম্বন করেছিলেন হেমচন্দ্রের কাব্য সাধনার প্রথমপব থেকেই তার প্রবণতা ধরা পড়েছে 'চিন্তাতরঙ্গিনীর” মত নিতান্তই বিষাঁদপুর্ণ ব্যক্তিগত শোককেন্দ্রিক কাব্যেও কবি দেশের পটভূমিকায় তার চিন্তাকে বিস্তৃত ফেনায়িত-উচ্ছুসিত করে প্রকাশ করতেই অভ্যন্ত। সাহিত্য- জীবনের পূর্ণপ্রেরণা ঘদি দেশ জাতির চিন্তাকে কেন্দ্র করেই আঁবতিত হয়, কোন কবি সঙ্হানে বা অঙ্ছাতসারে দেশবাসীর প্রতি আন্তরিকতা প্রকাশে উন্মুখ হয়ে ওঠেন-_তাকে 'জাতীয় কবি”, জাতির কবি, বলে মেনে নিতে দ্বিধ। থাঁকার কথা নয়। তবে এই অনুভূতির মধ্যে কৃত্রিমতা থাকলে কিংবা কোনো! বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য মেকি সহানুভূতি দেখিয়ে প্রতিষ্ঠা অর্জনের আয়াস কবিকে যদি উৎসাহিত করে থাকে তবে তা বুঝেও সম্মানের মাল্যে কবিকে ভূষিত করার যুক্তি নেই। স্থতরাং হেমচন্দ্রেরে আন্তরিকতাই তাঁর দেশভাবনার কষ্টিপাঁথর | হেমচন্দ্রর প্রতিভা সম্পর্কে

২২. মন্মখনাশ ঘোষ, হেমচত্দ্র | ১ম খণ্ড ১৩২৬, পৃ ৩৪7৩৫)

২৬৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

সঙগেহ প্রকাশ করে কেউ কেউ বলেছেন-__-যশোলাভই তার উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু ফবি সাহিত্যিক-এর পক্ষে যে আকাও্ষা থাকাটাই স্বাভাবিক--তাকে নিন্দা না করে কবিপ্রতিভার সামর্থ্য বিচার সবার আগে দরকার | হেমচন্দ্রের সামর্থ্যবিচার না করে তার সাফল্য-অসাফল্যের বিচারই পুর্বযুগের সমালোচকেরা করে আসছেন আমরা দেখেছি এই সাফল্যের মূলে আছে কবির সানুরাঁগ দেশশ্রীতি। দেশবাসীর শ্রদ্ধা নিবেদন-প্রশস্তি কীর্তনও হেমচন্দ্রের এই দেশপ্রেমের মহিমাঁকে কেন্দ্র করেই

হেমচন্দ্রের দেশপ্রেম সম্পকে পুর্বস্থরীদের সমালোচনার মধ্যে ছটি বিরোধী মত গড়ে উঠেছে হেমচন্দ্রের দেশপ্রেমের পরিচয় প্রসঙ্গ ধরে এক পক্ষ তাঁকে অতিবিনীত দেশতক্ত রূপে প্রত্যক্ষ করেছেন,__অন্যপক্ষ হেমচন্দ্রেরে মনোভদ্গিমার মধ্যে দেশ- বৈরিতার বীজ দেখেছেন ব্যক্তিজীবনের ব্যর্থতা কবিজীবনের সার্কতার সন্গিস্থত্রযৌজনার সাহায্যে অনেকসময়ই যথার্থ সত্য আবিষ্কৃত হয়না কারণ দেখা গেছে ছুঃখ, দারিদ্র্য, সমস্যার চাঁপে ব্যক্তিজীবন যখন লাঞ্ছিত--কবিজীবনের সাফল্যের চূড়া তখন গগনস্পর্শী হয়ে উঠতে পারে বহু কবির জীবনেই সত্য বার বার পরীক্ষিত হয়েছে সর্বোপরি প্রতিভার দৈবীস্পর্শ অলৌকিকতার পরিবেশ ছেড়ে বখন মর্ত্যতভূমিকে নেমে আসে তখন কবি অন্যমনের মানুষ | অবশ্য হেমচন্দ্রের জাতিগ্রীতি বা বিজাতি বৈরিত৷ তার ব্যক্তিজীবনের অশান্তির কারণ হয়েছিল কি না তা আলোচনা বহিভূতি। হেমচন্দ্রের দেশপ্রেমের স্বরূপ বিচারে অক্ষয়চন্দ্র সরকার আলোচন। বহিভূতত এই প্রসঙ্গটির উপর অযথা গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন হেমচন্দ্রের ব্বদেশপ্রেমের ব্যাখ্যাটিও অভিনব বলে মনে হয়েছে “কবি হেমচন্দ্র গ্রন্থে তিনি বলছেন,_-

“হেমচন্দ্রের কাব্যে স্বধর্মপালন স্বজাতিবাঁংসল্য নাই বলিলেও চলে। কিন্তু হেমচন্দ্র জাতিবৈরজনিত দেশভক্তিতে ভোরপুর | তাহার সমস্ত প্রসিদ্ধ কাব্যে, এই দেশভক্তির উজ্জ্বল ছায়া ঝকৃু ঝকৃু করিতেছে ইহা হৃদয়ের ভক্তি, সখের নহে প্রাণের-পরিচ্ছদের নহে ।”২৩

-স্বধর্মপাঁলন” “ম্বজাতি বাঁৎসল্য-হীন হেমচন্দ্র বিজাতিবিদ্বেষ নিয়ে দেশভক্ত হয়েছিলেন, ঠিক ধরণের আপাতঃ অর্থহীন সমালোচনায় ষেমন কবি সম্পর্কে সুবিচার কর] হয় না তেমনি পাঠক সাধারণও কোন সিদ্ধান্তে পৌছতে পারেন না। পরিশেষে সেই “ম্বজাঁতিবাৎসল্য” হীন হেমচন্দ্রকেই হৃদয় প্রাণধনে ধনী বলে অভিহিত করে সমালোচক নতুন জটিলতার শ্ষ্টি করেছেন। যিনি দেশতক্ত, তিনি দেশকে ভালবাসেন এটাকে স্বতসিদ্ধ বলে মেনে নিয়ে যদি কবিসত্তার গভীরে হৃদয়জাত ২৩. অক্ষয়চন্ সরকার, কবি হেমচন্ত্র ১৩১৮, পৃঃ ২৩।

কাব্য ২৬৫

অন্নভূতির সন্ধান মেলে তবে কবির দেশগ্রীতি সম্বন্ধে নিঃসন্দেহ হওয়া যায় আগেই বল। হয়েছে, স্বদেশপ্রেম ব্যক্তি অনুভূতি অসম্পৃক্ত একটি বাহিক আবেগ,_ এটুকু জেনেই স্বদেশ প্রেমিক কবিকে বিচার করতে হবে। যদি তা নিতান্তই সাময়িক উচ্ছাস বা হুলভ যশাকাজ্ষার হেতু নী হয়ে দীর্ঘদিনের সাধনার স্তরে স্তরে কবিচিত্তকে অন্ুপ্রেরণ। দিয়ে থাকে-_অন্ততঃ সেই অনুভূতিকে আর বাহক বলে অগ্রাহ করা চলে না হেমচন্দ্রের কাব্যধারার আলোচনায় আমরা এই সিদ্ধান্তেরই সাহাষ্য গ্রহণ করব কিন্ত একই সঙ্গে ছুটি বিরোধী ভাব-_“স্বদেশপ্রেম” “স্বজাতি বাঁৎসল্যবিহীন- তাকে' একজন কবির হৃদয়ে আবিষফার করা যায় কি? স্বদেশপ্রেমে প্রকার ভেদ থাঁকা স্বাভাবিক, স্বজাতির প্রতি বিদ্বেষী হয়ে স্বদেশপ্রেমী হওয়াটা হয়ত অসম্ভব নাও হতে পাঁরে কিন্তু স্বজাতিবিঘেষী হয়ে যিনি স্বজাতি সমালোচনা করেন 'তিনিও স্বজাতিপ্রেমকেই প্রকারান্তরে ব্যক্ত করছেন ত্তরাং আপাত; স্বজাতি- বিদ্বেষ আমাদের স্ুপরিচিত-_কিস্তু তাকেই বঙ্কিমচন্দ্র খাটি বলে চিনে নিয়েছেন হেমচন্দ্রের স্বজাতিবিদ্বেষও ঠিক সেই ভাবে জনগণের অন্তর জয় করেছিল, একে ঠিক বিদ্বেষ না বলে প্রেমেরই তির্যক প্রকাশ বলে মেনে নেওয়া সঙ্গত | বিজাতিবিদ্বেষ অবশ্য স্বদেশপ্রেমের পরিচায়ক কি না তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে উনবিংশ শতান্দীর দ্বিতীয়ার্ধে, বাংলাদেশে জাতীয় জাগরণ মুহূর্তে বিজাঁতিবিদ্বেষ যে অন্যতম প্রধান অবলম্বন হয়ে উঠেছিল-_তার কারণও রয়েছে ১৮৫৭ সাল থেকে ১৮৬০ মাত্র এই তিন বৎসরের মধ্যে সমগ্র জাঁতি শাসক ইংরাজদের সতাকারের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে প্রায় স্থির সিদ্ধান্তে উপস্থিত হয়েছে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকে ষষ্ঠ দশকের মধ্যেই সমগ্র গতি একটি বিষয়ে অন্ততঃ একমত হতে *পেরেছে যে পরাধীনতার হাত েকে মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত মুক্তিসংগ্রাম চালিয়ে ষেতে হবে হইংরেজের শুভপ্রচেষ্টার স্বরূপ হাদয়ঙ্সম করেও শিক্ষিত বাঙ্গালী বুঝেছিল স্বাধীনতাবিহীন কোন জাতি কখনও সগর্বে মাথা তুলে দীড়াতে পারে না। সিপাহীবিদ্রোহ বা নীলবিদ্রোহ শিক্ষিত সাধারণ মানুষকে যে অভিজ্ঞতা দান করেছে তার মূল্য অপরিসীম উনবিংশ শতাব্দীর যে পাদে হেমচন্দ্রের আবির্ভীব তখন ভাবন! প্রায় স্থির সিদ্ধান্তে ধবাড়িয়ে গেছে৷ পরাধীনতার বেদন1 স্বাধীনতার মূল্য সম্পর্কে সে যুগের কবি যে কত সচেতন হেমচন্দ্রের কাঁব্যই তাঁর প্রমাঁণ। ১৮৬৪ সালে হেমচন্দ্রের “বীরবাহছু কাব্য রচনার মুখবন্ধে স্পষ্টতই হেমচন্দ্র জানিয়েছেন, _"পুরকালে হিন্দুকুলতিলক বীরবুন্দ স্বদেশরক্ষার্থ কি প্রকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন কেবল তাহারই দৃষ্টান্ত স্বরূপ এই গল্পটি রচনা করা হইয়াছে 1৮২৪ ২৪. হেমতন্তরগ্রস্থাবলী | ১ম থণ্ড। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ১৩৬১।

২৬৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

সুতরাং স্বদেশচিন্তার প্রথমত্তরেই কাব্যরচনার মুল বিষয় হিসেবে তিনি দেশোদ্ধারের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন দেশোদ্ধারের কল্পনাই যেখানে সর্বন্ষ বিজাতি- বৈরতা সেখাঁনে সত যৌক্তিক নঈশ্বরগুধু, রঙ্গলালেও বিজাতিবিঘেষ প্রকটভাঁবে দেখা গেছে-_-এবং হেমচন্দ্রের কাঁব্যেও বিজাঁতিবিদ্বেষ সঙ্গত স্বাভাবিক ভাবেই মুখ্য হয়ে উঠেছে পরাধীনতার বেদনা প্রকাশের পথ যেখানে অবরুদ্ধ, রূপকের অন্তরালে তীব্র বেদণাঁর প্রচণ্ড বিস্ফোরণ তাই স্বাভাবিকভাবে কাব্যে মৃখ্য হয়ে উঠেছে হেমচন্দ্রের দেশপ্রেম বিশ্লেষণের প্রসঙ্গে সমালোচনায় বলা হয়েছে,_+স্বজাতিপ্রেমে হেমবাঁবু পৌছিতে পারেন নাই, বিজাঁতিবৈর পর্যন্ত তাহার কবিত্বের সীমা 1৮১৫

উপরোক্ত সমালোচনায় আপাতঃ বিরোধের বন দৃষ্টান্ত থাকা সত্বেও স্বদেশপ্রেমিক হেমচন্দ্রের কাব্যকে একটি তীক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করার স্বকীয় সাহস সব্বত্র মেলে! স্বদেশপ্রেমের কবিতারচনার গতানুগতিক পদ্ধতি হেমচন্দের যুগে স্থলভ কবিত্ব প্রকাশের বাহন রূপে দেখা দিয়েছিল, _সমালৌচক অক্ষয়চন্দ্র তা উপলন্ধি করেছিলেন ।--দেশভাবনার পবিত্রতা স্বল্প ক্বত্বে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখেই সমালোচনায় নির্মম মত প্রকাশ করেছিলেন তিনি | তদানীন্তন স্বদেশপ্রেমের স্বদেশপ্রেমিকদের বহু ব্যবহৃত শব্দগুলির মাহাত্ব্য সম্বন্ধে নতুন করে সচেতন করার উদ্দেশ্যে সমালোচক অক্ষয়চন্দ্রের মূল্যবান মন্তব্যগুলি উদ্ধৃতিযোগ্য বলে মনে হয়।

“আসল কথা 'জাতীয়তা” “জাতীয় জীবন”, “দেশহিতৈষিতা” প্রভৃতি বাক্যগুলি একটু বুঝিয়া স্থঝিয়া ব্যবহার করিবার সময় উপস্থিত হইয়াছে-..কেহ কিছু বুঝিবার চেষ্টা করিবে না_সেটা কিছু নয়। মরা কথাঁর ওরূপ ব্যবহার চলে, তাহাতে কিছু আসে যায় না।৮২৬ এই বক্তব্যের সাহায্যে আমরা সেযুগের স্বদেশপ্রেমের খাঁটি রূপ আবিষ্কারের শুভ প্রচেষ্টাটি দেখতে পাই। সমালোচক সম্প্রদায়ও স্বদেশ সম্পকিত যে কোন রচনাকেই ষথার্থ স্বাদেশিকতাঁর পরিচায়ক বলে মনে করতে পারেন নি। অবশ্য জাতীয়ত৷ বা জাতীয় জীবনের মধ্যে সথক্পার্থক্য নির্ণয় যেমন সেযুগে সম্ভব ছিল না._-তেমনি জাতীয়তা দেশহিতৈষিতাঁর পথক পৃথক অর্থ নিয়ে কেউ বিশেষ মাথা ঘামাননি আসল কথা, দেশের প্রতি মমত্ববোধ নিয়ে, দেশের মানুষের সখছুঃখের অংশভাগী হয়ে, বিদেশীশক্তির অত্যাচার হুদয়ঙ্গম করে, পরাধীনতার নাগপাশমুক্ত হবার বাসনা ধারা লালন করতেন সেই কবিসম্প্রদায়ের কাব্যেই জাতীয়তা, দেশহিতৈষিতাঁর প্রতিফলনই দেখা যেতো৷। অর্থপার্থক্য নিয়ে সক্ষম তাকিকতাঁর কথা চিন্তারও অতীত ছিল দেশ, জাঁতি, সেখানে একাকার হয়ে গেছে

২৫. আঅক্ষয়চন্ত্র সরকার, কবি হেমচন্দ্র ১৩১৮, পৃঃ ৮২

২৬, শ্রী পৃষ্ঠা ৫৯।

কাব্য ২৬৭

এমন কি বঙ্গ বা ভারতের মধ্যেও কোন অর্থগত পার্থক্য অনুসন্ধান অনেক সময়ই নিরর্থক হয়েছে বাংলা দেশের ধর্ম, সংস্কৃতি চিন্তার মধ্যে বৃহত্তর ভারতের চিন্তা যেন ওতপ্রোত হয়েছিল সে সময়ে |

হেমচন্দ্রের যুগে সাহিত্যে, সাংবাঁদিকতায়, সঙ্গীতে, নাটকে, ছড়ায়, পাঁচালীতে কবিগানে, সাংস্কৃতিক জগতে, সামাজিক জীবনে, স্বদেশপ্রেম বা দেশহিতৈষিতা সর্বত্র পরিচিত | বনুলপ্রচারিত, বন্তশ্রত এই বিশেষ চেতনায় কিছু অভিনবত্ব আঁশ! করা স্বাভাবিক | সমালোচক গতানুগতিকতা চাননা, তিনি নতুনত্ব অনুসন্ধানে ব্যর্থ হলে দেশপ্রেমিক কোন কবিকে অনেক সময়ই বিরূপতাঁর দুখোঁমুখি হতে হয় হেমচন্দ্রকেও এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচাঁরের চেষ্টা হয়েছে সে বিচার অনেক সময়ই অধথার্থ প্রচেষ্টা বলে মনে কবাঁর হেতু নেই

হেমচন্দের স্বদেশপ্রেম সম্পকিত ধারণার মধ্যে অভিনবত্তের অভাব রয়েছে সে যুগের বহুআলোঁচিত, বহুকথিত বিষয় নিয়েই তাঁর রচনা স্বতরা সম্পর্কে সমালোচকের ধরণের মতামত সঙ্গত। ঈশ্বরগুপ্তের স্বদেশপ্রেমাঙ্কিত রচনাবলীর মধ্ো বন্থ পূর্বেই মামরা সাময়িক ঘটনাঁবলীর ওপর আলোকপাঁতের চেষ্টা দেখেছি বাংলাসাহিত্যে এযে কতখানি মআঁবিষ্ষার --ঈশ্বরগুপ্তপূর্ব যুগের সাহিত্যের সঙ্গে ঈশ্বরগ্ুপ্তেব বচনাঁবলী আলোচনা করলেই তা ধরা পড়বে অথচ ঈর্বরগুপ্তই *সংবাঁদ প্রভাকরের” পৃষ্ঠায় কবিতা রচনার বিচিত্র উপাদানের দিকে আমাদের দৃষ্টি আঁকর্ষণ করেছিলেন হেমচন্দ্রের স্বদেশপ্রেম সম্পকিত রচনার একটি বৃহৎ অংশ সাময়িক ঘটনাকেব্দিক খণ্ড খণ্ড কবিতাবলী | তাঁর স্থবিখ্যাত “ভারতবিলাপ' “ভারত ভিক্ষা” “ভীরতসংগীতের” মতো! কবিতার উপাদান সে যুগের সমসাময়িক ঘটনা- প্রবাহেরই বিবরণ বক্তব্যের বৈশিষ্ট্যে আন্তরিকতার আবেদনে এসব কবিতাই হেমচন্দ্রের তিলোত্রমা তৃষ্টি। সে প্রসঙ্গ যথাস্থানে আলোচিত হবে কিন্তু সমসাময়িক ঘটনাকেন্দ্রিক কবিতা রচনা ধারায় যূল্যবান সংযোজন ছাড়া অন্য কিছু নয়। ঈশ্বরগুপ্তের প্রাথমিক অস্থশীলন হেমচন্দের ক্ষেত্রে পুর্ণতর হয়ে দেখা দিয়েছে মাত্র

স্বদেশপ্রেমমূলক রচনাধারায় হেমচন্দ্র যে শুধুমাত্র গুপ্তকবিরই অনুসরণ করে- ছিলেন তা৷ নয়-_পূর্বক্থরীদের পূর্ণ প্রভাব তাঁর রচনাঁবলীর সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। স্বদেশপ্রেমকেন্দ্রিক রচনার ক্ষেত্রে তার প্রত্তিভা কৌন মৌলিকতা অনুসন্ধান করে নি--- তার কারণ অন্থসন্ধান করলে দেখা যাঁবে প্রথমত: হেমচন্দ্রের ব্যাপারে পৃথক এষণা ছিল না। স্বদেশচিস্ত! তাঁর হৃদয়কে আলোড়িত করেছিল, সমস্ত সত্তাকে আশ্রয় করেছিল--গীতিকবিতাঁর মধ্যে তারই রূপ প্রতিবিদ্িত। গীতিকবিতাকে ব্যাপারে শ্রেষ্ঠতম বাহন বলা যেতে পারে আত্মচিস্তার বাহনই গীতিকবিতা। বছ পূর্বেই

২৬৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেষ

কবিরা আত্মপ্রকাশের অধীরতায় গীতিকবিতাঁকেই বেছে নিয়েছিলেন স্বদেশপ্রেমভাঁব চিত্তে যখন স্থগভীর উপলব্ধিতে পরিণত হয়__গীতিকবিতার মধ্যেই তা সুষ্ঠুভাবে রূপায়িত হতে পারে হেমচন্দ্রের স্বদেশপ্রেমকেন্দ্রিক বিশিষ্ট কবিতাগ্ডলি তাই খণ্ড খণ্ড গীতিকবিতায় পরিবেশিত | রঙ্গলালের দেশপ্রেম যদিও গীতিকবিতা অপেক্ষা শীতিকাব্যেই রূপলাভ করেছিল তবুও দেশাত্মবৌধের গভীরতর উপলব্ধির মুহূর্তগুলিকে কাব্যবিচ্ছিন্ন গীতিকবিতা। রূপে অনায়াসেই আবিষ্ষার কর! সম্ভব | সুতরাং ব্যাপারে হেমচন্দ্রের পক্ষে নতুন কিছু আবিষ্কারের পথ খোলা নেই খণ্ড গীতিকবিতার মধ্যেই দেশ'প্রমোচ্ছ্বাসের সংহত-সংযত-বহুবিচিত্র প্রকাশ মধুস্দনও অন্তরের নিবিড়তর উপলব্ধির আনন্দকে প্রকাশের জঙ্ঠ সনেটের আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন ।-_হেমচন্্ অবশ্য সনেট রচনা করেননি--সনেট রচন। হেমচন্দ্রকে কেন আকুষ্ট করেনি তা আলোচনাঁসাপেক্ষ বাংলা সনেটের সাফল্যের সংবাদ ত্র দৃষ্টি বহির্ভূত থাকতে 'পাঁরে কিন্ত ইংরাজী শিক্ষায় শিক্ষিত হেমচন্দ্র সনেট সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন একথা সত্য হতে পারে না। বস্ততঃ কাখ্যের আর্গিকচর্ঠার কোন সচেতন চেষ্ট1 হেমচন্দ্রের কাব্যে অনুপস্থিত, ছন্দ সংক্রান্ত কিছু কৌতৃহল ছাড়া হ্মচন্দত্রের কাব্যে অঙ্গচর্চার অন্য কোন নতুন পরিচয় পাওয়া যায় না। সুতরাং স্বদেশপ্রেমধারায় হেমচন্দ্র গীতিকবিতাঁকেই অবলম্বন করেছিলেন

হেম্চন্দ্রের “বীরবাহু কাব্যে” স্বদেশচিন্তার উত্কষ্ট প্রকাশ হয়েছে বলে মনে করা যায়,_-কারণ শুধু স্বদেশোদ্ধারের চিন্তাই কাব্যটির রচনা? উৎস ধরণের কাব্যের পূর্বপথিকুৎ রঙ্গলাল, একাধিক কাব্যে একই উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেছেন “বীরবাহ কাব্য' হেমচন্দ্রের প্রথমযুগের রচনা ; কাঁব্য বিচারের নান! পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীর অভিজ্ঞানপত্র লাভে অসমর্থ হলেও কাব্য রচনার উদ্দেশ্যের মহত্বই স্বদেশপ্রেমিকরূপে কবি হ্মচন্দ্রকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে

স্বদেশপ্রেমিক কবিরূপে হেমচন্দ্ের প্রথম শ্রেষ্ঠ পরিচয় হলেও মহাকাব্যের কবি হেমচন্দ্রকে নিয়ে বাংলাসাহিত্যে সমালোচনার ক্ষেত্রে বিতর্কের ঝড় বয়ে গছে। হেমচন্দ্রের প্রতিভার অমর অবদান হিসেবে গণ্য করে, মহাকবির আসনে হেমচন্দ্রকে প্রতিষ্ঠা করে, এক যুগের সমালোচকেরা উনবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ লেখকের আসনে 'হেমচন্দ্রকে স্থাপন করে মাল্যভূষিত করেছিলেন 'বুত্রসংহার” যে হেমচন্দ্রের সর্বাপেক্ষা বিতকিত রচনা সন্দেহ নেই আলোচ্য কাব্যটির সঙ্গে হেমচন্দ্রের মহাকাব্যিক প্রতিষ্ঠা জড়িত থাকলেও কাব্যের স্বদেশপ্রেমাত্বক উদ্দেশ্যের অন্বেষণ করাই আমাদের উদ্দেশ্য স্বদেশপ্রেমিক হেমচন্দ্রের স্বদেশচিত্তনের কিছু আভাষ যদি সেই 'যহাকাব্যে থাকে শুধু সেটুকুই এখানে আলোচিত হবে। হেমচন্দ্রের মহাকাব্য সে

কাব্য ২৬৯

যুগের বিশ্বময় উৎপাঁদন করেছিল কিন্তু ফেনায়িত উচ্ছাসের পলিমাটিতে হেমচন্দ্রে পুনধিচারে দেখা গেছে বহু আলোচনা, বনু তর্কবিতর্ক সত্য আবিষ্কারের প্রতিবন্ধকতা করে না। তাই এএফুগের মনত্বী আলোচক ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় হেমচন্দ্র সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন১--

“হেমচন্দ্রকে নানা সমালোচক নানাভাবে দেখিয়াছেন দেখাইয়াছেন তিনি তাষা ছন্দে উচচশ্রেণীর শিল্পী ছিলেন না, তাহার কাব্যের কোঁনও অর্তনিহিত স্বাভাবিক প্রেরণা ছিল না, বিলাতী কাব্যপাঁঠে ধাহারা অভ্যন্ত, তিনি বৈদেশিক কাব্য-সাহিত্য হইতে মালমশলা সংগ্রহ করিয়া পপ্রধানতঃ তাহাদেরই চিত্তবিনোদন করিয়াছেন, তিনি স্থলভ ভাবুকতায় গা ভাসাইয়া চলিতেন, ইত্যাদি প্রত্যেক উক্তিই কোন না কোন দিক দিয়া তাহার সম্বন্ধে প্রযোজ্য হইলেও সকলেই একবাক্যে স্বীকার করিয়াছেন যে, হেমচন্দ্র তাহার কাব্যে কবিতায় বাংলার জাতীয়তাবোৌধ উদ্ধ,দ্ধ করিয়াছিলেন ।৮২৭

হেমচন্দ্রের মহাকাব্য “বৃত্রসংহারেও' জাঁতীয়তাঁবোঁধের প্রকাশ আছে -_বস্ততঃ দেশচেতনার ফন্তধারা হেমচন্দ্রের অন্তর্জগতে এমন ভাবে প্রবাহিত হয়েছিল যে এখানে দেশচিন্তা প্রধানতম অবলম্বন না হয়ে পারেনি হেমচন্দ্রের অন্যান্য স্বদেশ- প্রেমমূলক কাব্যে পূর্বহ্ুরীদের প্রভাব যেভাবে দেখানো হয়েছে,_-বৃত্রসংহারে'র মধ্যেও তা অপ্রচুর নয় বরং অফুরত্ত বলা যেতে পারে মধুহ্দনের “মেঘনাদবধ কাব্যে'র সংস্কার সাধনের উদ্দেশ্যেই 'বৃত্রসংহারের” পরিকল্পনা, সুতরাং “মেঘনাদবধের” দেশপ্রেমাত্বক আদশটুকুও কাব্যের পরিকল্পনাকে প্রভাবিত না করে পারেনি ছুটি বিরোধী শক্তির দ্বন্দ্ব যে ভাবে “মেঘনাদবধ কাব্যে” প্রতিবিশ্িত-_“বৃত্রসংহারের” আখ্যানভাগেও সেই একই বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে।

হেমচন্দ্রের দেশপ্রেমমূলক কাব্য কবিতার বিষয়বস্ত, আঙ্গিক, কল্পনায় পূর্ব- শরীর প্রভাব আছে সত্য কিন্তু প্রভাবকে অতিক্রমণের সামর্থ্য না থাঁকলে হেমচন্দ্রের মূল্যায়ন বোধ করি অর্থহীন হোতি। বাংলাসাহিত্যে দেশপ্রেমাদর্শ হেমচন্দ্রের যুগে সর্বজনবন্দিত আলোচিত কিন্তু হেমচন্দ্রের কাব্যে তারই অকুষ্ঠিত প্রকাশ জনগণকে মুগ্ধ করেছিল পূর্বস্বরীদের অন্ুগমন করে এবং একই উদ্দেশ্য নিয়েই তাঁর পথযাত্রা শুরু হলেও, পর্যটন ক্ষেত্রে তিনিই একমাত্র কবি--কাব্যের আনি থেকে অন্ত- পর্যন্ত যিনি দেশের কথা একভাবে সমগ্র সষ্টির মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হলে অবশ্ট এর অন্থ ব্যাখ্যা হোত-_কিস্তু কবি বলেই হেমচন্দ্রের দেশানুভৃতি-

২৭, ব্রজেন্ত্রনাথ বন্দোপাধ্যায়--সাহিত্য সাধক চরিতমাল1। তৃতীয় খণ্ড। হেমচন্ত্র গু বাংল? সাহিত্য

২৭০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

সর্ব আদর্শ তাঁকে সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে কবিপ্রাণতার সপ্ে স্বাদেশিকতার যুগ্ম সম্মিলনে হেমচন্দ্রের কাঁব্য নিভূলিভাবে সে যুগের প্রাণস্পন্দনের ইতিহাস, উত্তেজনা বিষাদের প্রামান্ত দলিল। সব দেশেই যেমন হয়েছে, দেশপ্রেমিকতার মাটিতেই স্বাধীনচেতনার ভিত্তিস্থাপন হয়েছে, ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসেও তার ব্যতিক্রম হয়নি উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে স্বদ্দেশচেতনার প্রথম অস্পষ্ট আভাসহ যখন দ্বিতীয়ার্ধে পুরোপুরি উপলব্ধিতে পরিণত হয়েছে-_হেমচন্দ্রের মত "জাতীয় কবিরাই” সেই উপলব্ধির সত্য দ্বারে দ্বারে পৌছে দিয়েছেন নানাভাবেই দেশসেবার পুণ্যঅর্জন সম্ভব, কিন্তু আন্তর উপলব্ধির বেদনায়িত বাণীকে জাগরণউন্ুখ জর্টতির সামনে তুলে ধরার কৃতিত্বে কবিরাই সবদেশে সবযুগে চরমতম শক্তির পরিচয় দিয়ে গেছেন। রাজনীতিক বা সমাজ- সংস্কারক কবির বাণী সংগ্রহ করেই দেশের মানুষকে দেশপ্রেমের দীক্ষা দিয়েছেন হেমচন্দ্রের অসামান্য জনপ্রিয়তা সে কথাই প্রমাণ করেছে নতুন করে। সাহিত্যের ক্ষেত্রে আজ পর্যন্ত যত মূলাখাঁন সৃষ্টির জন্ম হয়েছে--তার যূলে পরিবেশের দাম বড়ো না কবিপ্রতিভার শক্তিই যথেষ্ট তা নিয়ে তর্ক চলতে পাঁরে--তবু একথা সত্য যে কালিদাস, সেক্সপীয়র রবীন্দ্রনাথ, মধুস্দন স্ৃষ্ঠির চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী হয়েও সাময়িকতার সাহায্য না নিয়ে পারেন নি, পরিবেশের প্রভাব গ্রহণ করেও বিশ্বজনীনতার বিচারে তারা যুগোভীর্ণ। কিন্তু দেশপ্রেমিক বা রাজনৈতিক আন্দোলনের কবিরা সাময়িকের জয়ঢাক বাজাতে এতই মগ্ন হয়ে থাকেন যে সেই বক্তব্যের গৃঢ়ার্থ দেশ কালকে অতিক্রম করে যুগাতীত সত্যকে স্পর্শ করতে পারে না। হেমচন্দ্রের কাব্যের মর্ষোদ্ধার কালে আমাদের শুধুমীত্র সেই যুগেই ফিরে যেতে হবে। উনবিংশ শতাব্দীর “জীতীয় কবি” হওয়ার সৌভাগ্য হেমচন্দ্রের ঘটেছিল শুধু যুগসত্য চারের দায়িত্ব নিখুঁতভাবে পালনের ক্ষমতায় তিনি অদ্দিতীয় বলেই। সেজন্য হেমচন্দ্র প্রসঙ্গে বার বার আমাদের উনবিংশ শতাব্দীর জাতীয় জাতীয় জাগরণের প্রসপ্গগুলির স্মরণ কঃতে হবে তীর এক একটি কবিতার 'জন্ম এক একটি ঘটনীকে কেন্দ্র করে যা সেযুগে ঘটা স্বাভীবিক হয়েছিলো ইলবার্ট বিল সিবিল সাধিন সভা, ব্যাক এাঞ্ট নালবিদ্রোহের পরোক্ষ প্রভাব হেমচন্দ্রের যাবতীয় দেশপ্রেমমূলক রচনার মূলে তাছাড়া সে যুগের বাংলায় যত অভ্যু্খান ঘটেছে হেমচন্দ্রের কাঁব্য-কবিতার সর্বত্র সে বিষয়ের উল্লেখে পূর্ণ এক একটি ঘটনায় কবি দেশের জনগণের অসহায় অবস্থার চিত্রট অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে লক্ষ্য করেছেন, অস্তদিকে বিদ্রোহী হওয়ার মতো! মনোবলের সাহাধ্য না পেয়ে কবির বক্তব্য হয়েছে আর্তনাদের মতো

কাব্য ২৭১

১৮৭৬ সালের মধ্যেই এমন কতকগুলো আইনগত ব্যাপার ঘটে গেলো যার ফলে তারতবাসী নতুন করে উপলব্ধি করল তারা৷ ইংরেজের হাতের পুতুল মাত্র দীর্ঘ- দিনের অধীনতার ইতিহাঁসে অন্তায়ের বিরোধিতার ইতন্ততঃ বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো তখনও খবর হয়ে ওঠে নি-কিস্তু উনবিংশ শতাব্দীর বাঙ্গালী তার পূর্বহ্ুরীদের তুলনায় অনেক বেশী দুঃসাহসী হতে পেরেছিলো বলে ভারতবর্ষের বাইরে যে বিপুল বিশ্বের জীবনযাত্রা চলছে তার কিছু ইতিহাস তীর ইতিমধ্যেই জেনে ফেলে- ছিলেন |. ইংরাজী সাহিত্যের সহায়তায় স্বদেশপ্রেমের স্্বিখ্যাত পংস্তিগুলির অর্থ অন্ুধাঁবনের ক্ষমতা শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যে দেখা দিয়েছিলো-_-আ'র প্রতিমুহূর্তে ইতিহাসের নির্মম সত্যের আলোকে তাঁরা ভবিষ্যতের অবশ্যন্তাবী পরিণতি সম্বন্ধে প্রায় নিশ্চিন্ত হতে পেরেছিলেন | ইংরেজ কবির বন্দনা গান তাদের উৎসাহিত করেছে,

ভ্রে]01৮, 51015) £1015,

00 1009০ ডা150 0৪৮০ 252,015 53166120 ৪.0 2012 |

০৬1: 1091706 11) 50015

৬৬9১5 £:58621 0109 0020 10101) 5০ 51791] 18৮2 02, (02500001015 178৮2 00150061:50 0917 0095 21006,

৬৬ 1052 1:2৬21769, 01106. 200. 01106 0025 102৬2 ০0৮০:01010, [২10০ 5০, 0১016 ৮106011003১ ০৮2 5০ ০৬এ8,২৮

১৮৭৭ সালের ২৪শে মার্চ “ভারতসভার* সম্পাদক আননমেোহন বস্থ আয়োজিত সভার উদ্দেশ্য ছিল সিবিল সাভিস পরীক্ষায় যে অন্যায় নীতি [ ১৯ বৎসরেয় মধ্যে পরীক্ষা দিতে হবে] আরোপিত হয়েছিল তাঁর প্রতিবাদ করা। হেমচন্দ্র মাত্র একবারই প্রকাশ্য সভায় লিখিত বক্তৃতা পাঠ করেন কিন্তু বক্কৃতাংশ পাঠ করে আমরা হেমচন্দ্রের মধ্যে রাজনৈতিক দূরদশিতার সঙ্গে নিপুণ বক্তার গুণ দেখে বিস্মিত ন] হয়ে পারি না। হেমচন্দ্রের বক্তৃতার প্রথমে ভারতীয়দের অনৈক্য দলাদলির প্রতি কটাক্ষপাত রয়েছে ; শেষাংশে তিনি বলেছেন,

“50 01009115106 0 52852010200 ৬৬ ০5৮০]0 0010012 51280, 15016 15801) 01052 98110 9010615 01 05100155200. 15100737702, 200. 03556

15810039 052117555 11] 00616 200. 20151) 2৮85 25 10061650136 5120ঘ 01061

২৮, 6, 8, 9061165-47 0965 ৬0605 0০00০১৮1819, 961915 075 91057719105 750 05০০৮6750 70171100170 (59001151750 082০), 1075 097001505 59961651 ড/ ০:05 06 0, 8, 9172115% 511500055 75001079500, 01010) 2904

২২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

096 1859 0: 016 509, 4১00 61001510061 16 15 205 0006১ 225 061165, 09, 1817 50191560012 61586 00212 00165010015 আ111 00000 আ100 016 165210,২৯

হেমচন্দ্রজীবনীকার খুব সঘত্বে হেমচন্দ্রের যুল্যায়ন করেছেন -কিস্তু অন্তান্ত সমালোচকদের মত তিনিও মধুস্থদনের শক্তির দীনতা৷ প্রমাণে এত বেশী চিন্তা ব্যয় করেছেন যে মধুক্দনের নিন্দা হেমচন্দ্রের প্রশংসা যেকোন আলোচনার মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে হেমচন্দ্রের স্বদেশপ্রেমের বৈশিষ্ট্য আবিফারেও মনোভাব দেখা যায়।

“কিস্ত আমাদের মনে হয়, কেবলমীত্র এক হিসাবে হেমচন্দ্রকে মাইকেলের নিকট খণী বলিতে পাঁরা যাঁয়। যেমন মাইকেলের বিলাসিতা আড়ম্বরপ্রিয়তা, উচ্ছৃঙ্খলতা স্বেচ্ছাচার, কদাচার অসংযতেন্দট্রিয়তা, জাতীয় আদর্শে অবজ্ঞা! বিজাতীয় আদর্শের অন্ধ অন্থকরণ অনেকের চক্ষু ফুটাইয়াছিল এবং ত্তাহার জীবনের শোঁচনীয় পরিণাম অনেককে জীবন গঠনে সহায়তা করিয়াছিল, সেইরূপ হয়ত মাইকেলের কাব্যের অনাবশ্যক শব্দাড়ম্বর, অসংযত ভাব ভাষা, স্থানে স্থানে কদর্য রুচির পরিচয়, জাতীয়তার অভাব এবং পাশ্চাত্য কবিগণের অন্ধ অনুকরণ, হেমচন্দ্রকে সাবধান সতর্ক করিয়াছিল 1৮৩০

এই সমালোচন। থেকে মাইকেলের ব্যক্তি চরিত্রের প্রতি দোষারোপ সাহিত্যের প্রতি বিতৃষ্ণা প্রকাশ যে কত নির্মম হতে পারে তারই পরিচয় পাওয়া যায় মধুস্দনের জাতীয়তাবোধের অভাব দেখে হেমচন্দ্র যদি জাতীয়তাবোধ অর্জনের সুযোগ পেয়ে থাকেন তবে তাতে মধুস্থদনেরই পরোক্ষ প্রভাখ স্থচিত হয়। হেমচন্দ্রের জাতীয়তাকে এভাবে অপব্যাখ্য। করায় হেমচন্দ্র সম্পর্কে সাধারণের ধারণ ক্রমাগতই অস্বচ্ছ হয়ে উঠেছে। হেমচন্দ্রের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের নামে এ' রাই হেমচন্দ্রকে অশ্রদ্ধেয় করেছেন এবং মধুস্থদনের প্রতিও অধথা কটংক্তি করেছেন বস্ততঃ মধুস্থদনের স্বদেশপ্রেমের স্থগভীর মহিমা উপলব্ধির ক্ষেত্রে হ্মচন্ত্র নিজে যেমন ব্যর্থ হয়েছেন-_সে যুগীয় সমালোচক সম্প্রদায়ও স্ছবিচারের আদর্শ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছেন প্রসঙ্গে বলে রাখ! ভালো! যে হেমচন্দ্র 1521 7. 4৯.-র অভিমান নিয়ে “মেঘনাদবধ কাব্যের” ভূমিকা রচনায় কাব্যের অন্ান্ত সব গুণাগুণ নিয়ে সামর্থ্যসম্তব সমালোচন। করেছেন বটে,কিস্তু স্বদেশপ্রেমী হয়েও “মেঘনীদবধ” কাব্যের স্বাধীনতার মহিমা, জাতীয়তার মহৎ আদর্শের প্রতিফলন বিন্দুমাত্র লক্ষ্য করেননি কেন সেটাই পরমাশ্চর্য। দেশের পরাধীনতার চিন্তা ধাকে ব্যাকুল করেছে-_মেঘনাদের দেশাত্মবোঁধ তাকে বিস্মিত

২৯, হেমচন্ত্র ২য় থণ্ড। মম্মথনাথ ঘোব থেকে উদ্ধংত। ১৩২৭, পৃঃ ৭৫। ৩০, এ্ঁ। পৃঃ ২১০।

কাব্য ২৭৩

করে নি,_ রাবণের বীরত্বব্যপ্রক দেশাত্মবোধক উৎসাহবাণীতে তিনি কেন ভাবী যুগের মূলমন্তত আবিষ্কার করতে পারেননি - ভাবতে গেলে বিম্ময় লাগে। জন্মভূমি- রক্ষা যে জীবনরক্ষার চেয়েও বেশী মূল্যবান বাদীর মধ্যে কি আত্মোৎসর্জনের ভীষণ কল্লোল গর্জন করে উঠছে না?

“রিপুদলবলে দিয়া সময়ে

জন্মভূমি রক্ষাহেতু কে ডরে মরিতে ?

যে ডরে, ভীরু সে যৃঢ়, শত ধিক তারে ।'

হেমচন্দ্রেরে আলোচনায় “মেঘনাদবধ কাব্যের” এই যুগোপযোগী আবেদন

উপেক্ষিত হয়েছে বলেই যে “মেঘনাঁদবধ কাব্যের সমালোচন। অসম্পূর্ণ থেকে গেছে তাই নয়,-সবচেয়ে বড়ো সতা--যে সত্যের সাধনায় হেমচন্দ্রের জীবন উৎসগিত-_ সেই সত্যই তিনি চিনে নিতে পারেননি মধুস্থদনের কাব্যবিচারে হেমচন্দ্রের এই ভ্রান্তি কিন্ত ক্ষমাহীন শুধু তাই নয়,__মধুস্থদনের মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত হেমচন্দ্র যে প্রশস্তিমূলক বিশাল কবিতা রচনা করেছেন তাতেও কবির আন্তরিক দেশবন্দন। বা দেশভাবনার স্বীকৃতি নেই এতে অবশ্য হেমচন্দ্র যে অপরাধ করেছেন তাতে স্পষ্টতঃ এসত্য প্রমাণিত হয়েছে যে, অন্তান্ত সমালোচকের চোখে মধুহুদনের আন্তরসংবাদ যেমন অ-্দৃষ্ট থেকে গেছে _স্বদেশপ্রেমী মধুক্দনকে যেমন তারা হাটবুটের মধ্যে খুঁজে পাঁননি--সেই মত হেমচন্দ্রও মধুস্দনের কাব্যধারার গহন গভীরে সত্যসন্ধানের বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেননি | হেমচন্দ্রের মধুক্ছদন বিচারের অপরিসীমযূল্য স্বীকার করা যেত কিন্ত স্বয়ং হেমচন্দ্রই তাতে বাদ সেধেছেন আবার “বত্রসংহার” রচনায় হেমচন্দ্র যেখানে মধুক্ষদনের আদর্শ অনুসরণের চেষ্টা করেছেন সেখানেই তিনি নিতান্ত ব্যর্থ হয়েছেন,_-যেখা'নে তার মৌলিকত্ব সেখানেই সিদ্ধিলাভ ঘটেছে একই সময়ে, একই যুগচ্ছায়ায় জন্মগ্রহণ করেও চিন্তীভাবশায়,__বক্তব্যপ্রকাশের মধ্যে আকাশজমিন পার্থক্য সব যুগেই সম্ভব উনবিংশ শতাব্দীতে মধুক্ষদন হেমচগ্ডের স্বদেশপ্রেমের কাব্যান্ুশীলনকালে একমুহর্তেই তা আবিষ্কার করা যায়। মধুক্দন যেমন সম- সাময়িকতাকে অগ্রানহ্হ করেও তার দেশপ্রেমের কথা, জন্মভূমিপ্রীতির কথা৷ অত্যন্ত নিজেরাকরে বলেছেন এবং সেজন্য কোন স্বীকৃতি পাননি, হেমচন্দ্র ঠিক তীর বিপরীত সে যুগের তুচ্ছতম সংবাদ কাব্যে পরিবেশন করে, স্বদেশপ্রেমের কথা সাড়ম্বরে, বিচিত্রবর্ণে ব্যক্ত করে হেমচন্দ্র পেয়েছেন জনগণের অকু্ সমর্থন ঈশ্বরগুণ্ের মূল্যা়ন করেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র ;--হেমচন্দ্রকে বঙ্কিমচন্দ্রের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় নি, সৌভাগ্যের জয়মাল্য খুব সহজেই হেমচন্দ্রকে ভূষিত করেছিল এবং বস্কিমচন্দ্ সেই অভিনননের সঙ্গে মিলিয়েছিলেন ণ্মধুহদনের ভেরী নীরব হইয়াছে,

২৭৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

কিন্ত হেমচন্দ্রের বীণা অক্ষয় হউক : হেমচন্দ্র থাকিতে বঙ্গমাতার ক্রোড় স্থকবিশৃন্য বলিয়া আমরা কখন রোদন করিব না।” _-সাহিত্ দেশচিস্তার বিভিন্ন ধারা পূর্বেই আলোচিত হয়েছে হেমচন্দ্রের দেশভাবনায় নতুনত্বেরে অভাব আছে সত্য কিন্তু মৌলিকতার অভাব নেই। নঈশ্বরগুপ্তের ব্যঙ্গ কবিতাগুলি যেমন শুধু ব্যঙ্গের আধার নয়-_অশ্রসিক্ত অন্তরবেদনার বহিঃপ্রকাশমাত্র -হেমচন্দ্রের ব্যঙ্গ রঙ্গের কবিতার আদর্শ প্রায় ঈশ্বরগুপ্তান্সারী আখ্যানকাব্যে স্বদেশপ্রেম পরিবেশন রীতির জনক রঙ্গলালের কাছেও হেমচন্দ্রের খণ অল্প নয় হেমচন্দ্রের সমগ্র দেশপ্রেমমূলক কাব্যকে কয়েকটি ধারায় বিভক্ত কর চলে

১। আখ্যান কাব্যে বণিত স্বদেশপ্রেম - 'বীরবাহ" |

২। মহাঁকাব্যে বণিত স্বজাতিপ্রীতি বিজাতি বিদ্বেষ, -“বৃত্রসংহার”

৩। বিশুদ্ধ স্বদেশপ্রেমভাবন। সম্বলিত গীতিকবিতা--ভারতবিলাপ, ভারতভিক্ষা, ভারতে কালের ভেরী, কুহুম্বর, ভারতসঙ্গীত, তুষাঁনল, গঙ্গা, ইউরোপ আসিয়া ইত্যাদি

৪। অতীত যুগের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন-_দেবনিদ্রা, পদ্মের মৃণাল, ভারতকামিনী, কালচক্র, ভারত সংগীত, বিন্ধ্যগিরি |

৫| সামাজিক ঘটন৷ অবলম্বনে স্বদেশপ্রেমমূলক ব্যঙ্গ রচনা-_রেলগাড়ী, আজি কি আনন্দবাঁসর !, হায় কি হলো ? রীপন উৎসব, ভারতের নিদ্রাভঙ্গ, ভারতেশ্বরীর জুবিলী উৎসব উপলক্ষ্যে, মন্ত্রসাধন, বক্গরমণীর উপাধি প্রাপ্তিতে, সাবাস হুজুক আজব সহরে, রাখিবন্ধন, বাঙ্গালীর মেয়ে, খিদিরপুর দঈীতভাঙ্গ। কাব্য

[১] আখ্যান কাব্যে বণিত স্বদেশপ্রেমের প্রথম ক্ষত্রপাঁত হেমচন্দ্রের 'বীরবাহু কাব্যে হেমচন্দ্র গ্রস্থাবলীর ভূমিকায় সম্পাদক সজনীকান্ত দস বলেছেন,__ “যে কারণে হেমচন্দ্রের খ্যাতি, সেই দেশপ্রেম ইহাতেই সর্বপ্রথম উদ্দ্ধ হইয়াছে। অবশ্য কোনও ইতিবৃত্বমূলক কাহিনীকে অবলম্বন করিয়া নহে, সম্পূর্ণ কাল্পনিক অবাস্তব একটি গল্পকে আশ্রয় করিয়া, ইহাতে বিষয়বস্ত ভাষার দিক দিয় তাহার পরীক্ষার আরস্ত মাত্র হইয়ণছে - পরিণতি বা সঙ্গতির স্ৃষম। নাই 1৮৩১ “«বীরবাহু কাব্যের” দীর্ঘ সমালোচনার অবতারণা হেমচন্দ্রের স্বদেশপ্রেমের প্রাথমিক রূপের বিশদ আলোচন। মাত্র মুক্তিসংগ্রামের আহ্বান দেশবাসীর কর্ণে পৌছে দেবার অসার্থক ছূর্বলতম প্রচেষ্টা হিসাবেই “কীরবাহু কাব্যের” গুরুত্ব *চিন্তাতরঙ্গিনীতে” ষে চিন্তা ব্যক্তিগত শোক ছুঃখের পটভূমিকাঁয় ফেনায়িত দীর্ঘশ্বাস হয়েছে,--দ্বিতীয়

৩১, হেমচন্ত্র গ্রস্থাবলী ১ম থণ্ড। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, সজনীকাস্ত দাস সম্পাদিত বীরধান্ু ক্ষাব্যের তুমিক1 ১৩৬১

কাব্য ২৭৫

কাব্যেই ব্যক্তিচিন্তা দেশচিন্তা কবির অন্তরে একটি ঘনীভূত উপলব্ধি হতে পেরেছে। বিশুদ্ধ স্বদেশপ্রাণতারই আদর্শে হেমচন্ত্র যে কাহিনী সৃষ্টি করেছেন, তাতে কোন বক্তব্যই নতুন নয়, অচিত্তিত নয়,_কিন্তু আদর্শ স্থষ্টির প্রেরণাটিই অভিনব | হেমচন্ত্র ইতিহাসের নায়ক অন্লন্ধানে ব্যস্ত হননি, তিনি কল্পনায় ভবিষ্যতের বীর চরিত্র সৃষ্টি করার চেষ্টা! করেছেন মাত্র রর্খলালের আখ্যান কাব্যের নায়ক ইতিহাসের পথ বেয়ে চলেছে,--হেমচন্দ্র এই অনুসরণের মধ্যে মৌলিকত্ব প্রকাশের ক্ষেত্র খুজে পাননি) অথচ অনৈতিহাসিক একাট বীরচরিত্র হৃজনের উপযুক্ত ক্ষমতার অভাবে বীরবাহু চরিজক্রের আগাগোড়াই নান অসঙ্গতিময় | বারবাহু হেমচন্দ্রের স্বপ্ন নায়ক জ্বলন্ত দেশপ্রেমাদশ গ্রাত্মত্যাগেস্ছ সংগ্রামী দেশনায়কের কল্পনাই চরিত্রস্থষ্টির মূলে বিকশিত হয়েছে স্বদেশরক্ষার মহান ত্রত ভিন্ন জীবনের অন্তান্ত দাবীকে বীরবাহ অগ্রাহা করেছে পত্বীপ্রেম বা রাজ্যলাভের বধাসনাঁকে দমন করে বীরবাহু শক্র বিধর্মা শাসকের কাছ থেকে বহুমূল্য স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার ছুঃসাহসিক প্রচেষ্টায় প্রাথ-মন সমর্পণ করেছে যে কোন চরিত্রের মধ্যেই এলব গুণের প্রকাশ পাঠকচিত্তের সহানুভূতি দাবীর পক্ষে অত্যন্ত অনুকুল আবহাওয়া হৃষ্টি করে। বিশেষতঃ কঙ্গিত চরিত্রের আদর্শ আত্মদান যাদ যুগোপযোগী চাহদার সঙ্গে হুবহু মিলে যায়--তাহলে কবি তার স্ৃপির সাফল্য সম্পকে প্রায় নিশ্চিত হতে পারেন হেমচন্দ্রের বীরবাহুর পরিকল্পনা সেদিক থেকে অত্যন্ত অথময়--কবি পরাধীন ভারতবাপীর সামনে “স্বদেশ রক্ষার্থ” “দৃঢ়প্রতিজ্ঞ” বীরচরিত্রের দৃষ্টান্ত তুলে বরেছেন_এবং কবির মনোগত 'অভিলাষের ব্যাখ্যা করলে দেখা যাবে, দেশপ্রেমীদর্শই তাঁকে প্রেরণা দান করেছে। রঙ্গলালের উত্তর সাধকরূপে হেমচন্দ্রের চগ্তাধারাঁয় এই সত্যই প্রকাশিত হয়েছিল যে, দেশপ্রেম কবিকে যদি অন্ুপ্রাণিত করে থাকে তবে তাকে এমন কাব্য লিখতে হবে মার মূলে দেশবাসীকে উৎসাহিত করার মত কিছু বক্তব্য থাকবে হেমচন্দ্ রঙ্গলালের পুর্বন্থরীত্ব মেনে নিয়েও প্রমাণ করলেন যে ইতিহাঁসের অনুগামী ন। হয়েও স্বাধীন কল্পনা! থেকেই বার চরিত্র সৃষ্টি সম্ভব

'বীরবাহু কাব্যে একদিকে হ্মচন্দ্রের স্বকীয় কল্পনা অন্যদিকে দেশপ্রেমাদর্শের প্রথমতম প্রকাশ দেখি সুতরাং আদর্শ বিচারে “বীরবাঞ্ কাব্যের” গুরুত্ব স্বীকার করেই কল্পনাশক্তির দীনতাকে মেনে নিতে হবে। আদর্শের জয়যাত্রা পথে “বীরবাঞ্ছ কাব্য» অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য, কিন্ত সৃষ্টি হিসাবে “বীরবাহু কাব্যের” অসংখ্য ত্রুটি বিচ্যুতি হেমচন্ত্রের প্রতিভার দীনতাকে হচিত করে দেশপ্রেমিক অষ্টা হিলেবে €হুমচন্দ্রের কাব্যালোচনা করলেও এই ছুটি তথ্য ছাড়া “বীরবাহ্ছ কাব্যে আঁর কিছুই মেলে না। তবে কবির প্রথম বয়সের রচনার দৈন্তই কাব্যবিচারে মুখ্য স্থান পেলে

২৭৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

আগামী ্ষ্টির প্রতি পূর্ণমর্যাদা অর্পণ করা সম্ভব হয় না) সুতরাং দেশপ্রেমেপ্ন কবি হেমচন্দ্রের প্রথম যুগের নিক্ষলতম রচনাটির মধ্যেও কোন বৈশিষ্ট্যের আভাস পাওয়া যায় কি না সেটাই বিচার্য।

“্বীরবাহু কাব্যের” প্রারস্তে যোগিনী চরিত্রটি লক্ষ্যণীয় ভাগ্যদোষে তাড়িত অশ্বরমহিষী আজ দেশে দেশে যোগিনী বেশে ভ্রমণ করছেন--যবন অত্যাচারের ফলভাগিনী বলেই দেশবাসীর কাছে [তিনি তার অণ্তরের খেদ আকাজ্কার কথা ব্যক্ত করেন। নিরুৎসাহকে উৎসাহিত করাই তার ব্রত। দেশপ্রেমের অগ্নিশিখা তার অন্তরে নিরন্তর প্রজ্জ্বলিত,__সেই পৃতশিখায় ভারতের ভাবী তরুণদের দীক্ষা দেবার সংকল্প নিয়েই তার পথপরিক্রমা | বীরবাহছু যখন কনোজের সিংহাসনের ভাবী উত্তরাধিকারী রূপে বিলাস-ব্যসনে কাল যাপনে রত তখন যোগিনীর ভৎ'সনাই তার স্বপ্ত দেশপ্রেম জাগ্রত করেছে সুতরাং কনোজ রাজপুত্রকে স্বাধীনতারযূল্য সম্পর্কে সচেতন করে যোগিনী কাব্যের স্ত্রপাত করেছে বটে কিন্তু সমগ্র কাব্যের সঙ্গে চরিত্রের কোন সংযোগ না থাকায় চরিত্রটি উদ্ভাবনার পরমুহূর্তেই অদৃশ্য হয়েছে। কাব্যের যূল উদ্দে্ সম্বন্ধে পাঠকের ধারণ! সৃষ্টির জন্য এই কবি এই দুর্বল কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন, কাব্যের সৌন্দর্যস্ষ্টির চেষ্টামাত্র করেননি ধরণের দুর্বল গ্রন্থনা পাঠককে পীড়িত করে শুধু যেন দেশপ্রেমের জন্ত প্রস্তুত হবার আহ্বান জানিয়েছেন কবি, স্থির সাফল্যের দিকে বিন্দুমাত্র দুকপাত করেন নি অথবা ত্বীর সে সাধ্য ছিল না।

“বীরবাহ কাব্যে” যোগিনীর খেদোক্কি ষেন কবির অন্তরেরই এক বেদনাধন প্রকাঁশ,-_-

পাঁপিষ্ঠ যবন নাশ,

করিতে অন্তরে আশ,

পাওুপুত্র নাম ধরি কতই যে কাদিন্ু।

সবহৈল অকারণ,

না! আইল কোন জন,

ডুবেছে ভারত-ভাগ্য তবে সত্য 'জানিনু তখন বুঝিন্নু সার, ভূ-ভারতে কেহ আর,

ক্ষত্রিকুল মহাধর্ম নাহি কিছু লভেছে। জানিলাম বীর বংশ কুরুক্ষেত্রে হয়ে ধ্বংস

বীর নাম জন্মশোধ ভূমণগ্লে ঘুচেছে

কাব্য ২৭৭

আজি বুঝিলাম মর্ম, কেন ক্ষত্রিয়ের ধর্ম, ভারত ভিতরে আর দরশন হয় না। যোগিনী ভারতের স্বাধীনতা বিলুপ্তির পূর্ণ বিবরণ দিয়েছে এবং পরাধীনতার গ্লানি অতীত গৌরবের স্মৃতি সে যেন আত্মবিস্বত ভাবে ব্যক্ত করে চলেছে মোঘল শাঁসনেও অত্যাচার-উৎপীড়নের নান। পরীক্ষা বারংবার আমাদের শক্তির দীনতাকেই ত্বরণ করিয়ে দিয়েছে তারই মাঁঝখাঁনে বলিষ্ঠ প্রতিবাদের যে ছু-একটি দৃষ্টান্ত রয়েছে__স্বাঁধীনতাঁকামী কবিদের সেটুকুই সন্বল। সেই গৌরবের কাহিনীকেই আশ্রয় করে পরাধীন ভাঁরতবাসী আঁশ। সাত্বনা লাভ করেছে, উৎসাহিত হয়েছে। রঙ্গলালের রাজস্থানগ্রীতির মূলেও একটিই কারণ হেমচন্দ্র যদিও ইতিহাস অবলম্বন করেননি কিন্তু ইতিহাসের দৃষ্টান্তই বীরবাহুকে স্বাধীনতাধর্ষে দীক্ষা দিয়েছিল, যে ভারতে বীরবুন্দ সমর কৌশল দেখিতে বিমানে দেব বসিত সকল সে ভারতে আমা হেন কাঁপুরুষদল আঙ্তি জনমিয় ধরা করে রসাতল বীরবাহুর উপলব্ধিই তীর সংগ্রাম আত্মদানের প্রেরণা বিলাঁস-ব্যসনের ঘোর কাটিয়ে এই আদর্শই তাঁর ভাকীজীবনের পথনির্টেশ করেছে। “জনম সফল তার ধন্ঠ বীর সেই। বিক্রমে বৈরীর মুণ্ড খণ্ড করে যেই ॥” এই বীরবাহুই হেমচন্দ্রের দেশপ্রেমীদর্শের প্রতীক জন্মভূমি স্বাধীনতার জন্ত জীবন আছৃতি দেবার প্রতিশ্রুতিই কবির ঈপ্ষিত। ব্যক্তিগত শোক বেদনার উর্ধেব এই জঙ্গীকাঁর দেশপ্রেমিককে অবিচল রাখবে,-- প্রতিজ্ঞা পালনে সে হবে সাধকের মত দৃঢ-বলিষ্ঠ। বাীরবাহু চরিত্রের পরিকল্পনার মূলে কবিচিত্তের এই স্পষ্ট ধারণাঁটি সে যুগের পটভূমিকাঁয় এক মূল্যবান শপথ আত্মদানের আদর্শে স্বদেশের জন্য সর্বস্ব পণ করে এগিয়ে যাবার কথাই বীরবাহু চরিত্রে ব্যক্ত হয়েছে তবে কাব্যটির পরিকল্পনার অসঙ্গতি অত্যন্ত প্রকট কীরবাহুর বীরত্ব অধিকাংশ স্থলে অর্থহীন আপ্ফালনের মতো যুদ্ধক্ষেত্রে বীরবাহুর পরাজয় ছিল অবধারিত-_কারণ মৌখিক আস্ফাঁলনে আর যাঁই হোঁক ন] কেন, যুদ্ধ জয় হয় না। আরও আশ্চর্য এই যে যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজিত আহত হওয়া! সত্বেও কবি তার মানসপুন্রটিকে আশ্চর্য ভাবে বাচিয়ে দিয়েছেন “বীরবাহু বক্ষদেশ বানে বিদ্ধ করে রে॥_শোনানোর পরও

২৭৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

দেখা গেল আহত টসনিককে নিরাপদ দূরত্বে এনেছে অশ্ব বীরবাহুর আদর্শ কার্যক্ষেত্রে তার প্রয়োগের ক্ষেত্রে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। এই বাঁকসর্বস্ব দেশ- প্রেমের কোন সার্থকপিদ্ধি কল্পনীতীত কবির যুদ্ধবর্ণনার অক্ষমতাঁও অবশ্য এজন্য দায়ী হতে পারে) কারণ সম্মুখসমরে অপরিসীম শোর্য প্রদর্শনের সুযোগ পেলে পরাজয়ের গ্লানিও কোন কোন সময়ে সহানুভূতিতে সিঞ্চিত অভিনন্দিত হয়ে থাকে কিন্তু বীরবাহুর বীরত্ব শ্রুত সত্য মাত্র-_কার্ষক্ষেত্রে তা ব্যর্থ তবে বীরবাহু পরাজয়ের মুহূর্তেও দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন | সমরক্ষেত্রে বিতাড়িত হয়েও প্রাচীন ভারতের বীরত্ব আত্মদানের আদর্শ স্মরণ করেছে বীরবাহ্ছ-_ ক্রন্দন করেছে মহাছুঃখে,_

এই কি কপাঁলে ছিল জগন্মান্য। ভূমি

আঙি হৈচ্থ দেশত্যাগী বন্দী রৈলে তুমি

পাঠকের সহানুভূতি লাভের জন্য এই আন্তরিক দেশপ্রাণতাই বোধ হয় যথেষ্ট

দেশত্যাগী পরাজিত হয়েও বীরবাহু পুনর্বার শপথ বাক্য উচ্চারণ করেছে,

যবনে করিয়া ছিন্ন তোমার মোচন

কতদিন মনে মনে করিয়াছি পণ

পুনশ্চ হিন্দুর রাজ্য স্বাপন করিব

পুনর্বার অলঙ্কারে তোমারে তুষিব

এসব অংশের বাম্তবমূল্য উপেক্ষিত হতে পারে কিন্তু ভাঁবযূল্য অপরিসীম

স্বাধীনতার আদর্শে উদ্দীপিত হয়েও কনোজ রাজপুত্রের পক্ষে একাকী ভারতসম্রাট যবনাধিপতিকে বিতাঁড়নের কল্পনাই অসম্ভব কিন্তু শক্তি সাহসের অভাবনীয় দুটতায় তা যে একান্তই অসম্ভব--একথা মনে করারও হেতু নেই তাহলে রাণ'প্রতাপ ব1 শিবাজীর প্রচেষ্টাকেও অসম্ভব বলতে হয়। মেবারের স্বাধীনতার জন্য আজীবন সংগ্রাম করে রাঁশীপ্রতাপ আমাদের বিস্ময় উৎপাদন করেছেন, একটি মানুষের দুর্জয় আত্মত্যাগের এক উজ্জ্বল উদাহরণ কিন্তু সমগ্র ভারতের পরাধীনতার পটস্ভূমিকায় সিদ্ধি যে কত ক্ষণস্থায়ী তাও প্রমাণিত হয়েছে সমগ্রভারতের রাজনৈতিক স্বাধীনতা যে একটি মানুষের [সে মানুষ যত শক্তিমান--যত বড় বীরই হোন না কেন, ] একক প্রচেষ্টায় কখনও সম্ভব হতে পারে না, রাণাপ্রতাপের নিঃসঙ্গ সংগ্রামেই সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতা ধার সমস্ত সত্তাকে বিদ্রোহী করে তুলেছে তিনিই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। রাণাপ্রতাঁপ মেবারকেই তীর পৃথিবী বলে ধরে নিয়েছিলেন,-শিবাঁঈগীর মহারাই তাঁর হুবিশাল পরিকল্পনার প্রথমে স্থান লাত করেছে। ন্ুতরাং ভারতবর্ষের সামগ্রিক স্বাধীনতার কথা চিন্তা কর সেযুগে,

কাব্য ২৭৯

থণ্বিচ্ছিন্ন ভারতবর্ষে প্রায় অসম্ভব হয়েছিল বিশীল ভারতে অসংখ্য খণ্ড রাঁজ্যের একক প্রচেষ্টা কখনও সম্মিলিত একত্রিত হয় নি - তাই স্বাধীনতার স্বপ্র মধ্যযুগের ভারতে কঘনও কখনও দেখ! দিয়েই বিলীন হয়েছে হেমচন্দ্রের যুগে ইংরাজী শিক্ষাদীক্ষার ফলেই দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপকতা ' দেখ! দিয়েছিল,--তাই অখণ্ড ভারতের স্বার্থকে সন্মিলিত ভাবে চিন্তা করার চেষ্টা যুগেই প্রথম দেখা যায়। সমগ্র ভারত- বাসীকে স্বজাতি সমগ্র ভারতবর্ষকে মাতৃভূমি কল্পনা করার মধ্যেই যথেষ্ট আধুনিক মনোভাবের পরিচয় রয়েছে বীরবান্থ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করেছে, দেশত্যাঁগী হয়ে ক্রন্দন করেছে-_

বিদায় জনম ভূমি জনম মতন

বিদায় ভারতবাসী স্বজাতীয়গণ

সমস্ত অংশে কাব্যের উৎকর্ষ বিচার অনর্থক, উদ্দেশ্যের সার্থকতাই বড়ো হয়ে দেখ! দিয়েছে হেমচন্দ্ের দেশপ্রেম ধারণার প্রথম গুঞ্জরণ “বীরবাহু কাব্যের" উল্লিখিত অংশগুলিতেই প্রকাশ পেয়েছে |. জাতিবৈরের কবি হিসাবে হেমচন্দ্রের ষে পরিচয়-_দেশপ্রেম ধারণার আদিতেই তা বর্তমান। তার সঙ্গে জন্মভূমির প্রতি এঁকান্তিক মমতায় বিগলিত, দেশের দুর্দশায় ভগ্রমন কবির আধর্তস্বর 'শোন। যায় “বীরবাছ কাব্যের, একটি মৃহ্র্তে কবি যেন আ'ত্মগত উপলবিকেই স্মরণ করেন,

মীগো ম1 জন্মভূমি ! আরে! কত কাল তুমি, বয়সে পরাধীন হয়ে কাল যাঁপিবে

পাষণ্ড যবনদল, বল আর কতকাল নিদয় নিষ্ঠুরমনে নিপীড়ন করিবে

হেমচন্দ্রের দেশী প্রেমাকুতির এমন সোচ্চাঁর-বলিষ্ঠ নিদর্শন তার প্রথম দিকের দেশপ্রেমাত্মক কাব্যেই পাওয়া যাচ্ছে কাব্যের যে অংশে এই মর্মাতুর অভিব্যক্তি কবি বর্ণনা করেছেন, বর্ণনীশক্তির অভাবে ঘটনাংশের ॥ছুর্বল গ্রন্থণায় কাব্যে তা মোটেই সার্থক হয়ে ওঠেনি, কিন্তু কাব্যবিচ্ছিম্ন অংশরূপে এর অন্তনিহিত আবেদন আমাদের কাছে আরও বেশী অর্থময় হয়ে উঠেছে রঙ্গলালের “পদ্মিনী উপাখ্যানের” কোন কোন অংশেও ধরণের সত্য সন্ধান করতে হয়েছে ;- হেমচন্দ্রের মানসিকতার ব্যাখ্যা কালেও কাব্য থেকে বিচ্ছিন্ন করেই এই কাঁব্যাংশগুলির সার্থকতা আবিফার করতে হবে “বীরবাহু কাব্যের» কাহিনী উদ্ভাবনের, চরিত্রের সঙ্গতি আবিষারের ব্যর্থতাকে কবির আস্তর দেশপ্রেমাদর্শ দিয়ে অন্থুতব না করলে কবিকে অনেক সময়ই অপ্রশংসার সম্মুখীন হরে নীরবে আত্মগোপন করতে হবে। তাতে আমরাই বঞ্চিত হবো। কিন্ত কিছুমাত্র সৎ উদ্দেশ্যের ছাঁয়াপাত যদি কাব্যের কোথাও থাকে তার

২৮০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

আঁলোচনাই কবি সম্পর্কে আমাদের শ্রদ্ধাবোধই জাগিয়ে।তুলবে উনবিংশ শতাব্দীর আত্মজাগরণের সংবাদগুলি আমরা সর্ধদাই অতিপ্রত্যক্ষ রূপে আবিষষারে অসমর্থ হই ) - অনেক সময়ই দেখি, বঙ্কিমচন্দ্রকে কমলাঁকান্তের বকলমে আত্মপ্রকাশ করতে হয়,-_- পাঠককে তার স্বরূপ আবিষারে সাহিত্যের রাজপথ ছেড়ে চোরাগলিতে প্রবেশ করতে হয়। হেমচন্দ্র প্রমুখ কবিরাও তাদের দেশপ্রেমান্ভূতির গভীর উপলদ্ধি প্রকাঁশের জন্য সার্থক অসার্থক কত কিছুই পরিকল্পনা করেছেন কেউবা ইতিহাসের সত্যকে সক্রিয় সিদ্ধির কাজে ব্যবহার করেছেন, -কেউবা সম্তভব-অসস্ভব কাহিনী কল্পন। করে নিজস্ব অনুভূতির সত্যটুকু পরিবেশন করেছেন উভয় ক্ষেত্রেই কবির আত্মদর্শন, জীবনাকৃতিই প্রধান বক্তব্য হয়ে উঠেছে “বীরবাছ কাব্যের অনেক অংশেই হেমচন্দ্রের স্বাদেশিকতাঁর আহবান বাঁণী শোনা যায় বীরবাহুর পরাজয় বর্ণনা] যেমন কাঁব্যের দিক থেকে প্রয়োজন, বীরবান্ু যে অস্বাভাবিক উপায়ে দিল্লীর বাদশাহকে পরাজিত করেছে আদর্শরক্ষার দিক থেকে এরও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য আদর্শের মুখরক্ষা সাহিত্যের মুখরক্ষার যুগ্মদায়িত্ব পালনের অক্ষমতায় হেমচন্দ্র অভিযুক্ত একথাও সত্য | কিন্তু “বীরবাহু কাব্যের” কোন কোঁন অংশে দেশপ্রেম তাবন। সুন্দর ভাবে প্রতিবিশ্বিত,-_

কতই ঘুমাবে মাগো জাগো গো মা জাগো জাগো। কেঁদে সারা হয় দেখ পুত্র কন্যা] সকলে ধূলায় ধুসর কায়, ভূমে গড়াগড়ি যায়,

একবার কোলে কর ডাকি গো মা মা বলে। দেশতক্তির অস্কুর কবির চিত্তে কাব্য রচনার পূর্বেই দেখা গেছে_-“বীরবাহু কাব্যের কল্পনার যূলে তা সক্রিয় ভাবে কাজ করেছে _আধখ্যাপত্রের কবিতাটিই কবির উদ্দেশ্য ব্যক্ত করে,__ আর কি সেদিন হবে, জগৎ জুড়িয়া যবে, ভারতের জয়কেতু মহাতেজে উড়িত। যবে কবি কালিদাস, শুনায়ে মধুর ভাঁষ ভারতবাসীর মন নানারসে তুষিত যবে দেব অবতংস, রঘু কুরু পাওুবংশ, বনে করিয়া ধংস ধরাতল শাসিত ভারতের পুনর্বার, সে শোভা হবে কি আর। অধোধ্যা হস্তিনা পাটে হিন্দু যবে বসিত॥ আখ্যাপত্রের কবিতাটিতে হেমচন্দ্র স্বকীয় মনোভাব গোঁপনের বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেন

কাব্য ২৮১

পা 1-যা স্বাভাবিক অনুভূতি, যা কবির আত্মোপলব্ধি, তাকেই প্রকাশ করেছেন বেদনাবোধ হতাশার স্ুরও এখানে অস্পষ্ট নয়

আর কি সেদিন হবে, জগৎ জুড়িয়া যবে ভারতের জয়কেতু মঙ্াতেজে উড়িত।

সংশয়ই কবির বিষাদ এনেছে_-আশার বাণী শোনাবাঁর লগ্ন তখনও দূরাগত। কাব্যকে অর্থবহ করার উদ্দেশ্যে 85:০70-এর পংক্তিও তিনি উদ্ধৃত করেছেন-_তাও লক্ষ্যণীয় |

10911910900 10811910500 ড৮1)0 199 710০ 2908] 516 01 0692055, 1101) 06০81076

4৯ [01761510056] 01956106 5063 210 0950.

কাব্যালোৌচনার শেষেও দেখা যায় আর্দিক, চরিত্র, কাহিনী রচনার অসাফল্যের পরেও একটু সাত্বনা পাই যখন কাব্যরচনার উদ্দেশ্যগত আদর্শ কাব্যে পুরোপুরি রক্ষিত হতে দেখি বর্তমান আলোচনায় স্বদেশপ্রেমের, জাতীয় আদর্শের কবি হেমচন্দ্রের সম্পর্কে এটাই প্রধানতম কথা

হেমচন্দ্রের দেশীস্মবৌধ খণ্ড কবিতাকারেই স্ফৃতি পেয়েছে বেশী প্বীরবাহু কাব্যের কোন কোন অংশে কবির বক্তব্য কাব্যবিচ্ছিন্ন খণ্ড খণ্ড উপলব্ধির সত্যই প্রকাশ করেছে পরবর্তীকালে কবির বিশ্টি্ট স্বদেশপ্রেমমূলক কোন কোন রচনার আদি ন্স্বচ্ছরূপ কাব্যের উল্লিখিত অংশে মিলবে পরে এই যূলভাবের বিস্তৃত রূপই খণ্ড খণ্ড কবিতাঁর বিষয় হয়ে উঠেছে

[২; কবিষশপ্রার্থী না হলে কবিরা কাব্যের ধ্যানলোকে নীরব সাধনায় মগ্ন হতেন কিনা সন্দেহ কবিমাত্রহই বিদগ্ধ পাঠকগোঠীর শ্বপ্নে মগ্ধ হয়ে থাকেন ভবিষ্কের আশায় সৃষ্টির উৎসাহও সেই লোলুপ রসিকেরই কামনায় মগ্ন কাজেই সমসাময়িক সিদ্ধির দৃষ্টান্ত কবিচিত্তের গোপনস্তরে সংক্রীমিত হয়ে যেতে পারে সহজেই, হেমচন্দ্রের “বুত্রসংহার কাব্যের” জন্ম ইতিহাসে এই সত্যেরই প্রতিফলন দেখি। মধুহদনের কাব্য সংস্কার মানসে হেমচন্দ্রকে 'বুত্রসংহীরের' পরিকল্পনা করতে হয়েছে-_ কথার যোগ্য যুক্তিসম্মত ব্যাখ্যা নেই আঁসলে মধূহদনের মহাকাব্যের অমিত সম্ভাবনা, প্রচণ্ড সাফল্যের সংবাদ সেযুগের শিক্ষিত কবি হেমচন্দ্রকে চঞ্চল করেছিল-_সুতরাঁং তাঁকে “বৃত্রসংহার” লিখতে হল। কাব্যে পূর্বস্থরীর অতি প্রত্যক্ষ প্রভাবকে যেমন কোন সমালোচকই অস্বীকার করতে পারেন না তেমনি হেমচন্দ্ের মৌলিকত্ব অস্বীকারের কোন চেষ্টাই শেষ পর্যন্ত ধোপে টেকে না। দু"য়ের

২৮২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল সাহিত্যে সবদেশপ্রেম

সক্মিলনে সেযুগে হেমচন্দ্রের বৃত্রসংহার” কাব্য বিলাসীদের কাছে প্রচণ্ড আবেদনের আলোড়নের ক্ষত্রপাত করেছে। মধুহদনের “মেঘনাদবধ কাব্যে” দেশচেতনার প্রতিফলন কিভাবে অনিবার্ধ হয়ে উঠেছিল সেকথা পূর্বেই আলোচিত হয়েছে হেমচন্দরের “বুত্রসংহারে” দেবদৈত্যের সংগ্রামচিন্রনই মুখ্য স্বর্গ বিতাড়িত দেবসমাজের ছুর্দশাচিত্র বর্ণনাই প্রাধান্ত পেয়েছে এবং অপ্রারুত উপায়ে বুত্রনিধন যজ্ঞ সমাপ্ত করে স্বপ্রতিষ্ঠ হয়েছে দেবতা সম্প্রদায় পুরাণ প্রাচীন কাব্যের বহু কাহিনীতেই দেব সমাজের ধরণের অধঃপতনের সংবাদ পাওয়া যাঁয়। বস্ততঃ স্বর্গরাজ্যের অধিকার দেবতাদের একচেটিয়। কি না, ত্র্গের স্থখসমৃদ্ধির একচ্ছত্র মানসিক হিসাবে দেবতাদের দাবী অগ্রগণ্য কি না -এ নিয়ে প্রশ্নের অবকাঁশ থেকেই যাঁয়। অধিকাংশ স্থলে দেখ যাচ্ছে ইন্দ্ত্ব নিয়ে শক্তির লড়াই ; দুর্বল ইন্দ্রকে সরিয়ে দিয়ে ইন্্পদে অধিঠিত অন্য শক্তির উল্লেখ অন্যত্র পাওয়া! যাচ্ছে। এখানে বৃত্রও শক্তি সামর্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে, ইন্দ্রত্ব লাভ করেছে, আর স্বর্গাধিপতি স্বদেশভূমি পরিত্যাগ করে মত্ত্য পৃথিবীতে বিচরণ করছেন | অগ্ভান্ক দেবতারাও স্বক্ষেত্রবিচ্যুত উদ্কাপিণ্ডের মতোই রোষ ক্রোধাগ্রি নিয়ে নিক্ষল দত্ত প্রদর্শন করছেন মোটামুটি দুর্বল শক্তিমানের দ্বন্বই “বুত্রসংহাঁরের” মূল কাহিনীভাগ গড়ে তুলেছে হেমচন্দ্রের সচেতন দেবতাপ্রীতি দৈত্যবিদ্ধেষ দিয়েই কাবোর শুরু ; মর্মাহত দেবতাদের সঙ্গে মর্মাহত কবিও তাই স্বদেশোদ্ধারের [ হেমচন্দ্র স্বর্গে দেবতাদেরই আদি অধিকার মেনে নিয়েছেন ] চিন্তায় মগ্ন | পরাজিত দেবতাঁকুল রোষে-অপমানে কিভাবে অস্থিরচিত্ত হয়েছেন “বৃত্রসংহারের” প্রথমেই কবি তার আভাষ দিয়েছেন-_ বসিয়। পাতালপুরে ক্ষুনধ দেবগণ, নিস্তব্ধ বিমর্ষ ভাব চিন্তিত, আকুল; নিবিড় ধুমান্ধ ঘোর পুরী সে পাতাল, নিবিড় মেঘডশ্বরে যথা অমানিশি | [১মসর্গা স্বর্গচ্যুত দেবতাদের পাঁতালে অবস্থিতি গোপন বৈঠকের একপ্রান্তে বসে কবিও যেন মহাচিন্তীমগ্ন | বস্ততঃ স্বর্গবাসী দেবতাদের আত্মপ্রতিষ্ঠার আত্মমর্যাদার সংগ্রামে তুচ্ছ মর্তবাঁসী মানুষ হিসেবে আমাদের করণীয় যে কি তা বুঝে ওঠাই মুক্ষিল। দেবতাদের মৃত্যুঞ্জয়ী, সর্বপারঙ্গম রূপে কল্পনা করে যে স্বস্তি নির্ভরতা পাই তাদের লাঞ্ছনা নিপীড়নের মুহূর্তগুলি আমাদের অস্বস্তির মাত্রাই বৃদ্ধি করে শুধু। অথচ সাত্বনা বা উৎসাহ দেবার মত স্পর্ধা আমাদের নেই। দেব- সমাজকে মাথার মধ্যমশি করে রাখাটা সব দিক দিয়েই নিরাপদ--তাদের হুখ-ছুঃখের

কাব্য ২৮৩

সঙ্গে মানুষের স্খ-ছুঃখকে এক করে দেখার রীতি নেই। সুতরাং দেবসমাজের এই চরমতম ছুর্দিনের চিত্রাঙ্কনে কবি দেবোচিত গাস্তীর্য বজায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন দেবতারা স্বর্গোদ্ধারের জল্পনায় যখন পূর্ব এতিহা শ্মরণ করেন, তখন পাঠক সম্প্রদায়ের অনুভূতির সমর্থন পাননা। দেবতাদের দুর্দশায় আমরা দর্শক মাত্র দেবতাদের মুখেই তাঁদের পূর্বগৌরবের শ্মতি রোমস্থন-চিত্র-_

“চির-যোৌদ্ধা _ চিরকাল যুঝি দৈত্যসহ

জগতে হইল! শ্রেষ্ট, সর্বত্র পুজিত ;

আজি কি না দৈত্যভয়ে ত্রারিত সকলে

আছ পাতালপুরে অমর] বিস্মরি |

কিংবা! দেব সেনাপতি ক্কন্দের সখেদ উক্তি,__

কি প্রতাপ দহ্ুজের, কি বিক্রম হেন,

শঙ্কিত সকলে যাহে স্ববীর্ধ্য পাঁশরি ?

কোথা সে শুরত্ব আজ বিজয়ী দেবের

শতবার রণে যারা দনুজে জিনিলা ?

কোথাও পাঠক বিষয়েব গৌরবে বা বর্ণনার শক্তিতে আত্মনিমগ্ন হতে পাঁরেননা।

*বুত্রসংহারের” এই সংগ্রামচিত্র এমন একটি পৌরাণিক দৈবছুর্দশীর চিত্র যে পাঠক চিত্তের কাছে এর বক্তব্যের আবেদন খুব স্বল্প অথচ হেমচন্দ্রের 'বৃত্রসং্হারের” মধ্যেই এক যুগের সমালোচকেরা জাতিবৈরিতার উৎকৃষ্ট নিদর্শন অনুসন্ধান করেছেন দেব দাঁনব-_পাঁরস্পরিক বৈরিতা নিয়েই এদের আবির্ভাব অস্তিত্ব বৈরিতা যুগ যুগান্তরের স্বীকৃতি পেয়ে আসছে,_-এ বৈরিতা চিরদিনই দ্বন্দমূলক | দেব দাঁনবের যুদ্ধে দেবশক্কির দানবনিধনের মধ্যেই শক্তিপরীক্ষার চরম নিদর্শন অনুসন্ধান প্রথাসিদ্ধ | উনবিংশ শতাব্দীর জাতীয়তাঁবাদকে সেই সনাতন ছন্দের প্রতিরূপ বলে মনে করে আমর! শুধু এটুকু সাত্বনা পাই যে, পরাঁধীনতা বা জাতীয় দুর্বলতা প্রভৃতি শব্দগুলি শুধু উনবিংশ শতাব্দীরই কতকগুলি ঘ্বণিত শব্দ নয়। সনাতন কাল থেকে শুধু মানুষের জীবনেই নয়_ দেবতাদের জীবনেও এর পরীক্ষা হয়ে গেছে_- একটা শাশত প্রথা | হেমচন্দ্র *বুত্রপ্ংহারের” মধ্যে দেব দানবের পারস্পরিক সংগ্রামচিত্র বর্ণনা করে আমাদের মনে ঠিক কোন ভাবের সঞ্চার করেছেন বলা শক্ত স্বর্গচ্যুত দেবসমাজ স্বর্গবিহারী দৈত্যদের প্রতি বৈরভাব পৌষণ করতে বাধ্য এবং কাহিনী যে যুগেই লিখিত বা পুনলিখিত হোক না কেন, বৈরিতাঁর ওপর বিশেষত্ব আরোপ করাকে কোন ক্ষেত্রেই বিশিষ্ট চিন্তা বলে দাবী করা যায় না হেমচন্দ্র অবশ্য সেই সনাতন সত্যকেই সময়োপযোগী রূপ দিয়েছেন দেবসমাজের স্বগপ্রীতি স্বর্গলাভের

২৮৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে দেশপ্রেম

আকাজ্ষা কাব্যে প্রকাশ করে পরাধীন ভাগ্যহীন ভারতবাসীর সামনে সাময়িক -. সত্য প্রকটিত করেছেন অবশ্য কবিচিত্তের স্বাভাবিকী বৃত্তি স্বদেশপ্রাণতা বলেই হেমচন্দ্র সম্পর্কে এটুকু কল্পনা করে নিতে বাধা নেই। কিন্তু জাতিবৈরিতার বিশিষ্ট কবি হেমচন্দ্রকে 'বুত্রসংহারের' আখ্যানভাগ থেকে আবিষ্কার করা কঠিন। দৈত্য- কুলের প্রতি ঘৃণা নিন্দা কোনটাই কাব্যের মুখ্য কথা নয়। আত্মপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা দেবসমাজের কলঙ্ক মোচনের এঁকান্তিক আগ্রহই কাব্যে প্রাধাগ্থ পেয়েছে। অন্তজাঁতি বিদ্বেষ স্বজাতিপ্রীতিরই অন্যতম লক্ষণ, স্তরাং হেমচন্দ্রকে ক্ষেত্রে জাতি- বৈরের কবি বলে অভিহিত করার সার্থকতা কই? বিশেষতঃ শব্দটি যখন কোন সুম্পষ্ট অর্থ বহন করে না, তখন এর চেয়ে অর্থময় কোন বিশেষশে কবিকে তৃষিত করাই শ্রেয়। হেমচন্দ্রের *বৃত্রসংহার” কাব্যের কাহিনী উপস্থাপনা রীতির আলোচন। শেষে হেমচন্দ্রকে স্বদেশপ্রাণ কবি বলাই সঙ্গত ;_-কারণ সব নদী যেমন সমুদ্রে মেশে তেমনি দেশপ্রেমিক কবির সব কৌশলের মূলেই তার একটি আদর্শহ বড়ো হয়ে দেখা দেয় হেমচন্দ্রকে জাঁতিবৈরের কবি হিসেবে সমালোচনা কর] হয়ে থাকে-কিস্তু এই সর্জে আরও একটি কথা যোগ করে দিতে হবে যে, সেই জাতি- বৈরিতাঁর সঙ্গে হেমচন্দ্রের স্বদেশপ্রাণতার একটা! ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।

“বৃত্রসংহার” প্রসঙ্গে শ্রীঅক্ষয়চন্দ্র সরকার বলেছেন, “দেবারাধন। পরহিতব্রত 'বৃত্রসংহারের' "আসল কথা হইলেও ছুটি কথা লুকাঁন ছাপান আঁছে। কিন্ত জাতিবৈর কাব্যে ওতপ্রোত, জালা জলন্ত, জালা নিবারণের পালা নিস্তেজ | ..এই জাতিবৈরে আমরা যেরূপ জালাতন, পাতালপুরে প্রচেতা ব্যতীত আমাদের দেবতারাও সেইরূপ জালাঁতন 1৮৩২

হেমচন্ত্রের স্বদেশপ্রাণতাই পরাধীন, রাজাহীন, স্বর্গবিতাড়িত দেবতাদের পক্ষান্ু- সরণে উৎসাহিত করেছে “মেঘনাদবধের” কবি মপুস্দনও বিপন্ন মানুষের ছঃখে দুঃখিত হয়েছেন | মধুত্দন শ্রতিপক্ষ হিসেবে রাবণকে অধিকতর যোগ্য ব্যক্তি বলেই মনে করতেন সুতরাং সহানুভূতির অংশভাঁগী হয়েছে রাক্ষমাধিপতি | হেমচন্দ্রও বৃত্রের ক্ষমতা অস্বীকার করেননি_কারণ অস্বীকার করার কোন হেতু ছিল না; বৃত্র নিজেই নিজের সাম্য প্রমীণ করেছে হেমচন্দ্র দেবসমাঁজের উৎসাহ দৃঢ়তা বৃদ্ধির জন্য প্রচেতাকেও আত্মনিষ্ঠ দৃঢ় করে অঙ্কন করেছেন,_-

“সাহস যাহার,-সদা সেই ভাগ্যধর ।" এবং কবির বিশ্বাস স্বদেশ উদ্ধারের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে সাহসিকতার

৩২, অক্ষয়চন্ত্র সরকার, ববি হেমচন্ত্র, ১৩১৮ পৃ ৭৫1

কাব্য ২৮৫

সম্মিলিত শক্তির অভাব মারাত্মক | প্রথম খণ্ডে দেবতাদের শক্তির আত্মবিশ্বাসের মধ্যে যোগ ছিল অল্প-_অথচ অপমান পরাজয়ের প্লানিতে তাঁরা ভরপুর ! কারণ বৈশ্বানরের উক্তিতেই সে সত্য প্রতিবিদ্িত,__ নিয়তি সতঃ কি কভু অনুকূল কারে? দেব কি দানব কিম্বা মানব-সন্তীনে ? সাহসে যে পারে তার কাটিতে শৃঙ্খল, নিয়তি কিঙ্কর তার শুন দেবগণ শক্তি সাহস দেবতা, দানব কিংবা মান্থষ সকলেরই এরশ্বর্ষ, যেকোন দুঃসাধ্য সাধন এর দ্বারা সম্ভব | আত্মলীন, দুর্বল জাঁতির সামনে সমস্ত অংশের অপরিসীম, যূল' অনস্বীকার্য “বীরবান্থ কাব্যের” কোন কোন অংশ যেমন কবির নিজস্ব বক্তব্যকেই প্রকাশ করেছে--এ কাব্যেও তা মেলে ঘটনাংশের সর্ধে সংগতি রেখেই কবি বলেন,-_ “চিন্তিত সতত, ভয়ে কুষ্টিত সদাই, পরের আশ্রয়ে বাস প্রাণের বালাই ! স্ববশে স্বাধীন চিত্ত, স্বাধীন প্রয়াস, স্বাধীন বিরাম, চিন্তা স্বাধীন উল্লাস, সসর্প গৃহেতে বাঁস, পরবশ আর. দুই তুল্য জীবিতের, দুই তিরস্কার ! গা না যেইখাঁনে পরবশ, সেইখানে খেদ 1”--এই খেদ স্বর্গচ্যুত দেবতাদের--এই খেদ পরাধীন ভারতবাঁসীর, এই খেদ জাতীয়তাবাদী কবি হেমচন্দ্রের | দেবারাধনার প্রসর্গ অথব1 পরহিতত্রত প্রসঙ্গ কাব্যে খুব উজ্জ্বলভাবে চিত্রিত হয়েছে দেবসমাজের মঙ্গলের জন্য দেবোত্তর চরিত্র দধীচির আত্মোৎসর্গের বর্ণনা কাব্যের গৌরব বৃদ্ধি করেছে-__-সন্দেহ নেই অনেকের মতে 'বৃত্রসংহার কাব্যের" শেষ্ঠাংশ বা সারাংশ এই পরহিতব্রতের আত্মত্যাগের মহিমাময় চিত্র সনাতন ভারতীয় সত্যকেই কবি উনবিংশ শতাব্দীর নবচেতনার সম্মুখে স্থাপিত করেছেন বস্ততঃ দধীচির আত্মোৎসর্গ লাঞ্ছিত-পীড়িত-পরাধীন দেবতাদের পুনঃ প্রতিষ্ঠার জন্াই ;__দধীচির আত্মদানের মধ্যে এটাই মুখ্য বক্তব্য--পরার্থে জীবনদান দেশপ্রেমিকের সামনে এই দৃষ্টান্তের যূল্য কম নয়__পরার্থে জীবনদানের ব্রতে তারা অভীক সৈনিক তবে দেশপ্রেমিকের সামনে স্বার্বোধের প্রশ্ন নিশ্চয়ই আছে দেশের স্বার্থ, জন্মভূমি, মাতৃভূমির স্বার্থই তার আত্মদানের প্রত্যক্ষ প্রেরণা মৃত্যু বা

২৮৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

লাঞ্ছনাভোগ কতই না তুচ্ছ সেখানে বৃত্রসংহারে দেবসমাজ আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য যে পথ অবলম্বন করেছে__তা বোঁধ হয় আমাদের বিচারে অন্রান্ত পথ নয়। দধীচির অমূল্য প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা! অর্জনের জন্য দেব সমাজের বিন্দুমাত্র ঘিধা! নেই।-_ এই অমানবোঁচিত স্বার্থপর দৃষ্টান্তটিকে কোনমতেই সমর্থন করা যায়না | সেঞ্ন্তই বলেছি, পরাজিত বা লাঞ্চিত সমাজের সঙ্গে আমাদের সাধর্ম্য বা সহানুভূতির সংযোগে “মেঘনাদবধ কাব্যের” আবেদন যত তীব্র সংহত “বৃত্রসংহারে” তার একান্তই অভাঁব। আত্মপ্রতিষ্ঠীর ষে দুর্দ আকাজ্ায় লঙ্কাবাপীদের সংগ্রাম আ'ত্ববিসর্জনের প্রেরণা এসেছে-_বৃত্রসংহারের” দেবসম্প্রদায়ের চিত্তে তার একাংশও নেই অথচ এরা দেবতা; দানবের সঙ্গে সংগ্রাম সামর্যযেই যে এরা হীন তাই নয়,-চিত্তশক্তির দুর্বলতা এরা কোথাও গোপন করেননি অথচ স্বর্গচ্যুত হওয়ার বেদনায় এ'র] সকলেই বিষন্ন দানব বৃত্রাস্থর তার সম্প্রদায়ের স্বর্গ অধিকারে দেবসমাজ ক্ষ এরই নাম যদি জাতিবৈর বা জাতিবিদ্বেষ হয় তবে তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা চলে কি ? হেমচন্দ্রের স্বদেশপ্রেমের গভীর উপলব্ধির প্রকাশ কাব্যের মধ্যে অনুসন্ধান না করাই সঙ্গত। জাঁতিবিদেষের মধ্যে ত্বদেশভাবনার একট পঙ্গু মনোভাবেরই বিকাশ, আত্মপ্রতিষ্ঠার আদর্শ সেখানে অনুপস্থিত হেমচন্দ্র মনে প্রাণে আত্মপ্রতিষ্ঠার সমর্থন করেছেন,-_বিপ্রোহবহ্থির কল্পন হয়ত সেখানে নেই, কিন্তু মনঃক্ষৌভে অস্থির কবিচিত্তের ক্রন্দন তাঁর মহাঁকাব্যে নেই। সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে তা ইতস্তত: ছড়িয়ে আছে। দবুত্রসংহার কাব্যে” আত্মদানের পৌরাণিক আদর্শই প্রাধান্য পেয়েছে কিন্ত 'আত্মপ্রতিষ্ঠার আবেগে উন্মুখ জাতির চিত্তে এর প্রত্যক্ষ আবেদন কোথায় ?

'ৃত্রসংহার কাব্যের” একটি অংশে হেমচন্দ্রের আত্মগত ভাবোচ্ছাসের অপূর্ব প্রকাশ দেখা! গেছে। দেশপ্রীতির ফন্তধার। কবিচিত্তের স্তরে স্তরে প্রবাহিত--শুধু প্রকাশের অপেক্ষায় ব্যগ্র। দ্বিতীয় খণ্ডের চতুর্দশ সর্গে হেমচন্দ্র জন্মভূমি বন্দনা করেছেন-_ কাব্যবিচ্ছিন্ন অংশরূপেও এর আবেদন অপরিসীম হয়ত স্বর্গচ্যুত দেবতাদের মনোৌকষ্টই এখানে দেখানো হয়েছে-_কিন্ত কবির আস্মগত উচ্ছ্বাসের প্রাধান্তও লক্ষ্য করা যায় অংশটির আবেদন পরাধীন জাতির চিত্তে প্রত্যক্ষ রূপে অনুভূত হয়েছে বলেই মনে হয়

কে আছ ত্রিলোক মাঝে প্রাণী হেন জন

স্থদূর প্রবাস ছাড়ি স্বদেশে ফিরিয়া,

[ কি পঙ্কিল, কিবা মরু, কিবা গিরিময় - সে জনম ভূমি তার, ] নিরথি পূর্বের

পরিচিত গৃহ মাঠ, তরু, সরোবর,

কাব্য ২৮৭

নদী, খাত, তর, পর্বত, প্রাণিকুল,

নাহি ভাঁসে উল্লাসে, না বলে মত্ত হয়ে “এই জন্মভূমি মম !' কে আছে রে, হায়, ফিরিয়া স্বদেশে পুনঃ না কাদে পরাণে হেরে শক্র পদাঁথাতে পীড়িত সে দেশ | বিজেতা-চরণতলে নিত্য বিদলিত

বলিতে আপন যাহা--প্রিয় জগতে |

অংশটিতে হেমচন্দ্রের জন্মভূমিপ্ীতি যেন অজঅধাঁরায় উচ্ছ্বসিত যেন বৃত্রসংহারের কোন উল্লেখ্য অংশ নয়-_-কবি হেমচন্দ্রেরে আন্তরিক ভাঁবনারই সংহত- সংষত সনেটীয় রূপ | মধুস্দনের “চতুর্দশপদী কবিতাবলীতেও” এই ঝংকারই বন্থ- ভাবে বহুরূপে শ্রত। অংশটির মহাঁকাব্যিক যূল্যবিচার আমাদের উদ্দেশ্ট নয়, কিন্তু এর পৃথক আবেদন অতলান্ত গভীর | জাতিবৈরিতাঁর উত্তপ্ত সংবাদের চেয়েও কবির মনের নিভৃত কোণে লাঞ্চিতা-পরাঁধীন। মাতৃভূমির জন্য যে সমবেদন। সংগীত এখানে ধ্বনিত হয়েছে, সেটুকুই অযূল্য প্রাপ্তি। তবে ছুঃখের বিষয় এই যে, এমন অভাবিত আন্তরিকতা মহাঁকাব্যটিতে প্রায় দুর্লভ বললেই চলে দেব-দানবের ক্রোধ-ঘেষ ছুঃথ প্রকাশেই কবি তৎপর

হেমচন্দ্র দেবতাদের দুঃখে বিগলিত চিত্ত হলেও দানব চরিত্রে অযথা কলঙ্কলেপনের চেষ্টা মাত্র করেননি বত্রাস্থর সম্পর্কে কবির উচ্ডাসও অস্পষ্ট, আক্রোশও অগভীর মোটামুটি বৃত্র চরিত্রে হেমচন্দ্র স্বীভীবিকত্ব আরোপের চেষ্টা করেছেন বৃত্রের বীরত্ব শক্তির মধ্যে দত্ত আছে বটে তবে প্রকাশভঙ্গি বীরোচিত। বুত্রনিধনে কবির সমবেদনা অনুচ্চার--আপাতদদৃষ্টিতে দেবতাদের সাফল্য সংবাদের ওপরই তিনি যেন অধিক মনোযোগী কিন্তু কাব্যের যে অংশে বৃত্রের বীরত্ব বা শক্তির পরিচয় দিচ্ছেন, সেখানে বুত্র অত্যন্ত উজ্জ্রল মহিমায় চিত্রিত বৃত্রের উক্তিতে আত্মবিশ্বাস, বীরোচিত দত্ত, নির্ভীক আত্মবিচার আমাদের মুগ্ধ করে। মৃত্যুভয়েও অভীক- স্থিরচিত্ত বৃত্রের সদস্ত উক্তি, _

জনম বীরের কুলে মরণ [ ] সফল শক্রঘাতি রণস্থলে [ হে সচিবৌত্তম, কে কোথা রাজত্ব ভুপ্রে বিনা যুদ্ধ পণে-- মৃত্যুভয়ে সমরে বিরত কবে শুর,

কবে সে বীরের চিন্তে কৃতান্তের ভয়

২৮৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল সাহিত্যে স্ধদেশপ্রেম

হানিতে সমরে শক্র ? ত্যাজিতে পরাণ যুঝি রঙ্গে রিপু সঙ্গে সমর-প্রাণে ?

এই উক্তিতে বৃত্রের বলিষ্ঠ অন্তরের সজেই পাঠকের পরিচয় স্থদৃঢ় হয়--দেবতাদের ষড়য্ত বৃত্রের প্রাণটুক্ক ছিনিয়ে নিতে পারে বটে কিন্তু তার মৃত্যুভয়শুস্ত বলিষ্ঠ আত্মাকে স্পর্শ করতে অক্ষম। বৃত্র মৃত্যুগ্রয়ী-_-তার আত্মদীনও এক গৌরবময় অধ্যায়। কতরাং বৃত্রসংহারের শেষকথার সর্গে কাব্যের ব্যঞ্নার যোগ নেই দেবতার! স্বর্গে প্রতিষ্ঠিত হলেন কি না সে সংবাদ বৃত্রবধের সঙ্গে জড়িত কিন্তু বুত্রের বীরোচিত আত্মদান সৈনিককে প্রেরণা দেখে আত্মবিসর্জনের | মৃত্যুতে অগৌরব নেই, জয়ের মুকুট শিরে নিয়ে সৃত্যু এখানে যোদ্ধাকে শহীদের বেদীতে বসায়। 'বৃত্রসংহারের, কবি হেমচন্দ্র বৃত্রের আত্মদানের মহিমা বর্ণনাতেও পরোক্ষভাবে বীরোচিত মৃত্যুর মহিমা বর্ণনা করেছেন। দেশের জন্য আত্মদানের মধ্যে এই মহিমাট্ুকু আবিফারের চেষ্টা চলেছিল উনবিংশ শতাব্দীতেই | হেমচন্দ্র গরোক্ষভাবে সেই প্রচারকার্য চা।লয়েছিলেন বলে মনে হয়।

৩। বিশুদ্ধ স্বদেশপ্রেমভাবন৷ সম্বলিত গীতি কিতা -_

হেমচন্দ্রের যুগে রাজনীতি দেশচিন্তা যে কোন চিন্তাশীল মানুষের চিত্তবৃত্তিকে প্রভাবিত করেছিল _সাময়িক পত্রে সাহিত্যে এই যুগভাবনাই নানাভাবে বিকশিত ! হেমচন্দ্রের সাহিত্যসাধণা তাঁর দেশচিন্তা প্রায় অচ্ছেদ্চ | সাহিত্যচিন্তার সঙ্গে দেশভাবনার যুগ্ধ আবেদনে হেমচন্দ্র সাড়া দিয়েছেন, লেখনী হয়েছে এই উভয় ভাবপ্রকাশের যোগ্যমাধ্যম। প্রথমদিকের কাব্যে হেমচন্দ্র কাহিনীকাব্য বা আখ্যান- কাব্যকে আশ্রয় করেই তার বিশুদ্ধ দেশভাবনার পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু সেখানে কবির চিন্তাভাবনা কাঁহনীর নায়কের চিন্তাভাবনার সর্ষে জড়িয়ে আছে -কত সহজেই যে তা আবিষ্কার কর] যাঁখ পূর্বে তা আলোচিত হয়েছে কিন্ত খণ্ড কবিতায় এই আড়ালটুকু সরে গেছে,__ঞ্বির বক্তব্য এখন অকপট, তাঁর মনোবেদনা, আশা, আকাজ্কা, হতাশ। ব। উচ্চাশার সঞ্গে পাঠক এখন মুখোমুখি দীড়িয়ে আছে। সুতরাং হেমচন্দ্রের স্বদেশচিন্তার স্পষ্টতা আবিষ্ষার করতে হলে এই খণ্ড কবিতাগুলিকেই সর্বাগ্রে আলোচনা করতে হবে অজ কবিতায় হেমচন্দ্র তার আত্মপরিচয় চিহ্নিত করেছেন-__হুতরাং দেশপ্রেমিক কবি হেমচন্দ্রকে আবিফার করতে হবে এই সময্কে রচিত কবির সমগ্র খণ্ড 'কবিতাবলী'তে কোথাও কোথাও চিন্তার আোত কবিকে আত্মবিস্থত করেছে, যুগবিস্বত করেছে, দুঃখে, ক্ষোভে, কবি তাই দিশাহার! পরাঁধীনতার অপমানে কবির শৃঙ্খলিত আত্মা বারবার ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। বাধ এসেছে-_দুর্বার শক্তিতে সে বাধ! অতিক্রম করার অক্ষমতায় কবি যখন বিষৃঢ়--বেদনার

কাব্য ২৮৯

অশ্রজলে সকরুণ আতি জানিয়েছেন তখন |. বেদনাই কবিকে শক্তি দিয়েছে-- সে শক্তি প্রকাশের অপেক্ষায় কবিচিভ্তের গোপন ভ্তরে এতদিন দীর্ঘশ্বাস ফেলেছে সময় এডুকেশন গেজেটে" ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় হেমচন্দের প্রথম প্রকাশিত গীতিকবিতা৷ হতাশের আক্ষেপ নানাদিক দিয়েই গুরুত্বপূর্ণ নামকরণ থেকেই বোঝা সহজ যে, কবিচিত্তের হতাশার দীর্ধশ্বীসে কবিতাটি মুখর | পে যুগের স্বাধীনতাকামী, দেশপ্রেমিক অষ্টারদের চিত্তে হতাশ জাগাটা খুবই স্বাভাবিক ছিল। সংঘবদ্ধ শক্তির সুযোগ্য পরিচালনায় বিদ্রোহী হয়ে ওঠার পূর্বলগ্নে চিন্তাবিদ--_দেশ- প্রেমী কবিচিত্তের নিদারুণ হতাশার যুক্তিও ছিল অনেক প্রসঙ্গে সেযুগের শিক্ষিত বাঙ্গালীর এই পরিচিত মানসিকতার ব্যাখ্যা করার চেষ্টায় সমালোচক শ্বীঅক্ষয়চন্ত্র সরকার যা বলেছিলেন, তা অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য,- "শিক্ষিত বাঙ্গালীর এই অবিশ্বাস হইতে জন্মিয়াছে --দারুণ হতাশা, সেই হতাশা শিক্ষিত বাঙ্গালীকে ছাঁড়াইয়া ক্রমে ক্রমে সমগ্র বাঙ্গীলীকে ধরিয়া ফেলিতেছে | * সেই বাঙ্গালীর কবি হেমচন্দ্র দুঃখের কাহিনী গাহিয়! জীবনত্রত উদ্ষাপন করিয়াছেন ।*৩৩

হেমচন্দ্রের 'হতাশের আক্ষেপ” সেই দিক থেকে একটি উল্লেখযোগ্য অন্ভাবনাকে ব্যক্ত করেছে। হেমচন্দ্রের হতাশাবোধ উনবিংশ শতাব্দীর একটি লক্ষ্যণীয় বৈশিষ্ট্য বলে মনে করা যেতে পারে কারণ আক্ষেপ বা হতাশায় মুহযমাণ হয়ে কবিকে যুগে শুধুই ক্রন্দন করতে হয়েছিল হেমচন্দ্রের হতাশার মূলেও দেশচেতনার স্পষ্ট উপলদ্ধি রয়েছে দেশকে নিবিড়ভাবে ভালোবাসতে পেরেছিলেন বলেই পরাধীন শ্রীহীনা দেশমাতৃকার মৃতি কবিচিত্রকে বিচলিত করেছে অথচ কোনো নিদিষ্ট পথে এই অবস্থার অবসান ঘটানোর উপায় জানা ছিল না। সাধ ছিল, ছিল না! সাধ্য। সেই অসহনীয় মুহূর্তে শুধু জেগে ওঠে একটা প্রচণ্ড হতাশা-আক্ষেপ-বিলাঁপ। হেমচন্দ্রের সময়ের কবিতাকে বিশুদ্ধ স্বদেশচিস্তাঁজাঁত কবিতা বলতে পারি কবির গভীর দেশগ্রীতির স্বাক্ষর কবিতাগুলিকে গৌরবান্বিত করেছে। কবিতাগুলির নামকরণও তাই লক্ষ্যণীয়-_-ভারত বিলাপ, ভারতসংগীত, ভারতভিক্ষা, ভারতে কালের ভেরী, তুষানল, কুহুম্বর, ইউরোপ আসিয়া ইত্যাদি “ভারত ভিক্ষায়” হতাশ! জড়িত ভারতের চিন্তাই কবিকে অধিকার করেছে ভারতের বর্তমান অবস্থার মধ্যে কবি দেখেছেন একট! প্রাচীন সমৃদ্ধি সৌভাগ্যের জীর্ণ কঙ্কাল -এঁতিহো, সৌন্দর্যে যা একদ। ছ্যতিমান ছিল হতাশাবোধের ভিত্তি হিসেবে এই চিন্তাটির আনাগোনা লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়। বর্তমানের রিক্ততা অতীতের স্বধস্থতি মন্থন করে ভোলার

৩৩, অক্ষরচন্্র সরকার, কবি হেমচন্দ্র, ১৩১৮, পৃঃ ৩৫ | ১৪

২৯০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল। সাহিত্যে শ্বদেশপ্রেম

চেষ্টা করেননি কবি সে মনোবৃত্তির মধ্যে ভাবাপুত1 আছে, বলিষ্ঠতা নেই তাই অতীতের স্বাধীনতার স্বাদ ফিরে পাওয়ার বাঁসনাই বারংবার ঝংকৃত হয়েছে, সে মুহুর্তে আত্মগ্লানি ধিক্কারে তিনি প্রায় উচ্চক। শুধু সাত্বনা বা প্রেরণ হিসেবেই নয়, অতীত স্মতির স্বরূপ উদ্ঘাটনের একটা সুযোগ্য সময় ছিল যুগের উদ্বেলিত আবহাওয়া আত্মপর্শনের মধ্যেই হপ্ত থাকে আত্মজ্ান, _দেশদর্শনের মধ্যেও দেশপ্রেমেরই আভান। স্ৃতরাং এই শ্রেণীর কবিতাগুলোকে পৃথক একটা অমর্যাদ। দেওয়ার প্রয়োজন আছে। অতীতযুগের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের নিদর্শন রূপে কবিতাঁগুলির পৃথক আলোচন। দরকার

কিন্ত প্রত্যক্ষ চেতন! দিয়ে স্দেশভাঁবনার বাঁণীরূপ প্রকাশ পেয়েছে বিশুদ্ধ খদেশ- প্রেম শীর্ষক কবিতাবলীর মধ্যেই সেখানেও অতীতস্তি বা অতীতের এশ্বর্ষের প্রতি দৃষ্টিপাত করেছেন কবি কিন্তু বর্তমানের সঙ্গে তার আকাশ পাতাল পার্থক্যটির ইঞ্গিতও কোথাও অস্পষ্ট হয়ে নেই, বরং সোচ্চার কবি যে পরাধীন-_হৃতগৌরব ভারতের এক হতভাগ্য নাগরিক বোধই যেন কবিতাগুলির মুখ্য বক্তব্য হয়ে উঠেছে এর আবেদন রূপকায়িত নয়, অতিপ্রত্যক্ষ তাই হেমচন্দ্রের স্বদেশ- প্রেমাত্বক কবিতাগুলি প্রকাশে নানা বাধা উপস্থিত হয়েছিল “এডুকেশন গেজেটের” সম্পাদক তৃদেব মুখোপাধ্যায় হেমচন্দ্রের কবিতা প্রকাশের দায়িত্ব নিয়েছিলেন অনেক দুঃসাহস সঞ্চয় করে সরকারী মুখপত্রে স্বধীনচেতনার প্রমত্ত উচ্চারণের অপরাধ বিষয়ে সবাই সচেতন | কিন্তু হেমচন্দ্র তখন প্রায় উন্মাদ দেশপ্রেমিক "ভারত সংগীত* এর মর্মকথায় সেই উন্মাদনার পরিচয় পাই। উন্মাদন! ভাঙ্গার কি গড়ার সে বিষয়ে যথেষ্ট আলোচনার অবকাশ রয়েছে; শ্রীযুক্ত অক্ষয়চন্্র সরকারের “কবি হেমচন্দ্র' আলোচনায় প্রসঙ্গে বলা হয়েছে--“হেমবাবুর জন্মসময়ে কোন কিছু ভাঙ্গিতে পারিলেই কতবিগ্চ আপনাকে গৌরবান্বিত মনে করিতেন সমাজ ভাঙ্কিতে হইবে, ধর্ম ভাঙ্গিতে হইবে, প্রথা ভাঙ্গিতে হইবে, চরিত্র ভাঙ্গিতে হইবে, সদাচার ভাঙ্বিতে হইবে এমন কি, অনাচারে, অত্যণচারে স্বাস্থ্যভঙ্গ করিয়া অকালে কাল- আোতে ডুবিতে পারাঁও যেন সেই সময়ে গৌরবের বিষয় বলিয়া ধারণা হইত 1৮৩৪

হেমচন্দ্রের "ভারত সঙ্গীতে” স্বাধীন চিন্তার উন্মাদনা__-স্বদেশচিত্তার উচ্চকিত আহ্বানে আমরা স্থগভীর হুদয়ানুভূৃতি প্রত্যক্ষ করি-_তা অবশ্য স্বাদেশিক মনোভঙ্গী গঠনের একটা উল্লেখযোগ্য উদ্ভম। দেশমাতৃকার বন্দনায় কোন বাঁধা এলেই কবি কু্ধকঠে তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। হেমচন্ত্র ব্যাপারে ছুঃসাহসের পরিচয্নই :

৩৪. অক্ষয়চন্ত্র সরকার উপক্রমণিক1।

কাব্য ২৯১

দয়েছেন। চিন্তার স্বাধীনতা ব্যাহত হওয়ার বেদনায় কবির "ভারত সঙ্গীত” হয়ে উঠেছে, “ভারত বিলাপ” | পরাধীন স্বদেশপ্রেমিকের অবলম্বন হয়েছে সংগীতের *ত-্ুর্তত! নয়, বিলাপের করুণ রাগিণী। ভৃদেব মুখোপাধ্যায় “ভারত সংগীত' প্রকাশে আপত্তি করেছিলেন,-_-হেমচন্দ্রের “ভারত বিলাপ” মুদ্রণে তার আপত্তি করার কারণ ছিল না,_-কিস্তু হেমচন্দ্রের মনোজগতের বৈপ্লবিক সংগ্রামের মুহূর্তগুলি এই অবসরে আমর! প্রত্যক্ষ করেছি। “ভারত সঙ্গীতের” বক্তব্য যে কোন স্বাধীনতাকামী তাঁরতবাসীর প্রাণের উপলব্ধি কবিতার মধ্যে উচ্ভৃসিত হৃদয়াবেগ আঁছে-_-এই এই উচ্দ্াসকে কবি দমন করতে অক্ষম কবির ক্ষোভ, ছুংখ, বেদনা উত্তেজনা! 'ভারত সংগীতে” শত ধারায় উচ্ছৃসিত। _. ধিকৃ হিন্দুকুলে! বীরধর্ম ভুলে, আত্ম অভিমান ভূবায়ে পলিলে, দিয়াছে সপিয় শত্র করতলে, সোনার ভারত করিতে ছার

কবির আক্ষেপই সমস্ত আবেদনের অন্তরালে প্রকাশিত।

প্রাচীন এ্রতিহবিস্বত এই নির্জীব জাঁতির সামনে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেলেফেলার আহ্বান জানাতে কবি বিন্দুমাত্র সংশয়িত নন। তিরক্ষারে যেন সংগ্রামী নেতার ভৎসনা !

তবে ভিন্ন-জাতি-শক্রপদতলে,

কেনরে পড়িয়া থাকিস সকলে

কেন ন। ছি'ড়িয়। বন্ধন শৃঙ্খলে স্বাধীন হইতে করিস মন !

কবিতা যদি রাজরোষে ন। পড়ত তবেই আমর] আশ্চর্য, হতাম ।” হেমচন্দ্রের বক্তব্যে কোন স্পষ্ট নির্দেশ হয়ত ছিল না কিন্ত পরাধীনতার জালা তার অন্তরে যে বিক্ষোভবহ্ছি জাগিয়ে তুলেছিল সে সত্য তিনি নির্ভীকভাবেই প্রকাশ করেছেন। সম্ভবতঃ বাংলা কাব্যের মসীতে অসির ঝংকার এই প্রথম শোনা গেল | হেমচন্দ্রের স্বদদেশপ্রাণতার উজ্জ্বল পরিচয়ই কবিতাটির ললাঁটে জয়াটকা পরিয়েছে--সে যুগের পাঠক হেমচন্দ্রকে অভিনন্দন জানিয়েছে কারণেহ “ভারত সঙ্গীত” পরাধীন ভারতীয়ের জালা বিক্ষোভের নিংখু'ত চিত্র হেমচন্দ্রের স্বদেশপ্রেমের কণ্ঠিপাথর এই কবিতা উচ্চাঙ্গের কবিকক্গনা কিংবা অতীন্ট্রিয় ভাবব্যঞ্ন। হৃঙিতে অক্ষম হয়েও সময়োচিত সর্বজনীন একটি উপলব্ধিকে যিনি অগ্নিক্ষর। ভাষায় প্রকাশ করতে পারেন তিনি নিঃসন্দেহে জাতীয়তাবাদী স্বদেশী কবি। কোথাও কোথাও তার ভাষা অত্যন্ত

২৯২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে ত্বদেশপ্রেম

' অ-কাব্যিক কিন্ত যুগোপযোগী ভাবকে সঠিক ভাবে ভাষায়িত করার শক্তি সাহস অন্য কোন কবির রচনায় পাইনি বলেই কবিতার বক্তব্য উপেক্ষণীয় নয়। জাতীয় দুর্বলতার প্রতি কবি অঙ্গুলি সংকেত করেছেন বিক্ষুব্ধ চিত্তে

হয়েছে শ্মশীন ভারত ভূমি ! কারে উচ্চৈস্বরে ডাকিতেছি আমি, গোলামের জাতি শিখেছে গোলামী | আর কি ভারত সজীব আছে? অতীত-এশ্বর্য প্রশংসার মাঝখানেও ইতিহাসের নগ্ন সত্য হেমচন্দ্র উদঘাটন করেছেন,

“গোলামের জাতি শিখেছে গোলামি”__-এর প্রতিবাদ করার মত সত্যিই কোন যুক্তি

আমাদের নেই। অথচ স্প্টভীষণের-আত্মদোষস্বীকৃতির সাহসও আমাদের ছিল না। হেমচন্দ্র উনবিংশ শতাব্দীর জাতীয়তাবাদী কবি বলেই আত্মপ্রশংসার সঙ্গে আত্ম- বিচারের সঙ্গতিটুকু তাঁর স্বদেশপ্রেমের কবিতাকে সম্দ্ধ করেছে অহেতুক আত্মনিন্দা নয় _যুক্তিসিদ্ধ এতিহাঁসিক সিদ্ধান্ত তবু এই সত্য যখন দেশপ্রেমিকের

কে উচ্চোরিত হতে দেখি,- তখন তা দাবানল জাঁলাতে পারে। স্বাধীনতা আন্দোলনের ভাবী প্রস্ততির কিছু কিছু মূল্যবান সঞ্চয় হেমচন্দ্রের কবিতার এসমস্ত অংশে ছড়িয়ে আছে। অন্ধ আত্মপ্রশংসা কিংবা সনাতন সংস্কার কোনটাই আমাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেবে না, উপলব্ধিও “ভারত সঙ্গীতে” ধ্বনিত হয়েছে, এখন সেদিশ নাহিকরে আর, দেব আরাধনে ভারত উদ্ধার হবে না, হবে না, খোল তরবার, সব দৈত্য নহে তেমন রাবীন্ত্রিক এ্রক্যচেতনার বাণী সর্বজাতি সমন্বয়ের আহ্বান হেমচন্দ্রের "ভারত সংগীতেই” দৃষ্ট হয়, একবার শুধু জাতিভেদ ভুলে ক্ষত্রিয়, ব্রাহ্মণ, বৈশ্য, শুদ্র মিলে, কর দৃঢ় পণ মহীমগ্ডলে, তুলিতে আপন মহিমা ধ্বজা স্বাধীনতা আন্দোলনের ঘনঘটার লগ্নে আমরা নজরুল কিংবা রবীন্দ্রনাথের কবিতায় কিংব। দ্বিজেন্ত্রলালের খ্বদেশী নাটকে বক্তব্যই নতুনভাবে শুনেছি-_ হ্মচন্দ্রের যুগে ছিল তাঁর একক উপলব্ধি হেমচন্দ্রের কবিতার ভাষা প্রকাশ- তঙ্গির ক্রুটিটি না থাকলে সমস্ত অংশের ভাবমূল্য হয়ত সমালোচকের দৃষ্টি

কাব্য ২৯৩

আকর্ষণে সমর্থ হোতো উপলব্ধির বিশিষ্টতাকে বিশিষ্ট কাব্যরূপে সৃষ্টি করার শক্তি হেমচন্দ্রের ছিল না তাই সমালোচকের দৃষ্টিতে সব কবিতার কাব্যযূল্য স্বীকৃত হয় নি। বাগর্থের সার্ক সংযোজনায় তাঁর অন্ভূতি প্রথম শ্রেণীর কবিত৷ হয়ে ওঠেনি সত্য কিন্তু যুক্তিনিষ্ঠ আত্মসমাঁলোচনায়, আন্তরিকতার, দেশপ্রেমের নিষ্ঠায় পরিপূর্ণ সব কবিতার সাময়িক মূল্য অপরিসীম স্বাদেশিক মনোভাবই কবিকে শক্তি দিয়েছে -উতসাহ উত্তেজনায় কবিতা ত।র বিশুদ্ধ স্বদেশভাবনার বাহক,--

বাঁজরে শিঙ্গা বাঁজ এই রবে,

শুনিয়া ভারতে জাগ্ক সবে,

সবাই স্বাধীন বিপুল ভবে,

সবাই জাগ্রত মানের গৌরবে

ভারত শুধুই ঘুমাঁয়ে রবে ? এই প্রসঙ্গে “আর্ধদর্শনের, কোন সমালোঁচকের উচ্ছুসিত প্রশংসাঁটি লক্ষ্যনীয়, “ধাহারা বাঁংলা ভাষা দুর্বল নিন্তেজ বলিয়া অবজ্ঞা করিতেন, ধাহাদিগের সংস্কার ছিল বগভাষাতে হৃদয়ভেদী জালাময়ী কবিতা লেখা যাইতে পারে না, তাঁহাদের হেমচন্দ্রের “ভারত সংগীত” *ভাঁরত বিলাপ” পড়িয়া! সে ভ্রম দূরীকুত হইয়াছে। কোন জাতির মধ্যে, কোন ভাষাতে, কোন কালে, কোন পুস্তকে এই ছুই কবিতার অপেক্ষা অধিকতর তেজস্বিনী কবিতা আছে বলিয়া বোধ হয় না ।৮৩৫ একে অতি প্রশংসা বলা যাঁয় না। “ভারত সংগীতের” মতো বিশুদ্ধ স্বদেশপ্রেমের

কবিতা অন্য ভাষাতে আছে কি না জাঁনি না--কিস্তু বাংলাতে নেই। হেমচন্দ্রের "ভারত সংগীত”্ই স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্ম দিতে সক্ষম, বক্তব্যের বলিষ্ঠতাঁয় কবিতা সত্যিই নির্জীব আত্মমগ্ন জাতিকে সৈনিকের শৌর্য এনে দিয়েছিল সমগ্র কবিতাটি একই সঙ্গে অতীত ভারতের মর্যাদার আধুনিক ভারতের বিপর্যয়ের একটি যূল্যবীন দলিল | ভারতপ্রেমিক হেমচন্দ্রের প্রতিভাহুকল এক আঁম্চর্য হৃুষ্টি। “ভারত সংগীতে” অন্তনিহিত যে জালাময়ী চেতন! সম্পাদক ভৃদেব মুখোঁপাধ্যায়কে সচকিত করেছিল “ভারত বিলাপে” তা বিন্দুমাত্র প্রশমিত হয়নি কিস্তু অগ্নিক্ষরা উত্তাপকে বিলাপের কারুণ্যে শীতল করার 'একটা ব্যর্থ প্রচেষ্টা কবিতায় লক্ষণীয় বস্ত্তঃ “ভারত সংগীতের” মতো একটি কবিতার শ্ষুলিঙ্গ যদি যথেষ্ট না হয় তা হলে অসংখ্য কবিতায় বাংলা কাব্য মুখরিত হলেও কবির উদ্দেশ্য সার্থক হবে না। কিন্ত সে যুগের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে “ভারত সংগীতই*

৩৫, হেমচন্দ্র ১মথণ্ড। মন্মথনাথ ঘোষ থেকে উদ্ধত ১৩২৬, পৃঃ ২৩২।

৪৬৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

দাবানল সৃষ্টির পক্ষে যথেষ্ট ছিল। পরে হেমচন্দ্র নামকরণ পরিবর্তন করলেন কিন্তু “ভারত বিলাপ”-__“ভারত সংগীতেরই* শীস্তরূপ কবিতায় হেমচন্দ্র অন্ুত্বেজিত বিষাদ সঞ্চার করেছেন মাত্র কবির সংকুচিত মনোভাবের অনবদ্য প্রকাশ দেখি “ভারত বিলাপে”-- ভয়ে ভয়ে যাঁই ভয়ে ভয়ে চাই, গৌরাঙ্গ দেখিলে সভৃতলে লুটাই, ফুটিয়ে ফুকারি বলিতে না পাই, এমনি সদাই হুদয়ে ত্রাস এই নির্মম পরিস্থিতির কাছে মাথা নত করতে হেমচন্ত্র শোকে-ছ্ঃখে ভেঙে পড়েছেন--কিস্তু ছাড় অন্য উপায় ছিল না। সাগর পেরিয়ে দেশান্তরের শত্রর! স্বাধীনশক্তির বিক্রম প্রকাশ করেছে,_-অথচ নিজ ভূমে আমরা পরবাসী ভাবটি

হেমচন্দ্রের কবিতায় মুখ্য হয়ে উঠেছে, অদূরে বাজিয়ে “রুল ব্রিটানিয়া” শকটে শকটে মেদিনী ছাইয়। চলেছে দীপটে ব্রীটন বাঁসীরা ইন্জের ইন্্রত্ব আছে কোথায় ! হায়রে কপাল, ওদেরি মতন আমরাই কেন করিতে গমন

ন৷ পারি সতেজে বলিতে আপন যে দেশে জনম, যে দেশে বাস?

ছুঃখ তাই সীমাহীন দুর্বলতার রন্ক্রপথে পরাধীনতার নাগপাঁশ যখন সমগ্র জাতির কণ্ঠের ভাষা, বাচার আনন্দ গ্রাস করেছে তখনও আমরা অচেতন হেমচন্দ্ সম্ভবত ১৮৫৯ সালে “ভারত সঙ্গীত” রচনা! করেন- উদ্বেলিত গণচেতনার সংঘবদ্ধতার আদি পর্যের আয়োজন চলছে তখন বাংলাদেশে হেমচন্দ্রেরে আত্ম আবিষ্কারের মধ্যে ভারতীয় জাতীয় চেতনার পূর্ণরূপ ধরা পড়েছিল রাঁজশক্তির চোখে প্রায় অমার্জনীয় অপরাধ। কিন্ত উপলব্ধির বন্যারোধ করা যে সহজ নয়--ভারত বিলাপে' হেমচন্দ্র সে আভাষ দিয়েছিলেন,

ভয়ে ভয়ে লিখি কি লিখিব আর, নাহিলে শুনিতে কীণা ঝংকার বাজিত গরজে উৎলি আবার উঠিত ভারতে ব্যথিত প্রাণ

কাব্য ২৯৫

ভয়ে ভয়ে তিনি যে বজ্ব্য তুলে ধরেছেন-_তাতেই স্বাধীনচেতনার ক্ষুন্ধ গর্জন ধ্বনিত হয়েছে | অব্যক্ত হলেও সে গর্জন অশ্রুত নয়; তার আবেদস* আমাদের মন প্রাণ অধিকার করেছে৷ হেমচন্দ্রের প্রথম লংক্করণে গৃহীত পরে বজিত অংশটুকু তাই পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ না করে পারেনি বজ্জিত পাঠের প্রতি উৎসাহ্নী পাঠক নিষিদ্ধ ফলের আকর্ষণের মতোই প্রধাবিত হন বস্তুতঃ গ্রহণ বর্জনের মধ্যে কীব্যাংশটি আরও বেশী অর্থময়তা লাভ করেছে “ভারত সঙ্গীত”*--ও দ্বিতীয় ংস্করণ “কবিতাবলীতে” বজিত হয়েছিল “পশুপতি সম্বাদ”__-এ ব্যঙ্গ উপন্াসিক চন্দ্রনাথ বস্ক আক্রমণ করেছিলেন, “সে কবিতা এখন কোথায়? তিনি কি ছষ্ট, দুর্দান্ত, দুর্মতি, ছুরভিসন্ধি, দুর্বল সাহেবের ভবে তাহা চুরি করিয়া লুকাইয় রাখেন নাই ? চুরি করিয়া না রাখিলে হেমবাবুর দ্বিতীয় সংস্কারে তাহা দেখিতে পাই না৷ কেন ?1”৩৬

আক্রমণে উল্লিখিত বিশেষণগুলির মধ্যে নতুনত্ব আছে অবশ্য হেমচন্দত্রকে দোষারোপ করার স্পষ্ট কোন কাঁরণ ছিল না, তিনি যে রাজশক্তির ভয়ে ভীত নন সে প্রমাণ থাকা সবেও রাঁজদ্রোহিতার সাহস তার ছিল না। একক শক্তি দিয়ে রাজশক্তির বিরোধিতা কল্পনাতেও হাস্যকর জাতীয় আন্দোলনের প্রথমতম স্থব্রপাত হয়েছিল হিদ্দুমেলাতে। সম্মিলিত জনসমাবেশে সংঘগঠনের প্রাথমিক চেষ্টা এটি | হেমচন্দ্রের উদাত্ত স্বদেশচেতনায় সঙ্জীবতার অভাব ছিল) সাংগঠনিক মনোবৃত্তির অভাব ছিল, তাই একক যোদ্ধা উত্তেজনায় ক্লান্ত “ভারত বিলাপে” হেমচন্দ্ের আক্ষেপ হতাশার পেছনে যথেষ্ট যুক্তি আছে যে ভবিষ্যতের দিকে তিনি দৃকপাত করেছেন, সেখানে আশা পোষণের মত কোন প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়৷! তিনি দেখেননি, কংগ্রেসের আবিতর্ভীব কিংবা! হিন্দুমেলার উত্তেজনা তখনও কবিকে আশ্বস্ত করেনি স্বভাবতই হতাঁশীয় কবিচিত্ব মান, - কাব্যে তারই প্রতিধ্বনি | _ “ভারত সঙ্গীত" 'ভারত বিলাপের” পরই 'ভারতভিক্ষা” কবিতাটির উল্লেখ করতে হয়। অনেকের মতে কবিতাটিতে “ভারতসঙ্গীত' রচনার প্রায়শ্চিত্ত করেছেন কবি। ১৮৭৫ সনের ডিসেম্বরে ভিকটোরিয়! পুর প্রিনস অব ওয়েলস-এর কলিকাতা! আগমন নানাদিক দিয়েই উল্লেখযোগ্য প্রিনস রাজশক্তির প্রতীক --সৃতরাঁং নে সময় চারণ কবিদের রীতিতে রাজবন্দনার সাড়া জেগেছিল। স্বদেশদ্রোহীরা যেমন অস্কুষ্ঠানে আনুগত্যের ভারে অবনত-_্বাদেশিকেরাঁও তাদের বিশেষ বক্তব্য নিবেদন করে অনুষ্ঠানের গা্তীর্য বজায় রেখেছিলেন রাজান্ুগত্যের অসংখ্য ৃষ্টান্তে সে যুগের ইতিহাস মুখরিত

৩৬, হেমচন্ত্র | ১ম খণ্ড সন্মগনাখ ঘোষ খেকে উদ্ধত ১৩২৬, পৃঃ

২৯৬ : উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে শ্বদেশপ্রেম

হেমচন্দ্রের “ভারতভিক্ষা” রচনার উদ্দেশ্য প্রথমেই জেনেছি কবিতায় যিনি একদা বজ্বনিনাদ হৃজনে সক্ষম হয়েছিলেন-_-অক্রজলের তর্পণে সেই অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করেছেন ভিক্ষাপান্্ হাতে | হেমচন্দ্রের রাজাহুগত্যের নিদর্শন হয়ে আছে কবিতাটি অজত্র অপবাদ দুর্বল মানসিকতার নিন্দা হয়েছে কবিতা লিখে কিন্ত কবিতাঁটিতে আত্মশোধনের কোন চেষ্টা আছে বলে মনে হয়না এতে হ্মচন্দ্রেরর উদ্দেশ্য যতই নন্দিত হোক না তার আদর্শ লাঞ্চিত হয়েছে বলে মনে হয় না। হেমচন্দ্র সেই ঘ্বিধাগ্রস্ত-ভীত রাজনৈতিক আবহাওয়ার কবি, রাজান্ুগত্য প্রদর্শন না৷ করে ধার কোন উপায় ছিল না। হেমচন্দ্র কবিতাকারে এই জীবন্মত মুহূর্তগুলির চমকপ্রদ বর্ণনা দিয়েছেন তার আদর্শ এখানে ম্পষ্টোনচারিত, পরাধীনতার বেদনা কবিতারও মুখ্য বক্তব্য ভারতমাতার কাছে ষে আবেদন ব্যক্ত করেছেন, রাজপ্রশস্তির মধ্যেও তা অভিনব

কেদোনা কেদোনা। আর গো! জননী আচ্ছন্ন হইয়া শৌকের ধূমে | চিরছুঃখী তুমি, চির পরাধীনা, পরের পালিতা৷ আশ্রিত সদা, তুমি মা অভাগী অনাথা, ছুর্বলা, ভজন-পুজন-যোগ মুগধ। ! কিংবা কবির আঁক্ষেপোক্তির নতুনত্ব!

হায়, পাণিপথ, দারুণ প্রান্তর কেন ভাগ্য সনে হলি নে অন্তর ? কেন রে, চিতোর, তোর স্ৃখনিশি পোহাইল ঘবে, ধরণীতে মিশি অচিহ্ন না হলি কেনরে রহিলি জাগাতে দ্বণিত ভারত নাম? প্রাচীন সৌভাগ্যের মুহূর্তগুলিতেও ধিক্কার দিয়েছেন নিজেকে, আত্মগ্লানির এক, সম্দর নিদর্শন | বৃটিশ শক্তির প্রতি দৃষ্টিপাতের মধ্যেও দেখি হুচিত্তিত ইতিহাঁসেরই বর্ণপা -_-এ ধেন ব্যাজস্ততির মতো প্রশংসাচ্ছলে কৃটকৌশল নির্মমতার চূড়ান্ত নিদর্শনের নির্ভীক বর্ণন1,- হেলায়ে তর্জনী লইল অযোধ্যা রাজোয়ারা যার কটাক্ষে কাপে,

কাব্য ২৯৭

প্রচণ্ড সিপাহী-বিপ্লবে যে বহ্ছি নিবাইল তীব্র প্রচণ্ড দাপে,

যার ভয়ে মাথা না পারি তুলিতে হিমগিরি হেট বিদ্ষ্যের প্রায়

পড়িয়া যাহার চরণ-নখরে ভারত-ভুবন আজি লুটায়-_

কবিতাকে ইংরাজস্ততি বললে এর মর্মসত্যকেই অবহেলা কর। হয়। যেন অক্ষমতার, বিফলতার, নিক্ষল পাঁথরে মাথা! কোটার চেষ্টা। “যার ভয়ে মাথা না পারি তুলিতে”--এ আনুগত্যের বাণী নয়, আত্মচেতনার আলোকে শক্তিমানের করুণ উপলব্ধি

“ভারতসঙ্গীত”, *“ভারতবিলাপ”, “ভারতভিক্ষায়” হেমচন্দ্রের স্বদেশচিস্তার স্বচ্ছতা ধারাবাহিক নিয়মে প্রকাশিত | দেশপ্রেমের গান গাওয়ার নিতান্ত ব্যক্তিগত আনন্দটুকু থেকেও বঞ্চিত হয়ে কবি হেমচন্দ্রকে রাঁজবন্দনার আশ্রয় নিতে হয়েছিল একথা সত্য-_-কিন্ত বক্তব্যের গভীরতায়, আবেদনের ভঙ্গিমায় পার্থক্য আছে বলে মনে হয় না। প্রসঙ্গে "তৃষানল” কবিতাটি আলোচ্য হেমচন্দ্রের “কবিতাঁবলীর” [ ১ম খণ্ড] তৃতীয় সংস্করণে ছিতীয় সংস্করণে বজিত “ভারত সঙ্গীত” কবিতাটি পুনর্যোজিত হয়__“তুষানল” কবিতাটিও মুদ্রিত হয়। গ্রহণ বর্জনের ব্যাপারগুলি এত অল্প সময়ের মধ্যে হয়েছে বলে ব্যাপারটির গুরুত্ব বেড়েছে ! ১৮৭০ সালে কবিতাবলীর 1 ১ম খণ্ড? মুদ্রিত হয়েছে মাত্র ছয় বছরেই এই কাঁব্যগ্রন্থটির তিনটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল। দেশপ্রেমের উদ্দীপনামূলক কবিতাগুলির আবেদন ব্যর্থ হয়নি। সাময়িকতার দাবীতে কবিতাগুলির জন্ম | সেযুগে কবিতাগুলি ।সমাদরও লাভ করেছিল। শেষপর্যন্ত রাঁজরোষ তাঁর কগরোধ করতে পারেনি, কারণ উত্তেজনাকে আবেদনে, ভিক্ষায় রূপান্তরিত করে হেমচন্দ্র রাজশক্তির সঙ্গে আপোষ রক্ষা করেছিলেন, ছাড়া দেশপ্রেমের আবেদনযূলক কবিতা রচনার কোন স্থযৌগ হার ছিল না। কবিচিত্ের দুর্বলতা বলেও যদি বিনতিকে সমালোচনা করি --তবু বলা যায়, অক্ষম আক্রোশে নির্বাক না হয়ে তিনি যে তার দীনতাকে উচ্চরবে প্রকাশ করেছেন_-এতে তাঁর আদর্শচ্যুতি ঘটেনি যে দুর্বলতা সমগ্র জাতির জীবনে প্রকাশিত-_হেমচন্দ্রেরে কবিতায় তার ক্রমবিকাশ পর্বে পর্বে ধর। পড়েছে “ভারত সঙ্গীতের" বজ্তনিনাদ রাজশক্তির শাসনে চিরতরে স্তৰ হয়ে যেতই,_“ভীরতবিলাপে” “ভারত ভিক্ষায়” অন্ততঃ হুঃখপ্রকাশের পথ আবিষ্কৃত হয়েছে

হেমচন্দ্র তুষানল' “ভারত সঙ্গীত” পৃথকভাবে প্রকাশ করে বিতরণ করেছিলেন

২৯৮ উনৰিংশ শতাক্ধীর বাংল। সাহিত্যে ্বদেশপ্রেম

পরিচিত অন্তরক্ধ মহলে | “তুষানলের” আগুনে কবির অন্তর দগ্ধ _-ভতম্মীভৃত কিন্তু মুক্তির কোন প্রত্যাশা হুদুরপরাহত | “তুষানলে* ছুঃখিনী ভারতমাতার কাতর আতি শোনা যায়। “আজি বস্ুদ্ধরা হাসিছে হরষে ভাসিছে আনন্দে ভারতভূমি কি শোক-হুতাঁশে বসিয়া একাকী বিরলে এখানে কাদিছ তুমি ? “বাছা ছুখিনী ভারত জননী” বলিল অমৃত মধুর বোলে, বাঁচাও আমারে আর নাহি পারি সহিতে যাতন হৃদয় ফাটে; মুযূযু ভারতজননীর কাতর বিলাপোক্তি কবিতার বিষয়বস্ত হলেও কবি কোন অভ্রাস্ত আদর্শের কথা কবিতায় ব্যক্ত করেননি ভবিষ্যতের কোন আশ্বাসই ভারত জননীর বিলাঁপকে প্রশমিত করেনি-_ততুষানলের” অগ্নিতে দগ্ধচিত্ত কবি শুধু সথেদে বলেছেন, “ভারত ভূমিতে জননী যন্ত্রণা অন্তরে ভাবনা কিসে ঘুচাই জন্মভূমির দুর্দশাটি ব্যক্ত করে এবং উপলন্দিগম্য সত্যরূপে তা অন্থতব করণর একটা চেষ্টাই এখানে লক্ষ্য করি কোন বৈপ্রবিক চিন্তা কবিকে উদ্কার গতি দেয়নি -কবি তাই নির্জীব_ বেদনাবোধে অনড় হেমচন্দ্রের বিশুদ্ধ স্বদেশপ্রেমের কবিতাগুলির আলোচনা থেকে সত্য স্পষ্ট হয়েছে যে, সে যুগে পরাধীনতার গ্লানির কথা, দেশের দুর্দশার কথা, ছন্দোবদ্ধ গীত্ি- কবিতাকারে প্রকাশ করাই একট! প্রচণ্ড দুঃসাহসিকতারই নামান্তর ছিল। “ভারত সঙ্গীতের” কোথাও কোথাও আবহ্বান বাঁণী যখন প্রায় গর্জনে পরিণত হয়েছে তখনই কবিকণকে থামিয়ে দেবার পরোক্ষ আদেশ এসেছে প্রকাশকের ওপর | প্রকাশক থেকে লেখকের লেখনীর ওপর আদেশের খড়া ঝুলিয়ে রেখে যে কঠিন অতন্দ্র পাহারার ব্যবস্থা কর! হে'লো-_তার মধ্যে কবিক শুধু ক্রন্দন করতে পারে, গর্জন করতে পারে না। তাই দেখি, হেমচন্ত্রের রুদ্ধকণ্ঠের বেদন1 কবিতার স্তরে স্তরে উৎসারিত। কখনে! বিলাপে, কখনো! আবেগে, দেশপ্রেমের স্বতোৎসারিত ভাবকে তিনি ভাষায় বন্দী করেছেন। পাঠকের সঙ্গে হেমচন্দ্রের আসল বক্তব্যের সরাসরি সংযোগ তাই ছঃসাধ্য। বিশুদ্ধ স্বদেশচেতনাজাত কবিতা হিসাবে যে কবিতাকে

কাব্য ২৯৯

চিহ্নিত করা হোঁলো, সে কবিতাও কবিচিত্তের শ্বতস্ফৃর্ত আবেগকে রূপায়িত করেনি যা বল! হয়ণি, যেই অন্ুক্ত, অক্রুত, বন্দিনী ভাষার কান্না হেমচন্দ্রের কবিতাগুলিকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে ভারত-নামাহ্কিত বিশুদ্ধ স্বদেশভাবনাজাত কবিতাগুলি ছাঁড়াও কয়েকটি কবিতায়

কবি আন্তরিকভাঁবে দুঃখ প্রকাশের মাধ্যমে স্বদেশপ্রেমকেই তুলে ধরেছেন “গঙ্গা” কবিতাটি এর স্বন্দর দৃষ্টান্ত। স্বাধীনতাহীন, শক্তিহীন, নির্জীব বাঙ্গালীদের কবি ভৎ“সন। করেছেন---

বাঙ্গীলায় প্রানী নাই,

প্রাণিদেহে প্রাণ নাই,

অস্থি নাই, শিরা নাই,

মেদ নাই, মজ্ভা নাই

অন্তঃহীন চিন্তাহীন,

াদাহলাদ-_দাট হীন

জীবন-সঙ্গীত-হীন নর-নারী বঙ্গে

সেখানে চলেছ কোথা আহলাদে গঙ্গে ?

আত্মসমালোচনা-_-আত্মজাঁগরণের একটি বলিষ্ঠ মাধ্যম | উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকেই স্বদেশসম্পকিত কবিতাবলীর একটি বৃহৎ অংশে আত্মসমাঁলোচনা নিষ্ঠুর বিদ্রপাঘাত লক্ষ্য কর! যায়, "গঙ্গা” কবিতাটি তার প্রমাঁণ। সে যুগের কোন কোন কবি সাহিত্যিক নিছক বিদ্রুপ ব্যঙ্কেই ভাবপ্রকাশের জোরালো মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছেন বস্তুতঃ আত্মজাগরণের মূহুর্তে উপায় বড়ে৷ হয়ে ওঠেনি কিন্তু উদ্দেশ্যের সার্থকতার প্রতি সকলেরই লক্ষ্য ছিল। অন্ঠান্ত কবিতা প্রসঙ্গে দেখা যাঁবে হেমচন্দ্রও ব্যঙ্গীশ্রয়ী স্বদেশপ্রেমের কবিতা রচন। করেছেন "গঙ্গাকে” ঠিক ব্যঙ্গাত্মবক স্বদেশী কবিতা বলা চলে না আঘাত সত্য প্রত্যক্ষ তাই পরবর্তী ংশে কবি পতিতোদ্ধারিনী গঙ্গাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন,--

উদ্ধার বঙ্গেরে মাতা

শিখাইয়া এই কথা

ত্যজ স্বার্থ আরাধনা

সাঁধুক নিজ-সাঁধন।

বন্ধের চিন্তার ধাঁর।

ঘুঢুক চিত্তের কারা

উদ্ধার-উদ্ধার, ওগো, জীব দিয়া বঙ্গে !

৩০৩ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

অংশে কবির একান্ত কামনা “ঘুচক চিত্তের কারা” মুক্তি আন্দোলনের 'ভিত্তি ভূমি আমাদের চিত্তের কাঁরামুক্তির সঙ্গে যুক্ত--সে যুগের দেশসাধকের কাছে সত্য সর্বাগ্রে ধরা পড়েছে

“ইউরোপ এবং আসিয়া” কবিতাতেও কবির আহ্বান ধ্বনিত হয়েছে আস্ম- মুক্তির আকাজ্ষাই যে একদিন দেশমুক্তির আকুতিতে রূপান্তরিত হবে উপলব্ধিই কবিকে শান্তি দিতে পারে জড়চিত্তের জাগরণের সঙ্গে বাধাবন্ধহীন ঝরণাধারার অভিযানের প্রসঙ্গ মনে পড়ে গিরিপর্বত সম জড়ত্বকে দূরে সরিয়ে বাঙ্গালী জেগে উঠুক, এই তার কামনা সম্মুখে সাগরের কলধ্বনি, দুর্বার নদী নিজেই শুনতে পাঁবে। বাঙ্গালীর স্বতঃসিদ্ধ দুর্বলতাকে কবি তাই নিন্দা না করে পারেননি

তোমাদের দিবা সন্ধ্যা প্রাতঃকাল রজনী সকলি সমান জ্ঞান ! আছে কি না আছে প্রাণ, অন্ধ অথর্বের প্রায় ডাক খালি বিধাতায়, বলিলে অদৃষ্টে দোষি তুষ্ট হবে তখনি ? সঃ রা শত কঃ সকলি দিয়াছে বিধি অভাব যা কেবলি আমাদেরি হৃদিতলে সে আোঁত নাহিক চলে . আশ্রয় করিয়া যাঁয় পাশ্চাত্য আগুয়ে ধায়-_ বাঁচিতে মরিতে, হায়, জানি নারে কেবলি !

দেশপ্রেমের শক্তিই কবিকে জাতিগত দৌর্বল্যের সমালোচনায় প্রণোর্দিত করেছে সেযুগে অতীতচর্চা বর্তমান সমাঁলোচন৷ সাহিতোর একটি পরিচিত ভঙ্গী। ব্যঙ্গ নিন্দার চাবুকে জাতিকে প্রায় বিধ্বস্ত করে ফেলেছিলেন সে যুগের একদল দেশহিতৈষী | ব্যঙ্গলেখক হিসেবেই আবিভূর্ত হয়েছেন, ব্যঙ্গকেই উপজীব্য করে সাহিত্য সৃষ্টি করে গেছেন আজীবন এমন লেখকেরও আবির্ভাব হয়েছে এযুগেই ঈশ্বরগপ্ত পথের দিশারী ; তার স্বদেশপ্রাণতীর মূলে রয়েছে স্বসমাজপ্রীতি সমাজবিরোধীদের প্রতি কটাক্ষপাত। হেমচন্ত্রও সমাজ সমালোচনা করেছেন-__কিস্ত এখানেও স্বদেশপ্রীতির প্রত্যক্ষ পরিচয় পাওয়া যায়। বর্তমান ভারতের শক্তিহীনতা- বার্ষশূস্যতা দেখে কবি দুঃখিত, চিত্তের শক্তিবুদ্ধির উদ্দেশ্য নিয়েই ধরণের কবিতা!

কাব্য ৩০১

রচনা করেছেন সে যুগের সামাজিক পরিবর্তনগুলি কবির সমালোচনার বিষয় নয় __কিস্তু সেমুগের মানুষের চারিত্রিক দুর্বলতা জড়ত্ব কবির রূঢ় সমালোচনার উৎস হেমচন্দ্র যেমন অতীত মুগ্ধতায় মগ্ন তেমনি কঠোর বাস্তবের শ্রীহীনতায় চমকিত | ছুটি, অবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেন নি বলেই তার বেদনা-স্তার হতাশা ব্যঙ্গের মূলেও এই বেদনাই সক্রিয়। “কুহুস্বর” কবিতাটি নিছক আত্মভীবনার বাহক হয়েও কবির স্বদেশপ্রাণতারই নামান্তর হয়েছে কবি ভাব থেকে ভাঁবাস্তরে নয়, যেকোন একটি বাস্তব রূপকে অৰলম্বন করেই তার আক্ষেপ হতাশার জগতে উত্তরণ করে থাকেন ধরণের কবিতাগুলিতে কবির ভাবতন্ময়তা দেশচিন্তা ওতপ্রোত হয়ে আছে। প্পদ্মের স্বণাল” শুধু অবলম্বন-_এ থেকে হতাঁশাঁর উদ্দীপন। যে জাগাতে পেরেছেন-_তা শুধু ভারত চিন্তায় কবি প্রায় বাহাজ্ঞানশুন্য বলেই কুহুস্বর* পদ্মের সুণীল'-কে তাই বিশুদ্ধ স্বদেশচিন্তার কবিতা বলেই মেনে !নতে হয়। কবি যে তার বিশিষ্ট দেশ ভাঁবনাকেই প্রন্গাশ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তা কবিতাগুলির কয়েক ছন্র পড়েই ধরে ফেলা যায় 'কুহুষ্ধরের” অংশটি লক্ষ্যণীয়,

নাহি কি বঙ্গে হেন কোন প্রাণী হায়

সঞ্চারি আশার লতা শুনায় অমনি কথা ?

অমনি নিগুঢ় ভাবে ?--শাহি কি অমন

হৃদয়-খেপানো কথা কাহার! 1 গোপন

“হৃদয় খেপানো” কথাগুজ্ছটি হয়ত অতি সাধারণ কবিত্ব বজিত দুটি শব্ধ কিন্ত বোঝাই যায় কবি এখানে একটি উচ্চ আদর্শের আশায় অধীর সাহিত্যে উত্তেজনা সঞ্চারের অক্ষমতায় তিনি ম্লান সজীবতা প্রাণচঞ্চল্য হজনের যুগ এসেছে শুধু অষ্টা অনাঁগত।

অসার নিঃক্রোত এই বঙ্গের হৃদয়! হাসিতে কাদিতে প্রাণে গভীরতা নাহি জাঁনে, না জানে উৎসাহ বানে প্রাণের প্রলয় ! জগৎ-ভাঁনানো বেগ বঙ্গেতে কোথায় ? [ কুহুত্বর | কিন্তু বজ্জনির্ধোষের আকুলতায় অধীর হলেও রাজরোষের উদ্ধত আক্রমণ থেকে তিনিও আত্মরক্ষা করতে পারেন নি

পনম্মের স্বণালে'ও কবিচিত্তের একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় পদ্মহীন মণালের মত শক্তিহীন জাতিকে তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন--এই অগৌরবের বেদনায় তিনি ভাব প্রকাশের পথ খুঁজে পান,--

আজি ভারতে হায়, কেন হাহাধ্বনি ! কলঙ্ক লিখিতে যার কীদিছে লেখনী

৭৩৩২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

তরঙ্গে তরঙ্গে নত পছ্মামৃণালের মত পড়িয়া পরের পায় লুটাঁয় ধরণী আজি ভারতে কেন হাহাকার ধ্বনি !

হেমচন্দ্রের খণ্ড কবিতায় উজ্জ্বল স্বদেশচিন্তার এমন অসংখ্য দৃষ্টান্ত এক যুগের রসিক জাগরোম্ুখ মানুষের চিত্ত জয় করেছিল কাব্যবিচারের মানদণ্ড দিয়ে সব স্বদেশপ্রেমের কবিতার বিচার হয়ত চলে না। চিরন্তনত্ব দাবী না করেও জ্বনচিত্ত জয়ের ক্ষমতা এসব কবিতার আছে পরাধীনতার গ্লানিতে সমগ্র মানুষ যখন আক মগ্র--সে যুগের সামনে আশার বাণী, নির্ভরতার সংগীত নিবেদন করে তারা শাশ্বত বাণী নয়, -সংগত সংগীত অন্ততঃ শোনাতে পেরেছেন ; কৃতিত্ব বড়ো কম নয়। হেমচন্দ্রের আন্তরিকতাঁয় অশ্রজলে দেশপ্রেমের উপলব্বিগুলি কবিতাকারে প্রকাশিত হয়েছিল বলে যুগের সমালোচকের আক্ষেপ করে থাঁকেন। চিরন্তনত্ব নেই বলেই এই অমূল্য স্ব্টিকে সনাতন আদর্শের মাপকাঠিতে বিচার কর! সঙ্গত নয় সে বিচারে উনবিংশ শতাব্দীর সমগ্র সাহিত্যই বা! কতটুকু গৌরব দাবী করতে পারে?

স্বদেশপ্রেমের উত্তাল ঢেউ এসে একদিন আমাদের ব্যক্তিগত-আত্মনিষ্ঠ সমস্ত চিন্তাগুলিকেই বিপর্যস্ত করেছিল--সেট৷ বোঁধ হয় জাতির গর্ব করে বলার মতই একটি সংবাদ উনবিংশ শতাব্ধীর জাতীয়তাবাদী কবির! ব্যাপারে অগ্রণী ছিলেন --এ যুগ তাদের অযূল্য চিন্তায়-আতন্তরিকতাঁয় প্রকাঁশিত। শ্বরগুপ্ত থেকে নবীনচন্ত্র পর্যস্ত উনবিংশ শতাব্দীর কবিরা অন্ততঃ কাব্য সাহিত্যের একটি বলিষ্ঠ ইতিহাসের ্রষ্টা। হেমচন্ত্র যুগের জাতীয় কবি বিংশ শতাব্দীর রক্তাক্ত বিপ্রবেরও বহু আগে, এক্যবদ্ধ হওয়ারও বহু আগে হেমচন্ত্র তার স্বদেশপ্রেমের এই খণ্ড কবিতাগুলিতে আত্মগঠনের উপদেশ দিয়েছেন। “জীবন সংগীত' হেমচন্দ্রের দৃষ্টিতে বলিষ্ঠ আত্মদ্দানের সংগীত--জীবন-পণের সংগীত

কর যুদ্ধ বীর্যবান যায় যাবে যাক প্রাণ-_ মহিমাই জগতে দুর্লভ |

ভাবনাহীন-দুর্বলচিত্ত-পরশাসনে অভ্যস্ত জাতির জন্য তাঁরা আজীবন চিন্তা ব্যয় করেছেন,--ছুঃখবোৌধ করেছেন,_স্বাঁধীনতা আন্দোলনের হুচনা করেছেন,- একটি বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে এইপব জাঁতিসপ্িক্রসংগঠক দেশহিতৈষী অষ্টাদের স্থ্টিকে বিচার করতে হবে। সাহিত্য বিচারের মাপযস্ত্রে কবিদের হৃদয়োস্তাপের সংবাদ না মেলে যদি--সেই সমালোচনাকেই ভ্রান্ত বলে মানতে পারি না। এঁক্যবোধের নতুন প্রেরণা সঞ্চারে হেমচন্দ্রের দান কম নয়। “দেবনিপ্রা” কবিতায় কবি এক্যের জয়গান শুণিয়েছেন,-.

কাব্য ৩০

মত্যপুরীতে সেই ধন্য জাতি একতার জ্যোতি বদনেতে ভাতি, তেজোগর্ব ধরি থাকে নিজ বাসে, হেরে পুত্র দার। প্রাণের হরষে হাসিতে কাঁদিতে করে না ভয়, করে ন। কখন পাগ্যঅর্থ দান, পরপদতলে হয়ে জিয়মাণ, কৃতাঞ্জলি ভারে, ভীরুতার স্বরে, বলে না কখন ঘাতকে জয়। | হেমচন্দ্রের মনোদর্পণে ভবিষ্যতের এই অতি মূল্যবান চিন্তা আত্মশক্তি উদ্বোধনের মন্ত্রটি ধরা পাড়েছে,_-“দেবনিদ্রীয়” সেই চিত্রটি পাই চিন্তায় অভিনবত্ব আছে, বৈশিষ্ট্য আছে, কাব্যে এই সঙ্ঘশক্তির বাণী-এক্যের মহিমা! হেমচন্দ্রপূর্ব কাব্যসাহিত্যের কোথাও মিলবে না। অতীতমহিমা উপলব্ধিতে হেমচন্দ্র সেযুগীয় ধারারই অনুসরণ করেছেন। রঙ্গলালের অতীতচর্চা হতিহাসাশ্রিত সত্যনির্ভর | হেমচন্দ্র আর্ধমহিমার গৌরব উপলব্ধির জঙ্য ইতিহাস অতিক্রম করে স্দূর পৌরাণিক যুগের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিলেন আর্ধসংস্কতির সমৃদ্ধময় যুগে কবি বিচরণ করেছেন, অসংখ্য কবিতায় সে মুগ্ধতার কথা সোচ্চারে ব্যক্ত করেছেন দেশচিন্তার বিশিষ্টতাই এই যে, তা দেশের অতীত মহিম। স্মরণে সর্বদাই পুলকিত হয়। হেমচন্দ্র যে অতীতপ্রেমী হয়ে উঠেছিলেন তা শুধু বর্তমানের জালা দৈন্তের হাঁ থেকে ক্ষণিক মুক্তি পাওয়ার লোভেই অতীতগরিমায় যে কোন দেশপ্রেমীই আন্দোলিত ন! হয়ে পারেন না--অথচ এতিহ্ধারণ করার শক্তি হারিয়ে আমরা পৃথিবীর সামনে উপহসিত লাঞ্ছিত জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়েছি, হেমচন্দ্রের কবিতায় বেদনা! শত ধারায় নির্গত হয়েছে! ভারতপ্রেমই কবিকে অতীত ইতিহাঁস সন্ধানী করে তুলেছে তাঁর “বীরবাহু কাব্য৮ অনৈতিহাসিক অলীক কল্পনা হলেও অতীত প্রেমই কবিকে কাব্য রচনায় প্রেরণা দিয়েছিল। ভারতবর্ষের অধুনীতন পতনের ছূর্দশার প্রত্যক্ষ পরিচয় কবির ছিল তবু তিনিই সাহস ভরে তাদের সামনে আঁদর্শের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছিলেন | দেশপ্রেম সৃজনের নানা উপায় আমরা নানা কবির চেষ্টার বিভিন্নতা দেখেই বুঝেছি-_কিন্তু অতীত স্বতি যে বর্তমানের মানুষের চেতনাবিকাশের একটি শক্তিশালী মাধ্যম_-এ বিশ্বীস উপলব্ধি হেমচন্দ্রের | “কবিতাবলীর” অসংখ্য কবিতায় অতীত দৃষ্টান্ত তুলে ধরার বিশ্দুমাত্র সুযোগ

৩০৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

পেলেই কবি তা ব্যবহার করেছেন অবশ্য অতীত ভারতের গরিমার প্রসঙ্ক এসেছে শক্তি বীর্যবস্তার কথায়-_যা অতীত ভারতবাসীদের ছিল এবং বর্তমান ভারতবাসীর] যা হারিয়েছে নিতান্তই গতানুগতিক বনুব্যবহৃত দৃষ্টান্ত হেমচন্দ্রে নানা কবিতায় ঘুরে ফিরে এসেছে এসব দৃষ্টান্ত প্রকাশে কবিচিত সর্বদাই যে উচ্ছাস আনন্দে ভরপুর হয়ে উঠেছে তা নয়-_বরং নিষ্ঠুর বর্তমানের গ্লানি কবিকে খানিকটা ম্লান করেছে। “ভারত বিলাপ” কবিতায় বিলাপাকারে তিনি অতীত ভারতবনগশা করেছেন,-স্ যখন ক্ষত্রিয় অতীত সাহসে, ধাইত সমরে মাতি বীররসে, হিমালয় চূড়া গগন পরশে গাইত যখন ভারত-নাম | ভারতবাসীর। প্রতি ঘরে ঘরে গাইত যখন স্বাধীন অন্তরে স্বদ্দেশ-মহিম। পুলকিত স্বরে জগতে ভারত অতুলধাম

পোরাণিক মহিমার সঙ্গে এঁতিহাসিক সত্যের সংযে।গ কিছুমাত্র না থাকলেও, এরতিহাবোধ সর্বদা! ইতিহাঁসনির্ভর নয়। তাই পুরাণের শাস্ত্রের অজশ্র দৃষ্টান্তের সঙ্গে সহজেই আমরা উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠি-_ক্ষব্রিয়ের মহিমা আমাদেরই একান্ত নিজন্ব গর্ববোঁধের সামগ্রী বলে মনে করি কিন্তু এর পেছনে কোন যুক্তি নেই স্বাধীনতাবোধই অতীত নিষ্ঠার জন্ম দিয়েছে-_তাই দৃষ্টান্তের খুঁটিনাটি ইতিহাস তুলে ধরার কোন চেষ্টা নেই-_শুধু বুদ্ধি-বীর্য শক্তির কথাই কবি উল্লেখ করেন-_“পদ্ধের মৃণাল” কবিতায়,

বুদ্ধি বীর্য বাহুবলে কুধন্য জগতী তলে, ছিল যার1 আজি তার] অসার তেমনি

.ভারতবাসীর দেশপ্রেমের উল্লেখযোগ্য ইতিহাস সব যুগেই ছিল। দেশশগ্রীতি কাব্যাকাঁরে প্রকাশের বস্ত হয়ে উঠেনি হয়ত কিন্তু দেশপ্রেম যে সহজাত একটি অনুভূতি তাত স্বীকৃত। যে দেশপ্রীতি অন্তঃসলিলা উপলদ্ধিমাত্র দেশের ছুদ্দিনে সেইটিই প্রকাশ্য বক্তব্যে পরিণত হয়েছে হেমচন্দ্রের যুগে দেশের দুদিনের সংবাদ সর্বজনবোঁধগম্য একটি বিশিষ্ট চিন্তায় পরিণত হয়েছিলো বলেই অতীত ইতিহাঁসের তুচ্ছতম সংবাদই কবিতার বিষয় হতে পেরেছে আর্য এঁতিহের উল্লেখ ভারতবাসীর চিত্তে ষে উত্তেজনা সঞ্চার সম্ভব হেমচন্দ্রের কবিতায় সে সত্য ধরা' পড়েছিল। “ভারত সঙ্গীতের” একটি অংশে কবি বলেছেন ধিক্কারের সঙ্গে,

কাব্য ৩৩৫

বিংশতি কোটি মানবের বাস ভারত ভূমি যবনের দাস? রয়েছে পড়িয়া! শুংখলে বাধা ! আর্াবর্তজয়ী পুরুষ যাহারা সেই বংশোত্তব জাতি কি ইহারা ? রী গা দী ধিক্‌ হিন্দুকুলে! কীর ধর্ম ভুলে, আত্মঅভিমান ভুবাঁয়ে সলিলে, দিয়াছে সঁপিয়া শক্র করতলে সোনার ভারত করিতে ছাঁর | ধিক্কার আত্মবৌধ জাগিয়ে তোলে নিশ্চয়ই পভাঁরতসংগীতের” মধ্যে হিন্দু- মহিমার প্রতিষ্ঠা চেয়েছিলেন কবি কিন্তু যবনলাঞ্িত ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার স্থযোগ কোথাও ছিলনা ভারতবর্ষের প্রামাণ্য ইতিহাস ভুড়ে এই আছে বিদেশী শাসকের কাহিনীতে-_তীদের কাছে হিন্দু গৌরবের অর্থ ছিলনা কিন্তু এখানে যবন ইংরাজ-_-এবং যুগের কাছে লুগুপ্রায় নিস্তেজ অতল অতীতের স্মতি মস্থন করেছেন হেমচন্দ্র “হয়েছে শ্বশান ভারত ভূমি 1৮-_বলে হেমচন্দ্র যখন আক্ষেপ করেন তখন বুঝে নিতে হবে ম্মরণীতীত কাল থেকেই ভারতের এই শ্শানদৃশ্য ভয়াবহরূপে সত্য হয়ে উঠেছিলো! _কিস্তু তা কখনও আক্ষেপের বা বিলাপের বস্ত হয়ে উঠেনি উনবিংশ শতাব্দীতেই কোন কোন স্পর্শকাতর মানুষের কাছে ভারতের এই বিভীষিকাময় রূপটি ধর। পড়েছিলো ব্যঙ্গ কবিতায় হেমচন্দ্রের দক্ষতা সধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে, সুতরাৎ আলোচনায় অসুবিধা কম। প্রথমতঃ ব্যঙ্গ কবিতার রকমফের নিয়ে ধরাবাধা। আলোঁচন। ইতি পূর্বেই হয়েছে বাংলা কবিতায় ব্যঙ্গের ব্যবহার ইতিপূর্বেই* হয়েছে, _ হেমচন্দ্রও সমসাময়িক জীবনযাত্রীর খুঁটিনাটি নিয়ে অসংখ্য বঙ্গ কবিতা রচনা করেছেন। কিন্তু ষেসব ব্যঙ্গ কবিতার প্রেরণা নিঃসন্দেহে সমাজকল্যাণ কিংবা আত্বউদ্বোধন সেসব কবিতাই হেমচন্দ্রের স্বদেশচেতনার পরিচয়বাহী | স্বাধীনচিন্তাকে স্বাধীনভাবে প্রকাশ করার অধিকার যেখানে লাঞ্চিত ব্যক্ষের সুৃতীক্ষ শরলিক্ষেপের তির্যক ভঙ্গীতে সে ক্ষোভ খানিকটা মিটিয়ে নেওয়া যাঁয়। হেমচন্দ্র অবশ্যই সে ক্ষোগ গ্রহণ করেছেন ব্যঙ্গ কবিতায় স্বদেশাক্রক অন্ুভূতিগুলি যেন উৎসারিত হয়েছে নিঝর্রিনীর মতই স্বচ্ছন্দগতিতে | কিন্তু ব্যঙ্গ কবিতা রচনার আগে তাঁর

৩০৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল। সাহ্ত্যে স্বদেশপ্রেম

স্বদেশাত্মক কবিতাগুলিতে শুধু বিলাপধ্বনি অসহার ক্রন্মনই মুখ্য হয়ে উঠেছিলো --তাতে আবেগ ছিল কিন্তু ছিল না স্বচ্ছন্দতা। কবি এবার যেন মুক্তি পেলেন পুরোপুরি ভাবে | ভাব প্রকাশভঙ্গীর মধ্যে অবাঞ্থিত হস্তক্ষেপ কবিকে যে অবস্তি এনে দিয়েছিলো--তার হাত থেকে যেন তার আকাজ্কিত পলায়ন আড়ষ্ট কাব্যভঙ্গীকে আশ্রয় করে কবিচিত্ত স্বাচ্ছন্দ্য হারাতে বাধ্য - যেমন মৃত পাঁদপ কোন সজীব স্বর্ণলতিকার বাহন হতে পারে নি কোনদিন হেমচন্ত্রের বিশুদ্ধ দ্বদেশপ্রেমাত্বক কবিতার মধ্যে বক্তব্যের সমুদ্রকল্লোল যেন স্তব্ধ হয়েছিল-ব্যঙ্গ কবিতায় আবেদন বক্তব্যে মোটামুটি রসসন্বন্ধ স্থাপিত হয়েছে হেমচন্দ্রের কবি-প্রতিভার মধ্যে শক্তির দীনতা নেই-_কিন্ত স্বচ্ছন্দতার অভাব আছে। জীবনউপলৰ মৌলিক অনুভূতিগুলি যেন কবিতায় নিস্রাণ উচ্চারণমাত্র হয়েছে, সংগীতধমিতা লাভ করেনি অথচ আত্মগত ভাবের অবাধ-অকুঞ্ঠ প্রকাশের জন্য যে কবিচিত্তে আকুলতা ছিলে! সে সত্য অস্বীকার করা যায় না। অন্ততঃ স্বদেশপ্রেমচেতনার মৌলিক উপলবিগুলির মধ্যে যে বলিষ্ঠতা, আন্তরিকতা আবেগধমিতা ছিলো তা সত্য। অথচ তা সার্থক কৃষ্টি হয়ে ওঠেনি | ব্যঙ্গ কবিতায় বিষাদ বৈরাগ্যের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে কবি যেন আত্মস্থ হলেশ।

ব্যঙ্গ কবিতায় হেমচন্দ্রের বিষয় নির্বাচন গতানুগতিক ; পূর্বস্থীদের মতো৷ সে যুগীয় উন্মাদনাই কবিতার বস্ত হয়ে উঠেছিলো-_তাতে তির্যক ভঙ্গিমার রস মিশিয়ে পরিবেশন কর] হয়েছে মাত্র হেমচন্দ্রের “বিবিধ রচন1” কাব্য পুস্তিকায় যে ব্যঙ্গ কবিতার সংকলন করা হয়েছে__মুখ্যতঃ সেগুলি তৎকালীন নান। পত্র পত্রিকায় নানা উত্তেজনামূলক ঘটনাবলম্বনে রচিত। কবিতাগুলির মধ্যে হেমচন্দ্র বেশ সজীবতা প্রকাশ করেছিলেন ,_রসহৃষ্টির দৈন্য সেখানে কম ছিলে! বলে মনে হয়'। সে যুগের অস্থিরতা, উন্মাদনা চাঞ্চল্যের মাদকতায় কবিও যোগ দিয়েছিলেন ।-_ প্রতিটি কবিতার হচনায় আছে সেযুগীয় কেনি না কোন ঘটনার ছায়াপাত। কিন্ত ঘটনার নিছক বিবিরণই কবিতা নয়, _ এখানে দেশপ্রেমের প্রেরণাই কবিকে আত্মসমালোচনার শক্তি এনে দিয়েছে হেমচন্দ্র জানেন আত্মদৈন্যের কথা,__জাতীয় চরিত্রের দুর্বলতার কথা। দেশপ্রেমূলক কবিতায় আত্মশিন্দার আধিক্য বড়ো কম নয়,_-কারণ প্রশংসা দাবী করার মত কোন যুক্তি বা দৃষ্টান্তের অভাব সর্বজনবিদিত। আত্মশক্তির হীনতা দিয়ে যে পরাধীনতার বীজ এদেশে রোপণ করা হয়েছিলো আত্মসমালোচনার গঙ্গাজলেই তাকে পবিত্র করে নিতে হবে | দেশপ্রেমী কবিরা তাই আত্মসমালোচন। করেই মগ্ন চৈতন্যের বন্ধ দুয়ারে করাধাত করেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র উপন্তাসে-প্রবন্ধে- সমালোচনায় এই আদর্শটি গ্রহণ করেছিলেন হেমচন্দ্র অবশ্য অতীত প্রশংসায় মুখর

কাব্য ৩০৭

| ছিলেন,__আত্মসমালোচনার অবাধ ক্যোগ পেলেন ব্যঙ্গ কবিতার মাধ্যমে | আত্ম- সমালোচনা তীবতর হয়েছে যখন আমাদের ক্লীবত্ব, জড়ত্বকে অগ্তের সাহসিকতা ক্ষমতার সঙ্গে তুলন? করেছেন প্রসঙ্গক্রমে বিদেশীদের শক্তি সামধ্যের প্রতি ইপ্দিত করেছেন কবি এতে তাঁর চিন্তাশক্তির উদারতাই লক্ষ্যণীয় দেশপ্রেমের আদর্শই আত্মনিন্ার মূলে বিরাজমান স্থতরাং হেমচন্দ্র দেশাত্মবোধের তারে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েননি-_সেযুগের সমাজ সংস্কারক মনীষীদের মত পরপ্রশংসা! আশ্রনিন্দাকে উচ্চকণ্ে প্রকাশ করে তিনি তীর শক্তি নির্ভীকতারই পরিচয় দিয়েছেন ইংরেজ বন্দনা স্বদেশশ্রীতির পরিচয় নয়, নিয়মে কাব্য বিচার হয়েছে বটে কিন্তু বলিষ্ঠ স্বাদেশিকতাই ইংরেজ বন্দনাঁর ছদ্মবেশে আত্মজাগরণের পরোক্ষ প্রেরণা দান করে-_- সে সত্য তলিয়ে বিচার কর হয়নি হেমচন্দ্র জীবনীকাঁর মন্মথনীথ ঘোঁষের উক্তিটি ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য,_-“ঈশ্বরগুপ্তের ত্বদেশপ্রেম যে গভীর সে বিষয়ে সন্দেহ করিবার কোনো কারণ নাই, কিন্তু স্বদেশের কুকুরদিগকে মধ্যে মধ্যে কশাধঘাত করিয়াছেন এবং বিদেশের মহাত্মগণকে শ্রদ্ধাপ্রদর্শন করিয়াছেন বলিয়া শিক্ষিত হেমচন্দ্রের স্বদেশবাঁৎসল্য বা স্বজাতিপ্রেম যে ঈশ্বরগুণ্ডের স্বদেশপ্রেম হইতে নিকৃষ্ট এরূপ অনুমান করা একান্ত অনুচিত।” [পৃঃ ২৩৮, হেমচন্ত্র, দ্বিতীয় খও, মন্মথনাঁথ ঘোঁষ ] হেমচন্দ্রের স্বদেশপ্রীতির বিচিত্র সার্থক প্রকাশ হয়েছে ব্যঙ্গ কবিতায় কবি এখানে সংস্কারমুক্ত প্রগতিবাদী, ভবিস্যৎদ্র্ী। অমৃতবাজারে প্রকাশিত “খিদিরপুর ধ্ীঁত ভাঙ্গা কাব্যে” কবির আত্মদর্শনের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে পাঠকের ছম্মনামী কবির কবির পরিচয় সেখানে খোগলা চন্দ্র বন্দীয়ান উপাধিটি বু করুণস্থতির কথা মনে করিয়ে দেয় বাস্তবিকই কবি যেন বন্দীয়ান__-এ শৃঙ্খল যেন কবিকে তাড়িত করেছে কাব্যজীবনে “পলাশী যুদ্ধের” স্মৃতি ব্যঙ্গাকারে ব্যক্ত ; হাস্যকর স্বাধীনতা পাঁওয়ার চেষ্টার বিরুদ্ধে কবির নিম ব্যঙ্গ, “পলাশী পাঁছকা ভুলে উঠাঁনে পতাক] তুলে ভারত উদ্ধার করে হায়।” কারণ সত্যিকারের মুক্তির পথ যে কত সাধন1 আয়াসসাধ্য সে সমন্ধে জাতি অচেতন বাঙ্গীলীর শক্তির পরিচয় দিচ্ছেন কবি। বাঙ্গালি অপূর্ব জাতি বিষম বুকের ছাতি সাহসে সম্বাদ পত্র লেখে, মল্লভূমি মুদ্রালয় একাকী অকুতোভয় কল্পনায় কত যুদ্ধ দেখে নিছক হাস্যরসের কবিতা হিসেবে মুদ্রিত হলেও সচেতন সমালোচনার হুশ কৌশ।

৩০৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

দৃষ্টি এড়ায় না। অবশ্য ্বদেশপ্রেমিকতার এই পরিচিত তিটি সে যুগের বহু কবিরই আয়ত্ব

ধরণের হাশ্যরস কিন্তু রসিকতার নামান্তর ন]৷ হয়ে গুরুভার আ'ত্মদর্শনেই পর্যবসিত হয়েছে অবশেষে | অথচ কবি যেন ধরাছোয়ার উর্ধ্বে অবস্থান করছেন। “বাজীমাতে' নিছক সংস্কারাকীর্ণ মনেরই উত্তেজিত উক্তি রয়েছে, অথচ নাঁরীপ্রগতির বিরোধিতা কর! যে কবির আন্তরিক উদ্দেশ্য নয় অন্য কবিতাঁতে সে সত্য প্রতিফলিত এধরণের হালকা চালের ব্যঙ্গকবিতার মধ্যে হায় কি হলো" কবিতাটিতেই সার্থক হেমচন্দ্রী রীতির সাক্ষাৎ মিলবে তৎকালীন রাজনৈতিক উত্তেজনার সংবাঁদ এতে পরিবেশিত হয়েছে ব্যঙ্গাকাঁরে কিন্তু হেমচন্দ্রের স্বদেশচিন্তার বিশিষ্ট ধারাটিও অনুপস্থিত নয় শক্তিহীন বাঙ্গালীর স্বাধীনতা লাভের চেষ্টাকে কবি লক্ষ্য করেছেন বেদনার সঙ্গে, কংগ্রেসী নেতার আবির্ভীবে যে আশা জেগেছে- তা ছরাঁশায় পরিণত হতে দেরী হয়নি। কারণ রাজদণ্ডাঘাত নেমে এসেছে নিভূলভাঁবে ;_ স্বাধীনতার আকাজ্কাকে দমিয়ে দিতে তারা কখনও ভুল করেনি

হাঁয় কি হলো--কথার দৌষে স্বরেন গেলো জেলে ! *ইংলিসম্যানে* “কনটেম্পট” “সিডিসন”ও চলে £ ফিনকি ছুটে ভারত জুড়ে আগুন গেলো। লেগে,

হায় কি হলো--ছেলে গুলে পুলিশ দিলে দেগে !

হেমচন্দ্রের কবিতাতেই ভারত জুড়ে আগুন লাগার সংক্ষিপ্ত আভাস পাচ্ছি,_যদিও সর্বভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন আরও পরের ঘটনা_-কিস্তু সর্বভারতীয় অসন্তোষ তখনই ধর! পড়েছিল ইলবার্ট বিলের বিপরীত পরিণাম দর্শনে ভারতবাসী ক্ষুব্ধ না হয়ে পারেনি “টেনেন্সি বিলে” অসংখ্য কারচুপি ছিল। কবিতায় সে উল্লেখও রয়েছে। জাগ্রত গণচেতনার দ্বারে এরা করাঘধাত করেছিল,_-শাসনের বীভৎসতায় স্তস্ভিত ভারতবাসীর দৃষ্টি স্বচ্ছ হয়ে এসেছিলো সে যুগেই কবিতায় সেই সংবাদ পরিবেশনের নিখুত আয়োজন করেছেন হেমচন্দ্র,_

হায় কি হোলে! কলম ছুঁতে হাসি এলো দুখে ভেবেছিলুম মনের কথা বলবে! ছাঁতি ঠুকে এলো হাসি-_হাঁসিই তবে, ঢেউ খেলিয়ে চল্যে, ছড়াক খানিক রসের কথা--'হায় কি হলো? বল্যে। [প্র] তবু কবিতায় কবির ছুঃংখ অগোচরে থাকেনি, স্বভাবতই প্রকাশিত হয়েছে। 'হাঁয় কি হলো'__নামকরণেই বেদনাবোধের চূড়ান্ত প্রকাশ হয়েছে। ব্যন্গের নয্ন, ছঃখেরই অভিব্যক্তি

কাব্য ৩০৯

পরের অধীন দাসের জাতি “নেসেন' আবার তারা? তাদের আবার “এজিটেসন'_-নরুন উচু করা !

ক্ষোভের অগ্ি ধিকিধিকি জলতে শুরু করেছিল সে যুগেই | হেমচন্দ্র দাসের জাতি' কে মুক্তির উপায় নির্দেশ করবেন বলে আসেননি বটে কিন্তু কটু হলেও সত্য কথনের সামণ্য তাঁর ছিল। সাহিত্যরঘীদের ক্ষমতা তাঁর অজানা ছিল না, বঙ্কিমচন্দ্রের নায়কত্ব স্বাদেশিকের চিস্তীশক্তিকে শতগুণ বাঁড়িয়েছিলো-_তার অভাবেও হেমচন্দ্র ক্ষোভে বলেছিলেন,__

“হায় কি হলো বঙ্গদর্শন, বঙ্কিম দেছে ছেড়ে ! হায় কি হলো! _দেশট। গেছে “সাপ্তাহিকে” জুড়ে হায় কি হলো-_ভূদেব গেলো, ছেড়ে গুরু-_-গিরি | হায় কি হলো-_হেম নবীনের নাইকো জারিজুরি |”

ব্যঙ্গে তীক্ষতা আঁরপিত হতে পারে তখনই কবি যখন তীক্ষতম শায়কটি বিদ্ধ করার উদ্দেশ্টেই প্রয়োগ করে থাকেন-_বঙ্গিমী ব্যঙ্গ যাঁর উৎকষ্ট দৃষ্টান্তস্থল | হেমচন্দ্রের ধ্যঙ্গে আত্মদর্শনের স্তরভেদ স্পষ্ট হলেও কবির আক্ষেপ বেদনার সংবাদ ব্যঙ্গের তীব্রতার হাঁনণিকারক হয়েছে দেশপ্রেম কবিকে প্রায় অবশ করে ফেলেছে,_- আত্মসমালোচনার তীব্র চাবুকে বিদ্ধ করার পূর্বে কবির খেদৌক্তিই একটা কারুণ্যের ব্যঞঙ্জনা সৃষ্টি করেছে জাতীয় দুর্বলতার প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে তার বহু কবিতায়-_কিন্তু বিদেশী শক্তি কিভাবে জগদ্দল পাঁথরের মত চেপে বসে আছে জাতির বুকে,-সে চিন্তা প্রাধান্ত পেয়েছে বলেই কবিচিত্ত শ্লান। ব্যবস] বাণিজ্য কেড়ে নেবার বিচিত্র বণিকীবুদ্ধি প্রকারান্তরে আমাদের সর্বনাশ ডেকে আনছে, হেমচন্দ্র শুধু সেই চিত্রগুলির উপর ক্ষুব্ধ অন্তরের দৃ্টি নিক্ষেপ করেছেন,__

দেশের শিল্পী কারিগুরি শিখবে বিলাতীরা __

অন্নীভাবে ছুদিন বাঁদে মরবে এদিশীরা |

এই চিত্রটির মধ্যে তীক্ষ-ব্যঙ্ক আর উপস্থিত নেই--কিস্তু সর্বনাশের সংবাদই কবিকে

ব্যথিত করেছে হেমচন্দ্রকে জাতীঘ কবি স্বদেশপ্রেমিক বলে মনে করার হেতু এখানেই | নিতান্ত বাহ্িক অনুভূতিকেও কবি স্বদেশপ্রেমরসে ডুবিয়ে পরিবেশন না৷ করে পারেন না। তাই 9৪806--এর তীরতা হারিয়ে কবিকে বেদনাহত চিত্তের প্রতিবিশ্বকেই প্রকাশ করতে দেখি *বিবিধ কবিতা” রচনার যুগেও হেমচন্ত্র স্বতংস্ফূর্ত স্বদেশচিন্তাকে লক্ষ্য করেই অগ্রসর হয়েছেন। ঘুরে ফিরে কবি নিজের মন্ময় উপলব্ধির জগতেই ফিরে আসেন বারংবার

কবি সেযুগের কতগুলি রাজনৈতিক ঘটনাবলম্বনে যে কবিতা রচনা করেন তাঁর

৩১০ উনবিংশ শতার্ীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

মধ্যে, রীপন উৎসব--ভারতের নিদ্রাভঙ্গ, ভাঁরতেশ্বরীর জুবিলী উৎসব উপলক্ষ্যে, সাবাস হুজুক আজর সহরে, নেভার-_নেভার, রাখিবন্ধন, জয়মজল গীত বিখ্যাত কবিতাঁগুলিতে যেমন সমসাময়িক ঘটনীর ছায়াপাত আছে তেমনি স্বাধীনতা আন্দোলনের ভাবী স্ৃচনার ছায়াপাতও রয়েছে | যে সমস্ত ঘটনায় দেশের আপামর জনগণ বিক্ষুষ হয়েছিল কবি তা কবিতাকারে গেথে রেখেছেন ্থাঁধীনতা আন্দে'লন', শব্দটির জন্ম হয়নি সেযুগেও, কিন্তু “আন্দৌলন"' কিংব1 স্বাধীনতা” ছুটি শব্দের পৃথক পৃথক শব্দগত অর্থ সম্বন্ধে সে যুগের প্রতিটি মানুষ সচেতন-_মিলিত অর্থটির সুগভীর আহ্বান তখনও এসে পৌছয়নি এই যা। কিন্তু স্বাধীন কবিচিত্তে সে ডাক এসে পৌছেছিল | হেমচন্দ্রের ধরনের কবিতায় বিশ্বাস সত্যের সম্মিলন ঘটেছে। “মন্ত্রসাধন” কবিতাটিতে স্পষ্ট তঃই কবি আহ্বান জানিয়েছেন, অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্মিলিত চেষ্টার দৃষ্টান্ত দেখিয়ে কবি যেন ভারতবাঁসীকে অভয়বাণী শোনাচ্ছেন কিন্ত এখানে দৃষ্টান্তটি ইংরাজী ইতিহাস থেকেই সংগ্র করেছেন তিনি, দিলে শিক্ষাদীন ভারত নন্দনে দিব্যচক্ষু দিয়]--কি মন্ত্র সাধনে পরাধীন জাতি, পরাধীন জনে বাসনা সফল করিতে পাঁয় |. শিখিবে ভারত শিখিবে কথা চিরদিন তরে না হবে অন্তাথা-_ একদিকে কোটি প্রাণী কাতরতা শ্বেতাঙ্গ কজন বিপক্ষ তায়; | মন্ত্র সাধন এর পরই কবি, তদানীন্তন সরকারকে আহ্বান করে বলছেন--“দিন আগত এ” স্বাধীনতার মূলমন্ত্র এক্যের চেতনায় উদভাসিত | স্ৃতরাং__ শুন হে রিপন--ভারতের লাট আর নাহি ক'রে। তাণ্ডব নাট বিষময় ফল-_বিষম বিরাট মনুষ্য হৃদয় সহিত খেল ! [শর] সাবধান বাণী যেন স্থগভীর আত্মবিশ্বীসেরই বাঁণী--এক্যবন্ধ ভারতবাসীর কাছে স্বাধীনতা অর্জনের রহশ্যকথাঁই প্রচার করেছেন কবি-_ক্তরাং বিশ্বাস নিষ্ষল হবে না বলেই কবি ধরে নিয়েছেন মনুষ্য হৃদয় সহিত খেলার' ফল ষে বিষময়ই হয়ে থাকে, ইতিহাস সে সত্যই প্রচার

ফাব্য ৩১১

করে আসছে, সত্য যেমন অভ্রান্ত তেমনি অমোঘ কবিরও তাঁই সংশগ্ন ঘুচেছে,_- হ্মচন্দ্রের দিব্যদৃষ্টি প্রায় খুলে গেছে তাই জাতিকে শাশ্বত বাণী শোনাতে তাঁর ঘিধা নেই। কবিতাটির শেষাংশে কবি উৎসাহ্দাতার কাজটি পালন করেছেন,__ না হৈও নিরাঁশ-__ভারতসন্তান, সাহস উৎসাহে সে গর্ব নির্বাণ করিলে অনার্ধে-_-আজও সে বিধান মহামন্ত্রের সাধন প্রথা [এ] ১৮৮৭ খৃষ্টাব্দে ভারতেশ্বরীর জুবিলী উৎসব উপলক্ষ্যে হেমচন্দ্রের কবিতা “আজি কি আনন্দ বাসর” বৃটন জাতির প্রশংসা আত্মলীন জাতির সামনে মহৎ দৃষ্টান্ত তুলে ধরার কৌশলে কবিতাটিও অনবদ্য | সার্থক-জনম, হে “বুটন” জাতি, সার্থক ভূতলে তব সুখ ভাঁতি,

কি আনন্দ সদ হৃদয়ে তোর ! কী বাত খা কবে গো আমরা হবেকি সেদিন? ওদেরি মতন সহাশ্ মুখে

অমনি করিয়া সদর্পে আসিয়া ধীড়াবো, জননি, তব সন্মুখে ?

এখানে কবি প্রায় উৎকষ্টিত-__-দিন গোনার লগ্ন এসেছে যেন অথচ রাঁজবন্দনা; যোড়শোঁপচার কবিতাটির আয়তন বৃদ্ধি কয়েছে,_-নীর থেকে ক্ষীর তুলে নেওয়া; কৌশল দেশবাসীর কাছে আজ অনায়ত্ নয় আর! কারণ বিশ্বাস না থাকবে হেমচন্দ্র কবিতা লিখতেন না রাঁজবন্দন। কবির যে উদ্দেশ্ট নয়,_-“ভারতসংগীতের কবি হেমচন্দ্র সম্বন্ধে সেকথা আর নূতন করে প্রতিষ্ঠা করতে হবে নাঁ। সাময়ি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতবাঁপীকে কর্তব্য স্বরণ করানোর কঠিন দায়িত্বটি কা পালন করেছেন মাত্র

“্রীপণ-উৎসব-_ভারতের নিদ্রাভঙ্ক৮ কবিতাটিতেও একই উদ্দেশ্য দেখা যায ১৮৮৪ খুঃ ভারতের বড়লাট রীপণের বিদীয় উপলক্ষ্যে - গণজাগরণের দৃশ্যটি স্বচক্ষে দেখেছিলেন, একদিকে আঁশা ভবিষ্যৎ কবিকে উদ্বেলিত করেছে অগ্যদি সাময়িক চিত্রটিকে কবিতায় ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন কবি প্রসঙ্গে খানিব বিরোৌধী ভাবের অবতারণা করেছেন কবি। রীপণের আবির্ভীবে সে যুগের জন

৩১২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

খুশী হয়েছিলো ১- কিন্ত কবি রীপণ বিদায়ে সে যুগের উচ্ছুসিত মানুষের অভিনন্দনের মধ্যে সচেতন দৃষ্টির উদারতা প্রত্যক্ষ করেছিলেন, - রীপণ বিদায়ে কৃতজ্ঞ দেশবাসী একদিকে প্রশংসা অগস্তদিকে স্বচ্ছ বিচার-বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছিলো বস্তুতঃ আ'স্মসচেতনতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত কবি এর গভীরে প্রবেশ করে ভারতের ভাবী জনগণের মধ্যে আশার বীজ দেখতে পেয়েছিলেন প্রসঙ্গে সমালোচক জীবনীকার মন্মথনাথ ঘোষের মন্তব্য,__

*কবিবর স্বয়ং দেশবাসীর নিদ্রাভঙ্গ দেখিয়া যে কবিতা রচনায় প্রবৃত্ত হইয়া- ছিলেন এইরূপ অনুমান করাই কি সঙ্গত নহে ?৩৭ জাতির বিচার বুদ্ধির ওপর আস্থা স্থাপন করার স্থযোঁগ পেয়েছেন কবি অবসরে রীপণ-বিদাঁয়ের উচ্ছ্বসিত অভিনন্দনের মূলে আঁছে সচেতন কৃতজ্ঞতা কবি জানেন স্বাধীনতা পাওয়ার লগ সেদিনই সমাগত হবে যে মুহূর্তে জাতির জীবনে আঁবেগমথিত উচ্ফ্াস আসবে সচেতনতার পথ বেয়ে। আঁবেগের স্বরূপ বিভাগ করলে দেখা যাবে সচেতনতা জাত আঁবেগই সিদ্ধির স্থযোগ এনে দিয়েছে অচেতন আবেগের মত মারাত্মক আর কিছু নেই। বিশেষতঃ পরাধীন জাতির জীবনে সচেতন উচ্ছ্বাসের ফল যেমন শুভ হতে পাঁরে--আবেগ তাঁড়িত, লক্ষ্যহীন, অচেতন উচ্ছ্বাসে ভয়ঙ্কর পরিণতিও স্বতঃসিদ্ধ সত্য। সুতরাং স্বাধীনতা পাওয়ার পূর্বে সচেতন আত্মপ্রস্ততিই ছিল সে যুগীয় যনীষীদের কাম্য। উন্মস্ততা কিংবা অপরিকল্পিত উচ্দ্বীসে ভেসে যাওয়ার প্রবণতা অনেকবারই দেখ! দিয়েছে,__অর্থহীন বনু উত্তেজনা অহেতুক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে, এমন দৃষ্টান্তেরও অভাব নেই সুতরাং হেমচন্দ্র এই দৃষ্টান্তটি দেখে আনন্দিত হয়েছিলেন সচেতন আত্মবিচারের এই ঘটনাটির গুরুত্ব তিনি স্বীকার করেছিলেন ; এতে বিরোধিতা নেই। রীপণ বিদায়ে হেমচন্্র ভারতের নিদ্রাভন্গের স্থচনা দেখতে পেলেন। এই বৃহৎ কবিতাটিতে রীপণ উৎসবের চিত্রটিই অন্ষপস্থিত-কিস্তু ভারতের নিদ্রীভঙ্গের বিস্তারিত বর্ণন] স্থান পেয়েছে লক্ষ্যই হয়েছে গৌণ-_উপলক্ষ্য পেয়েছে প্রাধান্ত মনে প্রাণে স্বদেশময় কবির এর চেয়ে বড়ো আনন্দ আর নেই। তাই কবি বলেন,

“মনে ক'রেো। সবে নিভৃতে-উৎসবে “রীপণ বিদায়” নহে খালি,

সম আশা ভয় ভারত অন্তরে মিলন তার প্রকাশ্য ডালি

৩৭* মম্সথনাথ ঘোষ, হেমচন্দ্র | ৩য় খণ্ড ১৩৩০, পৃঃ ৩৪

কাব্য ৩১৩

ভারতের জাগ্রতরূপ কবি লক্ষ্য করেছেন--তার একান্ত কামনা, এই জাগৃতিই জয়ের চেষ্টা হয়ে উঠুক ।--সেই ব্রতপাঁলনের আগে জাগরণ যেন নিশ্তেজ হয়ে না যায়। “আর ঘুমাইও ন1” ডাঁকি মা আবাঁর

ভাবী আশাফল ভাবিয়া দেখো, "রীপণ-উৎসব* সোনার অক্ষরে

হৃদয়ের মীঝে লিখিয়া রেখো

এর চেয়ে কোন গভীর আঁকুতি কবির নেই-- এই দৃষ্টান্ত ভাবী আশা গ্োতনা করেছে,_-এ সত্য কাব্যিক সত্য হয়ে উঠেছে হেমচন্ত্র স্বাধীনতা উপীসক কবি-- আশাই আঁশাহত-নৈরাশ্যগীড়িত কবির মনের একমাত্র সান্তনা এর পরবর্তী ঘটনা কিংবা ফলপ্রাপ্তির সংবাদ হয়ত অশ্রুতই থেকে যাবে শুধু স্বাধীনতাকামী কবি এই আশ্বীসটুকু নিয়েই শান্ত হবেন। কারণ এরি মাঝে আছে কাঁলপুরুষের সেই নির্ধম নির্দেশ প্রাপ্তির চেয়েও সম্ভীবনীর শান্তিই কবির কাছে মূল্যবান *রীপণ উৎসব” কবিতায় হেমচন্দ্র প্রায় আত্মহারা,

ভার্গিল কি তবে এত দিন পরে ভাঙ্ষিল কি ঘুম ভারত মাতা? জরাজীর্ণ শীর্ণ শরীরে তোমার

ফিরে কি জীবন দিল বিধাতা ? এবং পরিশেষে সমৃদ্ধবিশ্বীসে কবির সঞ্চিত মনোক্ষোভ ষেন শান্ততায় মণ্ডিত,_ "আজি আর কালি পাবো রে সকলি আর ভারত নিদ্র্িত নয়

কবিতাটিতে হেমচন্দ্রের দূরায়ত দর্শন চোঁখে পড়ে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পূর্ব প্রস্তুতির মধ্যে হেমচন্দ্র যুক্তিসিদ্ধ সম্ভাবনা দেখেছিলেন নিছক উচ্ছাসের কলরোল নয়,_-সংগঠনমুখী মনোবৃত্তির নিশ্চয়তা হেমচন্দ্রকে তাই আবেগাতুর করেছে।

“বিবিধ কবিতার” রচনাকাল কবির জীবনের সায়াহকাল। রাজনৈতিক অবস্থায়ও তখন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাঁয়। আত্মপ্রতিষ্ঠার প্রাথমিক আয়োজন প্রায় সারা রাঁমমোঁহনের যুগ থেকেই আত্মাধিকারের দীবীতে বাঙ্গালী প্রীয়ই উত্তেজিত হয়েছে ১৯৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে বাঙ্গালীর সে দাবী প্রায় স্বাধীনতালাভের অঙ্গীকারে দুঢ়। হেমচন্ত্র ১৯০৩ থুষ্টাব্ধে মারা যান। ১৯০৫ সালের আন্দৌলনটি দেখার সৌভাগ্য তাঁর হয়নি রাষ্্গঠনের দায়িত্ব নিয়ে রাষইরগুরুর আঁবিতাঁব দৃশ্যটি তিনি শুধু কল্সনানেত্রেই দেখেছিলেন | কংগ্রেসের ক্রমবর্ধমান আশ!

৩১৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

উত্তেজনায় তিনি শেষ জীবনেও যোগ দিয়েছিলেন | ১৮৮৬ খুঃ কলিকাতায় অনুষ্ঠিত ইতিয়ান স্ভাশনাল কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশন উপল্ক্ষ্যেই তার কবিতা “রাঁথী বন্ধন” রচিত হয়। স্বাধীনতা স্র্যটিকে পুবাকাশে অভিনন্দন জানিয়ে রেখেছিলেন কবি বহু আগেই, আর কেন ভয় হের তেজোময় ভারত আকাশে নব সুর্ষোদয় নবীন কিরণ ঢালিল, ভারতের চিরঘোর অমানিশি তরুণ কিরণে ডুনিল। হেমচন্দ্রের কবিতাধারার শেষপর্বে কবির অতি আশ্চর্য মানসপরিবর্তন লক্ষ্য করা যাঁয়। সম্ভাবনা এবং নিশ্চিতসিদ্ধির মধ্যে কোন অর্থগত ভেদরেখা যে থাকতে পারে হেমচন্দ্রের অতি উচ্ছ্বসিত বক্তব থেকে তা৷ উদ্ধার করা কঠিন। স্বাধীনচেতনার নির্মম অভিশাঁপ কবিকে যেদিন দিশাহারা, বিভ্রান্ত-নৈরাশ্যপীড়িত করে তুলেছিল,__ কবিতার ছত্রে ছত্রে সেই মর্মবেদন! ক্রন্দন করেছে তাই দেখেছি, কবিতাবলীতে হেমচন্্র ভিয়মান বেদনাক্ষু ! সেই বিলাপ আঁশাভঙ্গের হাত থেকে কবি যদি মুক্তি না পেতেন বাঙ্গালী কাব্য-পাঠকের মনে একটা স্থায়ী ক্ষোভ থেকে যেতো সমসাময়িক কবিদের মধ্যে স্বদেশচিন্তার নিবিড়তা আন্তরিকতা হেমচন্দ্রে লক্ষ্য করেছি, এও দেখেছি কবির স্বদেশপ্রেমের কবিতামাত্রই বিলাপ। বঙ্কিমচন্দ্রের সমবয়সী হলেও হেমচন্দ্র বেঁচেছিলেন তাঁর তুলনায় বেশীদিন | শেষ জীবনে অন্ধতার যন্ত্রণা ভোগ করেও হেমচন্দ্র সাধন। বজায় রেখেছিলেন স্বদেশচেতনার পরিণতিপর্বের ছঃখ যে নির্বাণপর্বের আশাঁবাদে পরিণত হতে পেরেছিলো--এতে 'অন্ততঃ আমাদের খানিকটা স্বন্তি। হেমচন্দ্রের উচ্ছ্বসিত উপলব্ধি মাঝে মাঝেই ব্যঙ্গীকারে পরিবেশিত “সাবাস হুজ্ুক আজব সহরে” - ব্যঙ্গীকাঁরে পরিবেশিত কবিতাটির মধ্যেও হেমচজ্রের স্বচ্ছন্দ মনোবিত্তি লক্ষ্যণীয় বিলাপ দুঃখের সাধনায় শেষ পর্যন্ত সাম্বনাটুকু তিনি লাভ করেছিলেন কবিতায় ব্যঙ্গরসিক ঈশ্বরগুপ্তকে ম্মরণ করেছেন সখেদে,__“ফ্রেমবাধা, "ফ্রানচাইসে” নেটিভ স্বাধীন” হবে,_আপাতঃ বিচ্ছিন্ন এই প্রয়াসের স্বরূপ উপলব্ধি করে কবিও প্রায় উতৎ্তহক' জনতায় প্রবেশ করেছেন কোথায় ঈশ্বরগুপ্ত তুমি এসময় চতুর রসিকরাজ চির রসময় দেখিলে ন! চর্মচক্ষে হেন চমৎকার বঙ্গের গোগৃহ রঙ্গব্যঙ্গের বাঁজার

কাব্য ৩১৫

কিছু কাল যদি আর থাকিতে হে বেঁচে। লিবার্টির জন্ম দেখে কলম নিতে কেঁচে

এখানে ব্যঙ্গের তীক্ষতা নেই, কিন্ত রসিক মনোবৃত্তিটুকু ধরা পড়েছে বিলাপের- আক্ষেপের স্তর পাঁর হয়ে আঁশাবাঁদের আনন্দলাভ পর্যন্ত মোটামুটি কবিচিত্তের পাঁরস্পর্যের ধার! রক্ষিত হয়েছে রক্গব্যঙ্গের নির্ভেজাল আবহাঁওয়ায় কবিকে আমরা আরও শান্ত-স্বচ্ছন্দ-সম্মিত দেখেছি নিছক ভোটরক্গ নিয়ে দীর্ঘ কবিতায় কবির অনাবিল হাস্যরস বিতরণের স্বতঃস্কুর্ত আবেগই ঘূর্ত হয়ে উঠেছে “নেভার-_-নেভার” কবিতায় ইলবার্ট বিলের বিরোধিতার প্রসঙ্গ নিয়ে 'ইংলিসম্যানের” স্বপক্ষে কবির ভূমিকাটি চমৎকার | নিছক রঙ্গব্যক্সের উদ্দেশ্যে রচিত বলেই কবিচিত্তের স্বচ্ছন্দতা হেমচন্দ্রী নৈরাশ্যবোঁধে পীড়িত পাঠকচিত্তকে খুণী'করে | ইলবার্ট বিলের বিরোধিতা করে ব্রান্সন, কেশুয়িক মিলার যে দাবী পেশ করেছিলেন তা কবির কাছে ব্যঙ্গের উৎস বলেই মনে হয়েছে ইলবার্ট বিল প্রণয়নে যে আশী বা ম্যাঁষ্য দাবীর জয় ঘোষিত হয়েছিল--তাঁর বিরোধিতায় মনঃক্ষু্ন হওয়াই স্বাভাবিক, হেমচন্দ্ তা থেকে ব্যঙ্গের উপাদান আবিষ্কার করেছেন অংশটি অত্যন্ত উপভোগ্য হয়েছে,

আয়রে ফিরি ভাই সিন্ধুপাঁরে চলে যাই যেখানে “লিবার্টি হল আমাদের সভা পাত্র মিত্র যতজন সকলেই গবা |

বুঝাইব খাঁটি হাঁল আছিলাম এতকাল হিন্দুদেশে ভালবেসে হিন্দুর সন্তানে, সিংহ যেন মুগ কোলে স্বর্গের উদ্যানে

অন্তনিহিত খোঁচাঁটি আর অস্পষ্ট নয়_তবে শাঁসকগোঠীর উদ্দেশ্য হেমচন্দরে মতো সে যুগের প্রতিটি সচেতন মীনুষেবই আঁর অজানা ছিল না-এটাই আমাদে একমাত্র যলধন | সংঘবদ্ধচেতনাজাত এই অভাঁবিত উপলব্ধির আলোকেই কবিতাটি রজব্যঙ্গ স্থাপনা করা! হয়েছে মন্ত্রসাধন'-এ প্রকাশ্যভাবেই কবি ইলবাট বিনে প্রসঙ্গ আলোচনা করেছেন

হেমচন্দ্রের শেষ পর্যায়ের কবিতার: প্রেরণা সেষুগীয় সমাজের আন্দোর আলোড়িত ঘটনাবলী বিদ্যাসাগর বঙ্ষিমচন্দ্রের মৃত্যু কবিকে অত্যন্ত বিচি করেছিল। বিগ্ভাসাগরের মূল্যায়ন ভঙ্গিমাটুকুও লক্ষ্যণীয়, স্বাধীনচিত্ত বিদ্বাসাগরের চারিত্রিক তেজ স্বাধীনতাম্পৃহা দর্শনে আনন্দিত হয়েছিলে,

৩১৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

বিচ্যাঁসাগর সম্পর্কে উপলব্ধি যদিও সর্বজনীন হেমচন্দ্র কবিতায় তারই সার্থক রূপ দেন,__ স্বাধীন স্বতন্ত্র চিত্ত কাহার তেমন ? দর্প, নির্ভীকতা, বীর্য-_যে কিছু লক্ষণ তেজীয়ান পুরুষের-_সবই ছিল তায় ! তৃণজ্ঞান পদমান অবজ্তা যেথায়, শ্বেতাঙ্গ প্রসাদ | ] গর্বে ঠেলিত হেলায় স্বাধীনতার উপাঁসক বলেই স্বাধীনচিত্ততায় তিনি প্রায় আত্মহারা হন, বিদ্যাসাগর শর্ধাপ্রলিতে তাঁরই উচ্ছ্বাস “হায় কি হলো'-তে বস্কিমহীন “বঙ্গদর্শন” দেখে কবির আঁক্ষেপবাঁণী শুনেছি, কবিতায় করি বিদ্যাসাগরহীন বাংলাদেশের অবস্থা ফুটিয়ে তোলার চেষ্ট৷ করেছেন! উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! কাব্যে আন্তরিক ভাবে সাড়া দিয়েছিলেন সব কবিরাই -_স্কতরাং নবীনচন্দ্রের কাব্যালোচনার ভূমিকাতেও স্বদেশচিত্তনের প্রসঙ্গটাই বড়ো কথা মধুস্থদ্ন হেমচন্দ্রের পরে বাংলা কাব্যের আঁসরে নবীনচন্দ্রের আবিততীব কিছুমাত্র আকম্মিক বলে হয় না-_-তার কারণ মোটামুটিভাবে তিনি পূর্বস্থরীদের আদর্শই গ্রহণ করেছিলেন। বাঁংলাকাব্যের ধারাবাহিক ইতিহাসে নতুন কিছু সংযোজন করার থেকে পুরাতনের অন্শীলনেই তিনি বেশী তৎপর | হেমচজ্রের স্বদেশপ্রেমমূলক কবিতার প্রচণ্ড জনপ্রিয়তা যে কোন আগন্তক কবির মনে প্রেরণা জাগানোর পক্ষে যথেষ্ট ছিল, সে যুগের সাধারণ-অসাধারণ কবিরা প্রলোভন জয় করতে পারেননি স্থতরাং নবীনচন্দ্রের মতো সম্ভাবনাসম্পন্ন কবিও যে স্বাভাবিক ভাবেই প্রভাবিত হয়েছিলেন সে বিষয়ে সন্দেহ নেই উনবিংশ শতাব্দীর প্রান্তসীমায় সার্থক স্বদেশপ্রেমী কবি হিসেবে নবীনচন্দ্রের যে পৃথক পরিচয় রয়েছে শুধু সেটুকুই আমাদের আলোচ্য পূর্ব আলোচিত কবিদের স্বদেশচিন্তার স্বরূপ নির্ণয়ে আমরা মোটামুটি একটা ক্ুবোধ্য সিদ্ধান্তে পৌছেছিলাম কিন্তু নবীনচন্ত্র আলোচনায় আমাদের কিছু অস্থবিধায় পড়তে হয়। নবীনচন্দ্রের যুগে বাংলাদেশে স্বদেশপ্রেমের আবহাওয়া এতই প্রবল যে সে যুগের মানুষ আত্মআবিফষারের পাল! সাঙ্গ করে আত্মপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে নবীনচন্দ্র এসেছিলেন সারবাঁন জমিতে বীজ বপনের দায়িত্ব নিয়ে দেশের স্বাভাবিক অবস্থা বর্তমান থাকলে স্বদেশপ্রেম একটি সমৃদ্ধসভ্যতা স্বস্থ সংস্কতির জন্ম দিতে পাঁরে_ পরাধীনতার মত একটি অস্বাভাবিক অবস্থায় দেশচেতন! প্রথমেই পথ খোঁজে মুক্তির নবীনচন্দ্রে আবির্ভীব লগ্নে বাংলা দেশ সেই মুক্তির স্বপ্নে মগ্র। স্বদেশ-

কাব্য ৩১৭

প্রেমের প্রচণ্ড আবেগে জনমন আন্দোলিত,-_-আত্মবিশ্বীসের শক্তিতে আ'ত্মপ্রতিষ্ঠার শপথে সকলেই কম্পমান। সুতরাং নবীনচন্দ্রের কাব্যে স্বদেশোচ্ছাসের আতিশষ্য থাকলে আমরা কিছুমাত্র অবাক হইনা বরং স্বস্তিবোধ করি। যুগান্ুগ সত্যকে প্রকাশ করেই কবির অমর হতে পারেন,--তার জন্য কোন কৈফিয়ং দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। নবীনচন্দ্র সাঁড়ম্বরে “আমার জীবনে" তীর স্বদেশচর্চার ইতিহাঁসটি ব্যাখ্যা করেই ঘত কিছু অস্থবিধের সৃষ্টি করেছেন কবিপ্রদত্ত স্বদেশচর্চার বিশদ ব্যাখ্যাঁটিকে অগ্রাহ্ করার উপায় নেই বলেই সমালোচক শুধু অসহায় বোধ করেন “'আমারজীবনের' কৈফিয়ৎ কবির কাব্য কিংবা কবিকে শুধুজনমাঁনসের সামনে অপ্রস্তত করে ফেলেছে নবীনচন্দ্রের কাব্য কিংবা নবীনচন্দ্রের স্বদেশপ্রেমের আলোচনায় কবিলিখিত আত্মজীবনীটি অপ্রয়োজনীয় হয়ে রইল--এটি যে কোন অনুরাগী গবেষকেরই আক্ষেপের কথা এদেশে কোন কোন মহৎ ব্যক্তিকে শুধু আত্মজীবনীর মত একটা মূল্যবান দলিলের অভাবে আমর] বুঝতে পাঁরিনি- বোঝাঁতেও পারিনি-_ নবীনচন্দ্রের স্বৃহৎ আত্মজীবনীটি কখনও কখনও কবিকে বোঝার পক্ষে প্রচণ্ড বাঁধা হয়ে দাড়ায় নবীনচন্দ্রকে পৃথকভাবে আলোচন] করার স্বাধীনতা আমরা হারিয়েছি-_- অথচ “কবিরে যেথায় খুঁজিছ সেথা সে নাহিরে”-_প্রবচনটিও ভুলতে পারছি না। এই অস্থবিধা থেকেও নবীনচন্দ্রের দীর্ঘ সমালোচনা হয়েছে নানা আলোচনায় শুধু একটি সত্যই ধর পড়েছে নবীনচন্দ্র সেয়ুগের স্বদেশপ্রেমিক কবিদের মতই কাব্য স্বদেশচিন্তাকে পৃথক আধারে স্থাপন করতে পারেননি কখনও স্বদ্দেশচিন্তাই তার বক্তব্যকে কাব্যের পর্যায়ে নিয়ে গেছে কখনও তার বক্তব্যই স্বদেশভাবনা প্রকাশ করেছে মোটামুটি উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দশকের স্বদেশপ্রেমী কবি হিসেবেই নবীনচন্দ্রেরে আলোচনা করা যেতে পারে--এবং উনবিংশ শতাব্বীর এই বিশেষ ধারাটিতে নবীনচন্দ্রের সযত্ব সৃষ্টির অমূল্য প্রয়াসকে অভিনন্দন জানাতেই হবে

বাংল! কাব্যের আদিতে যে খণ্ড কবিতারই আধিপত্য উনবিংশ শতাব্দীর প্রারস্ত মুহূর্তে ুপ্তজার রচনামাত্রই যে খণ্ড কবিতা এই স্পষ্ট উজ্জ্বল সত্যকে অস্বীকার করেও নবীনচন্দ্র স্বাভাবিক প্রবণতা থেকে খণ্ড কবিতাই লিখেছিলেন “অবকাশ রঞ্জিনীর” কবিতা সম্পর্কে তার উক্তি,

--পপ্রথমতঃ আমি “এডুকেশন গেজেটে” লিখিতে- আরম্ভ করিবার পূর্বে স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র বিষয়ে খণ্ড কবিতা, বঙ্গভাষায় ছিল না।-*.".*দ্িতীয়তঃ আমি “এডুকেশন গেজেটে” লিখিবার পূর্বে ব্রণ হয়, স্বদেশপ্রেমের নামগন্ধ বাংলার কাব্যে কি কবিতায় ছিল না1”৩৮

৩৮* নৰীনচন্ত্র সেন--আমার জীবন ১ম ভাগ পৃঃ ৩১৯--৩২৬

৩১৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

কবি হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ পর্ধটি নিতান্তই যে সাধারণ ঘটনামাত্র নয়-__ একথার ওপর অযথা গুরুত্ব প্রদান করতে গিয়েই অসাবধানী উক্তির অসংখ্যতায় তার দিনলিপি কণ্টকিত হয়েছিল বাংলা কাব্যে স্বদেশভাবনাজাত খণ্ড কবিতার অভাব যিনি দেখেছিলেন সেই নবীনচন্দ্র সম্পর্কে সহান্ুভূতিবিহীন না হয়েও সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, কবি সেই অভাব পূরণের জন্যই সচেতনভাবে বাংলা খণ্ড কবিতায় দেশাতআ্মবোধ আরোপ করেছিলেন ব্যাপারে পথিকৃৎ হওয়ার সচেতন ইচ্ছাঁটি কবিমনে দেখা দিয়েছিল, পল্লপবিত হয়েছিল এবং সেই ইচ্ছার পথ ধরেই নবীনচন্ত্র বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন দেশান্ুরাগের আবেগে কবিতার জন্ম হয়নি--বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে একটা অভাবের উপলদ্ধি থেকেই দেশান্রাঁগ উচ্ছৃসিত কবিতাঁগুলি কবি লিখেছিলেন__-একথা প্রমাণিত হলো কোঁনো৷ কবির প্রথম আত্মপ্রকাশ পর্বে বিশুদ্ধ ভাবাবেগের দৈম্য প্রমাণিত হলে কবি সম্বন্ধে আমাদের হৃউচ্চ প্রশংসনীয় মনোভাবটি পীড়িত হয়-_আমরা হতাশ হই। নবীনচন্দ্র বাংল! কবিতায় তার স্বকীয় দানকে বিরৃত ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন বলেই আত্মপ্রকাশ পর্বের এই অকুঞ বিকৃতভীষণকে বর্জন করতে হবে নবীনচন্দ্রের কাব্যোন্মেষ পর্বকে একটু তলিয়ে বিচার করলেই কবি কাব্যের যথার্থ সন্বন্ধটি স্বচ্ছ হয়ে উঠবে

সহজাত রচনাশক্তি অনুভব ক্ষমতা নিয়েই বাংলা সাহিত্যে নবীনচন্দ্রের -আবিতীব। ১৮৬৩ খুঃ যৌবনের অনুভূতি স্বতক্ফুর্ত বিচারবোধ নিয়ে এই চট্টলী কবি কলকাতায় এসেছিলেন-_ বিদ্যাভ্যাসের আতত্মপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে অভিজ্ঞতা কবিত্ব ছুটোই যেদিন বয়ঃপ্রাপ্ত হল কবিতা না লিখে তখন উপায় নেই। আগুন যেমন পতঙ্গকে টাঁনে নবীনচন্দ্রকেও আন্তরিক ভাবাঁবেগ টেনেছিলো। ইতস্ততঃ ছড়ানে। চিন্তাকে রূপ দেবার প্রচণ্ড তাঁড়নায় কবি যখন লিখলেন তাতে সচেতন প্রয়াঁস থেকে গভীর আকুতির প্রকাশ যে বেশী থাকবে সন্দেহ নেই | আঠারো থেকে তেইশ বছরে লেখা নবীনচন্দ্রের “অবকাশরঞ্জিনী” ১ম ভাগের কবিতায় তার পরিচয় আছে। ট্টগ্রাম স্কুলের তৎকালীন ছাত্রটির মধ্যে যে খাঁটি চট্ট গ্রামপ্রেমিক যুবকটির যৃতি প্রত্যক্ষ করি, পরবর্তী কাঁলের স্বদেশপ্রেমিক কবির যথার্থ স্বরূপটি সেখানেই নিহিত রয়েছে। চট্টগ্রামের প্রতি তার আন্তরিক ভালবাসা তিনি কখনও গোপন করতে পারেননি | নবীনচন্দ্রের স্বদেশানুরাগের আন্তরিকতার সবচেয়ে বড়ো এবং মুল্যবান তথ্য এটি। কবি অবশ্য জন্মস্থানিগ্রীতির প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের অবারিত পর্বত সমুদ্রের প্রাকৃতিক রূপের কথাই বলেছেন পাঠ্যাবস্থায় চট্টগ্রামের শৈল সমুদ্র-নদ-নদী-নিঝরিনী শোভিতা মাতৃভূমির কথ! তীর মুখে শোন! যেত। চট্টগ্রাম কবির দেশগ্রীতির উদ্বোধন শ্বটিয়েছিল এবং এই সৌন্দর্য্যমুগ্ধতাই পরিণত হয়েছিল অনাধিল দেশোৌপলব্ধিতে।

কাব্য ৩১৯

নুতরাং পূর্বতন সাহিত্যের স্বদেশ প্রেমের উচ্ছলিত নামগন্ধে অবশিত হুতে পারেননি বলে নবীনচন্দ্রকে আমরা অন্ততঃ নিন্দা করতে পারি না উনবিংশ শতাবীর আদি থেকেই কবিরা যে আতিকে একমাত্র বক্তব্য করে তুলেছিলেন--উনবিংশ শতাব্দীর শেষপ্রান্তের কবি নবীনচন্দ্র যে ক্ষেত্রে অনায়াস প্রবেশাধিকার লাঁভ করেছিলেন-- শুধুমাত্র অসতর্ক একটি উক্তির প্রসঙ্গ দিয়ে এর সঠিক ব্যাখ্যা হয় না। "আমার জীবনে” বধিত বহু উক্তির অসত্যতা প্রমাণের জন্য কোন যুগের সমালোচককেই বেশী পরিশ্রম করতে হয়নি তাই নবীনচন্দ্রের সেই ভ্রান্ত প্রমাণিত উক্তিটি নতুন করে সমালোচনা করার প্রয়োজন নেই শুধু এটুকু বললেই যথেষ্ট হবে যে স্বদেশপ্রেমের সৌরভে বাংল সাহিত্যের দশদিক যখন আমোদিত তখন নবীনচন্দ্রও অজানিতে স্বদেশসচেতন কবিরূপেই আত্মপ্রকীশ করলেন প্রসঙ্গে কবির নিজস্ব আরও একটি উক্তির সাহায্য নিতে পারি উক্তি মাত্রই অসত্য নয়, স্বীকার করেই জানতে পারি কবির কবিত্ব উন্মেষ পর্বের কথা,

“আমার বয়স যখন ১০1১১ বৎসর, যখন আমি ঝষ্ট শ্রেণীতে পড়ি, তখন হইতেই গপ্তজীর অনুকরণ করিয়৷ কবিতা লিখিতে চেষ্টা করিতাম ।”

[ আমার জীবন, ১ম ভাগ, কবিতা প্রকাশ ]

এই খণ স্বীকার করেই নবীনচন্দ্রের আত্মপ্রকাশ সম্ভবপর হয়েছিলো। স্বদেশপ্রাণ ঈশ্বরগুণ্ধের ভাবাদর্শ যদি নবীনচন্দ্রকে দীক্ষা দিয়ে থাকে তবে সে দীক্ষা দেশহিতব্রতের | নবীনচন্দ্রেরে পরবর্তী জীবনে এই দেশগ্রীতি উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি লাভ করেছিল। গুগ্ুজীর প্রসঙ্গটি আমাঁদের সামনে তুলে ধরে নবীনচন্দ্র বোধহয় একধরণের অসতর্কতারই পরিচয় দিয়ে ফেলেছেন--কাঁরণ আত্মপ্রকাশপর্বের কথা বাদ দিলেও ১৮৭৫ খুষ্টাব্দে “পলাশীর যুদ্ধ' প্রকাশ কালেও কবি পূর্বহ্রীদের কাব্যপ্রসঙ্গ সপ্ঙ্ধে নীরব থেকেছেন। রঙ্গলালের বীররসাশ্রিত "পন্মিনী উপাখ্যান” কিংবা মধুস্থদনের “মেঘনাদবধ কাব্যের” অন্তনিহিত তত্ব সম্পর্কে তিনি উদাসীন। কিন্তু আলোচনা কালে দেখা যায় এতিহাসিক নিয়মেই তিনি পূর্বস্থরীদের ভাব-ভাষা-ছন্দ প্রকাশভঙ্গীর দ্বারা সমাচ্ছন্ন

নবীনচন্দ্ের প্রথম কাব্যগ্রন্থ “অবকাশ রঞ্জিনীর' কবিপ্রদত্ত উচ্ছ্বসিত আলোচনার সারসংগ্রহ করলে দেখা যাবে, নব প্রকাশিত কাব্য সম্পর্কে তার সহপাঠীরা একদা সিদ্ধান্তে পৌছেছিলেন যে, *এ মধু মধুক্দনের না হইয়া যায় না”-_-এই মন্তব্যকে পরিণত বয়সেও কবি ছুর্লভ প্র্যাপ্যসম্মান বলে মনে রেখেছিলেন কিন্ত “অবকাশ রঞ্জিনীপ্র প্রথম ভাগেই নবীনচন্দ্রকে দেশপ্রেমিক রূপে আবিফার করা খুব কঠিন নয়। আত্মচিন্তাকে ইতন্ততঃভাবে খণ্ড কবিতাকারে প্রকাশ করেছিলেন কাব্যে

৩২০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

অথচ মধুহুদনের কাব্য সাহিত্যের কোথাও উদ্দেশ্যবিহীন আত্মমস্থনের উচ্ছাস নেই। মধুহদন আপাতঃসোন্দর্য নিয়ে কোনদিনই কালক্ষেপ করেননি, সেই সাধকোচিত গভীরতা নবীনচন্দ্রের নিতান্ত প্রথম বয়সের রচনায় আঁশ| করাও যায়না . কলেজীয় পঠন পাঠনের অবসরে সাহিত্য সমালোচনা ক্রীড়ায় যোগদানরত সেযুগীয় সহপাঠীদের কৌতুককর উক্তিকে শিরোধার্য করেই নবীনচন্দ্র বলেছিলেন, “এ নবকীনমধু নবীন কবির |” “অবকাশ রঞ্জিনীর” [ ১ম ভাগ] বহু কবিতায় নবীনচন্দ্রেরে যথাথ স্বদেশচিন্তা প্রকাশিত হয়েছিলো- তাতে পূর্বন্করীদের প্রভাবের সঙ্গে কবির স্বকীয় চিন্তাধারাঁও যুক্ত ছিলো। নবীনচন্দ্র দেশান্ুরাগের দ্বারা আচ্ছন্ন না হলে “অবকাশ রঞ্জিনীর” স্বদেশাত্রক খণ্ড কবিতাগুলি রচিত হোত না। বাল্যকাঁলের জন্মস্থানগ্রীতিই ছাত্রজীবনে উচ্ছৃসিত দেশবন্দনায় বিকশিত হয়েছে আবার সেষুগীয় কুসংস্কারের প্রতি শিক্ষিতজনের সাধারণ মনোভাবকেও তিনি গোপন করেননি ইংরেজী শিক্ষারদীক্ষার সঙ্গে বৃহত্বর বাংলার ছুঃখ দুর্দশীকেও তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন, ভাবুকতা সহৃদয়তা দিয়ে সেযুগের সমাজ জীবনকে যাঁচাই করে নিয়েছিলেন “অবকাশ রঞ্জিনীর” প্রথম ভ।গে কাঁব্যোন্মেষের লগ্মেও নিছক কবিতা নয়, যুগানুসারী কবিত৷ লেখারই চেষ্টা করেছিলেন তিনি এই দৃষ্টিভঙ্গীর সজীবতা৷ নবীনচন্দ্রের কবিমনে নিহিত হয়েই ছিলো, শুধু শ্ষুরণের জন্যই যার জন্ম। তবু বলব, যে কারণে হেমচন্দ্রের স্বদেশপ্রেমাত্মক খণ্ড কবিতার একট] অপরিসীম আবেদন রয়েছে, নবীনচন্দ্রের উন্মেষ পর্বের স্বদেশচিন্তায় সে আঁবেগ কিংবা বিশুদ্ধ আতি নেই, সে অভাবনীয় প্রত্যাশা! সমগ্র নবীনকাব্যেই অনুচ্চারিত | মধুক্ছদনীয় মহিমাস্পর্শে পরিশুদ্ধ জীবনবেদনাই যেখানে দেশপ্রেম, নবীনচন্দ্রে তা উচ্ছৃসিত কলরোলমাত্র। জীবনবোধ দেশবোধ যেখানে অমিলিত ছন্দ সেখানে বিশুদ্ধ ভীবগান্তীর্য আশা করা যায় না হেমচন্দ্র আঘাতের আলোকে দেশপ্রেমকে নতুন করে আবিষ্কার করেছিলেন নবীনচন্দ্রের কাব্যজীবনের উন্মেষ পর্বে লেখার বিষয়বস্তু হিসেবেই এসেছে স্বদেশভাবনা | নবীনচন্দ্রও জাতির পতনে বিষৃঢ়চিত্ত কিন্তু উথানের নখমন্ত্র আবিষ্কারের কল্পনা মাত্রও তাঁর পক্ষে অসম্ভব ছিলো, এখানে তিনি অন্ুগামীমাত্র |

নবীনচন্দ্রের পূর্বস্থরীদের স্বদেশীত্রক কবিতার স্বরূপবিচারে আমর যে বিবর্তন বা ক্রমপরিণতির আভাস পেয়েছি নবীনচন্দ্রেই তার ব্যতিক্রম লক্ষ্যণীয় অন্যান্য কবিরা ছিধা সংশয় থেকে শেষ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ভাঁলবাঁপার বাণী রচনা করেছেন-_ নবীনচন্দের স্বদেশচিন্তা পরিশেষে আধ্যাত্সিকতায় পর্যবসিত হয়েছে উনবিংশ শতকীয় মোহপাশ থেকে ধীরেধীরে কাব্যসাহিত্য মুক্তি পেতে চাইছে যেন নবীন কাব্যের মধ্যেই শুধু দেশপ্রেমকথা প্রচারই নয়,-রূপময় ভাব থেকে জীবনময় উদসিপন!

কাব্য ৩২৯

টির "স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে নবীনচন্দ্রের কাব্য যেন আগামী কবির দিকে অঙ্গুলি সংকেত করেছে দিক পরিবর্তনের | স্বদেশচেতনা যতদিন অস্পষ্ট ছিল, আলোকে আসার দুর্মদ প্রাণীবেগই ছিল তার আকাজ্ষিত। কিন্তু দেশাত্মক ভাবটিকে আরও অধিক যত্বে লালন করার প্রয়োজন ফুরিয়েছে,_কারণ কবিদের কথা তখন সমস্বরে আবৃত্ত হচ্ছে,-_হিন্দুমেলার উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে সমবেত স্বদেশীসংগীত প্রাণমন চঞ্চল করেছে নবীনচন্দ্রের কাব্যসাধনার প্রথমাংশেই তার স্বদেশাত্মক রচনা স্বজনের পর্ব, দ্বিতীয়াংশে সে ভাঁবটিই নির্বাসিত ১৮৭১ খৃষ্টাব্দে অবকাশ রঞ্জিনীর” প্রথম ভাগের প্রকাশকাল থেকে ১৮০০ খুষ্টাব্দে প্রকাশিত “রঙ্গমতী কাব্যেই স্বদেশীত্রক মনোভীবটি কবি নিঃশেষে প্রকাশ করে ফেলেন হ্ুতরাং নবীনচন্দ্রের স্বদেশাত্মরক মনোভঙ্গিমা বিশ্লেষণের জন্য এই সময়টুকুই বেছে নিতে হবে। তবে স্বাদেশিকতা৷ স্বধর্মচর্চার মধ্যে বস্ততঃ কোনো বিরোধ নেই বলেই এই আধ্যাত্মিকতার মূলে কবির স্বদেশ ভাবনার প্রচ্ছন্ন প্রকাঁশকেও মেনে নেওয়া যাঁয়। সাহিত্যসাধক চরিতমাঁলাকার নবীনচন্দ্ বিচারে এই ছুটি স্থুরকে পৃথক বলে ব্যাখ্যা করেছেন, “ম্বদেশপ্রেম এবং আধ্যাত্মিকতা, এই দুইটি মূল সুর নবীনচন্দ্রের কাব্যগ্রন্থাবলীর মধ্যে অনুস্থ্যত।”-_স্বদেশভাবনার সঙ্গে ঈশ্বরোপাসনার বাহ্যিক বা অন্তরন্থ মিল না থাকতেও পাঁরে কিন্তু স্দেশভাবনার পরে স্বধর্মবিচারের আধুনিক পন্থান্ছলরণের মধ্যে প্রত্যক্ষ যৌগস্থত্র রয়েছে সৃতরা' নবীনচন্দ্রের স্বদেশতাঁবনা স্বধর্মভাবনা মূলতঃ একটি রাঁগিনীরই বিভিন্ন স্ব: সাধনা | জাতীয় ভাবের উদ্দীপনব্রত নিয়েই হেমচন্দ্েরে আবির্ভীব, নবীনচন্দ্রের আগমন বিদেশীশাসনের সঙ্গে নিবিড় পরিচয় পাঁল৷ সার করে সেদিনের বুদ্ধিজীবী মানুষের আত্মবিশ্লেষণে মগ্ন হয়েছে আর গভীর হতাশায় আক্ষেপে ধূসরতর অতীতে বর্তমানে প্রতিষ্ঠা করে এসেছে প্রাণপণে অপুনীতন আমরাই কেবল অন্তপ্ন্দে শীড়ি হইনি, সনাতনী আমরা বিক্ষুকও হয়েছি আত্মপ্রকাশ পর্বের স্তরে সুরে প্রধূমি অগ্নিশিখাকে প্রোজ্ৰল করেই অবশেষে নিশ্চিত বিশ্বীসের দাবানল জলেছিজ হেমচন্দের উপলব্ধিতে যে প্রদাহ__যে বিক্ষুদধ মনোভাবের সঙ্গে পরিচিত হয়ে নবীনচন্দ্রে একই মনৌভাব অভিযোগে-অভিমাঁনে মথিত। হেমচন্দ্র যখন “ভা. সঙ্গীতের” বিলাপধবনিতে বাংলাদেশের আবহাওয়াকে উত্তপ্ত করে তুলছিবে নবীনচন্দ্রের বেদনাঘন উপলদ্ধি তখন খণ্ড কবিতাকারে অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠেছে নবীনচন্দ্রেরে উৎসারিত স্বদেশভাবনা মুযূষূর্র দেশবাঁপীর তিক্ত অভিজ্ঞতাকে বে করেই সৃষ্ট হয়েছে মাতৃভূমির জন্য অশ্রমোচন করে সঞ্চিত প্লানিকে ধুয়েমুছে করার এই পদ্ধতিটি সেকালীন কবিতায় বহু দৃষ্ট হলেও এর উদ্দেশ্যের সততায় সূ ২১

৩২২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

করা অন্থচিত। উদ্দেশ্ঠের অকুত্রিম মহত্ব দ্রিয়েই এসব কবিতার বিচাঁর সম্ভব | আর হেমচন্দত্র-নবীনচন্ত্র যে যুগে জন্মেছিলেন তখন বেঁচে থাকার সর্বজনীন সুবিধাগুলিও আমাদের অনায়ত্ত ছিল। সাধ্য ছিলনা বলেই অধিকাঁরবঞ্চিত সে যুগের মাচ্ষর। বাঁচার সাধ স্বপ্নকে নির্বাসন দিতে পারেনি অসহায় কবির! তাই ক্রন্দনের সহজও স্থলভ পন্থণটি আবিষ্কার করেছিলেন বস্ততঃ বহু মান্ষের অক্রজলকে এরা সুবোধ্য বা সর্বজনবোধ্য রূপ দিয়ে ছিলেন কীঁব্যে-কবিতায় নবীনচন্দ্র তাঁর স্বদেশপ্রেমমূলক কবিতায় “স্বাধীনতার জন্য নিঃশ্বাস মাতৃভূমির জন্য 'অক্রবিসর্জন করেছিলেন”__ স্বীকারোঁক্তির সাক্ষ্যই তা জানিয়ে দেয়। হেমচন্দ্রের কবিতায় এই ক্রন্দন যথার্থ ট্রযাজিক মহিমা! লাভে সক্ষম হয়েছে, কারণ ব্যক্তিগত চিম্থাকে দেশচিস্তায় পরিণত করে কবি হতাশা বিষাঁদের গভীরে ডুবে গেছেন। রাজশক্তি যেদিন কখির ক্রোধে উদ্ধত হল, এই বিষাদ শতধাঁবিদীর্ণ আর্তনাদে বাংলার আকাঁশ বাতাস আকুল করে তুলেছিল নবীনচন্দ্রের কবিতাঁতেও সে যুগীয় ঝটিকা সংকেত, বিক্ষুব্ধ গর্জন সমভাবে প্রতিবিদ্বিত। শিক্ষিত-পরিমাঁজিত চিন্তাখলত নিয়ে পরাধীনতার দাসত্ব গলাধঃকরণ করে নীলকণ্ের ভূমিকায় অভিনয় করাটা সেযুগে সম্ভব ছিল না। যুগবোঁধ ব্যক্তি- বোঁধকে এমনি করেই গ্রাস করে সব দেশে সব যুগে, চেষ্টা করেও আত্মরক্ষা কর যায়না সেদিন তাই নবীনচন্দ্র কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলেন স্বাদেশিকতার অন্ুভবকে সর্বসাধারণ্যে ছড়িয়ে দিয়েই এমনি করেই উনবিংশ শতাব্দীর শেষ প্রান্তের কবিগোষ্ঠী বিংশ শতাব্বীর আগামী কবিদের স্বদেশচিন্তার হত্র ধরিয়ে দিয়েছিলেন |

কবিতারচনার প্রথম যুগে প্রশংসা প্রেরণার যুগ্ম প্রয়োজনে নবীনচন্ত্র স্বদেশপ্রেম অবলম্বন করেছিলেন কবিতার যূলভাঁব হিসেবে--যদিও একেই স্থায়ীভাব বলা যাবে না। কবির “আমার জীবনের” কোন অংশে এই প্রশংসাউৎস্কক কবিচিত্তের পরিচয় পাওয়া যায় কবির যশোহর থাকাকালীন তীর “সায়ংচিন্তীর” কোন অংশ আবৃত্ত হতে শুনেছিলেন--এবং জনসমাদরের নিরিখে আত্মবিচার করতে গিয়েই সমকালীন কবিদের ওপর অজান্তেই অবিচার করেছিলেন, -“আঁমি এডুকেশন গেজেটে লিখিবার পূর্বে স্মরণ হয়, স্বদেশপ্রেমের নাম গন্ধ বাংলার কাঁব্যে কি কবিতায় ছিল না1।”

স্বলিখিত আত্মচরিতের এই পূর্ণ ভ্রান্ত উক্তিটি সম্ভবতঃ প্রশংসাবিগলিত কবির বিচলিত মনোৌভাবেরই ফল। প্রসঙ্গে কবিচিত্তে স্বদেশপ্রেম সঞ্চারের প্রসঙ্গে তিনি স্বীকার করেছিলেন,__

"এ স্বদেশপ্রেম অধ্যয়ন সময়ে আমার হৃদয়ে অস্কুরিত হয়, এবং যশোহরে শিশির বাবুর সংস্পর্শে আসিয়া উহা দিন দিন বদ্ধিত হইতে থাকে ।”

কাব্য চইত

এই উক্তিও নবীনচন্ত্রের স্বদেশাত্মক মনোভাবের স্চনাপর্বের ব্যাখ্যায় সাায্য করে না। অংশটিতেও আত্মবিশ্লেষণে কবি যথেষ্ট অসাবধানতার পরিচয় দিয়েছেন বাঁল্যকালে চট্টগ্রামের প্ররুতিপ্রেমে মুগ্ধ কিশোরটির মনে ষে স্বদেশীত্রক অনুভূতি প্রকাশের পথ খুজেছে কবি নিজেই তার স্বরূপব্যাখ্যা করতে ইতস্তত; করেছেন কেন বোঝা যায়না নবীনচন্দ্র ত্বদেশপ্রীতি সম্বল করেই কাব্যক্ষেত্রে আবিভভূতি হয়েছিলেন, - তাঁর সহজাত অনুভূতি, কিন্ত এই সহজ সত্যটি বিশ্লেষণে কবি শিজে অক্ষম যশোহরে অবস্থান কালেই কবি স্দেশপ্রেমীত্বক অনুভূতি খণ্ড কবিতাকারে প্রকীশ করেন--এবং এখানেই “পলাশীর যুদ্ধ” কাব্যের বিষয়টি ক্ষুদ্র কবিতাঁকারে রচনা করেন সুতরাং যশোহরবাঁসহ নবীনচন্দ্রের মনে স্বাদেশিক ভাব সঞ্চরের ক্ষেত্র বলে মেনে নিতে হয়। উচ্চপদস্থ কর্মচারী হিসেবে প্রাপ্য সম্মানের সঙ্গে অতিরিক্ত যে মর্যাদাটুকু সহকর্মী বন্ধুদের কাছ থেকে নবীনচন্দ্র পেয়েছিলেন সে মর্ধাদ ব্বদেশপ্রেমী কবির নবীনচন্দ্ও জানতেন স্বাদেশিকতার মানদণ্ডে তিনি স্বীকৃতি পেয়েছেন

নবনচন্দ্রের, “অবকাশ রঞ্জিনীর” প্রথম ভাগের কবিতালোচনায় দেখা যাবে-_ আঠার থেকে তেইশ বছরেই স্বদেশচিন্তা কবিকে কিভাবে অধিকার করেছিল ছাত্র জীবন কর্ষজীবনে প্রবেশের মুহূর্তে তিনি দেশচিন্তার পবিত্র ধ্যানে মগ্প ছিলেন। শুধু কবিদেরই নয়, ষে কোন সাধারণ-অসাধারণ মান্থষের জীবনেই যৌবনের উষাঁলগ্রটি বড় গুরুত্বপূর্ণ :অধ্যায়। নবীনচন্দ্রের কাব্যজীবনে কর্মজীবনের উষালগ্নে দেশপ্রীতির মত লক্ষ্যণীয় এবং স্মরণীয় একটি চাঁরিত্রিক গুণের প্রভাব সবার আগে চোখে পড়ছে। এই দেশপ্রীতিই নবীনচন্দ্রকে কাব্যজীবনে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে,__কর্মজীবনে বিদ্ব এনেছে একদা নবীনচন্দ্রের পরিচয় ছিল “পলাশীর যুদ্ধ” প্রণেতারূপে ; --পত্রয়ীর” মত একটি গুরুত্বপূর্ণ নব্যপুরাঁণ লিখেও পুরোন পরিচয় হারিয়ে যায়নি এটা বড়ো কম কথা নয়। অথচ কাব্য হিসেবে বহু অসম্পূর্ণতা এতে আছে তা জেনেও জনগণ কাব্যটিকে মর্যাদা দিয়েছে। পলাশীর যুদ্ধ” নাটক না হয়েও অভিনীত হয়েছে,__অন্কবাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে পূর্ববর্তীদের কাব্যেও দেশপ্রেমের আবেদন যে ভাবে জনমনকে আকর্ষণ করেছে তার পরিচয় পেয়েছি কিন্তু মহাঁকাঁব্যের কবির। সাধারণ কাব্যের অন্তরালে হারিয়ে যাননি এটাই বিস্ময়ের কথা | মধুহ্দনের যথার্থ স্বরূপ “মেঘনাদবধ কাব্যে” গোপন ছিল না, *বুত্রসংহার” হেমচন্দ্রের জীবনদর্শন ব্যাখ্যা করেছে কিন্তু দতরয়ী” কাব্য নবীনচরিত্রের প্রধানতম বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করতে পারেনি সমকালীন বিচারে স্বদেশপ্রেমের কবিরূপেই নবীনমচন্ত্র শ্রদ্ধা লাভে সমর্থ হন,-_উনবিংশ শতাব্দী; মহাভারত রচনার পর্বটিকে কবির আধ্যাত্মিকতা বিশ্লেষণের প্রসঙ্গেই ব্যবহার করা হ্‌; এবং আজও হচ্ছে। সৃষ্টি হিলাবে কোনটি সার্থক সে বিচার পৃথক,-_কিস্ত স্বদেশপ্রে:

৩২৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

যে উনবিংশ শতাব্ীর কবিকুলের ছাড়পত্র রূপে বিবেচিত হোতো প্রসঙ্গে সে কথাই মনে আসে নবীনচন্দ্রের কাব্যজীবনের প্রতিষ্ঠালগ্নের সৃঙিগুলিতেই স্বদেশাত্বক মনোভর্দিমীর প্রতিফলন রয়েছে দেশচেতণাঁর পুর্ণ পরিচয় আবিফার করতে গেলে নবীনচন্দ্রের কাব্যেন্মেষ পর্বটিকেই যে বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে তা বলেছি। আবাল্য কবি জন্মস্থানের সৌন্দর্য রূপের যুগ্ধ পৃজীরী। স্বন্দরী চট্টল কবিমনে যে গভীর প্রেম উদ্বোধিত করেছিল তার প্রশ্নাণ শুধু কাব্য কবিতাতেই নয়_আআজীবনীতে কবি তা বিস্তারিতভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন এই প্রকৃতি প্রেমই নবীনচন্দ্রের জন্স্থানগ্রীতি তথ জন্মভূমিগ্রীতীতে পর্যবসিত 'রঙ্গমতী কাবা' রচন। করে ক্ষন্দরী চট্টলকে লোৌকনয়নের সামনে তুলে ধরার আন্তরিক চেষ্টা করেছেন কবি। নবীনচন্দ্রের গীতিপ্রাণতার মূলেও রয়েছে প্রকৃতি প্রেমমুগ্ধ হৃদয়ের ভাবাবেগ এই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবাবেগে আক্রান্ত হয়ে কবিতা রচনা করাই নবীনচন্দ্রের বৈশিষ্ট্য আন্তরিকতায় সে কবিতা ধন্ত হয়, অন্ুতববেছ্ধ সত্যপ্রকাশে সে কবিতার তুলন। নেই। কিন্তু নবীনচন্দ্রের স্বাভাবিক জন্মভূমিগ্রীতির পরিচয় যৌবনের প্রারস্তে রচিত অবকাশ রঞ্জিনীর ১ম ভাগের কবিতায় আশ্চর্যজনক ভাবে অনুপস্থিত অথচ চেষ্টাকৃত বিষয়বস্ত আহরণ করে কবি হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টায় করি তখন অক্ান্ত সাধনায় রত। নবীনচন্দ্রের প্রবণতা প্রথম যুগের স্থষ্টির মধ্যে প্রতিফলিত হয়নি দেখে আক্ষেপ হয় বটে, কিন্তু আয়োজনের ঘটা দেখলে অন্যদিক থেকে নবীনচন্দ্রকে অভিনন্দন জানাতে হয় চট্টগ্রামের স্কুলের ছাত্রটির সমস্ত অন্তর জুড়ে সেদিন সমগ্র দেশের চিন্তা বাঁসা বেঁধেছিল ; রাজনৈতিক--সামাজিক নৈতিক সমস্ত ভাবনা কবিকে দিশাহারা করেছিল। সমকালীন চেতন] কবির স্বাভাবিকতাকে আচ্ছন্ন করেছিল বলেই নবীনচন্দ্রের প্রথম যুগের সৃষ্টিতে চিন্তাক্রিষ্ট নবীন কবিকে আবিষ্কার কর] যাঁয় অতি সহজে ছন্সগান্তীষ নিয়ে নিপুণ ভাবে দেশপ্রেমিকের ভূমিকায় কবি অভিনয় করেছেন মধুক্থদনের “চতুর্দশপদী কবিতাবলী” তাঁর প্রবাঁপী মনের করুণ আলাপ, অথচ নবীনচন্দ্র সুন্দরী চট্টলের জন্য একটি পঙ়ক্তিও নিবেদন করলেন না, এই আলোকে উভয় কবির মানস পরিমণ্ডলটি বিচার করাটা খুব অযৌক্তিক হবে না তার কারণ মপুক্ছদনের দেশপ্রেম অন্তঃসলিলা ফন্তুর মত চিরপ্রবাহ বয়ে বেড়ায়, নবীনচন্্র সাড়ম্বরে চট্টলগ্রীতি প্রকাশ করেন কিন্তু কাব্যের বিষয়বস্ত হিসেবে গুগুজার মত সাঁময়িকতাকেই আকড়ে ধরে থাকেন

আলোচনা থেকে নবীনচন্দ্রের স্বদেশভাঁবনার সঙ্গে তাঁর সৃষ্টির পরোক্ষ যোগাযোগের কথ স্পষ্ট হবে। স্বদেশপ্রেম বা জন্মভূমিপ্ীতি নবীনচন্দ্রে সহজাত কিন্ত কাব্যের বিষয়বস্তু রূপে আমরা কবির সাঁড়ম্বর দেশচিন্তার প্রমাণ পাই।

কাব্য ৩২৫

"অবকাশ রঞ্জিনীর” ১ম ভাগে নবীনচগ্ত্র প্রবীন কবির মতো স্বদেশপ্রেম অবলম্বনে স্বাদেশিক কবিতা রচন1 করেছেন একথা যত অস্বীকারই করুন না কেন, দেশ- ভাবনাঁজাঁত কবিতা রচন! করাটা সে যুগে প্রীয় ফ্যাসানে দীড়িয়ে গেছে,_নবীনচন্ত্ তীক্ষধীর মত এর ফলাফল জেনে ফেলেছিলেন “অবকাশ রঞ্রিনীর” বহু কবিতায় কবি যে প্রসঙ্গ উথাঁপন করেছেন তাঁর আবেদন নিছক সাময়িক কবিতা বলেই সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ক্ষেত্রেও দেশপ্রেমের প্রস্গটি তিনি আরোপ না করে পাঁরেননি,__ এই আরোপিত দেশপ্রেমের স্বূপটি সে যুগে বসে বিচার করা সম্ভব ছিল না। অনেক সময় বহু অসঙ্গতি অর্থহীনতাঁও ধরা পড়েছে,__কিন্ত তাতে দেশগ্রীতি বোঝাতে অসুবিধে হয়নি | বহু কবির রচনাংশ বিচ্ছিন্নভাবে আলোচন| করেই দেশচিন্তার প্রসঙ্গে আসতে হয়েছে। “অবকাশ রঞ্জিনী”্র [ ১ম ভাগ] বহু কবিতায় এই চেষ্টাকৃত স্বাদেশিকতা সহজেই ধর] পড়ে তার মানে এই নয়, সর্বত্রই তা আরোপিত বা চেষ্টাক্কৃত। শুধু আরোপের প্রসঙ্গ যেখানে অতি প্রত্যক্ষ তাকে নির্ভেজাল আন্তরিকতা বলে ব্যাখ্যা করার অর্থ হয়না নবীনচন্ত্রের একটি বা ছুটি কবিতা আলোচন! করলেই সত্য স্পষ্ট হবে চট্টগ্রামের সৌভাগ্য” কবিতাটির বিষয়বস্ত নিতান্তই ব্যক্তিগত উট্রগ্রামবাঁসী কবিবন্ধু আত্মীয়ের ডিগ্রী প্রাপ্তিতে আনন্দিত কবি কবিতাটি রচনা করেন। বিশ্ববিগ্ভালয়ের শিক্ষার যথার্থ অর্থটি অন্ধাবন করেই কবি উচ্ছাস প্রকাশ করেছিলেন আলোকে আঁসার চেষ্টায় ধাঁরা সফলকাম কবির অভিনন্দন সেখানে সঙ্গত স্বাভাবিক অভিব্যক্তি বলেই মনে করা যাঁয়। কনতোকেশন দর্শনান্তর কবিচিত্তে এই ভীবটি জাঁগরিত হয়েছিল কিন্তু কবিতাটির প্রীরস্ত মুহূর্তে চট্টগ্রামের ঘে পরাধীনা, অক্রভারানত চিত্রটি কবি অঙ্কন করেছেন-_তাঁতে শুধু চট্টগ্রামের নয় সমগ্র ভারতের শৃঙ্খলিতা, ক্রন্দনসিক্তা ভারতজননীর মৃতিটি উত্তাসিত হয়ে ওঠে। কবিতাটির জন্মণৃহূর্তে কধির যে মনোভাব লক্ষ্য করেছি তার মূলে আশা ভবিশ্যতের আনন্দই মুখ্য, কিন্ত সমকালীন দেশান্থরাগের স্পর্শ দিয়ে কবিতাটির বক্তব্য অনেক ব্যাপক প্রসারিত করা হয়েছে৷ চট্টগ্রামের ছুঃখের চিত্রটি স্থানিক সঙ্কীর্তি অতিক্রম করে সর্বজনীন ভারতের দুর্দশার প্রতীক হয়েছে নিঃসন্দেহে এক নিপুণ প্রযুক্তি (£5001০) কিন্ত নিতান্ত ব্যক্তি সত্যকে অকপটভাবে প্রকাশ করার সারল হারিয়ে কবির দেশপ্রেম আরোপের চেষ্টাটি লক্ষ্যণীয়! কবিতাটির প্রথম ছুটি স্তববে পরাধীন দেশের গ্লানি ক্রন্দনের একটি নিখুঁত বর্ণনা কবি অনায়াসে যো' করেছেন বস্ততঃ সেকালে ব্যক্তি অনুভূতির উপর ভরসা না করে কবিরা একা দুষ্টি আকর্ষণের সহজ স্কত্র রচনা করেছিলেন নিবিড় আন্তরিকতা না থাকু

৩২৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

অগভীর চিন্তাঁতেও দেশচিস্তা কি ভাবে কবিস্বভাবকে অধিকার করেছিল তার প্রমাণ এটি | “চট্টগ্রামের লৌতাগ্য* কবিতার আর্ত মুহূর্তে কবিকেও আমরা চিন্তান্বিত-_ বিষাদক্রিষ্ট রূপে দেখি, [ ১] উঠ উঠ জন্মভূমি উঠ একবার বসি অবনত মুখে, মজিয়৷ মনের দুখে, বিরস বদনে মাতা কেঁদে। নাক আর। কি ছুঃখে কাদিছ এত বল না আমায়,-_ তব মুখ দেখি, বুক বিদরিয়৷ যায় টি বিগলিত অশ্রধারা কর সম্বরণ, মাথা তোল জন্মভূমি, বল মা! আমায় তুমি, এমন মলিন বেশ কিসের কারণ ? মা! তোমার অশ্রবারি ঝরি অনিবাঁর, বহিতেছে “কর্ণফুলী” স্রোত ছুনিবাঁর | নিঃসন্দেহে ক্রন্দন পরাধীনতার ক্রন্দন নবীনচন্দ্র যে যুগে কাঁব্যজগতে প্রবেশ করেছিলেন সে যুগের বাঙ্গালী বাংলা মায়ের এই রিক্তরূপ কল্পনা করেছে। এই ক্রন্দন দেশভক্ত সন্তানদের চিত্তে যে অব্যক্ত ব্যথা হৃজন করেছে__দেশপ্রেম সেই ব্যথারই আরতি নবীনচন্ত্র চট্টগ্রাম শব্দটি ব্যবহার করেছেন বলেই অংশটকে আমরা সমগ্র বাংলাদেশের রূপক হিসাবে ব্যবহার করতে পারি না। খুব স্পষ্টভাবে চট্টগ্রামের ছুটি কৃতি ছাত্রের সাঁফল্য যে কবিতায় সংবাদ হিসেবে পরিবেশিত হয়েছে তা ধত মর্মস্পর্শী হোক না কেন স্থানিকতার উর্ধ্বে তাঁর বিচাঁর চলতে পারে না অথচ শুধু চট্টগ্রামের চিত্র হিসেবে এমন একটি আবেদনপূর্ণ দেশাত্মবোধক কবিতাংশকে কেমন করে একঘরে করে রাখি নবীনচন্দ্রের দেশপ্রেমের বিচিত্র রূপটিই অংশে ধর] পড়েছিল শুধুই জন্মভূমির রিক্ততার চিত্র নয়, কবি সযত্বে সমগ্র দেশের আ'ত্াটিকেই আবিষ্কার করে চলেছেন ছাত্রজীবনেই হিন্দুমেলার মত একটি জাতীয় উৎসবের সঙ্গে নবীনচন্দ্রের পরিচয় ঘটেছিল কলকাতায় “ন্যাশস্যাল মুতমেণ্ট” প্রথম শুর করেন নবগোপাল মিত্র সেই সভাতেই ঠাকুরবাঁড়ীর স্বদেশপ্রাণ সন্তানের! প্রকাশ্যে যৌগদান করতেন। স্বদেশী গানের প্রথম শুরুও হিন্দুমেলাতেই উদ্বোধন সংগীত হিসেবে গাইবার জঙ্যই

কাব্য ৩২৭

গণেন্দ্রনাথ, জ্যোতিরিক্্রনীথ, সত্যেন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ স্বদেশী-গানি রচনা করেছেন দেশ বলতে বাংল £নয়, দেশবাসী বলতে যে কেবল হিন্দুকেই বোঝায়না, হিম্দু- মেলাতেই তা প্রমাণিত হয়েছিল নবীনচন্দ্রই শুধু নয়, সে যুগের স্বদেশী কবিরা উৎসবকে মনেপ্রাণে বরণ করেছিলেন

নবীনচন্ত্রের জন্মভূমিপ্রীতি সেযুগীয় দেশচিন্তার যৌগফলই “অবকাশ রঞ্জিনীর” [ ১ম ভাঁগ ] কবিতাগুচ্ছ। সে যুগের কবির আত্মমগ্ন ভাঁববিলাসে ডুব দিতে গিয়েও যুগধর্মের প্লাবনে ভেসেই চলেছেন ষে যুগের কোন কথাই তাঁদের একান্ত কথা নয়--সকলের বক্তব্যই তাদের কণ্ে প্রতিধবনিত | হেমচন্দ্রের কবিতাবলীতে ক্ষুন্ধ কবিকণ্চের গুঞ্জন যেমন কবিকে হতাশার অন্ধকার গহ্বরে নিয়ে গেছে, নবীনচন্দ্রের স্বদেশমূলক কবিতাগুচ্ছেও অকারণ হতাশাবোঁধের কিছু পরিচয় ইতস্ততঃ খুজে পাবো কিন্তু তা যে কবিচিত্তের আন্তরিক ক্ষুৰতা থেকেই এসেছে_ একথা প্রমাণ করা যাবে না। নবীনচন্দ্রের বিষাদ কিংব1 হতাশার মূলে কোন জীবনদর্শন বা আত্মদর্শন নেই অথচ কাঁরুণ্যের, অঞ্রজলের বিস্তারিত বর্ণনা সর্বত্রই দেখা যায়। নবীনচন্দ্র এসব কবিতায় উপলব্ধি অভিগ্ুতাকে মেশাতে পারেন নি-চিন্তা শবের সাহায্যে মানসিক ব্যায়াম করে চলেছেন “অবকাশ রঞ্জিনীর” খণ্ড কবিতাবলীতে আমরা এমন কোন প্রসঞ্গ পাইনা যা ইতিপূর্বে চোখে পড়েনি,__এমন কোন অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত হইন1 য1 নিঃসন্দেহে শুপু নবীনচন্দ্রের বলেই ধরে নিতে পারি স্বদেশপ্রেমের অনুতৃতিটুকুও অগভীরত্মিতে কেমন করে অস্বচ্ছ হয়ে ওঠে,_নবীনচন্দ্রের “অবকাশ রঞ্জিনীর” (১ম ভাগের ) খণ্ড কবিতাগুলি তাঁর প্রমাণ। কবির কাব্যজীবনের প্রবেশপর্বে এদের জন্ম,__তাই খানিকটা অসম্পূর্ণতা এতে থাকবেই কিন্তু দেশাত্ব- বোধের এই অনতিগভীর অন্থুভূতিই পরিণত বয়সের কাব্যে কত সাথকরূপে ধরা পড়েছে, তাই “পলাশীর যুদ্ধের” রচয়িতা নবীনচন্দ্রকে অকৃপণ প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন সেযুগের সমালোচকবৃন্দ সাহিত্যসাঁধক চরিতমালাকারের নিম্নলিখিত মন্তব্যের যৌক্তিক] স্পষ্ট হয়ে ওঠে এখানে,__

“দেশের প্রতি সুগভীর ভালবাসায় তীহাঁর হৃদয় ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ, পরাধীনতার বেদন| তিনি মর্মে মর্মে অনুভব করিয়াছেন ।...এই দেশশ্রীতির প্রেরণায় তাহার অন্তঃস্থল হইতে যে কবিত্বক্োত তরুণ বয়সেই স্বতঃ্ফুর্তভাঁবে উৎসারিত হইয়া উঠিয়াছিল পরিণত যৌবনে তাহাই দ্বুকৃল প্রাবিত হইয়া তাহাকে পলাশীর যুদ্ধ রচনায় প্রণোদিত করে 1”

“অবকাশ রঞ্জিনীর” (১ম ভাগ) কবিতাতে দেশপ্রীতির প্রসঙ্গই মুখ্য, কিন্তু বনারস্তের মুহূর্তেও উন্মাদনা নয়, অবসন্নতাই ঘিরে আছে কবিকে হেমচন্দ্রে

৩২৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে ব্বদেশপ্রেম

মতো৷ সে অবসাদ আর্তনাদে রূপান্তরিত নয়, নবীনচন্দ্রের সচেতন বৈরাগ্য লিরিক উচ্ছ্বাসে ফেনায়িত হয়ে উঠেছে “সায়ংচিন্তা” নামক কবিতাটির কথা প্রসঙ্গে স্মরণযোগ্য যে পৃথিবীকে কবি প্রত্যক্ষ করলেন সে শুধু পরাধীনতার শীর্ণ ছবি অজ্ঞতার আশীর্বাদকেও কখনও কখনও পরম কাম্য বলে মনে হয় কবির, "পরাধীনতার গ্লানি অন্ুতব করার মত মনই যার তৈরী হয়নি, তার মনে স্বস্তিটুকু অন্ততঃ আছে “গাইছে রাখাল শিশু মধুর গায়ন,_ নাহি কোন চিন্তা, নাহি ভবিষ্যৎ ভয় না গং নাহি জানে অধীনতা কেমন নিগড়, স্বাধীনতা কি রতন, ভাবে না কখন এই অজ্ঞতাকেই কবি কাম্য বলে মনে করছেন,-_ কেন বা ফুটিল মম জ্ঞানের নয়ন, কেনই বিবেক-শক্তি হলো বিকশিত, উথলিতে অভাগাঁর, শোঁকসিদ্ধু অনিবাঁর, নিজ হীন অবস্থায় করিতে দুঃখিত, কেনই ভাঙ্গিল মম শৈশব স্বপন | এখানে আক্ষেপের অনতিগভীর স্তরটি স্স্পষ্ট_ সচেতন বৈরাগ্যও লক্ষণীয় এই ধরণের সুলভ জীবন জিজ্ঞাসা কখনও জীবন দাঁশনিকতার ভিত্তি হতে পারে না। অবশ্য দেশাত্মবোধকে জীবনদর্শনের গভীর আধারে স্থাপন করা চলে না তবে কখনও কখনও “দেশীত্মবোঁধ” কবির মনোজগতে স্থায়ীভাব রূপে দেখা যাঁয়। দেশ আত্মার সম্মিলিত স্বভাব একটি মনের সমস্ত চিন্তাকে গ্রাস করতে পারে বলেই দেশপ্রেম নয়,_দেশাত্মবোধ শব্দটি প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়ে থাকে সায়ংচিন্তার” মধ্যে কবি খুব স্পষ্টভাবেই দেশচিন্তার উৎস অনুসন্ধান করেছেন নবীনচন্দ্র ইতিহাস, রাজনীতি, সমাজনীতির আলোচনা থেকেই দেশাত্মবোধ লাভ করেছিলেন পঠন পাঠন আমাদের জ্ঞাননেত্রই উদ্বোধন করেনা আমাদের দেশপ্রেমিক সত্তাটিকেও জাগিয়ে তোলে। তাই সে যুগের আবহাওয়ায় বাঁস করে, শিক্ষালাভ করে, বাঙ্গালীর আত্মদর্শন জাঁগরিত হয়েছিল অনায়াসে | ডিরোজিওকে শিক্ষকরূপে লাভ করেছিলেন বলেই রাজনারায়ণ-ভূদেব গোীর দেশপ্রেমচিন্তা অন্যান্ত চিন্তার থেকেও বড়ো হয়ে দেখা দিয়েছিলো | নবীনচন্দ্রের পুরোভাগে উনবিংশ শতাব্দীর চিন্তাশীল দেশপ্রেমিকদের মিছিল নবীনচন্দ্র “সাঁয়ংচিত্তায়' আত্মজাগরণ পর্বটি সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন,

কাব্য ৩২৯

ভারতের ইতিহাঁস, শোকের সাগর, কেন পড়িলাম, আমি কেন পাইলাম আপনার পরিচয়, আর্য বংশ কীতিচয় কেন দেখিলাম, আহা! কেন জন্মিলাম স্বাধীন বংশেতে মোর! অধীন পামর ? [সায়ংচিন্তা | বাঙ্গালীর জাতীয়তাঁবোধের যূলে ইতিহাস চেতনার প্রসঙ্গটি নবীনচন্ত্র অকপটে ব্যক্ত করেছেন রঙ্গলাল-মধুস্থদন-হেমচন্্র যে ইতিহাস প্রসঙ্গ বাক্গীলীর ঘরে ঘরে পৌছে দিয়েছিলেন, নবীনচন্দ্র সেই কাব্যকাহিনী পাঠ করেই চেয়েছিলেন দেশবোধ- স্বদেশপ্রেম যশোহরের কবিবন্ধুরা নবীনকাব্যের এই অর্থপূর্ণ অংশটি বারবার আবৃত্তি করতেন, কারণ এমন অকপট সত্য ছুলভ | এরতিহ্া ইতিহাঁসের ওজ্জল্যেই জাতীয় চরিত্রের ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ হতে পারে, আমাদের চিনতে হলে আমাদের এঁতিহোর কষ্টিপাথরের পাহাধ্য নিতে হবে। নবীনচন্দ্র ঠিক তাই করেছিলেন,_-প্রাচীন ভারতের গরিমার আলোকে আত্মবিশ্লেষণ করতে গিয়েই ব্যথাহত হয়েছেন, তাঁদের সন্তান কি গো আমরা সকল আমরা দুর্বল ক্ষীণ পাঁপিষ্ঠ হৃদয় [এ] এখানে উনবিংশ শতাব্দীর স্বদেশপ্রেমী কবিদের সঙ্গে তিনিও মিলিয়েছেন এই বেদনাঁয় জাঁতীয়তার গান সাহিত্যের সত্য হয়ে দেখা দিয়েছে জ্যোতিরিন্্রনাথের স্বদেশীসঙ্গীতের মর্মকথাটিও এই,-_ জাগ জাগ জাগ সবে ভারত সম্তাঁন ! মাকে ভুলি কতকাল রহিবে শয়ান ? ভারতের পূর্বকীতি করহ স্মরণ, ববে আর কতকাল মুদিয়ে নয়ন? প্রকাশ্য সভায় সংগীতটি সমগ্র জাতির সামনে এক প্রচণ্ড আবেগকেই তুলে ধরেছে মাকে তুলে ভারতসন্তানের আর কতদিন$ বা সপ্ত থাকবেন ? নবীনচন্দ্রের খণ্ড কবিতায় সেযুগের এব জিজ্ঞাসাঁটিই স্থানলাভ করেছিলো পূর্বেই বলেছি, “সায়ংচিন্ত1” রচনার পশ্চাৎপটে কবিচিত্তের অবসন্্রতাই মুখ্য হয়ে উঠেছে আত- বিশ্লেষণের নিপুণ মহিমায় উজ্জ্বল এমন কবিতাতেও কবির নৈরাশ্য ধিরে আছে। কিম্ত মনোভাঁবটিকে স্বদেশপ্রেমী কবির বিশ্বাস-স্ঈথ মনের অনতিগতীর চিন্তাঁবলেই ধরে নিতে হবে রাজনৈতিক চেতনা কবির আকুতিকে কিভাবে বিলাপের পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে সে দৃষ্টান্ত হেমচন্দ্রের কাব্যে মিলেছে নবীনচন্দ্রের আকৃতি আবেদনের রূপ নিয়েছে বলেই তীর স্বদেশচিত্তার ওপর হেমচন্দ্রের চেয়ে ঈশ্বরপগুপ্তের প্রভাবই বেশী

৩৩৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

ঈশ্বরগুপ্ত একই সঙ্গে দেশপ্রেমও ইংরাজবন্দন! করে অনায়াসে ছু” নৌকোয় পা দিয়ে ঈাড়িয়েছেন,_-অবিচলিত নিষ্ঠা না বলে একে বিচলিত আদর্শ বলাই সঙ্গত। ঈশ্বরগুপ্ত দেশাত্মবোধের দ্বিধাখণ্ডিত মনোভাব পোষণ করেছেন, দেশপ্রেমের অবিচল আদর্শ তার সামনে ছিলো না; ভুল মারাত্মক নয়, অসঙ্গতও নয়। কিন্তু নবীনচন্দ্র আদর্শও নিষ্ঠার আভিধানিক অর্থ জেনেও ভুল করেছেন। এঁতিহ্য্ত্রীতি, ইতিহীসচেতনা বিশুদ্ধ স্বাদেশিকতা কি বস্ত জেনেও তিনি ইংরাজের কাছে করজোড়ে সমাধানের উপায় জানতে চেয়েছেন, এখানেই তাঁর ভ্রান্তি পরাধীনতার জ্বাল তাকে উত্তেজিত করেনি, নিক্ষলের দলে থেকেই যাবার চিন্তা যেন কবির মনে স্থান পেয়েছে *সায়ংচিন্তা” কবিতার শেষাংশে ইংলগ্েশ্বরীর কাছে কবি আশ্রয় ভিক্ষা করছেন,_ “রে বিধাতঃ। কি দৌঁষে ভারতভূমি দোষী ও-চরণে ? কেন অভাঁগিনী সহে এতেক যন্ত্রণা, ভারত নিঃশ্বাসে ভার দিয়ে যাঁও সিন্কুপার, রাণী যিনি, কহ তারে এসব যাতনা, কাদিবেন দয়াবতী ভারত-রোদনে |

আত্মবিশ্বাস আঁশাবাদের ওপর গুরুত্ব আরোপ করার মত মনোবল ছিলনা বলেই ' নবীনচন্দ্রের স্বদেশপ্রেমে খণ্ডিত “সংশয় দ্বিধার চিত্র প্রকট ব্যাপারে তিনি সেকালীন গতান্রগতিক মনোভাবের উর্ধে উঠতে পারেননি পরাধীনতার ক্রন্দনেও অবিমিশ্র উত্তাপ সঞ্চারের, আন্তরিকতার অভাব সর্বত্র লক্ষ্য করা যায় কবির মনোঁদর্পণে কালোত্তীর্ণ ভবিষ্যতের ছবি ফুটে ওঠাঁটাই যেখানে স্বাভাবিক ছিলো দ্বিধা, সংশয়, ভীরুতার অকৃটোপাশে সেই কথাই বন্দী হয়ে রইলো বলে আক্ষেপ করতেই হয় অথচ সহজাত “দেশবুদ্ধি নিয়েই নবীনচন্ত্র সাহিত্যক্ষেত্রে আবিভূতি হয়েছিলেন স্বদেশের জন্য অশ্রবিসর্জনের প্রসঙ্গটি কবি ব্যস্ত করেছেন আত্মকথায়, কবিতায় নয়। জালা গ্লানি, বীর্যহীনতা হীনমচ্যতার হাত থেকে বাঁচানোর অকৃত্রিম প্রয়াস সমগ্র বঙ্কিমজীবনের মূলমন্ত্র হয়ে উঠেছিলো, নবীনচন্দ্রের প্রথম যুগের দেশাত্মবোধেই কিন্তু জড়তা ভীরুতার স্পষ্ট স্বাক্ষর রয়েছে জীবনের যে পর্বটিতে এই কবিতা লিখিত হয়েছিল রাজনৈতিক, কূটনীতিক কিংবা ভবিষ্যতচিন্তা কোনটিই প্রাণচাঞ্চল্যকে দমন করতে পারে না। আঠার থেকে তেইশ বছর বয়সে উচ্্াপ আদর্শ প্রায় ছুণিবার হয়ে উঠতে চায়--তাই হৃদয়োচ্ছাসে অকৃত্রিমতা, উত্তেজনায় অরুপণতাই ধরা পড়ে অথচ নবীনচন্দ্র পরাধীনতার জালা মর্মে মর্মে

কাব্য ৩৩১

উপলব্ধি -করেও স্বাধীনতা পাওয়ার স্বপ্র দেখতে পারেননি কর্মজীবনে উদ্যত রাজরোষের প্রসঙ্গ তখনও চিন্তার কারণ হয়ে ওঠেনি,_কবি যেন অকারণেই নত হয়েছেন সই ভরসাঁয় কবি বসে আছেন,_- "্কীদিবেন দয়ীবতী ভারত রেদনে” আঠার থেকে তেইশ বছরেই কবি শান্ত-অন্ুদ্ধত-হৃদয়োচ্ছাস নিয়ে দেশপ্রেমের কবিতা রচনা করেছিলেন ; দেশপ্রেমের গভীর আকুতি রুদ্ধরোষে বজ্রনির্ধোষে শোনা যাবে কিকরে? আরও একটি কবিতায় নবীনচন্দ্রের স্বীকারোক্তি তাঁর অগভীর উচ্ছাস ব্যক্ত করেছে “পিতৃহীন যুবক” "পতিপ্রেমেছঃখিনী কামিনী” কিংবা “বিধবা কামিনীর” মত কবিতায় কবির সহানুভূতি বাঁহিক বলে মনে হয়। কোথাঁও কবি জীবন সংগ্রামে সৈনিকের ভূমিক। নিতে চাননি বিধবা নারীর জীবনসমস্থা বিগ্ভাসাগরের মনকে ব্যথিত করেছিল বলেই স্থায়ী সমাধানের জন্য সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন অথচ নবীনচন্দ্র দেশণচার রাঁক্ষসীকে মদ ভৎসন! করেই শান্ত হয়েছেন অকপটে নিজের অক্ষমতা নিবেদনেও তিনি অনন্য,_- ইচ্ছা করে একেবারে জ্ঞাঁন-অসি ধরি, দাসত্ব শৃঙ্খল একা কবি বিমোচন, কিন্ত আমি অসহায়, তাহে শত অরি,

একেশ্বর কে কোথায় জিনিয়াছে রণ? | বিধবা কামিনী ]

অক্ষমতার এমন অভিব্যক্তি খুব কম দেখা যায়। অথচ দেশসচেতনতা৷ না৷ থাকলে এমন একটি কবিতা লিখিত হতো না। সাময়িকতাকে আশ্রয় করার পূর্ণ স্থযোগটুকু নবীনচন্দ্র গ্রহণ করেছিলেন শুধু সাময়িকতার অন্তরালে যে বিদ্রোহী আত্মার বিক্ষুন্ধ গুঞ্রণ শোনা যায় অন্যান্ত কবির রচনায়, নবীন কাব্যে তা অন্ুপস্থিত। ভাব, ভাষা প্রকাঁশভঙ্গীর দুর্বলতায়ও কবিতাগুলি ভারাক্রান্ত

“অবকাশ রঞ্জিনীর” হৃদয়োচ্ছ্াসপূর্ণ প্রেমকবিতা৷ ছাঁড়া প্রায় সব কবিতারই অগ্তম বিষয়বস্তু স্বদেশ | স্বদেশ বলতে আমরা বিস্তৃতভাবে ভারতবর্ষকে সংকুচিত- ভাবে বঙ্গদেশকেই বুঝে থাকি উনবিংশ শতাব্দীর কবিতায় স্বদেশ শব্টি কখনও ভারত কখনও বাংলাদেশকেই বুঝিয়েছে। নবীনচন্দ্রের কবিতায় জন্মভূমি জন্মস্থান অনেক জায়গাতেই সমার্থক | কিন্তু স্বদেশ বলতে সমগ্র ভারতকেই বোঝানোর স্বাভাবিক চেষ্টা! সর্বত্র রয়েছে কবি যখন দেশের দুর্দশ] স্মরণ করেন সমগ্র ভারতের

৩৩২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

পদানত রূপট কবিচিত্তে বেদনা তৃষ্টি করে| স্বজাতি সম্পর্কে বাঙ্গালীপ্রসঙ্ক বা হিন্দ- ধঁতিহা স্মরণ করেও নবীনচন্দ্র আর্যসংস্কৃতিকেই প্রাধান্ত দিয়েছিলেন ব্যাপারেও কোন অভিনবত্ব দেখা যায়না বাংলাঁপাহিত্যে বীরমুগ উদ্বোধনের মুহূর্তেই আমরা বাঙ্গালীয়ান। পরিত্যাগ করেছি, হিন্দুয়ানীকে গ্রহণ করার আগ্রহে বস্ততঃ স্বদেশ- প্রেমের অনুভূতি যেমন নিতান্ত ব্যক্তিগত হতে পারেনা তেমনি এতিহা গ্রহণের ব্যাপারেও উজ্জ্বল আদর্শকে আকড়ে ধরার সহজাত বুদ্ধি মানুষের রয়েছে না হলে বনহ্গদেশের স্থানিক এঁতিহাকে আমল না দিয়ে বল্লালী যুগ থেকেই আর্সংস্কৃতির প্রতি আমরা লুব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেছি কেন? এঁতিহ্র উজ্জ্বলতা মানুষের দিনযাঁপনের অনেক গ্লানিকে ঢেকে ফেলে দেণপ্রেমচিন্তার পরিসর উনবিংশ শতাব্দীতে ব্যাপকতম আকার গ্রহণ করেছিল-_তা সর্বত্রই স্পৃ্ট। জাতীয় আন্দোলনের পটভূমিকায় এই উদার দেশচিন্তাই সব মানুষকে এক ছন্রছায়াতলে ধ্লাড় করিয়েছে গছ্ের বিস্তৃত কথায় বঙ্িমচন্দ্র স্পষ্টভাবেই হিন্দুপ্রীতির সমর্থন করে বাঙ্গালীয়ানাকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তীর আদর্শে কিছু গৌঁড়ামী থাকলেও বক্তব্যে কোন অস্পষ্টতা ছিল না। নবীনচন্দ্রের দেশাত্বোধের পূর্ণ রূপ পাওয়ার জন্য বিচ্ছিন্ন অংশগুলো বিভিম্ন কবিতা থেকে সংগ্রহ করতে হয়। তা থেকেই কবির স্বদেশচিন্তার নিজন্ব রূপটি প্রতিভাত হয়ে থাঁকে। নবীনকাব্যে ভারতপ্রেম এসেছে পুর্বসাধকের চিন্তাপ্রভাবে, সমকালীন দেশাত্মবোধক সংগীতের প্রভাব পড়াঁও স্বাভাবিক হিন্দুপ্রীতি অন্যান্ত কবির মত নবীনচন্দ্রেও ওতপ্রোত--জন্মজাত | বাঞ্গালীয়ানা উচ্চশিক্ষার প্রকট প্রভাবে ক্রমশঃ প্রকাঁশিত। নবীনচন্দ্রের কবিতায় নানাভাবে ভারতপ্রীতির পরিচয় পেলেও স্বজাতিগ্রীতি বা বাঙ্গালীয়ানার উচ্ছাস তুলনায় অনেক বেশী জাতীয়তাবাদী কবির স্বরূপ চিনে নেবার জন্ত এই অন্গদারতা হয়ত প্রতিবন্ধক হয়ে দাড়াঁয়-_কিন্ত প্রত্যেক যুগের মান্ুষরাই চিন্তার প্রসঙ্গে কিছু কিছু সীমাবদ্ধতার পরিচয় দিয়ে এসেছেন আজকের যুগে বিশ্বপ্রীতির প্রসঙ্গ কুলভ। সেই নিরিখে অন্ুদারতার অভিযোগে খুব সহজেহ কাঁব্যবিচার সেরে ফেলি আমরা কিন্ত উনবিংশ শতাববীর পটভৃ'মকায় ঈশ্বরপুপ্ত-রর্লাল-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্রের চিন্তাধারার ক্রমধিবর্তনের হ্ুস্ম আলোচনায় অন্থদাঁরতাকে অপ্রত্যাশিত সংকীর্ণতা বলা যাবে না। এরই ওপর আমাদের জাতীয় চেতনা বা দেশাত্মবোধ দাড়িয়ে আছে। একটি জাতির আকুতি যে সব বিভিম্ন কবির কাব্যে ধরা পড়েছিল-_ নবীনচন্দ্র তাঁদের অন্যতম | “অবকাশ রঞ্জিনীর” যে সব কবিতায় স্বদেশচিন্তাই কবির একমাত্র চিন্তা হয়ে উঠেছে তার মধ্যে,__

“মুমূষূর্ণ শয্যায় জনৈক বাঙ্গালী যুবক” কবিতাটি অন্যতম কবিতা যশোহরে

কাব্য ৩৩৩

অবস্থান কালে রচিত হয়। ক্রমবর্ধমান দেশাহুভূতির আবেগেই কবিতাটির জন্ম হলো কবি মুমূ একটি বাঁঙগলীর যুবকের বেদনার ইতিহাঁসকে দীর্ঘ কবিতায় ব্যক্ত করেছেন৷ মৃত্যু যখন এসেছে,--যুবকটি নিশ্চিন্তভাঁবে মৃত্যুকেই কামনা করেছে, শুধু বেঁচে থাকার লাঞ্ছনার ইতিহাঁসটিই সে শুনিয়ে যেতে চায় | মুমূষ্ যুবকটি মৃত্যুর মধ্যেই সাত্বনা খুজে পেতে চায়,_বাঁচার অর্থই পরাধীনতার গ্লানিকে বরণ করা। স্বদ্দেশ- প্রেমের গভীর উপলব্ধি থেকেই কবিতাটির জন্ম-_কিন্তু যেন অক্ষমের ভাবাবেগ যে সংগ্রামমুখী মন স্বদেশচিন্তার প্রত্যক্ষ প্রেরণা থেকেই লীভ কব সম্ভব, নবীননন্ত্ তাঁর পূর্বস্থরীরা তা থেকে আশ্চর্যভাবে বঞ্চিত তাই দ্রেখি, পরাধীনতার জ্বালায় মর্মদাহ, বিলাপোক্তি এবং মৃত্যুকামনা করার দিকেই কবিকুলের ঝোঁক নবীনচন্ত্র কবিতায় স্পষ্টভাবেই মৃত্যুর অমোঘ ক্ষমতার প্রশংসা করেছেন,_জীবন- জ্বালাই তাঁকে যৃত্যুমুখী করে তুলেছে স্বদেশচিন্তা ব্যক্তিমন থেকে সঞ্চারিত হয়ে দাবানলের মতো! যখন সমস্ত জনমনে সঞ্চারিত হয়--তাঁর এতিহাঁসিক সিদ্ধান্ত থেকেই আসে মুক্তি স্বাধীনতা! নবীনচন্দ্রের যুগেও যুগ-যন্ত্রণার হাত থেকে লোকে মুক্তি না খুঁজে মৃত্যুই খু'জত। প্রসঙ্গে একটি ঘটনার উল্লেখ কর] যায়।-- 'আমার জীবনে, ন্বীনচন্দ্র একটি ঘটনার উল্লেখ করেছিলেন কোন একটি ব্যক্তির আত্মহনন প্রসঙ্গে বিষয়টি এই দিক থেকে লক্ষ্যণীয় যে, আত্মহননের মূলে স্বদেশপ্রেমের তাঁড়না রয়েছে। যশোহরে কবি সংবাদটি শুনেছিলেন,_-"সত্য মিথ্যা জানি না, শুনিয়াছি, তাহার একটি কনিষ্ঠ ভ্রাতা [ হীরালাল ] উদ্বন্ধনে প্রীণত্যাগ করিয়াছিলেন, এবং এক টুকরা কাগজে লিখিয়৷ রাখিয়া গিয়াছিলেন--“আমার দ্বারা যখন মীতৃভূমির কিছুই হইবে না, তখন জীবন রাখিয়া! কি ফল 1৮

সত্য মিথ্য। প্রসঙ্গ আলোচনা না করেও সিদ্ধান্তে আসা খুব অসহজ নয় যে, হয়ত কবি এই ঘটনাঁটির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন ব্যর্থতার জাল'ই মুমুযু যুবকটিকে মৃত্যু সম্পর্কে আগ্রহী করেছে তবু যেহেতু নবীনচন্দ্র সে প্রভাবের কথা নিজে মুখে বলেননি স্থতরাঁং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না।

এই কবিতাটিতে কবির দেশপ্রেমোচ্ছ্বাসের অকপট প্রকাশ আছে। সেষুগে অকপট দেশপ্রীতি প্রকাশের বাঁধা হয়েছিল উদ্যত রাঁজদণ্ড। নখাীনচন্দ্রের “অবকাশ রঞ্জিনীর' [ ১ম ভাগ ] দ্বিতীয় সংস্করণে পূর্ণ কবিতাটি মুদ্রিত হয়েছিল! কিন্তু প্রকাঁশিত প্রচারিত এই কবিতাটির কিছু অংশ [ ১৪ স্তবক থেকে ১৮ স্তবক পর্যন্ত ] শেষ পর্যন্ত বজিত হয় রাজনৈতিক কারণে এই গ্রহণ বর্জনের ব্যাপারটুকু ভারী কৌতৃহলজনক | যে কবিতা প্রথম দ্বিতীয় সংস্করণে প্রকাশিত প্রচারিত হচ্ছে -_ রাজনৈতিক কারণে তার তৃতীয় সংস্করণে কিছু অংশ বাদ দেওয়ার যৌক্তিকতা

৩৩৪ উন্ৰিংশ শতাব্দীর বাংল সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

নিশ্চয়ই আছে কিন্ত সেই সঙ্কে প্রকাশিত প্রচারিত এবং গৃহীত অংশগুলোকে স্বতিপট থেকে মুছে ফেলার কোন বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা হয়নি কারণ তা হওয়া সম্ভব ছিল না। এই ধরণের বর্জন ব্যাপারে একটা স্থায়ী প্রভাব কিন্ত থেকে যায় নিষিদ্ধ বন্তর মতে৷ এই কবিতাগুলোর দিকে দৃষ্টি আকধিত হয় তীব্রভাবে | হেমচন্দ্র এবং নবীনচন্দ্রের বহু কবিতায় এই বর্জন ব্যাপারটি খুব আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। স্বদ্রেশচিন্তার অনাবৃত অনুভূতি যে কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে, তার স্থায়ী আবেদন গ্রহণ বর্জনের মাধ্যমে আরও অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই কবিতাটি নখীনচন্দড্রেরে গভার দেশপ্রেমানুভৃতির পরিচয় বহন করছে।

দেশপ্রেমের জালাময় অন্থভূতির কথা কবিতায় স্বচ্ছ হয়ে ধর! পড়েছে এজন্ কখনও কখনও অজ্ঞতার শান্তি কি পরম কাম্য বলে মনে করেছেন যুগযন্ত্রণার অগ্থিদাহে জলে পুড়ে খাক হয় শিক্ষিত মন,কবধিও দুঃখে বেদনায় মুহামীন হয়ে বলছেন,__

স্থশিক্ষিত বাঙ্গীলীর যতেক যন্ত্রণা,

অভাগার যে অনলে দহিছে হৃদয়,

কেমনে জাঁনিবে তুমি কত বিড়ম্বনা

সহিয়াছি প্রতিদিন প্রাণে শাহি সয়

অধীনতা অপমান প্রাণে নাহি সয়

স্বজাতির হীনাবস্থা, কি বলিব হাঁয়।

এখানে অতিশয়োক্তি নেই, ব্যঞ্জনা নেই, শিক্ষিত বাঙ্গালীর হদয়মন্ত্রণার

হাহাকার স্পষ্টভাষায় ফুটিয়ে তোলার অকৃত্রিম প্রয়াস শুধু চোখে পড়ে। মুমূু শয্যায় শায়িত যুবকটির অন্তর্দাহের কাঁরণ হিসেবে দেশপ্রেমের প্রসঙ্গটি আনা হয়েছে কিন্তু ছিল পরাধীনতার যন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত অগণিত দেশবাসীর অন্তিম আর্তনাদ চেতনাই মানুষকে তিলে তিলে দগ্ধ করে, অচেতন মানুষের কাছে মুক্তি কিংবা দাসত্বের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকতে পারে না। আমাদের জাতীয় ইতিহাসের কোথাও আর্তনাদ নেই। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর কিছু আগের রচনাগুলিতে দেশপ্রেম মানসিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে উঠেছিলো আমাদের এই অন্তরভেদী দুঃখই আগামী দিনের সশস্ত্র বিপ্লবের ভিত্তি স্থাপন করেছিল দৈহিক পীড়নেও যে বোঁধ সম্মিলিত এক্য হৃজন করেনি মানসিক যন্ত্রণার যুগে দ্রুতগতিতে তা প্রাণেপ্রাণে সঞ্চারিত হয়েছে সব দেশেই বিপ্লবের জন্ম এভাবেই হয়ে থাকে কবিদের রচনায় সেই স্ুত্রগুলো এতই স্পষ্ট প্রত্যক্ষ যে অনায়াসে তা মন্ত্রের মতো মান্ষকে বশীভৃত-উত্তেজিত করেছে

কাব্য ৩৩৫

নবীনচন্দ্র এই স্তবকের শেষাঁংশে ছুটি পংক্তিতে অনুভূতির তীব্রতা প্রকাশ করেছেন, জাতীয় বিদ্বেষ সর্প পাপী নীচাশয় দংশিছে জলিছে বুক দংশন জালায়। কবির অন্তর বেদনার এই দাহ যেন পাঠকের অণ্তরকেও ছুয়ে গেছে। কিন্ত জাতীয় বিদ্বেষকে সর্পের সঙ্গে তুলনা করে কবি যে ঠিক কোন মনোভাবটির প্রতি ইঞ্িত করতে চেয়েছিলেন বলা শক্ত। এবিছ্বেষ যদি জাতির অন্তরজাত হয় তবে হ্মচন্দ্রের জাতিবৈরিতাঁর সঙ্গে তার কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যাঁয়। হেমচন্দ্ের জাতি- বৈরিতার ফলশ্রতি রূপেই এসেছে অপরিসীম ক্লার্তি। অসহায়ের মত কবি ক্ষুব্ধ অন্তরে অদীম বেদনা লালন করে এসেছেন এই বিদ্বেষবন্ধি জাতির অন্তরে জাগিয়ে রাখার প্রয়োজন ততদিনই থাকবে ষতদিন শক্রর হাত থেকে মুক্তিকে ছিনিয়ে আনতে না পারি হেমনন্দ্র স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং স্বপ্রভঙের ছায়াছবিকে মিলিয়ে যেতে দেখেছিলেন -এর জালা কবির মনে হতাশা সঞ্চার করবেই নবীনচন্দ্রের মনে এই জাল! জীবনের প্রতি তীকে বীতশ্রদ্ধ করে তুলেছে। মুমূযু্ শয্যায় বালী যুবকটি তাই মৃত্যু কামন। করছে জীবনবিতৃষ্ণ এই যুবকটির পলায়নীমনোবৃত্তি প্রশংসনীয় নয়। যে দেশপ্রেম আশা বিশ্বাসের অপেক্ষায় প্রতিকৃূলতায় অবিচল হয়ে থাকে--এ কবিতায় তা অন্পস্থিত। কবি তাই মরণের প্রতি আগ্রহশীল,_ জান নাকি বাঙ্গালীর মরণ মর্গল, খুলিবে আমার আজি স্বাধীনতা-দ্বাঁর ! মুমৃষূর্ণ যুবকটি জীবনে যা পাঁয়নি ফৃত্যুতেও তা! পাঁবে না, অথচ কেমন করে বিশ্বাসটি আকড়ে ধরেছে ভাবতেও হাস্যকর মনে হয়। কবিতাটির মধ্যে ধরণের দুর্বল কল্পনা রয়েছে। অপরিণত বা উচ্ছুসিত দেশান্গরাগের এক হাস্যকর দৃষ্টান্ত তবু কবিতাঁটিতে এমন গভীর স্বদেশপ্রেমের প্রকাশ আছে যে, মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন অংশরূপে তাঁর গভীরতার স্বাদ পেতে ভালো লাগে। দীর্ঘ কবিতা রচনার এই অস্বিধা, কোন কোন অংশে অনবধানার-_ছুর্বলতাঁর চিত্রগুলো৷ বড় বেশী প্রকট হয়ে ওঠে। কবিতায় কবি প্রাচীন ভারতের গরিমার আলোকে অভয়বাণী শোনানোর মহাকাব্যিক ভর্জিটি অনায়াসে প্রকাশ করেছেন, দুর্বলতর অংশগুলো পাশাপাশি বসানো হয়েছে বলেই তাকে মৃল্যহীন মনে করা যায়না শাসকগোষ্ঠীর প্রতি নিদারুণ ঘ্বণা হয়ত নেই, কিন্তু ইংরেজ জাতির অতীতকে আমাদের গৌরবময়

৩৩৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

ইতিহাঁসের সঙ্গে তুলনা! করে কবি তাঁর বক্তব্যে প্রত্যাশিত ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করতে পেরেছেন ভারতের ভবিস্বতের আঁশাবাদের চিত্রটি কবি তুলে ধরেছেন,

গেছে বীর্য, কিন্ত পিতঃ ! জানিও নিশ্চয়,

ভাঁরতবাসীর মন অমর অচল,

কালে, বলে, দ্বেষানলে মরিবার নয়

যেই মানসিক শক্তি, যবন কবল,

শত বৎসরের পাঁপ দাসত্ব শৃঙ্খল,

সহিয়াছে অনায়াসে, সেই বৃত্তিচয়

এখনে রয়েছে পিতঃ | তেমনি সবল,

ধরিবে সতেজ মৃতি পাইলে সময়

এই আশার আনন্দে যে কবি উৎসাহিত বোধ করেছেন আবার তিনিই অধীনতা শঙ্খল ভাঙতে পারেননি বলেই মৃত্যু কামনা করছেন

অধীনতা হায়! এই ছঃখের কারণ, সাধে বলি বাঙ্গালীর মরণ মঙ্গল

কবিতাটির যে অংশ বজিত পুনর্যোজিত হয়েছিল-_কবি গভীর ছুঃখে ঘান্গালী জাতির মসীলিপ্ত বর্তমানকে সেখানে প্রত্যক্ষ করেছেন। এত স্পষ্ট সোচ্চার সত্যকথনের স্বাধীনতা সেযুগে ছিল না-_সম্ভাব্য কারণেই অংশটি বজিত হয়েছে,_

বাঙ্গালী, দাসত্বজীবী, দুর্বল বাঙ্গালী, প্রকাশ্য সংবাদপত্রে সমকক্ষ প্রায় ঢালিবেক শ্বেত অঙ্গে কলঙ্কের কালি, দৃষিবে রাজার কার্য নিন্দিবে জেতায়, এই ছুঃখে শ্বেত বুক বিদরিয়া যায় শৃহ্য এবে রাজকোষ, রাজ্যে হাহাকার, করদাশ একমাত্র আমাদের দীয়, ব্যয়কালে আমাদের, নাহি অধিকার |

দীসত্বজীবী ছূর্বল বাঙ্গালীর প্রতিনিধিত্ব করছেন যিনি ঘটনাচক্রে তিনিও দাঁসত্ব- জীবী--এ দাসত্ব সরাঁসরি রাজকার্ধে যোগদান করে কবি স্বেচ্ছায় বরণ করে নেন। সন্মান উচ্চপদ পাবার আমন্মষঙ্গিক ইচ্ছাকে সমূলে উচ্ছেদ করার মত মনোবল কবির নেই, অথচ দাসত্বের লাঞ্থন। তাকে পীড়িত করে পরাধীনতাকে ছুঃখের সঙ্গে সঙ্গ মেনে নেওয়ার দিকেই কবিকুলের স্বাভাবিক আসক্তি আদর্শের সঙ

কাব্য 5?

জীবনের আসমুদ্র ব্যবধান রয়েই গেছে গভীর দেশপ্রেমে এতবড় ফাঁক থাকে না-থাঁকতে পারে না। কবির খেদ,

রাজপদে আমাদের নাহি অধিকার,

রাজ চিত্ত আমাদের উন্মাদ স্বপন,

চি ১৪ বং

কেবল কেরানগিরি বাঙ্গালী জীবন,

বর্ণ বিনে বিদ্যাবুদ্ধি সকলি বিফল,

অথচ মেকি রাঁজপদ অলম্কৃত করেই কবিকে জীবনধারণ করতে হয়। শাসকের

অভিসন্ধি হৃদয়ক্ষম করেও নবীনচন্দ্র এমন একটি পরাধীন বৃত্তি বেছে নিয়েছেন বলে একই সঙ্গে কবিজীবন কবিকর্ষকে সঠিক ভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না। নবীনচন্দ্ কর্মজীবনে যে সৎসাহস নিরীকতার পরিচয় দিয়েছিলেন,_“আমার জীবনে” তার বিস্তৃত বর্ণনা রয়েছে উর্ধ্বতন রাজকর্মচারীদের সর্পগে মতবিরোধ অনেক সময়ই তার উন্নতির পথে বিদ্ধ হয়ে দাড়িয়েছে, _কিস্তু শেষ পর্যন্ত কবি সরকারী কাজটিতে, টিকে ছিলেন ; আপোষ তাঁকে করতেই হয়েছিল, কিন্তু পরাধীনতার লাঞ্ছনা শিরোধার্য করে নিলেও বিক্ষুনধ অন্তরে তিনি শান্তি পাঁননি। এজন্য অবশ্য পারিবারিক প্রয়োজনের বেদীতেই কবি আদর্শ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন কখিতাটিতে যে জীবনযন্ত্রণা পরাধীনতার লাঞ্চনার ইতিহাঁস রয়েছে কবিজীবনে অভিজ্ঞতা আরও পরবর্তীকালে 3 মুযুযু যুবকের অন্তিম বিক্ষোভটি সেদিক থেকে কবির দূরদশিতার বাণী বহন করছে ভবিষ্যতের নৈরাশ্যের চিত্রটিই তিনি নিপুণ ভাবে ব্যাখ্যা করছেন যেন। শুধু তাই নয় _ইংরেজীশীসন কি ভাবে আমাদের শিক্ষা মন্দিরের স্বাধীনতাকে গ্রাস করছে--বিচক্ষণ কবি তারও উল্লেখ করেছেন,__

বাঙ্গালীর একমাত্র আছিল সান্ত্বনা,

শিক্ষামন্দিরে দ্বার ছিল অনর্গল,

তাতেও অর্গল দিতে হতেছে মন্ত্রণা

এই সুপরিকল্পিত অত্যাচারের চিত্র যিনি অকু্ভাবে প্রকাশ করেছেন-_তার

নির্ভীকতা৷ অনম্বীকার্য শক্রতার ব্যাপারে নবীনচন্দ্র যখন ডেপুটিগিরি ত্যাগ করে চট্টগ্রামে ওকালতি করার প্রস্তাব তুললেন নবীনচন্দ্রকে উদ্দেশ্য করে ব্রিটশ হগ্ডিয়ান সভায় কষ্ণদাীস পাল বলেছিলেন,_-"তোমার হৃদয়ে কি অগ্নি আছে আমি জানি না, তুমি কিছুতেই নিরুৎসাহ হইও ন11” নবীনচন্দ্রের ডেপুটি জীবনের স্বলিখিত বৃত্তান্তে

এধরণের দৃঢ়চিত্ততার উল্লেখ অত্র দূরদশিতা-_নির্ভীকতা দেশপ্রেমের আন্তরিকতা

খাল উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে শ্বদেশপ্রেম

থাকা সত্বেও নবীনচন্দ্র কর্ষজীবনের পরাধীনতার গ্লানি বহন করে গেছেন চিরকাল। চট্টগ্রাম কবির মাতৃভূমি--কিস্তু এখানেই প্রতিকূলতার সঙ্গে তাকে অহরহ সংগ্রাম করতে হয়েছে কিস্তু কবিতায় জন্মস্থানপ্রীতির অকুপণ দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় “শশাহ্ব দত” কবিতায় কবির জন্বস্থানগ্রীতির নিদর্শন অত্যন্ত আন্তরিক,”

প্রসারি কৌমুদীকর ধরিয়া গলায়,

জন্মভূমি জননীকে জিজ্ঞাসিও হায়

ক্রোড়ত্রষ্ট, দূরস্থিত, চিরছুঃখী তরে

কাদেন কি জন্মভূমি স্মরিয়। অন্তরে ?

অভাগা যেদিকে থাকে, দেখিবে তাহায়

জাগ্রত কল্পনা নেত্রে, স্বপনে

নবীনচন্দ্রের চট্টগ্রামপ্রীতির নিদর্শন তার অন্য কবিতাতেও স্পষ্টোচ্চারিত।

“অবকাশ রঞ্জিনী' রচনাকালে ত্বদেশচিন্তাই যে কবির অন্য চিন্তাকে ছাপিয়ে উঠেছিলো তার প্রমীণ অজত্র রচনায় আছে। ভবুয়ায় রচিত *“বুড়ামঙ্জল৮ কবিতায় মনোভাবের প্রতিফলন আছে একটি বিশেষ উৎসবের বর্ণন দেবার জন্তই কবিতাটির পরিকল্পনা | অথচ যে মানসিক আবেগে কবির সমস্ত অন্তর আলোড়িত অপ্রাসঙ্গিক হলেও তা মুখ্য হয়ে উঠেছে দেশপ্রেমিকের ভূমিকা নিয়ে কবি স্বয়ং আত্মপ্রকাশ করেছেন কবিতায় | স্থরাসেবনে অচেতন দেশীয় মহাঁরাজাদের এই শ্রেণীর আমোদপ্রমোদকে কবি সমর্থন করেননি | ভারতের এই অধঃপতনের বেদনা যেন মিনির অন্তরে গিয়ে পৌছেছে

একে পরাধীন, তাহে অপমান,

কত সবে বল আমাদের প্রাণ !

একে পরাধীনা, তাহে অপমান,

কত সবে আহা ভারতের প্রাণ !

দঃ বা রী রঃ

এদের সন্তান তুমি মহারাজ,

ইহাদের প্রজা] ভারত-সমাঁজ,

আজি সে ভারতে বনের রাজ,

মোসাহেব রূপ তুমি মহারাজ [ বুড়ামঙ্গল ]

নবীনচন্দ্রের নির্ভীাকতার-_-স্বাধীনচেতনার চিহ্ন কবিতাটিতে পূর্ণরূপ লাভ করেছে ]

দেশপ্রেমই কবিকে শক্তি দিয়েছে দেশীয় রাজাদের ভৎসনা করেছেন কবি তীব্রভাষায় পরাধীনতার অপমান যদি মাছুষের চেতনা সৃষ্টিতে সহায়তা না করে

কাব্য ৩৩৯

থাঁকে তবে সেদেশের ভবিষ্যৎ ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ছাড়া অন্ত কিছু হতে পারে না। কবির এই বক্তব্যটি অলমসাহসিক মনো ভাবেরই পরিচায়ক

কবিতাঁটিতে নবীনচন্দ্রের স্বদেশপ্রেম ইংরাজ্প্রীতি একই সঙ্গে উচ্চারিত হয়েছে কবিতাটিকে আমর! বিশুদ্ধ দেশীদর্শের কবিতা বলতে পারি না বটে কিন্তু ইংরাজ বন্দনার পটতৃমিকায় নিছক চাটুকারিতা নেই বলেই কবিতাটিকে কবির স্বাভাবিক সৃষ্টি বলে অভিনন্দন জানাতে পারি আরোপিত দেশপ্রেমের আড়ই্তা কবিতাকে ভারাক্রান্ত করেনি। অথচ কবি দেশপ্রেমিকের পূর্ণ দায়িত্ব পালন করেও স্বার্থ ভোলেননি নবানচন্দ্রের দেশপ্রেমের স্বচ্ছরূপ কবিতার যে অংশে প্রকাশ পেয়েছে তার আবেদন পুরণমাত্রায় বর্তমান বলেই কবিকে ভূল বুঝিনা | _-কবি অন্তরের আবেগে বলেন,-_

চির পরাঁধীনা ভারত দুংখিনী চালিতেছে আহা! দিবস যাঁমিনী, শ্রবণে তোমার দুঃখের কাহিনী, কেমনে শুনিছ বল নৃপমণি ? ভারতের আহা ! এই হাহাকার বারেক পশে ন! শ্রবণে তোমার ! [ বুড়ামঙগল | ভারতের এই দীনাবস্থার চিত্রট জনগণের চিত্তে গেথে দেবার উদ্দেশ্যেই কবি অংশটুকু রচনা করেছেন। কিন্তু এই দীনতার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার যথার্থ পথটি কবির জানা ছিল না। প্রস্তুতি পর্বের গোড়ার যুগে যা একান্ত অবিশ্বাস্য বা অকল্পনীয় বলে মনে হয় কালক্রমে তার বিরাট রূপ দেখে আমরাও স্তত্তিত না হয়ে পারিনা। অসন্তোষের বয়স যত ধীরে ধীরে বাড়ে বিপ্লবের বিদ্রোহের বয়স সেভাবে বাড়ে না। বিদ্রোহ যৌবন শক্তি নিয়েই জন্মীয়,_ফেটে পড়ে রুদ্ধরোষে নবীনচন্ত্র অসন্তোষের যুগে জন্মেছিলেন বটে কিন্ত প্রতিমুহ্র্তে তাকে রাজশক্তির সঙ্গে মিত্রতা বজায় রেখে চলতে হয়েছে নবীনচন্দ্র দেশপ্রেমিক হতে পারেন কিন্তু রাজদ্রোহী হবার ক্ষমত! তার থাকবে না। জীবন-মন্ত্রণার এই আবেগ থেকেই মৃত্যুকামনার মত সুলভ একটি আদর্শকে কবি বরণ করেছিলেন | কবিতায় সরাসরি শাসক প্রেমিক রূপে নবীনচন্দ্রকে দেখা যাঁবে। ভারতের দুঃখ-দুর্দশার প্লানি তাকে পীড়িত করে, তবুও কবিকে শক্তি বন্দনা করতে হয়, কৃতঘ্ব আমরা হবো না কখন, কৃতজ্ঞতা এই ভারত জীবন, মাগিব সতত ঈশ্বর-সদন, অখণ্ড হউক ইংলগু-শাসন | [এ]

৩৪৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

ইংরেজ অধিকারের দীর্ঘস্থাক্সিত্ব কামনা করার সঙ্গে সঙ্গে যবন বিদ্বেষ স্মৃতিও কবি বর্ণনা করেছেন,__ লুটাব পড়িয়া বিরাটের পায়, কীচকাপমাঁন সহা নাহি যায় [এ] এই আপোষ মনোরত্তির সঙ্ষে বিশুদ্ধ দেশচেতনার বিন্দুমীত্র সম্পর্ক নেই। নবীনচন্দ্রের রাজভক্তি দেশভক্তির স্বরূপ বিচারে এই মনোভাবটি কোথাও প্রচ্ছন্ন- ভাবে নেই বলে ছুটিকে সম্পূর্ণ পৃথকভাবে বিচার করা সম্ভব

কবির কাছে ভবিষ্যতের কোন আদর্শ নেই,__স্বাধীনতার স্বাদ কল্পনাতেও পাবার আগ্রহ নেই,_-তবু দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতালনধ পরাধীনতার জালা তাকে পীড়া দেয় নকীনচন্দ্রের স্বদেশচেতন। বস্ততঃই তাঁর অন্তলোকের গভীরতম বাঁণী নয়._--কবি ষে সাময়িক প্রসঙ্গকেই কাঁব্যরচনার প্রয়োজনে ব্যবহার করেছিলেন খুব সহজেই তা বোঝা যাঁয়। পূর্বেই বলেছি, দেশচিন্তা কোন কোন কবির কাছে ফ্যাসনের বস্ত হয়ে উঠেছিলো ; বিশেষতঃ “অবকাশ রপ্রিনী” রচনাকাঁলে নবীনচন্দ্রের কাব্যজীবনের উন্মেষ পর্ব চলছিল তিনি নিছক প্রচলিত আলোচিত বিষয়বস্তর স্থবিধেটুকু গ্রহণ করেছিলেন

“অবকাশ রঞ্জিনীর” ১ম ভাগের একটি আপত্তিকর স্বদেশাত্বক কবিতা হল রাঁজবন্দন! উপলক্ষ্যে রচিত “মহারাণীর দ্বিতীয় পুত্র ডিউক অফ এডিনৰরার প্রতি” কবিতাটি আপত্তিকর এই কারণে যে, কবি যে উপলক্ষ্যে +ৰিতাটি রচন1 করেছেন এবং যে ভাবে বিষয়টি “আমার জীবনে” আলোচন। করেছেন তাঁতে কবির মনোভাব আদর্শ ছুটোই কলক্কিত হয়েছে প্রিন্স অব ওয়েলসের ভারত আগমন ইংরাজ- অধীন ভারতধাসপীর জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এই ঘটনাবলম্বনে কবিতা রচনার হিড়িককে নবীনচন্দ্র সমালোচনা করেছেন এবং সঙ্গোপনে পুরস্কার পাবার আশায় একটি কবিতাও লিখে ফেললেন প্রকাশ্য সমালোচন। করার মুহূর্তেও তিনি যেমন অকপট, নিজের গোঁপন বাসন] প্রকাশেও তাঁর জুড়ি নেই নবীনচন্ত্ লিখছেন, “এই সময়ে ইংলগ্ডের যুবরাজ | বর্তমান সম্রাট ] ভারতদর্শনে শুভাগমন করেন সেই উপলক্ষে হেমবাবু হইতে ছোট বড় সকল কবিগণ কবিতা লিখিয়। বঙ্গদেশ প্লাবিত করিয়া ফেলিলেন কান পাঁতিবার জো নাই। কিন্তু এরূপ “হুভুগে” কবিতা কখনও লিখি নাই এবারও লিখিলাম না।” [আমার জীবন পুঃ ৩৪৮ ]

অথচ পরমুহূর্তেই একই উপলক্ষ্যে তীর কবিতা! রচনার ধারাবাহিক বর্ণনা দিয়েছেন তিনি | নবীনচন্দ্রের রাজবন্দনাঁটি অন্তান্ত কবিদের দ্বার প্রভাবিত,-- বিশেষভাবে হেমচন্দ্রের কথনত্লীর সাহাধ্য তিনি স্পষ্টভাবে গ্রহণ করেছেন বিজিত

কাব্য ৩৪১

জাঁতির মনোভাব থেকেই কবিতার জন্ম হয়েছে পরিশেষে অন্ুনয়-মিনতির ক্রন্দনে কবিতাটি শেষ করা হয়েছে শুতিমূলক কবিতা রচনার সমালোচনা করে অবশেষে এমন অপসার্ধক স্ততিসর্বস্ব কবিতা রচন। নবীনচন্দ্রের পক্ষেই সম্ভব অথচ হেমচন্দ্ 'ভারতভিক্ষা” রচন1 করে স্বদেশপ্রেমের অমলিন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পরাধীনতার গ্লানি প্রশস্তির অণ্তরালে আত্মগোপন করেনি -হেমচন্দ্রের স্দেশপ্রাণতাই কবিতাটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছিল হেমচ্ছ্ের “ভারত ভিক্ষার” আবেদন শিক্ষিত বাঙ্গালীর কাছে সার্থকভাবে পরিবেশিত হয়েছিল এমন প্রমাঁণ রয়েছে.। তুলনায় নবীনচন্দ্রের কবিতাটিতেও তাব স্বদেশাত্মক অনুভূতিকে বিরৃতভাবে দেখি হেমচজের “ভারত ভিক্ষা” সম্পর্কে কোন মহিলা উচ্ফুসিত হয়ে লিখেছিলেন,

“আমাদের মতে ভারত ভিক্ষা! তাহার সর্বোৎকৃষ্ট গীতিকবিতা ।.-.আমাঁদের ভাষায় ইহা অপেক্ষা মর্মভেদী দারুণ শোকগীতি রচিত হহয়াছে কি না জানি ন1।1”৩৯

নবীনচন্দ্র হেমচন্দ্ের কবিতার সাফল্য সংবাদে অভিভূত হয়েছিলেন বলে মনে হয়

নবীনচন্দ্র ইংরাঁজ-অধিকারকে নতুন ভাঁবে অভিনন্দন জানিয়েছেন, নিরাশ্রয়া অনাথিনী, ধবনের করে, সহি কত শতবর্ষ অশেষ যন্ত্রণা, অবশেষে তোমাঁদেরে ডাঁকি সম্নাদরে লইন্ু আশ্রয় যেন অনাথ! ললনা সে অবধি রহিয়াছি অধিনীর মত, এই রূপে শতবর্ষ হইয়াছে গত

নবীনচন্দ্র এই অধীনতার জালা অনুভব করেন নি বরং আশ্রয়লাভের শান্তি যেন কবিকে তৃপ্তি দিয়েছে পবাঁধীনতার জাল! দেশপ্রেমী কবিকে যখন বিপর্যস্ত করে দেয়,_সেই মৃহূর্তে নিবিকার আত্মসমর্পণের সুখ ঘিনি বর্ণনা করেন-_তার দেশপ্রেমের নিষ্ঠ। সম্পর্কে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক

কবিতায় অমনোযোগী কবিস্বভাঁবটিও ধরা পড়েছে ইংরাজ প্রতিত্ৃকে অভিবাদন জানাঁনোই যে কবিতার উদ্দেশ্য সে কবিতায় জাতীয় জাগরণের সংবাদ পরিবেশনের যৌক্তিকতা কোথাঁয়? কবিতাঁতেই সমকালীন প্রাণবন্তার সংবাদ পরিবেশন করেছেন তিনি,

"জাতীয় বিদ্বেষ আত হতেছে বিস্তার |” . এই বিদ্বেষ-বহ্তি আমাদের গোপন রত্ব-_-কবি কি তাঁর মহিমা সম্পর্কেও অচেতন ?

৩৯. লাবণাপ্রভ। সরকার [ জগদীশচন্দ্র বর ভগিনী ] কর্তৃক লিখিত। হেমচন্ত্র। ২য় খণ্ড মন্মধনাঁথ যোষ থেকে উদ্ধত পু১২০।

৩৪২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল সাহিত্যে স্বদেশপ্রেষ

কবিতাটিরও কিছু অংশ রাজনৈতিক কারণে বঞ্জিত হয়েছিল। স্পষ্টকথনের চেষ্টার জঙ্তই সম্ভবতঃ এই বর্জন কিছু অভিযোগের স্বর শোনা! যায় এখানে স্বদেশবাসীর পক্ষ সমর্থনের চেষ্টা, স্থবিচার প্রাপ্তির আবেদন কবিতাটির বাস্তব মূল্য বৃদ্ধি করেছে ভাবের দৈন্য, প্রকাশভঙ্কির দুর্বলতার মধ্যেও কবির এই প্রশংসাট্ুকু প্রাপ্য “ডিউক অফ. এডিনবরার প্রতি” আন্ুগত্য প্রদর্শনের ছলে-_সখেদে কবির মনোবেদনা জ্ঞাপন,

ভারতের স্থখ দুঃখ করিতে বিদিত, রাঁজ্ভী-পতিনিধি-কাছে, উপাঁয় এমন নাহি কিছু, অনুযাত্র রাজ্যহিতাহিত, ন] পাঁরে ছু'ইতে প্রতিনিধির শ্রবণ আমার রাজ্যধন, আমার সকল, অথচ আমার মাত্র দাসত্ব শঙ্খল।

শেষাংশে নিভু্লভাবে আত্মবিশ্লেষণ করেছেন কবি। এই বোধই অধিকার চেতন! এনে দেয়--অবশেষে সংগ্রাম সামর্থ্য দিয়ে তা উদ্ধার করতে হয়। ১৮৭৫ খৃষ্টাব্দে রচিত “ভারত উচ্ছ্বাস» কবিতাঁয় কবি যেন উদ্ধত কবিতাঁর উপসংহার রচনা করেছেন “ভারত উচ্ছ্বাসের” বক্তব্যও ভাবি নরপতিকেই নিবেদন করা হয়েছে। নামকরণেও হেমচন্দ্রগ্ধ পুরোমাত্রায় বিদ্ধমান,_বক্তব্যেও অভিনবত্ব কিছু নেই। অতীত ভারতকাহিনী বর্তমানের বিষাদ-আধারে স্থাপন করে দেশপ্রেমিকতার আভাঁষ দিয়েছেন কবি। এই গতানুগতিকতার শুরু-_রঙ্গলালে, পরবর্তী যুগের দেশপ্রেমিক কবির] এই ধরণের জোরালো এতিহাসিক কিংবা পৌরাণিক অংশগুলোকে প্রাণপণে আকড়ে ধরে আছেন নবীনচন্দ্রের স্বদেশঞ্রেমের সঙ্গে রাজপদে আত্মনিবেদনের বিনীত ভঙ্গিমা যেসব কবিতায় প্রকট হয়ে উঠেছে-_ভারত উচ্ছ্বাসেও তার ব্যতিক্রম নেই হেমচন্দ্র প্রভাবিত হয়েও এসব কবিতায় নবীনচন্ত্র ব্যক্তিত্ব বজায় রেখেছেন কাজেই সাময়িকতার প্রভাব যে স্বকীয় প্রভাবকে কোঁনক্ষেত্রেই অতিক্রম করতে পারে না নকীনচন্দ্রের এই ধরণের স্বদেশী ত্রক কবিতাগুলোই তার প্রমাণ

"ভারত উচ্ছ্বাসে” ভাবী রাঁজ্যেশ্বরের আগমনে কবি এতই আত্মহারা হয়েছেন যে বিস্ময় পুলকে তিনি বলেন,

“জয় ভারতের | ভাবি-রাজ্যেশ্বর |”

কোন কুহুক বুঝিতে না পারি ; হায়! শতাধিক বৎসর অন্তর,

সখ স্বপ্ন হইল কাহারি ?

কাব্য ৩৪৩

আবার ভারত প্ররেমা্ড নয়নে দেখিবে আপন নৃপতিবদন ? অবধি যাহার চন্দ্র হুর্য সনে, শতবর্ষ শূন্য সেই সিংহাসন উচ্দ্বাসের হেতুটি এই যে, ভারত আবার আপন রাজাকে পেয়েছে “আপন নৃপতি-বদন” বলে বিজিত জেতৃসম্বন্ধটি কবি পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন এই মুগ্ধতার মনোবৃত্তিকে সে যুগের আত্মআবিক্ষারের পরম লগ্মে বড় বেশী বেমানান বলে মনে হয়। উচ্ছাসের আবেগেও দেশপ্রাণ কবির এই অসংলগ্র উক্তিকে মেনে নেওয়া যায় না। মনে প্রাণে ভাবী রাজাকে কবি বরণ করেছেন, রাঁজ্ঞীপুত্র তুমি, যে হও সে হও, তাবি রাজ্যেশ্বর,_-বুটিশতপন, লও ভারতের সিংহাসন লও, বহুদিন পরে যুড়াই নয়ন এই রাজান্ুগত্য নবীনচন্দ্রের দেশাদর্শকে গতান্ুগতিকতার গণ্ভী অতিক্রম করতে দেয় নি। উপলব্ধির অনতিগভীর স্তরে দেশচিন্তার এও এক চিত্র, কিন্তু দেশপ্রাণভা বলে অনুভূতিকে কোনদিনই ব্যাখ্যা করা যাঁবে না। নবীনচন্দ্র ভারতের স্বাধীনতার স্বপ্ন হারিয়েছেন ৰলেই দেশগ্রীতি গভীরতা হারিয়েছে কবিতায় এমন অনেক অসংলগ্ন উক্তি আছে যা উনিশ শতকীয় দেশচিন্তার সম্পূর্ণ বিপরীত | রামমোহনের পর থেকে উনবিংশ শতাব্দীর কোন মানুষই যে স্বপ্ন দেখেছিলেন নবীনচন্দ্র সেখানে হতাশার প্রশ্ন তুললেন, হায়! রাজপুত্র, কি দেখিতে হায় ! পতিতা ভারতে তব আগমন ?

ভারতের কীতি এবে স্বপ্ন প্রায়,

আসমুদ্র গিরি তোমার তৃজন | ১৪ ১৪ সা তোমার সাহিত্য তোমার সংগীত,

তোমারই শিল্প, তোমার আচার, তব সভ্যতায় ভারত প্লাবিত,

ভারতের আহা! কি রয়েছে আর উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকেই আত্মাহুসন্ধানের চেষ্ট। চলেছে এদেশে, ইংরেজী সভ্যতা শিক্ষার আলোকে আত্বিচারের চেষ্টাকে কবি অনুজেখ্য রেখে

৩৪৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

আস্মদৈন্ভ প্রচারের চেষ্টা করেছেন ভারতের অতীত ইতিহাস চিরদিনই সমৃদ্ধ উচ্ছ্বল-_-কিস্ত উনবিংশ শতার্ষীর নবজাগরণের মুহূর্তে মৃত এতিহাসিক ঘটনাঁকে আমর1 উপলব্ধি করেছি আমাদের অন্তরের আগ্রহে ইংরেজী সভ্যতা সংস্কৃতির সঙ্গে তুলনা করে প্রাচীন এতিহাকে নতুন করে প্রতিষ্ঠা করার অনলস প্রচেষ্টাই যুগের সাহিত্যের মৃল্যবাঁন সংযোজন | নবীনচন্দ্র “রৈবতক-কুরুক্ষেত্র-প্রভীস' রচনা করেছিলেন এই প্রেরণা থেকেই কবির মনে ভবিষ্যতের কোন উজ্জ্বল আশ নেই, পরিবর্তে কালিমালিপ্ত আগামী দিনের কথকতা তিনি শোনাতে চান-_ মনোভাঁবও দেশপ্রেম নির্দেশিত শুদ্ধ চিন্তা নয়। অধুনার মধ্যে আগামীকে প্রত্যক্ষ করাই কবিজনোচিত দৃরদশিতা-_ কর্মভারাত্রান্ত কবি সেই বিশেষ শক্তিটি হারিয়ে ফেলেছিলেন এই রাজ-প্রশস্তি রচনালগ্নে। কিংবা আত্মদৈন্যের অকপট উচ্চারণের মধ্যে শান্তি খু'ঁজেছিলেন কবি আত্মনিন্দা কোনদিনই আত্মপ্রশংসাঁর মত অমার্জনীয় অপরাধ বলে গণ্য হয়নি কিন্তু প্রচ্ছন্ন আশ! না থাকলে জাঁগরণের উন্মাদনা ৃষ্টি হবে না, বিষন্নতা বিষাদই পরিব্যাপ্ত হবে বিশেষতঃ হিন্দুমেল1, কংগ্রেস ইত্যাঁদির স্থচনা পর্বে বিবাদ গ্রস্ত হওয়ার মত বিমৃঢ়তা আর কি হতে পারে? ব্যাঁপারে-_-নবীনচন্দ্র ইতিহাসের নির্দেশ হৃদয়জম করতে পারেননি ভাবপ্রবাহের স্বাভাবিক গতি কিন্ত আশার আলোক শিখা ক্রমশই উজ্জল করছিল নবীনচন্দ্রের অহেতুক নৈরাশ্য “ভারত উচ্ভীসের” কোন কোন অংশে অত্যন্ত বিসদৃশ,__ পশ্চিম হইতে গরজ্জি গ্ভীরে__ বিপ্লব ঝটিকা করিবে প্রবেশ, নিরস্ত্র ভারত, অরক্ত শরীরে ভীম উৎপীড়নে হইবে নিঃশেষ ! হায়! যুবরাজ, এই পরিণাম শতবর্ষ তব দাঁসত্ব করিয়া ? ভারতের বল, বীর্ধ্য, কীতি, নাম, চিরদিন তরে গেল কি নিবিয়া ? তথ্যগত ক্রটিও এখাঁনে দেখা যাঁয়। শতবর্ষের দাঁসত্ব নয়-_-শত শত বর্ষের পরাধীনতার ইতিহাস আমর! ইতিহাসের বুক থেকে মুছে ফেলতে পারি না। আসল সত্যটি কবি গোপন করেছেন, -শতবর্ষের দাঁসত্ব যেমন করে আমাদের অন্তরকে নাড়া দিয়েছে, সাঁড়া জাগিয়েছে, ভারতচিন্তা করতে শিখিয়েছে, এমনটি কোন যুগেই দেখ? যায়নি--এ এক অভিনব অভিজ্ঞতা উনবিংশ শতাব্দীর অবিস্মরণীয় জাতীয়

কাব্য ৩৪৫

ঘটনারও উল্লেখ করেছেন কবি, সিপাহী বিদ্রোহের প্রসর্গটি সঠিকভাবে বর্ণনা করেছেন, সিপাহী বিদ্রোহে ভারত কলঙ্ক প্রক্ষালিল যারা শোণিত ধরায়, সেই শিখ জাতি বীরের আতঙ্ক ! যুবরাজ !- আজি সে দাঁতি কোথায় ?

১৮৫৭ খুষ্টান্বে যে বিদ্রোহ বহ্নি সমগ্র ভারতে হতস্ততঃভাঁবে জলে উঠেছিল তার স্বতি সমগ্র জাতির অন্তরে উদ্দীপনা স্বজন করেছিল বর্ণন। প্রসঙ্গ পেয়েছি একটি গ্রন্থে-_

“বলিতে কি ১৮৫৬ হইতে ১৮৬১ পর্যন্ত, এই কাঁল খঞ্গ সমাজের পক্ষে মাহেন্দ্রক্ষণ বলিিলে হয়। এই কালের মধ্যে বিধবা! বিবাহের আন্দোলন, ইগিয়ান মিউটিনী, নীলের হাঙ্গামা, হরিশের আবির্ভাব, সোমপ্রকাশের অভ্যুদয়, দেশীয় নাট্যালয়ের প্রতিষ্ঠা, ঈশ্বরচন্ত্র গুপ্তের তিরোভাব মধুহদনের আবির্ভীব,-.--৮

| রাজ নারায়ণ বস্থর আত্মচরিত, ২২৪ পৃঃ] এই ঘটনাবলী পূর্ণরূপে বিস্বৃত না হলে দেশপ্রেমিক বা স্বদেশীকবি বৃথা অশ্রুসিক্ত হবেন কেন? অথচ এই অল্প সময়ের মধ্যে নবীনচন্দ্র বাংলাদেশের উদ্দীপনাময় সমস্ত ঘটনাগুলি বিস্মৃত হয়েছিলেন কথাও চিন্তা করা যায় না। দেশভক্তি নয়, রাজভক্তিই ভারতউচ্ছ্াসের জন্মদাঁন করেছে নবীনচন্দ্রের স্বদেশপ্রেম নিভূিভাবে চিহ্নিত করার মুহূর্তে এই দুর্বলতার প্রসঙ্গ গুলো! আলোচনা করে নিতে হবে নবীনচন্দ্রের কবিতা সঙ্কলন গ্রন্থের প্রথম ভাগে কবির যৌবন চাপল্য, সাময়িক চিন্তার €ভাবই প্রকট ভাবে ধরা পড়েছে কবিচিস্তের নির্মল দেশাহ্ুরাগের প্রতিফলন যদি না পড়ে থাকে তবে কবিকে দোষ দেওয়া যায় না কিন্তু আক্ষেপ হয় এজগ্যাই যে, কবি তাঁর এই অক্ষম রচনাগুলির উপর অযথা গুরুত্ব আরোপ করে আ'ত্মপ্রশংসা করে গেছেন

“অবকাশ রঞ্রিনীর' [| ২য় ভাগ রচনা শুরু করার 'আগেই কবি “পলাশীর যুদ্ধ” কাব্যটি রচনা করেন। পলাশীর মুদ্ধের কবি হিসাবেই নবীনচন্দ্রের দেশপ্রেমের উল্লেখ করা হয়। ১৮৭৫ সালে পলাশীর মুদ্ধ প্রকাশিত হয়েছিলো - যদিও খণ্ড কবিতাকারে একই বিষয়বস্ত নিয়ে বহু পূর্বেই তিনি কাব্যের খসড়া লিখে ফেলে- ছিলেন “ভারত উচ্ছ্বাস” ৯৮৭৫ সালের রচনা বলেই, “পলাশীর যুদ্ধের” রচনা-কালীন মনোভাব এতে ধরা পড়ার কথা “ভারতোচ্ছাঁস' কবিতাঁটিতে নবীনচন্দ্রের ষে বিচিত্র মনোভাব ধর] পড়েছে তা একই সঙ্গে দেশভক্তি রাঁজভক্তির ঘৈত প্রকাশ

৩৪৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

একই সঙ্গে ছুটি অহ্ভূতি কেমন করে হাত ধরাধরি করে চলে-_নবীনচন্তের “পলাশীর যুদ্ধে”ও তাঁর পরিচয় মিলবে ১৮৭৫ খৃষ্টাব্দে প্রকাশিত হলেও ১৮৭৩ খুঃ চট্টগ্রামে কাব্যটি লিখিত হয়েছিল-_-তারও বেশ কিছুদিন আগে “পলাশীর যুদ্ধ' অবলম্বনে তিনি যে দীর্ঘ কবিতাটি রচন৷ করেছিলেন সে বিষয়ের বিশদ বর্ণনা কবির স্বলিখিত “আমার জীবনে” পাওয়া যায়। যশোহরে অমৃতবাজার পত্রিকার সম্পাদক মহাত্মা শিশিরকুমীর ঘোষের স্বদেশপ্রেম নবীনচন্দ্রেরে মনে গভীর ভাবে রেখাপাত করে--কবি মুক্ত কণ্ঠে সেকথা প্রচার করেছেন কিন্তু 'পলাশীর যুদ্ধ' রচনার বীজ আরও আগে উপ্ত হয়েছিল সে প্রসঙ্গে কবি বলছেন-_

“কলেজে অধ্যয়ন সময়ে রামপুর বোয়ালিয়া যাইবার পথে পলাশীর যুদ্ধের যুদ্ধক্ষেত্রের ষে গল্প শুনিয়াছিলাম, তাহা আমার সর্বদা মনে পড়িত, এবং যুদ্ধক্ষেত্র সর্বদা আমার নয়নের সমক্ষে ভীসিত। আমি বলিলাম-_-আমি পলাশীর যুদ্ধ লিখিব

সহজাত আঁবেগই পলাশীর যুদ্ধ রচনার প্রেরণা দিয়েছে-_কিন্তু দেশপ্রেমের প্রেরণা এসেছে বিভিন্ন স্বদেশপ্রেমিক মনস্বীর কাছ থেকে | যশোহরের ইঞ্জিনিয়ার বাবু কবিকে দীর্ঘ কাব্যাঁকারে “পলাশীর যুদ্ধ' রচনার অনুরোধ জানান, বঙ্কিমচন্দ্র মাসিক 'বদর্শনে” কাব্যটি ছাঁপতে অস্বীকার করেছিলেন পূর্ণ গৌরবে প্রকাশের বাসনায় পলাশীর যুদ্ধের' ভবিষ্যৎ সাফল্যের ইঞ্গিত সকলেই দিয়েছিলেন--এ উৎসাহবাণী নবীনচন্দ্রকেও উচ্ছৃসিত করেছে সে যুগের সম্মিলিত আকাঙ্ষা কাব্যরচনার উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। স্বদেশপ্রেমিক বঙ্কিমচন্দ্রেরে অকুণ সমর্থনের আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে কাব্যটি আত্মপ্রকাশ লাভ করেছে,_-নবীনচন্দ্র সব কাহিনীও সাড়ম্বরে বর্ণনা করেছেন। কবির প্রথমযুগের রচনা বলেই নান। ক্রটি চোথে পড়বে | কিন্তু কাব্যের কাব্যিক বিচার অনেক ক্ষেত্রেই অর্থহীন, স্বদেশাত্মক অনুভূতির বিচারে কাব্য বাঙ্গালীর প্রাণে সাঁড়৷ জাগিয়েছিল,_এই আলোকেই কাব্যটির বিচার হয়ে আসছে কবির অক্ষমতার প্রশ্নটি চাঁপা পড়েছে কারণ স্বদেশ- প্রেমই আলোচন।র সবটুকু স্থান দখল করে নিয়েছে কাব্যের স্বদেশপ্রেম ব্যাখ্যা করে কবির ্বদেশচেতনার স্বরূপ নির্ণয় করাই আমাদের উদ্দেশ হবে

নবীনচন্দ্রের জন্ম শতবাধিক শ্বতিতর্পণ [ প্রথম চাহ ডক্টর ত্বকুমার সেন “পলাশীর যুদ্ধ” কাব্য প্রসঙ্গে বলেছেন,

“বাঙ্গালা সাহিত্যে” পলাশীর যুদ্ধ' একটু নৃতন স্থর আনিল। সাহিত্যে দেশপ্রেম প্রবর্তন করিয়াছিলেন রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় তাহার “পদ্দিনী” কাব্যে (১৮৫) হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের “ভারত সংগীত” কবিতায় (১৮৬৯) দেশপ্রেমের উদ্দীপনা জলিয়া উঠিল। কিন্তু এই ছুই কাব্যে কবিতায় ভারতের বর্তমান স্বাধীনতা

কাব্য ৩৪৭

হীনতার ক্ষোভ মুসলমান শাসনের পটতৃমিকায় জনাস্তিকোঅভিব্যক্ত হইয়াছে পলাশীর ুদ্ক্ষেত্রে ইংরাজের কাছে বাঙ্গালীর স্বাধীনতা বিনিময় তখনকার শিক্ষিত যুবকদের মনে যে ধিক্কার জাগাইতে স্থরু করিয়াছিল, কাব্যে তাহার স্পষ্ট প্রকাশ হইল নবীনচন্দ্রের লেখনী মুখে ।” [ নবীনচন্দ্রের পলাশীর যুদ্ধ প্রাচ্যবাণী প্রবন্ধাবলী ৪র্থ খণ্ড ]

“পলাশীর যুদ্ধে" নবীনচন্ত্র নিছক দেশপ্রেম নয়- পরীক্ষামূলকভাবে একটি জাতীয় এতিহাঁসিক ঘটনার সত্যবিচার করতে বসেছিলেন, এর মর্মযূলে ছিল দেশপ্রেমের প্রত্রবণ দেশপ্রেমিক কবি বলেই ইংরাঁজ বাঙ্গালীর জয়পরাজয়ের ঘটনা অবলম্বনে কাব্য রচনার কথা তারই প্রথম মনে পড়েছিলো ইতিহাসের প্রমাণটি যত সরল ছিল-_পলাশীর যুদ্ধের সত্যকার ঘটনাটি তত ছিল না পলাশীর প্রান্তরে মুসলমান নবাবের পতনের ফলাফল ইংরাঁজ অধিকার হলেও এই পতনের অন্তরালে যে দীর্ঘ কাহিনীর সন্ধান মিলছে-এঁতিহাঁসিকেরা তা অন্্রান্তভাবে খুঁজে বার করতে পেরেছেন হয়ত,_-কিস্তু তাকে মেনে নিতে অনেক সময়ই আমাদের মন চায়নি সব কথার শেষেও কিছু কথা বাকী ছিলো, বর্গ ইতিহাসের সেই রহন্য- জনক অধ্যায়টি নিয়ে কবি-নাট্যকারের1 তাই নাড়াচাড়া করেছেন নকীনচন্দ্র ব্যাপারে পুরোধা, এমন কি ব্যাপারে তিনি সম্পূর্ণ স্বকীয় কল্পনীশক্তির উপর নির্ভর করেছিলেন। দেশীত্সবোৌধ সৃজনের মহছুদ্েশে তাঁর পূর্বস্থরীরা পৌরাণিক এরতিহাঁসিক অথৰা কল্পিত ইতিহাসের সাহায্য নিয়েছিলেন, নবীনচন্ত্র অনতিদূর ইতিহাসের রোমাঞ্চকর অধ্যায় অবলম্বন করে ছুঃসাহসিকতার প্রমাণ রেখেছেন বঙ্কিমচন্দ্র বন্গদর্শনে “পলাশীর যুদ্ধ" সমালোচন। প্রসঙ্গে প্রথমেই বিষয় নির্বাচন সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন,_-"কাঁব্যের বিষয় নির্বাচন সম্বন্ধে নবীনবাবুকে সৌভাঁগ্যশালী বলিতে পারি না»

কিন্তু কাব্যের শ্রেষ্ঠত্ব বিচার যেখানে গৌণ শুধু বিষয়বস্তর চমৎকারিত্ব দিয়ে যে স্ববিধাটুকু পাওয়া যায় নবীনচন্দ্র “পলাশীর যুদ্ধ' রচন] করে সে অনায়াস প্রতিষ্ঠা লাভ করে আলছেন। যত অনৈতিহাঁসিকতাই থাকুক না কেন নতুন করে স্বাধীনতা হারানোর কাহিনী যিনি বলবার চেষ্টামাত্র করবেন -তা সোরগোল তুলবেই উনবিংশ শতাব্দীর গণচেতনার দৃষ্টিতে সে কাব্যে: মহত্তর কিছু পাওয়া যাবেই কালের হাওয়ায় ইতিহাসের অনেক জমাট সত্য উবে যায়। স্বাধীনতাস্পৃহা নিয়ে বাক্ষালী কবিরা নিশ্চয়্ট্র ইতিহাসের কাঠামোতে দেশপ্রেমের খড়মাটি লাগাবার অধিকার পাবেন তাছাড়া নকীনচন্দত্র গা বাঁচিয়েছেন, ইতিহাসের পরিবর্তে একে কাব্য বলে প্রমাঁণ করে। এতিহাসিকের দৃষ্টিতে ঘটনাটি,

4৬৮1১215006 ৩৪: 01990. 17060 606 097565 021১1000156 01090 160

৩৪৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

2610 0125965, 02) 01056 80200) ০৬21017050৫ 00159, 310 10 55001001156 60০ ০01052117 01:0185 02 0132 1950 50619 0৫ 8. 08510 15009, 2 ৪5 80025 011020 05 “8 1015106 56210981 £100100 101 [0519%, ৪5 0125 ০০০6 :0£ 0125525 190851760 1$101321)19] 10120001105 000 002 19505 ০0: 610০ 1095915 280

পলাশীর যুদ্ধের” এ্রতিহীসিকত্ব কিংবা কাব্যত্ব বিচার সেযুগেও হয় নি, যুগেও হয়না দেশপ্রেমের বিচারে কাব্যটির কিছু দান স্বীকার করেই সমালোচনা সাঙ্ন হয়। কিন্তু দেশপ্রেমের কোন রূপ কাব্যে ধরা পড়েছিল সেকথ। বিশদভাবে আলোচনা! করাই আমাদের উদ্দেশ্য “পলাশীর যুদ্ধের কবি বলেই এককালের বাংলাদেশ নবীনচন্দ্রকে আবিষ্কার করেছিল, এর পরে বু অর্থপূর্ণ তত্বপূর্ণ কাব্য লিখেও এত অভ্যর্থনা তিনি পাননি | অনৈতিহাসিক কিংবা অর্ধ এঁতিহাসিক কাব্য হিসেবে বিচার করা একরকম প্রায় অর্থহীন হয়ে পড়েছিল, শুধু দেশপ্রেমের উন্মাদনার শ্রসঙ্গটিই কাব্যের একমাত্র বক্তব্য বলে লোকে ধরে নিয়েছে। বহ্কিমচন্দ্রও বিশদ সমালোচনা না করে নির্দেশ দিয়েছিলেন কাব্যটিকে আগাগোড়া পড়ে দেখার | বাঙ্গালীয়ানার গন্ধ পেলে বঙ্কিমচন্দ্র যেমন উল্লসিত হয়ে ওঠেন এমন আর কেউ নয়, তিনি লিখলেন,

“পলাশীর যুদ্ধের আমরণ রাখিয়া টাকিয়া পরিচয় দিয়াছি। যদি তাহার ইহার যথার্থ পরিচয় লইতে ইচ্ছা! করেন, আগ্যোপান্ত স্বয়ং পাঠ করিবেন যে বাঙালি হইয়া বাঙ্গালির আন্তরিক রোদন না পড়িল, তাহার বাঙ্গালি জন্ম বৃথা |”

[ বঙ্গদর্শন, কাঁতিক ১২৮২ ]

“পলাশীর যুদ্ধ” কাঁব্যটি এই ধরণের উচ্ছৃসিত অভিনন্দনের মধ্যেই গৃহীত হয়েছিল কাব্যপাঠ শেষে নবীনচন্দ্রের স্বদেশপ্রেমের প্রকৃত বূপ আবিষ্কার করলে দেখা যাবে, অপরিসীম গ্লানি পরাধীনতার বেদন। যেন সমগ্র কাব্যটিকে ঘিরে রয়েছে অনুক্ত উচ্চারণে করব যেন বারংবার জাতীয় দৈম্, লঙ্জা অপমানের মুহূর্তগুলো স্মরণ করেছেন ! বন্তব্যের সত্য যাচাই করতে গেলে অনেক সময়েই ঠকতে হবে সেখানে দেখব, হংরেজ প্রশস্তির বিন্দুমাত্র স্বল্পতা নেই,_স্প্ই প্রশংসায় মুখর হয়ে কবি ক্লাইভবন্দন। করে চলেছেন কিন্তু সব ছাপিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাল যেন গুমরে কেঁদে ওঠে বাঙ্গালীর অসহায়তা, দৈষ্কুকে এমন ভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা অগ্ত কোন কাব্যে দেখা যায়নি কাব্যটির আগাগোড়াই বিষণ চিত্তে

৪৬, 09.0075.60 5511527) চ2150905 ০£ 31581 ০1. 11) 03০০2, 7948, 27497,

কাব্য ৩৪৯

কবি আমাদের শক্তিহীনত। ছূর্বলতার ঘটনাগুলি বর্ণনা করে গেছেন আত্মদৈস্ঠ প্রকাঁশের ভাষাহীন বেদন। “পলাশীর যুদ্ধ” কাব্যটির সমস্ত দোঁষক্রটি ঢেকে ফেলেছে বলেই আমাদের ধারণা বীরত্ব প্রকাশের মুহ্র্তেও দীর্ঘ বর্ণনশয় কবি কালিমালিঞ্ঠ পরাধীন ভারতের চিত্র অঙ্কন করে চলেছেন একমনে | স্বাধীনতাচিন্তা দেখা দিয়েছিল গেশহনলালের মনে পলাশীর যুদ্ধের এই বীরহিন্দু নায়কটির মনে ন1 ছিল স্থার্থচিন্তা না ছিল সিংহাসনমোহ শুধু দেশপ্রীতির শক্তিতেই “পলাশীর যুদ্ধে” আত্মদান করে শহীদসৌভাগ্য অর্জন করেছিল মোহনলাল আমর] সেযুগের এ্রতিহাসিক কাব্যটি পাঠ করি মোহনলালকে প্রত্যক্ষ করাব জন্যই ঘটনা বা বর্ণনা দিয়ে আমাদের মন ভরে না--আমরা আদর্শ চাই, আঁত্মদান চাই, সেই আলোকে পথ চিনে নেওয়াই আমাদের কামনা

“পলাশীর যুদ্ধ” রচনাঁকালে নবীনচন্দ্রকে দিধায় পড়তে হয়েছে নান! কারণে মুসলমান শাসক সিরাজদ্দৌলার পছনে হিন্দু বাঙ্গালীর ছঃখ পাওয়ার কোন হেতু আছে কি না--এ নিয়ে নবীনচন্দ্রের “পলাশীর যুদ্ধের সমালোচকবুন্দ মুখর হয়ে উঠেছিলেন সেকালে টেক্সট বুক কমিটির বিচিত্র অভিমত কাব্যটির যথার্থ রসোদঘাটনের বাঁধা স্বরূপ হয়ে দেখ দিয়েছিল নবীনচন্দ্র পলাশীর যুদ্ধের” প্রথম সর্গে মন্ত্রণা সভার অবতারণা করেছেন খুব সাবধানতার সঙ্গে সিরাজদ্দৌলার পতনের অন্যতম কারণ হিসেবে হিন্দু সভাসদদের ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গটি এতিহাসিক দিক থেকে খুব অসত্য নয় কিন্তু ক্ষমতালোভী মুসলমান মন্ত্রীর সিংহাসন লোভের যথার্থ চিত্রটি সন্নিবেশিত হয়নি বলেই ব্যাপারটি আগাগোড়া অস্বচ্ছ থেকে গেছে কাব্যে বিপরীতমুখী ছুটো ভাবাদর্শ প্রায় পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে--ইংরাজ শাসনের প্রতি অকুণ আনুগত্য প্রদর্শন অন্য দিকে মোহনলালের আত্মদান। কবি সচেতনভাবে শাসকগোষ্ঠীর মনোরঞ্রনের কথা চিন্তা করেছেন “কাটৌয়া বৃটিশ শিবির” সর্গটিতে ক্লাইভের চিন্তা ভাবনার রূপদানে কবি খুব সাবধাঁনতার সঙ্গে শ্যাম কুল রাখার চেষ্টা করেছেন, ক্লাইভ প্রশংসার কোন ত্রুটি হয়নি। বাংলাদেশের হিন্দুশক্তির কাছে মুসলমান শাঁসকের অত্যাচার অসহনীয় হয়ে উঠেছিলো, যেমন এতিহাঁসিক সত্য-- তেমনি এই হিন্দ্শক্তি যে সম্মিলিত ভাবে বাংলাকে মুসলমান শাসকের হাত থেকে মুক্ত করতে অসমর্থ, স্বীকৃত সত্য সেযুগে ইংরেজের রীতিনীতি, আচার ব্যবহার, কৌশল কৃটনৈতিকতাঁর সঙ্গে আমাদের বিন্দুমাত্র পরিচয় ছিলনা, হতরাং হিন্দু- শক্তির বক্তব্যটি আগাগোড়াই ক্ষীণ অর্থহীন | নকীনচন্দ্র জানতেন উনবিংশ শতাব্দীর গণজাগরণের মুহুর্তে হিন্দুবোঁধ জাগ্রত হচ্ছে,_-সন্মিলিত হবার চেষ্টা করছে, এবং ইংরাজের ভয়ঙ্কর রাজ্যলোভের স্বরূপ তারা চিনেছে। পলাশীর যুদ্ধ' কাব্যে

৩৫০৩ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

হিম্দুর স্বাধীনতার আকাঙ্ষাটিই পল্পবিতরূপে প্রাধান্ত পেয়েছে” বোধকরি এজন্যই কাব্যটির স্বাদেশিকতার মূল্য স্বীকার করা হয়।

“পলাশীর যুদ্ধ” যে স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম, সেযুগের হিন্টু বা মুসলমান কোন সম্প্রদায়ই এর তাৎপর্য বোঝেনি বলেই মনে হয় অবশ্য ছ' একজন হিন্দু সেনাপতি নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে যুদ্ধের ভবিষ্যং চিন্তা করেছিলেন,_-তার' প্রতিহাঁসিক বিবরণ “পলাশীর যুদ্ধ” দেশের স্বার্থকে ব্যক্তিস্বার্থের চেয়ে বড়ো করে ভেবেছিল তারা সিরাজের পতন যার] মনেপ্রাণে কামনা করত দেশের সাধারণ মানুষকে বাঁচানোর সদিচ্ছা তাদের ছিল।

সিংহাসন যে কোনো চক্রান্তেই হিন্দুগোষ্ঠীর হাতে এসে পড়বে না, সত্য ছিল জলের মত পরিক্ষার অথচ আত্মদানের মহৎ পুণ্য অর্জন করেছে হিন্দু, সেযুগের লোকসাহিত্যে এর নিভূর্ল ইতিহাঁস ধর! পড়েছিল ;-কিন্তু সিরাজ পেয়েছে পল্লী- কবির সমবেদনা লোকসংগীতের অজ্ঞীত কবির কণ্ঠে উচ্চারিত এই সহজ হৃদয়াবেদনের রসে জারিত কবিতাটি নিরপেক্ষ ঘটনার সাক্ষীর মতো?

কি হলোরে জান,

পলাশী ময়দানে নবাব হারাল পরাণ

তীর পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে, গুলি পড়ে রয়ে, একেলা মীরমদন বল কত নেবে সয়ে নবাব কাদে সিপুই কাঁদে আর কাদে হাতী, কলকাতাতে বসে কাদে মোহনলালের বেটী,

হি হলোরে জান, পলাশী ময়দানে উড়ে কোম্পানী নিশান ফুলবাগে মল নবাব খোপবাগে মাটি, চাদোয়। টাঙ্গায়ে কাদে মোহনলালের বেটা | পল্পী কবির দরদভরা দৃষ্টিতে মোহনলাল সিরাজের অতি প্রিয় জন | সিরাঁজপত্বীর আসনে দেশপ্রেমিক মোহনলালের কন্তাকে কল্পনা করে নিয়ে পল্লীকবি ইতিহাস বজায় রাখেন হিন্দু বা মুসলমান যিনিই এর রচয়িতা হোন না কেন বক্ব্যটি আগাগোড়া সিরাজের প্রতি সমবেদনাপূর্ণ। বাংলার নবাব রাজ্য হারিয়েছেন, কিন্তু পল্লী কবির দরদ হারান নি, স্বদেশপ্রেমিক মোহনলালের কন্যার শদ্ধা-প্রেমও সিরাজের প্রাপ্য 'পলাশীর যুদ্ধে'র ঘটনাটি মর্মান্তিক পরাজয়ের, শোচনীয় মৃত্যুর ভয়াবহ রূপটি তুলে ধরেছে। ইংরাঁজের চক্রান্তে হিন্দু মুসলমান স্তত্তিত। সেদিনের পরাজয়ের বিবরণ

কাব্য ৩৫১

শুনে রোমাঞ্চিত হয়েছি আমরা, বিস্মিত হয়েছি যুদ্ধটির অন্তনিহিত তাৎপর্য দেখে যুদ্ধ নামান্কিত হলেও 'পলাশীর যুদ্ধ' কিছু গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ নয়। ইংরেজের শৌর্য কিংবা বাঙ্গালীর বীর্যহীনতা৷ কোনটাই যুদ্ধে প্রতিফলিত হয়নি কিন্তু আড়াগোড়। নিখুত চক্রান্তের ইতিহাস এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দেশের চেয়ে ব্যক্তি স্বার্থ, নবাবের চেয়ে নবাবীয়ানাই চক্রান্তকারীদের লক্ষ্য ছিল, এরই রন্জরপথে সর্বনাশের আবির্ভীব | নবীনচন্দ্র শিক্ষিত বাঙ্গালীর দৃষ্টি দিয়ে সেদিনের ষড়যন্ত্রের তয়াবহ রূপ অঙ্কন করেছিলেন রুদ্ধদ্বার কক্ষে বসে বাঙ্গালার-_বাঙ্গালীর ভাগ্য-নিয়ন্ত্রণ করছিলেন ধারা, তার! অধিকাংশই হিন্দু বাঙ্গালী পূর্বেই বলেছি, সিরাজকে তারা সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন জনস্বার্থের দিকে তাকিয়ে নবীনচন্দ্র দেখিয়েছেন, বাঙ্গালী মন্ত্রণায় যে দুূরদশিতা-বাগ্মিতা স্বদেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছিল তাঁরই ঘনীভূত আবেগ মোৌহনলালের আত্মদানে প্রমাণিত হয়েছে প্রহসন বুঝেও ধারা দেশের জন্ত আত্মদদান করেছিলেন তাদের কাহিনী আমাদের জাতীয় ইতিহাসের গৌরবের কাহিনী এ'দের নিয়ে শিক্ষিত বাঙ্গীলী গর্ব করবে-_এ স্বাভাবিক নবীনচন্দ্ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সময়ে এই তাৎপর্যময় এতিহাসিক মুহূর্তাট কাব্যাকারে প্রকাশ করেছিলেন বলেই স্বদেশবাঁসী তাকে যোগ্য সমাদর প্রদর্শন করেছে কাব্যবিচার নয়, উদ্দেশ্যের বিচারে নবীনচন্দ্র অভিনন্দিত হয়েছিলেন | পণচটি সর্গে সে যুগের সমস্যাকীর্ণ রাজনীতিকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন কবি আপন বিচার-বুদ্ধির সাহায্যে, বর্ণনায় সে যুগের ছুর্যোগের পূর্বাভাস দেওয়ার- চেষ্টা করেছিলেন সাধ্যমত। কাব্যটিতে ইঙ্গিতময় ভাষা, অর্থপূর্ণ শব্দ ব্যবহার, ব্যঞরনাধমী বর্ণনার সাহায্য নিয়েছিলেন কবি,_সে যুগের উত্তেজনার মুহূর্তে এর আবেদন তাই শিক্ষিত বার্পালীর মর্মযূলে সাড়া জাগিয়েছিল | ঘোর তমসাময়ী রাত্রিতে সমগ্র প্ররুতি বাঙ্গীলার এই ছুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তটি প্রত্যক্ষ করছেন সভয়ে,_ সিরাজ ভীতি বঙ্গনারীকে কম্পিত করেছে,_ ধরিয় বঙ্গের গলা কালনিশীথিনী, নীরবে নবাব--ভয়ে করিছে রোদন ; নীরবে কাঁদিছে আহা ! বঙ্গ বিষাদিনী, নীহার-নয়ন জলে তিতিছে বসন [ প্রথম সর্গ ] সিরাজবিরোধী সভার নেতৃত্ব পদে স্বয়ং মন্ত্রী স্থচতুর গাীর্যে সিরাজস্রীতি দেখিয়ে ধূর্ততার প্রাথমিক পরিচয় দিলেন নাহি কাজ অতএব পাপ-মস্ত্রণায় ; কি কাজ পাপেতে আত্মা করি কলুষিত !

৩৫২ উনবিংশ শতাব্ধীর বাংল সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

মজিয়া মোহের ছলে, মাতি ছুরাশায়, কি জানি ঘটাব পাছে হিতে বিপরীত

নিরাশ ভাবিয়। মনে যবন পামর, প্রত্যেকের মুখপানে দেখিছে কেবল ।॥ [এ] জগৎশেঠ, রাজ! রাজবল্লভ, কৃষ্ণচন্দ্র রায়, রানী ভবানী, মন্ত্রী মীরআাফরের সঙ্গে গোপনে মন্ত্রণাক্ষেত্রে মিলিত হয়েছেন বাংলা দেশের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করার সদিচ্ছায় এ'রা মিলিত-_যবন্-হিন্দু ভেদাঁভেদও লুপ্ত হয়েছে ক্লাইভকে আমন্ত্রণ করার স্বপক্ষে সকলেই যখন একমত -রাজবল্লত উত্তেজিত হয়ে প্রস্তাব জানান, , “সহদয় হইংরেজের লহয়া আশ্রয় রাজ্য ভ্রষ্ট করি এই ছুরত্ত যুবাঁয়, | কতদিনে বিধি বঙ্গে হইবে সদয়! ] সৈম্তাধ্যক্ষ সাধু মিরজাফরের করে-_ সমপি রাজ্যভার | তা” হলে নিশ্চয় নিদ্রা যাবে বঙ্গবাসী নির্ভয় অন্তরে ; হইবে সমস্ত রাজ্য শান্তি স্ধাময় | [এ] অদূরদশিতা এখানে দাসমনোবৃত্তি স্বলভ | শৌর্য-বীর্ধ-বল হারিয়ে বেঁচে থাকার দুর্মদ ইচ্ছা! মানুষকে কত নীচ করে ফেলে এসব উক্ভিগুলো তারই প্রমাণ কিন্তু সেই মন্ত্রণ গৃহে সিরাজনিধন যজ্ঞে হবি নিক্ষেপ করে জাতীয় ইতিহাসে নতুনভাবে তাঁরা অজ্ঞতার স্বাক্ষর একে গেলেন! পরাধীনতা আমাদের চিন্তাধারাকে কত কলুষিত করেছিল--স্বদেশপ্রেমের পবিত্র স্পর্শ থেকে বঞ্চিত থেকেছি বলেই এত সহজে ভবিষ্যতের মুক্তির চিত্রটি আমরা একে ফেলেছি রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ভাগ্যবাদী মানুষের মতো। অক্ষমতাকে নতুন করে প্রচার করেছেন,_ সপ্তদশ অশ্বারোহী তুরকের ডরে, কি কুলগ্নে কাপুরুষ বৃদ্ধ নরপতি তেয়াগিল সিংহাসন সত্রাস অন্তরে | সেই দিন হ'তে যেই দাসত্ব-শৃঙ্খল পড়েছে বঙ্গের গলে, আর্ধ্যস্থৃত-বল আর কি পারিবে তাহা করিতে খণ্ডন ? [এ] _ ভারতের ইতিহাসের দীর্ঘদিনের সত্যটি কোনদিনও যে পরিবতিত হতে পারে বিশ্বাস সেযুগে ছিল না। পরাধীনতাঁয় অভ্যস্ত সে যুগের বাঙ্গালীর চিন্তাধারার

কাব্য ৩৫৩

স্বাভাবিকতা থেকেই উদ্ধৃত মনোভাবের জন্ম আদর্শগত উচ্চতা সে যুগে ছিলনা তবু দেখি মন্ত্রণা সভাঁয় একটি অসমসাহসিকা নারীর ছুর্জয় আত্মঘোষণা ! নবীনচন্দ্ কাব্যে জাতীয় গ্লানি অপনৌদনের চেষ্টা করেননি বলে তাকে প্রশংসাই করব। ইতিহীসের পাতায় যে গ্লানির চিত্র দেখি, বুথা আত্মাভিমান কিংবা আত্মপ্রশংস। দিয়ে তা ঢাকা যাবে না, ব্যাপারে নবীনচন্দ্র খানিকট। ছুঃসাহস দেখিয়েছেন স্বজাতীয়ের দুর্বলতা নীচতার চিত্রগুলো যথাযথভাবে বর্ণনা করে রানী ভবানীর স্বদেশপ্রেম সোচ্চারে কথিত হলেও ফলপ্রস্থ হয়নি, কিস্তু মনে রাখতে হবে এটি আলোচনা সভা রানী ভবানীর তেজোদৃপ্ত ভাষণ “পলাশীর যুদ্ধ” কাব্যের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় অংশ এর বহু অংশ মুখে মুখে আবৃস্ত হোঁতো। স্থযোগ্যা দূরদশিনী এই নারীর সত্যবিচারের যূলে আছে তার অকৃত্রিম দেশীন্রাগ পূর্বোক্ত মন্ত্রণীকারীদের প্রস্তাবকে দ্বণ্য বলে অভিহিত করতেও তিনি ভীত হননি, লক্ষ্মণ সেনের সেই কাপুরুষতায় সহি এত কেশ ! তবে জানিলে কেমনে তোমাদের ঘ্ৃণাস্পদ এই মন্ত্রণায় ফলিবে কি ফল পরে ? ভেবে দেখ মনে, সেনাপতি সিংহাসনে বসিবেন যবে, তিনি যদি একাধিক হন অত্যাচারী, ইংরাজ সহায় তার,_কি কপ্পসিবে তবে? পাণ্ডিত্য আমি নারী বুঝিতে না পারি বঙ্গভাগ্যে বীরত্ব ফলিবে তখন দাসত্বের বিনিময়ে দাসত্ব স্থাপন | বোঝাই বায় দৃষ্টিভঙ্গির স্বচ্ছতার একমাত্র অধিকাঁরিনী ছিলেন রানী ভবানী। তার তেজোঘৃণ্ত, বীরগর্ভ উক্তিতে রাজনৈতিক জ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুরদূশিতা | স্বাধীনতার যথার্থ অর্থটি তিনি অন্ধাবন করেছিলেন, নতুন পন্থাটি তাই তীকে খুশী করেনি “পলাশীর যুদ্ধ” কাব্যের সার্ক দেশাত্মবোধের চিত্র রানী ভবানীর উক্তির মধ্যেই নিহিত আছে কল্পিত হলেও একে ইতিহাস চেতনাজাত মহৎ আত্মদর্শনের নামান্তর বলা চলে সেযুগের কুটিল মঞ্ত্রণার বিষাক্ত বামুতে এক ঝলক উপলব্ধির আলোক এটি রানী ভবানী হয়ত একথ। এমন করে বলেননি, কিন্তু কবির অন্তরের ভাষা ছিল রানী ভবানীর উক্তিগুলোর মতই প্রত্যক্ষ ভাবগভীর | কল্পনার সঙ্গে সত্যের সমন্বয় না হলে অংশটির ২৩

৩৫৪ উনবিংশ শতাব্বীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

আবেদন এত করুণ মর্মস্পর্শী হতো না। ভবিষ্ৎ প্রষ্টীর আসনে বসেছেন রানী ভবানী,

যে ভীম অনল,

জলিবে সমস্ত বঙে, পতলের মতো,

পোঁড়াবে নবাবে ; মিরজাফরের বল

কি সাধ্য নিবাবে তারে ? হবে পরিণত

দাবানলে ; ন! পারিবে এই ভীমানল,

সমস্ত জাহ্বী জল করিতে শীতল [এ]

মিরজাফরের সঙ্গে গোপন মন্ত্রণাকালে সে. যুগের আত্মস্বার্থমগ্র বাঙ্গালী কথার

গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেনি নবীনচন্দ্র “পলাশীর যুদ্ধের” ইতিহাস রচন1 করার জন্ত পরিচিত কাহিনীর সাহাঁযা নিয়েছিলেন কি ভাবে ধূর্ত ইংরেজ ধীরে ধীরে সমগ্র ভারতে সাম্রাজ্য জাল বিছিয়েছিল,__-১১৮ বছর পরে সুশিক্ষিত কবি অনায়াসে বঙ্গ ইতিহাঁসের সঙ্কটময় মৃহ্র্তটি নিখুত ভাবে বর্ণনা করতে পেরেছিলেন দুঃসাহস ছিল এটুকু যে দেশাস্বোধের আবেগটুকু পুরোমাত্রায় তার চিন্তার স্নাযুগডলোকে উত্তেজিত করে চলেছিল যুবকোঁচিত উন্মাদনা! বাঁদ দিলে কাব্যটিতে আর কিই বাথাকে 1? রানী ভবানীর দীর্ঘ সংলাপে কবির স্বকীয় অন্ুভাবনার স্বাক্ষর,_

জানি আমি যবনের। ইংরাজের মত

ভিন্নজাতি ; তবু ভেদ আকাশ পাতাল

যবন ভারতবর্ষে আছে অবিরত

সার্ধ পঞ্চশত বর্ষ এই দীর্ঘকাল

একত্র বসতি হেতু, হয়ে বিদূরিত

জেতা জিত বিষভাব, আর্যহ্ুত সনে

হইয়াছে পরিণয় প্রণয় শ্বাপিত ;

নাহি বৃথা ঘন্দ্ জাতি ধর্মের কারণে [এ]

হিন্দু মুসলমানের পারম্পরিক আত্মীয়তার যূল কারণটি ভিনি নিভূুদলভাবে

বর্ণনা করেছেন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানবাণী হিসেবে এই উক্তিটিকে গণ্য করা যায় | রানী ভবানীর বক্তব্য যুক্তিপূর্ণ, সম্ভবতঃ নবীনচন্দ্রের যুগৈষণার ফলাঁফল এটি যবনবিঘ্বেষ বাংলা সাহিত্যে জাতীয়তাবাদের প্রথম ক্রটি। নবীনচন্্র সাশ্্রদাস্থিক এঁক্যস্থষ্টির কথা ত্বরণ রেখেই এই গভীর স্বতক্ফুর্ত সত্যটিকে তুলে ধরেছেন। সে যুগের গণচেতনায় এই প্রশ্নটি কিন্তু বারবারই ঘুরে ফিরে দেখ! দিয়েছিল, নজরুল: ইললাবের যত স্বাধীনভীকামী কবিরা বোধকরি

কাব্য ৩৫৫

নবীনচন্দ্রের এতিহাসিক কাব্যটির উদার আদর্শের 'ঘ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন সিরাজদেোলাঁকে সে যুগের বাঙ্গালী আপনজন হিসেবেই কল্পনা করে নিয়েছে কৰি নাট্যকারের! বিরূপ সমালোচনার পাত্র হয়েও সিরাঁজদ্দৌলাঁর মহত্ব আবিষ্কারে ব্রতী হয়েছিলেন জাতিগত, ধর্মগত সঙ্কীর্ণততাকে অতিক্রম করে দেশপ্রেমই সেদিন জয়ী হয়েছিল পলাশীর যুদ্ধ প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নাট্যাকারে পরিবেশিত হয়েছিল,_-আঁমার জীবনে" কবি বলেছেন প্রসঙ্গে,

“পলাশীর যুদ্ধ প্রকাশিত হওয়ামাত্র নবস্থাপিত পন্যাশনাল থিয়েটারে” অভিনীত হয়। সে অভিনয়ে শুনিয়াছি, খ্যাতনামা অভিনেতা নাটক রচয়িতা গিরীশচন্ত্ ঘোষ ক্লাইভের অভিনয় করিয়! প্রথম খ্যাতি লাভ করেন এরূপ চারিদিকে “পলাশীর যুদ্ধ' লইয়া! তোলপাঁড় |” | আমার জীবন পৃঃ ৩৫৯]

হ্তাণনাল থিয়েটার “পলাশীর যুদ্ধ” কাব্যের নাট্য সম্ভাবনা আবিষ্কার করেছেন ম্যাশনীলইজমৃ-এর গন্ধ কাব্যে মিলেছিল বলেই গিরিশচন্দ্রের “সিরাজদ্দৌলা” নাটকের উপাদান প্রেরণা যে কাব্যের থেকে পাঁওয়1_তা সহজেই বলা চলে। বলাবাহুল্য "পলাশীর যুদ্ধ” কাব্যটিই সম্ভবতঃ বাঁংল] দেশে সিরাঁজভাবন। সঞ্চারিত করেছিল, কারণ ইতিপূর্বে ধরণের কোন গ্রন্থরচনার উল্লেখ কোথাঁও নেই

বঙ্কিমচন্দ্র কাব্যের বিষয় নির্বাচনের প্রশংসা করতে পারেননি- তিনি “পলাশীর যুদ্ধের" সুদূরপ্রসারী প্রভাবের ইতিবৃত্তটি জানার সুযোগ পাননি বাংলাঁদেশের জাতায় আন্দোলনে অবাস্তব সংযোগশুন্ ইতিহাসের ঘটনা বা কাহিনী আমীদের চিত্তে যতটুকু আবেদন সৃষ্টিতে সমর্থ হয়েছিল-_“পলাশীর যুদ্ধে” বণিত সত্য ইতিহাসের প্রভাব যে তার চেয়ে শতগ্তণ বেশী হয়েছিল তা প্রমাণের অভাব নেই। বঙ্গ ইতিহাসের ঘটনাটির সঙ্গে আমাদের "প্রাণের যোগ রয়েছে, নবীনচন্দ্রই সেটি আবিফার করে, আলোচন। করে, জাতীয়তাবাদী কবির দায়িত্ব পালন করেছিলেন পলাশীর যুদ্ধ' সেদিক থেকে নবীনচন্দ্রের সার্থকতম রচনা বলে মনে করতে হবে একযুগে 'পলাশীব যুদ্ধের” কবি বলেই তার পরিচয় ছিল, একালে মহাকবি হিসেবেই তার পরিচিতি কিন্তু সার্থকতার প্রসঙ্গে পলাশীর যুদ্ধ' কাব্যটি উল্লিখিত হয় সর্বাগ্রে তার মহতম প্রেরণার অমূল্য তৃষ্টি।

নবীনচন্দ্রের “পলাশীর যুদ্ধ' কাব্যের দেশাত্মবোধক অংশগুলো! বিস্তৃত ভাবে আলোচনার জন্য পুনরায় রাণী ভবানী প্রসঙ্গে আমাদের ফিরে আসতে হবে পূর্বে বলেছি, নবীনচন্দ্র উনবিংশ শতাব্দীর শেষাংশে গণজাগরণের যুগে হিন্দু-মুসলমান ধ্রক্যবোধ জাগ্রত করার পরোক্ষ চেষ্টা করেছিলেন ইংরেজ অধিকারের লগ্ে রানী ভবানী আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্দের অবতারণা করেছিলেন, প্রত্যেকটিই

৩৫৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

নবীনচন্দ্রের দেশভাবনার সুচিন্তিত ফল বলে মনে হয়। রানী ভবানী সেদিন সমগ্র বঙ্গবাসীকে ডাক দিয়ে বলেছিলেন,

আমার কি মত ? তবে শুন মহারাজ!

অসহা দাসত্ব বর্দি, নিফোৌষিয়] অসি,

সাজিয় সমর- সাজে নৃপতি-সমাজ

প্রবেশ সম্মুখ রণে ; যেন পূর্ণ শশী,

বঙ্গ-স্বাধীনতা-ধ্বজা বঙ্গের আকাশে

শত বংসরের ঘোর অমাবস্যা পরে-_

হাস্ছক উজলি বঙ্গ এই অভিলাষে

কোন বঙ্গবাঁসি-_রক্ত ধমনী ভিতরে

নাহি হয় উতর ? আমি যে রমনী

বহিছে বিছ্যৎ বেগে আমার ধমনী | [এ]

এই উদাত্ত আহ্বান সেদিন বঙ্গবাসীর কর্ণে প্রবেশ করেনি বলে আক্ষেপ করার কিছু নেই। পলাশীর প্রান্তরে শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার মত মনোবলই ছুর্লভ ছিল। রানী ভবানী চেয়েছিলেন সংঘবদ্ধ শক্তিতে আত্মরক্ষা করুক দেশবাসী__ কিস্তু মন্ত্রণাগৃহে এর সমর্থন মেলেনি নবীনচন্দ্র রানী ভবানীর নেত্রে সমগ্র বাঙ্গালীর শতধাঁজীর্ণ শক্তিহীন রূপটি প্রত্যক্ষ করেছেন অভিনব উপায়ে মন্ত্রণাসর্বস্ব বাঙ্গালী জীবনে স্বাধীনতার স্বাদ পাবার ইচ্ছাটুক্‌ও জাগেনি সেদিন। কিন্ত ্বার্থরক্ষার জন্য গোপনমন্ত্রণার বুদ্ধি তাদের চিরদিনই প্রবল। পলাশীর যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এদেশীয় জমিদার নবাব সম্প্রদায়ের টনক নড়েছিল, ইংরেজের আসল উদ্দেশ্য আর গোপন ছিলন1। তাদের কাছে। আত্মরক্ষার উপায় ০সরদিনও তার চিন্তা করেছিলেন এমনি গোপন মন্ত্রণা কক্ষেই, তার বিস্তারিত বিবরণ দিচ্ছেন তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট হলওয়েল একটি চিঠিতে, “শু 70955 01 0132 151705 916 100৬৮৮6] 512620 007 005 095 00217৮

0৫6 015০ 80100012090 5015 ৪6 081100121 00025, 05 আ1)101) 006 ২05105282, 1%00069 5001617, [0০72:35 2170 ৪৮০]৮ [290০5 21019109560 10 026 ₹০2য0ণুলাড 800 168৮6100825 10208002 0701 10001209191 213200125 ) 270, ০0185200905, 28] আহ 5001 21520 20 002 1001021 1069৭60 05 605 85095 500, 1৮110] 220. 15121782125 011010, 7100 ভ০1০ 48115 [01251212105 501761028 60 5102052 00 015611 1606170621702 02 0102 571761191), 8130 60130152115 01:£1105 (0০ 22000, 8026 01] 0015 ৪5 ০6০6০৫১1019 0305610010062126 আ5 2. 13802 020]5.117106 80০৮, 50100600175 10005 652

কাব্য ৩৫৭

15 002 01965061010, £15210 02181) 10001010180, 2100 ৪৪]: 2120 11176501006 11) 10100921651] 600 50010. 11060 [11696 92180117061)69.+৪

উল্লিখিত সংবাদটি যুদ্ধপরবর্তী মনোভাবের চিজ্র। ধরে নেওয়া অসঙ্গত নয় যে এমনি মন্ত্রণা করেই একদিন বিদেশী অতিথি বরণ করেছিল এরাই, কিন্তু সে চিত্রটি ইংরেজদের নথিপত্রে না থাকাই স্বাভাবিক নবীনচন্দ্র ইতিহাসের সাহাষ্যেই ইতিহাঁসের সত্যকে ফুটিয়েছেন বলতে হবে।

“পলাশীর যুদ্ধ” কাব্যে ভাবাবেগের চেয়ে যুক্তির প্রাধান্য বেশী, নিছক প্র্দেশপ্রেমের বর্ণনা দিয়ে অবাস্তব রূপকথা স্থষ্টির চেষ্টা কধ্নেনি বলে নবীনচন্দ্রকে প্রশংসা না করে পারা যায় না। জাতীয় ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা নির্মমসত্যটি অকপটভাবে তুলে ধরার প্রয়াস অতি অসাবধানী পাঠকেরও দৃষ্টি এড়ায় না। অক্ষয়চন্দ্র মৈত্রেয় দেশাম্বরাঁগের প্রেরণাঁয় সিরাজকাহিনী রচনা করার মুহুর্তে নবীনচন্ত্রকে তাই দোষারোপ করেছেন | দেশানুরাগ যদি মিথ্য। ভাবাঁদর্শ জনেই ব্যয়িত হয়, সত্য উতঘাটনের জন্য প্রয়োজন নির্মম দেশগ্রীতি | বঙ্কিমচন্দ্র নবীনচন্দ্রকে ব্যাখ্যা করেছেন সঠিকভাবে,

“যদিউ চ্চৈঃস্বরে রোদন, যদি আন্তরিক মর্মভেদী কাতরোক্তি, যদি ভয়শূন্ত তেজোময় সত্প্রিয়তা, যদি ছুর্বাসা প্রাথিত ক্রোধ, দেশবাৎসল্যের লক্ষণ হয়,_-তবে] সেই দেশবাৎসল্য নবীনবাবুর, এবং তাহার অনেক লক্ষণ এই কাব্যমধ্যে বিকীর্ণ হইয়াছে

“পলাশীর যুদ্ধের” দ্বিতীয় সর্গে ক্লাইভ চরিত্রে শক্তি, দত্ত সাহসিকতার সমন্বয় ঘটাঁনে! হয়েছে, ইংরাজচরিত্রের প্রতি লক্ষ্য রেখেই বাংলাদেশে ইংরাজী শিক্ষার প্রথম স্তরে ইংরেজ শ্ীতি মুগ্ধতা আমাদের পেয়ে বসেছিল, যত ঘনিষ্ট সাঙ্নিধ্যে এসেছি ততই ইংরেজের জাতীয় চরিত্রের মহৎ গুণগুলি আমাদের আরুষ্ট করেছে ইংরেজ বিদ্বেষ জাগার মুহূর্তেও জাতীর চরিত্রের শ্রেষ্ঠত্ব বা মহত্ব আবিষ্ষার করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি! নবীনচন্ত্র “পলাশীর যুদ্ধে” নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়েছিলেন শুধু প্রাণবীচানোর তাগিদে নয়, সত্যের দাবী তিনি অস্বীকার করেন নি। কাজেই ক্লাইভের স্বদেশপ্রেম, আত্মবিশ্বাস মনোবলের প্রসঙ্গটি তিনি নিপুশ ভাবে চিত্রিত করেছেন ক্লাইভের স্বদেশপ্রেমের পরিচয় এই সর্গটিতে ।পাঁওয়া যায় নির্ভীক ক্লাইভের উক্তি,

নাহি ভাবি, নাহি ডি, কালের কবল ;-_ লভিয়াছি যবে এই মানব-জীবন,

৪১, (5896৫ £০000 “0001817851 250675 16150৬5 60 005 101551050055 1) 03610£51 £০ 5759-7764) ০9 1. তি 5৬/১০7১, [-00400) 1765, 2-৪8,

৩৫৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

মৃত্যু আমার পক্ষে নিয়তি কেবল ! কিন্ত ষদি আমাদের হয় পরাজয়, বাঙ্গালার স্বর্ণ-প্রন্থ বাণিজ্যের আশা, ডুবিবে অতল জলে ; ঘুচিবে নিশ্চয় ইংলগ্ডের আন্তরিক রাজ্যের পিপাঁসা। [২য় সর্গ" আত্মবিসর্জনের বিনিময়েও স্বদেশের মঙ্গল সাধনের একান্তিক ইচ্ছাই ক্লাইভের চব্িত্রে লক্ষ্যণীয় বৈশিষ্ট্য, দেশের জন্য আত্মদানের নির্মম সংকল্প সেদিনের বাঙ্গালী গ্রহণ করেনি, কিন্তু ক্লাইভের চরিত্রে সেটাই মৃল কথা। স্বদেশপ্রেমের এই চিত্রটি অতিরঞ্জন বা অতিকথন নয়। অন্ধকৃপহত্যাকে মিথ্যা প্রমাণের চেষ্টা সেদিন হয়নি, ক্লাইভ শপথ গ্রহণ করেছে দেশবাসীর সম্মান স্বার্থের পক্ষ থেকে, অন্ধকৃপ হত্য! প্রতিবিধানের ভার 3 রক্ষিতে ভারতবর্ষে বুটিশ-গৌরব, দণ্ডিয়া নবাবে। হেন উদ্দেশ্য যাহার, তার ফাছে কি অসাধ্য, কিবা অসম্ভব ? অবশ্য পশিব রণে, জিনিব সমর 3 এই ছুর্পভ মনোবলের চিত্র “পলাশীর যুদ্ধ' রচনাকর স্বদেশবাসীদের চরিত্রে আরোপ করতে পারেননি- কারণ তা হত অবিশ্বান্য রণোন্মাদনার সঙ্গীত ক্লাইভের কেই ধ্বনিত হয়েছে, সম্পদ সাহস) সঙ্গী তরবার, সমুদ্র বাহন নক্ষত্র কাগডারী ভরস কেবল শক্তি আপনার শয্য। রণক্ষেত্র ; ঈশা ত্রাণকারী [এ | স্বদেশপ্রেমী কবি নবীনচন্ত্র স্বাধীনতা-কামী বাঙ্গালীর পক্ষ নিয়ে বিশ্বাসঘাতক বাঙ্গালীদের ধিক্কার দিয়েছেন পলাশীর রণক্ষেত্রে দর্শনে কবির অন্তর ক্রন্দন করে ওঠে, এই কি পলাশী ক্ষেত্র? এই সে প্রাণ ? যেইখানে, কি বলিব ? বলিব কেমনে |

পিগার চিররুচি নি ধন হারাহইল অবহেলে পাপাত্বা যবনে ?

কাব্য ৩৫৯

দুর্ষল বাঙ্গালী আজি, মানস নয়নে, দেখিবে সে রণক্ষেত্র [ ততীয় সর্গ]

ইতিহাস রচনামুহূর্তে আন্মবিস্মত কবি বিশ্বীসঘাতককে নির্মম কণ্ঠে ধিক্কার দিয়েছেন। বঙ্কিমচন্ত্রও আত্মশৌধনের উপায় হিসেবে আত্মনিন্দীর আশ্রয় নিয়ে- ছিলেন ;_আত্মজাগরণের মুহূর্তে সত্যপথ চিনে নেবার গুরু দায়িত্ব যে আমাদেরই-_ কবি শুধু পথপ্রদর্শক ! নবীনচন্দ্র ষড়যন্ত্রকারীদের ক্ষমা করেননি,

রে পাপিষ্ঠ রাজা রায়ছুর্লভ ছূর্বল |

বাঙ্গালি কুলের গ্লানি, বিশ্বাসঘাতক ! ডুবিলি ডুবালি পাপি! কি করিলি বল? তোর পাপে বাঙ্গালীর ঘটিবে নরক।

প্রতিদিন বঙ্গবাসী পাবে প্রতিদান প্রতিদিন বাঙ্গালীর শত মনস্তাঁপ, প্রতি মনস্তাপ তোরে দিবে শত শাপ। রা]

প্রকৃত দেশপ্রেম কবিকে সময কথনের শক্তি দিয়েছে,__-আতন্তরিক দুঃখে কবির সমগ্র অন্তর আন্দোলিত পলাশীর যুদ্ধ" কাব্যে তৃতীয় সর্গে চতুর্থ সর্গে গভীর মনোছুঃখের অভিব্যক্তি ধরা পড়েছে সময়োচিত প্রকৃতি বর্ণনায় আসন্ন ছর্যোগের ব্যঞ্রনা ফুটিয়েছেন বর্ণনাপটু কবি নবাীনচন্দ্র। স্বাধীনতানুষ্তির কালিমা যেন কবির অন্তর স্পর্শ করেছে দেশপ্রেমের বিশুদ্ধ আবেগ বর্ণনার ছত্রে ছত্রে ধরা

পড়েছে,

নিদাঁঘ নিশির শেষে নীরব অবনী ;

নিবিড় তিমিরে চাকা ভূতল গগন ;

তারাগণ ম্লানমুখে চাহিয়া ধরণী

জলিতেছে শিবিরের আলোর মতন

ভবিষ্যৎ ভাবি যেন বঙ্গবিষাদিনী

কাদিতেছে ঝিল্লীরবে, পলাশী প্রাঙ্গণ

ভেদিয়া উঠিছে ধ্বনি চিত্ত বিদারিনী-_ [এ]

স্বদেশপ্রেমিক কবির চিত জন্মভূমির ম্নানমুখী এই রূপ ধর] পড়েছিল, অসহায় ভঙ্ষিতে এই দুরবস্থা প্রতাক্ষ করেছি আমরা ।-স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্ম লগ্গে এই চিত্র আমাদের মনোবল সৃষ্টিতে সহায়ত করেছে, আমাদের নুগ্ধ শক্তিকে জাগিয়েছে। একদিকে দীন! মাতৃভূমির হতসর্বন্ব রপ--অন্যদিকে ক্লাইতের ন্বদেশ

39৬৩ উনবিংশ শতাব্ধীর বাংলা সাহিত্যে হ্বদেশপ্রেম

প্রেমের অভিব্যক্তি দেখে পরাধীন ভারতবাসী স্বাধীনতা লাভের শপথ উচচারখ করেছে।

আমাদের স্বাধীনত্ব বীরত্ব জীবন,

রণক্ষেত্রে এই দে₹ু হলে ধরাশায়ী,

তথাপি ত্যজিব প্রাণ বীরের মতন

এই কথা ক্লাইভের মুখে উচ্চারিত হলেও শপথ স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিটি সৈনিকের | ইঙ্গিতময়-অর্থময় প্রেরণা হিসেবে এসব অংশের অপরিসীম মূল্য স্বীকার করতে হয়।

“পলাশীর যুদ্ধকে” বঙ্কিমচন্দ্র বাঙ্গালীর আন্তরিক রোদনের কাব্য বলেছেন, চতুর্থ সর্গ পাঠ করেই এই সার্ক আভিমতটির যৌক্তিকতা বোঝা যায়। “যুদ্ধ” নামান্কিত এই সর্গটিতে নবীনচন্দ্র বঙ্গ ইতিহাসের নতুন অধ্যায় যোজনার সকরুণ হুতিহাসটি বর্ণনা করেছেন দুর্বলতা অথব। ষড়যন্ত্র, পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের কারণ যাই হোক না কেন, এই মুহূর্তটি অশ্ভ। ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রশ্নটি একেবারে সরাসরি তুলে ধরেছেন কবি, হিন্দু জাতীয়তার আদর্শ দিয়েই বিচার করেছেন ঘটনাটি,_

“দেখিছ না সর্বনাশ সম্মুখে তোমার ? যায় বঙ্গ-সিংহাসন, যায় স্বাধীনতা-ধন, যেতেছে ভাসিয়া সব, কি দেখিছ আর ? “ভেবেছ কি শুধু রণে করি পরাজয়, রণমসত্ত শক্রগণ ফিরে যাবে ত্যজি রণ, আবার যবন বঙ্গে হইবে উদয় ? [ চতুর্থ সর্গ ] যবন কিংবা ইংরাজের সত্যিকারের কোন পার্থক্য নেই-__এ সত্য সেষুগীয় এঁতিহাজাত উপলব্ধি নব্য রেনেস আমাদের সত্য চিনিয়েছে মুক্তির আহ্বান এসেছে হিন্দু শক্তির সম্মিলিত চেতনা থেকে নবীনচন্দ্র ইরাজ অধিকারের প্রশ্নটিকে গুরুত্ব দেননি, যদিও রাণী ভবানীর ব্যাখ্যায় মুসলমান সিরাজদ্দৌলার সঙ্গেও আমাদের আত্মীয় সম্বন্ধটি ঘোষিত হয়েছে উনবিংশ শতাব্দীর ব্যাখ্যায় স্বাধীনত। হরণকারী যে কোন জাঁতিই আমাদের শক্র বলে পরিগণিত, বিশুদ্ধ দেশচেতনা উদার বিশ্ব- মানবতার অন্তনিহিত আবেদন এমনি করেই যুগে যুগে কালে কালে ব্যর্থ করে দিয়েছে। আত্মজাগরণ আত্মস্বার্থের সীমিত উপাসনার উপরই অধিষ্ঠিত হয়ে থাকে। তাই নবীনচন্দ্র ইংরেজ অধিকারের গুরুত্বপূর্ণ পটভূমিকায় দার্শনিকস্থুলভ উক্তি করেছেন,_

কাব্য ৩৬১

“মূর্খ তুমি 1- মাটি কাটি লভি কোহিচুর, ফেলিয়! সে রত্ব হায়! কে ঘরে ফিরিয়া যায়, বিনিময়ে অঙ্গে মাটি মাখিয়া প্রচুর? [এ] প্রথম পংক্তিটির অসামঞ্জশ্যপূর্ণ শব্দপ্রয়োগের ফলে কখনও আমাদের মনে ্রান্ত ধারণ গড়ে উঠতে পারে যে, সেদিন বাঙ্গালী হিন্দু পূর্ণ আত্মসচেতনতা লাঁভ করেছিল -কিংব] হিন্দু জাতীয়তা পুনঃ প্রতিষ্ঠার পুণ্যব্রতে আত্মনিয়োগের বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেছিল। শুধু কাব্যেই নবীনচন্দ্র সেই উপলব্ধির ক্ষীণ আভাস দীনের চেষ্টা করেছিলেন, অষ্টাদশ শতকের বিচ্ছিন্ন বাংলায় এত বড় আত্মজাগরণ পর্ব কল্পনারও অতীত ছিল। রাজপদে প্রতিষ্ঠা অর্জন করে সংকীর্ণ স্বার্থকে দেশ- স্বার্থের চেয়ে অনেক বড়ে। বলে মনে করাটাই ছিল সে যুগীয় প্রবণতা দেশজননীর পবিত্র কূপ দেশপ্রেমিকের সংগঠন প্রবৃত্তিকে সে যুগে জাগিয়ে তোলেনি। নবীনচন্ত্ সেযুগের মানসিক দৈন্তের চেহারা দেখে শিহরিত হয়েছিলেন,_আত্তরিক রোদনের মতই তার কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হরেছে বহু বেদনা, যেহ হিন্দুজাতি এবে চরণে দলিত, সেই হিন্দুজাতি সনে, নিশ্চয় জানিও মনে, একই শৃঙ্খলে সবে হবে শৃঙ্খলিত অধীনতা৷ অপমান সহি অনিবার, কেমনে রাখিবে প্রাণ, নাহি পাৰে পরিত্রাণ, জলিবে জলিবে বুক হুহবে অঙ্গার [| এ] কবির বক্তব্যটি সমগ্র বাঙ্গালীর জীবনে পরীক্ষিত সত্য। এই আত্মদহনের প্রয়োজন ছিল জানি-__কিস্ত সে আয়োজন করার পূর্ণ গৌরব আমাদের | পলাশীর প্রান্তরে আমাদের দৌষগুলোই পুনরারৃত্ব হয়েছে _এজন্য আমাদের বিদ্মিত হওয়ার অবকাশ নেই। এমন ঘটনা, এমন পরাজয় বঙ্গদেশে ইতিপুর্বেও হয়েছে,__কিস্তু তবু পলাশীর যুদ্ধচিত্রটি বারংবার কবি ম্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন কেন? প্রসঙ্গে এটুকু বললেই যথেষ্ট হবে যে, ইতিপূর্বে বাঙ্গালীর মনে যুদ্ধ ব1 পরাজয় সংক্রান্ত ব্যাপারটি এমন ব্যাপকতর আলোচনার বিষয়বস্ত বলে গৃহীত হয়নি উনবিংশ শতাব্দীর বঙ্গদেশে চিন্তা প্রথম করেছে যুগের শিক্ষিত বাঙ্গালী আমাদের পরাজয়ের লঙ্জাকে, জয়ের গৌরবকে লোকচন্কর সামনে দাড় করিয়ে নিন্দা প্রশংসা করার তাগিদ অন্গভৰ

৩৬২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

করেছেন যুগের কবি সাহিত্যিকবৃন্দ পলাশীর যুদ্ধের ঘটনাটিকে বিশ্লেষণ-এর নিপুণ দায়িত্ব নিয়ে কবি নবীনচন্দ্র অকপটে আত্মবিচার করছেন, হাঁজাঁর বছরের বাংলা সাহিত্যে এমন ঘটন। এমন দৃষ্টান্ত আর নেই আত্মবিশ্লেষণের মুহর্তেও নবীনচন্ত্র নির্ভাক হৃদয়ে সত্য আবিষ্কারের চেষ্টা করেছেন

কোথায় ভারতবর্ষ! কোথায় বুটন !

অলংঘ্য পর্বতশ্রেনী, অনন্ত সাগর,

ঝা গর

সেই সে ইংলণ্ড আজি হইল উদয়,

ভারত অৃষ্টাকাশে স্বপনের মত

এই ববি শীঘ্র অস্ত হইবার নয়,

কখনো হইবে কি না, জাঁনে ভবিষ্যৎ | [এ

এই অংশ রচনার কয়েক বৎসরের মধ্যেই সমগ্র ভাবতব্যাপী স্বাধীনতা আন্দোলন

জন্মলাভ করে। নবীনচন্দ্র বিগত অতীতকে নিখু'তভাঁবে বিচার করেছেন বটে, অদূর ভবিষ্যতের স্পষ্ট ইঙ্ষিতগুলে৷ তিনি চিনে নিতে পাবেননি। যে মনোভাব থেকে কাব্যের জন্ম, শিক্ষিত স্বদেশবাসী যে আশার বাণী শোনার অপেক্ষায়, কবি সেই প্রত্যক্ষ আশাবাদের চিত্রটিই ফোটাতে পারেননি “পলাশীর যুদ্ধ” প্রকাশনা রঙগমঞ্চজে কাব্যের জনপ্রিয়তা, সে যুগীয় দেশৈষণারে প্রত্যক্ষ ফল। অথচ কবি পলাশীর যুদ্ধকালীন আশা নিরাশার চিন্রাঙ্কনে অপূর্ব দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন | দস্থ্য হলেও হিন্দু মারাঠা শক্তির জাগরণে সেকালের বলদেশ ক্ষীণ আশার আলো! দেখেছিল, রানী ভবানীর উক্তিতে সে সত্য ধরা পড়েছে,

যেই রূপে বনেরা' ক্রমে হতবল,

হইতেছে দিন দিন, অদৃশ্যে বসিয়া

যেরূপে বিধাতা ক্রমে ঘুরাতেছে কল

ভারত অদৃষ্ট যন্ত্রে, দেখিয়া শুনিয়া

কার চিত্ত হয় নাই আশায় পূণিত ? [১মসর্গা এই আশাটি অত্যন্ত ক্ষীণ আশা,-__তবু হিন্দু জাতীয়ভার আলোকে নবীনচন্দ্রও আশাটি লালন করেছেন,__ যবনের অবনতি করি দরশন, নিরখিয়। মহারাইই গৌরব বন্ধিত,

কোন হিন্দুচিত্ত নাহি-_নিরাশা সদন হয়েছিল স্বাধীনতা” আশায় পুরিত ? [ ৪র্থ সর্গ]

কাব্য ৩৬৩

মারাঠা শক্তির জাগরশে হিন্দু সম্প্রদায়ের আশা নিরাশার যে কল্পিত চিত্রটি তিনি তুলে ধরেছেন, তদানীত্তন রাজনৈতিক ইতিহাসের কিংবা সামাজিক ইতিহাসের সঙ্গে তার প্রচণ্ড অমিল হিন্দুশক্তি হলেও দক্ধ্য-অত্যাচারী বর্গাদের সঙ্গে বঙ্গবাসীদের যোগাযোগের বিস্তারিত বিবরণ ইতিহাসে ইতিপূর্বে বিবৃত হয়েছে নবীনচন্্র স্বাধীনতা চেতনা দিয়ে দহ্থ্য বর্গীদের অত্যাচারের ব্যাখ্যা করেছেন-_এখানেও স্বদেশপ্রেমী নবীনচন্ত্রের পরিচয় মিলবে বর্গা হাঙ্কামাকারীদের হিন্দুশক্ির প্রতিভূ হিসেবে কল্পনা করার মৌলিক শক্তিটি দেশপ্রেমজাত ইতিহাসের নতুন ব্যাখ্যা কাব্যে আশা করা যায়-__বিশেষ করে যুগ সচেতন কাব্যে মারাঁঠা দস্থদের পরাঁভবে রোদনপ্রিয় বাঙ্গালী দেশপ্রেমী কবি তাই অস্রসিক্ত__দেশপ্রেমিকতাব এক অনন্য দৃষ্টান্ত সন্দেহ নেই। পরাধীনতার গ্রানি কবি মর্মে মর্মে অনুভব কবেছিলেন বলেই আগামীদিনের দুঃখের চিত্রটি বাস্তব হয়ে উঠেছে,__ যবন গৌরব রবি ফিরিবার নয়, তাঁরতের এই দিন ফিরিবে না আর ফিরিবে না মৃতদেহে বিগত জীবন বাঁচিবে না রণাহত অভাগা সকল [ঞ] কবিজনোচিত উচ্ছাস দুঃখের আবেগকে গাঢ়তর করেচে। বর্ণনাসিদ্ধ কবি নবীনচন্দ্র স্বাধীনতা বিসর্জনের শোকাবহ ঘটনাটিকে বিলাঁপসর্বস্ব কাব্য করে তোলেননি, দুঃখের অন্তরালে যুক্তির সত্য বারংবার ধ্বনিত হয়েছে এখানে দোষস্থালন কিংবা দোঁষারোঁপের বাঁড়াবাঁডি যা কিছু ছিল, নিরপেক্ষ বর্ণনাগুণে তা হৃদয়গ্রাহী হতে পেরেছে পরাধীনতার অন্তহীন জালা নিয়ে উনবিংশ শতাব্ধীর শেষপাঁদে বসে কবি ইচ্ছে করলেই দীর্ঘ বিলাঁপমালা রচনা করতে পারতেন কিন্তু অষ্টাদশ শতাব্দীর তমসাচ্ছন্্র বাংলা দেশে দেশ চেতনার সত্যরূপটি আরও আচ্ছন্ন হয়ে যেতো নবীনচন্দ্র ব্যাপারে অসীম সংযমের পরিচয় দিয়েছেন সে যুগে স্বাধীনতার যূল্য কিংবা পরাধীনতার জালা উভয় অন্তৃতিই ছিল অসাড় তাই নবীনচন্ত্র বিশ্লেষলী মনোবৃত্তি থেকেই বলেছেন,__ আর ভারতের ? সেই চির-অধীনীর ? ভারতেরে। নহে আক অস্থখের দিন | পশিয়া পিঞ্রান্তবে, বন-বিহগীব কিব! সখ, কি অস্কখ ?--সমান অধীন | [খা এই সহজ সত্য দেশপ্রেমের কাব্যে পরিবেশন করে কবি সংঘত মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন

৩৬৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল। সাহিত্যে হ্বদেশপ্রেম

ক্ষমতা হস্তান্তরের নাটকে বাঙ্গালীকে যদি দর্শক হিসেবে মেনে নেওয়া যায়-_ তবে তাদের যথার্থ মনোভাব কি হতে পারে--নবীনচন্দ্র মানসচক্ষে তা প্রত্যক্ষ করেছিলেন বন অত্যাচার এদেশীয় হিন্দুসম্প্রদায়ের চিত্তে যে গ্লানি হৃষ্টি করেছিল --ইতিহাস তা ভোলেনি,-কবি তা ভুলবেন কেমন করে? আগন্তকের শক্তি বন্গনায় জাতীয় চরিত্রের দুর্বল রূপটি যেমন ধর। পড়ে, নির্মম অত্যাচণরীর হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার বাসনাটিও সেখানে গোপন থাকে না। যদিও জানি পররাজ্য যারা গ্রাস করতে আসে তারা সাধু নয়, শক্তিমান। অষ্টাদশ শতাব্দীর অত্যাচার ক্রি বাঙালীর যথার্থ মনোভাব নবীনচন্দ্র ফুটিয়ে তুলেছেন এভাবেই,-- “কিন্তু বৃথা,_নাহি কাজ স্দীর্ঘ কথায় জানি আমি ঘযবনের পাপ অগণিত; জানি আমি ঘোরতর পাপের ছায়ায় প্রতি ছত্রে ইতিহাস আছে কলঙ্কিত আছে, কিন্তু হায়। এই কলঙ্ক সাগরে ছিল নাকি স্থানে স্থানে রতন নিচয় চিরোজ্জবল, ইতিহাসে রক্ষিত আদরে ? ছিল ন৷ কি সম্রাট মাত্র সম হৃশংসয় ? পাপী আরঙজীব, আলাউদ্দীন পামর, ছিল যদি, ছিল না কি বাবর, আকবর ? | এ] কাব্য নয়--এ যেন এতিহাসিকের নিষ্ঠায় রচিত ইতিহাসের একটি অংশ মাত্র। ইতিহাসের কলঙ্কিত পৃষ্ঠাগুলোর সত্যাসত্যতা যাচাই করার দায়িত্ব কবির নয়, সমাজপ্রেমীর | নবীনচন্ত্রকে পৌরাণিক যুগ থেকে অনায়াসে আধুনিক ইতিহাসের মধ্যে প্রবি& হতে দেখি-- “বিনাযুদ্ধে নাহি দিব স্চ্যগ্র মেদিনী-_ এই মহাবাক্য যার ইতিহাঁস গত, সেই জাতি ভারত করি পরাধীনী - পাঁণিপথে, আত্মদ্রোহী হল আত্মহত। সঞ্ডদশ অশ্বারোহী যবনের ডরে, সোনার বাংলা রাজ্য দিল বিসর্জন |” [গর] আক্ষেপবানী শুধু নবীনচন্দ্রের নয় উনবিংশ শতাব্দীর স্বদেশপ্রেমী কবিদের মনোক্ষোভ নানাভাবে প্রকাশিত হতে দেখেছি প্রশ্ন উঠতে পারে “পলাশীর যুদ্ধের পটভূমিকায় বহুক্রত অংশগুলো যোজনার কি লার্থকতা আছে? পুনবাবৃত্তির

কাব্য ৩৬৫

কোন এ্তিহাসিক প্রয়োজন থাকে কি নাজানি না, বাংলাদেশের। স্বাদেশিক আন্দোলনের পূর্বাহ্নে বাংলা কবিতায় অতীত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি বারংবার প্রত্যক্ষ করেছি সব কবিরাই শেষ পর্যন্ত বর্তমানের হতাশ! থেকে অতীত ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল মুহূর্তের ছায়ায় আত্মগোপন করতে চেয়েছেন,_-এ যেন ক্ষোভের শীতল শান্তি। আমাদের বর্তমান নেই, কিন্ত অতীত ছিলো, কথ! যতক্ষণ না বোঝাতে পেরেছেন, অতৃপ্ত কবি শান্ত হতে পারেন নি। বাংলা সাহিত্যে স্বাদেশিকতার জোয়ার এসেছে এই অতীত স্বতিচারণার মধ্য দিয়েই পুনরাবৃত্ত অতীত আদর্শ সত্যই একদিন আমাদের কালিমালিপ্ত বর্তমানের দৈম্য ঘোচাবার চেষ্টা করেছিল। পলাশীর যুদ্ধে” যে বাঙ্গাল'র পতন ঘটেছে--সে ইতিহাসও কবি যথাসাধ্য বর্ণনা করলেন,--কিস্তু ইতিহাসেরও যে ইতিহাস আছে--এ সংবাদ পরিবেশনের লোভটুকু তিনি ত্যাগ করবেন কি করে? লক্ষ্যণীয় প্রবণতা হচ্ছে এই যে, নবীনচন্দ্র ষখন মৌঘল ইতিহাঁসে গৌরবচিহন আবিষ্ষারে অক্ষম হলেন তখন পৌরাণিক ইতিহাস অবলম্বন করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি আর মহাঁভীরতের অতি শ্লীঘনীয় আত্মস্তরিতাকে নবীনচন্দ্ মহাবাক্য নামে অভিহিত করলেন অনায়াসে ছুর্যোধনের সঙ্কীর্ণতা-নীচতা তার বীরত্বের-শৌর্যের প্রতীকে পরিণত হলো, দত্ত রূপ নিল বন্দনীয় বীর্ষশক্তি রূপে নিমজ্জমীন ব্যক্তি যেমন করে তৃণখণ্ডকে আশ্রয় করে বাঁচার চেষ্টা করে,_ স্বদেশপ্রেমী কবিরাও তেমনি করে পৌরাণিক খড়কুটে। আকড়ে ধরতে চেয়েছেন, শুধু ভাবেননি যে পৌরাণিক সিদ্ধসত্যটি প্রয়োজনের তাগিদে রূপান্তরিত বা বিরুত হল কিনা। উনবিংশ শতাঁবীর শেষতম উল্লেখযোগ্য স্বদেশী কবি হিসাবে নবীন- চন্ছের প্রয়াস লক্ষ্যণীয় ! পলাশীর যুদ্ধের, শেষাংশ রোদনপ্রিয় বাঙ্গীলীর কাছে অতি মর্ীস্তিক বলে মনে

হবে--যদিও এই হৃদয়বিদারক অংশটি পরোক্ষভাবে আমাদের উত্তেজনা সঞ্চারে সাহায্যই করেছিল সিরাজদ্দৌলার হত্যাদৃশ্য যৌজনা করে নবীনচন্দ্র বাঙ্গালীর কোমল তন্ত্রীতে ঘ1 দিয়েছেন, _সমবেদনায় কবিকণ্ঠ পূর্ণ,__

ডুবিবে, ডুবিছে, আহা! আপনি আপন |

শৃঙ্নচ্যুত শিলাখণ্ড ত্যজিয়৷ শিখর

পড়ে যবে ধরাতলে, কি কাজ তখন

আঘাত করিয়৷ তার পৃষ্ঠের উপর ? [ পঞ্চম সর্গ ]

কবিত্বঃশক্তি নয়--সমবেদনাই ট্র্যাজিক রসের উৎস এখানে “পলাশীর যুদ্ধে*

নৰীনচন্দ্র মৃত্যুর মর্মীত্তিকতা, ন্থশংসতার নগ্ন রূপ উদঘাটন করেছেন, রোদনপ্রিয় বাঙ্গালীর সদ্জাগ্রত চিত্তভূমিতে উত্তাপ সঞ্চারের প্রয়োজনে অস্ত্রটি অব্যর্থ হবে

৩৬৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেষ

নবীনচন্দ্র তা জানতেন “পলাশীর যুদ্ধের” কাব্যগুণ বিচার করার প্রয়োজনই বা কিঃ এঁতিহাসিক মানদণ্ডের নিখুত নিরিখে যাচাই করার তাঁগিদই বা কোথায়? স্বদেশচেতনায় উত্তেজিত বাঙ্গালী এর মর্মীস্তিক চিত্র দেখে অভিভূত | নাট্যকার দেখে নাটক রচনার কথা চিন্তা করছেন,স্বদেশপ্রাণ বাঙ্গালী দেখে আত্মরক্ষার শপথ উচ্চারণ করছে,_-নীতিবাগীশ দেখে বিশ্বাসঘাতকতার নতুন দৃষ্টান্ত অন্ু- সন্ধান করেছে, সব মিলিয়ে “পলাশীর যুদ্ধের কবি নবী নচন্দ্র দেশবাসীর অকুণ্ঠ প্রশংসা যদি পেয়েই থাকেন, নিছক উচ্চাঙ্জের কৃষ্টি নয় বলে কাব্যের সব অসম্পূর্ণতা যদি সাফল্যের নীচেই চাঁপা পড়ে থাকে শবে তা স্বাভাবিকই হয়েছে কাব্য বিচারের উদ্যত মানদণ্ড চিরকালীন সাহিত্যের বা ক্লাসিক রচনার চরণ বিশ্লেষণ করুক,--কালের চিত্ততলে স্বদেশী সাহিত্যের বিচার যে ভাবে হওয়া উচিত, সে যুগের উচ্ছুসিত বন্দন| “পলাশীর যুদ্ধ” কাব্যকে সেদিক থেকেই বিচার করেছে। নবীনচন্দ্রের সাথকতার নয়, তার সিদ্ধির সাফল্যের বিচার হয়েছে “পলাশীর যুদ্ধ” কাব্যে

অবকাশরঞ্রিনী [১ম ভাগ?-এ নবীনচন্দ্রের স্বদেশ প্রেমোচ্ডাসের শুরু, “পলাশীর যুদ্ধ” রচনাকালে উচ্ছ্বীস স্বদেশচিন্তার সমন্বয় ধর1 পড়েছে,__যাঁকে ক্রম পরিণত স্বদেশচিন্তার একটি বিশিষ্ট ধাপ বলে মনে করা যায়। নবীনচন্ত্র কাব্য- জীবনের শুরুতেই স্বারদেশিকতার উত্তাপ সঞ্চার করেছিলেন, পরিণত বয়সে চিন্তা আধ্যাত্মিকতার দ্রবরসে সিক্ত হয়েছিলো | স্বদেশ ভাবনার ঘনীভূত রূপটি কবির কাব্য জীবনের আদি পর্বেই নিঃশেষিত হয়েছিলো বলে কিছু রচনাগত দুর্বলতা, আঙ্গিকগত শৈথিল্য কিংবা ভাবগত দৈন্য চোখে পড়বে কিন্তু পূর্বেই বলেছি, কবিতা হিসেবে এবং স্বদেশাত্মক কবিতা হিসেবে বিচারের মানদণ্ড এক নয়। সৃষ্টি হিসেবে নিখু'ত না হলেও উত্তেজনা সঞ্চারের ক্ষমতা দেশাত্সক কবিতায় থেকেই যায়_-অনেক প্রকাশ্য ক্রটিও স্বদেশপ্রেমের মতো মহৎ এবং মুল্যবান ভাবনার অন্তরালে চাপা পড়ে দেশপ্রেমের অন্তশিহিত আবেগ কোঁনোক্রমে ধর! পড়লেই উতৎ্স্থক দেশবালীর মন নেচে ওঠে। দেশের কোন কোন সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে সত্য বারবারই ধর1 পড়েছে এককালে নজরুল কিংবা রবীন্দ্রনাথের দেশাত্মবোধক সঙ্গীত শুধু মানুষকে তৃপ্তি দেয়নি,_উত্তেজনা দিয়েছে-_দাহ হৃ্জন করেছে কে না জানে সার্ক কবিতার নিখুত অঙ্গসঙ্জা কিংবা প্রসীধনের অভাব সেসব কবিতায়ও রয়েছে? নবীনচন্দ্রের দেশাত্মবোধ তার প্রথম জীবনের স্থির প্রেরণা $ সেই প্রেরণা যেমন শুচিতশুদ্ব--তাঁর আবেদনের সীমাও শুধু সেই উদ্মুখ পবিভ্র$্দেশ প্রেমিক মানুধদের কাছে “পলাশীর যুদ্ধ” তাই কাব্য নয়, মন্ত্র; শপথেচ্ছ দেশপ্রেমিকের কাছে

কাব্য ৩৬৭

বীজমবস্ত্ররে মতো এর অভিনয় নাটকের সুম্ম কলাকৌশল তুলে ধরেনি, কিন্ত প্রতিটি মানুষের অন্তনিহিত শক্তিকে জাগিয়ে তুলেছে প্রথম যুগের রচনা বলে এদের প্রতি সমালোচকের অনীহা থাঁকবে সেটা অসঙ্গত নয়,---কিস্ত যে উদ্দেশ্যে কবিতার জন্ম-_তার পূর্ণ মর্যাদ! দিয়ে দেশপ্রেমী রলিকেরা এর রস গ্রহণ করেছিলেন সাহিত্যে দেশপ্রেমের ধ্বজা ধারা বহন করেন তাদের অনেক সময়ই উদ্দেগমুখ্য বক্তব্য পরিবেশন করতে হয়_-নবীনচন্দ্রই শুধু নয় সেদিক থেকে উনবিংশ শতাব্দীর সমগ্র কাব্যসাহিত্যেই এই প্রবণতা প্রকটরূপে প্রকাশিত |

নবীনচন্দ্রের “পলাশীর যুদ্ধ” নানা অভিমতের বিরোধিতা মাথায় নিয়ে শেষ পর্যন্ত দেশপ্রেমিকতার কষ্টিপাথরে উত্তীর্ণ হয়েছে সত্যটি অন্য একটি ঘটনা দিয়েও ব্যাখ্যা করা যায়। জনৈক রসিক চিকিৎসক [ ফ্রেঞ্চ মলেন ] কাব্যটি অনুবাদ করেছিলেন কাব্যের অন্তনিহিত ব্বদেশপ্রেমাত্রক বক্তব্যটি তার ভালে! লেগেছিল বলেই। প্রসঙ্গে সংবাদঢুকু যৌগ করা দরকার যে, কবির সঙ্গে পরিচিত হৰার আগেই নিছক সাহিত্যপ্ীতি মুগ্ধতা নিয়েই অনুবাদক এগিয়েছিলেন | নবীনচন্দ্রের কাব্য একজন বিদেশীর সানুরাঁগ সমর্থন লাভ করেছিল, নিশ্চয়ই সংবাদ অনুবাদ শেষ পর্যন্ত আত্মপ্রকাশ করেনি তবুও নবীনচন্ত্র বিষয়ে “আমার জীবনে” দীর্ঘ আলোচনা করেছেন সৌভাগ্য নবীনচন্দ্র “পলাশীর যুদ্ধ* রচনা করেই পেয়েছিলেন

“পলাশীর যুদ্ধ” রচনার অল্লদিন পরেই নবীনচন্দ্রের “অবকাশ রঞ্জিনী” [ দ্বিতীয় লাগ 7 প্রকাঁশিত হয় দ্বিতীয় ভাগের অধিকাংশ কবিতাই সাময়িক পত্রে প্রকাশিত | বি হিসেবে-_বিশেষতঃ স্বদেশপ্রেমী কবি হিসেবে নবীনচন্দ্র তখন সুপ্রতিষ্ঠিত | বদেশাত্মক অনুভূতি কবিতাগুলিব বক্তব্যকে গভীরতর করেছে তবে প্রথমাবধি যে চন্তাঁধারা,_-যে ছুঃখ কবিচিত্তে দেখেছি “অবকাশ রঞ্রিনীর” [ ২য় ভাগ] দেশাত্মক চবিতাতেও তারই প্রতিবিম্বন। বন্থ কবিতা প্রথম মুদ্রণে প্রকাশিত হলেও পরবর্তী [দ্রণে নির্বাচিত অংশ বর্জন করা হয়েছে 'আবাহন' শীর্ষক অধ্যাত্মচিস্তাজাত টবিতাটিতে একই ভঙ্গিতে কবি আধ্যাত্মিকতা স্বদেশভাঁবনা একীকরণ করেছেন [ব সহজেই লক্ষ্য করা যাঁয় যে, ধর্মচেতনা নয়-_স্বদেশ ভাবনার মাধ্যম হিসেবেই বষয়বস্ত গ্রহণ কর] হয়েছে কারণ শক্তি শিবকে কবি সাধকের মতো আহ্বান চরেননি, আত্মিক বন্দে পীড়িত হয়ে দেবতার কৃপাভিক্ষা! করার প্রয়োজনও তার ছিল 1, _কিস্তু দেশাদর্শ ছিল সামনে কবি শক্তিকে আহ্বান জানিয়েছেন, আহ্বানের

প্যাত্সিক প্রয়োজনই সেদিন তুচ্ছ হয়েছিল, শক্তিদেবীকে আহ্বানের অন্যতর টদ্দেশ্যই হয়েছে প্রকট /কবি দীর্থাকারে কবিতাটি পরিবেশন করেছেন ব্যক্ধিস্বার্থ

৩৬৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে শ্বদেশপ্রেম

স্বকীয় কামনাকে বিস্বত হয়ে দেশভাবনা কি ভাবে কবিকে পীড়িত করেছে তার চিত্র, বীর বাল! মম, দানবদলনী ! দেখ, শৈলেশ্বর ! দেখ নাহি তুমি বহুদিন, আহা! সিন্ধু অতিক্রম যেদিন যবন ভারতভূমি প্রবেশিল, হায়, হইল সেদিন যেই যুছ তব, ভাঙ্গিল না আর! সপ্ত শতবর্ষ সেই মৃছীধীন-_ রহিয়াছ ! নেত্র মেল একবার! [ আবাহন ] সেধুগে আত্মিক মুক্তিলাভের বসন! কখনো বড়ো হয়ে ওঠেনি, দেশাদর্শই সব ছাপিয়ে বড়ো হয়ে উঠেছিল অধ্যাত্মচিত্তা-ধর্ম দর্শনের মূল চিস্তা আদর্শ যদি দেশের স্বার্থকে অস্বীকার করে তবে সেযুগের দেশবাসীর কাছে তার কানাকড়ি দাম ছিল না। সাহিত্য সাধকদের অধ্যাত্বপ্রসঙ্গেও দেশমাতৃক। এসে ধাড়িয়েছেন-- সেই মৃতিটির ধ্যান করতে শিখিয়েছিলেন বঙ্কিমচন্দ্রও তবে বঙ্কিমচন্দ্রেরও আগে শক্তিদায়িনী-দানিবদলনী-শক্রবিজয়িনী শক্তিকে নবীনচন্দত্র আবাহন জানিয়েছিলেন, মৌলিক ভাবনাটিকে সন্মান জানাতেই হয় নবীনচন্ত্র আধ্যাত্মিকতার আবেগ মুক্ত হয়েও দেশীত্ববোধের প্রেরণায় কবিতাটি রচনা! করেছিলেন-_-এবং প্রকট স্বদেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছিলেন শক্তিদেবীর কাছে মন্ত্রোচ্চারণের জন্য শান্ত্র বা পু'ণির সাহাষ্য কবি নেননি দেশের বর্তমান ছুঃখ নৈরাশ্যবোধে পীড়িত কবি আত্বোক্নতির অন্য দেবারাধনায় প্রবৃত্ত হননি,_-তিনি অধঃপতিত ভারতের চিত্রটিই দেবীর সামনে তুলে ধরেছেন,__ হইতেছে নিশি ক্রমে গাঢ়তর ; গেল যবনের কিন্তু পারাপার চির অবিশ্বাসী-নির্দয় অন্তর, সোনার ভারত ডুবাল আবার ওই সংখ্যাতীত বাম্পীয় বাঁহনে, লুঠি ভারতের রতন-ভাগ্ডার নিতেছে বহিয়া, শৌষে প্রাণপণে শত শোতে হায় শোঁণিত তাহার [এ] আধ্যাত্সিকত। সর্বন্থ ভারতে নবীনচন্দ্র দেববন্দনার প্রাচীন রীতিটি সম্পূর্ণভাবে

কাব্য ৩৬৬

বর্জন করেছিলেন দেবীকে আহ্বানের প্রয়োজন আছে, কিন্ত লাঞ্ছিত পদানত ভারতবাসীর প্রণাম মন্ত্রটি পরিবতিত হয়েছে শুধুঃ

দেখ হৈমবতি, দেখ একবার

পিঞ্রের পাখী ভারতছুঃখিনী

ভারতের এই সর্বজনীন আতি কবিকে ধ্বনিত হয়েছে “ভারত ছুঃখিনী'কে উদ্ধারের জন্য কবি দেবশক্তিকে আহ্বান জানিয়েছেন, গতানুগতিকতার বেড়াজাল ছিন্ন হয়েছিল দেববনদনার ক্ষেত্রেও, দেশপ্রেমী নবীনচন্দ্রের কবিতাটি তারই পরিচয় বহন করছে। কিন্ত সম্পাদকের হস্দৃষ্টি এড়ানে। সম্ভব ছিল ন! বলেই “আবাহন' নামক দেববন্দনাযূলক কবিতাটীও রাজনৈতিক কারণে খগ্ডিতভাবে প্রকাশিত হয়েছিল কবি যদি চতুর হয়ে ওঠেন, সম্পাদককে আরও সাবধানী হতে হয়; এই আপোষের মনোভাব সেযুগের স্বদেশপ্রেমিক কবি মাত্রকেই অনিচ্ছার সঙ্গে মেনে নিতে হয়েছিল। “'আবাহন” এবং “আগমনী” দুটি কবিতাতেই কিছু অংশ দ্বিতীয় সংস্করণে বজিত হয়ে- ছিলে! রাজনৈতিক কারণে কালাহুক্রমিক বিচারে “আগমনী” কবিতাটি আগের রচন] *আগমনী” কবিতাটি রাজবন্দনা 9 প্রার্কতিক সৌন্দর্যম্ডিত চট্টগ্রামে রাজাকে

আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন কবি। বিদেশী সম্রাটকে আহ্বান জানানো হয়েছে যে কবিতায় স্বদেশপ্রেম সেখানে উপেক্ষিত হবে এটাই স্বাভাবিক স্বদেশচিত্তীর মূলে যে পরাধীনতার যন্ত্রণাবোধ থাকে, স্বাধীনতা অপহরণকাঁদীকে তারই আলোকে সাধারণতঃ বিচার কর। হয় তবু দেখি, নবীনচন্দ্র আনুগত্য প্রদর্শন করেছেন ছদ্ম কৌশলে রাজাকে আহ্বান জানিয়ে স্বকীয় বেদনার অন্ুতৃতিটিকেও কবি ব্যাখ্যা না করে পারেনি নিছক রাজানুগত্য নয়, বিদেশীর কাছে আত্মবিক্রয়ের করুণ উপলব্ধি কবি প্রকাশ করেছেন, টি

স্বয়ং বিধাতা তুমি,

বঙ্গ তব লীলা ভূমি,

বাঙ্গালী অদৃষ্ট, প্রভু, করেতে তোমার

যার ভাগ্যে যা লিখিবে

কার সাধ্য খণ্ডাইবে ?

প্রকাণ্ড ত্রিশুল করে,

ত্রিতুবন কাপে ডরে,

এক শুল “মিলিটরি' দ্বিতীয় “সিবিল+,

তৃতীয়তঃ “হোমচার্জ', ওহে দয়াশীল [ আগমনী ]

২১৭৩ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে হ্বদেশপ্রেম

প্রত্যক্ষ রাঁজবন্দনার অন্তরালে পরোক্ষ আত্মদৈন্তের অনুভূতিটি কবি গোপন ব্লাখতে পারেননি বোঝ! দুরূহ নয় কেন এসব অংশ বর্জনের প্রয়োজন অনিবার্ষ হয়ে উঠেছিলো | রাজবন্দনা পরোক্ষভাঁবে রাঁজসমালোচনারই নামাস্তর হয়েছে, তুমি কালান্তক যম, অনিবার্য পরাক্রম, বর্তমান কারাগার, 'নরক' তোমার যমদুত ভয়ংকর, কাপে অঙ্গ থরথর, সপগুলিশ ম্যাজিস্ট্রেট! কি কহিব আর ? হায়! প্রভু মহামারি “সমারি" বিচার | হেমচন্দ্রের তীত্র ব্যঙ্গ এখানে নেই-_নবীনচন্দ্রেরে কঠে অভিযোগের স্থরটিই স্পষ্ট হয়েছে বেশী “আগমনী' কবিতাটি নবীনচন্দ্রের নিশ্রীক দেশপ্রেমের সাক্ষর বহন করেছে রাজনৈতিক চেতনা কবির অন্তরে যে দাবদাহ স্বজন করেছে--অত্যন্ত মৃদু আন্দেলনে, সুপরিকল্লিত সঙ্জায় তাকে তিনি সন্তর্পণে রূপদান করেছিলেন বিদ্রোহী মনোভাবটি গোপন করে বিনীত অভিযোগের স্বরটি ফুটিয়ে তোলার আপ্রাণ সাধনা করেছিলেন- কিন্তু সত্যকে মিথ্যের মেঘ ঢেকে রাখতে পারে কতক্ষণ ? রাজবন্দন। যে প্রতিবাদের গুঞ্জন ছাঁড়া অন্য কিছু নয় সম্পাদকের দৃষ্টি সে কথা 'আবিষ্কার করেছে “অবকাশ রঞ্জিনীর' [২য় ভাগ] কবিতা ছুটি নবীনচন্দ্রের সদীজাগ্রত স্বদেশচিন্তার সাক্ষর বহন করছে। স্বদেশভাবনা কবির সব চিন্তাকে কিভাবে গ্রাম করে ফেলে, শক্তি বন্দনা রাজবন্দনা কি ভাবে দেশবন্দনাই নামান্তরে পরিণত হয়, কবিতা ছুটি সে সত্য তুলে ধরেছে নবীনচন্দ্রের আর্যপ্রীতি, ইতিহাস প্রীতি হেমচন্দ্রের মতই সোচ্চার, এই আর্ধপ্রেম-_ সে যুগের নতুন পাওয়া সম্পদ উত্তাপ সঞ্ধারের সামর্থ্য না থাকলেও উত্তপ্ত হওয়ার উপাদান এতে মিলবে | আর্ধপ্রীতি উনবিংশ শতাব্দীর দেশসাধনার একটি প্রচলিত মাধ্যম | “আর্দর্শন' পত্রিকা প্রকাশ উপলক্ষ্যে নবীনচন্ত্র অভিনন্দন জানিয়েছেন সার্থক নামটি বেছে নেওয়ার জন্য আর্যসংস্কৃতির পুনরুজ্জীবনের মুহূর্তে এই পত্রিকা- প্রকাশ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, নবীনচন্দ্রও তাই গভীর দেশপ্রেমে মগ্ন হয়ে কবিতাটি রচনা করেছিলেন সার্থক দেশপ্রেমমূলক কবিতা হিসেবে এটি উল্লেখযোগ্য রচন1। “আর্য” নামটিকে ঘিরেই কবির উন্মাদ দেশপ্রেম উচ্ছবুলিত হয়ে উঠেছে,_ “আর্য 1”- আজি ভারতে, নিষ্ঠুর 1॥ নাম কেন ধ্বনিলে আবার ?

কাব্য ৩৭১

মরুভূষে পিপাসায়, ষেজন জলিছে, হায় ! "সুশীতল জল” কাঁনে কেন কহ তার? কেন মৃগ-_-তৃষ্ণিকার কর আবিষ্কার ? [ আর্ধদর্শন ] দেশীন্ভৃতিকে কবি দহনের সঙ্গে তুলনা করেছেন,- আত্বমআবিফারের পালা যখন সাঙ্গ হল--চতুর্দিকের তমসাচ্ছন্ন পরিবেশ আমাদের মনে যে ক্ষোভ জাঁলার সঞ্চার করেছিল--কবি নিজেও তাঁতে দগ্ধপ্রাণ। আর্যইতিহাস সচেতনতাই আমাদের নিশ্চিন্ততার শান্তি গ্রাস করেছে, তাই বর্তমানের জীবন ছুবিষহ বোঝার মত মনে হয়। প্রতিটি দেশপ্রাণ বাঙ্গালীর মর্মজালা কবিতায় যেন বংস্কৃত। ইতিহাসে 1 অবিশ্বাস ! ইতিহাস নহে,_অন্ুমানের সাগর ! তব ইতিহাঁসে কয়, এই সেই আর্ধালয়, আমরা সে বীর্যবাঁন আর্ষের কুমার, চন্দ্র সুর্য বংশে, এই জোনাকি সঞ্চার ? [এ] হেমচন্দ্রের মতো পরাধীনা ভারতবাসীর অসহায় যৃতিটি নবীনচন্ত্রকেও ম্লান করেছে উজ্জল এঁতিহা হারিয়ে আমরা রিক্ত নিয়োক্ত অংশে কবির খেদ $-- এই নহে আর্যাবর্ত, আঁমরাঁও নহি সেই আর্ধের কুমার, তাহাদের বীর্যবল, ছিল যেন দাবানল, পৃষ্ঠে তৃশ, করে ধনু, কক্ষে তরবার, আমাদের অশ্রজল, তিক্ষা-পাত্র সার ! [এ] নবীনচন্দ্রের কণে যে দীর্ঘশ্বাস ধ্বনিত হতে দেখি,_তার মধ্যে নতুনত্ব নেই--সে যুগের বাঙ্গালীর মনোক্ষোৌভের সাধারণ রীতি ছিল এই | শুধু কবিতায় নয়, উপন্যাসে- নাঁটকে-ব্যঙ্গকাব্যে প্রাচীন ভারতের গৌরবময় অতীতের জদ্ঘ ছুঃখমোচন সেযুগে অনিবার্ষ হয়ে উঠেছিলো এই চিত্র বর্ণনায় কোনো স্বদেশপ্রেমিক ক্লান্তি বোধ করেন নি কেন, খুব সহজেই তা অনুমেয় তিমিরাচ্ছন্ন বর্তমানকে অতীতের উজ্জ্রলতার প্রেক্ষাপটে যাচাই করে নেবার সাধারণ প্রবণত। সেযুগে জন্ম নিয়েছিল | নবীনচন্দ্র

৩৭২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

উজ্জ্বল ভবিষ্যতের বলিষ্ঠ আশাবাদের চিত্র অঙ্কন করেননি কোথাঁও,_-কিস্ত বর্তমানের দৈন্ককে শতমুখে নিন্দা করেছেন, "নাহি আর্য, কেন 'আর্ষ-দর্শন' এখন ? কি আছে আর্ষের আর, বিনে ওই-_হাহাকার, নাহি অঙ্গ, নাহি মন, নাহি সে জীবন, কি আর দেখিবে “আর্য দর্শন এখন 1 [এ] নবীনচন্দ্র ধিক্কার দেবার নির্ভীকতা দেখিয়েছেন সর্বত্র,-রোদন ছঃখপ্রিয়তার হাত থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন তিনি ইতিপূর্বে বাংলা সাহিত্যে আর্তের ক্রন্দন শতধারে উৎসারিত হয়েছিল বঙ্কিমচন্দ্র আরও পরে সমালোচনায় কঠিন মনো- ভাবের পরিচয় দিয়েছিলেন নবীনচন্দ্রেরে কোনো কোনে! কবিতায় এই দৃঢ়তা দুর্ণভ নয় হাহাকার রুন্দন মানুষকে স্বাধীনতা! দিতে পারে না, শক্তি অর্জনের জন্য অন্তপথ অনুসন্ধান করতে হবে। ভবিষ্যতের জন্য কবি সেই পথটুকু নির্দেশ করেছেন,_- আর কোন মহারথী বাঁজাইয়। পাঞ্চজন্য, ধরি তরবার, করি” সিংহনাঁদ ধ্বনি, আনে রক্ত তরঙ্গিনী, আর্যরক্তে আর্ধীবর্ত ভাঁগায় আবার, তবে যদি আর্য বংশ জাগে পুনর্বার | [এ] এই নির্দেশটি যেমন সত্য তেমনি. উদাত্তগন্তীর নবীনচন্ত্র আগামী দিনের সৈনিক বাঙ্গালীর কথা চিন্তা করেছিলেন ; রক্তের শপথে আন্দোলিত প্রাণ বিদ্রোহীর নেতৃত্বের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন,_-অদূর তবিষ্যাতেই যে তা আসবে শুধু সত্যটুকু অভ্রান্তভাবে চিনে নিতে পারেননি অংশটি পরবর্তী অধ্যায়ের স্বাধীনতা আন্দোলনের ভবিষ্যৎ বাণীরূপে গৃহীত হতে পারে আর্যশক্তি বাঙ্গালীর তথা সম্রগ্র ভাঁরতবাসীর অন্তরে দীপ্যমান হয়ে উঠেছিল পরবর্তী অধ্যায়ে-_-নবীন কবি তার সংকেত জ্ঞাপন করেছেন মাইকেল মধুস্থদনের অকাল মৃত্যুতে শোকগ্রন্ত স্বদেশী কবির মূল্যায়ন যখোচিত হয়েছে) মধুর কোকিল কণ্ঠে অমৃত লহরী কে আর এখন,

কাব্য ৩৭৩

দেশদেশান্তরে থাকি, কে শ্যাম! জন্মদে' ডাকি, নৃতন নূতন তানে মোহিবে শ্রবণ ? 1 ৮মাইকেলমধুহৃদন দত্ত ] স্বদেশপ্রাণ মধুক্দনকে স্বদেশপ্রিয় নবীনচন্দ্র এভীবেই শ্রদ্ধার্থ অর্পণ করেছেন নবীনচন্দ্র "অবকাশ রঞ্জিনীর” [ ১ম ভাগে ] বাঙ্গালী যুবকের মুমৃযু দশার চিত্র অঙ্কন করেছিলেন,__পরাঁধীন হয়ে বেঁচে থাকার দুঃসহ যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি পাবার উপায় হিসেবে মৃত্যুকেই অবলম্বন করছিল সে। এধরণের কল্পনা অস্কত্রও আছে। স্রাপ্রিয় বাঙ্ালীকে নেশাচ্ছন্ন হতে দেখেছিলেন কবি,_এই মোহাবেশকে তিনি ধিক্কার দিয়েছেন কবিতাটির নামকরণটিও লক্ষ্যণীয়, “বাঙ্গালীর বিষপান” নবীন- চন্দ্রের স্বদেশচিন্তায় উৎকৃষ্ট যোজনা বাঙ্গালীর শক্তিহীনতা৷ লজ্জার কারণ, কবি তা স্পট ভাবে বলেছেন, বিশেষ বাঙ্গালী চিরপরাধীন, দাসত্ব জনম, দাসত্ব জীবন, হইবে জীবন দাসত্বে বিলীন, দাসত্ব যাহাঁর অদৃষ্ট লিখন দাসত্ব জাঁলায় মরিবাঁরে চাঁও ? মরিবাঁর তরে খু'জিছ গরল ? ঢাল এই বিষ--অধঃপাতে যাঁও। জলন্ত বারি তরল অনল [ বাঙ্গালীর বিষপান ] স্বদেশপ্রেমের আদর্শেই কবিতাটির পরিকল্পনা বাঙ্গালী জীবনের ছূর্বলতাগুলি কবি জানেন তাই অধঃপতনের শোঁচনীয় সীমানায় বাঙ্গালীর অগ্রসর হওয়ার চেষ্টাকে তিনি নির্মমভাবে সমালোচনা করেছিলেন স্থরার বিভ্রান্তি কখনও কখনও আমাদের কাম্য দাঁসত্ব পীড়িত আত্মা যখন ক্ষোভে ছুঃখে ভরিয়মান হয়ে পড়ে, কবি সচেতন ভাবে সুর গ্রহণ করার স্বপক্ষে বলেছেন, ত্রাণ্ডি ;-_ব্রাপ্ডি বিনে, কিছু নাহি আর অধীনতা দুঃখ করিতে বিনাশ, চিত্তে স্বাধীনতা করিতে সঞ্চার, মহৌষধি এই ব্রাণ্ডির গেলাস। [এ] এই যন্ত্রণাঁদগ্ধ চিত্তের কাছে স্থরা পরম রমণীয় হতে পারে-_কিস্তু এত ক্রমশঃ শক্তিহীন হওয়ার সাঁধনা- পথে শান্তি কি স্বাধীনতা আসতে পারে না। কখনও কখনও স্বদেশপ্রেমী কবিকে উপদেষ্টার আসনেও বসতে হয়েছে--যেমন কল্যাণাদর্শ

৩৭৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে হ্বদেশপ্রেম

বঙ্ষিষচন্দ্রকে সমালোচক হওয়ার প্রেরণ! দিয়েছিল নবীনচন্দ্র স্থরাপানের চরম ফলাফলটি ঘোষণা করেন অবশেষে,_- জ্ঞান, বুস্ি, লজ্জা, ভরসা, বিশ্বাস, নীতি, ধর্ম, সত্য জাতীয় গৌরব, এই বিষতেজে হইবে বিনাশ একা স্বর! বঙ্গে বিনাশিবে সব ! [এরা অধীনতার দুঃখ, পরপীড়নের গ্লানি কবিতাঁটিতে যেমন দৃপ্তভাবে প্রকাশ করেছেন কবি, এমন কোথাও পাওয়া যায় নি। স্ুরাসেবনের নিশ্চিত ফলাফল যে বিষময় শুধু কথা জানানোর জন্য কবিতাটি রচিত হয়নি কবির ক্ষোভ-গ্লীনির আপাতঃ সাত্বনা এই বিষমিশ্রিত স্থরা। কবিও মুক্তি পেতে চাঁন জীবন যন্ত্রণার হাত থেকে,- সঙ্গে তুমি- তুমি কে? যম? কিভয়! জানি আমি ত্র্যাণ্ডি তব উপাদান, যেই বিষাধার বাঙ্গালী-হুৃদয়, এই বিষ তাহে অয়ত সমান | [এ] ক্রাপান সম্মীলোচনার মধ্যে কবির আত্মদহনের সংবাদ কবিতাটির মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। উপদেশকের আসনে বসে কবি স্থরাপীনের নিন্দা করেননি,--সর্বনাশী হরার হাতে কোন ছঃখে মানুষ আত্মসমর্পণ করে তিলে তিলে মৃত্যুকে বরণ করে তারই মর্মীস্তিক চিত্ররচন। করেছেন এসব কবিতায় বিষয়বস্তর অভিনবত্ব স্বদেশ ভাবনার বৈচিত্র্য লক্ষ্যণীয় “অবকাশ রঞ্জিনী' [২য় ভাগ ] নবীনচন্দ্রের পরিণত মনের কৃষ্টি ;_-স্বদেশচিন্তাঁর অধিকার কবি পেয়েছেন, তার স্বদেশপ্রেম জনমনের তৃপ্তিসাধন করেছে। স্বকীয় উপলব্ধিকে তিনি বাঙালীর মনে সঞ্চার করেছেন স্বদেশপ্রেমিকের স্বচ্ছ দৃষ্টি “অবকাশ রঞ্জিনী” [ ১ম ভাগে] নেই-_কিন্তু দ্বিতীয় ভাঁগের কবিতাতে এই স্বচ্ছতাই সবার আগে চোখে পড়ে “চিহিত স্থহৃদ” কবিতাঁটিতে।স্বদেশপ্রেমের আবেগ উচ্ছাস লক্ষ্য করা যায় সামাগ্ বিষয়বস্তু অবলম্বনে স্বদীর্ঘ কবিতা রচনার সহজ ক্ষমতা নবীনচন্দ্রেঞ্ছিল | বিষয়বস্তর অকিঞ্চিতকরতা তিনি স্বদেশচিত্তার নির্মল প্রসঙ্গে দূরীভূত করেছেন কবিবন্ধু উচ্চশিক্ষালাভের জন্য বিদেশে গমন করছেন, প্রসঙ্গটি না স্বদেশচিন্তার না উৎকৃষ্ট কবিতার। কিন্তু নবীনচন্দ্র প্রসঙ্গ অবলম্বনে ১৪২ পংক্তির দীর্ধ কবিতাটি রচনা করেছেন স্বচ্ছন্দে। স্বদেশাত্বক অংশটুকু কবিতার নর্যাদ। বৃদ্ধি করেছে,-নিছক অর্থহীনতার হাত থেকে

কাব্য ৩৭৫

কবিভাটির মান বাঁচিয়েছে। এই শিক্ষালীভের সমালোচনাটি স্বদেশপ্রেমী কবির অন্তরের কথা : অকৃল, দুরলজ্ঘ্য সিন্ধু অতিক্রমি”, বীরত্বের খনি ব্রিটনে পশিয়া ; জগত জীবন ইউরোপে ভ্রমি, আসিয়াছ সখে! কি ফল লভিয়া ? শিখেছ সাহিত্য, শিখেছ দর্শন, শিখেছ গণিতে নক্ষত্র মণ্ডল, কিন্তু তাহে, সখে ! হ'বে কি বারণ “মাতার রোদন,__মাতৃ চিতানল 1৮ [চিহ্িত সুহৃদ 1 প্রশ্নটি অবান্তর হয়নি কারণ স্বদেশপ্রেমিকের অন্তরাবেগ থেকে প্রশ্নের জন্ম হয়েছে আমাদের শিক্ষাদীক্ষার মূল্য কবি স্বীকার করতে অপারগ, ষদি সে শিক্ষার যূলে স্বদেশচিন্তার অভাব থাকে শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যটি মহৎ হতে পারে, কিন্তু পরাধীন দেশের অধিবাঁসীর পক্ষে সেই শিক্ষাটুকুরই প্রয়োজন 1 তাকে মুক্তির পাথেয় সংগ্রহে সাহায্য করবে কিন্তু অভিজ্ঞতায় যা দেখেছেন কবি, ইংরাজের শ্মক্র ইংরাজেব কেশ, ইংরাজী আহার-প্রিয় ব্রাণ্ডিজল, আনিয়া, সখে ! ইংরাঁজের বেশ, কিন্তু ইংরাজের কই বীর্য-বল ? [এ] স্বদেশপ্রেমের অভিমান কবিকে সত্য জানার সাহস এনে দিয়েছে, কই ইংরাজের তীক্ষ তরবার ? কই ইংরাজের দুর্জয় কামান ? কই ইংরাজের সাহস অপার? সিংহচর্সে তুমি মেষ অল্পপ্রাণ [এ] হেমচন্দ্র কিংব। পরবর্তীকালে দ্বিজেন্দ্রলাল ব্যঙ্গের আশ্রয়ে জাতীয় দুর্বলভাঁর মুখোশ খুলেছিলেন ; নবীনচন্দ্র অকুতোভয়ে প্রত্যক্ষ সমালোচনায় অবতীর্ণ হয়েছেন,__ স্বার্দেশিকতার শক্তিই সত্য যাচাই এর সাহস এনে দিয়েছে তাঁকে এমন দৃঢ়তার বর্ম স্বদেশপ্রীণ কবিকে নির্ভীক করে তোলে সুতরাং “চিহ্নিত সুহৃদ শুধু কবিবন্ধুর উদ্দেশ্যেই রচিত হয়েছে এমন কথা বলা যায়না, __সমগ্র জাতির উদ্দেশ্যেই কবির বক্তব্য শক্তিমান-স্বদেশপ্রাণ, স্বজাতিগঠনে স্বদেশপ্রেমী কবিরা যেভাবে প্রেরণা জোগান, নবীনচন্দ্রের কবিতায় তা মিলবে ইংরেজী শিক্ষাসভ্যতা

৩৭৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

গ্রহণের প্রয়োজন সম্বন্ধে নিঃসন্দেহ হলেও নবীনচন্ত্র নিছক শিক্ষাগ্রহণের পক্ষপাতী নন। জাতীয় চরিত্র গঠনে শিক্ষিত মানসিক শক্তিসম্পন্ন মানুষের প্রয়োজন সবচেয়ে- বেশী, নবীনচন্ত্র কবিতায় মুক্তকণ্ঠে সে সংবাদ জানিয়েছেন। তাই “চিহ্নিত সহৃদকে" কবি ভৎসন1। করেন,_ হয়েছ “চিহ্নিত” ! কিন্তু সেই চিহ্ন তব পক্ষে, হাব! কলঙ্ক কেবল, এই চিহ্কে সথে ! হইবে ন] ছিন্ন দীনা ভারতের অনৃষ্ট শৃঙ্খল [&] পরাধীন অথচ স্বাধীনতাকামী বাঙ্গীলীর সত্যিকারের শিক্ষা হবে বণনীতিজ্ঞান | ক্কুউচ্চ দেশতাবনাঁজাত কবিতাটিতে নবীনচন্ত্র আগামী দিনের স্বধীনতাঁলাভেরা পথনির্দেশ করেছেন, হবে কি সে দিন, কে করে গণনা, যেই দিন দীন ভারত তনয় শিখি রণনীতি, করি”, বীরপণা, রক্তাক্ত শরীরে ফিরিবে আনায়? সেইদিন যেই জয়-_জয় ধ্বনি তুলিবে ভারত আনন্দে বিহ্বল, শুনিয়া সে ধ্বনি, হইবে অমনি হিমান্রি চঞ্চল, সমুদ্র অচল [এ] রক্তাক্ত বিপ্রবের বহ্ছি অল্পকাঁল পরেই জলে উঠেছিল সমগ্র ভারতে, নবীনচন্দ্রের দুরদর্শন সার্ক হয়েছিল। ইতিহাসের সত্যতা নির্ণয়ে নবীনচন্দ্র অকপট। পরাধীনতার দৃষ্টান্ত যেভাবে আমাদের সমবেদনা লাভ করবে বিজিতের জয় ততটুকু নয় আমরাও দৌসরখুজি সমবেদনা! জ্ঞাপনের কবি বলছেন,__ কি সুখ ছলনা ! নাহি কাজ তাহে বল বল, সখে! দেখেছ কি তুমি, পতিত বিগত বিপ্লব প্রবাহে জগ্ত গৌরব ফ্রান্স বীরতৃমি ? ফরাসি-গৌরব সমাধি 'সিডনে' ধাড়াইয়া শোকে বিষাদে বিহ্বল, ফরালি অনৃষ্টে, বাঙ্গালী নয়নে বরেছিল কি হে একবিন্ছু জল? [এ]

কাব্য ৩৭৭

ইতিহাসের দৃষ্টান্ত মানুষকে যে শক্তি এনে দেয় নবীনচন্দ্র এতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যেই শক্তি সঞ্চারের চেষ্টা করেছিলেন গৌরবের-সম্মানের আসন থেকে পরাধীনতার অতল গহ্বরে তলিয়ে যাওয়ার দুঃখ যেদিন ফরাঁসীদের অন্তরে বেজেছিল নবীনচন্ত্র তারই সঙ্গে পরাধীন ভারতের সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন। কখনও কখনও কবিকে অর্থহীন উল্লাসে মত্ত হতে দেখি,

ভারত জীবন যাহাদের করে,

জানেন কি তারা ভারত অমর ? পোড়াও আগুনে, ডুবাও সাগরে,

গুযূষূর্ জীবন হবে না অন্তর ! কিন্তু মুছাইয়! নয়নের জল,

কর ক্ষীণ দেহে জীবন সঞ্চার আবার ভারত ছাড়ি হিমাচল,

তুলিবে মস্তক মরি ! দুরাশার

আশাটুকুই আমাদের স্বদেশভাবনার অন্তস্থলে ফন্তর মত নীরবে প্রবহমানা ইতিহাঁসেরও ইতিহাসে ষেকথা! একদিন সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছিল উনবিংশ শতাবীর মানুষরা পরম আগ্রহে তাকেই আকড়ে ধরেছে | আর্যত্ব, কীরত্ব কিংবা শক্তির দৃষ্টান্ত অন্থসন্ধানে প্রবৃত্ত হয়ে আমাদের প্রাগৈতিহাঁসিক যুগে ফিরে যাওয়া ছাড়া অন্ত কোন উপায় ছিল না। আমাদেরই ইতিহাসে যা বিবর্ণ আমাদের পুরাণে তা প্রোজ্জল! হ্ুতরাং নিরুপায়ের মত আমর] পুরাণ অবলম্বন করেছি, সৎ উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের যূল্য আমাদের জীবনে 'সেদিন অপরিহার্য প্রয়োজন রূপে দেখা দিয়েছিল “শবসাধন” কবিতায় বর্তমান ভারতের সঙ্গে পৌরাণিক ভারতের তুলন! দিয়েছেন কবি, বর্তমান ভারতের শ্মশীন চিত্রটি নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন,--

নিবাবে অনল ?--নিবেনি এখন, কে নিবাবে বল, _নিবিবে কেমনে ? সঞ্ধশত বর্ষ অলিছে এমন, কত শত বর্ষ জলিবে কে জানে? যেই দিকে দেখি, এই মহানল ! কোথায় ভারত 1?--অনস্ত শশান ! শ্রশান _শ্বশান- শ্বশান কেবল ! রাবণের চিতা, লঙ্কাঁর প্রমাণ ! [ শবসাধন ]

৩৭৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

এই ভারতের উজ্জীবন সাধন করতে হবে আধুনিক ভারতবাঁসীদের | কোন মন্ত্রে হৃতদেহে প্রাণ সঞ্চার করবে তারা--.কবি সেই নির্দেশটুকুও দিয়েছেন,-_ আর্য-বীর্য-ভজ্ম মাথি কলেবরে, স্বতি মহামালা জপ অনিবার, ত্রাহি মে ভৈরবি !--ডাক উচ্চস্বরে, সাধ মহামস্ত্র--ভারত উদ্ধার | [এ] বামাচারী সাধকের প্রয়োজন অনুভব করেছেন কবি কিন্তু মোক্ষলাভের প্রশ্নটি তাকে ব্যাকুল করেনি--তিনি জানেন, পরাধীন ভারতের মোক্ষ তার হত স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা। স্বাধীনতা আকাজ্ষা যে দেশের মানুষকে অস্থির করেছে তাদের ধর্মীর্-কাম-মোক্ষ বলে আলাদা কিছু থাকতে পারে না,-কবির অভিমত এটি “আমার সঙ্গীত” কবিতায় এই চিন্তাটিই প্রাধান্য পেয়েছে ; পরাধীন ভারতের সঙ্গীতই কবির সঙ্গীত ব্যক্তিচিস্তার স্থান জাতীয় চিন্তার মাঝখানে কি ভাবে হারিয়ে যায়-_ জাতীয়সঙ্গীতই দেশপ্রেমিকের কাছে আত্মসঙ্গীত হয়ে ওঠে কি ভাবে “আমার সঙ্গীতে সে সত্য ধরা পড়েছে, গর্জে ছিল এই সঙ্গীত আমার, পাঞ্চজন্ে মহাকুরুক্ষেত্র-রণে, শিঞ্জিনী-শিঞ্রনে, অস্ত্রের ঝঞ্জনে, রথের ঘর্থরে, ঘোর সিংহনাদে সেই সঙ্গীতের হইয়াছে, হায় ! শেষ তান লয় “চিলেন ওয়ালায় ? [ আমার সঙ্গীত] জালিয়ান ওয়ালাবাগের এতিহাঁসিক প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে কবি তার গানের যথার্থ অর্থটি প্রকাশ করেছেন সে যুগের ভারতবাঁপীর সামনে জালিয়ানওয়াল৷ বাগের ঘটনাটি স্মরণ করিয়ে দেবার চেষ্টা করেছিলেন কবি,_যে ঘটনার আলোকে জড়ত্বজীবী ভারতবাঁসী স্বরূপ বিচার করতে শিখেছে ভবিষ্যতের উত্তেজন] স্থট্টিতে ঘটনাটির অসামান্য অবদীন রয়েছে। মৃত ভারতের আত্মাকে পুনর্জীবিত করতে হলে ষে সঙ্গীত সাধনার প্রয়োজন তাতে বীররসের আধিক্য থাকবে, সে সঙ্গীত অবশ্যই বীরসঙ্গীত হবে। কিন্তু নির্জীব দেশবাসীকে জাগাবার দায়িত্ব নিয়ে কবির মনে হতাশাই জেগে উঠেছে, _ ভন্মরাশিময় আজি ভারত, কে শুনিবে বীর-সঙ্গীত আমার,

কাব্য ৩৭৯

কি আছে ভারতে, গাইবে যে কবি, ঢালিয়া অমৃত ভগ্মের ভিতর ? [এ] কোনো প্রস্তুতির আভাস না পেয়েই কবির মনে বিষাদ ভাঁবটি মুখ্য হয়ে উঠেছে কারণ দেশচেতনার স্ফুলিঙ্টি নানা অন্তরে জ্বালিয়ে দেবার একান্ত ইচ্ছাই যেখানে মুখ্য-_অসাঁফল্যের আঘাত সেখানে অসহনীয় হয়ে দেখা দেয়। স্বাধীন চেতন স্বজনের উপযুক্ত সঙ্গীত রচনা করাই যে নবীনচন্দ্রের একান্ত অভিলাষ তাও কবি ব্যক্ত করেছেন,_ শুনিয়া সঙ্গীত নাঁচিবে নির্জীব মহীরুহচয় ভুত আস্ফাঁলিয়া জাগিবে পাষাণ ; গঞজিবে জীমৃত ) বনে দাবানল উঠিবে জলিয়া | [এ] আসন্ন বিপ্রবের প্রতিধবনি যে কবির অন্তরে স্পন্দন সৃষ্টি করেছে তার স্পষ্ট ইঙ্গিত এখানে ধর! পড়েছে স্বাধীনতার গান যদি নির্জীবকে প্রাণময় করে তুলতে না পারে তবে সব আয়োজনই যে ব্যর্থ হতে বাধ্য আগামী দিনের ভাবী বিপ্লবকে যারা ত্বরান্বিত করতে পেরেছিলেন স্বদেশপ্রেমী কবি নবীনচন্দ্র তাদের অন্যতম। বিদ্ধৃতা বিদায়” কবিতায় দেশপ্রাণ কবি উচ্ছুসিত হয়ে আত্মপ্রশংসাঁবাশী উচ্চারণ করেন-_দেশ ভাবনায় একাগ্রচিত্ত কবির বিচারে সত্য সদ! প্রকাশ্য আত্মমগ্র--ভগ্র মন কবি বালুকাবেলায় দেখা পেলেন দেশজননীর | স্থকঠিন আত্ম- দানের শক্তি পরীক্ষায় কবি অনায়াসে উত্তীর্ণ হতে চান- কারণ শক্তি সাহসই ত্বকে নির্ভীক করেছে-_ জন্মভূমি, কেন মাতা দেখা দিলে ফিরে ? হৃদয়ের রক্তে অঙ্গ আঁসিনু মাখিয়া, বালা রক্তিম করে তাহা অভিষিয়। আসিলে কি দেখাইতে 1 পরীক্ষিতে আর এখনে! বহিছে কি না শোনিতের ধার-_ হৃদয় হইতে বেগে? দেশোদ্ধারের স্বপ্নটি সার্থক করতে হলে শক্তি পরীক্ষার অবতীর্ণ হতে হবে, শক্তিমানই স্বাধীনতার সাঁধ পূর্ণমাত্রায় লাভ করতে পারে-_-এ বিশ্বীসটি নবীন কবির চিত্তে দৃঢ়বদ্ধ হয়েছিল নিছক বাক্যবল যে আমাদের ঈপ্দিত স্বাধীনতা এনে দেবে না, বিংশ শতাবীর প্রারস্ত লগ্নেরও কিছু আগে সে যুগের মানুষ সত্য মনেপ্রাণে

৩৮০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

বুঝেছিল | নবীনচন্দ্রের স্বদেশাত্মক কবিতার একটি বিশেষ অংশে চিন্তা গ্রাধান্ত লাভ করেছিল “চিহ্নিত সুহৃদ” নামক কবিতাঁটিতেও স্পষ্টভাবে বাহুবলের শিক্ষালাভের আশু প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গ উখবাপন করেছেন কবি। কবিতাতে কবি স্বকীয় মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছেন,-কবির অন্তরে যে বিক্ষু স্বদেশচিন্তা গর্জন করে উঠেছিল--সে পরিচয় প্রসঙ্গে তিনি ঘোষণ! করেছেন, __ বহিছে, বহিবে, যতদিন শেষবিল্দ্ব হৃদয়ে রহিবে রক্ষিতে পরের প্রাণ আপনার প্রাণ এখনে। অপিতে পারি তৃণের সমান [ বন্ধুতা বিদায় ] অবশ্য কার্যক্ষেত্রে সত্য প্রমাণের প্রয়োজন হয় নি তবে কাব্য ক্ষেত্রে এমন ওজন্বিনী বক্তব্যের মূল্য অনস্বীকার্য বিশ্বাসঘাতক, ভীরু, দেশবাসীদের স্বরূপ উদ্ঘাটনের চেষ্টাও রয়েছে,_ যারা গৌরাঙ্গের ক্কপা-কটাঁক্ষের তরে, বিশ্বাস, বন্ধুতা, সব বিনিময় করে, বলিও তাদেরে মাতা, বলিও নিশ্চয়, -- উচ্চতর রক্তশৌত ধমনীতে ধরি, নীচত্বের মন্তকেতে পদাঘাত করি [এ] বক্তব্য আশ্ফালনের মত শোনায় বটে-_কিস্তু দৃঢ়তার-_নির্ভীকতার বানীও এতেই ধ্বনিত হচ্ছে। স্বার্থশুন্ত দেশানুরাগের অভিমান কবিচিত্তে প্রবল বলেই নীচতাকে নগ্রভাবে আক্রমণের শক্তি তিনি অর্জন করেছিলেন নবীনচন্দ্র জলন্ত দেশপ্রীতির শক্তি অনুভব করেছিলেদ মর্মে মর্মে, তাই অভীক বীরের মত অকু বক্তব্য প্রকাশেও তিনি দ্বিধাহীন ছুঃখাভিসিক্ত মর্ধদীহের চিত্রটিও তিনি অনায়াসে তুলে ধরেন,__ দাসত্বচক্রের হায় দৃঢ় নিম্পেষণে, উচ্চ আশা আমাদের হৃদয় হইতে করিয়াছে তিরোধান, ঘোর হিম স্বার্থ জ্ঞান হৃজিয়াছে সেই স্থলে, স্বজাতি, স্বদেশ,-_ আমাদের উপকথা, প্রলাপ বিশেষ [এ] স্বাধীনতা হারানোর শোক বোধকরি তত মর্মান্তিক নয় যতটা তীত্র চারিত্রিক শৌর্যাবীর্য-পরাক্রম বিনষ্ট হওয়ার হুংখ। কারণ স্বাধীনতা একটি মানসিক আনন্দজনিত

কাব্য ৩৮১,

অনুভূৃতিমাত্র,_-তার জন্য যে অভাববোধ,_-তার জন্ম মানুষের অন্তঃকরণে, তার অভিব্যক্তিটুকুও মানসিক | সুতরাং স্বাধীনতাবিহীন একটি জাতিকে যতদিন নিলিপ্ত উদাসীনতার সঙ্গে আপোষ করতে দেখি-__তাঁর জন্য ছুঃখবোঁধ না করে পারিনে,_- কিন্ত আত্মশক্তিতে ভর দিয়ে যে জাতি দাড়িয়েছে তাঁর দিকে সতৃষ্ণ নয়নে তাকিয়ে থাকি। স্বাধীনতা হীরানোর দুঃখ নিয়ে শোকগাঁথা রচনার যুগ পেরিয়ে নবীনচন্দ্রের কবিতায় আমরা ভবিষ্ততের কর্মপন্থা নির্ধারণের চেষ্টা দেখেছিলাম,_-এ সত্যটিই কবিতাটিতে ইতস্তত ছড়িয়ে আছে। ভবিষ্যতের সশস্ত্র উ্থানের আভাষ এমনি করেই অম্পষ্টালোকে সব কবিতায় ধরা পড়েছিলো, বস্কিমচন্ত্রের রোম্যান্সধর্মী, অর্ধ ইতিহাঁসান্্গ উপন্যাঁসে বার বাঁর এই প্রত্যাশাটিই ঘুরেফিরে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সত্যকারের ভবিষ্যতে কিভাবে সংগ্রাম সত্যায়িত হলো তথ্য না জেনেও নবীনচন্দ্র বুঝেছিলেন আত্মদীনের শপথ নেবার সময় আসন্নপ্রায় |

“অবকাঁশ রঞ্রিনীর” খণ্ড কবিতায় ইতস্তত যা আঁকীর্ণ, স্বদেশাত্মক একটি কাব্যের মধ্যে তা আরও সুস্পষ্ট বক্তব্যে পরিণত হয়েছিল, -স কাঁব্যটির নাম “রঙ্গমতী কাব্য”। 'রঙ্গমতী কাব্য রচনার বনুপূর্বেই স্বদেশপ্রেমিকরূপে নবীনচন্ত্র জনসাধারণ্যে স্থপরিচিত-সম্বধিত। কাব্যরচনার প্রথম পর্বে জনসমাদর আশাতীত সমর্থন কবিমাত্রকেই বিচলিত করে.__নবীনচন্দ্রও বিচলিত হয়েছিলেন ? পলাশীর যুন্ধ' কবিকে যে প্রতিষ্ঠা এনে দিয়েছিলো, - নবীনচন্দ্রের জবানিতেই তা বোঝা যায়--

১৮৭৬ গ্রীষ্টাব্দে আমি চট্টগ্রাম কমিশনরের পার্শন্তাল এসিস্টেপ্ট হইবার অব্যবহিত পরেই, স্মরণ হয়, আমীর “পলাশীর যুদ্ধ” প্রকাশিত হয় তাহাতে দেশব্যাপী যেরূপ আন্দোলন উঠে, এবং যেরূপ আগ্রহের সহিত প্রকাশ হইবামাত্র উহা] "্যাঁশন্যাল" রঙ্গ- ভূমিতে অভিনীত হইতে আরম্ত হয়, তাহা কেবল আমার আশাতীত নহে, স্বপ্রীতীত। তাহাতে উৎসাহিত হইয়৷ কিছুদিন পরে "রঙ্গমতী” লিখিতে আরন্ত করি

| আমার জীবন-_রঙ্গমতী কাব্য ]

স্পষ্টতই বোঝ যায় স্বদেশ ভাবনার অভাবনীয় সিদ্ধিই নবীনচন্দ্রকে 'রঙ্গমতী' লেখাঁর প্রেরণা এনে দিয়েছিল দেশপ্রেমিকতা অন্য কাব্যে বা কবিতায় পরিবেশিত হয়েছে ষে কারণে রঙ্গমতীর মধ্যে তা সযত্বারোপিত অর্থাৎ পরিকল্পন। করে, ছক বেঁধে কবি স্বদেশপ্রেমের আদর্শটি কাব্যে তুলে ধরবেন-_-এমন চিন্তা তিনি মুহূর্তের জন্যও ভোলেননি “পলাশীর যুদ্ধ' রচনাকালে দিধা-সংশয় আদর্শের মধ্যে দৌলায়িত কবিচিত্তের হক্ স্তরগুলি আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে কিন্তু রঙ্গমতী' নবীনচন্দ্রের নিশ্চিন্ত মানসিকতার যোগফলমাত্র দেশপ্রেমের ভবিষ্যৎ রূপ কবি যেভাবে চিন্তা করেছিলেন-_“রজমতী' নামক কাব্যটিতে ত৷ স্ষত্রসিদ্বরূপে প্রমাণ,

৩৮২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

করার চেষ্ট1! করেছেন। রঙ্গমতীর কোমল অংকেই কবির শৈশব কৈশোর অতি বাহিত, সৌন্দর্য্যের অমরাপুরী--শৈলশিখরিনী ভূমিতেই কবি কল্পিত ঘটনাটি ঘটেছে নায়ক বীরেন্দ্র অনৃষ্টতাড়িত হয়েও শেষপর্যন্ত রঙ্গমতীর কোমল অংকেই শেষ বিশ্রাম লাভ করেছে। রঙ্গমতীর নদীতীর, কানন, গিরি, বন, দেবমন্দিরই ঘটনাস্থলরূপে পরিকল্পিত। বস্তত: রঙ্গমতীর প্রতি মুগ্ধতক্তের দৃষ্টি নিয়েই কবি দুকপাঁত করেছিলেন ঘটনা কাহিনী এসেছে স্বদেশচিন্তার আবিষ্টতা থেকে। সতরাং কাব্যে স্বদেশপ্রেম জন্মভূমিপ্রেম একাকার হয়ে গেছে ঘটনাটির উত্তাবনায় স্বদেশপ্রেমের প্রভাব পূর্ণমাত্রায় বিছ্বমান, অন্যদিকে নীলিম সমুদ্র আকাশের কোলে প্ররুতিকন্তা রঙ্গমতীর অবারিত সোন্দর্যস্বপ্ন কবিকে আবিষ্ট করে রেখেছে দেশভাবনা কবিভাবনাঁর ছন্দায়িত রূপই রঙ্গমতী কাব্যের জম্ম- দিয়েছে কোন কোন সমালোচক অবশ্য একটি দিক সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ করে কবির স্বদেশভাঁবনার অপরূপ নিদর্শন হিসেবে কাব্যের বিচার করেছেন। জ্রীশশাঙ্কমোহন সেন লিখেছেন,

'রঙ্গমতীতে এই অধঃপতিত জাতির নিপীড়িত কবিহৃদয় স্বাধীনতা লোকপাঁবনী মৃতির দিকে সতৃষণ দৃষ্টিনিক্ষেপ করিয়া কাদিতেছে, স্বদেশের, স্বজাতির বর্তমান ছুরবস্থ! পরিদর্শন করিয়া আকুলতায় অক্র বিসর্জন করিয়াছে ।”৪২

স্বদেশচিন্তার কাব্যশরীর গঠন করতে গিয়ে কবি একটি মৌলিক কাহিনী নিবেদন করেছেন কাব্যে। স্বপ্নবৃত্বান্ত হিসেবেই মূল কাহিনীর পরিচয় দেওয়' হয়েছে_শেষের পংক্তিটি না থাকলে সে কথা বোঝাই দুর হত পাঠকের পক্ষে আর যেহেতু স্বপ্ন জৈবজীবনের অপ্রকাশ্য চিস্তারই ফলাফলমাব্র সুতরাং কাহিনী রচনায় যে অসঙ্গতি অসম্ভাব্যতা রয়েছে তার সম্বন্ধে প্রশ্ন তোলা যায় না। নায়ক বীরেন্দ্র ব্যক্তিগত চিন্তাধারার ধারাবাহিক আলোচনা থেকেই কবির স্বদেশচিস্তার স্বরূপটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে বলেই চরিত্রটির সমালোচনাই কাব্যের একমাত্র আলোচ্য বস্ত। স্বদেশপ্রেমিক বীরেন্দ্র চরিত্রের মধ্যেই অষ্টা নবীনচন্দ্রের কল্পিত আদর্শ নায়কের সংজ্ঞ! প্রতিফলিত নবীনচন্দ্র নিজেও জন্ম- ভূমির মুগ্ধপ্রেমিক, বীরেন্দ্র চরিত্র রচনার মধ্যে তার বাক্তি জীবনের এই মুগ্ধতা সঞ্চারিত হয়েছে নান! নাটকীয় ঘটনার সংঘাতে রজমতীর আদর্শ পুরুষ বীরেক্্ সমগ্র হিন্দু জাতি, আর্যসংক্কতির প্রতিই অনুরক্ত হয়ে পড়ে,__স্বদেশের স্বাধীনতা রক্ষার মহৎচিন্তাই তার ধ্যানের বস্তরূপে দেখা দেয়। “রঙ্গমতী কাব্যের” সর্গ বিভাগে কবি যে কল্পনার আশ্রয় নিয়েছেন তা অত্যন্ত ব্যঞরনাময়। নদীতীরে, কাননে, ৪২, শশান্বমোহন সেন, বঙ্গবাসী, 'রঙ্গমতী' সম্বন্ধে আলোচনা

কাব্য ৩৮৩

চন্দ্রশেখরে, রঙ্গমতীবনে, রঙ্গমতী দেবমন্দিরে, গিরিশিখরে কাব্যের ৬টি সর্গের ঘটনাস্থল রঙগমতীর প্রকৃতি বর্ণনার পূর্ণ হযোগ কবি পেয়েছেন__কাহিনী আবতিত হয়েছে এই প্রাকাতিক আবেষ্টনীর মধ্যেই রঙ্গমতীর গৌরব রবিরূপেই কবি বীরেন্দ্র চরিত্রটি কল্পনা করেছেন। ভাগ্যতাড়িত

বীরেন্দ্র বাল্যে মাতা পরিত্যক্ত, কৈশোরে জন্মভূমি পরিত্যক্ত দ্বিতীয় সর্গে আত্ম- পরিচয় প্রসঙ্গে বীরেন্দ্র আক্ষেপ করেছে,

ছিল না জননী মম, ছিল জন্মভূমি,

ছাঁড়িলাম তাও এই দ্বাবিংশ বয়সে

হায় হতভাগ্য আমি |

আছে কি মানব হেন রি ভূমগ্ডলে, দেবি, হায় রে যাহার, তেয়াগিতে জন্মভূমি, না কাদে পরাণ ? [ দ্বিতীয় সর্গ ] এই জন্মভূমিপ্রীতিই বীরেন্দ্র চরিত্রে মুখ্য হয়ে দেখা দিয়েছে রঙগমতীপ্রেমিক বীরেন্দ্র মাতার সন্ধানে বারাণসী ধামে এসেছে, মণিকণিকার ঘাটে নিরুদ্দেশ মাতার স্বৃতিতর্পণ শেষে যে অনুভূতি তার সমস্ত অন্তরকে ঢেকে ফেলেছে- সেটি কিন্তু আরও ভাবগ্ভোতক | জম্জগ্র আর্ধভূমির পদানত রূপ বীরেন্দ্রের সামনে ফুটে ওঠে নিতান্ত ব্যক্তিগত শোক দুঃখ তখন অন্তহিত,_ব্যর্থকাম বীরেন্ত্র দেশজননীর চিন্তায় মগ্র,__ হায় মাতঃ আর্ধতূমি! বিদরে হৃদয়,

হারায়েছ তুমি আর্য-_স্বাধীনতা৷ ধন,

আর্ষের বিক্রম, আর্য-গৌরব-জীবন,

হল্তিনা অযোধ্যা তব হয়েছে স্বপন |

আর্য-ধর্ষ-জ্যোতি প্রায় আচ্ছন্ন তিমিরে | কেবল রয়েছে মাতঃ হাদয়ে তোমার হায়! এই অনির্বাণ আর্য-_চিতানল। [ দ্বিতীয়সর্গ ] দেশপ্রেম বীরেন্দ্রহদয়ের কত গভীরে স্থান লাভ করেছে উদ্ধৃত উক্ভিই তার যথেষ্ট প্রমাণ মাতৃপরিত্যক্ত, জন্মভূমির ন্েহবঞ্চিত বীরেন্দ্র চরিত্রে বৃহত্তর দেশভাবনা এসেছে জীবনবৈরাগ্য থেকে ব্যক্তিগত চিন্তার হাত থেকে মুক্তি পেয়েই বৃহৎ আত্মত্যাগের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে পেরেছে সে। বাীরত্বপুর্ণ উক্তিই তার প্রমাণ__

ভারত বীরত্ব বিনা হবে ন। উদ্ধার |

৩৮৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে দেশপ্রেম

কিন্ত সে অনন্ত সিন্ধু, বারিবিদ্দ্ আমি,

কোথায় পাইব সেই সিঙ্ধু পরাক্রম ?

তথাপি মিশিতে সেই সাগর- সলিলে,

মরিতে বীরের মত, করিলাম পণ | [দ্বিতীয় সর্গ

স্তরাং আত্মত্যাগের পণ নিয়েই দেশজননীর শৃঙ্খলমোচনের আহ্বানে সাড়া

দিল বীরেন্ত্র। আপাততঃ মোঘল সৈন্যদলেই স্থান করে নিল সে। দেশপ্রেমিক নবীনচন্দ্র ষে কাব্যের নায়কচরিত্রে আত্মত্যাগে নির্ভীক একটি অকুতোভয় দেশ- প্রেমিকেই বরণ করে নেবেন-_ এতে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই। “পলাশীর যুদ্ধের” মত ইতিহাস ভিত্তিক কাব্যে দেশপ্রেমের অবতারণা করে নবীনচন্ত্র যে অভাবনীয় সিদ্ধি লাভ করেছিলেন--সেই উৎসাহের আবেগ থেকেই “রঙ্গমতীর” জন্ম সুতরাং কবির দেশানুরাগ উচ্ছুসিত অন্তর থেকেই 'রঙ্গমতী কাব্যের দেশপ্রেমী নায়ক বীরেন্দ্রের জন্ম “পলাশীর যুদ্ধে” ঘটন। চরিত্র রচনার স্বাধীনতা ছিল না--“রঙ্গমতী কাব্যে” কবি সে স্ুযোৌগটিরও সদ্যবহার করেছেন বীরেন্দ্র দেশচিস্তায় এতই মগ্ন যে দেশোদ্ধারের আপাত: কোন উপায় না দেখে দিল্লীশবরের সৈম্যদলেই যোগ দিয়েছিল সে,-_কিস্ত ঘটনাচক্র আবতিত হল। দিল্লীশ্বরের সৈন্যরূপে দাক্ষিণাত্য বিজয়ে অংশগ্রহণ কালেই শিবাজীর হাতে ধৃত হল বীরেন্দ্র। ঘটনার এই আকম্ষিকতায় অবাক হবার চেয়ে নধীনচন্দ্রের দেশপ্রেম চিত্তার অভিনবত্বে মুগ্ধ হতে হয়। নবীনচন্ত্র ইতিহাঁসের বিস্ময়, দেশপ্রেমের মূর্তপ্রতীক শিবাজী চরিত্রটি রচনার এক অভাবনীয় স্বযোগ লাভ করলেন। নিঃসন্দেহে দেশপ্রেমী কবির কল্পনায় শিবাজী চরিত্র এক নতুন মহিমায় উদতাসিত হয়ে উঠবে | হয়েছেও তাই বীরেন্্র শিবাজীর কাছে দেশপ্রেমের দীক্ষা নিয়েছে--পরিবর্তে নবীনচন্দ্র শিবাজীর মুখে একটি দীর্ঘ দেশাত্ম- বোধের বক্তৃতা আরোপ করেছেল। রঙ্গমতী কাব্যের শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমযূলক অংশ হিসেবেই শিবাঁজীর বক্তৃতাটি গণ্য হবে ভারতের পরাধীনতা৷ আর্য জীতির কলঙ্ক শিবাজীর অগ্নিগর্ভ বাণীতে ক্ষোভ-ছুঃখ-বিদ্বেষ একই সঙ্গে প্রকাশ পেয়েছে,_-

আর্ষের সন্তান মোর] হায় আমাদের

অদৃষ্টে দাসত্বলিপি লিখিলা বিধাতা

বীরেন্দ্র! বীরেন্দ্র! করে এই করবাল থাকিতে কেমনে, হায় ! থাকিতে কেমনে বিন্দুমাত্র আর্ধরক্ত শিবজী শরীরে, সহিব অপমাঁন ? চল যাই সবে

কাব্য ৩৮৫

ওই নীলাচল শিলা বাঁধিয়া গলায়,

ঝাঁপ দিয়। সিস্কুজলে, হায়রে ! ডুবাই

এই আর্য নাম, এই তীব্র পরিতাঁপ

অন্তথ| কপাণ-করে চল যাই রণে,

স্বজাতির, স্বদেশের, স্বধর্ষের তরে,

নিবাই কপাণ তৃষা, যবন শোনিতে | [এ]

বীরশ্রেষ্ঠ শিবাজীর স্বাধীনচেতনা আমাদের হতিহাঁসের গর্বের বস্তু স্বাধীন

চেতনার জাগরণ মুহূর্তে নবীনচন্দ্র এতিহাসিক এই পুজনীয় চরিত্রটিকে আমাদের সামনে তুলে ধরেছিলেন বলেই আমাদের শ্রদ্ধা পাবেন। এতিহাসিক কাব্য নয় বলেই শিবাজী চরিব্রটির আরোপ এখানে খানিকটা অসঙ্গতিময় হয়েছে সন্দেহ নেই কিন্ত তাঁতে শিবাজী চরিত্রের মর্যাদাহানি হয় না। নবীনচন্দ্র স্বাধীনচেত। শিবাজীর বজ্জনির্ঘোষ সদর্প আত্মঘোষণার প্রসঙ্গ অবতারণ! করে এঁতিহাঁসিক সত্যকেই প্রোজ্ল করেছেন! বীরেন্দ্রকে দেশপ্রেমে দীক্ষিত করার পরিকল্পনাঁটিকে একটু ইতিহাসঘে'ষ1! করে নবীনচন্দ্র শুধু একটি মহৎ আদর্শকেই রূপায়িত করেননি,_-সেই আদর্শের সার্থক প্রতিফলন দেখানোর চেষ্টা করেছেন শিবাঁজীর মহৎ আদর্শ একদিন সমগ্র দাক্ষিণাত্যবাসীকেই সংগ্রামশক্তি দান করেছিল,_-নবীনচন্দ্র এই আদর্শ সমগ্র ভারতে সঞ্চারিত করেছেন কাব্যের মাধ্যমে | শিবাজীর বিদ্রোহ শুধু একটি অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ ছিল,_-নবীন কবির কক্পনায় সদর পুর্বদেশের অজ্ঞাত অঞ্চলগুলিতেও এই আদর্শ কিভাবে বিস্তারিত হয়েছিল তারই বর্ণনা আছে। বীরেন্দ্র দেশপ্রেমাদর্শকেই জীবনে বরণ করেছে,-শিবাঁজীর উদ্দীপ্ত বাণী তাকে প্রেরণ। দিয়েছে শিবাঁজীর উল্লেখযোগ্য উক্তি,

বীরেন্্র! জান কি তুমি সোনার ভারত-

বর্ষ আছিল কাহার ? সেই রাজ্য হায়!

কোন ধর্মনীতি বলে পেয়েছে যবন ?

ঘোরি, গিজ.নি, ছিল কি হে ধর্মের যাজক ?

দত্থ্যত্ব, দশ্ত্যত্ব-বলে ভারতে যবন

করিয়াছে আধিপত্য দস্্যত্বে সে রাজ্য

আঁজি করিছে শাসন দোর্দও প্রতাপে

কি পাপ, দস্্যত্বে তবে করিতে হরণ ?

বীরেন্দ্র, দাসত্ব হতে দস্থ্যত্ব উত্তম !

যেই মহামন্ত্রে আমি হয়েছি দীক্ষিত,

ত্৫

২৮৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

“ভারতের স্বাধীনতা-মহারাষ্ী জয় ! সাধিব মন্ত্র আমি [এ] এই বীরত্বব্যঞ্নক অংশগুলি “রন্গমতী কাব্যের সম্পদ | ঘটনাংশ, ভাষ। ছন্দ বিশেষত্বহীন, চরিত্র রচনায় ব্যর্থ কাব্যে দেশাত্মবোধক এই পংক্তিগুলি নবীনচন্দ্রের দেশপ্রেমিকতার আন্তরিক দান পূর্ববর্তী কাব্যে যে দেশচেতনাকে বিভিন্ন ভাব ভাষায় কবি রূপদান করেছিলেন কাব্যে তারই ঘনীত্তৃত রূপ বর্তমান কাব্যাংশে উৎকৃষ্ট না হলেও শিবাঁজীচরিত্র রচনায় তিনি যুগোচিত সাম্যের পরিচয় দিয়েছেন শিবাজীর সাগ্রিক দেশ উপাসনার নিদর্শন হিসেবেই কবি অংশটি রচনা করেছিলেন -_ এর পরিকল্পনা রূপদানের মূলে যে আশাতীত অভিনবত্ব রয়েছে তাতে সন্দেহ নেই

'রঙ্গমতী কাবোর' যথার্থ দেশাত্মবোৌধক অংশটির সঙ্গে মূল ঘটন! চরিত্রের যোগ কম, এটাই সম্ভবতঃ কাব্যের রচনার দুর্বল দিক নায়ক কীরেন্দ্রের দেশপ্রেমের বিকাঁশপর্বটি শিবাঁজী প্রভাবিত বলেই উজ্জবলতর,__-অন্থাত্র বীরেন্দ্র শিষ্যোচিত শৌর্য- শক্তি সাহসের পরিচয় দেবার চেষ্টা করেও কবির রচনাদোষেই নিশ্রভ-অবাস্তব | ঘটনা পরিবেশনের যূলে বাস্তবতা, স্বাভাবিকত্ব সৌন্দর্য হৃজনের ষে সুষ্ঠু প্রয়াসটি থাকা দরকার কোথাও আন্তরিকতার সঙ্গে তা পাঁলিত হয়নি ন্তরাং শিবাঁজীর সাক্ষাৎ শিষ্য বীরেন্দ্র সর্বত্র দেশপ্রেমিকোচিত শক্তিতে ভাম্বর হয়নি--কষ্ট কল্পনার চাপে বীরেন্দ্রের আদর্শই ম্লান হয়ে গেছে।

বীরেন দেশপ্রেমের দীক্ষালাভান্তে রঙ্গমতীতে ফিরে এসেছে, নাটকীয় ঘটনাক্রোতে দেশপ্রেমের ক্ষরণ ঘটেছে সঙ্গে সঙ্গেই দহ্থয বেঞ্জামিনকে বীরেন্দের প্রত্যক্ষ শত্র হিসেবে আবিষ্ণার করেছেন কবি উভয়ের আদ্ফালনে বীরত্বের, দত্তের যথোচিত প্রকাশ দেখি যার সঙ্গে দেশপ্রেমের যোগ নিতান্তই কম। দেশচেতনা নিছক বীরত্ব প্রকাশ মাত্র নয়। কিন্তু ছ্ৈত সংগ্রামে বেঞ্জামিনকে পরাভূত করেছে স্বদেশণ্েষী বীরেন্দ্র শিবাঁজীর আতত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বীরেন্দ্র স্বচক্ষে দেখে এসেছে - সেই উজ্জ্বল দেশচিন্তা তাঁর অন্তরেও দীপ্যমান,_

ভাবিতেছে মনে, কতদিনে শিবাজীর সমর-প্রবাহ উত্তরিবে সিংহনাদে বিন্ধ্যাচল হতে সমতল বঙ্গভূমে, ওই প্রপাতের মত, কতদিনে মহারাহ্্রীয় কেতন উড়িবে গরবে বঙ্গে_ স্বাধীন সোহাগে,

কাব্য ৩৮৭

আবার হাঁসিবে বঙ্গ, বিধি শোণিতে _- নিবাইবে মনস্তাঁপ | [ চতুর্থ সর্গ, রজমতী ] বীরেন্দ্র আত্মচিন্তার মীঝখানেও দেশোদ্ধারের স্বপ্ন দেখে, শিবাঁজীর আদর্শই তার আলোক সমুদ্র তাই আর্যঅরি বিতাড়নই আপাততঃ বীরেন্দ্রেরে একমাত্র চিন্তা | ঘটনাচক্রে যবনপক্ষে যোগ দিয়ে মগদহ্যর অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার চিন্তাটিই প্রবল হয়ে উঠেছে। পিতৃব্য মর্কট রায়ের আবেদন মগদস্থ্য বিতাড়ন করে চট্টগ্রামের শান্তি বজায় রাখা কিন্তু বীরেন্দ্রের স্বপ্ন আদর্শটি সে উচ্চারণ করেছে, যবন সাঁপক্ষে কিন্ত ধরিতে কৃপাঁণ নাহি সাধ, রণগুরু শিবজীর কাছে, ভারত উদ্ধার ত্রতে আর্ধ-অরিগণে কেবল নাশিতে পিত: করিয়াছি পণ চতুর্থ সর্গ ] স্বাধীন ভারতের কল্পনাই একদিন সুপ্ত সিংহ শিবাঁজীকে প্রেরণ। দিয়েছে যবন- নাশের ভারতের চিরন্তন শক্র এই যবন। বীরেন্দ্র গুরুর শিক্ষাকে কার্ষক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে গিয়ে দেখল প্রচণ্ড বাঁধা শক্র শুধু যবন নয়, বিদেশী দস্থ্যর লুখঠনে পোঁনার চট্টল অসহায় ভারত উদ্ধার ব্রত অনেক মহৎ হতে পারে কিন্তু জন্মভূমি চট্টলকে সমূহ বিপদ থেকে মুক্তি দেওয়ার ব্রত আরও পবিত্র দেশোদ্ধার ব্রত নিয়েও সংঘাতের মুখোমুখি হয়েছে বীরেন্দ্র যে শত্রকে বিনাশ করার জন্য শিবাজীর নির্দেশ মস্তকে ধারণ করেছে-_জন্মভূমির প্রয়োজনে তাকে বন্ধু বলেই গ্রহণ করতে হবে। যবন বিনাশের নয়_যবন স্বার্থেই জন্মভূমির জন্য যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার দিন এসেছে নবীনচন্দ্র বীরেন্দ্রের সামনে যে আদর্শ তুলে ধরেছেন তা ভারত উদ্ধার ব্রতের চেয়েও বড়ো পিতৃব্যের আদেশের মধ্যেও কিছু সত্যতা আছে। ভারত উদ্ধার ! ক্ষিপ্ত তুমি, ভারত উদ্ধার নহে বালকের ক্রীড়া! আজিও যবন বিশ্ধ্য হতে হিমীচল শাসিছে বিক্রমে, শিন্ধু ব্রহ্মপুত্র বহে পদচিহ্ন ধরি | শ্তি টলিবে কি হে তর্জনী হেলনে? ' জন্মভূমি ঘোর শির্ধযাতন সহিবে কেমনে ? বল, সহিবে কেমনে অসহায় অঙ্গনার সতীত্ব হরণ ? [ ষষ্ঠ সর্গ ] বীরেন্দ্র আদর্শঢ্যুত হয়েছে বটে কিন্তু ধর্মচ্যুত হয়নি দেশপ্রেমের মহান আদর্শেই জন্মভূমির সম্ভ্রম রক্ষার দাঁয়ত্ব মাথায় তুলে নিয়েছে সে। নবীনচন্দ্র শিবাজীর যবন

৩৮৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

বিনাঁশের সংগ্রামকে দেশপ্রেমের উত্তম আদর্শ বলেই প্রচার করেছেন কিন্তু বৃহত্তর ভারতের বৃহৎ বিচিত্র সমস্যা থেকে মুক্ত হবার আপাতঃ প্রয়াসটিও কম প্রশংসনীয় নয়। বীরেন্দ্র মাতৃভূমির আপাঁতঃ সমস্যাটি সমাধানের উদ্দেশ্যেই আরাকানী মগ- দহ্ধ্যদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেছিল মোঘল পক্ষ অবলম্বন না করলে হয়ত প্রত্যন্ত দেশের এই বিদেশী শক্তির অধীনতাঁকেই বরণ করে নিতে হবে নবীনচন্দ্র দীর্ঘ বর্ণনায় বীরেন্দ্রের সমর কৌশল স্বাধীনচেতনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন আদরশচ্যুত বীরেন্দ্র মোঘলশক্তিকে বিজয়ীর সম্মান অর্পণ করেছে বটে কিন্তু মোঘলপ্রসাদ ভোজী হতে পারেনি বঙ্গেশ্বরের প্রদত্ত সম্মান অবহেলাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে বীরেন্দ্র, "্যবনের দান” বলিলা সগর্বে যুবা-_বাঁধিয়। গলায় বরং উপলখণ্ড, কালিন্দীর নীরে দিব ঝাঁপ। শুনিয়াছ নিজকর্ণে তুমি, করিয়াছি কি প্রতিজ্ঞা শিবাজীর কাছে নাহি বহুদিন আর, জলেছে আবার দাক্ষিণাত্যে শিবাজীর সমর অনল পুড়িছে পতঙ্গ মত বিধর্মী যবন। ভারত-দাসত্ব-পাশ ভম্মশেষ প্রায় সে তীব্র অনল তাপে,_বিধি অন্থকূল। নাহি বহুদিন আর, সেই বহি শিখা বঙ্গের পশ্চিম প্রান্তে দেখা দিবে ষবে, ভক্মিয়! মোঘল রাজ্য, জালি ভীমানল পূরব অচলশিরে, দিব আঁবাঁহন সেই বীর বৈশ্বীনরে | [ষষ্ঠ সর্গ] শিবাজী প্রদশিত স্বাধীনতার আদর্শেই বীরেন্দ্র দেশোদ্ধারের স্বপ্ন দেখেছে, যবন শক্তির অবসানের সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণে- আসমুদ্র হিমাচল এক অখণ্ড স্বাধীন হিন্দুরাজত্ব স্থাপনই বীরেন্ত্রেরে উদ্দেশ্য | শিবাঁজীর যবন বিরোধিতার মূলে স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার স্বপ্রটি উনবিংশ শতাববীর কবি নবীনচন্ত্ রঙ্গমতীতে ব্যাখ্যা করেছেন এবং প্রমাণ করেছিলেন যে পূর্বদেশের কোন এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের জমিদার পুত্র বীরেন্্র এই আদর্শের স্বপ্ন দেখেছিলেন কল্পনায় বিশালত্ব অশছে, কিন্ত নিছক কাব্যের বিষয় বলেই নবীনচন্ত্র কাহিনী উথাঁপন করেছেন এতিহাসিক চরিত্র কোন কাল্লনিক চরিত্রকে কি ভাবে প্রভাবিত করেন তাঁরও দৃষ্টান্ত

কাব্য ৩৮৯

'এ কাব্যটি। স্বদেশপ্রেমী নবীনচন্দ্র এই কল্পনানির্ভর কাব্যটিতেও আন্তরিক খেদে বলেছেন, ভারত সন্তান এত দীর্ঘ শিক্ষা পরে শিখিল ন। আজি, জাতিত্বের মহামন্ত্র, সর্বশক্তি মূল একতা [ ষষ্ঠ সর্গ] উনবিংশ শতাব্দীতে নবজাঁগরণের বাঁণী যখন ভারতের আত্মায় সঞ্চারিত হয়েছে তখনও অনৈক্যের প্রত্যক্ষ বাঁধা সমস্ত স্বপ্রের অন্তরায় হয়ে ফ্রাড়িয়েছিল। দেশপ্রেমের সুমহান আদর্শের চিত্র উদঘাটন করেই নবীনচন্দ্র যেন আগামী দিনের স্বপ্রসত্যকেই আবৃত্তি করেন "নাহি অন্য শক্র দ্বারে, জাতীয় উখ্বান নববিপ্লব স্রোত, রাখিতে ঠেলিয়] | আসে যদি এরাবত, নিবে ভাসাইয়া জননী জাহ্দবী মত 7% [ ষষ্ঠ সর্গ] জাগরণের কাহিনী কবি নবজাগরণের যুগেই শোৌনাবাঁর চেষ্টা করেছেন, অতীত ইতিহাসের সুমহান প্রচেষ্টাকে বর্তমানের পটভূমিকায় স্থাপন করে নবীনচন্ত্র যুগোপযোগী বাণীকেই প্রচার করেছেন। সেদিক থেকে নিছক কল্পনানির্ভর হলেও কাব্যের মধ্যে যুগসত্যের প্রতিফলন রয়েছে স্বদেশপ্রেমের বাঁণীই একদ1 দেশের একমাত্র উপলন্ধির বস্ত হয়ে উঠেছিল,_দেশপ্রেমিকতাই কবির কাব্যস্ষ্ির একমাত্র উপাদান রূপে গণ্য হোতো-__“রঙ্গমতী কাব্যের কবি নবীনচন্দ্র কাব্যটিতে যেন সেই সত্যটিই নতুন করে দেখালেশ। কাব্য হিসেবে এর মূল্য বিচার নিরর৫থক,_-অসংখ্য ত্রুটির বাঁধা সরিয়ে কাব্যের নিহিত ব্যঞ্জন! হয়ত কাব্যামোদীর কানে পৌছবে না কিন্তু দেশপ্রেমের প্রত্যক্ষ আবেদন &যে-কোন অসাবধানী পাঠককেও সচকিত করবে ছাড়াও “রঙ্গমতী” নবীনচন্ত্রের পথম মৌলিক কাব্য বলে কাব্যের মূল বাণী তাঁর আত্মৌপলদ্ধির বাণী। স্বদেশপ্রেমী কবি হিসেবেই নবীনচন্দ্রের প্রসিদ্ধি_এই স্বদেশ উপলদ্ধি তাঁর মৌল চিন্তাকেও গ্রাস করেছিল--এ কাব্য তারও প্রমীণ স্বদেশচিন্তার নাম গন্ধ বাংলা খণ্ড কবিতায় ছিল ন1 বলেই “অবকাশ রঞ্জিনীর' জন্ম, “পলাশীর যুদ্ধে” ভারত ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত রচনায় নবীনচন্ত্রের অভাবনীয় সাফল্য এবং ঠিক তার পরেই 'রঙ্ষমতী কাব্যে মৌলিক কক্পনার সাহায্যে স্বদ্দেশচেতনার উজ্জ্বল আঁদর্শ তুলে ধরাঁর সাহিত্যিক প্রয়াস স্বদেশীত্বক কাব্যধারার

০০৮০৮০০০১১১

৩৯০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

সমাপ্তিও “রঙ্গমতী কাব্যে” এই কাব্যেই প্রক্যবোধের অভাবে সমগ্র ভাঁরতে অখণ্ড হিন্দু স্বাধীনতার স্বপ্ন রচন। কি ভাবে ব্যর্থ হয়ে গেছে তারই কাহিনী পরিবেশিত হয়েছে। এর পরের পর্বেই নবীনচন্দ্রের বিখ্যাত ব্রক্ীকাব্যের' উন্মেষ লগ্ন। আধ্যাত্মিকতা প্রাচীন কাব্যসত্যকে যুক্তির আলোকে প্রতিষ্ঠার উনবিংশ শতকীয় প্রচেষ্টা শুরু হল।|। জীবনবোধের যে স্তরে স্বাধীনচেতনা আছে-_তার সাঁধিক আবেদন সর্বজনস্বীকুত-_বিশেষতঃ জাতীয় চেতনার মত গুরুত্বপূর্ণ উপলন্ধি যখন জোয়ারের আবেগে আমাদের মনে ঢেউ তুলেছে ঠিক সেই সময়ে নবীনচন্দ্রের স্বদেশাত্বক কাব্যগুলির বক্তব্য তাই অস্পষ্ট নয়, অশ্বচ্ছ নয়--কিন্তু বহুশ্রুতও নয় আবার স্বদেশচিন্তার আলোতেই কাব্য পাঠ কর। যেতে পারে কিন্তু পরের পর্বেই অধ্যাত্মসাধন৷ মগ্র নবীনচন্দ্র আরও মহত্তর বক্তব্য প্রচারে ব্যস্ত হলেন। স্বাধীন চেতনার প্রয়োজনেই দেশাত্মবোধক কাব্য রচনার আয়োজন-_কিস্তু বিষয়বস্তুর পুনরুক্তি সাহিত্যে যে ক্লাপ্তিবোধ আনে-- নবীশচন্দ্র বৌধহয় সে ব্যাপারে সজাগ ছিলেন নবীনচন্দ্রের শেষপর্বের রচনায় তাই ভিন্ন ক্র, ভিন্ন প্রসঙ্গ রঙ্গলাল থেকে হেমচন্দ্র, হেমচন্দ্র থেকে নবীনচন্দ্রের কাব্যে দেশাত্মবোধের আরোপ যেন প্রায়শই গতানুগতিক, বৈচিত্র্যহীনও বটে। আর্ধমহিমার স্মৃতির সঙ্গে উনবিংশ শতাব্দীর নবজাগ্রত বাঙ্গালীর অন্তরের যোগ স্থাপনের অক্লান্ত চেষ্টা করেছেন উল্লিখিত কবির] কিন্ত যত উচ্চাঙ্গের ভাবাদর্শহই হোক না কেন, প্রাণধারার সজীবতাঁর সঙ্গে এই ভাঁবগঙ্গার অতিপবিভ্র বারি যদি মেশাতে না পারি তবে সে চেষ্টা আন্তরিক হলেও ব্যর্থ চেষ্টারই নামান্তর আর্ধমহিমা, হিন্দুসংক্কার প্রসঙ্গ বারবার আলোচনা করে একটি বলিষ্ঠ প্রক্যবোধ জাতীয়তাঁচেতন। সঞ্চারে এর সত্যিই সমর্থ হয়েছিলেন__কিস্ত স্বাধীনতা পাবার সত্যিকারের পথটি নিভূর্ল ভাবে চিনিয়ে দেবার কৌশলটি কোথাও স্পষ্ট হয়নি হয়ত তখনও সে পথ রাজপথ হয়ে ওঠেনি-_মিছিলের কথস্বর কবির ক্রন্দনকে ছাপিয়ে ওঠেনি, আমাদের দাঁবীকে প্রতিষ্ঠা করার সংঘশক্তি তখন সৃষ্টি হয়নি। কিন্ত আর্চেতনার সক্কে এতিহাসিক দৃষ্টান্তের রাখীবন্ধন করে যুগের কবির! যে কথা বলতে চেয়েছিলেন অনেক অক্ষমতা সত্বেও তার বান দুর্বোধ্য হয়ে যায়নি "পলাশীর যুদ্ধের রানী ভবানী, মোহনলাল ব্যর্থ হয়নি, _-“রঙ্গমতীর” শিবাঁজী- বীরেন্দ্র অসার্থক নয়। এরা সবাই আমাদের স্থপ্তচেতনার ঘারে করাঁঘাত করেছে-__ . তার প্রত্যক্ষ ফলাফলও আমাদের অজানা নয়। কংগ্রেসের জন্মলাভি ১৯০৫ খুষ্টাব্ধে সমগ্র ভারত ব্যাপী দেশচেতনার যে বজ্হুঙ্কার শোনা যায়-_-ত1 কি অভাবিত অচিস্তিত কিছু? নবীনচন্দ্রের কাব্যধারার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের পর পরবর্তীযুগের স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনার উৎস যে কোথায় তা আর বুঝে নিতে অস্থবিধা হয় না।

পঞ্চম অধ্যায় নাটক

উনবিংশ শতাব্দীর যূল্যবান আবিঞ্ধারের মধ্যে নাটকের কথ! সর্বাগ্রে মনে পড়ে সংস্কৃত-উত্তরাধিকার হারিয়ে দ্িকচিহুহীন রসসবুদ্রে পাঁলা-নাট-গীতিনাট্য নিয়ে কালযাঁপনের একঘে য়েমী থেকে নাট্যশালা যেদিন আমাদের মুক্তি দিল-তা শুধু নাট্যরসিকের মনেই ঝড় তোলেনি এরই মধ্যে ভবিষ্যতের সোনালী দিনগুলোর স্বপ্ন দেখেছিল শিক্ষিত বিদগ্ধ-সমাজপ্রাণ বাঙ্গালী নাটক যে সমাজের দর্পণ, আগুন জাঁলানোর ইন্ধন, কুসংস্কারের জগ্রাল অপসারণের হাতিয়ার-__এ কথা বুঝতে দেরী হয়নি তাই জন্মলগ্রে আস্মোপলন্ধির নতুন বাণীকে রূপ দেবার একটা অভাবনীয় মাধ্যম হিসেবে নাটককে সে যুগের প্রতিভাবান মানুষের সাঁদরে বরণ করে নিয়েছিলেন নাটকের দুরবস্থা দেখে মধুস্দন যে খে.দান্তি করেছিলেন স্বদেশপ্রেমী কবিরাও দেশের জন্য, জাতির জন্য, পরাধীনতার জন্য এমন আত্তর ক্রন্দন শোনাতে পারেননি “অলীক কুনাট্যে রঙ্ধে” আকণ্ঠমগ্ন বঙ্গভারতীর পরম-অপমানকর দুরবস্থাটিকে মধুহ্ৃদন বরদীন্ত করতে পারেননি সেদিন মধুস্দন অতীতের সমৃদ্ধ ভারতবর্ষকে আহ্বান জানিয়েছিলেন, যে ভারতবর্ষের বুকে ব্যাঁস-বাল্সীকি- কালিদাস-ভবভূতির পদার্পণ ঘটেছিলো। রাষ্্ীয় স্বাধীনতার জন্য বিন্দুমাত্র ব্যাকুলতা ছিল না সেদিন কিন্তু মানসিক অবনতি দছুরবস্থার ভয়াবহ পরাধীনত অসহা হয়েছিল মধুক্থদনের কাছে তাই 'শমিষ্ঠা, নাটকের প্রন্ডাবনায় মধুস্থদন আমাদের কৃষ্টি সংস্কৃতির বিপন্নতা দেখে যে কবিতাটি লিখলেন-তীর মূলে গভীর সাহিত্যবোঁধের সঙ্গে জড়িয়ে আছে জাতীয়চেতনা বাঁংলা নাটকের ভবিষ্বৃতের প্রি অকুত্রিম আঁশীবাঁদও ধ্বনিত হয়েছে মধুক্ছদনেরই কে” শুনগো ভারত ভূমি কত নিদ্রা যাবে তুমি; আর নিদ্রা উচিত না হয়। উঠ, ত্যজ ঘুম ঘোর হইল, হইল ভোর, দিনকর প্রাচীতে উদয়

বাংলা নাটকের আবির্ভাবের সঙ্গে খিনি কুর্যোদয়ের তুলনা দিয়েছেন-সেই মধুক্থদনবে শুধু নাট্যকার হিসেবেই নয়, নাট্যসাহিত্যের তবিস্তৎ দ্রষ্টার আসনেই বসাতে হয় নাটক লিখে নাঁট্যসাহিত্যের মানোন্নয়ন করার মত প্রতিভাই শুধু নয়, নাট্যলাহিত্যে আবিতভীবে বাংল] সাহিত্য যে কী মহারত্ব লাভ করেছে সে উপলব্ধিওারি

৩৯২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

নাটক তৃষ্টির মধ্যে মধুহদন রসবিতরণের প্রশ্নটিকে অবান্তর বলে মনে করেননি অথচ নাটকের অভাবিত শক্তি সামর্থ্য কিভাবে জাতীয়চেতনার পৃষ্টিসাধন করতে পারে সে বিষয়েও চিন্তা করেছিলেন। সার্থক নাটক লেখার প্রতিভা থেকে যদি “কৃষ্ণকুমারীর” জন্ম হয় তবে জাতীয়চেতনার রসরূপ দানের সাধু ইচ্ছা থেকেই তার প্রহসনের জন্ম হয়েছে বলতে হয় নাটকের সঙ্গে মানুষের যথার্থ সম্বন্ধ কি, মধুক্ষদন বিচিত্রধর্মী নাটক প্রহসন রচনা করে মৌঁটীমুটি তার আভাস দিতে পেরেছিলেন নাট্যসাহিত্যের প্রাথমিক স্তরে তাঁর এই দানকে অসামান্য বলে অভিহিত কর হয় সেকারণেই তবু নাট্যসাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রাক মধুক্দন নাট্যকারগোষ্ঠী সম্পর্কে কিছু আলোচনা দরকার

বাংলা নাটক রচনার প্রথম বৎসরে শুধু কৈফিয়ৎ দেবার পর্বটি সারা হয়ে গেলে [১৮৫২ সালে মুদ্রিত নাটকঘয়ের ভূমিকা] আমরা নাট্যকার হিসেবে রামনারায়ণ তর্করত্বের সাক্ষাৎ পাই। স্বদেশাত্মক কোন অন্ুভূতির অনুসন্ধান করে নাট্যকারকে অভিনন্দিত করার স্থযোগ আমর] সছ্য উদ্ভাবিত নাটক রচয়িতাঁদের রচনা থেকে 'আঁশ! করতে পারি না-কিস্ত তবু দেখছি সমীজচেতনাঁর ক্ষীণধার। প্রথম যুগের নাট্যরচয়িতাদ্দের মনেও ছিল ১৮৫৪ সালে রামনারায়ণের “কুলীন কুলসর্বস্ব* নাটকের ভূমিকায় রামনারায়ণ বলেছেন, _“হহা কেবল রহশ্যজনক ব্যাপারেই পরিপূর্ণ বটে, কিন্ত আছ্যোপান্ত সমস্ত পাঠ করিয়া! তাঁৎপর্য গ্রহণ করিলে কৃত্রিম কৌলিন্ত প্রথায় বজদেশের যে দুরবস্থা ঘটিয়াছে তাহা সম্যক অবগত হওয়া যাইতে পারে |১

দেশ জাতির সমস্যাঁচিত্র বর্ণনার মূলে দেশীন্রাগের স্পশই শ্রষ্টাকে বিচলিত করেছিল কথা অস্বীকার করা যাঁয় না। আদিযুগে ভাব প্রকাঁশভদঙ্গীর মধ্যে যেটুকু শ্রাম্যতা--ষেটুকু আড়ষ্টতা থাঁকে জশ্বরগুপ্তের কবিতাতে তা দেখেছি নাট্যরচনার প্রারস্ত যুগের নাট্যকার রামনারায়ণের চিন্তা প্রকাশভঙ্জিতে সেজাতীয় দেস্য সর্বদাই চোখে পড়ে তবু দেখছি, নাটকরচনার বিষয়বস্ত নির্বাচনে রূপদানে নাট্যকার দেশভাবনাপীড়িত। নে ভাবনায় মৌলিকত্ব যেমন স্বীকৃত-_চেষ্টাকৃত সাজসজ্জা তেমনি অস্পষ্ট নাট্যকার তৎকালীন বাংলাদেশের জীবনচিত্র রচনার পুর্ণসামর্ধ্য অর্জন করেননি বটে কিন্তু সাধ্যমত দেশের কুপ্রথাগুলো লোকচক্ষে তুলে ধরার আন্তরিক বুদ্ধি নিয়েই-নাট্যক্ষেত্রে আবির্ভূত হয়েছিলেন বাংলা কাব্যে স্বদেশপ্রেমের প্রতিফলন আঁবিফারের মুহূর্তেও দেখেছি, প্রত্যক্ষ আভাস থেকে পরোক্ষ দেশভাঁবনা ব্যাঙ্গাত্মক কবিতায়,_সামাজিক কবিতায় স্পষ্টতর হয়ে উঠেছে। জাতীয়ভাব কিংবা স্বদেশচিন্তা ছাড়া অন্ত কোন উৎস থেকে চিন্তা আসে না।

শস? কপ পপ

যাও তর্চরত্ব, কুলীন কুলসর্বন্থ নাটক, ভূমিকা, ১৮৫৪ ২,

পপ পপি পিপি

নাটক ৩৯৩

ঈশ্বরগুপ্রের ব্যঙ্গাত্বক কবিতায় ঈশ্বরগুপ্তের দেশপ্রীতি জীবনদর্শন ওতপ্রোত হুয়েছিল-ব্যঙ্গ পরিহাস মিশিয়ে তিনি সংবাদকে মুখরোচক করার সাংবাদিকী মনোবৃত্তির পরিচয় দিয়েছিলেন সেখানে জাতিত্ববোধ তাঁকে নির্মম অন্ুুদার করে তুলেছিল। বঙ্কিমচন্দ্রের মধ্যেও আমরা ঠিক এই জাতীয় দেশপ্রেম লক্ষ্য করি, প্রসঙ্গ ক্রমে পেকথা আলোচিত হবে। রামনারায়ণ তর্করত্বের নাট্যরচনার হত্র ধরে নাট্যকারের ভাবদৃষ্টির যে পরিচয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা কিন্তু সম্পূর্ণ অন্ত ধরণের ব্যঙ্জ পরিহাস রসিকের তরলতা নাটকের প্রয়োজনে অবতারণা করলেও আগাগোড়া নাট্যকার মর্মস্পর্শী ট্্যাজিক অন্ুভূতিটিকেই নাটকের মধ্যে সঞ্চারিত করার চেষ্টা করেছিলেন ১৮৫৪ সালের সমগ্র বাংলাসাহিত্যের দিকে দৃকপাঁত করলেও সত্য স্পষ্ট হয়ে উঠবে | সেষুগের নির্মম সামাজিক প্রথার যূলে।চ্ছেদের বাসন! নিয়ে রামনারায়ণ আবিভূ্ত হননি ) রামমোহন-বিদ্াসাগরের দৃঢ়তা শক্তি তাঁর চরিত্রে আশা করাই যায় না, কিন্তু নাটকের বিষয়বস্ত নির্বাচনে তাঁর নিঃসংশয় দৃঢ়তা অনস্বীকার্য সাঁধারণ্যে পৌছে দেবার মত কাহিনী নিয়েই তিনি নাট্যনকৃসা রচনা করেছেন, তাতে নাট্যিক কলাকৌশল কিংবা উচ্চাজের নাটকীয় সংহতি ছিল না-কিস্ত নাট্যকারের সহাহুতৃতিসিক্ত চরিব্রগুলি অনেক ক্রটি-বিচ্যুতির মাঝখানেও উজ্জল হয়ে উঠেছিল। সাহিত্যবিচারে রসিকের দৃষ্টি খোঁজে রসসিক্ত মুহুর্তগুলি, সমালোচকের শান্তান্ছগ বিচারের প্রয়োজন সেখানে সামান্তই | তাই দেখি, রামনারায়ণ সার্ক নাটক না লিখেও নাট্যকারের অভিনন্দন পেয়েছেন সাহিত্যের ইতিহাসে তার স্থান নির্ধারণ নিয়ে কিছু ষদি সংশয় থেকে থাকেও ব1 যুগবিচাঁরে রামনারায়ণ সেদিন সফল ন্যট্যকার বলেই বন্দিত হয়েছিলেন

নাট্য সাহিত্যের আদিপর্বে সমাঁজচেতনার এই আদর্শ সঞ্চার করে রামনারায়ণ আরও একটি মহত দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন দেশীয় জনগণের রসপিপাসা৷ মেটাবার দায়িত্ব নিয়ে তিনি সুলভ আনন্দবিতরণের সঙ্গে চিন্তাবিতরণেরও চেষ্টা করেছিলেন সমবেত স্ুধীজনের সামনে যথার্থ আনন্দ পরিবেশনের এই পরিকল্পনাটির জন্যও সকৃতজ্ঞ ধন্যবাদ তিনি পাবেন অবশ্য দেশপ্রেমী জমিদারগোষ্ঠীর প্রতিযোগিতা ব্যবস্থাটিও ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য-_তাঁদের মহৎ আবেদনে সাড়া দেবার যোগ্যতা সেযুগে রামনারায়ণের মধ্যেই প্রত্যক্ষ করেছি। নাট্যরচশার ক্ষমতার বিচারে রামনারায়ণকে সার্থক নাট্যকার বলা যাঁবে না, তাই নাটক বিচারের জটিলতায় না গিয়ে শুধুমাত্র নাটকের বিষয় নির্বাচনের রসবিতরণের ষে ইচ্ছাটি রামশারায়ণের মধ্যে প্রত্যক্ষ করেছি,-তাতেই তাঁকে সমাজসচেতন-দরদী নাট্যত্রষ্টা বলতে পারি

৩৯৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

অনায়াসে অবশ্য তাঁর মৌলিক নাটকের প্রসঙ্গেই মত গ্রহণযোগ্য, অন্বাদ নাটকের ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ কর। যায় না। |

রামনারায়ণের প্রথম নাঁটক “কুলীন কুলসর্বস্বের” সাফল্যই তাঁকে পরবর্তী স্যোগ এনে দিয়েছে রামনারায়ণের প্রথম ছুটি নাটকই পুরস্কারপ্রাপ্ত রচনা, ঠাকুরবাড়ীর প্রযোজনায় নাটক রচন1 প্রতিযোগিতায় সর্ববাদীসম্মতভাবে রাঁমনারায়ণকেই যোগ্য নাট/কাব বলে সন্মানিত করা হয়েছে সেই সভায় পরবর্তী যুগের স্বদেশপ্রেমী নাঁটাকার জ্যোতিরিন্্রনাথের বক্তব্য ছিল এই,__"পপ্ডিত রামনারায়ণ ইংরাজী জানিতেন না, তিনি খাঁটি দেশীয় আঁদর্শেই নাটক রচনা করিতেন তাহাকেই প্রকৃতরূপে আমাদের বাংলার সর্বপ্রথম জাতীয় নাট্যকার 08610091 275102056) বলা যাইতে পারে ।২

পরবর্তীকালের সফল নাট্যকার জ্যোতিরিন্্রনীথের এই অভিমতটি কিঞ্চিৎ ভাবাবেগপীড়িত হলেও নিতান্তই অতিশয়োক্তি মাত্র নয়। রামনারায়ণ জোঁড়ার্সাকো ঠাকুর পরিবার কর্তৃক নির্বাচিত নাট্যকার হিসেবেই “বহুবিবাহ প্রভৃতি কুপ্রথা বিষয়ক নবনাটক” রচনা! করলেন

নাট্যশালার সঙ্গে নাঁটকরচনার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে বলেই --অতিনীত নাটকের গুণাগুণ বিচারকাঁলে নাট্যকারের নাটকের জনপ্রিয়তাঁও বিচারের অন্যতম মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে রামনারাঁয়ণের যুগে নাটকের অভাব নাট্যা- মোদীদের নিরাশ করত। শকুত্তলার অন্কবাদ কিংবা শেকসপীয়র রচিত নাটকের বাংল! অনুবাদে তৃপ্তি পাওয়া সম্ভব ছিল না__কারণ অন্বাদ কখনই সার্থকতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হতে পারত না ঠিক সেই মুহুর্তে রামনারায়ণকেই “নাটুকে” বলে অভিনন্দন জানিয়ে একাধিক জমিদার চালিত-নাট্যশালার কর্তাব্যক্তিরা আকড়ে ধরেছিলেন। সম্মানটুকু মৌলি ক্ষতির জন্যই মনে হয়। ১৮৫৭ খৃষ্টাব্দে রামজয় বসাকের বাড়ীতে এই নাটকের অভিনয় জনসমাগমে সার্থক হয়েছিল ১৮৫৮ সালের ২৫শে মার্চ তারিখে “সংবাদ প্রভাকর” তিনদিন আগে গদাধর শেঠের বাড়ীতে অনুষ্ঠিত কুলীনকুলসর্বস্ব' অভিনয়ের সংবাদ পরিবেশন করছে ন,_-

“বড বাঁজারস্থিত এই রঙ্গভূমি প্রায় ছয় সাত শত লোকে পরিপূর্ণ হইয়াছিল, তন্মধ্যে শ্রীয়ুত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়, শ্রীধুক্তবাবু নগেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং শ্রীযুক্ত বাবু কিশোরীমোহন মিত্র প্রভৃতি অনেকানেক মহোদয়গণ আগমন করিয়া সভামণ্ডপ শোভিত করিয়াছিলেন অভিনয় প্রক্রিয়া যে কতদূর স্থন্দর হইয়াছিল তাহা লেখনী

২. বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায়, 'জোতিরিক্্রনাথের জীবনস্মৃতি' ১৩২৬।

নাটক ৩৯৫

সম্যকরূপে প্রকাশ করিতে সমর্থ নহে এই অভিনয়দর্শন করিয়! প্রত্যেক দর্শকেই ভূরি ভূরি ধহ্যবাদ প্রদান করিয়াছিলেন-__৮*৩

এই সংবাদটি কারণেই উল্লেখযোগ্য যে, নাটকের অভাব ছিল বলেই নিতান্ত সাধারণ শ্রেণীর একটি সামাজিক নাটকই রসিক ব্যক্তিরা উপতোগ করতেন সানন্দে অথচ লাট্যশীলার সমৃদ্ধির যুগে অসংখ্য ভাল নাটকের মাঝখানে রামনারায়ণের অস্ভান্ত নাটক অভিনয় হলেও “কুলীন কুলসর্ধস্ব নাটকটির অভিনয় সংবাদ পাওয় যায় নাঁ। প্রথম রচনার সমস্ত ছুর্বলতা 'কুলীন কুলসর্বস্ব' নাটকে ধরা পড়েছে কিন্ত 'নবনাটকের” 'অভিনয়যোগ্যতা বেশী ছিল বলে জোড়াসাকোমঞ্চে এর অভিনয় জমেছিল। “জ্যোতিরিন্্নাথের জীবনস্বৃতিতে” ঘটনার বিস্তৃত বিবরণ পাঁওয় যাচ্ছে। কিন্তু অভিনয়যোগ্যতা নাটকেব গুণে না অভিনয়ের গুণে-এ প্রশ্নটি সকলের মনেহ গুঞ্জিত হয়েছিল সেদিন নাটকেও সমাজের বহুবিবাহ প্রথার সমীলোচন1 করে নাট্যক্কার নতুনভাবে তার সমীজচিত্তনের পরিচয় দিয়েছেন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বহু ট্রাজেডি প্রতিনিয়ত ঘটে থাকে, সক্ষম বা স্ুল দৃষ্টিতে তা দেখেও সকলেই নীরধতা পাঁলন করেছেন, রামনারাঁয়ণের দৃষ্টিতেই সহানুভূতির স্প* লেগেছিল শুধু এই কারণেই আদিপর্বের সমাজবাদী জীবন-জিজ্ঞা- রামনারায়ণকে প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে |

বাংলা নাটকের অপরিমিত সম্ভাবনা জন্মলগ্নেই ধরা পড়েছিল, তাছাড নাটকের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সংযৌগও ঘনিষ্টতর। কাব্য প্রবন্ধে যাঁদের কু নেই--অভিনয়ে তাদের আগ্রহ থাকাটা নানা কারণেই সম্ভব | আর নগ কলকাতার আজব আবিষার রঙ্গমঞ্চ নাটক সেদিনের বাঙ্গালীর কাছে এক পর বিস্ময় মহাকবি হয়েও মপুস্দন সেদিন কলম ধরেছিলেন নাট্যরুচির সংস্কা সাধনত্রতে, কারণ সম্ভাবনার মহীরুহকে বজ্রাহত হতে দেখলে প্রতিভাবানের অন্ত বেদনার্ত হবেই | স্তরাঁং ১৮৫২ থেকে ১৮৬০ সালের মধ্যে বাংলা নাট্য সাহিতে অভাবনীয় পিদ্ধি জনসমর্থন বিস্ময়করভাঁবে দেখা গেল একটু তলিয়ে দেখে বোঝা যায় নবজ।গরণের জন্মলগ্নে পিপাস্ছু বাঙ্গালী সেদিন নট্যরসেই তৃপ্ত হয়ে। সবচেয়ে বেশী। কারণ সমাজকে চিনতে গেলে, জানতে হলে পুঁথি পড়ে বোঝ সময়টুকু হাতে ছিল না, কিন্তু সারা কলকাতা জুড়ে অসংখ্য রঙ্গমঞ্চের দ্বারে দ্বা তীড় জমাঁনোয় আনন্দ ছিল, নেশ ছিল, উন্মাদনা ছিল মাঁজ বছরের মধে মধুস্থদনের শ্রেষ্ঠ নাটকগুলির রচনা সমাপ্ত হয়, দীনবন্ধু মিত্রের সার্ক সর্বপ্র'

সা পাপা পাপী পাপী পাপী

৩. ব্রজেল্সনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বঙ্গীয় নাট্যশালার ইতিহাস ৩য় সংস্করণ থেকে উদ্ধত। ১৩৫.

৩৯৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

নাটক 'নীলদর্পণ' প্রকাশিত হয়। সামাজিক কুপ্রথা নিবারণ উদ্দেশ্যে রচিত উমেশচন্দ্র মিত্রের চতুরস্ক নাটক “বিধবা বিবাহ'ও রচিত হয়েছিল

সমন্ত নাট্যরচনাঁর বিষয়বস্ত নির্বাচনে যে ধরণের সমীজচিন্তার ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করি নানা কারণে সেটিই বিন্ময়কর | বাঙালীর সামনে বাংলাদেশের সমাজ জীবনের পুর্ণরূপটি তুলে ধরার সাঁধু উদ্দেশ্য সম্পগ্র নাট্যকার গোষ্ঠীর মধ্যে কিতাবে সঞ্চারিত হল বলা কঠিন। তবু দেখছি, পরাধীন ভারতের পীড়িত নাগরিকরা আত্মসচেতন 'হয়েছেন রামনারায়ণের 'কুলীন কুলসর্বস্বের প্রভাবে উমেশচন্ত্ “বিধব1 বিবাহ” লিখেছেন তথ্য সন্মত, কিন্তু কোন প্রেরণায় অত্যাচারিত, নিপীড়িত বাঙ্গলীচাষীর মর্মবেদনার বাস্তব রূপ ফুটিয়ে তুলেছিলেন দীনবন্ধু মিত্র, কোন আদর্শে বিপথগামী-বিকৃতরুচি ইয়ংবেহ্গলের স্বরূপ উদঘাটন করলেন মপুহুদন, বৃদ্ধ ধনবানের বিবাহতৃষ্ণার অন্তরালে যে বীভৎস সামাজিক ব্যাধি বাসা বেধেছে সে চিত্র ফুটিয়ে তোলার প্রেরণা এল কোঁথ। থেকে? প্রশ্নের উত্তর আজ আর অজান] নয়, সে যুগের কবি নাট্যকার, সমাজসংস্কারক শিক্ষা ব্রতী, প্রতিটি মানুষের মনে অলক্ষ্যে দেশচিন্তার প্রভাব সঞ্চারিত হয়েছে ব্যক্তিচিন্তার অন্তরালে বাঁসা বেঁধেছে সমগ্রের চিন্তা নিঃসন্দেহে এই জাগরণকেই যথার্থ নবজাগরণ বলা চলে! দেশচেতন। ছাঁড়া একে অন্য কোন নামে অভিহিত করা যায় না।

স্বদেশপ্রেমী সাহিত্যশষ্টার মনে সৃষ্টির বাসনা যখন ছুনিবাঁর হয়ে ওঠে, একট' সুপরিকল্পিত পথ ধরেই তাঁরা এগিয়ে চলেন। সে যুগের উন্মাদনায় সত্যটি বার বার ধরা পড়েছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখছি ষ্টার চিন্তার কিছু অংশ সর্বজনীন চিন্তারূপেই আত্মপ্রকাশ লাভ করেছে কুলীন কন্তার বিবাঁহসমস্তা যেদিন লিখিত বক্তব্য হয়ে উঠল, হাতের কাঁছেই বিধব1 বিবাহ-এর মত একটা আলোড়নকাঁরী সমন্তার অস্তিত্ব অলিখিত হয়ে থাকবে হতে পারে না বিশেষ করে বিধবা বিবাহ বহু আলোচিত-বন্ছু বিতকিত একটি সামাজিক সমস্যা সুতরাং নাটক যতই অসার্থক হোক না কেন সে বিচার পরে, নাট্যকারের দেশহিতৈষিতার প্রমাণ রূপেই তা গ্রাহা হয়েছে নাট্যকার উমেশচন্দ্র যে সচেতনভাবে দেশচিন্তার আবেগেই নাটকটি রচনা করেছিলেন, এমন প্রমাণও মিলবে তৃতীয় সংস্করণ “বিধব। বিবাহের” বিজ্ঞাপনে উমেশচন্দ্র যে উদ্দেশ্যের কথা বাক্ত করেছেন--তাঁও লক্ষ্যণীয় নাটক যে সমাজ সংস্কারের কাজেও প্রযুক্ত হতে পারে তা তিনি সরবে ঘোঁষণা করেন,--

05108610155] 156৪. 0: 0006 07017009525 01 ৪. 01:9072. 15 01080 10 51)00019 06 0815 21200522522 100 00109355 50 111001660 হান 120221)9 01005

2500105050১, 010০ ৫2009 আ০10 1006 106 2.0, 11০6০206156 15010100018 0:£

নাটক ৩৯৭

9০০12] 16601208000 ) 00 000 15 5000295 ০310 217076152০0 00012 1055 211106 17) আআ) ০0062699110 0010100,8

বিধবা বিবাহের প্রয়োজনীয়তার সমর্থনে বক্তব্য তুলে ধরার আত্তরিক চেষ্টা নাটকটিতে লক্ষিত হয়। ভ্রান্ত পথান্থগামী নায়িকার মর্মবেদনা প্রকাশে কিঞ্চিৎ গ্রাম্যতা অশালীনতা প্রকাশ পেলেও নায়িকা দর্শকের সহানুভূতি হাঁরায়নি | সমাজ সংস্কারক মহাত্াদের মতো নাট্যকারগো্াও সেযুগে যে অসীম মনোবল ও. দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন তা অনন্বীকার্ধ সমাঁজদরদী হৃধীজন যে কঠিন দৃঢ়তার সঙ্গে সংস্কারের কাজে নেমেছিলেন__অতিসাধারণ মানুষের কাছে সহজ বোধ্যরূপে সে সংবাদ পরিবেশনের সুষ্ঠ চেষ্টাই করেছিলেন নাট্যকার উমেশচন্ত্র মিত্র |

মধুহুদনের নাট্যরচনা প্রয়াসের যূলে সাহিত্যানুরাগ দেশান্রাগ যে ওতপ্রোত হয়েছিল-_শমিষ্ঠা, নাটকের উৎসর্গপত্রেই তা মিলবে পাইকপাঁড়ার বিদ্যান্ছরাগী-_ নাট্যান্রাগী রাঁজভ্রাতৃদ্বয়কে উদ্দেশ্য করে মঙ্গলাচরণে মধুস্ছদন জানিয়েছেন,

“মহাঁশয়দিগের বিদ্যান্গরাগে দেশের যে কি পর্যন্ত উপকার হইতেছে, তাহা আমার বলা বাহুল্য আমি এই প্রার্থনা করি যে, আপনাঁদিগের দেশহিতৈষিতাদি গুণরাগে ভারত ভূমি যেন বিদ্যাবিষয়ক স্বীয় প্রাচীন শ্রী পুনদ্ধারণ করেন ইতি-_

প্রীমাইকেল মধুসুদন দত্তপ্তয 1৮৫

রাঁজভ্রাতৃদ্বয়ের সাহিত্যপ্রীতিকে নিতান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে মনে করা যায় না_-মধুস্দনের শ্রদ্ধার্থ্য রচনার ভাষাই তার প্রমাণ সাহিত্যপ্রীতির অন্তরালে স্বদেশ- প্রীতি ন্বভাঁষাপ্রীতির এমনতর নির্মল নির্দশন সে যুগের বাংলা দেশে বিরল ছিল না। উনবিংশ শতাব্দীর প্রস্তত পরিবেশে সেষুগের সাহিত্যান্ুরাগী ও। সাহিত্য- অষ্টার মিলিত হয়েছিলেন

বাণীর বরপুত্র মধুস্ছদনের রচনাশক্তি ছিল কিন্তু রচন। প্রকাশের সামথ্য ছিল না। দেশাচুরাগের অমলিন স্বার্থেই রাজভ্রাতৃদয় প্রকাশনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন পরাধীনতার এঁক্যে সেদিনের ধনবান প্রতিভাবানের এক্যযূলক সৌভ্রাতৃবোধ রচিত হয়েছিল। মধুহুদনের পরিকল্পনা ছিল ন্যাশনাল থিয়েটর প্রতিষ্ঠার এবং সেই জাতীয় নাট্যশালায় কি ধরণের নাটক অভিনীত হওয়া প্রয়োজন তারও আভাস তার চিঠিপত্রে মিলবে | মধুক্দন রাজনারায়ণকে লিখছেন-_

০5585 6৮ আত 009০ 306 6869101151550 1800109111555605 [ 006205

৪. উমেশচন্দ্র মিত্র, বিধব1 বিবাহ তৃতীয় সংস্করণ। ১২৮৫ ৫. মধুস্দন দত্ত, শর্মিষ্াা নাটক" মঙ্গলাচরপ। বনুমতী সাহিত্য মন্দির প্রকাশিত। মাইকেল

্রস্থাবলী। ২য় ভাগ। থেকে উদ্ধ'ত।

২৩৯৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল সাহিত্যে দেশপ্রেম

6. 18৮০ 1000 ৪5 20 800 2৪ 0০0নুগ ০06 90010, 01939510০81 [0191093 00 265031966 0156 080100021 08505১ 800. 610215015 আভ. 05150 1006 6০ 178৬৩

ম21০65+,৬

"বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রে”” রচনায় যুগান্তকারী এশ্বর্য না থাকলেও তৎকালীন বাংলা দেশের বিকৃতরূপ যথাষথভাবে ফুটিয়ে তোলার সাধনায় তিনি সিদ্ধি লাভ করেছিলেন প্রহসনের স্বল্প বক্তব্যেও হিন্দুয়ানী বনাম ইংরাঁজীয়ানার দ্বেত তুলনা অধুক্ছদন খুব স্পষ্টভাবে অবতারণাএকরেছেন এই ছুয়ের উর্ধে যে শাশ্বত মানবতা- (বোধের অস্তিত্ব আমর! অনুভব করি তারই জয়গান করেছেন। শেষাংশে যে নীতি কবিতাটির অবতারণ! করেছেন তাতেই অন্তর বাহিরের প্রসঙ্গ নিয়ে ভিনি আলোচণ। করেছেন,--

বাইরে ছিল সাধুর আকার মনট] কিন্ত ধর্ম ধোয়া পুণ্য খাতায় জমা শুন্য, ভগ্ডামীতে চারটি পোয়া

ভক্ত প্রসাদের হিন্দুয়ানীর ওপর আস্থা রাখার বোকামী থেকে আমাদের মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন-_ প্রহসনকার মধুক্থদন। হিন্দুয়ানী আর খুষ্িয়ানীর পার্থক্য বিচার করতে গিয়েই ভক্ত বলেছে,__“দেব ব্রা্মণের প্রতি অবহেলা, গঙ্গান্নানের প্রতি ঘ্বৃণা, এই সকল খুষ্টিয়ানী মত।”» আচারসর্বন্ষ কুসংস্কারপূর্ণ হিন্ুয়ানীর অপ্তঃসার- শৃহ্যতার বড়াইকে এমন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর জন্য প্রহসন রচনা করেছিলেন মধুস্দন। ভক্তপ্রসাদের হিন্দুয়ানী রক্ষার আকুল আগ্রহ শুধু হাস্যরস নয় আমাদের

'অন্ধতা ঘোচাবার মত কিছু প্রাণরসও সঞ্চার করেছে বলতে হবে। সহর কলকাতার একটি ক্রন্দর চিত্র বর্ণনা করেছেন মধুস্ছদন ভক্তপ্রসাদের জবাঁনিতে,__

“...আমি শুনেছি যে, কলকাতায় নাকি সব একাকার হয়ে যাচ্ছে ? কায়স্থ, ব্রাহ্মণ, কৈবর্ত, সোনার বেনে, কপালী, তাঁতী, জোলা, তেলী, কণু সকলেই নাঁকি একত্রে উঠে বসে, আর খাওয়া দাওয়া করে?” সমাজের বা সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র রূপেই কলকাতা সেদিন সব মান্ষকে আহ্বান জানিয়েছিল মধুস্দনও সেদিন কলকাতাকে সর্বজাতিসমন্বয়ের কেন্দ্ররূপেই প্রত্যক্ষ করেছিলেন সাধুপ্রসাদ যখন মহাক্ষোভে বলছে,--*কি সর্বনাশ হিন্দুয়ানীর মর্যাদা দেখছি আর কোন প্রকারেই রৈলো না আর রৈবেই বা কেমন করে 1 কলির প্রতাপ দিন দিন বাড়ছে বৈত নয় ।”--তখন চরিত্রহীনত৷ লাম্পট্যের মুখোসটি প্রকাশিত হয়

৬. নগেন্দ্রনাথ সোম, মধুন্মতি থেকে উদ্ধ'ত। পৃঃ ৫৯৮।

নাটক ৩৯৯

তীক্ষ সমাজবোধের দর্পণে জীর্ণ হিন্দুয়ানীর কিছু আভাস মধুহদন অত্যন্ত কৌশলে প্রচার করেছিলেন। কাব্যকার মধুস্থদনের কাব্যে যেমন সমাঁজচেতন কবিকে আবিফার করা ছুরূহ--প্রহসনের আলোকে মধুস্থদন চরিত্রের এই উজ্জ্বল দিকটি উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে শুধু নাট্য সাহিত্যের সংস্কার করার ইচ্ছা! থেকেই নয়-__মধুহদন সমাজ সম্পর্কে তার চিন্তাধারার নিপুণ অভিব্যদ্ষিটুকুই প্রহ্সনে তুলে ধরেছিলেন সমাজচিন্তা দেশচিন্তার মধ্যে লক্ষ্যণীয় পার্থক্য সেখাঁনে থাকতে পারে না ।-_ যেখানে সমাঁজই দেশ,--সমাজ চিন্তাই সমগ্রের চিন্তা *বুড়ো শীলিকের ঘাড়ে রো” শতধাজীর্ণ-সেযুগের সামাজিক কাঠামোর প্রতিফলন | *একেই কি বলে সভ্যতা”তে পাই প্রতিক্রিয়াশীল সমাঁজজীবনের ছবি! একদিকে পরিবর্তনকে অস্বীকার করার হাস্যকর দুর্বলতা, অন্যদিকে পরিবর্তনের ক্লোতে ভেসে যাওয়ার অবিবেকিতা ছুয়ে মিলে সমাজের পূর্ণকূপটি মধূত্দন প্রহসনে তুলে ধরেছিলেন «একেই কি বলে সভ্যতাস্য কবি মধুস্থদনের জিজ্ঞাসা সমাজবিদের কাছে না নিজেরই কাছে বল৷ মুক্কিল। কবিকে কাব্যকে একাকার করে বিচার করে দেখলে যে আপাতঃবিরোধী চিত্র ফুটে ওঠে সেখানে প্রহসনকার মধুহ্্দনের সঙ্গে ব্যক্তি মধুহুদনের আচরণগত অসঙ্গতিই প্রকট ইয়ংবেঞ্গলকে সমালোচনা করার সৎসাহস যে মধুক্ছদনের মত একজন খাঁটি ইয়ংবেঙ্গলের কাছ থেকেই পাঁব--এ আশাতীত আশা নিজের উদ্দামতাঁয় যিনি প্রায় অস্থির হয়েছিলেন__ইয়ংবেক্গলের অস্থির উন্মাদনীকে তিনিই আবার প্রহসনের বস্ত করে তুলেছেন সমসাময়িক পত্রপত্রিকায় প্রহসনটির সার্থক সমালোচনা হয়েছিল “বিবিধার্থ সংগ্রহে" রাজেন্দ্রলাল মিত্র লিখেছিলেন, "ইয়ংবেঙ্গল অভিধেয় নব বাবুদিগের দোষোভাঁষণই বর্তমান প্রহসনের একমাত্র উদ্দেশ্য ; এবং তাহা যে অবিকল হইয়াছে, ইহার প্রমাণার্থে আমর] এইমাত্র বলিতে পারি যে, ইহাতে যে সকল ঘটন1 বণিত হইয়াছে প্রায়; তৎসমুদায়ই আমাদিগের জাঁনিত কোন না কোন নববাবু দ্বারা আচরিত হইয়াছে ।”?

সংবাদপত্রের এই তথ্যসমর্থন ছাঁড়াও উচ্ছৃসিত সাহিত্যগুণের প্রশংসাঁও প্রহসনটি লাভ করেছিল। নামকরণের প্রত্যক্ষ সৌন্দর্যই প্রহসনটি পাঠের আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। *নীলদর্পণকে” সমাজচিত্র বলে যে অভিনন্দন জানাই-_মধুহুদনের প্রহসন ছুটি তার চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। দীনবন্ধুর সহানুভূতির প্রলেপে একদ। ষে কাহিনী আমাদের জীবনে সংগ্রাম সামর্থ্য তথজন করেছিল -_মধুহুদনের প্রহসন ছুটিতে সেই উপাদানই আরও প্রত্যক্ষ স্থবিস্স্ত মধুহ্দন সামাজিক বিষয়বস্ত গ্রহণ করেও

৭. মাইকেল গ্রস্থাবলী। ১ম ভাগ। একেই বলে সভ্যতা। পরিচয় থেকে উদ্ধত।

৪০০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

রসসৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন কিস্তু এর ফল হয়েছিল সম্পূর্ণ উপ্টো ইয়ংবেল সম্প্রদায় কি ভাবে এই প্রহ্সনটির অভিনয় বন্ধ করে দেওয়া যায় তারই চেষ্টা চাঁলিয়েছিলেন কেশবচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়ের স্বতিকথায় একটি চমকপ্রদ বিবরণ মিলছে,

£& চিত 010০ ০000 132175817 01855 £6106 2. 5021) 01 0136 12106 “একেই কি বলে সভ্যতা ?” 270 £6611716 0086 602 02110800165 10029061016 €00:০0650 00610 6০০ ০105215, 181590৪1702 2190 ০1:5১ 210৫ 01)005176 0: 60611155001 ৪. £210101610210, 0 00910101) 2:00. ৪0106106 5110, 00০5 1000৬, 1770 11700210705 101) 00০ 17818155, 0:2017620 10117) 00 0155009.06 61610 2010 019300106 01)9 121০2 02 6106 80970 06 6106170102205-11000015 £610016- 1072) (91390 2. 00106 1917591 ) 1051)6 60061) 8100. 1098.1]1 101 005 5050955 ০0৫ 1015 1015510120.00106 [0২815105 ০10. 7006 56110 26:21:90 00 05061 £:686 015957016 216 01011590. 6০ 51৮০ 80 6106 181067,৮

এই প্রহসন ছুটির অকৃত্রিম প্রয়াস সেযুগের বাঙ্গালী গ্রহণ করেনি সমাজের উন্নতিবিধান-এর প্রকট আদর্শ না থাকলেও সে সামর্থ্য দুটি প্রহসনের ছিল কিন্তু জাতীয় চেতনার মত মূল্যবান উপলব্ধির অভাবেই সে যুগের মানুষরা প্রহসনের অন্তনিহিত আবেদনে সাড়া দেয়নি উপরন্ত এমন সার্থক প্রহসন লিখেও মধুস্ছদন লাঞ্িত হলেন যে নির্ষল দেশচেতনার সার্থক প্রতিফলন প্রহসনের মর্যাদ! বাড়িয়েছে সে যুগের নব্যশিক্ষিত সম্প্রদায় তাঁর মর্যাদা দিতে পারেননি এটা! আক্ষেপেরই কথা অবশেষে মধুহদনের মত প্রহসনকারকেও বিরক্ত হরে রচন] বন্ধ করতে হয়েছিল। বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রে?_-লিখেও তিনি জনপ্রিয় হননি, _ সমালোচিত হয়েছিলেন কারণ এতে প্রাচীন হিন্দু সমাঞ্কে আঘাত হেনেছেন। সুতরাং উৎকৃষ্ট সমাঁজচিত্তা থাকলেই সে সাহিত্য নাট্যকার অগ্টাকে বিপুল সাফল্য এনে দেবে এমন কোন কথা নেই “নীলদর্পণের” মত সমাজ দর্পণেই যধুহদন সে যুগের সার্থক চিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন কিন্তু পৃষ্ঠপোষক রাজাদের মনোরঞ্জন করার ধৈর্য্য ছিল ন। বলেই বিরক্ত হয়ে তিনি প্রহসন লেখা বন্ধ করেন। এতে ক্ষতি হয়েছে এই ষে, মধুক্ছদনের সমাজচিন্তার ধারাবাহিকতা ক্ষু্ণ হয়েছে অবশ্য সমাজ ত্বদেশ সম্পর্কে গভীর অনুরাগ প্রীতির নিদর্শন তাঁর কাব্যে অজশ্র রয়েছে পূর্বেই বলেছি, নাটকের উজ্জ্বল সম্ভাবনা জনসংযোগ ক্ষমতা কাব্যে আশা করা যায় না, তাই নাটকের সাফল্য আসে দ্রুতলয়ে | মধুস্দনের পরিচ্ছন্ত্র স্বদেশচিতস্তা যেভাবে ছুটি

৮, মাইকেল গ্রন্থাবলী ১ম ভাগ, একেই কি বলে সভ্যতা, পরিচয় থেকে উদ্ধ ত।

নাটক ৪৬১

প্রহসনে স্থান পেয়েছে--কাব্যে তা পায়নি | সমাজচিন্তার মুল্যবান দলিল রচনার স্বাভাবিক ক্ষমতা মধুহ্দনের প্রতিভায় নিহিত ছিল অথচ গুধীজনের সমর্থন না পেয়েই তাকে থামতে হলো, সত্যিই আক্ষেপের কথা | বাংল] নাট্যসাহিত্যের সার্থকতম প্রহসনঅষ্ট1 বিরক্তি খেদে পত্র লিখেছিলেন,

৭২01700, 50৩ 01015 205 1125 00005 29006 605 91:০5 316 500 2195 91101191 60015 0015 00065 [51911 1005168 3205811 200 ভা 90155 17 170016৬ 01 (01)10০5০,.৯

প্রহননটির উপস্থাপনা বক্তব্যরীতিতে প্রহসনকারের দৃষ্টিভঙ্গীর অভিনবস্ব ছাড়াও ইয়ংবেগল সম্প্রদায়ের উন্নাসিকতা৷ সমাজচেতনার যে দিধাগ্রস্ত রূপ দেখতে পাই-_ মধুহদনের দূরদশিতা দেশচিন্তা অনুধাঁবনের পক্ষে তা একটা মুল্যবান অংশ “একেই কি বলে সভ্যতা” নামকরণের মধ্যেও.গভীর আ'ত্মবিচারের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন তিনি দ্বিতীয় অংক, প্রথম গর্ভাঙ্কে সভার সমবেত সভ্যদের বক্তৃতাংশটি নানা কারণে উল্লেখযোগ্য ! 'জ্ঞানতরঙ্হিনী, সভায় অজ্ঞান কিন্বা জ্ঞানহীনের স্বান হতে পারে না, সুতরাং জ্ঞানঅর্জনের জন্যই সভায় আঁসা। জ্ঞানদানের ভার নিয়েছেন তারাই, ধারা স্পীচ দিতে পারেন সে যুগীয় আবহাওয়ায় বক্তৃতার মাধ্যমে শিক্ষাদানের প্রচলিত রেওয়াজকে নিখু তভাবে রূপায়িত করেছেন মধুহদন | দেশপ্রেমিক রূপে ধারা সন্মানিত তার বক্তৃতাপটু নববাবু তাই যে বক্তৃতা করেন_ সেখানে দেশের প্রসঙ্গ আসবে সবার আগে। প্রহসনের ক্ষুদ্রায়তনে দেশচর্চার প্রচলিত রীতিটি মধুক্ছদনের নিপুণ রচনায় ফুটে উঠেছে নববাঁবুর বক্তব্যটিও লক্ষ্য করার মত,-_

“জেণ্টেলম্যেন, তোমাদের মেয়েদের এজুকেট কর,তাদের স্বাধীনতা দাও-_জাতভেদ তফাৎ কর-_-আর বিধবাঁদের বিবাহ দেও--তা হলে এবং কেবল তা৷ হলেই, আমাদের প্রিয় ভারতভৃমি ইংলগ প্রভৃতি সভ্য দেশের সঙ্গে টক্কর দিতে পারবে নচেৎ নয় ।”১০

১৮৬০ সালে লিখিত প্রহসনে মধুস্দূন দেশচচ্চার ধারা যে ভাবে চিত্রায়িত করেছেন--তা কেবল শক্তিমানের পক্ষেই সম্ভব | ইয়ংবেহ্ধলের সদশ্যক্ছলভ মনোবৃত্তির পরিচয় দিতে উৎসাহী এই নব্যশিক্ষিতর। পাশ্চাত্য প্রেমের হাওয়ায় আন্দোলিত। মন্ধপানে জ্ঞানশুষ্য হলেও সভার প্রারভ্তে এদের সাঁড়ম্বর ঘোষণাবাণী যে কোন আনুষ্ঠানিক অর্থহীন দেশপ্রেমিকতাঁকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। সভার প্রারস্তে স্পীচ দেবার অতুযুৎসাহে নব বলেছে,_-

৯, মাইকেল গ্রস্থাবলী। ১ম ভাগ, বুড়ে! শালিকের খাড়ে রে, পরিচয় থেকে উদ্ধত ১*, মাইকেল শ্রস্থাবলী। ১মভাগ। একেই কি বলে সভাতা। ২৬

৪০২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে দেশপ্রেম

“ভ্ভানের বাতির দ্বারা আমাদের অজ্ঞান অন্ধকার দূর হয়েছে; এখন আমার প্রার্থনা এই যে, তোমরা সকলে মাঁথা মন এক করে, এদেশের সোঁসীয়াল রিফরমেশন যাতে হয় তার চেষ্টা কর 1৮

মধুহ্ছদন যে সময়ে প্রহসন রচনা করেছিলেন--সাঁমাজিক বিধি ব্যবস্থার সাধ্যমত সংস্কার করার আন্তরিক ইচ্ছা যে কোঁন সমাজবাদী দেশসচেতন মানুষের মনে দেখা দিয়েছিল। যদিও সমাজসংক্কারই দেশপ্রেমিকতা নয় কিন্তু সংস্কারকের মনোবুত্তির সঙ্গে দেশপ্রেমিকের শুভইচ্ছার পার্থক্য কম-_-তাই যুগভেদে-কাঁলভেদে দেশপ্রেম ভিন্ন রূপে আত্মপ্রকাশ করে। উনবিংশ শতাব্ীর শেষপাঁদে দেশপ্রেমের সাগ্িক আন্দোলনে পরাধীনতা মুক্ত হবার বাঁসনা যদ্দি যথার্থ দেশপ্রেমের লক্ষণ হয়--ঙবে সে অন্থভবে পৌঁছতে “গলে আমাদের অতীত মনোবৃত্তির এই বিচিত্র স্তরগুলো৷ পেরোতেই হবে। মধুস্দনপর্বে মুক্তিআন্দোলন সম্ভব ছিল না কল্পনাতেও,__কিস্তু সমাঁজপ্রেম- ভাঁষাপ্রীতিই সমাঁজসংস্কীর ব্রতীকে প্রেরণা দিয়েছে | নববাবু "সোসীয়াল রিফরমেশন” বলতে যা বোঝাতে চেয়েছে তার অর্থ সমাজের প্রগতি কিন্তু মগ্যাঁসক্তি বক্তৃতাশক্তি দাঁন করলেও যথার্থ কর্মশক্তি দিতে পারেনি সে যুগের 7৪৮7০রো বক্তৃতা দিতেন, দৃষ্টান্ত ছাড়] জ্ঞানতরক্গিনী সভার" সদস্যরা আর কিই বা শোনাতে পেরেছে? অথচ অসার জ্ঞানগর্ব প্রকাশে এদের বিন্দুমাত্র সংকোচ নেই মধুক্ছদন শুধু এই ভয়াবহ সত্যটি সম্পর্কেই দেশবাসীকে সচেতন করেছেন | যে শিক্ষায় শিক্ষাগর্ব মদ্ধাপ্রেম ছাড়া আর কিছুই লক্ষ্যণীয় নয়__তারই ওপর ভিত্তি করে আমাদের ভাবী সমাঁজ.4 ধ্াড়িয়ে আছে একেই কি বলে সভ্যতায়” তাই পেয়েছি আমরা প্রহসন মধুন্দনের দেশসচেতনতাই প্রকাশ্য রূপ, জীবনজিজ্ঞাসার রূপায়ণ

জ্ঞানতরঙ্গিনী সভাঁর সভ্যদের চরিতকথ হয়ত শ্রবণীয় নয় কিন্তু তাদের অন্ধকারের গভীরে তলিয়ে যাওয়ার উচ্চাশা উচ্চান্গের প্রহসনের বিষয় নববাবুর বক্তৃতার শেষাঁংশ,---

“কিন্ত জেণ্টেলম্যেন, এখন দেশ আমাদের পক্ষে যেন এক মস্ত জেলখানা ) এই গৃহ কেবল আমাদের লিবরটি হল অর্থাৎ আমাদের স্বাধীনতার দালান ; এখানে যাঁর যে খুশী, সে তাই কর। জেশ্টেলম্যেন, ইন্‌ দি নেম্‌ অব ফ্রীডম্, লেট অস এঞ্জয় 'আওরসেলভস ।৮

স্বাধীনতা” ফ্রীডম” শব্বগুলি অর্থগৌরব হারিয়ে কিভাঁবে একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে বিনষ্টির শেষ স্তরে নামিয়ে দিয়েছিল প্রহসন না পড়লে তা আমাদের অক্জানা থেকে যেতো। আর প্রহ্সনকার যে ব্যাপারে আন্তরিকতার সঙ্গেই আভ্যন্তরীণ অভিজ্ঞতাকেই রূপ দিয়েছিলেন সে বিষয়ে সংশয় থাকতে পারে না।

নাটক ৪০৩

শুধু প্রহসন বলেই প্রত্যক্ষ অর্থটি মুখ্যার্থ না হয়ে এখানে বিশেষ অর্থটিই সর্বস্ব হয়ে উঠেছে সে যুগের যন্ত্রণীময় অভিজ্ঞতাকে নিছক হাস্যরসের মাধ্যমে পরিবেশনের দুরদর্িতা মধুহদনের ছিল, কিন্তু তবু যা তিক্ত তা মধুর হয়ে ওঠেনি। এই ভয়াবহ সত্যকে স্বচক্ষে দেখার সাহস করেনি কেউ স্বাধীনতার আনন্দে শ্েচ্ছাচারের ঘোঁলাজ্লই আক পান করেছিল ইয়ংবেঙ্গল গোঠী-_কিন্ত নীলকণ্ মধুহুদনের প্রহসনেই তা একটা কালজয়ী রূপ পেয়েছিল এই বাস্তবনিষ্ঠা মধুস্্দনের প্রহসনের এক ছুর্লভ সম্পদ, তাঁর অন্যান্য নাটকে তা আশ করাই যায় না। দেশপ্রেমের কাব্যিক কল্পনা বাঁ ভাঁবময় রূপের পরিচয় হয়ত অন্যত্র মিলবে কিন্তু যুগসমালোচনার ছলে আত্মসমালোচনার ছ:সাঁহসী পরিকল্পনার মধ্যে যে অকপট আদর্শ পাই তা অন্যত্র পাওয়া যাবে কী করে?

প্কৃষণকুমারী নাটকে” মধুকদনের স্বাজাত্যবোধের প্রকাশ দেখি। মধুস্থদন রাজপুত ইতিহাস অবলম্বনে নাটক লিখেছিলেন বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেমমূলক রচনার একটা বিশিঃ অংশ রাঁজপুত জাতির ইতিহাস অবলম্বনে রচিত হয়েছিল। বাংল সাহিত্যে স্বাদেশিকতাঁর প্রচলনে টড লিখিত রাজস্থান" গ্রন্থটির অসামান্ত অবদান রয়েছে রঙ্গলালও সাহিত্যে দেশপ্রেম জন করেছেন টডের রাজস্থান" অবলঘ্ন করে শৌর্য-বীর্য-দেশপ্রেমের উজ্জবলতাঁয় রাজস্থানের ইতিহাঁসই দেশবোধ শ্দুরণে খানিকটা সহায়তা করেছে আমাঁদের। মধুক্থদণের “রুষ্ণকুমারী” ইতিহাস অবলম্বনে লেখা প্রথম নাটক বলেই নয়, __মধুক্দনের রাজস্থান ইতিহাস অনুসরণের মধ্যেও একটা অলক্ষ্য যোগাযোগ দেখা যাচ্ছে মূলতঃ ট্রাজিডি লেখার উদ্দোশ্েই নাটকের জন্ম,__কিন্তু যে কোন ঘটনার অন্স্থতি বা মৌলিক রচন] হতে পারত। কিন্ত মধুস্থদন রাজস্থানের ইতিহাস থেকেই এর উপাদীন সংগ্রহ করেছিলেন বলে আমাদের পক্ষে মনে কর স্বাভীবিক যে, অন্তান্ঠ সেকাঁলীন সাহিত্যিকদের মতো টডের "রাজস্থান তারও ভালে। লেগেছিল দেশপ্রেমের সচেতন প্রেরণা না পেলেও সাঁহিতিক উন্নাদনাই 'কৃষ্ণকুমীরী নাটক" রচনার প্রেরণা এনে দিয়েছে। সম্পর্কে তার স্বলিখিত পত্রের স্বীকারোক্তিটি লক্ষ্য ণীয়”_

0] 60 11615091590 09001100019 0041108০৮০2 0১০ 16002050095 78595 1000 270. ৪৮০০৮ 1:4১, 1990 32001095, 006 2:60569 9221160..৮৯১

ডের গ্রন্থে এমন আকর্ষণীয় আয়োজন ছিল বলেই দেশীয় লাহিত্যিকরা গ্রন্থটির

রা ] টিক সোঁম, মধুস্মতি থেকে উদ্ধাত। কেশবচন্র বঙ্গ্যোপাধায়কে লিখিত পৃঃ ৬২৮।

৪০৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

সাহায্য নিয়েছিলেন মধুহ্দনের সঙ্গে সমসাময়িক সাহিত্যিকদের এখানে যেন ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে স্বদেশপ্রেম, বীরত্ব রোম্যান্স অন্ুসন্ধানীদের মত তিনিও গ্রন্থটির মূল্য স্বীকার করেছিলেন। প্রসঙ্গে কোন সমালোচক বলেছেন,__

“্টডের গ্রন্থই বাংলা কাব্যকার, উপন্তাঁসিক, নাট্যকারদের সামনে এঁতিহাসিক উপাদানের ভাগ্ডার উন্মোচিত করলে রেনেস্সীসের আবির্ভীবের সঙ্গে সঙ্গে বীরত্ব, উন্মাদনার প্রতি যে স্বাভাবিক আকর্ষণ এসেছিল টডের রাজস্থান তার যোগান দিলে। দেশপ্রেম, সতীত্ব গৌরব, বীরত্ব এবং রোমান্স 'রাজস্থানে' প্রটুর পরিমাণে পরিবেশিত হয়েছিল। এতিহাঁসিক ওপস্যাঁসিক কাব্যকারবৃন্দ যথেচ্ছ টডের দ্বারস্থ হতে লাগলেন ।”৯২

মধুহ্ৃদনের রচিত সাহিত্যে বিষয়ের নির্বাচনে সর্বদাই মৌলিকত্ব পাওয়৷ যায় কিন্ত ধতিহাসিক ট্রাজিডি রচনার জন্য তিনি সে যুগীয় সাহিত্যিক অনুস্থত গ্রন্থটিই বেছে নিয়েছিলেন

কষ্কুমারীর আত্মদানের কাহিনী অবলম্বনে রচিত এই ট্র্যাজিক নাটকটিতে যে সমন্যাচিত্র অঙ্কন করা হয়েছে তার সঙ্গে ব্যক্তিগত স্বার্থ বৃহত্তর স্বার্থের সংঘাত অনিবার্ষভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে উদয়পুরের রাজকন্যাকে বিবাহের আশায় জয়পুরের রাজা জগৎসিংহ মরুদেশের অধিপতি মানসিংহের মধ্যে যে ঘন্ব ঘনিয়ে এল উদয়পুরের ভবিষ্যৎ মানসম্মীন স্বাধীনতারক্ষার জন্য কৃষ্ণার আত্মাহুতি তাতে অনিবার্য হয়ে ওঠে ঘটনায় দেশের স্বার্থরক্ষার প্রশ্নই বড়ো হয়ে দেখা দিয়েছে শক্তিহীন রাজা দেশের সম্মানরক্ষায় অসমর্থ বলেই পরাধীনতার চেয়ে কন্তার মৃত্যুদদণ্ডকেই কাম্য বলে বিধান দিয়েছেন এই মর্শান্তিক চিত্রটিই নাটকের ট্যাজিক অংশ রাজস্থানের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাঁজ্যগুলি সর্বদাই সন্ত্রস্ত, যে কোন মুহুর্তে যবনশক্তি সবকিছু গ্রাস করতে পারে। প্রথম অঙ্ক, প্রথম গর্ভাঙ্কেই দেশের এই দুরবস্থার চিত্র ফোটাঁনে৷ হয়েছে জয়পুরের রাজা জগৎসিংহকে ঘরোয়। বিবাদ “পর থেকে সতর্ক থাকার জন্যই মন্ত্রী পরামর্শ দিচ্ছেন,

মন্ত্রী_ধর্মাবতার, কি ঘরাঁও বিবাদের সময়? দেখুন, দেশবৈরিদল চতুদ্দিকে দিন দিন প্রবল হয়ে উঠছে |

রাঁজা --আঃ, দেশবৈরিদল ! তুমি যে দেশবৈরিদলের কথা ভেবে ভেবে একেবারে বাতুল হলে ।.." | প্রথম অঙ্ক, প্রথম গর্ভাঙ্ক

১২, বিজিতকুমার দত্ত, বাংল। সাহিত্ এতিহাসিক উপন্তাস, কলিকাত।, ১৯৬৩

নাটক ৪০৫

জগংপসিংহের কাছে দেশরক্ষার প্রসঙটি গুরুত্ব পায়নি বটে কিন্তু উদয়পুরের রাজা ভীমসিংহকে দেশরক্ষার চিন্তায় অত্যন্ত বিব্রত হতে দেখছি

যবন অধিকৃত ভারতভূমির পরাঁধীনচিত্র দেখে রাঁজ। সখেদে বলেন,_-

"**এ ভারত ভূমির কি আর সে শ্রী আছে! দেশের পূর্বকালীন বৃত্তান্তনকল স্মরণ হল্যে, আমরা যে মনুষ্য, কৌলোমতেই এবিশ্বাম হয় না..'হাঁয়! হায়! যেমন কোন লবণান্ুতরহ্গ কোন ক্ুমিষ্ট বারি নদীতে প্রবেশ কর্যে তার সত্াদ নষ্ট করে, ছুষ্ট যবনদলও সেইরূপ দেশের সর্বনাশ করেছে [২য় অঙ্ক ১মগর্তাঙ্ক]

স্বাধীনচিত্ত ভীমসিংহ উদয়পুরের স্বাধীনতা রক্ষার চেষ্টায় সর্বস্বান্ত হলেও দেশের স্বাধীনতা রক্ষার প্রজ্ঞলিত আশা পোষণ করেন। হীন চক্রীত্তজীল সমস্ত ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করেছে অথচ এর সত্যাসত্যতা রাজা ভীমসিংহ নির্ধারণ করতে পারেননি কিন্তু দেশের স্বাধীনতার কথা চিন্তা করেই তিনি অকৃল সাগরে পড়েছেন। সাঁমধ্যহীন রাজা আক্ষেপ করছেন,--

_. *আমার যদি এমন অবস্থা না হতো, তা হলে কি আর এরা এত দর্প কত্যে পারতেন 1 দেখ, আমার ধনাগার অর্থশূন্ত, সৈন্য বীরশৃন্ত, হুতরাং আমি অভিমন্থ্যর মতন সপ্তরথীর মধ্যে যেন নিরন্তর হয়ে রয়েছি; তা আমার সর্ধনাশ কর কিছু বিচিত্র কথা নয় ।৮ [ পঞ্চম অঙ্ক, প্রথম গর্ভাঙ্ক ] নিশ্চিত পরাজয় জেনেও রাজভ্রাতার স্বদেশরক্ষার জন্য শেষ চেষ্ট1--“মহারাঁজের কিন্বা স্বদেশের হিতসাঁধনে, যদি আমার প্রাণ পর্য্যন্ত দিতে হয়, তাতেও আমি প্রস্তত আছি ।” [এ] স্বদেশচিন্তা বীররসের এমন দৃষ্টান্ত "কষ্ণকুমীরী নাটকে” আরও মিলবে কষ্ণকুমারীর আত্মদীনের যূলেই স্বদেশচিন্তার প্রীধান্ত। কৃষ্ণকুমীরী যে চিতোর কন্। ৃত্যুমুহূর্তে অকুতোভয় আদর্শটি কষ্ণার মুখেই সার্ক সংলাপে রূপায়িত হয়েছে, কাকা, 'আমি রাঁজপুত্রী! রাঁজকুলপতি ভীমসিংহের মেয়ে আপনি বীর- " কেশরী। আপনাঁর ভাইবি আমি কি মৃত্যুকে ভয় করি? [ পঞ্চম অন্ধ, তৃতীয় গরাংক | এই নির্ভীকতার আদর্শ রেনেসী যুগেরই আবিষ্ষাঁর। কৃষ্ণার আত্মদাঁনের সঙ্গে 'দেশের স্বার্থ স্বাধীনতারক্ষাঁর মহৎ উদ্দেশ্য মিলিয়ে মধুহ্দন নাটকের বক্তব্যকে সবিশেষ করে তুলেছেন। কৃষ্ণার আত্মদানের মধ্যে এই স্গভীর দেশীতি আছে বলেই নাটকের ট্র্যাজিক রসের মহিমাও বেড়ে গেছে

দেশপ্রেমই নাটকের মুখ্য অবলম্বন নয় ব্যক্তিগত স্বার্থ ষড়যন্ত্রের জালে যুদ্ধ

সৃস্ভাবন] এসেছে অতকিতে-_কিন্তু দেশের স্বাধীনতার রক্ষা প্রশ্নটিই শেষপর্যন্ত মূখ্য

৪০৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে হ্বদেশপ্রেম

হয়েছে কুতরাং উদয়পুরাধিপতি ভীমসিংহ, রাজভ্রাতা বলেন্দ্রসিংহ রাজকুষারী কৃষ্ণার স্বদেশচিন্তার পরিচয় পাঠকের আন্তরিক সহাল্ভূতি স্বদেশচেতনা জাগিয়ে তোলে বাংল! নাটকের ক্ষেত্রেও অভিনব নাট্যপ্রতিভার পরিচয় দিয়েছিলেন মধুস্থদন ;--বিষয় নির্বাচনে, নাটকীয় সংলাপ রচনায় উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন বাংলা নাটকে স্বদেশচেতনার আরোপ মধুস্দনের স্বাভাবিক বৈচিত্র্য সম্পাদনী বুদ্ধিরই অন্ঠতম প্রকাশ কোন দ্বিধা না রেখেই বলা চলে, দেশচেতনার প্রথম উপলব্ধি নাট্যাকারে গ্রথিত করেন তিনিই ১৮৬১ খুষ্টাকেই গোপনে “নীলদর্পণ” নাটক অন্বাঁদ করেছিলেন তিনি তারই আগে কিংবা পরে ১৮৬১ খুষ্টাবেই প্রৃষ্ণকুমারী* রচিত হয়। ১৮৬১ সালে ছুটি নাটকই তিনি রচনা করেছিলেন দেশচেতণা সময়ে তার চিত্তে ক্ষণকালের জন্য হলেও স্থাঁনলাভ করেছিল, কোথাও তা স্পষ্ট হয়নি বটে কিন্তু উপলব্ধি তাঁর সেকালীন প্রবনতার মধ্যে ধর! পড়েছিল “নীলদর্পণ” অনুবাদের দুঃসাহনসিকভাঁর যূলেও দেশগ্রীতির প্রভাব ছিল কথা অনস্বীকার্ধ | প্রসঙ্গত বলা যায় ১৮৬১ সালেই “মঘনণদ বধ কাব্যের প্রথম দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয়। “মেঘনাদবধ কাব্যেই” মধুস্দনের দেশচেতনার পুর্ণরূপ ধর। পড়েছিল। নাটক কাব্যে দেশোপলব্ধির ওসঙ্গটি বার বার ঘুরে ফিরে এসেছিল এই সময়টিতে। সময়ের যাবতীয় রচনার মধ্যেই এই বিশিষ্ট অনুভূতির প্রকাশ দেখি ১৮৬২ খুষ্টাব্দের প্রারস্ভতেই তিনি ইংলগ্ গমনের উদ্যোগ শুরু করেন-_স্থৃতরাং এই চেতনাটি অন্য কোনভাবে পরিবধিতরূপে প্রকাশ পায়নি

রাঁমনারায়ণ উমেশচন্দ্র মিত্রের সমাঁজপ্রেম থেকে যে নাট্যসাহিত্যের জন্ম__বৃহত্তর সামাজিক পটভূমিকাঁয় সমাঁজসেবাঁর সেই আদর্শ অবলম্বন করেই দীনবন্ধু রচনা করলেন “নীলদর্পণ৮ | সমাজ স্বদেশচিন্তার গভীরতা যে নাটকে প্রতিফলিত,_-সহান্ভৃতির তীব্রতাই যে নাটকের উৎকৃষ্ট নাট্যরস স্বজনের সহায়ক,-_ সেই নাটকের স্বদেশপ্রেমী নাট্যকার দীনবন্ধুকে নিছক সামাজিক নাটক রচন্কিত। বলে মনে করা যায় না। দীনবন্ধু সম্পর্কে সমালোঁচকবুন্দ যে শ্রদ্ধার্থ্য নিবেদন করেছেন অধিকাংশ স্থলেই তা স্বদেশপ্রেমী দীনবন্ধুর কথা স্মরণ করেই। শুধু, সামাজিক সমস্যা নয়, দীনবদ্ধুর বিক্ষুন্ধচিত্তের বিদ্রোহবহ্নি বিদেশী শাসকের অন্ভায় অত্যাচার দেখে ধুষায়িত হয়ে উঠেছিল। আন্তরিক বেদনাবোঁধের তীব্রতা থেকেই “নীলদর্পণের» পরিকল্পনা একদিকে স্বজনপ্রেম দেশবাসীর প্রতি মমত্ববোধ অন্তদিকে অত্যাচারিত, লাঞ্তিদের মুখপাত্ররূপে বিদেশী অত্যাঁচারীদের মুখোস খুলে দেওয়ার রাজনৈতিক প্রচেষ্টা নাটকের মাধ্যমে সফল করে তোলার দুরদশিতা নিয়েই

নাটক ৪০৭

দীনবন্ধুর আবির্ভাব | কিন্তু নাট্যকার দীনবন্ধুকে মাঝে মাঝে বড় শ্রীস্ত অবিচলিত মনে হয়। শুধু অন্তরভর] বেদনা নিয়ে কাতরোক্তিটুকু সম্বল করেই যেন বিনীত নাট্যকার রঙ্গমঞ্চে এসে ভূমিকাপাঠ করছেন মহারাণী ভিক্টোরিয়ার প্রশস্তি থেকে শুরু করে তদানীন্তন গর্ভনর জেনারেলদের প্রসঙ্গে দীর্ঘ প্রশংসাবাণী উচ্চারণ করেও দীনবন্ধু আত্মগোপন করেছিলেন কোন উদ্দেশ্যে? অথচ ইংরাজী সভ্যতার প্রতি বিমল অন্থরাগের সাড়ম্বর প্রচার কার্ধ চাঁলিয়েও ভবিষ্যতের সম্ভাবনার সত্যটি তিনি অনাবৃতভাবে «প্রকাশ করেছেন। যে উদ্দেশ্যে “্নীলদূর্পণ” রচনা, তার ভাবী ফলাফল ভূমিকাতেই ব্যক্ত করেছেন অকুতোভয়ে অত্যাচাপী নীলকর শাসক সংবাদপত্রের সম্পাদকের মুখ বন্ধ করেছে উৎকোচের সাহায্যে,_কিস্ত দীনবন্ধু সত্য উচ্চারণে দ্বিধা করেননি | “কিন্তু চত্রবৎ পরিবর্তন্তে ছুঃখানি স্থখানি চ, প্রজাবৃন্দের কথ সর্যোদয়ের সম্ভাবনা] দেখা যাইতেছে 1”

যে অভিজ্ঞতার বেদনা নিয়ে দীনবন্ধু নাটক রচনায় হাত দিয়েছিলেন তার আশুফলাফলও তার স্বচক্ষে দেখা বাংলাদেশের নির্যাতিত চাষীদের বিক্ষু প্রতিবাদের মধ্যেই দীনবন্ধু ভবিষ্যতের ছবি দেখেছিলেন। শাসক শোষিতের সংগ্রামে নির্বাক নাট্যকার দানবন্ধু শুধু যথাযথ চিত্রটি তুলে ধরেছিলেন নিখু'তভাবে নাটকের বক্তব্য তাই বিক্ষু নাট্যকারের আত্মকথা | অত্যাচার পীড়নের নির্মমতাই এঁতিহাসিক নিয়মে আত্মরক্ষার শক্তি জোগায়,_-সেই জাগরণের প্রত্যক্ষ ্রষ্টা দীনবন্ধু নাটক তাই গণজাগরণের আশ্বাস নিয়ে এসেছিল, ভবিষ্যতের স্গগভীর ব্যঞ্জনাবাণী নাটকের ভাষাঁতাঁত আবেদন। দীনবন্ধুর “সধবার একাদশী সম্বন্ধে কয়েকটি কথা” আলোচনা কালে তার পুত্র ললিতচন্দ্র মিত্র মন্তব্য করেছিলেন,

“দীনবন্ধুর এই সহানুভূতি পরছুঃখকাতরতা কেবল ব্যক্তি বিশেষের জন্থা দৃষ্ট হইত, তাহা নহে। ইহা দেশের দশের জন্য সর্বদাই জাগ্রত ছিল। দেশের ছু'খ দেখিয়া তাহার প্রাণ কাঁদিয়াছিল সেই ক্রন্দনের ফল--"নীলদর্পণ*। দশকে লইয়া সমাজ, সেই সমাজের জন্য তীহার প্রাণ কাঁদিয়াছিল- সেই ক্রন্দনের ফল “সধবার একাদশী” ।১৩

এই মন্তব্যটি দীনবন্ধু সম্বন্ধে একটি প্রতিষ্ঠিত মতামত দেশপ্রেমিক দীনবন্ধু সচেতনতা দেশপ্রেমসর্বস্ব নাটক রচনার মূলেই বর্তমান সুতরাং সামাজিক সাময়িক নাটক হিসেবে পনীলদর্পণ” আলোচিত হতে পারে কিন্ত নাট্যকারের

১৩, ললিতচন্দ্র মিত্র, সধবার একাদশী সম্বন্ধে কয়েকটি কথা, সধবার একাদণী, ১৯১৪

৪০৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

স্বদেশপ্রাণতা কোথাও অস্বচ্ছ নয় সামাজিক কোন গতাচুগতিক সমস্যা এটি. নয়-- নিছক সমাজ সংক্কারকের মনোবৃত্তিও নাট্যকারকে চালিত করেনি,--বিদেশী শাসনের 'ঘে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তিনি সঞ্চয় করেছিলেন “নীলদর্পণ” নাটকে তারই প্রতিফলন দেখি নীলকর সাহেবদের মনোবৃত্তির মূলে দীনবন্ধু দেখেছিলেন প্রচণ্ড স্পর্ধা ছুঃসাঁহস | শাসনের ভার এর! নিজেই তুলে নিয়েছে_-এদেশীয় নিরীহ প্রজার ধন- মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার এর? অবলীলাক্রমে পেয়ে এসেছে এদেশের কর্তৃত্বলাঁভের জন্য কোন বাধাঁকেই এই হীন অর্থলোঁভী নীলকর সম্প্রদায় তুচ্ছ করেছিল, আইন আদালত এদেরই স্বপক্ষে নবীনমাধবের নায়কত্বে শ্বরপুরের উত্তেজিত চাঁষীসম্প্রদায়ের নবজীগরণকে দমন করার পাশবিক উল্লাসে এরা মগ্ন দীনবন্ধু জাগরণের মূলে একটি কারণ দেখিয়েছিলেন বেগুনবেড়ের কুটিতে ধৃত সাধুচরণও রাইচরণকে কুটির দেওয়ান গোঁপীনাথ পরিচয় করিয়ে দেয়,

*্ধর্মীবতার, এই সাধুচরণ একজন মাতব্বর রাইয়ত, কিন্তু নবীন বসের পরামর্শে নীলের ধ্বংসে প্রবৃত্ত হইয়াছে ।"..ধর্মাবতার ! পল্লীগ্রামে স্কুলস্থাপন হওয়াতে চাষালোকের দৌরাত্ম্য বাঁড়িয়াছে।” [ ১ম অঙ্ক, ৩য় গর্ভাঙ্ক ]

পল্লীগ্রামে স্কুল স্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে চাষধালোকের দৌরাত্ম্য বাঁড়ার সংবাদটি নান। কারণেই অর্থপূর্ণ স্বাধিকারের প্রশ্রকেই যদি আত্মজাগরণের প্রথম লক্ষণ বলে স্বীকার করি-_সাধুচরণের মনেও সেই প্রশ্রই জেগেছিল। সাধুচরণই গোলোক বহুকে পরামর্শ দিয়েছিল-_“কর্তা মহাশয়, আপনিও দেশের মায়া ত্যাগ করুন। গতবারে আপনার ধান গিয়েছে, এই বারে মান যাঁবে।” [১ম অংক, ১ম গর্ভাংক ]

সাধুচরণ আর অজ্ঞ চাষী নয়-_আত্মঅধিকাঁরের দাবী সম্পর্কে সচেতন একটি মানুষ “নীলদর্পণে* তোরাপ রাইচরণ অজ্ঞ অসহায়ের মত নিক্ষল আক্রোঁশে মাথা কুটে মরেছে-_কিন্তু সাধুচরণের সচেতনতা লক্ষ্যণীয় চরম বিপদের মুহুূর্তেও প্রজাপালক নবীনমাধবের সর্বনীশের কথ শুনে আর্তনাদ করেছে,_

“আমার বোধ হয়, নীলকর নিশাচরের অত্যাচারাগ্ি বড়বাবু আপনার পবিত্র 'শোঁণিতদ্বীর নির্বাপিত করিলেন ।” [ ৫ম অঙ্ক, ওয় গর্ভাঙ ]

পল্লীগ্রামের অজ্ঞ চাষীও গ্যায় অস্তায়ের প্রশ্ন তুলতে পারে, এজন শিক্ষাকেই দায়ী করেছে নীলকর উড সাহেব,--'গবরণমেণ্টে বিষয়ে দরখাস্ত করিতে আমাদিগের সভায় লিখিতে হইবেক, স্কুল রহিত করিতে লড়াই করিব [১ম অঙ্ক, ৩য় গর্তাঙ্ক ]

এই ধৃষ্ঠতার যূলে শাসকোচিত বর্বরতা ছাড়া অন্ত কিছু থাকতে পারে না। এই কারণেই নীলকর অত্যাচার সমর্থন পায়নি- এদের নগ্নতা দেখে শিহরিত হয়েছিল শিক্ষিত মাজিতরুচি ইংরেজ দীনবন্ধুর রচন] কতিত্বও . প্রসঙ্গে প্মরশীয় |

নাটক ৪০৪১

প্নীলদর্পণের” ইংরাজী অনুবাদ প্রকাশ ইংলণ্ডেও তা নিয়ে আলোচনা - প্রত্যক্ষ ভাবে নীলআন্দোলনকে ত্বরান্বিত করেছিল অবশ্য এই অত্যাচারের ধৃমায়িত প্রতিবাদ একদিন সশব্দে ফেটে পড়তই। কিন্ত তার আগেই নাট্যকার দীনবদ্ধুর সাহিত্যিক প্রচেষ্টাই জয়ী হলো নীলআন্দোলনকে জাতীয় আন্দোলন বলা যাঁয় না কারণ সীমাবদ্ধ অত্যাচারের সীমিত সমস্যার মধ্যেই তা পর্যবসিত ছিল। তবু শাঁসক- শাসিত বোধের আলোকে এই সমস্থ্যা তার প্রতিকার চেষ্টার মধ্যে এক স্থগভীর গোতনা আছে। নিছক স্বানিক আন্দোলন হলেও নীল আন্দোলন বাংলাদেশে বিদেশী শাসকের বিরুদ্ধে প্রথম মুখর প্রতিবাঁদ | জাতীয় আন্দোলন বা স্বাধীনতা আন্দোলনের বক্তব্য আরও ব্যাপক বিস্তুত বলেই নীল আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত উদ্দেশ্যটিকে বিরাঁট বক্তব্যের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়] যায় না কিন্তু সর্বভারতীয় আন্দোলনের যূলে এই ধরণের স্থানিক আন্দোলনের কিছু ভূমিকা আছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের পূর্বাহ্ন বাংলা দেশের আঞ্চলিক সীমিত আন্দোলনের মীধ্যমেই জনগণের সম্মিলিত প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছিল “নীলদর্পণ” নাটক রচনার মূলে দেশাহ্বরাগের আদর্শ বর্তমান। প্রসঙ্গে সমালোচক শ্রীস্থকুমার সেনের মন্তব্য, “দীনবন্ধুর নাঁটকে সর্বপ্রথম দেশের শাসক-শাঁসিতের নিগুঢ় সম্বন্ধ, দেশের অর্থনৈতিক শোঁষণের কুৎসিত রূপ, সভ্যনামিক মানুষের বর্বর অন্তর, উদঘাঁটিত হইল ।-_“নীলদর্পণে* সমগ্র দেশের মর্মবেদনার প্রকাশ হওয়ায় দেশে যে সাড়া পড়িল তাহা ইতিপূর্বে কখন ঘটে নাই ৮১৪

নীলদর্পণের অভিনয় রঙ্গমঞ্চ ইতিহাসের আঁলোড়নকারী পষ্ঠারূপে পরিগণিত হবে ১৮৭২ শনের ডিসেম্বর মাসে ন্তাশনাল থিয়েটরের দ্বারোদঘাটনের স্থচনা হয়েছিল দীনবন্ধুর 'লীলাবতী* নাটকের অভিনয় দিয়ে, কিন্ত “নীলদর্পণই” গ্তাশনাল থিয়েটরের প্রথম অভিনয় এই অভিনয়ের স্থাত্র ধরেই সমস্ত পত্রপত্রিকায় “নীলদর্পণ” পাটকের অভিনয় সম্পকিত আলোচনার ঝড় বয়ে গেল। “বঙ্গীয় নাট্যশালার ইতিহাঁসে” শ্রীত্রজেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় সম্পর্কে যে বিস্তৃত বিবরণ পরিবেশন করেছেন, “নীলদর্পণের” অভিনয়-এর সমস্ত সংবাঁদও সেখানে উল্লিখিত হয়েছে

থিয়েটরের "ন্যাশনাল নামকরণ নিয়ে যখন তুমুল বাঁদ-প্রতিবাদের স্থচনা হলো, “নীলদর্পণের” অভিনয় প্রসঙ্গে ন্যাশনাল পেপার-সম্পাদক নবগোপাঁল মিত্র অভিনন্দন জানালেন,

১৪. সুকুমার লেন, বাংল! মাহিত্যের ইতিহাল। ২য় খণ্ড, বন্ধমান সাহিত্য সভা, ১৩৬২1 পৃঃ 4৮ |

৪১৩ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

৮0175 55216 19 06 0800108] 10000708102,৮৭ ম্যাঁশন্তাল পেপার | ১১ই ডিসেম্বর ১৭২ “অমৃত বাজার পত্রিকায়” 'নীলদর্পণের” অভিনয় প্রসঙ্গের ব্যাখ্যাটও সময়োচিত হয়েছে--"শ্বেতাঙ্গগণের পক্ষপাতত্ব অত্যাচার অনেকেই মধ্যে মধ্যে দেখিতেছেন কিন্তু তথাপি সেই সকল কার্য রঙ্গভূমিতে অভিনীত দেখিলে এক অপরূপ মনোভাব মনোমধ্যে প্রকাটিত হইতে থাকে |” অমৃত বাজার, ১৪ই ডিসেম্বর ১৮৭২ উল্লেখযোগ্য সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে “5:05115,2991% পাত্রকার ২*শে ডিসেম্বর ১৮৭২, সংখ্যায় 'নীলদর্পণ, নাটকের প্রকাশ্য অভিনয় যে সত্যিই বিপজ্জনক ব্যাপারে ভবিষ্যতবাণী করে ইংলিসম্যান মন্তব্য করেছিল, 4৯180520202 06115 85 61590 6156 0125 1] 1021095 19 51301015 60 ০০ 9০654 20 0) 861002.] 11759606 11) 0019,521000. (0070510511105. 0080 0102 1২০৬৫. 100. 1,036 ৪5 56180510080 60 0082 00010015 1709115012- 10210 001 0181891511175 006 9195, ৬510101) ৯25 70101701015020 105 0106 13151 0০016 2 11192] 010 70110705219, 16 565005 501805০ 01080 50৬61000610 510014 ৪1107 19 15912560)090100 10. 081০002, 916585 16 1085 £006 €1070051) 00051721005 01 5092006 ০0100109061)0 5213501 ৪7)0 0136 11211005. 02105 02210 550০1524.*৬ সব'আলোচন। থেকেই স্প্টতহ বোঝা যায় অভিনয় জনমনে আলোড়ন সষ্িতে সমর্থ হয়োছল। “জাতীয় নাট্যশালায়” জাতীয় চেতনা জাগানোর একটা অথখহ হর্ষিত রূপেহ যেন 'নীলদর্পণের' অভিনয় হলো। নবগোপাল মিত্রের স্তাশনাল পেপার” 'নালদর্পণ' অভিনয়ের প্রসঙ্গে যে মন্তব্য করেছে-__তার তাৎপর্যাটও, লক্ষ্যণীয় আভিনয়কে নাট্যজগতের একাট আবম্মরণীয় ঘটনা বলেহ প্রমাণ করতে চেয়োছলেন তান। 'নীলদর্পণের” আতনয় থেকেই রঙ্গমঞ্চ আমাদের, জাতায় জীবন একক্মত্রে গাথা হলো পরবর্তী যুগে নাট্যশাল। স্বাধানতা৷ আন্দোলনে জাতায় চেতপাপসঞ্চারে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূঁমক। গ্রহণ করেছিল,- ১৮৭২ সালের শুভহচনায় তা আভাধিত হয়েছিল বাংল দেশে নাট্যাভিনয়ের সঙ্গে জনজীবনের সংযোগ সাধণেও দীনবন্ধু মিত্র উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করলেন। সম্রদ্ধ চিত্তে একথা স্মরণ করেছিলেন ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়,-_“দীনবদ্ধুর নিকট বঙ্গীয়

১৫. ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বঙ্গীয় নাট/শালার ইতিহাস তৃতীয় সংক্ষরণ থেকে উদ্ধত। ১৬, ব্রজেজ্ত্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যার, বঙ্গীয় নাট্যশালার ইতিহাস তৃতীয় সংস্করণ থেকে উদ্ধৃত

নাটক ৪১১

নাট্যশালার খণ অপরিশোধ্য দীনবদ্ধুর নাটক না থাকিলে স্কাশনাল থিয়েটরের এত প্রতিষ্ঠা হইত কি না সন্দেহ 1৮১৭

“নীলদর্পণের” প্রকাশ থেকেই যে আলোড়ন বাংলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল পরবর্তী কালে তা থেকেই নীল আন্দোলনের শুরু। বাংলাদেশের এই আন্দোলনটির অবিমিশ্র ফলাফল আশাপ্রদ। পাদরী লং-এর মত বিদেশীকেও. দীনবন্ধু দলে টাঁনতে পেরেছিলেন-তার অকুতোভয় সমালোচনাশক্তি ও. দুর্জয় সাহস জাগানোর যূলেও “নীলদর্পণের” মত একটি স্বচ্ছদর্পণের প্রয়োজন ছিল। ভয়াবহ অত্যাচারের হাত থেকে অসহায় মানুষের আপাতঃ উদ্ধারের শুভ উদ্দেশ্যেই এটি লেখা সমগ্র ইংরাজ জাতির প্রতি দীনবন্ধুর জাতীয়চেতনাজাত কোন খিদ্বেষ ছিল না। সে যুগেও পরার্থপর হংরেজের উজ্জ্বল উদাহরণ অনেক শিক্ষিত মানুষকেই আচ্ছন্ন করেছিল-_দীনবন্ধু তাঁর ব্যতিক্রম নন। তিনি একশ্রেণীর লোভী ব্যবসায়ীদের নিম্মতা প্রত্যক্ষ করেই ক্ষু্ধ হয়েছিলেন নতুবা ইংরাজ প্রশন্তি ই'্রাঁজমুগ্ধতা দীনবন্ধুর মনে অন্য কোন বৃহত্বর বাঁসনা জাগানোর পক্ষে মোটেই অনুকূল ছিল না। এই ইংরাজপ্রীতি স্বদেশপ্রীতির ছৈত অস্তিত্ব একই মনে বাসা বেঁধেছিল--সেও নিতান্তই বাস্তব অভিজ্ঞতার ফলে। দীনবন্ধু সমগ্র ইংরাঁজ জাতির সন্গুণের প্রশংসা থেকে মুহুর্তের জন্য বিরত ছিলেন না,_ভূমিকায় তারই পরিচয় মেলে,-- |

-হে নীলকরগণ! তোমাদিগের নৃশংস ব্যবহারে প্রাতংস্মরণীয় সিডনি, হাউয়ার্, হল প্রভৃতি মহানুভব দ্রারা অলংকৃত ইংরাজকুলের কলঙ্ক রটিয়াছে। তোমাদিগের ধনলিপ্পা কি এতই বলবতী যে তোমরা অকিঞ্চিংকর ধনানুরোধে ইংরাজ জাতির বনুকালাঞজিত বিমল যশস্তামরসে কীট স্বরূপে ছিদ্র করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছ।”

ইংরাজ জাতির চরিত্রগুণাচ্ছন্ন দীনবন্ধু স্বরপুর গ্রামের শিক্ষিত পরিবারের কর্রী: সাবিত্রীর মুখেও অন্থরূপ সংলাপ আরোপ করেছেন,

"নীলকর সাঁহেবেরা সব কর্তে পারে, তবে যে বলে সাহেবের বড় স্থবিচার করে, আমার বিন্দু যে সাহেবদের কত ভাল বলে, তা এরা কিসাহেব না, না এরা সাহেবদের চণ্ডাল।” প্রথম অঙ্ক, ৪র্থ গর্ভাঙ্ক

তবু স্বদেশবাসীর অসহায় রূপটি প্রত্যক্ষ করে দীনবন্ধু চঞ্চল হয়েছিলেন সহাহুতৃতি আন্তরিকতায় যে চরিত্রগুলো উজ্জল__দীনবন্ধুর একটু অসাবধানতায়:

১৭. ব্রজেন্দ্রনাখ বন্দ্যোপাধ্যায়, বঙ্গীয় নাট্যশালার ইতিহাস তৃতীয় সংস্করণ

১২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

তা প্রাণহীন হতে পাঁরত। ভদ্রেতর চরিত্রের ব্যর্থতা থেকেও নিপীড়িত প্রজাফুলের আর্তশাদ যেন দীনবন্ধুর মর্মতল আলোড়িত করেছিল কুতরাঁং 'নীলদর্পণ' যে সাধারণ মানুষের দিনযাঁপনের-প্রাণধারণের প্রত্যক্ষ প্লানিরও দর্পণ তাতে সন্দেহ 'নেই। ইংরাঁজশ্রীতির প্রসঙ্গটি ভূমিকাকারে ব্যক্ত হয়েছে বটে, __সাধারণ পল্লীবাসীর অসহায়ত্ব প্রচারে অনেক বেশী দক্ষতা সহমমিতার পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি স্থতরাঁং প্রকাশ্য ইংরাজপ্রীতির ভূমিকাটুকুর আড়াল না থাঁকলে দীনবন্ধু নাটক বাংলাতেই প্রকাশ করতে, প্রচার করতে পারতেন কি না সন্দেহ। সব অন্তণিহিত মনোভাবের ব্যাখ্যাকালে স্বদেশপ্রেমী দীনবস্ধুর আত্মাটিকেই যেন আবিষ্কার করি। নাটকে দীনবন্ধুর স্বাদেশিকতা অন্তঃসলিলা হলেও প্রকাশ্যভাঁবে তা দীনবন্ধুর একটি কবিতাতে পাওয়া! যাচ্ছে। ১৮৬৯ খুষ্টান্দে ডিউক অফ. এডিনবরার কলিকাতা আগমন উপলক্ষ্যে দীনবন্ধু 'লয়ালটি লোটাস” কবিতাটি রচনা করেন। তবে একটি স্তবকে অন্তনিহিত বেদনাটি শ্রন্ধাকারে ঘোষণা

করেছিলেন দীনবন্ধু, রাজপুত্র সিংহাসনে, বড় শুভদিন,

কে বলে ভারতে আর স্বাধীনতা হীন ? আপন নয়নে তুমি, দেখিলে ভারত ভূমি, আনন্দ সাগরে সব দেখিলে বিলীন ; বলিবে বিলাতে গিয়ে শুভ-সমাচার, ভাসিয়াছে ভীরতের ভক্তি পারাবার

স্বাধীনত। শব্দটির অর্থ জেনেই কবি প্রশ্ন করেছিলেন-_-“কে বলে ভারতে আর স্বাধীনতাহীন ?*_যারা ভারতবর্ষ পরাধীন বলে আক্ষেপ হতাঁশা পোষণ করেন-_ কবি প্রত্যক্ষভাবে তাদেরই উত্তর দিয়াছেন এই অংশটিতে। রাজরোষের হাত থেকে আত্মরক্ষার বিচিত্র কৌশলটি সে যুগের সাহিত্যে বারবারই দেখা গেছে। তাই “নীলদর্পণের আগাগোঁড়া জাতীয় চেতনায় উদ্দীপিত হয়েও দীনবন্ধু ভূমিকায় ইরাঁজ প্রশস্তি না করে পারেননি

"সধবার একাদশীতে*-ও সমাঁজচেতনার প্রতিফলন রয়েছে,_মধুস্দনের “একেই কি বলে সভ্যতার” সমাজচিন্তা প্রায় পেশচিন্তার গভীরতা বহন করছে। “সধবার একাঁদনীতে” নিমটাঁদের অধঃপতনে যে সহানুভূতি সঞ্চারে সিদ্ধ হয়েছেন দীনবন্ধু- ধার মূলে রয়েছে শিক্ষিত বিপথগামী যুবকচরিত্র অহুসন্ধান। ইয়ংবেহ্গলের আভ্যন্তরীণ রূপটি মধুহৃদন তুলে ধরেছিলেন, দীনবন্ধু একটি প্রতিভাবান ইয়ংবেল সভ্যের অপমৃত্যুর ইতিহাস রচনা করেছেন এই ইতিহাস অধঃপতনের আলোকে

নাটক ৪১৩,

আত্মবিশ্লেষণের হযোগদান বরেছে। সমাজ্ব-সংস্কারের ব্রত স্বদেশপ্রেমিকতায়, পার্থক্য থাকতে পারে--কিন্ত সমাজের হিতকাঁমনায় যে লেখক একটি উজ্ছল চিত্র অঙ্কের সামর্থ্য অর্জন করেছেন তিনি নিশ্চয়ই স্বদেশপ্রেমিক | নিছক সমাজচিত্তার সঙ্গে সাহিত্যিককের সমাজ চিন্তার পার্থক্য এখানেই তিনি ব্যক্তিগত চিন্তাকে সর্বজনীন চিন্তায় পরিণত করেন। প্রসঙ্গে নাট্যকার দীনবন্ধু সম্পকে তার পুত্রের উক্তিটিকে' অত্যুক্তি বলা চলে না,-_“দশকে লইয়া সমাজ, সেই সমাজের জন্য তাঁহার প্রাণ কাদিয়াছিল--সেই ক্রন্দনের ফল--"সধবাঁর একাদশ” মধুহৃদন দীনবন্ধুর সমাজ- চিন্তার মধ্যে যে প্রত্যক্ষ স্বদেশভাবনার পরিচয় ছিল অন্তান্ত নাট্যকারদের রচনায় তা ধর পড়েনি। অথচ সে যুগের কবিসশ্প্রদায় নানাভাবে স্বদেশচিন্তীবিষয়ক কাব্য, কবিতা লিখেছিলেন বস্তুতঃ জাতীয়চেতনার স্থপ্ত ধারা কাব্যের আত্মায় প্রতি বিশ্বিত হয়েই স্বদেশচিন্তার স্ষরণ ঘটায়। রঙ্গলাল থেকে নবীনচন্দ্র পর্যন্ত বাংলা কাব্যে একটি রই ঝঙ্কৃত হয়েছিল, সাধারণ ভাবে তার নাম দেওয়া যায় স্বদেশপ্রেমের, স্থর। বাংলা নাটকে স্বদেশচিত্তার যথার্থ প্রতিফলন দেখেছি সাধারণ রঙ্গালয়, স্বাপনেরও পরে ১৮৭২ সালের পাবলিক থিয়েটরের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গেই জন- চেতনার সঙ্গে নাটকের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা দেখা দেয়। ইতিপূর্বে নিতান্ত ব্যক্তিগত রঙ্গমঞ্চে নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর মনোমত নাটক রচনা অভিনয়ের আয়োজনই বেশী দেখা যায় অবশ্য দীনবন্ধু মিত্রের “নীলদর্পণ” 'সধবার একাদশী" নাট্যকারের মহৎ প্রেরণাসঞ্জাত সৃষ্টি। ১৮৭২ সালে সর্বজনীন রঙ্গালয়ে 'নীলদর্পণই" প্রথম অভিনয় যোগ্য সৃষ্টি বলে অভিণন্দিত হয়েছিল। স্তরাং নাটকে স্বদেশপ্রেমের মত সেকালীন মনোভাবপুষ্ট একটি আন্তরিক ভাবনাকে যথাযথভাবে রূপদানের প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে রঙ্গমঞ্চেরও যোগাযোগ রয়েছে। জনগণের অর্থান্থকৃল্যে যে- রঙ্গমঞ্চ পরিচালিত হয়,-জনমনের সংবাদ সেখানে রাখতেই হয়। হিন্দুমেলার জাতীয়তার উদ্বোধন চেষ্টার প্রত্যক্ষ প্রভাব দেখা দিয়েছিলো জাতীয় রঙ্গমঞ্চে-_ স্বদেশ ভাবান্চপ্রাণিত নাটকের অভিনয়ে! স্তরাং ধরণের নাটকাভাবও বিদগ্ধ ব্যক্তিদের ভাবিয়ে তুলেছিল এধরণের নাটকের প্রয়োজন ধারা প্রথম উপলব্ধি করেন তার! নাট্যালয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ | এই সময়ে রঙ্গমঞ্চে দীনবন্ধুর 'নীলদর্পণ' ছাড়াও “সধবার একাদশী”, লীলাবতী”, 'জামাইবারিক*, বিয়েপাঁগল! বুড়ো” “নবীন তপস্থিনীর” অভিনয়ের সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু নিছক প্রহসনের অভিনয় দেখে তৃপ্ত হয়নি রসিকসমাজ জাতীয় নাট্যসমাজ সম্পর্কে দীর্ঘ সমালোচনায় অমৃত বাজার পত্রিকার মন্তব্যও লক্ষ্যণীয়। নাট্যশীল1 স্থাপন নাট্যাভিনয়ের আদর্শ সম্বন্ধে, অমৃতবাজার পত্রিকায় সমালোচনায় স্বদেশীয়ানার মনোভাবটি চোখে পড়ে।

প্র 8.2 ৯.

৪১৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

দ্যখন "জাতীয়, বিশেষণটি ধারণ করা হইয়াছে, তখন যাহাতে সেই গুরু বিশেষণের মর্যাদ! থাকে, সর্বতৌভাবে তাহার চেষ্টা পাওয়া উচিত। তাহা করিতে

গেলে প্রথমতঃ এমন বিষয় নির্বাচন কর এবং সেই বিষয়কে এমন ভাবে লিপিবদ্ধ

কর] গই, যাহাতে আমোদ কৌতুক ব্যতীত সম্নীতি শিক্ষা হয়। যাঁহাতে স্বদেশের বিশেষ বিশেষ পূর্ব ঘটনা বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত স্থানীয় জীবনবৃত্বান্ত বণিত হইয়া স্বদেশস্থ লোকের মনপ্রাণ স্বদেশান্রাগে প্রকৃত প্রস্তাবে উত্তেজিত হয় ।”১৮

নাটক যে শক্তিশালী জনমাঁনস সংগঠনের মাধ্যম, প্রথম যুগের নট্যিরসিকরাই

তা বুঝেছিলেন। এমন প্রত্যক্ষ নির্দেশ সমালোচনার নির্ভীক তদ্দিটি সত্যই

প্রশংসনীয় পরবর্তী কালে রঙ্কমঞ্চের অভিনয় জাতীয় আন্দোলনের উল্লেখঘোগ্য প্রেরণা দান করেছিলো নাট্যকারগোঠী সেদিন বিষয় নির্বাচনে অসামান্য দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন দেশীত্ববোধের অনুভূতি বিস্তারের অভিনব স্থযোগ দান করেছিলেন নাট্যকার, নাঁট্যাভিনেতা রঙ্গমঞ্চের কর্ণধীরগণ। 'মধ্যস্থ' পত্রিকার মততব্য ১”

প্যদিও এই নাট্যশালা সাপ্তাহিক কখনো কখনে। অর্দসাপ্তাহিক রূপে কলিকাঁতার মধ্যে একটি বিশেষ আঁমোদ কৌতুকের স্থান হইয়াছে, কিন্তু তদ্যতীত অন্য উচ্চতর উদ্দেশ্য যে অধ্যক্ষগণের আছে, তাহা পর্যন্ত আমর! দেখিতে পাইলাম না। যে আমোদ দিতেছেন, তাহাকেও সম্পূর্ণ রূপে বিশুদ্ধ আমোদ বলা ভার। কয়েক রজ্রনীতে এমন সকল নাঁটকাংশের অভিনয় হইয়াছে, যাঁহা ত্যাগ করাই উচিত ছিল। “জাতীয় নাঁট্যসমাজ" এই নামটি অতি উচ্চ। এই নাঁম ধারণ করাতে তাঁহাদের নিকট কেবল আমোঁদ ব্যতীত আরো যে উচ্চ আশা আছে, এবং তাহাঁরাও যে সে আশা পূরণের আঁশ দিয়েছিলেন এখন কি তাহা ভুলিয়া গেলেন ?৯

এই নির্ভীক সমালোচনাই নাট্যকার রঙ্গালয়ের কর্ণধারদের সচেতন করেছিলো] নিছক প্রহসনের সন্ধে ক্ষুদ্র রূপক নাট্য [739৮” ] যৌগ করে অভিনয়ের আকর্ষণ

বৃদ্ধি করার কৌশলটি আবিফার করলেন নাঁট্যালয়ের পরিচালকবর্গ। দীনবদ্ধুর

“জামাহি বাঁরিক” প্রহসন অভিনয়ের সঙ্গে কিরণচন্ত্র বন্য্যোপাধ্যায়ের “ভারত মাত” নামক হ্ষুদ্র রূপকনাটিকাঁটিও অভিনীত হয়েছিল এভাবে প্রহসনের অনাবিল হান্যরসের সঙ্গে দেশভাঁবনার যোগ স্থাপন করে নাট্যাভিনয়ের গুরুত্ব বাঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। যিনি এই অতিরিক্ত নাটকের রচনাঁকার, নাট্যালয়ের নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ

১৮. ব্রজেন্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বঙ্গীয় নাট্যশালার ইতিহায। ভূতীয় সংস্করণ থেকে উদ্ধ'ত। ১৯, ব্রজেন্রমাথ বন্যোপাধ্যায়, বল্ীয় নাটাশালার ইতিহাসে তৃতীয় সংস্করণ খেকে মুদ্রিত

নাটক ৪১৫

কাজে - এবং অভিনেতারূপেও তাঁর একটি পৃথক পরিচয় রয়েছে সংবাদপত্রের সমালোচন! সম্বল করে ধাদের পথ চলতে হয়--তাঁদের হয়ত ধরণের কৌশল অবলম্বন করাই স্বাভাবিক, কিন্তু এখানে দেশভাবনার উল্লেখযোগ্য প্রকাশ দেখে আমর] বিস্মিত না হয়ে পারি না ব্বদেশচিন্তার গভীরতাই এই ছোট নাটিকার মধ্যে প্রতিফলিত। ত্বদেশপ্রেমের অনুভূতি সজনে এই ছোট নাটিকাটির অবদান বড় কম নয়। আঁপল নাটকের সমালোচনার সঙ্গে এই ক্ষুদ্র নাটিকার আলোচনা প্রসঙ্গে অম্ৃতবাজার বলেন,__

“গত শনিবার হ্ভাঁশন্যাল থিয়েটরে “জামাই বারিক” প্রহসন অভিনয়ের পর “ভারত-মীতার” একটি দৃশ্য প্রদশিত হইয়াছিল দৃশ্টের কৃতকার্ধতা সম্বন্ধে আমর] এই বলিতে পারি যে, উহা দেখিয়া শ্রোতৃবর্গ প্রকৃত প্রস্তাবে মোহিত হইয়াছিলেন। কোন অভিনয়ে পঞ্চশতাধিক লোকের ১৫ মিনিটকাল পর্যন্ত এরূপ আগ্রহ স্তস্তিতভাব আমরা কখন প্রত্যক্ষ করি নাই। শ্রোতৃবর্গের দীর্ঘনিশ্বান রোদন- ধ্বনিতে কেবল মধ্যে মধ্যে নিস্তবতা ভঙ্গ হইতেছিল। সেদিন গ্ভাশনাল থিয়েটারে ধাহার। উপস্থিত হইয়াছিলেন, তাহার! সেখান হইতে এমন একটি ভাব অর্জন, এমন একটি শিক্ষা লাভ করিয়া আসিয়াঁছেন, যাহা কশ্থিন কালে বিনষ্ট হইবে না 1৮২০

“ভারতমাতার” অভিনয় প্রসঙ্গে অমুত বাঁজার পত্রিকার মন্তব্যে বিচক্ষণতা দূরদশিতাই ধরা পড়েছে দর্শকের মনোমত পরিবেশ সৃষ্িতে সক্ষম হয়েছিল নাটিকাটি, এবং এই অভিনয়ের আলোচনা থেকে সে যুগের দর্শকসমাঁজের চরিব্রও স্পষ্ট হয়ে উঠে। কিন্তু নাটিকাটিতে উচ্চাঙ্গের নাটকীয় কৌশলের হাস্যকর প্রয়োগ রয়েছে, দুর্বল কল্পনা গতীর ভাবাবেগই অষ্টার যূলধন। অথচ এই তুচ্ছতম হুষ্টিও দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছিল,_-এ থেকেই সে যুগের দর্শকদের চাহিদার খতিয়ান করা চলে হিন্দুমেলাঁর জাতীয়ভাবটি জনমনে দৃঢ় আঁসন লাভ করেছিল, --তাঁর দেশের জন্য চিন্তা করতে শিখেছ্িল ।-- দেশের দুরবস্থার চিত্র দেখে সচেতন হবার একান্ত প্রয়াসের সাধনায় মগ্ন ছিলেন সে যুগের শিক্ষিত সমাজ দর্শক হিসেবে “ভাঁরতমাতার” অন্তমিহিত সতটি তারা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন, নাট্যকার রঙ্গালয়পরিচালক উভয়ের কাছেই এটি একটি সংবাদ কারণ এর ঠিক অব্যবহিত পরেই দেখব ক্ষুদ্র নাঁটিকাকারে নয়, পুর্ণাঙ্গ নাটকাকারেই স্বদেশপ্রেম সম্বল করে দেশপ্রেমী নাট্যকারের আবির্ভাব লগ্ন সমাগত সুতরাং “ভারতমাতা”” সৃষ্টি হিসেবে ব্যর্থ হলেও অরষ্টা হিসেবে নাট্যকার কিরণচন্ত্র বন্দোপাধ্যায়ের নাম প্রসঙ্গে

বজেজ্্রনাথ বন্দোপাধ্যায় বঙ্গীয় নাট্যশালার ইতিহাস তৃতীয় সংহ্বরণ থেকে মুজ্িত।

৪১৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেষ

স্বরণীয় হয়ে থাকবে | বাংল! নাটকে স্বদেশপ্রেম প্রবর্তনের প্রথম প্রয়াস তারই! ক্ষুদ্র নাঁটিকাটিতে তিনি স্বদেশের একটি নিখুত রূপ ফোটানোর চেষ্টা করেছিলেন _-কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে তাতে কিছু অস্কবিধ আছে বলেই রূপকাকারে বক্তব্যটি স্পই করেছেন তিনি।

নাটিকাটির উৎসর্গপত্রে নাট্যকার মহারানী স্বর্ণময়ী দেবীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, এক্ষণে আমি ছঃখিনী ভারতমাতাকে সন্তানগণের সহিত আন্তরিক আহ্লাদ যত্বের সহিত আপনার কোমল করে অর্পণ করিলাম ।”২১

আবেদনটি অতি করুণ ভারতমাতার প্রসঙ্গে ছুঃখিনী বিশেষণটির প্রয়োগে নাট্যকার ভারতবর্ষ সম্পর্কে তাঁর আন্তরিক অন্ভৃতির সংবাদটি জ্ঞাপন করেছেন পরাধীন জননীকে ছঃখিনী বলেই কল্পনা করেছিলেন সে যুগের কবিসম্প্রদায় নাট্যকার শুধু কাব্যিক কল্পনাটিকেই মৃতিমতী দুঃখিনীরূপে জনগণের সামনে উপস্থিত করেছিলেন নাট্যকারের পরিকল্পনার যূলেই দেশচেতনা'র সুগভীর স্পর্শ অন্থৃতব করা যাঁয়। জাতীয় নাট্যশালায় বিদগ্ধ উৎস্কৃক দর্শকের চিন্তা দেশাহুভব জাগানোর সচেতন প্রয়ান নাঁটিক! রচনার মূলে রয়েছে। নাটক আরস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রধারের প্রবেশ বর্ণনীয় বিষয়ের আভাসদানের চেষ্টাটিও লক্ষণীয়। স্ব্রধার উদ্দেশ্ের ব্যাখ্য! প্রপঙ্গে বলেছে,__

*“ভারত-ভূমির ভারত সম্তানগণের বর্তমান দুরবস্থা প্রদর্শনই ভারতমাতার উদ্দেশ্য | যগ্যপি সমাগত স্থধীমগ্ডলীর একজনও এই অভিনয় দর্শনে ভারতমীতার দুঃখ দূর করতে একদিন যত্ব পাঁন, তাহা হলেই আমার গ্রন্থকর্তার শ্রমসফল ।”

উদ্দেশ্যটিই দেশপ্রেমাত্মক। ভারতমাতার যে ভয়াবহ রূপ তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন, দর্শকের দেশপ্রেম জাগাঁনোর পক্ষে সেটুকুই যথেষ্ট কিন্তু সেই বিশুদ্ধ স্বদেশান্ৃভৃতির প্রেরণায় এগিয়ে এসে দেশমাতৃকার ছঃখমোচনের ব্রতপালন করতে হবে--এই আহ্বান বাণী ধ্বনিত হয়েছে হ্ত্রধারের বক্তব্যে। সমগ্র নাটিকাঁটিতে নাট্যকার মহাখেদে ভারতবাসীর দুখ দৈগ্ভের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন ভারতমাতা স্বয়ং একটি চরিত্র রূপে কল্পসিত। ভারত লক্ষমীকেও একটি পৃথক চরিত্র রূপে কল্পনা করা হয়েছে ভারতের অবর্ণনীয় লাঞ্ছনার বর্ণন! না দিয়ে নাট্যকার সংগীতের আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। তাছাড়া আলোক-সম্পাতের ইঙ্গিতটুকুও রয়েছে মঞ্চ সম্পকিত অভিজ্ঞতার সাহাষ্যেই ধরণের প্রত্যক্ষ নির্দেশ দেওয়া সম্ভব হয়েছে নাট্যকার যেন পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহের দর্শকচিত্তের গোপন সংবাঁদ নিয়েই দৃশ্য সাঁজিয়েছেন। সংগীতের মাধ্যমে বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করারও স্ববিধ। হয়েছে

২১, কিপ্বপচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়, ভারতমাত। ১৮৭৩

নাটক ৪১৭

হিমালয় পর্বতের ওপরেই ঘটনাঞ্ছল পরিকল্পিত ভারতমাতার চিন্তামগ্রা রূপটি প্রথম দৃশ্েই দেখা যাবে নিদ্রিত ভারতসন্তানদের সামনে মৃতিমতী বেদনারূপিনী এই ভারতমাতা ভারতলক্ীর শ্রবেশের সঙ্গেই সঙ্গীত আরম্ভ হয়। শ্বদেশী- সঙ্গীতের বক্তব্য আমরা ইতিপূর্বেই বহু দেশপ্রেমযূলক কবিতায় পেয়েছি তবু দেশাত্মবোধক সঙ্গীতের একটি বিশেষ আবেদন রয়েছে হিন্দুমেলায় দেশাত্মবোধক কবিতা পঠিত হোতো,__দেশাত্মবোধক সঙ্গীত প্রচারের ব্যবস্থাও ছিল। নাট্যকার কিরণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় হিন্দুমেলার দ্বারাই প্রভাবিত। জাতীয় ভাবোদ্দীপক নাটক রচনার প্রথম শুরু 'ভারতমাঁতা” রূপক নাটিকায়,_দেশাত্ববোধক সঙ্গীতের আরোপও সর্বপ্রথম নাটিকায় দেখি ন্তাঁশনাল থিয়েটরে দেশীত্মবোঁধক নাটকের সর্বপ্রথম অভিনয় এটি এবং সেকাঁরণেই দর্শকের অভিনন্দন লাভে ধন্য হয়েছিলেন নাট্যকার ১৮৭৫ সালে মনোঁমোহন বহ্ন “হরিশচন্দ্র” নাঁটকে স্বদেশী সঙ্গীত আরোপ করেছিলেন হিন্দুমেলার অন্যতম উদ্যোক্তা হিসাবে সব সঙ্গীত তীঁকে লিখতে হয়েছিল ।-_ পরবর্তীকালে পৌরাণিক নাটকে কালানৌচিত্য দৌষ ঘটিয়েও তিনি স্বরচিত স্বদেশী- সঙ্গীত আরোপ না করে পারেননি স্বদেশীয়ানীর জোয়ার এভাবেই সে যুগের সমস্ত ভাবুক কবি সম্প্রদায়ের হৃদয় অধিকার করেছিল। নাট্যকার কিরশচন্দ্রে কৃতিত্ব এই যে, তিনি উপযুক্ত ক্ষেত্রেই দেশাত্মবোধক সঙ্গীত আরোপ করেছিলেন

সঙ্গীতের বক্তব্যটি ন।ট্যকারেরই গভীর দেশানুভৃতির ফলমাত্র হিমালয়ে ভাঁরতমাতাঁর শোঁকমগ্না রূপটি ব্যাখ্য! করার উদ্দেশ্টেই সঙ্গীতটি গীত হয়

মলিন মুখ চন্দ্রমা ভারত তোমারি রাত্র দিবা ঝরিছে লোঁচন বারি

দেখগো ভারতমাঁতা তোমারি সন্তান

ঘুমায়ে রয়েছে সবে হয়ে হতজ্ঞান

সবে বলবীর্যহীন, অন্ন বিনা তন্ুক্ষীণ ;

হেরিয়ে এদের দশ] বিদরিয়ে যায় প্রাণ

নত বাতি নর

দুঃখ যন্ত্রণা হতে কররে মোরে উদ্ধীর |

হইয়ে তোঁদের জননী, পরাধীনা৷ অভাগিনী,

জ্বালা সহে ন' প্রাণে হর দুঃখ হর হর।

স্বাধীনতা মহাধন বলনারে কি কারণ

'লভিবারে বাঁছাধন হও না কেশ তৎপর ২৭

৪১৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

স্বয়ং ভারতলক্ষীর উক্তি বলে সঙ্গীতটির আবেদন গভীর তাৎপর্য বহন করছে। ভারতমাতা ভারতলক্ষ্ীকে চরিজ্র হিসেবে কল্পনা করে নাট্যকাঁর দুরদশিতার পরিচয় দিয়েছেন সম্পূর্ণ কাল্পনিক হলেও বিষয়টির সঙ্গে সেকাঁলীন চেতনার যোগাযোগ অত্যন্ত গভীর দেশমাতাঁকে বন্দনা করেই বঙ্কিমচন্দ্র ১৮৭০ সালে “কমলাকান্তের দপ্তরে” “আমার ছুর্গোৎসব” প্রবন্ধটি রচনা! করেন ছুর্গোংসবে তিনি তুর্গাপ্রতিমার পরিবর্তে দেশজননীকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন

“এই কি মা? হ্যা, এই মা। চিনিলাম, এই আমার জননী জন্মভূমি-_-এই মূন্ময়ী-_যৃত্তিকারূপিনী-_অনন্তরত্বভূষিতা-_এক্ষণে কালগর্ভেনিহিতা |”

কিন্ত নাট্যকার দেশজননী ভারতমাতাকে দর্শকের সামনে এনেছেন প্রাণময়ী, সচল। কিন্তু বেদনার প্রতিযূতি ভারতমাতা স্বয়ং লোকচক্ষুর সামনে উপস্থিত হয়েছেন ভারতমাতার আর্তনাদে সমগ্র দর্শক অশ্রসজল,__

হাঁয়, হায়, হায় কি ছিলেম, কি হলেম, একদা আমার পুত্রগণের ঘশঃসৌরভে এই ভারতভূমি চিরপরিপূর্ণ ছিল, বাহুবলে সসাগরা, সদ্বীপ ধরিত্রীর একাধিপত্য কোরেছিল, দ্বাদশবর্ষীয় বাঁলকগণও অকুতোভয়ে সমরক্ষেত্রে উপস্থিত হয়ে কালাত্তক কালপদৃশ বৈরিদলকে মুহ্র্তমধ্যে শমন-দমনে প্রেরণ কোরতো, রমণীগণও স্বীয় অলৌকিক শৌর্যবীর্যাদির দ্বারা বন্দী স্বামীগণকে উদ্ধার কোরতো..

ভারতের এই অতীত সমৃদ্ধির ইতিহান অসংখ্য দেশাত্মবোধক কবিতার বিষয় হয়েছে কিন্তু স্বয়ং ভারতমাতা মঞ্চে অবতীর্ণ হয়ে দেশবাসীর সামনে ছুরবস্থার করুণ বিবরণ দিয়েছেন এখানেই | পরাধীন ভারতবাঁপীর ভবিষ্যংচিত্র নাট্যকার অঙ্কন করেননি শুধু তাই নয়, ভারতমাতা এখানে বিদেশী শাসকের করুণাভিক্ষা। করছেন করজোড়ে,_-এমন দুর্বল কল্পনাও রয়েছে নাট্যকারের সীমিত কল্পনা- শক্তিতে আবেদন- নিবেদনপ্রিয় বাঙ্গীলী মনের ছূর্বলতাই প্রকট ভারতমাতাও যে মনোবল হারিয়ে করজোঁড়ে ইংরাজের কপাপ্রাথিনী হতে পেরেছেন সে শুধু নাট্য- কারের দ্বিধা সংশয়ের প্রভাঁবেই ভারতবাসী যখন ভারতমাতার কাছে ভবিষ্যতের কর্মপন্থা সম্পর্কে পরামর্শ ভিক্ষা করেছে--ভারতমাতা৷ বলেছেন,-_-“বাবা, তোরা আর কি কোরবি, তোদের আর কে আছে? তোরা এখন একবার দয়াশীলা মহারাঁদী ভিকৃটোরিয়ার কাছে তোদের ছুংখ জানা, তিনি পরম দয়াবতী, অবশ্য তোদের প্রতি মুকু তুলে চাইবেন |”

দেশজননী ভারতমাতার এই লাঞ্িতা রূপটি নাট্যকার অনায়াসে তুলে ধরেছেন স্বাধীন চেতনার অভাব এখানে প্রকট হলেও স্বদেশপ্রেমের আন্তরিকতার অভাব নেই। এখানে নাট্যক্ষার কষ্টকল্পনার আশ্রন্ না নিয়ে যুগাঙ্গগ সত্যটিই তুলে

নাটক ৪১৯

ধরেছেন ইংরেজপ্রশস্তি ভারতসাস্রাজ্জী ভিক্টোরিয়ার প্রণস্তি উনবিংশ শতাব্দীর যে কোন স্বদেশপ্রেমমূলক কাব্য-কবিতায় মিলবে প্রথমতঃ ইংরেজ বিরোধিতা করার কিছু প্রত্যক্ষ অহ্ুবিধা ছিল। দ্বিতীয়তঃ বিদেশী শাসনের দ্বারা পীড়িত হলেও কোনও কোনও মহান্ুভব* ইংরেজের চতিত্র-মাহাত্ব্য সে যুগের বাঙ্গালী অকপটে স্বীকার করেছে। '“নীলদর্পণের" নাট্যকার সমগ্র ইংরাঁজ জাতির চরিত্র গৌরব বর্ণণ। করে মুষ্টিমেয় নীলকরের অম্বানুষিক আচরণের প্রতিবাদ করেছিলেন

ভারতমাঁতা যখন সন্তানদের মহাঁরানী ভিকৃটোরিয়ার কাছে আবেদনের পরামর্শ দিলেন, একজন অত্যাচারী সাহেব প্রবেশ করেছে এবং ভারতবাসীদের এই প্রচেষ্টাকে রাজবিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছে ।--“রে নরাধম রাজবিদ্রোহিগণ, "মহারানীকে ডাকতে তোদের মনে অন্থমাত্রও ভয় সঞ্চার হোলো না? ওঃ এমন জানলে কে তোদের লেখাপড়া শেখাঁত ?”

প্রথম সাহেব যখন অসহায় ভারতবাসীদের পদীঘাত করতে উদ্যত, ভারতমাতা প্রিয় সন্তানদের স্মরণ করেছেন, “কোথায় হরিশ, কোথায় গিরীশ, কোথা রামমোহন, কোথায় রামগোপাল |৮

কিন্তু দ্বিতীয় সাহেবের আবির্ভাব ভারতমাতাঁকে সাত্বনাদানের চেষ্টাটি হাস্যকর | 'যে নাটকে ভারতের দুরবস্থাই রূপকাকাঁরে পরিতবশিত হয়েছে- সদয় হংরেজের প্রসঙ্গ সেখানে অবান্তর বলে মনে হয়। নাট্যকারের দেশপ্রেম নিছক গতানুগতিকতারই পুনরাবৃত্তি। মৌলিক কল্পনা কিংবা স্বাধীনতাঁলাভের স্থগভীর আদর্শস্থাপন নাট্যকারের পক্ষে অসম্ভব ছিল সহ্ৃদয় সাহেবটির বক্তৃতাও হাশ্তকর,__

"মা! কিছু ছুঃখ করো না, তোমাদের ছুঃখরজনী শীঘ্রই অবসাঁন হবে। তুমি কি ফস্টে টরেন্স প্রভৃতি মহীম্নীগণের নাম শোঁনোনি, ধাহারা অভাগ! ভারতসম্তানের দুঃখ দূর কোরতে প্রাণপণ যত্ব করে থাঁকেন। আর এই যে সঙ্জন-পাঁলক, প্রজারঞক, মহামতী লঙ নর্থব্রক গভর্নর জেনারেল হোঁয়েছেন, ইনিই তোমাদের ছুঃখ দূর €কোরবেন

সহৃদয় ইংরেজ সাহেব যে আশ্বাস দান করেছেন--স্বাধীনতাকামী ভারতবাঁসীর কাছে তা হাস্তকর | বস্তুতঃ নাট্যকার স্বাধীনতার যথার্থ অর্থ কল্পনাতেও চিন্তা করেন নি। শুধু সমসাময়িক দেশীত্ববোধ যেভাবে রাঁজকার্ষের সমালোচন। রূপে প্রকাশ পেত, সেটুকুই নাটকের বিষয় রূপে তুলে ধরেছেন। ভারতমাতার দীনারূপই ঘে 'ভারতবাসীদের স্থপ্ত শক্তি বীর্য জাগাতে জাগাতে পারে নাট্যকার সে সম্বন্ধে সচেতন ছিলেন না। ভারতমাতার অসহায় রূপটি এই ক্ষুদ্র নাটিকার সম্পদ রূপে পরিগণিত হলেও নাট্যকারের সীমিত শক্তির ব্যর্থতাই প্রকট হয়ে উঠেছে ভারতমাতার মু

৪২০ উনবিংশ শতাবীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

ভিকটোরিয়াপ্রশস্তি সহদয় ইংরেজের মুখের আবশ্বীসবাণী নাট্যকারের দ্বিধাগ্রস্ত স্বদেশচিন্তারই নামান্তর | গভীর স্বদেশচিন্তা স্বাধীনতার দুর্মদ আকাজ্া সেযুগের সাধারণের চিন্তার বিষয় হয়ে ওঠেনি সুতরাং দুর্বল রচনায় তা আশা করাই ধায় না। “ভারত মাতা” নাটিকাটি সেযুগের দ্বিধাগ্রস্ত-অস্পষ্ট অগভীর স্বদেশচিন্তাকেই রূপ দিয়েছে কিন্তু শেষাংশে নাট্যকার স্বকীয় চিন্তার পরিচয় দিয়েছিলেন ধৈর্য, সাহস এঁক্যত! চরিত্রত্রয় রচনা করে আগামী দিনের স্বাধীনতাকামী মানষদের . কাছে বক্তব্যটি তিনি তুলে ধরেন এই তিনটি চরিত্রের মাধ্যমে সাহসের একটি অকুতোভয় উক্তি,_

ভেবনা ভেবনা,

অবিলম্বে ছুঃখ নিশি হবে অবসান,

ভারতের সুখরবি উদ্দিবে গগনে

কায়মনে প্রাণপণে কররে যতন

মন্ত্রের সাধন কিম্বা শরীর পতন

ভারতের স্থখরবির উদয়ের জন্য জীবন পণ করতে হবে, আত্মত্যাগের 'মূল্যেই স্বাধীনতা! অর্জন করতে হবে, উপলব্ি নাট্যকারেরই | এঁক্যতা ভারতের বনু খণ্ডিত আত্মার অসংখ্য ক্রটির সমালোচনাকালে বলেছে,_-

'্রাতৃগ্ণ, অনৈক্যতা, আত্মাতিমাঁন স্বজাতিহিংসাই তোমাদের সর্বনাশের মূল। যতদিন তোমাদের অন্তর হতে সকল ভাব দূরীভূত না হবে, ততদিন তোমাদের মঙ্গলের সম্ভাবন! নাই ।”

কুদ্র নাটিকার ক্ষুন্রায়তনে নাট্যকার যে বিষয়টি অবলঘন করেছিলেন সেযুগের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ চিন্তা বলে অভিহিত কর] যাঁয় ভাবনাকে দেশাত্মবোঁধের প্রেরণা স্চারের উদ্দেশ্য নিয়ে বর্তমান ভারতের লাঞ্ছিত মূতিকে রপদান করেছিলেন নাট্যকার সংক্ষেপিত ভূমিকায় উদ্দেশ্টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছিলেন তিনি-- পরিশেষে ভারতবাসীর আশু কর্তব্য সম্বন্ধে সচেতন করে দেবার চেষ্টাও করেছেন। প্রত্যক্ষ স্বদেশচিন্তার নাঁট্যরূপ বলেই “ভারতমাতা” উল্লেখযোগ্য স্থান পাঁবে। সে যুগের দর্শক প্রথম অভিনয়ে রুদ্বশ্বীসে অভিনয়টি প্রত্যক্ষ করেছিলেন সে শুধু এর অভিনব বিষয় গৌরবের জন্যই | ভারতমাতা, ভারতলক্ষী অসহায় ভারতবাসীগণ আমাদের মনোলোকে এতদিন বিরাজমান ছিলো, নাট্যকার চরিত্ররূপে এদের মঞ্চে তুলেছেন। ধৈর্য, সাহস এক্যতাও আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। নাট্যকার কিরণচন্ত্র বন্দ্যোপাধ্যায় নাট্যশালার প্রয়োজনেই কলম ধরেছিলেন, বিষয় নির্বাচনের দায়িত্বও সম্ভবত তাঁর হীতে ছিল না;--নাট্যকার হিসেবে স্থায়ী কৃতিত্বও তিনি অর্জন

নাটক ৪২১

করেননি তরু তাঁর কল্পনায় কিছু স্বকীয়ত্ব ছিল। একাঙ্ক নাটিকার ক্ষুদ্রায়তনে দেশপ্রেমের আদর্শটিকে রূপকের অন্তরালে প্রকাঁশের বাঁসন! ছিল তীর

এই নাঁটিকার অভাবনীয় সাফল্যই পরবর্তী নাটিকারচনার প্রেরণা দিয়েছিলো নাট্যকারকে ১৮৭৪ সালে কিরণচন্দ্র “ভারতে যবন” নামে অনুরূপ একটি রচনা প্রকাশ করেন। “ভারতমাঁতার” অভিনয় সাফল্য দেখে পূর্ববর্তী 'মাস্ক' রচনার রীতিতেই “ভারতে যবন” লিখিত হয়েছিলো। প্রথম রচনার বক্তব্যই জনসমাদৃত হয়েছিল বলে নাট্যকার শ্বদেশাত্রক বিষয় নিয়েই দ্বিতীয় রচনায় হাত দিয়েছিলেন | ভূমিকায় নাট্যকার জাশিয়েছেন,_“আমি এক্ষণে “ভীরতে যখন” স্বদেশোনুরাগী মহোদয়গণকে অর্পণ করিয়া নিশ্চিন্ত রহিলাম 1৮২২

স্বদেশচিত্তীর প্রত্যক্ষ রূপটি রচনায় মিলবে | নাট্যকার নাটকে পরাধীনতার বেদনাটি আরও স্পষ্টভাবে বোঁঝাঁতে পেরেছেন। টাইটেল পেজে উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে,__

স্বাধীনত। সম কি আছে আঁর পাঁমর যবনে করি ভয় ?

স্বাধীনতার জগ্য আকুলতা প্রকাশের চেষ্টা যখনই বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে নাট্যকার ক্ষুন্ধ হয়েছেন এবং স্বাধীনতালাভের জন্য একটি এক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার অভাববোধ নাট্যকারের মনে দেখা দিয়েছে খণ্ডিত, আত্মকলহলিপ্ত ভারতবাসীর চারিত্রিক দুর্বলতা বোঝার পাঁলা চলছে তখনও | নাটকে তাঁরই ব্যাখ্যা শোনা যাবে। দাপত্বপ্রিয় ভারতবাঁসী স্বাধীনতার চেয়ে দাঁসত্বকেই শ্রেয় বলে মনে করে,_-এই দাঁপত্বজীবীদের প্রসঙ্গ ঘৃণার সঙ্গে উল্লেখ করেছেন নাট্যকার |

তারতসন্তাঁন দুর্বল-কা পুরুষ স্বদেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে আক্ষেপ করেছে,_

“সেই নরাধম, কাপুরুষগণ কি পুরুষ, যাঁরা অশ্লানবদনে স্বদেশের মায়।ও স্বাধীনতায় বিসর্জন দিয়া বিদেণীর দাসত্ব ্বীকাঁর কচ্চে ; জননী আমায় নিষেধ কোরবেন না। দাসত্ব অপেক্ষা মৃত্যু ভাল ।”

ভারত রমনীও মহাছুঃখে উত্তর দিয়েছেন,_“যদি সমস্ত হিন্দু রমণীগণ তোমার ম্যায় স্বদেশাহ্ছরাগী বীরপুত্রের জননী হতেন, তাহলে কি এই বীরপ্রন্ন ভারতভূমি দাসত্ব শৃূংখলে বদ্ধ হোতো! |”

এই ধরণের আদর্শ ভারতসন্তান আদর্শ ভারতরমণী স্বজন করে নাট্যকার পরাধীনতার ক্ষোভটি ব্যক্ত করেছেন যদিও নাটকীয় সংলাপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে তবু উদ্ধৃত উক্তির মধ্যে নাট্যকারের স্বাধীনতার আশ! আঁকাক্া উচ্ছৃসিত হয়ে

২২, ফিরণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, ভারতে যবন, ১২৮১।

1

৪২২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম.

উঠেছে বাঁমদেব চরিত্রের মাধ্যমে নাট্যকারের নিজন্ব মন্তব্যই প্রকাশিত হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য একটা দুর্বার আকাজ্ষাই যেন নাট্যকারকে বেদনার্ড করে তুলেছে ।.. বামদেব ছুঃখ করেছেন, | যদি তোমার ন্যায় সকল আর্য সন্তানগণের অন্তঃকরণ স্বাধীনতা-স্পৃহায় প্রজ্জলিত' হোঁতো, তাহলে, এই পুণ্যভূমি ভারতভূমি কি কখন পরাধীন থাকে, ভারত মাতা কি. এত দুর্দশা ভোগ করেন, কখনই না ।” বামদেবের আক্ষেপ নাট্যকাঁরের ব্যক্তিগত ক্ষোভ এখানে প্রকাশিত হয়েছে “স্বাধীনতা স্পৃহায়' অন্তঃকরণের প্রজ্জলনই আত্মত্যাগের প্রেরণা এনে দেবে দাঁলত্বের চেয়ে মৃত্যু যদি বেশী সম্মীনের বলে প্রমাণিত হয়ে থাঁকে-_দেশবাঁসী নিশ্চয়ই শ্রেয়তম পন্থাটিই বেছে নেবে | রূঢ় অথচ বাস্তব সত্যটিই নাট্যকার প্রচার করেছিলেন স্বাধীনতার আকাজ্ষাটিকে এভাবেই কবিতায়-নাঁটকে মহাঁকাব্যে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা চলেছে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকেই দ্িতীয় নাটিকাতেও এই নিঃসংশয় সত্যটিকেই নাট্যকার সোচ্চারে ব্যক্ত করেছেন ১৮৭৩ -৭৪এ নাট্যশালা যখন বক্তব্য প্রচারের শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানরূপে পরিগণিত হলো সেই সময়ে যুগোপযোগী আদর্শ প্রতিষ্ঠায় সাধ্যমত চেষ্টা করেছিলেন ইনি | “ভারতে যবনে”ও “ভারত মাতার” মত সংগীতের সাহাধ্য গ্রহণ করা হয়েছে এই সংগীতারোপের উদ্দেশ্য স্বদেশপ্রেমকেই মূর্ত করে তোলা ইতিপূর্বে নাট্যকার কবিগোঠী স্বদেশাত্বক অনুভূতিকে অকপটভাবে প্রকাশ করতে পারেননি ১৮৭৭ থুষ্টাবেই হেমচন্দ্রের বিখ্যাত স্বদেশীত্মক কবিতা “ভারত সংগীত" প্রকাশিত হওয়ায় কবি লাঞ্িত হন। ১৮৭২ খুঃ “নীলদর্পণের অভিনয় প্রসঙ্গে ইংলিশম্যান গভর্নমেন্টকে অভিনয় বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন কিন্তু কিরণচন্দ্র দেশবাসীর অন্তরে স্বাধীনতাস্পৃহা প্রজলনের চেষ্টা করেও রাজরোঁষে পড়েননি কেন সেটাই আশ্চর্য “ভারতমাতা'য় ইংরেজ শাসনের ভয়াঁবহত] বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন নাট্যকার,__ “ভারতে যবনে' তার আবেদন আরও অর্থবহ “দাঁসত্ব অপেক্ষা মৃত্যু ভাঁল”-_এই প্রকাশ্য উক্তি নাটকেই পরিবেশিত হয়েছিল সংগীতের মধ্যেও নাট্যকার স্বাধীনতার মাহাত্ম্য জ্ঞাপনের চেষ্টা করেছিলেন, স্বাধীনতা সম কি আছে আর, বীরের জীবন, বীর অলঙ্কার, বীরপ্রহ্থ হায়। ভারত জননী, অঞ্জলে তাঁর ভাসিছে ধরনী, হাঁরায়ে উজ্ভ্বল স্বাধীনতা-মণি |

নাটক ৪২৩

সর্বত্রই নাট্যকার স্বাধীনচেতনাসঞ্চারে ছুঃসাহসিক চেষ্টা করেছিলেন সম্ভবতঃ ষুত্রাক্কৃতি নাটিকা হিসেবে মূলনাটকের শেষে অভিনীত হোত বলেই পৃথক নাঁ্যসৃষটি বলে ধরণের রচনার মূল্য স্বীকার করা হয়নি। তাছাড়া খ্যাতনামা নাট্যকার হিসেবে কিরণচন্দ্রের পরিচয় ছিল না বলে ধরণের অভিনয়ের সংবাদ নট্যরসিক নিয়মিত দর্শক ভিন্ন অস্ভের দৃষ্টিপথে পড়েনি কিন্তু বাংলা নাটকে শ্বদেশপ্রেষের দৃষ্টান্ত স্থাপন করার প্রথম গৌরবটুকু তাঁকে অর্পণ করতেই হয়। হুধীজনের দৃষ্টিআকর্ষণ বা সমালোচকের মনোযোগ স্বজনে ব্যর্কাম হলেও কিরণচন্দ্রের রচনা ছুটি বন্থবাঁর অভিনীত হয়েছিল। “অমৃতবাঁজার পত্রিকায়” "ভারত মাতার" প্রথম অভিনয় প্রসঙ্গে উচ্ভৃসিত প্রশংসাও প্রকাশিত হয়েছিল তবু নাট্যকার সমগ্র সাহ্ত্যিরসিকসমাজের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হননি কিন্ত স্বদেশপ্রেমী নাট্যকারগো্ঠীর উপরে তীর রচনার প্রভাব অস্বীকার কর যায় না। সে যুগের নাট্যরচয়িতার অভিনয়ের সংবাদ রাখতেন,_অভিনীত নাটকের চাহিদা দেখে নাটক লেখার খসড়া তৈরী করতেন। কিরণচন্দ্র নিজেই জনগণের মনোমত বিষয় অবলম্বনে নাটিকা রচনা করেছিলেন পরীক্ষামূলক রচনা হিসেবেই নাটিকাছুটির মূল্যবিচার করা উচিত। কিরণচন্দ্রের ক্ষুদ্র নাটিকার বক্তব্য যখন বৃহৎ নাটকের বক্তব্যের কাছাকাছি স্থান করে নিল,_ অন্ুকাঁরক নাট্যকারদের সংখ্যাও তত বেড়েছে কিরণচন্দ্র মঞ্চের প্রয়োজনে কিংবা মঞ্চের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য কলম ধরেছিলেন-_-অন্ুকারক নাট্যকারগোষ্ঠী শুধু লক্ষ) করেছিলেন কিরণচন্দ্রের অভাবিত সাফল্য যশ সম্মানের আহ্বানেই রা বিচলিত হয়েছিলেন সন্দেহ নেই তবু এদের একটা আদর্শ ছিল। কিরণচন্দ্রের অনুসরণ করে এ'রাঁও দেশভাবনার প্রসঙ্গ অবলম্বন করলেন সেযুগের উন্মাদনাকে বাঁচিয়ে রাখার পবিত্র ব্রত যশোলাভের চেষ্টা একত্রীভৃত হয়েছিল বলেই এই স্বল্প- খ্যাত কি প্রায়-বিস্বৃত নাট্যকারদের কথা মরণ করতে হবে শ্রদ্ধার সঙ্গে। সাহিত্য ইতিহাসে উল্লিখিত এই নাঁটাকারদের রচনার বিষয় স্বদেশ, রচনার উদ্দেশ্য স্বদেশপ্রেম- প্রসঙ্গ বর্ণনা। এদের সকলের রচনায় গতাহুগতিকতা ছাড়া লক্ষ্যণীয় কিছু নেই। তবু রচনার বিষয় নাট্যকারের নাম প্রসঙ্গে উল্লেখ করা দরকার কিরণচন্দ্রের পরে যে কজন নাট্যকার দেশভাবন। নিয়ে সাহিত্যজীবন আরম্ভ শেষ করেছিলেন, দেশভাবনার সু রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেই ধারা ব্যর্থ অবজ্ঞাত হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে হারাণচন্দ্র ঘোষ, নটেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কুঞ্জবিহীরী বসুর নাম করা যায়। এদের কারোর রচনাই উল্লেখযোগ্য সৃষ্টির পর্যায়ে পড়ে না। কুপ্রবিহারী বস্থর নামে ছুটি রচন1! মিললেও বাঁকী ছুজন একটি করে নাটক লিখেছেন। হারাণচন্দ্রেরে কিছু মৌলিকত্ব পাওয়া যায় “ভারতী ছুঃখিনী” নাটকের মধ্যে কিরণচন্দ্র হারাণচন্দ্র

৪২৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

উভয়ের নাট্যচেষ্টা বিশ্লেষণ করলে মোটামুটি উল্লিখিত নাট্যকারদের প্রবণতা, আদর্শ, উদ্দেশ্য সাফল্যের একটা স্পষ্ট ইঙ্গিত পাঁওয়া যাবে ।' নটেন্দ্রনাথ ঠাকুরের “এই কি সেই ভারত?” কুঞ্বিহারী বস্থর “ভারত অধীন ?- পরাধীনতার উপলব্িমুখর অভিব্যক্তি ছাঁড়া অন্ত কিছু নয়। কুঞ্জবিহারী বসুর 'বর্মক্ষেত্র” “ভারতে যবনের" অনুকরণে লেখা পরাধীনতার জালা উনবিংশ শতাব্দীর শেষপাঁদে প্রায় ক্ষোভ অতীত স্থতিমন্থনের দীর্ঘশ্বাসে পরিণত হয়েছিলো, কাব্যকবিতাঁয় বিচিত্রভাবে তা ব্যঞ্জিত হয়েছে, দেশচিন্তার নামে উদগত শোঁকোচ্ছাস প্রকাশের হুযোগটুকু নাট্যকার- গোষীও গ্রহণ করেছিলেন | কোনে অর্থবহ পরিণামের দিকে এগিয়ে যাবার প্রস্তুতির অভাঁবেই এই বহুদৃষ্ট পন্থাটি নাঁটক-কাঁব্য-কবিতায় একমাত্র ভঙ্গী হয়ে উঠেছিলো সেযুগের স্বদেশপ্রেমের অর্থই হলে! আর্ধামির চেষ্টাকৃত স্মতিসায়র তোলপাঁড় করে একবিন্দু অঞ্রজল তাতে মিশিয়ে দেওয়ার অন্তহীন চেষ্টা কখনও কখনও রূপকে- ব্যঞ্রনায় তা শ্োতব্য হলেও--অধিকাংশস্থানেই তা যেন পুনরাবৃত্তি ছাঁড়া অন্য কিছু নয়।

হারাঁণচন্দ্র ঘোষের “ভারতী দুঃখিনীর” বিষয়বস্তও দেশগ্রীতিউদ্ব,দ্ধ অষ্টার পরাধীনতার ছুঃখে অশ্রমোৌচন | কিন্তু যে বৈশিষ্ট্য নাটকের পরিকল্পনায় যূলে দেখা যায় তা হল নাট্যকারের নির্ধম সমালোচনার চেষ্টা নাট্যকার সচেতনভাবে আঞ্চলিকতার ভেদবুদ্ধির নিন্দা করেছেন, জাতীয় দৈন্য শক্তিহীনতাঁর প্রতি কটাক্ষপাঁত করেছেন। নাট্যকার নিছক দুঃখ নিবেদন না করে ছুঃখের কারণগুলি অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছিলেন ঘটনার ব্যাখ্যার সঙ্গে কিছু নিজস্ব টীকা সংযোগ করে নাট্যকার দূরদশিতার সুক্মদশিতারও পরিচয় রেখেছেন নাট্যকার দেশপ্রেমী স্বদেশহিতকাঁমীদের উদ্দেশ্বেই নাটকটি নিবেদন করেছেন,

“ম্বদেশহিতসাধনৈকত্রত স্থহৃদসমাজকে এই গ্রন্থ উপহার দিলাম ।»২৩

কিরণচন্দ্রেরে মত হাঁরাণচন্দ্র ঘোষও রূপকান্তরালে বক্তব্য গোপনের তথা আত্মগোপনের প্রচলিত পন্থান্ুসরণ করেছিলেন রূপকের আবরণে সত্য গোঁপনের প্রয়াসটি কিন্ত সত্যিই সার্থক হয়েছে নাটকে “ভাঁরতীদুঃখিনী" নামকরণের মধ্যে কিন্ত কোন রূপকই নেই ভারতের অধিষ্ঠাত্রী দেবীকেই ভারতী নামে অভিহিত করেছেন নাট্যকার, তাঁকে প্রকাশ্যে ছুঃখিনী বলেই পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন | নাট্যকার হারাণচন্দ্র ভারতীর ছু£খিনীরূপ ফোটানোর চেষ্টা করেছিলেন আগাঁগোড়া এই বেদনার বিবরণ দিয়েছেন তিনি ভারতের অধিষ্ঠাত্রী দেবী আশ্রয়ের খোজে

২৩. হারাণচন্্র ঘোষ, ভারতী ছুঃখিনী, ১৮৭৫ |

নাটক ৪২৫

ভবিষ্যতের আগা নিয়ে আপমুদ্র হিমাচল ভ্রমণ করছেন বিভিন্ন অঞ্চলের পৃথক সংস্কৃতির মধ্যে লালিত মূলভারতীয় আদর্শ অনুসন্ধানের জন্য ভারতী তাঁর এক একটি কন্যার কাছে উপস্থিত হয়েছেন। বঙ্গ্ুন্দরী, অযোধ্যা, মদ্রবাঁলা, মালবিকা, রাঁজবারা, জয়াবতী, যোধাবতী, উদয়নার কাছে গেছেন- কিন্ত হতাশায় দুঃখে তিনি শুধু ক্রন্দন করেছেন কারণ কোথাও কোনো আঁশাঁর চিহ্ন নেই। মনকে সাত্বন। দেবার মত কিছুই তিনি পাননি নাট্যকার বঙ্গক্ষন্দরীর চরিত্র রচনায় স্বীয় অভিজ্ঞতার সাহাঁধ্য পেয়েছিলেন অন্ঠান্ত চরিত্র রচনায় কল্পনার সাহাষ্য নিয়েও মোটামুটি তা সার্থক ভাবে অঙ্কন করেছেন বলতে হবে ইতিহাঁসের নীরস বিবরণকে নাট্যকার সাধ্যমতো সচল চরিত্রের বক্তব্যরূপে দ্রীড় করিয়েছেন কিছু কিছু অসঙ্গতি কল্পনীতিরেক থাকলেও নাটকের বক্তব্য সুসম হয়েছে নাট্যকারের সমালোচক হ্ুলভ মনোভঙ্গিমীর কথ প্রথমেই বলেছি বঙ্গস্থন্দরীর সঙ্গে ভারতীর আলাপে স্থস্ক্ম হিউমরের আরোপ করে ন'টকীয় সংলাপের আকর্ষণ বুদ্ধি করেছেন নাট্যকার |

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের উন্মেষ পর্বেই এসব সৃষ্টির অবতারণা করে নাট্যকারবুন্দ সাধ্যমতো দেশহিতৈষণার পরিচয় দিয়েছিলেন এছাড়া করার মতো কাজ হয়তো ছিল কিন্তু জনমনে স্বদেশচিন্তার বীজটি বপন করার মতো তা গুরুতর নয়। হিন্দুমেলা এই দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছে। সছ্যপ্রতিষ্ঠিত জাতীয় রক্গমঞ্চের উৎসাহী নাট্যকার প্রযোজকবর্গ এবং জাতীয়ভাবে উদ্দীপিত সংবাঁদপত্রগুলিও দেশাত্মবোধের বাণী শহবে-নগরে-গ্রামে গঞ্জে পৌছে দেবর চেষ্টা করেছে “ভারতী ছুঃখিনীর” অষ্টা হাঁরাণচন্্র সেই মহৎ আদর্শের দ্বারাই অন্ভাঁবিত হয়েছিলেন ভারতী সত্যই ছুঃখিনী,__পূর্ব হতে পশ্চিমে, উত্তর হতে দক্ষিণে, সেই দুঃখিনী ভাঁরতমাতা পরিক্রমণে বেরিয়েছেন,_ আশার আলো যেখানে দেখেছেন, ছুটে গিয়েছেন সবার আগে ;১_-এই পরিকল্পনায় যে অভিনবন্ধ রয়েছে তা অনস্বীকার্য

ভাঁরতীয় সঙ্গে বঙ্গন্থন্দবীর কথোপকথন নাট্যকারের কল্পনীশপ্রির নিদর্শন,

“ভাঁরতী-আঁমি যে শুনিছি তোর অনেকগুলি ক্ুসন্তান হয়েছে আমার 'মেয়েদের মধ্যে আজকাল তুই যে সখী, নূতন নূতন সাহিত্যের মুখ দেখতে পাস ছেলেদের সৌভাগ্যের সীমা নাই

বঙ্গক্দ্বরী-_বিশ্ববিগ্ঠালয়ের উপাধিগুলি প্রায় অধিকাংশ আমার সন্তানদিগের শামের পার্খে বিরাজ করতেছে, কিন্তু হায়! আমি যে দিন দিন অন্তঃসার শুন্য হচ্ছি, 'তাত আর কেউ টের পাচ্ছে না” [ ১ম অঙ্ক, ১ম গর্ভাঙ্ক ]

৪২৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

বঙ্গহুন্দরীর উক্তির সত্যতা স্পষ্টতায় আমরা অভিভূত না হয়ে পারি না? নৃতন শিক্ষাপদ্ধতির সমালোচনার এমন পরিচ্ছন্ন অর্থবহ ইঙ্গিত সেযুগে মেলেনি নাট্যকার রূপকাকারে ব্যক্ত করার যৌগ পেয়েছিলেন বলেই বহ্ৃত্থন্দরীর আক্ষেপের দীর্ঘস্বাসের মধ্যে কোন অসঙ্গতি নেই শিক্ষা জ্ঞান বিজ্ঞীনচর্ঠার লক্ষ্যনীয় প্রসারের কথা উল্লেখ করেও নাট্যকার আমাদের অন্তরের বেদনার বাণীটি শোনাতে পেরেছেন অন্তঃসারশূন্ততার ব্যাধিতেই সমগ্র বাঙ্গালীজাতি আক্রান্ত হয়েছে শিক্ষা সভ্যতার সঙ্গে স্বাধীন চেতন। জন্ম নিচ্ছে না বলেই বঙ্কিমচন্দ্র একদা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলেন, কমলাকান্তের বকলমে ভ্রান্ত দেশবাসীর সামনে শিবপথের সম্ধান জানাবার সাঁধনাই স্বদেশপ্রেমী বঙ্কিমের স্বপ্ন ছিল। নাট্যকার হারাণচন্দ্রও বাঙ্গালীর; চরিত্রদোষ ব্যাখ্যার চেষ্টা করেছেন, বঙ্গস্ন্দরী-এক বিলাসপ্রিয়তা, দ্বিতীয় ভীরুতা, এই ছুইয়েই তাদের সর্বনাশ কর্তে বসেছে, বড় বড় গাড়ি, বড় বড় ঘোড়া, দোঁতাল! তেতালা বাড়ি, গদি, আলবোলা, এত তারা ছাঁড়তে পারবে না এবং পরিশ্রমসাধ্য কোন কর্মও প্রাণ থাকতে করবে না৷ পাছে শরীরে আঘাত লাঁগে। [ ১ম অঙ্ক, ১ম গর্ভাঙ্ক ] বিলাসব্যসনে আত্মতুষ্ট বান্গালী জাতির এই জাতিগত দৌধ ত্রুটির প্রসঙ্গ নাট্যকার অকপটে ব্যক্ত করেছেন আয়াসপ্রিয় বাঙ্গালীর আত্মদশনের উৎসাহ সঞ্চারের জগ্ঠই নির্মম সমালোচনার প্রয়োজন ছিল। ব্যঙ্গকাব্য ব্যঙ্গসর্বস্ব প্রবন্ধেও মহৎ কর্তব্য সম্পাদনের জগ্ত এক শ্রেণীর লেখক সম্প্রদায়ের আবির্ভীব হয়েছিলো যুগ- প্রয়োজনেই হারাঁণচন্ত্র ঘোষ নাটকের ক্ষুদ্রায়তনে সেই প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন নাট্যকার চীকুরীজীবী সম্প্রদায়ের দুঃখ কবিতাঁকারে ব্যক্ত করেছেন,_- কে তুজিল অপরূপ অধীনতা পাশ যাহাতে পতিত হয়ে, মরি লাথি জুতা খেয়ে তথাপি তাহাতে গিয়ে, পশিতে প্রয়াস কে আনিল বাঙ্গলায় এই মায়াপাশ | [ ১ম অঙ্ক, ২য় গর্ভাঙ্ক 1 নাট্যকারের বিক্ষুব্ধ মনে|ভাঁবের পরিচয় এখানে ঘূর্ত হয়ে উঠেছে। এক মুগে আমরা নিধিচারে বিদেশীসভ্যতার ভীলমন্দ গ্রহণ করেছি, সেই জড়তার হাত থেকে মুক্তির লগ্নটি যে এসে গেছে--নাট্যকারের উদ্দেশ্ৃপুর্ণ সমালোচনাই তার, প্রমীণ চাকুরীজীবীরাঁও সচেতন হয়েছে, বাঁচার মত বাঁচতে হবে বলেই নিশ্চিন্ততা বা জড়ত্বকে কেউ সম্মানের বলে মনে করছে না। বঙ্গহুন্দরীর আক্ষেপ চাকুরী- জীবীর খেদ কোনটিই রূপক নয়; নব জাগরণের প্রথম লক্ষণ আত্মবিশ্লেষণের চেষ্টা মাত্র স্বাধীন জীবনের প্রতি আগ্রহ না থাকলে দাসত্ব বা অধীনতার

' নাটক ৪২৭"

সমালোচনা করা চলে না। স্বাধীনতার মূল্য সম্পর্কে অবহিত নাট্যকার চাকুরী- জীবনের মোহকে মায়াপাশ বলেও অভিহিত করেছেন, অভিযোগ করেছেন এই দাসত্ব বৃত্তি যারা প্রবর্তন করেছিল তাদের

এই অংশেই তাঁরতীর সঙ্গে মালবিকাঁর কথোপকথনে মালবিকার ক্ষোভ ধ্বনিত হয়েছে, “আমি কি আর আমি আছি? না আমার সে বলবিক্রম আছে! যেদিন বিজ্রমাঁদিত্য মত্যলোক পরিত্যাগ করিয়াছেন, সেইদিন হতেই মীলবের মান সম্ভ্রম গিয়াছে ;* [ ১ম অংশ, ২য় গর্ভাঙ্ক ]

পূর্বস্থৃতি মন্থনের সঙ্গে বর্তমান অবস্থার দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করলে ক্ষোত জাগ। অস্বাভাবিক নয় !

ভারতী সচেতন করে দেয় মালবিকাঁকে, _“পুনঃ পুনঃ যবন বিপ্লবে সকলি বিস্মৃত হয়েছে, পূর্বের কথা৷ তো! আর কারুর মনে নাই, এখন সকলি নূতন [এ]

দীর্ঘদিনের স্মৃতির বোবা বয়ে লাভ নাই--অতাতকে বর্তমানে টেনে এনে যে ধরণের ছঃখ পাওয়া সম্ভব, তা দুঃখেরই বিল।স, নাট্যকার অংশে তার প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে অতীতের এশ্বর্কে ফিরিয়ে আনার কোনো প্রেরণা.যদি পাওয়া যায়, আশাতেই স্মৃতির প্রসঙ্গ বারবারই ফিরে এসেছে

দ্বিতীয় অংকের প্রথম গর্ভাঙ্কে ভারতীর আত্মবিলাপটি লক্ষ্যণীয়। অতীতের উজ্জল সৌভাগ্যে যিনি পৃথিবীর বরেণ্য হয়েছিলেন, বর্তমানের গ্লানিতে তিনি যদি ভেঙ্গে পড়েন তবে তাতে অস্বাভাবিকত্ব থাকে না। ভারতীর কল্পিত রূপের সঙ্গে আত্মস্বতিমন্থনের উচ্ছ্বাসটি তাই হৃদয়গ্রাহী হয়েছে ভারতী দীর্ঘ-বিলাপের বাঁণী উচ্চারণ করেছে মহাছুঃখে”

আমি বীরপত্বী, বীর প্রলবিনী, কবির জননী, সাহিত্যের ভাণ্ডার, রত্বের আকর, শেষে আমি পরাধীনী, অমি পথের কাঙ্গীলিনী $ হাঁয়! আমার দশা কি হলো 1... আমি আধ্যগণের জনয়িত্রী, আমার ভাষা দেবভাষ| বলিয়া লোকে সন্মান করতো, আমার সন্তানগণের প্রল্নীত চিকিৎসা শাস্ত্র, ভারতীয় বীরগণের রণ-কৌশল, শিল্পবিদ্ভাঁর, মহীয়সী শক্তি, সাহিত্যের রচন! চাতুরী জগদ্বিখ্যাত ছিল, এখন সেই আমি আছি, আমার কিছু নাই, সকল বিষয়েই পরের মুখাপেক্ষী হয়ে চলতে হচ্ছে ; হতে বিড়ঘ্বন। আর কি আছে?

| ২য় অঙ্ক, ১ম গর্ভাঙ্ক ]

ভারতীর ছুঃখ প্রকাশের ভাষাটি যদি একান্তভাবে নাট্যকারের না৷ হোতো তাহলে পরমুহূর্তেই নেপথ্য সংগীতের সাহীয্যে ভারতবাসীদের সচেতন করার আশু প্রয়োজন তিনি অনুভব করতেন না। ভারতমাতার ক্ষোভের বিশদ ব্যাখ্যার অন্তরালে

৪২৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

দেশপ্রেমিক নাট্যকারের আবেদনটিই প্রকাশ পেয়েছে তাই ভারতবাঁসীর সামনে তিনি করুণ আকৃতি নিবেদন করেন নেপথ্য সংগীতের মাধ্যমে, ভাঁরত নিবাসী জন, কেন বিষ বদন, প্রকাশ জ্ঞানলোচন, অলসেরে পরিহরি

অজ্ঞানতাই মানুষের আত্মজ্ঞান নষ্ট করে, স্বাধীনচেতন। সেই পূর্ণ আত্মজ্ঞান লাভের প্রথম স্তর | উনবিংশ শতাব্দীর শেষপাঁদে ভারতবাসীর আত্মচেতন। জাগানোর অক্লান্ত চেষ্টাই সাহিত্যে বিভিম্ন ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। লেখকচিত্তের আন্তরিকতাই যেখানে স্বদেশচিস্তীকাঁরে ব্যক্ত হয়েছে-_-আমরা শুধু সেটুকুই লক্ষ্য করব স্বদেশপ্রেমিকের মনোবিষশ্লেষণে আমর নানাভাবে হৃদয়ের এই আক্ষেপ আবেদন বারবার শুনেছি, কাব্যে নাটকে অষ্টার সেই স্বদেশগত প্রাণটিই ধর] পড়েছে

ভারতমাঁতার আঁক্ষেপোক্তি শ্রবণে মদ্রবালাও সমগ্র দেশবাসীর সামনে ধিক্কার বাণী উচ্চারণ করেছে ;--আ'ত্মশক্তি উদ্বোধনের প্রয়োজনে ধিক্কার বাণী কখনও কখনও কার্যকরী হয়ে থাকে ব্যঙ্গ-বিদ্রপের হাতিয়ার বীররসের উদ্দীপন। জাগায় নিভুল নিয়মে | মদ্রবাঁলার জলন্ত বাঁণী যেন অঙ্গারের মতো! সমগ্র দেশবাসীর দেহে মনে ছড়িয়ে পড়ে,

মদ্রবালা-_-তোমরা ন। জননী জন্মভূমিকে স্বর্গাপেক্ষা গরীয়সী বলিয়া ব্যাখ্যা কর? "জননীর ঈদৃশ ছরবস্থা কি প্রকারে চক্ষে দেখচ্চেছ হা ধিক তোমরা না আর্ধ্যসন্তান বলে পরিচয় দেও? এই কি আর্য্যোচিত ব্যবহার? তোমাদের পূর্বপুরুষগণ যে সকল মহতী কীতি স্থাপন করে গেছেন, তোমরা স্বহস্তে সেই সকল কাতিন্তস্ত ভগ্র করতে বসেচো, হায়! হায়! কিছুতেই কি আর চৈতন্য হয় না?

[২য় অঙ্ক, ১ম গর্ভাঙ্ক |

এই বীরত্বব্যপ্রক বাণী সে যুগীয় কাব্যের উৎকৃষ্ট বীররসাত্মক অংশগুলিকেই স্মরণ করিয়ে দেয়

মদ্রবালার সন্তানদের চরিত্রবৈশিষ্ট্য আলোচনা প্রসঙ্গে বঙ্গসন্তানদের সঙ্গে তুলনা করেছেন নাট্যকার বাঙ্গালীচরিত্রে দীসমনোবুত্তির ভয়াবহ রূপটিকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টাটিও লক্ষ্যণীয় মদ্রসন্তীনদের চরিত্রে দাশ্যভাবের আধিক্য নেই বলে মদ্রবালা অভিমত পোষণ করেছেন,

মদ্রবালা-_-আমার সন্তানের। নিতান্ত দাশ্বৃত্ভিতে অন্ুরক্ত নয়, তাদের মধ্যে এখনো। যে অনেক স্বাধীন, তবে অধিকাংশ পরাধীন বটে, তথাপি কেবল চাকরী চাঁকরী করে তারা লালায়িত নয়, কৃষি বাণিজ্যের উপর তাদের নির্ভর আছে 3 [এঁ]

শ্বাধীনতাকামী জাতির অন্তরে দাসমনোবৃত্তির প্রাবল্য থাকতেপারে না। দাসত্বের

নাটক ৪২৯

প্রতি অনুরাগ নিয়ে স্বাধীনতার তেজ বীর্য প্রকাশ পেতে পারে না। আত্মশক্তির কর্ষণ যতো বেশী হবে স্বাধীন মনের স্বতঃক্ফুর্ত প্রকাশ ততো বেশী স্বাভাবিক হবে। স্তরাং চাকুরীজীবী বাঙ্গালীদের স্বাধীনতার প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধাবোধ জাঁগানোর চেষ্ট1! এখানে লক্ষ্যণীয় নাট্যকার বূপকের সাহাষ্য নিয়েই বাঙ্গালীর চরিত্রবিশ্লেষণের, স্থযোগটুকু যথাযথভাবে ব্যবহার করেছেন

এই অংশেই মদ্রবাঁলার প্রশ্নের উত্তরে ভারতী সমগ্র ভারতের অনৈক্য দুর্বলতার প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করেছেন,

আমি অভাগিনী তা না হলে কি পরাধিনী হতেম? আমার পুত্রগণের মধ্যে যদি পূর্ববৎ ভ্রাত্ভাব থাকতো তা হলে কি তাদের এত দুর্দশ। হয়, না৷ ছুরন্ত যবন মামুদ সোমেশ্বর ভগ্ন করতে পারে 1.--যে একতাবলে আঁমি উন্নতির চরমসীমায় অধিরোহণ করিয়াছিলেম আবার সেই একতার অভাবই আমীকে অবনতির চরম সীমায় আনিয়ীছে.-: | [এ]

সহজবোধ্য নাটকীয় সংলাপে বহু-আলোচিত বহু-শ্রুত এই সত্য অনেক বেশী আবেদনশীল হয়েছে বলেই আমাদের বিশ্বীস। অনৈক্য আভ্যন্তরীণ বিরোধই যে ভারতের ছূর্ভাগ্যের প্রধানতম কারণ,_-সেই প্রতিষ্ঠিত সত্যট স্বীকার করেই একতাবদ্ধ হবার চেষ্ঠা করে যেতে হবে। স্বাধীনতার মত যূলাবান একটি মহাঁরতু লাভের প্রাথমিক উপায় বিরোধের মধ্যে এক্যবোধ সঞ্চার, অনুল্লেখ্য নাট্যকারের চিন্তায়ও সত্যটি এমন সার্ক ভাবে প্রতিফলিত হয়েছিলো,--এটাই আশ্চর্য স্বাধানচেতন। সঞ্চারের প্রথম লগ্নে কবি-পাহিত্যিকদের চিন্তায় এই আবেদনের বাণী ধ্বনিত হয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনেরও একটি মাত্র বাঁণী-_-একতাঁর বাঁণী। বাংলানাটকের স্বদেশচিন্তা প্রতিভাসের লগ্নেও একতার বাণীই প্রাধান্ত লাভ করেছে-__ এট] আশারই কথা উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমাঁবধি দূরদর্শী অষ্টারা জাতীয় অবনতির বত্রগুলো নিখুত ভাবে উপলব্ধি করেছিলেন আর প্রগতির পদক্ষেপ নিভূ্লি হবে যদি দুর্বলতার ইতিহাস মোটামুটি জান! থাকে লক্ষ্যত্রঙ্ হয়েই স্বাধীনতাসম্পদ অন্তহিত হয়েছে- লক্ষ্য স্থির থাকলে হৃতসম্পদ পুনরুদ্ধার অসম্ভব নব্ব। এই সহজ সত্যটিই প্রত্যেক দেশখাঁসীর অন্তরের জপমন্ত্র হওয়! দরকার | সমগ্র ভারতের এ্রতিহাসিক বর্তমান ছুটি রূপ পাশাপাশি স্থাপন করে নাট্যকার একটি তুলনামূলক চিত্র অঙ্কন করেছেন সঞ্জীব নারী চরিত্ররূপে এক একটি অঞ্চলের অধিনায়িকা। আত্মকাহিনী শুনিয়েছেন। নাট্যকার বশন্থন্দরী, মদ্রবালার পর রাজবারার প্রসঙ্গ অবতারণা করেছেন! এক একটি অঙ্কে এক একটি নতুন বক্তব্য নাটকটিকে অভিনবত্ব দান করেছে বিশাল ভারতবর্ষের এক একটি প্রদেশের বিভিন্ন ইতিহাসের.

৪৩০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল1 সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

সত্য স্থাপন করায় হসংবদ্ধ একটি নতুন ভারতবর্ষের প্রচ্ছন্ন স্বপ্ন সমগ্র নাটকে ধরা পড়েছে রাঁজবারা গৌরবোজল স্বাধীন ইতিহাসের পীঠস্থান রাজস্থানের অধিষ্টাত্রী দেবী। রাজস্থানের ইতিহাস স্বাধীনতার আন্দৌলনস্জনেই যে প্রেরণা দিয়েছে ত। নয়, স্বাধীনতা আন্দোলনের পূর্বকাঁলীন সাহিত্যেও রাজস্থানের ইতিহাস মুখ্য স্থান জুড়ে আছে। বাঁংলাসাহিত্যে রাজস্থানের ইতিহাঁসপ্রসঙ্গ নানাকাঁরখে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে আসছে সমগ্র ভারত ইতিহাস থেকে বাঙ্গালী কবি সাহিত্যিক, নাট্যকার প্রবন্ধকার রাজস্থানের ইতিহাঁসকেই বেছে নিয়েছিলেন উদ্দেশ্য সিদ্ধির জঙ্য | রাজস্থান সমগ্র ভারতের প্রেরণাস্থবল। কাজেই অংশটি প্রসঙ্গে নাট্যকারের বক্তব্যটি গুরুত্বপূর্ণ হবে আশা করা স্বাভাবিক | রক্কলাল, মধুহদন এই রাজস্থান ইতিহাস প্রসঙ্গই সার্থকভাবে কাব্যে-নণটকে আরোপ করেছিলেন হারাণচন্দ্র ঘোষের বক্তব্য কিন্তু গতানুগতিক নয়। এখানে রাজস্থানের অধিষ্ঠাত্রীদেবীর কঠে আশার বদলে নৈরাশ্ের বাণীই মুখ্য হয়ে উঠেছে রাঁজবার। মহাক্ষোভে আত্মকাহিনী শুনিয়েছে,__ «লোকে বলে আমি স্বাধীন, কিন্তু আমি যে অধীনেরও অধীন তাঁত জানে না---এই রাঁজপুতদেশ কত শতবার ঘবন বিপ্লবে ছারখার হয়েছে, কতবার নগরী ভূমিসাৎ হয়েছে, রমণীমগ্ুলী অগ্নিপ্রবেশ করিয়া আপনাপন কুলমান রক্ষা করেচে তথাপি কেহ দাসত্ব স্বীকার করে নাই 1৮ [২য় অঙ্ক, ২য়গর্ভাঙ্ক] এখানে বিগতদিনের ক্ষোভে জননী বাঁজবারার দুঃখ আরও গভীর হয়ে উঠেছে। স্বাধীনতার আনন্দ রাজস্থান দীর্ঘ দিন ধরেই লাঁভ করেছে-_স্তরাং বর্তমানের এই হীনাবস্থা রাজবারার কাছে অসহনীয় হয়েছে রাজস্থানে শুধু বীরপুরুষরাই আত্মদাীনের দৃষ্টীন্ত স্বাপন করেনি, যোগ্য বীরনারীরাও অংশগ্রহণ করেছে জীবনদানে তাই রাজবারা আবার এই ছুদিনে তাদের আত্মপ্পানের কথা ক্মরণ করে অশ্রবারি মোচন করছেন,_- হায় কি ভারতে আর সেদিন আসিবে ! যেদিন মহিলাগণ, ধরি নানা প্রহরণ রণসাঁজে সমর করিত, যেদিনেতে বীরনারী, স্থতপতি পরিহরি অনায়াসে অনলে পশিত ; স্বদেশের তরে প্রাণে মায়া না করিত। [এ] সত্রীপুরুষ নিবিশেষে স্বাধীনতাযজ্ঞে আত্মদানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে রাঁজবারার উ্জিটি একটি অর্থপূর্ণ ইঙ্গিত। ভারতইতিহাসের এই এঁতিহ্র পুনরাবি9্ভীব

নাটক ৪৩১

নাঁট্যকারেরও কাম) ক্ষুদ্র নাটিকার রূপক আবরণ উন্মোচনের সঙ্গে সঙ্গে নাট্যকারের “দেশচিস্তার ব্যাপকতা। আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

নাটকের শেষাংশে অয্যোধ্যার সঙ্গে ভাঁরতীর কথোপকথনের মাধ্যমে ভারতীয় -স্নাতনধর্মের রক্ষণও যে জাতীয়তাবাদী দেশবাঁপীর অন্ধতম প্রধান কর্তব্য সে সম্পর্কে সচেতন করে দেওয়া হয়েছে। ধর্ম এ্রতিহা এই ছুটি আদর্শ আকড়ে ধরেই ভবিষ্যতের বনিয়াদ গড়ে তুলতে হবে, নাট্যকারের মন্তব্যও যথার্থ সত্য |

অযোধ্যার কাছে ভারতী আক্ষেপ করে বলেন,_“কেহ “বেদ কিছু নয়” বলে 'বেদের উচ্ছেদসাধনে প্রবৃত্ত, কেহ বা তাহার রক্ষার জন্য ব্যস্ত, কেহ বা জাতিভেদ উঠাইবার চেষ্টা করিতেছে, কেহ “রামায়ণ কবিকল্পনা সম্ভূত কোন সত্যঘটনা অবলম্বন -করিয়। হয় নাই” বলিয়া কত মিথ্যা বাঁচালতাপ্রকাঁশ করচে 1” [৩য় অঙ্ক?

ভারতীর এই উক্তি খুব সংক্ষেপে বাংলাদেশের ধর্মান্দোলনের সমালোচনা প্রাচীন সংস্কৃতি এঁতিহ্রক্ষার সচেতন চেষ্টাও সে যুগের লক্ষ্যণীয় বৈশিষ্ট্য নাট্যকার প্রগতি এতিহারক্ষার মধ্যে ওধু ভাবাবেগ প্রত্যক্ষ করেছিলেন, কোনটিই অন্রান্ত -সত্যনির্দেশে সহাঁয়তা করেনি বলেই তীর বিশ্বাস কিন্তু ভারতীর সমালোচনায় স্পষ্টভাষিতায় তার অন্তনিহিত ব্যঙ্গটি বড়ো মনোরম হয়েছে বলে মনে হয়। মিত ব্যঞ্রিত ভাষণের সৌন্দর্যও এখানে চোঁখে পড়ে সচেতন দেশবোঁধ যথার্থ সত্যচেতনায় সাহায্য করে থাকে। দেশপ্রেমিকই দেশশিন্দুক হতে পারেন,_- আন্তরিকতার শাসনে অপদার্থকে স্বরূপ চিনিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব তিনি স্বেচ্ছায় মাথায় তুলে নেন। সে যুগীয় ব্যঙ্গসাহিত্যের শ্রষ্টা সম্পর্কে সত্যটি আমরা নতুন করে আঁলোচন! করব “ভারতী ছুঃখিনী” নাটকের সমীলোচনার অংশগুলি তাই নাট্যকারের নিস্পৃহ নিখু'ত সমাঁজদর্শনেরই ফলাফল। হিন্দুশাস্্ও শাটকের একটি চরিত্র রূপেই কল্পিত। হিন্দুশান্ত্রই হিন্দুসভ্যতার ধারক আলোচক | কুতরাং 'দুঃখিনী ভারতী যখন পরিবর্তনের প্রাবল্যে সনাতন হিন্দুশাস্ত্র, সভ্যতা সংস্কৃতির ক্ষীয়মান রূপ দেখে আক্ষেপ করেন, হিন্দুশান্ত প্রত্যুত্তর দিয়েছে,

“আমাদিগের আসন, এক্ষণে তোমাদের তনয়গণ, আমাদিগের চিরশক্র ষেচ্ছাচার, অজ্ঞতা, অভাব প্রভৃতিকে প্রদান করিল ।” [এঁ]

এরই নাম পরিবর্তনের যুগ_প্রাানত্বকে বিদায় দিয়ে নবীনকে অভ্যর্থনীয় মুহূর্তে নাট্যকার এই প্রগতিকে স্বেচ্ছাচারিতা, অজ্ঞতা বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন এবং এমন ব্যাধ্যা মহাজনকখিত বাক্যেও বারংবারই শোনা গেছে। স্বয়ং বহিমচন্দ্র ব্যলের হুল ফুটিয়ে আধুনিকতার রূপ ব্যাথ্যা করেছিলেন নির্মমভাবে | রূপক নাটকে হিদ্দুশান্ত্ই চরিত্ররূপে দর্শকের সামনে এসে ঈ।ড়িয়েছে। এই নাটকের পরিসর অল্প

৪৩২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে হ্বদেশপ্রেম

হলেও প্রতিভান্ুগ বিশাল ভাবপ্রকাঁশে কোন অসুবিধা হয়নি তৎকালীন ভারতের অন্তরটি নাট্যকার প্রত্যক্ষ করেছিলেন,__দর্শককেও সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেননি ভারতী যে কেন ছুঃখিনী, তার ছুঃখের হেতুই বা কি,- নাটকটি পাঁঠ করে সে সম্বন্ধে একটা স্পষ্ট ধারণ! লাভ করা সম্ভব হয়েছে বলেই নাট্যকারের উদ্দেশ্য আদর্শ, দেশপ্রেমিকতা স্পষ্টবাঁদিতা সম্পর্কে আমরা নিঃসংশয় হতে পেরেছি নিঃসন্দেহে ক্ষমতা নাট্যকারের নিজব্ব,-- প্রচলিত বিশ্বাম মতবাদ কিংবা দেশপ্রেমাদর্শ তার প্রতিভার স্পর্শে রূপময় হয়ে উঠেছিলো

নাটকের শেষদিকে রোদনরতা ছুঃখিনী ভারতী পুনরায় ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন,

“মনে মনে আঁশ ছিল যদি কখন সন্ভানগণের জ্ঞান হয় তবে হিন্দুশাস্ত্রের অভিমতে চলিবে আর আমারও আবার সৌভাগ্যের উদয় হবে আবার হাত তুলে মানুষকে দিতে পারব ।' [এ ]

দর্শকচিত্তও উজ্জীবিত হয় সে মন্ত্রে। প্রাচীন আদর্শকে গ্রহণ করেই নবীন জীবন পরিবর্তনকে আহ্বান জানাতে হবে অজ্ঞানতাই তাঁর একমাত্র বাধ।। জ্ঞানের শলাকা দিয়ে শুধু চিত্তলোকের সংস্কীর করলেই চলবে না, মশাল জালিয়ে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে বীরত্বের বাঁণী উচ্চারণ করে- এমন স্পষ্ট আহ্বান নাটকেই পরিবেশন কর] সম্ভব নাট্যকার পরিচিত নন, নাটকটিও জয়মাল্য ভূষিত বিশেষ সৃষ্টি বলে অভিনন্দিত হয়নি তবু নাটকের দেশপ্রেমাত্মিক বক্তব্য আমাদের বিদ্ষিত করেছে পরবর্তীকালে জাতীয় আন্দোলনের লগ্নে যে দেশপ্রেমমূলক নাট্যসম্ভারের জন্ম হয়েছিলো, যা আমাদের আত্মত্যাগের প্রেরণা সঞ্চার করেছিলো, তারও বনু আগে এই অন্ুল্লেখ্য রচনাটির মধ্যে আমরা যে সম্ভাবন। লক্ষ্য করেছি,_তা৷ সামান্য নয় ঘরে যুগের অভিনয়ের আসরে সাড়া জাগানে। নাটকের শ্রেণীতে ফেলা চে] গেলেও এর অভিনয় সংবাদ পাওয়া গেছে যথেষ্ট আলোচন। হয়নি বলেই এর নাট্যযূল্য বা অভিনয়সাফল্য সম্পর্কে আমাদের নীরবতা পালন কর! ছাড়া অস্ত কোন উপাঁয় নেই। “ভারতী দুঃখিনীর” রূপক ভেদ করে যদি এর মর্মার্থ গ্রহণ করা যায়, দেখা যাবে, আমরা বিফল হইনি দেশভাঁবনা সম্ধল করে সমগ্র ভারতের অতীত বর্তমান পটতৃমিকাঁয় নাট্যকার কিভাবে এই ক্ষুদ্র নাঁটিকাঁটির পরিকল্পনা করেছিলেন ভাবলে বিশ্মিত শ্রদ্ধায় আগুত হয়ে যাই আমরা

মধুক্ছদন দীনবন্ধুর নাট্যসাঁহিত্যে যা শুধু ইঙ্গিত ছিলো,-_-পরবর্তী যুগের নাটকে যা রূপকায়িত স্বদেশাত্মক ভাবনামাত্র-_অল্পকালের মধ্যেই ত৷ প্রকাশ্য স্বদেশপ্রেমের বক্তব্য প্রচারে ব্রতী হয়েছে কিরণচন্দ্র এবং হাঁরাণচন্ত্র পূর্নাঙ্গ নটিক রলচন|4

নাটক ৪৩৩

করেননি, এমন কি নাটকের স্বাভাবিক রচনাভঙ্গীর সাহাষ্য নেওয়াও তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয়নি তির্যক ভঙ্গীতে স্বদেশপ্রেম প্রচারের ক্ষীণ চেষ্টা করেছিলেন তারা ঝুঁকি নেওয়ার সামথ্য নিয়েই পরবর্তী যুগের নাট্যকারের। স্বদেশাস্্রক বক্তব্যকে সরাসরি বলার স্পর্ধা পেলেন। কাব্যেও যেমন দেখেছি, দ্বিধা সংশয় থেকে পরোক্ষতাবের সাহাধ্য গ্রহণ করে দেশপ্রেমিক কবির! ব্যঙ্গ কবিতায় স্বদেশপ্রেম প্রচার করেছেন, নাটকের প্রথম যুগেও ঠিক তাই কিন্তু জাতীয় নাট্যুশালা স্থাপনের অল্পকালের মধোই দুঃসাহসিক ক্ষমতা নিয়ে নাট্যকারগোষী সদর্পে স্বাধীনতা মহিমা ঘোষণার জন্য প্রস্তুত হলেন। যুগেরই প্রবীণ নাট্যকার জ্যোঁতিরিক্্নাথ ঠাকুরের পরিচয় স্বদেশপ্রেমিক অষ্টারূপে | বাংল। নাটকে স্বদেশপ্রেম প্রচারই ছিল তাঁর সাধনা জীবনবাণী। জাতির মনে স্বাধীনতাস্পৃহা হৃজনের দীক্ষা নিয়ে নাট্য- সাহিত্যে তার শুভ পদার্পণ হলেও তাঁর আবির্ভাবেরও আগেই এসেছিলেন ছু'একজন নাট্যকার, ধার! একই আদর্শের প্রেরণা পেয়েছিলেন, তৎকালীন রাজনৈতিক পরিবেশ থেকে এদের মধ্যে হরলাঁল রায়ের নামই সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য শ্রাহকুমার সেন মহাশয় মন্তব্য করেছেন,__

“জাতীয় আন্দোলনের প্রভাব সমসাময়িক নাটকের মধ্যে দেখা গেল সর্বপ্রথম হরলাল রায়ের “হেমলতা” নাটকে ।৮২৪

সুতরাং জাতীয় আন্দোলনের প্রভাব যে নাটকের মহিম। বৃদ্ধি করেছিল সেই নাটকের অষ্টার কিছু বৈশিষ্ট্য আমাদের আলোচনা কর! দরকার | হ্রলাল রায় “হেমলতা” নাটকে সময়োচিত বক্তব্য পরিবেশন করেছিলেন স্বাধীনতার জন্ জীবনবিসর্জনও যে কাম্য সত্য “হেমলতা” নাটকের গৌরব বৃদ্ধি করেছে নাটকের সমালোচন। প্রসঙ্গে "বঙ্গদর্শন" সম্পাদক ১২৮০ খৃষ্টানদের মাঘের 'বঙ্গদর্শনে' লিখেছিলেন,

*হেমলতা” নাটক এখনকার প্রচলিত অনেক নাটক অপেক্ষা অনেকাংশে উত্তম ।৮

বঙ্কিমচন্দ্রের এই প্রশংসার যূলে তৎকালীন বাংলানাটকের ছুরবস্থার উল্লেখ রয়েছে বঙ্কিমচন্ত্র সেযুগের প্রচলিত বাঁংলানাটক সম্পকে নৈরাশ্ব বোধ করতেন সমালোচনায় প্রচলিত বাংদা নাটক সম্পর্কে অনাস্বার মনোভাবটি গোপন করতে পারেননি তিনি কিন্তু “ত্মেলভা” নাটকের বক্তব্য তাঁকে খুশী করেছিল সম্ভবতঃ স্বদেশপ্রেমী স্মহিত্যিকের দৃষ্বিতেই ছিনি সেযুগের বাংলা নাটকের বিচার করেছিলেন এবং প্রচলিত বাংল! নাটকে দেশাত্মবোধে্য অভাবই তাকে পীড়িত করেছিলো

২৪. সুকুমার মেন, বান্গাল! সাহিত্যের ইতিহাস। ২য় *৩। ব্ধমান সাহিত্য মত! ২৮

৪৩৪ উনবিংশ শতাববীর বাংল! সাহিত্যে ্বদেশপ্রেম

“হেমলতা” নাটকের এই সমালোচনার মূলে নাট্যকারের স্বদেশ চেতনারই প্রশংসা করা হয়ে থাকে-_কারণ উচ্চাের নাটক রচনা করার মত যোগ্যতা নাট্যকারের ছিল না। শুধু বিষয়গত বা ভাবগত শুদ্ধতার প্রসঙ্গ নিয়েই নাট্যকার প্রশংসিত হয়েছিলেন।

*হেমলতা” নাটকের বিষয়বস্ত কল্পিত ইতিহাস এবং ব্যাপারেও তাকে রাজস্বানের এঁতি হর দ্বারস্থ হতে হয়েছে এ্তিহাঁসিক চরিত্রের প্রচ্ছায়ে কল্পনার অবাধ স্বাধীনতা গ্রহণ করতে পারেন নাট্যকার হতরাং দেশাত্মবোধের দ্বার! অনুপ্রাণিত চরিত্রগুলির সঙ্গে ইতিহাসখ্যাত দেশপ্রেমিকদের নাম যুক্ত করে দেওয়ার প্রচলিত সুষৌগ গ্রহখ করেছিলেন নাট্যকার এখানেও প্রতাপসিংহের স্বদেশপ্রেম কাহিনীর পটভূমিকা সজনে সহায়তা করেছে চিতোরের বর্তমীন অধিপতি বিক্রম- সিংহই কাহিনীর অন্যতম প্রধান নায়ক চিতোরের সিংহাঁসনে বীরত্ব না থাকলেও অধিপতি হয়ে উপবেশন করা চলে তাই বিক্রমসিংহ অকর্মণ্য সআরাটরূপেই রাঁজত্ব করেন। কমলা হেমলতা প্রতাপসিংহের বিতাড়িত পত্বী কণ্ঠারপে পরিচিত অকর্মণ্যতাঁর প্রতিফল পেলেন বিক্রমসিংহ কারণ শক্তিমান উদয়পুরাঁধিপতি তেঙ্গসিংহ তাকে বন্দী করে রাজ্য অধিকার করেছেন বন্দীজীবনের লাঞ্ছনা যখন অসহনীয় হয়ে ওঠে বিক্রমসিংহ তখন আক্ষেপ করেন,_

“অধীনতাম়িশ্রিত রাজভোগও তীব্রতম কাঁলকৃট, অধীনতামিশ্রিত স্থখ বিড়ম্বনীমাত্র, অধীনতামিশ্রিত জীবন শু তৃষমাত্র 1২৫ [ তৃতীয় অঙ্ক, ৪র্থ গর্ভাঙ্ক ]

হতাঁশের ক্রন্দন হলেও পরাধীনতার জালাটি মিথ্যা নয়। নাট্যকার স্বাধীনতার আনন্দ বোঝাতে গিয়েই অধীনতার ছুঃখবর্ণনার সুযোগ গ্রহণ করেছেন মাত্র না! হলে বিক্রমসিংহের ছুঃখ আবেদন স্থজনে সক্ষম হয়নি, -বিক্রমসিংহের অযোগ্যতাঁর যোগ্য প্রতিফল এই !

কিস্ত চিতোরের রাজ অযোগ্য হলেও প্রতাপসিংহের চিতোরে সাহসী সৈনিক স্বদেশপ্রেমিক বীরের অভাব ছিল না। নাটকের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের প্রসঙ্গে আমাদের প্রয়োজন নেই,শুধু দেশীত্মবোঁধের দ্বারা অনুপ্রাণিত বীর সৈনিক সত্যসখার আত্মদাঁনের সংকল্পটি যখন সোচ্চার হয়ে ওঠে তখন দর্শক দেশপ্রেমের শিক্ষারুকু গ্রহণ করতে পারেন কমলাকে সত্যশখা চিতোরের ছর্দিনে তার ভবিষ্যতের সংকল্প জানিয়েছে, বীরত্ব শের্ধের প্রতীকরূপেই নাটকে তার আবির্ভাব প্রতাপসিংহের স্বপ্ন আদর্শ /চিতোরের কোনে! একটি যুবকের মনেও

২৫, হরলাল রায়, হেমলতা। নাটক ২য় সংস্করণ ১২৮১।

বর্ণ

নাটক ৪৩৫

অন্ততঃ উত্তেজনা সজনে সক্ষম হয়েছে_এটুকুই আঁশীর কথা। সত্যসখাই চিতোরের যথার্থ পুরুষ, স্বাধীনতার আকাজ্ষাই তাঁকে দুর্বার শক্তি দান করেছে। সত্যসখার বীরত্বপূর্ণ উক্তি স্বদেশপ্রেমিকের প্রাণেও উদ্দীপনা সঞ্চারে সমর্থ হবে

, সত্যসখা “মহারাজ বিক্রমসিংহের হিতের জন্য আমি যবনদিগের সঙ্গে যুদ্ধ করব ছুরাচার শ্রেচ্ছগণ সগবে ভারতের বক্ষের উপর পদার্পণ করেছে ।__আমি কি পঙ্গু আতুরের ম্যায় তাহীদের দৌরাত্ম্যের কথা শুনব আর হয়ত কণামাত্র ক্রোধ মনে জলে উঠেই নির্বাণ হবে 1--এই স্বর্গতুল্য ভারতভূমিকে যবনের। অধীনতাশৃঙ্খলে বদ্ধ করবে, তা মনে করাই মৃত্যুর অধিক। ভারততভৃমি পরাধীন হবার পূর্বে প্রত্যেক ভারতসত্তাশ প্রাণত্যাগ করুক। যে ইহার জন্য প্রস্তত নয় ব্রিভূুবনে যেন তার স্থান নাহয়। আমি আপনাকে মা বলে ডাকবার অন্ুপযুক্ত যদি ভাঁরতভূমির জন্য প্রাণ দিতে না পাঁরি।” | চতুর্থ অঙ্ক, দ্বিতীয় গরভাঙ্ক

নাটকীয় প্রয়োজনেই হয়ত নাট্যকাঁর সত্যসখার মুখে সংলাপ আরোপ করেছেন। “হেমলতা” নাটকের এই বীরত্বপূর্ণ অংশগুলিই অভিনয়ের আকর্ষণ বৃদ্ধি করেছিল সম্ভবতঃ | হেমলতা” নাটকের প্রথম অভিনয়ের সংবাদ পাঁওয়া যাচ্ছে ১৮৭৩ সনের ১৩ই ডিসেম্বর “অমৃতবাঁজারে”-এর সমালোচনা প্রকাশিত হয়,_-

“বাংলা সাহিত্যে যদি বীররসপ্রধান পুস্তকের অসপ্ভাঁব থাকে তবে সে পাঠকের কি শ্রোতার অভাবে নহে-গত শনিবার ন্যাশনাল খিয়েটরে “হেমলতা” নাটকের অভিনয়ে আমর] ইহার আর একটি প্রশ্নাণ পাইয়াছি। নাটকখানি যেরূপ পাঠোঁপযোগী হইয়াছে, উহা সেইরূপ অভিনয়ৌপযোগী হইয়াছে ।-- আমরা কলিকাতার রঙ্গভূমিতে যে সকল নাটকের অভিনয় দেখিয়াছি হেমলতার” ন্যায় কোন

নাটকই এত কৃতকার্য হয় নাই ।” [ ১৮ই ডিসেম্বর, ১৮৭৩ ]

*হেমলতা* নাটকের প্রতি স্ধীসমাজের সপ্রশংস দৃষ্টি যে পড়েছিল-- সমালোচনায় তার আভাস পাওয়া যাবে অভিনয়ধন্য নাটক হিসেবেই শুধু নয়, নাটকের পাঠযোঁগ্যতাকেও স্বীকার করা হয়েছে। বিষয়বস্তু পরিকল্পনায় বোখা্িকতার প্রভাব নাট্যকাঁর এড়াতে পারেননি বস্ততঃ স্বদেশপ্রেম এক ধরনের রোঁমার্টিক বৃত্তিরই অনুণীলন--বাস্তবতাঁর সঙ্গে এর মিল খুজে পাওয়া যাঁবে না। দেশাদর্শের কল্পনায় বাস্তবের ছোয়াচ তখনও আমাদের জীবনেই লাগেনি, সাহিত্যিকের কল্পনায় কোনমতে ত। স্থান করে নিয়েছে মাত্র। সেই মৃহূর্তেই নাট্যকার দেশপ্রেমভিত্তিক একটি পূর্ণাঙ্গ নাটকের পরিকল্পনা করেছিলেন, এই পরিকল্পন?ই ভবিস্ততের নাট্যকারগো্ঠী কর্তৃক গৃহীত হয়েছিলো, এখানেই হরললি রায়ের কৃণ্তত্ব। জ্যোতি।রন্দ্রনাথের পূর্বন্রী হিসেবে এই কৃতিত্বটুকু লক্ষ্যণীয়

৪৩৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল। সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

“হেমলতা” প্রসঙ্গে শ্রীন্ছকুমার সেন বলেছেন, _"হেমলতা৷ | ১৮৭৩ ] রোমান্টিক নাটক এবং কতকট। ইংরাজী আদর্শে পরিকলিত 1৮২৬

দেশচেতনার মূলেই যখন পাশ্চাত্ত্য প্রভাব রয়েছে--তখন দেশপ্রেমমূলক সৃষ্টিতে তার পূর্ণ প্রতিফলন থাকাটাই স্বাভাবিক রঙ্গলালের স্বদেশপ্রেমাত্বক কবিতায় টমাস মুরের প্রভাব যেমন স্পষ্ট, হরলাল রায়ের পূর্ণাগ দেণপ্রেমীত্রক নাটকে বিদেশী, ভাবাদর্শের প্রতিফলন তেমনই স্পষ্ট। তবে এদেশীয় ভ।বধারায় দেশচেতনা যখন সর্বজনীন অনুভূতিতে পরিণত হয়েছে,__সে মুহূর্তে সত্যসখার ভাবাবেগপূর্ণ নাটকীয়, উক্তিকে নিতান্তই বিদেশীবস্ত বলে মনে হয় না। যবনবিদ্বেষ, অতীতমহিম। মরণ, হিন্দুসভ্যতাঁর মহিমাকীর্তনে সমগ্র বাংল। কাব্য যখন স্ফীত হয়ে উঠেছে,_-সে মুহুর্তেই নাটকের পরিকল্পনা সেদিক থেকে সমসাময়িক বাংলাকাব্যের প্রভাবও এতে

স্পষ্টভাবে দেখ। যাচ্ছে।

সত্যসখার বীরত্বপূর্ণ উক্তিতে দেশপ্রেমের উচ্ছ্বসিত প্রকাশ লক্ষ্যণীয়- কিন্ত সেকালীন প্রয়োজনের সঙ্গে স্বদেশপ্রেমিক নাট্যকারের অনুভব মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে ভারতসন্তানের কাছে স্বাধীনতার মূল্য জীবনের চেয়েও অনেক বেশী আর ন্বাধীনতাবিহীন জীবনের প্রতি নাট্যকারের খ্বণাই সংলাপের মাধ্যমে উচ্চারিত হয়েছে শুধু মাত্র সত্যসখার উক্তি নয়, নাট্যকারের গভীর বিশ্বাস আদর্শেরই কথা এ। নাটকীয় প্রয়োজন নাট্যকারের অন্ুভাবন। সংলাপে অতি হ্বন্দরভাবে প্রকাশ পেয়েছে পরাধীনতার জাল] সত্যসখাঁর জীবনে যে তিক্ততা কৃজন করেছে উনবিংশ শতাব্দীর স্বাধীনচেতা প্রতিটি মানুষের মনে সেই তিক্ততা ছেয়ে ফেলেছিল এবং তারই প্রতিক্রিয়ারূপে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখার পাল শুরু হল চেতন- অবচেতন মনে উনবিংশ শতাব্দীর সগ্ধজাগ্রত স্বাধীনতা চিন্তায় চিতোরের গৌরবের, স্বাধানতার মুহ্র্তগুলি সেকারণেই নাট্যকার, কবি ত্ত অগ্ভাকে আকর্ষণ করেছিল চিতোরের ইতিহাঁসেই আত্মদানের সংকল্প, বাণী স্বাধীনতার জন্য আকুলতা দেখ! দিয়েছিল, তাই সত্যসখার মুখে শপথবাক্য বেমানান হয়নি ভারততভূমির স্বাধীনতা) রক্ষার দায়িত্ব এমনি ভাবে প্রতিটি মানুষের চিন্তাকে অধিকার করবে নাট্যকার সম্ভবত এই আশায় সত্যসখা চরিত্রটি কল্পনা করেছিলেন সুতরাং “হেমলতা” নাটকে সত্যসখাই নাট্যকারের স্বদেশচিন্তা আদর্শের বাণী বহন করছে। যে মুহূর্তে সত্যসখ। আমাদের সামনে এসেছে নাটকের উচ্ছুপিত আবেগের বাণী আমাদের চিত্তকে _অভিস্ৃত করে ফেলে সত্যসখা চিতোর্স উদ্ধারের সংকল্প করে বলেছে”_

২৬. নুকুমার সেন, বাংলা লা সাহিক্ের ইতিহাম। ২য় খণ্ড বর্ধগান সাহিত্য সভা, ১৩৬২, প্‌ ২৫5।

নটিক ৪৩৭

*ম্বাধীনতার কাছে জীবন কি ?-.. যদি তোমাদের স্বদেশের প্রতি অনুরাগ থাকে, যদি স্বাধীনতাকে তৃণজ্ঞান না কর, বদি হিন্দুধর্ষে তিলার্দ শ্রদ্ধা থাকে সকলে চল মেচ্ছদ্দিগকে দূরীভূত করি ।-..স্বাধীনতা তোমাদের বল, স্বদেশাহুরাগ তোমাঁদের বল, হিন্দুধর্ম আমাদের বল, দেবাঁদিদেব মহাদেব আমাদের বল ।” [ ৪র্থ অঙ্ক, ৪র্ঘ গর্ভাঙ্ক

উক্তি যে কোন দেশপ্রেমিকের কীজমন্ত্র হতে পারে

জ্যোতিরিন্দ্রনাথের দেশপ্রেম নাটকে বিভিন্ন ধারায় উৎসারিত হয়েছিল এবং তার প্রতিটি মৌলিক ইতিহাসাশ্রিত পূর্ণাঙ্গ ন'টিকেই' স্বদেশভাবন' মুখ্যরূপে দেখা দিয়েছিল। “হেমলতা” নাঁটকটিও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসাশ্রিত নাটক | তবে এঁতিহাসিক একটি স্থানের মাহাত্ব্য ছাঁড়া এ্রতিহাসিক কোন চরিত্র, ঘটনা চেতনার পরিচয় নাটকে নেই। সুতরাং মৌলিক রচনা বলেই নাটকটির পরিচয় দেওয়া যাঁয়। ভারতমাতা” ভারতে যবন' ইত্যাদি ক্ষুদ্র নাটিকায় স্বদেশপ্রসঙ্গই জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। নাট্যকার হরলাল রায় সর্বপ্রথম স্বদেশীত্মক পূর্ণাঙ্গ নাটকের পরিকল্পনা করে জনগণের ক্রমবর্ধমান স্বদেশান্ুবাগের আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন 'জ্যোতিরিন্দ্রনাথের প্রথম পরিচয় স্বদেশপ্রেমী নাঁট্যকাঁররূপে কিন্তু স্বদেশতাঁবনার প্রবহমান ধারাটির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল বলেই আমাদের ধারণা নাটক অভিনয়ের উৎসাহ নিয়েই প্রথম জীবনে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন এই সময়েই বঙ্গ-রঙ্গম্চ সেকালের নাঁট্যোৎসাহী জনসমাজের সঙ্গে ভীর যোগাষে'গ স্থাপিত হয়েছিল। তিনিই স্বদেশপ্রেমকে নাটকে একটা বিশেষ বক্তব্য করে তুলতে সমর্থ হয়েছিলেন কিন্তু এর প্রেরণা দিয়েছিল সেযুগে নাঁট্যকার-বর্গ উৎসাহী নাট্যরসিকদের সময়োচিত অভিনন্দন | হরলাঁলের “হেমলতা” নাটকেই আমরা মোটামুটি স্বদেশভাবনাঁর একটা সংহতরূপ প্রত্যক্ষ করেছি,__বিশুদ্ধ দেশচিস্জাই ছিল নাট্যকারের প্রধান অবলম্বন | কিন্তু সফল নাট্যকার হিসেবে হরলা'ল রায়ের কোনো বিশিষ্ট পরিচয় নেই বলেই তব উদ্দেশ্যের মহত্ব আজকের অনুসন্ধিৎসথ পাঠকদের পরিশ্রম করে আবিক্ষার করতে হয়। তিনি হারিয়ে গেছেন অজ্ঞাত নাঁট্যকারদের মাঝখানে এর প্রথম কাঁরণ এই হতে পারে, তিনি যে বিষয়ে নাটক লিখে বিশিষ্টত। অর্জনে সমর্থ হয়েছিলেন সে বিষয়ে অধিকচর্চর বিন্দুমাত্র চেষ্টা না করা অর্থাং 'মনোযোগ আকর্ষণ করেও তিনি একাধিক নাটক রচনা না করে থেমে গেলেন অথচ 'জ্যোতিরিজ্্নাথ একই বক্তব্য বারংবার প্রকাঁশ করার অনলস প্রচেষ্টায় জয়ী হলেন '্বদদেশভাবনার বিষয় নিয়ে তিনি পরপর চারটি নাটক লিখেছিলেন অথচ “হেমলতার' মত অভিনয়-সফষল নাটক আরও লিখে বক্তব্য প্রচার করার অনলস সাধনা নাট্যকার হরলাঁলের ছিল না। তিনি অবশ্য অন্যধরণের নাটক লিখেছিলেন

৪৩৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে দেশপ্রেম

আশ্চর্যের সঙ্গে লক্ষ্য করতে হয় যে হরলাল তাঁর সীমিত প্রতিভা সামান্য প্রতিষ্ঠা অবলম্বন করেই পৃথিবীখ্যাত নাট্যকারদের শ্রেষ্ঠ নাটকের অনুবাদে হাত দিয়েছিলেন সেক্সপীয়ারের “ম্যাকবেখ” অবলম্বনে “রুদ্রপাল” কালিদাসের “অভিজ্ঞান শকুত্তলমের* অনুবাদ করেছেন “কনকপন্ম নামে নিজের প্রতিভার অনম্যতা বজব্যের মৌলিকত্ব অন্থসন্ধানের বিন্দুমাত্র চেষ্টা না করে খ্যাতিলাভের স্থলভ চেষ্টায় মেতে ন। থাকলে জ্যোতিরিন্ত্রনাথের অগ্রজ স্বদেশপ্রেমী নাট্যকার হিসেবে হরলাল রায় ইতিহাসে স্থান পেতেও পারতেন কিন্তু প্রতিভার দুর্বলতা, আত্মআবিফারের অক্ষমতাই তার অসাফল্যের কারণ হিসেবে উল্লিখিত হবে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সঙ্গে হরলাল রায়ের রচনাগত সাদৃশ্যও দুর্লক্ষ্য নয়। জ্যোতিরিন্্রনাথও দেশী বিদেশী প্রখ্যাতনাম। নাট্যকারদের অনুসরণে অনুবাদ নাটক রচন। করেছিলেন যুগের স্বদ্শপ্রেমী নাট্যকার রূপে যিনি সর্বজনপরিচিত সেই জ্যোতিরিন্্রনাথের পরিচয় ঠাকুর পরিবারের সন্তান রূপে | তাঁর আদর্শ খ্যাতির আলোচন। কালে ঠাকুর পরিবারের প্রসঙ্গ এসে পড়ে সবাঁর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনত। আন্দোলনে ঠাকুর পরিবারের অবদানের উল্লেখ না থাকলে সে ইতিহাস অপূর্ণ রচন1 বলে চিত হবে মহষি, দেবেন্দ্রনাথের স্বাধীনচেতনার নানা প্রসঙ্গ রবীন্দ্রনাথের “জীবনস্থতি, মহষির 'আত্মচরিত' পাঁঠেই জান। যায় মহষির দেবোপম চরিত্রের প্রভাব তার সন্তানদের চরিত্রে উত্তরাধিকার ক্ষত্রেই বর্তেছিল। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ পিতার স্বদেশপ্রেমাদর্শ ঠাকুর পরিবারের স্বাদেশিকতার আবহাওয়ার মধ্যেই জন্মেছিলেন তার! ধ্যানধারণা, শিক্ষার্দীক্ষা, স্বপ্ন কল্পনার সঙ্গে ঠাকুরবাড়ীর সংস্কার স্বাধীনচিন্তা ওতপ্রোত হয়ে আছে। সুতরাং জ্যোতিরিন্ত্রনাথের দেশাত্ববোধের আদর্শ ব্যাখ্যা করতে পারলেই তার চিন্তাজগতের স্বরূপ বিশ্লেষণে আমাদের অস্থবিধে হবে না।

নাট্যকার জ্যোতিরিন্দ্রনীথের নাট্যসম্তারে স্বদেশচিন্তার যথার্থ রূপ আঁবিষারই আমাদের উদ্দেশ্য হলেও স্বদেশপ্রেমিক জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বিভিন্ন পরিচয় অন্তপ্রও রয়েছে তিনি নাট্যকার রূপে পরিচিত হওয়ার বহুপূর্বেই স্বাধীন মননের চিন্তনের পরিচয় দিয়েছিলেন নান৷ কাজে ঠাকুরবাঁড়ীতে অভিনয়-ব্যবস্থার প্রধান উদ্োক্তাদের মধ্যে গণেন্্নাথ ঠাকুরের জ্যোতিরিন্দ্রনাথের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য -_তীরাই এর পরিকল্পনা করেছিলেন। জ্যোতিরিন্্রনাথের নাট্যরচনার সঙ্গে তার নাট্যাভিনয়ের প্রতি একান্ত আগ্রহের যোগ রয়েছে। জ্যোতিরিন্্রনাথের স্বদেশচর্চার বিভিন্ন পন্থার কথাও রবীন্দ্রনাথ জীবনস্মতিতে উল্লেখ করেছেন নিতান্ত বাঁল্যকালের, স্বৃতিতে রবীন্দ্রনাথ যে সব আশ্চর্য ঘটন তাঁদের বাড়ীতে ঘটতে দেখেছিলেন,

নাটক ৪৩৯

সবকিছুর সঙ্গে জ্যোতিদাদার ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। জ্যোভিরিন্্রনাথের ব্বদেশচর্€ও নাঁনারূপে বিকশিত হয়ে উঠেছিল

সম্ভব অসম্ভব নান কল্পনার মাধ্যমে সেদিনের অত্যুৎসাহী স্বদেশপ্রেমীরা দেশ জাতির উদ্ধারের অথবা কল্যাণের বিষয় চিন্তা করতেন। জ্ঞযোঁতিরিক্রনাথের অমিত উদ্ম উৎসাহ নান! অবাস্তব কল্পনায় কি ভাবে উদ্দাম হয়ে উঠত,__জীবন- স্বৃতির পাতায় তার বিবরণ রয়েছে পম্বাদেশিকের সভা” স্থাপন করে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতেন, - গঠনমূলক অনুষ্ঠানস্থচীও তৈরী করেছিলেন নিখু'ত ভাবে একই সময়ে “হিন্দুমেলা”-র উত্তেজনা চলছিল। ১৮৬৭ খ্রীঃ “চৈত্রমেলার" প্রথম উৎসবে জ্যোতিরিন্ত্রনাথ উপস্থিত ছিলেন না কিন্তু ১৮৬৮ শ্রীঃ হিন্দুমেলায় “উদ্বোধন কবিতাটি নিজেই রচনা করলেন, মেতে উঠলেন সেই “জাতীয় মেলাটি' নিয়ে জ্যোতিরিন্্রনাথ তখন ১৯1২০ বৎসরের যুবক নবগোঁপাল মিত্র রাজনারায়ণ বস্থর মত শ্বদ্শপ্রেমীদের সংস্পর্শে এসে তাঁর যুবচিত্তের চাঞ্চল্য আরও উদ্দাম হয়ে উঠেছিল দেশচিন্তার ধ্যানে এরা তাকে প্রেরণা দিয়েছিলেন জ্যোঁতিরিক্র- নাথের “জীবনস্থৃতিতে' বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন,

“নবগোপাল বাবু দেখা হইলেই জ্যোতিরিন্দ্রনাথকে উত্তেজনাপূর্ণ জাতীয় ভাবের কবিতা লিখিতে অনুরোধ করিতেন জ্যোতিবাবু সময়ে কবিতা লিখিতেন না বা ইহার পূর্বেও কখনও লেখেন নাই ।”২৭

এর পরের ঘটনায় দেখি, হিন্দুমেলার পঠিত কবিতাটি জ্যোতিরিন্দ্রনাথই রচন। করেছেন দেশকে ভালবাসার যে প্রেরণা এসেছিল সে যুগের আবহাওয়া থেকে,_- জ্যোতিরিন্্রনাথের মনে তার ঢেউ উত্তাল হয়ে উঠেছিল এই ভালবাসা নিষ্ক্রিয় দেশাভিমান নয়,_সংগঠনমূলক চিন্তাভাবনায় এই দেশপ্রেমের অকলম্ক রূপটি উদ্ভাসিত জ্যোতিরিন্দ্রনাথ নিজের জীবনে সৎ আদর্শের ছবিগুলি নানাভ।বে চিত্রিত করার প্রয়াস পেয়েছিলেন “স্বারদেশিকতা” প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ জ্যোতিদাদাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টায় যে দেশপ্রেম শ্ফুরিত হয়েছিল সে প্রসঙ্গে বলেছেন,

“ভারতবর্ষের একটা সর্বজনীন পরিচ্ছদ কী হইতে পারে, এই সভায় জ্যোতিদাঁদা তাহাঁর নানা প্রকারের নমুনা! উপস্থিত করিতে আরম্ভ করিলেন-''এইরূপ সর্বজনীন পোঁশীকের নমুনা সর্বজনে গ্রহণ করিবার পূর্বেই একলা নিজে ব্যবহার করিতে পারা যে-সে লোকের সাধ্য নহে জ্যোতিদাঁদা অন্নান বদনে এই কাপড় পরিয়া মধ্যাহ্নের প্রখর আলোকে গাঁড়িতে গিয়া! উঠিতেন-_আত্মীয় এবং বান্ধব, দ্বারী এবং সারথি

৭, বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যার, জ্যোতিরিক্রা নাথের জীবনস্থতি, ১৩২৬, পৃঃ ১২৮।

8৪০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে দেশপ্রেম

পকলেই অবাক হইয়৷ তাকাইত, তিনি জক্ষেপমাত্র করিতেন না। দেশের জন্য অকাতরে প্রাণ দিতে পারে এমন বীরপুরুষ অনেক থাকিতে পারে কিন্তু দেশের মঙ্গলের জদ্থা সর্বজনীন পৌঁষাঁক পরিয়া গাঁড়ি করিয়া কলিকাতার রাস্তা দিয়া যাইতে পারে এমন লোক নিশ্চয়ই বিরল ।”

স্বদেশপ্রাণ জ্যোতিদাদার প্রতি প্রচ্ছন্ন শ্রদ্ধাই রবীন্দ্রনাথ এখানে ব্যক্ত করেছেন স্বদেশপ্রেমিক কবি সাহিত্যিকদের স্বদেশভাবনার রূপ তাদের কাব্যে সাহিত্যে স্থান পেয়েছে কিন্ত স্বদেশপ্রেমিক মানুষের জীবনবৃত্তান্ত এমনভাবে পাইনি আমরা 'জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবনস্থৃতি গ্রন্থটিতেও তাঁর ত্বদেশভাবনার সঙ্গে স্বদেশপ্রেমিক জ্যোঁতিরিন্দ্রনীথের মিলিত রূপ খুঁজে পাওয়া যায়। স্বদেশচিত্তাই তার সবচেয়ে পবিত্রতম চিন্তা ছিল এবং কথনও কখনও মনে হবে তার সব চিপ্তাই স্বদেশচিন্তার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত পরাধীন লাঞ্চিত ভারতের মুক্তি সাধনের ব্রতপাঁলনে অগ্রণী চিন্তানায়কদের পুরেণভাগে জ্যোতিরিন্্নীথের স্থান নির্দেশিত হতে পারে |

স্বদেশীয়ানা বস্তটি শুধুমাত্র কাব্য-কবিতাঁর বিষয় হয়ে থাকুক কিংবা নিছক পাঁঠ্য বিষয়েই নিহিত থাকুক-_জ্যোতিরিন্ত্রনীথ তীর কয়েকজন সহকর্মী বন্ধু প্রথম এর প্রতিবাদ করেন। হিন্দুমেলার পরিকল্পনা, সম্মিলিত স্বদেশী ব্যবসায়ের পত্তন, আত্মনির্ভরশীল হওয়ার উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপনের অক্লান্ত চেষ্টা করেছিলেন এরা ব্রাজনারায়ণ বস্ছ, নবগোপাঁল মিত্র, জ্যৌতিরিক্ত্রনাথ এই তিনজনই কল্পলোঁক থেকে বাস্তবে স্বদেশীয়ানার তিত্তিস্থাপনের চেষ্টায় এগিয়ে এসেছিলেন দেশলাই কাঠির ব্যবসা থেকে স্বদেশী জাহাজকোম্পানি খোলার নানারকম অবাস্তব কল্পনাও দের উৎসাহেই শুরু হয়েছিল৷ জ্যোতিরিন্দ্রনাথের উদ্ধম যে কোনদিনই দমিত হয়নি, তার প্রমাণ পরবর্তীকালে বহু অর্থের ঝুকি নিয়েও তিনি জাহাজের ন্বদেশী ব্যবসায় আরস্ত করে ব্যর্থ থগগ্রস্ত হন। এসব দৃষ্টান্ত থেকে আমরা একজন স্বদেশপ্রাণ স্বদেশসর্বস্ব দেশপ্রেমিকের পরিচয় পাই যিনি দেশের জন্য যে কোন সৎ উদ্ভমের

পুরৌভাগে থাকতেন

ঠাঁকুরবাড়ীতে কলাচর্চর প্রশস্ত অবসর ছিল, এই পরিবেশেই জ্যোতিরিক্তরনাথ শুধু বাঁণীর সেবক না হয়ে কর্মযোগী হবার নেশায়ও মেতে উঠলেন $ সহজাত কাব্য- প্রতিভা ছিল বলেই সাহিত্যের সেবা না করে তার উপায়ও ছিলনা কর্ম সাহিত্যসেবার দ্বৈত বত সাধনের অক্লান্ত চেষ্টার ইতিহাঁসই তার জীবনকাহিনী |

হিন্দুমেলার জন্ভ লিখিত স্বদেশপ্রেমের কবিতা রচনার আগে লেখক হিসেবে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের পরিচয় নেই। হিচ্দুমেলার জন্ত স্বদেশী গাঁন রচনার একটা আগ্রহ ঠাকুরবাড়ীর অস্তাঁন্তদের মধ্যেও দেখা গেছে দ্বিজেন্দ্রনাথ, সত্যেন্্রনাথ, গণেন্জরনাথ,

নাটক ৪৪১

এজ্যোতিরিন্্রনাথ প্রত্যেকেই হিন্দুমেলার জন্ক স্বদেশী সংগীত রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ “জীবনস্থতিতে” প্রসঙ্গে বলেছিলেন,

“সাহিত্য এবং ললিতকলায় তাহাদের উৎসাহের সীমা ছিল না। বাংলার আধুনিক যুগকে যেন তাহারা সকল দিক দিয়াই উদ্বোধিত করিবার চেষ্টা করিতেছিলেন বেশে-ভূষাঁয়, কাব্যে-গাঁনে, চিত্রে-নাট্যে, ধর্শে-স্বাদেশিকতায়, সকল বিষয়েই তাহাদের মনে একটি সর্বাঙ্গ সম্পূর্ণ জাঁতীয়তার আদর্শ জাগিয়া৷ উঠিতেছিল ।...বাংলায় দেশানুরাগের গান কবিতার প্রথম স্থত্রপাত তাহারাই করিয় গিয়াছেন

[ জীবনস্থতি, বাঁড়ির আবহাওয়া ] জ্যোতিরিক্দ্রনাথ হিন্দুমেলার জন্য অনুরুদ্ধ হয়েই স্বদেশপ্রেমের কবিত। লিখেছিলেন বটে কিন্তু স্বদেশভাবনার নির্ষল শ্রোত নিরন্তর তাঁর মনে প্রবাহিত হোতো। ১৮৬৮ সনের দ্বিতীয় বাৎসরিক মেলার জন্য জ্যোঁতিরিন্রনাথ লিখেছিলেন “উদ্বোধন কবিতাঁটি,__ জাগ জাগ জাগ সবে ভারত সন্তান! মাকে ভুলি কতকাল রহিবে শয়ান ? ভারতের পূর্বকীতি করহ স্মরণ; রবে আর কতকাল মুদিয়ে নয়ন?

স্বদেশপ্রেমোদ্বেল অন্তরে জ্যোতিরিজ্জনাথ অংশ রচনা করেছিলেন, বিষয়বস্ত প্রকাশভঙ্গিতেই তা পরিস্ফুট | “হিন্দুমেলার” আদর্শ থেকেই জ্যোতিরিজ্জনাথ ষে স্বদেশহিত সাধনের প্রেরণা লাভ করেছিলেন তা নয়, স্বদেশপ্রেমী বলেই হিন্দুমেলার তাৎপর্য তিনি অত্যন্ত গভীরভাবে অনুধাবন করেছিলেন প্রসঙ্গে 'জীবনস্থৃতিতে' তাঁর বক্তব্য,

“হিন্দুমেলার পর হইতে, কেবলই আমার মনে হইত--কি উপায়ে দেশের প্রতি 'লোকের অনুরাগ ন্বদেশগ্রীতি উদ্বোধিত হইতে পারে শেষে স্থির করিলাম, নাটকে এ্রতিহাসিক বীরত্ব গাঁথা ভারতের গৌরব কাহিনী কীর্তন করিলে, হয়ত কতকট! উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইলেও হইতে পারে এই ভাবে অনুপ্রাণিত হইয়া, কটকে 'থাঁকিতে থাঁকিতেই, আমি পুরুবিক্রম নাঁটকথাঁনি রচনা করিয়। ফেলিলাম 1”

[ জ্যোতিরিক্্রনাথের জীবনস্থতি পৃঃ ১৪১]

জ্যোতিরিজ্্নাথের দেশাত্মবোধক নাটক রচনার কারণ হিসাঁবে উদ্ধৃত মন্তব্যটিকে মূল্যবান বলে মেনে নেওয়া যেতে পাঁরে। স্বদেশভাবনাকে নিতান্ত ব্যক্তিগণ চিন্তা বলে মনে করতেন না তিনি এই পবিত্র ভাঁবনাই প্রতিটি মানুষের মনে সঞ্চারিত করবার ফথাঁই তিনি চিন্তা করেছিলেন নাটকের অভিনয় দেখে জনসাধারণ যদি

8৪২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

দেশকে ভালবাসার শিক্ষালাভ করে নাট্যকারের সার্থকতা হবে সেটুকুই। ক্ৃতরাং দেশপ্রেমে ভরপুর হয়ে তিনি যে নাটক রচনার আয়োজন করলেন, তার ভিতরের উদ্দেশ্যটি কোথাও গোঁপন হয়ে রইলন! দেশবাসীর সামনে প্রান এঁতিহোর, বীরত্বের, শৌর্ষের চিত্র তিনি তুলে ধরেছিলেন এবং উৎকণ্িতচিত নিয়ে অপেক্ষা করেছেন, সে বক্তব্য যোগ্যস্থানে অন্থুরণিত হোল কি না। *পুরুবিক্রম” রচিত হয়েছিল কটকে | জ্যোতিরিন্দ্রনাথ যৌবনের উত্তেজনাময় মুহূর্তে কর্মশক্তি স্বদেশ- ধ্যানতন্ময়ত। নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন তাই বাংলাদেশ থেকে, কোলাহল থেকে, প্রকৃতির শান্ত আবেষ্টনীতে এসেই প্রতিভাবান নাট্যকারের স্থজনী প্রতিভা শতধারে উৎসারিত. হয়েছিল |

'পুরুবিক্রমই' জ্যোতিরিন্দ্রনাথের প্রথম মৌলিক নাটক। ইতিপুর্বে “কিঞ্চিৎ, জলযোৌগ' [ ১৮৭২ ] রচিত হয়েছিল,__রঙ্গমঞ্চে সাফল্যের সঙ্গে অভিনীত হওয়ার ক্রযোগও লাভ করেছিলো নাটকটি সুতরাং নাট্যকার হিসেবে তাঁর পরিচয় হয়ত নতুন নয় কিন্তু মৌলিক নাট্যকার হিসেবে প্রথম পূর্ণাঙ্গ নাট্যপ্রতিভার পরিচয় দেবার, সথযৌগ পেলেন «পুরুবিক্রম” নাটকেই সেদিক থেকে জ্যোতিরিন্ত্রনাথের প্রতিভার স্কৃতি স্বদেশাত্্ক নাটকেই ধর] পড়েছে

'পুরুবিক্রম” প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সমালোচকবৃন্দ এর প্রশংসায় মুখর হয়েছিলেন সমালোচক শ্রেষ্ঠ বঙ্কিমচন্দ্র নিপুণ সমালোচনায় সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে নাটকটি বীররসের থতিয়ান। অবশ্য বঙ্কিমচন্দ্র অনেক আশ নিয়ে নাটকটি বিচার করতে গিয়েই কিছুটা হতাশ হয়েছিলেন |

১২৮১ সালের ভাদ্র মাসের 'বন্গদর্শনে' 'পুরু'বক্রমের' সমালোচন। প্রসঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্র বলেছিলেন,

«এই উপন্তাঁসে বৈচিত্র আছে। কিন্তু লেখার তাদৃশ বৈচিত্র নাই সকলেই কাট! কাটা কথা কহে। লেখক যে কৃতবিগ্ধ নাটকের রীতিনীতি বিলক্ষণ জানেন তাহা গ্রন্থ পড়িলেই বোধ হয়। গ্রন্থখাঁনি বীররস প্রধান এবং গ্রন্থে বীরোচিত বাক্যবিন্াস বিস্তর আছে বটে, কিন্ত সকল স্থানেই যেন বীররসের খতিয়ান বলিয়া, বোধ হম়্। আন্তরিক ভাব বলিয়া বোধ হয় না। কে যেন বলিল, কে যেন শুনিল,. কে যেন সেই কথাগুলি ছাপিয়াছে আর আমরা পড়িলাম। নহিলে অঙ্গ কণ্টকিত হইল ন। কেন? গ্রন্থের মর্মভেদকতার অভাবে আমাদের ছঃখ হইয়াছে ।”

বন্ধিষচন্দ্র স্বদেশপ্রেমাত্মক নাটকে শুধু কীররসের হুংকার বক্তৃতার আধিক্য আশা করেননি স্বদ্েশপ্রেমের গভীরত! আন্তরিকতার প্রকাশ ব্যাহত হলে সবই কথার কণা হয়ে যায়,-ষে মহৎ উদ্দেশ্যে নাটকের অন্ম,--জনগণের মনে দেশাক্মবোধ

নাটক ৪৪৩

জাগিয়ে তোলা,--তাঁও ব্যাহত হয়। স্বদেশপ্রেমিক বঙ্কিমচন্দ্র দেশপ্রেমের গভীরতা আবিফ্ার করতে পারেননি বলেই অকপটে সমালোচনা করেছেন বঙ্ধিমচন্ত্রের সমালোচনার উদ্দেশ্যটি কিন্ত নাটকের বহিরাঙ্গিক সমালোচনা মাত্র নয়,_তিনি নাটকের ফলগ্রতির বিষয় চিন্তা করেই আক্ষেপ করেছিলেন বঙ্ধিমচন্দ্রের মতে স্বদেশাত্বক সংলাপ আমাদের অন্তরের হপ্ততন্ত্রীতে আঘাত হানবে, আমর উত্তেজিত হবো | যথার্থ স্বদেশপ্রেমিকের মতই বঙ্কিমচন্দ্র 'পুরুবিক্রমের” সমালোচনা করেছিলেন 'পুরুবিক্রমে” যথেষ্ট বীররস থাকতে পারে কিন্তু আন্তরিক উদ্দেশ্যটি হচ্ছে স্বদেশপ্রেম উদ্বোধিত করা অনেক সময়ই নাটকের পাত্র পাত্রীর সংলাপে ভাঁব1বেগের আধিক্য স্বাভাবিকতা আন্তরিকতার প্রতিবন্ধকতা করেছে অবশ্য সমালেচক বঙ্কিমচন্দ্র একটু কঠোর সমালোচনাই করেছিলেন, তা৷ না হলে সে যুগের অন্যান্ত নাটকের সঙ্গে তুলনা করলেই 'পুরুবিক্রমের” প্রশংসনীয় দিকগুলো চোখে পড়বেই জ্যোতিরিজ্রনাথের প্রথম মৌলিক নাটক হিসেবে “পুরুবিক্রমের' ঘটনা, চরিত্র বক্তব্য উপস্থাপনের মধ্যে কিছু দোষক্রটি থাকা সম্ভব কিন্তু উদ্দেশ্যের প্রসঙ্গটি সবকিছু ছাপিয়ে বড়ে। হয়ে দেখা দিয়েছিল নাটকে দেশপ্রেমের আদর্শ প্রত্যেকটি ঘটনা চরিত্রের ওপরে প্রভাব ফেলেছে নাট্যক!রও বিষয়ে সচেতন ছিলেন। পপুরুবিক্রম নাটকের, সঙ্গে ইতিহাসের যোগ নিশ্চয়ই আছে কিন্তু এরতিহাসিকতা৷ বজায় রাখার দায়িত্ব গ্রহণ করেননি নাট্যকার সম্পূর্ণ মৌলিক' কাহিনীর সঙ্গে এতিহাসিক দু'একটি নামের যোগাযোগ ঘটিয়েছেন নাট্যকার কিন্তু যেহেতু নামগুলির এঁতিহাসিক পরিচয় আছে, নাট্যকার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন মূল এতিহাসিক ঘটনা যেন অবিরুত থাঁকে। পুরু সেকেন্দর শ। এঁতিহাসিক চরিত্র সেকেন্দর শ৷ সেযুগে পাঞ্জাব আক্রমণ করেছিলেন, _ পাঞ্জাবের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনপদের. নুপতিরা যে সংঘবদ্ধ হয়ে আক্রমণকারীকে বাধা দিতে পারেননি ঘটনাটিও ধ্রতিহাসিক | কিন্তু তারই মধ্যে স্বাধীনরাজা পুরুর স্বদেশপ্রেমের টুকরো কাহিনী ইতিহাসে সত্যকাহিনীর মর্যাদা পেয়ে আসছে। নাট্যকার এই সামান্য এতিহাসিক ঘটনাটিকে নাটকে বিস্তৃতভাঁবে দেখাবার চেষ্টা করেছিলেন নাটকীয় প্রয়োজনে অনেক চরিত্র তীকে কল্সন] করে নিতে হয়েছে,_ঘটনাকে নাটকীয় রূপ দেবার জম্ভয কল্পিত জটিলতা হৃষ্টি করতে হয়েছে পুরুর স্বাধীনতার আঁদশটি কিন্তু সমস্ত ঘটন। জটিলতার আঁবর্তেও অল্লান রূপে বর্তমান ছিল, _সম্ভবতঃ একারণেই নাটকের নাম *পুরুবিক্রমণ্। স্বদেশভাবনার ঘনীভূত রূপ নাটকের মধ্যে তুলে ধরার প্রয়াস নিয়েই তার যাত্রা শুরু, নাট্যকারও সে বিষয়ে অকপটচিত্ত। সমসাময়িক দেশপ্রেমোচ্্াসের দ্বারা আক্রান্ত না হলে হয়ত জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ধরনের আদর্শ

"৪88 উনবিংশ শতাবীর বাংলা সাহিতো স্বদেশপ্রেষ

প্রচারে ব্রতী হতেন ন। | তাই এঁতিহাসিকতা নয়, এই শ্রেণীর নাটকের বিচার হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন আদর্শে দেশপ্রেমমূলক ভাবনা ইডিহাসের সামান্ত অবলম্বন গ্রহণ করে কি ভাবে উচ্ছৃসিত হয়ে উঠেছিল, - তারই দৃষ্টান্ত হিসেবে নাটকের উল্লেখ করতে হয়। শ্রীহৃকুমারসেন বলেছেন প্রসঙ্গে,--

“জোড়ার্সাকো৷ ঠাকুর বাড়ীর উদ্োগে হিন্দুমেলার মধ্য দিয়া যে দেশশ্রিয়তার উচ্ছাস উঠিয়াছিল, সাহিত্যে তাহার মুখ্য অভিব্যক্তি হইল “পুরুবিক্রমে |” এই পঞ্চাঙ্ক নাটকখানির রচনার মধ্যে বাংলাদেশের সমসাময়িক ইতিহাসের একটুখানি হৃদয়োচ্ছীস স্তব্ধ হইয়! আছে 1৮২৮

“পুরুবিক্রম নাটকে" উনবিংশ শতাব্দীর স্বদেশীত্মক চিন্তাভাবনারই প্রতিফলন পড়েছিল। যদিও নাটকের ঘটন। সম্পর্কে এরতিহাঁসিক সচেতনতা থাক! দরকার __ তবু বলব পুরু-সেকেন্দরের ইতিহাসের চেয়ে সেকালীন বাংলাদেশের অগণিত স্বদেশানুরাগী মানুষের মনে দেশপ্রেমের যে বহ্তি জলে উঠেছিল নাট্যকার অতীত ইতিহাসের স্বক্স পরিচিত চরিত্রের মধ্যে তাঁরই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন 'পুরুবিক্রম' নাটকের চরিত্রগুলোকে আমরা ছু'তভাগে ভাগ করে ফেলতে পারি,_- একটি সম্প্রদায় যাঁরা দেশপ্রেমাদর্শ বহন করে চলেছে, অন্ত সম্প্রদায় দেশের স্বাধীনতার চেয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থকে বড়ো করে দেখছে এই ছুইদলের সম্পর্কে নাট্যকারের ভিন্ন ধারণা এই নাটকে বণিত হয়েছে স্থতরাঁং একীন্তভাবেই স্বদেশভাবনামুখ্য নাটক হিসেবে 'পুরুবিক্রমের' বিচার হতে পারে স্বদেশপ্রেমাদর্শহই নাটকের চরিত্রগুলের দীপ্তি_-তাঁর অভাঁবে অন্য চরিত্রগুলো নিশ্রভ মান নাঁট্যকারের আদর্শ আমাদের অন্তরে এমন প্রভাব সৃষ্টি করেছে যাঁর ফলে স্বদেশপ্রেমী চরিব্রগুলিই আমাদের সহানুভূতি লাঁভ করেছে,_স্বদেশভাবনার অভাব যে চরিত্রে প্রত্যক্ষ করেছি, তাকে আমরাও ক্ষমা করতে পারিনি

স্বদেশপ্রেমের নির্ধল আদর্শ নাটকের স্ত্রী পুরুষ চরিত্রে সমভাবে আরোপিত হয়েছে পুরুষের মতই নারীর স্বদেশচেতনার গভীরতা নাট্যকার নাটকে তুলে ধরেছেন। শুধু তাই নয়, নাটকের নায়িকা ধলবিলা দেশপ্রেমিকা, ব্যক্তিগত প্রেম-ভালবালাকে সে শ্বদেশপ্রেমের মত মৃল্যবাঁন মনে করে না-_স্বদেশপ্রে মাদর্শই তার সম্পগ্র জীবন নিয়ন্ত্রণ করেছে। অন্ত্দিকে অন্বালিক চরিত্রে স্বদেশাহুভৃতির 'অভাঁব ছিল বলে আমাদের সহানুভূতি লাঁভেও চরিত্রটি বঞ্চিত হয়েছে বলা যায়। তার

২৮. জুকুষার সেন, বাংল। সাহিত্যের ইতিহান। ২য় থণ্ড। বর্ধমান সাহিত্য সভ্ভা, ১৩৬২, পু ২৫৮

নাটক ৪৪৫,

ধ্যজিগতি জীবনের প্রেম-ভালবাসার প্রসঙ্গ অন্যান্ঠি উজ্জল আদর্শের সামনে শান হয়ে গেছে নাটকে সক্রিয় নাটকীয় চরিত্র হিসেবে অশ্বালিকা উজ্জ্বল স্ুুঅক্িত হয়েছে, কিন্তু দেশবোধের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয় বলে নাট্যকারও চরিত্রটির ওপর ক্থবিচার করেননি | মর্মান্তিক ব্যর্থতায় এই নারী শুধু হাহাকার করেছে নাটকে সাধারণ নারীচরিত্রের মধ্যেও বদেশাহ্রাগ দেখা গেছে। উদীসিনীর পরিকল্পনায় নাটকীয়তা থাকলেও নাঁটাকারের উদ্দেশ্যেই তার আবির্ভীব উদ্দাসিনী নাট্যকারের কল্পিত স্বদেশপ্রাণ নারী--সব হারিয়েও যে শান্তি পেয়েছে দেশপ্রেমের মধ্যে, সব. ব্য্তাকে যে দেশানুরাগের আবেগে ভুলে থাকতে চেয়েছে সব চরিত্র নাটকের স্বাভাবিকতা বা সৌন্দর্যবৃদ্ধিতে সহায়তা করেনি, নাট্যকারের আদর্শকে তুলে ধরেছে মাত্র। পরবর্তী কালে স্বদেশপ্রেমমূলক নাটকে ধরণের নারীচারত্রের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ হয়েছে “মেবারপতনের” চারণী সত্যবতীর পদধবনি যেন উদ্দামিনীর চরিত্রে শোনা যাঁয়। এদিক থেকে নাট্যকার জ্যোতিরিন্্রনাথের কল্পনাশক্তির মৌলিকত্বকে অভিনন্দন জানাতে হয় স্বদেশচেতল। সঞ্চারে স্ত্রীচরিত্রগুলো যে মুখ্য ভূমিকা নিতে পারে নাটকে এলবিল1 উদাসিনী তা প্রমাণ করেছে উনবিংশ শতাব্দীর আলোকে নাট্যকারের চিন্তাধারার এই উদারতাকে প্রশংসা না করে পারা যায় না। নাটকে এলবিলার স্বপ্র, আদর্শ জীবনবাদের সঙ্গে দেশপ্রেমের যোগ এত গভীর যে নারীহ্বলভ ভাঁবাবেগ চরিত্রে মাঝে মাঝে দেখা দিয়েছে বটে কিন্তু দেশচিন্তাকে ঢেকে ফেলতে পারেনি জ্যোতিরিন্দ্রনাথ এই ছুঃসাহসিকা, স্বদেশসর্বস্ব নারীচরিত্রের মধ্যেই স্বদেশাত্বক চিত্তাধারাকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন মেবার পতনেও দ্বিজেন্দ্রলাল স্বদেশপ্রেমের বাণী প্রচারের জন্ত ছুটি নাঁরী চরিত্রকেই নির্বাচন করেছিলেন সত্যবতীর দেশাক্মবোধ মানসীর দেশপ্রেমের মধ্যে আত্মত্যাগের মহ্মাকে নাট্যকার তুলে ধরেছিলেন। এঁরা উভয়েই ব্যক্তিগত স্বাথচিত্তাকে বিপর্জন দিয়ে স্বদেশের জন্তই প্রাণ উৎসর্গ করেছে কিন্তু নাট্যকারের বক্তব্য নাটকের বিষয়বস্থকে মেলাতে পারেননি বলেই তার ছুটি চরিত্রই অস্বাভাবিক আদশপ্রচারের যন্ত্ররূপে ব্যবহৃত হয়েছে দ্বিজেন্দ্রলাল চারণী সত্যবতীর নারীত্ব স্বাভাবিক চেতনাকে অগ্রাহ করেছিলেন, _মানসীর মধ্যে প্রাণস্পন্দনের পরিচয় পাই না, সে ষেন ছায়ারূপিনী একটি নারীমৃতি মাত্র আবাল্য প্রণয়কে অস্বীকার করে বিশ্বপ্রেমের দোহাই দেওয়াটাই তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়েছিল দ্বিজেন্্লালের স্বদেশপ্রেমমূলক নাটকটির পরিকল্পনাগত ক্রটি এখানেই | কিন্তু জ্যোতিরিন্দ্রনাঁথ “পুরুবিক্রম” নাটকের নায়িকা ্লবিলাকে বথাঁসস্তব স্বাভাবিক ভাবে অংকন করেছিলেন দেশের সংকটময়, পরিস্থিতিতে দেশাত্মবোধই একমাত্র চিন্তা হতে পারে-_কিন্তু নিতান্ত ব্যক্তিগত

18৪৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

আন্তরিক অহু কৃতি তাঁতে নষ্ট হয় না। এ্রলবিলা প্রেম-ভালবাঁপাকে গোপনে লালন করেছে, প্রণয়ী পুরুর জন্য অধীরপ্রতীক্ষা তাকে চঞ্চল করেছে, কিন্তু দেশের স্বার্থরক্ষার আদর্শ থেকেও সে সরে থাকতে পারেনি এই দ্বন্বই চরিত্রটির স্বাভাবিক সৌন্দর্য রক্ষা করেছে। এলবিলার দেশপ্রেমই তার ব্যক্তিগত প্রেমকে আরও দৃঢ় কুরেছে। নাট্যকার জ্যোতিরিন্দ্রনাথের প্রথম মৌলিক নাটক হলেও-_চরিত্র স্থষ্টিতে নিখুত ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তিনি দেশপ্রেমের আবেগে ত্বার নাটকটির রক্তব্য ভারাক্রান্ত হতে পাঁরত,_-কিস্তু ঘটনা চরিত্র স্ট্রিতে বৈচিত্র্য ছিল বলেই নাটকীয় গুণ বিন হয়নি এলবিলার মত স্বদেশপ্রেমিকা, ছুঃসাঁহসিকা নারী চরিজ্রের পাশাপাশি অগ্বালিকার বিশ্বাসঘাতকতা প্রেমান্ধতা নাটকীয় বৈচিত্র্য সম্পাদন করেছে অগ্বালিকাও স্ৃঅস্কিত একটি স্বাভাবিক নারী চরিত্র প্রেমের জে দেশপ্রেমের ঘন্্ব তার জীবনে জটিলতা সৃষ্টি করেনি,_ বিজাতীয় শক্রকে প্রেম- নিবেদন করেই সে ধন্তা হয়েছে এই ছুটি নারী চরিত্রের মধ্যে অলক্ষ্য যোগাযোগ রয়েছে_ সমগ্র নাটকটি এই ছুটি সক্রিয় নারীই পরিচীলন। করেছে বলা যাঁয়।

পুরু তক্ষশীল চরিত্রেও নাট্যকার স্বদেশপ্রেমের উজ্জ্বল চিত্র রচনা করেছেন পুরুর স্বদেশপ্রেমই তাঁর চরিত্রের লক্ষ্যণীয় বৈশিষ্ট্য, বিদেশী যবনকে বিতাঁড়ন না! করা পর্যন্ত সে যুদ্ধোন্মত্ত। তক্ষশীলও স্বদেশপ্রেমিক তবে পুরুর দৃঢ়তা তার চরিত্রে নেই। প্রেমের বিফলতা তক্ষশীলকে দুর্বল করে দেশপ্রেম ব্যক্তিপ্রেমই এই ছুটি পুরুষ চরিত্রকে চালিত করেছে পুরুর স্বদেশপ্রেম তার জীবনের সবরকম উপলন্ধির ওপবে ফ্রবতারার মতই জলছে,__নাট্যকারের কল্পিত আদর্শ নায়ক চরিত্র এটি তক্ষশীলও চেতনাহীন নন--কিন্তু ভগ্রী অন্বালিকাঁর পরামর্শের প্রভাবে তাকে মাঝে মাঝে দুর্বলের মতই বিচলিত হতে দেখি তাছাড়া এলবিলার প্রেমবঞ্চিত হবার ছু'খ তক্ষণীলপকে সর্বদাই চঞ্চল করেছে তবু নাটকের মুখ্য ছুটি পুরুষ ভূমিকায় নাট্যকার স্বদেশাত্মক চিন্তাধারার পরিচয় দিয়েছেন ক্ন্দর ভাবে

দপুরুবিক্রম নাটকে” নাট্যকার স্বদেশী সঙ্গীতের অবতারণা করেছিলেন শুধু সঙ্গীতের মাধ্যমে দেশপ্রেমের বক্তব্য প্রচারের উদ্দেশ্যেই তিনি গায়িকা চরিত্র তৃষ্টি করেছিলেন অবশ্য “ভারতমাতা” “ভারতে যবন” ইত্যাদি ক্ষুত্র নাঁটিকাতেও স্বদেশাত্মক সঙ্গীত আরোপিত হয়েছিল এবং স্বদেশী সঙ্গীতের দ্বার দেশপ্রেমের বক্তব্য ষে খুব কার্যকরী হয়,__অভিনয়ের মাধ্যমেই তা বোঝা গিয়েছিল জ্যোভিরিন্দরনাথ প্রচলিত রীতিই গ্রহণ করেছিলেন তবে শুধু স্বদেশীত্মক সঙ্গীত পরিবেশনের জঙ্ভই নটিকীয় চরিত্র হৃষ্ির প্রয়াস জ্যোঁতিরিজ্রনাথের নাটকে দেখা যায় | নাটকীয় বিশ্রাম (0:8755600 16115£) স্ৃজনের জন্তই সংগীত নয়,_নাঁটকের বিশেষ বতবাই সঙ্গীতে

নাটক ৪৪৭

পরিবেশিত হবে এই ছিল তার উদ্দেশ্য "মেবাঁরপতন* নাটকের চারমী সম্প্রদায়ের পরিকল্পনাটি ক্্যোতিরিন্্রনাথের 'পুরুবিক্রমের' গাঁরিকা চরিত্রের কাছ থেকে পাওয়া কিছু অসম্ভব নয়--কারণ বাংলা নাট্যসাহিত্যের আদিপর্বের দেশাত্মবোধক নাটকে সংগীতের সাহাষ্য গ্রহণ করাটা প্রায় নিয়মে দঈীড়িয়ে গেছে ছিজেন্দ্রলাল আরও অনেক পরের যুগের নাট্যকার হলেও তাঁর স্বদেশীনাটকের মোটামুটি ছাঁচটি নিতান্তই পুরাতিন পূর্বহ্ছরী প্রভাবিত। ব্যাপারে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ প্রথম পথপ্রদর্শক স্বদেশীনাটকের উদ্ভাবনায় তার কৃতিত্ব স্মরণীয় হয়ে থাঁকবে।

'পুরুবিক্রমের” কাহিনীর শুরুতেই দেখি দেশের স্বাঁধীনতা৷ পুনরুদ্ধারের প্রসঙ্গ প্রথমদিকেই নাট্যকার নাটকের মূল সমস্যাটি উত্থাপন করেছেন পাত্র পাত্রীরাও দেশচিন্তায় মগ্ন কুলু প্রদেশের স্বাধীন-অবিবাহিতা রানী এঁলবিলা তার সখীর সঙ্গে কথোপকথন করছেন,_-

এলবিলা সেদিন গিয়ে আমি পাঞ্জাব প্রদেশস্থ সমস্ত রাজকুমাঁরগণকে যবনদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে দিয়ে এসেছি ।..-ঘতদিন না যবনেরা আমাদের প্রিয় জন্মভূমি হতে একেবারে দূরীভূত হচ্ছে, ততদিন আমার আর আরাম নেই, বিশ্রাম নেই।

ক্ুহাসিনী- রাঁজকুমারি ! আমাদের দেশীয় রাজাদের মধ্যে কি কিছুমাত্র এঁক্য আছে যে, আপনি তাঁদের একত্র সন্মিলিত করার জন্য চেষ্টা কচ্ছেন ?২৯

[ ১ম অঙ্ক, ১ম গর্ভাঙ্ক উদ্ধত কথোপকথন থেকে রাঁনী এলবিলার বাক্তিত্ব, দূরদশিতা দেশপ্রেম উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে নারী হলেও চারিত্রিক শক্তির আঁধার এ্লবিলা | অন্যান্য পাশ্ববর্তা রাজ্যের রাঁজারাও যেকথা চিন্তা করেনি রানী তা আগেই চিন্তা করেছেন যে যুগে পাঞ্াবপ্রদেশে সেকেন্দরশাহের আঁরুমণ শুক হয়েছিল-_সে যুগের বাস্তব চিত্র অঙ্কনের চেষ্টা প্রসঙ্গেই নাট্যকার +তিহাসিকেব মতো যুক্তির অবতারণা করেছিলেন হৃহাঁসিনীর উক্তির মাধ্যমে এই জাঁতিগত অনৈক্যই আমাদের অধঃপতনের যুক্তি- সঙ্গত কাঁরণ। নটিকাঁরস্তেই আভন্ববহীন সত্যপ্রকাশের এই চেষ্টা প্রণংসনীয় কল্পিত চরিত্র চিত্র রচনা না করে নাট্যকাঁরেব উপাঁয় নেই। কিন্তু কল্পনাটি একান্তই অবাস্তব হলে পাঠকেরা খুশী হন না। জ্োতিরিন্দ্রনাথ ইতিহাসসম্মত যুক্তির সাহাষ্য গ্রহণ করেছিলেন প্রথমাঁবধি রাঁমী ধলবিলার স্বদেশাত্বক ভাবনার মধোও অসঙ্গতি দেখি না। শক্তিময়ী এই

২৯, জেোতিরিন্্রনাথ গ্রস্থাবলী «ম গঞ। বন্মতী সাহিত্য মন্দির, কলিকাতা

৪৪৮ উন্ববিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

নারীর জীবন আদর্শের মধ্যে ঘনিই যোগ লক্ষ্য কর! যাঁয়। কথাপ্রসঙ্গে সধীকে ্লবিলা আপন অভিলাষের কথা ব্যক্ত করেছিল,_-

“যে রাজকুমার যবনদিগের সহিত যুদ্ধে সর্বাপেক্ষা বীরত্ব প্রকাশ করবেন, আঙ্ষি তারই পাণিগ্রহণ করব 1”

স্বদ্শচিন্ত1 কি ভাবে একটি নারীর ধ্যান ধারণায় প্রতিফলিত হল তারই সার্থক কল্পন। এখানে দেখা যাঁয় ব্বদেশপ্রেমের নিরিখে ব্যক্তিকে যাঁচাই করার চেষ্টাটিও অভিনব এলবিলা অবিবাহিতা রানী- কিন্তু রাজ্য পরিচালনার দায়িত্বে বিন্দুমাত্র অবহেলা করেননি কেন, _-একটি সংলাপের মাধ্যমে তা পরিশ্ফুট হয়েছে নুহাসিনীর কথার উত্তরে এীলবিলা বলেছেন, “আমার উপরে প্রজাগণের সথস্বচ্ছন্দতা, স্বাধীনতা, সমস্ত নির্ভর কচ্চে। দেশে এমন বিপদ উপস্থিত, আমি কি এখন এখানে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকতে পারি? আমি যদি আমার টসম্ভগণের মধ্যে না থাকি, তাহলে কে তাদের উৎসাহ দেবে? আমি যদি এখন নিশ্েষ্ট হয়ে থাকি, আর দেশটি যদি স্বাধীনতা বিচ্যুত হয়, তা হলে সকলে বলবে, একজন স্ত্রীলোকের হাতে রাজ্যভার থাকাতে দেশটি এইরূপ দুর্দশা গ্রস্ত হল।” [ ১ম অঙ্ক, ১ম গর্ভাঙ্ক ]

এমন দূরদশিতা৷ স্ুবিবেচনা আমাদের দেশের শক্তিমীন রাজাদের চরিত্রেই ছিল না, উপরস্ত বিলাসে-আরামে নিশ্চিন্ত থেকে সর্বনাশ ডেকে আনাই যেখানে জাতীয় চরিত্রের বৈশিষ্ট্য সেখানে এ্রলবিল চরিত্রটির পরিকল্পনাতেও নাট্যকারের আশ্চর্য শক্তির পরিচয় পাচ্ছি এলধিলার স্বদ্েশচিন্তার মধ্যে নিছক আবেগ ছিল না, নারীত্বের সম্মীন বজায় রাখার চেষ্টাঁটি ব্যাপারে লক্ষ্যণীয় এলবিল। চরিত্রের কোন ঞঁতিহাসিক ভূমিকা! নেই, চরিত্রটির আদর্শ তবে নাট্যকার কোথায় পেলেন ? প্রাক- জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বাঁংলা নাটকে এমন সামগ্রস্যপূর্ণ নারীচরিত্রের সাক্ষাৎ মেলেন |

&লবিলার আদর্শ এ্রলবিলার রাঁজ্যের অন্যান্য নারী চরিত্রেও সঞ্চারিত হয়েছে গাস্তিক। চরিত্রটির মুখে সংবাদ আমর] পেয়েছি ; এলবিলাকে সে বলেছে,_ “আমি শুনেছি, স্বদেশের প্রতি আপনার অত্যন্ত অন্কুরাগ 1” সত্যেন্্রনাথের রচিত স্বদেশী সংগীতটি 'পুরুবিক্রম” নাটকের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে সার্থক স্বদেশী নাটকে এমন সংগীতের আবেদন অত্যন্ত গভীর গায়িকার মুখে সমগ্র ভারতবাঁপীকে একতাবন্ধ করার আহ্বান,

মিলে সবে ভারত-সম্তাঁণ, একতান মনপ্রাণ, গাঁও ভারতের যশোগান ভারতভূমির তুল্য আছে কোন স্থান,

ফোন অদ্রি হিমাদ্রি মান ?

নাটক ' ৪৪৯

এ্ললবিলাও গায়িকাটিকে প্রেরণ! দিয়েছে--«তোমার গান শুনলে, কোন হৃদয়ে না দেশাহুরাগ প্রজ্ঘলিত হয়? কে না দেশের জন্য অনায়াসে প্রাণ.দিতে পারে ? ধন্ত সেই কবি, ধিনি এই গানটি রচনা করেছেন |”

গারিকাটি এলবিলার রাজ্যে সার্থক স্বদেশপ্রাণ নারী | রাজ্যের যিনি কর্রী তাঁর

আদর্শ সমগ্র মানুষের প্রাণে স্বদেশভাবন। জাগিয়েছে গারিকার আত্মপরিচয় দানের ভঙ্গিতেই তা পরিস্ফুট হয়েছে। প্রেমে ব্যর্থতাই গায়িকার জীবনে এই পরিবর্তন ঘটিয়েছে নাট্যকারের এই ইঙ্গিতটুকুর কিছু মূল্য আছে। স্বদেশপ্রেমকে সব বিফলতার শান্তিরূপে কল্পনা করেছেন তিনি কিন্তু ধারণাটি যতটা আদর্শগত ততখানি বান্তব নয়। গাঁয়িক। দেশপ্রেমের বাণী প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছে,__*আমি দেশকে প্রাণের চেয়ে ভালবাসি আমি দেশের জন্য অনায়াসে প্রাথ দিতে পারি। '**আমার যে পাঁচ ভাই আপনার সৈম্তদলের মধ্যে নিবিষ্ট আছেন, তাদের প্রত্যেককেই এই গানটি আমি শিখিয়ে দিয়েছি তাদের আমি বলে দিয়েছি যে, এই গানটি গেয়ে যেন তারা সকল সৈম্ভগণের মধ্যে দেশানুরাগ প্রজ্ভবলিত করে দেন ।”

. স্বদ্েশপ্রেম জাগানোর জন্য উত্তেজনাপূর্ণ স্বদেশীসংগীতের প্রয়োজন সম্পর্কে নাট্যকার আমাদের সচেতন করেছেন "পুরুবিক্রমে” স্বদেশী সংগীতারোপ একটি বিশেষ উদ্দেশ্য আদর্শ প্রচারে যতখানি কার্যকরী হয়েছে পরবর্তী নাট্যকারদের সামনে তা একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে উদাঁসিনীর মুখে আমরা আরও একটি স্বদেশী সংগীতের উল্লেখ শুনতে পাই উদাসিনী গায়িকাকে শুধুমাত্র সংগীত প্রচারের যন্ত্র হিসেবে কল্পনা করেননি নাট্যকার এই ছুটি নারীর জীবনের সঙ্গে দেশপ্রেমের যোগসাধন করেছেন তিনি গায়িকা সংগীতের মাধ্যমে জীবনের নবলব স্বদেশ অনুভূতিকে ব্যক্ত করেছে উদাঁসিনী শেষপর্যন্ত বন্দিনী এঁলবিলাকে উদ্ধারে সাহাধ্য করেছে। উদাসিনী বলেছে আত্মপরিচয় প্রসঙ্গে,

*আমি “হোক ভারতের জয়' এই গানটি দেশেবিদেশে গেয়ে গেকে বেড়াই, এই আমার জীবনের একমাত্র ব্রত। যাতে সমস্ত ভারততৃমি এঁক্যবন্ধনে বদ্ধ হয়, এই আমার মনের একান্ত বাসনা ।৮ [ ৩য় অঙ্ক, ২য় গর্ভাঙ্ক )

'পুরুবিক্রম নাটকে শুধু স্বদেশীসংগীতই নয়--উত্তেজনা পূর্ণ স্বদেশীকবিতাও ব্যবহার করেছেন নাট্যকার পুরু স্বদেশীকবিতা আবৃত্তি করছেন সৈম্যদের প্রাণে শক্তি সঞ্চারের উদ্দেশ্যে

ওঠ | জাঁগ! বীরগণ ! দুর্দান্ত যবনগণ, গৃহে দেখ করেছে প্রবেশ 7 ২৯

৪৫৩ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

হও সবে একপ্রাণ, মাতৃভূমি কর ত্রাণ, শত্রদলে করহ নিঃশেষ

দেশের আশু ছদ্দিনে নির্জীব প্রাণকে জাগানোর জন্য এই অংশটুকু যথেষ্ট সাহাধ্য করেছে। পুরু নিজেই স্বদেশপ্রেমের প্রতীক বিদেশী যবনের হাত থেকে মাতৃভূমিকে উদ্ধারের চেয়ে বড়ো কিছু আদর্শ তার জীবনে নেই তাই ভাবাবেগে চঞ্চল পুরুর মুখে স্বদেশী কবিতার আবৃত্তি একটি উত্তেজনার রস সিঞ্চন করেছে নাটকে কীররস উদ্বোধনের চেষ্ট] নানাভাবে দেখেছি বাংলা কবিতায়, নাটকেও দেখি একই চেষ্ট1 ; পুরু আবৃত্তি করেন,__

এত স্পর্ধা! যবনের, স্বাধীনতা ভারতের অনায়াসে করিবে হরণ ? তারা কি করেছে মনে, সমস্ত ভারত ভূমে, পুরুষ নাহিক একজন ? আত্মত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে স্বদেশপ্রাণ পুরু নিজেই,_ “স্বদেশ উদ্ধার তরে, মরণে যে ভয় করে, ধিক সেই কাপুরুষে, শত ধিক তারে পক সে চিরকাল দাসত্-আঁধারে 1৮

স্বদেশচেতনা নাট্যকারের সমস্ত সতাকে এমন ভাবে আচ্ছন্ন করেছে যে, নাটকীয় ঘটন] চরিত্রের মধ্যে স্বদেশপ্রেমের উচ্ছুসিত আবেগটিই বারবার দেখা দিয়েছে তক্ষশীল পুরুর প্রেম এলবিলাকে কেন্দ্র করেই ঘনীভূত হয়ে উঠেছিল, কিন্তু পুরুর শ্বদেশচেতনার গভীরতাই প্রেমের বিফলতা৷ ঢাকার পক্ষে যথেষ্ট। পুরুর প্রেমই দেশপ্রেমকে আরও তীত্র করেছে। পুরু অসংকোচে আত্মদানের সংকল্প জানিয়েছেন এলবিলাকে__“সে নরাধম আপনার প্রেম হ'তে আমাকে বঞ্চিত করলেও করতে পারে, কিন্তু সে সহস্র চেষ্টা করলেও, স্বাধীনতার জন্য, মাতৃভূমির জন্য, সংগ্রামে প্রাণ দিতে আমাকে কিছুতেই নিবারণ করতে পারবে না।” [ ১ম অঙ্ক, বয় গর্ভাহ | তক্ষমীলের মধ্যে এই আত্মদানের প্রেরণ ছিল ন!। প্রেমের মধ্যেই সার্থকতা খু'ঁজেছে . তক্ষশীল-যদিও দেশচেতনার অনুভূতি তেমন তীব্র না হলেও কিছুটা পরিমাপে তার চরিত্রেও দেখেছি ভগ্নী অন্বালিকার পরামর্শের প্রতিবাদ জানিয়েছিল তক্ষলীল। কিন্তু পুরুর দেশপ্রেমে যে গভীরতা দেখেছি তক্ষশীলের চরিত্রে তার ক্ষীণ '*আাভাসও পাই না! তক্ষশীলভগ্মী কু-পরামর্শের জবাব দিয়েছে,--. "তোমার কি এই হচ্ছা, যে আমি নীচ ভয়ের বশবর্তী হয়ে সেকেদার' শার

নাটক 8৫১

পদতলে অরনত হব ? আমি কি স্বহস্তে ভারতবাসীদিগের জন্ত অধীনতা শৃঙ্খল নির্মাণ করব?” [ ১ম অঙ্ক, ২য় গর্ভাঙ্ক ]

কিন্তু তক্ষশীল প্রেমের ব্যর্থতার মধ্যে দেশপ্রেম বিসর্জন দিলেন, পুরুর সঙ্গে প্রতিদ্বন্্িতা তার সব উদ্দেশ্য নষ্ট করে দিল। অংশে অন্বালিকা তক্ষশীন ব্যক্তিগত স্বার্থ সাধনের জস্য এমনই তৎপর হয়ে উঠেছে যে নাটকের জটিলতা বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র এলবিলার প্রেম স্বদেশপ্রাণ পুরুকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে, তক্ষশীলের মত অপদার্থ সে কথ। বোৌঁঝেনি পুরু আহত অবস্থায় শিবিরে অবস্থান কালে এলবিল। পুরুর মৃত্যু হয়েছে ধরে নিয়েছেন। কিন্তু দয়িতের মৃত্যু এলবিলার দেশপ্রেমকে বিনষ্ট করেনি পুরুও ব্যক্তিগত প্রেমের চেয়ে, দেশের স্বাধীনতাকেই বড়ো বলে প্রমাণ করেছে__প্রণয়িনী এলবিলার আদর্শও পুরুর আদর্শেরই অনুগামী জীবনের এই সংকটমুহূর্তেও এলবিলা দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেছে,_

"যদিও আমার প্রেয়ের প্রশ্রবণ জন্মের মত শু হয়ে গেল, তবু দেশ উদ্ধারের এখনও আশা আছে আর একবার আমি চেষ্টা করে দেখব ।-..আর একজনও কি বীরপুরুষ নেই যে মাতৃভূমির হয়ে অন্ত্রধীরণ করে? বীরপ্রস্থ ভারততভূমি কি এর অধ্যেই বীরশূম্য হলেন ?” [ ওয় অঙ্ক, ২য়গর্ভাঙ্ক ]

দয়িতের মৃত্যু আশঙ্কা করেও প্রণয়িনী এ্রলবিলা দেশপ্রেমের দায়িত্ব বহন করতে লম্মত হয়েছে অদম্য প্রাণশক্তিই এখানে জয়যুক্ত হয়েছে, ছুঃখ বেদনার মধ্যেও জীবনীশক্তি লাঁভ করে নতুন উগ্ঘমে জেগে উঠেছে এক অসমসাহসিকা নারী। 'তক্ষণীলকে ক্ষমা করার মত মানসিক দৃঢ়তা এখনও এ্রলবিলার আছে। স্বাধীনতার র্যাখ্যাটি অতি স্পষ্ট ভাঁষায় জানিয়েছে এলবিলা--্বর্ণ শৃঙ্খল কি শৃঙ্খল নয় 1." সেকেন্গর শার অন্ুগ্রহের উপর নির্ভর করে যদি আমাদের রাজত্ব রাখতে হয়, তা সে €তো৷ রাজত্ব নয়, সে দাসত্বের আর এক নাম মাত্র [ ৩য় অল্প, ২য় গর্ভাঞ্চ]

“পুরুবিক্রম নাটকের” এলবিলা! চরিত্রটির মধ্যেই দেশপ্রেমের অদম্যশক্তি প্রত্যক্ষ ক্রি আমরা শেষপর্যস্ত পুরু তক্ষশীলকে বধ করে সেকেন্দর শার সখ্য লাভ 'কুরেছিলেন। এঁলবিলার স্বদেশপ্রেমের স্বপ্ন সফল করে এ্লবিলাকে লাভ করে ছিলেন পুরু। দগিলনাত্মক' একটি রোম্যাট্টিক প্রণয় কাহিনীরূপেই “পুরুবিক্রম নাটকের" 'বিচার হতে পারে কিন্তু স্বদেশপ্রেমের প্রচারে অবতীপ-নাট্যকার নিছক প্রণয়াত্মক একটি নাটক রচনা করার কল্পনাও করতে পারেননি তাই এলবিলা পুকুর প্রেমের সেতুরূপে স্বদেশপ্রেমের অবতারণা! করে সমগ্র নাটকের মূল বক্তব্যের মধ্যে তা সঞ্চারিত করেছিলেন সর্বপ্রথম মৌলিক নাটকের মধ্যেই জ্যোতিরি্রনীথ যথেষ্ট ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন নিছক.আদর্শবাদী চরিত্রগুলির মধ্যেও বাস্তবতার অবভারণী কনে

৪৫২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

নাট্যকার উদ্দেশ্ট আদর্শের সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন প্রসঙ্গে স্বকুমীর সেনের বক্তব্যটি যথার্থ বলেই মনে হয়,_ "সমগ্রভাবে দেখিলে পুরুবিক্রমে যে অক্ত্রিম দেশান্রাঁগ রস উদ্বেলিত হইয়া উঠিয়াছে তাহাতে সন্দেহ নাই 1”৩০ পরিশেষে অস্বালিকার ট্র্যাজেভীকেও দেশত্রোহিতারই পরিণাম বলে মনে হয় আমাদের দেশপ্রেম যেন নাটকের প্রতিটি চরিত্রের ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করেছে। পাঠকচিত্ত যেন রুদ্বখবীসে দেশগ্রেমিক পুরু দেশপ্রেমিক! এলবিলার মিলন সংঘটনের স্বপ্র দেখছে অত্যন্ত ক্রিয়াশীল ঘটনাকীর্ণ এই অংশটুকৃতেই নাট্যকারের রোম্যান্টিক কল্পনা উচ্ছুসিত হয়ে উঠেছিল নাটকের যুদ্ধবিগ্রহ চিত্রগুলি অবাস্তব দ্রুত গতিশীলতা আরোপ নাট্যকারের আঙ্ষিকগঠনের দুর্বলতারই নামান্তরমান্র। স্বদেশপ্রেমের সত্যিকারের পরিচয় দেবার স্থযোগ যখন হাতে এল-_পুরু তখন আত্মরক্ষ। করতেও সক্ষম হলেন না--অতকিত আক্রমণে ধৃত হলেন তিনি তবু. পুরুর দেশপ্রেমের অমলিন আদর্শটিকে নাট্যকার শেষপর্যন্ত সেকেন্দর শাহের প্রশংসায় অভিনন্দিত করলেন এঁতিহাঁসিকতার মর্যাদারক্ষার সঙ্গে দেশপ্রেমিকতার জয়গানে নাটকটি শুভশেষ হলো নাট্যকার পুরুর বীরত্ব স্বাদেশিকতার উজ্জ্বল নাটকে পরিবেশন করে দেশাত্মবোধক নাটকরচনার উদ্দেশ্টাটিই তুলে ধরেছেন মাত্র উনবিংশ শতাব্দীর জাতীয়তার আদর্শ দেশবাসীর প্রাণে সঞ্চারিত করার উদ্দেশে পুরুর দেশপ্রেমের চিত্র নাটকে স্থঅঙ্কিত হয়েছে--এটিই সাত্বনা। জ্যোতিরিন্্রনাথের মৌলিক নাটক সৃষ্টির ক্ষমতা এতে যেমন প্রমাণিত হলো, দেশপ্রেমিক নাট্যকারের আন্তরিকতাও নাটকে তেমনি প্রতিফলিত হয়েছে স্বদেশচিস্তার. অমূল্য দলিল হিসাবে 'পুরু বিক্রম” প্রশংসা পেয়েছিল, এর অভিনয়ের সাঁফল্যও নাট্যকারের প্রাপ্য সেকেন্দর শ। পুরুর প্রশংসায় বলেন; “তোমার প্রতি যে দণ্ডাজ্ঞা দিচ্চি শ্রবণ কর,-- তুমি যে স্বদেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করেছ-_শেষকাল পর্যন্ত বরাবর সমানরূপে তোমার তেজধিতা বীরত্ব প্রকাশ করে এসেছে-_-এত ভয় প্রদর্শনেও যে তুমি আমার নিকট নত হওনি, এতে আমি অত্যন্ত চমতকৃত হয়েছি 1” [ পঞ্চম অঙ্ক ] এই প্রশংসাবামী এতিহাসিক ঘটনা সমথিত। সম্ভরতঃ ইতিহাসের এই ক্ষীণ কত্রটি অবলম্বন করেই জ্যোতিরিন্্রনাথের কল্লপন। উদ্বাঁম হয়ে উঠেছিল। ধুরুবিক্রম নাঁটকে' দেশপ্রেম প্রচারই মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল, সমগ্র নাটকের চরিত্র

:৩** সুকুমার সেন, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস। ২য় খণ্ড বর্ধমান সাহিত্য সভা, ১৩৬২, রী ২৬5 |

নাটক ৪৫৩

পরিকল্পনায়, ঘটনা বিজ্লেষণে নাট্যকারের এই উদ্দেশ্যটটি কোথাঁও আচ্ছন্ন হয়নি | দ্বিতীয় নাটকের পরিকল্পনাতেও স্বদেশপ্রেমের ব্যঙনা! কোথাও প্রচ্ছন্ন নেই *“চিতোর আক্রমণ নাটক” নামকরণ করে নাট্যকার প্রথমেই বিষয়বস্তর গুরুত্ব সম্বন্ধে সচেতন করেছেন | ,'সরোজিনী নাটক" বললে নিছক নামকরণ মাত্র হয়” বিষয়টির গুরুত্ব বোঝানো যায় না সম্ভবতঃ কারণেই ছুটি নামকরণ চলে আসছে পাশাপাশি “চিতোর' নামটির সঙ্গে আমাদের বাঁসনাসংস্কার এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে মুহূর্তের মধ্যেই চিতোরের উজ্জল এ্রতিহাসিক চবিব্রগুলিকে আমরা স্মরণ করি। প্রতাপসিংহ থেকে পদ্মিনী সব কটি নামই মনের কোণে উকি দিয়ে যাঁয়। সেই সঙ্গে শোর্য-বীর্য, পরাক্রম, দেশানুভূতি, আত্মত্যাগ ইত্যাদি মহৎ বৃত্তির যে অনুশীলন একদা চিতোরে-_ মেবারে সংঘটিত হয়েছিল সে প্রস্গটিও এসে পড়ে জ্যোতিরিন্ত্রনাথের ইতিহাসপ্ত্ীতি দেশশ্ত্রীতি সংগত কারণেই এমন ইতিহাস অনুসন্ধান করেছে যা আমাদের অতিপরিচিত | রাজস্থানের ইতিহাস আমাদের সমগ্র সাহিত্যকেই প্রভাবিত করছিল। জাতীয়তার উন্মেষলগ্রে স্বদেশপ্রেমী নাট্যকার জ্যোতিরিন্দ্রনাথ সে প্রভাব এড়াতে পারেননি তার চারটি মৌলিক স্বদেশভাবনাজাত ইতিহাসসম্পৃক্ত নাটকের মধ্যে ছুটি নাটকের কাহিনীই রাজস্থানের কাহিনী থেকে নেওয়া ছয়েছে। কোনো নাটকেই ইতিহাস প্রাধান্য পায়নি-_কিস্ত এতিহাসিক চরিত্রের স্থত্র ধরেই নাট্যকার কল্পনার জগতে প্রবেশ করেছেন,_আদর্শ স্বীয় উপলব্ধির কথাই বলতে চেয়েছেন। সেদিন থেকে জ্যোতিরিন্ত্রনাথ এঁতিহাসিক নাটক অঙ্টা নন, ইতিহা সীশ্রয়ী-কাল্পনিক নাটকের রূপকার ব্যাপারে অবশ্য মৌলিকত্বও দাবা করতে পারেনা তিনি,__যেহেতু মধুস্বদনের মতো আবির্ভাব লগ্নের সফল নাট্যকারও ইতিহাসের স্ুষ্মদেহ অবলগ্বনে যথেচ্ছ কাল্পনিক কাহিনী রচনা করেছেন তবে ্বদেশপ্রেমের ব্যঞ্জনাটুকু কল্পনার সঙ্গে মিলিয়ে মিশিয়ে তাঁকে সেয়ুগীয় বক্তব্যে ব্ুপায়িত করার প্রকান্তিক চেষ্টা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের মত অন্ত কোন নাট্যকারের ছিল না স্বদেশভাঁবনা এমনভাবে তুলে ধরার আবেগটুকু নিয়েই স্বদেশপ্রেমী 'জ্যোতিরিক্দ্রনাথের আবির্ভাব |

তার প্রথম মৌলিক নাটকেও দেখেছি ঘটনা সংস্থাপনায় বিদেশী আক্রমণকারীর মুখ্য ভূমিকা রয়েছে দেশের স্বাধীনতা! বিপন্ন, এমন একটি অবরুদ্ধ উত্তেজনাকর মুহূর্তেই নাটক শুরু নাঁটকের প্রতিটি পাত্রপাত্রীর নিজস্ব বক্তব্য কিছু আছে বটে কিন্ত অপেক্ষমান বিদেশী শক্রর আক্রমণাত্মক প্রচেষ্টাকে তুলে একান্ত ব্যজিগত হুখ- গঃখের কথা মনে করার মত যথেষ্ট অবসর কারো হাতে নেই প্রত্যেকটি চরিত্র এই 'আকন্মিক বিপদের পটভূমিকায় নিজের অস্তিত্ব উপলব্ধি করেছে, সেখানেই নাটকের

৪৫৪. উনবিংশ শতাত্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

ব্যঞনা। দেশচেতনা এখানে সর্ধজনীন অনুভবের বস্ত হয়ে উঠেছে, অপেক্ষমান বিদেশী শক্রর উপস্থিতি বিস্বৃত হয়ে নিছক ভাবাবেগ নিয়ে সময় নষ্ট করার মত প্রস্তুতি নেই। “সরোঁজিনী” বা “চিতোর আক্রমণ নাটকের” নামকরণেই নাট্যকার বিদেশী শত্রুর উপস্থিতি সম্পর্কে দর্শককে সচেতন করেছেন নাটকের বিষয়বস্ত জটিল হতে পারে- কিন্তু নামকরণের মধ্যেই তার প্রত্যক্ষ ইজিত আমাদের সচেতন করে ভোলে অবরুদ্ধ চিতোরপুরীর পূর্বমূহূর্তের নাটকীয় ঘটনাবলী পরিবেশন করাই নাট্যকারের উদ্দেশ্য | স্বাধীনতা অপহরণের উদ্দেশ্টে আলাউদ্দীন চিতোরের দ্বারপ্রান্তে অপেক্ষমান, আভ্যন্তরীণ কলহ্‌-বিবাঁদ, প্রেম-প্রত্যাখ্যান নিয়ে মগ্ন চিতোরবাসীর জীবনকথ| & নাটকের বিষয়বস্ত | বূপ-গুণবতী রাঁজকন্তার প্রেমলাভের জন্য সাময়িক মস্ততা বাদলাধিপতি বিজয়সিংহ গারাধিপতি রণসিংহের বিরোধের মূল কারণ বিদেশী শক্রর উপস্থিতি ভুলে ব্যক্তিগত ঘন্থ প্রবল হয়েছে যদিও--চিতোররাঁণা লক্ষ্ণ- সিংহের যোগ্য সেনাপতি বিজয়সিংহের দেশপ্রেম তবুও অমলিন | মাতৃভূমির জন্য প্রাণ বিসর্জনের সংকল্পটি তীর মুখেই শুনেছি, | ্‌ পৃথিবীতে এমন কি বস্ত আছে, যা মাতৃভূমির জন্য অদেয় থাকতে পারে ? আমার; জীবন বলিদীন দিলেও যদি তিনি সন্তষ্ট হন, তাহাতেও আমি প্রস্তুত আঁছি।৩১ [ ১ম অঙ্ক, ২য় গর্ভাঙ্ক? নানা জটিলতায় ঘটনাবর্ত সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু শ্বদেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তই চরিত্র- গুলিকে চিহ্নিত করেছে। উদ্ধৃত সংলাঁপ নাট্যকারের উদ্দেশ্য স্বদেশভাবনারই নাট্যিক রূপ? প্রশ্ন শুধু বিজয়লিংহের মত একজন সর্দারের নয়, সংকল্প পরাধীন ভারতবাসীর সামনে সরবে উচ্চারিত একটি ইঙ্গিতপূর্ণ শপথবাঁক্য দেশের জন্য জীবন বলিদানের এমন উদাত্ত আহ্বান ইতিপূর্বের নাটকে শোনা যায়নি। এমন সহজ ভাষায় আবেদনের আন্তরিকতা কোথাও ইতিপূর্বে ধর? পড়েনি দেশ- প্রেমের অনুভূতি যখন শুধুমাত্র ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত না হয়ে সর্বজনীন হয় ভা প্রকাশের তাঁষাও তত আন্তরিক হয়ে ওঠে। নাঁট্যকারের গভীরতর দেশোঁণলব্ধির ভাষাঁটি তাই অনাড়ম্বর অথচ গভীর অর্থবহ নাট্যকার দেশপ্রেমের যে আগুন বাঙ্গালীর প্রাণে জালিয়ে দিতে চান শুধু নিখুত চরিত্র সজনে বা নিপুণ সংলাপ রচলায় তা সম্ভব নয়। নাঁট্যকারের স্বীয় উপলব্ধির অনলম্কৃত ভাষাটি যখন নাটকীয় সংলাঁপে পরিণত হয় তখনই তা সম্ভব। বিজয়সিংহ কাহিনীর নায়ক বিজয়- সিংহ শুধু নায়কোচিত গুগাবলীতেই শোঁভিত নন,-নাট্যকাঁর তাকে দেশপ্রেমিকরপে কল্পনা করে দর্শকের সহানুভূতি আকর্ষণ করেছেন | ৩১, জে]াতিরিক্ত্রনাখ গ্রস্থাবলী «ম খড। বনুমতী সাহিত্য মলির, কলিকাত1।

নাটক 3৫৫

অন্যদিকে রাশা লক্ষ্ণসিংহের জীবনে এক অভাবনীয় শোকাবহ ছন্দের 'অবতারণ! করেছেন নাট্যকার চিতোরের অধিষ্ঠাত্রী দেবীর নির্মম সংকল্প লক্্রণ- সিংহের কর্ণগোচর হল। প্রাণোঁপম ছুহিতা৷ রাজকুমারী সরোজিনীকে বলি দেবার আদেশ পেলেন রাণা। বড়যন্ত্রকারী আলাউদ্দীনের অন্নুচরই যে ভৈরবাচার্য ছগ্সশামে পুরোহিতের পদে অধিষ্ঠিত, সংবাঁদ সকলের অগোচরেই থেকে যায় দেশমাতৃকার আদেশ অগ্রাহ করার মত যুক্তি দৃঢ়তা রাণার নেই। সরোজিনী নাটকের ভাগ্যপীড়িতা নায়িকা কিন্তু রাণা লক্ষমণসিংহ যখন পিতৃক্সেহ দেশপ্রেমের ছন্রে উন্মাদপ্রায়-_-রাজকুমারী সরোজিনীর দৃঢ়তা তখন লক্ষ্যণীয়। রাজপুত রমণী প্রাণের মায়া জানে না। আত্মত্যাগের প্রেরণা পাঁয় তারা অন্তর থেকে সতী সাংবীদের পবিত্র ধুলিই চিতোরের মাটিকে উর্বর করেছে। লক্ষাণসিংহের দুঃসহ ছন্্ চিরন্তন পিতৃহৃদয়ের হাহাকার মাত্র মহাঁক্ষোভে লক্ষণ সিংহ বলেছে,

“জগতে তার মত হতভাগ্য আর কে আছে, যার ক্রন্দনেও স্বাধীনতা নাই ।”

[ ১ম অঙ্গ, ২য় গর্ভাঙ্ক )

হুতরাং লক্ষ্পণসিংহের চরিত্রে পিতৃত্রেহের অমলিন রূপটি নাট্যকার বর্ণনা করেছেন। দেশপ্রেম পিতৃন্সেহ যখন একই সঙ্গে তীব্র হয়ে ওঠে, রাণার অন্ত তখন ট্রীজেডীর মহিমা লাভ করে। কিন্তু সরোজিনীই পিতাঁর ব্রতসাধনে তৎপরতা দেখায়,__মৃত্যুবরণ করার জন্য প্রস্তুত হয়েই বলে,_

আমি যেন মনের চক্ষে স্পট দেখতে পাচ্ছি যে, যেই আমার চিতা প্রজলিত হয়ে উঠবে অমনি আলাউদ্দীনের বিজয়লক্ী স্নান হবে--তার জয়পতাকা দিল্লীর প্রাসাদশিখর হতে ভূমিতলে স্থলিত হবে--তাঁর সিংহাসন কম্পমান হবে আমি মলেম তাতে কি, আমার মৃত্যু যদি আপনার অক্ষয় কীতির সোপান হয়”_দেশ- উদ্ধীরের উপায় হয়, তাহলেই আমার মনস্কামনা পূর্ণ হবে [ ৫ম অংক' ১ম গর্ভাংক ]

আ'ত্মবিসর্জনের পূর্বমুহূর্তে সরোজিনীর উক্তিটি লক্ষ্যণীয় মৃত্যুবরণ করার গৌরব থেকে সরোজিনী বঞ্চিত হতে চায় না__কারণ মৃত্যু পরোক্ষভাবে দেশ উদ্ধীরের উপাঁয় হবে। সরোঁজিনী জীবনদানের পরিবর্তে দেশহিত বত সাঁধনেরই সংকল্প করেছিল। নিঃসন্দেহে স্বদেশপ্রেমী নাট্যকারের তুলিকায় সরোঞিনী চরিত্রের এমন পরিকল্পনা সম্ভব হয়েছিল। পিতার স্বার্থে জীবনদানের মহৎ দৃষ্টান্ত আছেই-_কিস্ত দেশচেতনাটিও সরোজিনীর আত্মদানের অহ্যতন প্রেরণা হলে

চরিত্রে প্রকাশ লাভ করেছে যেকোন কাহিনীতেই দেশপ্রেমের রসটি সঞ্চারিত করাই যেন নাট্যকারের অন্যতম উদ্দেশ্য হয়েছিল। সরোজিনী চরিত্রে কিন্ত

৪৫৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে শ্বদেশপ্রেম

আগাগোড়া উপলব্ধি ছিল না, এঁলবিলার ব্যক্তিত্ব স্বদেশপ্রেম সরোঁজিনী চরিত্রে দেখা বার না। কিন্তু রাজনৈতিক ঘটনাবর্তের আবিলভায় স্পন্দিত না হলেও স্বদেশপ্রেমের স্থির-শাস্ত উপলব্ধি সম্ভব, সরোজিনীর আত্মদানের মুহূর্তে সত্যটিই উদ্ভাসিত হয়েছিল। দেশপ্রেম আত্মত্যাগের মহিমা নাটকে এমন একটি গভীর ব্যঞ্জনা কৃষ্টি করেছে যা জ্যোতিরিক্্রনাথের অন্ত নাটকে পাওয়া যায় না| দেশপ্রেমের এমন সংহত প্রকাশও অন্ত নাটকে ছুর্লভ। এই কারণেই জ্যোঁতিরিক্তর- নাঁথের নাটকগুলি প্রথমে নাটক, পরে তা নাট্যকারের দেশপ্রেমাদর্শের বাহন হিসেবে গণ্য হয়েছে “সরোজিনী নাটকের, অভিনয় যে একদা বঙ্গরজমঞ্চে আঁড়োলন ৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছিল--তা সম্ভবত একারণেই *আনার অভিনেত্রী জীবন গ্রন্থে অভিনেত্রী লেখিকা বিনোদিনী “সরোজিনী নাটক" অভিনয়ের মনোজ্ঞ বর্ণনা দিয়েছিলেন | “সরোজিনী” নাটকের শেষাংশে এ্রতিহাসিক ঘটনার বিবরণই মুখ্য আলাউদ্দীনের চিতোর আক্রমণে রাঁণ লক্ষ্মণসিংহ নিহত হলেন, রাজ্যের অন্যান্ত শক্তিমান যোদ্ধারাও দেশরক্ষাঁয় সক্ষম হয়নি। সরোজিনী রাজপুত নারীদের সঙ্গে নিয়ে প্রাণবিসর্জন দিলেন জলন্ত অগ্নিকুণ্ডে। এই পরাজয়ের ঘটনাটি নাট্যকার যথাসম্ভব নাটকীয়তাঁবেই বর্ণনা করেছেন। শুন্য পুরীতে একটি নারীও জীবিত ছিল না। রাঁণার বিশ্বস্ত পুরাতন অনুচর বৃদ্ধ রাঁমদাস প্রবেশ করেছেন সেই ভয়াবহ পুরীতে |. নাঁট/কাঁর নাটকীয়: ঘটনারূপে নয়, রামদাসের আক্ষেপবাণী হিসেবে একটি দীর্ঘ স্বদ্দেশপ্রেমের কবিত রচনা করেছেন। শ্রীন্বকুমার সেন এই কবিতাটি জ্যোতিরিন্্রনাথের বন্ধু কবি অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরীর রচনা] বলে অনুমান করেছেন। কবিতাটি নাট্যকারের আক্ষেপবাণী হিসাবেও গণ্য হতে পারে রামদাস শুন্য চিতোরপুরী প্রদক্ষিণ করতে এসে ব্যথিত চিত্তে আবৃত্তি করেছিলেন,-_ আচ্ছন্ন ভারতভাগ্য আজি ঘোর অন্ধ তমসায় জয়লক্ষ্মী বাম মান আর্ধ্নাম পুণ্য বীরভূমি এবে বন্দিশীলা হায়। স্বাধীনতা রত্বহারা, অসহায় অভাগ। জননি | ধনমাণ যত পর-হস্ত-গত পরশিরে শৌোভে তব মুকুটের মশি | জলন্ত দহনে হায় অলিতেছে আজ্জি মন-প্রাণ, তবে কেন আর, বহি দেহভার চিতানলে চিত্বানল করি অবসান |

নাটক ৪৫৭

রামদাসের আক্ষেপট নাট্যকারেরই দীর্ঘস্বীসধবনি। শুন্ত চিতোরপুরীতে রাশদাসের হাহাকার আমাদের ভাগ্যবিপর্যয়ের করুণতম বিলাপ বলে গণ্য হতে পারে। কাজেই নাটকের মূল ঘটনা কাহিনীর“সঙ্গে সুক্ষ বা স্থল কোন যোগাযোগ না থাকলেও অংশটি অবান্তর বলা যায় না। শুধু চিতোরের ভাগ্যবিপর্যয়ের কাহিনী অবলম্বনেই নাটক লেখা হয়েছে, চিতোর আক্রমণের ভয়াবহ পরিণাম অঙ্কন করে নাট্যকার গভীর বিষাদের চিত্রটিই তুলে ধরেছেন। উনবিংশ শতাবীর পরাধীন কবি নাট্যকারেরা এই অবসাঁদ .বিলাপধ্বনির অবতারণা করেছিলেন নানা কারণে হেমচন্দ্রের কবিতাঁয় এই বিষাদ পর্বটি কবির জটিল আত্মঘন্থের পরিচয় বহন করেছে। নাট্যকার হিসেবে জ্যোতিরিন্্রনীথও অতীত ইতিহাসের করুণতম অধ্যায় রচনাকালে বিষাদগ্রস্ত না হয়ে পারেননি ্‌

নাটকের বিখ্যাত সংগীত রাজপুত রমণীদের আত্মধিসর্জনের লগ্গে একটি করুণরস সৃষ্টি করেছে প্রজ্লিত চিতাগ্রির সামনে ঈঈীড়িয়ে রাজপুত বালার আত্মপমর্পণলগ্নে যে বিষাদকরুণ স্থরটি প্রতিধবনিত হয়েছে,_কিশোর কবি রবীন্দ্রনাথ কবিতাকারে তা রূপায়িত করার চেষ্টা করেছিলেন যদিও দেশপ্রেমের চেয়ে আত্মসন্ত্রম রক্ষার তাগিদই ছিল মুখ্য, তবু রাজ্রপুতনারীদের আত্মদানের মহিমালোকে সমগ্র নটিকটি উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে আলাউদ্পীনের চিতোর আক্রমণকে থে কোন দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই বিচার করি না কেন,_ স্বাধীনতাকামী চিতোরবাসীদের কাছে তা সর্বদাই একটি অর্থ বহন করেছে। বিদেশীর হাতে দেশকে তুলে দেবার অনিচ্ছাকেই বৃহৎ মহৎ পটভূষিকায় স্বাধীনতাপ্রীতি বলে অভিহিত বরা হয়। সেই অর্থে কোন আত্মদীনই পরোক্ষ প্রত্যক্ষভাবে দেশের জন্য স্বাধীনতার জন্ক জীবনদানেরই নামান্তর | রাজপুত রমশীরা প্রাণের মায়াকে তুচ্ছ করেছিল, দেশপ্রেমের আহ্বানেই অকুতোতয়ে জলন্ত অগ্নিকে ঘিরে তার উচ্চারণ করেছিল”

জল জল চিতা দ্বিগুণ ছিগুণ পরশ সপিবে বিধবা বালা।

& দৃশ্ের ট্রাজিক মহিমাই নাটকটির সার্থকতার হেতু হয়েছিল। দেশপ্রেমের এমন মর্মস্পর্শী অভিব্যক্তি কাব্যে-নাঁটকে-ইতিহাসে দুর্লত। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ এই. অন্থৃভূতিগভীর অংশটিকে হৃদয়গ্রাহথ নাট্যরপ দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। দেশচেতনার মহিমা বীর রাঁজপুতানীদের আত্মোৎসর্জন সে যুগের বাঙ্গালীচিত্তের গভীর তলদেশটি স্পর্শ করতে সক্ষম হয়েছিল। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের মঞ্চলফল নাঁটকরূপে *সরোজিনী* পল্লী সহরবাসী সকলকেই তৃপ্তি দিয়েছিল

'অশ্রমভী* জ্যোতিরিজ্রনাথের তৃতীয় মৌলিক স্বদেশপ্রেমমূলক নটিক ্বদেশ-

৪৫৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

ভাবনা থেকেই “পুরু বিক্রমের” পরিকল্পনা, “চিতোর আক্রমণ নাটকে'-_চিতোরের স্বাধীনতাবিণুপ্তির সকরুণ ইতিহাসের সঙ্গে স্বদেশচেতনার মিশ্রণ স্বাভাবিকভাবেই দেখা যাচ্ছে, “অক্রমতীতেও, রাজপুত ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় চরিত্র প্রতাপসিংহকেই দেশপ্রেমের প্রতীক হিসেবে নাট্যকার গ্রহণ করেছিলেন পূর্বের ঘটনা কাহিনীর সঙ্গে ইতিহাসের যোগস্থত্র ছিল, বাকীটুকু বিশুদ্ধ স্বদেশভাবনার স্বকীয় আলোকেই নাট্যকার কল্পনা করে নিয়েছিলেন। অক্রমতীর গল্পাংশ মৌলিকরচনা হলেও গল্পের মূল চরিত্রটির মাধ্যমে দেশপ্রেম লক্ষ্য করছি, তা সম্পূর্ণই এতিহাসিক সত্য সমগ্র ভারতে চিতোরের স্বাধীনতা! সংগ্রামের উজ্জ্বল ৃষ্টান্তটি আমাদের সব পরাজয়, সব গ্রানির মধ্যেও একমাত্র সাত্বনা। প্রতাপসিংহ আমাদের বিন্বয়, পরাধীন ভারতের একমাত্র আশা গৌরব স্বদেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত আমাদের অজানা নয় কিন্তু ত্যাগের, ছুঃখের মধ্যেও স্বদেশপ্রেমকে এমনভাবে অবলদঘ্ন করেও যিনি অপরাজেয় মনোবলের পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি আমাদের আরাধ্য পুজনীয়। স্বদেশপ্রেমিকের সামনে তিনি আশা উদ্ভমের বিগ্রহ। স্বদেশানুরাগের অমলিন আদর্শটি জনগণের সামনে তুলে ধরার ব্রত নিয়েই জ্যোতিরিন্্রনাথের আবির্ভীব। তার প্রথমছুটি মৌলিক স্বদেশাত্মরক নাটকেও বক্তব্য ছিল, চরিত্র ছিল কিন্তু তাঁর এঁতিহাসিক ভি্তিটুকু নাট্যকারকেই তৈরী। করে নিতে হয়েছে কিন্তু “অক্রমতী” নাটকেই একটি পরিচিত জনপ্রিয় এতিহাসিক চরিত্রের সাক্ষাৎ পাই আমরা নাটকের কাহিনীর মধ্যে যত রচনা- কৌশলই থাক না কেন, এই বরেণ্য ধতিহাসিক চরিত্রটির আবিত্ভাবে নাট্যকারের সমস্ত আদর্শ বক্তব্য একই সঙ্গে উচ্ছৃসিত হয়ে উঠেছে। প্রতাপসিংহের পদধবনি সেদিন প্রতিটি দেশপ্রেমিকের অন্তরে বেজে উঠেছিল, জ্যোতিরিন্দ্রনাঁথ শুধু চিরকালীন স্বদেশপ্রেমের ভাষাটুকু দিয়েই চরিব্রটিকে জীবন্ত করে তুলেছেন। সেদিক থেকে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের স্বদেশাত্মক নাট্যসম্তারের মধ্যে নাটকটি উল্লেখযোগ্য স্ৃষ্টি। বহু চরিত্রের ভীড় বনু ঘটনার সংঘাতে নাটকের আবেদন বহুমুখী হয়েছিল, সমাঁলোচকেরা রসনিফাষণের মুহূর্তে নাটকের নিন্দা প্রশংসা করেছেন নান। প্রসঙ্গ নিয়ে,_কিস্ত দেশপ্রেমের প্রতীকরপে যে শ্রদ্ধেয় এতিহাসিক চরিব্রটিকে জ্যোতিরিক্ত্রনাঁথ নিখুঁত মানবিক রূপ দিতে সমর্থ হয়েছিলেন--সে বিষয়ে : তেমনতর আলোচনা হয়নি অশ্রমতীকে সেলিম অন্রাগিনী করে তিনি ভারতীয় নারীত্বের আদর্শ রক্ষা করেননি বলে যেদিন সমালোচকসম্প্রদায় চিতোরবাসীদেরও সমালোচনা আক্রমণ সহ করেছিলেন-_কিস্ত প্রতাঁপসিংহের এতিহাসিক মর্যাদা, নিখৃ'তভাঁবে রূপারিত করেছিলেন রলে কোনো বিশেষ প্রশংসা পাননি তিনি

নাটক ৪৫৯,

বস্তুতঃ দেশাত্মবোধের খাতিরে যিনি নাটকরচনা করেন--তার একাস্তিকতা দেশপ্রাখ-. তারই নামান্তর | জ্ক্যোতিরিক্ত্রলাথ বঙ্গবাসীকে 'অশ্রমতী" নাটকের মূল বক্তব্যটি উপহার দিতে চেয়েছিলেন,__কিন্ত নাঁনা ঘটনার আলোচনায় আসল কথাটি ধামাচাপা: পড়ে ছিল।

“অশ্রমতী” নাটকে অশ্রমতী সেলিম উপাখ্যান নাট্যকারের মৌলিক" উদ্ভাবন,_নাট্যকারের স্থাধীনচিন্তার স্বতঃক্ফর্ত প্রকাঁশই যেখানে মুখ্য। এঁতিহাসিকতা কিছু কল্পনায় এঁতিহাসিক নাটক যেভাবে জমে ওঠে নাটকে তার" ব্যতিক্রম হয়নি নাটকটিতে এতিহাঁসিক রোম্যান্স স্বষ্টির চেষ্টা সর্বত্রই ধরা পড়েছে-_ সেখানেই নাটকের নাটকত্ব। কিন্তু ত্বদেশপ্রেমের সার্থক নাটকরূপে বিচারকালে দেখা যাবে স্বদেশপ্রেমের গভীর আকুতি যে চরিত্রটিকে কেন্দ্র করে উৎসারিত হয়েছে-তিনি এতিহাসিক চরিত্র প্রতাপসিংহ | প্রতাঁপসিংহের আমরণ সংগ্রামের আদর্শ থেকে জাতীয়তাবোধে উদ্ধদ্ধ বান্গালী আত্মগঠনের দেশচিন্তনের আগুন' জালিয়ে নিক,-_সম্ভবতঃ এই ছিল নাট্যকারের স্বপ্ন তাই দেশপ্রেমের নাটকে একটি সার্থক দেশপ্রেমিক চরিত্র রচনায় যতটুকু আন্তরিকতা থাক! দরকার-_জ্যোতিরিন্ত্রনাথ প্রতাপপিংহ চরিত্র রচনায় ততটুকু ব্যয় করতে কার্পণ্য করেননি প্রতাপের দেশপ্রেমের স্বপ্ন সমগ্র নাটককে-_নাটকীয় মুহূর্তগুলোকে যেন আচ্ছন্ন করে আছে। প্রতাঁপসিংহ সব চরিত্রের ভীড় ঠেলে আমাদের সামনে এসেছেন, কারণ সব বততব্যের' চেয়ে জোরালো বক্তব্যটি ত্বারই সব কণ্ঠস্বর তাঁর গর্জনের কাছে পামান্ বলে' বোঁধ হয়েছে দেশের কবিরা তাকে সামনে রেখে কাব্য রচনা করেন, বৈতালিক তাঁকে উদ্দেশ্য করেই সংগীত রচনা করেন, প্রজাসাঁধারণ তাঁকে শ্রদ্ধা জানীয়,_ শপথ নেয় স্বদেশমন্ত্রেে এই গৌরবের আসনে বসেও প্রতাপসিংছের মনে এতটুকু' শাত্তি নেই, স্বস্তি নেই, স্বাধীন চিতোর ছাড়া অন্য কোন চিন্তা নেই। নাটকের" শুরুতেই মোঘল পদলেহনকারী মানসিংহের সঙ্গে কথোপকথনে প্রতাপপিংহের আদর্শের পরিচয় পাই,_-্প্রতাপ-_ দেখুন মহারাজ মানসিংহ! আমি বরঞ্চ পর্বতে পর্বতে, বনে বনে অনাহারে ভ্রমণ করে বেড়াঁব, সকল প্রকার বিপদকে অসংকোচে আলিঙ্গন করব, অদৃষ্টের সকল অত্যাচারই অনায়াসে অক্লেশে সহা করব, তথাপি তুর্কের দাসত্ব কখনই স্বীকার করব না।”৩২ [ ১ম অঙ্ক, ১ম গর্ভাঙ্ক ]

বাংলা নাটকে এমন স্বচ্ছন্দ বীররসের দৃষ্টান্ত সেযুগে স্থুলভ ছিল না। আত্মশক্তিতে অটল, আদর্শে অবিচল, যোগ্য দেশপ্রেমিকের মতই উক্তি করেছে

৩২, জ্যোতিরিক্্রনাথ গ্রন্থাবলী। ৫ম খও। বহুমতী। সাহিত/ মন্দির, কলিকাতা

৪৬০ উনবিংশ শতাবীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

প্রতাপসিংহ। দেশই যাঁর আরাধ্য, সেই আরাধিতা দেশমাতৃকার অপমান ঘোচাবার দায়িত্ব নিয়েছে যোগ্য সৃস্তান। প্রতাপসিংহ তাই মহ! খেদে উচ্চারণ করেন,

হাঁ! সে চিতোর এখন বিধবা--স্বাধীনতার জন্মভূমি--বীরের জননী--সেই চিতোর এখন বিধবা [ ১ম অঙ্ক, ২য় গর্ভাঙ্ক]

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ শক্তিমান নাট্যকার বলেই--ব্যঞ্জনাগর্ভ শব্ধময় রচনার নিপুণতা তার ছিল। চিতোরের ছূর্দশ! বর্ণনার মধ্যে যে রিক্ততার ব্যঞ্নাটি তিনি আরোপ করেছেন__অকুলীণ শব্ধ প্রয়োগেও তাঁর ভাবকে ধ্বনি গ্রাস করেনি। অথচ মাতৃভূমির বৈধব্যদশ! ঘোচানোর পবিত্র ব্রতটিই যে স্বদেশপ্রেমিকের প্রথমতম কর্তব্য--প্রতাপসিংহের আক্ষেপের মধ্যে সে ব্যগ্রন? পূর্ণমাত্রায় বর্তমান

নাটকে আকবর চরিব্রটিকেও আন হয়েছে প্রতাপসিংহের স্বদেশপ্রাণতাকেই আরও তীব্রভাবে বোঝানোর জন্ভ। আকবরের দুরদৃষ্টির মধ্যে পররাজ্য গ্রাস কায়েম করার যে অভিসদ্ধিটি দেখতে পাই নাট্যকার তা সার্থকভাবে প্রয়োগ করেছেশ। আকবর সম্রাট হিসেবে চিতোররাণা প্রতাপসিংহকে বিচার করেছেন,_-

রাজপুতদিগের সঙ্গে কুটুত্িতা করে আমাদের সিংহাসন অটল করব মনে করেছিলেন আমার সে রাজনৈতিক অভিসন্ধি অনেক পরিমাণে সিদ্ধও হয়েছে-_কিস্ত প্রতাপসিংহ দেখছি সেইসব পুরাঁতণ হিন্দু কুসংস্কার আবার উদ্দীপন করে দিচ্ছেন, আবার সেই চিরন্তন জাতিবৈরিতা উত্তেজিত করে দিচ্ছেন তীকে দমন না করলে আমার এই রাজনৈতিক অভিসন্ধষি একেবারে বিফল হবে [ ১ম অঙ্ক, তৃতীয় গর্ভাঙ্ক ]

নাট্যকার এতিহাঁসিক জাতীয় প্রসিদ্ধ চরিব্রগুলোর বিচারেও যথেষ্ট পারদশিতাঁর পরিচয় দিয়েছেন আকবরের রাজ্যবিস্তারের কৃটকৌশলকে নাটকে সংক্ষেপে সমালোচনা করেছেন নাট্যকার নাটকেই স্বদেশপ্রেমের পাশাপাশি আছে স্বদেশদ্রোহিতা, আত্মত্যাগের পাশাপাশি স্বার্থসিদ্ধি। প্রতাপসিংহের ত্বদেশপ্রাণতা শক্তসিংহের দেশব্রোহিতা--এ নাটকের বক্তব্যকে ঘনীভূত করে তুলেছে। একই সহোদর হলেও শক্তসিংহ প্রতাপসিংহের মত দেশপ্রেমিক নন। দেশপ্রেম প্রতাঁপ- সিংহকে দুর্বার, করেছে, শক্তসিংহ স্বদেশদ্রোহীর মত আচরণ করেছে,__এই বৈপরীত্য নাটকীয় ছন্বকে ঘনীভূত করেছে শক্তসিংহ সম্পর্কে চিতোরবাসীরা তাই খেদে উচ্চারণ করেছে, __

*কিস্ত দুঃখের বিষয়, এই সাহসিকতা, এই বীরত্ব, অবশেষে কিনা স্বদেশের বিরুদ্ধে নিয়োজিত হল |” [ ১ম অঙ্ক, ৪র্থ গর্ভাঙ্ক ]

স্বদেশের জন্য আত্মত্যাগের আদর্শও যে সব মানুষের জীবনে কার্যকরী হয় না-- সিংহ চরিত্রটি যেন সেই প্রসঙ্গটিই স্মরণ করিয়ে দেয়। ব্যক্তিগত ঈর্ষান্েষই

নাটক ৪৬১ মহৎ আদর্শের অন্তরায়--এই আগ্তবাক্যটি নাটকৈ পরিবেশিত হয়েছে--শক্তসিংহের চরিত্রটির মধ্যে। তবু দেখি প্রতাপলিংহ অপরিসীম আশায় আন্দোলিত হয়েছেন-_ স্বদেশচিন্তাই সব চিন্তার উর্ধ্বে স্থান পেয়েছে শক্তসিংহের শক্রতা ভুলেই প্রতাপসিংহ বলেন, -“ভায়ে ভায়ে যতই শক্রতা হোক ন1 কেন-_দেশবৈরিন্ন বিরুদ্ধে কি সকল ভ্রাভার তলোয়ার একত্র হবে না।” [ ১ম অঙ্ক, ৫মগর্তাঙ্ক ]

দেশবৈরিতার অপমান থেকে দেশকে যুক্ত করার আমরণ পণ প্রতাপসিংহের, তাই শক্তুসিংহের ভ্রাতৃদ্রোহকেও উদার স্বদেশপ্রেমিকের দৃষ্টিতেই বিচার করেছেন তিনি ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব সংগ্রামের বনু উর্ধ্বে স্বদেশ,এই গভীর উপলবি দেশপ্রেমিক প্রতাঁপসিংহের অন্তরে বিরাজমান | স্বদেশের শ্রীহীন রূপ তীর অন্তরে গভীর বেদনা তৃষ্টি করে অতীত গৌরব প্রতাপসিংহের প্রেরণা--জ্যোতিরিন্্রনীথ অতীত মহিমা স্মরণে চেষ্টামগ্ন | পরাধীন ভারতের সামনে. প্রতাঁপসিংহের মহিমা বর্ণনার উদ্দেশ্য আন্;কি হতে পারে ? প্রতাপসিংহ মহাঁছঃখে মহিষীকে বলছেন,

আঁর এখন আমাদের কি আছে ? চিতোরের যখন স্বাধীনতা গেছে তখন সকলই গেছে__যে চিতোর পুজনীয় বাঁগারাওর স্থাপিত-যে চিতোর আমার পূর্ব পুরুষের বাঁসস্থান--যে চিতোর স্বাধীনতার লীলাস্থল--সে চিতোর যখন গেছে, [তখন আর আমাদের কি আছে? মহিষি, তোমরা স্ত্রীলোক, তোমরা বস্ত্র, অলঙ্কার, ধন-ধাম্তকেই লক্ষ্মী বলে জ্ঞান কর-__কিন্ত তোমরা জানন? স্বাধীনতাই সৌভাগ্যের প্রীণ-_

[ ১ম অঙ্ক, পঞ্চম গর্ভাঙ্ক

প্রতাপসিংহের স্বাধীনতাগ্রীতির বীরোচিত প্রকাশ উদ্ধত সংলাপে করুণ রসের সঞ্চার করেছে যেন। স্বাধীনতাবিহীন জাতির আর কিছুই অবলম্বন থাকে না-_এ যেন সংলাপাঁকারে নাট্যকারেরই ঘোষণা স্বাধীনতাই সৌভাগ্য সমৃদ্ধি স্বাধীনতা ছাঁড়া সবই যে অন্তঃসার-শূনত, সে যুগে এই বক্তব্যটি প্রচারের আয়োজনেই কাব্য-নাটক- মহাকাব্য-ব্যঙ্ককাব্যের জন্ম জ্যোতিরিন্্রনাথের ধ্যান-ধারণার এই বক্তব্যটি যেন সব বক্তব্য ছাপিয়ে বড়ো হয়ে উঠেছে

প্রতাপনিংহের গ্রতিহাসিক স্বাধীনচেতনা নবজাগরণের পূরণলাগ্নে এমন বাস্তব হৃদয়গ্রাহী করে প্রচার করে নাট্যকার যে মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন সে শুধু. দেশপ্রেমের দ্বার সম্ভব ছিল না। প্রতিভার সঙ্গে শক্তি অনুভবের সংমিশ্রণেই এটা সস্ভব হতে পেরেছে

প্রতাঁপসিংহ-কন্তা অঞ্রমতীকে কেন্দ্র করেই নাটকের পরিকল্পনা, কাহিনীগত অভিনবত্বে অনুপম রললোক হৃজনের চে অগ্তান্ নাটকের মত নাটকেও আছে। কিন্ত দেশপ্রেমের প্রেরণা নাট্যকারকে কতদূর উদ্বদধ করেছিল প্রতাপসিংহ চরিত্রের

£৪৬২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

'বিশ্লেষণেই তা ধরা পড়বে তাঁর সমগ্র এঁতিহাসিক নাট্যসস্তারে দেশপ্রেমের যে উজ্জ্বল রূপ প্রত্যক্ষ করি, প্রতাপসিংহের চরিত্রে ত৷ ঘনীতৃত হয়েছে পুরোমাত্রায় 'এঁতিহাঁসিক পটভূমিকাটি সামনে ছিল বলেই জ্যোঁতিরিন্্রনাথের উদ্দাম কল্পন। উচ্ভ্সিত হয়ে উঠেছিল যেন। মানসিংহকে অপমান করেই প্রতাপপিংহ যে সমশ্যার সৃষ্টি করেছিলেন তার ফল ভোগ করেছেন তিনি নাটকের শেষাংশে মৃত্যুবরণের মুহূর্ত পর্যন্ত প্রতাপসিংহের অমলিন দেশাত্মবোৌধ সমগ্র দর্শকের চিত্ত অভিভূত করে রাখে পরাজয়ের গ্লানি, স্বপ্রভঙ্গের বেদনা, আদর্শের বিফলতা প্রতাপসিংহকে মুহামণন করেছে, __কম্তান্সেহ কিংবা ব্যক্তিগত সমস্ত ছুঃখকে তুচ্ছজ্ঞান করেও তিনি শুধু দেশোদ্ধারের ্বপ্রটি বাঁচিয়ে রেখেছিলেন, মৃত্যুমুহূর্তে তারই অন্তিম হাহাকার নিবিড় করুণরসের 'ব্যঞ্রনা সঞ্চার করেছে। প্রতাঁপসিংহের দেশপ্রেমের গভীরতাকে মানবজীবনের যে ,কোন গভীরতর উপলদ্ধি বলেই মেনে নিতে হবে। দেশপ্রেমের অনুভূতিও যে হৃদয়ের গোপনতম সম্পদ হতে পারে--প্রতাপের হাহাকার তা প্রমাণ করেছে। প্রতাপসিংহ 'বলেছেন,_-প্জন্মভূমি চিতোৌর- তোমীকে জন্মের মত বিদায় দি-_-তোমার অযোগ্য সন্তানের নিকট আর কোনেো। আঁশ1 কোরো না--আর একটু পরেই তোমার উন্নত ১জয়ন্তত্ত আমার চক্ষের অন্তরাল হবে ।” [ ৩য় অঙ্ক, ১ম গর্ভাঙ্ক ]

সংগ্রামে অনেক কিছু জয় করেও জন্মভূমি চিতোর তাঁর অনায়ত্ব থেকে গেছে, “আক্ষেপটিও করুণরসের ব্যঞ্জনাসমৃদ্ধ অংশ,

“মহিষি! এখনও চিতোর উদ্ধার হয়নি--যতদিন লা চিতোর উদ্ধার করতে পারব, ততদ্দিন মহিষি, আমার আরাম নাই-_বিরাম নাই- শান্তি নাই--নিদ্রা মাই | ..যে চিতোর আমাদের পিতৃভূমি, যে চিতোৌরের সঙ্গে আমার পূর্বপুরুষ-

দিগের কীতিগৌরব জড়িত, যার শৈলদেশ তাঁদের শোৌঁণিতধারায় ধৌত সেই চিতোরের নিকট আমি এখন কিন! একজন অপরিচিত বিদেশী মাত্র! [ €র্থ অঙ্ক, ১মগর্ভাঙ্ক]

অনুভূতির গভীরতা স্বাধীনতাকামী পরাধীন দেশের মানুষদেরই উপলব অনুভূতি নাট্যকার জ্যোতিরিক্দ্রনীথের স্বদেশ অনুভূতির মধ্যে যে বেদনাটুক্‌ স্বকীয় অভিজ্ঞতালন্ব--শুধু সেটুকু দিয়েই প্রতাপসিংহের সংলাপের সত্যতাকে প্রকাশ কর! সম্ভব হয়েছিলো নাট্যকারের দেশীন্ুরাগের ছবিটুকু আবিফার করতে হবে এসব -অংশ থেকেই হিচ্কুমেলার অনুরাগী সমর্থক হিসেবে যে প্রেরণা তিনি জাতির প্রাণে সঞ্চার করতে চান তা ঠিক এই ভাবেই রূপময় করে তোলা সম্ভব একটি আদর্শ

চরিত্রের নিখু'ত রূপ নাট্যকারের সমস্ত বক্তব্যকেই ব্যক্ত করতে পারে একমুহূর্তে,__ এজ্যোতিরিজ্্রনাথ তাই হৃষ্টির মধ্যেই তার স্বপ্নকে অনুসন্ধান করেছেন দেশজননীর .প্রতি অস্রাগের মাতা ঠিক কতদূর যেতে পারে-_প্রতাপসিংহেয় সারাজীবনের ছুঃখ-

নাটক ৪৬৩

বরণের ইতিহাঁসই তাঁর সাক্ষ্য দিতে পারে প্রতাপসিংহ চরিত্র অবলম্বন করেই তাঁর স্বকীয় উচ্ছ্বাসের উপলব্ধির আশীতীত সাফল্য দেখা যাঁচ্ছে। ম্ৃত্যুমুহূর্ভেও প্রতাপ বিশ্বস্ত অন্ুচরদের শেষবারের মত আক্ষেপবাণী শোনান,_-যে মেবারের ম্বাধীনতা। রক্ষা করবার জন্য আমরা এতদিন আমাদের অজস্র রক্ত দিলেম, সেই স্বাধীনতালক্ষ্মীকে 'তখন সেই রাক্ষসীর নিকট বলি দেওয়া হবে আর রাজপুত প্রধানগণ, তোমরাও সেই বিষময় দৃষ্টান্তের অনুগামী হবে [ ৫ম অঙ্ক, প্রথম গর্ভাঙ্ক ]

দেশের জন্য সর্বস্ব পণ করতে হবে এমনকি জীবনও | কিন্ত জীবন দিয়েও আদর্শ রক্ষার গুরুদায়িত্ব অর্পণ করে প্রতাঁপসিংহ দেশপ্রেমের গভীরতা বোঝাতে চাইলেন এই আঁদর্শ বংশপরম্পরা বেঁচে থাঁকবে, স্বাধীন মনটি কখনও হারিয়ে যাবে না, এই প্রতিশ্রুতি বড়ো কঠিন | প্রতাপসিংহের মত দেশপ্রেমিকের সমগ্র জীবন তার প্রতিজ্ঞা পাঁলনেরই ইতিহাঁস। এই শপথ উচ্চারণের লগ্নেই নাট্যকার জ্যোতিরিক্রনাথের আবির্ভাব তিনি প্রতাপসিংহের আদর্শট প্রাণে প্রাণে সঞ্চারিত করার আশায় “অশ্রমতী” নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র না হলেও প্রতাপসিংহকেই উজ্জলরূপে অঙ্কন করেছিলেন, রোম্যান্টিক এ্রতিহাসিক নাটক লিখতে গিয়েও দেশপ্রেমোচ্ছাস সব কিছুকেই ছাপিয়ে উঠেছে

“অশ্রুমতী” কেন্দ্রীয় চরিত্র হলেও অপরিণত চরিত্র প্রাধান্ত পেলেও চরিত্রটি অন্তান্ত চরিত্রের ছায়ায় শ্লানমুখী হয়ে আছে। পিতার দেশপ্রেমের দত্তটি যেন কণ্ার জীবনে অভিশাপের মতই নেমে এলেছিল। কিন্তু নিতান্ত গৌণ চরিব্রগুলৌও নাটকে উজ্জল হতে পেরেছে। কবি পৃথ্িরাজও তাঁর দেশপ্রেমের অনুভূতির আলোকে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ককি পৃথিরাঁজ দাসত্ব স্বীকারে লঙ্জা পেয়েছে সঙ্গীত রচনা করে, প্রতাঁপের বীরত্ব দেশানুরাগের ব্যাখ্যা করে দুর্বল পৃথিরাজও একটা আদর্শ খুঁজে পেয়েছে পৃথ্িরাজের কবিতায় উচ্ছৃসিত স্বদেশপ্রেম আমাদের মুগ্ধ করেছে। পৃথিরাঁজের প্রতাপউপাসনা তার গভীর দেশানুরাগেরই ফলমান্র প্রতাপের সন্মানরক্ষার জন্ই পৃথিরাজ্ত অক্রমতীকে বিবাহ করতে চীয়।_ নাটকের জটিল পরিস্থিতিতে প্রতাপঅন্ুরাগী পৃথিরাজ ঘোষণা করেছে”_

বীরশ্রেষ্ঠ প্রতাপসিংহ আমার হৃদয়ের আরাধ্য দেবতা,_তাকে প্রাণ থাকতে আমি কখনই কলঙ্কিত হতে দেব না। তার বীরত্ব নিয়েই আমার কবিতা জীবিত রয়েছে"*-। [ ৩য় অঙ্ক, ৩য় গরভাঙ্ক ]

প্রতাপসিংহের সন্মান রক্ষার দারিত্ব বহন করতে গিয়েই আত্মদীন করতে হল পৃিরা্ষকে। কিন্ত প্রতাপসিংহ পৃথিরাজের বুল্য বুঝেছিলেন। দেশপ্রেমের বাণী চয়ন করে যে মহান আদর্শ প্রচারের চেষ্টা! করেছিলেন পৃথ্থিরাজ,__প্রতাপসিংহ সে

৪৬৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

মর্যাদা দিয়েছিলেন ; মহিষীকে অন্থরোধ করেছিলেন যেন তার নির্বাসিতা কন্তাকে: দেশপ্রেমমূলক অংশ পাঠ করতে দেওয়া হয়। বলেছিলেন,_“মহিষি! তুমি ওকে ভাল করে শিখিও, যেসব কবিদের গাথাতে রাজপুত বীরত্বের গুণকীর্তন মুসলমানদের নিন্দাবাদ আছে, সেই সব গাথা ওর কস্থ করিয়ে দিও [২য় অঙ্ক, ১ম গর্ভা্ক | এই নির্দেশটি পৃণ্থিরাজকে উদ্দেশ্ট করেই বলা হয়েছে পৃথ্িরাঁজের শক্তি ছিল না, বীরত্ব ছিল ন! কিন্ত আদর্শের মহত্ব সততা! ছিল বন্দী বিকানীর রাজপুত্র পৃথ্িরাজ দাঁসত্বযস্ত্রণা সহ করতে না পেরে বলেছিলেন, - "্দাসত্বে এখনও আমর! ভাল করে অভ্যস্ত হইনি। এখনও আমাদের হীন অবস্থা উপলব্ধি করে কষ্ট পাচ্ছি [ ১ম অঙ্ক, ষষ্ঠ গর্ভাস্ক ] 'অক্রমতী” নাটকের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে সমালোচক সম্প্রদায় নাটকীয় কলা- কৌশল বিষয়বস্তর নাট্যিক বিস্তাসেরও চরিব্রচিত্রণের প্রশংসা করেছেন সেলিম, অক্রমতীর প্রণয়োপাখ্যান ইতিহীসসম্মত না হলেও উচ্চাঙ্গের নাটকীয় উপাদান এখানে সৃজন করেছেন নাট্যকার কিন্তু তিহাসিক-রোম্যার্টিক নাটকে উচ্চাঙ্গের দেশপ্রেম যে নিখু'তভাবে চিত্রিত হতে পারে এবং এতিহাসিক উপাদান বজায় রেখেই ঘে এমন সার্থক দেশপ্রেমীর চরিত্র অঙ্কন সম্ভব,- প্রতাঁপসিংহ চরিভ্রটি বিশ্লেষখ করেই তথ্য জানা যায়। নাটকের ঘটন। শুরু হয়েছে দেশপ্রেমের প্রসঙ্গ থেকেই, "যা ঘটেছে তা শুধু দেশপ্রেমিকের দেশান্ুরাগের ফলাফল রূপে তবু নাটকের প্রতিটি চরিত্র প্রতাপসিংহের মহৎ চরিত্রের কাছে নতি স্বীকার করেছে,_-তাঁর আদর্শকে শ্রদ্ধা করেছে পঞ্চম অঙ্কে নানা জটিলতার অবসান ঘটেছে,-_- পৃথিরাজের আত্মদান, অশ্রমতীর যোগিনী বেশ দেখিয়েও নাট্যকার শেষ বক্তব্যটিতে দেশাদর্শকেই স্থান দিয়েছেন। প্রতাঁপসিংহের অন্তিম আক্ষেপের উত্তরে তার বিশ্বস্ত অনুচরদের মুখে একটি শান্ত দৃঢ় সংলাপ স্থাপন করেছেন ।_-এই শপথবাক্য শ্রবণ করেই নিশ্চিন্ত প্রতাপসিংহ মৃত্যুবরণ করেছিলেন | দেশের স্বাধীনতা রক্ষার আশ্বাস দিতে পেরেছিলেন তার অন্ুচরবৃন্দ_“না--মহারাজ আপনি নিরুদ্িগ্ন হোন আমরা সকলে বাপ্পারাও সিংহাসনের নামে শপথ করে বলছি যে, যতদিন না মেবারের স্বাধীনতা 'পুনকদ্ধার হয়, ততদিন এখানে প্রাসাদ নির্মাণ করতে দেব না ।» [ ৫ম অঙ্ক, ১ম গর্ভাঙ্ক ] এই শপখবাক্যের মধ্যে নাট্যকার দেশপ্রেমিকদের অন্তরের দৃঢ়তার চিত্র অঙ্কন করেছেন। পরাধীনতার মধ্যে সামান্যতম বিলাসকেও স্বান দেওয়া ষে অপরাধ এই বোধটি সঞ্চার করার কোন ইচ্ছা নাট্যকারের অন্তরে সপ্ত ছিল কিনা কে জানে

নাটক ৪৬৫

দেশপ্রেমযুলক নাট্যসস্তারের তৃতীয় নাটক হিসেবে *অশ্রমতীশ্র রচনাকৌশল বিষয়বস্তর উদ্ভাবনে নাট্যকারের পরিণত চিন্তাধারার পরিচয় থাকবে এটাই স্বাভাবিক আগের ছুটি নাটকে দেশাদর্শ নাঁট্যাদর্শকে একাকার করে মিলিয়ে দেবার চেষ্টা চোখে পড়ে বিশেষতঃ প্রথম নাটক 'পুরুবিক্রমে” চরিভ্রগুলোকে নাটকীয় চরিত্র হিসেবে কল্পনা না করে তিনি দেশপ্রেমী স্বদেশপ্রেমী এ*ছুটি স্তরে সাজিয়েছেন 1 দেশপ্রেমের মাপকাঠিতেই যেন চরিত্রগুলোর ওজন ঠিক করা হচ্ছে “অশ্রমতী” নাটকের রচনাদর্শ ঠিক এতখানি দেশকেন্দ্রিক নয়। দেশপ্রেম আছে, পিতন্েহের সঙ্গে দেশাত্মবোধের দন্ব আছে কিন্ত কোনটাই নাটকের মূল ঘটনা নয়। অভ্রমতী নাটকের নায়িকা , ঘটনাচক্রে প্রতাপসিংহছুহিতার সঙ্গে আকবরপুত্র সেলিমের যে রহশ্যমধুর প্রণয় পর্বটি স্ুচিত হলো,_নাট্যকার এই যূল উপাখ্যানটিকেই নাটকে প্রীধান্ত দিয়েছেন এই অংশটিই নাটকের জটিলতম অংশ এরই সমাধানে নাটক শেষ হয়েছে মূল চরিত্রের মধ্যে যেমন দেশচেতনার স্পর্শ নেই, মূল ঘটনাটিও মানবজীবনের চিরন্তন রহস্যকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে রাজকুমারী অশ্রমতী সেলিমের অন্থরাগিনী,_-এই কল্পলাতে নাটকীয়তা আছে; মৌলিকত্ব চমতকারিত্ব আছে কিন্তু দেশপ্রেমের নামগন্ধ নেই। অথচ মুল ঘটনা চবিত্রের অন্তর্গত না হয়েও সে যুগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতাপসিংহ চরিন্রটিকে জনগণের সামনে আদর্শ চরিত্র হিসেবে দেখানোর ক্রটি করেননি নাট্যকার | প্রতাপসিংহের এতিহাসিক মহত্বটুকু নিখু'তভাবে চিত্রিত করে নাট্যকার তাঁর দেশচেতনার অন্ুরাগটি যেমন প্রকাশ করেছেন তেমনি মূল ঘটনা চরিত্র অঙ্কনেও সাবধানতা অবলম্বন করেছেন বোধহয় এদিক থেকে আলোচন। করলেই নাট্যকার হিসেবে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের পরিণত প্রতিভার অবদান হিসেবে “অশ্রমতী" নাটকের উল্লেখ করা যায় সঙ্গত ভাবেই

'অশ্রমতী" নাটকে যেমন নাট্যরসঘন মুহূর্ত সজনে নাট্যকার সার্থকতা দেখাতে পেরেছেন, মুল রসতজনে বাধা হৃষ্টি না করে নাট্যকারের বাঞ্চিত দেশপ্রেমের ব্যঞ্রনা- টকুও তিনি নাটকে সার্থকভাৰে প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়েছেন তার সমগ্র দেশপ্রেমাত্ক নাট্যস্ঙ্টির মধ্যে 'অশ্রমতী' নাটকেই দেশপ্রেমের বক্তব্য বিস্তারিতভাবে চিত্রিত হয়েছে দেশ সম্পর্কে নাট্যকারের ধারণা আদর্শ এতিহাসিক প্রতাপসিংহের দেশচেতনার মধ্যে ওতপ্রোত হয়ে আছে। দেশাত্মবোধের সংলাপ প্রতাপসিংহের মুখে যখন উচ্চারিত হতে শুনি তখন ইতিহাঁস বর্তমান যেন একাকার হয়ে যায়। জাতির আঁয্ায় আত্মায় ঘখন দেশপ্রেমের বান ডেকেছে নাট্যকার সেই মুহুর্তেই প্রতাপলিংহের সৃতিটি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন

জ্যোতিরিন্দ্রনাথের দেশপ্রেমযূলক নাট্যধারার সর্বশেষ সংযোজন ব্বপ্রময়ী নাটক |"

তক

৪৬৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

ইতিপূর্বেও দেশপ্রেমাদর্শ প্রচারের জন্য নাট্যকার ইতিহাসের দ্বারস্থ হয়েছেন, '্বপ্নময়ী নাটকটিও' ইতিহাসভিত্তিক রচনা কিস্তু সে ইতিহাস খুব প্রাচীন নয়। দেশাত্ম- বোধের ধারণাটি এতিহাসিক চরিত্রের কাঠামোতে স্থাপন করার কিছু সুবিধে আছে, দেশাত্মচেতনার মত একটি দুর্লভ অনুভূতিকে বিশ্বাসযোগ্য ভাঁবে পরিবেশনের জন্য কল্পিত চরিত্র থেকে পরিচিত এ্রতিহাসিক চরিত্রের সাহাধ্য নেওয়াটা? সবদিক থেকেই নিরাপদ পাত্র-পাত্রীর! ইতিহাসের পরিচয়পত্র নিয়ে মঞ্চারোহন করলে নাট্যকারের দ্বায়িত্ব খানিকটা কষে বৈকি বিশেষ বরে কোন আদর্শ প্রচারের ক্ষেত্রে পরিচিত এঁতিহাসিক আদর্শের অনুসরণ করলে অনেক অবাঞ্ছিত কৈফিয়তের হাত থেকেও নাট্যকার মুক্তি পেতে পারেন তাই দেখা যাচ্ছে-_দেশাত্মবোঁধক নাটক রচনা] করতে বসেই জ্যোতিরিজ্দ্রনাথ ইতিহাসের পৃষ্ঠানুসন্ধানে মগ্ন প্রবাঁদতুল্য এতিহাপিক চরিত্র সামনে রেখে দেশপ্রেমের মহিমা ব্যাখ্যা করতে নাট্যকারের যে বিশেষ সুবিধে হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই চাঁরটি নাঁটকেই দেখা যায় নাট্যকাঁর ইতিহাসের হথত্রটুকু সংযোগ- সেতু রূপে ব্যবহার করেছেন। মৌলিকত্ব যে নেই তা বলা যাঁয় না, নাটক রচনায় যে ধরণের কল্পনার সাহায্য নেওয়া! অত্যাবশ্যক নাট্যকার তাও গ্রহণ করেছেন স্থতরাং এই শ্রেণীর সর্বশেষ নাটকটিতেও জ্যোতিরিন্দ্রনাথের অগ্ঠান্ত নাটকের লক্ষণ বর্তমান | তবে পার্থক্যটুকুও চোখে পড়ে ইতিপূর্বে বাংলাদেশের ইতিহাঁসকে কেন্দ্র করে তিনি দেশপ্রেম প্রচারের চেষ্টা করেননি | বাংলার নবজাগরণের মহীলগ্নে ভারতীয় ইতিহাসের উজ্জল চরিত্রগুলোকে তিনি রূপদান করেছেন--শুধু বা"লার ইতিহাসই স্থান পায়নি এজন্য নাট্যকাঁরের পরিকল্পনাকে দোষারোপ করা অন্যায়; বাংলার ইতিহাঁসকেই বরং দায়ী করা চলে। স্বদেশপ্রেমের চেতনাটি বাংলার ইতিহাসে এমন স্থুলভ ছিল না যে নাট্যকার তা থেকে নাটকের উপাদান সংগ্রহ করতে পারেন। তাছাড়া বাংলার আঞ্চলিক বিদ্রোহকে দমন করার জন্ মাঝে মাঝে কোন কোন শক্তিমান পুরুষের আবির্ভাব হলেও অবিচ্ছিন্ন দেশারাধন। হয়ত সে চরিত্রের একমাত্র বৈশিষ্ট্য নয়। ফলে বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে দেশপ্রেমিক চরিত্র অনুসন্ধানের চেষ্টা করলেও তাতে নাটকীয় উপাদানের যথেষ্ট অভাব ছিল এট] সত্য | তবু দেখা যাচ্ছে, জ্যোতিরিক্্রনাথ কার্ষে প্রথম ব্রতী বঙ্গইতিহাসের একটি বিদ্রোহী নেতাকে দেশত্রেমিকতাঁর রং-এ রঙ্গীন করে একটি মৌলিক নাটক স্জনের প্রচেষ্ঠাটি সেদিক থেকেই অভিনন্দনযোগ্য শোতা সিংহ চরিত্রের সবটুকু হয়ত এঁতিহাসিক ফত্য নয় কিন্তু চরিত্রকে মিথ্যা বলারও হেতু নেই। স্বাধীন হওয়ার অকাজ্কা থাকাটা বিচিত্রও নয়, অসস্ভাবিতও নয়। মোঘল অধ্যুষিত বজদেশে .চিতুয়া বর্দা মঞ্চলের শক্তিমান নেতা শোভা সিংহ দেশ থেকে মোঘল বিতাড়নের স্বপ্প দেখেছিলেন,

নাটিক ৪৬৭ এটুকু যদি মিথ্যা না হয় তবে 'ত্বপ্রময়ী নাটকের" নায়ক হিসাবে যে শোভা সিংহ চরিত্রটি নাট্যকার আমাদের সামনে এনেছেব - তাকে শুধু অতিরপ্রিত বা কষ্টকল্লিত চিত্র বলে মনে করার কোন সঙ্গত কারণ নেই। এঁতিহা্সিক বিবরণ যতটুকু মিলছে তাতে শোভা সিংহের স্বাধীনতাপ্রীতি দুঃসাহসিক দেশোদ্ধারের প্রসঙ্গ সর্বত্র রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের নানাস্থানে মেদিনীপুর থেকে রাজমহল পর্যন্ত শোঁভ৷ সিংহের অপ্রতিহ্ত বিজয় অভিযানের সংবাদ সে যুগীয় নথিপত্রে বারবার উল্লিখিত হয়েছে | 10150000 9556066509--৩ হুগলী, মেদিনীপুর বর্ধমানের জেলাভিত্তিক ইতিহাসে শোভ। সিংহ অন্যতম সংবাঁদ। হুগলীর ইতিহাসে বল! হয়েছে,

59000991061) 2. 28001009101 02691595 015108, ৪150 882179 12 06 02109865] 509-01515100. 002 11101210016 0190:106 200201776 01358065590 আ101) 0০ 050%6100006150 1011590 1081905 100 [81110 [091 গা &গিা। 0101656 06 911552,70015611 155155 008701)60 01:09 01১6 4৯190010951 9৮-11910 €0 90102), 91০ 10০ [২218১ (0151)192 139122, 4] 02006, 207 56160. 1019 £8100115 2130 01006151005 150215 06য 00105 [30992191590 591520. ০৮61: ৬০5 350891, ০8100010178 101915109- 59৭7 00851000922 25100281791 2100 0081097.৩৩

জ্যোতিরিন্ত্রনাথ ইতিহাসের এই সত্য বিবরণের মর্যাদ! রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন নাটকটিতে কারণ দেশাত্মবোধের আদর্শ ইতিহাসের চরিব্রটিতে যেমন ভাবে প্রতিফলিত হয়েছিল যে কোন স্বদেশপ্রেমী নাট্যকারের কাছে তার উপাদান লোভনীয় ইতিহাসে বর্ধমান রাঁজকন্তার নামটিও উল্লিখিত হয়েছে রাজকন্ঠা সত্যবতীর সাহসিকতার প্রসঙ্গও অনুল্লিখিত ছিল না) সব মিলিয়ে নাটকের উপাদান ইতিহাসের ঘটনার মোটামুটি প্রক্য সংস্থাপিত হরেছে বলা চলে। নাট্যকার কাহিনী উদ্ভাবনে যেটুকু কল্পনার আশ্রয় নিয়েছেন তা তাঁর অন্ঠান্ত নাটকেও দেখা যাচ্ছে জ্যোতিরিন্্রনাথের প্রতিভা বিশ্লেষণ করলে খুব সহজেই তার প্রবণতা চোখে পড়ে শুধু ইতিহাস নিয়ে তিনি তৃত্ত নন, ইতিহাসবিহীন কল্পনাও সীর পক্ষে অশ্বস্তিদাঁয়ক-_তাই ইতিহাসের সেতু ধরে রোম্যা্টিক কল্পনার জগতে খুব সহজেই তাঁর উত্তরণ তিনি ইতিহাসের সংযোগটুকু হারাতে চান না অথচ কল্পনার বিমানে আকাশ ভ্রমণের ইচ্ছাটুকু পুরোমাত্রায় আছে। পুধেই বলেছি এর হেতু;

৩৩. [, 5. 5, 0 171155, [37998] [0156106 072610615, 11002171), 1012, 2৯. 33.

৪৬৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল সাহিত্যে হ্বদেশপ্রেম

আদর্শ প্রচারের প্রয়োজনটুকু নাট্যকার অস্বীকার করতে পারেন না তাই নিছক কাল্পনিক বস্ত থেকে আদর্শবাদ নিফাঁশনে তাঁর ছিধা। তাই তীর প্রত্যেকটি নাটকে একই সঙ্গে মৌলিক এঁতিহাসিক ] নাঁট্যকারের স্বাধীনতা পুরোমাত্রায় ব্যবহার করেও মোটামুটি ইতিহাসের সঙ্গে তাল ফেলে চলার চেষ্টাই তাঁর বৈশিষ্ট্য | ্বপ্রময়ী নাটকেও এসব লক্ষণ বর্তমান থাকবে এটাই সঙ্গত।

নাটকেও অন্ভাগ্ঘ নাটকের মত স্বদেশপ্রাণ একটি আদর্শ নায়কের পরিকল্পন। করেছেন নাট্যকার স্বদেশই ধার জীবনের আরাধ্য বস্ত, ব্যত্তিগত স্বার্থবোধকে তুচ্ছ মনে করার মত নির্ভীকতা দৃঢ়তা যে চরিত্রকে লোকচক্ষে মহৎ করে তোলে। শোভীসিংহ চরিত্রে একই সঙ্গে নাট্যকার এই দৃঢ়তা স্বাদেশিকতা দেখিয়েছেন। চরিত্রের এতিহাসিক ভিত্তি সম্পর্কে আলোচনা করলেও দেখা যাবে নাট্যকারের এই চরিব্র কল্পনা মোটামুটি বাস্তব সত্যকেই অন্থসরণ করছিল। ইতিহাসেও চরিত্রটি এতিহাসিকের। এভাবে দেখিয়েছেন | সামান্য জমিদার হয়েও উচ্চাশা! ছিল তাঁর চরিত্রের যূলে-_যাঁর সাহায্যে অতকিত আক্রমণে পার্্ববর্তী অঞ্চলের রাঁজশত্তিকে- পরাজিত করে 'এমন কি আফগান সর্দার রহিম খাঁর সাহাধ্য নিয়েও সম্মিলিতভাবে মোঘলশক্তিকে এদেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ণর স্বপ্ন দেখছিলেন শোভা সিংহ। তারঃ অত্যাচার লুঠনঅভিযাঁনের কবল থেকে বিদেশী উপনিবেশগুলোও রেহাই পায়নি প্রসঙ্গে একটি তথ্যপূর্ণ প্রবস্ধগ্রন্থের উল্লেখ কর! প্রয়োজন শ্রীচারুচন্দ্র রায় শোঁভাসিংহের বিদ্রোহ" গ্রন্থে সে বিষয়ে 'আলোকপাত করেছেন তিনি একটি" কৌতৃহলজনক সত্য ঘটন| জানিয়েছেন,

“শোভা সিংহের বিদ্রোহের ছুতায় 014 চ০:৮ ৬/111180) রচনা আরম্ভ হইয়াছিল একৃথা। সত্য ।”৩৪-_কাঁজেই শোভা সিংহের অসমসাহসিকতা৷ বীরত্ব ঘে সম্পূর্ণ সত্য বিষয়টি অস্বীকার করার কোনে উপায় নেই অথচ নাটকীয় উপাদানও এই চরিত্রটিতে যথেষ্ট রয়েছে ব্যাপারে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের অন্থান্ত নাটকের সঙ্গে নাটকের পার্থক্য স্বীকার করতেই হয়। ইতিপূর্বে তিনি কাল্পনিকতাসর্বস্ব ওই ইতিহাসগ্ধী যে শ্বদেশপ্রেমের নাটক রচন। করেছিলেন তার সঙ্গে শ্বপ্নময়ী নাটকের” মূল ঘটন। চরিত্রের যোগ অল্প মোটামুটি ইতিহাসের নির্দেশ অমান্য না করে নাটক রচনার এমন প্রয়াস এই নাটকেই প্রথম দেখি বর্ধমান রাজাকে পরাজিত করে সৈষ্ সংগ্রহের যে অবিরত চেষ্টা তিনি করেছিলেন তাঁতে তার আগামী দিনের উদ্দেশ্যটিই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বিদেশী মোথলর। যে শত্রু, ধারণা ধার ছিল তিনি

৩০ চারুচন্্র রায়, শোভাসিংহের বিদ্রোহ, ১৯২২

নাটক ৪৬৯

নিশ্চই স্বদেশ সচেতন ছিলেন। তবে নাট্যকার শোঁভা নিংহকে স্বদেশপ্রাপরপেই চিত্রিত করার স্বাধীনতাটুকু গ্রহণ করেছিলেন প্রতিহাসিক যছুনাথ সরকার বলেছেন,

508. 91061 2 22012802002 0100062-82149 10 0551 20251- 00220025 530-01515102 06 10140820010, 6001 60 91019911755 1913 12150909815, ৪86০040 0 602 0014016 0 1695, 135) 1031072 220) চ0900261 70260, আ1)0 15210 032 ০০9০0080000 00০ 12550582 ০0119001018 96 00০ 9013 ৫1500106, 9290939৩ 05 006210 আ160 902311 £0:০৫, 016 ২5 2০66০৪06327 91512 (0. 020. 16935). নও 715 ৪04 020516519 ৩০ 52908123 05 930%৪, 9100, আ1১0 6901 0০ 0০আও ০0: 300 ৪.0, 10216 আঅ10 811 21306 1391575 0100209- ভি/100 00৩ ৬৪56 ১৪16 0005 £81750 02 16951 1634617 £05৪015 10001528920 1015 21005, (009৮ €06 610০ ০01 0218) 270 02692 60 01003252 200 09০০0৫0500৪ 10615010001076 ০0010” ০৩৫

মোটামুটি ইতিহাস নাট্যকার অন্ুনরণ করেছিলেন। পররাজ্য গ্রাসের দ্বার আঁগ্মণক্তির প্রতিষ্ঠ করতে গেলেও নিজের দেশের স্বার্থচিন্তাই সবার আগে আসে শোভ! সিংহ ক্ষুদ্র জমিদার হয়েও বৃহত্বঙ্গ উদ্ধারের স্বপ্ন দেখেছিলেন, নাট্যকার এই স্বপ্রের পেছনে স্বদেশপ্রেমের শক্তি কল্পন! করেছেন

ন্বপ্রময়ী” নাটকের প্রথমেই শোভা সিংহের স্বদেশপ্রেম প্রচার করেছেন নাট্যকার 1

*__ আমি দেশের জন্য-__মাতৃভূমির জন্ত--ধর্ষের জন্য-_-আর সকল ক্লেগ_গকল ঘন্্রণীকেই আঁলিগন কচ্চি ? কিন্তৃ-_কিন্ত-_দেবতার ভান করে লোকের শ্রদ্ধা আকর্ষণ করা-_ছম্মবেশ ক'রে লোকদের প্রতারণা করা-_ওঃ কি জঘন্য-_কি জঘন্য__”৩৬.

[ ১ম অঙ্ক, ১মগর্ভাঙ্ক

শৌভাঁসিংহের দেশোদ্বারের পরিকল্পনা, স্বদেশপ্রাণতা মানবিকতার বন্দে নাটকের প্রথম থেকেই চরিত্রটি লক্ষ্যীয় হয়ে উঠেছে। সপ্তদশ শতাবীর যোধল অধ্যুষিত বাংলার কোন জমিদার দেশব্যাপী বিদ্রোহ জাগাবার চেষ্টা করেছিলেন- ন)ট্যকাঁর যদি নাটকে সে সংবাঁদটুকুও প্রচার করার দায়িত্ব নিয়ে থাকেন তবে তাঁকে অভিনন্দন জানাতেই হয়। দেশবোধে অন্থপ্রাণিত অতীত ইতিহালনুন্ধ সে

৩৫, 15001720) 52162, [115:019 ০: 3211851 (৬০1. 11) [2০০5 1048, ৮৮, 505, ৩৬, জেযাতিরিশ্রনাথ গন্থাবলী ৫ম খড। বনগুমতী সাহিত্য মন্দির, কলিকাত|।

৪৭৩ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশাপ্রম

বণ ঠি

যুগের বান্ধাঁলী বোধহয় ধরণের চরিত্র সামনে রেখেই দেশোদ্ধারের কক্বল্প গ্রহণ করতে চাইছিল। এই অনুপ্রেরণা ইতিহীসই সঞ্চার করতে পারে-_আঁবার সে ইতিহাসে যদি একাত্ত আমাদেরই সংবাদ থাকে তবে তার প্রতি আকর্ষণ দুর্বার হওয়াই স্বাভাবিক স্বদেশপ্রেমী নাট্যকার হিসেবে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ সে যুগের এই বক্তব্যটি হুদয়ঙগম করেছিলেন বলেই বাংলার ইতিহাসে নাটকীয় চরিব্র অন্থসন্ধন করেছিলেন

*ন্বপ্রময়ী নাটকের” প্রথমেই স্থরজমল শুভ লিংহের পরিবলনা অসম্ভব হতে, পারে কিন্ত দেশোদ্ধারের উৎসাহ নিয়ে নিদ্্ি্ন হয়ে বসে থাঁকাঁটা আরও বেশী অস্বাভাবিক হতো৷ বোধ হয়। সামান্য একজন জমিদার যখন বাহুবলে দেশোদ্বারে অক্ষম তখন তাঁকে কৌশল অবলম্বন করেই কার্যোদ্বার করতে হবে। অবশ্য নাটকের দিক দেখে এমন পরিকল্পনার মূলে নাটকীয়তা স্ৃজ"নর চেষ্টাটিই চোখে পড়ে এমন সময়েই আফগান সর্দার রহিম খাঁন বিদ্রোহী শুভসিংহের সঙ্গে যোগদান করেছে। ঘটনাটিতেও ইতিহাসের সমর্থন আছে। এতিহাসিক যে সংবাদ দিচ্ছেন তা এই,__

[919150 [010917, 01051580617 06 606 071589, 4১058199, 100060. 10170 212৫ €169015 100159560. 1)15 [01]121চ 560050)-৩5

কিন্তু ইতিহাস যে সংবাদ দেয়নি রহিম খাঁ সম্পর্কে নাট্যকার তা কল্পনা করে নিয়েছেন স্থযোগসন্ধানী রহিম খাঁর উদ্দেশ্বটি নাটকের প্রথমেই নাট্যকার ব্যক্ত করছেন। হিন্দু মুসলমানের সম্মিলিত অভিযানের ফলাফল যাই হোঁক না কেন, রহিম খাঁন যে স্বার্থসিদ্ধির জগ্য শোভা সিংহের আশ্রয় নিয়েছিলেন সত্যটি প্রথমেই ব্যক্ত করেছেন নাট্যকার শোভাসিংহের আদর্শের স্থযোগেই রহিম খান বন্ধুত্বের ভান করেছিল,--নাট্যকার এভাবেই সে যুগের রাজনীতির জটিল ঘটনাগুলোৌকে ব্যাখ্য' দানের চেষ্টা করেছেন এবং ব্যাখ্যাটি খুব স্বাভাবিক বলেই মনে হয়েছে রহিয খানের বক্তব্য,

“বেশ এদের বুঝিয়ে দিয়েছি- হিন্দুদের বোঁঝাঁতে কতক্ষণ 1 এই বিদ্রোহে যদি মোঘল রাজত্ব যায়, তখন এই তৃণভোজী হিন্দুদের জয় করতে কতক্ষণ ?

[ ১ম অঙ্ক, ১ম গর্ভাঙ্ক ]

নিক নায়ক শুভসিংহ রহিম খান সম্মিলিতভাবে বন্ধমানরাজ কৃষ্ণরামের .

বিপক্ষতা করেছে শান্ত্রালোচনামগ্র কষ্ণরাম বিপদ সংবাদ পেয়েও নীরব ) হাশ্যকর

এ, 15010805981 1715001% 0£867821 (91, 17) 08065519485 3937

নাটক ৪৭৯

ব্যাপার বলে'তিনি উপেক্ষা! করেন ঘটন1টিকে, “সম্রাটের বিক্দ্ধে; ক্ষুপ্র একজন তালুকদার দুর্দান্ত প্রতাপ সম্রাট আরঙ্গজীবের বিরুদ্ধে ; কি হাশ্তকার ব্যাপার! তাহলে নিশ্চিন্ত হয়ে আমি শান্্রীলোচনা করতে পারি ।” [ ১ম অঙ্ক, ২য় গর্ভাঙ্ক ] নাট্যকারকৃষ্ণরামের সংলাপেনাট্যরস সৃজন করছিলেন ; কিন্তু বক্তব্যের গভীরতা অনুসন্ধান করলে আমরা যে সত্যটি লাভ করব তার মূল) বড় কম নয়। সেযুগে দীসমনোবৃত্তিতে অভ্যস্ত জমিদারদের চরিত্রটিও যেন এখানে মূর্ত হতে দেখছি। শুভসিংহ যে সামান্ত তালুকদার হয়েও চেষ্টা করতে পারে তা কৃষ্ধরাম কল্পনাও করতে পারেননি দেশীত্বোধের অভাবে চরিত্রটি আমাদের সহানুভূতি হারিয়েছে অথচ নাট্যকার বাংলাদেশের তৎকালীন ইতিহাসের স্বরূপ চিনিয়ে দিতে পেরেছেন

নাটকে শুভসিংহের অমলিন দেশচেতনার প্রকাশ সর্বত্র শুধু দেশপ্রেমিক হিসেবে নয়, উদার মানবতার আদর্শটিও তাঁর চরিত্রে বর্তমান। নায়কোচিত গুণে বিস্ৃষিত চরিত্রটিকে শ্রদ্ধেয় করে তুলেছেন নাট্যকার হাধীন রাজ্যস্থাপনের কল্পনা সচেতন মানবিকতা শুভসিংহের সংলাপে মূর্ত হয়ে উঠেছে )--

"মাতঃ জন্মভূমি, আমি যা যথার্থ ছিলেম, তা তোমার কাছে আমি বলিদান দিয়েছি, আমি এখন আর সে শুভসিংহ নই, আমি আর একজন | মা, তোমার শতকোটি সন্তানের মধ্যে আমি কে? আমি আপনার অবমাননা করে তোম!কে অবমাননার হাত হতে যদি মুক্ত করতে পারি, আমি আপনাকে হীন ক'রে তোমাকে যদ্দি হীনতা হ'তে উদ্ধার করতে পারি, তবে আমি কেন তা না করব ?”

[ ১ম অঙ্ক, ৪র্থ গর্ভাঙ্ক ]

নাট্যকার এই উক্তির অন্তরালে যে আদর্শই প্রচার করেছেন তাতে সন্দেহ কোথায়? দেশজননীকে অবমাননার হাত থেকে মুক্ত করার জন্যই শুভসিংহ ছন্মবেশ ধারণ করেছেন. উদ্দেশ্যসাঁধন ছাড়া অন্য কোন দ্ুরভিসন্ি তার ছিল না। দেশের জন্য আত্মবমাননাঁও বরণ করা সম্ভব,-এটি নিছক সেযুগীয় আদর্শবাদেরই কথ]। উপরভ্ত দেশপ্রেমিকের বহু সংশয়ের সমাধান হয়েছে ভাবটির মাধ্যমে | বিপ্নবাত্মক আদর্শবাঁদের শুরু যেখানে নাট্যকার প্রায় ততদূর পর্যন্ত আমাদের চিন্তাধারাকে চালিত করেছেন দেশের জন্যই আত্মাবমাননা করেছে শুভসিংহ। দেশের স্বার্থ নিজের মান-অপমানের চেয়েও যে মূল্যবান- এই স্প্ ইন্জিত ভবিষ্যতের বিপ্লবীদের বছতর্কের অবসান ঘটাতে পারে জ্যোতিরিন্ত্রনাথ এখানে গভীরতর দেশোপলব্ধির বিশুদ্ধ মার্গে আরোহণ করেছেন। অধ্যাক্সসাধনায় সাধক যেমন নিজের মাঁন-অপমান, লাঁভাঁলাতকে সঙ্গ্পণ করেন ভগবানের চরণে, দেশপ্রেমিকও সব তুচ্ছতাকে সমর্পণ করেছে দেশের স্বার্থে। এই পথটিই ভবিষ্যতের দেশপ্রেমিকের। বেছে নিয়েছিলেন

৪৭২ উনবিংশ শতাববীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশ প্রেষ

কিন্ত দেশপ্রেমের গভীরতা! ন। থাঁকলে এই আচরণকে ভয়াবহ নীতিবিরোধী বলে যনে করতে বাধা থাকে না মৌলিক দেশপ্রেমাত্বক নাটক রচনার শেষপর্ষায়ে এসে নাট্যকার এই ধরণের জটিল দেশচিস্তার স্তরগুলি বিঙ্লেষণ করেছেন 'নিপুণভাবে

শুভসিংহ দেশের জন্য ছদ্মবেশ ধারণ করেছে,_কিস্ত এই ছম্মবেশ ধখন সরল- নিষ্পাপ স্বপ্রময়ীর মনে ভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে তখনই মর্ষে মর্মে বেদনাবোধ করেছে সে। একদিকে মানসিক অনুভূতি অন্যদিকে স্বদেশের স্বার্থ। যানিনানীয় অস্ায় শুভসিংহ সমগ্র অন্তর থেকে তার প্রতিবাদ করেছেন স্বপ্রময়ী দেবতারূপে পৃজার্চনা করার আয়োজন করেছে, শুভসিংহ মরমে মরে গেছেন দেশের সঙ্গে আত্মার এই ভীব্রবিরোধ চরিত্রটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে, দেশপ্রেমিক রূপেও শুভসিংহ সার্ক হয়েছে, মানুষ হিসেবে তার সার্থকতা আরও বেশী করে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। শুভসিংহ চরিত্রে নিখু'ত একটি বিচাঁরশীল-যুক্তিপ্রাঁণ স্বদেশবাঁসীকে অনুসন্ধান করেছেন নাট্যকার ক্ষুদ্র তালুকদার হয়ে যে সমগ্র দেশের স্বাধীনতা বিদেশীর হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে চায়,_সে বাতুল চরিত্রের সারিতে স্থান পেত অনায়াসে, নিছক আঁদর্শবাদের আন্তরিকতায় শুভসিংহ শ্রদ্ধার আঁসনে উপবেশন করেছে শুভসিংহ্র দেশপ্রেম ব্যক্তিমনের ঘন্দে নাটকটি আলোড়িত হয়েছে দেশপ্রেমিকের জীবনেও ধে উচ্চাঙ্গের নাটকীয় ছন্দ থাকতে পারে,_-এ নাটকটি না পেলে সে তথ্য আমাদের অজানা থেকে যেতো তাই সে যুগের পটভূমিকাঁয় জ্যোঁতিরিন্্রনাথের এই নাটকটিকে মননশীল সৃষ্টি বলেই অভিনন্দিত করা হয়

শুভসিংহের অন্তঘ্বন্দের ঘনীভূত রূপ প্রত্যক্ষ করি যখন সরলা নায়িকা স্বগ্নময়ীকে প্রেমিকারূপে আবিষ্কার করেছে সে। কিন্ত কোন ভাবেই আত্মপ্রকাশ যখন অসম্ভব তখন মহৎ আদর্শের দ্বার। স্বপ্রময়ীকে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করেছে সে। স্বপ্রময়ীকে লাভ করার স্বাভাবিক কামনাকে পবিত্র দেশপ্রেমে রূপান্তরিত করেছে শুভসিংহ। যদিও ব্যাপারটি যথেষ্ঠ অবাস্তব, নাট্যকার বাস্তবরূপেই তা দেখানোর চেষ্টা করে গেছেন। শুভসিংহ মানসিক চাঞ্চল্য অবদমন করেছে দেশপ্রেমের আবরণে | তার উক্ভিটিও তদনুসারী,-_

“আমি সেই বিশ্বস্তা সরলা বালাকে বুঝিয়ে বলব যে, দেশই আমাদের আরাধ্য জননী, তিনি পাথিব পিতা হতে উচ্চ, মাত! হতে শ্রেষ্ঠ, স্বর্গ হতেও গরীয়সী 1”

[ ২য় অঙ্ক, চতুর্থ গর্ভাঙ্ক ]

এই আদর্শবাদের কোথাও ছলনা! নেই, অতিশয়োক্তি নেই, শুভলিংহ তাঁর

জীবনের সব ্বপ্নকেই দেশত্বপ্রে রূপান্তরিত করতে চেয়েছেন। আপাততঃ তার

নাটক ৪৭৩

উদ্দেশ্য সাধনের পথে কোন বিদ্ব আসতে দেওয়া মানেই তার সব আদর্শের মূলে আধাত কর! বর্ধমানের কোষাগারের প্রতিই তার লোভ, যেন তেন উপায়ে সেই অর্থবিত্ত সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যটি সফল করে তুলতে হবে। রহিম খাঁনের সঙ্গে ঘুক্তভাবে গুভসিংহ শুধু সেই উপায়টিই চিন্তা করেন। তবু রাজকুমারী স্বপ্রময়ীর পবিব্ররূপে মুগ্ধ নী হয়ে পারেননি শুভসিংহ। শুভসিংহ চরিত্রটি এখানেই শুধু নাট্যকারের আদর্শবাদের বাহক না হয়ে জীবন্ত মানুষের বিগ্রহরূপে দেখ দিয়েছে দেশপ্রেমের সঙ্গে ব্যক্তিপ্রেমের আবির্ভীব শুভসিংহের জীবনে জটিলতা সৃষ্টি করেছে যেখানে, সে অংশট্ুকুই নাটকের সর্বাপেক্ষা হৃদ অংশ। শুভসিংহের মানসিক চাঞ্চল্যকে স্রজমল ব্যাখ্যা করেছে মূটের মতন; স্বপ্নময়ীকে দেশপ্রেমে দীক্ষা দিতে গিয়ে শুভসিংহ তাঁকে তাঁর মাঁনসীর আসনেই প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে গুঢ় সত্যটি ন1 বুঝেই স্থরজমল বলেছে, দেশ, মাতৃভূমি, এই সকল অশরীরী মহাঁন ভাব কি কোন স্ত্রীলোক কখন মনে ধাঁরণা করতে পারে ? [২য় অঙ্ক, ৪র্থ গর্ভাঙ্ক ] তবু দেখছি, শুভসিংহ তীর স্বাদেশিকতার আদর্শে দীক্ষা দেবার জন্য স্বপ্নময়ীকে দেশমাতৃকা সম্বন্ধে ধারণা জাগাঁতে চেষ্টা করেছেন | দেশজননীর মহিমা বোঝানোর চেষ্টাটি নাট্যকারের দিক থেকে স্বাভাবিক হলেও নাটকের দিক থেকে নয়। চিতোয়াবর্দার তালুকদার শোৌভাসিংহ শুভসিংহরূপে নাটকে আবিভূতি হয়ে নাটকীয় চরিত্র কিংবা নাঁট্যকারের কল্পিত আদর্শ চরিত্ররূপে আত্মপ্রকাশ করুন ক্ষতি নেই কিন্ত তিনিই আবার পয়ারে বিশুদ্ধ দেশপ্রেমের কবিতা রচনা করছেন, উদাতস্বরে তা আবৃত্তি করে সমগ্র দর্শকের হাততালি কুড়োচ্ছেন,_-এ ধরণের কল্পনাগত চমংকারিত্ব সর্বত্রই আঁছে বটে কিন্তু নাটকের বাস্তবতা এতে ক্ষুপ্ন হয়েছে যিনিই দেশপ্রেমিক, তিনিই কৃটকৌশলী, তিনিই কবি, একাধারে ধরণের বিপরীত স্বভাঁবধর্ম একটি চরিত্রে আরোপ করার জন্যই প্রশ্নটি দেখা দিয়েছে তবে বকব্যের সমর্থনে একটি কথা! বলা যায় ;__বাঁস্তবতা থেকে আদর্শগত সত্য প্রচারের দিকেই স্বদেশপ্রেমী নাট্যকারের লক্ষ্য ছিল বলেই ক্রটিও সমথিত অংশ বলে পরিগণিত হবে। দেশপ্রেমপ্রচার যেখানে মুখ্য, আদর্শ দেশপ্রেমিক সেখানে স্বদেশগ্রীতি জাগানোর অন্ত বিশুদ্ধ স্বদেশী-কবিতা আবৃত্তি করতেই পাঁরেন। শুভসিংহের মুখে দীর্ঘ কবিতাটি যোজনা করে নাট্যকার বোধ করি ধরণের মনোভাবটিই প্রকাশ করেছেন। ্বপ্নমন্নীকে ন্বপ্রনার়িকারপে কল্পনা করেই শুভসিংহ আত্মদহনে দগ্ধ হয়, আঁবাঁর দেশের স্বার্থে ছলনার পথটিও সে পরিত্যাগ করতে পারে না। হৃতরাং এই আদর্শে স্বপ্রয়ীকেও দীক্ষা দেবার ৃযোগটুকু হারাতে চায় না শুভসিংহ। এখানে

উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

নারক নয় খয়ং নাট্যরচরিতাই আপন যুক্তি কবিত্ব চরিত্রটিতে আরোপ দীর্ঘ কবিতায় শুভসিংহ স্বদেশমহিমা কীর্তন করেছে,__

কে তোমারে বক্ষে করে করেছে পোষণ ? কে তোরে অচল দ্মেহে বক্ষে ধরে আছে?

রা কী কঃ

কে তোরে পোঁহালে নিশি, প্রভাত হইলে

পাধীদের মিটতম গান শুনাইয়। শুভ্রতম শান্ততম উষার আলোকে ধীরে ধীরে ঘুম তোর দেন ভাঙ্গায়?

নাট্যকারের কবিত্বই স্বদেশী কবিভাটিকে এমন ভাবরস সমৃদ্ধ করেছে শুভসিংহ নাগ্মিকা স্বপ্রময়ীর সামনে আপন ভাবাঁবেগটি কাব্যাকারে প্রকাশ করে যথার্থ রোম্যার্টিক পরিবেশ সজনে সক্ষম হয়েছে দেবতার ছদ্মবেশে মুগ্ধা নায়িকার সামনে এই কবিত্বপূর্ণ সংলাপ আবৃত্তির যথেষ্ট যুক্তি আছে শুভসিংহ দেশের বর্তমান

অবস্থাটিও বর্ণনা করতে ভোলেনি,-_- সেই মাতা! স্সেহুময়ী জননী তোদের দেখ দেখ আজি তার একি ছুর্দশা, গা চি বিদেশী মোঘল যত দলে দলে আসি দেখ চেয়ে দেখ তারে করে অপমান

দেখ তোর মায়েরে করিছে পদাঁঘাত

স্প্নময়ীকে দেশের স্বার্থে আত্মনিয়োগের নির্দেশ দেয় শুভসিংহ | দেবতার ছল্মবেশে এই ভাবাবেগপূর্ণ উচ্দ্ুসিত সংলাপ বেশ কার্যকরীও হয়েছে। ন্বপ্রময়ীকে

পথ চিনিয়ে দেন শুভসিংহ,- সপিবি দেশের কার্ষে কুমারী জীবন অমর জীবন পাবি তার বিনিময়ে রঃ | গর গা ভাই বল বন্ধু বল, পুত্র পিতাবল মাতৃভূমি চেয়ে কেহ নহে আপনার

উনবিংশ শতাব্দীর পটভূমিকাঁয় নাটযকারের বকব্যের যে একটি সর্বজনীন আবেদন ছিল সে কথা অকপটে মানতেই হয়। দেশের সঙ্গে মান্ছষের নিবিড়

ফোঁগাষোগটি যে কত গভীর, নাট্যকার তাও বোঝাঁবার চেষ্টা করেছেন

সে ধুগের

নাটক ওরা

উত্তেজনায় কবিতাংশটি কতখানি প্রেরণা দাঁন করেছিল বুঝে নিভে অস্থবিধা হয় না। পদদলিত দেশের চিত্রটি নিখুত করে ।পরিবেশন করাই যেখানে নাট্যকারের: একমাত্র উদ্দেশ্য,_দেশমহিমী প্রচার সেখানে তীত্ররূপ নেবে এটাই স্বাভাবিক তাই শুভসিংহ পিতা-পুত্র-ভাই-বন্ধুর চেয়ে প্রিয় বলে বর্ণনা করেন মাতৃভূমিকে | এই: উচ্ছৃসিত উপলব্ধি শুধু স্বাধীনতাকাজ্ষী একটি পরাধীন জাতির পক্ষেই সম্ভব,_-আর: এই আবেগায়িত উচ্ছাস সে যুগের নাটকেরই রসোতীর্ণ সংলাপ বলে পরিগণিত হতে পারে। শুভসিংহ স্বপ্রময়ীকে দেশমহিম! সম্বন্ধে সচেতন করেছে এবং ভবিষ্যতে দেশের স্বার্থেই. পিতাকে পরিত্যাগের যুক্তি দেখিয়েছে অবশ্য স্বপ্রময়ীর তন্ময়তা মুগ্ধতার অবসরেই নাট্যকার শুভসিংহকে স্থযৌগ দান করেছেন দেবতার ছম্মবেশে এই, পরামর্শ দিয়েছিল শুভসিংহ,_ সে শক্র তোমার পিতা, যবনে যেমন আপনার প্রভুবলে করিছে বরণ মায়ের কোমল হস্তে শৃঙ্খল আটিতে যে জন মোঘল সাথে করিয়াছে যোগ মায়েরে যে বিদেশীরা করে অপমান, তাদের যে হাসিমুখে করে সমাদর, সেজন তোমার পিতা শক্র সে তোমার এই অকপট সত্যভাষণের সুযোগ ছদ্মবেশী শুভসিংহ পেয়েছিল, নাট্যকার স্বাভাবিক চরিত্রের মুখে এই সংলাঁপ দেননি দেশপ্রেমিক পুত্র দেশদ্রোহী পিতাকে পরিত্যাগ করেছে ঘটনাঁরও অজস্র নজির আছে। প্রিয়জন দেশদ্রোহী হলে তাকেও ত্যাগ করার অমোঘ নির্দেশ আসবে একদিন, নাট্যকার যেন তা বুঝেছিলেন। ্বগ্রময়ীকে শুভসিংহ ভাঁবীযুগের আদর্শে দীক্ষাদান করতে চেয়েছে মাত্র। নাট্যকার অন্ত নাটকেও দেশপ্রেম সম্পর্কে কতকগুলো আদর্শ প্রচারের চেষ্টা করেছেন। প্রথম নাটকেই স্ত্রী পুরুষের সম্মিলিত সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন নাটকেও স্ত্রী তৃম্িকাকেই প্রাধান্ত দিয়েছেন তিনি বর্ধমানরাজার পুক্রটিকে' নির্বাচন না করে কণ্ঠাঁটিকেই দেশাদর্শে দীক্ষা দেবার নাটকীয় পরিস্থিতি সৃজন করেছেন নাট্যকার নাট্যকার স্ত্রী পুরুষ নিবিশেষে দেশসাধনার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন। এই আদর্শটিকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলার চেষ্টাই নাটকে: দেখা যাচ্ছে। সঙ্গীতের সাহায্যে দেশপ্রেম উদ্বোধনের জন্য জ্যোতিরিক্ত্নাঁথ অর্থপূর্ণ স্বদেশীগানও,

৪৭১ উনবিংশ শতাব্বীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেষ

যোজনা! করেছিলেন সঙ্গীতধ্বনি সে যুগের নরনারীর প্রাণে ধ্বনিত হোক, এই ছিল স্বদেশপ্রাণ নাট্যকারের গোপন বাঁসনা সঙ্গীতটির মর্মকথ! জনচিত্তে শক্ষিসঞচার করে যেন,_ তোমারি দুঃখে কাদিব মাতা, তোমারি ছঃখে কাদাব ; তোমারি তরে রেখেছি প্রাণ, তোমারি তরে ত্যজিব। সকল ছংখ সহিব হুখে তোমারি মুখ চাহিয়ে এই ভাবেই স্বপ্রময়ীর অন্তরে দেশপ্রেমাকাজ্ষা জাগিয়ে তুললেন শুভসিংহ। যদিও 'সপ্তদশ শতাব্দীর তালুকদার শুভসিংহের জীবনকথাই নাটকে পরিবেশন কর! হয়েছে তরু, তাতে সপ্তদশ শতাব্দীর রাজনৈতিক চেতনার প্রতিফলন কতটুকুই বা পড়েছে !__কিস্তু উনবিংশ শতকীয় রাঁজনৈতিক চিন্তাধারারই পূর্ণ প্রতিফলন আমর! নাটকে পাই। সঙ্গীতের মধ্যে যে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে, আত্মজাগরণের "যে আশার বাদী শোনানে। হচ্ছে, বস্ততপক্ষে সে বাণী নাট্যকারের সমসাময়িক 'দেশচেতনার | নাট্যকার সেযুগের দেশচেতনাকে অভিনন্গন জানিয়েছেন এভাবে, -- বন্ধন শৃঙ্খলে করিতে সম্মান ভারত জাগিয়! উঠেছে আজি ! গা গা গা হারে হতভাগ্য ভারত ভূমি কে এই ঘোর কলঙ্কের হার পরিবারে আজি করি অলঙ্কার গৌরবে মাতিয়! উঠেছে সবে ? ভারতের নবজাঁগরণলগ্নে নাট্যকার স্বকীয় উপলদ্ধিকেই নাটকে প্রকাশ করেছেন স্উনবিংশ শতান্দীতেই ভারতের নবজীগরণপর্ব শুরু-_-এর আগেও বন্ধনকে শৃঙ্খলরূপে কলঙ্করূপে অনুভব করার কোন সচেতনতাই আমাদের ছিল না কিন্তু নাট্যকার 'নবজীগ্রত ভারতবাঁসীর আকুলতাটিই ষেন প্রত্যক্ষ করেছিলেন দেশের জন্ত নির্ভীক- ভাবে আত্মদানের মরণপণ করতেও শুভসিংহ ভয় পান না। সৈগ্দের উৎসাহদান করেন শুভসিংহ,- আহক সহত্র বাঁধা, মাত মুখ উজ্জবলিবি কি ভয় মরখে। নিছক দেশপ্রে্স প্রচার ছাড়া এসব অংশের নাটকীয় তাঁৎপর্যই বা কোথায়? বর্ধমান রাজান্তঃপুরের জটিল অংশগুলির কল্পন] করে যথাসাধ্য বাস্তবরস পরিবেশনের

বাটক | ৪৭

চেষ্টা করেছেন নাট্যকার,_কিন্তু শুভসিংহের অনলল দেশসাধনার প্রসঙ্গটিই সব বক্তব্য ছাপিয়ে উঠেছে। শৌভাসিংহের ছলনা চাতুরী, বর্ধমান কোষাগার লুঠনের বিচিত্র পরিকল্পনার মাঝখাঁনেও স্বদেশানুভূতির তীব্রতাটুক একটি বিশেষ রসসঞ্চার করে শোভালিংহের সব অপরাধই যেন ক্ষমার্থ হয়ে ওঠে। বর্ধমান রাজপরিবারের ভাগ্যপরিবর্তনের যূলে এই চক্রান্তকারী ব্যক্তিটির সমস্ত পাপ দেশপ্রেমের অগ্নিতে শুদ্ধ হয়ে যায় এদিক থেকে নাট্যকারের পরিকল্পনাকে প্রশংস! না করে পারা যায় না। দেশপ্রেমের ধারণাটি এমন মহিমময় রূপে ব্যাখ্যা করেছেন বলেই দেশপ্রেমিকের অপরাধও দর্শকের কাছে প্রশংসনীয় গুণ বলে মনে হয়। শুভসিংহের আদর্শে চালিত দর্শক শুধু মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেশপ্রেমিকের উজ্জবলযৃতির ধ্যান করে। শেষ মুহূর্তে শুভনিংহ যখন আত্মাহ্ুশোচনায় মৃত্যু বরণ করেছে, সেও যেন তার মহত্বকেই নতুন করে চিনিয়ে দিয় ছলনা করেই শুভসিংহ স্বগ্রময়ীর সর্বনাশ করেছে, এই অন্ুশৌচনাই তার মৃত্যুর কারণ, _কিন্ত মৃত্যুমুহূর্তেও নাট্যকার শুভসিংহের দেশপ্রাণতার প্রসঙ্গটিই তুলে ধরেছেন

*আমা হতে জননীর কোন কাঁজ হল না, আমার জীবনের সংকল্প বিফল হল-- আমার সহচরেরাঁও আমার শক্র হয়ে ঈীড়াল-.-এ অপদার্থ জীবনে আর কি ফল?

[ পঞ্চম অঙ্ক, চতুর্থ গর্ভাঙ্ক ]

নাটকীয় ঘটনার জটিলতা! ভেদ করেও স্বদেশপ্রেমিক শুভনিংহের জীবন কথাই নাটকের মুখ্য কথা হয়ে উঠেছে নাট্যকার শুভসিংহের মহত্ব দেশপ্রেমকে এক করে দেখাবার চেষ্টা করেছিলেন বলেই নাঁটকের শেষাংশে অবাস্তব ঘটন! সমাবেশ করেছেন। ঘটনা যত অচিস্তিত বা অসম্ভব হোক না কেন শুভসিংহের মাহাত্ম্য অন্ধ থাকলেই নাট্যকার নিশ্চিন্ত হন দেশপ্রেমিকের ব্যক্তিজীবন রাষ্টরজজীবনের মহত্ব প্রচারের বাসনাটিই কার্যকরী হয়েছে। প্রসঙ্গে ইতিহাসের ঘটনাটি স্মরণ করলে নাট্যকারের উদ্দেশ্যটি স্পষ্ট হবে

ইতিহাসে শোভাসিংহের বিদ্রোহ সংবাদ আছে,_রাজ্যবিস্তারের সংকল্প কাহিনী আছে, রহিম খানের সঙ্গে চক্রান্তের সংবাদ আছে, বদ্ধমানরাঁজাকে বিতাড়নের প্রসঙ্ আছে এবং স্বাভাবিকভাবে তার মৃত্য প্রসঙ্গটিও বণিত হয়েছে। ইতিহাসের কিংবদস্তীতে শৌভাসিংহের আদর্শের প্রসঙ্গটি গৌপ, তাঁর দেশপ্রেমিকতা [যদি তা থেকে থাঁকেও ] সেখাঁনে উহা থারারই কথা কিন্তু ঘটনা তথ্যগত সত্য অবিকৃত ভাবেই ইতিহাসে মিলছে বিষয়ে 4[315010 82500০27৮এ যে সংবাদ

পাওয়া যাচ্ছে। | 00008560136 ০930৮29 68120 10 3010721) জ৪5 1১০ 12] 1091002128

৪৭৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা-সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

98152126, 06 ৫20517060৫6 036 2212 00100 50010891080 860৮ 2 4501010106006106 000] 20 00০00াডৈ 92001006006 58011601706 1561 01015 105৮,৩৮ শোভাপিংহ সাহসিকা বদ্ধমান রাজকুমারীর হাতেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন-_এই চমকপ্রদ ইতিহাস বজায় রাখলে শোভাসিংহের চরিত্র মাহাত্ম্য ক্ষ হলেও বাস্তবতা নাটকীয়তা একই সঙ্গে বজায় থাকত। সম্ভবতঃ নাট্যকার দেশপ্রেমিক শুভসিংহের চরিত্রটি কলঙ্কমুক্ত রাখার উদ্দেশ্যেই বহু অবাস্তব ঘটনার সমাবেশ করেও শেষ পর্যন্ত তার চারিত্রিক মাহাত্ব্য প্রচারে সক্ষম হয়েছিলেন শুভসিংহের আত্মদানের মহৎ ৃষ্টান্তস্থাপন আঁদর্শপ্রচাঁরের চেষ্টা নাটকের শেষাংশে এমন তীব্র হয়ে উঠেছে যা অন্ত নাটকে দেখা যায় না। দেশপ্রেমিক নায়কের আত্মদানের অনিবার্য কারণগুলি না দেখিয়েও নাট্যকার শুভসিংহের ম্বৃত্যুদৃশ্যটি যোজনা করেছেন। বর্ধমান রাজার শোচনীয় মৃত্যুতে স্বপ্নময়ীর বিচলিত ভওয়ার ঘটনাট সহা করতে পারেনি বলেই শুভসিংহ প্রায়শ্চিত্ত করেছে মৃত্যুবরণ করে। বিবেকদংশনের জালা, _ছলনার গ্লানিতে শুভগিংহ ভেঙ্গে পড়েছিল-_স্ছতরাঁং মানবিক দিক থেকে আত্মহত্যার ইচ্ছা জাগাটা স্বাভাবিক নাট্যকার হয়ত এভাঁবেহ সমাধানের পথ খুঁজেছিলেন। কিন্ত কিছু প্রশ্ন থেকেই যাঁয়। দেশোদ্ধারের স্বপ্ন ধাকে দুর্বার করে তুলেছিল-_নির্ভীকভাবে আদর্শরক্ষ! করেও যিনি একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের পরিচালক ছিলেন, তাঁর পক্ষে রাজকুমারীর ব্যথায় আত্মহননের ইচ্ছা জাগাঁটা কতদুর বাস্তব, সেটাই বিচার্য। নাট্যকার শুভসিংহকে যেভাঁবে চিত্রিত করেছেন, সেই দিক থেকে বিচার করলেও তার এই আচরণকে সমর্থনযোগ্য বলে মনে হয় না স্বপ্রময়ীর প্রতি আকর্ষণ তীব্র হলে আত্মহত্যার ইচ্ছা জাগার ব্যাপারটি আরও জটল হয়ে পড়ে। অথচ এমন “নির্ভীক স্বদেশপ্রাথ বীর শুধু কৃতকর্ষের অন্ুশোচনায় জীবন ত্যাগ করলেন,__ ' দেশোদ্ধারের তীব্রসংকল্প শুধু একট! অর্থহীন পরিকল্পনাহীন পাগলামীতে পরিণত হল-_ একথা ভাবাই যায় না। স্বদেশপ্রেমিক চরিত্রে মানবিক গুণের প্রাচুর্য ঘটিয়ে মানবিকতার মুখরক্ষা করতে গিয়েই বিপদ ঘটেছে এবং শুভসিংহের অদূরদর্শিতা ভাবালুতার রন্ধপথেই যে এই মৃত্যুচিন্তা প্রাধান্ পেয়েছে এতে অস্থবিধা হুচ্ছে এই যে, দেশপ্রেমকেই শেষ পর্যন্ত ভাবালুত1 বলে মনে হয় দেশোদ্ারের কঠিন সংকষ্লা নিহক কল্পনাবিলালে পর্যবসিত হয় বঙ্কিমচন্দ্রের সীতারাম উপন্তাসেও ইতিহাসের ছাঁয়ায় মানবচরিত্রের রহপ্যোঁদঘাটন করতে গিয়ে উপন্যাঁসিক ঠিক ধরণের একটি

৩৮, ৮১ 6০ ৮0৮ 82221 10156210৮ (52566 উপজজা, 192০,

নাটক ৪৭৯ ভাঁবাবেগ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন সীতারামের ব্যর্থতার মূলে ছিল তাঁর অদম্য হৃদয়াবেগ প্রেমে ব্যর্ঘতাবোধ। শুভলিংহের আত্মহত্যার মূলে সে ধরণের ইঙ্গিতটুকু স্পষ্ট হলে দর্শকরা যুক্তি খু'জে পেতেন।

স্বপ্নময়ী নাটকের” সর্বাপেক্ষা অবাস্তব চরিত্রটিই স্বগ্রময়ীর নাটকের শুরু থেকেই এই চরিত্রটির আচরণ এতই অস্বাভাবিক যে গুরুত্বপূর্ণ কোনো মুহূর্তে এই চরিত্রটির আবির্ভাবের হেতু খু'জে পাওয়া! যায় না। অথচ নায়ক শুভসিংহ এই অপরিণতমনা- ছায়াচ্ছন্না নারীকে স্বদেশপ্রেমে দীক্ষা দিয়েছিলেন। ছত্সবেশী যুবককে স্বপ্নময়ী দেবতা বলেই বিশ্বাস করে এসেছে,__শুভসিংহ সেই হযোগেই ্বপ্রময়ীকে দেশচেতনাঁয় দীক্ষিত করলেন। কিন্তু নাটকের কোনে! ঘটনা জটিলতায় স্বপ্নময়ী অংশগ্রহণ করেনি,__এ চরিত্র সম্পর্কে নাট্যকারের সঠিক বক্তব্য যে কী ছিল নাটকে তা খু'জে পাওয়া যায়নি

্বপ্রময়ী চরিত্রের এতিহাসিক ভিত্তি নাট্যকার গ্রহণ করেননি কিন্তু ইতিহাসে বদ্ধমান রাজকগ্ঠার প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব নির্ভীকতার সংবাদটি পরিবেশিত হয়েছে। ইতিহাঁসে যে ঘটনা মিলছে,

“46030100217 10 008006 জাত 206০1000 07902 06 10170011০01 [২919 111517128 1২910715 08108106021 91)0৮৪, 9110£1) ৪5508101960 60 4620) 9০5 00901061010 £111, 100 1766 01017550006 09£5561 1000 136 0৮ 19621, [ 1719601:5 8320891 ৬০17 2394 ]

এই ঘটনাঁকেই নাঁটকীয়ক্ূপে পরিবেশনের যথেষ্ট স্থযোঁগ ছিল 7 নাট্যকারের আদর্শ ইতিহাসের সত্যকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেনি বলেই চরিত্রটির তিহাসিক ব্যক্তিত্ব নাটকে অবলুণ্ত | শুভনিংহ চরিত্রের পরিবর্তনটি আমূল নয় বলে শুভসিংহের দেশভাবনা একটি উজ্জল আদর্শ সঞ্চার করেছে নাটকে, কিন্ত স্বপ্নময়ী প্রায় স্ায়াময়ী হয়ে উঠেছে। স্বদেশপ্রেমের আদর্শ তার চরিত্রের গভীরে প্রতিফলিত হয়নি বলেই ব্যক্তিত্ব বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে চরিত্রটি |

নাঁটকেই জ্যোঁভিরিক্দ্রনাথ দেশোদ্ধারের পরিকল্পনায় সমবেত চেষ্টার প্রয়োজনীয়তাটি উল্লেখ করেছেন | চিতুয়াঁবর্দার তালুকদারের পক্ষে একক চেষ্টায় কিছু করাই সম্ভব ছিল না, এই কারণেই পাঠান সর্দার রহিম খানের সাহায্য নিতে হয়েছে তাঁকে রহিম খানও মোঘলবিদ্বেষী, উদ্দেশ্যের অভিন্তাই এই ছুই পৃথক শক্তিকে একত্রিত করেছিল | কিন্তু রহিম খানের ধূর্ততা নাট্যকারের দৃষ্টি এড়ায়নি। এমন অবস্থায় স্বীয় স্বার্থসিদ্ধির চিন্তাটিও যে গোপন থাঁকে না, - নাট্যকার সে বিষয়ে সচেতন করেছেন তবে শুভসিংহের দেশোদ্ধারের সহায়তায় রহিম খান জোহন।

৪৮০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

যুক্তভাবে সাহায্য করেছে। অন্যদিকে বিশ্বস্ত অনুচর স্রজমল নান! পরামশ দিয়ে শুভসিংহের দেশোদ্ধার পরিকল্পনাকে বাস্তব রূপদানের চেষ্টা করেছে। অগ্যান্ত নাটকে যে সমস্যা শুধু একটি দেশের বা গোষ্ীর,_-্বপ্রময়ী নাটকে” সেটি একাধিক, শক্তিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এতে হিন্দু তালুকদার পাঠান সর্দার সম্মিলিতভাবে উদ্দেশ্যসাধনের ব্রত নিয়েছে! এদিক থেকে নাট্যকার যে ভবিষ্যৎ দেশোদ্ধার প্রচেষ্টায় আভাস দিয়েছিলেন-_তাতে সন্দেহ কোথায়? দেশপ্রেম সেযুগে শুধু ভাঁবাদর্শমাত্র ছিল না৷--তার বান্তবভিত্তিও স্থাপনের চেষ্টা চলছে দেশব্যাপী, এমন মুহূর্তে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ সেই আদর্শ প্রচারেরই চেষ্টা করে গেছেন। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ স্বদেশচেতনাকে নাটকের প্রাণযূলে সঞ্চারিত করে বাংল নাট্য- সাহিত্যে একটি স্বতন্ত্র ধারার প্রবর্তন করলেন-__নাট্যসাহিত্যের এই পর্বের উল্লেখযোগ্য নাট্যকারও তিনি সমসাময়িক যুগচেতনার প্রভাবে এমন ভাবে গ্রভাবিত হতে পেরেছিলেন বলেই তিনি সে যুগীয় বক্তব্যকে ইতিহাসের আধারে স্থাপন করে নাট্যরস স্গ্টির অনলস সাধনা করেছিলেন। অথচ মৌলিক নাটক রচনার সত্যিকারের ক্ষমতা যে তার ছিল,-এতিহাসাশ্রিত অথচ কাল্পনিক কাহিনীসর্বস্ব নাটকগুলিই তার প্রমাঁণ। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ কাহিনীর জটিলতা নাটকের অন্তঘ্বন্ সৃজন মুহূর্তে তার উদ্দেশ্য বিস্বত হননি, দেশপ্রেমের বক্তব্য সেখানেও স্থান পেয়েছে। তাঁর মৌলিক নাটক ছাড়া অন্থাত্র চেষ্টা দেখি না। অগণিত নাটক অনুবাদ করার আশ্চর্য ধৈর্য তার মধ্যে লক্ষ্য করা যায়-- যা মৌলিক সথষ্টির পর্যায়ে পড়বে না কোনদিনই কিন্ত যে চারটি নাটকে নাট্যকারের প্রতিভার সাক্ষাৎ পাই জ্যোতিরিন্দ্রনাঁথ সেখানে আদর্শ প্রচারে উন্মুখ এই স্বাদেশিকতামন্ত্র তার জীবনসাধনার বাণী। এই পবিত্র উপলব্ধি প্রচারে কোন দ্বিধ। থাকার কথ নয় দেশসাধনার স্বপ্ন তাকে আচ্ছন্ন করেনি, আলোকিত করেছিল ভাই দেশপ্রেমের বাণী আমাদের কানে পৌছে দেবার আগ্রহ তাকে হৃজনধর্মঠ নাটক রচনার প্রেরণ দিয়েছিল

তাঁর প্রতিভার পূর্ণ পরিচয় এই চারটি নাটকে ধর] পড়েছিল। কিন্তু নাটকগুলির কাহিনী নির্বাচন, চরিত্র কল্পন। নাটকীয়তা ৃজনের আলোচন। থেকে সত্য স্পষ্ট হয় যে নাট্যকার সমসাময়িক দেশোঁপলব্ধির বাণী প্রচারের চেষ্টা করলেও সে যুগের সামাজিক ঘটন। পরিবেশ থেকে কাহিনী চরিত্র নির্বাচন করেন নি। রোগ্যার্টিক কল্পনার আত্যন্তিকত। অত্তীত ইতিহাসের আবছা আলোয় স্বপ্ন রচনার চেষ্টাটি ভার সবকটি নাটকেই ধরা পড়েছে প্রহসন রচনার ক্ষেত্রে তিনি সমকালীন সমাকজ্চিত্র অবলঘ্বন করেছেন--অথচ স্বদেশ প্রেমসর্বস্ব নাটকগুলির পন্িবেশ নির্বাচনে

নাটক ৪৮১

ইতিহাসের নিশ্চিন্ত আশ্রয় কামনা] করেছেন বার বার সম্ভবতঃ আদর্শের গা্ভীর্য শুদ্ধতা বজায়, রাখারও একট অভ্যস্ত পথ বলেই ধরে নিয়েছিলেন তিনি ইতিপূর্বে যে দু'একটি নাটকে দেশপ্রেমকথা স্থান পেয়েছে সেখানেও সমসাময়িক পরিবেশ থেকে পলায়ন করার একটা সহজ প্রবণত৷ নাট্যকারগোষ্ঠীর মধ্যে দেখা যায়। দেশপ্রেমের অনুভূতিকে একটা বিশ্বাসযোগ্য ভিত্তির ওপর স্থাপন করতে পারলেই এ'রা যেন বেশী আশ্বস্ত হন। অথচ নিতান্ত বাস্তবে একটি নিখু'ত আদর্শবদী চরিত্র কল্পনা করার নানা অস্কবিধা রয়েছে দেশপ্রেমের স্থগভীর ব্যঞ্জন অতি বাস্তবের সত্যতায় যাচাই করতে গেলে অনেক ক্রটি-বিচ্যুতি ধরা পড়বে সহজেই | তাই এরা সাময়িক উত্তেজনায় কম্পিত হুদয়াবেগ অতীতের আধারে স্বাঁপন করতে চেয়েছেন তার প্রথম মৌলিক নাটকের এঁলবিলা চরিত্রটির কথ ম্মরণ কর! যায় ব্যাপারে ইতিহাসে চরিত্র কোথায়? শক্তিময়ী, ব্যক্তিত্বময়ী স্বাধীনচেতা নারীচরিত্রটি জ্যোতিরিন্দ্রনাথের স্বপ্রনায়িকা। নাট্যকারের কল্পনায় এই নায়িকার আবির্ভাব যেমন অভিনব তেমনি অপরূপ | জ্যোতিরিন্্রনাথ নাঁপী পুরুষের সম্মিলিত দেশসাধনার স্বপ্ন দেখতেন, '্বপ্রময়ী নাটকেও” বক্তব্য স্থান পেয়েছে ভবিষ্যতের স্বাধীনতা আন্দোলনের স্বপ্ন দেখেছিলেন নাট্যকার এদের মাধ্যমে। কিন্ত সে যুগের সমাজে এমন কাহিনী তিনি কি খুজে পাননি যা নিয়ে একটি দেশাত্- বোধক নাটক লেখা সম্ভব? প্রসঙ্গটি জ্যোতিরিন্রনাথের ইতিহাসপ্রীতির যুক্তি দিয়েও বোধকরি খণ্ডন করা যায় না। দেশপ্রেম সেযুগীয় চিন্তাধারায় স্থান পেয়েছে বটে কিন্তু আমাদের সমাজে তেমন কোন ঘটন। বাঁ আন্দোলন গড়ে ওঠেনি বলেই নাট্যকারের ছিধ। ঘোচেনি ধরণের নাটকের অভিনয়েও অভাবিত সাফল্যও দেখা গেছে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের নাটকের প্রভাব অন্যান্ত নাট্যকারদের কিভাবে চালিত করেছে তার অজস্র উদ্দীহরণ দেওয়া যেতে পারে ইতিহাসাশ্রিত ঘটন। অবলম্বনে দেশপ্রেমপ্রচার সেযুগের নাট্যকারদের ফ্যাসানে দাঁড়িয়েছিল বললেও ভুল বল! হয় না। শুধু একটি বিদেশীশক্তির আক্রমণ একটি স্বদেশী চরিত্র থাকলেই ধরণের নাটক রচন! কর! যেত অনায়াসে নাটকের বক্তব্য ইতিহাসের সিদ্ধান্ত যতই বিরোঁধমূলক হোক না কেন, দেশপ্রেমের উচ্ছ্ীস প্রকাশের বিস্তীর্ণ ক্ষেত্র রচনায় বাঁধা ছিল না। প্রসঙ্গে বিপিনবিহাঁরী পালের “বঙ্গের পুনরুদ্ধার” [১৮৭৪] নাটকটির নাম কর! যেতে পারে গিয়াহ্থদ্দপীনের সঙ্গে রাজা গণেশের সংঘর্ষ কাহিনীভিস্তিক নাটকে গতাহুগতিকতা ছাড়া আর কীই বা আশা করা যায়? কিংবা নবীনচন্্ বিগ্যা্নত্বের *ভারতের সুখশশী যবন কবলে” [১৮৭৫] নাটকের উল্লেখ করা ষাঁয়। এই নাটকদ্বরের রচনাকাল 'পুরুবিক্রম নাটকের” রচনাকালের সমসাময়িক লক্ষ্যণীয়

৩১

৪৮২ উনবিংশ শতাবীর ধাংলা সাহিতো স্বদেশপ্রেম

এই যে, স্বদেশপ্রেমের আবেগ লেষুগের নাট্যকারদের কিভাবে চালিত করেছিল তা এই রচনা-কৌশল থেকে সহজেই অনুমেয় ধরণের অজস্র নাটক যেমন লেখ! হোত, তেমনি তার সমালোচনাও কম হয়নি |

জ্যোতিরিন্্রনাথের সমসাময়িক নাট্যকার উপেন্দ্রনাথ দাস স্বদেশপ্রেমের নাটকে একটু নতুন রসসঞ্চার করলেন। নাটমঞ্চের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত নাট্যকার উপেন্ত্রনাথের নাট্যসাহিত্যে দান হয়ত তেমন কিছুই নয়,_-কিস্তু সেযুগের রঙ্ষমঞ্চের কর্ণধাররূপে উপেন্দ্রনীথের একটি বিশিষ্ট পরিচয় রয়েছে। ইতিহাঁসাশ্রিত নাটকের স্বদেশপ্রেম প্রসঙ্গ বর্জন করেই তিনি মৌলিকত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন জ্যোঁতিরিক্দর- নাথের নাটকে যে অভাব বোধ আমাদের মনে প্রশ্ন জাগিয়েছিল তার সমসাময়িক নাট্যকারের নাটকেই সমাজভিত্তিক স্বদেশপ্রেমাত্বক কাহিনীর সাক্ষাৎ মিলছে--এটাই সাত্বনীর কথা উপেন্ত্রনাথের এই স্বকীয়তাই আমাদের দৃহি আকর্ষণ করেছে। তার প্রথম নাটকের রচনাকাল 'পুরুবিক্রমের' সমসাময়িক হলেও 'পুরুবিক্রমের” অভিনয় হয়েছিল আগেই “শরৎ সরোজিনী*-তে উপেন্দ্রনাথ দীস আত্মগোপন না করে পারেননি ছুর্গাদাস দাস ছন্মনীমে আত্মগোপনের প্রয়াসটুকু নাঁট্যকারের দুরদশিতারই পরিচায়ক | নাট্যশালার সঙ্গে ঘনিষ্টভাঁবে সংযুক্ত থেকেই নাট্যকার সে যুগের আবহাওয়াটি হৃদয়ঙ্গম করেছিলেন দেশপ্রেমের প্রকাশ্য বক্তব্য যে কোন মুহূর্তে যে বিপদ ডেকে আনতে পারে ধারণা তাঁর ছিল। সেযুগীয় সমাজে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতি কিভাবে চলছিল তাঁরই অস্পষ্ট আভাস কাল্পনিক বিবরণ নাটকটিতে স্থান পেয়েছে দেশচেতন! শিক্ষিত বাঙ্গালীর শিরার ধমনীতে প্রবাহিত হোক--এই স্বপ্ন কল্পনা অতিরঞ্জিত হলেও সে যুগের সমাজে এর একটা যূল্য ছিল। তাছাড়া শুধু দেশোদ্ধারের স্বপ্ন দেখলেই যথেষ্ট হবে না” দেশোছ্বারের সম্ভাব্য পন্থা আবিফার করতে হবে, এই ছিল নাট্যকারের অভিপ্রেত। শিক্ষিত বাঙ্গালীর দেশ- সাধনা যে নাটকের বিষয়বস্ত হতে পারে উপেন্দ্রনাথের নাটকদুটি না পেলে সম্পর্কে একটা সংশয় থেকে যেতো কারণ সামরিক সমাজকে নাটকে স্থান দেওয়ার প্রথাটি সেয়ুগে প্রায় অপ্রচলিত রীতিতে পর্যবসিত হতে বসেছিল। “কুলীন কুল- সর্বস্ব থেকে 'নীলদর্পণ” “সধবার একাদশী'তে সমাজচিত্রণের যে প্রবণতা ধরা পড়েছিল, জ্যোতিরিন্ত্রনাথ প্রমুখের অতীতচারিতার আতিশয্যে তা প্রায় নুগ্ঠ হতে বলেছিল। কিন্তু অভিনয়ের ইতিহাস আলোচনা করলে দেখ! যাবে যে, সামাজিক নাটকের প্রতি প্রবল অনুরাগ সে যুগেও ছিল। দীনবন্ধুর সামাজিক নাঁটকগুলির আবেদন কিংবা! জ্যোতিরিক্্রনাথের প্রহসনের আবেদন যে কত বেশী ছিল তা বোবা! যায় এদের অভিনয়ের আধিক্য থেকে! তুলনায় এ্রতিহাসিক . রোম্যান্টিক

টব ৪৮৩

অর্ধকাল্পনিক নাটকের চাহিদা ছিল কম। উপেন্দ্রনাথ জ্যোতিরিন্্রনাঁথের সমসাঁময্িক কালের নাট্যকার হয়েও, জ্যোতিরিক্্রনাথের দেশপ্রেমাদশে অনুপ্রাণিত হয়েও বিষয়বস্তু অনুসন্ধান করেছেন সে যুগের সামাজিক পটভূমিকায় প্রসঙ্গে শ্রীস্কুমার সেন বলেছেন,__

“খুন-জখমের বাড়াবাড়ি এবং পিস্তল বন্দুক লাঠির হুড়াছুড়ি সমসাময়িক সমাজ- চিত্র নাট্যে এই প্রথম দেখা গেল। দেশপ্রেমের উদ্দীপনা তো আছেই, সেই সঙ্গে দেশকে স্বাধীন করার উদ্দেশ্যে বৈপ্লবিক চেষ্টার ইঙ্গিতও রহিয়াছে ।”৩৯

“শরৎ সরোজিনী” “হুরেন্ত্র বিনোদিনী”-_ এই ছুটি নাটক খুব অল্প সময়ের ব্যবধানেই প্রকাশিত অভিনীত হয়েছিল। ১৮৭৫ সালের জানুয়ারী থেকে আগস্টের মধ্যে "শরৎ সরোজিনীর” ৬টি অভিনয়ের সংবাদ পাঁওয়া যাচ্ছে এবং সেই সক্ষে 'পুরুবিক্রম নাটকের" মাত্র একবার অভিনয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। এর কারণ অবশ্যই আছে খুব বেশীবার অভিনীত ন। হলেও 'পুরুবিক্রমের” সাহিত্য যূল্য স্বীকৃত হয়েছিল সে যুগে এবং “পুরুবিক্রমের' প্রভাব উপেন্দ্রনাথ দাসের উপরেও পড়েছিল গভীর ভাবে

নাট্যাভিনয়ের মানদণ্ডে নাটকবিচারের সাধারণরীতি প্রচলিত হলেও সার্থকতা কেবলমাত্র অভিনয়ের উপরই নির্ভরশীল নয় উপেন্দ্রনাথের নাটকের অজত্র অভিনয় হলেও নাট্যকার হিসেবে তিনি সাহিত্যইতিহাঁসে স্কান পেয়েছেন কোনো মতে। আপাততঃ সে বিচারও নিরর্থক আমরা শুধু দেশপ্রেম কথা উপেন্্রনাথের নাঁটকে যে ভাবে প্রতিফলিত হয়েছিল তাঁর স্বরূপ নির্ধারণে প্রয়াসী “শরৎ-সরোজিনীর” প্রথম অভিনয়ের বিবরণেই এই নাটকের জনপ্রিয়তা ঘোষিত হয়েছে সমকালীন চেতনার প্রতিফলনের সুন্দর প্রতিক্রিয়া এটি দেঁশচেতন দর্শকগোঠী নাটকের বিচার করেছে সম্পূর্ণ অগ্নিয়মে |

১৮৭৫ সালের ২র] জানুয়ারী প্রথম অভিনীত হয়েছিল নাটকটি অমৃতবাঁজার পত্রিকায়, ১৪ই তারিখে দ্বিতীয় দিনের অভিনয়ের বিবরণে সে যুগের দর্শকের চাহিদরি তীব্রতাটি বোঝা যায়

*শরৎ-সরোঁজিনী” নাটকের অভিনয় দেখিবার নিমিত্ত নগরবাসীদের এইরূপ কৌতুহল ব্যগ্রতা জন্মি ধাছিল, যে শুনিতে পাওয়া যায় নাকি স্থানাভাব প্রযুক্ত চারি পাঁচশত লোককে ফিরিয়া যাইতে হইয়াছিল ।”

সে যুগের দর্শকের এই আকাজ্ষা থেকেই জনগণের দেশচেতনার টি সাধারণ

সহ

৩৯, সুকুমার সেন, বাংল! সাহিত্যের ইতিহাস (২য় খও), বর্ধমান সাহিত্য সভা, ১৩৬২, পৃঃ ২৬৯

৪৮৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

রূপ আবিষ্কার করা যায়। অবশ্য “শরৎ সরোজিনীর” অস্ততম আকর্ষণ ছিল সেমুগীয় সমাজচিত্রের একটি বোধগম্য রূপ। তরুণ জযিদার শরৎকুমার উচ্চশিক্ষার সঙ্গে দেশসেবার দীক্ষালাভ করেছে বাংলাদেশের অভিনয়োচ্ছবাস লক্ষ্য করে কোন চরিত্র যখন ব্যঙ্গ করে বলে,__

“আপনারা কোথায় অভিনয় দেখতে যাচ্ছেন? অভিনয় মন্দিরের আজকাল ছড়াছড়ি ।৮৪০ [ ১ম অঙ্ক, ১ম গর্ভাঙ্ক ]

তরুণ নায়কের আদর্শ সেখানে উচ্ছৃসিত হয়ে ওঠে সে যুগের একমাত্র সাধনাই যে দেশসাধনা- একমাত্র লক্ষ্য যে দেশোদ্ধার একথ শরতের মুখেই প্রথম শুনি আত্মসমালোচনায় অকু এই আদর্শবাদী নায়ক নিছক প্রেমপর্ব্ব নাটকের অভিনয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে,

*্প্রণয়ে মত্ত হবার কি এই সময়? আমাদের দ্বণা নাই? গরু গাধার মত দ্রিৰারাত্র শাসিত হচ্ছি, তাকি মনে থাকে না? পদে পদে ইংরাজদের বিজাতীয় অহঙ্কার দেখেও কি ধমনীতে বিদ্যুতের মত ধাবিত হয় না? শরীর উত্তপ্ত হয় না? মনে ধিক্কার জন্মায় না? এখন অন্ত ইচ্ছ1? অন্য অভিলাষ?” এর উত্তরে যখন প্রশ্ন কর! হয়,_-“তবে বন্দুক ধরুন না কেন?” তখন শরৎ আমাদের প্রকৃত আত্মচিত্র উদ্ঘাটন করে,_-“আমরা যে হতভাগা কাপুরুষের জাত, দশ তিনশ বৎসরের মধ্যে যে হবে এমন আশাও মনে স্থান পায় না! কিন্তু যতদিন না ভারতে স্বাধীনতা কুর্ধ্য পুনরুদয় হয়, যতদিন না অত্যাচারের লোহিতমুণ্ড আমর] পদতলে লুঠিত দলিত করতে পারি, ততদিন যে প্রণয়, কি অন্ত কোন পতুবৃত্তির অনুসরণ করবে সে কৃতত্র-পামর -নরাধম-দেশের কুসন্তান |” | ১ম অঙ্ক, ১ম গর্ভীঙ্ক ]

এমন উজ্জল সরল আদর্শকে নাট্যকার সেযুগের একটি শিক্ষিত যুবকের মুখে সংলাপরূপে আরোপ করেছিলেন দেশারাধনার পবিত্র কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েই নাট্যকারের আবির্ভাব হয়েছে যেন। দেশপ্রেমের কাল্পনিক পটভূমিকাটির রোম্যান্টিক আবরণ সরিয়ে দিয়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ধুলিমলিন মাটিতে সময়ৌচিত আকাজ্ফিত এই বক্তব্যটি পরিবেশনে নাট্যকার কুষ্ঠাহীন নির্ভীকতার পরিচয় দিয়েছেন নাটকটির জনপ্রিয়তার কারণ অনুসন্ধানের জন্য খুব দূরে যেতে হয় না,_-এই অকপট আদর্শ ততোধিক পরিচিত একটি সেকালীন যুবকের জীবনাদর্শরূপে কল্পনা করে নাট্যকার স্বাভাবিক সত্যকেই তুলে ধরেছেন। প্রসঙ্গে শ্রীন্থকুমার সেনের সমালোচনাটি যথার্থ,

৪*, উপেন্দ্রনাথ দাস, শরৎ সরোজিনী নাটক, ১২৮৩।

নাটক ৪৮৫

“যে সময়ে নাটকখাঁনি রচিত হইয়াছিল তখনকার দিনের স্বদেশপ্রিয় শিক্ষিত যুবকদের মনোভাবের পরিচয় ইহাতে স্পষ্টভাবে আছে। এইটুকুই শরৎ সরোজিনীর প্রত মূল্য 1৮৪১

এই : প্রকৃতমূল্যই নাটকের একমাত্র যুল্য। স্বাধীনতার আদর্শ বাদ দিলে নাটকটিতে কোন নাটকীয় বক্তব্য ছিল না। ঘটনা চরিত্রের শিথিল রূপ নাটকটিতে পীড়াদায়ক রূপে দেখা যায়। আদর্শবাঁদের প্রলেপট্ুকু সরিয়ে নিলে নাটকটির বক্তব্য অত্যন্ত সাধারণশ্রেনীর মধ্যে গণ্য হোত। শরতের আদর্শবাদ দর্শককে মুগ্ধ করে রাখার পক্ষে যথেষ্ট ছিল। নাট্যকাঁরের সমস্ত লক্ষ্য ছিল এই চরিব্রটিকে ঘিরে

আদর্শবাদী শরৎ চরিত্রটিতে কোন ছন্ব সৃষ্টির চেষ্টামাত্র করেননি নাট্যকার-_ নিদ্বন্ব দেশপ্রেমন্বপ্রে মগ্র শরতের একমাত্র চিন্তা দেশকে ঘিরে। দেশের পরাঁধীনতাশৃঙ্খল মোচন ভিন্ন অন্তচিন্ত তাঁর বিচারে অপরাধ, তাই নিতান্ত ব্যক্তিগত প্রেমভাঁলবাঁসার চিন্তাকেও বর্জন করার প্রয়াস করেছে সে। অথচ মাঝে মাঝে সে যে দুর্বলবোঁধ করে না এমন নয়, ইডেন উদ্যানে ভ্রমণরত শরতের আত্মচিস্তায় নাটকীয়তা নেই কিন্তু আদর্শবাদ আছে পুরোমাত্রীয়। দেশের ছুরবস্থার চিত্রটি মনে মনে খতিয়ে দেখে সে,_

“ভারতের অবনয় এত গভীর সর্বগ্রাসী, ষে এই দ্বণিত পরাধীনতার স্থায়িত্বই এখন আমাদের ভাঁকী উন্নতির একমাত্র পথ হয়ে ফড়িয়েছে। সমাজের অন্তঃস্থল পর্যন্ত ভীষণ ব্যাধিসমাচ্ছন্ন, অবস্থায় ইংরাঁজরাঁজের বিরুদ্ধে অন্ত্রধারণ করতে যে পরামর্শ দেয়, বা ইচ্ছ! প্রকীশ করে, সে শুদ্ধ মূঢ় অবিবেচক নয়--দেশের শক্ত |% [১ম অঙ্ক, ২য় গর্ভাঙ্ক ]

শরৎ আদর্শবাঁসী কিন্তু তার যাত্রাপথে সে একক | এই নিঃসঙ্গতা আদর্শবাদকে দুর্বল করে দেয়। বনহুর সঙ্গে মিলিত হলে সে আদর্শ সার্থকতা লাভ করে খল চরিজ্ররূপে যার আঁবিতভীব সেই মতিলাঁলও শরৎকে ব্যঙ্গ করেছে এই বলে,

ছু এক বেটা লেখাপড়া শিখে আবার দেশহিতৈষী হতে আরম্ভ করেছেন ! আরে আমার দেশহিতৈষী রে! মরে গেলে বুবি “দেশহিতৈষিতা” সঙ্গে যাবে 1

[ ১ম অঙ্ক, ৩য় গর্ভাঙ্ক ] তবু অসিত উদ্ভমে দেশপ্রেমগর্ব নিয়েই শরৎ তীর ব্যক্তিত্ব আদর্শ বজায় রাখে। এদেশের বিদেশী শাসকের উদ্ধত শাসনের যূলোৎপাটনের স্বপ্ন দেখে সে।

সিটি অন

৪১, ন্থফুমার সেন, বাংল] সাহিত্যের ইতিহাস (২য় খু) বর্ধমান সাহিত্য সভা, ১৩৬২ পৃঃ ২৭২1

৪৮৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে দেশপ্রেম

উপেন্দ্রনাথের আদর্শ এই চরিত্রটি ঘিরে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিল | শ্বেতকায়কে প্রভু বলে মেনে নেওয়ার মধ্যে যে চরিত্রগত ছূর্বলতা৷ কাপুরুষতার লক্ষণ রয়েছে, নাঁটকে বার বার সে বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে অস্থায়কারী ইংরাঁজকে বিন্দুমাত্র ভয় পেয়ে দৈহিক শক্তি প্রয়োগের ছুঃসাহসিক মনোভাব শরতচরিত্রে লক্ষ্য কর! যায়। কাপুরুষ শক্তিহীন বাঙ্গালীদের মুখ রক্ষা করার দায়িত্ব যেন সে নিজেই মাথায় তুলে নিয়েছে। কাপুরুষতা ভীরুতার অপবাদ থেকে মুক্ত ন৷ হলে গুধু মানসিক শক্তির বড়াই কর! অর্থহীন হবে। তাই নাটকের নায়ক অমিতশক্তি নিয়ে ইংরাজ সার্জনকে পদাধাত করেছে বারত্বপূর্ণ সংলাপ তার অকুতোভয় চিত্তের পরিচয় দিয়েছে,_

"সাদা চামড়া দেখে লোকে আর ভয় করে না, জানিসনে নরাধম পশু ?”

[ ৩য় অঙ্ক, ১ম গরভাঙ্ক |

বাংল! নাটকে এই বক্তব্যটিও সম্ভবত অভিনব ইংরেজ বিতাড়নের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ঠিক আগেই ইংরেজবিদ্বেষ প্রতিটি মানুষের মনে উদগ্র হয়ে উঠাই স্বাভাবিক, নাট্যকার সেই কল্পনাটি নাটকে দৃশ্যাকারে স্থাপন করেছেন ইতিপূর্বে যা ছিল আভাষিত-ব্যঞ্জিত 'শরৎ-সরোজিনীতে' নাট্যকার তা অনাবৃত ভাবে প্রকাশ করেছেন একই সময়ে হেমচন্দ্র “ভারত সঙ্গীত” রচনা করে রাজরোষে পড়েছিলেন, তবু ধরণের প্রকাশ্য মনে1ভাঁব নাট্যকার গোপন করার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেননি, এটাই আশ্চর্য “ভারত সঙ্গীতের” বক্তব্য আরও অনেক সংযত নিরুতাঁপ ছিল। নাটকে শরতের ইংরেজ বিদ্বেষ ভীব্রতম। পরবর্তীযুগের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতিপর্বের খসড়া নাটকটিতে যেন ক্ত্রাকারে স্যন্ত কর] হয়েছে সেদিক থেকে নাটকের প্রচার-যূল্য অপরিসীম নাটকের ইংরেজবিদ্ধেষ সে যুগের উত্তপ্ত আবহাওয়ায় উত্তেজনা সঞ্চারের পক্ষে যথেষ্ট বলতে হয়

ঘটনাগত জটিলতা সষ্টির প্রচেষ্টা নানাভাবে দেখা যায় নাটকে স্বভাবদুর্ুত্ত চরিত্রহীন জমিদারের জঘম্ভ ষড়যন্ত্র নীচতার চিত্র নাটকে সাড়ম্বরে দেখানে। হয়েছে কাহিনীগত জটিলতা বৃদ্ধির জন্তই খুন, হত্যা জখমের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এতে একধরণের উত্তেজনা! সঞ্চারিত হয় নিশ্চয়ই,_-অন্যদিকে নায়কের বীরত্ব প্রকাশেরও সুযোগ আসে নীয়কের গৃহ অকম্মাৎ মতিলাঁলের ত্বারা আক্রান্ত হলে শরৎ সরোজিনী উভয়ে যথেষ্ট বীরত্বের পরিচয় দিয়েছে মঞ্চে বন্দুক- শিল্তলের গোলাগুলি নিক্ষেপের দ্বারা সুলভ চমৎকারিত্ব জনের সুযোগ মঞ্চীভিজ্ঞ নাট্যকার যে গ্রহণ করবেন এটাই স্বাভাবিক শরতের বারত্ব প্রকাশ পেয়েছে অতকিত্ত. আক্রমণ মুহুর্তে, সে বলেছে,_“আমি মরি, কিন্ত বর্গ সাক্ষী বাঙ্গাল

নাটক ৪৮৭

কাপুরুষ নয় ।”--সরোজিনীও পিস্তল চালনা করে সাহসিক1 বঙ্গনারীরূপে নিজের অসীম কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছে

মিলনাস্তক এই নাটকের সর্বাপেক্ষা কষ্টকল্লিত অবাস্তব অংশ শরতের রাঁজমহল পাহাড় অঞ্চলে গমন সেখানকার মুসলমান ডাঁকাতদলের সঙ্গে পরিচয় লাভ। এদের অবাস্তব-দেশোদ্ধার স্বপ্ন মুসলমান রাজত্ব স্কাপনের চেষ্টা হাশ্কর পরিস্থিতির উত্তৰ করেছে। কিন্তু নাট্যকার শরতের মুখে ভবিষ্যুৎ বাণী আরোপ করেছেন,_-

"আমাদের দেশের কাপুরুষেরা এখনও স্বাধীনতার জন্য ব্যগ্র হয়নি আর স্বাধীনতার নামে আপনাদের অধীনতা স্বীকার করতে কেউ সম্মত হবে ন1।

? পঞ্চম অঙ্ক, চতুর্থ গর্ভাঙ্ক ] নানা অদ্ভুত পরিস্থিতির মধ্যে নাটকের শেষাংশে জটিলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরোজিনীর অন্তর্ধানেই এই জটিল অংশের উত্তব হয়েছে। শরত শেষ পর্যন্ত আদালতে অভিযুক্ত হয়েছে, গোরাসৈন্ত মারার অপরাধে শরতের বীরত্ব অসমসাহসিকতা এখানে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে ষষ্ঠ অঙ্ক, ষষ্ঠ গর্ভাঙ্কযুক্ত নাটকের নায়ক দেশোদ্ধারের আদর্শ নিয়েই আবির্ভূত হয়েছিলেন কিন্তু নাটকের সমাপ্তি অংশে এসে মহাখেদে আবিফার করি যে, দেশোদ্ধার নয় শুধু অন্তায়ের বিরুদ্ধে ম্তায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেই তার বীরত্ব অবসিত হয়েছে তাছাড়া ব্যক্তিগত জীবনের জটিলতার জাল ছিন্ন করতেই বহু মূল্যবান সময় নষ্ট করেছে সে। আদাঁলতেও শরত আপন আদর্শ বজায় রাখার জঙ্ত পণ করেছে,

“উৎপীড়িত স্বদেশীয়দিগকে ধবলযৃতিদের অত্যাচার হতে রক্ষা করবার জন্য ঘদি আমার জীবন বিসর্জন দিতে হয়, তাও দেব” যে নাটকে নাটকীয়তা সৃষ্টির উদ্দেশ্যটাই গৌণ, আদর্শপ্রচারই মুখ্যস্থান অধিকার করেছে--সেখানে নাটকের দৌষক্রটির বিচারটাই মুখ্য বিচার নয়। আদর্শ প্রচারে ব্যগ্র নাটক রচনায় অন্তমনস্ক নাট্যকারের নাটক বিচারের মানদও নিশ্চয়ই ভিন্ন রকম হবে

নাটকের মিলনান্তক অংশটি এমন অসঙ্গতিপূর্ণ যে নাট্যকারের বিষৃঢ় মনোভাবেত পরিচয় এখানে অত্যন্ত স্পষ্ট নাটকে নায়ক নায়িকার মিলনাত্তক পরিণতি দর্শকেরা চন, _নাট্যকাঁরও অবহেলা! করতে পারেন না সে দাবী, স্তরাং নাটকের শেষাংশে মিলন দৃশ্য রচিত হয়েছে যথানিয়মে। কিন্ত বিবাহ আসরে পরীর! যে সঙ্গীভটি নিবেদন করেছে তাতে মিলন মাধুর্য উপভোগের বাসনাটি প্রায় লুপ্ত হবার অবস্থা ;-কারণ বক্তব্যটি নাটকেরই নয় নাট্যকারের | মিলন মুহূর্তে পরীর যে সক্কীতটির অবতারণ করেছে তাতে নিছক উপদেশ ছাড়া অস্ত

কিছুই নেই।

৪৮৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

তোষাদের নিজ দোষে, আছ সবে পরবশ, হীনবল, অপযশে ভ্রিজগতে পুরিল

নর নারী পরস্পরে, ভারত-উদ্ধার-তরে, উদ্যোগী হও যত্বভরে, হও না তায় শিখিল

উপদেশটি নাট্যকারের সর্বশেষ আবেদন মিলনমুহুর্তেও ভারতের স্বাধীনতা লাভের শপথটি বিস্বত হওয়া চলবে না,-_কারণ তারপরেই উদ্ধৃতিটির নীচে নাট্যকার বলেছেন,__

বজ্রধবনিতে ভারতের দৈর্যেবিস্তারে কথাটি প্রতিধ্বনিত হউক ।'-_ শরৎ সরোজিনীর মিলনবাসরে সমগ্র দর্শক সমাজের সম্মুখে নাট্যকারের এই বিচিত্র আবেদনে অসঙ্গতি থাকতে পাঁরে কিন্তু অসংলগ্ণতা নেই। নীয়কের জীবন সাধনার ধারাটি এমনভাবে সমগ্র নাটকে পরিবেশন করা হয়েছে যে দেশপ্রেমের হাঁওয়াতে দর্শকসমীজ পূর্বেই আন্দোলিত হয়েছেন ।। খুন-জখম-নিরুদ্দেশ-ধ সভার জটিলত! ভেদ করেও যে সংবাদটি মুখ্যস্থান অধিকার করেছে, তা হচ্ছে নির্ভেজাল দেশশ্রীতি স্থতরাঁং বিপদমুক্ত নায়কের মিলনমুহূর্তেও আত্মবিস্বত হওয়া চলে না। দেশোদ্ধারের স্বপ্ন সফল করার জন্তেই মিলিত প্রয়াস দরকার, বিবাহবাঁসরে নাট্যকার সে সংবাদটুকুই পরিবেশন করেছেন,_-এতে অসংলগ্নতা নেই নাটকের শেষ গর্ভীঙ্কের সমালোচনার একটু নমুন] সেযুগীয় সংবাদপত্র থেকে উদ্ধার কর! যায়,_

“শেষ গর্ভাঙ্কের অভিনয় এত উত্তম হইয়াছিল, যে দর্শকমণ্ডলীর অধিকাংশই অশ্রবিসর্জন করিয়াছিলেন ।” [ আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৪ই জানুয়ারী ১৮৭৫ ]

এই উপলদ্ধি নাটকের গুণে বা অভিনয়ের গুণেও হতে পারে, তবে সেযুগের দর্শকের ভালে। লাগার একটা কারণ খুব সহজেই অনুমেয়_তীঁরা যা চান নাট্যকার সেই বস্তুটি তেমন করেই পরিবেশন করার চেষ্টা করেছেন ক্রটিহীনভাঁবে

নাঁট্যকাঁরের মঞ্চঅভিজ্ঞতা দর্শকচরিত্র সম্পর্কে মোটামুটি অভিজ্ঞতাই তার নাটকের সাফল্যের অন্যতম হেতু ছিল, একথা অস্বীকার কর। যায় না নাট্যকার উপেন্দ্রনাথ বঙ্গরক্ষমঞ্চের একজন উৎসাহী প্রষ্ঠপোষক শুধুমাত্র নাটকরচনা করেই নয়, মঞ্চসেবায় আত্মোৎসর্গের আরও “নজীর পাওয়া যায় তার দ্বিতীয় নাটকের অভিনয় প্রসঙ্গে | প্রথম নাটকের অভাবিত সাফল্যের জন্যই তাঁর ছিতীয় নাটকের জন্ম হল অতি শীত্রই ১৮৭৫ সালেই তার দ্বিতীয় নাটক “হরেন্দ্র-বিনোদিনী' প্রকাশিত মঞ্চস্থ হয়। এই নাটকের অভিনয়ের ত্র ধরেই রা'জশক্কি নাট্যশীলার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করার অন্য উদ্যত হয়েছিল ১৮৭৬ সালের ৪ঠা মার্চ: তারিখে নাট্যশাল! নিয়ন্ত্রণ অভিন্তাসের বলেই থিয়েটারের ডিরেক্টর উপেন্দ্রনাথ ধৃত হয়েছিলেন,--একমাস বিনাশ্রম

নাটক ৪৮৯

কারাদণ্ড ভোগের আদেশ পেলেও শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের বিচারে মুক্তি পেলেন কিন্ত 1:900900 1210100815055 00706101 981]1”-বজীয় নাট্যশালার অবাঁধ স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছিল [6 0৪10965 035586556 [199৫ 27, 1876 --এ প্রকাশিত আইনের সারমর্ম__

4১০৮ 22০7 05008 1976-- &চ 8০৮ 20 ৮0৩ 66৮ ০0200] ০1 1001101012100800 61760200215625, পাও ০৮ 28506581150 “5 [0159100900০ 0610001700810065 206 13576,

৬৬17217০৬০1 0০ [0081 090৮6010610 1506 00121010086 জে 0195 02060001006, 00 00067 0181002 06000170060 01 ৪0006 00 7৫ [21601707690 17 2. 00011001306 1৩--

(৪) 02. 50877091005 0. 16151709605 1726016, 006) 11515 69 ৪3:0166 6211759 06 015850610 00 0১০ 30৬17206720 55021011519 05 12 1 81101517 [0012 01 (০ 11615 10 061019৬5 210৭ ০017006 7615005 70126196210 005 061:010021009, 06 10081] 0970০127022, 0 0059006 0176 01551061905 [05705 8100 2060010, 06 1[.0081 3305210106706 017 9001) 10126150866 29 16 12085 05 01061: 0101)1016 00০ 70216011081706,%

এতে খুব স্পষ্টভাবেই ব্যক্ত হয়েছে যে, রাঁজশক্তিবিরোধী জনচেতনা সঞ্চারের চেষ্টামীন্রই অপরাধ এসব ঘটনার বিশেষ মূল্য স্বীকাঁবের প্ুয়োজন আছে, কাবণ গণচেতনার উচ্ছ্বসিত আবেগ যখন তুঙ্গশীর্ষে আরোহণের চেষ্টা করে চলেছে._ঠিক সেই মুহুর্তে এই আইন পরোক্ষভাবে শক্তি সঞ্চয়েই সাহায্য করেছিল। স্বদেশচেতনা সঞ্চারের অপরিসীম ক্ষমতা যে নাট্যশালারই হাঁতে-_এ সত্যটি গভর্নমেন্ট আইনের সাহায্যে প্রমাণ করেছিলেন অভিনয়েব মত শক্তিশালী জনমত গঠনের শক্তিকে দমিত করার চেষ্টাঁটি বাংলা নাট্যা'লয়ের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় ঘটনা

“হ্রেন্্-বিনোদিনী* নাটকের ওপর উপেন্দ্রনাথের প্রথম নাটকের পূর্ণ প্রভাব বর্তমান ছুটি নাটকের উপাঁপান সে যুগের উচ্চবিত্ত শিক্ষিত সমাজ থেকে আহরণ করা হয়েছে নান" দুর্ঘটনা সৃষ্টি করে নাটকের জটিলতা বৃদ্ধির নজির নাটকেও মিলবে, কিন্ত এসব নিতান্তই ঘটন। মাত্র, নাঁটকীয় ঘটনা নয়। নায়ক-নায়িকার যথার্থ কোনো সমস্যা নেই.__কিস্তু নায়কের উগ্র আহাসচেতনতা তীব্র দেশবোঁধ ঘটনাকে খুরুত্বদান কবেছে। ছুটি নাটকেই শিক্ষিত ন্বদেশপ্রাশ ইংরেজবিদ্বেষী নির্ভীক যুবককে নায়করূপে দেখা যাচ্ছে। নায়িকাও নিতান্ত অশিক্ষিতা নয়,-সেফালীন রীতিনীতিতে অভাস্ত দেশসচেতন নাট্যকার নারী

৪৯০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

পুরুষ নিবিশেষে দেশপ্রেমিকতা অনুসন্ধান করে চলেছেন,- ছটি নাটকেই দৃষ্টান্ত মিলবে |

উপেন্দ্রনাথের মঞ্চজ্ঞান তার নাটকে বিশেষ তাবে ধর] পড়েছিল। সেমুগের শিক্ষিত বাঙ্গালীর মনোঁমত কাহিনী নির্বাচনের দুরদশিতা সমসাময়িক নাট্যকারদের মধ্যে একমাত্র তারই ছিল। কাল্সনিক হলেও সামাজিক চরিত্রালোচনার উপযোগিতাটি তিনিই প্রথম উপলব্ধি করেছিলেন সমাজ সম্পর্ক শুন্য -অতীভচারণা। শুধু একটি আদর্শকেই তুলে ধরতে পারে, _বাম্তবজীবনের সঙ্গে যোগস্থাপনের সাধ্য তার থাকে না। উপেক্নাথের ছুটি নায়কের নায়কই দেশপ্রে, শিক্ষিত, আত্মমর্াদাসম্পন্ন ইংরেজবিদ্বেষী এবং নির্ভীক-আদর্শবাদী যুবক আবার এরা বর্তমানেরই মান্ষ। দর্শকের চিন্তা ভাবনার সঙ্গে নাটকীয় পাত্রপাক্রীর যোগাযোগ এত গভীর প্রত্যক্ষ যে ধরণের নাটক অতিসহজজেই প্রভাব বিস্তার করতে পারে “কুরেন্্-বিনোদিনীর” নায়ক ক্থরেন্্র “পুরু বিক্রম” নাটকের নায়ক পুরুর সঙ্গে নিজের তুলন। দিয়েছে নাটকে অমিত সাহস নিভীকত! নিয়ে বিপক্ষশক্তির সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে সে এতে নিছক আদশবাদের প্রতিফলন ছাঁড়। অন্য কিছু, নেই। অত্যাচারী হংরেঞদের প্রতি আন্তরিক বিদ্বেষ স্রেন্দ্রেরে একটি বিশিষ্ট অনুভূতি ইতিপূর্বে হতিহাসাশ্রিত কোন নাটকে যবন বিদ্ধেষরূপে যা ব্যাখ্যাত, উপেন্দ্রনাথের নাটকে সরাসরি ভাবে তা ইংরেজবিদ্বেষে রূপান্তরিত হয়েছিল এখানে নাট্যকারের দেশচেতন৷ নিভীকতাই প্রকাশ পেয়েছে ছুটি নাটকেই শ্বেতকায় ও. এদেশীয়দের সংঘর্ষচিত্র স্থান পেয়েছে যে যুগে ইঙ্গিতে আভাষে ইংরেজবিদ্বেষ প্রচার করার উপায় ছিল না,-সে যুগেরই নাট্যকার উপেন্দ্রনাথ অত্যন্ত স্পষ্টভাবে জাতীয় ঘটনা নাট্যদৃশ্য রূপে রচনা করেছিলেন। ধরণের ঘটনার নাট্যরূপ কিছুমাত্র অতিরঞ্জিত নয়,_-কিন্তু পরাঁধীন জাতির সত্যকথনের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল রাজশক্তি। অথচ নাট্যকার জানতেন সেষুগীয় দর্শকের সমর্থন অভিনন্দন তিনি পাবেনই | বাংল৷ নাটক পরবর্তীযুগে স্বাধীনতা আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য বাহন হতে পেরেছিলো,--উপেন্দ্রনাথ বোধ করি ব্যাপারে অগ্রজ নাট্যকার তবে দীনবন্ধু মিত্রের 'নীলদর্পণে'ই প্রথম রাজশক্ভির বিরুদ্ধ সমালোচনার চিত্র পাওয়া] যায় তখনও নাট্যকারের ধারণায় ইংরেজবিদ্বেষবস্তটি অকল্পিত ছিল--শুধু অত্যাচারী ইংরেজই সাঁর আক্রমণের লক্ষ্য ছিল, সৎ সঙ্জন ইংরেজপ্রশস্তির অভাব কোথাও নেই কিন্ত উপেন্দ্রনাথের নাটকে এই বক্তব্য একেবারেই পৃথকরূপে চিত্রিত হয়েছে ।' 'নীলদর্পণের” সঙ্গে 'শরৎ-সরোঁজিনীর' রচনাকালগত পার্থক্য মাত্র ১৪ বছরের | কিন্তু দীনবন্ধু ইংরেজ বিভাঁড়নের কথ চিন্তাও করেননি-_অখচ মাত্র ১৪ বছরের মধ্যেই চিন্তাগিত

নাটক ৪৯১

আদর্শগত পরিবর্তন এত দ্রুতলয়ে ঘটেছে যে ইংরাজ বিতাড়ন স্বাধীন হওয়ার স্বপ্রটি এখন আর মোটেই কল্পন। মাত্র নয়, তা ধীরে ধীরে একটা সুচিস্তিত অবয়ব লাভ করবার আশায় দিন গুনছে আর ব্যাপারে ইংরেজকে রাজশক্তি অত্যাচারী বলেই কল্পনা করা হয়েছে সামগ্রিকভাবে, কিছু উদার সঙ্জন ইংরেজের প্রসঙ্গটি প্রায় বাদ পড়ে গেছে। স্বাধীনতা আন্দোলন যখন দান। বেধে ওঠেনি অথচ সে যুগের মান্ষরা ধেদিন একত্রিত হতে চাইছিল, সে মুহূর্তে উপেন্দ্রনাঁথের নাটক ফে অত্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল রচনা বলেই অভিনন্দিত হবে তারও প্রমাণ রয়েছে সে যুগের দর্শক শরৎ স্থরেন্্রকে পরম আত্মীয় রূপে বরণ করে নিয়েছে সরোজিনী- বিনোদিনীরা শরৎ ন্রেন্দ্রেরে আদর্শকে শ্রেষ্ঠ মানবতার আদর্শ বলে শ্রদ্ধা জানিয়েছে,--এটি শুধুমাত্র নাট্যকারের রচনাদক্ষতার ফলাফল নয়। সেযুগের দর্শকের। সারটুকু গ্রহণ করতে দ্বিধাবোধ করেনি অবান্তর অংশের প্রতি অমনোযোগিতার বা অগ্যমনস্কতার পরিচয় দিয়েই তারা ছুটি নাটকের যুলবক্তব্যের দ্বারা প্রভাবিত হুতে চেয়েছিল, বিচারের চেষ্টাটিও সেযুগীয় জীবনচেতনারই লক্ষণ 'হুরেন্দ্রবিনোদিনীতে' প্রথমারস্তটি আপাতঃদৃষ্কিতে অসংলগ্ন অর্থহীন মূল কাহিনীবিচ্ছিন্ন ঘটন। রূপেই প্রতিভাত হবে অন্তঃপুরিকা নারী ভারতদুঃখে নিমগ্রা হয়ে যে সংগীতটির অবতাঁরণ। করেছে তাতে নাটকের বীজসন্ধি বপন কর! হয়নি, ঘটনাগত পরিচয় দানের চেষ্টাও নেই, কিন্তু নাট্যকারের আদর্শবাদের গুসঙ্গটি আছে ভারত ছুঃখে মগ্জা নারীর স্বদেশপ্রীতির প্রসঙ্গ ছাঁড়া অন্ত কোন গভীর অর্থ অনুসন্ধান করাও অবান্তর সার্থক বা অসার্থকভাবেই নাট্যকার তা পরিবেশনের উদ্দেশ্যেই নাটকটি পরিকল্পনা করেছেন থম অঙ্কের প্রথম গর্ভাঙ্কে অন্তঃপুরিকা একটি নারীর মুখে আমর শুনি, হায় কি তামসী নিশি ভারত মুখ ঢাকিল। সোনার ভারত আহা ঘোর বিষাদে ডুবিল

শোক সাঁগরেতে ভাসি,

ভারত মা দিবানিশি

ক্রি পুর্ব ঘশোরাশি

কান্দিতেছে অবিরল,

কে এখন নিবারিবে,

জননীর অশ্রুজল 1৪২

৪২. উপেক্্রনাথ দাস (ছুর্গাদাস দাস হন্সনামে প্রকাশিত ), হুরেন্্রবিনো দিনী, ১২৮৭

৪৯২ উনবিংশ শত্যবীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

বক্তব্য সে যুগের দর্শকসমাজের কাছে নাট্যকারের গভীর জাখনকেরিখরত অঙ্কতবের কথা | নাট্যকারের সচেতন ভাবনাটির প্রসঙ্গই নাটকের প্রারস্তে নিবেদন করা হয়েছে আপাত:ভাবে অসংলগ্ন হলেও এই আলোকেই নাট্যকার নাটকটির বিচার হোক, বুঝি তাঁরই নির্দেশদান।

নাটকের নায়ক স্থরেন্দ্র বিস্তবান, শিক্ষিত সচ্চরিত্র ছুরাঁচার লম্পট ম্যাঁজিষ্রেটকে টাকা ধার দেওয়ায় তাঁর উদারতার কথাই মনে আসে--কিন্ধব সেই ছুরাচার যখন উদারতার স্যোগ নিয়ে অপমান করতে উদ্ভত হয়, সুরেন্দ্র তাঁকে ক্ষমা করে না। সাহেব ম্যাজিষ্ট্রেট হলেও তার শীচ চরিত্রটি নাট্যকার ধখুব চমৎকাররূপে চিত্রিত করেছিলেন দীনবন্ধু মিত্রের রোগসাহেবের জন্মাত্তর হয়েছে ম্যাক্রেণ্ডেল রূপে 'নীলদর্পণেও' দীনবন্ধু মিত্রের অভিযোগ ছিল ইংরাঁজ প্রবতিত বিচাঁর পদ্ধতি সম্পর্কে বিচারের এহসন বিচারের নামে অবিচারের পক্ষ সমর্থন দেখে দীনবন্ধু মিত্রও ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন,_এ নাটকেও সেই বিচার প্রহসনের চূড়ান্ত নিদর্শন রয়েছে বিচারক ম্যাজিষ্টরেটের সীমাহীন অত্যাচারের প্রামাণ্য দলিল নিখু'তভাবে নাটকে পরিবেশন কর] হয়েছে হ্বরেন্দ্র প্রাপ্য টাকা ফেরত পায়নি, পরিবর্তে সাহেবের দত্ত অন্যায় আস্ফালন শুনেছে,

“নির্বোধ, আমি বাইবেল চুম্বন করিরা শপথ পূর্বক যাঁহা বলিব, তাহার বিরুদ্ধে 'তোমাদের ছুইশত বাঙ্গালীর সাক্ষ্য গ্রাহ্য হইবে না 'এতকাল ইংরাঁজের রাজ্যে বাস করিয়া এই সামান্য জ্ঞান উপলব্ধি কর নাই? তোমার অজ্ঞতা দেখিয়া আমি আন্তরিক ছঃখিত হইলাম |” [ ১ম অঙ্ক, চতুর্থ গর্ভাঙ্ক ]

সমগ্র বাঙ্গালী জাতির নিবুদ্ধিতার এমন উৎকৃষ্ট উদাহরণ আর অন্ত কোথাও দেখি না,--ম্যাক্রেণ্ডেল হবরেন্্রকে সাধারণ বণঙ্গালী বলে ভুল করেছিল প্রতিকারে অক্ষম, ছুঃখ অন্যায় সহনে অভ্যস্ত বাঁজালীর জাতীয় কলঙ্ক দূর করার জন্তই যে স্থরেন্্র চরিক্রটির পরিকল্পনা | পদাঘাঁত করে হবরেন্দ্র ম্যাক্রেণ্ডেলের প্রত্যুত্তর দিয়েছে

নাটকটিতে ঘটনাবর্ত ত্জনে কোন নতুনত্ব বা অভিনবত্ব নেই। “স্থরেন্দ্- বিনোদিনীর” বিবাহ সম্পাদনের পূর্বে কিছু বাহিক জটিলতা সৃষ্টির উদ্ম করেছিলেন নাট্যকার, পরিশেষে “হরেন্দ্রবিনোদিনীর মিলনে কোন বাঁধাই অন্তরায় হয়নি লাভ হয়েছে এই যে, হুরিপ্রিয় বিরাজমোহিনীরও মিলনসেতুও রচিত হয়েছে শরৎ" সরোজিনীর” মতই নাটকও মিলনান্তক সামাজিক রচন1। নাটকের বিরুদ্ধে আনীত অঙ্লীলতার অভিযোগও শেষ পর্যন্ত অপ্রমাণিত থেকে গেছে। কিন্তু এই নাটকটির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা অত্যন্ত স্বাভাবিক ছিল তা কেন আন হয়নি সেটাই আশ্চর্য যাই হোক, অভিযোগের সেতু ধরেই নাঁট)াভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন

নাটক ৪৯৩

বিধিবদ্ধ করেই সরকার অত্যন্ত স্বাভাবিক পথ অনুসরণ করেছিলেন দেশাত্মবোধ স্বজনের এমন প্রকাশ্য চেষ্টাটি বন্ধ করার ছাড়া আর অগ্য কোন উপায় ছিল না। সম্বন্ধে অমৃতবাজার পত্রিকার সমালোচনাটি আমাদের অসহায় আক্ষেপেরই অনুরণন ১৮৭৬ সালের ১৪ই ডিসেম্বর অযৃতবাঁজার লিখেছিলেন, _-*এ আইনের উদ্দেশ্য মহৎ হইতে পারে, ইহা দ্বার! গভর্নমেন্ট আমাদের উপর আর একটি শাঁসন স্থাপন করিলেন আমরা শাসনের প্রভাবে নিজাব হইয়াছি। গভর্নমেন্ট যদি আমাদের নিত্য নৈমিত্তিক সমুদয় কার্ষের উপর পর পর এইরূপ শাসন স্থাপন করিতে থাকেন, তাহ! হইলে বোধহয় আর দীর্ঘকাল আমাদের আইনের অধীন থাকিয়া ইংরাজ রাজার আজ্ঞা পালন করিতে হইবে না। ভারতবর্ষবাসীরা এরূপ স্থানে গমন করিবে যেখানে আর ইংরাঁজ শাসনের ভ্রকুটিতে তাহাদিগকে ভীত করিতে পারিবে না”

'শরৎ-সরোজিনী” “হরেন্দ্-বিনোদিনী'-তেই নাট্যকার খুন-জখম, পিস্তল-বন্দুক, হত্যাকাগু-মারামারির দৃশ্যগুলো! নিবিচারে নাটকে স্থান দিয়েছেন। প্রকাশ্য মঞ্চে, এই উত্তেজনাকর দৃশ্য যে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু পরবর্তা নাট্যকারের1 নিয়ে সমালোচনা করেছেন তীব্রভাবে উপেন্দ্রনাথের নাটকেই অভাবিত নাটকীয়ত্ব উদ্দেশ্যযুূলক বক্তৃতার আধিক্য লক্ষ্য করা যাঁয়। ছটি নাটকেই ইংরেজবিদ্বেষ শ্বেতকায় নিধনচেষ্টা এত স্পষ্ট ভাবে চিত্রিত হয়েছে যে নাট্যকারের দেশপ্রেমাদর্শ অত্যন্ত প্রকটভাবে ধর পড়েছে এই উদ্দেশ্টটি নাটকের ভূমিকাতেই নাট্যকার ব্যক্ত করেছিলেন। একটি পুস্তক প্রাঞ্থির সংবাদ দিতে গিয়ে তিনি যে সরস সমালোচনার অবতারণা করেছিলেন, তার মূলে দেশচিন্তার ছাঁপ রয়েছে পুরোমাত্রায় দেশহিতৈষিতা সে সময়ের একটি পরিচিত শব্দ এবং সমালোচকেরাও দেশহিতৈষণার স্বরূপ অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছিলেন নানাভাবে কাব্যে, নাটকে, প্রবন্ধে, সমালোচনায় সাংবাদিকতায় দেশহিতৈষণীরই বিভিন্ন রূপ ধর] পড়েছে মাত্র উপেন্দ্রনাথের সচেতনতা ব্যাপারে লক্ষ্যণীয় দেশপ্রেমাদর্শই তার নাটকের কাহিনী, চরিত্র ঘটনার মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছিল, কিন্তু নিজেই তিনি সমালোচকের আদর্শ অনুসরণ করে দেশপ্রেমকেই ব্যঙ্গ করেছেন | পরোক্ষ ফললাভ হিসেবে বিরূপ সমালোচনাই যে অন্যতম প্রাপ্যবস্ত বিষয়ে তাঁর সতর্কতা ছিল

উপেন্দ্রনাথের সমসাময়িক নাট্যকারদের মধ্যে প্রথনাথ মিত্রের নাম উল্লেখযোগ্য | নানাভাবেই তিনি সেযুগীয় নাঁট্যকারদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন তীর প্রথম নাটকের কাহিনীর সঙ্গে ইতিহাস, বিশেষতঃ রাজস্থানের ইতিহাসের যোগন্থত্র আছে। ,নগনলিনী' নামে প্রমথনাথ যে ইতিহাসভিত্তিক কক্সনাশ্রয়ী রোধ্যার্টিক নাটকটি:

৪১৪ উনবিংশ শঙ্তান্দীর বাংল সাহিত্যে ব্বদেশপ্রেষ

সর্বপ্রথষে রচন৷ করেন তার ভূমিকায় উপেন্দ্রনাথ দাসের প্রতি কটাক্ষপাত লক্ষ্যনীয়,_

পাঠকগণ ! নগ-নলিনী নাটক মধ্যে 'জয় ভারতের জয়” নাই, 'পাঁপিষ্ঠ শ্লেচ্ছ” “ছুরাচার যবন" নাই, "হায়, স্বাধীনতা” নাই, “ফোর্ট-উইলিয়ম” নাই, পিশ্তক বন্দুক, লাঠি প্রভৃতি কিছুই নাই, ইহারও যে আবার ছিতীয় সংস্করণ হইল, বড় আশ্চর্যের বিষয় 1৮৪৩

এই সমালোচনার অল্পকাল পরেই তিনি রীতিমত দেশাত্মবোধক একটি নাটক রচন। করে প্রমাণ করেছিলেন- সামস্সিকতার মোহ থেকে মুক্তি পাওয়া সব লেখকের পক্ষেই কত অসম্ভব

সেযুগের আরও একজন নাট্যকার উমেশচন্দত্র গুপ্ত উপেন্দ্রনাথকে ব্যঙ্গ করে একটি নাটকের ভূমিকায় বলেছিলেন,_

“জনৈক বন্ধু আমার বীরবাঁলা গ্রন্থ উপহীর প্রাপ্ত হইয়া আমাকে একখানি পত্র লিখিয়াছিলেন, তাহাতে এই একটি কথা ছিল, নির্বোধ! রুচির দিকে চাহিয়া! এখন নাটক লিখিতে হয়, এখনকার রুচি, নায়ককে ডন কুইকৃসটের মত সাঁজাহিয়া এবং নায়িকাকে হারমনিয়ম বাজাইতে বাজাইতে গান করাইয়া পাঠকের এবং গ্রন্থ অভিনয়কালে দর্শকমগুলীর সম্মুখবর্তী করা, ছুই একটি জজ ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবকে নায়ক দ্বারা কোন উপায়ে.ভুতা, লাঠি, পিস্তল মারা কিন্বা প্রাণে বধ করা, একটি বাঙ্গালী বালিকা কর্তৃক বহুসংখ্যক গোরা সৈনিকের প্রতি বন্দুক ব' পিস্তল ছ্রোঁড়া, সকল তোমার বীরবালাতে নাই, গতিকেই ইহা মিষ্ট লাগিলেও ভূর্গন্ধযুক্ত 1৪৪

এই সমিকীয় লেখক রচিত “বীরবালা” নাটকের পরিচয় স্পষ্ট হয়নি, কিন্ত উপেন্দ্রনাথের নাটক ছুটির বিষয়বস্তর ধারাবাহিক বিবরণ দেওয়া হয়েছে। ইতিহাসের পামমাত্র সংযোগ রেখে নাট্যরচনার যে অসার্ক অনুল্লেখ্য চেষ্টা করেছিলেন এরা, তাঁর চেয়ে উপেন্দ্রনাথের মৌলিক চিন্তাজাত নাটক ছটির মূল্য যে স্বাভাবিক বিচারেই অনেক বেশী হবে তাতে সন্দেহে কোথায়? উপেন্দ্নাথ জ্যোতিরিন্দ্রনাথের যুগের নাট্যকার হয়েও চিন্তাভাবনায় যৌলিকত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন সবদিক থেকেই তাঁর অন্কুবর্তী নাট্যকারেরা তাঁকে প্রথমে আক্রমণ পরে অনুসরণ করে প্রমীণ করেছিলেন যে, মৌলিকত্ব হজনের সত্যিকারের ক্ষমতা তাদের নেই উপেন্দ্রনাথ তার সামরিক নাট্যকাঁরদের আক্রমণের হেতু হতে (পেরেছিলেন বলেই আল্তকের বিচারে তাঁকে অনেক বেশী খূল্য না দিয়ে উপায় নেই।,

৪৩, বাংলা সাহিত্যের ইতিহান (২য় খণ্ড ) থেকে উদ্ধ(ত। পৃঃ ২৭৬। ৪৪. বাংল! সাহিতোর ইতিহাস (২য় খণ্ড) থেকে উদ্ধ'ত। পৃঃ ২৭৮।

নাটক ' ৪৯৪

নিছক ইতিহাস কিংবা বিন্দুমাত্র ইতিহাসের সুত্র অবলম্বন করে অসার্ক কল্সনাজাল বিস্তার করার সলভ পথটি প্রথমাবধি বর্জন করেই উপেন্্রনাথ আমাদের সতর্ক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন

লক্ষ্যনীয় যে ঠিক ধরণের সামাজিক নাটক সেযুগে খুব বেশী লেখা হয়নি অন্তান্ত সামাজিক সমস্যা অবলম্বনে কিছু কিছু সামাজিক প্রহসন নাটক লেখার চেষ্ট1 হলেও শরৎ-সরোজিনী” বা হুরেন্্র-বিনোদিনীর* মত নিতান্ত দেশপ্রেমমূলক, সামাজিক নাটক আর রচিত হয়নি কিন্তু “পুরুবিক্রম” কিংবা বস্বগ্রময়ীর” অন্ুত্তি চলেছিল নানা অক্ষম স্বল্পক্ষম নাট্যকারদের অনুশীলনের মাধ্যমে “শরৎ- সরোজিশীর' আদর্শবাদী নায়ক শরৎ “স্থরেন্্-বিনোদিনীর” নির্ভীক সত্যসন্ধী নায়ক সথরেন্দ্রকে বহু আদর্শবাঁন এঁতিহাসিক চরিত্রের ভীড়েও হারিয়ে ফেলা যায় না। দূর ইতিহাসের অচেনা চরিত্রকে কল্পনা করে নিতে কিছু সময়ের প্রয়োজন হয়, মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্ব সম্প্রদায়ের আলোকপ্রাপ্ত উনবিংশ শতকীয় পুরুষ চরিত্রের নজির হিসেবে শরৎ স্থরেন্্র অনেক বেশী পরিচিত। স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদানের প্রচেষ্টা কিভাবে শিক্ষিত বাঙ্গালী যুবকের জীবনচর্যায় স্থান পেয়েছিল তাঁর নজির হিসেবে কাল্পনিক হলেও উপেন্দ্রনাথের তৃষ্ট নায়ক চরিত্র ছুটির উল্লেখ করতে হয় সবার আগে।

“নগ-নলিনী” নাটকে উপেন্্রনাথের সমালোচনা করেও ছিতীয় নাটকে প্রমথনাথ মিত্র দেশপ্রেমের ভাঁবনাকেই মৃখ্য স্থান দিয়েছিলেন তীর দ্বিতীয় রচন। 'জয়পাঁলে' জোতিরিক্দ্নাথের প্রভাব অতান্ত স্পট বিষয়বস্তর পরিকল্পনায় জ্যোতিরিক্রনাথের অন্কসরশ শুধু যে তিনিই করেছিলেন তা নয়.__-স্গে যুগের ইতিহাসভিত্তিক স্বদেশাত্বক নাটারচয়িতাগোর্গী বাঁপাঁরে জ্যোঁতিরিন্্রনীথের ঞ্ুব পথটি নিবিচারে অবলম্বন করে নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন

বহিঃশক্রব আক্রমণে বিধ্বস্ত ভারতের ইতিহাঁস খু'ঁজালে একই বিষয়ের পূনরুল্পেখ মিলবে বিদেশী শক্ররা অমিত শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে এদেশে, জনপদ লুণ্ঠন করেছে, বন্দী করেছে দুর্বল রাজশক্তিকে, জয়পতাকা উডিয়েছে ভারতের আকাশে অসংখ্য যুক্তি দিয়েও ভারত ইতিহাঁসের এই কলম্কের কাহিনী মুছে ফেলা সম্ভব নয় বিদেশীশক্তির সঙ্গে ক্ষমতাঁর লড়াইয়ে হেরে না গেলে নিজেদের দুর্বলতার প্রসঙ্গটি চাঁপা দেওয়া যেতো কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তুর্কী, মৌঘল, পাঠান রাঁজারা এদেশ শাসন করেছেন অমিতবিক্রমে. কিন্তু দীর্ঘদিনের পরাধীনতার ইতিহাঁসে যে নজীর সুলভ নয়

উনবিংশ শতাববীর আত্মর্াগরণের লগ্নে তা ষস্তব হল। এর] দেখালেন বিদেশীশক্র | ওদের জয় করেছে ঠিকই-__কিন্তু সে জয়ের পেছনে আছে তুমুল সংগ্রামের পটভূমিকা |

৪৯৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

দেশকে বিদেশীর কবল থেকে মুক্ত করার তীব্র আকাঞ্ষা ছিল বলেই বহিরাগত শক্তির জয়লাভের পথটি কণ্টকাকীর্ণ হয়েছিল প্রমধনাথ মিত্র 'জয়পাল' নাটকের কাহিনী বেছে নিয়েছেন একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। অপ্রতিদ্বন্দ্বী তুকী সুলতান মামুদের এদেশ জয়ের ঘটনাট তিনি নাটকে স্থান দিয়েছেন কল্পনা করেছেন লাহোরাধিপতি জয়পালপকে একজন বিশ্বস্ত স্বদেশপ্রেমিক রূপে, যিনি হ্বলতান মামুদের আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য সর্বশপঞ্তি শিয়োগ করেছিলেন এই কল্পনায় প্রমথনাথের মৌলিকত্ব খুব বেশী নেহ,--কারণ ইতিহাসাশ্রিত স্বদেশাস্বক নাটকরচণার বাধাধর? রীতিটি তান অনুসরণ করেছিলেন মাত্র কিন্তু সুলতান মামুদকে প্রতিনায়ক হিসেবে কল্পন। করে ভারত হতিহাসের একটি মসীলিপ্ত অধ্যায়কে খানিকটা কলঙ্বমুক্ত করার এহ শুভ প্রয়াসটি তার মৌলিকত্ব হুচনা করে

নাটকের মুখ্যচরিত্রগুলোর স্বদেশপ্রাণতা লক্ষ্যণীয় চাদর সংগ্রামসিংহ, রাজপুত্র অনগ্গপাল, সহকারী সেনাপতি বিজয়কেতু-_দেশের এই তরুণ যুবশক্তি একক্রে দেশরক্ষার শপথ গ্রহণ করেছে। নাট্যকারের সুপ্ত দেশচেতনণাটি এখানে কাজ করেছে জয়পাল দুর্ভাগ্য নিয়ে জন্মেছেন, বিদেশী শক্র এসে দ্বারে হান দিয়েছে তার ব্রাজত্বকালে, কিন্তু তিনি সার্থক রাজ] বিপদকে তিনি তুচ্ছ করেছেন, যোগ্যপুত্র যোগ্যসেনাপতি তীকে সাহায্য করেছে সর্বদা

প্রাচীন রীতি আঙ্গিকের প্রথায় রচিত নাটকে আমর] দেবতা-নর-দস্থ্য -উদাসিনী-তপব্বিনী উদাসীন, সব রকম চরিত্রই খুঁজে পাবো দেবতারাও চরিত্ররূপে কল্সিত, ইন্দ্র কর্য্য চরিত্র হিসেবে স্থান পেয়েছেন, গতানুগতিক প্রথায় ভবিষ্তৎবাণী করেছেন। নাটকের দিক থেকে এর কিছুমাত্র মূল্য নেই তবে নাটকের সঙ্গে কাব্যের কিছু মিল আবিষ্কার করা খুব দুরূহ ব্যাপার নয়। দেবতা চরিত্রকে এ্রতিহাসিকতার মাঝখানে টেনে আনার পেছনে কাব্যের প্রভাবহ খুব বেশী মধুক্থদনের “মেঘনাদ বধের” ভাষার গগ্রূপ যেমন লাট্যকার সংলাপরূপে ব্যবহার করেছেন তেমনি দেবদেবীর মুখে কিছু শাশ্বতবাণী শোনাবার লোভটিও সংবরণ করতে পারেননি এতে কিছু অসংগতি যে সুষ্টি হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। দেশপ্রেম মূলক নাটকের স্থায়ীরস-_বীর রস। জীবনযুদ্ধের ফলাফল জেনে ফেলার পরেও বীরত্ব দেখাবার মত মনোবল কোন কোন চরিত্রে থাকে | নাট্যকার অবশ্য ভাগ্যের দোহাই দিয়ে জয়পাঁলের অসাঁফল্যকে সমবেদন। জ্ঞাপন করেছেন নাটকে সার্থক সংলাপে বীররসের উন্মাদনা সৃষ্টির আগ্ত্ত প্রয়াস নাটকে লক্ষ্য করা যায়। গতাচুগতিকতার মধ্যেও কিছু মৌলিকত্ব-_-আপাতঃবিরোধিতার মধ্যেও কিছু সাত্বন।

এখানেই |

নাটক ৪৯৭

প্রথমেই দেশের দুদিনের আভাস দেওয়া হয়েছে। বিদেশী আক্রমণকারী ভারতজয়ে উদ্ভত। রাজা! জয়পাল সীমান্ত অঞ্চলের সম্রাট বলে শক্রশক্তিকে বাঁধা দানের দায়িত্ব তাঁরই রাজা চিত্তিত-_কিস্তু সেনাপতির1 অকুতোভয়, এদের বীরত্বপূর্ণ সংলাপ নাট্যকারের দেশাত্মবোধের পরিচায়ক | দেশের যুবশক্তির মুখে এই সাহসিকতার বাণী আরোপ করে নাট্যকার পরোক্ষভাবে কিছু ইঙ্গিত স্বজন করেছেন ংগ্রামসিংহ, বিজয়কেতু, অনঙ্গপাল দেশাত্মবোধের নির্ভীকতার পরিচয় দিয়েছেন, “সংগ্রাম সিংহ- প্রাণ থাঁকতে পঞ্চনদ যবন অধিকারভুক্ত হবে না। অনঙ্গপাল--যধবনদের সহিত প্রাণপণে যুদ্ধ করব, স্বদেশরক্ষার জন্য জীবন দিতে কিছুমাত্র কুষ্টিত হব না। বিজয়কেতু--চির স্বাধীন পঞ্চনর্দ কখনই অস্তের অধীনতা' স্বীকার করবে না।” 1 ১ম অঙ্ক, ২য় দৃশ্য | রাজপরিবারে প্রতিপালিত উদ1সীন সদানন্দের দেশপ্রেমও সোচ্চার গভীর সদানন্দ__-ভারত যাঁয়-_রক্ষা করুন। ভারতের সৌভাগ্যশশী চিরকালের নিমিত * অস্তঠিত হয়- রক্ষা! করন |! যবনেরা এসে দেশগপ্লাবিত করে, সোনার ভারত ছারখার করে, রক্ষা করুন 1! [১ম অঙ্ক, তৃতীয় দৃশ্য ] সদানন্দ নাটকের অনুল্লেখ্য পার্খচরিত্র হলেও দেশপ্রেমের বক্তব্য নাট্যকার এই চরিত্রের মুখে আরোপ করেছেন নাটকের জটিলতম মুহূর্তে সদানন্দ বিপদের গ্রস্থিগুলো অকুতোভয়ে ছিন্ন করেছে। রাজা জয়পালের সঙ্গে কথোপকথনেও গভীর দেশপ্রেমের বাণী উচ্চারিত হয়েছে,_ আমি বলছি পঞ্চনদ কখন সহজে আপনার স্বাধীনতা নষ্ট করবে না। আমি কিংবা বিজয়কেতু আপাততঃ কিছু বিমন] হয়েছি বলে তুমি ভয় পাচ্চ, কিন্ত সদানন্দ, এটি নিশ্চয় জেনো, ডমরুধবনি শ্রবণ করলে ফণী কখন শ্থির ভাবে থাকতে পারে না। -*"ুমি শুনবে, পঞ্চনদবাসীরা প্রত্যেকেই গম্ভীর স্বরে বলছে “জীবন থাকতে কখন বিদেশীয়ের বশ্যতা শ্বীকার করব না, মন্ত্রের সাধন কিম্বা শরীর পতন ।”৪৫ কিরণচন্দ্রের 'ভারতমাতায়” দেশপ্রেমোচ্ছীসের বাণী বহন করেছে নারী। সম্ভবতঃ তার বার প্রভাবিত হয়েই উদাসিনী চরিত্রটি অঙ্কন করেছেন নাট্যকার-_অবশ্ঃ “পুরু বিক্রমের” এ্রলবিলার দেশীত্ববোধের প্রভাব পড়1ও খুব বিচিত্র নয়। নাট্যকার বিজয়কেতুর মুখে একটি সংলাপে জানিয়েছেন, “আমাদের স্রীলোকেরাও স্বাধীনতার জন, স্বদেশরক্ষার অন্ত, প্রাণ দিতে প্রস্তত আছে।”-সে ঘুগীয় প্রভাব, মধুহুদনের

৪৫, প্রেমখনাথ পিঠ, জয়পাল, ১৮৭৩ ৩২

৪৯৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেষ

নাঁরীব্যক্তিত্ব আবিষারের স্থত্র ধরে সেকালের নাট্যকাঁরগণও নারীর এই পৃথক চিন্তাধারাকে বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে স্থান দিয়েছেন তপস্থিনী ভারতের ভাবী অমঙ্গল চিন্তা করে মর্ধাহত হয়েছে--এই ছুর্দশায় ভারত জননীকে আহ্বান করে আক্ষেপ করেছে,_“জননি ! ভারতের ভাবী দুর্দশাসকল বর্ণন1 করে ভারতভূমির নিকট হতে চিরকালের জন্য বিদাঁয় নিচ্ছেন যবনেরাই ভারতের রাজসিংহাসনে উপবেশন করবে ।- হায় বিধি। এই তোমার বিধি ! মহারাঁজ !' মহারাজ জয়পাল ! আর কেন বৃথা চেষ্টা কর্চ, ভারতের স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারবে না উ£! তোমার জীবন নাট্যের শেষ দৃশ্য কি ভয়ানক | [ ওর অঙ্ক, প্রথম দৃশ্য

দেশচিন্তা তপস্থিনীকে মুহমান করেছে। এই ভাবাঁবেগে দর্শকের চিত্তও আলোড়িত হয় আবার ইন্দ্র ওতুর্য ছুই দেবতার সংলাপেও খানিকটা মানবীয় ভাব আরোগ করেছেন। এই চরিত্র ছুটির উপযোগিতা যে কিছুমাত্র ছিল না_ সেকথা! পূর্বেই বলেছি। “মেঘনাদ বধ কাব্যের” শক্তিহীন দেবতাদের মতই এ'রাও ওদবনির্ভর, বিধির বিধান মেনে নেওয়ার দুর্বলতা এদের চরিত্রে লক্ষ্য ণীয়,-__

ভারতে ঘবন প্রবেশ করেচে, যবনের। ভারতের অধীশ্বর হবে, পাপমতি শ্লেচ্ছ- দিগের কর্কশ পদদণ্ডে দেবগণের ভক্তভূমি ভারতের কোমল হৃদয় দলিত হবে, এতে কার মন না সন্তাপানলে দগ্ধ হচ্চে? কিন্তু বিবেচনা! করে দেখ যা হচ্চে, আর ষা হবে সকলই বিধাতার ইচ্ছায়। [ ৩য় অঙ্ক, ওর দৃশ্ঠ ]

দেশপ্রেম উনবিংশ শতাব্দীর আবহাওয়াতে পুষ্ট ক্রমবর্ধমান একটি অন্ুত্ভৃতি যা অতি আলোচনার ফলে প্রায়ই বিশেষত্বহীন হয়ে পড়ছিল! গতানুগতিকভাবে দেশাত্ববোঁধ প্রচারের পথ অক্রসরণ করতে গিয়েও প্রমথনাথ কিছু অভিনবত্ব সৃষ্টি করছেন ভারত ইতিহাসের একটি লগ্রকে চিত্রিত করার সময় তিনি ঘটনাটিকে প্রায় পৌরাণিকতার পর্যায়ে এনে ফেলেছেন। চিন্তার টৈস্য-_এতিহাসিকতার অবষানন। প্রকাশ পেলেও নিছক কঙ্পসনাশ্রয়ী রচনা বলে যদি ধরে নিই তবে নাট্যকারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা যায় না। দেশপ্রেম প্রচার করাই ধার লক্ষ্য,-_উদ্দেশ্যের জন্য তিনি যদ্দি মুখ্যকে গৌণ বল মনে করে থাকেন তীকে খুব দোষ দেওয়া চলে না। দেশপ্রেম প্রসঙ্টি শুধু মাত্র রাজ্া-রাঁজপুত্র-সেনাপতি-সৈশিক কিংবা আধপাগলা চিত্রদের একচেটিয়। করে ন1 রেখে তিনি সন্ন্যাসী-দেবত। এদেরও টেনে এনেছেন মাত্র দেশের ছুদিনের জন্য ক্ষোভ-ছঃখ আক্ষেপ প্রকাশ করে এরাও কর্তব্য পালন করেছেন

“জয়পাল* নাটকের গভীরতম আতি আমরা জয়পালের মুখেই শুনতে পাই। রাঁজ্যরক্ষার আস্তরিক চেষ্টা সুমহতী হলেও বৃহতশক্তির কাছে ক্ষুত্রশক্তির পরাঙ্গয়

নাটক ৯৬

অনিবার্ধ-_-তাই জয়পালের প্রচেষ্টাও সফল হয়নি দেশকে বিদেশীর হাতে সমর্পণ করার বেদনায় মহামান্য জয়পাঁল মর্মবিদারক উক্তি করেছিলেন,

“জন্মভূমি! জন্মভূমি! পঞ্চনদ! ভারত! ছুঃখিনী ভারত! আমার শত সহস্র জীবন দিলেও কি তোমার স্বাধীনত। একমুহূর্তের জন্য ফিরে পাঁওয়া যাঁয় না_ _-আজ আর্যনাম আর্ধগৌরব চিরকালের মত অন্তমিত হতে চলল, ভারতের আজ শেষ স্বাধীন নিশি !_জন্মভূমি! আমার অপরাধ মার্জনা কর আমি এই বিপদের সময় তোমায় পরিত্যাগ করে গেলুম 1” [ ৫ম অঙ্ক, ২য় দৃশ্য ]

এই বেদনাঘন বিলাপোক্তি যে কক্ণরস সঞ্চার করে তাও আমাদের দেশচেতন! জাগানোর পক্ষে সহায়তা করেছে সে যুগের দেশাত্মবোধক নাটকের গতানুগতিকতা স্বীকার করেও বলা যায়, দেশপ্রেমীস্বক অংশটুকু যথেষ্ট হৃুদ্য হয়েছে

এই জাতীয় আরও একটি নাটকের রচয়িতা হচ্ছেন গঙ্গীধর ভট্রীচার্য-_ইনি “তারাবাই, রচনা করে দেশাক্সবোধের প্রসঙ্গ প্রচার করতে চেয়েছিলেন দেশপ্রেম ছাড়া কোন লক্ষ্যণীয় বক্তব্য নটিকে নেই,_-কোন উদ্দেশ্যও নট্যিকারের ছিল না। রাজস্থানের প্রচলিত কাহিনীর অহ্থসরণে নাটকটি লেখা তবে বীরনারী তারাবাই- এর আদর্শে বঙ্গনারীও বারাক্গনা হয়ে উঠুক এই কামনা করেছেন নাট্যকার “উপহারে" ষে কবিতাটি যোৌজন। করেছেন সেটি লক্ষ্যণীয়,__

তারার মোহিনীমৃতি ভাবিয়ে অন্তরে, তাঁর। হতে সাধ যেন সকলেতে করে ত৷ হলে হিন্দুর পুনঃ গৌরব-তপন, বঙ্গের আকাশে আসি দিবে দরশন সতীত্ব বীরত্ব দেশহিতৈষিতা আলো, আলিয়ে দেশের মুখ করিবে উজ্জল | হায়! কবে দেখিব রে ভরিয়ে নয়ন, কীরপত্বী বীরমাতা বঙগযোসাগণ |

হয় যেন বঙ্গনারী সো বীরাখনা, গঙ্গাধর শর্মণের.একান্ত বাসনা 1৮5৬

অগ্ঠান্ত দেশাত্মবোধক ন'টকের মত এখানে স্বদেশী সংগীত আরোপ করেছেন__ কিন্ত আত্মশক্তির জাগরণ নয়, দেবতার আশ্রয় প্রার্থনা করেই নাট্যকার নিশ্চিন্ত স্বদেশী সংগীতটি তাই একটু বিশিষ্ট

৪৬, গঙ্ষাধর ভট্টাচার্য, তারাবাই, ১২৮১।

৫০৬ উনবিংশ শতাববীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রে

দেশরক্ষা ধর্মরক্ষা কর গো কালিকে। হিন্দুকুলে হিন্দৃস্থান দেহি হিন্দু পাঁলিকে। | ১ম অঙ্ক, ২য় গর্ভাঙ্ক

জাতীয় প্রার্থনায় যে স্বাধীনত| লাঁত করা যায় না সে চেতনাঁটিও নাট্যকারের নেই। গতাম্ুগতিকতাঁর স্ব প্রাচীনের ধর্মপ্রাণত| মিশেছে এখানে

তাঁরাবাই দেশোঁদারের অস্ঘই পুরুযোচিত শক্তি অর্জন করেছিলেন,-_এ কাহিনীতে এই ব্যঞ্জনাটকু নাট্যকারেরই যোজনা তারাঁধাই বলেছেন,_

“আমি নারীকৃলে জন্মে পুরুষোচিত কার্য সমরবিষ্ঠা। অধ্যয়ন কচ্চি কেন! কেবল পিতাকে সাহায্য কর্তে, স্বদেশের স্বজাতির স্বাধীনতারূশ অমৃল্যধন দস্্যর গ্রাস থেকে পুনরুদ্ধার কর্তে, আর দুষ্ট অপহারকের বিনাশ কর্তে, আমি সমরানলে জীবন পর্যন্ত আঁছতি দিতে প্রস্তুত আছি--” [এ]

এখানে তাঁরাবাইফে জলন্ত স্বদেশপ্রেমিক! রূপেই কল্পনা করেছেন নাট্যকার। স্বাধীনতা আন্দোলনে বীরনারীরাঁও আমাদের সংগ্রাম শক্তি বৃদ্ধি করতে পারেন নাট্যকার সে আশা পূর্বেই ব্যক্ত করেছেন। দেশাত্মবোধের আবেগে তারাবাই অন্থত্রও বলেছেন,

যাঁরা স্বদেশের জন্মতবমির অধিকারিত্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে, যারা জীবনের সার স্বাধীনতারপ অমূল্য ধন অপহারক দস্থযর গ্রাস থেকে রক্ষা কর্তে পারে নাই, তাদের আবার বিশ্রাম কি? সখ ইচ্ছাই কি? স্বজাতির, স্ববংশের, স্বদেশের অপমানগনপ বৃশ্চিক দংশন সম করলে কি নয়নে নিদ্রার আবির্ভাব হয়? যাঁদের হয় তারা ানবকুলে অত্যন্ত হেয় ! | য় অঙ্ক, ২য় গর্ভাঙ্ক ]

জাতীয় উক্তি যে অত্যন্ত সময়োপযোগী যূল্যবাঁন-_সেটুকু সহজেই বোবা! যায়। দেশপ্রেমের প্রলেপেই নাঁটফের সব তুচ্ছতা ঢাকা পড়ে যায়। যদিও, নাঁটক নাট্যকারকে প্রতিষ্ঠা, সাফল্য, সম্মান কিছুই এনে দেয় নি, কিন্তু তবুও দেশপ্রেমে উদ্ধদ্ধ হয়েই নাট্যকারগোর্ঠী এগিয়ে এসেছিলেন। দেশঞমের বিশুদ্ধ আবেগে অনুপ্রাণিত জাতীয় সৃরির মূল্য সেদিক থেকেই বিচার করতে হবে।

ষষ্ঠ অধ্যায় উপহ্যাস

উনবিংশ শতাবীর বাংলা সাহিত্যের সর্বাপেক্ষা বয়ংকনিষ্ঠ হৃ&টিকেই উপন্যান আখ্যা দিতে পারি। বাঁদান্ববাদের আড়াল থেকেও স্পট ভাবে সত্য অন্থুতব করা যায় যে প্যারীটাদ মিত্র কিংব] ভৃদেব মুখোপাধ্যায় উপন্যাসের লক্ষণাক্রান্ত যে গ্রন্থ রচনা করেছিলেন তা পূর্ণ উপন্যাস নয়। সুতরাং ১৮৬৫ খ্রীষ্টাব্দে বঙ্িমচন্তরের 'ছূর্গেশনন্দিনীই' উপন্াঁস রচনার প্রথম সৌঁপাঁন। সাহিত্যের অন্তান্ত শাখায় স্বদেশপ্রেমের যে বাণী স্বতোৎসারিত উচ্ছ্বসিত বক্তব্যে পরিণত হয়েছে উপস্যান নামক সর্বকনিষ্ঠ রচনা- সম্তারেও তার প্রতিফলন পড়েছিল স্বতঃসিদ্ধভাবেই। যুগদর্পণ হিসেবেই সাহিত্যের বিচার হয়ে থাকে এবং উপন্তাঁস-নাটক-কাব্য-প্রবন্ধের গভীরে প্রবেশ করলে মুগচিত্রের নিখুঁত রূপই তাতে ধরা পড়তে দেখি স্বদেশপ্রেমকে অবলম্বন করেই যে যুগজীবন উচ্চকিত হয়ে উঠেছিল-_কাব্য-নাটকে যে চিত্র বারবার আমাদের স্থপ্ত দেশচেতনাঁকে জাগিয়েছে, উপন্তাসেও তাঁর নিবিড় পরিচয় রয়েছে। বন্ধিমপূর্ব যুগেও উপস্তাস রচনার আকুতি দেশের মাটিতে ছিল এবং তা থাকাটাই স্বাভাবিক সঙ্গত কোনো! কৃষ্টিই আকম্মিক নয়, এঁতিহের অনুভাবনা আমাদের চিত্বলোকের দ্বারে বার বার আঘাত করে বলেই প্রকাশের আকুলতা৷ জাগে কাঁজেই প্রথম উপন্যাসকার বঙ্কিমচন্ত্রের পূর্বহরীরা উপন্তাসের যে খপড়া রচনা করে গেছেন-_ধারাধাহিকভাবে সেখানেও স্বদেশচেতনার কোনো! প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ পরিচয় আছে কি না দেখা দরকার। পূর্বেই বলেছি, যুগ দেশতাঁবনায় কল্পোলিত একটি উদ্যুখর জনতার মূগ। যে পবিত্র ধ্যান সাঁধারণকে জাগিয়েছে__অগ্টার মনে তা এনেছে হৃজনের প্রেরণা স্ততঃ ধ্যান ধারণার পূর্ণ রূপ যত্তক্ষণ ন| বাঁণীরূপ লাভ করছে ততক্ষণই সৃষ্টির মতা নিয়ে সন্দেহ জাগে, যে সাহিত্যে তা উদ্ভাসিত--সমালোচক অরষ্টা তাকে মভিনননন জানাতে ছিধাবোধ করেন না। উনবিংশ শতাঁদীর কাব্যে নাটকে দেশপ্রেমের যে উজ্জ্রল ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করেছি-_উপন্তাসে অবিকলভাবে :সই ভাঁব আদর্শ রক্ষা করা সম্ভব নয়। উপন্যাসের বিষয়বস্ত কাব্যের মত আত্মগত কিংবা নাটকের মত দৃষ্গ্ধী নয়। উপন্তাসের গল্পরস কাহিনীধমিতা শপ্রেম প্রচারের সম্পূর্ণ প্রতিকূলই বলতে হয়। তরু কালের মন্দিরায় যে শভাঁবনাঁর স্বরটি থেকে থেকে বেজেই চলেছে-_উপন্বাসের নিবিড় ঘটনাজাল আর

৫*২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

সক্ষম মনম্তত্বের মাঝখাঁনেও তার ছায়াপাঁত দেখতে পাই। আর দেশভাবনার মং একটি নিতান্ত আত্মগত চিন্তা মননের স্থান উপন্তাসে অবান্তর হলেও এর আবির্ভাবকে অপ্রত্যাশিত বলা যায় না। 00120 08215550710) যে কথ। বলেছে, ভার ২৪০০ ৪04 26010021165 গ্রন্থে

পু 19 0698056 11619016009 91520 15০010 0610800081 ০0] 200 660001005--0690 6172190150০ 096186100£ 0015 610953 ০! £675612] 80002] 0০৬61000761), 0090 006 ভাতা 108505৬০650 6053102181016 52205 00 60০ 50015 0৫613961012] 11061200165 2200 0আয 50005 *,১

উনবিংশ শতাব্দীর যে লগ্নে বঙ্কিমচন্দ্রের আবির্ভাব যে যুগে তাঁর ধ্যান-ধারণ মনন চিন্তন রূপ নেওয়ার সময়--তাঁকেই আমর] রেনেসীর যুগ বলে থাকি। কাজেই দেশভাঁবনার স্বচ্ছত৷ তাঁর চরিত্রের সমস্ত দ্িককে উদ্ভাসিত করতে সাহায্য করেছিল বলেই উপন্থাসের মত নিতান্ত তন্ময় লাহিত্যেও উপন্তাঁসিকের ব্যক্তিচিন্তার প্রতিফলন পড়েছে অনায়াসে শুধু বঙ্কিমচন্দ্র কেন, উপন্তাঁসের প্রাকৃ-বঙ্কি'ম যুগটিতে আমর যে কজন উপগ্ভাসিককে আবিফার করেছি-খুব আশ্চর্য ব্যাপার বলে মনে হলেও স্বদেশপ্রেমিকতা তাদের চরিত্রের অন্যতম প্রধান লক্ষ্যণীয় বৈশিষ্ট্য ছিল, স্বদেশভাবন তাদের রচনার একটি বিষয় বলেই গৃহীত হয়েছিল।

কোনে! বিশেষ ধরণের সাহিত্যের জন্মলগ্ণ বিচার করার খুব একটা অস্কবিধা নেই কারণ যা ছিল না তার অনস্তিত্বের হেতু বিশ্লেষণ করলে খুব সহজেই তা নির্ণাত হতে পারে বাংলা সাহিত্যে উপন্যাসের আবির্ভাব মুহূর্তটিকেও আমরা সহজেই বিশ্লেষণ করতে পারি গছোর পথ বেয়ে অনায়ান ভঙ্গিতে প্রবন্ধ-রম্যরচনা-ব্যঙগ- প্রহসন-নাঁটিকা রীতিমত নাটক যখন বাংলা সাহিত্যের আসর জ'কিয়ে বসেছে তখন একটি নিবিড় নিটোল গল্প শোনার প্রবৃত্তি যে খুব সহজেই জেগেছিল ত1 বোঝা যায়। অবশ্য নাটক ছিল.-গল্লাকারে উপদেশাত্মক কাহিনী ছিল, অন্থবাঁদ গল্পও ছিল--কিস্তু সমগ্র জাতির মন খু'জেছে সম্পূর্ণ অভিনব সাহিত্য, রোম্যান্স নিবিড় একটি জমাট কথাবস্ত,-_যার গভীরে একক প্রবেশের বাঁধা নেই। সেই আকাজ্কা থেকেই উপন্যাসের জন্ম। কাহিনীর রসান্বাদন-উন্মুখ স্থরসিক পাঠকর! তাই ভৃদেখ, হুতোম আর টেকচাদকে খুব সহজে আঁপন করে নিয়েছিল এদের মধ্যে আবার একটু স্থক্্মভাগ দেখা যায়৷ চিন্তাশীল প্রাবন্ধিকের স্থচিস্তিত কাহিনীধর্মী রচনাঁকে দে

২৭.:401)0 05152900707, ৪০৪ 500 00175118480, 87045021690 06, 00121 870 0:৬৮ 91 050100907, [.01500175 079, 19151505,

উপস্তাস ৫৩০৩

যুগের পাঠকব। সভয়ে এড়িয়ে গেছে-_- আর নিতান্তই আঞ্চলিক ভাষার বৈঠকী ভজিতে খানিকট। লংলগ্ন প্রায় অসংলগ্ন রচনার সঙ্গে পরিচিত হয়েছে গভীরভাবে যদিও পূর্বেই বলেছি সব রচনার কোনটিকেই যথার্থ উপন্যাস ৰলা যাবে না উপন্যাসের যে স্কুল লক্ষণ আমরা বঙ্কিমচন্দ্র রচনায় পেয়েছি-_ইতিপূর্বে কোনো রচনাতেই তা স্থলভ ছিল না। বোধ হয় অনুবাদ রচনা বলেই “অঙ্গুরীয় বিনিময়ের, মত একটি সম্ভাবনাপুর্ণ উপন্যাসের অস্বচ্ছ রূপকে সে যুগের রসিকেরা উপন্যাসের চোখে দেখেনি আর শ্বদেশপ্রেমের যে সহজ ধারাটি সে যুগের সমস্ত লেখকচিত্তকে প্রায় অধিকার করে বসেছিল, উপন্যাসিকরাঁও তার হাত থেকে রেহাই পাননি তাই দেখি জন্মলগ্ন থেকেই বাংলা উপন্তাসে অনেক বিচিত্র বক্তব্য পরিবেশিত হয়েছিল কিন্তু সেই সঙ্গে লেখক চিত্তের দেশানুভূতির একটা তীব্র প্রকাশ অনায়াসে ধরা পড়েছে। বঙ্কিমচন্দ্রের আগে শুধু মাত্র ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের রচনাতেই নয়,_নিতান্ত হাক্কা চালে লেখা অসংলগ্র কথাবস্তর মধ্যেও হুতোম কিংবা টেকদের স্বদেশপ্রেমের স্বতোৎসারিত প্রকাশ দেখি।

বাংলা উপন্যাঁসকে বয়ঃকনিষ্ঠ বলেছি--কারণ নাটকে-প্রবন্ধেককাব্যে স্বদেশ ভাবনা যখন একটি সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে তখনও উপন্যাসের আবিতাবই হয়নি। ১৮৫২ সালেই একাধিক পূর্ণবঙ্গ নাটকের জন্ম হয় কিন্তু ভূদেবের উপন্যাস লক্ষণাক্রাস্ত 'প্তিহাসিক উপন্যাস" গ্রন্থটির প্রকাশকাল তারও চাঁর বছর পরে ১৮৫৬ সালে। ,আলালের ঘরের ছুলাঁল'-এর সমকালীন রচনা হলেও মাত্র দু'বছর পরে প্যারীচাদ সম্পূর্ণ ভিন্ন আদর্শ উদ্দেশ্য নিয়েই "আলালের ঘরের ছুলা'ল” [১৮৫৮ গ্রন্থটি প্রকাশ করেছিলেন। উপন্যাসে দেশপ্রেমের প্রতিফলন কোথায় কি ভাবে দেখা গেছে তার আবিষার প্রসঙ্গে প্যারীটাদের গ্রন্থটির সাহায্য মিলবে না, কারণ দেশহিতৈষী বা সমাজদরদীর কলম থেকে যে সাহিত্য জন্ম নেয়, সেই সাহিত্যে যদি তার স্বদেশভাবনার প্রতিরূপ না থাকে তবে বস্তসন্ধানী আবিফারকের থুবই অস্থবিধায় পড়তে হয় ভূদেবের 'এ্রতিহাঁসিক উপন্যাসে আমরা শুপু ঘটনা] নিবিড় অন্ত মঘিত একটি অনুদিত কথাবস্তই লাভ করিনি, স্বদেশপ্রেমিক ভূদেবের অন্তরে দেশচিন্তার একটি স্বচ্ছ ধারা প্রবাহিত হতে দেখেছি,_সেটিই আমাঁদের ঈপ্সিত বস্ত। তাই লেখক প্যারীটাদের সমাঁজ সংস্কারকের ভূমিকা থাকা সবেও তাঁর রচিত নক্সাটিতে সমাজের একটি বাস্তব চিত্ররসই আমর] উপভোগ করেছি, কিস্তু ভূদেবের উপস্থাস আমাদের দেশচিস্তার অন্কুভাঁবনাটি জাঁগাঁতে সাহায্য করেছে সেমুগের লামীজিক জীবনে ভৃদেবের মনীষ! দেশহিতৈধিতা প্রার প্রবাদতুন্য সত্য বলেই পরিগণিত হয়েছিল, সেদিক থেকে প্যারীটাদ মিত্রের স্নাঁমও বড় কম নয়। সামাজিক

৫০৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

আন্দোলনের সঙ্গে এরা ঘনিষ্টভাবে সংযুক্ত ছিলেন বাংলাদেশের আন্দোলন প্রগতির ইতিহাসে এরা ম্মরণীয় ব্যক্তিত্ব দেশভাবনায় আন্দোলিত হতে পেরেছিলেন বলেই নান কর্মে চিন্তায় এরা অনলস দেশপ্রেমিকতাঁর পরিচয় দিয়ে গেছেন “আলালের ঘরের ছুলালে”-_শুধু উপন্তাসের গুণই নেই, সেযুগের গর বলার ভাষাটি ঠিক কেমন হওয়া! উচিত তা নিয়েও গভীর চিন্তা করেছিলেন লেখক কথ্য গঞ্ভের সাহায্য না নিলে আমাদের দৈনন্দিন জীবন-যাঁপনের কাহিনী পরিবেশন কর! সম্ভব নয়, ধারণা থেকেই প্যারীচাদ কথ্য গছ্যাসংলাপের আশ্রয় নিয়েছিলেন ভূদেব-বঙ্কিম-রমেশচন্দ্রেরও বঞ্ছ পরে দৈনন্দিন জীবনের ভাষায়ই উপস্তাসের কথাবস্ত পরিবেশন করার তাগিদ লাভ করেছি আমর1। বর্তমানে উপন্তাসের ভাষা কেমন হবে নিয়ে আমাদের আর কোন দ্বিধা নেই, প্যারীষ্ঠাদের যুগে তা একটা প্রশ্রময় সমস্যা ছিল বৈকি? “আলালের ঘরের ছুলাঁলের” প্রত্যক্ষ আবেদন যাই হোক না কেন এর পরোক্ষ বক্তব্যটি স্বজাতিচিন্তা স্বসমাজচিন্তারই ফলাফল মাত্র বাবুরামের পুত্র মতিলালের চরিত্রটি জীবন্ত করে উপন্যাসে তুলে ধরে লেখক বোধ হয় সমাজের চোঁখে আঙ্গুল দিয়ে শিক্ষা অজ্ঞতাঁর ভয়াবহতা বোঝাঁবার চে! করেছিলেন এই চেষ্টার মূলে লেখকের গভীর সমাজদরদ প্রকাশ পেয়েছে বলেই ধারণা করি দেশপ্রেমের অশ্ফুট রূপ লমাজচিস্তার পথ বেয়ে কিভাবে উচ্ছুসিত হয়ে ওঠে, রামনারাঁয়ণ তর্করত্বের নাটক প্রসঙ্গে সে আলোচন। আমরা করেছি কিংব! ঈশ্বরগুপ্ধের সমাজচিস্তাজাত কবিতাগুচ্ছের বিস্তৃত আলোচনা থেকেও পরোক্ষ দেশপ্রেমের স্বরূপ আবিষ্কার করেছি উপন্তাসের সম্ভাবনা! যখন ঘনীভূত হতে চলেছে সেই লগ্নে উপন্তাসেও দেশপ্রেম কিভাবে অস্বচ্ছ অস্পষ্টাকারে ব্যক্ত হোত, “আঁলালের ঘরের ছুলাল' তারই দৃষ্টান্ত প্যারীচাদের সাহিত্যকীতির মূল্যারনপ্রসঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্র লেখক-এর এই উদ্দেশ্যকেই অভিনন্দন জানিয়েছেন বক্তব্যে প্রকাশিত না হলেও উদ্দেশ্টে যা আভাসিত হয়েছিল তাঁর যথোচিত যৃল্য স্বীকার করে বঙ্কিমচন্দ্র বলেছিলেন,-_

“তিনিই প্রথম দেখাইলেন যে, সাহিত্যের প্রকৃত উপাদান আমাদের ঘরেই আছে-_ তাহার জন্ত ইংরাজী বা সংক্কতের কাছে ভিক্ষা! চাহিতে হয় না। তিনিই প্রথম দেখাইলেনযে, ঘেমন জীবনে তেমনিই সাহিত্যে, ঘরের সামগ্রী যত হন্দর, পরের সামক্জী তত হ্থন্দর বোধ হয় না তিনিই প্রথম দেখাইলেন যে, যদি সাহিত্যের দ্বারা বাংলা দেশকে উন্নত করিতে হয়, তবে বাল! দেশের কথা লইয়াই সাহিত্য গড়িতে হইবে প্রন্কৃত পক্ষে আযাঁদের জাতীয় সাহিত্যের আদি “আঁলালের ঘরের ছুলাল* ।২

২. বাংল! সাহিত্যে ৬প্যারীটাদ মিত্র, বঙ্ষিম রচনাবলী সমগ্র সাহিত্য ২য় খও। সাহিত্য সংসদ, করিকাত।

উপস্কাল ৫০৪

এই উচ্চ প্রশংসা ্বদেশপ্রেমিক বঙ্কিমচন্দরের পূর্বক্থরীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা- বোঁধেরই ফল। গঠন পর্বের কিছু ক্রটি অসম্পূর্ণতাকে স্বীকার করে সত্যিকারের গৌরবটুকু অর্পণ করার রীতিটিই বঙ্কিমচন্দ্র প্রয়োগ করেছেন ধরণের সমালোচনা ॥। কাজেই প্যারীটাদ আদি কথাসাহিত্যের উদ্ভাবক বলেই নন, উপন্যাসে সমাঁজচিস্তাকেই বড়ো করে স্থান দিতে পেরেছিলেন বলেই তার কথা বিশেষভাবে স্মরণ কর] দরকার সমাজ সাহিত্যের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্বীকার করে বাংলাদেশের ঘরোয়! কাহিনী একক্কত্রে গেঁথেছিলেন বলেই প্রথমযুগের ওপন্যাসিকদেব মধ্যে তীকে বিশেষ স্থান দেওয়।৷ সঙগত হয়েছে। তাছাড়া সমগ্র জীবনের নানাকর্মে তিনি দেশহিতৈষিতার প্রমাণ রেখেছেন নানাভাবে | বহু সভালমিতির সঙ্গে সংশ্রিষ্ট থেকে আজীবন দেশের সেবা করে গেছেন তিনি। কর্মে জ্ঞানে ধিনি দেশপ্রেমী তাঁর অযূল্যকীতি হিসেবে এই একটি মাত্র রচনাঁকেই ম্মরশ করে প্যারীটাদকে সাহিত্যরসিকরা মনে রেখেছেন, এত সত্য কথা জনপ্রিয়তায় তিনি সেঘুগে অনেকেরই শীর্ষে ছিলেন। তার মৃত্যুতে [717409 7290100 যে কথ! বলেছিলেন তাঁও লক্ষ্যণীয়,

“0 10100 56০01010009 10525 11615 ০6121 2 050660. 01161, 01501750151)90 ৪6001: ০16৮০] আ10, ৪0 581690 080106 2100 2 27000518500 501110021] 217001121৮৩

্বদেশপ্রেমী প্যারীটাদের স্বদেশপ্রেম শুধুমাত্র তার নক্সা রচনাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না--তাই জীবনের নানাক্ষেত্রে তিনি তাঁর দেশসেবার চিহ্ন রেখেছেন

ভূদেবের কিছুকাল পরে সাহিত্যিক প্যারীটাদের আবির্ভীব হলেও আলোচনার দিক থেকে তাকে অগ্রাধিকার দেবার একটু হেতু আছে। বাংল! পাহিত্যের আঁদি উপন্যাঁসকার হিসেবে টেকটাদ ভূদেব মুখোপাঁধ্যায়-এর নাঁমোক্লেখ করা হয়ে থাঁকে। কিন্ত একই সঙ্গে একই প্রসঙ্গে দুটি নাম উচ্চারণে কিছু বাধা আছে। ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের “এতিহাসিক উপন্তাস” তার মৌলিক রচন! নয়, কাহিনী তিনি সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু “আলালের ঘরের ছুলালের কাহিনী প্যারীচাদের নিজস্ব উদ্ভাবন “আলালের ঘরের ছুলালে' যে চরিত্র সম্ভার সাজিয়েছিলেন তাতে উপন্যাসের বৈচিত্র্য অনেক বেশী পরিমাণে রয়েছে, বাবুরামের সংসারটিই প্রধানত; আলোচনায় স্থান পেয়েছে এর একটা পৃথক গৌরব আছে রচনারীতির উচ্চার্গ গুণ হয়ত নেই-__কিস্ত মৌলিকতায়, _ উদ্দেশ্টের আন্তরিকতায় গ্রন্থের রচধ়িত! প্যারীডাঁদই বোধ হয় অগ্রাধিকার পাবেন। অবশ্য ভূ

৩, সাহিত্য সাধক চরিতমালা ২র খও। প্যারীাদ সিত্র থেকে উদ্ধংত।

৫৩৬ উনবিংশ শতাবীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

মুখোপাধ্যায়ের সহজ প্রবণতা ছিল দুটি সুন্দর নিটোল কাহিনীর সঙ্গে পাঠকের পরিচয় করিয়ে দেওয়া কণ্টারের “রোমান্স অব হিস্টরি” পড়েও অনেকেই' আনন্দ পেতে পারেন,-__ভাষাস্তরিত করে ভূদেব তা সহজতর উপায়ে বহুজনের উপভোগ্য করে তুললেন | 15৮. 70216 08009-এর চ:০038105 ০£ 1[3190015+ গ্রস্থটি তিনটি খণ্ডে লেখা মনোরম ইতিহাস কাহিনী কণ্টার এখানে ইতিবৃতকে কাজে লাগিয়েছেন কিন্তু গল্পরস পরিবেশন করেছেন মুখ্যভাবে তিনটি খণ্ডে ভারত ইতিহ্শসের চমকপ্রদ মনোহর কাহিনীগুলো তিনি সাজিয়েছেন ভূদেব প্রথম খণ্ডের প্রথম কাহিনী তৃতীয় খণ্ডের সর্বশেষ কাহিনীটির বঙ্গানুবাদ করেছিলেন ক্ুতরাং রচনাগুণে তা যতই সম্ভাবনাপূর্ণ হোক না কেন ভূদেব এখানে মৌলিকতার দাবী করতে পারেন না। সম্ভবতঃ ভূদেব তা জানতেন বলেই মৌলিক কাহিনী হিসেবে পৃথক কোন পরিচয়ই দেননি তবে অন্ুবাদকের সহজ শক্তি দেখে অনুমান কর অপঙ্গত নয় যে ইচ্ছে করলে মৌলিক কাহিনী রচনা করেও ভূদেব বাংল সাহিত্যের উপন্তাঁস শাখার সাড়ম্বর ঘ্বারোদঘাঁটন করতে পারতেন | যে রচনা অনুবাদ হলেও লেখকের আত্মদর্শন জীবনদর্শনের বাণী স্বষ্ঠুভাবে তুলে ধরেছে তাতেই ভূদ্দেবের যথার্থ স্বকীয়তার পরিচয় মেলে উপন্ভান রচনা করার একটা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে ভূদেব মুখোপাধ্যায় কাজে হাত দেননি অথচ “আলালের ঘরের ছলাঁল' প্যারীঠাদ মিত্রের বিশেষ গবেষণার ফল বলতে হবে

ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের প্রাথমিক পরিচয় প্রাবন্ধিক হিসেবেই অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব সুতীব্র চিন্তাঁশক্তি নিয়ে ভূদেব মুখোপাধ্যায় সে যুগের বিদগ্ধ সমাজে আপন ক্ষমতায় স্থান লাভে সক্ষম হয়েছিলেন প্রবন্ধ রচনায় ভূদেব্প্রতিভার বিস্ময়কর রূপ ধরা পড়েছে,_-যথাসময়ে ত1 আলোচিত হয়েছে স্বদেশচিন্তর যে প্রথর অনুভূতি, --ম্বাজাত্যাভিমানের যে নিরহঙ্কার দর্প তার রচনার গৌরব প্রবন্ধেই তা স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে কিন্তু যিনি প্রাবন্ধিক তিনিই যখন কথাঁকাঁর--একই অখণ্ড প্রতিভার' ছুটি রূপেই প্রবন্ধ উপন্যাসের জন্ম তা ছাড়া রচশাকালের দিক থেকে আরও একটি বিষয় চোঁখে পড়ে একই সময়ে প্রবন্ধ উপন্যাস তিনি রচন! করেছেন তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধ গ্রন্থগুলোর জন্ম হয়েছে ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের পরিণত বয়সে [ ১৮৫৬-৫৭] প্রীষ্টাব্দে 'এরতিহাসিক উপন্যাসের সমসাময়িক রচন। হিসেবে ছাত্রপাঠ্য প্রবন্ধপুস্তক পুরাঁবৃত্সার [১৮৫৮]-এর উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রবন্ধ তার স্বভাব সৃষ্টি ; ভার মাঝখানে “&তিহাসিক উপন্যাস” ভূদেবের রচনাবৈচিত্র্যের সাক্ষ্য দেয় মাত্র। অথচ বাংলা সাহিত্যে উপন্যাসের অভাব থাকা সত্বেও ভূদেব মুখোপাধ্যায় দ্বিতীয় কোন উপন্যাস রচনা! করেননি কেন সেটাই আঁশ্র্য। প্রাবন্ধিক হিসেবেই

উপস্তাস ৫৩ প:

তার অসামান্য প্রতিষ্ঠা অথচ শুপন্যাসিকের অনুত্ৃতি অন্তর্দূ্টি তার একটি মাত্র ্রন্থেই পরিস্ফুট চিন্তাশীলতা ঘনীভূত রূপে প্রবীণ লেখকের প্রবন্ধে প্রকাশিত হয়েছে,_কিস্তু এঁতিহাসিক উপন্যাসের রচনাকার ভূদেব পূর্ণযৌবনে এঁতিহাসিক চরিব্রগুলোর হৃদয় বেদনা, প্রেম-ভালবাসা, প্রাপ্তি ত্যাগের নিগুঢ় বহন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, উপন্যাসের বিষয় হিসেবে যে ঘটন। তিনি বেছে নিয়েছিলেন তাতেও যথেষ্ট ক্মদশিতার পরিচয় যেলে। আপাততঃ সে বিষয়ে যথেই আলোচনার অবসর না থাকায় আমরা উক্ত উপন্যাস ছুটির মধ্যে স্বদেশপ্রাণ ভূদেবের দেশপ্রীতি কি ভাবে উচ্ছৃসিত হয়ে ধরা পড়েছিল সে বিষয়ে আলোঁচন' করব

ইয়ং বেঙ্গলের কর্ণধার মধুস্দনের পাঠ্যসঙ্গী ভূদেবের জীবনরীতির ভিন্নতা, আদর্শগত নিষ্ঠা থেকে সে যুগের পূর্ণচিত্রটি হৃদয়ঙ্গম করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে। ইংরাজের সভ্যতা সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগ থাকার অর্থই যে স্বকীয়তা বিসর্জন নয়__এ সত্য ভূদেব মুখোপাধ্যায় জন্মগত ক্বত্রে লাভ করেছিলেন,__ পারিবারিক এতিহ্ের প্রতি শ্রদ্ধা না হারিয়েও পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণে এতটুকু অসুবিধা হয়নি তাঁর | এই জীবনবোধ-_স্বধর্ম স্বপমাঁজনিষ্ঠ। ভূদেব চরিত্রের মূলধন নান! পরিস্থিতির মধ্যে এই দৃঢনিষ্ঠা জলন্ত স্বাদেশিকতা কেবল বৃদ্ধিই পেয়েছে বলতে হবে। যে চরিত্রের গভীর তলদেশে শুধু এই বিশ্বাস আত্মবোঁধই প্রবল তাঁর রচনায় লেই স্থরটিই যে মুখ্য হয়ে উঠবে তা স্বাভাবিকই | ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের সম্পর্কে যে. কোন আলোচনার হ্ত্র হিসেবে তার ব্যক্তি চরিত্রের এই মহত্বের প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে। চিন্তায়-কর্মেধ্যানে-মননে তিনি সে মগের একটি দেশভক্ত সন্তান এই দেশভক্তির রূপ শুধু মাত্র তার রচনায় বা সুজনেই প্রতিফলিত নয়--তাঁর জীবনধারার পরিমগ্ুলটিতে এই অন্ুভাবনা ছড়িয়ে আঁছে। পীশ্চান্য শিক্ষার আলোকে সেই অস্তনিহিত শক্তির ক্দুরণ ঘটেছে মাত্র তিনি নৃতন উদ্যমে স্বসমাঁজের স্বদেশের উন্নতির দিশারী হয়েছেন। তাঁর সম্বন্ধে যে কোন আলোচনায় তার গভীর নিষ্ঠাপূর্ণ দেশচর্চার প্রসঙ্গটি আসে সবার আগে। কোন সমীলোচক বলেছেন,

ভূদেব প্রকৃত হিন্দু, প্রন্কৃত স্বদেশপ্রেমিক, স্বর্গাদপি গরীয়সী জন্মভূমির উন্নতি সাধনে প্রকৃত চিন্তাণীল। এজন্য ভূদেব ধীরে ধীরে সেই মহিমানিত মহাজাতির অবলম্নীয় কর্তব্য পথ-নির্দেশ করিয়া দিয়াছেন | ****"

কেহ কেহ তাহার প্রদশিত যুক্তির অন্ুমোঁদন না করিতে পারেন, কিন্ত তাহার বিদ্যাবুদ্ধি, লিপিক্ষমতা, বিচাঁরপটুতা এবং তাহার হৃদয়ের সাধুভাবের বোধ হয়, বেহই

৫০৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা, সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

'অনাদর করিবেন না। জ্ঞান গভীরতা য়, স্বজ্কাতি হিতৈষণায় তিনি চিরঙ্মরণীয় হইয় খাকিবেন।৪

'তিহাসিক উপন্তাস” রচনার কোনো সত্যিকারের ভূষিক! নেই, নেই কোন পুর্ব প্রস্ততির ইতিহাঁস। বাংলা সাহিত্যে উপস্তাসের অভাব মোচনের উদ্দেশ্য হয়ত লেখকের ছিল কিন্তু কৌথাঁও নিয়ে এমন কোন প্রসঙ্গ লেখক আলোচন। করেননি তবে ইতিহাসন্ত্রীতিই যে উক্ত উপন্যাসদ্বয়ের হ্থচনা করেছিল এতে সন্দেহ্মাত্র নেই। কোনো সমালোচকের মতে,

“ইতিহাসের প্রতি এই গ্রীতিপক্ষপাত ছিল বলেই ভূদেব যখন গল্প রচনায় প্রবৃত্ত হলেন তখন কাহিনীর জন্য ইতিহাসের দ্বারস্থ হয়েছিলেন 1৮৫

ভূদেব যে সময়ে এতিহাসিক উপন্যাস রচনা! করেছেন সে যুগের শিক্ষিত বাঙ্গালী ভারত ইতিহাসের উজ্দ্বল অধ্যায়ের আলোচনায় গভীরভাবে মনোনিবেশ ।করেছিলেন অতীতচর্চর সাহুরাগ লক্ষপটি অবশ্য পাশ্চাত্ত্য শিক্ষারই ফলে ঘটেছিল। অতীতকে না জেনে বর্তমানে বাঁপ করার চেষ্টা শিক্ষিত মনকে পীড়া দিয়েছিল। ইতিহাঁসবিহীন্‌ জীবনযাঁপনে কোন অস্থবিধাই এককালে ছিল না। কিন্ত উনবিংশ-বিংশ শতকের শিক্ষিত বাঙ্গালীই প্রথম ইতিহাস অনুরাঁগের পরিচয় দিয়েছিল জাতীয় জাগরণের মুহূর্তে ইতিহাসই একমাত্র দলিল-_সেই প্রামাণ্য বক্তব্যটুকু কঠাগ্রে না থাঁকলে জনমানসের অভ্যন্তরে পৌছোনে৷ যাবে না। এই সময়ের কিছু আগে রাজস্থানের বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস অবলম্বনে টডের “রাজস্থান” প্রকাশিত শিক্ষিত বাঙ্গালীর হাতে এসেছিল তিন খণ্ডে লেখা কণ্টারের 'রোমানস অফ হিস্টরিও" সাদরে গৃহীত হলো বিদেশী রচিত ছুটি গ্রন্থ চিন্তাশীল বাঙ্গালীসমাঁজ কিভাবে গ্রহণ করেছিলেন তার অসংখ্য উদাহরণ দেওয়! ধায় তাই বাঙ্গালীর আত্মজাগরণের পরোক্ষ উপাদান হিসেবে গ্রন্থ ছটিকে বিশেষ মর্যাদা দিতে হয় নিছক ইতিহাস বর্ণনাই গ্রন্থ রচনার উদ্দেশ্য কিন্ত সেই ইতিহাসের অন্তনিহিত বক্তব্যটি যে অত্যন্ত সময়োচিত যুগধর্সী তা লেখক জানতেন। ইতিহাসের শিক্ষাকে জাতির জীবনে আরোপ করার স্থুক্ উদ্দেশ্টটি আছে বলেই নিছক উপন্যাস হিসেবে বা এঁতিহাসিক কাহিনী হিসেবে বিচার ন| করে ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের জীবনাদর্শের প্রতীক হিসেবে রচনাকে গণ্য করতে হবে। প্রথম কাহিনীটি সম্পর্কেও কথা৷ বিশেষভাবে মনে হয় যে, ধর্মলিপ্ণ, নীতিবাদী ভগবদবিশ্বাপী ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের আন্তর পরিচয় গল্পটিতে যেন ফুটে উঠেছে দ্বিতীয় কাহিনী সম্পর্কে আমাদের বক্তব্য আরও প্রসারিত। প্রথম

৪, বূজনীকাস্ত গুপ্ত, প্রতিত ভূদেব মুখোপাধ্যায়, কলিকাতা, ১৮৯৬।

বিজিতকুমার দত্ত, বাংল। সাহিত্যে ধতিহাসিফ উপক্কাস, ভূদেব মুখোপাধ্যায়, ১৯৬৩।

উপস্তাঁস ৫০৯,

কাহিনীটি কণ্টারের 1156 1778৮611605 10152817” অবলঘনে রচিত, নামকরণেও তৃদেব স্বকীয়ত্ব বজায় রেখেছেন ;--পথিকের স্বপ্ন কি ভাবে সফল স্বপ্র-এ রূপান্তরিত হয়েছে শুধু তার কারণ তিনি নির্দেশ করেছেন গল্পটিতে। ফলে এঁতিহাসিক বিবরণ উপন্যাসিকের মন্তব্য যুক্তভাবে গল্পটিতে পরিবেশিত হয়েছে | অহুল্পেখ্য রচনা হিসেবে বিবেচিত হলেও রচনায় লেখকের ব্যক্তিসত্তার প্রতিফলন পুরোমাত্রায় আছে। প্রতিহাসিক উপন্তাঁসের ভূমিকীয় লেখক অবশ্য আগেই সচেতন করে-দিয়েছেন সে বিষয়ে-_

'গল্পচ্ছলে কিঞ্চিৎ কিঞ্চিৎ প্রকৃত বিবরণ এবং হিতোপদেশ শিক্ষা হয় ইহাই এই পুস্তকের উদ্দেশ্ট ৮৬ নীতিশিক্ষীর বিষয় হিসেবে তিনি যে চরিত্রটি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন তার ভিত্তি যেমন এ্রতিহাসিক তেমনি অবিশ্বীস্ত হলেও বাস্তব স্থতরাং ধর্মপ্রাণতা--সদাশয়তার সাফল্য যে মানুষের জীবনে দেখ! গেছে ভূদেব সে চরিত্রটি আমাদের সামনে এনেছেন। সম্ভবতঃ ধর্াত্বা লেখক ধর্যাত্মা পথিকের চিত্রাঙ্কন করে আনন্দ পেয়েছিলেন পথিকের চরিত্রে যথেষ্ট দুঢ়তা সত্যনিষ্ঠা দেখা যাঁয়,_ভাঁছাঁড়া বীরেণচিত গুণ আ'ত্সবিশ্বীস চরিত্রটির মর্ষাঁদ। বাড়িয়েছে দস্যধূত পথিক বিক্রীত হয়েছে হস্তান্তরের জন্য | দীসক্রেতা অর্থের বিনিময়ে বিক্রয় করার প্রসঙ্গে পথিককে প্রশ্ন করেছিল,--

“তুই স্বাধীন হইতে চাহিস কি না?

দাঁস উত্তর দিয়েছে-_“স্বাধীনত। প্রাণীমাত্রের ব্বতঃসিদ্ধ বস্ত, কেহ কাহাকে এই ধনে বঞ্চিত করিতে পারে না, আমিও সেই নিজস্ব অর্থ দ্বার! ক্রয় করিতে সম্মত নহি -_তাদৃশ অধাঁমিক জনের প্রবঞ্চনাতেই দুষ্ট লোকে দক্থ্যবৃত্তিতে প্রবৃত্ত হয় এবং দুর্ভাগ্য জনের স্বাধীনতা অপহরণ করে ।” [ সফল স্বপ্ন]

*স্বাধীনতা৷ প্রাণীমাত্রের শ্বতঃসিদ্ধ বস্ত*-_ পরাধীন দেশের অভ্যস্ত পরিবেশেও ভূদেব স্বতঃসিদ্ধ সত্যটি ভোঁলেন নি। অবশ্য মূল গল্পটিতে কণ্টার ঠিক এই ভাষায়, ভঙ্গীতে বিষয়টির অবতারণা করেছিলেন কণ্টারে আছে,_-

৬/০019 5০৮ 106 ৮2 £180 00 21105 ৮০01 06600177024] 2100 1006 818909950 00 905 71586 15 0106 10155520001 ০৫ [76956108100 ০0: 61713 9০1 1986 20 23016112106 60 062011৮6106 00217110852 00 ০৮ 5001 00102 আ10101) 502 ০1] 26961০, 001 00176 006 62000198661 01 (59565 8110 8000016210৫ 0101521205%,1 ৬. ছুদেব রচনাচভ্ভার, প্রথমনাথ বিণী সম্পাদিত, ১৩৬৪

গ,. (০৮, 81010910 (02010061৮৮৮২0177051065 02112151015 (৬০171), 1715 শ্বাহিত0116175 1)176217, 0510৮2, 7836.

১৩ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

ভূদ্দেব-এর অহ্থবাদে বিষয়বস্তটি যখাষখভাবে প্রতিফলিত হুয়েছে,_যুল স্থরটি ধ্বনিত হয়েছে অবিকৃতভাঁবে | লবক্তাগীনের প্ধর্মাপরায়ণতা, জিতেন্দ্রিয়তা, নিরাল-্ত এবং স্বামীবাৎসল্যের” প্রতিদাশই লেখক চিত্রিত করেননি, স্বাধীনতালিপ্প, দৃঢচেতা একটি সার্থক মানুষের সাফল্যের কাহিনী শুনিয়েছেন।

দ্বিতীয় উপন্তাসটি ভূদেবপ্রতিভার একটি বিস্তৃত পরিচয় ব্যক্ত করে। প্রথম কাহিনী রচনায় ব্যক্তি ভূদেব এত বেশী প্রকট হয়ে আছেন যে বর্ণনার বিষয় বীর অস্তিত্বকে মুছে ফেলার স্থযোগ দেয়নি নিঃসন্দেহে ত্রটি অমার্জনীয় কিন্ত দ্বিতীয় রচনায় ত্রুটি চোখে পড়ে না। প্রথমতঃ রচনাটিতে কাহিনীগত জটলতা 'বেশী, অন্তদ্ধন্ের বিশ্লেষণে লেখক অত্যন্ত নিপুণতার পরিচয় দিয়েছেন অথচ কোথাও আত্মপ্রকাশের চেষ্টামাত্র করেননি পাত্রপাত্রীর হুদয়বেদনা'র উত্তাল সমুদ্রে তাকে ডুবতে দেখেছি, ভাসতে দেখিনি ;-_-ভাসমান চিত্র হিসেবে সামনে এসে ধ্লাঁড়িয়েছেন স্বয়ং নায়ক নায়িকা

কাহিনীও কণ্টার রচিত :706 1421512665 00167-এর লেখক রচিত সংস্করণ হয়েছে--“অঙ্গুরীয় বিনিময়” বাংল! সাহিত্যের প্রথম উপস্তাস হিসেবে “অন্গুরীয় বিনিময়' সত্যিই স্থান দাবী করতে পারে এবং যুক্তি দিয়েও তা প্রমাণিত ছুতে পারে অনায়াসে। তবে পূর্বেই বলেছি-_কাহিনীগত মৌলিকত্ব সৃঠ্টির মূল দ্াবীটাই প্রথমে অগ্রাহ হবে।

কাহিনীতে রচনাশিল্পী কথাসাহিত্যিক ভূদেবের আত্মপ্রকাশ যেমন স্বচ্ছন্দ, দেশপ্রেমিক ভূদেবের আবির্ভীবও তেমনি অনায়াস। “অন্গুরীয় বিনিময়ের কাহিনী রচনায়ও তৃদেবের ব্যক্তিসত্তার স্বপ্ন আদর্শের সার্থক প্রতিফলন রয়েছে কাহিনী ঘটনা, চরিত্র পরিবেশের সঙ্গে এক্যতান সৃষ্টি করে ত1 একটি সার্ধকতর দৃষ্টান্ত জন করেছে

দেশপ্রেমিকতা ভূদেবের চরিত্রে আরোপিত কোন গুণ নয়, সহজাত ভাই যে 'কোন রচনায় দেশচিন্তা এমন স্বচ্ছন্দভাবে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছিল 'অঙ্গুরীয় বিনিময়'-এর কাহিনী নির্বাচনে ভৃদেবের একটি বিশেষ প্রবণতা লক্ষ্য করি। উনবিংশ শতাব্দীর জাগরণলগ্নে স্বদেশপ্রেমের মস্ত্রোচ্চারণে কবি নাট্যকার, প্রাবন্ধিক লেখক যখন উচ্চকঠ, দেশপ্রাথ ভূদেব তাঁর নবতর সৃষ্টিতে৪ সেই আকাঙ্ক্ষিত 'বাণীটুকুই প্রচারের চেষ্টা করেছিলেন সমগ্র ভৃদেবসাহিত্য আলোচনাতেও সত্যটি প্রমাণিত হবে। দেশপ্রেমের উদ্দীপনায় ১৮৫৮ থুঃ ] রঙ্গলাল যখন পপন্সিনী উপাখ্যান” রচনা করে বীরযুগের ঘ্বারোদঘাটন করলেন তার ঠিক পূর্বনহূর্তে স্বাধীনচেতা শিবাঁজীকে নায়করূপে কল্পনা করে ভৃদেব 'অঙ্গুরীয় বিনিময়” রচনা! করলেন | অবগ্

উপস্কান ৫১১

এতে প্রমাণিত হয় না যে একে অগ্ভের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে একই সময়ে একই ভাবাদর্শের বাণীরূপ দিয়েছেন | জাতীয়তাবোধের জোয়ার এমনি করে হক্ম রসিকদের মনপ্রাণ অধিকার করে থাঁকে। সেযুগের মনীষীর। নান। উপায়ে দেশভাবনাকে রূপ দেবার চেষ্ট! করেছেন স্বতঃপ্রণৌদিত হয়েই মধুস্দূনের উচ্ছুসিত দেশানুরাগের জন্ত তিনি সমসাময়িকদের কাছে খণী একথা প্রমাণ করা কঠিন। প্রায় একই যুগে মধুহৃদন, রঙ্গলাল, ভৃদেব-এর আবির্ভীব, অথচ প্রত্যেকেই স্বকীয় মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তাঁদের সৃষ্টিতে

টডের 'রাঁজস্থান” থেকেই রঙ্গলাল পদ্মিনী উপাখ্যানের' প্রেরণা পেয়েছিলেন,-_ ভৃদদেব তার সাহায্য নেননি কিন্তু ইংরেজ লেখকের রচনা থেকেই ভূদেব যে ম্বদেশ- প্রেমের উপাদান খুঁজে পেয়েছিলেন তা অস্বীকার করা যাবে না। “অল্গরীয় বিনিময়' মারাঠাবীরের হৃদয়দানের আলেখ্যও বটে, আবার তার বীরত্ব-স্বদেশপ্রেম- দৃটচিত্বতার ইতিহাস বলেও গণ্য করা চলে একে তৃদেব গল্পরসিক পাঠককে গল্প শুনিয়েছেন, এঁতিহাঁসিক উপাদান আরোপ করেছেন ইতিহীসপ্রিয় পাঠকের জন্ত আর দেশপ্রেমের উচ্ছ্বসিত আবেগে ধারা আন্দোলিত--মারাঠাবীর শিবাজীর চরিতোপাখ্যান বর্ণনা করে তাদের উৎসাহিত করেছেন যুগোপযোগী আবেদনে পূর্ণ এই কাহিন্ীটির অপরিসীম মূল্য এদিক থেকে রয়েছে ভৃদেবের চিন্তাধারার আন্তরিকতার প্রশংস1 করেছেন সমালোচকগণ পএঁতিহাসিক উপন্তাঁস* রচনায় এই আন্তরিকতা গভীর জীবনাদর্শের প্রতিফলন খুব সই | স্বদেশচিন্তায় নিমগ্ন লেখক এই রোমান্সনিবিড় কাহিনীটির মধ্যেও দেশপ্রেমিকতার পরিচয় দিয়েছেন

প্রথমতঃ কাহিনীর নায়ক হিসেবে তিনি ভারত ইতিহাসের সংগ্রামী নায়ক শিবাঁজীকে নির্বাচন করেছেন শিবাজীর শৌর্যবীর্য, বীরত্ব স্বাদেশিকতার উজ্জল দৃষ্টান্ত উপস্তাসাকারে পরিবেশন করে তিনি যে স্বাধীন চিন্তাধারার পরিচয় দিয়েছিলেন সমসাময়িক কোন লেখকের রচনায় তা নেই শিবাজী যুগ যুগ ধরে দেশবন্ছিত গণনায়ক বলে বণিত,--কিস্তু তাঁর কীতি কাহিনীকে বাঙ্গালীর সামনে উজ্জ্বলরূপে তুলে ধরার প্রথম চে! দেখি “অঙ্গুরীয় বিনিময়ে” শিবাজীর এতিহাসিক ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্ব, দেশাদর্শের জন্য আমরণ সংগ্রামের চিত্র স্বল্লায়তনেও লেখক যথাসাধ্য চিত্রিত করেছেন অথচ শিবাঞ্জীর ব্যক্তি হৃদয়ের সুগভীর দ্বন্দ্রচিত্রটিও উপেক্ষিত হয়নি কাহিনীর সৌন্দর্য আকর্ষণ বৃদ্ধি করেছেন অন্তদ্বন্বের স্থনিপুণ অধ্যায়টি রচন। করে।

'অন্গুরীয় বিনিময়'-এর সাহিত্যকীতির যৃল্যায়ন আমাদের উদ্দেশ্য নয়, কিন্ত কাহিনীকার ভূদেবের ক্ষমতার পূর্ণ প্রকাশ হয়েছে রচনায়। বাদশাহপুর্রীর

৫১২ উনবিংশ শতাববীর ধাংল1 সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম অবরোধ-এর মতো একটি কৌতুহলজ্নক ঘটন! দিয়ে কথারস্ত হয়েছে--নেপথ্য নায়কের কৌশলের পরিচয় দিয়ে ভূদেব আমাদের আকর্ষণ করেছেন। কিন্তু এই নেপথ্য নায়ক যখন প্রথম আমাদের সামনে এলেন ভূদেবের চাতুর্ষপূর্ণ বর্ণনা পড়ে আমরা মুগ্ধ হই |

“এমন সময়ে হঠাৎ সেই থৃহদ্বার উদ্ুক্ত করিয়৷ অদৃষ্টপূর্ব ব্যক্তিবিশেষ তাহার সম্মুধীন হইলেন তাহার অনতিদীর্ঘচ্ছন্দ, প্রশস্ত ললাঁট এবং বক্ষ, বিশাল গ্রীবা এবং আজাহুলম্ষিত ভুজ প্রভৃতি সমুদয় বীর লক্ষণ ক্রাস্ত শরীর এবং সুন্দর সহাম্য মুখমণ্ডল, একাঁধারেই বীরত্ব এবং কমনীয়ত্ব গুণের প্রকাশ করিতেছিল। ত্বাহার চক্ষদ্বয়ের জ্যোতিঃ অতি তীব্র, বোঁধ হয় যেন তত্ৃষ্টি সমুদায় প্রতিবন্ধক ভেদ করিয়া সকল বস্তরই অভ্যন্তরে প্রবেশ করণে সক্ষম ।'.& আগন্তক ব্যক্তির অক্ষিদ্বয় দেখিলেই অতি প্রখর বুদ্ধি এবং তেজশ্বী স্বভাব অনুমান হইত ।”-_কাহিনীর নায়ক শিবাজীর রূপবর্ণনায় ভূদেব সম্পূর্ণ নিজম্বভঙ্গীই আরোপ করেছিলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধে নায়ক শিবাজীর রূপ বর্ণনায় লেখক যেন ধ্যানতন্ময়ত! প্রাপ্ত হয়েছিলেন

বাদশাহ উরংজীবের কন্যা অপহরণকাঁলেও সদর্প আত্মঘোষণয় শিবাজী পরিচয় দিয়েছেন,-“আমি দহ্যবৃত্ি নহি আমি এই পার্বতীয় দেশের স্বাধীন রাজা... তৈমুরলঙ্গ প্রভৃতি যে সকল ব্যক্তি দিগ্থিজয় করিয়া দিগন্তবিশ্রুত নাম হইয়াছেন, ঝহাদিগের বংশে জন্ম অপেক্ষা যিনি তাহাদিগের স্ঘায় স্বয়ং সাম্রাজ্য সংস্থাপনে প্রবৃত্ত এবং সক্ষম, তিনি কি সহঅগুণে প্রধান নহেন ; আমি এই পর্বতোপরিস্থ প্রঅবণ সদৃশ হইয়াছি, আমার মহারাষ্ট্র সেনা বেগবান দিঝ“রতুল্য হইয়। সমুদায় উপত্যকা আক্রমণ করিয়াছে, এবং অচিরকাঁল মধ্যে তৎকর্তৃক তাবৎ ভারতরাজ্য প্লাবিত হইবে। আমাকে তাবৎকাল জীবদ্দশায় থাকিতে হইবে না, কিন্তু আমি সেইদিন অদৃরে দেখিতেছি, যখন মততিষিত সিংহাসনোপবিষ্ট রাঁজগণ দিল্লীর রাঁজকোঁষ হইতেও করাকর্ষণ করিবে ।” এই অংশের উদ্দীপনাময়ী ভাষা শিবাঁজীর এঁতিহাসিক ব্যত্তিত্বের পরিচায়ক হয়েছে ভূদেবের রচনাগুণে। এখানে যূল রচনা থেকে শুধু ভাবান্ুবাদ না করে ভৃদেব খানিকটা স্বাধীনতা অবলম্বন করেছিলেন। মৃলাম্ুগত্য প্রদর্শন করলে অংশটি এমন আবেদনশীল হতে পারত না। ভূদেবের দৃষ্টি ছিল শিবাঁজীর চরিত্রমহিমীর দিকে, যত বাস্তব করে তা চিত্রিত করা সম্ভব তিনি তা করেছিলেন মূল রচনায় অংশটি খুবই গতানুগতিক | শিবাজনী আশক্মপরিচয়, দিতে গিয়ে বলছেন,--

+০২7 10015105106) 1505 5 1 200 2 £0%616101177 01656100101005111 50120065, 8220 81110079101 276 20708] 10101911121, 20106 1280106 01 55812

'উপন্তাঁস ৫১৩

এ1]] 102 12810. 01 2020175 0155 106905 09010205310: 1)0 90 1210719690 85 0106 00101505150 15116001009 ?% [৮0105 14021019655 008612-10008065 01715600551 প্রণয়মুগ্ধ শিবাজীর আত্মবিবরণের প্রতিটি ছত্রে ভারত ইতিহাসের তেজস্বী মহানায়ক শিবাজী বারংবার আত্মপ্রকাশ করেছেন তার আত্মবিবরণের কোথাও উচ্ছাস নেই--অহমিকা নেই-কিন্ত আদর্শনিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয়ের গাভভীর্য।আছে। শিবাজীর স্বপ্ন আকাক্ষা যে ভবিষ্যতের ছবি কল্পনা! করেছে অকপটে প্রথম সম্ভাষণ মুহূর্তেই শিবাঁজী রোসিনারার কাছে তাব্যক্ত করেছেন। কারণ এতে কোন সংশয় নেই তাঁর চিত্তে। দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সামান্য এক স্বাধীন পার্বত্যনেতা সোচ্চারে তার নিষ্ঠা সংকল্পের কথা ব্যক্ত করেছেন শিবাঁজীর মুখে এর চেয়ে সার্ক আত্মপরিচয় আর কি হতে পারে? ভূদেবও ধ্যানতন্ময় শিল্পী,_তিনি মুগ্ধচিত্তে ভারত ইতিহাসের তেজন্বী নায়ক শিবাজীকে চিত্রিত করেছেন

শিবাজীও রোৌসিনারার পারস্পরিক আকর্ষণের সেতুরচনার উদ্দেশ্যে শিবাজীকে আরও উজ্জ্বলবর্ণে চিত্রিত করেছেন লেখক | রোসিনারার প্রণয়মুগ্ধ সৈগ্ভাধ্যক্ষকে দ্বৈতসংগ্রামে আহ্বান করে শিবাজী শক্তি প্রেমের পরিচয় দান করেছেন উপন্তাসের জটিলতা হৃগ্ির দিক থেকেও অংশটি বিশেষভাবে সাহায্য করেছে। মৃতপ্রায় সৈন্াধ্যক্ষের বিশ্বাসঘাতকতার স্থত্র ধরে ঘটনাটি সহজ ভাবে এগিয়ে গেছে মুসলমান সৈম্তদলে যোগদান করে শিবাজীর বিপক্ষতাঁর চেষ্টা করার মুহূর্তে লেখক মারাঁঠাঙ্জাতির ইতিহাস বিশ্লেষণ করেছেন নিপুণভাবে | ' মারাঠ। সৈন্যদের আত্ম- জাগরণের কারণ নির্ণয়ে ভূদেব নিপুণ বিশ্লেষণীশক্তির পরিচয় দিয়েছেন,

*..সকল জাঁতিরই অত্যুদয়কালে ততৎজাতীয় জনগণের ধর্মবুদ্ধি প্রবল হয়। এমন কি, সেই জাতীয় অতি নিকৃষ্ট তামস-প্রক্ৃতি জনের মনেও কিঞিৎ তেজখ্বিতা প্রতীয়মান হইয়া! থাকে শিবাজীর সময়ে মহারাছু দিগেরও সেইরূপ হইয়াছিল ।”-- কারণ বিশ্বীসঘাতক সৈন্তাধ্যক্ষও সদর্পে স্বীয় অভিসন্ধির কথা ব্যক্ত করেছে,__

“আমি অর্থলোভে জন্ম ভূমির অপকারে প্রবৃত্ত নহি, কেবল সেই দুরাস্বার শোণিত দর্শন করিতে চাহি ।”__ভৃদেব এই উক্তির মধ্যেও ম্বদেশপ্রেম লক্ষ্য করেছি:লন নিরুষ্ট-তামস-প্রকৃতি মানুষও দেশকে ভালবেসে স্বদেশবাঁৎসল্যের পরিচয় দিতে সক্ষম ভূদেবের রচনায় সে যুগের লেখক সম্প্রদায়ের সাধারণ প্রবণতাটি ধরা পড়েছে। দেশপ্রেমিক রচনাকার বলেই এই অনুল্লেখ্য অংশগুলে। রা সধত্বে ব্যাখ্যা করেছেন। কোন আবির প্রবণতার মধ্যে সবকিছুই প্রশংসনীয় নয,_তুদেব তাই মহারাইয়দের

চারিত্রিক দোষ ক্রটিরও উল্লেখ করেছেন অকপটে,-_

৩৩

৫১৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে দেশপ্রেম

“মহারা্রীয়ের নিজ মহারাকইখও উত্তীর্ণ হইয়! যুদ্ধ করিতে যাইত, তখনই. পরদেশ বলিয়! প্রজামাত্রের প্রতি অত্যাচার করিত। কিন্তু স্বদেশে তাদৃশ অত্যাচারের লেশমাত্র ছিল না তাহার] বাস্তবিক শ্বদেশবংসল ছিল। দেখ, ছষ্ট মহারাই সেনানী স্বদোঁষে দণ্ডিত হইয়া প্রভুর অপকা'রে প্রবৃত্ত হইল বটে, কিন্ত বিধর্মী শক্রর স্থানে ভূতি স্বীকার করিল না|”

অংশটি থেকে ভূদেবের শ্বদেশীহ্ভূতির পরিচয় উপগ্তাঁসিক হিসেবে তার আংশিক ব্যর্থতার হেতুটি আবিষ্কার করি অনায়াসে তবু দেশবাঁসীর কাছে তার আন্তরিক বক্তব্য উপদেশের অপরিসীম মূল্য অস্বীকার করা যায় না।

কৌশলী শিবাজী বিদেশীর হাত থেকে মাতৃভূমি রক্ষা করার মহান দারিত্ব গ্রহণ করে প্রতি পদক্ষেপে শুধু বিপদ ছুর্যোগ ডেকে এনেছিলেন কিন্তু মুহূর্তের জঙ্যও আত্মবিশ্বাস হারাননি এঁতিহাসিকেরা শিবাজীকে বিভিন্ন দিক থেকে সমালোচনা করেছেন, কিন্ত স্বাধীনতাকামী জাতীয়তাবাদী লেখকের কাছে শিবাঁজী শুধু আদর্শ পুরুষ,_একটি মহান ব্যক্তিত্বের আঁধার | শিবাঁজী বিশ্বাসহস্তা সেনাঁনীকে দুর্গ জয় করে উদ্ধার করলেন--কিস্ত তীর পূর্বকত অপরাধ বিস্মৃত হয়েছেন বলেই দয়! মানবতার পরিচয় দিয়েছেন তাকে ক্ষমা করে। শুধু তাই নয়, শিবাজী বিদেশী _ঘবনদের নিষ্ঠুরতার বীভৎস চিত্র দেখে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছেন ।-_-এই অত্যাঁচারের চিত্র তাকে শক্তি সাহস দান করেছে শিবাজী সখেদে ভারতের দুর্দশার কথা৷ ব্যক্ত করেছেন,_লেখকের ছুঃখ-ভারা ক্রান্ত অন্তরের পরিচয়ও যেন স্পষ্ট হয়েছে এখানে

"হায়! ভারতভূমি আর কতদিন এই পাঁপাত্মাদিগের ভার বহন করিবে ?”

উনবিংশ শতাব্দীর সমগ্র বাংলাসাহিত্যে এই কথাটিই যেন সমস্ত কবি-নাট্যকাঁর- রচনাঁকারদের ক্ষোভের বিষয় হয়ে উঠেছিল। যন্ত্রণার তীব্রতা যত বেড়েছে স্বাধীনতার আন্দোলনের সম্ভাবনা তত ঘনীভূত হয়েছে__কিন্তু ভূদেব প্রমুখ লেখকের দীর্ঘশ্বাসের করুণ আর্তনাদ সমগ্র মানুষের প্রাণেমনে একটি বিশেষ মনোভাবের জন্ম দিয়েছে৷,

লেখক এই প্রসঙ্ষে জন্মভূমির মহিমা! কীর্তন করেছেন বিশ্বীসহস্তা সেনানী অনুতপ্ত হৃদয়ে ভবানীদেববীর তিরক্ষার ভৎসনা শ্রবণ করেছে, বলাবাহুল্য ভৃদেব যেন প্রতিটি দেশদ্রোহী মানুষের চেতনা সম্পাদন করেছেন এখানে,

“রে নরাধম। তুই আমার বরপুত্র শিবাঁজীর অপকারে প্রবৃত হইয়াছিস--তুই নিজ জন্মতৃমির প্রতিও স্নেহ বিবজিত হইয়া তাহা বিধর্মী শত্রুর হস্তগত করিলি-_ জাদগিস ন! গর্ভধারিনী মাতা, আর পয়স্থিনী গো এবং সর্ধন্রব্যপ্রসবা জন্মভূমি-_এই

উপস্ভাস ৫১৫

তিনই পমান। যে জন্মভৃমির অপকার করিতে পারে, সে গোবধ এবং মাতৃহত্যাঁও করিতে পারে ।”

'অঙ্গুরীয় বিনিময়” উপস্তাঁসের সাহিত্যযূল্য বিচারের প্রসঙ্গ এখানে অবান্তর কিন্ত রচনায় ভূদেবের আন্তরিক উদ্দেশ্যের স্বরূপটি ধরা ছড়েছে। সে যুগের প্রথম উপন্যাস রচনার চেষ্টা করেছিলেন তিনি-কিস্তু উপন্যাসের বক্তব্যটি শুধু মাত্র গল্প- রসিক পঠিকেরই মনোরঞ্জন করুক তা তিনি চাননি রে'নেসার চকিত আলোক যে সব শিক্ষিত-বুদ্ধিজীবী-সপ্রতিভ প্রাণকে আলোকিত করেছিল ভূদেবের উদ্দেশ্য ছিল তার বক্তব্য তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া | শুধু নতুন রচনার আনন্দে আত্মহারা হয়েই তিনি তৃপ্ত নন,__তাঁর ভাবনার বিশুদ্ধ আবেদন যদ্দি রসিকের-দেশপ্রেমিকের উৎসাহ জাগাতে না পারে তবে স্বষ্টির উদ্দেশ্যই অর্থহীন হয়ে যাঁবে। প্রচেষ্টা রচনাঁটিতে সর্বত্র প্রকট।

কাহিনীতে ভূদেব নিবিচারে ইতিহাসের ঘটনা আবৃত্তি করেননি, মারাঠা বীর শিবাজীর স্বপ্ন আদর্শ বিশ্লেষণ করেছেন নিপুণতাবে হিন্দু হয়েও জয়সিংহ মোঁঘল সেনাপতিত্ব লাভ করেছেন, রাঁজপুতের বিশ্বস্ততা বিশ্বাসঘাতকতার পাশাপাশি চিত্র একই সঙ্গে ইতিহাঁসে বণিত হয়েছে মারাঠার ইতিহাসে সে দৃষ্টান্ত নেই, এই তার গৌরব জয়সিংহ সেই রাঁজপুতের প্রতিনিধি, তিনিই যখন শিবাজীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্বিতা করেন--ভূদেব সেই সুযোগে শিবাজীর মহৰ জয়সিংহের দুর্বলতার আলোচনা করেন। মূল কাহিনী ঘটনা অসম্পৃক্ত হলেও লেখক দেশগ্রীতির যথার্থ স্বরূপ বিচার করতে চাঁন বলেই অংশ যৌজনা করেছেন উপন্যাসের দাবী আর উপন্যাসিকের উদ্দেশ্য ছুটিই সার্থক ভাবে যৌজনা করার কৌশল নেই বলে আক্ষেপ হয় বটে কিন্তু বিশ্লেষণী শক্তির নিপুণ পরিচয় রেখেছেন বলে লেখককে খুব বেশী দোঁধারোপ করতে পারি না। উদ্দেশ্যমূলক রচনাঁংশ বলেই এর বিচার করা দরকার শিবাজী বিপক্ষ সেনাপতির কাছে এসেছেন ছুরাশ| নিয়ে, -সাঁহসী দূরদর্শী শিবাজী বিপদের ঝুকি নিতে পেরেছেন কারণ তিনি এক্যবদ্ধ হয়ে বিদেশীশক্তির হাত থেকে মাতৃজ্ুমির স্বাধীনতা রক্ষা! করতে চান

শিবাজী যে আবেদন নিয়ে জয়সিংহের কাছে এসেছিলেন--সমগ্র ভারতবাঁসীদের একতাবদ্ধ হওয়ার আবেদনের সঙ্গে তাঁর পার্থক্য খুব বেশী কিছু নেই। দেশপ্রেমী লেখক এখানে সঙ্ঘশক্তির মহিমা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন শিবাজীর উক্তির 'মাধ্যমে শিবাজী শক্র হলেও নির্ভয়ে এসেছেন জয়সিংহের কাছে কারণ জয়সিংহ বিপক্ষদলে যোগ দিয়েছেন বটে, তিনি ধর্ম হারাননি, এতিহও হারাননি। বাঁকচাতুর্য দিয়ে শিবাঁজী জয়সিংহের সেই লুপ্ত আত্মমহিমা জাগানোর একটি আন্তরিক চেষ্টা

৫১৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

করেছেন মাত্র শিবাজী ধর্ম একজাতিত্বের দাবী নিয়ে আবেদন করেন,-- এখানেও তার দুরদশিতার পরিচয় পাই ।--শিবাজী বলেন,

“আমরা যেমন উভয়ে এক ধর্মাবলম্বী, এক জাতির এবং [ বোধ হয় আপনি জানেন ] এক গোত্রোত্তব, তেমনই আশ করি, উভয়েই এক পরামশী এককর্য হইব | মহারাজ! আমাদিগের একত্র মিলন হইলে উভয়ের মঙ্গল। যাহাতে জাতীয় ধর্ম রক্ষা হয়, দেশের মুখ উজ্জল হয়, এবং অন্ত সর্বজাতির নিকট হিন্দু নামটি অবজ্ঞাস্পদ ন। হয়, এমত কর্ষ কি কর্তব্য নহে? দেখুন দেখি, দিল্লীখ্বর কেমন মন্ত্রণা করিয়া আমাদিগের অনৈক্যকেই আমাদের অনর্থের যুল করিতেছেন ।'”-আমি আর পরস্পর যুদ্ধে স্বজাতির বিশাশ অবলোকন করিতে পারি না ।”

উদ্ধৃত উক্তি থেকে শিবাঁজী চরিত্রের গভীরে প্রবেশ করতে পারি অনায়াসে » বিপজ্জনক হলেও তিনি একাকী বিপক্ষশিবিরে এসে জয়সিংহকে দেশের কথা জাতির কথা, মুক্তির পরামর্শ শোনাতে এসেছিলেন অনৈক্য পারস্পরিক বিবাদ-বিসম্বাদ কিভাবে আমাদের সর্বনাশ সাধন করছে-_শিখাজী তার স্বরূপ উদ্ঘাটন করেছেন জয়সিংহ যে একথা জানেন না তা নয় কিন্তু মোহগ্রস্ত দাস যেমন দাসত্বেই স্বস্তি পায়, -_স্বাধীন চিন্তায় অস্বস্তি অনুভব করে, জয়সিংহের অবস্থাও ঠিক তাই। শিবাজা তার চেতন সম্পাদনের একট] চেষ্টা করেছেন মাত্র দীর্ধবভৃতায় শিবাজী মোঘল, সম্রাটের পরিকল্পনারও নিধু'ত চেহীর! উপস্থিত করেন সমগ্র ভারতের উচ্চকাজ্ষী -স্বাধাশতাকামা মানুষের সাম্মলিত চেষ্টায় বিদেশী যবন বিতাড়ন করা সম্ভব, এই সম্ভাবনার ইঙ্কিত যে কোন জড় ব্যক্তির মনেও উৎসাহ জাগাবে। হিন্দু শক্তির ক্ষীয়মান অবস্থ! দেখে শিবাজীর মর্মবেদনার গভীরে প্রবেশ করেছেন লেখক,__

“আমার এই প্রার্থনা, যেন এমনদিন কখনও উপদ্থিত শ। হয় যে, কোন বাদসাহ হিন্দু জাতির মধ্যে সক্ষম ব্যক্তি নাই বলিয়া অবজ্ঞ করেন। মহারাজ! যাহারা আপনারাহ এই জাতিকে শিস্তেজ করিয়া পরে ক্ষীণবার্ধ বলিয়া অবজ্ঞা করেন, তাহাদের কি পাঁধারণ ছষ্টতা! মহারাজ! অধুনা ভারতরাজ্যের যে অপেক্ষাকৃত নিরুপদ্রবাবস্থা দৃষ্ট হইতেছে, সে বিকারাপন্ন রোগীর দৌর্বল্যাধীন নিষ্পন্দ হওয়ার স্ভায়

_-তাহা স্বযুণ্তি-হুখাক্গিভব নছে। তৃদ্দেব অতি আন্তরিকতার সঙ্গে ভারত ইতিহাসের স্বাধীন নায়ক শিবাঁজীর

পুত চরিত্র রচনা করেছেন উনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণের লগ্নে মারাঠা৷ জাতির স্বাধানত। সংগ্রামের চিত্র উপস্থাপিত করার পেছনেও ভূদেবের বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল। পরবর্তীকাল্লে ইতিহাসের ছুটি বিশিষ্ট অধ্যায় নিয়ে উপস্তাসিক রমেশচন্দ্র দত্ত সমগ্র জাতির সামনে ছটি পৃথক চিত্র তুলে ধরেছেন, একটি “রাজপুত জীবনসদ্ধ্যায়:

উপস্যাস ৫১৭

অপরটি “মহারাষ্ জীবন প্রভাত'-এ, ভূদেবই ম্বারাঠাঁবীর শিবার্জীর আদর্শ সর্বপ্রথম আমাদের শুনিয়েছেন। জয়সিংহ বহু অভিযানের অধিনায়কত্ব করেছেন-_কিস্ত দাক্ষিণাত্যের জাগরণ মুহূর্তে অভিজ্ঞতা তিনি প্রথম অর্জন করলেন। রাজপুত ইতিহাসে প্রতাপসিংহ যেমন উজ্জ্বল নক্ষত্র, মাঁনসিংহ-জয়সিংহ-যশোবস্তসিংহ তেমনই সে উজ্জ্বল ইতিহাঁসের বুকে কালিমা লেপন করেছেন শিবাঁজী জয়সিংহের চেতনা সম্পাদনে সমর্থ হয়েছিলেন অবশেষে দেশরক্ষা1! স্বাধীনতারক্ষার জন্য শবাজী মৃত্যুপণ করেছেন, জয়সিংহ তা দেখে উচ্ছুসিত হয়ে বলেন,_

“এমত সাহস না হইলে কি কেহ সাত্রাজ্য সংস্থাপনে সক্ষম হয়! এমন কার্যপরতন্ত্ না হইলেকি মহৎ কার্য সিদ্ধ হয় !”__ভূদেবও এখাঁনে মুখর হয়ে ওঠেন। পীশ্চাত্ত্য ইতিহাঁসবেত্তারা শিবাঁজীচরিত্রের দোঁষক্রটি নির্ণয় করেছিলেন, __কিন্তু ভূদেব তাকে দেখেছেন মুগ্ধ দৃষ্টিতে, এই মুগ্ধতা এসেছে নাঁনা কারণে বীর্যহীন-আশাহীন জাতির সামনে তিনি একটি উজ্জ্বল চিত্র অঙ্কনের চেষ্টা করেছেন.__তাঁর চরিত্রের মহত্ব উদঘাটনই লেখকের উদ্দেশ্ব হয়েছে ভূদেব বলেছেন,__

“মহারাইপতি বাস্তবিক সরলপ্রকৃতি ছিলেন। তিনি সহজে কপট ব্যবহার করিতেন না। তিনি অত্যুদার প্রকৃতি না.হইলে কখন মহাঁরাষ্্রীয়দিগের অন্তঃকরণে প্রবল স্বদেশহিতৈষিতা উদ্রিক করিতে পাঁরিতেন না কিন্তু তীহাঁকেও মধ্যে মধ্যে কৌটিল্য অবলম্বন করিতে হইত | এইজন্য তাহাঁর চরিত্র লেখক গ্রন্থকার অনেকেই এই মহাক্সাকে কুটিল স্বভাব বলিয়া বর্মন করিয়া গিয়াছেন 1৮-_স্পষ্টতই বোবা যায় ভূদেবের এতে যথেষ্ট আপত্তি রয়েছে | শিবাঁজীকে যিনি স্বাধীনতার যূর্তপ্রতীক রূপে কল্পনা করেছেন তাঁর চরিত্রের এই কৌটিল্যের মধ্যেও তিনি স্থষমা আরোপ করেছেন কোন সমালোচকও বলেছেন,__

'ভূদেব যে স্বাধীনতাঁর স্বপ্ন দেখেছিলেন সে স্বাধীনতা শিবাঁজীর উক্তিতে রয়েছে গ্রন্থমধ্যে শিবাঁজীর চরিত্রটির ওপরই নাঁনাদিক দিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে 1... প্রধান হয়েছে শিবাঁজীর আদর্শ, উচ্চাঁকাঙ্খা, কৌশল | সবমিলে শিবাজী আদর্শবাদের এক উজ্ছবল দুষগীন্ত হয়ে দেখ! দিয়ছেন ।৮ ভূদেবের দেশগ্রীতি শিবাজীকে অকলঙ্ক দেশনায়ক রূপে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে | কণ্টার মারাঠা জাতির অত্যুদয়কে নিরপেক্ষ ভাবে বর্ণনা! করেছেন গল্পটিতে,

*শ561156 06 6০02156500০ 17 [0012 25 07860: 00092

53406 220 93001151076 15501061005 13100, 20010 006 0090159

বিজিত কুমার দত্ত, বাংল! সাহিতো ধতিহ।পিক উপস্াস, “বঙ্গিমচন্্র', ১৯৬৩

৫১৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

01:5169 0৫ 001161591 521005১1১2৩ 0661) 50 11601060505 5620 00 801105 £0 0 006 7658,500125 06 06590161810,7

“অঙ্গুরীয় বিনিময়" উপাখ্যানটির শেষাংশে রোসিনারার অন্তঘ্বন্চিত্রটি প্রাধান্য পেয়েছে”_-শিবাজীর প্রণয়মুগ্ধা রাজপুত্রী জীবনমন সমর্পণ করার পূর্বে বৃদ্ধ শাঁজাহানের কাছে পরামর্শ শ্রহণ করেছে মারাঠাবীর যে উদ্দেশ নিয়ে রোসিনারণকে হরণ করেছিলেন, _-তা পূর্ণ হতে চলেছে। কিন্তু আরঙজেব তা হতে দেননি ইতিহাসের কলহ্কিত নায়ক ক্ষমতাবান আরগজেব শিবাজীকে যোগ্য মর্ষাদ। দেননি বলেই পলায়নের পথই বেছে নিতে হয়েছিল তাকে রোসিনারাই অঙ্গুরী বিনিময় করে বিশ্বস্ততার চিরবিরহের পথ বেছে নিয়ে গল্পটিতে একটি করুণগাস্তীর্যের অবতারণা করেছে উপন্তাঁস বাংলাসাহিত্যের প্রথম কথাসাহিত্য রূপে পরিগণিত হওয়ার প্রধান বাধা রচনার মৌলিকত্বের অভাব কিন্তু প্রথম উপন্াসের মর্যাদাবঞ্চিত এই রচনাটিতে ব্বদেশপ্রেমিক ভূদেবের যে পরিচয় লাভ করেছি ত৷ এককথায় অনন্যসাধারণ কথাসাহিত্যের বিষয়বস্তরূপে নিছক প্রেম বা নিছক রোম্যানসকে তিনি নির্বাচন করেননি লেখকের আজীবনের সাহিত্য সাধনার ইতিহাস আলোচন। করলে তার উত্তর পাওয়া যায় তার মত চিন্তানীল লেখকের পক্ষে নিছক গালগঞ্প রচনা! কর। কেনিমতেই সম্ভব ছিল না। কণ্টারের মনোরম এরতিহাসিক কাহিনীমৃলক গ্রন্থ পাঠকালে কৌতুহলবশতঃ তিনি অন্ুবাদকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন-কিস্তু সেখানেও দেখি নির্বাচনে যথেষ্ট সাবধানতার পরিচয় দিয়েছেন কোনো কোনো সমালোচক ভূদেবের নীতিনিষ্ঠার প্রস্গটি বড়ো করে দেখেছেন-_কিন্ত মনে হয় নীতিনিষ্ঠার চেয়েও তৃদেবের স্বজাতি, স্বধর্ম স্বদেশনিষ্ঠতার পরিচয় আরও নিবিড়। প্রাবন্ধিক হিসেবে ভৃদেবের স্বসমাজ নিষ্ঠার পরিচয় খুবই স্প্-_কিস্ত অন্থবাদকের দায়িত্ব সুষুভাবে পালনের চেষ্টা করেও “অঙ্গুরীম় বিনিময়ে" ভূদেব তার সুগভীর দেশনিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছেন, সেটাই আশ্চর্য

বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ওঁপন্তাঁসিক বঙ্কিমচন্দ্রকে বহু অভিধায় ভূষিত করা হয় শুধু তাঁর অনন্ত সাহিত্য হৃষ্টিকে অতিনন্দিত করার জন্যই নয় বঙ্কিম মনীষার বিভিন্ন দিককে পাঠক সাধারণের কাছে তুলে ধরার একট! উদ্দেশ্টাও সেখানে বর্তমান, তাই তাঁকে সাহিত্যসম্রাট বলে উল্লেখ করা হয়। সার্থক কথাশিল্পী হলেও তিনি সার্থকতযর় সমালোচক, সর্বোপরি দেশ জাতির কল্যাণকামী নায়ক বঙ্কিমচন্দ্রকে একনিষ্ঠ স্বদেশপ্রেমিক বলে আমর] তৃপ্তি পাই আসলে বঙ্কিমচন্দ্র অসংখ্য গুপাঁবলী তার রচনায় এমনভাবে প্রকাশিত হয়েছে যে তাকে শুধু একটি নামে চিহ্নিত করাই যায় না। বাংলা উপন্যাসে তার অনম্ত সাধারশ প্রতিভার স্বাক্ষর রয়েছে,

উপন্যাস ৫১৯

সর্বপ্রথম উপস্তাস থেকে সর্বশেষ উপগ্ভাসেও বঙ্কিম প্রতিভা সাফল্য অর্জন করে ধন্য হয়েছে। কিন্তু এই উপন্যাসসম্ভার পাঠ করে বঙ্কিমচন্দ্রকে শুধুমাত্র শেষ্ট উপস্ভাসিক কিংবা সার্থক ওপন্যাসিক হিসেবে বিচার করলেই সব কর্তব্য শেষ হয় না। বঙ্কিম উপন্যাসের স্তরে শুরে বঙ্কিম প্রতিভার বিচিত্র রূপ প্রকাশ পেয়েছে,-সে প্রসঙ্গটিও আলোচনার পক্ষে অপরিহীর্য হয়ে ওঠে বঙ্কিম মনীষার গভীরে প্রবেশ না করলে যেমন তাঁর হৃষ্ট চরিত্র, কাহিনী কিংবা মনোবিশ্লেষণের সঠিক অর্থ নির্ণয় করা যায় না তেমনি সে যুগের দেশাহুরাগের স্পর্শ কি ভাবে বঙ্কিমচিত্তকে আলোড়িত করেছিল তার পূর্ণ পরিচয় পেতে হলে উপগ্তাসের দ্বারস্থ হতেই হয়। প্রবন্ধে, রসরচনায়, সমালোচনায় প্রকাশ্যভাবে দেশাত্মবোধের বাণী প্রচার করেছেন তিনি--কিন্তু উপন্যাসের ঘটনাজাল নিবিড় অন্তদ্বন্বের মাঝখানেও দেশপ্রেমের অন্থভবটি তিনি অবিচ্ছিম্ভাবে প্রকাশ করে গেছেন--এও বঙ্কিম প্রতিভার একটি বিস্ময়কর পরিচয় দেশচিন্তার ক্ষেত্রে বঙ্কিমচন্দ্রের অনন্যতা আছে, কিন্ত এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের ভূমিকা বাল! দেশের আকাশে বাতাসে দেশপ্রেমের বাঁণী যখন ধবনিত-প্রতিধবনিত-উচ্চারিত-নিনাদিত- সেই পর্বেই বঙ্কিমচন্দের আবির্ভীব। একটা নিখুত হিসেব নিলে দেখতে পাবো যে, বাংল নাটকে, কাব্যে প্রবঞ্ধে দেশপ্রেম প্রসঙ্গ যখন একটি সাধারণ আলোচনার বস্ত, যে অন্ৃভবটি বাংলা সাহিত্যকে প্রায় আচ্ছন্ন করে ফেলেছে--অথচ যে কথা বলার অপরিসীম প্রয়োজন তখনও ফুরিয়ে যায়নি সেষুগেই দেশপ্রেমকে একটা যৃতি দেবার তাগিদে বাংলার সাহিত্যাকাশে বঙ্কিমচন্দ্রের উদয় হয়েছে | ঈশ্বর রঙ্গলাল- মধুস্দন- দ্দীনবন্ধু-_ অক্ষয়কুমার-_দেবেন্দ্রনাথ-_ভূদেবের স্বপ্ন সাধনায় যে সত্য বারংবার আমাদের চেতনার দ্বারে ঘ! দিয়েছে, বঙ্কিম সেই বাণীটিই একান্তভাবে গ্রহণ করেছেন সমগ্র বঙ্কিমসাহিত্য আলোচনা করলেও দেখা যাঁবে সব ভাবনার শেষে দেশপ্রেমিক বঙ্কিম- চন্মের একটি নিজস্ব বক্তব্য আছে উপন্যাসে যে কথা উপরস্ত, যে প্রসঙ্গ অতিরিক্ত বলে সমালোচনার ধোঁগ্য--সে কথাটি বলার জন্য বগ্কিমের এত আকুলতা কেন ? সাহিত্য কি, উপন্াসের উপপান্ভ কি,__এ তথ্য শিক্ষিত সু্ষদর্শী বন্িমের অজান। ছিল না তবু তিনি কাহিনী ঘটনার অন্তরালে নিজেকে গোপন করতে অসমর্থ হয়েছেন এবং তাঁর বিশিষ্ট উপলব্ধির কথাটি শুনিয়ে শান্তি পাননি সাহিত্য শুধুমাত্র কলারসিক হুক্্রসিকের মনোরঞ্ঁনের বস্ত নয়, সাহিত্য সজনের দায়িত্ব যে কত নিষ্ঠাপূর্ণ কর্তব্য, সেকথা বস্কিমচন্দ্রই প্রথম স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন সাহিত্য. সেবীর শুধু আত্মগত ভাঁব-বিলাস নিয়ে মগ্ন থাকা চলবে না, সাহিত্যের দর্পণে ফুটিয়ে তুলতে হবে চলমান জীবনযাত্রার নিখুত ছবি,--আর সেই ছবিটি দেখে শুধু আনন্দ

৫২০ উনবিংশ শতাবীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

পেয়েই তৃপ্ত হওয়া চলবে না, যা আমাদের চিন্তাশক্তিকেও জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করবে তাই হবে সাহিত্যপদবাচ্য এমন চিন্তাশীল লেখকের কলম থেকে উপন্যাস কিংবা রস রচন! প্রকাশিত হলেও লেখকের চিন্তাণীলতার বিশিষ্ট স্পর্শ সে রচনায় থাকবেই | পউত্তররামচরিতে” বঙ্কিমের বক্তব্য,_"অনেক পাঠকেরই এইরূপ সংস্কার যে, ক্ষণিক চিত্তরঞ্জন ভিন্ন কাব্যের অন্ত উদ্দেশ্ট নাই। বস্ততঃ অধিকাংশ কাব্যে [বিশেষতঃ গদ্ধ কাব্যে বা আধুনিক নবেলে ] এই চিত্তরঞ্জন প্রবৃত্তিই লক্ষিত হয়-_তাহাতে চিত্তরঞ্জন ভিন্ন গ্রন্থকারের অন্য উদ্দেশ্য থাকে না; এবং তাহাতে চিত্তরগ্রনৌপযোগিতা ভিন্ন আর কিছু থাকেও ন1। কিন্ত সে সকলকে উৎকৃষ্ট কাব্য বলিয়া! গণ! যাইতে পারে না ।» [ উত্তররামচরিত, বিবিধ প্রবন্ধ ] এমন স্পষ্ট সমালোচনা যে মানুষের চিন্তাকে সর্বদাই প্রভাবিত করেছে তিনি নিছক রসবিতরণের তাগিদে কলম ধরতে পারেন না তাই ওঁপন্তাঁসিক বঙ্কিম যে কর্তব্য পালনের জন্য লেখনী ধারণ করলেন ত৷ তার নিজের কথাতেই বলি, “কাব্যের গৌণ উদ্দেশ্য মানুষের চিতোতৎকর্ষ সাধন-_চিত্তশুদ্ধি জনন | তাহার। সৌন্দর্যের চরমোৎকর্ষ জনের দ্বার জগতের চিত্তশুদ্ধি বিধান করেন এই সৌন্দর্যের চরমৌতকর্ষের তৃষ্টি কাব্যের মুখ্য উদ্দেশ্য 1” [এ]

এই মন্তব্যের আলোকে বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্তাস রচনার আঁদর্শবিচার করার স্ববিধে রয়েছে বিশেষতঃ বঙ্কিমচন্দ্র আধুনিক নবেল সম্পর্কে যে অভিযোগ এনেছেন,_সে অভিযোগ তার নিজের রচন1 সম্পর্কে প্রযুক্ত হতে পারে না নিশ্চয়ই | “বিবিধ প্রবন্ধের" সমালোচনা লেখার বহু আগেই বঙ্কিমচন্দ্র উপন্যাস রচনায় হাত দিয়েছিলেন এবং একটি বিশেষ আদর্শ উদ্দেশ্ব নিয়েই যে তিনি সাহিত্যজীবনের ভূমিকারস্ত করেছিলেন তাতে সন্দেহ নেই। নিছক চিত্তরঞ্জনী বৃত্তি যে উৎকৃষ্ট সাহিত্যের লক্ষণ হতে পারে না-এ উপলব্ধি সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথমতম উপলব্ধি বলা চলে তবু একথা দ্বিধাহীনভাঁবেই স্বীকার করা হয়ে থাঁকে যে, বহ্কিমচন্দ্রের সব বক্তব্য সব উদ্দেশ্যই শেষ পর্যন্ত একটি বক্তব্যে পরিণত হয়েছে সেযুগের অন্যান্য সাহিত্যিকের রচনায় যে সাধারণ সত্যটি বড়ে৷ হয়ে ধরা পড়েছিল, কাব্যে-নাটকে- প্রবন্ধে যে বক্তব্যটি আমাদের অন্তর স্পর্শ করেছিল, _সেই' স্বদেশপ্রেমের বাণী বঙ্কিমচন্দ্রের সব রচনার সারভূত সত্যরূপে প্রমাণিত হয়েছে উপগ্যাঁস-প্রবন্ধ- সমালোচনা এই তিনটি ক্ষেত্রেই সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র স্বকীয়শক্তির বিশিষ্ট পরিচয় রেখে গেছেন, এই তিনটি বিভাগেই যে কথাটি সব বক্কব্য ছাপিয়ে উঠেছে,-তা হল হবদেশপ্রেমী বঙ্ধিমচন্ত্রের দেশপ্রেমের-দেশোৌপলব্ধির নিগুঢ় কথা 'আপাততঃ উপন্যাস প্রসঙ্গেই আমাদের আলোচনা সীমিত থাকবে, ক্রমশঃ দেশপ্রেমিকতাই বঙ্কিমচন্দ্র

উপন্যাস ৫২১

গব স্বজনের মূলে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী প্রেরণা বলে প্রমাণ করা আমাঁদের পক্ষে কিছুমাত্র ক্কর হবে না। ০5010156018, 31009177109-তে বঙ্কিমচন্দ্র প্রসঙ্গে বলা হয়েছে,

70 1013 601062170001511655 015 ৮০1০০ আ৪৪ 080 2৪. 07109017603 1015 52112170 1011700 10610965 2100৭9] 00011 09800106507 200 0006 ০0: 1806-2, হা) 0 09001081190 হাওর 100015া0 0021559. 85 006.৯

সাহিত্য সম্রাট বলে যে অভিধায় বস্কিমচন্দ্রকে ভূষিত করেছি সেটি ' তীর পূর্ণ পরিচয় বহন করে না, সত্যিই তিনি সাহিত্য জগতের সম্রাট কিন্তু এই অপ্রতিদবন্্ী সম্রাটের অন্তরটি সমগ্র দেশের জন্য, জাতির জন্য সর্বদাই অমেয় প্রেম ভালোবাসা বহন করেছে, সেই গভীর দেশাত্ববোঁধের কিছু ইঙ্জিত তাঁর বিশেষণে থাকা দরকার প্রসঙ্গে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মূল্যবান উক্তিটি স্মরণ করি

বঙ্কিমবাবু যাহা কিছু করিয়াছেন...সব গিয়া একপথে ঠাঁড়াইয়াছে। সে পথ জন্মভূমির উপাঁসনা__জন্মভূমিকে মা বলা__-জন্মভূমিকে ভাঁলবাসা--্জন্মভূমিকে ভক্তি করা। তিনি এই যে কার্য করিয়াছেন, ইহা ভাঁরতবর্ষের আর কেহ করে নাই।১০

স্বদেশপ্রেমের আবেগ যে লেখকের প্রেরণা, উপন্তাসের মত নিতান্ত তন্ময় সাহিত্যেও (061০০৮৮5140 ) তার প্রতিফলন পড়া কিছুমাত্র অস্বাভাবিক নয়। বঙ্কিমচন্দ্রের স্বদেশপ্রেমের গভীর পরিচয় তীব প্রথম উপন্যাঁসটিতেই বর্তমান যদিও মণালিনী” থেকেই দেশপ্রেমোচ্ছাসের প্রথমীরস্ত বলে ধরে নেওয়া হয়। “ছুর্গেশনন্দিনীর” রচনাকালে গগ্ভসাহিত্যের শৈশব অতিক্রান্ত হয়েছে_নাঁটক রচন। একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দ্লীড়িয়েছে,_-অসংখ্য পত্র পত্রিকা রসিক-বাঙ্গীলীর রসতৃষ্ণা মিটিয়েছে,_-সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সংবাদ এই যে, বাঙ্গালী মধুত্দনের প্রতিভাকে আবিষ্ষার করেছে, প্রতিষ্ঠা দিয়েছে বিশ্ববিগ্ভালয়ের ছ্বারোদঘাটন হয়েছে ইংরাজী শিক্ষাদীক্ষার প্রত্যক্ষ সফল পরোক্ষ প্রভাব কি হতে পারে-.. 'তা নিয়ে যুক্তিপূর্ণ আঁলোচনাপর্ব সমাপ্ত হয়েছে বঙ্কিমচন্ত্রের স্থবিধে ছিল এই যে, তাকে মধুত্দনের মত একটি অপ্রস্তত পটভূমিকায় এসে দীড়াতে হয়নি মধুস্দনের আবির্ভীবকে তাই যতটা আকম্বিক, যতটা অচিন্ত্যনীয় বলে মনে হয় বস্কিমচন্দ্রকে যুগের পটভূমিকায় ততটা আঁকম্মিক বলে মনে হয় না! মধুস্দনের সামনে ছিল অজস্র প্রলোভন কিন্তু তাঁর ফলাফলের দৃষ্টান্ত হাতের কাছে ছিল না,_কিস্তু বঙ্ষিমচন্দ

৯,:17710701010861)15 7371621010102) (৬0175), 82761275 1962, ১৯" বঞ্গিমচন্ত্র জীবন সাহিত্য, প্রেষেন্ত্র মিত্র লিখিত গ্রন্থ থেকে উদ্ধত

৫২২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

ইয়ংবেলের ইতিহাস পাঠ করার হধোগ পেয়েছিলেন। হতরাং দিশাহার৷ হবার মত পরিবেশ, চঞ্চল হবার মত জটিল আবহাঁওয়া ছিল না বলেই প্রথমাবধি বস্ধিমনন্্র যুক্তিবাদী-চিন্তীশীল-আদর্শবাদী | উচ্চশিক্ষা] তাঁর মনের বিচার শক্তি বাড়িয়েছে, তাঁকে বিভ্রান্ত করেনি স্থিতধী বঙ্কিমচন্দ্র তাই অনেক ভেবেচিন্তে ইংরাজী উপন্যাস রচন। করার প্রয়াস খুব সহজেই বর্জন করতে পেরেছিলেন,_-দিধা গ্রস্ত হননি বিন্দুমাত্র

১৮৬৫ শ্রীষ্টাবের মার্চ মাসে ছর্গেশনন্দিনী প্রথম প্রকাশিত হলেও এই অনতিদীর্ঘ উপন্1সটি শুরু হয়েছিলো তারও তিন বছর আগে

লেখকের সংশয় ছিল যে যথার্থ উপন্বাঁস হিসেবে এটি গৃহীত হবে কিনা কিন্তু দ্বিতীয় উপন্যাসটি এক বছর পরেই প্রকাশিত হয়েছিল, বঙ্কিমচন্দ্র তখন আ'ত্মবিশ্বীসে, শক্তিসচেতনতা য় দৃঢ়

প্রথম উপন্যাসে ওপন্যাসিক নৃঙন হৃজ্রনের আবেগে কম্পিত হলেও স্বদেশপ্রেমিক বঙ্কিমচন্দ্র বিষয়বস্তু কাহিনী নির্বাচনে, চরিত্ররচনায়, পরিস্থিতি অস্কনে যে মৌলিকত্ব দেখিয়েছেন তার প্রেরণা দেশপ্রেমের অন্থুভব থেকেই এই গভীর দেশীত্ববোধের স্পর্শ ছিল বলেই হয়ত দুর্গেশনন্দিনীর আত্মপ্রকাশ বাংলাদেশে একটি স্মরণীয় ঘটন। বলে চিহ্িত হয়েছিল। বাংলার ঘরে ঘরে এই গ্রন্থ কী সমাদরে গৃহীত হয়েছিল তার অজস্র প্রমাণ আমরা পাই। শিবনাথ শাস্ত্রী তীর 'রামতন্থু লাহিড়ী তৎকালীন বলগসমাজ' গ্রন্থে লিখেছেন,-_

"আমরা সেদিনের কথা ভুলিব না। “দুর্গেশনন্দিনী” বহসমাঁজে পদার্পণ করিবা- মাত্র সকলের দৃষ্টিকে আকর্ষণ করিল! জাতীয় উপস্যাঁস বাঙ্গালাতে কেহ অগ্রে দেখে নাই।...দেখিয়া সকলে চমকিয়া উঠিল। কি বর্ণনার রীতি, কি ভাঁষার নবীনতা, সকল বিষয়ে বোধ হইল, যেন বঙ্কিমবাবু দেশের লোকের রুচি প্রবৃত্তির সত পরিবতিত করিবার জন্য প্রতিজ্ঞারঢ় হইয়া লেখনী ধারণ করিয়াছেন ৮৯১

'দুর্গেশনন্দিনীর' মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্রের উদ্দেশ্য আদর্শের প্রসঙ্গটি শিবনাথ শাস্ত্রী উল্লেখ করেছেন। “দেশের লোকের রুচি প্রবৃত্তির শ্রোত পরিবর্তনের” চেষ্টাটি তিনি লক্ষ্য করেছিলেন। একদিকে নতুন উপন্যাঁস রচনার উন্মাদন] অন্যদিকে একটি নিশ্চিত আদর্শে জাতিকে দীক্ষিত করার মহান ব্রত গ্রহণ করেই বাংল! উপস্কাঁসের ক্ষেত্রে তার আবির্তাব। “ছুর্গেশনন্দিলীষ্তেই বস্কিমচন্দ্রের গ্রবণতা৷ ধরা পড়েছিল স্পঞ্টভাবে “ছুর্গেশনন্দিশী'র প্রসঙ্গে বিপিনচন্দ্র পাল বলেছিলেন,

১১, শিবনাধ শাস্্ী, রামতদু লাহিড়ী তৎকালীন বঙ্গসমাজ, ১৩৬২

উপন্তাস ৫২৩

"দুগগেশনন্দিনী আমাদের শ্বদেশীভিমানকে জাগিয়ে দ্িল। আমাদের অন্তরের সমস্ত সহানুভূতি আমর! উজাড় করে দিলাম বীরেক্্রসিংহের উদ্দেশে 1৮১২ সুতরাং নিছক উপস্তাঁন হিসেবে বঙ্কিমচন্দ্র ঘা! লিখতে চাননি পাঠকও তা নিছক উপন্াঁস হিসেবে নেয়ণি | স্বদেশপ্রেমিক বঙ্কিমচন্দ্রের দেশগ্রীতির পরিচয় উপন্যাসে কিভাবে প্রতিফলিত সে আলোচনারও আগে বঙ্কিমচন্দ্রের স্বদেশভাবনার কিছু পরিচয় দেওয়া দরকার

কলিকাত। বিশ্ববিগ্ভালয়ের প্রথম স্নাতক বঙ্কিমচন্দ্র প্রখর আত্মলচেতনতা নিয়ে লক্ষ্য করেছিলেন_ সেযুগের শিক্ষিতাভিমানী বাঙ্গীলীর সত্যকার মানসিক চিন্তাধারার বিবর্তন ইংরেজী শিক্ষারদীক্ষা৷ পুরোমাত্রায় গ্রহণ করে যে শিক্ষিত সমাজ গোত্রান্তরিত-ধর্মীস্তরিত-রূপান্তরিত হয়েছিলেন তাদের দৃষ্টান্ত বহ্কিমচন্দ্রের মনে একট! প্রচণ্ড আবেদন জাগিয়েছিল।-_সে যুগীয় ধর্যান্দোলন আর সংস্কতির আন্দোলনের কিছু পরেই বঙ্কিমচন্ত্ররে আগমন প্রখর বিচারশক্তি মৌলিক চিন্তার ক্ষমতা ছিল বলেই বঙ্কিমচন্দ্র নিজের ভাবীজীবন তীর স্বকীয় আদর্শেই গড়েছিলেন। শুধু, ইংরেজীশিক্ষার পাঠগ্রহণে সন্তুষ্ট ন! হয়ে রীতিমত সিলেবাস মিলিয়ে পাঠ সমাপনাস্তে ডিগ্রী ধারশ করেছিলেন যিনি, তিনি শিক্ষা গ্রহণের ব্যাপারেও যে বেশ একটা নিজস্ব আদর্শ মেনে চলেছিলেন সেটুকুই প্রমাণিত হয়। শিক্ষাজীবন সমাপ্ত হলে অন্যান্য উচ্চশিক্ষিত বাঙ্গালীর মতো বঙ্কিমচন্দ্র সরকারী চাকুরী উচ্চাকাজ্জী বাঙ্গালীর মতো' সাহিত্যসাধনা একই সঙ্গে সমান গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করেছিলেন। প্রয়োজনের তাড়নায় চাকরী আর আত্মিক প্রয়োজনের তাগিদে কলম ধরতে হয়েছিল বলেই বঙ্কিমচন্দ্র উভয়ক্ষেত্রেই কৃতী, উভয়ক্ষেত্রেই পারদশিতার ছাঁপ রেখেছেন

বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্য জীবনের আদর্শ প্রসঙ্গে একটি তথ্য প্রায় সকলেই মেনে নিয়েছেন কৈশোর থেকেই বঙ্ষিমচন্ত্র স্বদেশপ্রেমিক কবি ঈশ্বরগুপ্তের সানিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন বলেই সাহিত্যঞজীবনের গুরু হিসেবে ঈশ্বরগুপ্তকেই গ্রহণ করেছিলেন! কোনে সমালোচক বলছেন,

“সংবাদপ্রভাকর ছাড়া কলকাতার বিদ্বংসমাঁজের সঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্র আর কোনো যৌগন্থত্র ছিল কিন! সন্দেহ 1৮১৩

পরবর্তীকালে ঈশ্বরগুপ্ডের দেশপ্রীতির উচ্ছুসিত গুণগান করে বঙ্কিমচন্দ্র গুরুর জয়- ঘোঁধণা করেছিলেন বাংলা সাহিত্যের সাধারণ স্তরের লেখককেও একট। অসাধারণ

১২, বিপিনচন্ত্র পাল, চরিত চিত্র, ১৯৫৮, পৃ:--১৫৯ | ১৩। ভবতোষ দত্ত, চিন্তানায়ক বঞ্গিমচন্দ্র, ১৯৬১, পৃষ্ঠা ৩।

২৪ উনবিংশ শতাববীর বাংলা সলাহত্যে স্বদেশপ্রেম

দৃতিকোঁণ থেকে বিচার করে বঙ্কিমচন্দ্র সাহিত্যে তকে স্থায়ী সম্মান জানানোর দাবী তুলেছিলেন কিন্তু ঈশ্বরগুপ্চের দেশচর্চ বঙ্কিমকে যে 'যথার্ঘভাবেই আকুষ্ট করেছিল--এ তথ্যটি নিঃসন্দেহে গৃহীত হবে। ঈশ্বরগুপ্তের দেশগ্রীতির প্রত্যক্ষ আবেদন চিন্তাঁশীল্প বঙ্কিমচন্দ্রকে প্রভাবিত করলেও “সংবাদ প্রভাকরে' প্রকাশিত বঙ্কিমচন্দ্রের বাল্যরচনায় দেশপ্রেমের বাষ্পটুকুও নেই অবশ্য বাল্যরচনা দিয়ে পরবর্তী কালের সাহিত্যিককে বিচার করতে গেলে যে ভমে পতিত হতে হয়, তা আমরা জানি ঈশ্বর'গপ্ণের সাক্ষাঁং শিষ্য হিসেবে দীনবন্ধু বঙ্কিমকে গ্রহণ করেছি আমরা কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্র যে সুগভীব দেশচিস্তার পরিচয় দিয়েছেন সেখানে ইংরেজী- শিক্ষিত বঙ্কিমচন্দ্র মৌলিক চিন্তার প্রীধীন্ই বেশী,-_তা সম্পূর্ণই ঈশ্বরগুপ্ধ প্রভাবিত 'দেশচিত্তা বললে ঠিক বলা হয় না।

বঙ্কিমচন্দ্রের চিন্তাধারার ধাঁর'বাহিক ইতিহাস ক্রমপরিণতির স্তর বিশ্লেষণ করলে স্বদেশচিন্তাঁর প্রকৃত রূপটি জানা যাঁবে কিন্তু যূল উপাঁদানগুলি অনুসন্ধানের জন্য আমাদের খুব বেশী পরিশ্রম করতে হয় না। নবজাগরণলগ্নে যে বোধ শিক্ষিত সচেতন বাক্গালীকে পীড়িত করেছে._-পরাঁধীনতার সেই দুঃসহ বেদনা অস্যান্ কবি-সাহিত্যিকদেব মতো বঙ্কিমচন্দ্রকেও পীড়িত করেছিলো সমসাময়িক ঘটনার আঘাতে এই মনোঁকু দিন দিন বেডেই গেছে | স্বদেশচেতনাঁর অন্ুভৃতিব কোন পথক চেহারা নেই বলে নিতান্ত ব্যক্তিগত শোঁকছুঃখের মতো তা হয়ত সর্বদ1 বিশিষ্টতা অর্জন করতে পারে না-_কিক্ত স্বদেশপ্রেমিকের অন্ুৃভৃতিগুলি অন্যান্য অনুষঙ্গ পেলেই উচ্ছুসিত হয়ে ওঠে সহজেই ! মধূক্দনের তীব্রতম দেশচেতনা রাবণের খেদোকিতে কত সহক্তেই উচ্ছুসিত হযে উঠেছিল বঙ্কিমচন্দ্র দেশগ্রীতির যূলে রয়েছে অতীত ঈতিহাসপ্রীতি। একটি জাতির নিতান্তঈ বর্তমীন দেশোন্মাদনায় তুষ্ট ছিলেন না বঙ্কিমচন্দ্র এই উচ্ডাঁস হঠাৎ আসা বেনোৌজলের মত সমগ্র দেশ প্লাবিত করবে বটে কিন্তু তা স্থায়ী হবে নাঁ। দেশপ্রেম শুধু শিক্ষাঁভিমানী বাঙ্গালীর চিন্তাজগতে একচেটিয়া হয়ে থাঁকক-_বঙ্কিমচন্দ্র তা চাননি | তাই উদ্দেশ্যের দুঢতা নিয়ে বাঙ্গালীর 'মনে স্থায়ী চেতন! 'জাগানোর শুভ সংকল্প নিয়ে তীর প্রথম উপন্যাস রচনার চেষ্টা

প্রখর অনুভূতি, দেশ জাতির জন্য অক মমতায় বিগলিতচিত্ত বঙ্কিমচন্দ্র প্রথম নউপন্তাসেই দেশকে সচেতন করে তোলার চেষ্টা করেছেন। “ছুর্গেশনন্দিনী” বাংলাদেশের .অতীতের কাহিনী কাহিনীর নায়ক হিন্দুর শক্তি সামর্থ্যের প্রতীক ইতিহাসের চৃশ্বকে দেশপ্রেমিক যখন কাহিনীরচনা' করতে চান তাতে প্রতিহাসিকত্ব পুরাপুরি পাঁওয়া যায় না, কিন্তু কথা-সাহিত্যিকের ইতিহাসমুদ্ধতার প্রমাণ মেলে তাই ইতিহাস নয়,--অতীত বাংলার একটি বীরত্ব কাহিনী

উপন্যাস ৫২৫

পরিবেশনের সাহিত্যিক প্রচেষ্টাই “ছুর্গেশনন্দিনী'তে বড়ো হয়ে ধরা পড়েছে রোম্যান্টিক পরিবেশে গল্প কথনের প্রথমশ্রেণীর দক্ষতার পরিচয় “ছুর্গেশনন্দিনীতে' রয়েছে,_-সে প্রতিভ! ভাবী উপন্তামিকের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ জীবনের দিকে ইঙ্গিত দেয় কিন্তু বিষয়বস্তর সঙ্গে বাঙ্গীলীজীবনের এমন একটি নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন, করেছেন বঙ্কিমচন্দ্র যা আমাদের কাছে নিছক গল্পপাঠের অতিরিক্ত একটি চিন্তাসামর্রের যোগান দেয় সগ্ভোজাগ্রত পরাধীন্তার চেতনায় আমাদের অতীত. ইতিহাসের ওপর আলোকপাতের চেগ্তাটি তাই অত্যন্ত অথপুর্ণ মনে হয়। রঙঈলালের রাজপুত ইতিবৃত্তপাঠ করেও আমরা জাতীয় আনন্দ পেয়োছিলাম। কিন্তু বস্কিমচন্ত্ সে আনন্দের পেছনে কিছুটা চিন্তাশক্তিও জাগিয়ে দিলেন। স্থদূর রাজস্থানে যেতে হল না_কিংবা মারাঠা হতিহাসের মধ্যে আত্মবিশ্ব দর্শনের চেষ্টা করতে হল না” বাঙ্গলার অতীত কাহিনীতেই যথেষ্ট রোম্যান্স বীররসের সন্ধান পাওয়া! গেলো

ভূদেব তাঁর অন্থবাদ কাহিনীতে মারাঠাবীর শিবাজীর স্বাধীনতা সংগ্রামের, প্রসঙ্ঘটি বর্ণনা করেছিলেন _কিন্ত বঙ্কিম ঘরোয়া কাহিনী দিয়েই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। বাদালী জীবনভিত্তিক জাতীয় কাহিনীতে বীররসের দ্বারা দেশপ্রেম সঞ্চারের চেষ্টা এই প্রথম অবশ্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস অবলম্বন করলেও রাজপুতবীর জগৎসিংহকেই কাহিনীর কেন্ত্রীয় চরিত্র রূপে কল্পনা করেছেন লেখক। কিন্তু ঘটনাস্থল বাংলাদেশ বলেই বীরেন্ত্রসংহ চরিব্রটিও যথেষ্ট দূরদূশিতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন সহায়সম্বলহীন এই বাঙ্গালী য্ববা স্বীয়, ুদ্ধিবলে প্রতিষ্ঠা, খ্যাতি আত্মসন্মানবোধ অর্জন করেছিল মূল কাহিনীর নেপথ্যে বিচরণ করলেও বস্কিমচন্দ্র বীরেন্দ্রসিংহ্র দৃপ্ত তেজ মানসিক দৃঢ়তার প্রসঙ্গ বর্ণনা করেছেন। মোঘল পাঠানযুদ্ধ ঘনিয়ে এলে কীরেন্দ্রসংহ ছুপক্ষকেহ শক্রু বলে মলে, করছে স্বাধীনতাকাজ্ষী ভূস্বামী বীরেন্্রসিংহের মনে ছিল আত্মপ্রতিষ্ঠার গোপন, ইচ্ছা কিন্তু শঞ্তিহীনতা হেতু সে আকাক্ষা কখনও বাস্তবায়িত হতে পারেনি তাই অভিরাম স্বামী বারেন্দ্রসিংহকে পরামর্শ দিয়েছেন,

তুমি নিজে বীরাগ্রগণ্য, কিন্তু তোমার সেনা সহত্রাধিক নহে) কোন যোদ্ধা সহস্রেক লেন! লইয়া শতগুণ সেনা বিমুখ করিতে পারে? মোঘল পাঠীন উভয় পক্ষই সেনাবলে তোমার অপেক্ষা শতগুণ বলবান, একপক্ষের সাহায্য ব্যতীত অপর পক্ষের

হস্ত হইতে উদ্ধার পাইতে পারিবে না। [ বঙ্কিম রচনাবলী, ছর্গেশনন্দিনী, সাঃ সংসদ সংস্করণ ]

বাংলা দেশের সেই সংকটকালে বাঙ্গালীর বাঁছতে বল মনে সাহস ছিল কিন্ত প্রবলতর শক্রদমনের অন্ত কোন উপায় ছিল না। বীরেন্্রসিংহ শেষ পর্য্যন্ত

৫২৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে শ্বদেশপ্রেম

আত্মরক্ষা করলেন মোঘল পক্ষে যোগদান করে। কিন্ত পাঠানের বিপক্ষতা করায় বীরেন্দ্রসিংহকে চরম শীস্তি পেতে হল। অংশটি উপপ্তাসের প্রয়োজনে রচিত হয়েছে বটে কিন্তু বীরেন্দ্রসিংহের মর্মীত্তিক মৃত্যুর ঘটনাঁটি আমাঁদের মনে একটা স্থায়ীভাব জাগিয়ে দেয়। শক্তিহীনতার অভিশাঁপ এমনি করেই দুর্বলের মৃত্যুদণ্ড বহন করে আনে। কিন্ত মৃত্যুমুহূর্তেও বীরেন্দ্রসিংহের দৃঢ়তার চিত্রটি তুলনাহীন। শক্রদত্ব অন্ুকম্পাকে দ্বণা করেছে বীরেন্্রসিংহ,_-

“তুমি রাজবিদ্রোহী দক্থ্য, তোমাকে কেন অর্থ দিব? তোমায় কি জন্য সৈন্য দিব ?...তোমার তুল্য শত্রর দয়ায় ধার জীবনরক্ষা,__তাহার জীবনে প্রয়োজন

বীরেন্দ্রসিংহকে স্বাধীনচেতা ভূষ্বামী বলে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টামাত্রও বঙ্কিমচন্্ করেন নি। সেঘুগের বাংলাদেশে স্বাধীনচেতনার প্রমাণ দেবার মত মানসিক শক্তি যে একেবারে ছিল না৷ তা নয়,__কিন্ত রাজনৈতিক ইতিহাসে স্থান পাবার মত সৈম্সামন্ত যথেষ্ট সামর্থ্য না থাকায় বীরেন্দ্রসিংহের মতই লোকচক্ষুর অগোচরে সবত্যুবরণ করতে হয়েছিল তাঁদের,_-এ সত্যটি “ছুর্গেশ নন্দিনী'তে বঙ্কিমচন্দ্র প্রকাশ্য ভাবে ঘোঁষণ। করেছেন বলা যায়। বাঙ্গীলীর ইতিহাস যে নেই তার কারণ বীরেন্তর- সিংহের মত শক্তিহীন ভৃত্বামীদের কথা রাষ্্রনীতিবিদের নজরে পড়ে না। বঙ্কিমচন্দ্র কাহিনীতে যে চেতনা সঞ্চার করেছেন,--তা যে খুব হক্ম জাতীয় চেতনারই রূপান্তর কথা অস্বীকার করা যায় না বীরেন্দ্রসিংহের নিঃশব্দ ৃত্যুচিত্রটির ছাড়া অন্য ব্যাখ্যা কি দেওয়া যাঁয়? বীরেন্দ্রসিংহ আত্মরক্ষার মৃহূর্তে দ্বিধা গ্রস্ত হয়েছিলেন,_ পাঠান বা মোঘল এই উভয় শত্রর মধ্যে কোঁনটিকে গ্রহণ করা যায়? বঙ্কিমচন্দ্রও সে দিধার ভাব কাটিয়ে উঠতে পারেননি “ছুর্গেশনন্দিনী'তেই হিন্দ চরিত্রের সমালোচনা! করে পাঠনপ্রশংসা করেছেন তিনি। ওসমান জগৎসিংহ- বঙ্কিমচন্দ্র এছুটি চরিত্রেই অসংখ্য লক্ষ্যণীয় গুণের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। কখনও কখনও ওসমানের বীরোচিত গুণ অনেক বেশী বলে মনে হয়। তাছাড়। নিষ্ঠাবান পাঠানচরিত্র হিসেবে ওসমান অতুলনীয়-_সেদিক থেকে মোঁধল সেনাপতি হিসেবে হিন্দু হলেও জগৎসিংহ কিছুটা প্রভাহীন | ওসমানের শিষ্টাচার রাজানুগত্য এবং হৃদয়াবেগের শীল্ত-নিস্তরঙ্গ রূপ যে কোন মনকেই যুদ্ধ করে। শক্রকে আতিথ্যপ্রদান করেও উত্তেজিত শক্রর লামনে যে ভদ্রতা চারিত্রিক দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন ওসমান, তাতেই বঙ্কিমচন্দ্রের পাঠীনপ্রীতির পরিচয় দীপ্যমান। জগংসিংহকে মোঘলসম্ত্রাটের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করার উত্তরে ওসমান বলেছেন,

আত্সগরিমা। আমার উদ্দেশ্য নহে মোখল সম্রাটের সহিত চিরদিন বিবাদ করিয়া পাঠানের উৎকলে তিষ্ঠান সখের হইবে না। কিন্তু মোঘল সম্রাট পাঠানদিগকে

উপন্যাস ৫২৭

কদাচ নিজ করতলম্ব করিতে পারিবেন না। আমার কথা আত্মক্নাঘা বিবেচনা করিবেন না। পাঠানেরা বাঙ্গালী নহে, কখনও অধীনতা স্বীকার করে না; একজন মাত্র জীবিত থাকিতে কখনও করিবেও না ; ইহা নিশ্চিত কহিলাম।

উপন্তাসে স্বদেশপ্রেমের কোঁন বিস্তৃত পটভূমিকা অঙ্কন করার চেষ্টা করেননি লেখক, কিন্তু জাতীয়চেতনা বঙ্কিমচন্দ্রেরে আত্মচেতনার গভীরে কিভাবে স্থান লাভে সমর্থ হয়েছিল সে সত্য উপন্যাস পাঠ করে সহজেই বোঝা যায়। রোম্যার্টিকতা উপন্যাঁসোচিত ঘটনাসমাঁবেশ সমগ্র “দুর্গেশনন্দিনী'তেই আছে- সমালোচনার সুক্ষ বিচারে তা ধরা পড়েছে, কিন্ত স্বদেশপ্রাণতা উপন্যাস বিচারের অন্যতম উপাদান হতে পারেনি কোনদিন, সমালোচকবর্গ তাই ব্যাপারে নীরব স্থান-কাঁল-পাত্র তিনের নিখুত বিচারে ওপস্তাসিকের ব্যর্থতা সার্থকতার মাপজোখ করার প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে আমর] তার উদ্দেশ্য উদ্দেশ্যের প্রতিফলন উপন্যাসে কিভাবে দেখা গেছে সে বিষয়ে আলোচনা করব

উদ্দেশ্যহীন রচনামাত্রই বঙ্কিমের বিচারে প্রাণহীন হৃজন, “ছুর্গেশনন্দিনী'তে স্বদ্বেশচেতনাই উপগ্ভাঁসের প্রাণ বল! যেতে পারে। উদ্ধৃত উক্তিটির শেষাংশ আলোচনা করলে দেখব যে, নিছক ওসমানের বীরত্ব চারিত্রিক দৃঢ়তা ফোটানোর জন্যই অংশটি রচনা করেননি লেখক-_বাঙ্গালীর চরিত্র সমালোচন1 করে পরাধীন বাঙ্গালীর সামনে স্বাধীনতাপ্রিয় পাঠানের জীবনাদর্শ পাশাপাশি দেখাবার চেষ্টাও করেছেন এটি উদ্দেশ্যযূলক অংশ হিসেবে বিচার্য

“ুর্গেশনন্দিনী” রচনায় পাশ্চাত্য আদর্শের প্রভাব পড়েছিল বলে অনুমান কর। হয়। বিদেশী সাহিত্যের প্রভাবে যদি বিমলার সৃষ্টি হয়ে থাকে তবে তাতে আমাদের উপকারই হয়েছে বলতে হবে ব্যক্তিত্ব, আত্মমর্ষাঁদা, দৃঢ়তা অসমসাহসিকতা এদেশীয় পুরুষচরিত্রেই অকল্পনীয়,_বঙ্কিমচন্দ্র একটি নারী চরিত্রেই তা আরোপ করেছেন কিন্তু বীরেন্দ্রসিংহ অভিরাম স্বামী, জগৎসিংহ ওসমান এবং ছুর্যোগাচ্ছন্্ বাংলাদেশের পটভূমিকাঁয় তিলোত্রমার রোম্যা্টিক প্রেমকাহিনীর উন্মেষ পরিণতি রচনায় স্বকীয়ত্ব নেই, ধারণা ভিত্তিহীন। বঙ্কিমচন্দ্র এতিহাসিক পরিবেশের াহায্য নিয়ে গল্পকথনের চেষ্টা করেছিলেন বলেই বিষয়বস্তর স্থান কালপাছ্ছোচিত বর্ণনা দেবার দাঁয়িত্বও তিনি এড়াঁতে পারেননি মোঘল-পাঠান বিরোধের পটতভূমিকায় পাত্র-পীত্রীদের হৃদয়বেদনার সমস্যাজীল উন্মোচিত করার মধ্যে যথেষ্ট কৃতিত্ব দেখিয়েছেন বস্ষিমচন্্র। লক্ষ্যনীয় এই যে, মোঘল পাঠান প্রতিঘবন্্ী হলেও নায়িকার ভূমিকায় আছেন বঙ্গদেশেরই এক তৃত্বামীর হতভাগিনী কন্া। এই কারণেই বলেছি, বন্কিমের জাভীয়তাঁবোধ সকলের অলক্ষ্যে থেকেও কতখানি সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

৪২৮ উনবিংশ শতাঁবীর বাংলা সাহিত্যে ম্বদেশপ্রেম

প্রতিহাসিক সত্য যাচাইয়ের প্রশ্নটি অবান্তর বলেই বঙ্কিমচন্দ্র বাংলাদেশের একজন ভূম্বামীর অসহায় মৃত্যুবরণের বিবরণটি সবিস্তারে বলার লোভ সম্বণ করেন নি,-- অপ্রাসঙ্গিক হলেও বাঙ্গালিনী বিমলার ছুঃসাহসিকতার-_ প্রতিহিংসার সঞ্জীব বর্ণন? দিয়েছেনউপন্তাঁসে | নিছক রোম্যার্টিক উপন্তাঁস রচনার স্যোগটুকু গ্রহণ না করে --বাংলাঁদেশের রাজনৈতিক জটিলতার আবর্ততৃজন করে “ছুর্গেশনন্দিনী' তিলোতিমার স্থকোমল হদয়াবেগের অপরূপচিত্র স্ঙ্টি করেছেন বঙ্কিমচন্দ্র শুধু উপন্যাস লিখেই আমাদের প্রশংসা লাভ কর। তার পক্ষে সম্ভব ছিল অথচ তিনি তার বিশুদ্ধ স্বদেশচিন্তার অভিমানটুকু পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগিয়েছিলেন-এখানেই হ্বদেশপ্রাণ বঙ্ধিমচন্দ্রের বৈশিষ্ট্য। উপন্যাসের আধারে এই নবলন্ধ জাতীয়তাবোধের অন্ুভৃতিটুকু সুক্্মভাবে, পরিবেশন করলে তাতে রসস্থ্টির ব্যাঘাত হয় না, আত্মদর্শনেরও যোগ মেলে প্রথম উপন্যাসেই আদর্শবাদী বঙ্কিমচন্দ্র সাহিত্যস্থঙ্টির উদ্দেশ্য মেনে চলেছেন নিছক চিত্তরঞ্নী বৃত্তি নয়,_-চিৎশক্তি উদ্‌ঘাটনের সহায়ক হিসেবেই উপন্যাসের পরিকল্পনা করেছেন পরবর্তী উপন্তাঁসগুলিতে তাঁর এই প্রবণতা! তুঙ্গশীর্ষে আরোহন করেছে বলা যায়। কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে শেষ তিনটি উপন্তাঁসে বঙ্কিমচন্দ্র ধর্মতত্ব-_- অনুশীলনতত্ব -ভারতীয় শাস্ত্র গ্রন্থের যূলতত্ব উপদ্যাঁসাকাঁরে পরিবেশনের বিপুল আয়োঞ্জন করেছিলেন | প্রথম দিকে বঙ্কিমচন্দ্র উপন্যাসে যে বক্তব্য পরিবেশন করেছেন তা সে যুগের বাঙ্গালীর কাছে মোটামুটি অহুধাঁবনীয় তত্বকথা। “হর্গেশনন্দিণীর' রোম্যানস নিবিড়তার মাঝখানে জগৎংসিংহ--বীরেন্দ্রসিংহের বীরত্বকথার অন্তরালে বঙ্ধিমচন্দ্রের বক্তব্য অত্যন্ত স্বচ্ছ। মৃণালিনীতেও অনুরূপ চেতনা নিয়েই বঙ্কিমচন্দ্র বাঙ্গালীর চিন্তাশক্তি জাগানোর চেষ্টা করেছিলেন প্রথম উপন্তাসে এঁতিহাঁসিক পটভূমিকার প্রয়োজন ছিল গল্পরস ঘনীভূত করার জন্য, দ্বিতীয় উপন্যাসে একটি বিশেষ দাঁয়িত্ব পীলনের সংকল্প নিয়েই বঙ্কিমচন্দ্র ইতিহাস প্রসঙ্গের অবতারণ! করেছিলেন 'মণালিনী” উপন্যাস সম্পর্কে মোটামুটিভাবে সব সমালোচকের বক্তব্য যেখানে এক-_তা হচ্ছে, উপন্যাসে দেশাত্বোধের বিকাশ সম্পকিত মন্তব্য বাঙ্গালার ইতিহাস বাঙ্গালীর ইতিহাস সম্পর্কে কৌতৃহলী বঙ্কিমচন্দ্র বিদেশীরচিত ইতিহাস পড়ে শুধু ছুঃখিত নয়,-বিরক্ত বিক্ষুব্ধ হয়েছিলেন | মৃণালিনী রচনার উৎস বঙ্কিমচন্দ্রের বিক্ষুব্ধ অন্তর, দেশের কলঙ্ককথা মোচনের আপ্রাণ চেষ্টায় মগ্ন বঙ্কিমচন্দ্রের এই দেশসাধনাকেই আমরা বিশুদ্ধ স্বদেশপ্রাণতা বলে ব্যাখ্যা করব। ম্বণালিনী” শ্বদেশপ্রাণ বস্কিমচন্দ্রের গভীর দেশাত্মবৌধের ্মরকগ্রস্থ। বাঙ্গালীর আত্মজাগরণ লগে দেশগ্রীতির ত্বতোৎসাঁর লক্ষ্য করেছি আমরা, বঙ্কিমচন্দ্র বুঝেছিলেন এই অনুভূতি ঘদ্দি শুধুমাত্র ক্ষণিক বায়বীয় উদ্ছ্বাসেরই নামান্তর হয়ে ওঠে.-তবে তা থেকে

উপন্যাস ৫২৯

জাতি কিছুই লাভ করবে না। তাই দেশের মাটিতেই দেশাত্ববোধের বীঞ্জ বপন করতে হবে, দেশের অতীত ইতিহাসের সঙ্গে, বিগত এঁতিহের সঙ্গে, দেশাত্ববোধের সংযোগ ঘটাতে হবে। বঙ্ষিমচন্দ্র নবলন্ধ জাতীয়তাবোধের ভবিষ্যৎ রচনার কাজে মনোনিবেশ করেছিলেন সেকারপে। কাব্যে-নাটকে-সংগীতে, উপন্তাসে দেশল্রীতিকে নিছক একটি কাল্পনিক আদর্শ হিসেবে ব্যবহার করার স্থলভ পদ্ধতি বর্জন করেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র, এখানেই সেষুগীয় স্বাদেশিকতার সঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্রের দেশাদর্শের পার্থক্য বঙ্কিমচন্দ্র তাই প্রথমাবধি যুক্তিধর্মী,_দেশের ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞতা নীরবতার হেতু নির্ণয়ে ছুঃসাহপিক বঙ্কিমচন্দ্র এগিয়ে এসেছিলেন দেশীস্ববোধের উচ্ছাস থেকে নিছক উত্তেব্রন! ছাড়া অন্য কিছু মেলে না, বঙ্কিমচন্দ্র সেই অগ্তঃসারশুন্ তাবোচ্ছাসকে একটি বাস্তবভিত্তির ওপরে স্থাপন করতে চাইলেন

'মুণালিনী" উপন্তাসে এই আদর্শ রুপায়িত হয়েছে অতীত বাঙলার ইতিহাস আলোচনায় উপন্যাসের ঘনবন্ধ ঘটনাজালের আবর্তে দেশাদর্শ ক্ষীণ হয়ে যাবে এই কারণে অনৈতিহাসিক হলেও এমন সব ঘটনা চরিত্রের অবতারণা করেছেন ধারা বিখ্যাত গ্রতিহাসিক চরিত্রের সঙ্গে জড়িত হয়ে আছে। এভাবে উপন্তাসেও বিশ্বাস্ত ভূমিকারোপের পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি, _সম্ভবতঃ দেশপ্রেমের নির্মল আঁবেগই এর একমাত্র কারণ।

“মৃণালিনী” উপন্যাসের মূল অবলম্বন স্বদেশপ্রেম,_সেই আলোকেই উপন্যাসটির সমস্ত অবিশ্বাস্য পরিবেশ, চরিত্র, কাহিনী ঘটনাঁজালের মোটামুটি একট! বিচার চলতে পাঁরে। ত। যদি সম্ভব না! হয়-_প্রতিমুহূর্তেই উপন্যাস হিসেবে এর ব্যর্থতা আমাদের পীড়িত করবে সন্দেহ নেই। সুতরাং সৃষ্টি হিসেবে “ম্ণালিনীর' অসার্থকতার আলোচন? থেকে বড়জোড় শিল্পী বঙ্ধিমচন্দ্রেরে অসাধধানতার পরিচয় মিলবে কিন্তু দেশচর্চার উন্মাদ আবেগের রূপটি আবিফার করতে সক্ষম হলে দেশপ্রেমিক বস্কিমচন্দ্রের নিষ্ঠার একটি পুর্ণাঙ্গ চিত্র পাঁৰ আমরা

“মৃণালিনী* রচনায় বঙ্কিমচন্দ্র কল্পিত কাহিনী অবলম্বন করেছেন বটে কিন্ত প্রতিহাসিক চরিত্র পটভূমিক1 দিয়েই কথারস্ত হয়েছে হেমচন্্র যদিও কল্লিত নায়ক কিন্ত বঙ্গবিজেতা বখতিয়ার খিলিজি তার প্রতিদ্বন্দ্বী এই প্রতিঘশ্থিতার হেতুটিও পুরাপুরি রাজনৈতিক এতিহাঁসিক ঘটনাবলম্বনে গড়ে উঠেছে। বাঙ্গালার সত্য ইতিহাসের সন্ধানে ব্যর্থমনোরথ হয়ে বঙ্কিমচন্ত্র বাধ্য হয়েছিলেন কল্পনাশ্রয়ী উপস্াস রচনায় কিন্তু বখভিয্নার খিলিক্ি যে বঙ্গবিজয় করেছিলেন অনায়াসে,__-সেটা। মিথ্য। প্রমীণ করা যায় না_-এও তিনি জানতেন মগধ- বিজ্ঞয় শেষে বঙ্গবিজয়ে অগ্রসর হচ্ছেন বিজয়ী বখতিয়ার খিলিজি, “মৃণালিদীর"

৩৪

৫৩৩ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে দেশপ্রেম

কাহিনীর শুরুও সেখানেই ইতিহাস উপস্তান উভয়ই যেখানে প্রাধান্য পেয়েছে সেখানেও বঙ্কিমচন্দ্র “মৃণালিনী'কে এতিহাসিক উপন্যাস বলায় আপত্তি করেছেন। এর প্রধান হেতু লক্ষষণসেন এবং বখতিয়ার খিলিজি এই ছুটি এঁতিহাসিক নাম ছাঁড়া বঙ্কিমচন্দ্র ইতিহাস থেকে কোন সাহায্য পাননি। বিদেশী এতিহাসিকের বিবরণে বঙ্কিমচন্ত্রের শ্রদ্ধা ছিল না। ইতিহাসের সত্যতার ওপর আলোকপাতের প্রাথমিক উদ্দেশ্য বজায় রেখেও মোটামুটি পেষুগের রাজনৈতিক বিপর্যয়ের বিশ্বীশ্- ভূমিক! অস্কনে বঙ্গিমচন্ত্র ঘে ধরণের সাবধানতা অবলম্বন করেছিলেন, তাতে বিত্মিত হতে হয়। বঙ্কিমচন্দ্র এখানেও হিন্দুনেতৃত্ব বীরত্বচিত্র অঙ্কনের চেষ্টা করেছেন। বীরেন্দ্রসিংহকে অপহায়ভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল,___হেমচন্দ্র এখানো কিছুটা স্ক্রিন পিত্রাজ্য মগধ হাঁরিয়েও হেমচন্দ্র মনোবল হরায়নি, শক্রুদমনের সংকল্প পৌষ করেছেন ম্বণীলিনীর' আরস্তে হেমচন্দ্রের পিতৃরাজ্য উদ্ধারের সংকল্প শুনি, আমি কি চোরের মত বিনাযুদ্ধে শক্র মারিব ? আমি মগধ বিজেতাকে যুদ্ধে জয় করিয়া! পিতার রাজ্য উদ্ধার করিব। নহিলে আমার মগধ রাজপুত্র নামে কলঙ্ক | [ ১ম পরিচ্ছেদ, ১ম খণ্ড ]

এই হিন্দুবীর মহৎ সংকল্প নিয়ে আবিভূর্তি হয়েও শেষরক্ষা করতে পারেনি, মৌখিক বীরত্ব প্রকৃত বীরত্বের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা উপন্যাসে বণিত হয়েছে। শুধু মহৎ বৃহৎ উদ্দেশ্য থাকলেই চলবে না,সেই আদর্শকে রূপদানের জন্য কঠোর স।ধনারও প্রয়োজন সাবধনাহীন মহৎ আদর্শ কি ভাবে ব্যর্থ হয়ে যার 'মবণালিনী'ভে তা দেখেছি আমরা অবশ্য বাংলার তুর্কা অধিকারকে সত্য ঘটনা বলে ধরে নিতে হয়েছিল বলেই তুকীজয়ের সাফল্য দেখাতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি তবে এই সাফল্যের পশ্চাতে কিছু সাঁধনাহীন মহৎ আদর্শের ব্যর্থচিত্র চরিত্র রচন। করে বন্ধিমচন্্র সাত্বনা! পেয়েছিলেন কিছুটা তুকাঁ খিজয়ের ঘটনাকে মিথ্য। প্রমাণের কোনো উপায় ছিল না, কিন্ত মিনহাজউদ্দীনের সপ্তদশ অশ্বারোহী কর্তৃক বঙ্গবিজয়ের অবিশ্বাস্য ভিত্তিহীন ঘটনাটির প্রতিবাদ করাই বঙ্কিমচন্দ্রের উদ্দেশ্য ছিল। এই উদ্দেশ্ঠ নিয়েই শক্কিহীন বৃদ্ধশীসক লক্্ণসেন,ক্ষমতালোতী নির্বোধ পশুপতি প্রেমোন্মত হেমচন্দ্রের অসার্থক প্রচেষ্টার চিত্র অঙ্কন করেছেন বঙ্কিমচন্দ্র | বাগালীর শক্তির দীনতার চেয়েও যোগ্যনেতৃত্বের অভাবই অনুভব করেছিলেন বঙ্িমচন্ত্র অরাজ্কতাও স্বার্থপরার়ণতার ফলাফলেই বাংলার স্বাধীনতা অন্তমিত হয়েছিলো, সত্যটিই বঙ্কিমচন্দ্র বেদনার সঙ্গে উপলন্ধি করেছিলেন 'মণালিনী'তে বঙ্কিমচন্দ্রেরে আত্মদর্শন ঘটেছিল বল! ধায় সেকারণেই হেমচন্ত্র নায়ক হলেও উদ্ভ্রান্ত ; যোগ্যতার অভাব না থাক সত্বেও পশুপতি অযোগ্য বলে প্রমাণিত হয়েছে উপন্যাসে যাই হোক,

উপন্যাস ৫৩১

স্বদেশাভিমান ছিলো বলেই বঙ্কিমচন্দ্র স্ণালিনী” উপন্যাসের পরিকল্পনা করার সাহস সঞ্চয় করেছিলেন। ইতিহাসের সত্যকে পরিবর্তনের চেষ্টা করা যায় না, তথ্য কারোরই অজান৷ নয়। বাঙ্গালীর চারিত্রিক অবনতির যে রন্ধপথে বিদেশী শত্রর অন্তুপ্রবেশ, বঙ্কিমচন্দ্র শুধু তার ওপরই আলোকপাতের চেষ্টা করেছিলেন। এর সম্পর্কে একটি সমালোচনার প্রপঙ্গ উত্থাপন করা যায়। ১৩১৯ সালে রঙ্গপুর দর্পণ ণম্পাদক “সৃণালিনীর' সমালোচনা প্রসঙ্গে বলেছিলেন,__

“সিংহ্ঘারের সন্মুখে দণ্তীয়মান হইয়া যবনসিংহ সিংহনাদ করিতেছে, বুদ্ধ অকর্মণ্য তীরু রাজ ভয়ে বিক্ষিপ্ত, রাজ্যরক্ষায় অসমর্থ এইবূপ সময়ে ষি রাজকে সরাইয়। সমর্থ পশুপতি স্বয়ং সিংহাসনে আরোহণ করিতেন দুর্দান্ত যবনকে যদ্দি উৎসারিত বিতাঁড়িত উৎসাহিত করিতেন, তবে নিন্দার পরিবর্তে তীহার প্রশংসা! হইত, সমাজ দেশ তাহার যশোঁগান করিত, বন্গভূমি বক্ষঃস্থল পাতিত করিয়৷ তাহার অক্ষয় কীতিস্তস্ত ধারণ করিত, ইতিহাসের পৃষ্ঠায় স্থবৃহৎ স্থবর্ণাক্ষরে তীহার পবিত্র নাম লিখিত থাকিত 1৯৪

উদ্ধত অংশটিতে বঙ্কিমচন্দ্রের প্রতি যে অভিযোগ আনা হয়েছে তাতে সমালোচককে উৎকৃষ্ট পরামর্শ দাঁতা বল] যেতে পারে কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্রের প্ররুত উদ্দেশ্য অনুধাবন করলে উদ্ধৃত মন্তব্যটিতে বহু অসতর্ক চিন্তা আবিষ্কৃত হবে। বঙ্কিমচন্দ্র “মৃণীলিনী"' উপন্যাসে এতিহাসিক সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেননি বলেই বাস্তব সত্যটিই পরিবেশন করতে হয়েছে তাকে পশুপতিকে আপাততঃ রাজা সাজানো চলত বটে কিন্তু উপন্যাস না হয়ে মেটি নিছক গাঁলগল্লে পর্যবসিত হতো | পশুপতি হেমচন্্র উভয় চরিত্রেই যে ধরণের দুর্বলতা দেখিয়েছেন, বঙ্কিমচন্দ্রের পরিকল্পনার অভিনবত্ব তাতে বেড়েছে বলেই আমাদের ধারণা শ্বদেশপ্রেমিকতা দেশানুভূতি ছুটি চরিত্রেই অস্বচ্ছ এবং ব্যক্তিস্বার্থের কাছে সে সব তুচ্ছ হয়ে গেছে বলেই তারা দোষেগুণে সে যুগের প্রতিনিধি স্থানীয় চরিত্র হতে পেরেছেন নিষ্ঠার আধিক্য থাকলে তুকী বিজয় এঁতিহাসিক সত্য হতে পারত না। সোনার বাংলায় বিদেশী অধিকারের সম্ভাবনা সেদিনই বিলুপ্ণ হোত। লক্ণসেনের অকর্মণ্যতার স্থযোগ নিয়ে ক্ষমতালাভের এই ষড়যন্ত্রের মধ্যে কিছুট! যুক্তিও আছে, পশুপতিকে নায়ক করে বঙ্কিমচন্দ্র সে কথা বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন অকর্মণ্য শাসক উচ্চাভিলাষী নায়কের শাসকোচিত দৃঢ়তার অভাব থেকে যে ধরণের বিপর্যয় ঘট! সম্ভব, বঙ্কিমচন্দ্র সে কাহিনী উদ্ভাবন করে সমগ্র

১৪, রংপুর দর্পন, কিশোরীমোহন দান প্রকাশিত, রংপুর, ১৩১৯

৫৩২ উনবিংশ শতান্ীর বাংল! সাহিত্যে ব্বদেশপ্রেম

বাঙ্গালী জাতির কলঙ্ক কয়েকটি নির্বাচিত কল্পিত চরিত্রের উপরে আরোপ করেছিলেন তবে মিন্হাজউদ্দীন যে তথ্য পরিবেশন করেছিলেন তার যথার্থ প্রতিবাদ কিংবা যোগ্য প্রতিবাদ হিসেবে “ম্বণীলিনী'কে গণ্য কর। চলে কি না সেটাই বিচার্ষ। বঙ্কিমচন্দ্র মীনবচরিত্রের অন্তঘন্দ বিশ্লেষণের মুহূর্তে ঘষে সত্য আবিষার করেছিলেন তাঁতে দেশপ্রেমিকতার মতে! মহৎ আদর্শকেও নিতান্ত ব্যক্তিগত আবেগ উচ্ছবাসের কাছে অর্থহীনতায় পর্যবসিত হতে দেখেছেন তাই হেমচন্ত্র বীক্ন হয়েও অসার্থক, পশুপতি উচ্চাভিলাষী হয়েও ব্যর্থ, সীতারাম স্বাধীনহিন্দু রাজ্য স্থাপনের সহজলভ্য প্রশংসা থেকে বঞ্চিত। উপগ্ঘাসের দাবী তথ্যের দাবীকে একত্রিত করার অস্থবিধ। রয়েছে, বঙ্কিমচন্দ্র শেষপর্যন্ত উপন্যাঁস-এর দাবী মেনে নিয়েছিলেন এঁতিহাসিক তথ্যের প্রতিবাদ করেও জীবন সত্যকে বিকৃত করেননি বলেই বঙ্কিমচন্ত্ প্রশংসা পাবেন তুর্কারা দেশজয় করেছে সত্য, কিন্তু তা এসেছে ষড়যন্ত্র বিশ্বাসঘাতকত।, ব্যক্তিগত দুর্বলতা ভুলের রন্ত্রপথে বাঙ্গালী জাতির সাহসিকতার দৃষ্টান্ত না থাকার প্রশ্নটিই এখানে অবান্তর পতন সব সময়ই একটি জাতির শক্তি বা দুর্বলতার উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে সুদক্ষ পরিচালনার ওপরেও বঙ্কিমচন্দ্র যদি এই সত্যটিও প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হন তবে তাতেই আমাদের ষন্তষ্ থাকা উচিত। সম্পূর্ণ কল্পিত একটি কাহিনীকে বিশ্বাসযোগ্য ভিত্তির উপর দীড় করানোর কঠিন দায়িত্ব তিনি যথাসাধ্য পালন করেছিলেন বলেই আমাদের ধারণ] তু্ণা বিজয়ের ঘটনাটি একেবারে মিথ্যা বলে প্রতিপন্ন করার চেষ্টাটি হাস্যকর হোত। “রংপুর দর্পণ” সম্পাদক আদর্শ কল্পনার কথ চিন্তা করেছিলেন। কল্পনাই যখন, তাতে যতথুগ্লী আদর্শগত উচ্চতার প্রশ্রয় দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন তিনি। তাই ভীরু লক্্মণসেনের এরতিহাসিক স্বভীবসম্মত চরিত্র রচনার জন্য বঙ্কিমচন্দ্রকে দোষারোপ করেছিলেন,

“হিন্দু ভীরু নয়, বাঙ্গালী ভীরু ছিল না, প্রাণের মমত৷ তাহাদিগের অনভ্যন্ত, একান্ত অবিদিত। প্রাণিরক্ষার জন্য, “গোত্রাক্মণহিতের অন্ত” পতিত্রতার পাতিব্রত্যের দেবপ্রতিমারক্ষার জন্য হিন্দু সহাস্তমুখে অনায়াসে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করিতে পারে। সেই হিন্দুর আদর্শ রাজা লক্্ণসেনের এইরূপ ঘ্বণিত চিত্রের উদ্ঘাটন করিয়৷ বঙ্কিমচন্দ্র জাতীয় চরিত্রে কলঙ্করোপ করিয়াছেন, সন্দেহ নাই” [ এ, পৃঃ ১৮]

কিন্তু ইতিহাসের প্রতিবাদ করার জন্য ইতিহাস সমধিত যুক্তি দেখিয়ে নিছক কল্পনার আশ্রয় নেওয়ার কথ! চিন্তা করেননি বঙ্কিমচন্দ্র। ইতিহাস যে ঘটনার বিবরণ বিকৃত করেছে, তাকে বথাযোগ্য সত্য মর্াঁদাদানের সংকল্প গ্রহণ করেছিলেন তিনি। তাই লক্গ্ণসেনের পরাজয় কাহিনী অদ্বীকার না করে যথার্থ ছর্বলগার

উপস্থাস ৫৩৩

হেতুটি নির্ণয় করার প্রয়াস পেয়েছিলেন বৃদ্ধত্ব নৈরাশ্যের মাঝখানে ধারা রাজাকে সাহস শক্তি জোগাতে পারত সেই পশুপতি প্রমুখ চরিত্র তখন স্বীয় স্বার্থচিন্তায় মগ্ন সামগ্রিকভাবে একটি জাতির এঁক্যবোধ স্বাঁধীনতাম্পৃহার উল্লেখযোগ্য অবনতি না ঘটলে পতন এত ভ্রত হতে পারে না। এঁতিহাসিক এই সিদ্ধান্ত আমর! অস্বীকার করব কি করে? বঙ্কিমচন্দ্র “মৃণাঁপিনীতে” খুব বিচক্ষণতার সঙ্গেই অকপট সত্য নির্ণয়ের চেষ্টা করেছিলেন বাংলার সেই দুর্যোগের দিনে ইতিহাস যেখানে অশ্রদ্ধেয় বিকৃত তথ্য পরিবেশনে তৎপর বঙ্কিমচন্দ্র আপন প্রতিভাঁবলে তার ওপরে আলোকসম্পাতের চেষ্টা করেছিলেন সিদ্ধান্তের ওপরে টাঁকাটিগ্নী না! করে ঘটনাটিকে তিনি কল্পনার সাহায্যে প্রচারের চেষ্টা করেছিলেন তাই হেমচন্দ্ স্বদেশপ্রাপ হয়েও আত্মচিন্তায় মগ্ন, পশুপতির মধ্যে সদ্গুণের সমাবেশ থাকা সত্বেও সে পথভ্রান্ত। বাংলার আকাশে অন্ধকাঁর ঘনিয়ে আসার আগে ছায়াশরীরী এসব কাল্পনিক চরিত্র রচনায় বঙ্কিমচন্দ্র যথেষ্ট কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন এদের দেখে মন ক্ষ হয়,আপন অযোগ্যতার জন্য বেদনাবোধ জাগ্রত হয় বঙ্কিমচন্দ্র বোধহয় এমনি করেই আত্মপমালোচনার সোপান প্রস্তুত করতে চেয়েছিলেন আমাদের ত্রান্তির রন্ত্রপথে একদা যা ঘটেছিল --তার সম্বন্ধে সচেতন হওয়ার দিন এসে গেছে, স্বদেশপ্রাণ বঙ্কিমচন্দ্র তা বুঝেছিলেন। সমালোচক শ্রীকুমাঁর .বন্দ্যোপাধ্যায় “বঙ্গ সাহিত্যে উপন্যাসের ধারায়” “মৃণালিনী” সম্বন্ধে বলেছেন,

“হেমচন্ত্র, মাঁধবাচার্য, পশুপতি, লক্ষ্ণসেন, শান্তশীল-_একট। বিশাল রাজনৈতিক সংকটের সন্দিস্থলে এই সমস্ত অণরীরী প্রেতমৃতিই জাতির ভাগ্যনিয়ন্তা, ইহা ভাবিতে মন একট! ক্ষুব্ধ অতৃপ্তি অবিশ্বীসের ভাবে পীড়িত হইতে থাকে-_তাহীরা বিশাল মুললমান প্লাবন তরঙ্গের উপর ক্ষণস্থায়ী বুদ্বুদের মতই প্রতীয়মান হয় ।৮১৫

এই অবিশ্বাশ্ত ষড়যন্ত্রের প্রতিক্রিক্না সমগ্র জাতির প্রাণে সঞ্চার করার ইচ্ছা পোঁষণ করেছিলেন ওউ্পন্যাসিক | বাঙ্গালীর রাজনৈতিক স্বাধীনতা বিলুপ্তির লগ্নে সামগ্রিক দুর্বলতা জাতিকে গ্রাস করেছিলো, - মর্মান্তিক হলেও একথা সত্য তাই 'সুণাঁলিনী” উপন্যাঁসকে শুধু কল্পনাশ্রয়ী বা রোম্যার্টিক উপন্যাস না বলে এর সত্যতার ভিত্তিকে স্বীকার কর] দরকার আত্মদোষ অস্বীকারের হীনত৷ থেকে বন্কিমচন্দ্র বাঙ্গালী জাতিকে রক্ষা করেছিলেন এই উপন্যাসে স্বাধীন ভারতবর্ষের পটভূমিকাঁয় বঙ্ধিমচন্দ্রে. অতীতকীতির আলোচনায় জাতীয় মহিমা আরও বেশী উজ্জ্বল বলে মনে হয়। যদিও সে যুগের বাঙ্গালী উদ্দীপনার মুহূর্তে উপন্যাসের

১৫. শ্্রীকুমার বন্যোপাধ্যায়, বঙ্গসাহিত্যে উপস্থাসের ধারা, মুনালিনী প্রসজে সালোচনা, পৃঃ ৭৫

৫৩৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিতোো স্বদেশপ্রেম

উত্তেজনার অংশ থেকে যথেষ্ট প্রেরণ! পেয়েছে, হেমচন্দ্রের দুর্বলতার বিচার না করে --তাঁর বীরত্বের-শৌর্ষের দ্বারাই প্রভাবিত হয়েছে, উপস্ভাঁসের ফলাফল নিয়ে মাথ! ঘামানোর সময় ছিল না কারো।

বঙ্কিমচন্দ্র নিছক ভাববিলাস বায়বীয় উচ্্বাসকে বরাবরই নিন্দনীয় বস্ত বলেই সমালোচনা করেছেন। তার স্বদেশচিন্তা যুক্তি চিন্তীশক্তি ছুটিকেই অবলম্বন করেছে কায়িক বলের ওপরে জোর না দিয়ে মানসিক দৃঁঢ়তঁকেই স্বদেশ প্রেমের বড়ো সম্বল বলে মনে করেছিলেন তিনি তীর সমগ্র স্বদেশপ্রেমমূলক উপন্যাসের নাঁয়কবুন্দ মানসিক জটিলতার আবর্তে পড়েই আজীবনের স্বপ্ন সাঁধনাকে বিসর্জন দিয়েছেন “মৃণালিনী” উপন্যাসেই প্রথম বাঙ্গালীর চারিত্রিক দুর্বলতা হিন্দুশক্তির পরিকল্পনাবিহীন দেশাত্মবোধের চিত্র অঙ্কন করেছেন। নিছক বায়বীয় উচ্ছবাসের পরিণাম কি হতে পাঁরে,_বঙ্কিমচন্ত্র এখানে সেই সত্যটিই তুলে ধরেছিলেন তবু হেমচন্দ্র মাধবাচার্য যে আমাদের সশ্রদ্ধ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। অসংখ্য ক্রটি থাকা সব্বেও “মুণালিনী, সে যুগের জনপ্রিয় উপন্যাস | |

ম্বণাঁলিনীর” প্রথমাংশেই পুৃৰ ভারতের ছুর্যোগের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে৷ মগধ রাজপুত্র হেমচন্দ্র পিতৃরাজ্য উদ্ধারের জন্য চেষ্টারত। কিন্তু শত্র হত্যায় বীর প্রদর্শন করাই হেমচন্দ্রের আদর্শ

আমি কি চোরের মত বিনায়ুদ্ধে শক্র মারিব 1 আমি মগধ বিজেতাঁকে যুদ্ধে জয় করিয়া পিতার রাঁজ্য উদ্ধার করিব | নহিলে আমার মগধ-_রাজপুত্র নামে কলঙ্ক

[ ১ম খণ্ড, ১ম পরিচ্ছেদ -

এই উক্তির মধ্যে যথেষ্ট বীররস আছে-__হেমচন্দ্রের দৃঢ়তা সাহসের অনবদ্ধ

প্রকাশ এখানে দেখি কিন্তু হেমচন্দ্রের এই পৌরুষ বীর্ষের অন্তরালে দুর্বলতার

স্বর্ূপটিও লেখক পরক্ষনেই ব্যক্ত করেছেন। মাঁধবাচার্য তাকে সন্গেহ তিরস্কার করেছেন,

“তুমি দেবকার্য না সাধিলে কে সাধিবে? তুমি যবনকে না তাড়াইলে কে তাঁড়াইবে? যবন নিপাত তোমার একমাত্র ধ্যান স্বরূপ হওয়া উচিত। এখন মুণালিনী তোমার মন অধিকার করিবে কেন ?” [এ]

মাধবাচার্য দেশরক্ষার পবিত্র কর্তব্যকে দেবকার্য বলেছেন। দেশসচেতন করে তোলার জন্যই প্রিয় শিল্ক হেমচন্দ্রকে তিনি তীত্র ভাষায় তিরক্কার করেছেন মাধবাচার্য গণনা করে দেখেছেন,-“যখন পশ্চিমদেশীয় বণিক বহরাজ্যে অন্্রধারণ করিবে তখন ধবন রাজ্য উৎসম্ন হইবেক।”

উপন্তাস ৫৩৫

এই ইঙ্গিতময় বক্তব্যটি ব্যাখ্যা করে মাঁধবাচার্য হেমচন্দ্রের ওপরেই ষবনরাজ্য ধবংসের দায়িত্ব দিয়েছেন মাধবাচার্যের আদেশ অমান্য করার উপায় ছিল না হেমচন্দ্রের, -কিস্তু প্রেমচিন্তা এই ব্যক্তিটির জম্রগ্র ব্যক্তিত্বকেই প্রায় আচ্ছন্ন করে ফেব্বেছিল। শক্তিমান হয়েও হেমচন্ত্র তাই দেশরক্ষার মহৎ নেতৃত্ব পালন করতে পারেননি একই সঙ্গে বীরত্ব দুর্বলতা হেমচক্রকে কখনও উদ্নপ্ত কখনও বা অিয়মান করেছে। উপন্যাসের নায়ক হিসেবে হেম়চন্দ্র কিছুটা দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও স্বদেশপ্রেমিক বীর চরিত্রের মর্যাদা কিছুতেই হেমচন্দ্রকে দেওয়া! যায়না! বঙ্কিমচন্দ্র পাঠককে প্রথম থেকেই সে বিষয়ে সচেতন করার "চেষ্টা করেছেন | তবু যে হেমচন্দ্র সেযুগে আদর্শ চরিত্র হিসেবে গৃহীত হয়েছিল তাঁর কারণ যবন উৎপাঁটনের সদিচ্ছা একদ]1 তিনিই উচ্চরবে ঘোষণা করেছিলেন

'মণালিনী' উপন্যাসের পটভূমিকায় বিদেশী শক্রসৈন্যের আবির্ভীব পাঠককে কৌতুহলী করে। রাজা লক্ষমণসেন বুদ্ধত্বে উপনীত, বার্ধক্যহেতু শত্রর হাতে রাজ্য তুলে দেওয়ার যে ঘ্বণ্য প্রস্তাঁধটি তিনি উচ্চারণ করেছিলেন তাতে মর্মাহত হয়েছিল সভাস্থল,__মাধবাচার্য ক্রন্দন করেছিলেন মাঁধবাচার্ষের এই দেশামুভূতি পাঠকের চিত্তকে দ্রব করেছে বুদ্ধ লক্ষ্মণসেনের অসহায় যুতি আমাদের করুণা সঞ্চার করেনি কিন্তু ছরভিসন্ষি থাঁকা সত্বেও পশুপতি শত্রদমনের আয়োজন করে স্বদেশ- প্রেমিকতার জোরে আমাদের সমর্থন লাভ করেছেন। শক্রদূতের কাছে চতুর রাঁজনীতিজ্ঞ পশুপতি বলেছিলেন, -_

“আমি রাজ্য তাঁহার হস্তে সমর্পণ করিব কি না, তাহা অনিশ্চিত। স্বদেশ- বৈরিতা মহাপাপ আমি কর্ম কেন করিব ? [ ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ, ২য় খণ্ড

আবার দ্ুরভিসন্বিপরায়ণ পশুপতি আবেগভরে গৃহদেবী অষ্ভূজা মৃতির কাছে প্রণাম জানিয়ে বলেছে,

"আমি অকৃলসাঁগরে ঝাঁপ দিলাম, দেখিও মা! আমায় উদ্ধার করিও। আমি জননীস্বরূপা জন্মভূমি কখনও দেবদ্েষী যবনকে বিক্রয় করিব ন11”

[ সগ্চম পরিচ্ছেদ ২য় খণ্ড]

পশুপতির স্বার্বোধ চরিত্রের সমস্ত সদগ্ডণ বিনষ্ট করেছে। মাঁধবাচার্ষের স্ুপরামর্শও পশুপতি অগ্রান্ করেছে বঙ্গভূমিকে জনশীস্বরূপ। মনে করেও পশুপতি নির্বোধের মত বনের হাতেই তা সমর্পণ করেছে সর্বোপরি মগধ বঙ্গকে একত্রিত করে শক্র সৈন্যকে বিতাড়িত করার হুপরামরশশ অগ্রান্ধ করে পশুপতি হেমচন্দ্রকেও বিপদগ্রস্ত করেছে। তথাপি চরিত্রটি সম্বন্ধে উপন্যাসিকের কিঞ্চিৎ

সহানুভূতি ছিল,

৫৩৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

“যে ব্যক্তি রাখিলে গৌড় রাখিতে পাঁরিত, সে উর্ণনাঁভের ন্যার বিরলে বসিয়া

অভাগা জন্মভূষিকে বন্ধ করিবার জন্য জাল পাঁতিতেছিল 1 [ ১ম পরিচ্ছেদ, চতুর্থ খণ্ড]

বঙ্কিমচন্দ্রেরে ক্ষোভের সীমা! নেই। অতীত ইতিহাসের এই কলঙ্চঞ্জনক ইতিবুতের বর্ণন! দিতে গিয়ে তাই তিনি বেদনার্ত।

ইতিহাঁসবণিত যে ঘটনার সত্যতায় বঙ্কিমচন্দ্র সন্দেহ প্রকাঁশ করেছিলেন, বঙ্গদেশ বিজয়ী সেই সপ্তদশ অর্ারোহীর প্রসঙ্গটি বঙ্কিমচন্দ্র উপন্তাসের যবনদৃত-যমদূত অংশে বিস্তৃতভাবে আলোচন! করেছেন। পশুপতির মন্ত্রণান্ুসারেই এই ব্যবস্থা হয়েছিল, নতুব] সপ্তদশ অশ্বারোহীর পক্ষে যথার্থ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হওয়াটা অসম্ভব ছিল, কথ! গুমাঁণের জন্যই পশুপতি চরিত্রটি কল্পনা করেছিলেন তিনি

বঙ্গদেশ শক্রকরতলগত হল এখানে বঙ্কিমচন্দ্র বউপন্তাসিকের দীতিত্ব বিস্বৃত হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছেন গোৌড়ের স্বাধীনতা বিলুপ্তির এই হৃদয়বিদারক অংশটি বর্ণনাকালে বঙ্কিমচন্দ্রের পক্ষে আত্মগোপন বা আত্মসংযম পালন করা কোনমতেই সম্ভব ছিল না। বঙ্কিমচন্দ্র তার এই মনোবেদন প্রকাশ করেছিলেন এভাবে,

“সেই রাত্বকুলকলঙ্ক, অসমর্থ রাজার সঙ্গে গৌড়রাঁজ্যের রাঁজলক্মীও যাত্রা করিলেন ষোড়শ সহচর লইয়া মর্কটাকার বখ.তিয়ার খিলিজি গৌড়েশ্বরের রাজপুরী অধিকার করিল।» [ চতুর্থ পরিচ্ছেদ, ৪র্থ খণ্ড]

লক্্ণসেনের উপযুক্ত বিশেষণই দান করেছেন বঙ্কিমচন্দ্র, কারণ উপন্যাসে তাঁর কলঙ্কিত আচরণের দৃষ্টান্ত রয়েছে রাজ্যবিজয়ী বখ.তিয়ারের বিশেষণটি সে তুলনায় লঘু। যে আমাদের প্রিয়জন, আশ ভরসার স্থল, কর্তব্যপাঁলনে বিমুখ হলে তাঁকে নিঠ্রভাবে সমালোচনা কেবল আমরাই করতে পারি

উপন্যাঁসিক বঙ্কিমচন্দ্র সমালোচকের আসনে উপবিষ্ট হয়ে মন্তব্য করেছেন, “ষষ্ট বৎসর পরে যবন ইতিহাঁসবেস্ত। মিন্হাঁজউদ্দীন এইক্প লিখিয়াছিলেন। ইহার কতদূর সত্য, কতদূর মিথ্যা তাহা কে জানে? যখন মনুষ্যের লিখিত চিত্রে সিংহ পরাজিত, মন্থস্ত সিংহের অপমান কর্ত! স্বরূপ চিত্রিত হইয়াছিল, তখন সিংহের হস্তে চিত্রফলক দিলে কিরূপ চিত্র লিখিত হইত? মনুস্য যৃষিকতুল্য প্রতীয়মান হইত সন্দেহ নাই মন্দভাগিনী বঙ্গভূষি সহজেই দুর্বল, আবার তাহাতে শত্রহস্তে চিত্রফলক 1”

এই ক্ষোভ ছুখ নিবারণের জন্যই “মৃণালিনীর” পরিকল্পনা কিন্তু উপস্তাসেও বাস্তবত৷ সৃষ্টি করতে গিয়ে শিহরিত হয়েছিলেন তিনি | আমাদের জাতীয় হুর্বলতার বিষময় পরিণতি নতুন করে তাঁকে বেদনার্ত করেছে। পণশুপতির অদুরদশিতার ভয়াবহ ফলাফল সম্বন্ধে কৈফিয়ৎ দিয়েছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র,

উপস্তাস ৫৩৭

আমর। পাঠক মহাঁশয়ের নিকট পশুপতিকে বুদ্ধিমান বলিয়া পরিচিত করিয়াছি পাঠক মহাশয় বলিবেন, যে ব্যক্তি শক্রকে এতদূর বিশ্বাস করিল, সহায়হীন হইয়া তাহাদিগের অধিকৃত পুরীমধ্যে প্রবেশ করিল, তাহার চতুরতা কোথায়? কিন্ত বিশ্বাস না করিয়া কি করেন। এবিশ্বাস না করিলে যুদ্ধ করিতে হয়। উর্ণনাভ জাল পাতে, যুদ্ধ করে না। [ পঞ্চম পরিচ্ছেদ, ৪র্থ খণ্ড ]

বঙ্কিমচন্দ্র এই কৈফিয়ৎটির নানা সমালোচনার প্রসঙ্গে পূর্বে আলোচনা করেছি। বঙ্কিমচন্দ্রের কল্পনা! কতটা নিখুত হলে আমরা খুশী হতাম আপাততঃ সে প্রসক্ধ অবান্তর | পশুপতিকে নিছক পশু চরিত্ররূপে দেখালে আমর] সন্ত হতাম কি নাকেজানে। তবে স্বার্থসিদ্ধির জন্য সচেতন পশুপতি যথেষ্ট দক্ষতা থাকা সত্বেও যে সর্বনাশা কর্মজালে জড়িয়ে পড়লেন সেই চিত্রটি রচনায় বঙ্কিমচন্দ্র যে সত্যিই দক্ষতা দেখিয়েছিলেন তাতে আমরা নিঃসন্দেহ। পশুপতি চরিত্রে স্বার্থপরতা নীচতা যতই থাক না কেন বঙ্কিমচন্দ্র নিজে ছিলেন স্বদেশপ্রেমী | ইতিহাসের ব্যর্থতা থেকে তিনি ভবিষ্ততের আশার দীপটি জালিয়ে নিতে চান। এই দুঃখের অনুভব নিয়েও বন্ধিমচন্ত্ আলোকিত ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছিলেন,_-“নবদ্বীপ জয় সম্পন্ন হইল। যে কথ্য সেইদিন অন্তে গিয়াছে, আর তাঁহার উদয় হইল না। আর কি উদয় হইবে না? উদয় অস্তও স্বাভাবিক নিয়ম !”

বণালিনী” উপগ্ভাসের নায়ক হেমচন্দ্রকেই সর্বাপেক্ষা নিশ্রভ মনে হয়। স্বদেশো- দ্ধারের প্রেরণ! যদি স্বত-স্ফর্ত না হয়ে আরোপিত হয়--তার আবেগও যে অত্যন্ত স্তিমিত হবে তা সহজেই বোঝা যাঁয়। মৃণালিনী ধ্যানমগ্ হেমচন্দ্রকে স্বদেশপ্রেমষিকের ভূমিকায় তাই বেমানান লাগে। শক্র অধিকৃত নবদ্ীপে যুদ্ধসাঁজে সঙ্ভজিত হয়ে হ্মচন্দ্র একবার যুদ্ধোগ্ভম করেছিলেন কিস্তু তৎক্ষণাৎ নিরস্ত হয়েছিলেন তিনি ভেবেছিলেন,

“একটি একটি যবন মারিয়া কি করিব? যবন যুদ্ধ করিতেছে না যবনবধেই বা কি ন্থখ£ বরং গৃহীদের রক্ষার সাহায্যে মন দেওয়া! ভাল |”

[ সপ্তম পরিচ্ছেদ, ৪র্থ খও্ড ]

সৃণাপিনী লাভের সাধনায় মনোনিবেশ করেছিলেন হেমচন্দ্র হ্তরাং তীর সেই বাঁসনা পুতির জ্রস্তই যাবতীয় ঘটনাজালের পরিকল্পনা করেছেন ওঁপগ্যাঁসিক। স্বদেশপ্রেমের আন্তরিক পরিচয় দিতে পারেননি বলে হেমচন্দ্রের ওপর দোষারোপ করাটা অর্থহীন ।-_মাধবাচার্যই নির্বাচনে ভূল করেছিলেন বলেই আমাদের ধারণ! ষাধবাচার্ষের ভ্রান্তি কিন্ত তখনও কাটেনি যবনের! নবদ্বীপ অধিকার করেছে 'বটে-_মাধবাঁচার্যের ছুরাশা তখনও দিত হয়নি,_

€৩৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

“ঘবনের1 নবদীপ অধিকার করিয়াছে বটে, কিন্তু নবদ্বীপ গৌড় নহে। প্রধান রাজা সিংহাঁসন ত)াগ করিয়। পলায়ন করিয়াছেন। কিন্তু এই গৌডরাঁজ্যে অনেক করপ্রদ রাজা আছেন 5 তাহার এখনও বিজিত হয়েন নাই কেঞ্ানে যে, সকল রাজ! একত্র হইয়া প্রাণপণ করিলে, যবন বিজিত ন। হইবে 1

[ দ্বাদশ পরিচ্ছেদ, ৪র্থ খণ্ড]

শই শুভসঙ্কল্প জাগ্রত কর] মাধবাচার্ষের পক্ষে সম্ভব ছিল না। সে যুগের পটভূমিকায় এমন চিন্তাও প্রায় অসম্ভব ছিল। মাঁধবাচার্ষের প্রযত্বেও হেমচন্দ্র পশুপতি একত্রিত হয়ে যবন বিতাড়নের চেষ্টা করেননি হৃতরাং এর চেয়েও মহৎ আশার স্বপ্ন দেখাটাই আশ্চর্যের ব্যাপার সম্ভবতঃ এই যুক্তি ও্পন্তামিক বঞ্ধিমচন্দ্রের ইতিহাসের অস্বস্তিকর বিবরণকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বহ্কিমচন্ত্ নতুন করে আমাদের দৌধক্রটি অনৈক্যের ইতিহাস আবিষ্কার করলেন। এই আসত্মবিশ্লেষণের ফলে নতুন করে আঘাত পাওয়] ছাড়া অন্য কিছু লাভ হয়নি তার। তবে এই জাতীয় বিশ্লেষণের চেষ্টা করে বঙ্কিমচন্দ্র বাঙালী জাতির প্রতি আন্তরিক প্রীতির পরিচয় দিয়েছেন। শ্বদেশপ্রেমিক বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম আত্মপ্রকাশ 'ষণালিনীতেই” অনেকের মতোই সমালোচক অক্ষয়চন্দ্র দত্তগুপ্ত স্বীকার করেছেন,__

“ভবিষ্যতে কোনও কোনও গ্রন্থে যে বঙ্কিমচন্দ্র অতুলনীয় স্বদেশভক্তির পরিচয় দিয়াছেন, 'ম্ণালিনী'তে তাহার সুচনা দেখা যায়। সপ্তদশ পাঠান অশ্বারোহী এই বাঙ্গলা দেশটাকে একদিনে জয় করিল বলিয়৷ যে আখ্যান ইতিহাসে স্থান পাইয়াছে উহার অযৌক্তিকতার বিরুদ্ধে বস্কিমই বোধ হয় প্রথম লেখনী ধারণ করেন ।”৯৬

কোন একজন ওপস্তাঁসিক সম্পর্কে এই শ্রদ্ধেয় উক্তিই স্বার্দেশিকতার চরম এমাপ | যিনি রসস্ৃ্টির রসদৃষ্টির পরিচয় দিতে গিয়েও স্বাদেশিকতার স্বতঃস্ফূর্ত স্বাক্ষর রেখেছেন তাঁর অসামান্ত কৃতিত্বের পরিমাপ সাধারণ সাহিত্যিকের মানদণ্ডে চলতে পারে না। তাই বঙ্কিমচন্দ্রকে সাধারণ নিয়মে বিচার করতে গিয়েই তুল করি আমরা। উপন্যাসে বাঙ্গালী জীবনচিত্র ফোটানোর জন্ত বঙ্কিমচন্দ্র ইতিহাস থেকে অধুনা পর্যন্ত যথার্থ বাঙ্গালী চরিত্র খু'জে বেড়িয়েছিলেন। দেশগপ্রীতির আবেগে এই অনুসন্ধানের তৃষণ উত্তরোত্রর বেড়েই গিয়েছিল বঙ্কিমচন্দ্র বাঁ্দীলীর দুর্বলতার অপবাদ গ্লানি ঘোচাতে চেয়েছিলেন,_কিস্তু তা বে সম্ভব নয় সত্যও তার অভিজ্ঞতালৰ আবিষ্ষার এঁতিহাঁসিক বিবরণের যথার্থ রূপ বজায় রাখা উপন্তাঁসে অবান্তর চেষ্টা বলে ইতিহাসের স্পর্শ থেকে চরিত্রগুলোকে গ্রহণ করেও উপন্থাসে তাকে জীবন্ত করে

১৬, ছন্দ, বন্কিমচন্র, ১৩২৭, পৃঃ ১৭৪

উপস্তাস €৩৯,

তোলার শৈল্পিক চেষ্টা থেকে বঙ্কিমচন্্র বিরত হননি “মুণালিনীর' পরেই বঙ্কিমচন্দ্র অধুনাতন সমস্যা নিয়ে সামীজিক উপন্যাস রচনায় মন দিলেন “বিষবৃক্ষ' থেকে কুষ্ণকান্তের উইল” পর্যন্ত বঙ্কিমচন্দ্র সে চেষ্টাই করেছেন,_শুধু চন্দ্রশেখরই” তার ব্যতিক্রম | দেশপ্রেমিকতা বঙ্কিমচন্দ্রকে ওপন্তাসিক হিসেবে পৃথক মর্যাদাদান করেছে 'চন্দ্রশেখরেও' সে পরিচয় মিলবে “ুগগেশনন্দিনী” 'ম্ণালিনীতে, প্রত্যক্ষ স্বদেশপ্ীতির পরিচয় পেয়েছি আমরা বঙ্কিমচন্দ্র অতীত ইতিহাসের অনালোকিত অধ্যায়কে উজ্জ্বল করার চেষ্টা করেছিলেন, চন্জরশেখরে ঠিক সেজাতীয় কোন উদ্দেশ্য ছিল না। কোন বিশেষ উদ্দেশ্যের প্রতি একনিষ্ঠতা ওউঁপন্যাসিকের লক্ষ্যণীয় ক্রটি বলেই সমাঁলোচন। করা হয়ে থাকে “ম্ৃণালিনী'তে সে চেষ্টা লক্ষ্য করেছি আমরা 'ন্দ্রশেখরে' বঙ্কিমচন্দ্র শিল্পস্থষ্টির মুখ্য দায়িত্ব পালন করেছেন,_-চরিত্রস্থজন নিপুণ মনোবিশ্লেষণে প্রথম শ্রেণীর শিল্পীর নিষ্ঠাই উপন্যাসের সবত্র লক্ষ্যণীয়। মানখ- চরিত্রের অতলগভীর রহস্যে অবগাঁহন করে বঙ্কিমচন্দ্র মানবজীবনের চূড়ান্ত ব্যর্থতার চিত্র অঙ্কন করেছেন এখানে | হ্বদেশভ্রীতির মত নিতান্তই সাময়িক উত্তেজনা থেমে গেলেও উপন্যাসের বক্তব্য পাঠক আগ্রহভরে পাঠ করবে। এই উপস্তাসেও বস্িমচন্দ্ স্বতঃসিদ্ধরূপে ইতিহাসের সংশ্রব রক্ষা করেছেন সম্পর্কে সমালোচক শ্রীসজনীকান্ত দাঁস প্রীব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন,_-“বাঙ্গালীর বীরত্ব মহত্ব প্রদর্শনের বাসনা বরাবরই তীঁহাঁর মনে জাগরূুক ছিল। কিন্তু নিজের পারিপাশ্বিক সমাজ জীবনের মধ্যে তাহার বিশেষ স্মৃতি তিনি দেখিতে পান নাই সুতরাং তিনি আবার অতীতের দিকে দৃষ্টি ফিরাইয়া ছিলেন। ইতিহাসের আশ্রয় তাহার বিশেষ প্রয়োজন ছিল না; রমানন্দ স্বামী, চন্দ্রশেখর, প্রতাপ এবং রাঁমচরণ তীভীরই মানসপুত্র, ইতিহাসের পটভূমিকায় তাঁহাদিগকে সজীবতা৷ দিবার জন্যাই বন্ধিমচন্্ মীরকাশিমের সহিত ইংরেজের সংঘর্ষ কাহিনীকে অবলম্বন করিয়াছিলেন 1” [ ভূমিকা, চন্দ্রশেখর”, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ প্রকাশিত ইংরেজ অধিকারের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা উপন্তাসে পটভূমিকা- রূপে চিত্রিত হয়েছে সিরাজদ্দৌলার পতনের পর মীরকাশেমের উথ্থানে বাংলার ভাগ্যাকাশে যে ক্ষণিক আশার আলো। দেখা গিয়েছিল বঙ্কিমচন্দ্র সেই সময়টিকে উপন্তাসের কাল হিসেবে বেছে নিয়েছেন যদিও যূল ঘটনাঁর সঙ্গে ইতিহাসের এই সংযোগটুকু না রাখলে উপগ্যাসের কতখানি ক্ষতিবৃদ্ধি হোত সেটা পৃথক আলোচনার বস্ত। ইতিহাসের এই অধ্যায়টুকুর আলোচনা প্রসঙ্গেই বস্কিমচন্দ্রের দেশচর্চার স্বযৌগ আমরা লাভ করেছি তাতে সন্দেহ নেই। ইংরেজশাসন স্থপ্রতিচিত হওয়ার আগেও

4৪০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেষ

বাংলাদেশে শান্তি ছিল। কিন্তু বিদেশীশাসকের অত্যাচার যখন তীব্র হয়ে উঠত তখন তার প্রতিবাদে মাথা উচু করে দীড়াতে সাহস করত এমন অনেক শক্তিমান জমিদারও সেযুগে ছিল। টৈবলিনীর লরেন্স ফস্টরের হাতে ধর! পড়ার জন্ লরেন্স ফষ্টরের প্ররোচন। বা অত্যাচার কতটুকুই বা! কিন্তু প্রতাপের ক্রোধবস্ি জালিয়ে তোলার অন্ত সেটুকুই যথেষ্ট ছিল। উপগ্ভাঁসের নায়ক প্রতাঁপ ইংরাজ- জাতিকে শক্র বলে মনে করেছে,_-যদিও তাঁর পেছনে কারণটি নিতান্ত সঙ্গতিহীন বঙ্কিমচন্দ্র এখাঁনে প্রতাপের প্রতিপত্তি ক্ষমতার প্রসঙ্গটি অনাবশ্যকভাবে বর্ণনা করেছেন নিতান্তই স্বজাতিশ্রীতি ছাঁড়া জাতীয় অনাবশ্ক বর্ণনার অন্য কোন হেতু নেই। প্রতাঁপকে সমগ্র বস্কিমউপন্যাঁসের আদর্শ চরিত্রকূপে মনে করেন অনেকে কিন্ত সে প্রসঙ্গের অভ্যন্তরে ন] গিয়ে শুধু বাঙ্গালী বীর হিসেবে প্রতাপকে বঙ্কিমচন্দ্র যে ভাবে চিত্রিত করেছেন তাতে নিছক স্বাজাত্যাভিমান ছাড়া অন্ত কিছু খুজে পাই না আমরা দেশশ্ীতি জাতিত্রীতি বঙ্কিমচন্ত্রকে কতখানি মোহগ্স্ত করেছিল তার প্রমীণ হিসেবে অংশটুকুর বিশেষ যূল্য রয়েছে,

প্রতাপ জমিদার এবং প্রতাপ দক্থ্য আমরা ঘে সময়ের কথা বলিতেছি, সে সময়ের অনেক জমিদারই দস্থ্য ছিলেন | বাস্তবিক দস্যবংশে জন্ম অগৌরবের কথা বলিয়া বোধ হয় না, কেন না, অন্থত্র দেখিতে পাই, অনেক দস্থ্যবংশজাতই গৌরবে প্রধান [ ৪র্থ খণ্ড, ১ম পরিচ্ছেদ ]

দহ্যতার স্বপক্ষে এই যুক্িৎপ্রদর্শন শুধু প্রতাপের পরিচয়কে উজ্জ্রল করার উদ্দেশ্যেই যে বণিত হয়েছে তাতে সন্দেহ থাকে না। প্রতাপকে বাঙ্গালী বীরের আদর্শরূপে দেখাবার উদ্দেশ্যেই বঙ্কিমচন্দ্র বলেছিলেন,

“তবে অন্যান্য প্রাচীন জমিদারের সঙ্গে প্রতাপের দস্থ্যতার কিছু প্রভেদ ছিল। 'মাত্সসম্পর্তি রক্ষার জন্য বা দুর্দান্ত শক্রর দমন জন্যই প্রতাপ দহ্থ্যদিগের সাহাধ্য গ্রহণ করিতেন। অনর্থক পরস্বাপহরণ বা] পরপীড়ন জন্য করিতেন না; এমনকি, দুর্বল ব। পীড়িত ব্যক্তিকে রক্ষা করিয়। পরোপকার জন্যই দস্তা করিতেন [এ]

জাতীয় যুক্তির আধিক্যে বঙ্কিমচন্দ্রের স্বাজ্াত্যাভিমাঁনের উচ্ছ্সিত প্রকাশ দেখ! যায়। স্বদেশপ্রেমিক বঙ্কিমচন্দ্রকে এমনভাবে উপন্যাসে আবিফার করায় কিছু মাত্র বিশ্মিত হই না কারণ উপন্যাসে জাতীয় উচ্ছ্বাস বারংবারই লক্ষ্য করেছি। স্বদেশপ্রেমই বঙ্কিমচন্দ্রের ওপন্যাঁসিক চিন্তাধারাকে এভাবে শ্রসাঁবিত করেছিল, একথা! অকপটে বলা চঙ্গে। প্রতাপের এই নির্ভীকতা বীরত্ব দেখেও স্কাকে আমর স্বদেশপ্রেমিক বলতে পাবি না। স্বদেশপ্রেমের কোন বুম্ম অন্তভূতি জার চরিত্রে ছিলনা ইংরেজবিঘেষ প্রতাপের চরিত্রে দেশপ্রেমের প্রতিক্রিয়ারূপে

উপস্থাঁস ৫৪১

দেখানো হয়নি অথচ ইংরেজজ্াতির বিরোধিতা করতেই মনম্ব করেছিলেন তিনি শক্রকে বিনাশ করার চেষ্টামাত্রকেই আমরা স্বদেশপ্রাণতা বলি না, -আরও গভীর দেশানুরাগের আবেগ থেকেই স্বদেশপ্রেমের জন্ম। কুতরাং প্রতাপের ইংরেজ- বিদ্বেষকে নিতান্তই সাময়িক অনুভব বলেই বর্ণনা! করেছেন বস্ধিমচন্ত্র | . ইংরেজজাতি বাঙ্গালায় না আসিলে, শৈবলিনী লরেন্স ফষ্টরের হাতে পড়িত না অতএব ইংরেজজাতির উপরও প্রতাপের অনিবার্য ক্রোধ জন্মিল। প্রতাপ সিদ্ধান্ত করিলেন ফষ্টরকে আবার ধৃত করিয়া, বধ করিয়া এবার অগ্নি সকার করিতে হইবে--নহিলে সে আবাঁর বাচিবে--গোর দিলে মাটি ফুড়িয়া উঠিতে পারে দ্বিতীয়, সিদ্ধান্ত এই করিলেন বে, ইংরেজ জাতিকে বাংলা হইতে উচ্ছেদ কর! কর্তব্য ; কেননা, ইহাদিগের মধ্যে অনেক ফ্টর আঁছে।, [এ] চন্দ্রশেখরে' বঙ্কিমচন্দ্র যেযুগের ইতিহাস অবলম্বন করেছিলেন তাতে স্বদেশোচ্দছ্ীন প্রকাশে যথেষ্ট হুযোগ ছিল। এখানে শাসক ইংরেজ রাজ্যঢ্যুত মুসলমান শাসকের সংঘর্ষ পটতৃমিকারূপে ব্যবহৃত হয়েছে-সমসাময়িক দেশপ্রেম প্রচারের যুগে পটভূমিকাকে বঙ্কিমচন্দ্র কাঁজে লাগাতে পারতেন | কিন্তু উপন্যাসের দাবীকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য শৈবলিনী প্রতাপের মনোবিষ্লেষণেই মনোযোগ দিয়েছিলেন তিনি। এতে উপন্যাসের আকর্ষণ বেড়েছে এবং শিল্পী বঙ্কিমচন্দ্রেরে দক্ষতাঁরই পরিচয় পেয়েছি স্বদেশপ্রেমিক বঙ্কিমচন্দ্র উপন্যাঁসে সচেতন ভাবেই উপন্যাঁস রচনা করেছিলেন, অন্য কোন উদ্দেশ্বের ছারা প্রভাবিত হননি তবু কৌথাও কোথাও স্বদেশপ্রাণতা তীকে আত্মবিস্থত করেছিল বলেই অপ্রাসঙ্গিক অংশগুলেো৷ উপন্যালে অঙ্ক হয়ে উঠতে পারেনি প্রতাপ শৈবলিনীর আখ্যায়িকার মাঝখানে মীরকাসিমের প্রসঙ্গটি নিতান্তই পটভূমিকারপে ব্যবহৃত হলেও মীরকাসেম আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তাঁর দেশপ্রেম নিয়ে পরবর্তীকালে দেশোচ্ছাসের বন্যায় যে সব স্বদেশ- প্রেমিকেরা নাটকের নায়করূপে আমাদের সামনে এসে দীড়িয়েছিলেন মীরকাসেষ তীদের অন্যতম। বঙ্কিমচন্দ্রের কল্পনাতেই মীরকাসেমের দেশপ্রেম প্রথম থর পড়েছিল। ইংরেজের সঙ্গে যুদ্ধ করার পূর্বাহ্ন চিন্তান্িত মীরকাসেমের উক্তি থেকেই তাঁর দেশভাবনার পরিচয় স্পষ্ট বৃহৎ শক্তির সামনে দাড়িয়ে ভাবী সর্বনাশের মুখেও মীরকাসেন আত্মরক্ষা! করতে চাননি, যুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন,

“আমার আর উপায় নাই ।...আমি নিশ্চিত জানি, বিবাদে আমি রাজ্য হইব, হয়ত প্রাণে নষ্ট হইব তবে কেন যুদ্ধ করিতে চাই? ইংরেজেরা যে আচরণ করিতেছেন, তাহাতে তাহারাই রাজা, আমি রাজা নই! যে রাজ্যে আমি রাজা নই, সেন্বাজ্যে আমার প্রয়োজন? কেবল তাহাই নহে। তাহার! বলেন, রাঁজা৷ আমরা,

৫৪২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

কিন্তু প্রজাপীড়নের ভার তোমার উপর | তুমি আমাদিগের হইয় প্রজ্াপীড়ন কর, কেন আমি তাহা করিব? যদি প্রজার হিতার্থে রাজ্য করিতে না পারিলাম বে সে রাজ্য ত্যাগ করিব, অনর্থক কেন পাপ কলঙ্কের ভাগী হইব? আমি সিরাজউদ্দৌলা নহি বা মীরজাফরও নহি ।* [ ১ম খণ্ড, ১ম পরিচ্ছেদ

এই উক্তি স্বদেশপ্রেমিকের | মীরকাসেমের এই বক্তব্য অন্ততঃ সেযুগের কাছে দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত রূপেই গৃহীত হবে এই চরিত্রের দেশপ্রেম যে পরবর্তীকালে নাটকের উপাদীন হতে পারে তা এই পামান্ত উদ্ধৃতি থেকেই অন্থমান করা সম্ভব কিন্ত মীরকাসেম উপন্যাসের নায়ক নন,_প্রতাঁপ শৈবলিনীর ঘটনাটিকে ইতিহীস- সম্পৃক্ত করার উদ্দেশ্টেই মীরকাসেমকে পটভূমিকীয় এনেছিলেন বহ্কিমচন্দ্র। কিন্ত গৌণ চরিত্র হলেও মীরকাসেমের দৃঢ়তা দেশপ্রীতির অনাবিল পরিচয় পেয়েছি উপন্যাসে | শুধু তাই নয়, ইংরেজের রাজ্যলাভের মুহূর্তে সিরাজউদ্দৌলা মীরজাফরের যূর্থতা বিশ্বাসঘাতকার প্রসঙ্গটি ব্যাখ্যা করেছেন বঙ্কিমচন্দ্র ইংরেজকে শত্রু বলে কল্পনা! করার মত মানসিক দৃঢ়তাই মীরকাসেমের স্বাধীনচিত্ততার পরিচায়ক 'চন্দ্রশেখরে' গুরগণ খাঁকে বিশ্বাসঘাঁতকের ভূমিকায় বর্ণনা করেছেন লেখক | অতিবিশ্বস্ত এই সেনাপতিও মীরকাসেমের কাছ থেকে কৌশলে রাঁজ্যলাভের বাসনা করেছিলো! চরিত্রটি আমাদের বিশ্বাসঘাতকতার ইঙিহাঁসে অনায়াসে স্থান পেতে পারে বঙ্কিমচন্দ্র কল্পনাবলে ইতিহাসের নিদীরুণ সত্য উদ্‌ঘাটনের চেষ্ট। করেছিলেন মাব্র গুরগণ খাঁর স্বগতভাষণ থেকে আমরা সেযুগের কুটিল রাজনীতির বিশদ পরিচয় পেতে পারি। মীরকাসেম মসনদে আছেন এইমাত্র, ইংরেজের সঙ্গে তার সম্পর্কটি ব্যাখ্যা করেছে গুরুগণ খা,

_ আমিই বাংলার কর্তা আমি বাংলার কর্তা? কে কর্তা? কর্তা বড় উচ্চপদ! 'আমি বাংলার কর্তা না হই কেন? ইংরেজব্যাপারী--তাহাদের গোলাম মীরকাসেম ; আমি কর্তার গোলামের গোলাম কে আমার তোপের কাছে দ্াড়াইতে পারে? কিস্ত ইংরেজকে দেশ হইতে দূর না৷ করিলে আমি কর্তা হইতে পাঁরিব না। ...এখন ম্ীরকাসেম মসনদে থাক, তাহার সহায় হইরা বাংলা হইতে ইংরেজ নাম লোপ করিব ।” [ ২য় খণ্ড, ২য় পরিচ্ছেদ, ]

গুরগণ খাঁর অভিসদ্ধির গুঢ়ার্থ শুধু বিশ্বামঘাতকতার অভিজ্ঞতায় অভ্যস্ত আমরাই এক নিমিষে অনুধাবন করতে পারি গুরগণ খ1 মীরজাফরের উত্তর সাধকমাত্র | বঙ্গইতিহাঁসের যে অধ্যায়টুকু আমর মোটামুটি জানি বঙ্কিমচন্দ্র তারই চিত্র রচন। করেছেন উপন্তাসে। তবে এই অংশটুকু “চন্দ্রশেখরের” উল্লেখযোগ্য “কোন অধ্যায় নয়, শুধু পটভূমিকা মাত্র। কিন্ত ইতিহাসের একটা মুযৃষু্ণ মুহূর্তকে

উপন্তান ৫৪৩

বন্কিমচন্ত্র রূপাঁয়িত করেছিলেন পরম যত্বে। ইতিহাসের সত্যকে তুলে ধরার হচ্ছ থেকেই অংশের অবতারণা | তাই অংশে পলাশীর যুদ্ধের নায়ক সিরাজউদ্দৌলা, মীরজাফরকে সামনে আনেননি বটে কিন্তু কোন কোন নির্বাচিত উক্তির মধ্যে সেই স্মৃতি পুনর্জীবিত হয়েছে সন্দেহ নেই। মীরকাঁসেম নিজেকে সিরাজউদ্দৌলা মীরঞ্জাফরের থেকে পৃথক চরিত্র বলে মনে করেছিলেন

চন্দ্রশেখরে' ইংরেজের সঙ্গে মুসলমান হিন্দুর যিলিত সংঘর্ষ ঘটতে দেখি যদিও এর পেছনে ব্যক্তিগত বিদ্বেষই সক্রিয় তবু সংঘর্ষ যখন শাসক শাসিতের মধ্যে বস্কিমচন্দ্রের পক্ষে তখন নিরপেক্ষ থাঁক৷ সম্ভব হয়নি | শাঁসক ইংরেজের উদ্ধত মনোভাব যেকোন একটি সাধারণ সেনাপতির মধ্যেও কি ভাবে সঞ্চারিত হয়েছিল, তাদের উক্তি থেকেই সেটুকু উদ্ধার করা যায়। আমিয়ট, ফস্টর শাসক ইংরেজের যোগ্য প্রতিনিধি গুরগণ খাঁর কৌশলে যুদ্ধ যখন ধূমায়িত হল, গুরগণ খাঁ, প্রতাপ ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধীরের জন্যই সক্রিয় অংশ নিলেন। প্রতাপের শৈবলিনী উদ্ধার এবং গুরগণ খাঁর মসনদস্বপ্ন এই যুদ্ধের অন্যতম কারণ | ফষ্টর সম্মুখ যুদ্ধের মুখোমুখি দীড়িয়েও কর্তব্য ঠিক করলেন, তার ধারণ বিশ্বাসটি বঙ্কিমচন্দ্র এভাবে প্রকাশ করেছেন,__

তিনি পলাশীর যুদ্ধের পর ভারতবর্ষে আসিয়াছিলেন 3 দেশী লোকে যে ইংরেজকে লক্ষ্য করিবে, একথ। তিনি মনে স্থান দিলেন না বিশেষ ইংরেজ হইয়৷ যে দেশীশক্রকে ভয় করিবে তাহার মৃত্যু ভাল। [ ২য় খণ্ড, ৫ম পরিচ্ছেদ ]

'পলাশীর যুদ্ধের পর থেকে শাসক ইংরেজ যদি এদেশবাসী সম্পর্কে এ:জাতীয় ধারণাই পৌষণ করে থাকে তবে খুব বেশী অবাক হবার কিছু নেই। বুটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার সময়ে আমাদের দুর্বলতার নিভুর্ল হিসাব প্রতিপক্ষ নিয়েছিল নিশ্চয়ই | বঙ্কিমচন্দ্র শুধু সেই মনোভাবটি ব্যাখ্যা করেছেন-_কিন্ত এর অন্তনিহিত ইঙ্গিত বুঝে নিতে সেমুগের আত্মসচেতন বাঙ্গালীর খুব বেশী অস্বিধে হয়নি। এভাবেই রাহ্গনীতির জটিল রহশ্য নিয়ে অবলীলা ক্রমে নাড়াচাড়া করেছেন বঙ্কিমচন্ত্র ; কোথাও বিস্তৃতি নেই,_-অতিশয়োক্তি নেই, কিন্তু অত্রীন্ত লক্ষ্যবস্তটি তিনি চিনিয়ে দিয়েছিলেন।

আমিয়টের নির্দেশে প্রতাপ রায়কে ধরার জন্য প্রতাপের বাড়ীতে উপস্থিত ছজন ইংরেজের মুখে একটি লক্ষ্যণীয় উক্তি শুনতে পাই। বদ্ধ দরজায় পদাঘাতের নির্দেশ দিয়ে জনসন বলেছিল,

«অপেক্ষা কেন, লাখি মার, ভারতবর্ষীয় কবাট ইংরেজি লাখিতে টিকিবে না।৮

[ ২য় খণ্ড, সপ্তম পরিচ্ছেদ ] পদ্াথাতে কবাট ভেঙ্গে পড়ায় জনসন সদস্তে বলেছে, |

€৪৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল। সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

*এইরূপে ব্রিটিশ পদাধাতে সকল ভারতবর্ষ ভাঙ্গিয় পড়ুক |” [এ]

এই বর্ণনায় আত্বশক্তি সঞ্চারের একটি পরোক্ষ চেষ্টা করেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র ইতিহাসের সত্যই ভবিষ্যতের কর্মপন্থীর নিয়ামক হোক, রুদ্ধশ্বাসে অপমান অপবাদ সহা করেও শক্তি সঞ্চয়ের জন্য উদ্যোগী হতে হবে, নির্দেশ স্বদেশপ্রেমিক বঙ্কিমচন্দ্রের | ইংরেজের চরিত্রে শিক্ষণীয় বস্তুটিও বঙ্কিমচন্দ্র আমিরটের চরিজে দেখিয়েছেন আত্মরক্ষা যে সন্মান রক্ষার চেয়ে বড়ো জিনিষ নয়-_আমিয়টই সেকথা বলেছে,

“যেদিন একজন ইংরেজ দেশী লোকের ভয়ে পলাইবে, সেইদিন ভারতবর্ষে ইংরেজ সাম্রাজ্য স্থাপনের আঁশ! বিলুপ্ত হইবে ফ্রাড়াইয়! মরিব সেও ভাল, তথাপি ভয় পাইয়! প্লাইব না।” [ পঞ্চম খণ্ড, ১ম পরিচ্ছেদ ]

ইংরেজের জাতিগত এই গুণটি সেযুগের বাঙ্গালীর অনুকরণ করতে প্রস্তত হয়েছিল আত্মদানের সাহস সমগ্র জাতির প্রাণে সেদিন অস্ভৃতপূর্ব শক্তিসঞ্চার করেছিল। আত্মরক্ষার ভীরুতা সমগ্র জাতির চরিত্রে কলঙ্কলেপন করবে, এই সত্যটি যেদিন আমরা বুঝতে সক্ষম হয়েছি,_তখনই বঙ্কিমচন্দ্র আমিয়টের চারিত্রিক বীর স্ব, অকুতোভয় হৃদয়টি আমাদের সামনে মেলে ধরলেন। জাতির অন্য, দেশের জনা, নিজের প্রাণ তুচ্ছ করে মৃত্যুবরণ করেছে আমিয়ট,

*“মরিব আমরা আজি এখানে মরিলে ভারতবর্ষে যে আগুন জলিবে, তাহাতে মুসলমান রাজ্য ধ্বংস হইবে আমাদের রক্তে ভূমি ভির্জিলে তৃতীয় জর্জের র1জপতাকা৷ তাহাতে সহজে রোপিত হইবে 1” [এ]

এই আম্মত্যাগের মহিমা নির্ভীকতাই মুষ্টিমেয় ইংরেজের সাফল্যের স্থচনা করেছিল। বঙ্গ ইতিহাসের পরিচিত অধ্যায়টি উপন্যাসে যোজনাকালে বঙ্কিমচন্দ্র পূর্ণ নিরপেক্ষতার প্রমাণ রেখে যেতে পারেননি-_-কিস্ত যথাসম্ভব সত্যতা এতিহাপিকতাঁকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলেন লেখক ইংরেজের চরিত্রে প্রশংসনীয় দিকটি যেমন উদ্রারভাঁবে বর্ণনা করেছেন, মীরকাসেমের দেশপ্রেম বর্ণনাতেও তেমনি উদচ্ছৃসিত হয়েছেন কিন্তু প্রতাঁপকে বাঙ্গালী বীর হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিতে গিয়েই অতিশয়োক্তির আশ্রয় নিতে হয়েছে তাকে প্রতাপ শৈবলিনীর উদ্ধারের জন্ত যে অসমসাহসিকতা প্রদর্শন করেছিলেন, প্রকারান্তরে সে শক্তির মধ্যেই হিন্দ্ববীরের মহব শৌর্য অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছেন বন্ধিমচন্তর |

“ুর্গেশনন্দিনীর' পর “মৃণালিনীতেই” বঙ্কিমচন্্র দেশপ্রাণতার সুস্পষ্ট পরিচয় দিয়েছেন কিন্তু “ন্দ্রশেখরে' সে চেষ্টা ছিল না কোঁথাও। কিন্ত দেশপ্রেমিক বঞ্ধিমচন্দ্রের পরিচয় যেমন তার সব রকমের রচনাতেই স্বচ্ছ হয়ে উঠেছে “চন্ত্রশেখরে"ও সে আভাস মিলছে ইংরেজের হাতে পলাশীর যুদ্ধে বাঙ্গালীর নতুন করে ষে

উপন্যাস ৫৪৫

ভাগ্যবিপর্যয় ঘটেছিলো! সে কাহিনী ত্বরণ করতে গিয়েও বঙ্কিমচন্দ্র বেদনার্ত হয়েছেন প্রীহুমার বন্দ্যোপাধ্যায় চন্্রশেখরের' সমালোচনায় যে কথাটি বলতে চেয়েছেন,_

“বৈদেশিক শক্তির অভিভবে আমাদের গার্স্থ্যজীবনে যে বিক্ষোভ জাগিয়! উঠে, তাহাতে অন্তবিপ্লবের কোন গৃঢ় সৌন্দর্য থাকে না, কেবল একটা বাহ্‌ খটনাবৈচিত্র্য থাকে মাত্র। আর অত্যাচারী অত্যাচীরিত সংঘর্ষে, যেখানে একপক্ষ কেবল পাইবার লোভে আক্রমণ করিতেছে এবং অপরপক্ষ বণকুল, ুর্বলভাবে অপ্রতিবিধেয় শক্তির বিরুদ্ধে আত্মরক্ষায় বৃথা চে! করিতেছে সেখানে আমাদের মনে বিচিত্র সোন্দর্যবোধ অপেক্ষা করুণ রসেরই সমধিক উদ্রেক হইয়া থাকে

[ বঙ্গসাহিত্যে উপগ্ভাসের ধারা, পৃষ্ঠা ৭৮ )

প্রতাপ শৈবলিনীর কিংবা মীরকাশেম দলনীর প্রণয়চিত্রই উপন্যাসে

মুখ্যভাবে স্থান পেয়েছে, কল্পনা! রাজ্যের এই সব নরনারার অগ্তদ্বন্থের বেদনার

মাঝখানে লাঞ্ছিতা দেশমাতৃকার দুর্যোগের বিপর্যয়ের চিত্রও যে কোন সচেতন

মানুষকে মুহূর্তের জন্য বিহ্বল করে দেবে,-এখানেই চন্দ্রশেখরের উভ।বিধ সাথকতা]।

চন্দ্রশেখরের” পরে বঙ্কিমচন্দ্রের যে উপন্তাসাটতে দেশপ্রীতির প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে -তা হল 'রাজসিংহ'। এতিহাসিক উপন্যাসে বঙ্কিমচন্্র দেশচর্চার কিছু নিদর্শন পেয়েছিলেন,-সাময়িক জীবনের ঘটনায় তা ছিল না। তাই সামাজিক উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র কিছু নৈতিক আদর্শ প্রচার করেছিলেন- কিন্তু তাতে দেশোক্ডাসের প্রসঙ্গ ছিল ন|। কিন্তু ইংরেজের বিরুদ্ধে যে অণপ্তোষ ধারে ধারে ধূমায্সিত হস্ছিপ, __কাব্য-নাটকে-সংবাদপত্রে-আন্দোলনে তারই বিস্ফোরণ বঞ্ধিমচন্্ ইতিপূর্বে 'কমলাকান্তের দপ্তরে" তার দেগগ্রীতি প্রচার করেছেন, কীজেই উপন্াসে সামাজিক কাহিনী অবলম্বন করলেও দেশচর্চার ধারাবাহিকতা তাতে ক্ষ হয়নি জাতির সাক মঙ্গলকামন। বঙ্কিমচরিত্রের প্রধান অবলগ্ধন কোথাও তা একেবারে থেমে থাকেনি

'রাজপিংহ' উপন্যাসটি বঙ্কিমচন্দ্র বিশেষ চিন্তার ফল। 'বঙ্গদর্শনে -এ উপস্তাস ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়, _প্রধম সংস্করণের ৮* পৃষ্ঠার গ্রন্থাট চতুর্থ সংস্করণে ৪৩৪ পৃষ্ঠায় পরিবধিত হয়েছিল বলেই নয়,__বন্ধিমচন্ত্র একটি পূর্ণার্গ এ্রতিহাসিক উপস্ত।ল "লেখার জন্তই পরিশ্রম করেছিলেন চতুর্য সংস্করণে বঙ্কিমচন্দ্র খুব স্পষ্টভাবে তার উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেছিলেন,_- |

'ভারতকলস্ক' নামক প্রবন্ধে আমি রুঝাইতে চেষ্ট। করিয়াছি, ভারতবর্ষের অধঃ- পতনের কারণ কি কি। হিন্দুদিগের বাঁহুবলের অভাব সে সকল কারণের মধ্যে নছে।

৩৫

৫৪৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে শ্বদেশপ্রেম

এই উনবিংশ শতাব্দীতে হিন্দুদিগের বাুবলের কোন চিহ্ন দেঁখ। যায় না ইংরেজ সাত্রাজ্যে হিন্দুর বাহুবল লুপ্ত হইয়াছে কিন্তু তাহার পূর্বে কখনও লুপ্ত হয় নাই। হিদ্ুদিগের বাঁহুবলই আমার প্রতিপাগ্ ৷” [ ভূমিকা, চতুর্থ সংস্করণ ]

বাহুবলের একটি এঁতিহাসিক দৃষ্টান্ত প্রচারের জন্য বঙ্কিমচন্দ্রের এই আগ্রহের কারণটি লক্ষ্যনীয়। ১৮৮২ শ্রীষ্টাব্ধে 'রাজসিংহের' প্রথম সংক্করণ প্রকাঁশের কালে দেশপ্রেম নিছক ভাববিলাস মাত্র ছিল না। তখন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে, কংগ্রেসেরও জন্ম হয়েছে, হিন্দুমেলায় স্বাদেশিকতার বিভিন্ন দিক আলোচিত হয়েছে। বিদেশীর হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার একট? বাঁসন' প্রচ্ছন্নভাবে জনচিত্তে জেগে উঠেছিল কিন্তু কি উপায়ে সেটা সম্ভব হবে-_তা জানা ছিল না। দেশপ্রেমিক বঙ্কিমচন্দ্র এই পর্বেই তাঁর বিখ্যাত স্বদেশপ্রেমের উপন্যাস রচন| করেছিলেন ৪-- “আনন্দমঠের” রচনাকালও ১৮৮২ সালেই | '“রাজসিংহে" বাহুধলের নজির স্থাপনের জন্য বঙ্কিমচন্দ্র একটি দৃঢ় এতিহাসিক ভিত্তি অবলম্বন করেছিলেন কেন তাও বিশেষ- ভাবে আলোচনাযোগ্য তাঁর আগের যে সব উপন্যাসে আমরা স্বদেশগ্রীতির দৃষ্টান্ত পেয়েছি-_তা ইতিহাস-সম্পৃক্ত কাল্পনিক কাহিনী কাক্মণিক চরিত্রের চেয়ে একটি সজীব এঁতিহাসিক ব্যক্তিত্বের আদর্শ যে অনেক বেশী আবেদন সৃষ্টি করবে, বিশ্বাস নিয়েই এতিহাসিক চরিত্র রচনায় বঙ্কিমচন্দ্র আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন বাছবল মনোবল নিয়ে রাজসিংহ মোখ্লসম্রাট শঁরজজেবের বিরুদ্ধে যে অভিযান চাঁলিয়েছিলেন তাঁর ইতিহাসাঁনুগ বিবরণ দেবার উদ্দেশ্যেই উপন্যাসটি রচিত তবুও রাজসিংহ যে প্রথমতঃ উপন্যাস সেকথাঁও স্মরণ রাখতে হবে

“যখন বাহুবল মাত্র আমার প্রতিপাগ্য, তখন উপস্ভাসের আশ্রয় লওয়া যাইতে পারে ।.-.বিশেষতঃ উপস্াসের উপন্যাঁসিকতা রক্ষা করিবার অন্ত কল্পনা প্রস্তত অনেক বিষয়ই গ্রন্থ মধ্যে সন্নিবেশিত করিতে হইয়াছে ।” : ভূমিকা, চতুর্থ সংস্করণ ]

রাজসিংহের ইতিহাস আমরা জানি না, একটি সচেতন জাতির এই অপরাধ বহ্গিমচন্দ্র ক্ষমা করেননি, নির্শমভীবে সমালোচনা করেছেন ইংরেজের রাজত্বে আঙাদের বাছুবলই বিনষ্ট হয়নি আমাদের দেশাচ্রাগও বিনষ্ট হয়েছে ইতিহাস 'অচেতনতাঁকে বঙ্কিমচন্দ্র অমার্জনীয় অপরাধ. বলে মনে করতেন রাজসিংহের কাহিনী বর্ণনায় বঙ্কিমচন্দের ক্ষুক্ষচিত্তের পরিচয় পাই আমরা “আমরা শ্রীক ইতিহাস মুখক্ড করিয়া মরি-_-রাজসিংহের ইতিহাসের কিছুই জানি না। আধুনিক শিক্ষার সুফল ।” [ পঞ্চম খণ্ড, বষ্ঠ পরিচ্ছেদ]

আমাদের"ইতিহাস চেতনাকে জাগাবার এই চেষ্টা রাঁজসিংহে" নতুন নয়,বস্ধিমচজ্দের অন্যান্য উপন্যাসেঞ্ লে চেষ্টা বারংবার. দেখেছি শিচি.তিনিনা বহিষ্ী

উপগ্কাস ৫৪৭

নবজাগরণে উদ্ব,দ্ধ জাতিকে একটি দৃঢ় ভিত্তির ওপরে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন,__ ইতিহাস এই মুহূর্তে যা শেখাতে পারে অন্যকিছুর দ্বারা তা পাওয়া সম্ভব নয়

'রাজসিংহে' ইতিহাসের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনের বাসনাটি দেশপ্রেমিক বঙ্কিমচন্দ্রের গভীর দেশচিস্তার ফল। বাঙ্গালীর ইতিহাসে যে বস্তটি বহু আয়াসে তিনি আবিষার প্রমাঁশ করার চেষ্টা করেছিলেন রাজস্থানের ইতিহাসের সর্বত্র তা ছড়িয়ে আছে। প্রতাপসিংহ, সংগ্রামসিংহ, বাপ্পারাও, পুত্তের বীরত্ব কাহিনী, আত্মদীনের ভিত্তি দেশপ্রেমের ওপরেই প্রতিষ্ঠিত। এই এঁতিহা উত্তরাধিকারস্ত্রে লাভ করেছিলেন রাজসিংহ। কাজেই মোঘলশক্তিকে প্রতিহত করার জন্য প্রাণপণ সংগ্রামের শক্তি- প্রদর্শন করে বিজয়ী হয়েছিলেন রাঁজসিংহ রাজ্যরক্ষা বা সিংহাসন রক্ষার স্বার্থ আছেই কিন্তু তার মধ্যেও যখন অসীম বীরত্ব শৌর্ষের প্রকাশ দেখি তখন তার বারা অনুপ্রাণিত হতে চাই দেশক্্রীতিও যে এক জাতীয় স্বার্থরোধ প্রণোদিত চিন্ত। এও স্বীন্কৃত সত্য রাক্বস্থানের ইতিহাসে প্রতাঁপসিংহ স্বদেশপ্রেমের ঘূর্ত প্রতীক-_ রাজসিংহকেও সেই আদর্শে অঙ্কন করেছেন বঙ্কিমচন্দ্র রাত্মস্থানের ইতিহাস শিক্ষিত বাঙ্গালীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলো! বহু পূর্বেই বঙ্কিমচন্্র কিন্ত ভূমিকায় বলেছেন,

*মোধলের প্রতিদন্্বী হিন্দুদিগের মধ্যে প্রধান রাজপুত মহীরান্ীয়। মহীরাষ্্রীপ্নদিগের কথা সকলেই জানে, রাজ্পুতগণের বীর্য অধিকতর হইলেও, এদেশে তেমন স্থপরিচিত নহে ।”

'রাঞ্জসিংহ* রচিত হওয়ার বহু আগে রঙ্গলাঁল, মধুস্থদন, জ্যোতিরিক্্নাথ প্রমুখ শক্তিমান সাহিত্যিকের রাজস্থানের ইতিহাস অবলম্বনে কাব্য-নাটক রচনা করে স্বদেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত তুলে ধরাঁর চেষ্টা করেছিলেন কাঁজেই ১৮৯৩ খ্রীঃ চতুর্থ সংস্করণের ভূমিকায় বঙ্ধিমচন্দ্রের এই উক্তিটি খুব সত্য বলে মনে হয় না। বিশেষতঃ রমেশচন্দ্রে 'রাজপুত জীবনসন্ধ্যা' রচিত হওয়ার পরে নতুন করে রাত্স্থানের কাহিনী পরিবেশনের কোন যুক্তি নেই। কাঁজেই বঙ্কিমচন্দ্র বাঁহুবলের দৃষ্টান্ত স্থাপনের উদ্দেশ্যেই যে রাজসিংহ চরিত্রটি বেছে নিয়েছিলেন তাতে কোন সন্দেহ নেই রাজসিংহ বীর দেশপ্রেমিক, রাঁজপুতের এতিহরক্ষার চেয়ে বড়ো ধর্ম তার কাছে নেই,__তাই অবিচলচিত্ে তিনি দেশরক্ষার কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন চঞ্চলকুমারীর মত অসাধারণ একটি নারী যখন আত্মনিবেদনে উন্মুখ__রাহ্রসিংহ তখনও আপন কর্তব্য অবিচল। চঞ্চলকুমারী যোগ্যব্যক্তির কাছেই আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন অনবদ্ত ভঙ্গিমায় রাঁজসিংহকে অভীত এতিহ স্মরণ করিয়ে দিয়ে পত্র রচনা করেছিলেন চঞ্চলকুমাঁরী,_ এর

“দিলপীশ্বরের সহিত বিবাদ সহজ নহে আজানি। পৃথিবীতে আর কেহই নাই যে,

৫৪৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

তাহার সঙ্গে বিবাদ করিয়া তিঠিতে পারে। কিন্তু মহারাজ! মনে করিয়া দেখুন, মহারানা সংগ্রামসিংহ বাবরশাহকে প্রায় রাজ্যচ্যুত করিয়াছিলেন মহারাণা প্রতাপসিংহ আকবর শাহকেও মধ্যদেশ হইতে বহিষ্কৃত করিয়া দিয়াছিলেন আপনি সেই সিংহাসনে আসীন-_-আপনি সেই সংগ্রামের, সেই প্রতীপের বংশধর-- আপনি কি তাহাদিগের অপেক্ষা হীনবল ? [ ৩য় খণ্ড, ৫ম. পরিচ্ছেদ ]

অংশটিতে বঙ্কিমচন্দ্রেই কঠস্বর চঞ্চলকুমারীর মুখে শোনা যাচ্ছে যেন। ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিতে হলে জাতীয় দৃপ্তভাষার সাহাষ্যই. নেওয়া দরকার বঙ্কিমচন্দ্র যদি ঠিক এই কথাগুলি সমগ্র জাতির উদ্দেশ্যে নিবেদন করতেন তাহলে ভাষাগত পরিবর্তন কিছু হোত না। জাতীয় উৎসাহ উদ্দীপনার বাণী শক্তিসঞ্চয়ে ইচ্ছুক জনতার কানে খুব অর্থবহ বলে মনে হওয়াটাই স্বাভীবিক যুদ্ধযাত্রার পূর্বাহে জাতীয়চেতনার দ্বার! উদ্দঈপিত হওয়ার মুহূর্তেই রাজসিংহের হাতে চঞ্চলকুমারীর এই পত্রটি পৌছেছিল।

উপন্তাস রচনার মুহূর্তেও বঙ্কিমচন্দ্র আত্মবিস্তৃত হন না,_তাই উপন্যাসে তিনিও একটি চরিত্র হয়ে ওঠেন। সেটা উপন্তাসের পক্ষে কতখানি বেমানান-_সে আলোচনায় নতুন করে প্রবেশের প্রয়োজন নেই অন্তান্চ সব উপন্তাঁসের মত 'রাঁজসিংহ” উপন্যাঁসেও বঙ্কিমচন্দ্র শিল্পীর নীরবত৷ পালনে অক্ষম হয়েছেন | তাই রাজসিংহের সপ্তম খণ্ডের প্রথম পরিচ্ছেদটি পাঠ করলে আমাদের একথা মনে হওয়। স্বাভাবিক যে বঙ্কিমচন্দ্র উপস্ভাসে এতিহাসিক যুদ্ধ বিষয়ে একটি ক্ষুদ্র প্রবন্ধ রচনারই চেষ্টা করেছেন রাঁজসিংহের কৃতিত্বকে বৃহৎ মহৎ করে প্রমাঁণ করার জন্যই

ংশটি প্রাবন্ধিক বন্কিমচন্দ্রের কলম থেকেই বেরিয়েছে নতুবা যুদ্ধদৃশ্যে এমন কোন বিশ্বাসযোগ্য বর্ণনা নেই__যাঁর সাহায্যে রাজসিংহকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ যোদ্ধাদের সঙ্গে এক করে ফেলা সম্ভব | ফলে প্রমাণের জন্য বঙ্কিমচন্দ্রকেই আসরে অবতীর্ণ হতে হল। ইতিহাসের ঘটনণকে উপন্যাসের আধারে স্থাপন করেও বঙ্কিমচন্দ্র রাজসিংহের সত্যিকারের বাহুবলের পরিচয় দিতে পেরেছেন কি না সন্দেহ। অথচ বাহুবলের প্রতিষ্ঠা করাই' শ্বদেশপ্রেমিক বন্ধিমচন্দ্রের একান্ত বাসনা ছিল, বর্ণনাদোষেই সেটি প্রশ্ষুটিত হয়নি

'রাজসিংহ' উপগ্যাঁসের শেষে বঙ্ধিমচন্দ্র ত্বয়ং আবেদন নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন রাজসিংহকে বড়ো করে দেখানোর পেছনে সচেতন ভাবে মোধলবিদ্বেষ থাকতে পারে না। বঙ্কিমচন্দ্র হিন্ুর বীরত্বচিত্র অঙ্কন করেছেন বটে-তাঁর উদ্দেশ্য ছিল মহৎ আদর্শ সনিপুণ যোদ্ধার পক্ষে সৈষ্বলই যে একমাত্র বল নয়,_-এই সত্যটিই প্রমাণ করা। তাছাড়। ইতিহাসের বর্ণনায় অবথা হস্তক্ষেপ অন্ততঃ উপস্তাসে। নেই

পজ্জা টি

বঙ্িমচন্দ্র প্রসঙ্গে বলেছেন,

অন্তান্ত গুণের সহিত যাহার ধর্ম আছে-_হিন্দু হৌক, মুসলমান হৌক, সেই শ্রেষ্ট অগ্থান্ত গুণ থাঁকিতেও যাহার ধর্ধ নাই-হিন্দু হৌক, মুসলমান হৌক- সেই নিকষ্। [ উপসংহার ]

রাঁজসিংহের ধর্ম ছিল দেশরক্ষার ধর্ম, এই শক্তিতেই অসম্ভব ঘটনাও সম্ভব হয়েছিল। বঙ্কিমচন্দ্র পরিশেষে আবার ছুংখ জানিয়েছেন,

*...ওলন্বীজ উইলিয়ম রাজপুত রাঁজসিংহ বিশেষ প্রকারে তুলনীয় উভয়ের কীতি ইতিহাসে অতুল। উইলিয়ম ইউরোপে দেশহিতৈষী 'ধর্মাত্সা বীরপুরুষের অগ্রগণ্য বলিয়া খ্যাতিলাভ করিয়াছিলেন, এদেশে ইতিহাস নাই, কাঁজেই রাঁজনিংহকে কেহ চেনে না|” [ উপসংহার ]

খেদটি শ্ব্দেশপ্রেমিক বঙ্কিমচন্ত্রের রাজস্থানের ইতিহাসে রাঁজসিংহের মধ্যেই বস্কিমচন্দ্র দেশপ্রেমের অপূর্ব বিকাশ লক্ষ্য করেছিলেন। প্রপঙ্গে কোন সমালোচক বলেছেন,__

“অন্ান্ত উচ্চাঙ্গের লেখকের মত বঙ্কিমচন্দ্র প্রথমে মাঁচুষের প্রতি ভালবাসার উচ্চ আদর্শ দেখাইয়া-_ভাঁলবাঁসার বিস্তার দেখাইয়াছেন। যে ভালবাসা প্রথমে মানুষে নিবন্ধ থাকে, তাহা ক্রমে দেশপ্রেমে জাতিপ্রেমে পরিণতি পাইয়াছিল। রাঁজসিংহে দেণপ্রেমের উচ্চ আদর্শ; আনন্দমঠে স্ব ক্লাঁতিপ্রেমের বিকাশ ।”৯৭

বঙ্কিমচন্দ্রের 'আনন্দমঠ", 'রাজসিংহের অনতিকাঁল পরেই রচিত প্রকাশিত হয়েছিল। বাঁংলাসাহিত্যে 'আনন্দমঠ” “আনন্দমঠের” রচয়িতা বঙ্কিমচন্দ্র স্থাশ নির্ময় করার কোনো অস্থবিধে নেই বাঙ্গালী বঙ্ষিমচন্দ্রকে সমাটের আঁসনে বসিয়েছে এবং দেশপ্রেমিক বলে সন্্বনা জানিয়েছেন এই গ্রন্থটির অন্যই। “আনন্দমঠ' সেঘুগের বিপ্লবীদের আত্মদানের প্রেরণ জুগিয়েছে। সমগ্র দেশের সংগ্রামী জনতা! আনন্দমঠের আদর্শে ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করেছে।

দেশপ্রেমিক বঙ্কিমচন্দ্রের যাবতীয় দেণাত্ববোধক রচনার সঙ্গে “আনন্দমঠের” যূল পার্থক্য রয়েছে। অন্তান্ত রচনায় দেশপ্রেম কখনও ইতিহাসপ্ত্রীতি কিংবা বীরত্বের শ্মতির চর্চাতেই নিবদ্ধ__'আনন্দমঠেই' বঙ্কিমচন্দ্র সে যুগের উপযুক্ত একটি সশন্ত বিপ্লবের অভ্যথানের পরিকল্পনা করেছিলেন আশ্চর্য দক্ষতার সং্গে। দেশপ্রেমিকত! একটা চুড়ান্ত রূপ নিয়েছে এই রচনায়। সে যুগের যে কোন অষ্টাই সাহিত্যের মাধ্যমে দেশচিন্তা প্রকাশ করেছেন খানিকটা বাধ্য হয়েই। প্রমথনাঁথ বিশী বলেছিলেন, |

১৭, হেমেক্তরপ্রসাদ ঘোষ, বন্ষিমচত্্র, ১৯৬২, পৃঃ ৪২।

€৫০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

*্বাদেশিকতাঁর এই বিড়ম্বনা বৃটিশ আমলের বাংল! সাহিত্যের একটি প্রধান ক্রটি-_-এবং এই ক্রটির জন্যই [ আরও ক্রটি আছে ] বাংলা সাহিত্য দুশ্থ হইতে পারে নাই ।”১৮

কিস্ত অক্ষম লেখকের গতাহুগতিক রচনায় দেশপ্রেমিকতা সলভ হয়েছে বলে সাহিত্যের স্বাস্থ্যহীনতার অভিযোগ আনাটা কিছুমাত্র বিচিত্র নয়। কিন্তু বস্কিমচন্দ্রকে অক্ষম লেখকের সঙ্গে ব্যাপারে এক করে ফেলা যায় না। স্বদদেশপ্রেম রচণার মূল উপাদীন হলেও বঙ্কিমচন্দ্রের নিজন্ব দৃষ্টিভঙ্গীর অনশ্যতায় তা সমৃদ্ধ তীর অন্যান রচনায় স্বদেশঞ্রেমের প্রতিফলন কোথাও প্রচ্ছন্্র, কোথাও 'প্রকাশ্ঠ- কিন্তু “আনন্দমঠে” পুরোপুরি স্বদেশপ্রেমের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে প্রশ্ন উঠতে পারে স্বদেশপ্রেমের তত পরিবেশনের জন্য উপন্যাস রচনার প্রয়োজন কোথায়? বঙ্গিমচন্দ্রই প্রমাণ করেছেন, যে কোন দুরূহ তত্বই উপন্যবসে স্থান পেতে পারে এবং উপন্যাসের সৌন্দর্য তাতেও বজায় রাখা যায় তাঁর শেষ জীবনের তিনটি উপন্যাস একথা! প্রমীণ করবে

“আনন্দমমঠের' স্বদেশপ্রেমের ব্যাখ্যায় বঙ্কিমচন্দ্র নিছক উপদেশমূলকতার আশ্রয় নেননি কতকগুলে৷ কল্পিত চরির্র স্থজন করে একটি আদর্শলোক হৃষ্টি করেছেন » ত্বারা কেউই জগতের নন,__এ পৃথিবীতে তাঁদের অস্তিত্ব অতাঁতেও ছিল না-- ভবিষ্ততেও থাকবে না। একটি নিছক কল্পলোক স্থাপন করে বঙ্কিমচন্দ্র স্বদেশ- প্রেমের তত্ব বিশ্লেষণ করলেন অথচ সে প্রশ্নটি সে যুগের রক্তমাংসের মানুষগুলোকে এমন করে আলোড়িত করল কেন, সেটাই আশ্চর্য “আনন্দমঠের” অবাস্তবতার সমালোচনা হয়েছে বটে কিন্তু এই অবান্তবতা বাস্তব চরিত্রকে প্রভাবিত করেছিল কেন সে প্রসঙ্গ চাপা পড়ে আছে। বঙ্কিমচন্দ্র যে যুগে উপন্যাসের পরিকল্পনা করেছিলেন সেযুগের মানষরা অতীতের এঁতিহা আবিষ্কার করে উত্তেজিত, ভবিষ্যতের স্বপ্নে উন্মাদ হয়েছিলেন উনবিংশ শতাব্দীর শেষপাঁদে শিক্ষিত বাঙ্গালীর ধ্যান- ধারণার কোনটাই কি খুব বেশী বাস্তব? রবীন্দ্রনাথের 'জীবনস্বতিতে” স্বাদেশিকতার ষে বর্ণন! পাই তাঁতে বাস্তবত! ছাড়া অস্ত সবকিছুই দেখতে পাই রবীন্দ্রনাথ জ্যোতিদাদার মত নিতান্ত বালকদের কীতিকাহিনী হলেও একে বালকম্ছলভ' ছেলেমানুষী বলে মনে কর! যেতো৷ | কিন্তু সে যুগের বিখ্যাত মনীষী বৃদ্ধ রাজনারায়ণ বন্থকেই যখন সে সভায় নেতৃত্ব করতে দেখা যাঁয় তখন আর বুঝতে অস্থবিধে হয় না যে সেই যুগটাই ছিল একট! অস্বাভাবিকতার যুগ। রক্তমাঁংসের মাছ্ধরা তাদের বাঞ্ডব. বুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছিলেন বলেই হাতে তৈরী গামছার টুকরো মাথায় বেঁধে

১৮, প্রমথনাগ তি, বহিস সাহিত্যের ভূমিকা, কমলাকান্ডের দপ্তর

উপন্তাঁস ৫৫১

স্বদেশপ্রেমিক ব্রজবাবুর তাগুব নৃত্যের চিত্র “জীবনশ্মতির” মত একটি জীবনচরিতে স্থান পেয়েছিল। এর সভ্যতায় কোন সন্দেহ থাঁকতে পারে না। “জীবনস্বতিতে” রবীন্দ্রনাথ যে সময়ের ঘটনার কথ! লিখেছেন “আনন্দমঠের' রচনাকাল থেকে সে সময় খুব বেশী দূরে নয়। প্রায় কাছাকাছি সময়ের মানুষের জীবনচরিতের এসব ঘটনার আলোকে মোটামুটি সে যুগের আবহাওয়ার একট ছবি পাওয়া যেতে পারে 'আনন্দমঠে' বঙ্কিমচন্দ্র সে যুগের প্রাণম্পন্দনটুকু ধরতে পেরেছিলেন বলেই সে যুগের মাচ্ছবরা উপন্যাসে অবাস্তবতা দেখেনি, অনুপ্রাণিত হয়েছে। পরের যুগে 'আনন্দমঠের” সঙ্গীত আবৃত্তি করতে করতে ফাঁসীমঞ্চে আরোহণ করতে দিধাবোধ করেনি শহীদের! |

তবে 'আনন্দমমঠে' ব্কিমচন্্র যে যুগের কাহিনী বলতে চেয়েছিলেন সে পটভূমিকা থেকে দেখলে বহু অসঙ্গতি আমাদের পীড়িত করবে | সত্যানন্দ, জীবানন্দ, ভবানন্দ, মহেন্দ্র, শীত্তিকে অতীতে স্থাপন করেই বিষয়টিকে অসম্ভাবিত একটি পরিবেশে টেনে আনা হয়েছে সমালোচকদের অভিযোগ ব্যাপারেই বঙ্কিমচন্দ্র অতীতের পটভূমিকায় বর্তমানের কল্পনাকে স্থাপন করেছিলেন বলেই বিষণটি জটিলতা! হৃষ্টি করেছে উনবিংশ শতাব্দীতে যে পরিবেশ গড়ে উঠেছিল তাতেই সত্যানন্দের মত নেতা, মহেন্দ্র মতে গৃহী, শাস্তির মতো অসমসাহসিকার আবির্ভীব সম্ভব ছিল, এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস আলোচনা করলেও জাতীয় বাস্তব চরিত্রের দেখা মিলবে স্বাধীনতা আন্দোলনের ঠিক পূর্বাহে বন্ধিমচন্দ্রের এই উদ্দেশ্য- প্রণোদিত রচনাটির সমালোচনার মাপকাঠি একটু পৃথক হওয়া দরকার। উপন্তাস যুগেরই সৃষ্টি, _যুগ্ধরের কল্পনাতেই উপন্তাস জন্ম পেওয়া সম্ভব |

শাসক ইংরেজের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটি সে যুগেই সঠিকভাবে নির্ণীত হয়েছিল৷ যুক্তির আলোকে স্বাধীনতা পরাধীনতার পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল, যা ইতিপূর্বে কখনও হয়নি | হয়নি বলেই পরাধীনতার মর্শজালায় অতীতের কোনো মানুষকেই আমরা এমন ভাবে পীড়িত হতে দেখিনি কিবা পরাধীনতার হাত থেকে আত্মরক্ষা করার জন্ত সম্মিলিত আন্দোলনের কোনো প্রয়োজনও এদেশে ইতিপূর্বে কবনও হয়নি। বহ্ধিমচন্্র সেই আন্দোলনের মাঝখানেই এসে পড়েছিলেন, হোম সেই বেদনার কথাই কবিতাঁয় আক্ষেপ করে গেছেন। দেশচেতনা জাগিয়ে তোলার ঠিক পরেই সংঘবদ্ধ আন্দোলন সম্ভব হল,--সেই মুহুর্তেই বঙ্কিমচন্দ্র সংঘবদ্ধতার শক্তি, হ্বাধীনতাঁলাভের আকাঙ্ষায় জীবন পণ করেছে-_তার ঠিক আগেই তথ্বের প্রলেপ লাগিয়ে বঞ্চিমচন্্র একটি অর্থপূর্ণ দেশপ্রেমমূলক ইতিবৃত্ত রচনা করেছেন ভবিষ্যৎ

৫২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

'শিল্পী অনাগতকে চিনে নিতে পারেন,_চেনাতে পারেন। কিন্তু আত্মসচেতন শিল্পী আত্মরক্ষার বর্ম পরিধান করেই আসরে অবতীর্ণ হন। হেমচন্দ্রকে স্বদেশপ্রেমের যৃল্য দিতে হয়েছিল, বঙ্কিমচন্দ্র সরকারী চাকরী করেও নিবিবাদে_ “আনন্গমঠ' রচনা করলেন। একটু ঘুরপথে চলেছিলেন বলেই অকারণ উৎপাঁতে বিরক্ত হতে হয়নি তাঁকে শুধু তাই নয়, সরকারী চাকরী করতেন বলেই শেষ পর্যন্ত রাঁজপ্রশংসা করেই ইতি টানতে হয়েছে তাকে ইংরেজ প্রশংসা চন্দ্রশেখরেও দেখেছি, প্রশংসনীয় ব1 গ্রহণীয় গু*কে উদারভাবে গ্রহণ করার শত্তিও থাকে অসাধারণদেরই | উনবিংশ শতাব্দীর শিক্ষিত সম্প্রদায় সবরকম সংস্কার ত্যাগ করতেই প্রস্তুত ছিলেন, অন্ধতা থেকে মুক্ত না হলে সত্যিকারের সিদ্ধি আসতে পারে না। বঙ্কিমচন্দ্র সে ত্য সমর্থন করতেন

“আনন্দমঠের" স্বদেশপ্রসঙ্গ আলোচনার পূর্বে বঙ্কিমচন্দ্রের দেশপ্রেমিকতা সম্বন্ধে আরও কয়েকটি কথা স্পষ্ট করা দরকার জাতীয়তাবাদ দেশপ্রেম সমন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র খুব স্পষ্টভাবেই প্রবন্ধে আলোচনা করেছিলেন,

“আত্মরক্ষার ন্যায় শ্বজনরক্ষার হ্যায় স্বদেশরক্ষা ঈশ্বরোদ্িষ্ট কর্ম, কেন না, ইহা সমঘ্ত জগতের হিতের উপায় পরস্পরের আক্রমণে সমস্ত বিনষ্ট বা অধঃপতিত হইয়া কোন পরস্বলোলুপ পাপিষ্ঠ জাতির অধিকাবতুক্ত হইলে, পৃথিবী হইতে ধর্ম উন্নতি 'বিলুপ্ত হইবে | এই জন্য সর্বভূতের হিতের জন্য সকলেরই স্বদেশরক্ষণ কর্তব্য ।»

[ স্বদেশগ্ীতি ]

এই ধারণাঁলনধ দেশগ্রীতিকে ধর্মচেতনার সঙ্গে যুক্ত করে বঙ্কিমচন্দ্র পাশ্চাত্য

'দেশপ্রীতির সঙ্গে ভারতীয় দেশপ্রীতির একটা ভেদর়েখ! নির্ণয় করেছেন দেশশ্রীতি

যদ্দি সর্বভৃতের হিতের ত্রন্ত নিয়োজিত না হয় তবে তাঁর মূল্য বঙ্কিমচন্দ্র স্বীকার

করেননি বিশ্বপ্রীতির ব্যাপক অর্থ বঙ্কিমচন্দ্রের স্বদেশপ্ীতির মধ্যে রয়েছে।

ইউরোপীয় দেশপ্রেম সংকুচিত, সর্বভূতের- হিতচিন্তা করার মত উদারতা সেখানে নেই একই প্রবন্ধে সমালোচনা করেছেন তিনি,_-

ইউরোপীয় 70801096157) ধর্মের তাৎপর্য এই যে, পরষমাঁজের কাড়ি ঘরের সমাজে আনিব। স্বদেশের শ্রীবৃদ্ধি করিব, কিন্তু অন্য সমস্ত জাতির সর্বনাশ করিয়া তাহা করিতে হইবে [এ]

এই ছুটি মতামত থেকে বঙ্কিমচন্দ্রের স্বদেশচর্চার স্বরূপটি স্পষ্ট হয়। পরস্বলোনুপ পাপিষ্ঠ জাতির লোভের হাত থেকে আত্মরক্ষার উপায় তিনি চিন্তা করেছিলেন স্বদেশপ্রেমের শক্তিই এই ছুরবস্থার হাতি থেকে মুক্তি দিতে পারে সংঘবদ্ধতার শক্তি স! থাকলে, ধর্মচেতনা বিবজিত হলে যথার্থ ত্বদেশপ্রেম জাগতেই পারে না, ছিল

উপ্যাস ৫৫৩

স্বদেশপ্রেম সম্পর্কে বঙ্ধিমচন্দ্রের সর্বশেষ ধারণা “আনন্দমঠে' এই ধাঁরণারই উপস্তাঁস, রূপ দেওয়া হয়েছে পাশ্চাত্যদর্শন ধর্মতৰ আলোচনা করে বঙ্কিমচন্দ্র স্বীয় মতামতকেই শেষ পর্যন্ত প্রাধান্য দিলেন। ভারতীয় আদর্শের সঙ্গে ত্যাগের আদর্শ জড়িয়ে আছে, ধর্মের এই মূল্যবান উপদেশটিকে “আনন্দমঠ' উপন্যাসে বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়েছে দেশের ছুদিনে পীড়িত জনগণকে রক্ষার চেয়ে বড়ো ধর্ম আর কিছু নেই,__আত্মস্বার্থ ত্যাগ না করলে আর্তরক্ষা হয় না, সুতরাং একটি সম্প্রদায়ের হাতে 'এ দায়িত্ব তুলে দিলেন বঙ্কিমচন্দ্র বঙ্কিমচন্দ্র প্রাচীনভারতের মানবতার আদর্শকেই নতুন করে সঞ্জীবিত করেছিলেন, কিন্তু সমসাময়িক আন্দোলনের পটভূমিকায় মানবতার বাণীই দেশপ্রেমিকতার সঙ্গে যুক্ত হয়ে অভিনব বস্ত হয়ে দীড়িয়েছিল সে যুগে আত্মত্যাগের আদর্শ যে কোন ভিত্তিতেই প্রতিঠিত হোক না কেন, দেশপ্রেমেই তার মূল্যায়ন হোত “আনন্দমঠের" সন্ন্যাসীদের নিক্ষাম কর্মযৌগের মধ্যে লে যুগের বাঙ্গালী যে যুগোপযোগী ভীবাহুসন্ধান করেছিল-_সেত সত্য কথা। অথচ “দেবীচৌধুরাণীর” ভবানী পাঠক কিংবা 'আনন্দমঠের' সত্যানন্দের সাধনা ষে মানবতারই সাধন! ব্যাখ্যায় খুব ভূল কিছু নেই। প্রসঙ্গে কোন সমালোচক বলেছেন,

“মনে হয়, ভারতের সেই প্রাচীন ধর্মতবকেই ভিত্তি করিয়া বঙ্ধিমচন্্র যে নবধর্ম প্রণয়ন করিয়াছিলেন__ত্াঁহার দৃঢ়তম খিলান হইল এই দেশপ্রীতি।---ভারতীয় ধর্মের অঙ্পীক্কৃত করিয়! এই স্বদেশগ্রীতিকে এত বড় স্থান দিবার কল্পনাও পূর্বে কেহ করে নাই 1৮৯৯

“'আনন্দমমঠ' উপস্যাঁসে বঙ্কিমচন্দ্রেরে এই বক্কব্যই স্থান পেয়েছে কিন্তু ইতিহাসের যে অংশে তিনি তার এই নবলন্ধ নব আবিষ্কৃত তথ্য আরোপ করেছেন তাতেই বিষয়টি জটিলতর হয়েছে | সন্ন্যাসী বিদ্রোহ সম্পর্কে পূর্বের আলোচনায় দেখাঁনে], হয়েছে যে, বাংলা দেশের ইংরেজ শাসন স্থদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে যেসব আঞ্চলিক উপদ্রব হয়েছিল--সন্্যাসীবিদ্রোহ তার অন্যতম | দেশপ্রেমের মহান আদর্শ সুপরিণত চিন্তাধার! সেই লুঠেরা সম্ধ্যাসীদের চরিত্রে আরোপ করার একটি মাত্র যুক্তি থাকতে পারে,-- বঙ্কিমচন্দ্র দেশ-কাল-পান্রকে নিরাপদ দুরত্ব থেকে নির্বাচন করে রাঁজকর্মচারী হিসেবে এই কৌশলের আশ্রয়টুকু নিয়েছিলেন | যেটুকু ক্ষীণ ইতিহাস ছিল সেট্ুকুও সদ্যবহার করেছেন ব্যাপারে শুধু 'আনন্দমঠ' নিয়েই যদি জাতীয় সমস্যা দেখা দিত তাহলে বঙ্িমচন্দ্রের কৌশল সম্বন্ধে সন্দেহ থাকত।

১৯ মোহিতলাল মজুমদার, বাংলার নবধুগ, ১৩৫২ পৃঃ ১০*-১১১।

৫৫৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

কিন্ত আগের পরের বছ উপস্তাসেই বঙ্কিমচন্দ্র জাতীয় কৌশল অবলম্বন করেছেন বলেই বিষয়টির যথার্থ কারণ অনুমান করার অস্থবিধে হয় না। অন্যান্য উপন্যাসে স্বদেশপ্রেমের ব্যাখ্যাই মুখ্য কথা নয়, সুতরাং ইতিহাসের সামান্য দেহে কল্পনার কাদামাটি লেপন করার ফলে অনবদ্য দেবী প্রতিমা নিমিত হয়েছে কিন্তু উনবিংশ শতাব্দীর গবেষণার ফলাফল অতীত বাংলার পটভূমিকায় স্বাপন করে বঙ্কিমচন্্ যে সচেতন ভাবেই কালানৌচিত্য দোষ ঘটিয়েছিলেন সেকথা স্বীকার্য। উনবিংশ শতাব্দীর পরম আকাজ্ফিত স্বদেশচর্চর প্রসঙ্গটিই তিনি পরিবেশন করেছিলেন--_কিস্তু কিছুটা এতিহাঁসিক সংযোগ থাকলে তার মূল্য বাঁড়বে ধারণাও ছিল বলে মনে হয়। অতীত বাংলার অরাঁজকতার মুহূর্তে শক্তিমান গৃহত্যাগী একদল সন্ন্যাসী যে উদ্দেশ্যেই হোক না কেন প্রতিপক্ষ ইংরেজকে বিপর্যস্ত করেছিল-_ এটাই বঙ্কিমচন্দ্রকে উৎসাহিত করে। তাছাড়া সবই আদর্শবাদী বঙ্কিমচন্দ্রের কল্পনার মহত্তম আবিষ্কার এতে ইতিহীসের সন্্যাসীদের মর্যাদা বিন্দুমীত্র বাড়েনি কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্রেরে অভিনব রচনাকৌশলের প্রশংসনীয় দিকটি উজ্জ্বল হয়েছে ইতিহাসের সন্ন্যাপীদের চিনতে হলে ইতিহাসের দ্বারস্থ হওয়াই বাঞ্ছনীয়, উপন্যাস বঙ্কিমচন্দ্র প্রতিভার অযূল্যদান-_ “আনন্দমমঠের সন্তানসম্প্রদায় বঙ্কিমচন্দ্রেরে মানসনায়ক কোন সমালোচক বলেছেন,

প্বস্কিমচন্দ্রের কল্পনা অলীক নয় বঙ্কিমচন্দ্র অনৈতিহাঁপিক যে ভাববস্তটি এদের ওপর আরোপ করেছেন তা উনবিংশ শতাব্দীর পরম আকাজ্কিত বস্ত। দ্বিতীয়তঃ তিনি যে অতীতের প্রেক্ষাপটে দেশপ্রেমের উচ্চাদর্শ স্থাপন করেছেন তার সঙ্গত কারণ আছে। বঙ্কিমচন্দ্র যে কালটিকে উপন্যাসের জন্য নির্বাচন করেছিলেন সেই কাল ছিল অরাজকতার | এই অরাজকতাই বিদ্রোহের জন্ম দেয় ।”২০

কাজেই বঙ্কিমচন্দ্র উপন্যাসে যে বক্তব্য পরিবেশন করেছিলেন--তাঁকে বর্তমানের পটতূমিকায় স্থাপন করার স্থবিধে ছিল না বলেই-_-অতীতের অনুরূপ একটি পরিবেশ অনুসন্ধান করেছিলেন পরিকল্পনাগত কিছু ক্রটি থাকা সত্বেও “আনন্দমঠ' বঙ্কিমচন্দ্রের সার্থক গবেষণার উপযুক্ত ফলাফল বলেই গণ্য হবে

"আনন্দমঠের' সন্তান সম্প্রদায়ের ব্যক্তি পরিচয় নেই-_যেমন আতক্মোৎসর্গকারী শহীদের ব্যজিপরিচয় তুচ্ছ হয়ে ষাঁয়। মহৎ কাজে ধারা আত্মনিবিষট, তুচ্ছ সামাঞ্জিক পরিচয় সেখানে বড়ো কথ! নয়। এই ভাবে সংগঠন গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন লেখক সামাজিক পরিচয় হাব্রিয়েও যাঁদের মনে ছুঃখ নেই-ব্যক্তিস্বার্থ হারিয়েও

২*. বিজিতকুমার দত্ত, লংলা সাহিত্যে উতিহাসিক উপন্ভাস, বছিমচন্ত্র ১৯৬৩1

উপন্যাস ৫৫৫

ধারা আনন্দময়, “আনন্দমঠের' চরিত্র তারাই | আনন্দমঠ, নামটির তাৎপর্য বোধহয় এখানেই | পরের জন্য নিজের জীরনদান করার নর্জিরকেই আমরা সবচেয়ে বড়ো দান বলে মেনে এসেছি বঙ্কিমচন্দ্র সাময়িক আবেগে জীবনদানের মধ্যেও মহিমা দেখতে পাঁননি “জীবন তুচ্ছ, সকলেই ত্যাগ করিতে পারে ।”__দেশের জন্য জীবনদাঁনের চেয়েও বড়ো কথা নিষ্ঠার সঙ্গে দেশব্রত পাঁলন করা | যে কোন মুহূর্তেই আদর্শ ভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা যেখানে বর্তমান বঙ্কিমচন্দ্র সেখানে আরও কঠিন ত্রত গ্রহণের কথাই বলতে চেয়েছেন উপক্রমণিকায় যে ভক্তির কথা বলেছেন বঙ্কিমচন্দ্র, তা “দেশভক্তি' ছাঁড়া অন্য কিছু হতে পাঁরে না। দেশপ্রেমের আবেগে জীবন তুচ্ছ মনে করে যাঁরা এগিয়ে আসবে তাদের মনোবল যেন অটুট থাঁকে,_এই কামনা ছিল বলেই ভক্তিমাঁন নিষ্ঠাবান, আদর্শপরায়ণ ওনির্ভীক দেশপ্রেমিকের অনুসন্ধান করেছিলেন সত্যানন্দ | বঙ্কিমচন্দ্র ধর্ষের ভিত্তির ওপরেই দেশপ্রেম প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন-_তাই সন্তানসেনার মুখে ধর্মসঙ্গীত. সন্তানসেনার উপাস্য যৃতি সাকার দেশমাতিকা আত্মদানের সাময়িকবিলাস কিংবা হঠাৎ উদ্জ্বাসকে সমর্থন করেননি তিনি। জীবনব্যাপী সাধনায় ধীরে ধীরে দেশপ্রেমিক হওয়া সম্ভব, তাঁরই স্তরবিভাগ করেছেন সন্তান লেনাঁদলের এই প্রতিষ্ঠানটির পরিকল্পনায় যে অনন্যতা, দূরদশিতা কল্পনাশক্তির পরিচয় দিয়েছিলেন বষ্রিমচনদর বাংলাসাহিত্যে তা তুলনীরহিত। সংগঠক বস্কিমচন্দ্রকে আবিষ্কার করতে গেলে “আননামঠ' “দেবী-- চৌধুরাণীর সব অংশগুলির সাহায্য নিতে ভবে শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গে যথার্ঘই বলেছেন,

সন্তান সম্প্রদায়ের গঠনের মূলে যে আশ্চর্য দেশপ্রীতি, উন্নত আদর্শবাদ, রাম্তনৈতিক দূরদশিতা প্রলোভনজয়ী নিঃ্বার্ঘতার পরিচয় পাওয়া যায় তাহা সেকালের কেন, একালের আদর্শকেও অনেকদূর ছাড়াইয়া গিয়াছে ।”২,

“আনন্নমঠ” রচিত হওয়ার অল্পকালের মধ্যেই বহু সংগঠন সংবাদ জাতীয় আন্দোলন ইতিহাসে পাওয়া যাঁয়_তা যে অল্পবিস্তর বঙ্িমচন্দ্রের আদর্শবাদ প্রভাবিত তাতে সন্দেহ নেই। এই সম্প্রদায়ের সদশ্যরাই “আনন্দমঠকে' বেদবেদান্ত-গীতাউপনিষদের মত পৃজা করতে পেরেছিলেন শ্রীযোগেশচন্ত্র বাঁগল বলেছিলেন,

'বাঙ্গালীর জাতীয় জীবন সংগঠনে “আনন্দমঠের' স্থান কত উচ্চ গভীর তাহা নির্ণয়ের সময় হয়ত এখনও আসে নাই এক সময়ে স্বদেশকর্মাদের এক হাতে ছিল গীতা অন্ত হাতে ছিল “আনন্দমঠ'। যদিও গ্রস্থশেষে বিসর্জন আসিয়! প্র

২১, ভ্ীকুমার বন্দ্যোপাধায়, বঙ্গসাহিত্যে উপন্তাসের ধার, বঙ্কিমচন্দ্র ১৯৬৩1

৫৫৬. , উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

লইয়া যায়, তথাপি আনন্দমঠের ভিতরকার ভাব ব্যঞ্না তথ? সন্ন্যাসী সম্তানসম্প্রদায়ের নিফাম স্বদেশপ্রেম বাঙ্গালী যুবকদের প্রাণে স্বদেশভক্তির সঙ্গে সে আশ্চর্য ত্যাগ সেবা ধর্মের উদ্রেক করিয়াছিল ।” ভূমিকা, বঙ্কিমরচনাবলী, যোগেশচন্দ্র বাগল ]

“আননমঠের' এতিহাসিকত্ব সমালোচনার বিষয় হলেও রাজনৈতিক চেতনাকে নতুন করে জাগাতে পেরেছিল বলে গ্রন্থটি জাতীয়তার দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ “আনন্দমঠের" প্রথমেই যে ভয়াবহ দুভিক্ষের নিখু'ত বর্ণনা দিয়েছেন বহ্কিমচন্দ্র তাঁর পটভূমিকায় সন্তানসেনার আত্মদানের মহান ত্রতের প্রসঙ্গটি উজ্জ্বল হয়েছে “আনন্দমঠে' বিদ্রোহের যে চিত্র পাই- ইতিহাসে ঠিক সেই উদ্দেশ্ট-প্রণো দিত বিদ্রোহের প্রসঙ্গ নেই, কিস্তু ভয়াবহ ছুভিক্ষ যে সমগ্র বাংলাঁকে গ্রাস করেছিল, সে কথা এতিহাসিক | বাংলার সে ছদ্দিনের চিত্র রচন| করেছেন তিনি পরম সহানুভূতির সঙ্গে,

*১১৭৬ সালে বাঙ্গালা প্রদেশ ইংরেজের শীসনাধীন হয় নাই। ইংরেজ তখন 'বাঙ্গালার দেওয়ান তীহাঁরা খাজনার টাকা আদায় করিয়া লন, কিন্তু তখন বাঙ্গালীর প্রাণসম্পত্তি প্রত্ৃতি রক্ষণাবেক্ষণের ভার লয়েন নাই। তখন টাকা লইবার ভার ইংরেজের, আর প্রাণ সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের ভার পাপিষ্ঠ নরাঁধম বিশ্বাসহস্ত মনুষ্য কুলকলঙ্ক মীরজাফরের উপর | মীরজাফর আত্মরক্ষায়।অক্ষম, বাংলা রক্ষা করিবে কি প্রকারে ? মীরজাফর গুলি খায় ঘুমায়! ইংরেজ টাঁক1 আদায় করে ডেসপাচ লেখে বাঙ্গালী কাদে আর উৎসন্ন যায়। [১মখণ্ড, ৭ম পরিচ্ছেদ ]

বর্ণনায় এঁতিহাপিকত্ব আছে পুরোমাত্রায়। হঠভাগ্য বাংলাদেশে সেদিন সত্যিকারের কোন সংগঠন ছিল না। মীরজাঁফরের নিষ্ঠুরতা আর স্বার্থান্ধতায় শাসক ইংরেজের অর্থলোলুপতার চাঁপে বাঙ্গালী যেদিন শুধুই নিম্পেষিত, সেই ভয়াবহ শ্বাণানের পটভূমিকাঁয় একদল দেশসাঁধককে উপস্থাপিত করলেন বঙ্কিমচন্দ্র এই কল্পনায় যে অসাধারণত্ব রয়েছে দেশপ্রেমিক বঙ্ষিমচন্দ্রের সাহিত্য সাধনার ইতিহাস আলোচন1 করলেই তা স্পষ্ট হবে। সন্্যাসী বিদ্রোহের সঙ্গে সন্তানসেনার দেশসাধন।র পার্থক্য বঙ্কিমচন্দ্রেরই সুপরিকল্পিত সৃষ্টি। সন্গ্যাঁসীরা গৃহত্যাগী দস্থ্য, বঙ্কিমচন্দ্র গৃহী সন্তাঁণ সৃষ্টি করেছেন বাংলার ঘরে ঘরে যখন হাহাকার, শুধু ছ'একজন গৃহত্যাগী মহাঁপুরুষের মহানুভবতায় তা দূর করা সম্ভব নয়। সমগ্র বাংলা ভুড়ে বে ভয়াবহ তাণ্ডব চলছে--ত অপসারণ করতে হলে ঘরে ঘরে বিপ্রবীর আঁবিতাঁব হওয়া দরকার দেশত্রতসাঁধনের জন্য ব্যক্জিত্বার্কে ভুলতে হবে, দেশের শাস্তি ফিরিয়ে আনার জন্য ভোগ-হৃখ-বিলাঁস বর্জন করতে হবে, সংঘবদ্ধ হতে হবে! এই "মহামস্ত্রে প্রয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে বাংলার অতীত ইতিহাঁপ বেছে নিলেও উনবিংশ

উপন্থাস | ৫৫৭

শতাব্দীর উত্তেজনার মাটিতেই যে বীজ বপন সম্তব-_বস্কিমচন্ত্র কথা জানতেন |

আনন্দমঠেই প্রথম একটি সুপরিকল্পিত সশস্ত্র বিদ্রোহের নিখৃ'ত পরিকল্পনা রচনা করেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র ইতিপূর্বে জাতীয় চেতনায় বিদ্রোহের উত্তেজনা! এমন ভাবে কোনও রচনায় প্রতিবিদ্বিত হয়নি সশস্ত্র বিদ্রোহ করাই সন্তানসেনার উদ্দেশ্য, প্রয়োজন হলে শক্রনিধন বলপ্রয়ৌোগ করার নির্দেশ পেয়েছে তারা সত্যানন্দ মহেন্দ্রকে সন্তান ব্রতে দীক্ষিত করার পর অস্ত্রশস্ত্র প্রস্তুতের নির্দেশ দিয়েছিলেন সম্তানসেনার দীক্ষা শক্তিরূপিনী দেশমাতৃকার কাছে বাঙ্গালীর বাহুবলের অভাবের অন্যতম কারণ এদেশে চৈতন্তপ্রবতিত প্রেমধর্ষের প্রীবল্য, বিষয়টি স্পষ্ট করেছিলেন বন্ধিমচন্দ্রই | “চৈতন্যদেবের বিঞ্ু প্রেমময়__কিন্ত ভগবান কেবল প্রেমময় নহেন-_ তিনি অনন্ত শক্তিময় | ১চতন্যদেবের বিষণ শুধু প্রেমময় সন্তানের বিধু শুধু শক্তিময়

[ দ্বিতীয় খণ্ড, চতুর্থ পরিচ্ছেদ ]

শক্তিসাধনার এমন একটি স্থপরিকল্লিত পন্থা স্বদেশপ্রেমিক বঙ্কিমচন্দ্র বাঙ্গালীর সামনে তুলে ধরেছিলেন অনেক আশা করেই তাঁর আশা যে ব্যর্থ হয়নি পরবর্তী কালের স্বাধীনত। আন্দোলনের ইতিহাসই সে কথ প্রমাণ করবে ইংরেজের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভ্যু্থানের খসড়া রচনা করে বঙ্কিমচন্দ্র জাতির অশেষ কৃতজ্ঞতা লাভ করেছিলেন লেখনী চালনা করেই তিনি পরোক্ষভাবে অসংখ্য সশন্্ব বিপ্লবীদেরই চালনা করেছিলেন- একথা সত্য

আনন্দমঠের সংগঠক পরিচালক সত্যাঁনন্দ অরাজক বাংলায় সাময়িক শাস্তি স্থাপিত হতে দেখেও তৃপ্ত হননি শান্তি স্বাপন স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা পৃথক বস্ত। পরাধীন জাতির জীবনেও শান্তির স্পর্শ লাগে যদি স্বাধীনতার চেতন! তাদের বিব্রত না করে। স্থশাসন বিদেশী বা স্বদেশী যে কোন যোগ্য শাসকেরই ব্যক্তিগত দক্ষতার ফল। “আনন্দমঠে' শীস্তি প্রতিষ্ঠার আয়োজন করেছিল সন্তান সম্প্রদায়, শাস্তি প্রতিষ্ঠারও পরে সত্যানন্দ মহাক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন,

সত্যানন্দের দুইচক্ষে জলধারা বহিতে লাগিল। তিনি উপরিস্থিত1, মাতৃরূপা জন্মভূষি প্রতিমার দিকে ফির্রিয়া জোড়হাতে বাশ্পনিরদ্বন্রে বলিতে লাগিলেন, “হায় মা! তোমার উদ্ধার করিতে পারিলাম নাঁ_আবার তুমি ম্নেচ্ছের হাতে পড়িবে সন্তানের অপরাধ লইও না। হায় মা! কেন আত্র রপক্ষেত্রে আমার মৃত্যু হইল না” [ চতুর্থ খণ্ড, অষ্টম পরিচ্ছেদ ]

সত্যানন্দ তবে কি চেয়েছিলেন ? ইংরেজের শাসন যে ফলপ্রদদ হবে-_সে কথা জানার পরেও,

*৫৫৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

“সত্যানন্দের চক্ষু হইতে অগ্নিশ্কুলি্গ নির্গত হইল। তিনি বলিলেন-_ 'শক্রশোঁণিতে সিক্ত করিয়া মাতাকে শস্যশালিনী করিব ।* [এ সত্যানন্দের সত্যিকারের আদর্শ কারোর অজানা থাকে না। বঙ্কিমচন্্র ইংরেজ শাসনের সফলের কথ যত সাড়ঘরেই বলুন না৷ কেন-_আনন্দমঠের সর্বক্যাগী সন্ন্যাসীর দায়িত্ব কি ফুরিয়ে গেছে? তবে সত্যানন্দের চক্ষে অগ্নিশ্কুলিঙ্গের কথা বললেন কেন লেখক? এই সত্যানন্দের যে পরিচয় সমগ্র “আনন্দমঠে' . বিবৃত হয়েছে-_-তাঁর সঙ্গে উপন্যাসের শেষাংশের সত্যানন্বকে ঠিক মেলানো যায় না। যিনি সমস্ত সন্তানসেনীকে নিপুণভাঁবে পরিচালনা করেছিলেন, সন্তানসেনার ঈপ্লিত শাস্তি প্রতিঠিত হওয়ার পরেও তিনি বিক্ষুব্ষচিত্তে স্বীয় প্রাণ হনন করতে চেয়েছিলেন কেন? 'বঙ্কিমচন্তর এই বিক্ষুব্ধ, উত্তেজিত, আ'গ্বিস্থত সংগঠককে শেষ পর্যন্ত শান্ত করতে পারেননি মহাপুরুষ তাঁকে হিমালয়ের মাতৃমন্দিরে নিয়ে গেলেন বটে, কিন্ত সত্যানন্দ যেতে চাননি, তার কর্তব্য সম্পন্ন হয়েছে বলে বঙ্কিমচন্দ্রও মনে করেননি “আনন্দমঠের” পরিচালক সত্যানন্দের চরিত্রের মাধ্যমেই বঙ্কিমচন্দ্র দেশপ্রেমের -ইঙ্গিতপূর্ণ বাণী প্রচার করেছেন সন্তানসেনার দেশব্রতের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল অরাজকতা দমন করা, কিন্তু স্পষ্টভাবে 'না বললেও দেশোদ্ধারের আঁদর্শটি তার মধ্যেই নিহিত ছ্ভিল। সত্যানন্দের কে সেই বাণী বহুভাবে ধ্বনিত হয়েছে,-ভবাঁনন্দের আবেগে এই বক্তব্যই স্পষ্ট হয়েছে বারবার | সত্যাঁনন্দ ষে পথে সন্তানসেনাকে চালিত করেছিলেন বাহুবলে, ধৈর্ষে, সংষমে, নিষ্ঠায়, ধর্মবিশ্বাসে সেপথটি দেশসেবার দেশোদ্ধারের উৎ্রুষ্ট পন্থা বলে বিবেচিত হতে পারে। দেশপ্রেমিকের কর্তব্য কি, সেকথা বিশ্লেষণের পরেই দেশপ্রেমিকের জীবন্ত বিগ্রহটিকে বঙ্কিমচন্দ্র এমন অপরূপ উপায়ে আমাদের সামনে এনেছেন কোন সমালোচক বঙ্কিমচন্দ্রের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যায় বলেছেন,

“তাহার আনন্দমঠের শেষ দৃশ্টে বিসর্জন আসিয়া প্রতিষ্ঠাকে লইয়া গিয়াছে তথাপি স্বাধীন হইবার এই প্রবৃত্তি তিনি কখনই পরিত্যাগ করেন নাই 'এবং এই কারণেই “আনন্দমমঠের' সন্্যাসীরা মৃত্যুপণ করিয়াছিল ।--আননমঠের সন্তান সম্প্রদায় বঙ্গজননীর এই লুপ্ত স্বাধীনতা ফিরাইয়া আনিবার সাধনা করিয়াছিলেন, কিন্তু বঙ্কিম স্বীয় অপরিসীম প্রবৃত্তি সত্বেও তাহাদিগকে বিজ্ঞয়গৌরব দিতে পাঁরেদ -নাই। আনন্মমঠের ট্রাজিভি ইহাই ।”২২--উনবিংশ শতাব্দীতে বাঙ্গালীর অন্তর .এমন একটি আদর্শ নেতাকেই খুজে বেড়াচ্ছিল। কিন্তু অষ্টার কল্পনাতেই ভার জন্ম

২২. সজনীকাত্ত ঘাস, বন্ধিম সাহিত্যের ভূথিকা, সীঁতায়ায়। পৃঃ ৮৬

উপহ্যাস ৫৫৯

হয়েছে সবার আগে। পৃথিবীর মাটিতে নিংশাস নেবার আগেই আমাদের কল্পনার জগতে জন্ম নিয়েছিলেন আগামী দিনের সংগঠক নেতা সত্যানন্দ | স্বদেশপ্রেমের আবেগ সংগঠনের মাধ্যমে কিভাবে রূপ নেবে এই নির্দেশ দেবার জন্যই বন্িমচন্দ্রের আবির্ভীব, সত্যানন্দ বঙ্কিমচন্দ্রের স্বদেশপ্রেমের জীবন্ত মৃতি

“আনন্দমঠে” বঙ্কিমচন্দ্র দেশপ্রেম উচ্ছুসিত হয়ে উঠেছে বঙ্গজননীর রূপ কল্পনায় বাংলাসাহিত্যে বস্তটি অভিনব নয়, যদিও বহু সমীলোচক ব্যাপারটি সম্পর্কে অতি উচ্ছৃসিত। দেশকে মাতৃরূপে বন্দনর রীতি উনবিংশ শতাব্দীর শেষপাদে বঙ্কিমচন্দ্রের রচনাতেই প্রথম ধর! পড়ল, উক্তির কোন ভিত্তি নেই। দেশচিন্তার প্রথম পর্ব থেকেই স্বদেশপ্রেমী লেখকের। দেশমাতৃকীরাই বন্দনা! করে এসেছেন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ, মধুক্ষদন এর প্রথম উদগাঁতা। তবে বঙ্কিমচন্দ্রের পৃথক গৌরবটুকুও অনম্বী কার্য,_- তিনিই এই ভাঁবজগতের দেশমীতার সাকারমৃতি কল্পনা করেছেন, _-নানাভাঁবেই বঙ্গ প্রতিমার রূপ বর্ণনা করেছেন “কমলাকান্তের দপ্তরে “আমার ছুর্গোৎসবে" দেবীদুর্গার পরিচয় বন্গজননী রূপেই | স্থবর্ণময়ী এই বঙ্গ প্রতিমা মৃতিটিকে বঙ্কিমচন্ত্রই বাংলার মানস মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেছেন আঁনন্দমঠে বঙ্গজননীর উদ্দেশ্যে রচিত বন্দেমাতরম সংগীত রচনাও বঙ্কিমচন্দ্রের অসামান্য কীতি। দেশবন্দনার এমন নিখুত স্তোত্র এধুগের ভারতবর্ষে স্বদেশপ্রেমী বঙ্কিমচন্দ্রেরে এক অবি্বরণীয় অবদান। বন্দোমাতরম স্বাধীনতা আন্দোলনের একমাত্র মন্ত্র।

এই সংগীত বাঙ্গালীকে আত্মদানের আহ্বান জানিয়েছে প্রখ্যাত সাহিত্যিক রমেশচন্দ্র হ0০5010989018. 8110801)1০9-য় সংগীত সম্পর্কে বলেছেন,

4৯105000610 006 021902 102621:500 25 1000 055. 057105 ০1080660515 1165 0006 25 ৪. চে আ৪-০15 10 065০9006, 000706 00228109010] ড1)100 10110720 €16 081:010105 3677591, 006 16004701520 090010961050038 0৫036 16010000209 0265...আ1090552] 01290621065 01181001 10650610 (16 15 9013607065 1610 0590 1015 10616]5 81) 10৮0০080100 0৫ 032 10001061 19790 ) 026 ৪0005 65 99058515602 10766101005 12060966 9134 15

501:270706 917, 055 119]1975অ৪11 781) 2111 08৬5 5.900708 ৪268] 056 71500 20700. 2:00. 0061987046 715021203 1285 1১5০0072 2 00%7৩::01 001057505 17. 00115105] 88105000 50006. 2০০69050 (90 00০

৪5:0600150 98২৩

২৬, : 00501008609, 01105017153 (৬০1-5), 80177815170, 2962.

৫৬০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল] সাহিত্যে শ্বদেশপ্রেম

“'আনন্দমঠের' সম্তানসেনার দেশপ্রেমত্রত পুরোপুরি কল্পিত বলেই একটা ভাবতন্ময় পরিবেশেই বঙ্কিমচন্দ্র এদের স্থাপন করেছেন মাঝে মাঝে প্রাণের স্পর্শ সঞ্চার করার চেষ্টা করলেও ভাবলোক থেকে এদের মর্ত্যলোকে টেনে আনা যায় না কোন মতেই ভুলক্রটি করেও সন্তানসেন৷ ভুলের সংশোধনের জন্য এমন একটি নতুন উদ্যম দেখিয়েছে যার ফলে চরিব্রগুলোর অসাধারণ দিকটি আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। ভবানন্দই প্রথম সন্তানদের দেশসাধনাঁর কথা ব্যক্ত করে বলেছিল,

, আমরা অন্য মা মানি না-__জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গদপি গরীয়সী আমর বলি, জন্মভূমিই জননী, আমাদের মা নাই, বাপ নাই, ভাই নাই, বন্ধু লাই,ল্ত্রী নাই, পুত্র নাই, ঘর নাই, বাঁড়ী নাই, আমাদের আছে কেবল সেই স্থল, সুফল মলয়জ সমীরণ শীতল শশ্যশ্যাঁমলা,--” [ ১ম খণ্ড, ১ম পরিচ্ছেদ ]

দেশকে ভালবাসার এমন আদর্শ বঙ্কিমচন্দ্রের কল্পনাতেই স্থান পেয়েছিল দেশের ছর্দিনে সব চিন্তা বাদ দিয়ে এমনি করে দেশকে ভালবাসতে হবে দেশই হবে সব সাধনার সাধন!, সব উপাসনার সার | আধ্যাত্মিকতার চরম মার্গে যেমন একাগ্রতার কথা বলা হয়ে থাকে, বঙ্কিমচন্দ্র সেই ব্যঞ্জনাটই দেশসাধনার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছিলেন “আনন্দমঠে' দেশসাধনা মুখ্য হলেও ধর্মচেতনাই এই “দেশপ্রেমের মূলে সক্রিয়ভাবে বর্তমান শুধু বিষণ, মহেশ্বর, লক্ষ্মীর জায়গাঁয় দেশমাত্ৃকামূতি স্থাপন করা হয়েছে__ এটুকুই যা প্রভেদ। আধ্যাত্বিকতায় যেমন কায়-মন-বাক্যের পবিত্রতার প্রয়োজন হয়,__চিন্তা ভাবে সেখানে কোন প্রকার আবিলতার স্থান' নেই, তেমনি 'আনন্দমঠের” সম্তীনদেরও ব্রহ্মচর্য পালন করতে হয় একাগ্রমনে ঈশ্বরচিন্তার সাধনা যেমন অব্যর্থ ফল দেবেই, দেশসাধনার ক্ষেত্রেও এসত্য প্রযোজ্য | শুধু কর্তব্যে নিষ্ঠা পবিত্রতার প্রয়োজন “আনন্দমমঠের” সন্তানরা পরিচালকের নির্দেশ অলংঘনীয় বলেই জানে তবু মানবচিত্বের দোৌলাচল প্রবৃত্তির হাত থেকে সন্তানরাঁও মুক্তি পায় না-_-ভবানন্দের কল্যাণী মোহ সে কথাই প্রমাণ করেছে। দেশপ্রেমিক ভবাঁনন্দ ব্রতচ্যুতির প্রীয়শ্চিত করেছে, স্বেচ্ছায় আত্মবিসর্জন দিয়ে

দেশের দুদিনের আভাস দিতেও তিনি স্ববর্ণময়ী দেবীপ্রতিমার সাহাঁষ্য নিয়েছেন সন্তানের চৈতত্তসঞ্চারের অস্ত এই সাকার দেবীপ্রতিমা সর্বদাই দৃষ্টিপখে বিরাজমান! | মহেন্দ্র এই দেবীপ্রতিমা দেখেই সন্তানব্রত গ্রহণ করতে চেয়েছিল। ব্রচ্ছচাঁরী মহেন্্রকে নখ্রিকা কালীযূতি দেখিয়ে বলেছিলেন, ্‌

'আঁজি দেশে সর্বত্রই শ্বশাঁন তাই মা কম্কালমালিনী ।”

. | [ ১ম খণ্ড, একাদশ পরিচ্ছেদ ]

উপন্যাস ৫৬১

দেশের ছুর্দিনের এমন জীবন্ত মৃতি শুধু সন্তান সেনাকেই নয়.-যে কোন

দেশপ্রেমীকেই ব্যথিত করবে বঙ্কিমচন্দ্র এই কল্পনাটি নিখুত অর্থপূর্ণ ইতিপূর্বে কিরণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যার “ভারতমাতা” নাটকে ভারতমাতাকে চরিত্রকূপে কল্পন। করে ভারতবর্ষের দুদিনের প্রতীকরূপিনী এই দেবীকে সর্বরিস্তারূপে দর্শকের সামনে এনেছিলেন তারপরে বঙ্কিমচন্দ্রই দেশজননীর রূপ কল্পনা করেছেন 'আনন্দমঠে” মাঁযা ছিলেন, মা--যা হইয়াছেন, মা-_-যা হইবেন, এই ব্রয়ীযূতির পরিকল্পনায় যে অভিনবত্ব অপরূপত্বের সমাবেশ হয়েছে বাংলা সাহিত্যের কোথাও কোনো প্রয়োজনেই এমন দ্বিতীয় চিত্র রচিত হয়নি 'আনন্দমঠের' সমস্ত সাধনা এই বঙ্গ- জননীর দঃখমোচনের জন্যই | এই দেবীকে প্রসন্ন করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি,

“যবে মার সকল সন্তান মাকে মা বলিয়া ডাঁকিবে, পেইদিন উনি প্রসন্ন হইবেন |”

দেশমাতৃকার সাধনায় মগ্ন আত্মত্যাগে উৎসুক সাধকের কাছে এর চেয়ে আন্তরিক প্রেরণা আর কীই বা হতে পারে বঙ্কিমচন্দ্র দেশপ্রেমিকের সমগ্র চৈতন্যের দ্বার খুলে দিয়েছিলেন, দেখিয়ে দিয়েছিলেন আলোকিত দেশসাধনার রাজপথ সত্যানন্ন নয়, _বঙ্কিমচন্দ্রই বাঙ্গালীর দেশারাধন। যজ্ঞের পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করেছিলেন: কোনো কোনো সমালোচক সাম্প্রদায়িক রূপকল্পনার হিন্দুপৌত্তলিকতার স্পর্শে সঞজীবিত বঙ্কিমচন্দ্রের এই মাতৃধ্যানের ফলাফল এভাবে বর্ণশা করেছেন,-_

"এই দেশপ্রেম সাম্প্রদায়িক রূপকল্পনাকে প্রতীক করায় .সর্বজনীন আবেগ তাতে প্রকাশ পেতে পারল না ।৮২৪

কিন্তু লক্ষ্য করতে হবে বঙ্কিমচন্দ্র দেশকেই আরুতি দিয়েছিলেন দেশকে সজীব চিন্ময়ী সত্তারূপে বর্ণনা করে যে উপায়ে তিনি দেশপ্রেম জাগিয়ে তুললেন-_তার সাফল্য সর্বজনবিদিত।

'আনন্দমঠের সন্তান সেনারাঁও জাতিনিবিশেষেই গৃহীত হয়েছে রক্ষণশীলতার বা সাম্প্রদায়িকতার স্পর্শ গ্রন্থের কোথাও নেই এই গ্রন্থেই সত্যানন্দ বলেছেন, "সকল সন্তান একজাতীয় মহাত্রতে ত্রা্মণ-শুদ্র বিচার নাই |”

[ ২য় খণ্ড, ৫ম পরিচ্ছেদ ]

যে কোন সংস্কারই এই সংগ্রামের মুহূর্তে ভেসে গিয়েছিল ধ্তিহের প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া কোন সাধারণ মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়--

কিন্ত দেশের আহ্বানে সাঁড়া দেবার আস্তরিক প্রেরণ! যদি কেউ পেয়ে থাকেন ।তিনি

২৪. ভবতোধ দত্ত, চিস্তানায়ক বক্ষিমচত্রা, ১৮৬১, পৃঃ ১৪৫ | ৩৬

৫৬২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে ব্বদেশপ্রেম

যে সম্প্রদায়েরই হোন না কেন দেশকে সজীব বলে চিস্তা করাটাই তার পক্ষে স্বাভাবিক হবে| বঙ্কিমচন্দ্র অষ্টা হিসেবে যে শিল্পসম্মত পস্থার আশ্রয় নিয়েছিলেন তার মৃল)য়ন প্রসঙ্গে বিরাট সাফল্যের দিকটাই দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমাদের | তিনি সম্প্রদায়গত চিন্তার উর্ধে একটি সর্বজনীন দেশসাধনার আবেগই হৃঙ্টি করতে চেয়েছিলেন এবং তাতে সফল হয়েছিলেন

'আনন্দমঠের' দেশসাধনার স্বরূপ প্রসঙ্গে দেশসাধকের যৃতিটিও আমাদের মনে সবিন্ময় সম্তরমবোধ জাগিয়ে তোলে দেশমাতৃকার পদতলে নিবেদিত প্রাণ এই লব মহাত্ব! দেশসাধকদের চধিত্র রচনায় বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর কল্পনার উচ্চতা প্রমাণ করেছিলেন সত্যানন্দের কথা পূর্বেই বলেছি, পরিচালক সংগঠক হিসেবে প্রচণ্ড নির্ভীক ব্যক্তিত্বের পরিচয়ই তীর সমস্ত আচরণে ফুটে উঠেচছ। উপন্যাসের চরিত্র বলেই কল্পলোকেই এর অবস্থান মত্ত্য পৃথিবীতে যে দু'চারজন ক্ষণজন্মা মহাত্মার জীবনচরিত পাঠ করেছি আমরা, তাদের সঙ্গে সত্যানন্দের খুব বেশী পার্থক্য নেই চরিত্রটিতে মহাপুরুষস্থলভ ব্যক্তিত্ব আরোপ করে বঙ্কিমচন্দ্র নেতৃত্বশক্তির ব্যাখ্যা দিতে চেয়েছিলেন যদিও বাস্তবে নেতৃত্ব ধারা করেন তার। সত্যানন্দ।না হয়েও নেতা হয়েছেন। কল্পনার সঙ্গে বান্তবের পার্থক্য এখানেই তবু কল্পনাই যখন তা যত নিখুত হয় ততই ভালো অন্তান্ত সব চরিত্র প্রসঙ্গে এতখানি কাল্পনিকতার অভিযোগ আনা যায় না। সত্যানন্দ নেতা_কিন্তু জীবানন্দ, ভবানন্দ শিষ্য শিষ্ের চরিত্রে সম্পূর্ণতা এলে তবেই সে নেতৃত্ব লাভের অধিকারী হয়। তাই জীবানন্দ ভবানন্দও নিখুত নন। উপন্যাসের দাবী রক্ষার তাগিদে এদের প্রাণচঞ্চল চরিত্র রূপেই অঙ্কন করেছেন বঙ্কিমচন্দ্র দেশের জন্য সবকিছু ত্যাগ কর1 যে সম্ভব নয়-_-জীবানন্দ সে কথা তাঁর পরিণীতা। পত্বীর সামনে ফ্াঁড়িয়ে উচ্চকে ঘোষণা করেছিলেন রক্তমাংসের মানুষ আদর্শের জন্য জীবনধারণের সাধারণ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে চায় না। ভবানন্দেরও ত্রতভঙ্গ হয়েছিলো কিন্তু আদর্শবাদী বঙ্কিমচন্দ্র অত্যন্ত কৌশলে এদের পতন রোধ করেছেন ভাঙ্গনের মুখে ভেঙ্গে পড়ার মুহূর্তেই শাস্তি জীবানন্দকে রক্ষা করেছে,-সাধবী কল্যাণীর ধিক্কারবাণী ভবানন্দকে সাময়িকভাবে চৈতন্য দান করেছে। দেশসেবার মহৎ আদর্শ যে শুধু পুরুষকেই অনুপ্রাণিত করে তা নয়,জীবনের সমস্ত আনন্দ হুখকে অবহেলায় সরিয়ে দিয়ে নারীও দেশের কাজে আত্মনিয়োগ করতে পারে, শাস্তি সেকথ। প্রমাণ করেছে। সেদিক থেকে শাস্তি কিছু মাত্র অবাস্তব নয়। বাস্তবে, ইতিহাসে এমন নজির রয়েছে, সেদিক থেকে শান্তি ভারতীয় এতিহ্যেরই ধ্জাবাহী নিলি সম্ভাঁনত্রত যখন মুযূযূ্ণ তখন শাস্তিই সে ব্রতরক্ষায় অগ্রণী,

উপন্তাস ৫৬৩

'ছি-তুমি বীর আমার পৃথিবীতে বড় সখ যে, আমি কীরপত্বী। তুমি অধম স্ত্রীর জন্ত বীরধর্ম ত্যাগ করিবে? তুমি আমায় ভালবাসিও না-_-আমি সে হ্ুখ চাহি 'না-কিস্ত তুমি তোমার বীরধর্ম কখনও ত্যাগ করিও না।

1 ১ম খণ্ড, ষোড়শ পরিচ্ছেদ ] শাত্তিও দেশসেবিকা- জীবাঁনন্দের চেয়ে তার চারিত্রিক দৃঢ়তা মনোবল বেশীই বলতে হয়। বঙ্কিমচন্্র শান্তির এই দৃঢ়তাকে পরে অসমসাহসিকতা বলে ব্যাখ্যা করেছেশ। দেশসেবার আদর্শে এই দুটি নরনারী তাদের পাঁথিব ভোগ-হুখ-কামন! জয় করে যে মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল__তাতে বঙ্িমচন্দ্রেরে আদর্শহৃষ্টির নিপুণতাই প্রমাণিত হয়েছে অসম্ভব হলেও দেশপ্রেমের আবেগ মান্থষকে যে কতবড় ত্যাগ করতে শেখায় সে কথাটুকু বঙ্কিমচন্দ্র চরিত্র ছু-টিতে দেখিয়েছেন সন্তান ত্রত সাঙ্গ হলেও জীবানন্দ শান্তি গৃহজীবনে ফিরে আসেনি, বঙ্কিমচন্দ্র উদগত অশ্রু লুকোতে পারেননি এদের জন্য,

হায়! আবার আসিবে কি মা! জীবানন্দের গ্যায় পুত্র, শান্তির স্তায় কন্তা, আবার গর্ভে ধরিবে কি? [ চতুর্থ খণ্ড, সপুম পরিচ্ছেদ ]

“আনন্দমঠের” সন্তানব্রত সাঙ্গ হয়েছে, দেশে শান্তি স্থাপিত হয়েছে,_ইতিহাস সমধিত সংবাদ পরিবেশনের জন্য বঙ্কিমচন্দ্র এই অহেতুক অংশটি যোজনা করেছেন 'কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে সন্তানব্রত সাঙ্গ হতে পারে না, যা শুরুই হয়নি তা সারা হবে কিকরে? উনবিংশ শতাবীর সংঘবদ্ধ স্বাধীনতা আন্দোলন যখন সবেমাত্র রূপ নিচ্ছে--এমন সময় উপন্ভাসের জগতে একটা আঁকম্মিক পরিবর্তন সৃষ্টি করলেন বঙ্কিমচন্দ্র এটা ঘে পরিণত বাস্তববুদ্ধিরই প্রকাশ সে কথা আজ সন্দেহাতীত। অবশ্য ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠায় বঙ্কিমচন্দ্র যে সন্তুষ্ট ছিলেন_সে কথা সর্বথা স্বাঁকার্য। স্বাধীনতা আন্দোলনের ফলাফল সম্পকে নিঃসংশয় বিশ্বাস আশ] পোষণ করলেও মোধল শাসনের অবসানে এদেশে ইংরেজ অধিকার প্রতিষ্ঠায় যে কোন উদার দৃষ্টি সম্পন্ন শিক্ষিত বাঞ্গালীই সন্তষ্ট হয়েছিলেন সেদিক থেকে “'আনন্মমঠের” এতিহাসিক পটভূমিকায় ইংরেজ রাজ্যস্থাপনে বঙ্কিমচন্দ্র সমর্থন খুব অসঙ্গত নয়। কিন্ত তথ্যের সঙ্ে আদর্শের ব্যবধান এমন আঁকশ্মিকভাবে উপন্াসে স্থান পেয়েছে বলেই বঙ্কিমচন্দ্রের সত্যিকারের বক্তব্যটি বোঝা মুস্কিল হয়ে পড়ে দেশপ্রেমের এমন জলন্ত

দৃষ্টান্ত খিনি স্থাপন করেছেন, স্বাধীনতার মূল্য দেশসাধনার আবশ্যকতা যিনি এমন স্পষ্টভাবে বুঝিয়েছেন তার পক্ষে জাগ্রতচেতনা নিয়ে বিদেশীর দাসত্ব সমর্থন করা কোঁনোমতেই সম্ভব ছিল না,_-তাই সত্যানন্দের চোখে অগ্নিশ্ুলিঙ্গ দেখেছি আমরা রষ্বিমচন্দ্রের ইংরেজ প্রশংসার পশ্চাতে কিছু রহস্তের ইঙ্গিত তাই যে কোন লোকের

৫৬৪ উনবিংশ শতার্বীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

চোখেই ধরা পড়ে মুসলমানবিতাড়ন প্রসঙ্গে ইংরেজঅধিকার প্রসঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্র লক্ষ্যণীয় উক্তি করেছেন,_

"উত্তর বাংল! মুসলমানের হাতদাড়া হইয়াছে মুসলমান কেহই কথা মানেন না মনকে চোখ ঠাঁরেন-_বলেন, কতগুলো লুঠেরণতে বড় দৌরাত্ম্য করিতেছে__ শাসন করিতেছি এইরূপ কতকাল যাইত বলা যায় না? কিন্তু এই সময়ে ভগবানের নিয়োগে ওয়ারেন্‌ হেষ্টিংস্‌ কলিকাঁতার গবর্ণর জেনারেল ওয়ারেন হেষ্টিংস্‌ মনকে চোখ ঠারিবার লোক নহেন-_ত্ার সে বিদ্ধা থাকিলে আজ ভারতে বুটিশ সাম্রাজ্য কোথায় থাকিত। [ চতুর্থ খণ্ড, চতুর্থ পরিচ্ছেদ ]

ইংরেজ অধিকারকে ভগবানের আশীর্বাদ বলে বর্ণনা করে বঙ্কিমচন্দ্র যে নির্জল। র]ঁজভক্তিরই পরিচয় দিয়েছেন--তাঁতে সন্দেহ নেই। বুটিশ রাঁজকর্মচাঁরীর পক্ষে আনুগত্য প্রদর্শন অত্যন্ত স্বাভাবিকই, কিন্তু “আনন্দমঠ' রচয়িতার পক্ষে আনুগত্য প্রদর্শনের এই সাঁড়ম্বর প্রস্ততিটাই যেন বেমানান

সমালোচক রমেশচন্দ্রও “আনন্দমঠের অংশটিতে অসঙ্গতি খু'জে পেয়েছিলেন ০5০10189068 9৫০91)1০৪-য় তিনি খুব সংক্ষেপে সার্ক সমালোচনায় বলেছিলেন,

“চুন15 00650210531)6 ০1 100৩০৮61195 006 4১280051120, 90015 0 0১০ 95210108551 12196111010, 01 1772. 10106160615 £91650 2. 0105171116 ৮1০60] ০৬৪]: 0109 91016151) 2100. 0/10179170106020. 1010625,1101)15 ৪000653 28, 1)0২৮০৮০, 2806 ৫011060 00 29 5. 10055061109 40159101227 90928101756 25 2. 01511)515-115501750. 01001560 2৫%1560 98658139705. 6০0 818130010. £070061 19515081009) 29, ৫01 6176 61039১91105) 2016 ৪৪ 006 01015 21661790155 00 700179,0010050210, 00725951010 +, |

ঈশ্বরগুপ্তের দেশপ্রেমে জাতীয় বৈপরীত্য আবিষ্কার করেছি আমরা বঙ্কিমচন্দ্রের দেশভক্তির সঙ্গে অন্ততঃ এই ক্ষেত্রে ঈশ্বরগুষ্ঠের কোন পার্থক্য নেই। বৃটিশ রাজছত্রের তলে স্বদেশপ্রেমিকের আত্মরক্ষার এইটিই সর্বাপেক্ষা হুলতপন্থা। তাই দেশপ্রেমের গভীরত। কিংবা উপলন্ধিতে তারতম্য থাকতে পারে-_কিস্ত আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে ঈশ্বরগুপ্ত কিংবা বঙ্কিমচন্দ্র একটি উপায়ই বেছে নিয়েছিলেন “্আনন্দগমঠের* প্রথম সংক্করণে বঙ্কিমচন্দ্রের বিজ্ঞপ্তির ভাষাটি খানিকটা কৈফিয়তের মতোই শুনিয়েছে,

“সমজবিপ্নব অনেক সময়ই আত্মপীড়ন মাত্র বিদ্রোহীর1 আত্মঘাতী | ইংরেজেরা

বাংলাদেশ অরাজকতা হইতে উদ্ধার করিয়াছেন। এই সকল গ্রস্থে বুবান গেল ।”

উপন্যাস ৫৬?

কিন্তু গ্রন্থের বর্ণনায় দেখি, যে সন্তানেরাই অবলীলাক্রমে, মুসলমান অত্যাচার দমন করেছে, ইংরেজ দমন করেছে, অরাক্কতা দমনের কৃতিত্ব তাদেরই প্রাপ্য _-অথচ ইংরেজসেলার ওপরে সে গৌরব অর্পণ করেছেন বঙ্কিমচন্দ্র অথচ তিনিই পাকা ইংরেজ ওয়ার্ডসের যে ছুর্গতিচিত্র অঙ্কন করে. -তারপরেও : দমনের কৃতিত্ব আর ইংরেজের হতে পারে কি?

“যেমন দুইখও্ড প্রকাও প্রস্তরের সংঘর্ষে ক্ষুদ্র মক্ষিকা নিশ্পেষিত হইয়া যায়, তেমনি গুই সন্তানসেনা সংঘর্ষে এই বিশাল রাজসৈন্য নিম্পেষিত হইল |

ওয়ারেন হেষ্টিংসের কাছে সংবাদ লইয়। যায়, এমন লোক রহিল না।৮

[ ৪র্থ খণ্ড, ৬ষ্ঠ পরিচ্ছেদ ]

এই বিদ্রোহী সন্তানসেনার। ওয়ারেন হেষ্টিংসকেও কিভাবে চোখ রাঙ্গিয়েছিলেন,

তাঁর বর্ণনা! দিয়েছেন বঙস্কিমচন্ত্র। ইংরেজ শাসনের প্রথমে নিধিবাঁদে দেশজয় কর!

সম্ভব হয়নি তাদের, -- ইতিহাসই সে সত্য প্রকাশ করেছে বঙ্কিমচন্দ্রের যুগে হংরেজ

ভারতের একচ্ছত্র শাসক, একালের তুলনায় ইতিহাসের বাঙ্গালী যে অনেক বেশী রাজনীতি সচেতন, স্বাধীনচেতা ছিল বঙ্কিমচন্দ্র সেকথা প্রমাণ করতে চাইলেন,

“এই স্ময়ে প্রখিত নামা, ভারতীয় ইংরেজকুলের প্রাতঃহ্য ওয়ারেন হেঞিংস সাহেব ভারতবর্ষের গভর্নরজেনরল। কলিকাতায় বসিয়া লোহার শিকল গড়িয়া তিনি মনে মনে বিচার করিলেন যে, এই শিকলে আমি সদ্বীপা সসাগর! ভারতভূমিকে বাধিব। একদিন জগদীশ্বর সিংহালনে বসিয়া নিঃসন্দেহে বলিয়াছিলেন, তথান্ত। কিন্ত সেদিন এখন দূরে আজিকার দিনে সন্তানদিগের ভীষণ ইরিধ্বনিতে ওয়ারেন হেছ্টিংসও বিকম্পিত হইলেন ।” [ তৃতীয় খণ্ড, ১ম পরিচ্ছেদ

কিন্ত এত ক্ষমতা থাঁকা সবেও সন্তানসেন। রাজ্য চায়নি, রাজত্ব চায়নি, শুধু শাস্তি চেয়েছে “আমর রাজ্য চাইন।'- সত্যানন্দ সন্তাঁনসেনাকে তথ্যই বুঝিয়েছেন

সেই শক্তিমান বিদ্রোহীর! গীতার উপদেশ,_ভারতবর্ষের সনাতন ত্যাগের মহিম। প্রচারের জন্ত সমস্ত শক্তি সংযত করেছে, সত্যানন্দের মত সংগঠক শেষ পর্যন্ত হিমালয়ের উদ্দেশ্যে যাঁত্রা করলেন। এসব অংশ থেকেই স্পষ্টতই বোঝা যায় বঙ্কিমচন্দ্র কিছু স্বকৃত জটিলতা এই উপন্যাসে সথঠি করেছেন। সম্তানসেনার অসাধারণ অবিশ্বাস্য বীরত্বের বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি যেমন তন্ময় তেমনি গ্রন্থ রচনার আদল উদ্দেশ্যটি গোপন করার জন্যও তৎপর হয়েছিলেন,_ছ ফের সংমিএখে যে লক্ষানীয় অসঙ্গতি হৃষ্টি হয়েছে যে কোন সাবধানী পাঠকের চোখে তা ধরা

পড়বেই 'আননামঠের শেষাঁংশে চিকিৎসক ইংরেজ রাঁজন্থে বাঁগলীর ভবিষ্যতের যে চিত্র

৫৬ উনবিংশ শতাব্দীর ধাঁল সাহিতো দেশপ্রেম

বর্ণনা করেছেন তা বঙ্কিমচন্দ্র উনবিংশ শতাব্দীর চরিত্র থেকেই গ্রহণ করেছেন শিক্ষায় জ্ঞানে যে প্রাচীন আর্্যসভ্যতা সম্গগ্র ভারতে শত্তিবিস্তার করেছিল-- নবল পাশ্চাত্যশিক্ষীর আলোকে তারই পুনরুজ্জীবন লক্ষ্য করেছিলেন সে যুগের মনীষিবৃন্দ। আত্মিক জাগরণ না ঘটলে সর্ধাত্মক বেণন পরিবর্তন আসতে পারে না, বঙ্কিমচন্দ্র সত্য জানতেন এখানেও দূরদর্শী বঙ্কিমচন্দ্র ভবিস্ততবাণী করেছিলেন,_-“ইংরেজী শিক্ষায় এদেশীয় লোক বহিন্তত্বে স্থশিক্ষিত হইয়া অত্তস্তত বুঝিতে সক্ষম হইবে তখন সন1তনধর্ম প্রচারের আর বিদ্প থাকিবে না! তখন ্রককত ধর্ম আপনাআপনি পুনকুদ্দীপ্ত হইবে | যতদিন তা না হয়, যতদিন না হিন্দু আবার জ্ঞনবন, গুণবান্‌ আর বলবান হয়, ততদিন ইংরেজ বাজ্য অক্ষয় থাকিবে ।” [ চতুর্থ থণ্ড, অষ্টম পরিচ্ছেদ |

বিশ্বাস বঙ্কিমচন্দ্রেরই শুধু নয় শিক্ষিত প্রজ্ঞাবান চিন্তাবিদেরা কথা বারবার বলেছেন “আনন্দমঠের মত জাতীয়তাবাদী উপন্যাসের উপসংহারে সুকৌশলে বহ্কিমচন্দ্র 'দেশবাসীর আশু কর্তব্য নির্ধারণ চৈতন্যসম্পাদন করেছিলেন, এখানেই গ্রন্থটির অসামান্যতা। সমালোচক শ্রহেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ বঙ্কিমচন্দ্র গ্রস্থটিতে বঙ্কিমচন্দ্রের দেশসেবাঁ প্রসঙ্গে বলেছেন,

*বহ্কিমচন্্র তাঁহার উপন্যাসে বাঙ্গীলীকে বাংলার অনেক এঁতিহাঁসিক ব্যক্তির ঘটনার সহিত পরিচিত করিয়াছেন। সন্ন্যাসীবিদ্রোহ, দেবী চৌধুরানী, সীতারাম--বঙ্কিমচন্দ্রের এই উপন্যাস ত্রয়ের প্রকাশের পুর্বে কয়জন বাঙ্গালী সকলের কথা জানিতেন ?%২৫

আমাদের অগৌরবের ইতিহাস ধাকে পীড়1 দিয়েছিল,--গৌরবের ইতিহাঁল সন্ধান করে জমগ্র বাজালীর সামনে তুলে ধরেছিলেন যিনি, স্পর্শকাতর, প্রখর আত্মমর্ষাদীসম্পন্ম সেই সার্থক বাঙ্গালী বঙ্কিমচন্দ্রের আবির্ভাবে ধন্য হয়েছিল বঙ্গদেশ বাঙ্গীলী। ইতিহাসের অনুজ্জবল অধ্যায়ের সঙ্গে কল্পনার মিশ্রণেই তাঁর অধিকাংশ এ্তিহাসিক উপন্যাসের জন্ম হয়েছে, কিছু অবাস্তবতা, অতিশয়োক্তি তাতে থাকবেই। কিন্তু যে প্রেরণা থেকে বঙ্কিমচন্দ্র জাতীয় গ্রন্থরচনায় জীবনব্যাপী: সাধনা করে গেছেন তা পুরোপুরি স্বদেশপ্রেমের | “দেবী চৌধুরানীতে” জাতীয়চেতনা- সম্বদ্ধ বাজালীর সামনে অসমসাহসিক1! একটি বঙ্গললনার বীরত্বের কাহিনী পরিবেশনের প্রথম চেষ্ট] তারই বাঙালীর বাহুবলের পরিচয়দানের উদ্দেশ্যেই তিনি ইতিহাসের অস্পষ্ট বিশ্বৃত হ্থত্রের সাহায্য নিয়েছিলেন, ইতিহাসের;

২৫. হেমেল্্প্রসাদ ঘোষ, বন্গিমচন্দ্র, ১৯৬২1

উপন্যাস রী

বাঙ্গালিনীর গৌরবচিত্্র রচিত ন] হলে উদ্দেশ্যটি পূর্ণ হোত না। “আনন্দমঠের" শান্তির মধ্যেই বঙ্কিমচন্দ্র বঙ্গললনার শক্তি, ত্যাগ মনোবলের স্মরণীয় চিত্র রচনা করেছেন কিন্ত দেবীরাঁনী পেয়েছে নেতৃত্বের দীয়িত্ব। চরিত্রের সঙ্গে ইতিহাসের যে সামান্ত সংযোগন্থত্র পেয়েছিলেন উপন্যাঁসে সেট্রকুই তিনি রমণীয় করে তুলেছিলেন উত্তরবঙ্গে ভবানীপাঠক দেবীরানী শুধু কিংবদন্থীতেই স্থান পেয়েছেন তা নয়, কিছু কিছু স্থানীয় এতিহাসিক স্মৃতি এখনও সে ইতিহাস ম্মরণ করিয়ে দেয়। ঘটনার মধ্যেও বঙ্কিমচন্দ্র আর্তরক্ষার জন্য শক্তিমানের সঙ্গে সংঘবদ্ধশক্তির সংঘর্ষ কল্পনা করে নিয়েছিলেন জাতীয় কল্পনার মধ্যে মহিমীরোঁপ করাটা সেই যুগের পরিবেশে সম্ভব হয়েছিল। স্বদেশপ্রেম একট নির্জাব অনুভূতি নয়, ্বতস্ফুর্তভাবে যখন এই মনোভাব জন্ম নেয় তখন আবেগ উদ্দ্বাসে তা ভরপুর থাকে নিতান্ত নগণ্য প্রচেষ্টাকেই তখন মহৎ বলে চালানো যাঁয়। ভবানীপাঠক দেবীরানী ডাকাত দলের নেতৃত্ব করতেন। ডাঁকাতির মধ্যে মহিমা আবিষ্কার করা এবং নিধিচারে তার দ্বারা অভিভূত হওয়া সম্ভব ছিল সেই উত্তেজনার যুগেই 'ন্জরশেখরে'ও দক্থ্যতাঁর প্রশন্তি রচনা করেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র দস্থ্যতা বা ডাকাতির উদ্দেশ্য যদি লোককল্যাণ হয় তবে তা! নিশ্চয়ই সমর্থনযৌগ্য বঙ্কিমচন্দ্রের যুক্তি মোটামুটিভাবে জনগণের সমর্থন পেয়েছিল এজন্যই | 'রাজসিংহে' ডাকাত মানিকলাল সপ্বপ্ষে সমালোচনা কিছু তিক্ঞতার স্থষ্টি করেছিল বলে বঙ্কিমচন্দ্র দুঃখ পেয়েছিলেন তবে যোগা সমর্থকর] তাঁকে উৎসাহ দিয়েছিলেন কোন সমালোচক বঙ্কিমচন্দ্রের সমর্থনে বলেছিলেন,

দন্দ্রশেখর বাবুতে এবং আমাতে একযোগে বলিলাম, মানিকলালের মত ছুই একটা ডাকাতের চিত্র দেশের সমুখে ধরিলে উপকার ভিন্ন অপকার হইবে না।”২৩ বাঙ্গালীর বাহুতে বল আর হৃদয়ে দেশভক্তি জাগানোর ন্মহতী ত্রত তিনি গ্রহণ করেছিলেন -_-তীর পক্ষেই ইতিহাসের স্থত্র ধরে এমন একটি অসবগ্ কল্পলোকের চিত্র উদ্ঘাটন করা সম্ভব ভবানীপাঠক দেবীরানীর চরিত্রে গীতোন্ত নিষাম কর্মের প্রসঙ্গ এমন নিপুণ ভাবে উপস্থাপিত করায় চরিত্র দু'টি বাস্তবক্ষেত্রের বু উর্ধেরেই বিরাজ করছে। যুক্তিবাদী ভবানীপঠিক তার উদ্দেশ্যকে এমন প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যাখ্যা করেছেন যে নিছক দহ্যতার দীনতা চরিব্রটিকে আর স্পর্শ করতে পারে না তার আগে অরাজতার ভয়াবহ চিত্র রচনা করেছেন বঙ্কিমচন্দ্র; যে ছুবিপাক বাঙ্গালী জীবনকে বিধ্বস্ত করেছিল, ভবানীপাঠক দেবীরাশীকে সে

২৬. প্রীপচন্ত মজুমদার, ব্ষিম প্রসঙ্গ, রাজসিংহ

৫৬৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম রা

চিত্রটিই তুলে ধরেছিলেন | “দেবী চৌধুরানী” উপন্তাসের ঘটনাফাল। ইংরেজ রাজত্বের শুরু মুসলমান রাজত্বের অবসান পর্ব

“মুসলমানের রাজ্য গিয়াছে, ইংরেজের রাজ্ক্য ভাল করিয়া পদ্তন হয় নাই হইতেছে মাত্র তাঁতে আবার বছর কত হইল, ছিয়াত্তরের মন্বস্তর দেশ ছারখার করিয়া গিয়শছে 1? [ ১ম খণ্ড, অষ্টম পরিচ্ছেদ ]

অংশটির এ্রতিহাসিক ভিত্তি রয়েছে--অরাজকতার পটভূমিকায় কল্পনার প্রেশস্ত ক্ষেত্রটি বঙ্কিমচন্দ্র ব্যবহীর করেছেন। ভবানীপাঠকও দেবীরানীকে বলেছিলেন,_ “এ দেশে রাজা নাই। মুসলমান লোপ পাইয়াছে। ইংরেজ সম্প্রতি ঢুকিতেছে ভাহারা রাজ্য শাসন করিতে জানেও না, করেও না। আমি ছুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন করি ।* [ ১ম খণ্ড, পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ ]

দেবীরানীর দীক্ষা ভবানীপাঠিকেরহ কাছে- কিন্তু ডাকাতির অপরাধ দেবীকে পীড়িত করত; স্ায়বোধের তাগিদেই দেবীরাঁনী নেতৃত্ব থেকে মুক্তি চেয়েছিল কিন্তু ভবানীপাঠক তকে সত্য চিনিয়েছেন,_

“দেশ অরাজক, দেশে রাজশীসন নাই, ছুষ্টের দমন নাই, যে যার পায়, কাঁড়িয়। খায়। আমরা তাই তোমায় রানী করিয়া রাজশাঁলন চালাইতেছি তোমার নামে আমরা ছুষ্টের দমন করি, শিষ্টের পালন করি। একি অধর্ম?

[ *য় খণ্ড, ১০ম পরিচ্ছেদ ]

ডাকাতির এমন মহিমা দেখানোর উদ্দেশ্টটি বোঝানোর জন্যই বারবার কৈফিয়ৎ দিতে হয়েছে লেখককে দেশত্রত পরহিতব্রত পৃথক বস্তু, কিন্ত দেশের দুর্দিনে, দেশের ছু:স্থ মানুষের মুক্তির জন্যই ধার? সাধনা করেন তার! একই সঙ্গে পরহিতত্রতী এবং দেশত্রতী। ত্বদেশপ্রেমিক বলেই বঙ্কিমচন্দ্র পরাধীন বাংলার বুকে দেশপ্রেমের যে ক্ষীণ প্রচেষ্টা লক্ষ্য করেছিলেন তাকেই উপন্তাসাকারে উপস্থিত করেছেন উদ্দেশ্যের সততায়, নির্তীকতায়, দৃঢ়তায় ভবানী পাঠক শ্রদ্ধেয় চরিত্ররূপে কল্পিত স্বাদেশিকতার জোয়ারে ইতিহাসের কলঙ্কিত অকর্মণ্য এতিহাসিক চরিত্রকেও যখন 48800109] 8৩:০-র আসনে বসানো সম্ভব তখন বস্কিমচন্দ্রেরে এই উদ্দেশ্যযুলক 'সদর্শচরিজ রচনাকে অভিনন্দন জানাতে হয়। স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাক মুহূর্তে আবিভূ্ত হয়েছিলেন বলেই বঙ্কিমচন্দ্র জাতীয় উপস্ভান লিখেছিলেন সাহিত্য সাময়িকতা এমনি এক অদৃশ্য স্থত্রে যুক্ত হয়ে যায়,--কোনে! শ্রষ্টাই এর হাত থেকে রেহাই পান না। সাহিত্য তাই লাঁমাজিক সাময়িকতার দলিল হয়ে থাকে অতীত ইতিহাসের আন্দোলন সমর্থন করে পক্ষান্তরে সমসাময়িক অভ্যুথানকেই যে সমর্থন করেছিলেন বক্ষিমচন্ত্র তা আর দুর্বোধ্য কিছু নয়। অতীতে বাঙ্গালীর

উপন্তাস ৫৬৯

বাহুবল ছিল, নিভকিতা ছিল, শক্তি সাহস ছিল বলে বর্তমানের বালী শুধু তার প্রশংসাই করেনি-_-এ্রতিহের অনুসরণ করে অতীত মহিমার প্রাণপ্রতিষ্তা করার চেষ্টাই সমগ্র জাতির চরিত্রে লক্ষ্য করি। “দেবী চৌধুরানীর” মত উপন্তাসের কিছু প্রভাব এর যূলে সব্িয়

দেবীচৌধুরানী উপন্যাসের দেবীরানী যে বিদ্রোহ পরিচালনা করেছিলেন তা অবশেষে ইংরেজেরই বিরোধিতায় পর্যবসিত গভীর জঞ্গলে একটি নারীর নেতৃত্বে যে সেনাদল শুধু আর্তের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলো! শাসক ইংরেজ তাদের দন করতে উদ্ধত হলে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম আসন্ন হল। বঙ্কিমচন্দ্র অন্তান্য উপন্তাঁসে ষে পদ্ধতিতে যুদ্ধ তার ফলাফল বর্ণনা করেছেন উপন্যাসে তার ব্যতিক্রম হয়নি সর্বজ্র একই নিয়মে বিরুদ্ধ শক্তির শোচনীয় পরাজয়ের বিস্তৃত কাহিনী বণিত হয়েছে এক্ষেত্রেও দেবীরানীকে বন্দী কর'র অভিধানে ব্যর্থ হয়ে ইংরেজ অধিনায়ক লেফটেনণ্ট, ব্রেনান্‌ দেবীরাঁনীর হাতে বন্দী হলেন। বস্কিমচন্দ্র প্রলঙ্গে লাঠি- বন্দনা করেছেন ; শক্তিমান বাঙ্গীলীর ছচাত অস্ত্র হিসেবে জাঠিই একদিন মুখরক্ষা-ধর্মরক্ষা করেছিল

"হায় লাঠি! তোমার দিন গিয়াছে! তুমি ছার বাঁশের বংশ বটে, কিন্তু শিক্ষিত হস্তে পড়িলে তুমি না পারিতে, এমন কাঙ্গ নাই। তুমি বাঙ্গালায় আক্র পর্দা রাখিতে, মান রাখিতে, ধান রাখিতে, ধন রাখিতে, জন রাখিতে, সবার মন রাখিতে মুসলমান তোমার ভয়ে ত্রস্ত ছিল, ডাকাইত তোমার জালায় ব্যন্ত ছিল, নীলকর তোমার ভয়ে নিরস্ত ছিল এখন তোমার সে মহিমা গিয়াছে

[ তৃতীয় খণ্ড, প্রথম পরিচ্ছেদ [

এই আক্ষেপ শুধু বীর্যহীন বাঙ্গীলীদের দুরবস্থা দেখে! আত্মরক্ষায় অক্ষম বাঙ্গালী অসহায়ভাবে পীড়িত হয়েছে, তবু সংঘবদ্ধ হয়নি, অত্যাচারের প্রতিবাদ করেনি, অভিজ্ঞতা বঙ্কিমচন্দ্রকে ছুঃখ দিয়েছে কোনো উপাঁয়ে যদি এই নির্জীব- অচেতন জাতিকে সচে&ট করা ধায়-__সেই চিন্তাই বঙ্কিমচন্্রকে নিরন্তর বিব্রত করেছে প্রবন্ধেই বনভাঁবে বাঙ্গালীর চারিত্রিক দূর্বলতা সম্পর্কে আলোচনা! করেছেন তিনি কিন্ত উপন্য1সেও সম্পূর্ণ নীরবত! পালন করা সম্ভব হয়নি তার পক্ষে। কোনো প্রসঙ্গে জাতীয় আলোচনার স্থত্রপাঁত হলে বস্িমচন্দ্র উপস্তাসের মধোই একটি উপদেশ- যূলক প্রবন্ধের স্থান করে নিয়েছেন বাঙ্গালীর অতীতমহিম1 কীর্তনে আশ্মহার। হয়ে বন্ছিমচন্দ্র 'দেবীচৌধুরানীতে, লাঠির ওপর একটি ক্ষুত্র নিবন্ধই রচনা করে ফেলেছেন অতীত মহিমার পুনরজ্জীবনের বিচিত্র আয়োজন করেছিলেন সেম্গের সমস্ত স্বদেশপ্রেমী লেখকেরাই ইতিহাস আলোচনায়, কল্পিত বীরত্ব কাহিনী

৫৭০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

পরিবেশন করে, উদ্দীপনাময়ী বক্তৃতা দিয়ে বাঙ্গালীর নির্জীব মনে প্রাণের সঞ্চার করার অনলস সাধনাই যুগের সমস্ত স্বদেশপ্রেমী লেখকের প্রধানতম কর্তব্য হয়ে ঈাড়িয়েছিল। বঙ্কিমচন্দ্র “দেবীচৌধুরানী”তে দেবীরানী চরিত্রের সমস্ত মাধূর্ষটুকু বঙ্জায় রেখেও তাকে ডাকাত দলের অধিনায়িকা রূপে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন বঙ্গললনাকে তিনি আঁকম্মিক পরিবেশে স্থাপন করলেও, আধ্যাত্মিকতার মন্ত্রে দীক্ষিত করলেও নারী চরিত্রের স্বাভাবিক মোহজয় করেনি সে। স্তরাঁং ভবানী পাঠক চালিত চরিত্রটির মধ্যে সত্যিকারের কোনে! পৃথক দেশচেতনা কোথাও দেখতে পাই না। সংগঠকরূপে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ভবানীপাঠক স্বয়ং, তাকেও ঠিক দেশসেবী বলা ধায় না। সত্যানন্দের মধ্যে দেশচেতনার প্রচণ্ড আবেগ লক্ষ্য করেছি কিন্তু ভবানীপাঠক কর্মফলত্যাগী গীতোক্ত এক মহাঁমানব। তাকে এযুগের লেখক বঙ্কিমচন্দ্র ঠিক অবতার বলেও প্রমাণ করতে চাননি অথচ সমস্ত বৈষয়িকতার উর্ধ্বে ভবাঁনীপাঠক ঠিক পরিভ্রাতার দায়িত্ব পালনের জন্যই অবতীর্ণ হয়েছেন যেন প্রফুল্পকে তিনি যে ধর্মে দীক্ষা দিয়ে ছিব

থাকেন শুধু পীড়িত__অত্যাঢারিত-সর্ৃহার! মানবসন্তানের রক্ষার জন্যই এমন একটি অসাধু পন্থা অবলম্বন করতে হয়েছিল তাঁকে দেশের ছুঃখে বিচলিত হয়েছিলেন বলেই শক্তিধারণ অস্ত্র-প্রয়োগের প্রয়োজন হয়েছিল তার ভবানীপাঠক কৃতকর্ম পালন করে স্বেচ্ছায় দ্বীপান্তরে গেলেন দৃষ্টান্তটি স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র পন্থান্ছসারীদের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় বলে বিবেচিত হওয়াটাই স্বাভাবিক পরবর্তীকালে জাতীয় ঘটনার উল্লেখযোগ্য বিবরণ স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে স্থান পেয়েছে-_হুতরাং বঙ্কিমচন্দ্র ক্ষেত্রেও পরোক্ষভাবে দেশসেবার একটি জলন্ত চিত্রই অঙ্কন করেছিলেন। তাছাড়া সনাতন ভারতীয় আদর্শের বাণী তাঁর সমস্ত বক্তব্যকেই গান্তীর্য দান করেছে দেশসেবার মধ্যেই ব্যক্তিগত স্বার্থচেতনার পূর্ণ- বিলুপ্তি ঘটেছে ভবানীপাঠক এঁতিহাপিক চরিত্র,--কিস্ত উপন্তাসের ভবাঁনীপাঠক বস্কিমচন্দ্রের অভিনব সৃষ্টি বঙ্কিমচন্দ্রের দেশপ্রেমিকতাঁর সমন্বয়ে চরিত্র, অনবহ্য হয়েছে

“দেবী চৌধুরাঁনী” উপগ্াঁসের লক্ষ্যণীয় আর একটি দিক রয়েছে মানবী' প্রফুল্পকে দেবীরানীতে রূপান্তরিত করার যে নিখু'ত পদ্ধতির বর্ণনা আছে-_ভবানী- পাঠক নির্দেশক হলেও বঙ্কিমচন্দ্রই এর উদ্ভাবক। কঠোর আত্মসংযম নিয়মণিষ্ঠার মধ্যেই মানসিক শারীরিক শক্তির স্ফুরণ সম্ভব | ভবানী পাঠকের রানী তৈরীয় পদ্ধতিটি একটি নিখু'ত পন্ধতি বলেই গণ্য হবে। শক্তি সামধ্য জন্মগত গুণ না হলেও এভাবে তা অর্জন করা সম্ভব। প্রফুলের মত নিতান্তই গ্রাম্য-অশিক্ষিতা-স্বভাব-

উপন্যাস ৫৭১,

কোমল নারীর পক্ষে যদি শিক্ষ] স্বফল প্রসব করে থাকে তবে অধিক মনোবল- সম্পন্ন পুরুষের পক্ষে তা৷ যে কার্ধকরী হবেই ইঙ্গিতটুকু সহঞ্জেই বোঝা যায় 'আনন্দমঠ ও" "দেবী চৌধুরানী” উপন্যাসে বস্কিমচন্দ্র স্থকৌশলে যুগোপযোগী বক্তব্যগুলিই পরিবেশন করেছিলেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম স্তরে নির্ভীক দেশপ্রেমী সৃষ্টি করার এমন তাগিদ অনেকেই অনুভব করেছিলেন স্ত্রী-পুরুষ নিধিশেষে দৈহিক শক্তি মানসিক দৃঢ়তা অর্জন করার উপদেশটি সেকারণেই মূল্যবান! উত্তর বাংলীর নিবিড় অরণ্যে ভবাঁনীপাঠক এমনি নিখুত পদ্ধতিতে ভাবী উত্তরাধিকারী হৃষ্টিরি আয়োজন করেছিলেন-_-এ ভাবাও যায় না;কিস্ত উনবিংশ শতাব্দীর শেষপাদে মুক্তির আকাজ্ষীয় উৎকণ্ঠিত ভাঁরতবাঁপী শক্তি সামর্থ্য অর্জনের চেষ্টা করেছিল-তা আমরা জানি। বঙ্কিমচন্দ্র একালের আকাকঙ্াকে যুগের পরিবেশে স্থাপন করার অস্বিধে চিন্তা করেছিলেন- সেজন্ুই অতীতযুগের বাংলায় কাহিনীর পরিকল্পনা করতে হল তীকে সর্বত্রই বন্কিমচন্ত্র যুগোপযোগী ভাবধারার বিশদ বিশ্লেষণ করেছেন দেকীরাঁনী ভবাবীপাঠকের নির্দেশ পালন করেছে মাত্র কিন্তু দেশচেতনার কোন আবেগ চরিত্রে ছিল না। হতরাং উপন্যাসের নায়িকাচরিত্রে স্বদেশচিন্তার কোন প্রতিফলন নেই দেশপ্রেমের মহৎ প্রেরণ] শুধু ভবানীপাঠক চরিত্রেই লক্ষ্য করা যায় বন্কিমচন্দ্রের সর্বশেষ উপন্তাঁস সীতারামেও স্বদেশচিন্তার প্রতিফলন খুব প্পষ্ট। শেষ পর্বের ত্রয়ী উপন্যাসেই বস্কিমচন্দ্রের জীবন দর্শনের প্রভাব অত্যন্ত গভীর দেশচিন্তা জাতির মঙ্গল কামনা বঙ্কিম মনীষার একটি লক্ষ্যণীয় দিক। “আনন্দমঠ* “দেবী চৌধুরানীতে, ভাবী আন্দোলনের খসড়া রচনা করেছিলেন তিনি অত্যন্ত কৌশলে তীর সর্বশেষ উপন্াঁসে বাঙ্গীলী ভূত্বামী সীতারান রায়ের স্বাধীন, রাজ্যস্থাপনের আকাজ্ষা তার শোঁচনীয় ব্যর্থতার কাহিনী পরিবেশিত হয়েছে দৃষ্টান্ত “ম্ণালিনীতেই' পেয়েছি আমরা-_সীতারামে তাঁর পুনরাবৃত্তি হয়েছে বলা চলে। . শবে সীতারামের কীরত্ব, দেশপ্রাণতার প্রসঙ্গ আরও উজ্জল আশাপ্রদ | স্বাধীন রাজ্য স্থাপনের বাঁসনাকে রূপ দেবার সমস্ত আয়োজন প্রায় সম্পূর্ণ করেছিলেন তিবি;-ত্তীর দুর্বলতা ঠিক হেমচন্রের মত ছিল না। কিন্তু উভয়ের ব্যর্থতার মূল কারণ এক সীতারাম এতিহাসিক ব্যক্তি, মৌঘলের বিরুদ্ধে শক্তিসঞ্চয় করে স্বাধীন হবার প্রচেষ্টা তীকে জনপ্রিয় করেছিল। অঞ্চলের আরও একস ভূস্বামী প্রতাপাদদিত্যও ঠিক এই চেষ্টা করেছিলেন প্রতাপাদিত্য জাঁতীয় আন্দোলনের যুগে জাতীয় বীরের মর্যাদায় ভূষিত হয়েছিলেন জাতীয় আন্দোলনের প্রেরণী' হিসেবে স্বদেশপ্রেমিক সাহিত্যিকের কল্পনীয় এসব চিত্র নবজ্জীবন লাভ করেছিল।

৫খ২ উনবিংশ শতান্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

বঙ্নিষচন্দ্র এ্রতিহাসিকত্ব বজায় রেখেই চরিত্রটি অঙ্গন করেছিলেন কিন্তু শুধু ইতিহাসের বিবরণ দেওয়া! বঙ্বিমচন্দ্রের উদ্দেশ্য ছিল না। স্বদেশপ্রেমী জাতীয়তাবাদী বঙ্কিমচন্দ্রের আদর্শের ছায়ায় চরিত্রটির মর্যাদা বেড়েছে। প্রসঙ্গে কোন সমালোচক 'সীতারামের' আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছেন, |

"সীতারাম যেভাবে রাজ্যস্থাপন করেছেন তা! ইত্তিহাসসম্মত, কিন্তু বঙ্িমচন্্র তথ্যকে এমন কৌশলে বর্ণনা করেছেন যে ইতিহাস আর ইতিহাস থাঁকেনি, তা একটা জাতীয় অভ্যুত্থানের মহিমা পেয়েছে 1৮২৭

এই মহিমাটুকুই বস্ষিমচন্দ্রের নিজন্ব সৃষ্টি জাতীয় অভ্যুত্থানের লগ্মে আপন শক্তিতে রাজ্যস্থাপনের এমন একটি সং্প্রচেষ্টাকে জনগণ যে অভিপন্দিত করবে-_ বঙ্কিমচন্দ্র তা জানতেন | সেদিক থেকে সীতারামের চরিত্র নির্বাচন করে বঙ্গিমন্ত্র দুরদগ্সিতাঁর পরিচয় দিয়েছেন উপন্যাসের প্রারস্তেই সীতারামের নির্ভীক হুদয়ের উজ্জ্বল চিত্রটি তুলে ধরেছেন বন্ধিমচন্দ্র। প্রজারক্ষণে, গ্থায়প্রতিষ্ঠায় অভীক সীতারাম আত্মদীন করেও আদর্শরক্ষা করতে চেয়েছে। গগ্ধারামের উদ্ধার কল্পে সীতারাম বলেছে,

"ও আমার যেই হৌক, আমি উহার প্রাণদানে স্বীরুত--আমি সর্বস্ব দিয়া উহার প্রাণ রাখিব এই আমাদের হিন্দুর ধর্ম।” [ ১ম খণ্ড, চতুর্থ পরিচ্ছেদ |

চারিত্রিক এই দৃঁতাই সীতারামকে প্রচণ্ড শক্তি দিয়েছিল, সামান্ত ভূম্বামী হয়েও সীতারাঁম যে স্বাধীন রাজ্যস্থাপন করতে পেরেছিল তার কারণটি প্রথমেই ব্যাখ্যা করেছেন তিনি সীতারামের সাফল্যের যূলে তার অদম্য সাহস মনোবলই সক্রিয়। অবশ্য গঙ্গীরামের জন্য আত্মদদানে উদ্মুখ সীতারামকে প্রত্যক্ষ প্রেরণা দান করেছিল শ্রু। বঙ্কিমচন্্র শ্রীর মুখে একটি মূল্যবান উক্তি আরোপ করেছেন, “হিন্দুকে হিন্দু না রাখিলে কে রাখিবে 1*-বঙ্কিমসাহিত্যের প্রবাঁদতুল্য উক্তির মধ্যে এটি অন্যতম | স্বাক্াত্যপ্রেমের প্রেরণা এমন একটি ইঙ্গিতপূর্ণ উক্তির মধ্যেই প্রকাশ করেছিলেন বঙ্ষিমচন্্র নতুবা প্রীর চেতনায় এটি ঠিক স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়েছিল বলে মনে হয় না। স্বামী পরিত্যক্ত ভ্রাতৃগৃহে পাঁলিতা এই নির্যাতিতা নারী আকন্মিকষ আঘাতে জীবনের এই সত্যটি আবিষ্কার করেছে যেন হঠাৎ। সীতারামের অনুগ্রহলাভের আকাঁজ্ষায় শ্রী তার স্বামী সীতারামের সাহায্য চাঁয়নি,-আর্তরক্ষার ক্ষমতা যার হাতে সেই সীতারামের সাহায্য প্রার্থনা করেছে। দুর্বলকে রক্ষা করতে পারে শক্তিমানই,_কিন্ত স্বর্জাতিশ্রীতিই যে একমাত্র

২৭. বিজিতকুমার দত্ব, বাংল! সাহিত্যে এতিহাসিক উপন্যাস, বঙ্কিমচন্দ্র, ১৯৬৩

উপস্তাস ৫৭৩

রক্ষাকবচ, দুরদশিতায় আপাত: অভিজ্ঞতায় একথা বুঝতে : পেরেছিলো শ্রী পরোক্ষে বঙ্কিমচন্দ্র সমস্ত নির্যাতিতকে সম্মিলিত হবার মন্ত্রে দীক্ষিত করতে চাইছেন এখানে | এখানে ধর্মীয় চেতনার প্রসঙ্গটিই বডে] কথা নয়। যদিও পরিবেশে ধর্মীয় চেতন] জাগাটাই সম্ভব ছিল। কিন্তু উনবিংশ শতাববীর নবজাগরণ লগ্ে জাতীয়তাবাদ সমস্ত ধর্মীয় সংকীর্ণতাঁর উর্ধ্বে বিরাঁজিত একটি মহৎ উপলব্ধি দেশোদ্ধারের আদর্শে ধারা নিবেদিতপ্রীণ তাদের কাছে বঙ্কিমচন্দ্র তার বক্তব্যটি যথাযথ ভাবে পৌছে দিতে পেরেছিলেন বলেই আমাদের ধারণা ইতিহাসের কাহিনীতে এই জাতীয় ধর্মীয় চেতনা থাকাটাই স্বাভাবিক-_কারণ ধর্মের ভিত্তিই সেদিন সমাজের সব চেয়ে বড়ো! শক্তি ছিল। ধর্মের নামেই মানুষ সেদিন মিনিত-একত্রিত সংঘবদ্ধ হয়েছে। উনবিংশ শতাব্দীর ধর্মসংস্কারবিচ্ছিন্ন দেশাত্মবোধের প্রসঙ্গ প্রাচীন ইতিহাসে স্থাপন করলে বেমীনাঁন হোত। বঙ্কিমচন্দ্র তাই ইতিহাসতিত্তিক বীরত্ব ত্যাগের কাহিনী পরিবেশনের সময়ে ধর্ষচেতনাীকে একেবারে বাদ দিতে, পারেননি সীতারামে যে সংঘাত চিত্র পাই তাতে হিন্দু জাতীয়তারই উদ্বোধন দেখতে পাই,__যা ইতিহাস সম্মতসত্য | শ্রী রণরঙ্গিনী মৃতিতে উৎসাহ দিয়েছে”

মার! মার! শক্র মার 1'*'দেবতার শত্র, মানুষের শক্র, হিন্দুর শক্র, আমার শক্র--মার | শক্র মার [ ১ম খণ্ড, চতুর্থ পরিচ্ছেদ ]

ধর্মই সর্ববিপদ্দ থেকে রক্ষা করবে,__এই বিশ্বাস সেদিন মানুষের মনে দৃঢ় ছিল। তাই দেখি, রাজ্যজয়ের উন্মাদনাতেও ধর্মচেতন। বিস্বৃত হোত না সেদিনের মানুষ বখতিয়ার পশুপতিকে বন্দী করে প্রথমেই প্রস্তাব করে ছিল,

*আমাদিগের পুরোহিত উপস্থিত, এখনই আপনাকে ইসলামের ধর্মে দীক্ষিত করিবেন [ স্বণালিনী ]

আঁর সে কারণে ধর্ষকে রক্ষা করার জন্যই ইতিহাসের মানুষর] প্রাণ দিতে উদ্ভত হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য যে জাগরণ উনবিংশ শতাব্দীতেই এঞথম দেখতে পাই, সেখানে ধর্মের পরিবর্তে দেশকেই স্থাপন করা হয়েছে, বঙ্কিমচন্দ্র “আনন্বমঠেই” বিষয়টি স্পই করেছেন সর্বধর্মের ওপরে দেশ, দেশকে বিদেশী শাসন থেকে মুক্ত করার জন্য সমস্ত কিছুই ত্যাগ করা সম্ভব - সেই ত্রতেই সন্তানদের উৎসাহিত করেছেন শ্বামী সত্যানন্দ। 'দীতারামে' হিন্দু জাতীয়তা স্থাপনের প্রসঙ্গটি স্বদেশ- চেতনার দ্বারাই পরিকল্পিত | ধর্মান্ধতা এর মুলে নেই। বহ্কিমচন্দ্রের দেশচর্চার শ্বরূপ আবিফার করলে সত্য স্পষ্ট হবে। স্বর্বাতিপ্রেমিক সীতারামের মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্র একজন ম্বদেশপ্রেমিককেই আবিষ্কার করতে চেয়েছিলেন

গঙারামের রক্ষাব্যাপারে মুসলমানদের সঙ্গে অযথা বিরোধ ৃঠরির কোন ইচ্ছা,

?৭৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহত্যে স্বদেশপ্রেম

ছিল না সীতারামের। কিন্ত মুসলমানের দৌরাস্ম্যের হাত থেকে স্বজন দ্বধর্মরক্ষার জন্য জাতীয় বিরোধের প্রয়োজনীয়তাও ছিল। লেখক অংশটিতে 'সীতারামের দূরদশিতাঁর বর্ণনা দিয়েছেন,

"সীতারামের এমন ইচ্ছা ছিল যে, যদি বিনা বিবাদে ঙ্গারামের উদ্ধার হয় তবে আর তাহার প্রয়োজন নাই তবে বিবাদ হয় মন্দ নয়, মুসলমানের দৌরাত্ম্য বড় 'বেশী হইয়] উঠিয়াছে, কিছু দমন হওয়! ভাল ।” [ ১ম খণ্ড, নবম পরিচ্ছেদ ]

অংশে সীতারাঁমের চরিত্রে প্রজাপালনের মহত্ব দেখ৷ যাঁয়--কিস্তু জাতীয় আবেগের নাম দেশপ্রেম নয় সীতারামকে দেশপ্রেমষিকরূপে প্রতিষ্ঠিত করার প্রধান বাধা ছিল-_ইতিহাঁসের সত্য। বঙ্কিমচন্দ্র ইতিহাসের সত্য রক্ষা করেছিলেন বলেই সীতাঁরামকে দেশপ্রেমিক বলে প্রতিষ্ঠা দিতে পারেন নি। সীতারাম আত্মরক্ষার্থ সৈম্সংগ্রহ পুরী সংরক্ষিত করেছিলেন, দেশপ্রেমের মূলে আত্মত্যাগের ব্যঞ্জনাটিই এখানে অঙ্ুপস্থিত সীভারামের চরিত্র আগাগোড়া বিষ্লেষণ করলে ধারণা আরও দুঢ় হবে স্বীয় শক্তিতে স্বাধীন হিন্দু রাজত্ব স্থাপনের যে আয়োজন সম্পূর্ণ করেছিলেন-_-সীতারাম, নিছক ব্যক্তিগত ব্যর্থতার ক্ষোভে তিনি নিজেই তা বিনষ্ট করেছিলেন রূপমোহের পরিণাম ব্যাধ্যাঁয় বঙ্কিমচন্ত্র উপগ্তাসে যথেষ্ট ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন,_-কিস্ত স্বাধীনতাকামী সীতারামের এই ছুর্গতির চিত্র বহ্কিমচন্দ্রের দেশাদর্শের ছকে পড়েনি শিল্পী বঙ্কিমের অসাধারণ প্রতিভা এখানে আদর্শবাঁদী বঙ্কিমচন্দ্রকে ঢেকে ফেলেছে। সীতারামের অভ্যুদয়ে হিন্দুশক্তির পুনরুজ্জীবনের আশা সীতার1মের পতনের সঙ্গে স্গেই বিলুপ্ত হয়েছে উপন্যাসের বক্তব্যের সঙ্গে আদর্শবাঁদের বিচ্ছেদ বঙ্ষিমচন্দ্রের অন্তান্ত উপস্যাসেও বর্তমান কিন্তু সর্বশেষ উপন্তাসটিতেই আত্মজাগরণ উন্মুখ জাতির সামনে তিনি একটি মানবচরিত্রের শোচনীয় পরিণাম চিত্র তুলে ধরেছিলেন | প্রসঙ্গে কোন সমালোচকের বক্তব্য,_-

"যদিও “আনন্দমঠের” উপসংহারে বলা হইয়াছে, বিসঙ্জন আসিয়। প্রতিষ্ঠাকে লইয়া গেল, কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্রেরে এই শেষ তিনখানি উপন্যাঁন তুলনা করিলে মনে হয়, আনন্দমঠ দেবীচৌধুরানীতে প্রতিষ্ঠাই আছে, বিসর্জনের চিত্র শীতারামে . দেওয়া হইয়াছে 1৮২৮

“সীতারামে' স্বদেশপ্রেমিক বঙ্কিমচন্দ্রের পরিচয় সীতারামের হিন্দুরাজত্ব স্থাপনের বর্ণনা প্রসঙ্গে খানিকটা উচ্ছৃসিত হয়েছে মুসলমান বিতাড়ন করে হিন্দুরাজন্ব স্থাপনের প্রয়াস অভিনন্দনযোগ্য সন্দেহ নেই-_কিন্তু উপস্তাসে স্বল্নক্ষণের জন্যই তা

২৮, সবক দতগুপ্ত, বছ্িমচত্্র। ১৩২৭, পৃ:-৩৪৫1

উপগ্ভাস ৫৭৫

সম্ভব হয়েছিল। সে স্বাধীনতাম্পৃহা বিনষ্ট হয়ে গেছে--সীতারামের অমনোযোগিতার ফলে। বিষয়টি হিন্দুব্যক্তিত্বের ছুর্বলতাকেই হুচিত করছে,-সীতারামকে হিন্দু- শক্তির প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেছেন কিন্তু হিন্দুশক্তির ভিতি যে কত ছূর্বল তাও প্রমাণ করেছেন বঙ্কিম সব মিলিয়ে উপন্যাসিক যে নিরপেক্ষ আত্মলমালোচনাই করতে চেয়েছিলেন,--তা৷ সন্দেহাতীত সত্য | বাঙ্গালীর চরিত্রে আবেগ আছে,_-শক্তি আছে, কিন্ত আবেগের মাত্রীধিক্যে দুর্বলতাই প্রকট হয়ে উঠেছে, সত্যটি বঙ্কিমচন্দ্র দ্বিধাহীনভাবে ঘোঁষণা করেছেন তাই এতিহাঁসিক প্রচেষ্টাকেও সাফল্যের গৌরব অর্পণ করেননি কোথাও | উনবিংশ শতাব্দীর নব জাগরণে বাঙ্গালীর চরিত্রশোধনের দায়িত্ব যে কজন সাহিত্যিক গ্রহণ করেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র তীদের পুরোভাগে ছিলেন 'বঙ্ছদর্শনে' নির্মম সমালোচনার আঘাতে জর্জরিত করেছিলেন বাঞ্গালীকে কারণ সমস্ত সাহিত্যরঘীরাই যখন অতীতের এতিহের প্রসঙ্গ বর্ণনা করে তান দ্বারাই প্রেরণাসঞ্চারের চেষ্টা করছিলেন -বঙ্কিমচন্দ্র অতীতমুগ্ধতারও সমালোচনা করেছেন। আমাদের অতীত এতিহা যে নিবিচারে গ্রহণযোগ্য নয়, নবজাগরণে উদ্দদ্ধ বাঙ্থালীকে ব্যাপারে সচেতন করা দরকার | বঙ্কিমচন্দ্রের স্বদেশচেতন। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের চিত্রটিই কল্পনা করেছে,__পরাধীনতার মর্ষজালার অভিজ্ঞতার হাঁত থেকে মুক্তির বাসনাই ছিলো তাঁর প্রাথিত বস্ত। কিন্তু সেই ঈপ্দিত স্বাধীনতালাভের যোগ্যত। যে তখনও অর্জিত হয়নি-সে সত্য দুরদর্শী বঙ্কিমচন্দ্র বুঝেছিলেন। জাতির চরিত্রে ছুর্বলতার অবসান ন! ঘটলে শুধু উচ্ছ্বাস বা সাময়িক আবেগে স্বাধীনতার মত যূল্যবান সম্পদ যে আহত হতে পারে ন| সে সত্যটি হুদয়ঙ্গম করার দিন এসেছে, _বন্ধিমচন্দ্র সে কথা বোঝাতে চেয়েছিলেন। তাই তার উপন্যাসে বাঙ্গালীর অতীত শৌর্ষবীর্যের চিত্র আছে বটে কিন্তু দুর্বলতার রন্ধপথে নিক্ষল হতাঁশার কথা কোথাও অস্পষ্ট নেই। সীতারামের পতনের চিত্রটি সেই কথাই মনে পড়িয়ে দেয়

তথাপি সে যুগের রাঁজশক্তির উদ্যত দস্তকে অগ্রাহ করে একজন স্বাধীনমন। ভৃষ্বামীর ক্ষণিক জাগরণের বর্ণনা সে যুগের মান্ষের কাঁছে একটি লক্ষ্যণীয় বিষয় বলে পরিগণিত হয়েছিল সীতারাম জনপ্রিয় নায়ক, এই বিষয় অবলম্বন করেছিলেন বলে বঙ্কিমচন্দ্র জনপ্রিয়তাঁও বৃদ্ধি পেয়েছিলো বিশেষতঃ “আনন্দমঠের' মতো স্বদেশপ্রেমসর্বস্ব রচনার পরে স্বাধীন নৃপতি সীতারামের কাহিনী নির্বাচন করে বন্ধিমচন্দ্র সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন

অন্তান্য উপন্তাসের মত “সীতারাম' উপন্তাসেও বঙ্ধিমচন্তর আকনম্মিকভাবে আত্মপ্রকাশ করেছেন হিন্দুমহিমার উদ্ছৃসিত বর্ণনা প্রসঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্র হিনুস্থাপত্যের ধশ্বর্ষের ব্যাখ্যা করেছেন, _তুলন৷ করেছেন বর্তমানের অধঃপতনের সঙ্গে আমাদের

€৭৬ উনবিংশ শতাবীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

নিজন্ব এখ্বর্যকে অবহেলা করে অন্যের সম্পদকে বাহব! দিই আমরা, -আত্মবিস্মত অধঃপতিত বাঙ্গালীর এই প্রবণতাঁকে ধিক্কার দিয়েছেন বঙ্কিমচন্দ্র “বজদর্শনে' বঞ্কিমচন্দ্রের আত্মদর্শনের পরিচয় পেয়েছি, সমালোচক বঙ্কিমচন্দ্র “সীতারাম' উপন্যাসে এভাবেই আত্মসমালোচনা করেছেন শুধু শ্রীর মুখে এই আলোচনাটি খানিকট। অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়েছে বর্তমানের বাঙ্গালীর নিরুদ্ধিতাকে নিন্দা করতে গিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন,__

"হায়, এখন কি না হিন্দুকে ইগ্ডাস্রিয়ল স্কুলে পুতুল গড়া শিখিতে হয় কুমারসম্ভব ছাড়িয়। স্থইনবর্ণ পড়ি, গীতা ছাড়িয়া মিল পড়ি, আর উড়িস্যার প্রস্তর শিল্প ছাড়িয়া সাহেবদের টিনের পুতুল ই! করিয়। দেখি। আরও কি কপালে আছে বলিতে পারি না।

এই সকল স্ত্রীমৃতি যার] গড়িয়াছে, তার! কি হিন্দু? তখন হিন্দুকে মনে পড়িল। তখন মনে পড়িল, উপ নষদ, গীতা, রামায়ণ, মহাভারত, কুমারসম্ভব, শকুত্তলা, পাঁণিনি, কাত্যায়ন, সাংখ্য, পাতঞ্জল, বেদীত্ত, বৈশেষিক, এসকলহ হিন্দুর কীতি-এ পুতুল কোন ছার! তখন মনে করিলাম, হিন্দুকুলে জন্মগ্রহণ করিয়া জন্ম সার্থক করিয়াছি ।” | ১ম খণ্ড, ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ ]

বঙ্ধিমচন্দ্রের স্বদেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দেশকে ভালবাসার প্রবণতা মানুষের সহজাত কিন্তু সে ভালবাসাকে সোচ্চার রবে ঘোষণ। করার প্রয়োজন হয় সেই যুগেই যখন জড়ত্ব এসে গ্রাস করে মানুষের স্বাভাবিক ক্ষমতাকে উনবিংশ শতাব্দীর কবির! ঘত ভাবে দেশঠেমের কথা বলেছেন প্রাচীন কবিরা কিংব] প্রত্যক্ষ বর্তমানের কবিরা ঠিক সেভাবে বলেন না_বলেননি হয়ত প্রয়োজন ফুরিয়েছিল বা প্রয়োজন নেই বলে। জড়তা থেকে মুক্তির অভিযানে যেদিন সমগ্র বাংলাদেশ বাঙ্গালী সংঘবদ্ধ হয়েছিল-_নবজা গ্রত সেই অন্ুভবকে নান। ভাবে প্রকাশের ব্যাকুলতা সে যুগের মানুষের মধ্যেই দেখেছি। রবীন্দ্রনাথ কিংবা সত্যেন্দ্রনাথ কিংবা দ্বিজেন্দ্রলাল বঙ্গজননীর বন্দনায় মেতে উঠেছিলেন --সে প্রয়োজন আজকের কবিরা নতুন &করে অন্থভব করেন না। বঙ্কিমচন্দ্রের উচ্ছ্বাসের ভাষাটিই একটু হেরফের করলে রবীন্দ্রনাথের “সার্ক জন্ম আমার জন্মেছি এই দেশে”"র আবেগে এসে পৌছে বাব &আমর]1| উপস্ভাস লিখতে বসেও পরিবেশ ঘটন। সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে দেশপ্রেমের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করাট। বঙ্কিমযুগেরই বৈশিষ্ট্য সীতারাঁমের রাজ্যধ্বংসের বর্ণনায় স্তব্ধবাঁক বস্কিমচন্ত্র শ্রীর মুখেই সীতারামের সমালোচনা করেছেন,

“ছি! ছি! মহারাজ! এই জন্য কি হিন্দুসাত্রান্্য স্থাপিত করিতে প্রবৃত হইয়াছিলে ! আমার কাছে হিন্দু সাম্রাজ্য খাটে হইয়া গেল, ধর্ম গেল, আমিই সব হইলাম! এই কিরাজ] সীতারাম রায়?” [ ওয় খণ্ড, দশম পরিচ্ছেদ ]

উপচ্ভাস ৫থণ

কাহিনীতে ব্যক্তিগত দুর্বলতার অপূর্ব বর্ণনা আছে কিন্ত স্বাধীনতা বিপর্জনের বেদনায় মুহমান বঙ্কিমচন্দ্র সীতারামের অসাফল্যের বিশদ বর্ণনা দেননি ইতিহাসে প্রতিষ্ঠার বর্ণশ! নেই, বঙ্কিমচন্দ্রও সীতারামের বিসর্জনের বিবরণ দিয়েছেন |

বঙ্কিমচন্দ্রের সমসাময়িক উপন্তাসিক হিসেবে রমেশচন্দ্র দত্তের রচনায় দেশপ্রেমের যে স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ দেখা যাঁয়--অগ্থত্র তা দুর্ভ। রমেশচন্দ্রের উপন্তাস রচনার মূলে ছিল দেশপ্রেমেরই আন্তরপ্রেরণা, কিন্তু প্রকাশের আকুলতা থাঁকলেও সহজাত কু্ঠাীবোধ বিনয় তাঁর প্রতিভাকে দমিত করেছিলে উচ্চশিক্ষিত রমেশচন্দ্ উদার চিত্তাধার। উদ্বেলিত দেশপ্রেম লাভ করেছিলেন নিতান্তই আপন!মানসিকতার শক্তিতে দেশসেবাকে পবিভ্রতম কর্তব্য হিসেবেই বেছে নিয়েছিলেন রমেশচন্দ্র। বঙ্কিমচন্দ্রের সঙ্গে রমেশচন্দ্রের এখানেই গভীর সাদৃশ্য আত্মপ্রকাশকুখ রমেশচন্দর বঙ্কিমচন্দ্রের সন্গেহ প্রেরণায় কত সহজেই যে উচ্ছুসিত হয়ে উঠেছিলেন-__তার প্রমাঁণ তাঁর উপন্যাস রচনায় ধরা পড়েছে ইতিহাসপ্রেমিক রমেশচন্দ্র বঙ্কিমের উপদেশ নিজের গভীর দেশাঙ্ছরাগ সম্বল করেই বাংলা উপন্যাস রচনায় হাত দিয়েছিলেন বঙ্কিম প্রদশিত ফধ্বপথ অনুসরণ করে ইতিহাসাশ্রিত দেশাহ্বরাগ কাহিনী রচনা করেছিলেন রমেশচন্ত্র। আত্মানুসন্ধানের শ্রেষ্ঠ পথ হিসেবে ইতিহাসের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যে সর্বদাই বিশেষ প্রেরপাসঞ্চারী সত্যে বিশ্বাস করতেন উভয় লেখকই। বস্কিমচন্দ্রের মত রমেশচন্দ্রও দেশানুরাগের অন্যতম পন্থা অনুসন্ধান না করে ইতিহাসের অতীত পটভূমিকীয় কাল্পনিক চরিত্র স্বজন করে দেশকথা দেশ প্রেমবৃত্তান্ত ব্যাখ্যা করেছেন বঙ্কিমচন্দ্রের ম্ণালিনীর” আদর্শই রমেশচন্দ্রের উপন্যাসের প্রেরণা ছিল-_ সহজেই তা বোঝা যায়। পাশ্চাত্ত্যশিক্ষা বঙ্কিমচন্দ্রেরে আত্মমর্যাদীবোধ দেশপ্রেম জাগিয়েছিল, রমেশচন্দ্রও উচ্চশিক্ষা লাভ করে নতুন আলোকে দেশের ভবিষ্যৎ বর্তমান নিয়ে গবেষণ। করেছেন উভয়েই বঙ্গমাতাঁর সার্থক সন্তান শিক্ষা, কৌলিন্ প্রতিভাকে এর! দেশসেবাঁর পবিত্র কর্মে নিয়োগ করেছিলেন

বঙ্কিমচন্দ্র শিক্ষিত বাঙ্গালীর দৃষ্টির অন্ধতা মোচনের জন্য আমরণ ব্রত গ্রহণ করেছিলেন,__উপন্তাসে-সমালোচনায্র-ব্যঙ্গরচনায় বাঙ্গীলীর জড়ত্বনাশের নিখুত আয়োজন করেছিলেন তিনি কিন্তু রমেশচন্দ্রের হ্বদেশচর্চার আড়ম্বর ছিল না, শুধু নিভৃত দেশসাঁধকের মত দেশের প্রতি অগাধ ভালবাসায় তিনি আচ্ছন্ন হয়েছিলেন তাই বস্কিমের প্রচণ্ড স্বদেশল্রীতির উন্মাদ আবেগের পাশে রমেশচন্দ্রের দেশসাধনাকে খুব শান্ত স্ভিমিত বলেই মনে হয়। কিন্তু গভীরতা তাতে বিন্দুমাত্র কম ছিল না। জীবনের নানা কর্মে জটিলতার নানা আবর্তে রমেশচন্দ্রের দেশক্রীতির একটি স্বঙ্ছন্ প্রবাহিত শীল্ত-ষিগ্ধরূপ সর্বত্রই লক্ষ্য করা বায়। বিদেশে

ভগ

৫৭৮ উনবিংশ শতাবীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশ প্রেম

শিক্ষা প্রাপ্ত, ধনে-মাঁনে-গৌরবে-মর্যাদায় শীর্যাননে অবস্থান করেও, রাজকর্মের দায়িত্ব পালন করেও, রমেশচন্দ্র দেশ জাতির প্রতি তার কর্তব্য মুহুর্তের জন্যও. ভোলেননি। স্বদেশচিস্তা যে মানুষের ধ্যান--রমেশচন্দ্র সেই জাতীয় মানুষ ছিলেন স্থতরাং বাংল! সাহিত্যে লেখকরূপে আত্মপ্রকাঁশের সঙ্গে সঙ্গে দেশপ্রেমিক রমেশচন্দ্রের পরিচয় পেতে আমাদের কোনে অস্থবিধে হয় ন। ; উচ্চশিক্ষা বিদেশভ্রমণের অভিজ্ঞতা তার দেশভক্তিকে আরও গাঢ় করেছিল। রমেশচন্দ্রের সাহিত্যালোচনায় তার কৃত্রিম স্বদেশপ্রেমের প্রসঙ্গটি সব সমাঁলোচকেরই প্রধান আলোচ্য বিষয়। শ্রযোগেশচন্দ্র বাগল মন্তব্য করেছিলেন,

"স্বদেশের সর্ববিধ উন্নতিই ছিল তাহার আন্তরিক লক্ষ্য আমরা যাহাকে চ90305570 বা স্বদেশপ্রেম বলি তাহা তাহার ভিতরে বিশেষভাবে ছিল, আর তাহার ইংরেজী বাঙ্গালা সকল রকম রচনার মধ্যে এই স্বদেশপ্রেম বিধৃত। তাই বলিয়া তিনি সংক্ষারকে যুক্তির উপরে কখনও জ্ঞাতসারে স্বান দেন নাই, এককথায় বলিতে গেলে রমেশচন্দ্ের স্বদেশপ্রেম ছিল বাস্তবধরমী যুক্তিনিষ্ঠ ।*২৯

রমেশচন্দ্রের সাহিত্য বিচারের মানদণ্ড হিসেবে হ্বদেশপ্রেম প্রসঙ্গের স্থান সবার ওপরে | বঙ্কিমপ্রদশিত পথে. রমেশচন্দ্র উপন্যাসকেই স্বদেশপ্রেম প্রচারের উপযুক্ত ক্ষেত্র হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন অতীত দৃষ্টান্ত আমাদের এঁতিহ্াবুদ্ধি জাগাঁতে সমর্থ হবে মনে করেই নবজাগ্রত বাঙ্গালীর সামনে ইতিহাসের কাহিনী পরিবেশনের যে চেষ্টা বঙ্কিমচন্দ্র করেছিলেন, রমেশচন্দ্র সে পথটিই অনুসরণ করেছেন তবে বঙ্কিমচন্দ্র একটি বক্তব্য নির্বাচন করে তা প্রমাণের জন্য যেমন অতিব্যস্ত হতেন-_ রমেশচন্দ্রের উপন্তাসে তেমনটি নেই | বঙ্কিমচন্দ্র মবণালিনী"তে যে প্রচারকার্য চালিয়ে ছিলেন উপন্যাসের সর্বত্র তা প্রকট হয়ে উঠেছে, __'রাজসিংহের” মত ইতিহাসভিত্তিক উপন্তাঁসেও একটি বিশেষ বক্তব্য সব কিছুকে অতিক্রম করে পাঠককে সচেতন করে তুলেছে রমেশচন্দ্রের উপস্তাসে ঠিক সে জাতীয় কোন উদ্দেশ্যমূলকতা ছিল না। বঙ্কিমপ্রভাবিত হলেও -স্বদেশপ্রেম রমেশচন্দ্রের আন্তরিক অনুভব বলে তাঁর প্রকাশভঙ্গিটি অনায়াসলন্ধ উপন্যাসের বক্তব্যকে তা অতিক্রম করেনি,__ পাঠককেও ব্যতিব্যস্ত না করে ত! স্বয়মপ্রকাশিত। এতে রমেশচন্দ্রের স্বদেশ- প্রেমিকতার স্গিগ্ধ স্বচ্ছন্দ স্বরূপটি ধরা পড়েছে সমালোচকগণ রমেশচন্দ্রের এই বিনস্ত্ স্বদেশচিন্তার রূপটি আবিষ্কার করেছেন এবং বঙ্ধিমচন্দ্রের সঙ্গে তার পার্থক্যটিও স্পষ্ট করেছেন অবশ্য উপন্যাসশিল্পী হিসেবে বস্কিমচন্দ্রের সঙ্গে রমেশচন্দ্রের তুলনা! না

২৯. যোগেশচন্দ্র বাগল সম্পাদিত রমেশ রচনাবলীর ভূমিকা, সাতিত্য সংসদ কলিকাতা, ১৯৬০ |

উপস্তাঁস ৫৭৯

করে ব্বদেশপ্রেমিক হিসেবে বিচার করার সময়ই সত্য ধরা পড়েছে বঙ্কিমচন্দ্রের শিল্পীসত্বার মৌলিকতা রমেশচন্দ্রে আশা করা যায় না_কিন্তু দেশসাঁধনাকে উভয়েই জীবনব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন বলেই উভয় শিল্পীর সাধর্য পার্থক্য আলোচনায় এসে যাঁয়। প্রসঙ্গে শ্রীহ্বকুমার সেন বলেছেন,

বঙ্কিম ছিলেন কোন কোন বিষয়ে সংস্কার বিমুখ এবং তাহার স্বদেশশ্রীতির মধ্যে উপদেষ্টার ভাব ছিল। রমেশচন্ত্র সংস্কারবিমুখ ছিলেন না, তাঁহার মনোবৃত্তি ছিল শুশ্রাযুর ।.- স্বদেশপ্রীতি এবং স্বাজাত্য গর্ব রমেশচন্দ্রের উপন্তাসগুলির মধ্য দিয়া অধিকতর অকুত্রিম অনাড়ম্বর ভাবে প্রকাশিত হইয়াছে 1৩০

উপন্যাসে রমেশচন্দ্রের দেশপ্রেমের শ্বচ্ছন্দ প্রকাশ রয়েছে কিন্তু পরবর্তী জীবনে সক্রিয় ভাবে তিনি দেশসেবার ক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। সাহিত্য ক্ষেত্রে যাঁর প্রথম পরিচয় ব্বদেশপ্রেমিকরূপে, জীবনের ক্ষেত্রেও তিনি সেই পরিচয়টিই উজ্জ্বল করেছিলেন দেশপ্রেম তার সব কাজেই প্রেরণা সঞ্চার করেছে। উপন্তাসিক রমেশচন্দের কৃতিত্বের পরিমাপ করতে গিয়ে হয়ত শৈল্সিকতার মাপকাঠিতে তাঁকে কিছুমাত্র নতুন গৌরব আমর] দিতে পারব না,_-কিন্তু সে যুগের দেশপ্রেমী অষ্টা হিসেবে তার বিশেষত্ব আমাদের দৃষ্টিতে ধর৷ পড়বেই।

রষেশচন্দ্রের প্রথম উপন্তাঁস 'বঙ্গবিজেতার' রচনা কাল ১৮৭৪ সাল। “দুর্গেশনন্দিনী” প্রকাঁশের স্দীর্ঘ ন'্বছর পরে বঙ্কিমচন্দ্র যখন বাংলার সাহিত্যাকাঁশে উজ্ভ্বলতম" অষ্টা রূপে বিরাজমান,_-রমেশচন্দ্রের আবিতাব সে যুগেই। সুতরাং বঙ্কিমপ্রতিভার পক্ষচ্ছায়ায় রমেশচন্দ্রের প্রতিভাকে খুব গতানুগতিক মনে হওয়াটা! কিছুমাত্র অস্বাভাবিক নয়। বাংলা উপন্যাসের ক্ষেত্রে কেউই সে যুগে বঙ্কিমপ্রতিভাকে অতিক্রম করতে পারেন নি, _রমেশচন্দ্রও নয়। তার প্রথম উপন্যাসের পরিকল্পনীতেও আমরা! কোন অভিনবত্ব বা বৈশিষ্ট্য খুজে পাই না। অতীত কালের যে সময়ের ইতিহাস তিনি অবলম্বন করেছিলেন-__তা “ছুর্গেশনন্দিনী” উপন্তাঁসেও পেয়েছি হিন্দুশক্তির অবসানের অব্যবহিত পরে পাঠান মোধলশক্তির সংঘর্ষের পটভূমিকায় বাংলা দেশে মোথলশক্তির প্রতিষ্ঠার কাহিনী এতে স্থান পেয়েছে “ছুর্গেশনন্দিনীতে” মানসিংহের বঙ্গদেশ অভিযানের কাহিনী এবং “ববিজেতায়' রাঁজা টোডরমল্ল বাংলার জমিদারদের সহায়তায় কিভাবে পাঠান উপগ্রত বাঁজালায় শাস্তি স্থাপন করলেন-_সেই কাহিনীই স্থান পেয়েছে বঙ্কিমচন্দ্র “ুর্গেশনন্দিনীতে বাঙ্গালী জমিদার বীরেন্দ্রসিংহের বীরত্ব কাহিনী শুনিয়েছেন”_

৩০, স্ুকুর্মাপ্ন সেন, বাংল সাহিতো ইততিহাল। হর থণ্ড। বর্ধমান সাহিতা সভা, ১৪৬২, পৃ:--২১৩ |

৫৭৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল সাহিত্যে ত্বদেশপ্রেম

শিক্ষা প্রাপ্ত, ধনে-মানে-গৌরবে-মর্যাদার শীর্যাসনে অবস্থান করেও, রাজকর্মের দায়িত্ব পালন করেও, রমেশচন্ত্র দেশ জাতির প্রতি তার কর্তব্য মুহুর্তের জন্কও তোলেননি। স্বদেশচিন্তা যে মাচ্ছষের ধ্যান--রমেশচন্দ্র সেই জাতীয় মানুষ ছিলেন সুতরাং বাংলা সাহিত্যে লেখকরূপে আত্মপ্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে দেশপ্রেমিক রমেশচন্দ্রের পরিচয় পেতে আমাদের কোনে। অস্কবিধে হয় না ;_ উচ্চশিক্ষা বিদেশভ্রমণের অভিজ্ঞতা তার দেশভক্তিকে আরও গাঁড় করেছিল রমেশচন্দ্রের সাহিত্যালোচনায় তার অকুজ্রিম স্বদেশপ্রেমের প্রসঙ্গটি সব সমালোচকেরই প্রধান আলোচ্য বিষয়। শ্রযোগেশচন্দ্র বাগল মন্তব্য করেছিলেন, _

“স্বদেশের সর্ববিধ উন্নতিই ছিল তাহার আন্তরিক লক্ষ্য আমরা যাহাকে 10901106500 বা স্বদেশপ্রেম বলি তাহা তাহার ভিতরে বিশেষভাবে ছিল, আর তাহার ইংরেজী বাঙ্গালা সকল, রকম রচনার মধ্যে এই স্বদেশপ্রেম বিধৃত। তাই বলিয়া তিনি সংহ্কারকে যুক্তির উপরে কখনও জ্ঞাতসারে স্থান দেন নাই, এককথায় বলিতে গেলে রমেশচন্ত্রের স্বদেশপ্রেম ছিল বাস্তবধ্মী যুক্তিনিষ্ঠ ।”২৯

রমেশচন্দ্রের সাহিত্য বিচারের মানদণ্ড হিসেবে স্বদেশপ্রেম প্রসঙ্গের স্থান সবার ওপরে | বঙ্কিমপ্রদশিত পথে. রমেশচন্দ্র উপন্তাসকেই স্বদ্শপ্রেম প্রচারের উপযুক্ত ক্ষেত্র হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন অতীত দৃষ্টান্ত আমাদের এতিহাবুদ্ধি জাগাতে সমর্থ হবে মনে করেই নবজাগ্রত বাঙ্গালীর সামনে ইতিহাসের কাহিনী পরিবেশনের যে চেষ্টা বঙ্কিমচন্দ্র করেছিলেন, রমেশচন্দ্র সে পথটিই অনুসরণ করেছেন তবে বঙ্কিমচন্দ্র একটি বক্তব্য নির্বাচন করে তা! প্রমাণের জন্য যেমন অভিব্যস্ত হতেন-_ রমেশচন্দ্রের উপস্তাঁসে তেমনটি নেই | বঙ্কিমচন্দ্র “ম্ণালিনী'তে যে প্রচারকার্য চালিয়ে ছিলেন উপন্যাসের সবধত্র তা প্রকট হয়ে উঠেছে, _“রাজসিংহের” মত ইতিহাসভিত্তবিক উপন্তাসেও একটি বিশেষ বক্তব্য সব কিছুকে অতিক্রম করে পাঠককে সচেতন করে তুলেছে ব্লমেশচন্দ্রের উপন্যাসে ঠিক সে জাতীয় কোন উদ্দেশ্যযূলকতা ছিল না। বস্কিমপ্রভাবিত হলেও -স্বদেশপ্রেম রমেশচন্দ্রের আন্তরিক অনুভব বলে তার প্রকাশভঙ্গিটি অনায়াসলব্ধ। উপন্তাসের বক্তব্যকে তা অতিক্রম করেনি, পাঠককেও ব্যতিব্যস্ত না করে তা স্বয়মপ্রকাশিত। এতে রমেশচন্দ্রের স্বদেশ- প্রেমিকতার স্সিগ্ধ স্বচ্ছন্দ স্বরূপটি ধর? পড়েছে সমালোচকগণ রমেশচন্দ্রের এই বিন স্বদেশচিস্তার রূপটি আবিষ্কার করেছেন এবং বঙ্কিমচন্দ্রের সঙ্গে তার পার্ক্যটিও স্পঁ করেছেন অবশ্য উপন্তাসশিল্পী হিসেবে বঙ্কিমচন্দ্রের সঙ্গে রমেশচন্দ্রের তুলন। না

২৯, যোগেশচন্র বাগল সম্পাদিত রমেশ রচনাবলীর ভূমিকা, সাহিত্য সংসদ কলিকাতা, ১৯৬

উপন্যাস ৫৭৯

করে স্বদেশপ্রেমিক হিসেবে বিচার করার সময়ই সত্য ধর] পড়েছে বঙ্কিমচন্দ্রের শিল্পীসত্তার মৌলিকতা রমেশচন্দ্রে আশা করা যায় না-কিন্ত দেশসাধনাকে উভয়েই জীবনব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন বলেই উভয় শিল্পীর সাঁধর্ম ও। পার্থক্য আলোচনায় এসে যায় প্রসঙ্গে শ্রীহ্ককুমার সেন বলেছেন,

*বন্কিম ছিলেন কোন কোন বিষয়ে সংস্কার বিমুখ এবং তাহার স্বদেশগ্রীতির মধ্যে উপদেষ্টার ভাব ছিল। রমেশচন্দ্র সংক্কারবিমুখ ছিলেন না, তাহার মনোবৃত্তি ছিল শুশ্রাযুর ।-. স্বদেশপ্রীতি এবং স্বাজাত্য গর্ব রমেশচন্দ্রেরে উপন্যাসগুলির মধ্য দিয়! অধিকতর অকৃত্রিম অনাড়ম্বর ভাঁবে প্রকাশিত হইয়াছে ।”৩০

উপন্তাসে রমেশচন্দ্রের দেশপ্রেমের স্বচ্ছন্দ প্রকাশ রয়েছে কিন্তু পরবর্তী জীবনে সক্রিয় ভাবে তিনি দেশসেবাঁর ক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছিলেন সাহিত্য ক্ষেত্রে যার প্রথম পরিচয় স্বদেশপ্রেমিকরূপে, জীবনের ক্ষেত্রেও তিনি সেই পরিচয়টিই উজ্জল করেছিলেন দেশপ্রেম তার সব কাজেই প্রেরণা সঞ্চার করেছে। ওপন্যাসিক রমেশচন্দ্রের ক্লৃতিত্বের পরিমাপ করতে গিয়ে হয়ত শৈল্লিকতার মাপকাঠিতে তাঁকে কিছুমাত্র নতুন গৌরব আমরা দিতে পারব না” কিন্তু সে যুগের দেশপ্রেমী অঙ্টা হিসেবে তীর বিশেষত্ব আমাদের দৃষ্টিতে ধর পড়বেই।

রমেশচন্দ্রের প্রথম উপন্যাস 'বঙ্গবিজেতার' রচনা কাল ১৮৭৪ সাল। “দুর্গেশনন্দিনী” প্রকাশের স্বদীর্থ নট্বছর পরে বঙ্কিমচন্দ্র যখন বাংলার সাহিত্যাকাশে উজ্জলতম" শর্টা রূপে বিরাজমান,_রমেশচন্দ্রের আবির্ভীব সে যুগেই। স্থতরাং বঙ্কিমপ্রতিভীর পক্ষচ্ছায়ায় রমেশচন্দ্রের প্রতিভাকে খুব গতানুগতিক মনে হওয়াটা কিছুমাত্র অস্বাভাবিক নয়। বাংলা উপন্াসের ক্ষেতে কেউই সে যুগে বঙ্কিমপ্রতিভাকে অতিক্রম করতে পারেন নি,_রমেশচন্দ্রও শয়। তার প্রথম উপন্তাঁসের পরিকল্পনাতেও আমর! কোন অভিনবত্ব বা বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাই না। অতীত কালের যে সময়ের ইতিহাঁস তিনি অবলম্বন করেছিলেন-_তা “ছুর্গেশনন্দিনী" উপন্তাসেও পেয়েছি হিন্দুশক্তির অবসানের অব্যবহিত পরে পাঠান মোঘলশক্তির সংঘর্ষের পটভূমিকায় বাংল! দেশে মৌঘলশক্তির প্রতিষ্ঠার কাহিনী এতে স্থান পেয়েছে “ছুর্গেশনন্দিনীতে” মানসিংহের বঙ্গদেশ অভিযানের কাহিনী এবং “বঙ্গবিজেতায়' রাজা টোডরমল্প বাংলার জমিদারদের সহায়তায় কিভাবে পাঠান উপক্রত বাঙ্গালায় শাস্তি স্থাপন করলেন-__সেই কাহিনীই স্থান পেয়েছে বঙ্কিমচন্দ্র “ুর্গেশনন্দিনী'তে বাঙ্গালী জমিদার বীরেন্ত্রসিংহের বীরত্ব কাহিনী শুনিয়েছেন,_

পাস পিপি

৩০, সুকুমার দেন, বাংল! সাহিত্যে ইতিহাস | হয় খণড। বর্ধমান সাহিত্য সভা, ১৬৬২, পৃ:--২১১।

৫৮০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

রমেশচন্দ্রও বাঙ্গালী বীরের চরিত্র কল্পনা! করেছেন, সমরসিংহের বীরত্ব গাঁথ! প্রচার করেছেন। আত্বকলহে অনৈক্যে লিপ্ত বাঙ্গালী ভূম্বামীদের শক্তি বীরত্বের কখাই শোনাতে চেয়েছিলেন উঁপন্তাসিক। সমরসিংহ মৃত্যুদণ্ড বরণ করেছিলেন কিন্ত তার ব্যক্তিত্বময়ী বিধবা পতী স্বামীহত্যার প্রতিশোধ নিতে বদ্ধপরিকর পাঠান মোঘলের যুদ্ধ-কাহিনীর অন্তরালে এই কাহিনীটিই মুখ্য হয়ে উঠেছে উপন্যাসে

সমরসিংহের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবার জন্যই স্বরেন্ত্রনাথ শক্তিসঞ্চয় করতে চেয়েছিলেন টৌভডরমল্লের সৈম্যদলে যোগ দিয়ে হরেন্দ্রনাথ পাঠানদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিলেন। পাঠান সেনাপতি মাস্থমী ইন্দ্রনাথের [ হুরেজনাথ ] মোধলপ্রীতিকে ব্যঙ্গ করেছিলেন পরাধীন বাঙ্গালীর নিশ্চে্টতার নিন্দা করেছে মাহুমী,--পহিম্দ্র! তোমর। বিধির নির্বদ্ধের উপর প্রত্যয় করিয়] নিশ্চেষ্ট হইয়া থাক, সাহসী পাঠানেরা জীবন থাকিতে নিশ্চে্ট হইবে না, অধীনতা স্বীকার করিবে না। পাঠান গৌরবস্থর্ধ্য এখনও অস্ত যায় নাই ।*৩১

এঁতিহাসিক রমেশচন্দ্রের নিরপেক্ষ সত্যপ্রকাশের প্রবণতা এখানে ধর] পড়েছে। পরাধীন বাঙ্গালী সত্যিকারের স্বাধীনতার স্বাদ কোনদিনই পায়নি শুধু হস্তান্তরিত হয়েছে একাধিক শাসকগোষ্ঠীর হাতে স্বাধীনচেতা পাঠানের সঙ্গে পরাধীন বাঙ্গালীদের পার্থক্য এখানেই। স্বাধীনতাকে জীবন দিয়েও রক্ষা করতে জানে পাঠান কিস্ত বাঙ্গালী পাঠানের বিরোধিতা করেছে মোঘলের অধীনতাপাশ নতুন করে বরণ করার জন্য পাঠান শক্তির সঙ্গে মোঘলের বিবাদের ঘটনাস্থল বাংলা দেশ কিন্ত বাঙ্গালীর। শুধুমাত্র দর্শকের ভূমিকায় অংশগ্রহণ করেছে। ইন্দ্রনাথের মত যার] সক্রিয় হয়েছে তাঁদের উদ্দেশ্যে মাস্থমী বলেছে, |

“তুমি বজদেশের প্রাচীন রাজবংশকে আর কখনও বিদ্রোহী বলিও না। ধাহার। ক্রমান্বয়ে চারিশত বৎসর এই রাজত্ব করিয়াছেন, বখ.তীয়ার খিলিজীর সময় হইতে যে পাঠানের একাধীশ্বর হইয়! হিন্দুদিগকে শাসন করিয়াছেন, তোমার পিতা, তোমার পিতামহ, তোমার প্রপিতামহ যে রাজবংশের অধীনে বাঁস করিয়াছেন, সেই পাঠান বিদ্রোহী, না অন্ত যে অন্তায়াচারী দিল্লীর অধীশ্বর চাতুরী প্রতারণার দ্বার৷ আমাদের পুরাতন সাম্রাজ্য লইতে চাহে, সে বিদ্রোহী ?

[ রমেশ রচনাসস্ভার, পৃঃ ২৫৫ | স্বাধীনচেতা পাঠানের কাছে উনবিংশ শতাববীর জাগ্রত বাঙ্গালী ্বদেশপ্রেমের

৩১, প্রমথনাখ বিদ্বী সম্পাদিত, রমেশ রচনাসন্কার ১৯৫৮।

উপস্তাস ৫৮১

দীক্ষা নিতে পারে। যে চেতনা মীন্বমীকে আত্মবিসর্জনের প্রেরণা দেয়, পাঠান- শক্তির পুনঃপ্রতিষ্ঠায় শক্তিসঞ্চার করে,__-সেটিই স্বদেশপ্রেমের অবিষিশ্র অনুভূতি রমেশচন্দ্র নিরপেক্ষভাবে হিন্টুশক্তির সমালোচনা পাঠানের স্বাধীনতা প্রিয়তার উল্লেখ করেছেন। আত্রকলহে লিগ হিন্দু জমিদারদের কীতিকলাঁপ উপন্যাসে বেশ উজ্জ্বলতাবে চিত্রিত করেছেন ওউপন্যাসিক | সমরসিংহের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের পটভূমিকায় অনৈক্যের প্রসঙ্গটি খুব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ১1০৬৪:-এর 71910 0173977581-অন্থসরণ করে রমেশচন্দ্র টোডরমল্লের কাহিনীটিকে ইতিহাসের ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন বঙ্কিমচন্ত্র জাতীয় কাহিনীর মধ্যেও হিন্দুগৌরব অনুসন্ধান করেছেন রমেশচন্দ্র পাঠানের চরিত্রেই স্বদেশপ্রেম লক্ষ্য করেছিলেন প্রথম উপন্যাসে ওউপন্তাসিকের আঁড়ষ্টতা সর্বত্র প্রকট হলেও এতিহাসিকতা নিরপেক্ষ স্বদেশপ্রেমের উজ্জ্বলতা “বঙ্গবিজেতায়' আঁছে।

রমেশচন্দ্রের দ্বিতীয় উপন্যাস “মাধবীকম্কণে'ও বাংলাদেশের এঁতিহাসিক পটভূমিকা। স্কান পেয়েছে। কাহিনীর নায়ক নরেন্দ্রনাথ বঙ্গসন্তান হলেও ঘটনাচক্রে মোঘলসম্তরাট শাজাহানের রাজত্বকাঁলের জটিলতার মধ্যে প্রবেশ করেছে বঙ্গদেশ থেকে বহুদূরে দিল্লী মেবারের পটভূমিকায় তাকে আবিষ্কার করি আমরা এই পরিবেশেই কিন্তু মেবারের শৌর্য বীর্ষের ইতিহাঁস প্রসঙ্গ এসে পড়ে, উপস্তাসিকও স্বদেশপ্রেমের উচ্ডাীস বর্ণনা করতে বসেন। উপন্যাঁস রচনাকালে লেখকের সমস্ত অন্তর স্বদেশপ্রেমে ভরপুর ছিল। গ্রন্থটির উৎসর্গ পত্রটি সে যুগের বিখ্যাত স্বদেশসেবী স্থরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়ের নাঁমে নিবেদন করেছেন তিনি,

“তুমি যে ত্রতধারণ করিয়াছ, তাহা অপেক্ষা মহত্তর ব্রত জগতে আর নাই। সেই মহৎকার্ধে সফল হও, এই মঙ্গলাকাজ্ষার সহিত এই সামান্ি পুস্তকখানি তোমার হস্তে অর্পশ করিলাম ।”

এই অংশটি থেকেই সাহিত্যিক রমেশচন্দ্রের মানসিকতার চিত্রটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দেশপ্রেমকে জগতের মহত্ব ব্রত বলে মনে করেছিলেন তিনি উপন্যাসেও এই মহান ব্রত পালনের নির্দেশ দিয়েছেন নানাভাবে |

ভাগ্যতাঁড়িত নাঁয়ক নরেন্্র গৃহত্যাগ করে রাজনৈতিক জটিলতায় জড়িয়ে পড়লেন, _ দিল্লীতে তাকে আবিফার করি আমরা। দিল্লীতে দূর্গ প্রবেশের পথে ছটি সৃতি দেখে বিশ্মিত হয়ে নরেন্দ্র ৃতিছুটির পরিচয় জানতে চেয়েছিলেন উত্তর শুনে মুষ্ধ হয়েছিলেন তিনি,_শ্বদেশপ্রাঁণ রমেশচন্দ্র রাজপুত শৌর্যবীর্ষের পরিচয় দিতে গিয়ে উচ্ছৃপিত হয়েছিলেন গজপতি মুতির বর্ণনা দিতে গিয়ে পরোক্ষভাবে স্বদেশপ্রেমের উদ্ধাপ প্রকাঁশ করেছে,_+কিন্ত রাজপুত রা্জাদিগের কীতি চিরশ্মরণীয় করিবার জন্ঠ

৫৮২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

প্রতিমৃতির আবশ্টক নাই, যতদিন বীরত্বের গৌরব থাকিবে, রাজপুত নাম কেহ বিস্মৃত হইবে না। রাজপুতানার প্রত্যেক পর্বত শেখরে রাজপুতের বীরনাম খোদ্দিত আছে, ভারতবর্ষের প্রত্যেক বেগবতী নদীতরঙ্গে রাজপুতের বীরনাম শব্দিত হইতেছে ।%

[ পৃঃ ৩৯, রমেশ রচনাসস্তার ]

জয়মল্প পুত্তের যৃতির ব্যাখ্যাপ্রসঙ্গে গজপতি রা'জপুতের স্বদেশপ্রেমের প্রশংসায় আত্মহারা হয়েছে_এই অভিব্যক্তিতে রমেশচন্তরের স্বদেশপ্রাণতাই স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করি আমরা মেবারের অতীত কীতিকাহিনীর বর্ণনধয় রমেশচন্দ্র তার আবেগ দমন করতে পারেননি স্বদেশপ্রেমের এমন জলঙ্ত দৃষ্টান্ত ভারতের ইতিহাসে অগ্থাত্র স্থুলভ নয়”_তাই উনবিংশ শতাব্ীর স্বদেশপ্রেমী সাহিত্য-অষ্টাদের লুন্বদৃষ্টি রাজস্থানের কাহিনীতে নিবদ্ধ। উপন্যাসে মেবারপ্রসঙ্গ মুখ্য ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়। কিন্ত গোৌশ প্রসঙ্গের বর্ণনায় লেখক মাত্রাতিরিক্ত আবেগ প্রকাঁশ করেছেন--সহজেই তা চোখে পড়ে। প্রতাঁপসিংহের বীরত্ব এবং মানসিংহের ভীরুতা কাঁপুরুষতাকে তীব্রভাষায় ধিক্কার দিয়েছেন উঁপন্তাসিক | উপন্যাসেও মেবারের অতাঁত মহিমার বিস্তৃত বিবরণ দিয়েছেন চারণ--াঁর ব্রতই হচ্ছে অতীত কাহিনী বর্ণনা করে বর্তমানকে উৎসাহিত কর] প্রতাপের দেশপ্রেমের মহিম কীর্তন করেছে চারণ,

“রাজপুতগণ, প্রতাপের জয়গীত গাও, সমগ্র রাজস্বানে এই গীত শবিত হইতে থাঁকুক...হিমালয় অতিক্রম করিয়া সমস্ত জগতে ব্যাপ্ত হউক, আর যদি স্বর্গে সাহস স্বদেশানুরাঁগের গৌরব থাকে সে গীত আকাশপথে উত্থিত হুইয়! স্বর্গের দ্বারে সজোরে আঘাত করিয়া মানবের যশঃ-কীতি বিস্তার করুক |” [পৃঃ ৫২-৫৪, এ]

এই উদ্দীপনা ময়ী ভাষায় রমেশচন্দ্র স্বদেশপ্রেমের আবেগ সঞ্চার করেছিলেন এই আবেগ সেষুগের আত্মজাগরণোন্বুখ বাঙ্গালীকে উৎসাহ দিক, এই: বাঁসনাটি কোথাও অস্পষ্ট হয়ে নেই উপন্তাসের নাঁয়ক নরেন্দ্রনীথ দেশপ্রেমের মহিমায় মুগ্ধ হয়ে দেশের কথা চিন্তা করতে শিখেছে স্বদেশভাবন! পীড়িত নরেন্দ্রনাথ চিন্তা করেন,

“স্বদেশেও মহাবল পরাক্রান্ত রাজার] আছেন, তাহারা কি করিতেছেন, হন্দর বঙ্ধদেশের তুর্দশা কেন? আজি ছয়শত বৎসর অবধি পরাক্রান্ত মুসলমাঁণদিগের সহিত যুদ্ধ করিয়। রাঁজপুতের! স্বীয় স্বাধীনতা রক্ষা! করিতেছে, বঙ্গদেশে মুসলমান পদার্পণ না করিতে করিতে হিন্দুরাজ্যের নাম লুপ্ত হইল।:"*আঁর বঙগদেশ ! বেগপ্রবাহিনী গঙ্জানদী গৌরবগীত গায় না, ব্রহ্মপুত্র স্বাধীনতীর গীত গায় না, রাজা- প্রজ! সকলেই অধীনতা নিদ্রীয় সুপ্ত, ঝড় সুখে নিদ্রা যাইতেছে জগতে তাহাদ্দিগের নাম নাই, অথবা তাহাদিগের নাম কেবল ঘ্বণার পদার্থ ।” [পৃঃ ৫৪ এ]

এই অংশটিতে রমেশচন্ত্রের স্বচ্ছ বিচারশক্তির পরিচয় আছে অতীত ইতিহাসে

উপজ্লাস ৫৮৩

স্বদেশভাবনা বাঙ্গালীকে কোনদিনই উৎসাহিত করেনি, রাজপুত ইতিহাসের সঙ্গে তুলনা করলেই সে সত্য স্পষ্ট হয়। যা আমাদের জাতীয় চরিত্রে ছিল না সেই অন্ুভবকে বর্ণনা করে আত্মপ্রসাদ লাভ করতে চাননি রমেশচন্দ্র, শুধু সত্য বর্ণনা করেছেন অবশ্য নায়ক নরেন্দ্রনাথ এই ইতিহাস পর্যালোচনা করে মর্মাহত হয়েছিল, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছিল মাতৃভূমি উদ্ধারের সংকল্পে। রমেশচন্দ্র স্পষ্টভাবে আমাদের অতীত ইতিহাসের কলক্কজনক তথ্য পরিবেশন করেছিলেন বটে কিন্ত সে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি তীর কাম্য ছিল না। ইতিহাসের উজ্জ্বল এ্তিহা যেমন আমাদের প্রেরণা সঞ্চার করতে সক্ষম-তেমনি আমাদের দুর্বলতার অবস্থাটি ভালভাবে হুদয়ঙ্গম করেও প্রেরণা পাই আমরা নবশক্তির উত্থান আমাদের পূর্ব কলঙ্ক স্থালন করুক, ছিল নায়ক শরেন্্রনাথের স্বপ্ন, পক্ষান্তরে রমেশচন্দ্রেরও | তাই ইতিহাসের সত্যকেও অকপটে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন রমেশচন্দ্র, তাঁকে ফেনায়িত করেননি

নায়ক নরেন্দ্রনাথের জীবনে প্রেমের ঘ্বন্্ব উপস্থিত হয়েছে যখন বাল্যের প্রেম সাময়িকভাবে অস্পষ্ট হয়ে এসেছিল এবং যবনীর মোহ তাকে বিচলিত করেছিল কিন্তু স্বদেশপ্রেমের আদর্শই তাকে পথ দেখিয়েছিল, ব্যক্তিগত প্রেমবাঁসনার সঙ্গে দেশসাধনার দ্বন্দ এই অংশটিতে মুখ্য হয়ে উঠেছে প্রবাসী নরেন্ত্রনাথকে দেশের- কল্যাণে আত্মনিয়োগ করতে উপদেশ দিয়েছিলেন শৈলেশ্বর,__

“শুনিয়াছি তোমার বঙ্গদেশ বীরশুন্য, যশংশৃন্ধ | যাও নরেন্দ্রনাথ ! সেই দূর বঙ্ধদেশে যশ:স্তত্ত স্থাপন কর, যাঁও, স্বদেশের গৌরব সাধন কর, সিংহ্বীর্ধ্য ধরিয়া আপনকীতি স্থাপন কর। মহৎ উদ্দেশ্যে তোমার জীবন সমর্পণ কর 1”

পরোক্ষভাবে উপদেশটি উপন্ঠাসিকেরও | দেশসেবার মহৎ আদর্শে অনু- প্রাণিত হওয়ার স্থযোগ এসেছিল উনবিংশ শতাববীতেও, স্বদেশপ্রেমী উঁপন্যাসিক সেই প্রস্ততির লগ্নে উৎসাহবাঁণী শোনাতে এসেছিলেন

মুসলমান যবনীর মোহ থেকে আত্মরক্ষার তাগিদে দেশপ্রেমই পথ দেখিয়েছে নরেন্্রনাথকে। ব্যক্তিগত প্রেমদ্বন্দ্বের উ্ধেব বিরাজিত এই দেশভাবনাই শেষ পর্যন্ত পথভ্রান্ত নরেন্দ্রনাথকে রক্ষা করেছে নরেন্্নাথ ব্যক্তিচিন্তাকে প্রাধান্ত ' দিয়েছিলেন বলে ভীব্র্তাবে ভৎ“সিত হয়েছিলেন,

“দেশের হিতসাধনের জন্য আপিয়াছ? কোন্‌ বীরব্রতে ব্রতী হইয়া আসিয়াছ? কোন্‌ দেবোচিত মহছদেশ্য সাধনার্থ আপিয়াছ? ধিক নরেন্দ্র! তোমার ত্তায় বীরপুরুষ একটি বালিকার মুখ দেখিবার জন্য জীবনের মহৎ উদ্দেশ্যে ভুলিয়া থাকে ?

হ্মেচন্দ্র মশালিনীপ্রেমে কর্তব্য বিস্বত হয়েছিলেন, মাধবাচার্য এমনি করেই

৫৮৪ উনবিংশ শতারবীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

হেমচন্দ্রের চৈতগ্য সম্পাদন করেছিলেন দেশপ্রেম যে ব্যক্তিত্বার্থের চেয়েও অনেক যূল্যবান ভাবনা, একথাটিই সে যুগের লেখকগোষ্ঠী প্রমীণের চেষ্টা করেছিলেন। বঙ্কিমচন্ত্রের মত রমেশচন্দ্রও দেশপ্রেমকে সবচেয়ে পবিত্র ভাবনা বলে মনে করতেন, উপন্তাসেও দেকথ প্রচার করেছেন

নরেন্দ্রনাথের চৈতন্য সম্পাদিত হয়েছিল,__যবনীমোহমুক্ত নরেনরনাথ যেভাবে আত্মবিশ্লেষণ করেছিলেন তাতেও স্বদেশচিন্তা প্রাধান্য পেয়েছে, দেশের উন্নতি! জাতির উন্নতি! মুসলমান হইয়! খ্যাতিলাভ করিলে মুসলমান রাজ্যের মুসলমান সমাজের গৌরববৃদ্ধি হইবে, দেশের, স্বজাতির কি হইল ?

নরেন্দ্রনথও কল্পিত চরিত্র,--ইতিহাসের যে অধ্যায়ে বহদেশে স্বাধীনতার কোন চিন্তাই জন্ম নেয়নি, রমেশচন্দ্র সেই অধ্যায়ে একটি কল্পিত দেশপ্রেমিক চরিত্র স্বজন করেছিলেন শুধু দেশপ্রেম গুচারের উদ্দেশ্যেই | ছাড়া উপরোক্ত চরিত্রকে অন্য কোন উপায়ে ব্যাখ্যা কর! চলে না। এ্তিহাসিক উপন্তাসে ইতিহাসের ঘটনাই স্থান পাবে--কিন্ত যে উপন্যাসে ওপন্তাসিক স্পষ্টতই দেশপ্রেমের ধারণাটি ব্যাখ্যা করতে বসেন-_-কিংবা দেশপ্রেমকে মহতম কর্তব্য বলে প্রমাণ করতে চান তখন উপন্তাসিকের উদ্দেশ্যটি আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে দেখা দেয় উনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণলগ্ে জাতীয় উপপ্তাসের প্রয়োজনীয়তাও ছিল। স্বদেশপ্রেমী লেখকরা দেশকে সম্পূর্ণ বিস্বত হয়ে কিছ চিন্তা করতে পারতেন না,- জাতীয় ইতিহাস- সম্পৃক্ত রচনাগুলো পাঠ করতে করতে ধারণাটিই বদ্ধমূল হয় পাঠকের মনে

রমেশচন্ত্র উপন্যাসে রাজপুত জাতির শৌর্যবীর্ষের ইতিহাস আলোচন। করতে গিয়ে ভাববিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন | রাজপুতের স্বদেশপ্রেম বান্দালীর চরিত্রে ছিল না বলে উদগত ছুঃংখ তিনি গোপন করতে পারেননি স্বাধীন রাজপুত জাতির গৌরবকাহিনী স্বাধীনতাপ্রিয় লেখকের অন্তরে যে বিশেষ ভাবান্ধোলন জন করেছিল, - তা বুঝতে অন্বিধে হয় না। যশোবন্ত সিংহও উপন্যাসের লক্ষ্যযীয় চরিত্র, মোঁঘলের বিরুদ্ধে তার দৃপ্ত অভিযাঁনের বর্ণনাও উপন্তাসে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বণিত হয়েছে রাজপুত জাতির হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে রমেশচন্দ্র বর্ণনা করেছেন। কিন্তু পরাধীন বঙ্ৃভূমির! ইতিহাসের স্তব্ধ মুহূর্তগুলো সেই অবস্থার তুলনায় যে কত নিশ্রভ সে কথা বলতে গিয়েও ব্যথিত হয়েছেন রমেশচন্জ্র |

'মাধবীকঙ্কণের' কাহিনীতে বিদেশী গল্পের ছায়া আবিফার করেছেন কোন সমালোচক,_কিস্ত উপন্তাসের কাহিনীগত সৌন্দর্য ইতিহাসের অসংলগ্ন পটভৃমিকার বিস্তৃত বিবরণের চাঁপে বিক্ষিপ্ড হয়ে গেছে মনে হয়। শেষাংশে

উপন্তাস ৫৮৫

কোনোমতে কাহিনীটির সমাপ্তি টানতে চেয়েছিলেন উপন্তাসিক। মূলতঃ দেশীহুরাগ "ও স্বাধীনতালাভের বাঁসনায় উদ্বেল লেখক নিছক একটি গল্প পরিবেশন করতেই চাননি, এখানেই বঙ্কিমচন্ত্রের প্রভাব উপন্যাসে অধিকতর স্পষ্টভাবে অনুভব করি। বঙ্গদেশের নীয়ককে রমেশচন্দ্র এমন একটি পরিবেশের মধ্যে স্থাপন করেছেন-_যেখানে দেশপ্রেমের প্রসক্ঘটি অনায়াসে বর্ণনা করা যাবে এতে কাহিনীর দিক থেকে কিছু বৈচিত্র্য হয়ত সৃষ্টি হয়েছে কিন্ত উঁপন্থাসিকের বক্তব্য প্রকাশের স্থবিধে হয়েছে অনেক বেশী। জাতীয় উপস্তাঁসকেই হয়ত উদ্দেশ্যযূলক উপন্যাস বলা সঙ্গত। কাহিনীগত বৈচিত্র্যের মাধ্যমে পাত্রপাত্রীর অন্তর্ঘন্থ হৃদয়গত রহস্যের গ্রন্থিমৌচন যদি সার্থক ওপন্যাসিকের বাসনা হয়-__-এ জাতীয় উপন্যাসে সেটিই পরোক্ষ বিষয় উপন্যাসিকের দেশপ্রেমচিত্তার বিস্তৃত বিবরণের সঙ্গে পাত্রপাত্রীকে কোনমতে মিলিয়ে 'দওয়ার চেষ্টাটাই প্রকট একে এ্তিহাঁসিক উপন্যাস বলার যুক্তি যেমন নেই, নিছক উপন্যাস হিসেবেও ব্যাখ্যা করা যায় না,__ দেশপ্রেমিক লেখকের ভাবনাই জাতীয় উপন্যাঁসের মূল অবলম্বন |

'মাধবীকঙ্কণে” রাজপুত ইতিহাসের প্রাসঙ্গিক বর্ণনায় লেখকের গভীর অন্রাঁগ লক্ষ্য করেছি, -চিতোরের কীর প্রতাপসিংহের জীবনকাহিনী গল্পচ্ছলে বণনার লোভ সংবরণ করতে পারেননি লেখক। পরবর্তী উপন্তাসেও রাজপুত ইতিহাস অবলম্বন করেছিলেন রমেশচন্দ্র। বর্ণনার গান্তীর্যে আবেগের অতিশায়নে অধ্যায়টি রমেশচন্দ্রের রচনাশক্তির উত্রুষ্ট নিদর্শশ বলে গণ্য হতে পারে। যশোবন্তসিংহের পরাজয়ে লজ্জা ঘৃণায় ফোধপুরের রাহ্জ্ৰী দীর্ঘ বিলাপে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন,

“তিনি ক্ষত্রিয় নহেন, তিনি আমার স্বামী নহেন. নয়ন যশোবন্তসিংহকে আর দেখিবে না আমি মেওয়ারের রানার দৃহিতা, প্রতাপসিংহের কুলে ষে বিবাহ করিবে সে ভীরু কাপুরুষ কেন হইবে ? যুদ্ধে জয় করিতে পারিলেন না, কেন সম্মুখরণে হত হইলেন না?”

স্বাধীনচেতনাই কোনো চরিত্রকে এই দুপ্তব্যগ্িত্ব দান করতে পারে রাজস্থানের ইতিহাসেই এমন উজ্জ্বল নারী চরিত্রের সাক্ষাৎ পেয়েছি আমর] রমেশচন্দ্রেরে মত স্বদেশপ্রেমী লেখক যে রাক্জস্থান-ইতিহাসের বর্ণনা দিতে গিয়ে আবেগাকুল হবেন-_এটাই স্বাভাবিক যশৌবস্তসিংহের পরাজয় বৃত্তান্ত উপস্তাসের ঘটনা! হয়ে উঠেছে-_-সে শুধু স্বদেশপ্রেমের বর্ণনা দেবার অতি আগ্রহ লেখককে উৎসাহিত করেছিলো বলেই 'মাধবীকন্কণেই' স্বদেশপ্রেমিক রমেশচন্দ্রের শ্রবণতাঁর প্রকৃত রূপ আবিষ্কার করি আমরা। এর পরেই দু'খানি এরতিহাসিক

৫৮৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

উপস্তাস রচনা করে ভারত ইতিহাসের ছুটি উজ্জ্বল অধ্যায় বিঙ্েষণ করেছেন তিনি তবে এঁতিহাসিকতা রক্ষার দায়িত্ব স্বেচ্ছায় বরণ করেছিলেন রমেশচন্দ্র। বাংলা সাহিত্যে যথার্থ প্রতিহাসিক উপন্যাঁস রচন' ভীরই কীতি। প্রমথনাথ বিশী প্রসঙ্গে যে কারণ নির্দেশ করেছিলেন তা যথার্থ বলে মনে হয় ।__*্বঙ্কিমচন্্র রমেশচন্দরের ক্ষেত্রে ইতিহাসের প্রেরণা ছাড়াও অন্ক আর একটি প্রেরণা ছিল, পরাধীনতার প্রেরণা ।"**দেশের স্বাধীনতা বা পরাধীনতার কারণ কেবল রাজনৈতিক ঘটনার মধ্যে সন্ধান করিলে চলিবে না-_বস্কিমচন্দ্র বুঝিতে পারিয়াছিলেন ক্ষমতা বা দৃষ্টি রমেশচন্দ্রের ছিল না, তিনি সে চেষ্টাও করেন নাই। তাই রাজনৈতিক ঘটনাও মীশবচরিত্রের উপরে নির্ভর করিয়া তিনি জীবনসন্ধ্যা জীবনপ্রভাত রচনা করিয়াছিলেন 1৮৩২

বঙ্কিমচন্দ্র নিছক ইতিহাঁস অবলম্বন করেননি, অবাঁধ কল্পনা, নবলব্ ধর্ম-চেতনা, ভারতীয় আদর্শের প্রতি আশ্গত্যের সমবায়ে তিনি উপন্তাসের জটিলতা বৃদ্ধি করেছিলেন। কিন্তু স্বাদেশিকতা সেখানেও স্বতোপ্রবাহিত। রমেশচন্দ্র সরল' ইতিহাঁস এবং গভীর দেশপ্রেম অবলম্বন করে অপেক্ষাকৃত সুবোধা এ্রতিহাসিক উপন্যাস রচন। করেছিলেন-_-এখানেই তার কৃতিত্ব ভারত ইতিহাসের দুটি উজ্জ্বল" অধ্যায়কে 'অবিকুত রেখেও উচ্চাঙ্গের ইতিহাসনির্ভর উপন্যাস রচনা করা সম্ভব, সত রমেশচন্দ্রই জানিয়েছেন কল্পনার সাহায্যে উৎকৃ্তর উপন্যাস লেখ! সম্ভব হতে পারে কিন্তু রাজস্থানের বা মারাঠ৷ জাতির সত্য 'ইতিহাসে এমন সব চরিত্রের সাক্ষাৎ পাই আমরা, যা কল্পনাতীত শুধ্‌ সেই বিস্ময়কর চরিত্রগুলিকে উদ্দীপনাময়ী ভাষাতে ব্যক্ত করার ক্ষমতা থাঁকলেই ৩] সার্থক সৃষ্টি হতে পারে রমেশচন্দ্রের স্বদেশপ্রেমের আবেগ ছিল, পরিণত মন অন্তর ছিল-_তাই ইতিহাসভিত্তিক কাহিনী রচনায় তিনি সাফল্য অর্জন করেছিলেন। ভারতের অভীত ইতিহাঁসের' প্রতি আত্মিক সম্পর্ক অনুভব করতেন রমেশচন্দ্র- _ইতিহাসপ্রিয়তা সহজাত দেশপ্রেম উভয়টিই প্রবলভাবে তাঁর চরিত্রে বর্তমান ছিল। খুব অল্প সময়ের ব্যবধানেই তিনি 'জীবন-প্রভাত' জীবন-সন্ধ্যার মত ছুটি গুরুত্বপূর্ণ এতিহাঁসিক উপন্যাস রচন। সমাপ্ত করেছিলেন

১৮৭৮ খৃষ্টাব্দে “জীবন-প্রভাঁত' রচনাকালে রমেশচন্দ্র বিষয় নির্বাচনে সাময়িক যুগ থেকে প্রত্যক্ষ কোন প্রেরণা লাভ করেন নি। মারাঠা ইতিহাস তাঁর উপজ্জীব্য ছিল কিন্ত উনবিংশ শতাব্দীতে রাজস্থানের ইতিহাসই প্রধানভাবে অবলঘ্িত হোত-_

৩২. প্রসথনাধ বিশী সম্পাদিত, রমেশ রচনাসস্কার ১৯৫৮।

উপস্তাস ৫৮৭,

মীরাঠা ইতিহাস নিয়ে কোনে! রচন। চোখে পড়ে না। দীর্ঘদিন পূর্বে 'এতিহাসিক উপন্যাসে" “অঙ্গুরীয় বিনিময়ে* ভূদেব মুখোপাধ্যায় শিবাজীকে নায়ক হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন ১৮৭৮ খৃষ্টান পর্যন্ত দেশীত্মবৌধক বনু কাব্য-কবিতা-নাটকেও শিবাজী- প্রসঙ্গ কেন বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়শি সেটাই বিস্ময়ের ব্যাপার এর একটি যুক্তিগ্রাহ কারণ হয়ত এই হতে পারে যে, রাজস্থানের ইতিহাঁসই সেযুগে অতিমাত্রায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল মধুহ্দনের 'কৃষ্ণকুমারী” নাটকে কিংবা জ্যোতিরিন্দ্রণাথের একাধিক নাটকে রাজস্থানের কাহিনীহ অবলঘ্িত হয়েছে - এর যূলে টডের রাজস্থানের প্রভাবও অবশ্যস্বীকার্য বঙ্কিমচন্দ্র রাঁজসিংহের কাহিনী রাজস্থানের ইতিহাস থেকেই গ্রহণ করেছিলেন অতএব একথা মনে হতে পারে যে শিবাঁজার অভ্যর্খানের কাহিনী নিয়ে ইংরেজীতে প্রতিহীসিক গ্রন্থ রচিত হলেও তা৷ জনপ্রিয় হয় নি, _লেখকগোঠীও রাজস্থানপ্রসঙ্গ নিয়ে চবিতচর্বণ করেছিলেন কিন্তু শিবাজী নেপথ্যেই রয়ে গেলেন জনপ্রিয় প্রসঙ্গ অবলম্বনে স্থলভ সাহিত্য রচন! করে সম্মান পাবার লোভ শুধু প্রাচীন কবিদেরই বৈশিষ্ট্য নয়--যে কোন যুগের ধারাবাহিক সাহিত্য ইতিহাস আলোচনা করলে সে ঘটনার পুনরাবৃত্তি চোখে পড়ে সাধারণতঃ জনপ্রিয় পরিচিত বিষয়ের প্রতি একটা ছূর্বলত৷ থাঁকাই স্বীভাঁবিক, টডের 'রাজস্বশন”- প্রীতি সে কথাই প্রমাণ করে কিন্তু রমেশচন্দ্র মুখ্যতঃ ইতিহাসপ্রেমিক ছিলেন-__ টডের রাজস্থান তারও প্রিয় গ্রন্থ। তাছাড়া গ্রান্ট ডফের লেখা মহারাস্ট্রীয় জাতির ইতিহাসও তিনি সাগ্রহে পাঠ করেছিলেন এই উদ্দশিপনাময়ী ইতিহাঁসই রমেশচন্্রকে প্রতিহাসিক উপন্যাস রচনায় প্রেরণা দিয়েছিল সেদিক থেকে রমেশচন্দ্রের বিষয় নির্বাচনের মৌলিকত্ব স্বীকার করতে হয় দেশপ্রেমের আদর্শ প্রচারের চেষ্টা যেখানে মুখ্য, শিবাজী চরিত্রবর্ণনায় সে উদ্দেশ্যটি মূর্ত হতে পারে, রমেশচন্দ্র সে কথা জানতেন ভূদেব মুখোপাধ্যায় কণ্টারের কাহিনী অন্থবাদ করেছিলেন,_রমেশচন্দ্র ইতিহাস- ভিত্তিক উপন্ভাসে শিবাঁজীকে জাতির আশা-আকাজ্কার প্রতীকরূপে বর্ণনা করেছেন রাজপুত ইতিহাসের গৌরব যখন স্তিমিত হয়ে এলো! তখন মারাঠা বীর শিবাঞ্জার অকস্মাৎ আবিতীব হয়েছিল এর মধ্যে একটি নিগুঢ় সংযোগ আবিষ্ষার করেছিলেন রমেশচন্দ্র। “রাজপুত জীবনস্ধ্যায়' যে বক্তব্য তারই উপসংহার রূপে 'মহারাই জীবন প্রভাতের” পরিকল্পনা--যদিও রচনার দিক থেকে “জীবন প্রভাত, পূর্ববর্তী রচনা স্বাধীনতা লাভের অদম্য বাসনা একটি জাতির জীবনে কিভাবে উচ্ছৃমিত হয়ে ওঠে তারই চিত্র বর্ণনা "জীবন প্রভাতে" স্থান পেয়েছে,পরবর্তী রচনায় দেশোদ্লারের অমলিন আদর্শ, অনৈক্য আত্মকলহের ফলে কিভাবে দুর্ণধিচুর্ণ হয়ে গেল, সেকখাই সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন রমেশচন্দ্র। ছুটি উপন্তাসেই এরতিহাসিক সত্য

৫৮৮ উনবিংশ শতাব্দীত্ন বাংল! সাহিত্যে ব্বদেশপ্রেম

অবিক্কৃত রেখে দেশপ্রেম সাধনার সাফল্য দেশপ্রেমে শৈথিল্যের কলঙ্কজনক পরিণাম বর্ণনা করেছেন লেখক। সত্যান্মুন্ধানই লেখকের. মূল উদ্দেশ্য, তাই নিরপেক্ষ এঁতিহাসিকের নিলিপ্ততা ছটি উপন্াঁসেই চোখে পড়ে বস্কিমচন্দ্রের যে কোন ইতিহাস- ভিত্তিক কাহিনীতে এই ছুলভ সংযম অনুপস্থিত--সেজন্য রমেশচন্দ্রকে সার্থকতর এঁতিহাসিক উপন্তাস অ্টা বলে অভিনন্দিত করেছিলেন সমালোচকবুন্দ দেশপ্রেমের আবেগাতিশায়নেও অষ্টার সংযম বিনষ্ট হয় নি,-_রমেশচন্দ্রেরে ছুটি উপস্াস পাঠ করে উপলদ্ধি হয় যে কোন পাঠকের

মহারাই জীবন প্রভাত'-এর বিষয়টিই স্বদেশপ্রেমাত্মক, কাহিনীর অসামান্ত বিষয়গৌরব সে যুগের বাঙ্গালী জীবনে ভাবান্দোলন জনে সক্ষম হবে-এ প্রত্যাশা ছিল লেখকের ভূমিকায় স্বীয় আত্মজ অবিনাশচন্দ্রকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন__ “প্রিয় ভ্রাতঃ!

ইউরোপ হইতে তুমি যে নাঁনা ভাষা নান! বিদ্া আহরণ করিয়া আনিয়াছ, তাহা যখন চিন্তা করি তখনই আনন্দিত হই! কিন্ত তুমি ইহা অপেক্ষাও অযূল্য রত্বের অধিকারী সে রত্ব, [নির্মল উদার চরিত্র, মনঃসংযমে অসাধারণ ক্ষমতা, বিজ্ঞানচচ্চায় আনন্দনীয় উৎসাহ জীবনব্যাপী চেষ্টা

এই অসাধারণ সদগুণ সমূহ দ্বার স্বদেশের মঙ্গল সাধন কর, ভ্রাতার এই মর্গলেচ্ছ1 1”

এই উৎসর্গ পত্রটি স্বদেশপ্রাণ রমেশচন্দ্রের দেশসেবাত্রতে উৎসাহ দীনের নজর রূপে গণ্য হবে। স্বীয় ভ্রাতাকেও দেশাদর্শে দীক্ষা দেবার আকাজ্ষ পত্রটিতে প্রকাশিত হয়েছে শিক্ষা, উদীরতা, জ্ঞানাহুরাগ দেশসেবায় নিয়োজিত না হলে তার সার্থকতা কোথায়? যোগ্য ব্যক্তিই দেশসেবার অধিকারী ! রমেশচন্দ্র তাঁর সমস্ত শিক্ষা উদারতা দেশসেবণর পবিত্র কর্তব্যে নিয়োগ করেছিলেন, অনুরূপ প্রেরণায় স্বীয় আত্মজকেও দীক্ষা দিতে চান তিনি দেশপ্রেমকাহিনী রচনার মূলেও একই বাসনা বর্তমান ছিল বলেই ধারণা করি। উপস্াসে দেশপ্রেম প্রচারের চেষ্টাকে ছাড়া অগ্ক কোন উপায়ে ব্যাখ্যা করা যায় না।

“জীবনপ্রভাতের” রচনাকালে বঙ্কিমচন্দ্রের বিখ্যাত উপন্তাঁসগুলি সবই প্রকাশিত হয়েছে বটে, কিন্তু তখনো! শেষ চারটি উপন্যাসের জন্ম হয়নি 1 বঙ্কিমচন্দ্রের শেষ পর্বের উপন্যাসে আদর্শবাঁদ তবপ্রাধান্য বস্কিমচন্দ্রের শিল্পী মনের চূড়ান্ত জটিলতা অপরিসীম ক্ষমতার সাক্ষ্য দেয়। রমেশচন্দ্র মোট ছ'টি উপন্যাস রচনা করেছিলেন--তার কোন উপন্যাসে কোনো ভাবেই তত্ববাহুল্য প্রাধান্য পায়নি শিল্পী বঙ্কিমের শিল্পীসত্বার গভীরত্ব বিঙ্লেষণকালে সমালোচক পরিশ্রান্ত বোধ

উপস্াণস ৫৮৯,

করেন,--তত্ব দর্শন, দেশপ্রেম স্বজাতি সমালোচনা, উদারতা প্রাচীনতাঁর সমর্থন একই সঙ্গে উপন্যাসে পরিবেশিত হয়েছে বলেই সমস্যার উত্তব হয়েছে। রমেশচন্দ্র সে তুলনায় সরল উদার সত্যকেই অনলম্কত ভাবে প্রকাশের চেষ্টা করেছেন। রমেশচন্দ্রের উপন্যাসে জটিলতা নেই বল্লেই চলে,-_-উপরস্ত দেশপ্রেমের নিরন্তর প্রবাহ সব বক্তব্যকেই আর করেছে বলেই রমেশচন্দ্র সহজে বোধগম্য দেশপ্রেমের বক্তব্যেও তিনি অকপট “আঁনন্দমঠে” দেশপ্রেমের স্বরূপ উদঘাটনে সমালোচক যখন ঘিধাগ্রন্ত হয়ে পড়েন--উপন্যাসের শেষাংশে বঙ্কিমচন্দ্রের সমন্ত বক্তব্যই যখন ধোয়াটে হয়ে যায়,__-রমেশচন্দ্রের উপন্যাসে দেশপ্রেমের অকপট প্রকাশমহিমা তখন অত্যন্ত সহজেই অভিনন্দনযোগ্য বলে মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক |

'জীবনপ্রভাতে” রমেশচন্দ্র এ্রতিহাসিক সত্য প্রচ্ণরেই অধিক মাত্রায় উৎসাহী উপন্যাসের প্রথমেই “জীবনউষা' অংশটিতে রমেশচন্দ্র যে অনুচ্চার বর্ণনা দিয়েছেন সেটি লক্ষ্যণীয়। ইতিহাসের যথাযথ বর্ণনায় পাঠকের রুচি সম্পর্কে রমেশচন্ত্র অজ্ঞ ছিলেন-_কারণ উপন্যাসে ইতিহাসের প্রসঙ্গ যে ভাবে আলোচিত হোত তাতে আবেগাতিশয্যই লক্ষ্য করেছিলেন রমেশচন্দ্র। সে যুগটি উচ্ভীাসেই কম্পমান,__ অতিশয়োক্তিও সেখানে মানিয়ে গিয়েছিল ইতিহাসের সত্যতা নিয়ে ছুশ্চিন্ত করার মতো। অবসর ছিল না সেদিন বাঙ্গালীর জীবনে তাই রমেশচন্দ্র বিনীতভাবে প্রার্থনা করেছিলেন সহৃদয় পাঠকের কাছে,

“উপন্যাসের প্রারভ্তে দেশের ইতিহাস লোকের আপন অবস্থা সংক্ষেপে বিবৃত হইল, তাহাতে বোধ হয় পাঠক মহাশয় বিরক্ত হইবেন না।” সত্য বর্ণণায় পাঠক বিরক্তবোধ করেনি তার প্রমাণ রমেশচন্দ্রের উপন্যাসই যথাথ এতিহাসিক উপন্যাসের সম্মান পেয়েছে তবে সত্য ইতিহাসের অহ্থ্‌সরণে হিন্দুশক্তির পরাজয়ের বর্ণন1! দিতে গিয়ে রমেশচন্দ্রও বেদনাবৌধ করেছিলেন

ভারতবর্ষের প্রথম হিন্দুশক্তির পতনের সংক্ষিপ্ত একটি ধারাবাহিক ইতিহাস বর্ণনা করেছেন রমেশচন্দ্র |

'্ীষ্টের একাদশ শতাব্দীর প্রারস্তেই গজনীর অধিপতি মামুদ ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন সেই সময় হইতে দুইশত বৎসরের মধ্যে আ্ধ্যাবর্তের অধিকাংশই মুসলমান দিগের হস্তগত হয় ।”

বর্ণনায় কোন উচ্দ্বীন নেই বরং পরাধীনতার কালাহুক্রমিক সত্য বর্ণনার চেষ্টা আছে রমেশচন্দ্র লক্ষ্য করেছিলেন, _

“লে সময়ে হিন্দুদিগের জাতীয়জীবন ক্ষীণ অবনতিশীল, বিজয়ী মুসলমান

৫৯০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

'দিগের জাতীয়জীবন উন্নতিশীল প্রবল, স্্তরাং একে অন্যের ধ্বংস সাধন করিল ।”- পরাধীনতার এমন যুক্তিপূর্ণ স্বীকারোক্তি সেযুগের কোন রচলায় আছে বলে মনে হয় না। উনবিংশ শতাব্দীর নবঙ্জাগরণলগ্নে আবেগ উচ্ছাস ছিল বটে কিন্তু যুক্তিবার্দের ওপরেই তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। রামমোহন, বিদ্যাসাগর, অক্ষয়কুমার, বঙ্কিমচন্দ্র বাঙ্গালীর চরিত্রে যুক্তিগ্রীতি সঞ্চার করেছিলেন উচ্ছ্বাসের আঁধিক্যেও যুক্তির উপযোগিতা একেবারে বিনষ্ট হয়নি রমেশচন্দ্র নিরাসক্ত চিত্বে দেশোচ্ছীসের গতি লক্ষ্য করেছিলেন বলেই উপন্যাসে যুক্তিধমিতাকে আশ্রয় করে স্থুলভ ভাবালুতা ত্যাগ করেছিলেন মহারান্্র দেশের অতীত ইতিহাসের ধারাবাহিক বর্ণনাশেষে রমেশচন্দ্র এ্রতিহাসিকের মত নিঃসংশয় চিত্তে হৃদয়ঙ্গম করেছিলেন,

*ড্তীতিবিরোধের স্তায় আর বিরোধ নাই, পর্বতসম্কুল কঙ্কণ মহারাষ্ট প্রদেশে সর্বস্থানে সর্বকালেই স্থানীয় বড় বড় বংশে আত্মবিরোধ দৃষ্ট হইত পর্বত কন্দরে উর্বর1 উপত্যকায় সর্বদাই মহীযুদ্ধ সংঘটিত হইত। বহু শোঁণিতপাত হইলেও সেগুলি কুলক্ষণ নহে, সেগুলি হুলক্ষণ ; পরিচালনার দ্বারায় আমাদের শরীর যেরূপ স্থবদ্ধ দৃরীকৃত হয়, সর্বদা কার্ধ্য উপদ্রব বিপর্যয় দ্বার] জাতীয় বল জাতীয় জীবন সেইরূপ রক্ষিত পরিপুষ্টু হয়। এইক্প মহারাস্ত্রীয় জীবন-উষার প্রথম রক্তিমাচ্ছটা শিবাজীর আবিতাবের অনেক পূর্বেই ভারত আকাশ রঞ্জিত করিয়াছিল।

[ ১ম পরিচ্ছেদ ] এতিহাসিকের মতোই সত্য ঘটনার দলিল মেলে ধরেছেন রমেশচন্দ্র প্রসঙ্গে রমেশচন্দ্র নিজের ধারণার ওপরই নির্ভর করেছিলেন মহারাষ্ট্র ইতিহাঁস সম্বন্ধে বিশেষতঃ শিবাজীচরিত্র নিয়ে আধুনিক এতিহাসিকের গবেষণার সঙ্গে সেযুগের ্রতিহাঁসিকের ধারণায় অমিল রয়েছে যথেষ্ট আধুনিক এতিহাসিকের। শিবাঁজীর অসমসাহসিকতার প্রশংসা করেছেন, _কিন্তু স্বদেশপ্রেমিক হিসেবে শিবাজীর প্রতিষ্ঠার হেতু নির্ণয় করতে গিয়ে তারা সংশয় প্রকাশ করেছেন। কিন্তু রমেশচন্দ্রের যুগে সে তথ্য জানা ছিল না-_-কিংবা তথ্যে বিশ্বীস স্থাপন করার মত মানসিকতা ছিল না জাতীয় আন্দোলনের পূর্বাহে শিবাঁজী ত্বদেশপ্রেমিক বলেই বন্দিত হবেন এটাই স্বাভাবিক | এতিহাসিক যদুনাথ সরকার মহারাষ্ট্রের ইতিহাস সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন,-_

পু 2৬ 00] 10001012138 6016 16 00610001256 10061000615 ০0৫ 00৫ ,06501560. 187011169 (0: 085628) 1:2521705 01315 121055006 290 ডেজছে 0৫ 9০৩৫2 204, 1 002 01005206350: 089116 100001118001) 5008200 $0 6

উপন্যাস | ৫৯১

৪%217860. 0 0106 96196000010 01001:01) 9100 8086 05 80108 ০৬০: ০০ 006 21300016901 01১61 50013075210 9910. 9001) ৪০001, 02 002 70810 01

022 01001555925 2100 0006 09155560 ৪11156, 15 17000591016 75615 2. 00৩

92552 ০01 10801013911 1795 08156181006, 70980100507, ০010 70 £10৬/ ০02

036. [190197) 501] (6০590 20718 50100800 01809 71000 101770760 110৩ 00০ 2৪1969), 1106 50966, 55. 210. 10000190198] ০0201110815 6176, 17161061220 00015 0012015 03810 00]: 10791190591] 96193, ০০০1৭ 7100 17১6 0019091520 05 006 2011015 06 [11900 [019 1052 9016 0826 25 601 0০105152560 551£ 200. 006 101 0116 £0০0. 0৫ 00০ 50121001010 25 “্/1)016.৮৩৩

শিবাজীকে হিন্ুরাজ্য প্রতিষ্ঠাতারুপে কল্পনা! করেই “মহারাষ্ট্র জীবনপ্রভাতের' কুটি! ক্ুতরাঁং শিবশজীর চরিত্রে রাজ্য সংগঠকের সমস্ত গুণই খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি। মহারাষ্ট্রের হিন্দু নায়কের পুণ্য চরিতকথাই গ্রন্থে ছখন পেয়েছে। শিবাজীর ছুঃসাহসিকতার দুরদশিতার কথা শক্র মোঘল স্বজাতি মহারাস্্ীয়েরা ভালভাবেই জানত তাই হিন্দুশক্তির উন্মেষ লগ্নে মহারাষ্ত্রীয়েরা শিখাঁজীকে নেতৃত্ব- পরে অভিষিক্ত করেছে মহাদেওজী শিবাঁজীর সন্ধির অভিপ্রায় নিবেদন করতে এসেছেন বিপক্ষ শিবিরে, কিন্তু শায়েন্তা খা স্পষ্টই বলেছে, “ধূর্ত কপটাচারী মহারাস্ীয়দিগকে আমি কদীাচ বিশ্বাস করি না, এমত ধূর্ততা নাই যে তাহাদের অসাধ্য ।৮ [ পঞ্চম পরিচ্ছেদ |

রমেশচন্দ্রের ব্তব্যও অত্যন্ত স্পষ্ট ঘটনাপ্রবাহের ফলাফল বর্ণ করার যথাধথ চেষ্টা উপন্তাসে সর্বত্র প্রকট | চাতুর্যই যে শিবাজীর সাফল্যের অন্যতম সোঁপান-_ সে প্রসঙ্গ গোপন করার চেষ্টামাত্র না করে লেখক তীব্রভাবে তা সমালোচন! করেছেন ধূর্ততা কপটতার সমর্থন করে, নিখু'ত ইতিহাস রচনার চেষ্টামাত্র না করে রমেশচন্দ্র পাঠকের ধন্তবাদ লাভ করেছেন তবু শিবাজীর মত নেতা সংগঠক অকুপণ প্রশংসা পেতে পারেন, রমেশচন্দ্র তা! দিয়েছেনও | মোৌঘলরাঁও স্বীকার করেছে,

*ভিনি শিবাজীকে বিশেষ করিয়া জানিতেন, শিবাজীর অসাধারণ ক্ষমতা, তাহার বছ সংখ্যক হূর্গ, তাহার অপূর্ব দ্রুতগামী অশ্বারোহী সেনা, তাহার হিন্তুধর্ষে আস্থা, হিন্দুরাজ্য স্থাপনে অভিলাষ, হিন্দু স্বাধীনতা সাঁধনে প্রতিজ্ঞা, সমস্ত চাদ খার নিকট অগোচর ছিল না|” [ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ ]

৩৩,0505750 98706805 9159]1 570 [11510107555 2910* ৮. 39$--395"

৫৯২ উনবিংশ শতার্বীর বাংলা সাহিত্যে ব্বদেশপ্রেম

শিবাজী সম্পর্কে মোঘল সেনাপতি চাদ খার উক্তি শক্ররই অভিনন্দন বাণী। উপন্যাসের সর্বপেক্ষা উল্লেখযোগ্য অংশ রাজপুত মারাঠা বিরোধের কাহিনী মোঘল সেনাপতি যশোৌবস্তসিংহ শিবাজীর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছেন,-_-এ অংশটিতে স্বাধীনতাপ্রিয় মারাঠাশক্ির সঙ্গে অপর একটি হিন্দুশক্তিরই যুদ্ধ আসন্ন হয়েছে, উপন্তাসিক রমেশচন্দ্র অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে চিত্র বর্ণনা করেছেন “মাধবী কঙ্কণে'ও যশোবস্ত চরিত্রের সাক্ষাৎ লাভ করেছি আমরা রাজপুত হয়েও মৌঘলের অধীনতা স্বীকার করে স্থায়ী অপযশ লাঁভ করেছিলেন যশোৌবন্তসিংহ মোঁধলশক্তির কাছে পরাভূত হয়ে স্বীয় পত্বীর দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন তিনি। এখানেও যশোবন্ত চরিত্রে যে কালিমা আছে তা অনপনেয় কলঙ্ক তবু যশোবন্ত বিবেকবান, বিশ্বস্ত রাজপুত প্রতিনিধি হিসেবে অতি উজ্জ্রল একটি চরিত্র স্বদেশোদ্ধারের ক্ষমতা হারিয়েও যশোবস্ত মনুষ্যত্ব হারায়নি দেশপ্রেমিক হতে পারেননি বলে আক্ষেপ করলেও মানবিকতা রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা-করেছিলেন তিনি রাজপুত মারাঁণার দ্বন্্ ব্যাখ্যায় রমেশচন্দ্র যথেষ্ট নৈপুণ্য ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন

শিবাজীর দূত মহাদেওজীর প্রচণ্ড আক্ষেপবাঁণী ধ্বনিত হয়েছে, যশোবন্তের আদর্শঢ্যুতির জন্য সগ্ুম পরিচ্ছেদটি রমেশচন্দ্রের রচন নৈপুণ্যের উৎকৃষ্ট নিদর্শন বলেই গণ্য হবে। এখানে স্বদেশপ্রেমের অপূর্ব উচ্ছাস স্বদেশচেতনাহীন মান্ুষকেও উদ্শীপিত করতে পারে রমেশচন্দ্র যশোৌবস্তের সমালোচনা! করেছেন নিরপেক্ষভাবে | মহাদেওজীর জলন্ত স্বদেশপ্রেমেরও বর্ণনা দিয়েছেন শিবাজীর আদর্শই এই চরিত্রটিকে এমন মহৎ প্রেরণা দিয়েছে যশোবন্ত শিবাজী প্রসঙ্গে বলেছে,_ |

“কেবল দিল্লী্বরের জয়ের জন্য যুদ্ধ নহে )১--আমি তোমার প্রভুর সহিত কিরূপে মিত্রতা করিব? শিবজী বিদ্রোহাচারী, চতুর শিবর্জী অগ্ভের অঙ্গীকার অনায়াসে কল্য ভঙ্গ করে ।” [ সপ্তম পরিচ্ছেদ ]

জলন্ত ক্রোধে উত্তর দিয়েছেন মহাঁদেওজী-_“মহারাঁজ | সাবধান, অলীক নিন্দা আপনার সাজে না ।".'জেতা বিজিতদিগের মধ্যে কবে কোন দেশে সখ্যতা ? বজ্তনখ যখন সর্পকে ধারণ করে, সর্প সে সময় মৃতবৎ হইয়া! থাকে, মুত বলিয়া তাহাকে পরিত্যাগ করিবামাঁত্র জর্জরিত শরীর নাগরাঁজ সময় পাইয়া দংশন করে এটি বিপ্রোহাচরণ নয়) এটি স্বভাবের রীতি ।'-*আমাদের প্রাণের প্রাণ, জীবনের জীবন স্বরূপ স্বাধীনতা৷ যে মুসলমানের! শত শত বৎসর অবধি শোষণ করিতেছে, হৃদয়ের শৌণিত শ্বরূপ বল, মান, দেশগোৌরব, জাত্যাঁতিমান শোষধ করিতেছে, ধর্ম বিনাশ করিতেছে, তাহাদিগের সহিত আমাদিগের সখ্যতা সখ্য সম্বন্ধ ? তাহাদিগের

উপন্যাস ৫2

নিকট হইতে যে উপায়ে সেই জীবন স্বরূপ স্বাধীনত৷ রক্ষা করিতে পারি, স্বধর্ম জাতিগৌরব রক্ষা করিতে পারি, সে উপায় কি নিন্বনীয় 1 | [খর

রমেশচন্দ্র স্বাধীনতার মূল্য স্বাধীনতা সংগ্রামের পথ সম্বন্ধে তার অকপট বিশ্বাসের কথাই অংশটিতে ব্যক্ত করেছিলেন। শক্তিমানই স্বাধীনতা লাতে সক্ষম দুর্বলের পক্ষে স্বাধীনতা লাভের স্বপ্ন দেখা হয়ত সম্ভব, কিন্তু তা দুর্বলের লত্য হতে পারে না রমেশচন্রস্বদেশপ্রেমিকের চরিত্রে বস্তকঠিন দৃঢ়তা অনুসন্ধান করেছিলেন | স্বামী বিবেকানন্দের বীর্য লাভের উপদেশটিও সে যুগের মানুষের জীবন সাধনার পূর্ণাঙ্গ নির্দেশ বলে গৃহীত হয়েছিলো রমেশচন্দ্র নির্যাতিতের শক্তি সম্বন্ধে সচেতন ছিলেন,- এই শক্তি পরাধীন নির্যাতিত মানুষের চরিজ্রে ধীরে, ধীরে প্রচণ্ড হয়ে ওঠে। যখন শক্তি স্ফুরিত হয় তখন উপায় সম্বন্ধে কোন বিধিনিষেধ আরোপ করাই চলে নাঁ_তা নিজের পথেই এগিয়ে যায়। শিবাজীর রাজ্যলাভের দুর্দমনীয় আকাঙজ্ষার শক্তি কোঁন পথই ভেবেচিন্তে গ্রহণ করেনি, তা অকশ্নাৎ 'আপন আবেগেই প্রকাশিত হয়েছে চাতুর্ষ বা কপটতার অপবাদ দিয়ে এই পবিত্র দেশোদ্ধারের ব্যঞ্জনাকে কলুষিত করা যায় না। দেশপ্রেমের এই অভ্রান্ত আবেগের শক্তিতে বিশ্বানী ছিলেন রমেশচন্দ্র। শেষ জীবনে বিলেতে অবস্থানকালে তিনি প্রচণ্ড উদ্যম নিয়ে ভারতের স্বার্থরক্ষরি চেষ্টা করে গেছেন। সে সময়ের বন বক্তৃতাতে তিনি অকুণ্ঠ ভাষায় তার বিশ্বাসের কথা ব্যক্ত করেছেন নির্ভয়ে দেশপ্রেমের শক্তিই রমেশচন্দ্রের প্রেরণা ছিল। বিদেশী শাসকগোষ্ঠীর অন্তাঁয় শাসনের প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছিলেন তিনি। সে সময়ের ইংরাজী বক্তৃতায় স্বদেশপ্রেমিক রমেশচন্দ্রকে আমরা নতুশরূপে আবিষ্কার করি। সাহিত্যে যে দেশপ্রেমের বানী দেশবাসীর কাছে নিবেদন করেছিলেন_-খিদেশে ইংরেজী বক্তৃতায় তারই প্রতিফলন দেখতে পাই। শিবাজীকে সমর্থন করে রমেশচন্্ স্বাধীনতাকামী মানুষকেই অভিনন্দিত করেছিলেন বিলেতে ইংরেজ শাসনের ত্রটি সম্বদ্ধে সমালোচনা! করতে গিয়ে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন,

[৮ ৮0510 16:5067 46951500910 7016. ৫59509061০১ 16 010 9$121)06

06019 200. 90010 0910107 1 ৮001] 21902062005

[0 16 61,215 0০ 3158903680000, 17 006 121১0 ব্য£0 10006 00 ০6661:

০০৩6৪০৫0088 1৮002

2100110, ০6::0587 17258881506 0192 (50521000060 15 ৪0 হা 39697 0326 02091 510310 90281 46 30৫ 820010 100 ৮0096 5০ 800910 ঢায 00 1030

৩৮

€৯৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে দেশপ্রেম

108৮ 005 0155205250600 51705810 আ0 12 005 ৫2100 200. 0০ 10৪ 208500156 ?৩৪

রমেশচন্্রের এই সাবধানবাণী তার দৃঢ় দেশচেতনাঁকেই চিনিয়ে দেয়! মারাঠা অভ্যুদয়ের ইতিহাস নিয়ে পূর্ণাঙ্গ একটি গ্রন্থ রচনার অভিলাষ ছিল রমেশচন্দ্রের, “জীবনপ্রভাতে” তিনি শুধু শিবাঁজীর আদর্শের স্বরূপ ব্যাখ্যা করেছেন | যশোবন্তের মুখে আদর্শ রাজপুতের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিবরণ শুনেছি আমরা,

“রাজপুতগণও স্বাধীনতা রক্ষা করিতেছেন, কিন্তু তাহারা সাহস সম্মুখ রণ ভিন্ন অন্য উপায় জানে না|”

যুক্তির অসারত্ব প্রমাণ করার জন্য মহাদেওজী উৎকৃষ্ট যুক্তি প্রদর্শন করেছেন,

“মহারাজ! রাঁজপুতদিগের পুরাতন স্বাধীনতা আছে, বিপুল অর্থ আছে, ছুর্গম পর্বত বা মরুবেষ্টিত দেশ আছে, হন্দর রাজধানী আছে, টসহত্র বৎসরের অপূর্ব রণশিক্ষা আছে, মহারাস্ত্রীয় দিগের ইহার কোনটি আছে? তাহারা দরিদ্র, তাহারা চিরপরাঁধীন, তাহাদের এই প্রথম রণশিক্ষা ।” |

-একটি অনগ্রসর জাতির প্রথম স্বাধীনতাবুদ্ধির উন্মেষ লগ্নটি বিশ্লেষণ করেছেন লেখক | শিবাজীর ভাঁদর্শ ব্যাখ্যায়ও রমেশচন্দ্র স্বাধীনতাকামী জনগণের উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন। বস্কিমচন্জ্রের মত রমেশচন্্ও ভারতীয় আদর্শ ভিত্তিক স্বদেশচেতনার পক্ষপাতী ছিলেন দেশের মাটিতে বিলাতি 18010%50) যে সম্ভব নয়-_ বস্কিমচন্দ্রেরে মত রমেশচন্দ্রও গভীর ভাঁবে সে কথা বিশ্বাস করতেন। ম্বদেশচেতনার বৈশিষ্ট্যটটি জাঁতিভেদে দেশভেদে ভিন্ন হওয়াই স্বাভাবিক উনবিংশ শতাব্দীর স্বাধীনতা আন্দোলনের ভিত্তি দৃঢ়ভাবে ভারতভূমির সনাতন আদর্শের ওপরেই প্রতিঠিত হোঁক আকাজ্ষা রমেশচন্দ্রেরও। মহাঁদেওজী শিবাজীর স্বপ্ন সাধন। ব্যাখ্যা করেছেশ;_

“মুসলমান শাসন ধ্বংসকরণ, হিন্দুজাতির গৌরব সাধন, স্থানে স্থানে দেবালয় স্থাপন, সনাতন ধর্মের গৌরব বৃদ্ধি, হিন্দুশাস্ত্রেরে আলোচনা, ব্রাহ্মণকে আশ্রয়দান, গোবৎসাদি রক্ষাকরণ, ইহা! ভিন্ন শিবাঁজীর অন্য উদ্দেশ্য নাই | - এই বিষয়ে যদি তাহাকে সাহায্য করিতে বিমুখ হয়েন তবে স্বহস্তে এই কার্য্য সাধন করুন। আপনি এই দেশের রাজত্ব গ্রহণ করুন, মুসলমান দিগকে পরাস্ত করুন, মহারাস্ট্ে হিন্দু স্বাধীনতা স্থাপন করুন ।”

৩৪৭ [0,100 903601)59 210 1913675 01 [18091 906580105 [2897 -*89৩০ ]

উপস্তাস | ৫৯৫

শিবাজীর এই আদর্শ হিন্দু রাজ্যস্থাপনের আদর্শ স্বাধীনতা উদ্ধারের এই প্রচেট্টা অভিনন্দনযোগ্য মহাঁদেওজীর ভাবীবেগপূর্ণ শিবাজী-মাহাত্ত্য-কথায় শেষ পর্যত্ত অভিভূত হয়ে যশৌবন্তসিংহ স্বীকার করে ছিলেন,

*“অগ্যাবধি শিবজী আমার মিত্র, আমি শিবজীর মিত্র রাজপুতের প্রতিজ্ঞ কখনও মিথ্যা হয় না, অগ্ভাবধি শিবজীর পণ আমার পণ এক, শিৰজীর চেষ্টা আমার চেষ্টা অভিন্ন সেই হিন্দুবিরোধী দিল্লীর্বরের বিরুদ্ধে এতদিন যিনি যুদ্ধ করিয়াছেন সে মহাত্বা কোথায়? একবার তাহাকে আলিঙ্গন করিয়৷ হৃদয়ের সন্তাপ দূর করি ।” | . এইভাবে রাজপুত মারাঠার মিলন সেতু কল্পনা করেছেন রমেশচন্দ্র। মাগাঠা শক্তির অভ্যুদয়কাঁলে রমেশচন্ত্র এই ছুটি স্বদেশপ্রাণ জাঁতির এঁক্যের স্বপ্ন দেখে কিছুটা শাস্তি পেতে চেয়েছিলেন হয়ত। এমন সম্ভাবনার মৃহ্র্ত ভারতবর্ষের অতীত ইতিহালের কোথাও ছিল ন!। কিন্তু ইতিহীসের নির্মম সত্য স্বদেশপ্রাণ এঁতিহাসিকের সমস্ত কঙ্পনা ধুলিস্তাৎ করে দিয়েছিল। ুরগ্গজেব যশোবস্তের অকর্মণ্যতা বুঝতে পেরে জয়সিংহকে স্থলাভিষিক্ত করেছিলেন

শিবাজীর সমগ্র জীবন দেশসেবায় উৎসর্গীকৃত। বাল্যকালে দেশপ্রেমের যে দীক্ষা শিবাজী পেয়েছিলেন,__রমেণচন্দ্র শিবাজীর বাল্যকথা বর্ণনায় তা ব্যক্ত করেছেন দাঁদাজী মৃত্যুশয্যায় শায়িত অবস্থায় তাঁর প্রিয় শিশ্যটিকে বলেছিলেন,

__প্বৎস, তুমি যে চেষ্টা করিতেছ তাহা হইতে মহ্তর চেষ্টা আর নাই। এই উন্নত পথ অন্ুলরণ কর, দেশের স্বাধীনতা সাধন কর।

আঁদেশ মৃত্যু পর্যন্ত মান্ত করেছিলেন শিবাজী। ভারতের ইতিহীসে দেশপ্রেমের এমন উজ্জল মহিমীর চিত্র থাকা সবেও পরাধীনতায় দীর্ঘকাল ডুবে থেকেছি আমন, অতীত এরতিহের প্রতি নীরব থেকেছি। শিবাঁজী প্রতাপসিংহের দৃষ্টান্ত নতুন করে আলোচিত হয়েছে বলেই স্বাধীনতা আন্দোলনে অনেক ত্রুত অগ্রসর হতে পেরেছি আমর1। সাহিত্যিকবৃন্দই পথ প্রদর্শন করেছেন ব্যাপারে জলন্ত ভাষায় দেশমহিমার কথা তারাই বারংবার উচ্চারণ করেছেন, আমাদের সচেতন করেছেন আপন কর্তব্য সাধনে

শিবাঞ্ী দমনে উরংজীব জন্মসিংহকে পাঠিয়েছিলেন, ইতিহাসের সিদ্ধান্ত অনুসারে জয়সিংহ ছিলেন চূড়ান্ত বুদ্ধিমান বিচক্ষণ ব্যক্তি। কিন্তু শিবাজী অয়সিংহকেও নতুন আদর্শের পথ চিনিয়ে দিলেন। রাজপুত জাতির চরিত্রে মোধল বিদবোধিতার সঞ্জে মোবলশ্রীতি ওওপ্রোভ হয়ে আছে। প্রভাপসিংহের নিল স্বদেশ প্রেমের পাশাপাশি মানপিংহের মোধল-দালত্ববরণের চিত্র রাজপুত ই্জিহাসেই

৫৯৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

পাই আমরা শিবাঁজী জয়সিংহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রাঁজপুতের কলঙ্ক চ্থালদ করার উপদেশ দেন,

“বাল্যকাল হইতে আপনাদের গৌরব গীত গাইতে ভীলব1সিতাঁম ; অদ্য দেখিলাম সে গীত. মিথ্যা নহে, জগতে যদি মাহাত্ম্য, সত্য, ধর্ম থাকে, তবে রাজপুত শরীরে আছে। রাজপুত কি যবনাধীন্তা স্বীকার করিবেন 1 মহারাজ] জয়সিংহ কি যবন আরংজীবের সেনাপতি 1” [ চতুর্দশ পরিচ্ছেদ ]

শিবাজী মহাবাস্্ীয় রাজপুতকে মিলিত করার আপ্রাণ সাধনা করেছিলেন, যশোবন্ত জয়সিংহের কাছে তার আবেদন একই মোঁধলশক্ভিকে প্রতিহত করার, আদর্শেই তিনি উৎসাহিত করতে চান। শুধু হিচ্দু বলেই ভয়সিংহের কাছে যশোবস্তের কাছে ছুটে এসেছিলেন শিবাঁজী মোঁথলরা রাঁজশাক্তর দত্ত নিয়ে সম ভারতবর্ষ শাসন করেছে,__কিন্ত সম্মিলিত কোন হিন্দুশক্তির.অভূথান কখনও হয়নি। শিবাজীর বক্তব্য অনেক বেশী মৃল্যবাঁন ছিল সন্দেহ নেই-_কিস্তু জয়সিংহ এর মহিমা প্রথমে বুঝতে পারেননি জয়সিংহ উত্তর দিয়েছেন,

“যখন দিল্লীশ্বরের সেনাপতিত্ব গ্রহণ করিয়াছি, ৬খন তাহার কার্যসিত্বির সত্যদান করিয়াছি যে বিষয়ে সত্যদান করিয়াছি তাহা করিব ।..'রাজপুতে ইতিহাস পাঠ করুন, সহত্র বৎসর মুসলমানদিগের সহিত যুদ্ধ করিয়াছেন, কখনও লঙ্ঘন করেন নাই। জয়লাভ করিয়াছেন, অনেক সময়ে পরাস্ত হইয়াছেন, জয়ে, পরাজয়ে, সম্পদে, আঁপদে সর্বদ1 সত্য পাঁলন করিয়াছেন এখন আমাদে সে গৌরবের স্বাধীনতা! নাই, কিন্তু সত্য পালনের গৌরব আছে ।” ৃঁ

শিবাঁজী দুজন রাজপুত প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপ করে বুঝলেন যে যশোবস্ত জয়সিংহ এক নন। জয়সিংহের চাতুরী অসাধারণ অথচ শিবাঁজী কৌশলে উদ্ধার করতে চান। জয়সিংহ যশোবস্তকেও সমালোচনা করেছে, তার চুক্তিভঙ্গে জন্য শিবাজীর উক্তি তার সম্মগ্র জীবনাদর্শের বাঁলী,_

“মহারাস্্রীয়েরাও মৃত্যু ডরে না, যদি এই অকিঞ্চিংকর জীবন দাঁণ করি৷ আমার উদ্দেশ্য সাধন হয়, হিন্দুস্বাধীনতা, হিদ্ুগৌরব পুনঃস্থাপিত হয়, ভবানীর সাক্ষাতে এই মুহূর্তে এই বঙ্ষঃস্থল বিদীর্ণ করিব, অথব1 রাজপুত | অব্যর্থ বর্শা! ধারণ কর, এই হৃদয়ে আঘাত কর, সহাশ্য বদনে প্রাণত্যাঁগ করিব কিন্তু যে হিচ্দু গৌরবের বিষয় বাঁল্যকালে স্বপ্ন দেখিতাম, যাহার জন্য শতযুদ্ধ যুঝিলাম্‌ শত শক্রকে পরান্ত করিলাম, এই বিংশ বৎসর পর্বতে, উপত্যকায়, শিবিরে, শক্রমধ্য দিবসে, সায়ংকালে, গভীর নিশীথে চিন্তা করিয়াছি ; আঁমি মরিলে সে রি রর

সে হিন্ছু দ্বাধীনতার, সে হিন্দু গৌরবের কি হইবে ?*.

উপগ্যাস €১৭

, “এই ভাঁবাবেগপূর্ণ কথায়ও জয়সিংহ আদর্শত্র&ু হননি তাঁর বক্তবা, সত্যপালন ধর্মরক্ষারই অঙ্গ দেশের স্বাধীনতার জন্যও ধর্মভ্রষ্ট হওয়া যায় না। অয়সিংহ ভবিষ্বৃতের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছিলেন,

ক্ষত্রিয়রাঙ্ক, চাতুরী যোদ্ধার পক্ষে সকল সময়ে নিন্দনীয়, কিম্তু মহৎ উদ্দেশ্য সাধনে চাঁতুরী অধিকতর নিন্দনীয় ।-..অগ্ভ আঁপনি নগর লুঠন করিতে শিখাইতেছেন, কল্য তাহারা ভারতবর্ষ লুগ্ঠন কবিবে, অগ্ত আপনি চতুরতা দ্বারা জয়লাভ করিতে শিখাইতেছেন, পরে তাহারা সম্মুখযুদ্ধ কখনই শিখিবে না। যে জাতি অচিরে ভারতের অধীর্বর হইবে, আপনি সেই জাতির বাল্গুরু, গুরুর ন্যায় ধর্মশিক্ষা দিন 1:

জয়সিংহ শিবাজীর কথোপকথনের দ্বারা রমেশচন্দত্র স্বাধীনতা৷ আন্দোলনের ভিত্তি কত দু হওয়! দরকাঁর,__ন্বদেশসেবকের আদর্শহই বা কি হওয়া উচিত, সম্পর্কেই আলোচনা! . করেছেন। শিবাঁজী একটি স্বদেশপ্রেমোদ্ধেলে জাতিকে পরিগালনা করেছেন সমস্ত জাঁতি তাঁকে নেতৃত্ব দিয়েছে-_হুতরাঁং নিতু পরিচালনার ওপরেই শিবাঁজীর বর্তমান ভবিষ্যতের সাফল্য নির্ভর করছে। জয়সিংহ শিবাজীকে শুধু বর্তমান নয়, মারাঠা জাতির ভবিপ্তংও চিন্তা করতে বলেছিলেন জয়সিংহ শিবাঁজীকে সংগঠক হিসেবেই বিচার করেছিলেন, তার দেশপ্রাণতার ওপর অপরিসীম শ্রদ্ধা ছিল বলেই তিনি সমালোচন। করেছেন তাঁকে নিপুশভাবে | শিবাঁজী অবশেষে জয়সিংহের পরামর্শ অনুসরণ করে আরংজীবের সঙ্গে সন্িস্থাপন করেছিলেন

উপন্যাসের এই অংশটুকু উপন্তাসিক রমেশচন্দ্রের নয়, বিচক্ষণ, দূরদর্শী, সত্য- সন্ধী এতিহাসিকের সৃষ্টি। ইতিহাসের নিভূর্লি সত্যকে অত্যন্ত নিপুণভাবে বিশ্টেষণ করেছিলেন রমেশচন্দ্র এই অংশটি সম্পর্কে 327259156 পত্রিকা সমালোচনায় বলেছিলেন,

01890552৬10 0000 01500 20 ০0819065020 176 10085175002 215. 21155 110991150 15 0015 00012 £611076 ৪00 1৪5 91220. 20 91211 ৫159195 6105 52006 001৩ ০0000 9 ৫৩5 18101) 11859125013 50010851 1021065 907605 ্র। 0 285100090,

ঘ12511357 15 0০০1 11061008 50008515 215৫ 8005৩০এ০ [8627068196, 606 150 1৬091010, 1879.1

রমেশচন্দ্র দেশপ্রেমের বাণী প্রচার করতে চেয়েছিলেন বলেই সবার উপন্যাসের নায়ক চরিত্রে স্বদেশপ্রেমিকতা একটি বিশেষ টবশিষ্ট্য ক্লপেই অঙ্কিত হয়েছে

৫৯৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল সাহিত্যে স্বদেশপ্রেষ

'জীবনপ্রভাঁতে” রঘুনাথজীর চরিত্রে স্বদেশপ্রেমের অমলিন আদর্শ শেষ পর্যন্ত প্রতিচিত হয়েছে। কল্পিত এই চরিত্রটিতে রমেশচন্ত্র দেশপ্রেমিকের নিষ্ঠা, দৃঢ়তা আত্মবিশ্বাসের ছবি অঙ্কন করেছিলেন। বিশ্বাসঘাতক হিসেবে লাঞ্চিত অপমানিত হলেও রঘুনাথ আত্মবিশ্বাস হারায়নি যথার্থ স্বদেশপ্রেমিকের দৃঢ়ত! নিয়েই লক্ষমীকে বলেছিলেন,__

“আমার জীবন আর নিরুদ্দেশ্য নহে, আমার হৃদয় উৎসাহ শুন্য নহে; ভগবান সহায় হউন, রধুনাথজী বিদ্রোহী নহে, ভীরু নহে, একথা এখনও প্রচার হইবে |*

এই পরিচ্ছেদে রমেশচন্দ্র ভারতপ্রীতির পরিচয় দিয়েছেন অবসন্ন রঘুনাঁথ যে বুক্ষমূলে উপৰেশন করলেন-_সেখানেই ত্রাহ্গণগণ পুরাঁণপাঠে রত ছিলেন। সে প্রসঙ্গেই রমেশচন্দ্রের গভীর ভারত প্রেম উচ্ছ্বসিত হয়েছে,

“এখনও কাশী বা মথুরাঁয়' পুরাতন মন্দিরে হ্র্যোদয়ে বা সুলিগ্ধ সায়ংকালে সহস্র ব্রাঙ্ধষণে সেই অনন্ত পুরাঁণকথ1 বেদমন্ত্র পাঠ করেন ।**সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরের ব্রাহ্মণেরা চারিদিকে উপবেশন করিয়৷ গম্ভীর স্বরে বেদপাঠ বা পুরাণ অধ্যয়ন করিতে থাকেন, তখন আমি দেশকাঁল বিস্বৃত হই, আধুনিক সময় আধুনিক জীবনের ভীষণ গগুগোল বিস্বত হই, হৃদয়ে নাঁন। স্বপ্রের উদয় হয়, ধোধ হয়, যেন, সেই প্রাচীন আর্ষাবর্তের মধ্যে বাস করিতেছি, চারিদিকে সেই পুরাকালের লোক, পুরাকালের সমাজ সভ্যতা, পুরাকালের শান্তি সুত্সিদ্ধতা |”

এখানে রমেশচন্দ্রেরে আত্মপরিচয়টিই যেন বিবুত হয়েছে এই ভারত্প্রীতি রমেশচন্দ্রের জীবনের প্রধান অবলম্বন ছিল। ইংরেজীতে তিনি খণ্থেদ, রামায়ণ, মহীভারতের অনুবাদ করেছিলেন এই প্রেরণা থেকেই রমেশচন্দ্রের স্বদেশচেতনার যূলেও ছিল এই গভীর ভারতশ্রীতি, সেদিক থেকে উনবিংশ শতাব্দীর দেশগ্রীতিকে ভারতগ্্রীতিরই নামান্তর বল৷ ঘেতে পারে সেযুগের দেশভাবন| ভারতমহ্মাকে নতুন করে প্রতিষ্ঠ। দিয়েছে, ইতিপূর্বে ভারত-বিস্বিতিই আমাদের সাবিক অধঃপতন ঘটিয়েছিল বল! যেতে পারে তাই স্বদেশপ্রেমিক মনীষীবৃন্দ দেশভাবনার অকৃত্রিম আবেগ ভারতচর্চার দ্বারাই নিঃশেষিত করেছিলেন। পরাধীনতার নাগপাশে আবদ্ধ ভারতবাসী যেদিন দেশপ্রেমের গভীর অনুভূতি লাভ করেছে, বর্তমান তাঁদের কাছে অন্ধকাঁরময় কারাগার $ তাই অতীত ভারতচর্চার উদ্মুক্ত €শস্ত পথটিই দেশপ্রেমিকের প্রধান অবলম্বন হয়েছিল উনবিংশ শতাব্দীর স+হিত্য তাই বর্তমানের কথা নয়--অতীতেরই রোযন্থছন | কাব্যে-নাটকে-উপস্ভাসে অভীত ফিরে এসেছে বারবার | এছাড়া কোন উপায়ও ছিল না। উনবিংশ শতাব্দীর নবজাগ্রত চেতন?

উপস্তাস ৫৯৯,

সেয়ুগের আতিকে অতীতের রঙ্গমঞ্চে আবিফার করেছিল। দেশপ্রেমের অনুরূপ চেতনা ইতিহাসে মৃত অতীত হয়েই ছিল,_এতদিন সেকথা নিয়ে কাব্য-উপন্তাস লেখার তাগিদও ছিল না যুগ প্রয়োজনে অতীত তার সমস্ত গৌরব গব নিয়ে আঁমাদের সামনে দাড়িয়েছে রমেশচন্দ্র এতিহাসিক উপন্তাঁসে ঠিক এই বক্তব্যই প্রকাশ করেছেন

“পাঠক, একত্র বসিয়া এক একবার প্রাচীন গৌরবের কথা গাইব, আধুনিক রাজপুত মহারাষ্্রীয় বীরত্বের কথা স্মরণ করিব, কেবল এই উদ্দেশ্যে এই অকিঞ্চিংকর উপন্যাস আরস্ত করিয়াছি যদি সেই সমস্ত কথা ম্মরণ করাইতে সক্ষম হইয়া! থাঁকি তবেই যত্ব সফল হইয়াছে,_নচেৎ পুস্তক দুরে নিক্ষেপ কর, লেখক তাহাতে ক্ষ হইবে না 1৮

উপন্যাস রচনার উদ্দেশ্য এত স্পষ্টভাবে বলার পরও আমাদেরও দিক থেকে আলোচনার আর কোন অস্থবিধ! থাকে না স্বদেশচেতনাই উপন্তাস রচনার মূল প্রেরণা এবং তা প্রচারেই লেখকের সার্থকতা |

“মহারাষ্ট জীবন প্রভাত" শিবাজীর স্বাঁধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, উনবিংশ শতাব্দীতে শ্বাধীনতা সংগ্রামের আসন্ন আয়োজনে রমেশচন্দ্রের যথাশক্তি সংযৌজন

শিবাঁজী ধৃত হয়ে দিল্লী আনীত হলেন, দিল্লীতে অতীতের হিন্দু মহিমাঁর স্মৃতি নৃতন করে উদ্দীপ্ত করেছিল তাঁকে শিবাঁজীর দেশোদ্ধারের স্বপ্ন লেখকের স্বদেশত্রতের স্থপ্ত আকাজ্ষী একসঙ্গে উচ্চারিত হয়েছে যেন,_-“সেদিন হিমালয় হইতে কাবেরী পর্যন্ত হিন্দু বীরগণ সবলহন্তে স্বাধীনতা রক্ষা করিত, হিন্দু ললনাগণ উল্লাসে স্বাধীনতা গান গাইত ! কিন্ত স্বপ্নের ন্যায় সেদিন গত হইয়াছে, পুরাতন দুর্গের নিকট পৃথুরায় অন্যায় সমরে হত হইলেন, পুণ্য ভারতস্থান অন্ধকারে আবৃত হইল! দিবসের আলোক গত হয়, পুনরায় দিবস আইসে, শীতকালে বিলুপ্ত পত্র কুক্ম বসন্তে অচিরে দেখা যাঁয়, ভারতের গৌরবদিন কি আর দেখা দিবে না? একদিন ভরসা করিয়াছিলাম, সেই গৌরবের দিন আবার আসিবে, সে আশা কি ফলবতী হইবে ?”

অংশে শিবাজীর স্বপ্ন রমেশচন্দ্রেরে আকাজ্ষা পৃথক করা যায় না। ষে প্রেরণ! একদিন মারাঠা শক্তিকে সাফল্য এনে দিয়েছিল তারই পুনর্জাগরণ রমেশচন্দ্রের অভিপ্রেত।

জয়সিংহের যৃত্যুর ঘটনাটিতে লেখক নাটকীয়ভাবে শিবাজীর কর্তব্য আদর্শের পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করলেন। ভারতীয় আদর্শের জয়ঘোষণা স্বাধীনতার জন্ত আসন্ন প্রস্তুতির নির্দেশটিও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা শিবাজী

৬৩০ উনবিংশ শতাবীর বাংল! সাহিত্যে হ্বদেশপ্রেম

হিন্দুর পুনর্জাগরণ ঘটাতে চেয়েছিলেন ; যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হিন্দু জাঁতীয়তাবোধই সম্মিলিত দেশচেতনায় পরিবতিত হয়েছিল শিবাজী যবন অত্যাচার দমন করতে চেয়েছিলেন, রমেশচন্দ্র সমগ্র ভারতের আ'সন্্র স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্ততি লক্ষ্য করেছিলেন শিবাজীর সর্বশেষ ঘোষণাটি যে কোন স্বাধীনতা আন্দোলনের ধ্বনি হতে পারে,__

“চারিদিকে চাহিয়া দেখ, চারিদিক হিন্দু অবমাননা, হিন্দুদেবের অবমাননা, দেবাঁলয়ের অবমাননা | হিচ্দুগণ, অন্ধ আমরা অবমাননা দূর করিব; শোক, অবমাননার যদি পরিশোধ থাকে, বীরগণ ! রণরঙ্গে আমরা ইহার পরিশোধ করিব |”

রমেশচন্দ্রের এ্রতিহাসিক উপন্াস চতুষ্টয়ের মধ্যে 'মহারাই্ই জীবন-প্রভাঁতের, মৌলিকতা৷ স্বদেশপ্রসঙ্গটি সর্বাপেক্ষা! উজ্জ্বল | কল্যাণকাঁমী সাহিত্যিক রমেশচন্দ্রের সাহিত্যপ্রীতির প্রসঙ্গে জে, এন, গুপ্ত রমেশচন্দ্রের ইংরাজী জীবনী গ্রস্থটিতে বা বলেছিলেন তা এখানে প্রণিধানযোগ্য,--

41215 ০0]. 8100 আ৪.5 60 102 2 ৮০9০ 26 0106 52006 5101176) 200 1015 0:094650 80010101010 9.5 1610106 00 “00 6056 0200 01 00015 15691050 02010955 209 £1060 10617 7100 1092 08021000500 192910 001 0256 12115100 2120 10156005200. 11651870016 100, 15610709106 70 1021)]5 20101190018. ০1: 001 2190 200. £16580950 17021062010659 00 0002 01081625901 0015 10811-02100015 15 60 00095 1১0 178৮০ 0:058006 05 0 13955 19100 22) 000521559-৩৫

রমেশচন্দ্রের “জীবন-প্রভীত' সম্বন্ধে অতি আধুনিক গবেষকও এই একটি মাত্র সিদ্ধান্তেই পৌছেছিলেন,_

“রমেশচন্দ্ প্রদুখ সাহিত্যিকবৃন্দ দেশের প্রতি প্রবল অঙন্গরাগ নিয়েই সাহিত্য সুট্টি করেছিলেন ।-.-মোৌঘল শাসনের বিরুদ্ধে ধ্াড়িয়ে প্রাঈন হিন্দু গৌরবকে পুনরুদ্ধার কাকে যে সমস্ত রাঁজা আপনাদের শক্তি নিয়োজিত করেছিলেন তারা মকলেই লেখকের প্রশংসাভাজন হয়েছেন ।-..শিবাজীর মধ্য দিয়ে জাতীয় এ্রক্য দৃঢ় হবে; বৈদিক সত্যতার অরুণোদয় ঘটবে, স্বাধীনতার মর্শবাধীটি ধ্বনিত হবে এইটিই লেখকের কাম্য ছিল ।-''আশন্দমঠের আদর্শে রচিত রমেশচন্দ্রেরে এই উপন্যাসে সেই স্বদেশগ্রেরণার বীজ দেখতে পাই 1৮৩৬ |

৩৫০ বত (90009 34886 2100 উ৬ চে ০৫ হ২009517 োজাজে 006৮ 19115

৩%. মিজিতকুমার দত্ত, বাংলা! সাহিত্যে ইতিহাসিক উপন্যাস, রমেপচন্র দত্ত, ১৯৬৩।

উপগ্থাস ৬৪১

বন্ততঃ রমেশচন্দ্রের সাহিত্য বিচারের প্রসঙ্গে তীর স্বদেশনাধনার উজ্জ্লতাই [সবার আগে চোখে গড়ে এীতিহাসিক উপস্তাস রচনার যূলেও প্রধান ভাবে এই উদ্দেশ্যই 2 "।1. আআ ব্যাপারে বহিধচ১.. হিসেবেই রমেশচন্ত্রের নাম স্মরণযোগ্য বঙ্কিমচন্দ্র আশা সফল হয়েছিল, কমলাকান্তের »৬৬ ১৬ বয়সের কথায়' ছুঃংখ করেছিলেন বস্কিমচন্ত্র-_

"উৎসাহ আধার কাছে পণুশ্রম-আশা আমার কাছে আত্মপ্রতারণা। কই আমার আশা ভরস] কিছু নাই!”

.এ আক্ষেপটি কিছুটা ভিত্তিহীন। বঙ্কিমচন্দ্ই স্বদেশপ্রেম ইতিহাঁসপ্রীতি শিক্ষিত বাঙ্গালীর মজ্জীয় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন তীর স্বপ্ন সফল হয়েছিলো এবং আশা আত্মপ্রতারণায় পর্যবসিত হয়নি। রমেশচন্দ্রকে বঙ্কিমচন্দ্র উদ্দীপিত করেছিলেন সাহিত্য রচনায়

রমেশচন্দ্রের শেষ এঁতিহীসিক উপন্যাস “রাজপুত জীবনসন্ধ্যা' রাজপুত কাহিনী অবলম্বনে রচিত। রাজপুত ইতিহাস তার অন্য তিনটি এতিহাঁসিক উপন্যাসেও স্থান পেয়েছে

রাজপুতের স্বদেশপ্রেম সমগ্র ভারতবাঁপীর অতি গর্বের বস্ত। স্বদেশপ্রাণ রমেশচন্ত্র, প্রসঙ্গরূপে রাজপুত মহিমীর বিবরণ দিয়েছেন, অপ্রাসঙ্গিক হলেও রাজপুতের শৌর্য-বীর্য বর্ণনায় তিনি সর্বদাই আত্মহারা “মাধবীক্কণে” রাজপুত ইতিহাস অবান্তর হলেও প্রাধান্য পেয়েছে 'জীবন-প্রভাতে' মহীরাষ্ নায়ক শিবাজীর সঙ্গে মোঘল বিরোধের সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়েও রাজপুত আদরশ ব্যাখ্যা করছেন রমেশচন্দ্র। রাঁজপুতের সুপ্রাচীন স্বদেশপ্রেম মহিমার জয়ঘোষণাই উপন্যাসের মুখ্য ঘটনাঁরূপে স্থান পেয়েছে যশোবন্ত সিংহ জয়সিংহ, দুজন রাজপুত বীর মহারাষ্ট নায়ক শিবাজীর রাজনৈতিক দৃষ্টিতর্পি সংশোধন করেছেন। রাজপুত মহিমা 'জীবন-প্রভাতে” নানাভাবে উচ্চারিত হয়েছে। মহাদেও যশোবন্তকে বলেছেন,-_

'রাজপুতের গৌরবই অনাঁথ ভারতবর্ষের একমাত্র গৌরব রাজপুতের যশোগীত আমাদের রমশ্লীগণ এখনও গাইয়া থাকে, রাজপুত দিগের উদাহরণ দেখিয়া আমাদের বালকগণ শিক্ষিত হয় ।”

এই এতিহপূর্ণ রাঁজপুত ইতিহাস সে কালের শিক্ষিত স্বদেশপ্রীণ বাঙ্গালীর অতিপ্রিয় বস্ত ছিল। রমেশচন্ত্রও রাজপুত মহিমা বর্ণনার পবিত্র দায়িত্ব পাঁলন করেছেন। মৃদ্ধ দেশভক্ত-দেশসাঁধক প্রতাপসিংহের পবিত্র জীবনকথা পরিবেশন করেছেন গ্রস্থটিতে | উপন্যাসটিতে তিনি সে উদ্দেশ্যও ব্যক্ত করেছেন,

1

৬০২ উন্বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

পাঠক! উপন্তাস কথা নহে. প্রতাঁপসিংহের বিদ্ময়কর বীরত্বকথার নিকট উপন্তাসকথ। কি ছার! কোন্‌ উপস্তাসে ইহা! অপেক্ষা ঘুর্দমনীয় সাহস দৃঢ় প্রতিচ্জার__ইহা অপেক্ষা প্রকৃত দেশাহুরাগ বীরত্বের পরিচয় পাইয়াছ? ভারতবর্ষের প্রন্তুত গৌরবের কথ' স্মরণ হইলে উপন্যাসকথা কি অসার বোধ হয় ! আ্ভুনির কথা কি অলীক বোধ হয়? প্রতাপসিংহের বীরত্ব আলোচন! কর ; তিনি সপ্তরথীর সহিত যুদ্ধ করেন নাই, সপ্তকোটি লোকের অধীশ্বর আকবর সাঁহের সহিত একাকী যুঝিয়াছিলেন তিনি একদ্িবস যুদ্ধ করেন নাই, পঞ্চবিংশ বৎসর অবিশ্রান্ত কন্দরবাসী ক্ষত্রিয় একাকী দেশরক্ষা স্বাধীনতা রক্ষা করিয়াছিলেন পঞ্চবিংশ বৎসর যুদ্ধের পর জীবনদান করিলেন ) স্বাধীনতা দান করেন নাই

প্রতাঁপের গৌরবগাঁথা “'জীবনসন্ধ্যার বিস্তৃত বর্ণনায় স্থান পেলেও রাজপুত জাতি সম্পর্চে আরও অনেক লক্ষণীয় তথ্য গ্রন্থে বিবৃত করেছেন লেখক রাজপুতগণ একদ। পারস্পরিক অনৈক্যের মধ্যেই বসবাঁস করত তেজসিংহের সঙ্গে হুর্জয়সিংহের বৈরিতা বংশগত ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা পালনের জন্যই দৃঢ়চিত্ত রাজপুত চারনী দেবী বলেছেন,

বংশান্ুগত শত্রুতা বৈরী রাজপুত ধর্ম। ভিলকপিংহ দুর্জয়সিংহের বংশের মধ্যে বৈরী নির্বাণ হইবে ন1।.

কিন্ত বিদেশী শক্রকে দমন করার জন্য এই গৃহকলহ পর্যন্ত বিসজন দিতে পেরেছিল রাজপুতই | ছুর্জয়সিংহ বলেছেন,__

“যতদিন শিশোদীয়ের একজন বীর জীবিত থাকিবে, যতদিন চন্দাতয়ৎ ধমশীতে শোণিত প্রবাহিত হইবে, ততদিন বীরপ্রসবিনী মেওয়ারভূমি পরাধীনতার কলঙ্করেখ। ললাটে ধারণ করিবেন না।”

রাজপুতের স্বদেশপ্রেম সমস্ত ব্যক্তিগত তুচ্ছতা বিবাদের উর্ধে, রাজপুতের কাছে স্বদেশের মান সবার ওপরে রমেশচন্দ্র অংশটিতে বারংবার একটি ফ্রবপদ উচ্চারণ করেছেন, “ক্ষতি নাই, প্রতীপসিংহ শিশোঞ্ীীয়ের নাম রাখিবেন, প্রতাপসিংহ স্বদেশের স্বাধীনতা রাঁখিবেন ।»

জীবনসন্ধ্যায় রাজপুতের পতনের বর্ণনা! আছে শুধু স্বদেশপ্রেম সম্বল করে প্রবল দুর্ধর্ষ শক্রকে বাধা দেওয়া যায় না। প্রতাপসিংহের উত্তরপুরুষরা তাঁর ঈপ্সিত স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারেননি রমেশচন্্র সে অংশটুকু সচেতনতার সঙ্গে বর্ণনা করেছেন। প্রতাঁপসিংহের যোগ্য উত্তরপুরুষরা মৃত্যুপশ করে সংগ্রাম করেছিলেন,-_- কিন্ত সফল হননি,

"লে যুদ্ধ বর্ণনা করিতে আমন অক্ষম )--বর্ণনা করিবার সী নাই

উপস্যাস ৬০৩"

রাতপুতগণ মৃত্যু নিশ্চয় জানিলে মানরক্ষার জন্য কিরপ যুদ্ধ করে, ইতিহাসের প্রত্যেক পত্রে তাহা বধিত আছে। মনুস্যের যাহা সাধ্য, রাঁজপুতগণ তাহা সাধিল, কিন্ত দশের সহিত একের যুদ্ধ সম্ভবে না; রাঁজপুত হীনসংখ্য হইয়! ক্রমে হটিতে লাগিল ।”

যুদ্ধের বিস্তৃত বর্ণনাটি বাদ দিয়ে রমেশচন্দ্র বিষয়টিকে আরও গভীরতা দিয়েছেন রাজপুত শৌর্ষের অবাস্তব কাল্পনিক বর্ণনা 'রাজসিংহের' পাঠককে ক্লান্ত করে রমেশচন্দ্র ব্যাপারে মৌলিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তবে 'রাঁজসিংহের' উপন্তাঁস- গুণ “জীবনসন্ধ্যাতে' অহ্ুপস্থিত। রমেশচন্দ্র উপন্যাস হিসেবে ইতিহাসকথাই পরিবেশন করেছেন আগাঁগোড়া দেশপ্রেমের গভীর আবেগে নীরস ইতিবৃত্তের মধ্যেও খানিকটা রসসঞ্চারিত হয়েছে মাত্র

সাহিত্যক্ষেত্রে রমেশচন্ত্রের আবির্তীবেরও আগে প্রতাপচন্দ্র ঘোষ 'বঙ্গাধিপ পরাজয়” উপন্তাঁসটি শুরু করেছিলেন ছুটি খণ্ডে এ্রতিহাসিক উপস্তাস রচনার প্রেরণা সঞ্চার করেছিলেন বন্কিমচন্্রই,_ প্রতীপচন্রও ইতিবৃত্ত অক্ষুণ রেখে এতিহাসিক কাহিনী রচনারই পরিকল্পনা করেছিলেন বাংলার বারো ভুইঞাদের অন্যতম বার প্রতাপাদিত্যকে “জাতীয় বীর”ূপে গণনা করার আবেগ সেযুগেই এসেছিল কিন্তু ওঁপন্তাসিক প্রতাপচন্দ্র প্রতাপাদিত্যের গৌরবের কাহিনীটুকুই অবলম্বন করেননি এঁতিহাসিকতাঁও অনুসরণ করেছিলেন প্রতাপের স্বদেশপ্রেম, বীরত্ব, স্বাধীন রাজ্যন্থাপনের বাঁসনাকে উজ্ভ্বলভাবে চিত্রিত করে গওঁপন্তাঁসিক তার ্বদেশপ্রেমেরই পরিচয় দিয়েছেন। প্রতাপাঁদিত্যের মূল এতিহাসিক কাহিনী সংগ্রহ করেছিলেন ইতিহীসপ্রেমী লেখক। আকবরের সঙ্গে যুদ্ধে তার পরাজয় ঘটনাটিও মেনে নিয়েছিলেন ইতিহাসের সত্যের প্রতি আম্ুগত্য রক্ষা করেই তিনি গ্রন্থের নামকরণ করেছিলেন,__“বঙ্গাধিপ পরাজয়” বা 'বঙ্গেশ বিজয়” প্রতাপাদিত্যের শৌর্যবীর্য উচ্চকাঁজ্ষার বর্ণনাই গ্রন্থকীরের উদ্দেশ্য ছিল না; প্রতাপাদিত্যের নিন্দনীয় গহিত কাজের সমালোচনাও করেছিলেন তিনি গ্রন্থটির বিশেষত্ব এখানেই জাতীয় আন্দোলনের পূর্বপ্রস্ততি লগ্নে যে বায়বীয় উচ্ছাস উপন্তাসে কাব্যে অতিমাত্রায় সোচ্চারিত হয়েছিল 'বঙ্গাধিপ পরাজ্বয়কে তার ব্যতিক্রম বলতে হবে বঙ্কিমচন্দ্রই ইতিহাসের আধারে আদর্শ অনুসন্ধান করতে গিয়ে অতি উচ্ভুসিত হয়েছিলেন এছাড়া উপায় ছিলো ন1 তাদের |

প্রভাপাদিত্য সম্পর্কে প্রথম স্তরতি রচনা করেছিলেন ভারতচন্দ্র। যবনলা গত বাংলাদেশে স্বাধীনচেতা প্রতাপাদিত্যকে যোগ্য সম্মান দিয়েছিলেন তিনি। মুল' ধতিহাসিক চরিত্র হিসেবে বিচার করলে মানুষ. প্রতীপাদিত্যকে আমর! যেভাবে; আবিষ্কার করি আদর্শের দৃষ্টিতে দেখলে তার সেই তুচ্ছতাটুকু ঢাকা পড়ে যায় ৮"

৬০৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে হ্বদেশপ্রেম

বাংল! নাটকে স্বদেশপ্রেমের জোয়ার এসেছিল এই সব বীরচরিত্র অবলম্বন করেই-_ ধাদের এঁতিহাসিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সিরাজন্দৌলা, মীরকাশেম, প্রতাপাঁদিত্য, মহারাঞজা নন্দকুমার, সীতারাম-- আমাদের কল্পিত ব্বদেশপ্রেমিক | এদের সামনে রেখেই আমরা দেশোদ্ারের শপথ নিয়েছিলাম কিন্তু সে আরও অনেক পরের কথা। প্রতাঁপাদিত্যকে “বঙ্গাধিপ পরাজয়ে” আমর একটি সজীব চরিত্ররূণেই প্রত্যক্ষ করি। রাজনৈতিক জটিলতা, মানসিক অন্তদ্বন্ছব উচ্চাশায় পীড়িত প্রতাপা দিত্যের জীবন কাহিনী শুনিয়েছেন লেখক তবে ওঁপগ্ভাসিকের ক্ষমতা দেখাতে পারেননি বলেই উপস্াঁটি সার্থক হতে পারেনি প্রতাপাদিত্য অবলম্বনে অসফল এই একটিমাত্র উপন্যাস রচনা করেছিলেন তিনি পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ প্রতাপাদিত্য কাহিনী নিয়ে উপন্যাস রচনা করেছিলেন, 'বঙ্গাধিপ পরাজয়” সম্ভবতঃ তিনি পড়েছিলেন 'রবীন্দ্রনাথের সর্বপ্রথম এই উপন্তাসটিও বঙ্ধিমপ্রভাবিত। তবে রবীন্দ্রনাথ প্রতাপাদিত্যের সাংসারিক জীবনই উপন্যাসে স্থান দিয়েছিলেন, রাজনৈতিক বিষয়কে প্রাধান্য দেননি। প্রতাপচন্দ্রের 'বঙ্গাধিপ পরাজয়ে" প্রতাপাদিত্যের রাজনৈতিক জীবনাবর্তই প্রাধান্য পেয়েছে। প্রতাপাদিত্যের চরিত্রে জল

স্বদেশপ্রেমের আবেগ ছিল, তিনি দেশের স্বাধীনতাকে অযূল্য সম্পদ বলে জ্ঞান করেছেন পারিবারিক যে কলহের ফলে প্রতাপাদ্দিত্যের চরিত্রে নৃশংসতা, নিষ্ঠুরতা প্রত্যক্ষ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ প্রতাপচন্দ্র তাকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করেছেন

দেশাহ্ুরাগ ছিল বলেই প্রতাপচরিব্রের মর্যাদাও বাড়িয়েছেন লেখক | রবীন্দ্রনাথ “বৌঠাকুরানীর হাটের" ভূমিকায় বলেছিলেন,__

"এই উপলক্ষে একটা কথ1 এখানে বলা আবশ্যক স্বদেশী উদ্দীপনার আবেগে প্রতাঁপাদিত্যকে এক সময়ে বাংলা দেশের আদর্শ বীরচরিত্র রূপে খাড়া করবার চেষ্টা] চলেছিল এখনও তার নিবৃত্তি হয়ুনি। আমি সে সময়ে তার সম্বন্ধে ইতিহাস থেকে যা কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছিনুম তার থেকে প্রমাণ পেয়েছি তিনি অন্যায়- কারী অত্যাচারী নিষ্ঠুর লোক, দিল্লীশ্বরকে উপেক্ষা করবার মতো অনভিজ্ঞ ওদ্ধত্য তার ছিল কিন্তু ক্ষমতা ছিল না। সে সময়কার ইতিহাঁস-লেখকদের উপরে পরবর্তীকালের দেশীভিমানের প্রভাব ছিল না। আমি যে সময়ে এই বই অসংকোচে লিখেছিলুম তখনও তাঁর পুজা প্রচলিত হয়নি ।»

১. ১৮৮৩ থুঃ বৌঠাকুরানীর হাট" রচনাকালে রবীন্দ্রনাথ যে দেশাভিমীন বজিত "নিরপেক্ষ বিচার বুদ্ধির পরিচয় রেখেছিলেন--ত। যুগ বিচারের পটউভূমিকায় বিত্ময়কর বলতে হুবে। দিশ্ীর্বরকে উপেক্ষা করবার মত ওদ্ধত্য যে প্রতাপাদিত্যের ছিল-- এ্ীতিহাসিকরা তা স্বীকার করেছিলেন। দেশপ্রেমিক লেখকের কাছে এই উদ্বত্যই

উপন্যাস হিঃ

দেশপ্রেমিকতা বলেই গৃহীত হয়েছিল; রবীন্দ্রনাথ তাকে নিছক অনভিজ্ঞ দ্ধত্য বলেই ব্যাখ্য। করেছিলেন |

প্রতাপাদিত্য সম্পর্কে সত্য ইতিহাসের বিবরণ দিতে গিয়েও লেখক সম্প্রদায় যে প্রতাঁপের বীরত্বে ভাবাচ্ছন্্ন হয়েছেন দৃষ্টান্তও বিরল নয়। বস্তুতঃ নথশংসতা, অমানবিকতা ইত্যাদি চারিত্রিক ক্রটিকে যদি আত্মস্বার্থের বাইরের প্রয়োজনে ব্যবহার কর! হয় তখনই কিছু মহত্ব আবিষ্কার কর] সম্ভব হতে পারে প্রতাপাদিত্যের ইতিহাস রচনাকালে এতিহাসিক নিখিলনাথ রায় সে চেষ্টাই করেছিলেন! প্রতাপের অমার্জনীয় অপরাঁধকে লঘু করার চেষ্টা না করেও কিছু প্রশংসা না করে পারেননি তিনি। এখানে এতিহাসিকের বিচারক্ষমতার সঙ্গে দেশপ্রেমিকের আগ্রহটিই বর্তমান। প্রতাপ সম্বন্ধে এতিহাসিক নিখিলনাথ রায় যে তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন তাতে বসন্ত রায়ের সঙ্গে প্রতাপের সংঘর্ষ কাহিনীর মূলেও তিনি প্রতাপের স্বদেশানুরাগ লক্ষ্য করেছিলেন তাঁর ভাবাবেগপূর্ণ উক্তিটি স্মরণীয়,

*বন্গভূমিকে স্বাধীনতার লীলানিকেতন করিবার জন্য তিনি অদম্য অধ্যবসায় আশ্রয় করিয়াছিলেন, বঙ্গবাসীর কাপুরুষ নাম অপনোদনের জন্য খিশি তাহাদের বাহুতে শক্তি দিয়াছিলেন, বাঙ্গালীর রাজ্যপ্রতিষ্ঠা করিবার জন্য যিনি আসমুত্র বিজয়নিশান উড্ভীন করিয়াছিলেন তাহার গৌরব গীতি গাহিতে কাহার না ইচ্ছা! হয় 1৮৩৭ দস্থ্য ভবানীপাঠক উপন্যাঁসিকের কল্পনায় মহাঁপুরুষরূপে বন্দিত, অবাঙ্গালী : সন্্যাসী সম্প্রদায় যখন স্বার্থরক্ষার জন্যই ইংরাজের সর্শে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল__বঙ্কিমচন্দ্র এই অবাস্তব ঘটনাকেও একটি স্থউচ্চ ভাব মহিমময় আদর্শে সঙ্জিত করেছিলেন--শুধু যুগ প্রয়োজনেই প্রতাপচন্ত্রের মধ্যে নিরপেক্ষ প্রতিহাসিকচেতনা থাঁকা সত্বেও তিনি রবীন্দ্রনাথের মত প্রতাপাদিত্যকে নিছক অত্যাচারীরূপে চিত্রিত করেননি রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসের এই দৃঢ়ধারণা পরবর্তীকালের নাট্যকারও গ্রহণ করেননি ক্ষীরোদপ্রসাদের 'প্রতাপাদিত্য' নাটকে প্রতাপাদিত্য জাতীয় বীরের প্রতিত্রূপেই গৃহীত হয়েছিলেন এঁতিহাসিকতা ও! দেশাত্ববোধের সঙ্গে যে সংঘর্ষ উপস্থিত হয়েছিলো! অধিকাংশক্ষেত্রেই এঁতিহাসিকতা। ্ুন্ন হয়েছে-_দেশাত্মবৌধের আবেগছ জয়ী হয়েছে।

গ্রন্থে প্রতাপাদিত্যকে স্বাভাবিক ভাবেই উচ্চাকাজ্ী দেশপ্রেমী বলে প্রমাণ করেছেন লেখক আকবরের সেনাপতি টোঁডরমল যশোহনগের কর্ৃত্বভার

অর্পণ করেছিলেন বসন্তরায়কে | প্রতাপ ঘটনাটিকে সম্পূর্ণ অন্যভাবে ব্যাখ্য।

৩৭, বিখিলনাখ রায়, প্রতাপাদিত্য, ১৯০৬, পৃঃ 451

+৬০৬ উনবিংশ শতাববীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

করেছিলেন প্রতাপাদিত্যের সঙ্গে বিজঞয়ক্ৃষ্ণের কথোপকথনকালে প্রতাপাদিত্য বলেছেন,-_

প্থুড়া৷ বসন্তরায়ের রাজ্যকৌশল অতি হীনবৃত্তি লোকের মত ছিল। তিনি আপন ঘরের দ্বাররুদ্ধ করিয়। সিংহাসনে বসা স্ুখজ্ঞান করিতেন তাহার কথা ছাঁড়িয় দাঁও। তাহার মত কাপুরুষ যশোরের সিংহাসন আর কেহ অপবিত্র করে নাই তিনি বিনাযুদ্ধে দিল্লীশ্বরকে পত্র লিখিয়! দিলেন তাহাকে সম্রাট বলিয়। স্বীকার করিলেন। যশোরের স্বাধীনতা এক কালে নষ্ট করিলেন 1৮৩৮

এখানে প্রতাঁপের স্বদেশচিন্তার প্রসঙহ্গটি স্পষ্ট হয়েছে যশোরের স্বাধীনতাকে তিনি অত্যন্ত মূল্যবান বস্তু বলেই মনে করতেন। খুল্লতাতের সঙ্গে তার যত পার্থক্যের হেতুটি যে স্বদেশগ্রীতি কথাটি লেখক ম্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন প্রভাপাদিত্য শ্বাধীন হিন্ুরাজ্যের আধিপত্য চেয়েছিলেন বসত্তরায় তাঁর এই স্বদেশপ্রেমকে বুঝতে পারেননি প্রতাপাঁদিত্য সে বিষয়টি স্পষ্ট করেছিলেন,

“কাপুরুষের৷ যুদ্ধকে তয় করিয়া বুদ্ধিমানের কাজ করে সাহসী পুরুষকে অবোধ, গৌঁয়ার বলে ।”

প্রতাপাদিত্য নিজের আদর্শে অবিচল ছিলেন এবং দেশনিষ্ঠাই যে প্রভাপাদিত্যের শক্তি শৌর্ষের যূলপ্রেরণ। ছিল, উপন্যাস পড়লে ধারণাটি স্পষ্ট হয় বসন্তরায়ের সঙ্গে প্রতাপাদিত্যের বিরোধের মূলে স্বদেশচেতন৷ কল্পনা করেছিলেন বলে পাঠকের সমস্ত সহানুভূতি প্রতাপাদিত্যই লাভ করেন। পিতৃব্যহত্যার যূলেও যশোরের স্বাধীন নৃপতি হওয়ার বাসনাটিই প্রবল | প্রতাপাদিত্য চরিত্রের এই অমার্জনীয় অপরাধটিকে এইভাবে কিঞ্চিৎ লঘু করার চেষ্টা করেছিলেন লেখক | কিন্তু তাঁকে মহামানবরূপে বা অনিন্দনীয় চরিত্রক্ূপে দেখানোর চেষ্টা কোথাঁও নেই। উপন্যাসের শেষাংশে বিষলা প্রতাঁপাদিত্যকে সমালোচনা করে বলেছিল,--“আপনার পাপ আর সংসারে ধরে না। মহারাঁজ! আপনার ছষ্টবুদ্ধি আপনাকে কত শত ভয়ানক গহিত প্রায়শ্চিত্ত বিহীন পাঁপে লিপ্ত করিয়াছে তাহা অবগত নহেন |” [ এ, পৃঃ ৩২৮]

ভালমন্দ মেশীনে৷ মানুষ হিসেবেই প্রতাপাদিত্য চরিত্রের কল্পনা করেছিলেন লেখক, অথচ তার দেশচেতল। স্বাধীনতাগ্রীতি কোথাও অস্পষ্ট হয়নি, এখানেই গ্স্থটির অভিনবত্ব। চরিত্রটির এ্রতিহাসিক ভিত্তিকে অগ্রাহ না করেও প্রতাপাদিত্যের চরিত্রে অসামান্য স্বাধীনচেতনার আরোপ করে আমাদের সম্রদ্ধ দৃরি আকর্ষণ

২৮, প্রতাপ ঘোষ, বঙ্গাধিপ পরাজয় বা বঙ্গেশ বিজ, ১৮৬৯--১৮৮

উপস্থাস ৬৩৭

করেছিলেন লেখক। বিজয়রুক্ণ প্রতাপাদিত্যকে দ্বাদশ সূর্যের একজন বলে প্রশংসা করেছিলেন | তাঁর উত্তরে ক্ষ প্রতাপাদিত্য বলেছিলেন,__

“এখন দ্বাদশমাত্র রাজত্বের চিন্তা করিতে হয়, যথেষ্ট জ্ঞান করিলে, কিন্ত বিবেচনা করিলে না ষে, প্রতাপাদিত্যের মন ভারতবর্ষ এককালে গ্রাস করিতে সমর্থ ।__আমি যতদুর পর্যন্ত মনপটে দেখিতে পাই, তাহার মধ্যে অপর কাহার শাসন আমার যেন হাদে শেলমত লাগে আমার তাহা সহ্য হয় না।...যুধিষ্ঠিরের সিংহাসনে যে বিদেশীয় যবন বসিবে, ইহা আমার অসহা। পৃথুরাক্ষ চৌহান 'ষে ছত্র শিরে ধারণ করিয়াছিলেন, সে ছত্র অশ্বামাংসলোলুপ, বাঁসহীন, অসভ্য তাতারে অধিকার করে কোন সৎ হিন্দুর বক্ষে সহে 1”

এই উক্ভি স্বদেশপ্রেমিক প্রতাপাদিতোর পূর্ণ পরিচয় উদঘাটন করেছে বলা যান্ব। বারে ভূইঞাঁদের মধ্যে প্রতাপাদিত্যই মোঘল শাসনে সন্তষ্ট ছিলেন না। বিদেশী শাসনমুক্ত হবার শক্তি হয়ত তাঁর ছিল না,--কিন্ত বাসনা ছিল। পরাধীনতার গ্লানির মধ্যেই ব্বদ্রেশশ্রীতির অমলিন প্রকাশ 'বঙ্গীধিপ পরাজয়ে" প্রতাপাদিত্য চরিত্রে এই সত্যটিই লেখক অকুঞচিত্তে প্রচার করার আয়োজন করেছিলেন

প্রতাপাদ্িত্যকে বঙ্গের শেষবীর রূপে প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে হারাণচন্দ্র রক্ষিত লিখেছিলেন বঙ্গের শেষবীর”। রবীন্দ্রনাথের “বৌঠাকুরা'নির হাট" প্রকাশিত হওয়ার পর গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল। এখানেও প্রতাপাছগিত্যের রাজনৈতিক জীবন উপন্যণসের উপজীব্য হয়েছে। প্রতাপাঁদিত্যের চরিত্রে যুগোপযোগী ভাব আরোপ করে উচ্ছৃসিত হতে চেয়েছিলেন সেযুগের স্বদেশপ্রেমী লেখকসম্প্রদায়।

বাংল! সাহিত্যের সার্থক মহিলা ও্পন্তাসিক রূপেই নয় স্বদেশচেতনা নিয়ে উপস্তাঁস রচন1] করার প্রথম গৌরবও আমরা ্বর্ণকুমারী দেবীকেই দিতে পারি। ্বর্ণকুমারী দেবী যে পরিবেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন-_সাহিত্যপ্রতিভা কিংবা দেশচেতন৷ সেই পরিবেশেই লালিত হতে পারে মহষি দেবেন্দ্রনাথের কন্তা, ঘিজেন্দ্রনাথ, জ্যোতিরিক্দ্র- নাথের ভগিনী, রবীন্দ্রনাথের অগ্রজা। স্বর্ণকুমারী দেবীর সাহিত্য প্রতিভা তার সহজাত গণ। কিন্তু দেশচেতনাটি তিনি পরিবেশ থেকেই লাত করেছিলেন বাংলাদেশের স্বদেশী আন্দোলনে ঠাকুর পরিবারের একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। মহষি দেশপ্রাণ ছিলেন,__ত্বার সবকটি সন্তানের চরিত্রেই এই দেশবোধ, স্বাজাত্য প্রীতি 'দেখতে পাই জ্যোতিরিক্্নীথের মধ্যে এই দেশচেতনা বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। সাহিত্যরচনায়, হিন্দুমেল! উপলক্ষে, স্বদেশী ব্যবসা! গড়ে তোল্র আপ্রাণ চেষ্টায় 'জ্যোতিরিক্্রনাঁথ অগ্রলী ছিলেন। বাংলায় স্বদেশপ্রেমের নাটিক লিখে তিনিই মঞ্চকে 'মমৃদ্ধ করেছিলেন শর্ণকুমারী দেবী এমন একটি পরিবেশেই বড়ো! হয়েছিলেন

৬০৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

১৮৬৭ সালে হিন্দুমেলাকে কেন্দ্র করে যে স্বদেশীয়ানার জোয়ার দেখা দিয়েছিল ্্ণকুমারী দেবী সে উত্তেজনায় প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন সাহিত্যক্ষেত্র প্রবেশের বহ্ছপূর্বেই তিনি সাহিত্যজগতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত ছিলেন হৃতরাং স্ব্ণকুমারী দেবীর সাহিত্যে স্বদেশপ্রেমের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছিল বলা যায়। সেয়ুগের সচেতন লেখিকা হিসেবে তিনি বাংলাদেশের সাহিত্য পরিমগ্ুলের যূল ভাবটিই অনুসরণ করেছিলেন | বাংলা সাহিত্যের প্রথম তাল লেখিকাই শুধু নন-_বাংল৷ সাহিত্যের প্রথম স্বদেশ সচেতন লেখিক। হিসেবেই স্বর্ণকুমারী দেবীর সাহিত্য বিচার চলতে পারে

১৮৭৬ সালে স্বর্কুমারী দেবীর প্রথম উপন্তাঁস পীপনির্বাণ, প্রকাশিত হয়। তার প্রথম উপন্তান রচনা প্রসঙ্গে সমালোচক শ্রীব্জেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সাহিত্য সাধক চরিতমালায় বলেছিলেন,

"্্বদেশপ্রেমই স্বর্ণকুমারী দেবীর সাহিত্য সাধনার উৎস ।...এই স্বদেশপ্রেমই তাহার প্রায় সকল রচনাতেই লক্ষ্যণীয় ।”-_স্বদেশভাবন। তীর সমগ্র রচনায় কিছু পরিমাণে আছে বলেই নয়, স্বর্ণকুমারী দেবীর সমগ্র জীবন পর্যালোচনা করলেও আমরা তার স্বদেশচিন্তার একটি স্বতোপ্রবাহিত ধারা লক্ষ্য করি সংবাদপত্র পরিচালনায়, সখী সমিতি সংগঠনে মহিলা শিল্পমেলার প্রবর্তনেও তীর ব্বদেশসেবার পরিচয় পাই “ভারতী'র সার্থক সম্পাদিকা স্বর্ণকুমারী দেবী দীর্ঘকাল একটি প্রথম শ্রেণীর সাহিত্য পত্রিকা প্রচার করেছিলেন যোগ্যতার সঙ্গে। পত্রিকা সম্পাদনাম্ন প্রথম বাঙ্গালী মহিলা ছিলেন তিনি | “ভারতী” সাহিত্য পত্রিকা হিসেবে বিশেষ স্থনাম অর্জন করেছিল সেযুগে। সেযুগের ভাবান্দোলনেও সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিল এই পত্রিকাটি স্থতরাং “ভারতী'র সম্পারদদিক৷ স্বর্ণকুমারী দেবী এই গৌরবের অংশ' ভাগিলী সম্বদ্ধে কোনো সমালোচক বলেছেন,_

"ভাঁরতীর* যূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের শিল্প সংস্কৃতিকে নূতন করে পরিবেশন কর! দেশচর্চার এই ব্রত স্বর্ণকুমারী সধত্বে পালন করেছেন 1৮৩৯

স্বর্ণকুমারী দেবীর জীবনাদর্শ সাহিত্যপ্রতিভা এই পৰত্রিকাটিকে কেন্দ্র করে উচ্ছ্বসিত হয়েছিল সহজাত সাহিত্যপ্রতিভা দেশচেতন। তার সাহিত্যজ্ীবনকে পাফল্যম্ডিত করেছিল বল যায় |

স্বর্ণকুমারী দেবী উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধ থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথমীর্ধঘ পর্যন্ত সাহিত্যসেবায় রত ছিলেন তার প্রথম যুগের লেখা উপন্যাপ আমাদের আলোচনায়

৩৯. বিজিত্কুমার দত, বাংল] নাহিত্যে এতিহাসিক উপস্কাস, দ্বরণকুষারী দেবী, ১৯৬৩।,

উপন্যাস ৬৩৪

স্থান পাঁবে। তীর প্রথম যুগের উপন্যাসে দেশপ্রেমের যে উজ্জ্রল প্রকাশ লক্ষ্য করি পরবর্তীকালের রচনায় তা আরও শ্কীত হয়েছিল। স্বদেশচিন্তা কোন কোন উপন্যাসে হয়ত প্রসঙ্গতই এসেছে,_কোথাও তা অপ্রাসঙ্গিক গৌশ তবু দেশচর্চার কখ। একেবারে বাদ দিয়ে লেখিকা কিছু চিন্তা করতে পারেননি শ্বর্ণকুমারী দেবী গতানুগতিক রীতি অনুসরণ করেই উপস্ঠাঁসের ক্ষেত্রে পদার্পণ করেন | বহ্ছিমটন্ত্র জন- চিত্তজয়ী উপস্তাসিক,_-তীর প্রভাব অনতিক্রম্য ছিল সেকালে | রষেশচন্দ্রও স্বমহিমান্ন প্রতিষ্ঠিত, স্বর্ণক্মারী দেবীর ওপরে এ'দের প্রভাঁব পড়াঁটাই স্বাভাবিক বঙ্কিমচন্দ্র রমেশচন্দ্রের মত স্বর্ণকুমারী দেবীও ইতিহাসভিত্ভিক উপন্যাস রচন! করে দেশপ্রেম প্রকাশ করেছিলেন। ১৮৭৬ থেকে ১৮৯৮ সালের মধ্যে প্রকাশিত স্বর্ণকুমারী দেবীর আটখথানি উপন্যাসের মধ্যে চারখানি উপন্যাঁসেই তিনি ইতিহাস অন্থুনরণ করেছিলেন তাঁর প্রথম উপন্যাসে ভারতবর্ষে প্রথম ঘবনাধিকারের কাহিনী স্থান পেয়েছে “দীপনির্বাণ, নামকরণের মাধ্যমে তিনি ভারতের সর্বপ্রথম আর্য গৌরবের পতনের কথাই বলতে চেয়েছেন 'মিবাররাজ' “বিদ্রোহ'-_রাজপুত ইতিহাস অবলম্বনে রচিত “ফুলেরমালায়' রাঁজ। গণেশদেবের কাহিনী স্থান পেয়েছে তবে বঙ্ষিমচন্ত্র রমেশচন্দ্রের নির্ধেশিত পথে বিচরণ করলেও কাহিনী নির্বাচনে ইতিহাস নির্বাচনে তিনি স্বকীয় মৌলিকত্ব প্রদর্শন করেছিলেন রাজপুত ইতিহাসের নির্বাচনেও তিনি মৌলিকত্ব দেখিয়েছেন রাজ্মপুত ইতিহাসের আদিযুগে ফিরে গেছেন লেখিকা প্রচলিত রাজপুত চরিত্র নির্বাচন করেননি তিনি বাংলার ইতিহাস থেকেও তিনি যে অধ্যাক়টি বেছে নিয়েছিলেন তাতেও তাঁর যথেষ্ট কক্সনাশক্তি বৈচিত্র্যের সন্ধান মেলে ইতিহাসের পটভূমিকায় দেশচেতনা যে অবাধে প্রকাশ কর। চলে রহস্থ্টি তিনি হদয়জম করেছিলেন বলেই সম্ভবতঃ ইতিহাসের আশ্রয় গ্রহ্শ করেছিলেন কিন্তু সামাঞ্জিক উপন্তাসেও দেশপ্রেম প্রসঙ্গের অবতারণা করা লেখিকার বিশিষ্টতার পরিচায়ক বস্কিমচন্দ্রও সামাজিক উপন্যাসে দেশকথা উহা রেখেছিলেন, স্বর্ণকুমারী এ-ব্যাপারে অনেক বেশী অগ্রসর ছিলেন। ছিন্ন মুকুল [১৮৭৯] স্নেহলতা [ ১৮৯০ ] উপন্যাসে তিনি অবাধে দেশপ্রেম প্রসঙ্গের অবতারণা করেছিলেন ্বর্ণকুমারী দেবীর প্রথম উপন্যাস '“দীপনির্বাণ, তাঁর দেশপ্রেমে উদ্দন্ধ মনটিকে

দিত দেয়) উৎসর্গ পত্রে তিনি লিখেছিলেন, ..., "আর্য -অবনতি-কথা, পড়িয়ে পাইবে ব্যথা, প্বহিবে নয়নে তব শোক অশ্রধার, কেমনে হাসিতে বলি, সকলি গিয়েছে চলি, ঢেকেছে ভারত ভান ঘন মেঘজাল, নিভেছে সোনার দীপ ভেঙ্গেছে কপাল 1”

রর 828 7 ৭১ 7 নু 1785 4

৬১০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে বদেশপ্রেম।

অংশের বক্তব্যটি লেখিকার ত্বদেশপ্রাণ : অন্তরেরই, ফথা। : ভারতবর্ষের পরাধীনতার চেতন সেযুগের সমস্ত দেশপ্রেমীদের -বেদনাহত করেছিল, স্বর্ণকুমীরী দেবীও তা মর্মে মর্মে অনুভব করতেন বাংল! কাব্য-নাটক-উপস্তাঁসে এই-চেতনাটিই নানাভাবে আত্মপ্রকাশ করতে চেয়েছে বারবার. ভারতের বর্তমান ছুরবস্থায় তিনি ক্রন্দন কাহিনীই শোনাতে পারেন, আনন্দের বার্তা শোনানোর ক্ষমতা তাঁর নেই

'দীপনির্বাণ-_কাহিনীতে প্রথম যবন আক্রমণের মুহূর্তটি চিত্রিত হয়েছে। মহম্মদ ঘোরীর সঙ্গে দি্লীর সম্রাট পৃথিরাজের সংঘর্ষ কাহিনীই স্থান পেয়েছে এখানে হিন্দু শৌর্ধবীর্যের হিন্দু স্বাধীনতা অবলুষ্ধির মর্মান্তিক চিত্রটি অশেষ যত্বে ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস পেয়েছেন লেখিকা

দিল্লীর সম্রাট পৃথ্থিরাজের সঙ্গে মহম্মদ ঘোরীর সংঘর্ষ কাহিনীটি পরিবেশন করেছেন লেখিকা! হিন্দুসম্রাট পৃথ্থিরাজ সংগ্রামে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন কিন্তু আত্মরক্ষা করতে পারেননি, ভারতের স্বাধীনতান্ুর্য অস্তমিত হয়েছিল। কাহিনীটিতে স্বদেশ- ভাঁবন! প্রকাশের অবকাশ রয়েছে প্রচুর প্রতিটি চরিত্রই দেশাত্সবোধে সচেতন লজীব। দেশের দুদিনে দেশরক্ষার চেয়ে বড়ো কর্তব্য অন্ত কিছু থাকতে পাঁরে না, একথা প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন লেখিকা রাক্কা, মন্ত্রী, সেনাপতি প্রত্যেকেই দেশসচেতন দেশপ্রাণ, তথাপি তাঁদের পরাজয় ঘটেছে পক্ষান্তরে ঘবনকে ছাঁবে চিত্রিত করে লেখিকা কিছুট? স্বপক্ষগ্রীতি প্রচার করেছেন দেশপ্রেমই নানা ভাবে প্রকাশের পথ খু'ঁজেছে মাত্র

দেশপ্রেমের আদর্শেই চরিব্রগুলোকে রূপ দেবার প্রকট চেষ্টা সর্বন্র চোঁখে পড়ে বউপন্তাসের প্রারস্তে, মন্ত্রীপুত্র বিজয়সিংহ প্রেমিকা রাজকন্তাকে যবন আগমনের সংবাদ দিয়েছে, কিন্ত রাজকুমারী উষাবতীর ত্বদেশচেতনার পরিচয় দেওয়াই লেখিকার উদ্দেশ্য ছিল। উধাবতী উত্তরে বলেছে-_

দি এখনই কেছ আসিয়া বলে, “তোমার মৃত্যু হইলে দেশরক্ষা হয়” দেখিবে আমি তৎক্ষণাৎ মরিতে পারি কি না! তোমার যত আমি স্বদেশ অপেক্ষা প্রাণকে অধিক মৃল্যবাঁন মনে করি না।৮৪০ উনবিংশ শতাব্দীতে নাটক উপন্তাঁসে জাতীয় স্বদেশপ্রাণ নায়ক নায়িকার সাক্ষাৎ পেয়েছি আমরা এ'দের চরিত্রে অসার যনোভাবের প্রতিফলন পড়েছে বলেই চরিত্রগুলো স্বাভাবিকত্ব রক্ষার প্রতি সামগ্রিক অন্তমনক্কতা ধরা পড়ে। লেখিকা! এখানে একটি জীবন্ত রাঁজকন্তা অঞ্কনের দিকে ফৃকপাত করেননি-_কিন্ত ম্বদেশবৎসল একটি নায়িকাকেই ' কল্পনানেরে প্রত্যক্ষ করেছেন রাজকুমারী উবাবতীর চকরিতেও টার ঈদ বত

আরুমারী দেবী, দীগনিবাশ। ১৯৮.

স্থাস ৬১১

প্রেম ভালবাসাকে তুচ্ছ মনে করেন রাজকন্যা,_্বদেশক্্রীতিকেই সবার উপরে স্থান দেন। শ্রেমিক বিজয়সিংহকে উৎসাহ দেবার জন্য উষাবতী বলেন, | : "তুমি রুষের ম্যায় পলায়ন করা অপেক্ষা রণা [যদ্দি মরিতে, তাহা হইলে আমি তোমাকে অধিক ভালবাপিতাম! আমার ভ্রাতা নাই, তোমার স্বত্যুর পর তোমাকে কীরভ্রীতাজ্ঞানে তোমার জন্য কাদিতাম__কাদিতেও আমার আহ্লাদ হইত। বলিতে পারিতাম, আমার বীরভ্রাতা দেশরক্ষার জন্ত যুদ্ধে প্রাণত্যাগ করিয়াছেন |” মহিলা লেখিক! স্বর্ণকুমাঁরী নারীর চরিত্রেও স্বদেশপ্রেম কতখানি দৃঢ়মূল হতে . পারে-সেকথাটি উধাবতীর. চরিব্রের' মাধ্যমে বোৌবানোর চেষ্টা করেছিলেন 'পুরুবিক্রম” নাটকের এলবিলার চরিত্রে আমরা জাতীয় স্বাজাত্যবোধের তীব্র চেতন] লক্ষ্য করেছি বঙ্ধিমচন্দ্রের উপন্যাসে কিংবা রমেশচন্দ্রের স্বদেশপ্রেমভিত্তিক উপন্যাসে ঠিক জাতীয় চরিত্র নেই। বঙ্কিমচন্দ্র “আনন্দমঠের” শান্তিকেও নিছক স্বদেশপ্রাণ হিসেবে চিত্রিত করেননি,_-শাস্তিকে তিনি আরও বহুতর গুণে সমৃদ্ধ করে একেছিলেন, কিন্তু উষ্াবতী নিছক স্বদেশপ্রাণা বিদেশী আক্রমণকারীকে বাধা দেবার শ্তিও তার নেই-_ আছে শুধু দেশের জন্য জীবনদানের অটুট সঙ্বল্প। জীবনের মূল্যে স্বদেশকল্যাণ সাধনের মহৎ ইচ্ছাই উষাবতীকে চঞ্চল করেছে, স্বদেশ- প্রেমিক লেখিকার কল্পনায় উষাবতীর অন্য কোন পরিচয় নেই। সেযুগের জাতীয় ভাবঁম্োলনে আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ নারীশম্পদায়কে এমনি করেই অনুপ্রাণিত করেছিলেন লেখিকা 'দীপনির্বাণ' হ্বর্ণকুমারী দেবীর প্রথম উপন্যাস বলেই আদর্শ- রাঁদের এমন অকপট চিত্র উপন্যাসে পাঁওয়া যায়। সম্পর্কে কোন সমালোচক যথার্থই বলেছিলেন, ন্বর্ণকুমারীর জীবনে এই সময়ে বিপ্লবের কিংবা আন্দোলনের ঢেউ কতখানি পৌঁছেছিল জানি না, কিন্ত হিন্দুমেলার আঁচ তাকেও স্পর্শ করেছিল। জাতীয়তার উদ্বোধনের একটি অঙ্গ ছিল প্রাচীন শৌর্ষ বীর্যগাথা উদ্ধারে, তাঁদের নব পরিবেশনে হিন্দুষেলার মধ্য দিয়ে তাকেই নূতন করে অঙ্গভব করা গেল। স্বর্ণকুমারী দেবী টাশশ্লাল জোয়ারে দিজেকেও যুক্ত করেছিলেন কর্মে কতটা জানি না, কিন্ত চিন্তায় তিনি এদেরই সগোত্র দীপনির্বাণ তাঁর প্রমাণ পরাধীনতার বেদনা স্বর্ণকুমারী দেবীকেও স্পর্শ করেছিল।”৪৯ 'ীপনির্বাণের' উাবতী চরিত্রে আমরা লেখিকার মনকেই প্রতিবিশ্বিত হতে দেখি ্রণকুমীরী দেবীর মৌলিকত্ব এই যে__উপপ্ানটিতে দেশকখ। সমস্ত জটিলতা

িজিটীিতিরিত রি ৪১, বিিতকুমার দত্ত, বাংল! সাহিত্য ইতিহাসিক উপগ্কাস, ্বর্কূমার, দেবী ১৯৬৩

৬১২. উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে দেশপ্রেম

ভেদ করেও দীপ্যমান। বঙ্গিমচন্দ্রের দেশচর্চ! তার অন্তাস্ি বক্তব্যের সঙ্গ, উপদেশের সঙ্গে সংমিশ্রিত হওয়ার ফলে তববাহল্য দেশপ্রেমকে গ্রাস করেছে লেখাঁনেই অবশ শিল্পী বন্কিমের কৃতিত্ব, শ্রষ্টা বস্কিমের সাফল্য কিন্তু ব্বর্কুমারী দেবী. সহজকথাকে অধিকতন্ন সহজতাঁবেই পরিবেশন করেছিলেন তীর স্ষ্ট চরিত্রে দেশশ্্রীতিই প্রান অবলম্বন বহু বক্তব্য একটি চরিত্রের আধারে স্থাপন করে শৈল্পিক কলাকৌশল প্রদর্শনের জটিল পন্থা! ভিনি অনুসরণ করেননি বলে তাই আক্ষেপ করি পা!

বিজয়সিংহের পিতা! বুদ্ধ মন্ত্রী অমরসিংহকেও দেশগ্রীণ মনে করা ঘায়। রাজ্যের বিপদে স্বীয় পুত্রকে তিনি অভয় দিয়ে গুরুতর রাজকর্মে পাঠাচ্ছেন স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন,

“তুমি যদিও আমার প্রাণ অপেক্ষা প্রিয়, তথাপি স্বদেশের হিতের নিমিত তোমাকেই প্রেরণ করিতেছি-_দেশের জঙ্য এই বৃদ্ধ বয়সে একমাত্র পুব্রকেও হারাইতে স্বীকৃত হইতেছি।”

স্বদেশপ্রেম উনবিংশ শতাব্দীতে বহুভাবে ধ্বনিত হতে শুনেছি, স্বর্ণকুমারীকে এই নির্ভীক দেশপ্রাণতাই প্রেরণ দিয়েছে সাহিত্য রচনায় সমরসিংহ পৃথ্থিরীজের নেতৃত্বে যবনের পঙ্গে যুদ্ধ যখন আসন্ন, লেখিকা অত্যন্ত ভীবাবেগপূর্ণ ভাষায় উৎসাহিত করেছেন তাদের, রঃ

*সৈগ্যাগণ ! যদি তোমরা আর্পলাশের গৌরব রক্ষা করিতে চাঁও, বদি ক্ষত্রিয় নামের গৌরব বক্ষ! করিতে চাও, যদি বন পদদলিত হইতে বাঁসন1 না থাকে, যদি তোমাদের প্রাণসম শ্্রী-পুত্র-কন্াদিগকে নিষ্ঠুর যবনপীড়ন হইতে রক্ষা করিতে ইচ্ছা থাঁকে, বদি হিন্দুধর্মের প্রতি, হিন্দু-মঠ-মন্দিরের প্রতি তোমাদের কিছুমাত্র দ্ধাতক্তি থাকে, ঘদি দেবী আশাপূর্ণার আশাপুর্ণ কর] তোমাদের গৌরব বলিয়! মনে হয়,--তকে আর বিলম্ব করিও না, পাষগুদিগকে এমন শান্তি দাও, যেন তাহার। সিশ্কুনদ অতিক্রম করিতে আর সাহসী না হয়

-এ অংশটিতে ইতিহাসের , পটস্ৃমিকায় বর্তমানের ্রস্ততিকেই যেন আহ্বান জানিয়েছেন লেখিকা | ধর্মের নামে দেশের স্বাধীনতা রক্ষার আবেদন পেকালের প্রথা বলে মনে- কর] ঘায়। সেযুগের ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রে এর চেয়ে বড়ো! শক্তি আর অন্য কিছুই নেই,--সেফুগের সমস্ত দেশপ্রেমের ভিতিতেই তাই বর্ষের অনি কঙ্গনা করা। হোতি, এযুগে রই নতুন নাঁম দেওয়? হয়েছে মাদবতীবোধের আহ্বান.

-র্ণহুমারী দেকী সনাতন হিন্দুধর্মের নামেই যুদ্ধ আহ্বান কয়েছিলেন হিশুশকির | পতনের অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি যবনের কৃটবুদধি ধূর্ততার কথা বলেছেন। প্রত্যক্ষ সংগ্রামে হিস্দুরা শক্তিপ্রদর্শন করেছে--কোনো অসংপথ 'অবলদদ করেনি

. উপস্তাস | ৬১৪

তারা ন্মাত্মদাীনের মহিমায় তারা উজ্জল দিকে কূটনীতিক মহম্মদ ঘোরী বলেছে

ধর্মনিষ্ঠা অথবা নির্বোধ হিন্দুদিগকে ন্যায়যুদ্ধে পরাজয় করিতে চেষ্টা! কর আর . প্রবল অগ্নিতে ঝাঁপাইয়া পড়িয়া অগ্নি নিভাইতে যাওয়া উভয়ই সমান --এরপ স্থলে শঠতা| তিম্ন আমাদের অন্য অস্ত্র নাই হিন্দুদের অন্য বিষয়ে যতই বুদ্ধি থাকুক ধৃত্ঠতায় আমরণ তাহাদিগকে পরাতৃত করিতে পাঁরিব ; এই বিশ্বীসে ভর করিয়াই আমরা এখানে আসিয়াছি।”

লেখিকার স্বাজাত্যবৌধই এই বিদ্বেষের মূলে বিরাজমান সে যুগে শক্রকে ঘৃণা করার মত উত্তেজনা সঞ্চাণী ভাবতৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন সাহিত্যিক- বনদ্দ--সাহিত্যে চেষ্টাই বিদ্বেষরূপে প্রকাঁশ পেয়েছে মুসলমান বা যবন নয় দেশপ্রেমিকের চোখে দেশের শক্রর চরিত্র একই ভাবে চিত্রিত হয়েছে বলেই শক্ত সর্বদাই নিন্দিত। ন্বর্ণকুমারী দেবীর স্বদেশচেতনায় অকপট সরলতা চোখে পড়ে শক্রদমনের উল্লাসে বিজয়সিংহকে উন্মন্ত হতে দেখি, পৃথ্িরাজের জয়ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে হিন্কুশক্তির মহিমাজ্ঞাপন শক্রবিদ্বেষ প্রচার করেছে সে উদ্দীপনাময়ী ভাঁষায়,_

"্যখনদিগের আবার ইচ্ছা কি! যখন তাহারা অহংকারে মত্ত হইয়া! পুণ্যভূমি আর্যাবর্তকে তাহাদের শ্লেচ্ছ পদস্পর্শে কলঙ্কিত করিতেও স্পধিত হইয়াছে, তখন তাহাদের ইচ্ছা থাকুক বা নাই থাঞ্ুক, আমর যুদ্ধে সমুচিত দণ্ড বিধান করিয়া তাহাদিগকে দেশ হইতে বহিষ্কৃত করিয়া দিব। যবনদিগকে আবার ক্ষমা কি? £বরনির্যাতনে অমাঁয়িকতা৷ কি?” |

স্বাধীনতা আন্দোলনে এই জাতীয় উত্তেজনাময় বক্তৃতার প্রয়োজনীয়তা ছিল_- এভাবে শ্বর্নকমারী দেবী নিপুণ ভাষায় স্বদেশচেতনা সঞ্চারের চেষ্টা করেছেন। বৈরনির্ধাতনে যে অমায়িকতা থাকতে পারে না,-এ সত্যটি স্পট করে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি

' শেষ পর্যন্ত পৃথিরাজের পরাঁজন্দ ইয়েছে,-_ পরাজয়ে পেখিক।গ তখদ পাতমিক বিলাপ ধ্বনিত হয়েছে। ভারতবর্ষের হিন্দু স্বাধীনতা বিপুপ্তির বেদনায় লেখিকা মুহ্মনি |

"চির, প্রজ্জলিত দীপ এইবার নির্বাণ হইল। আর্যগৌরবূর্ধ আজ অন্তমিত কইল, ধর্ম আজ অধর্ধের নিকট পরাস্ত হইলেন, ভারতবর্ষ আজ বিষাদ অন্ধকারে মশ্প হইল। বাস্কি সহন্র মন্তকে ব্যথিত হইল--আসমুদ্র ভারতবর্ষ কম্পিত শিহরিত হা উঠিল- স্বাধীনতা অনন্ত যৃচ্হায় যৃচ্ছিত হইলেন"দীপনিবাগ হুইল 1”

: ভারতবর্ষের হিন্দু স্বাধীনতা বিদুপ্তির অধ্যায়কে উপন্তালের বিষয়বন্ত হিসেবে

১৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

নির্ধাচন করেই স্র্ণকুমারী যথেষ্ট মৌলিকত্বের পরিচয় দিয়েছেন। হিন্দু লতার অবলুপ্চি লগ্রটিতে স্বদেশপ্রেম প্রকাশের যে. অবকাশ রয়েছে--সেটুক তিনি নিভু তাবে নির্বাচন করেছিলেন ব্বর্ণকুমারী দেবীর দ্বিতীয় উপস্তাঁস “ছিন্নমুক্কল'' ১৮৭১ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। উপন্যাসটিতে স্বর্ণকুমারী আধুনিক জীবন কাহিনী অবলম্বন করেছিলেন, যদিও উপন্যাসের ঘটনাসন্লিবেশে রূপকথাস্থলভ রীতিহ প্রাধান্য পেয়েছে বোগ্বাই-এলাহাবাদ-কলিকাত। জুড়ে ঘটনাস্থল পরিকল্পিত হয়েছে, অবাস্তব আবহাওয়ায় চরিব্রগুলো ভেসে বেড়াচ্ছে তবু এই উপন্যাসের একটি চরিত্র সম্বন্ধে লেখিক1 কিছু লক্ষ্যণীয় মন্তব্য করেছেন )--যেখানে স্বদেশ প্রেমই প্রকাশিত হয়েছে মনে করা যাঁয়। প্রমোদের বন্ধু যামিনীনাথ সম্বন্ধে লেখিকা যে মন্তব্য করেছেন--সে যুগের' দেশাচ্ছুরগী যুবকদের সম্পর্কে সেট! প্রযোজ্য হতে পারে। যামিনীনাথের বাল্যজীবন বর্ণনায় তিনি বলেন, |

প্যামিনীনাথ বিদেশীয় রীতিনীতি আচার ব্যবহারের বড় বিদ্বেষী ; ভালই হৌক আর মন্দই হৌক সকলের প্রতি তাহার দারুণ দ্বণা। এমনকি বিদেশীয় ভাষা আর শিখিবেন না বলিয়াই তিনি ক্ষুল ত্যাগ করেন ।৮»৪২

যে সমাজে স্বর্ণকুমারী বধিত হয়েছিলেন-_দেশচেতনা সে পরিবারের প্রতিটি ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য ; ত্বর্ণকুমারী জন্মন্থত্রেই দেশপ্রেমের ঘাঁর] প্রভাবিত “ছিন্নমূুকুল” তিনি দেশপ্রেমী নাট্যকার জ্যোতিরিন্দ্রনাথের নামে উৎসর্গ করেছিলেন দেশাভিমান সৈ যুগের-শিক্ষিত আলোকক্রাপ্ত মান্ছষের সবচেয়ে বড়ে চরিত্র সম্পদ দেশপ্রেম যেমদ অসাধারণ-সাধারণ সমস্ত লেখকের রচনায় প্রেরণা এনে দিয়েছে-_-তেখনি সামাজিক জীবনেও দেশপ্রেমের দ্বারা অন্ুপ্রীণিত হয়েছে সর্বসাধারণ সে যুগটিকে তাই 'ন্যাশানালইজমের” যুগ বলে চিহিত করা হয়েছে একটি আধুনিক যুবকের জীবনসমন্তা 'যে উপন্যাসে স্থীন পেয়েছে সেখানেও তাই দেশপ্রেম প্রসঙজের

অবতারণা করেছেন নিও উপন্যাসের দাঁদশ পরিচ্ছের্দের শিরোনাম চধপ।আ্সাশ। নল

খাঙ্গিলীনাথের ম্বদেশচর্চার স্বরূপ উদ্ঘাটন করেছেন লেখিকা,+_. |

“বিদেশীয় অনৃকরণের প্রতি তীহার যেমন দ্বণা, ভাঁরতগৌরবলোপকারী বিদেশীয়গণের প্রতিও তাহার তেমনি জাতক্রোধ, ভারতের অন্তমিত গৌরবদিন ফিরাইিবার জন্ত তিনি প্রাণপণ করিয়াছিলেন, এমনকি অনেক সময় স্কুলের ছাঁত্রদিগকে সমবেত করিয়া আর্যগরিষার পুনকুদ্ছীপন বিষয়ে বন্তুতাঁও দিতেন, গভর্দমেন্টকে ভ্রক্ষেপ

৪২০. স্বরণরুমারী দেবী, ছিন্ন মুকুল, ১৯১৩।: উর্থ সংগারণ।

উপস্কাস ৬১৫

না করিয়া তিনি তাহাদের গালি দিয়! সংবাদপত্রে কয়েকবার পিখিয়াও ছিলেন, কিন্ত সেই গালি পড়িলে সহস! অনেকেরই তাহা প্রশংসা বলিয়! ভ্রম হইত ।»

্ব্ণকুমারী সে যুগের সংবাদপত্রে প্রশংসাচ্ছলে যে ইংরেজনির্দা চলত তার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন এখানে 'ধঙ্গদর্শনে' বঙ্কিমচন্ত্র জাতীয় সমালোচনার হুত্রপাত করেছিলেন সম্ভবতঃ স্বর্ণকুমারী দেবী সে যুগের সংবাদপত্রের স্বদেশচর্চার প্রতিই: কটাক্ষপাঁত করেছিলেন

যামিনীনাথের স্বদেশান্থরাগের মধ্যেও কিছু নিন্দনীয় দিক ছিল। স্বর্ণকুমারী সে প্রসঙ্গেও নীরব থাকেননি প্রক্কৃত দেশপ্রেমের চেয়ে দেশপ্রেম প্রদর্শনই কোনো! কোনে! লোকের চরিত্রে প্রকট হয়ে উঠেছিল। এর] দেশের শক্র, বঞ্চিমচন্ত্র- দ্বিজেন্দ্রলাল এই ভগ্ু-দেণপ্রেমীদের ক্ষমা করেননি স্বর্ণকুমারীও যামিনীনাথেন দেশপ্রেমের নিন্দনীয় দিকটি সমালোচনা! করেছিলেন,

“ভালই হউক, মন্দই হউক, বিদেশীয় অন্ুকরণের নামমীত্রেই জলিয়া উঠেন অথচ স্ববিবার অনুরোধে ইংরাজী প্রথায় গৃহ সাজাইতে, বিলাসের অন্থরোধে ইংরাজী বুট, ট্রাউজ্বারস কোট পরিতে এবং সভ্যতার অন্থরোধে হাতের পরিবর্তে কাটা চামচ ব্যবহার করিতে কুষ্টিত হন ন11”

স্ব্ণকুমারী দেবীও স্বাজাত্যবোধের অর্থ খুব উদারভাবে গ্রহণ করেননি দেশপ্রেম যদি আমাদের এঁতিহ বিরোধী সংস্কৃতিবজিত বস্ত হয়, - হবর্ণকূমারী তাকে ঠ্রিক উদার ভাবে গ্রহণ করতে চাননি | অথচ ইংরাজী সভ্যতা সংস্কৃতির প্রতি একটা প্রকাশ্য অনুরাগ আমরা উনবিংশ শতাব্দীর প্রারস্ত থেকেই লক্ষ্য করেছি বেশবাসে-ভূষায়-গৃহসজ্জায়-কখোপকথনে বিদেশীয়ানা আমাদের প্রকৃত দেশানুরাগের পরিপন্থী বলে সমালোচনাও কম হয়নি কিন্তু তা সকবেও দেখা যাচ্ছে, আধুনিক জীবনযাঁপনে অভিলাষী একটি সম্প্রদায়ের মানুষ ধীরে ধীরে কিছ কিছু বিদেশীয়ানায় অভ্যস্ত. হয়ে গেছেন অথচ এই শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যেই প্রথম স্বদেশচেতন। দেখা গিয়েছিল একথাও অনম্বীকার্য। যে যুগে পরাধীনতার মর্মপীড়ায় আমরা আক্রান্ত, উদারভাবে বিদেশীয়ানা গ্রহণ করায় কিছু কিছু প্রতিবাদ নেখানে থাকবেই স্বাধীনতা; আন্দোলনের মধ্যে একদা প্রবলভাবে বিদেশী পণ্য বর্জনের জন্ত তুমুল প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছিল স্বর্নকমারী দেঁধীও বিদেশীয়ানাকে বাহিক ভাবেও স্বীকার কর্গার উদারতা) দেখাতে ' পারেননি তিনি দেশত্রেমের মধ্যে স্ব-সংস্কৃতি-চেতনাকে স্বাপন করতে চেতেছিলেন |.

“ছিমমুকুল' উপন্তাসে স্বদেশপ্রেম মুখ্যবিষয় নর-_তবুও প্রলবক্রমে লেখিক। থে স্বদেপচর্টার অবতারণা করেছিলেন সে শুধু দেপচিস্তা অন্তনিহ্িত প্রেরণা বলেই ।.

১৩ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম |

কাহিদীটির মধ্যে লক্ষমীয় ফোনো৷ বৈচিত্র্য নেই, কল্সলাগত ক্রটি, 7 'টনাস্বাপনেও যথেষ্ট তূর্বলতা রয়েছে, কিন্ত দেশ প্রসঙ্গে ন্বর্ণকুমারী তীর ঘলিষ্ঠ স্বকীয় চিন্তাধারার পরিচয় দিয়েছিলেন সে কথা অবশ্যই স্বীকার্য। :

এর পরের ছু'টি উপন্তাসে স্বর্ণকুমারী- পুনর্বার ইতিহাসের আশ্রয়ে ফিরে এলেন ইতিহাসের পটসভূমিকায় স্বদেশপ্রেম প্রসঙ্গ যেমন সহজেই উৎপারিত হতে পারে অস্তান্ট বিষয়ে স্বদেশপ্রেম প্রকাশের তেমন সুবিধে নেই। উনবিংশ শতাব্দীতে . ইতিহাস-! চেতনা স্বদেশচেতনার মধ্যে একট! স্পষ্ট যোগাযোগ লক্ষ্য কর] বায়। স্বর্ণকুমারী ছুটি উপন্যাসে রাঁজপুত ইতিহাস অবলম্বন করেছেন “মিবাররাজে' [ ১৮৮৭] রাজপুত ইতিহাসের এমন একটি বিষয় তিনি নির্বাচন করেছিলেন যা নিয়ে ইতিপূর্বে কোন আলোচনাই হয়নি বিদ্রোহ" উপন্তাসে [১৮৯০] রাজপুত ইতিহাসের ুচনারও পূর্বে রাজপুতানীর আদিবাসীদের সঙ্গে রাজপুতদের আত্মপ্রতিষ্ঠার লগ্রটি চিত্রিত হয়েছে ছুটি উপন্যাসেই বিষয়গত উবচিত্র্য আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আঁলোচিত রাজপুত কাহিনী বর্জন করে, মৌলিক বিষয় নির্বাচন করে স্বর্ণকুমারী স্বকীয়ত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন উপরস্ত স্বদেশপ্রেমের চেতনাই ছুটি উপন্ণসে প্রধানবস্ত রূপে গৃহীত হয়েছে বঙ্কিমচন্ত্র রমেশচন্দ্র প্রচলিত রাজপুত শৌর্যবীর্ধ কাহিনী অবলম্বন করে দেশপ্রেমের যহিম! প্রচার করেছিলেন টডের রাজস্থানই অনুসৃত হয়েছিল সে যুগে। কিন্তু ব্বর্ণকুমারী টডের রাঁজস্থানে বণিত রাজপুত রাঁজীদের পূর্বপরিচয় সম্পকিত বর্ণনাটিতে কিছু-অসঙ্গতি লক্ষ্য করেছিলেন তাঁর 'মিবাররাজ' গ্রস্থটিতে টডের উক্তির প্রকাশ্য প্রতিবাদ করেছিলেন লেখিকা .

টডের রাজন্থানে রাজপুত রাজাদের বংশ পরিচয় সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, [21093 £91211520208106] 00600961525 06906100915 086 091)12120%--টড 'আকবরের নবরত্বসদস্য এতিহাসিক আবরুলফজলের মতাঁমত অন্গুসরণ করেছিলেন। 'মাসার অল অমরা' নামক গ্রশ্থটিতে বলা হয়েছে মিবাররাঁজঙ্ুল ইরাপবংশীয় নসিরাণ- পুত্র নসিজাদের সন্তান অথবা এজিদ কণ্ঠা মহাঁবাচ্ছুর সম্ভান। এই পারম্পর্যহীন এীতিহাসিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছিলেন ব্বর্ণকূমারী | “মিবীররাজের' পরিশিষ্ট গর্থ রচনার হেতুটি তিনি বর্ণনা করেছেন, . :

“সুতরাং কেবল এইরূপ কথ! হইতে ভর্গরাঁদ ভ্রীরামচন্তরের সন্তান নক বিখ্যাত র্যবংশ রাঁণাঁগণকে ইরানী পিতামাতার সন্তান বলিয়া আগার রা বিভা অডভুত খলিয়া,মনে হয় 1

“মিবাররাজে' স্নেবারের রাদাবংশের সি ইতিহাস না করার, চি লেখিকা শচেষ্ 1. মেবারিরাজবংশের প্রত্চীতা, ছিলেবে তিনি সহায় নাসোজেখ ফরেছেন।

উপগ্যাস | ৬১৭ সৌরাষ্ট্রের শেষরাজা শিলাদিত্যের পুত্রই গুহা ঘটনাচক্তে গুহা ব্রার্ষণকন্তা কমলাদেবী কর্তৃক ত্রান্দণপুত্ররপে পালিত হয়েছিল | কালক্রমে সেই মেবাঁররাভবংশের প্রতিষ্ঠা করে। আরাবল্লী পর্বতের পাঁদদেশে শৈলময় বনতৃমিতে আদিবাসীদের রাজা মন্দালিক ভীল রাজত্ব করতেন গুহা মন্দালিকের আশ্রয়েই বড়ো হয়েছিল,__আপন- ক্ষমতায় সে ইদরে রাজ্যস্থাপনে সমর্থ হয় |

বিদেশী লেখক রাজপুত রানার বংশগৌরসে যে কলঙ্ক আরোপ করেছেন লেখিকা তারই প্রতিবাদে উপন্যাস রচনা করেছেন তবে প্রতিহাসিকতা রক্ষা করার উপায় ছিল না বলেই লেখিকাকে কল্পনার আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়েছে রাজপুত বংশীয়দের বংশ প্রথা অবলম্বন করেই তিনি বিষয়টির ওপর আলোকসম্পাত করেছিলেন উপন্যাস টডের মতবাদকে কতখানি আচ্ছন্ন করেছিল বলা মুস্কিল, কিস্ত লেখিকার প্রয়ণীসটিই অভিনন্দনযোগ্য বলে বিবেচিত হবে |

্বর্ণকুমারী দেবী গ্রন্থটি উপহীর দিয়েছিলেন ভ্রাতুপ্পুত্রী ইন্দিরাকে | “উপহ্ারপত্রে কবিতাটির শেষ ছুটি পংকিতে লেখিকা আক্ষেপ করেছেন--

'এনেছি শোক গীতি ' তোমার পরশগ্রীতি ফুটাঁবে বিরাগম!ঝে স্রাঁগমূকুল ।'৪৩

উপন্াসকে শোঁকগীতি বলার তাঁৎপর্যটিও সহজেই অনুমেয় পরবর্তী উপন্যাসে স্বর্ণকূমারী রাঁজপুত ভীলের দ্বন্বচিত্র অঙ্কন কবেছিলেন। উপন্যাসে মন্দালিক ভীলের মৃত্যুকাহিনীর অবতারণা করেছেন উপন্যাসের শেষাংশে | সরল- বন্ধ-জাতি হলেও ভীলের সাহসী স্বাধীনত্াপ্রিয়। কিন্তু শক্তিমানের কাছে পরাভব স্বীকার করা ছাড়া দুর্বলের অন্ত কোন গত্যন্তর থাকে না। তাই ভীল সম্প্রদায়ের স্বাধীনতা অন্তমিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাজপুত শক্তির অভ্যুদয় ঘট! সম্ভব হল। অংশটিতে লেখিকা পরাধীন দুর্বল ভারতবাঁসীর সঙ্গে ভীল সম্প্রদায়ের কিছু সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছিলেন এই ধারণাটি লেখিকার মনে এত প্রবলভাবে জেগেছিল বলেই তিনি পরবর্তী উপন্যাসে ভীল-ান্রপুত দ্বন্বকেই উপজীব্য করেছিলেন

গুহা মন্দালিকের কেহ ভালবাসা পেয়েছিল বলেই ভীলপুত্র তালগাছ পিতৃনেহ বঞ্চিত মনে করেছিল, নিজেকে আদিম সারল্য নিয়েই স্বার্থলেশহীন মহত দেখিয়েছিল ভীলরাক্জা মন্দীলিক কিন্তু অন্য একটি ভিন্দেশী যুবকের এই প্রাধান্ত খুশীয়দে মেনে নেয়নি মন্দালিক পুত্র এই ঘবন্্টিই মিবাররাজের যূল ঘটনাগত দ্বন্দ |

৯৬, রকমারী দেবী, মিবারয়াজ ১৮৮৭

পাই উনবিংশ শতাবীর বাংল। সাহিত্যে স্বদেশপ্রেয

তিহাসিক বৃত্ত রচনায় ওথ্যগত খল্পতাটুকু কর্পনায় পূর্ণ করে নিয়েই তিনি স্কুলের মালা” [ ১৮৯৫ ] রচনা করেছিলেন বাংলার ইতিহাসে মুসলমান রাক্ষাদের তালিকায় যে একটি মাত্র হিন্দুরাক্জার নাম আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ ক্ষরে তিনি গণেশদেব লেখিকা উপন্যাসে এই হিন্দুরাজার কাহিনী অবলম্বন. করেছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থার বর্ণনাও উপন্যাসে স্থান পেয়েছে। গীয়ন্্দিনের আমলে জমিদার গণেশদেবের আকম্মিক' উত্থান হয়েছিল রাজনীতির জটিলতার রন্্রপথে শক্তি সঞ্চয় করে গণেশদেব গৌড়াধিপতি হয়েছিলেন লেখিকা গণেশদেবের চরিত্রে শৌর্য-বীর্য-বুদ্ধিমত্তার সমন্বয় ঘটিয়েছেন রাস্তা গণেশদেবের ব্যক্তি জীবনের কাহিনীই উপস্তালের মূল ঘটন1 হলেও গণেশদেবের ব্যক্তিত্ব সৎসাহসের দৃষ্টাস্তটি তিনি নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন গীয়হুদ্দিনের ভ্রাতুজ্পুত্র সাহ্বুদ্দিনের আঁশরয়- দানকালে যে বিপদের সম্মুখীন হয়েছিলেন গণেশদেব, নির্জাকতা প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের দ্বারাই সে বিপদ থেকে মুক্ত হয়েছিলেন তিনি। গণেশদেবের নির্জাক চরিত্র তাঁর উক্তিতেই ধরা পড়ে,__

"আমি সেই বীর সম্তানগণের পিত] য'হারা আমার জঙ্য, দেশের অন্য, অসহায়ের “অন্, ধর্মযুদ্ধে প্রাণ সমর্পণ করিতেছে! যাহার। পুণ্যকীতিতে অমরত্ব লাভ র্যা অহত্বের চিরদৃষটন্ত স্বরূপ হইয়া স্বর্গের গৌরব রক্ষা করিবে 1৪৫

__এই গণেশদেবই গৌড়াঁধিপতি হয়েছিলেন কিন্তু তাঁর পুত্রই মুসলমান কন্যা বিবাহ করে ঘুসলমানধর্ম গ্রহণ করেছিলেন গণেশদেবের পূর্ব প্রণয়িণী শক্তির প্রতিহিংসা গ্রহণের কাহিনীটিই উপন্যাসের যূল ঘটনা শক্তির প্রেম অস্বীকার করেছিলেন বলেই শক্তি যবন গৌড়াঁধিপতিকে স্বামীত্বে বরণ করেছিল। কিন্ত লেখিকা গণেশদেবের ওপর পূর্ণ সহানুভূতি দেখিয়েছেন। আত্মবিশ্লেষপে সক্ষম নাফ্ক হিসেবে গণেশদেব তীর পূর্বপ্রেমকে অঙ্থীকার করেননি বরং নিরুপায়ের “বেদনায় মুহমান হয়েছিলেন আদর্শ রাজা হিসেবে কল্পনা করার বাঁসনাটি ব্যাপারেও প্রকট বাংলার ইতিহাঁলে এমন একটি দেশশ্রীণ সাহসী জননেতাঁর চরিত্র কল্পনা! করে আমাদের সম্রদ্ধ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন লেখিকা |

বর্ণকুমারীর সাহ্ত্যিজীবন উনবিংশ-_বিংশ শতাবীর প্রথমার্ধ,জুড়ে। উনরিংশ শতাবীতে তার লেখা উপস্তাসই আমাদের আলোচনায় স্থান পাবে ক্ষিন্ত বিংশ পতাবীতে লেখা তাঁর বহু উপগ্ভাপেও 'দ্বদেশপ্রেমচেতনার প্রকাশ দেখেছি।.. বিংশ শতাব্দীতে, লেখা “বিভিত্রা” স্বপ্বাধি' “মিলনরাজি' উপস্তাসে তিনি বের রাঁজ- বিপ্লবের কাহিনী অবলম্বন .করেছিলেন:।: উনবিংশ, গতাখীতে লেখা যা

| .. ব্বপতিমারী দেবী, কুলের মালা, ১৮৯৮1 7.৩

উপস্কাস | ৬২৯

[১৮৯০ ] উপন্য।সটিতে ্বর্ণকুমারী দেবী যে সামাজিক কাহিনীর অবতারণা করেছিলেন তাতেও স্বদেশপ্রেমের ধারণাটি বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে বহুদিন পরে লেখা পমিলনরাত্রি' উপন্যাসের পূর্বাভাষে স্বর্ণকুমারী দেবী বলেছিলেন,

“৪/৪২ বৎসর পূর্বে প্রকাশিত মত প্রণীত “স্মেহলতা” উপন্তাস অর্ধাবিক শতাবীরও পূর্বতন সমাঁজচিত্র তখনকার নব্যযুবকের প্রাণে যে আশা আকাজ্ফা, উদ্দীপনা ক্ষীণ ক্োতোধারায় বহমান দেখা যায়-_কংগ্রেস যাহার যূলগত প্রধান প্রপাত-_এ যুগের নব্যবঙ্গের মানলজাত খরশোত। মহাঁলহরী সেই ধারারই ক্রমসঞ্চিত ধ্বরাট বিকাঁশ ।*

এই পুর্বাভাসের উক্তি থেকে “ন্সেহলতা” উপন্যাসের বক্তব্যটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে 'ন্বেহলতা'র কাহিনীতে ম্বদেশপ্রেমের বর্ণনা সে যুগের আবহাওয়াকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এঁতিহাসিক কাহিনীর আশ্রয়ে দেশোদ্ধারের প্ররুত পথ নির্দেশ করার চেষ্টা করেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র “আনন্দমঠে,, ত্বর্ণকুমারী দেবী আনন্দমঠের প্রায় আট বৎসর পরে “স্সেহলতা” উপন্তাঁসে যে দেশসাধনা'র প্রসঙ্গ আলোচন। করেছিলেন তাতে সরাসরি কোন সংগঠন সভালমিতির মাধ্যমে কিভাবে দেশোদ্ধার সম্ভব সে' বিষযনটিই ব্যক্ত করেছেন কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর গুপ্ত সমিতি বিপ্রবী সংস্থা: কিভাবে গড়ে উঠেছিল তার বিবরণ আমরা রবীন্দ্রনাথের “জীবনস্থতি'তেই পাই স্বাদেশিকের সভা স্থাপনের জাতীয় স্বপ্নাবিষ্ট ক্রিয়াকলাপ হয় প্রথম যুগে ব্যর্থ হয়েছিল--কিস্ত ধীরে ধীরে জাতীয় বহু প্রতিষ্ঠান সফল ভাবে তাঁদের অব্যর্থ দেশসাধনা চালিয়ে গেছেন। “ন্সেহলতা” উপন্তাসে স্বর্ণকুমারী দেবী নায়ককে জাতীয় একটি সংগঠনের পরিচালক হিসেবে দেখিয়েছেন

' শিক্ষা যোগ্যতা নিয়েই দেশসেবার পবিত্র কর্তব্য পালন করা সম্ভব তাই নায়ক জীবন সভাস্থাপন করে তরুণ সম্প্রদায়কে দেশমাতৃকার শৃঙ্খলমোচনের জন্ভ জীবনপণ করার পথ দেখাতে চায় দেশের ভাবী যুবকরাই একদিন স্বাধীনতা সংগ্রামের সৈনিক হবে, জীবন সেই ভাবী যুবকদেরহ স্বদ্রেশপ্রেমের আদর্শে দীক্ষা দেয়। শবর্ণকুমারী যে দেশপ্রেমমূলক উপস্যাঁস রচনায় চিন্তার দিক থেকে অনেকদুর 'অগ্রসর হয়েছিলেন “ন্সেহলতা' উপগ্যাসকেই তার প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ কর যায়।- স্বাধীনতা সংগ্রামের ভাবী সৈনিকরা দীক্ষা গ্রহণের জন্য সমবেত, হয়েছেন: জীবনবাবুর গুধু সভাগৃহে। তাদের ভাতে পদ্মবিদ্ধ খড়া তুলে দিয়ে জীবনবাবু বললেন,__”এই পদ্ম ভারতের চিহ্ন স্বরূপ, এই খঙ্গ বাধাবিস্র অতিক্রম

করিবার চিচ্ছ স্বরূপ 1৮৪৩৬ ৪৬, দ্বণকূমারী দেবী, স্েহলতা, ১৮৭২

৮২২ উনবিংশ শতান্বীর বাংলা পাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

, সভাপতি হিসেবে তিনি তাদের শপথ গ্রহণ করালেন-_ “শপথ কর, আজ হইতে মি ভারতের মঙ্গলকার্ষে প্রাণপণ করিলে আজ হইতে আমাদের সহিত ্রাতৃতবে আবদ্ধ হইলে ।” হ্বদেশী সংগীতও গীত হোল,

এক স্থত্রে গাথিলাম সহজ জীবন জীবনে মরণে রব শপথ বন্ধন ভারতমাতার তরে সঈঁপিন্ন প্রাথ। সাক্ষী পুণ্য তরবারি সাক্ষী ভগবান

এই সভার বর্ণনার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের স্বাদেশিকের সভার পার্থক্য খুব 'বেশী'নেই। “জীবনস্মতির” ঘটনার সত্যভিত্তি মেনে নিলে কথা মনে করা যেতে পারে যে, 'রবীন্দ্রনাথের মত স্বর্ণকুমারীও জাতীয় সভাসমিতির উৎসব অনুষ্ঠানের প্রত্যক্ষদর্শী 'ছিলেন। সভাপতি হিসেবে জীবনবাঁবু দীর্ঘ বক্তৃতায় সভার উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন, _ |

'ভ্রাতগণ, আমরা এই পবিত্র ভ্রাতৃবন্ধনে আবদ্ধ হইয়া যে মহৎব্রত গ্রহণ করিয়াছি 'দেশহিতকর অনুষ্ঠানে জাতিগত মাহাত্ম্বৃদ্ধিই ইহার মূল সংকল্প, দেশোন্নতিই ইহার চরম উদ্দেশ্য 1৮

উন্ববিংশ শতাব্দীর কাব্যে নাটকে-উপস্তাসেই স্বদেশপ্রেমচর্চা শুরু হয়,_কিন্ত এই শতাবীর শেষাংশে লেখা নাটক-উপগ্যাসেই তার বিস্ফোরণ চুড়ান্ত আকার ধারণ করেছিল। উপেন্দ্রনাথ দাসের “সুরেন্দ্র বিনোদিনী” শরৎ সরোঁজিনী” নাটকের আঁলোচন! কালেও একথা বলেছি যে স্বদেশপ্রেম তখন শুধু ভাবজগতেই সীমায়িত ছিল না, সংগ্রামের প্রস্ততির আয়োজনও প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে এসেছিল উপন্যাসে ্ণকুমারী দেবী প্রত্যক্ষ স্বদেশসেবার আহ্বান জানিয়েছেন এভাবেই সভাসমিতি নিপ্লবীদল সংগঠন কালে জাতীয় কাহিনী যে অত্যন্ত উদ্দীপনা সঞ্চারী হবে তা অনায়াসেই বোঝা যায়। তবে উপেন্দ্রনাথের নাটক রাজরোষ এড়াতে পারেনি, স্বরণকুমারী দেবী তা এড়াতে পেরেছিলেন। তিনি যে সভা সংগঠকদের কথা বলেছেন--তারাই' আবার মুক্তকঠে ইংরেজ প্রশংসা করেছে |. 'জীবনবাবু 'দেশোদ্ধারের চেয়ে দেশোক্নভির দিকেই উৎসাহিত, করেছেন, নাই ভাবার বলেছেন, ++

“সরা বিরোহী না ইতর তিনি

ীরনবারু জাতির কুসংস্কার দুর করতে চেয়েছিলেন_ ক্ছাতির উত্নতির উপায় চিন্তা ক্ষরেই তিনি বিজ্রোহিতা সমর্থন করেননি এখানে লেখিকার. লচেতন

উপন্যাস, ৬২৩

মনোভাবের পরিচয় পাই। বস্ততঃ আন্দোলন সংগঠনের সত্যিকারের কর্মপন্থা কি হবে. নিয়ে স্থিরসিদ্ধান্তে এসে পৌছয়নি সে যুগের মাহুষরা/--তখন চলছিল পরীক্ষা নিত্রীক্ষার পালা শুধু ভবিষ্বংভ্রষ্টী সাহিত্যিকের কল্পনাতেই ভবিষ্যতের কর্মহুচীর আভাস পেয়েছি মাত্র তার সঙ্গে বাস্তবের আকাশচুষ্বী পার্থক্য ছিলো বঙ্ষিমচন্দর যে ধর্মভিত্তিক সশস্ত্র সংগ্রামের পরিকল্পনা" করেছিলেন-_সেই আদর্শের বাস্তবায়ন হতে পারে কি না নিয়ে নিঃসংশয় বিশ্বাসে পৌঁছনোর আগেই “ন্রেহলতা' উপন্ভাসের জন্ম স্থতরাঁং সে যুগের সমাজে হ্বদেশী সংগঠনের প্রসঙ্গ আলোচন। করতে গিয়ে দ্বিধাগ্রন্ত হয়েছিলেন লেখিক। | জীবনবাবু দেশত্রতে দীক্ষা! দেবার সময় খড়া তুলে দিয়েছিলেন দেশসেবকের হাঁতে-_যদিও খড়োর ব্যঞ্জন! বীরধর্মে নিহিত। শক্রশক্তি দলনের কোন ইঙ্গিত ঘদি থেকেও থাঁকে সেটি উচ্চারিত হয়নি, কিন্তু ব্যঞ্জিত হয়েছে

্বর্ণকুমারী দেবী 'বিংশ শতাব্দীতেও বহু উপস্ভাস রচনা করেছিলেন-_-এবং স্বদেশপ্রেমের ষে আন্তরপ্রেরণা তীর প্রথম যুগের উপন্যাসে প্রতিফলিত হয়েছিল, পরবর্তা যুগের রচনায়ও তার পরিচয় পাই। দেশপ্রেমের অমলিন আদর্শ তাঁর সমস্ত- রচনার যূলেই দীপ্যমান ছিল, _স্তরাং স্বর্ণকুমারী দেবীর সাহিত্য বিচারের প্রধান মানদও হিসেবে স্বদেশচেতনাঁকেই ধরে নেওয়া যেতে পারে বন্ধিমচন্দ্রের পরে উপন্যাস রচনার যে প্রচণ্ড জোয়ার উনবিংশ শতাব্দীতে দেখা গেছে, সবই প্রাঁয় ব্কিমী আদর্শে প্রভাবিত তবে বঙ্কিমচন্দ্রের রয়েশচন্দরের অগ্লান কীতির পাঁশে খুব বেশী উজ্জ্বল হতে পারেননি এরা স্বদেশীভাবের জোয়ার অন্যসব ছেড়ে স্বদেশপ্রেমবিষয়ক রচনার মূল্য বাঁড়িয়েছিল অনেক-_“আনন্মমঠ', “জীবন প্রভা” জীবন সন্ধ্যার" অপরিসীম যূল্য সে যুগেই নির্ণীত হয়েছিল এযুগে ধারা স্বদেশপ্রেমযূলক উপন্যাস রচন। করেছেন তার! চক্রাকারে বঙ্কিম রমেশচন্দ্রের যুগেই পাদচারণা করেছেন বলা যেন্তে পাঁরে। বিষয়গত মৌলিকতার গীড়াদায়ক অতাবসবেও উপন্যাসিকের স্বদেশচিন্তার পরিচয় যেখানে প্রকট হয়েছে-_লেখক সেখানে সম্মানিত হয়েছেন। সে. যুগের অন্যতম ুপন্যাসিক ছিলেন - বহিমচন্দ্রেই আত্মীয় লেখক দামোদর মুখোপাধ্যায় 'কপালকুগুলা'র উপসংহার ভাগ রচনা করেই তিনি সাহিত্য আসরে, অবতীণ হন। টডের রাজস্থান অবলঙগনে ইনি 'প্রতাপসিংই' উপন্থাস রচনা করে স্বদেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছিলেন কাব্যে উপন্যাসে রাজস্থানের সমস্ত বীরত্বের নৃটাগুলি সে যুগে আগ্রহের সঙ্গে গৃহীত হয়েছিল বুণপ্রয়োজনেই। প্রতাপসিংহ ছিলেন দেশপ্রেমের সর্বাপেক্ষা উচ্ছল দৃষ্টান্ত সেদিক থেকে দামোদর নুখোপাধ্যার অতি পরিচিত বিষয়বস্তরই অবতারণা! করেছিলেন দামোদর মুখোপাধ্যায়ের জীবনীর থে

৬২৪ উনবিংশ শতাবীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

সংক্ষিপ্ত পরিচয় পাওয়া গেছে ভাতে ব্বদেশপ্রেমিক হিপেবেই তিনি. উল্লিখিত বযেছেন | লাহিত্যসাঁধক-চরিতমালায় সংক্ষিপ্ত হলেও তাঁর লশ্বদ্ধে বলা হয়েছে--. . -

“উহার স্থায় স্বদেশ হিতৈষী একান্ত ছুর্লভ-_ যেদিন হইতে স্বদেশী আন্দোলন আরসু হইয়াছে, সেইদিন হইতে একমাত্র উঁষধ ব্যতীত তিনি সর্ববিধ বৈদেশিক দ্রব্যের .সহিত সংশ্রব ত্যাগ করিয়াছিলেন এমন কি বিলাতী চিনির সংঅবের আশংকায় গুড় ব্যতীত অগ্য কোন মিষ্টান্ন ভক্ষণ করিতেন না 1”

যেকোন মানুষ সম্পর্কেই জাতীয় অদ্ধেয় বিনীরির বসান

গুণাবলীই প্রকাশিত হয়। দীমোদরের স্বদেশপ্রাণতার পরিচয় উদ্ধৃত উক্তিতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে 'প্রতাপনিংহ” রচনা! করেই তিনি শুধু সাহিত্যিকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন মাত্র টডের রাঁজস্থানে প্রতাপ সম্পর্কে যে উচ্ছুসিত উক্তি রয়েছে গ্রস্থকার তা টাইটেল পেজেও উদ্ধৃত করেছেন নিজ সবিনয়ে তিনি আপনার দীনতা নিবেদন করেছেন, _. শ্যে মহাত্সার মহান চরিত্র অবলম্বনে বর্তমান উপন্যাস লিখিত, তাহার জীবনী কার্যকলাপ যেরূপ অমানুষী ব্যাপারসমূহে পরিপূর্ণ তাহার যথোপযুক্ত বর্ণনা করা মানুষের সাধ্য নহে আমার দ্বার] তাহা যে কথঞ্চিৎ পরিমাণেও সিদ্ধ হইয়াছে, এরূপ প্রগল্ভবিশ্বাসকে আঁমি ভ্রমেও মনে স্থান দিই ন11৮৪?

প্রভাপসিংহের স্বদেশপ্রেম লেখকচিত্তে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। উজ্জ্বল- দৃষ্টান্ত সাধারণকেও উদ্দীপিত ফরুক-__এ আশাও ধ্বনিত হয়েছে লেখকের কণ্ে। উপন্যাসের মধ্যেও সেকথ। তিনি দৃঢ় ভাবে জানিয়েছেন

'চিতোঁর রক্ষার্থ যুদ্ধে রাজপুত বীরগণ রাজপুত রমণীমণ্ডলী যে 'অসাধারণ বীরত্ব স্বদেশান্ুরাগ প্রকাশ করেন, তাহার তুলনা বোধহয় অন্য কোন জাঁতির ইতিহাসমধ্যে প্রাপ্ত হওয়া যায় না। আমরা পাঠকগণকে ইতিহাস হইতে সেই অসাধারণ ঘটনার বিবরণ অধ্যয়ন করিয়া হৃদয়কে বিমুগ্ধ করিতে বারবার ০৪ করি 1,

লেখকের উদ্দেশ্যটি তখল আর অস্পষ্ট থাকে না। জনপাধারণকে স্বদেশ প্রেমে উদ্বোধিত করার এই দায়িত্ব যে. কোনো স্বদেশপ্রেমী লাহিত্যিকই স্বেচ্ছায় বরণ করেছিলেন এই বিশেষ উদ্দেশ্য উপন্যাসের সর্ব প্রকট রাছগপুত কাহিনীতে চারণ একটি সাধারণ চটিত্র--অতীত যশোগাথ! ভাবাবেগে বর্ণনা করাই নার. একমাত্র কাজ। দেশাগ্সবোধের চেতনা সঞ্চারে এই চারণ সম্রদায়' একটি উ্লেখযোগ্য ্কমিকা গ্রহণ করেছিলেন দেশাত্মবোধক সংগীতও চারণের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে---

৪৭, দ্বামোমর সুক্োপাধ্যায়, প্রতাপসিংহ, ১৮৮৪ |

উপস্ভাস ৬২৫

কোথায় সে দিন মনের গরবে

হাঁসিত ভারত সেদিন স্থখে ?

কোথায় এখন স্বাধীনতা ধন? পর নিপীড়ন ভারত বুকে

বর্ণনাঁটিতে শুধু চিতোরের বর্তমান ছুরবস্থার কথ! বলা হয়নি, পরাধীন ভারতের চিত্রটিই লোৌকসমক্ষে তুলে ধরেছেন লেখক ! আত্মসমালোচনা উদগত ছঃখ নিয়ে চারণ উচ্চারণ করেন,-_

“হায়! পূর্বে যে হৃদয় লইয়! রাঁজপুতগণ জগৎ পূজিত ছিলেন, এক্ষণে আমাদের সে হৃদয় নাই-_সে উদ্ধম নাই, সে অদম্য স্পৃহ। নাই, সে উচ্চ আশা নাই, সুতরাং এক্ষণে আমাদের এই হীনতা, এই দুর্দশা, এই অপমান 1৮

তখন বুঝতে অস্থবিধে হয় না আক্ষেপ লেখকেরই পরাধীনতার মর্মদাহ লেখকের অন্তরে যে গভীর বেদনাবোৌধ জাগিয়েছিল সেটিই চারণের মুখে স্থাপন করেছেন জাতীয় মহৎ দৃষ্টান্ত তুলে ধরার স্মযৌগে লেখক আপন অন্তরের বেদনাটি সর্বদাই ব্যক্ত করার প্রয়াস পান।

উপন্তাঁসে উগ্নিলাকে লেখক দেশপ্রেমিক] রূপেই কল্পনা করেছেন ধরণের চরিত্র বাঁংল। উপন্তাঁসে স্থলভ তৃষ্টি হলেও জলত্ত স্বদেশপ্রেমের আবেগ চরিত্রের মধ্যে যে আত্মমর্যাদাবোধ আত্মদানের প্রেরণা জাগিয়েছিল সে কথা লেখক বোঁঝাতে চেয়েছেন উমিলা বলেছে,_

“আমি দেশের জন্ক আমার ক্ষুদ্র প্রাণ বিক্রীত করিয়াছি, দেশের হিতার্থে আমি সকল ভোগবাসন! বিসর্জন দিয়াছি, যবনবধই আমি জীবনের সারব্রত করিয়াছি, এবং শাণিত লৌহই এদেহের প্রধান ভূষণ বলিয়৷ স্থির করিয়াছি ।”

দেশপ্রেমই চরিত্রের শক্তি এই কঠোর সংকল্প নিয়ে দেশসাধনাঁর বন্ধুর পথে এগিয়ে যেতে হবে। দুর্গমকে অতিক্রম করতে গেলেই চাই অটুট মনোবল, অদম্য শক্তি সাহস | নাঁরীও এই দেশসাধনার পবিভ্রত্রতে জীবন উৎসর্গ করতে পারে, লেখক প্রকারান্তরে সে কথাটিই বুঝিয়েছেন

দেশপ্রেমের জীবন্ত প্রতিমূতি প্রতাপসিংহকে পরাধীন জাতির সামনে আশা! উদ্দীপনার প্রতীকরপে স্থাপন করতে চেয়েছেন লেখক দেশসাধনা যাঁর জীবনব্রত তার পুণ্য চরিতকথাই উপন্যাসে স্থান পেয়েছে। হলদীঘাটের যুদ্ধে পরাজিত প্রতাগ গভীর খনোছঃখে ভেঙে পড়েছিলেন কিন্তু মনোবল হারাননি। এই

হলদীতাঁটকেই টড বলেছিলেন, “[751018520 19 005. 010570095156 ০£

প্‌

৬২৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

8৪৬৪৮ প্রতাপসিংহ দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য জীবন পণ করে যুদ্ধে অবত হয়েছিলেন পরাজিত দেশপ্রেমিকের হাহাকার লেখক সুন্দরভাবে প্রকাশ করেছেন, | |

'মিবারের চিরবিরাক্িত গৌরব লক্ষ্মী আর রহিলেন না। তবে জীবনে কাজকি? হায়! অন্তিম সময়ে মিবারের এই শোচনীয় অবস্থা দেখিয়া! ঘাঁইতে হইল, ইহার কিছুই করিতে পারিলাম না। ভূতময় দেহ ধরিয়া, এই উন্নত রাজপদ লাভ করিয়া স্বজাতির স্বাধীনত। সংস্থাপন করিতে পারিলাম না। বৃথা জীবন! বৃথা দেহ! মিবারের স্বাধীনতা বিলুপ্ত, মিবারবাসী এখন বনবাসী, মিবার এখন শ্বশীলভূমি | মিবারের দশা দেখিলাম তথাপি কিছুই করিলাম না।,

জাতীয় উপন্তাসে লেখকের কৃতিত্ব শুধু দেশপ্রেমের অনবদ্য বর্ণনায় | প্রচলিত পরিমিত কাহিনীতে কৃতিত্ব সৃষ্টির অবকাশ স্বল্প _ কিন্তু জাতীয় জাগরণের লগ্নে দেশপ্রেমের পৌনঃপুনিক বর্ণনাঁতেও উদ্দীপনা সঞ্চার করা সম্ভব। সম্ভবতঃ এই কারণেই সে যুগের লেখকবুন্দ প্রচলিত পরিচিত চরিত্র অবলম্বন করে দেশপ্রেম প্রচারের চেষ্টা করেছিলেন

সেই স্বদেশপ্রেমিক লেখক সম্প্রদায় এখন সাহিত্য জগত থেকে বিস্মতির গর্ভে বিলীন হয়ে গেছেন কোঁন অসাধারণ শক্তি নিয়ে এরা আসেননি, শুধু যুগধর্মের দাবী আর প্রতিষ্ঠালাভের ক্ষীণবাসনা নিয়ে এরা আবির হয়েছিলেন কিন্ত দেশপ্রেমের আবেগই ছিল এই লেখক সম্প্রদায়ের মূলধন এ'রা যা অন্থভব করেছেন, লেখায় তা প্রকাশ করার বাসনা নিয়েই দের আঁবিতাঁব।

রায় সাহেব হাঁরাণচন্দ্র রক্ষিতের লেখা “বঙ্গের শেষবীর উপন্যাসটি প্রসঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে ! হারাণচন্দ্রেরে কোনো বিশিষ্ট পরিচয় নেই সাহিত্য ইতিহাসে কিন্তু রায়সাহেব হারাণচন্ত্র যে স্বদেশপ্রেমিক ছিলেন তাঁর পরিচয় আছে বঙ্কিমচন্দ্রের মুগ্ধ ভক্ত ছিলেন ইনি, “বঙগদর্শনের' স্বদেশাত্মক রচনা] একে অহ্থুপ্রাণিত করেছিল। ন্বদেশপ্রেমের উচ্ছাস সম্বল করেই ইনি “ৰঙ্গের শেষ বীর" রচন। করেছিলেন ছুটি খণ্ডে।

বঙ্গের শেষ বীর" গ্রন্থের ভূমিকায় লেখক বলেছেন,_

“বাঙ্গালী পাঠক সহজে ইতিহাস, পড়িতে চাঁহেন না, তাই এতিহাসিক উপন্যাসের অবতারণ। |”

বস্কিমভক্ত হারানচন্দ্র বঙ্কিমপ্রদশিত পথেই ম্বদেশপ্রেম প্রচারে ব্রতী হয়েছিলেন বাঙ্কালীর ইতিহাসে বীরচরিত্র অনুসন্ধান করাই তাঁর লক্ষ্য ছিল। প্রতাপাদিত্যকে নির্বাচন করেছেন সেই স্ত্রেই এতিহাসিক প্রভাপাদিত্যকে অবলঘন করে প্রতাপচন্্

উপন্যাস ৬২৭

ঘোষ 'বঙ্গাবিপ পরাজয়” রচন। করেছিলেন বৃহ্দায়তন উপন্যাসে তা সত্বেও একই চরিত্র অবলম্বন করে উপন্যাস লেখার উদ্ভধম করেছিলেন হারাণচন্দ্র | প্রতাঁপচন্দ্রের লেখায় সত্যসদ্ধানের আতিশয্য ছিল বলেই প্রতাপাদিত্যকে অকুঠতাঁবে সমালোচনা করেছিলেন তিনি | প্রতাপের চারিত্রিক দোষক্রটির এই নির্ভীক সমালোচনার জগ্তই লেখক সমাদৃত হননি প্রতাপাদিত্য সম্বন্ধে সত্য ইতিহাস অবলম্বন করলেই জাতীয় সমালোচনাঁকে বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। তাতে অবায়বীয় উচ্ছ্বাস থাকতে পারে,-- আদর্শরক্ষা হতে পারে, কিন্তু ইতিহাসের মুখরক্ষা করা যাঁয় না। তবু এতিহাসিক উপন্যাস রচনার দোহাই দিয়েই হারাণচন্দ্র তার দেশপ্রেমের আদর্শপ্রচারের জন্যই “বঙ্জের শেষ বীর” রচনা করেছেন। বলাবাহুল্য ইতিহাস এখানে গৌণ, আদর্শায়িত মহামানব প্রতাপাদিত্যকে জনসমক্ষে অনিন্দনীয় চরিত্রর্ূপে দেখানোর বাসনাই মুখ্য নামকরণ সম্পর্কে লেখক বলেছেন, _

"এই নামে যদি কাহারও আপত্তি থাকে, তিনি একবার বাংলার বীর জগতের প্রতি দৃষ্টিপাত করিবেন,__দেখিবেন, প্রতাপাদিত্যই বঙ্গের শেষ বীর বটে ।*৪৮

এই আদর্শেই প্রতাপ চরিত্রটি আগাগোড়া কল্পনা করে নিয়েছেন লেখক উপন্যাসের মধ্যে বঙ্কিমী ঢং-এ তিনিও মাঝে মাঝে আবখিভূতি হয়েছেন,-অবিরল উপদেশাম্ৃত বর্ষণ করেছেন পাঠক সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে “আনন্দমমঠের' উদ্দীপনাময়ী ভাষাপ অন্ুকরণও উপন্যাসে স্পষ্ট চতুর পরিচ্ছেদের প্রারস্তে উচ্ছুসিত লেখক বাঞ্ালী চরিত্রের সমালোচনা করেছেন,

“বান্সালী বীর, বাঙ্গালী যোদ্ধা, বাঙ্গালী রাজাধিরাজ-রাজরাজেশখবর,_একথা, আজিকার দিনে বাঙ্গালী পাঠকের কেমন লাঁগিবে, জানি না। কারণ, জগৎ ভুড়িয়া কলঙ্ক-_বাঞ্গালী দুর্বল! বাঞালীর বাহুতে বল নাই, মনে সাহস নাই, হৃদয়ে উৎসাহ নাই ;-_বাঙ্গালী ভীরু, কাপুরুষ নিস্তেজ ; বাঙ্গালী লাঠি খেলিতে জানে না, বাঙ্গালী তরবারি ধরিতে জানে না, বাঙ্গালী বন্দুকের শবে মৃচ্ছা যায়, বাঙ্গালী আগ্নেয় অন্ত্রের নামে ভয় পায়, সুতরাং বাঙ্গালী অতি অপদার্থ হেয়-_ইত্যাকার এবং আরও অনেক প্রকার কথার আলোচনা করিয়া একদল (ইহাঁদের সংখ্যাই পনের আনা) আপন আপন বিজ্ঞতা বহুদশিতার পরিচয় দিয়া থাকেন। পাঠক কি তাহাদের আল্ম্মসংস্কার ভুলিতে পারিবেন? বাল্যে বঙ্গবিগ্ভালয়ে এবং যৌবনে ইংরাজী বিদ্যালয়ে বাঙ্গালীচরিত্র সম্বন্ধে, তাহারা যে তুল শিক্ষা পাইয়াছিলেন, ইংরেজ ইতিহাস লেখকের এবং ইংরেজ পুচ্ছধারী বাঙ্গালী এতিহাসিকের ইতিহাস গ্রন্থ কঠস্থ করিয়া

৪৮, ভারাণচন্ত্র রক্ষিত, বজের শেষ বীর, ১৩০৪

৬২৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

তাহার! আপনাদের পূর্বপুরুষগখ সম্বন্ধে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছিলেন, অধমের অধমগ্রন্থ পড়িয়া! সহস1 কি মন হইতে সেই বহুদিনের বিশ্বাস অপনোদন করিতে সমর্থ হইবেন ?” |

অংশটুকুতে লেখকের সমস্ত উদ্মা অভিযেগই স্ছুটবাক্‌ হয়েছে | এটি কোন এ্রতিহাসিক উপন্যাসের ভূমিকা নয়, যেন স্বদেশপ্রেমিক কোন বক্তার উচ্ছ্বসিত ধত্রন্ভী।, দেশের দুর্দশায় মর্মান্তিক ছুঃখে এরা স্থান-কাঁল-পাত্র বিস্বত হন। প্রতাপাদ্িত্যের এ্রতিহাসিক চরিতাখ্যান বর্ণনাই গ্রন্থের উদ্দেশ্য নয়, উদ্ধৃত মন্তব্য থেকে এটুকু স্পষ্ট হয় সর্বাগ্রে

প্রতাপাদিত্যকে “বঙ্গের শেষ বীর” বলে প্রমাণ করার চেষ্টা উপন্যাসের সর্বত্রই দেখা যাবে প্রতাপপত্বী পদ্মিনীকেও দেশপ্রেমের আদর্শে দীক্ষা! দিয়েছেন লেখক প্রতাপ শৈশব থেকেই স্বাধীনচেতা স্বদেশে দ্বারে দৃঢ়চিত্ত বন্ধু শংকর প্রতাঁপকে যুবরাজ বলে সম্বোধন করেছিল বলে প্রতাপ প্রতিবাদ করেছে,

ভুয়া! রাজসম্মানে লাভ কি? ইচ্ছা করিলেই যে রাজ্য কাঁড়িয়া৷ লইতে পারে, ইচ্ছ। করিলেই যে, এই যশোহরের শাসনভার আর একজনের হস্তে দিতে পারে, অনুগ্রহ বা নিগ্রহ যাহার খেয়ালের উপর নির্ভর করিয়া থাঁকে, তাহার নিকট হইতে রাজ। ব1 মহারাজা, আমির ব1 উজীর কোন্নো উপাধিরই কোন মূল্য নাই।-_যাহার এতটুকুও স্বাধানতা। নাই, হাঁত-পা-মন অবধিও যাঁর অধীনতা নিগড়ে বদ্ধ, তার আবার সম্মান কি?

রায়সাহেব হারাঁণচন্দ্র অংশটিতে সম্ভবতঃ আপন মনোক্ষোভ গোপন করতে পারেননি | প্রতাপের উদ্বেলিত ত্বদেশপ্রেমের ক্রমপরিচয়টি উপন্যাসে গুকাশিত হয়েছে--যথার্থ স্বদেশসাধকের মতই প্রতাপ বলেছে,_

“আমার বাসনা আপনাকে লইয়া নহে, এই সমগ্র বঙ্গবাপীকে লইয়া ।-_-এ বাসনা কি মিটিবে না?"

স্বদেশপ্রেমষিক লেখক প্রতাপ চরিত্র অবলম্বন করেই আপন মনের সমস্ত বেদনাকে প্রকাশ করেছেন অভিমন্যুর যুদ্ধলাজ দেখে প্রতাপ মন্তব্য করেছে,--

“জননী জন্মভূমিকে কি আমি অধীনতা পাশ হইতে মুক্ত করিতে পারিব না?”

সমগ্র জাতির অন্তরে যেদিন এই আশকুলতাই স্পই হয়েছিল--সেই লগ্গেই উপন্তাসিক উদগত মনোভাব সোচ্চারে প্রকাশ করেছিলেন।

প্রতাপ হূর্যকান্ত শংকরের সঙ্গে দিল্লীযাত্র! করেছিল, কিন্তু যাব্রাপথে সে হুঃখিনী ভারতমাভার অবর্ণনীয় দুর্দশার চিত্রটি দেখে শিহরিত হয়েছে--এ অভিজ্ঞতা ফে লেখকেরই, সে কথা সহজেই বোঝ] যায়,

উপন্তাস ৬২৯

"আহা; কি দুর্ভাগ্য! যাহাদের দেশ, যাহাঁদের জন্মভূমি, তাহারা আজা নরন্ন 'ও বিবস্ত্র, আর যাহারা নেতা বলবান, তাহারাই ভোগৈশ্বর্ষে বিহ্বল! স্বাধীনতার লীলাক্ষেত্র, বীরত্বের সঞ্জীব উৎস, পৃথিবীর নন্দন কানন -_হিন্দুস্থানের আজ কি মর্মান্তিক শোচনীয় পরিবর্তন ! হিন্দু জীবনের আজ কি দারুণ অভিশাপ এই পতিত হিন্দুর, এই পতিত জাতির কি পুনরুদ্ধার হইবে না ?”

প্রতাপের মনে এই অমলিন স্বদেশপ্রেমের অনুভব প্রকাশের আন্তরিক বাঁসনাটি স্পষ্ট করার জন্যই উঁপন্তাঁসিকের ব্যাকুলতা, কিন্তু ইতিহাঁসের সমর্থন তিনি পাননি এই উপন্তাসে লেখক একটি নতুন বিষয়ের অবতারণা করেছেন, প্রতাঁপের বন্ধু শংকর বন্গদেশ ভ্রমণ করে বর্বাঁপীকে স্বদেশপ্রেমে উদ্দীপিত করেছে গ্রামে-গঞ্জে ভ্রমণ করে দেশপ্রেম জাগানোর চেষ্টা করেছে,

“ভাইসব, হিন্দুর দেশে বিধর্মী মোঘলের আধিপত্য কেন? প্রতিজ্ঞা করো, প্রাণ থাকিতে আর মোধলের অধীনতা৷ স্বীকার করিবে না। বলো, “জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী,”--শপথ করো, “মন্ত্রের সাধন কিম্বা শরীর পাতন।”

অংশটিতে স্বদেশপ্রেমের একট! প্রত্যক্ষ আহ্বান আছে, আন্দোলন সৃষ্টি করার একট] স্চিস্তিত পথ দেখ।নোর চেষ্টা করেছেন লেখক ও্ঁপন্তাসিকের স্বদেশচেতন। একট] সক্রিয় সংগঠন শক্তিকেই আহ্বান জানিয়েছে

উপন্যাসটির অন্যতম বিশেষত্ব ফুলজানি চরিত্রে স্বদেশপ্রেম আরোপ স্বদ্রেশপ্রেমিকা এই নারী প্রেমের চেয়ে দেশপ্রেমকেই বড়ো বলে মনে করেছে কল্পনাটি আরও পরে বিশিষ্টতা হাঁরিয়েছিল। দ্বিজেন্দ্রলালের নাটকে সত্যবতী চরিত্রে অবাস্তবতা সৃষ্টির মূলে এই অস্বাভাবিক চেতনা রয়েছে। ফুলজানিও স্বাভাবিক নারী নয়__দেশপ্রেমিক লেখকের কল্পনায় উদ্ভাসিত একটি অসামান্য নারী রূপে চিত্রিত। সে বলেছে,

"দেশ ব্যাপিয়া মোঁঘলের অতাচার ; জননী জন্মভূমি বিষাদময়ী, স্বদেশবাঁসী শত অভাবগ্রস্ত, নরনারী দুঃখে মনাগুনে দগ্ধ,__সে চিন্ত। দুরে রাখিয়া আমি কিনা প্রেম উপাসন] করিতেছি 1 হা ধিক আমার রমনী জনমে !:'*আজ হইতে আমার প্রেমব্রত, জননী জন্মভূমিকে লইয়1।”-_দেশপ্রেমের উদ্দীপনাই চরিত্রের মধ্যে প্রাণস্চার করেছে।

উপন্যাসের ছদ্মবেণী কুমার চরিত্রটিতেও স্বদেশভাবন! প্রকট হয়েছে। ফুলজানিই নারীবেশ ত্যাগ করে দেশলাধনার জন্য পুরুষবেশ ধারণ করেছে। সম্ভবত: *আনন্দমঠের” শান্তি চরিত্রের অনুসরণ করেছিলেন লেখক কুমারের ভাষায়

জ৩০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

“আনন্দমঠের' ছায়াপাত দুর্লক্ষ্য নয়। প্রতাপাঁদিত্যের সঙ্গে যোগ দিয়ে কুমীর উদ্দীপনাময়ী ভাষায় ব্যাখ্যা করেছে তাঁর উদ্দেশ্য,

“হিন্দুর চক্ষের জল হিন্দু না মুছাইলে আর কে মুছাইবে? হিন্দুর যে সৌভীগ্যরবি অন্তমিত হইয়াছে, তাহা কি আর ভারত গগনে উদ্দিত হইবে না!”

ভাষা বঙ্কিমের উদগত উদ্ছ্বাসের বাণীকেই ত্বরণ করিয়ে দেয়। এভাবেই লেখকের স্বদেশপ্রেমোচ্ছাস এতিহাসিক প্রতাপাদিত্যের কাহিনী অবলম্বন করে প্রকাঁশ পেয়েছে

প্রতাপাদিত্য শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করতে পারেননি প্রতাপাদিত্যের পরাজয় লেখকের অন্তরে যে গভীর ছুঃখসঞ্চার করেছিল তারই প্রকাশ,

"আকবরের মৃত্যু সেলিমের সিংহাসনপ্রাপ্তি, এই দুই ঘটনা উপলক্ষ্যে প্রতাপ কয়েক বৎসর সম্পূর্ণ নিরুদ্বেগে, বাংলার সিংহাসন স্থশোভিত করেন ।-..কিন্তু হায়: কালও পূর্ণ হইল, আর বঙ্গের শেষ বীরেরও পতন হইয়া, সমগ্র বাঙ্গালী জাতির, বজদেশস্থ সমগ্র হিন্দুর স্বাধীনতা-রত্ব চিরকালের জন্য অনুষ্ট সমুদ্রে ভুবিয়া গেল ।”

প্রতাপাদিত্যকে দমনের জন্য আঁকবর সেনাপতি মানসিংহকে পাঠিয়েছিলেন | স্বদেশপ্রেমী লেখকের উচ্ছাস বেদনা এখানেও ঘূর্ত হয়ে উঠেছে। হিন্দুর কলঙ্ক মানসিংহকে কোন স্বদেশপ্রেমী লেখকই ক্ষমা করতে পারেননি প্রতাপাদিত্যের স্বদেশ প্রেমের পাশাপাশি মানসিংহের স্বদেশদ্রোহিতার প্রসঙ্গটি স্প্টু করেছেন লেখক। ইতিহাসের সত্য বর্ণনা করতে গিয়ে বারংবার লেখক নিজের গভীর স্বদেশপ্রেমই ব্যক্ত করেছেন। দেশপ্রেমিকের প্রশস্তি রচনা আর দেশদ্রোহীর নিন্দাবাদ স্বদেশপ্রেমিকেরই কাজ। হারাণচন্ত্র মানসিংহকে তীত্রভাষায় নিন্দা করে আপন চরিত্রের দেশাম্রাগই ব্যক্ত করেছেন,

“বস্ততঃ--মানসিংহ ভিন্ন এমন স্বজাতিদ্রোহী আত্মস্বাধীনতা৷ ধ্বংসকারী রাজপুত- কলঙ্ক আর কে আছে? এমনই স্বধর্মত্যাগী, স্বদেশবৈরী, কুলার্দার না ভুটিলে, বঙ্গে বা! ভারতের স্বাধীনতান্থর্য চিরঅস্তমিত হইবে কেন ?”

এজাতীয় দেশপ্রেমমূলক রচনায় গতাল্গগতিকতা৷ অনুসরণ করা ছাড়া লেখকদের উপায় ছিল না। হারাণচন্ত্র চিরাচরিত পথই অন্থুসরথ করেছিলেন এবং বারবার উৎসাহিতও হয়েছিলেন-_এর প্রমাণ মিলবে তাঁর পরবর্তী উপস্যাসে প্রভাপাঁদিত্যের চরিতকথা ভাবাবেগে আবৃত্তি করে স্বদেশপ্রেমিক যে আনন্দলাভ করেছিলেন পরবর্তীকালে প্রতাপসিংহের জীবনকাহিনী রচনার মূলেও সেই একই আদর্শ বর্তমান স্তরের সাধন” [১৩০৫] নাম দিয়ে উপন্তাসে হারাপণচন্ত্র তার দৃঢ় স্বদেশগ্রীতি ব্যাখ্যা করেছেন। “মন্ত্রের সাধন” গ্রন্থের ভূমিকায় বলেছেন হারা ণচন্ত্র--

“বাঙালীর প্রতাপ ধাহাদের হৃদয় আকর্ষণ করিয়াছে, আশা আছে, রাজপুত

উপন্তাস ৬৩১

প্রভাপও তাহাদের হৃদয় আকর্ষণ করিবে। মন্ত্রের সাধন সেই স্বদেশপ্রেমিক পুণ।ক্লোক প্রতাপসিংহের জীবনী অবলম্বনে রচিত 1৪৯

সমসাময়িক স্বদেশপ্রেমিক উপন্যাসকারগণ এই ভাবেই মহান ব্যক্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের প্রয়াস পেয়েছিলেন কল্পিত স্বদেশপ্রেমিকের কাহিনী রচনায় রুচি ছিল না তাদের, প্রকৃত সত্য বাস্তব ইতিহাসের পুনরাবৃতিতে উৎসাহ হারাননি এরা। প্রতাপসিংহের বহুকথিত বহুলপ্রচাঁরিত কাহিনীতে রসসঞ্চারের অভিনব উপায় জানা ছিলো না এ'দের,-_-তৰু অকৃত্রিম দেশাহুরাগসিক্ত হৃদয়ের আবেগে এর] পুনরাবৃত্ত কাহিনীকেই বলবার চেষ্টা করেছেন। মহাজনদের পথে অন্থগমনের বাসন! অতিক্রম করা সাধারণ লেখকের পক্ষে কোন যুগেই সম্ভব নয়। প্রাচীন যুগের লেখকরাই অভিযোগে অভিযুক্ত নন,--উনবিংশ শতাব্দীর স্বদেশ- চেতনার মত একটি সর্বজন অন্ুুভববেগ্য বিষয় নিয়েও যুগের লেখকেরা চূড়ান্ত গতান্থগতিকতা৷ দেখিয়ে গেছেন প্রতাপসিংহের কাহিনী অবলম্বনে হাঁরাণচন্ত্র ষে উপন্যাস রচনার আন্তরিক আবেগ অন্থভব করেছিলেন সে শুধু বিষয়ান্তরে যাবার পথ জানা ছিলো না বলেই। কাহিনীতে প্রতীপসিংহের বীরত্ব, শৌর্যবীর্য যথাসাধ্য শক্তি দিয়েই পরিশ্ষুট করার চেষ্টা করেছেন লেখক।

স্বদেশোদ্ধার প্রতাপসিংহের আঁবাল্য সাঁধনা--আহেরিয়া উৎসবে প্রতাঁপসিংহ জলন্ত ভাষায় উদ্দীপন] সঞ্চার করেছেন,

“যাহারা রাজপুত জাতির শত্রু, রাজপুতের স্বাধীনতার শত্রু, সমগ্র মিবারের শত্র, সেই পাপ মোঘলের করাল গ্রাস হইতে জননী জন্মস্মিকে উদ্ধার করিবার জন্য, কায়মনোবাক্যে দেবীসমক্ষে প্রার্থনা করাই ব্রতের গুঢ় উদ্দেশ্য |”

সমস্বরে উচ্চারণ করেছে সকলে-_“মন্ত্রের সাধন কিংবা! শরীর পাতন*। এই মন্ত্রটই সমগ্র গ্রস্থটিতে একটি গাস্তীর্ষপূর্দ আবহাওয়া হি করেছে। স্বদেশের স্বাধীনতা রক্ষা করা কিংবা অর্জন করা অসাধ্য নয় মন্ত্রের সাধন! যাঁর প্রাণে শক্তিস্ধীর করে সে সর্ববিপদমুক্ত হতে পারে অনায়াসে

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদটিতে মন্ত্রের সাধন” শব্দটিকে ব্যাখ্যা করেছেন লেখক। গ্রতীপসিংহ স্বাধীনতা রক্ষার জগ্য সমগ্র জাতিকে যে কঠোরব্রত পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন তার বর্ণনা পাই এখানে এই কঠিন আত্মসংযমের আদর্শে দীক্ষিত হলেই ঈগ্গিত স্বাধীনতা লাভ সম্ভব ত্যাগের শক্তিতেই প্রতাঁপসিংহ অজেয় বীর

৪৯. হান্সাণচ্ত্র রক্ষিত, মন্ত্রের সাধন, ১৩*৫।

৩২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

হতে পেরেছিলেন | রাজ্যক্থখ, বিলাস, আরাম, ত্যাগ করে, রাজধানী ত্যাগ করে 'আরাবল্লীর পর্বত কন্দরে আশ্রয় নিয়েছিলেন প্রতাপসিংহ এবং সমগ্র দেশবাসী প্রতাপের আদর্শ অনুসরণ করেছিলেন প্রতাপসিংহ বলেছেন,

“এ ব্রত গ্রহণের নাম মন্ত্রের সাধন" | ব্বদেশের জনতা, স্বজাতির মঙ্গলের জন্য, স্বাধীনতা রক্ষার জন্ত,_এই মহামন্ত্র সাধন করিলে, জগদীশ্বর অবশ্যই আমাদের মনস্কাম পূর্ণ করিবেন মিবার আমাদের মাতৃভূ।ম, জননীস্বরূপা; সেই স্বর্গাদপি গরীয়সী জন্মভূমি- সেই সোনার রাজস্থানের উৎ্কষ্ট অংশ-ন্বর্গতুল্য চিতৌর আজ মৌঘলের পদাঁনত | মা আজ শত্র কর্তৃক নিগৃহীতা _সেই মায়ের সন্তান হইয়। কি আমর1 অধম কুলাঙ্গারের ন্যায় নিক্ষল জড়জীবন ধারণ করিব ?”

লেখক এই অংশটিতে দেশসেবার উৎকৃষ্ট পথটি চিনিয়ে দিয়েছেন এই কঠোর আত্মত্যাগের মধ্যেই সাফল্যের ইঞ্গিত রয়েছে এই আদর্শে উনবিংশ শতাব্দীর নবজাগ্রত বাঞ্গালীকে চালিত করার সাধন] করেছিলেন লেখকেরা বঙ্কিমচন্দ্র “'আনন্দমঠে' দেশভক্তি সঞ্চার করেছিলেন, _হারাণচন্ত্র ইতিহাসের কাহিনী থেকে ত্যাগ_ সাধনার বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। সব সাধনার শেষে ত্যাগের সাধনাই জয়যুক্ত হবে, বিশ্বাস নিয়েই প্রতাপসিংহ আমরণ সংগ্রাম করেছিলেন

প্রতাপসিংহের পরাক্রম দেখা গেছে হলদিঘাঁটের যুদ্ধে। লেখক হারাণচন্ত্ হলদিঘাটকে নিয়ে আপন অন্তরের উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন,

"এই কি সেই হলদিঘাঁট? যেখানে সহ সহত্র রাজপুত স্বদেশের স্বাধীনতা রক্ষার্থ, হাসিতে হাসিতে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করিয়াছিল ? এই কি সেই বীর জাতির পুণ্যতীর্থ ? হায়! কালে সব গিয়াছে, আছে কেবল পুণ্যময়ী স্বতি। স্মৃতি পুণ্যময়ী বলিয়া, গ্রীতিময়ী বলিয়া, সহদয় কবি স্বদেশবৎসল লেখক, অন্তরের অন্তরে সেই চিত্র জাগাইয়। রাখিয়া, কাবো ইতিহাসে তাহা অঙ্কিত করিয়া আঁসিতেছেন

জাতীয় বর্ণনা কাব্যেও অজত্র আছে। পলাশীক্ষেত্র দেখে নবীনচন্দ্র জাতীয় উচ্ছবাসের পরিচয় দিয়েছেন হাঁরাণচন্ত্র স্বদেশপ্রেমিক, তাই ব্যাপারে স্বদেশপ্রেমিক কবিদের সঙ্গে তাঁর সাধর্্য লক্ষ্য করি।

মন্ত্রের সাধন" উপন্তাঁসটি ছুটি খণ্ডে বিভক্ত। প্রতাপসিংহের ভ্রাতা শক্তপিংহের সঙ্গে শক্রতার অবসানে প্রথম খণ্ডটি সমাপ্ত হয়েছে প্রতাপসিংহের স্বদেশপ্রেমেই অবশেষে বশীভূত হয়েছিল শক্তসিংহ।

দ্বিতীয় খণ্ডে প্রতাপসিংহের আজীবন সাধনার পরিণতির কথা শুনিয়েছেন লেখক প্রতাপসিংহ চিতোরের স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে অটল ছিলেন, অপরাজেয় ছিলেন-_কিন্তু জয়ী হতে পারেননি মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে এই গ্লানি প্রতাপকে

উপন্তাঁস ৬৩৩

পীড়িত উড্‌ত্রান্ত করেছিল। উপন্যাসের শেষাংশে অবসামগ্রস্ত-বেদনার্ত প্রতাপসিংহকে চিতোরলক্ষী স্বপ্নে দেখা দিয়ে বললেন,

“তারপর শুন বৎস! ভারতে হিন্দু মুসলমানকে একতাস্ত্রে আবদ্ধ করিতে, শাস্তি সভ্যতা চিরস্থাপিত করিতে, সুদূর শ্বেতদ্বীপ হইতে শ্বেতকায় একদল মহৎজাঁতি শীঘ্রই এখানে আগমন করিবেন। তাহারাই ভারতের তাঁবী সম্রাট সেই অশেষ গুণালংকত, মহামহিমান্বিত রাজার রাজত্বে সূর্য্য অস্তাগমন করিবেন না। জ্ঞানে, গুণে, কাঁ্যযকারিতায়, তাহার পৃথিবীর অগ্রগণ্য | অভ্ভান মৌঘল তোমার মর্য্যাদা বুঝিল না বটে; কিন্তু সেই জ্ঞানবান, স্যাঁয়বান, স্থসভ্য রাজরাজেশ্বর তোমার মহত কাঁব্যে ইতিবৃত্তে জলন্ত অক্ষরে ঘোষিত করিবেন ।”

অংশটিতে লেখকের বক্তব্যটি লক্ষণীয় লেখকের ইংরেজ শ্রীতি ইংরেজ মুগ্ধতা প্রকট হয়ে উঠেছে এখানে বঙ্কিমভক্ত লেখক বঙ্কিম নির্বাচিত পদ্ধতিতেই উপন্তাঁসের উপসংহার করেছেন। সেযুগের আত্মজাগরণ লগ্মেই এই অচিন্তিত উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় রেখেছেন লেখকরা দেশপ্রেমে ভরপুর হয়েও ইংরেজ্ের মহিমা- কীর্তনে বিরত থাকেননি এরা লেখক হারাণচন্দ্রও বলেছেন,

*চিতোরের অধিষ্ঠাত্রী দেবীর এই ভবিষ্যৎ বাণী আজ সম্পূর্ণ রূপে সফল হইয়াছে ইংরেজরাজের কৃপায় ভারতবাঁসী আজ সর্ববিধ সখের আস্বাদ পাইতেছে।” --সর্ববিধ সুখের আশ্বাদ পাঁওয়। সত্বেও কোন অশান্তি নিশ্চয়ই লেখকের শিরঃপীড়ার ' কারণ হয়েছিল। জাতীয় উদ্দেশ্যূলক রচনার যূলেও সেই বেদনাই বর্তমান। জাতীয় স্পষ্ট ইংরেজ প্রশস্তির সঙ্গে স্বদেশপ্রেমিকতার বিরোধ কল্পনা কর! যায় সহজেই কিন্তু পরাধীনতার অভিশাঁপেই লেখক স্বভাবের বিশুদ্ধি রক্ষা করতে পারেননি-_ বুদ্ধিমান লেখকবুন্দ প্রশস্তি দিয়ে তুষ্ট করেছেন শাসকগোষঠীকে আখত্মিরক্ষার অস্ত্র যোগ্য র্থীকেও ব্যবহার করতে দেখেছি সাধারণ লেখকসম্প্রদায় ব্যাপারেও মহাজনপন্থাই অন্ুদরণ করেছিলেন

যুগের খ্যাতনামা লেখক চণ্ডীচরণ সেনও এতিহাঁসিক উপন্যাস রচনার মাধ্যমে স্বদেশপ্রেমের পরিচয় রেখেছেন চণ্ডীচরণের স্বদেশপ্রেম সর্বজনবিদিত চণ্ীচরণের স্বদেশপ্রেমের প্রেরণা ৭5০16 10705 0৪510, এই এতিহীসিক গ্রন্থটি অনুবাদের সময় চত্তীচরণ অনুভব করেছিলেন দেশের নির্যাতিত মানুষের কথা। “টম কাকার কুটির"*ই তার প্রথম রচনা !

চণ্ডীচরণ এ্রতিহাঁসিক উপন্ভান রচনা! করেছিলেন বটে কিন্তু জনক্রুতিযূলক কাহিনীর সঙ্গে কল্পনার সংিশ্রণে উপন্যাস রচনার যে এঁতিহা চলে আসছিল এতদিন--চণ্ডীচরণ সে পথ অনুসরণ করেননি চণ্ডীচরণ মুখ্যতঃ অধুনাতন যুগের

৬৩৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

কাহিনীই অবলম্বন করেছিলেন এমন সব চরিত্রকে তিনি উপন্যাসে জীবন্ত করে তুলেছেন যারা তখনো ঠিক ইতিহাস হয়ে যাঁননি। তাঁরা তখনও অবিসংবাদিতভাবে বীরত্বের আদর্শ কিংবা জাতীয় বীরচরিত্র রূপে পুজিত বা গৃহীত হননি। সেদিক থেকে বিষয় নির্বাচনে চণ্ডীচরণ মৌলিক পন্থা আবিষ্কার করেছিলেন চগ্ডীচরণের উপন্যাসের বক্তব্যও অন্তজাতীয়। ন্ব্দেশপ্রেমের উচ্ছ্বাসে অভিভূত না হয়ে তিনি জাতীয়চরিত্রের সমালোচনার দ্রিকেই অধিক মনোযোগ দিয়েছিলেন তাঁর শ্রেণীর রচনাঁকে উপন্যাস বলা যায় কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক লেখক তাঁর “মহারাজা নন্দকুমাঁর” উপন্তাঁসের ভূমিকায় বলেছেন, “বঙ্গদেশের ইতিহাঁস পাঠ করিতে জনসাধারণের রুচি হয় এই নিমিত্তই উপস্তাসের আকারে এই পুস্তক লিখিত হইল ।»

ক্ততরাং উপস্তাসের আকারে তিনি সত্য ঘটনা সম্দ্বধে জনগণকে অবহিত করবারই প্রতিশ্ররতি দিয়েছিলেন উপন্যাসটির দ্বিতীয় নামটিও অর্থপূর্ণ-_ “শতবর্ষ পূর্ব্বে বঙ্গের সামাজিক অবস্থা 1” _-এ জাতীয় রচনার মূলে স্বদেশপ্রেমের প্রত্যক্ষ- প্রেরণাই বর্তমান লেখকের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল নন্দকুমার চরিত্রের একটি নিরপেক্ষ সমালোচনা রচনা করা। নন্দকুমারকে সে যুগের মানুষ সঠিকভাবে বিচার করতে পারেনি বটে, কিন্তু নন্দকুমারের ফাঁসির ঘটনাটিতে শিহরিত হয়েছিল সে যুগের ধর্মপ্রীণ হিন্দুরা বস্ততঃ বিদেশীরা সত্যবিচারের অছিলায় একটি নির্মম হত্যাকাণ্ডেরই সুৃচন! করেছিল সেদিন, নন্দকুমার সেদিক থেকে বিদেশী শালনের প্রথম বলি। গুপন্যাঁসিক নিরপেক্ষভাবে নন্দকুমারের প্রকৃত তথ্য বর্ণন। করেছেন,__অকারণ প্রশংসা বা অহেতুক উচ্দ্রীস সত্যবিচারে বাঁধা দেয়নি জাতীয় ঘটন। বর্ণপায় ব্বদেশপ্রাণ লেখক অবিচল নিষ্ঠীরই পরিচয় দিয়েছেন সেদিক থেকে গ্রন্থটির তথ্যগত মূল্য স্বীকার্য নন্দকুমারের বিচারের নথিপত্র পাঠ করে লেখক যে ধারণ! অর্জন করেছিলেন,_সে বর্ণশাই স্থান পেয়েছে গ্রন্থটিতে তা ছাড়া শতবর্ষ পূর্বের বন্দেশের সামাজিক অবস্থার চিত্রটিও উনবিংশ শতাব্ীর নবজাগ্রত বাঙ্গালীর সামনে তুলে ধরেছিলেন তিনি

বঙ্গের স্থবাদার সর্বনিন্দিত মীরজাফরের দেওয়ান নন্দকুমার কিভাবে সমগ্র জাতির দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন-__-সেটাই আশ্চর্য হিন্দু ব্রাহ্মণ নন্দকুমার রাজকার্য করে, ধর্ম-বুদ্ধি সৎচিন্তা বজায় রেখেছিলেন তার অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে অবশ্য এখানে নন্দকুমারের গুরুদেব চরিত্রটি কল্পনা করে লেখক খানিকটা যুক্তি প্রদর্শন করেছেন এই তেজস্বী বৃদ্ধ নন্দকুমীরকে বিপদে-সম্পদে শুভ-বুদ্ধি দান করেছেন। রাজপদ প্রাপ্ত হয়ে নন্দকুমার দেশের তুর্দশা অনুভব করেছিলেন অনে প্রাণে। নন্দকুমার 'আত্মবিশ্লেষণ করেছেন,

উপদস্তাস ৬৩৫

অত্যাচারী রাজার দীসকেও বাধ্য হইয়া অত্যাচার করিতে হয়-_-আমি নবাবের দেওয়ান? আমি এক প্রকার ইংরাঁজদিগের দেওয়ান হইয়। পড়িয়াছি। ইরাজ কে? কয়েকজন বণিক মাত্র তাহারা কি দেশের রাজা? তবে তাহার কেন প্রজাদিগের উপর ঈদৃশ অত্যাঁচার করিবে 1৫০

এই সচেতনতা নিয়ে নন্দকুমীরের পক্ষে নিবিচার দাসত্ব অন্যায়ের সমর্থন করা সম্ভব হয়নি নন্দকুমীর বাঙ্গালী জাতির মনোভাব বিশ্লেষণ করে বলেছেন,

“দেশের সমুদয় লোকই ইংরাঞ্জদিগের বাণিজ্যকুঠীতে চাকরি পাইবার নিমিত্ত লালায়িত) তাহারা বাঁণিজ্যকু্টীতে চাকরি পাইবার নিমিত্ত প্রাণপণে চেষ্টা করিতেছে ; তাহার কি ইংরাঁজদিগকে দেশ হইতে বহিষ্কৃত করিয়া দিতে অগ্রসর হইবে? কখনই না।...বাঙ্গালী জাতি! চাঁকরি ইহীদিগের জীবনসর্যস্ব। সকলেই নবকৃষ্ণ মুন্সির পথাঁবলম্বন করিবে,--ইংরেজদিগের আশ্রয় গ্রহণ করিয়া দেশের লোকের উপর অত্যাচার করিবে

এই উক্তি নন্দকুমারের গভীর দেশচিন্তারই ফল। ইংরেজরাজত্বের প্রারস্তে নন্দকুমার বাঙ্গালীর যে চরিত্রলক্ষণ নির্ণয় করেছিলেন তা প্রায় ভ্রান্ত চাকুরীজীবী বাঙ্গালী সমাজের প্রতি লেখকেরও দারুণ অভিযোগ চণ্ডীচরণ সে যুগের সমাজ সমালোচনায় এই নতুন এবং বলিষ্ঠ বক্তব্যটি যোগ করেছিলেন। স্বার্থপরতা এক্যবোঁধের অভাব নিয়ে বস্কিমচন্দ্রের অভিযোগ ছিল সীমাহীন | চণ্তীচরণ বাঙ্গালীর এই দুর্দশাটির প্রতি আলোকপাত করেছিলেন,_

“বাঙ্গালী জাতি চাকরির নিষিত্ত বিশেষ লাঁলায়িত। জগতে এমন কি কুকার্ষ্য আছে যে অনেকাঁনেক বাঙ্গালী চাকরির প্রত্যাশীয় তাহা করিতে সংকুচিত হয়েন? চাক্কুরি বাঙ্গালীর প্রাণ, চাকুরি বাঙ্গালীর জীবনসর্বস্ব, চাকুরি বাঙ্গালীর একমাত্র উপান্য দেবতা 1৮

বঙ্কিমচন্দ্র মত আত্মক্রটি সংশোধনের পথটিকেই ফ্রুবপথ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন লেখক সমাজদরদী লেখক হিসেবে চণ্ডীচরণ মাঝে মীঝে সাবধান- বাণীও উচ্চারণ করেছেন,

"যতদিন সংসারে পাপ অত্যাচার থাকিবে, যতদিন জনবিশেষের স্বার্থপরতা সামাজিক সহীন্ভৃতির বন্ধন ছিন্নবি্ছিন্ন করিবে, ততদিন সেই দাবাগি-স্বরূপ প্রজলিত পাপানলের আক্রমণ হইতে কেহই আত্মরক্ষা করিতে সমর্থ হইবে না।”

চও্ডীচরপ সনাতন সত্যে বিশ্বাসী ছিলেন। বাংল! দেশের চরম ছুরবস্থার কারণ

পপ পা

৬৩৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে শ্বদেশপ্রেম

শতবর্ষ পূর্বে দেশের সামাজিক অবস্থা ঈদৃশ শোচনীয় ছিল বলিয়াই বঙ্গবাঁসিগণকে স্বীয় কুকার্য্যের প্রতিফল স্বন্ধূপ নানাপ্রকার অত্যাচারে নিপীড়িত হইতে হইয়াছিল ।... এইরূপ সমাজে প্রকৃত দেশহিতৈষীর কখন উদ্ভব হয় না। এইক্সপ সামাজিক অবস্থা নিবন্ধন প্রত্যেক নরনারীর অন্তর নীচাশয়তার আধার হইয়| উঠে।

চণ্ডীচরণ শতবর্ষ পূর্বে বঙ্গের সামাজিক অবস্থার নিখু'ত প্রতিচ্ছবি বর্ণনা প্রসঙ্গেই একথা উচ্চারণ করেছিলেন

নন্দকুমারের চারিত্রিক ক্রটি সম্পর্কেও লেখক সোচ্চার অত্যাচার-অবিচার অসত্য যেন সেদিনের জনজীবনকে গ্রাস করেছিল, কিন্তু আত্মাহুতি দিয়ে তাঁর প্রতিবাদ করার শক্তি সাহসেরই অভাব ছিল। আত্মস্বার্থরক্ষা যেখানে প্রবল-দুর্বল সেখানে অসহায় অরক্ষিত। বাঙ্গালী চরিত্রের কলঙ্ক কাহিনী লেখক মুক্তকঠে ঘোষণা করেছেন নন্দকুমারের প্রাণদণ্ডাজ্ঞ| প্রচারিত হবার পরে বাঁপুদেব শীন্ত্রী শেষ সাক্ষাৎকারে বলেছেন,

“দেশীয় লোকের উপকার করা তো তোমার ইচ্ছা ছিল না। অগ্ভ লোক দেশীয় 'ললোকের উপর অত্যাচার করে, প্রভুত্ব করে, তাহা তোমার সহা হইত না। তোমার মনের ভাব ছিল যে, আমি থাকিতে অন্যে কেন ইহাদিগের উপর প্রতুত্ব করিবে? এই তো তোমার স্বদেশীল্গরাগ দেশহিতৈষিতা অথচ মুখে বলিতে যে দেশের 'অত্যাচার নিবারণার্থ কেবল দেওয়ানি লাত করিবার চেষ্টা করিতেছ |”

নন্দকুমার চরিত্রের যথার্থ সমালোচন1| হিসেবে অংশটি গ্রহণ কর। চলে। নন্দকুমারের মৃত্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করেও এই চরম সত্যটি বর্ণনা করতে দ্বিধাবোধ করেননি লেখক | নন্দকুমারের সমসাময়িক যুগের অন্যান্ত বাঙ্গালী চরিত্র সন্বম্ধেও লেখক মন্তব্য করেছেন। মৃত্যুভয়ভীত, আত্মস্বার্থপরাঁয়ণ বাঁজালীর সামনে সেদিন 'কোন আদর্শ ছিল না। গ্রন্থে বাঁপুদেব শান্্ী অবশ্য আদর্শপ্রচারের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু এঁ চরিত্রটি সম্পূর্ণ কল্লিত এবং লেখকের বাদী প্রচারের উদ্দেশ্যই এর আবির্ভীব। বাপুদেব শীল্্ী রাজবল্লভকে বলেছেন,_

"তোমরা সম্মুখ সংগ্রামে বিনষ্ট হইলেও দেশের বিশেষ মঙ্গল হইবে পরাজিত হইলেও উপকার আছে। স্বাধীনতা রক্ষার্থ সংগ্রামানল একবার প্রজ্মজিত হ্হয়া উঠিলে, শতবর্ষেও তাহা নির্বাপিত হয় নাঁ। যতকাল স্বাধীনতা লাভ না হুইবে, 'ততকাঁল এই অগ্নি প্রজলিত থাঁকিবে, পুরুষ-পরম্পরায়ক্রমে বদ্ধিত ভাবে প্রজলিত কইতে থাকিবে সমরন্নিহত পিতৃপিতাঁমহের শোঁণিতসিক্ত পরিচ্ছদ তাহাদের “ুত্রপৌরগণ সগৌরবে পরিধানপূর্ববক দ্বিগুণতর উৎসাহে শক্র সন্মুখীন হইবে

বাঁপুদেব শান্বীকে যে যুগের আদর্শ পুরুষ রূপে কল্পনা করেছেন লেখক, সে

উপস্তাস ৬৩৭

ঘুগে ধরণের দেশচেতনা এদেশে ছুল'ভ ছিল। ম্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্বাহে দেশপ্রেমী লেখকের পক্ষেই কল্পনা সম্ভব ছিল। হ্বাধীন চেতনার অভাবেই আমরা পরপদাঁনত হয়েছি,_উনবিংশ শতাব্দীতে এই চেতনার আবির্ভাবেই আমর! পক্যবদ্ধ হয়েছি, সংগ্রামশক্তি অর্জন করেছি সমসাময়িক যুগচেতনাই ইতিহাসের আধারে স্থাপন করেছিলেন লেখক। স্বাধীনতা সংগ্রাম ষে যুগে আসন্নপ্রায় তার ূর্বাহ্থে এই যৃল্যবান প্রেরণাসঞ্চারী উক্তিটি লেখকের গভীর [স্বদেশপ্রেমের পরিচায়ক

নন্নকুমারের স্বৃত্যুতে শোকগ্রস্ত হয়েছেন লেখক। নন্দকুমার ইংরাজশাসনের প্রথম প্রকাশ্য বলি। অন্যায় বিচারের নিদর্শন হিসে.বই ঘটনাটিকে গ্রহণ করেছেন লেখক। ইংরাঁজ লেখকও ঘটনীকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন,_লেখক মেকলের মত উদ্ধৃত করেছেন.__

4100065, 51001176852 10066 00 2. [1081] 00050] 00 0680] 11 01061 (0 36:৮5 & 0011619] [9000955 ০056]: 5001) 10055 41510500160 07615761151) 150001756, 9100606850125 0191015 1017056]1 00 06201 17 03০ [0৬21

নন্দকুমার বিনা অপরাধে দণ্ডিত হয়েছিলেন-_-এ সত্যট্ুকু প্রতিষ্ঠা করাই লেখকের উদ্দেশ্য | নন্দকুমারেরও সাত্বনা ছিল যে দেশবাসী একদিন সত্য নির্ণয় করবে। চণ্ডীচরণ অপ্রিয় হলেও সত্য পরিবেশন করেছেন মৃত্যুপথযাত্রী নন্দকুমারের সামনেই ! শেষ সাক্ষাতের জন্য বাপুদেব শাস্ত্রী এলেন, ছুঃখ প্রকাশ করলেন কিন্তু সত্যবিচারে অপক্ষপাত দৃষ্টির পরিচয় দিলেন তিনি,

“বঙ্গবাসিগণ স্বাধীন অনুসন্ধান দ্বারা যখন বঙ্গের ইতিহাস লিখিতে আরম্ত করিবে, তখন দেশের লোঁক জানিতে পারিবে যে, তুমি বিনা অপরাধে দণ্ডিত হইয়াছিলে; তখনই দেশের লোক জানিতে পারিবে যে, ইংরাজের] কৌন্সিল পুস্তকে তোমার বিরুদ্ধে যাহা কিছু লিখিয়াছেন তাহা সম্পূর্ণ মিথ্যা ।"..কিন্ত বঙ্গদেশে তুমি কখনও দেশহিতৈষী বলিয়া! পরিগণিত হইবে না তোমাকে কখনও দেশহিতৈধী বলাও যাইতে পারে না। বঙ্গদেশে দীর্ঘকাল পর্যযস্ত তোমার ন্যায় স্বার্থপর লোক দেশহিতৈষির পরিচ্ছদ পরিধান কৃরিয়া দেশহিতৈষী বলিয়া আপন আপন পরিচয় প্রদান করিবে কিন্তু ভাবী বংশাবলি তাহাদিগকে অনায়াসে চিনিতে পারিবে 1৮

এই ভাবে নন্দকুমারের এতিহাঁসিক পরিচয় নিরপেক্ষভাবে বর্ণনা করাই লেখকের, উদ্দেশ্য ছিল। দেশপ্রেমিক বীরচরিত্রের কাহিনী অবলম্বনে বাঙ্গালী এতিহাসিক

৬৩৮ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

উপস্তাঁসকাঁর যখন উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিলেন,--চগ্ডীচরণ সেই সময়ে বিষয়ান্তরে মনোনিবেশ করলেন। তিনি গতানুগতিক বীরচরিত্র অবলম্বন করেননি, কিন্ত দেশপ্রেমের যথার্থ মহিম1 নির্ণয় করার উদ্দেশ্যেই দেশপ্রেমিকের সঙ্গে দেশের শক্রর যথার্থ রূপটিও ফোটানোর চেষ্টা করেছেন। দেশপ্রেমিকের মহিমা যেমন আমাদের উদ্দীপিত করবে, দেশের ক্ষতিসাধনকারীর মুখোশ খুলে দেওয়ার মধ্যেও সেই একই উদ্দেশ্য বর্তমান,__তাও পরোক্ষভাবে আমাদের দেশান্গুরাগই বাড়তে সাহাধ্য করবে তবে নন্দকুমারের চারিত্রিক গুণাবলীরও মুক্তকণ্ঠে প্রশংসা! করেছেন লেখক, দুঃখপ্রকাশ করেছেন তার নির্মম হত্যাকাঁগটির জন্য সজলচিত্তে বর্ণনা করেছেন মহারাজ নন্দকুমীরের ফীঁসীর মুহূর্ত বিদেশী শাসনের, নিষ্ঠুরতাঁর 'নজির স্বদেশচেতনাসম্পন্ন দেশবাঁসীর কাছে উপস্থাপনর চেষ্টাটিই মুখ্য হয়ে উঠেছে, সেখানেই উপন্যাসটির বিশেষত্ব বঙ্কিমচন্দ্রের মত চণ্ডীচরণ সেনও ইতিহাসগ্রীতির পরিচয় দিয়েছেন,--সত্য ইতিহাঁস রচনায় মনোনিবেশ করেছেন উপন্যাসে তিনি বলেছেন,_-

“যে জাতীয় লোকের ইতিহাস নাই, তাহাদের জাতীয় জীবন নাই। তাহারা সভ্যত। সভ্যতা বলিয়া যতই আশ্ফালন করুক না৷ কেন, তাহার্দের সে অসারসভ্যতা বারা মানবমণ্ডলী ক্রম-উন্নতির পথাৰলম্বন করিতে সমর্থ হয় না। প্রকৃত ইতিহাসের 'অভাবই ভারতের অধঃপতনের একটি প্রধান কারণ

এই উদ্ধৃতির আলোকে চণ্ডীচরণের উপন্াঁস রচনার যথার্থ উদ্দেশ্ঠটি স্পষ্ট হবে। স্বদেশপ্রাণ লেখকের আদর্শ নিয়েই তিনি সাহিত্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছিলেন

একই সময়ে তিনি কুখ্যাত দেওয়ান গঙ্গাগোবিন্দ সিংহের কাহিনী অবলম্বনে আরেকটি উপন্তাঁদ রচনা করেছিলেন। কুখ্যাত নিন্দিত চরিত্র নিয়ে উপন্যাঁস রচন। করেও চণ্ডীচরণ আপন উদ্দেশ্যের সততা প্রমাণ করতে পেরেছিলেন বাংলারই বুকে দেশপ্রেমিক বীর নীচ শয়তান একই সঙ্গে জন্মেছে কেউ দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, কেউ সর্বনাশ ঢেকে এনেছে দেওয়ান গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ জাতীয় একটি নাম। দেশী বিদেশী সমালোচকরা! চরিত্রটিকে নির্মম ভাষায় সমালোচনা করেছেন। গ্রন্থকার উদ্ধৃতি দিয়ে চরিত্রটির স্বরূপ ব্যাখ্যা করেছেন 7106 08£6-এ তিনি চ:1)0150 85:1,৪-এর উক্তি উদ্ধত করেছেন,

07795070868 (0০৮০2000606 আ৪5 0205 15016 5582100 ০৫6 09০:6- 33109, 0৫6 10092:5 11301100815, 06 46509001010 06 010০ 0000110 2190 0৫ 50275288101) 06 006 1১015 55502100 0135 71061151) 30522010613 হও ০৫2 00 5550 10 006 আ০0:8৮ 0 006 1090593 ৪]] 00০ 05৮55 0796

উপন্যাস ৬৩৯

50019 0089911015 8156 10 205 (0৮617701606, 1 01061: 60 09668 00 8005 13101) 21] 30610010016 0081)6 1) ০0101700160 118৮6 [2 16,৫১৯

মনীষী বার্ক ভাঁরতবন্ধুর কাজ করেছিলেন, ভারতবাসীর ুর্দশ! তাঁর অন্তর স্পর্শ করেছিল। স্বদেশপ্রাণ লেখক কুখ্যাত স্বদেশীয়দের পাপের চিত্র বর্ণনা করেছেন, মহৎ ইংরেজের মহান্ভবতা অনুভব করেছেন এভাবে দেওয়ান গঙ্গাগোবিন্দ সিংহের অত্যাচার বর্ণনা করেছিলেন অন্য একজন ইংরেজ হেষ্টিংস-এর বিচার সভায় 111. 050: 1/0015 বলেছিলেন,

4281052. 03051909. 2৪5 00105102150 85 ৪. £21721:81 00101629801 ০01

6৮০1৮ 026156, 196 1090 60 0621 10). 85 70070092105 106 25 2966509, 05 1290523 1)2 ৪.5 0::2246077,

যোড়শ অধ্যায়ের ভূমিকায় লেখক এই উদ্ধৃতি তুলে দিয়েছেন উপন্তাসিক চণ্ডীচরণ ক্ষোৌভে-ছুঃখে-ঘবণায় আপন দুর্বলতার কাহিনী বর্ণন। করেছেন অত্যাচারী নীচ দেশবাঁসীরাই আমাদের দুর্গতি বাড়িয়েছিল চতুগ্ণ। সপ্তদশ অধ্যায়ের প্রারস্তে তিনি নবীনচন্দ্রের আক্ষেপবাণীটি তুলে দিয়েছেন__ রে পাপিষ্ঠ রাজা রায়ছুপ্নভ দুর্বল, বাঙ্গালি কুলের গ্লানি, বিশ্বীস ঘাতক ডুবিলি ডুবাঁলি পাপি। কি করিলি বল, তোর পাঁপে বাঙ্গালির ঘটিবে নরক

জাতীয় কলঙ্কের ইতিহাসও আমাদের জানা দরকার লেখক নির্ভীকভাবে আত্মসমালোচন! করেছেন। দেশাত্মবোধই তীকে এই জাতীয় চরিত্র রচনার শক্তি দান করেছিল। গঞ্গাগোবিনদ সিংহের কলঙ্কিত নাম ইতিহাস থেকে মুছে গেছে__ কিন্ত আত্মপ্রতিষ্ঠার লগ্নে সেই কলঙ্কের ইতিহাসই আমাদের মনে নতুন শক্তি সঞ্চার করবে আমরা শৌর্যবীর্ষের দ্বার উদ্দীপ্ত হবো, বিশ্বাসঘাতকতার দৃষ্টান্ত আমাদের স্বদেশপ্রেমকে আরও দৃঢ় করবে। বিদেশীরাঁও জাতীয় কলফিত চরিঅকে দ্বণ! করেছে,__-আমর! সে সম্বন্ধে অবহিত হবে! নিশ্চয়ই লেখক সমস্ত মালমশলা সংগ্রহ করে এতিহাসিক দলিলই উপস্বাপিত করেছেন

83404 382: নির্মম ভাষায় গল্গাগোবিন্দ সিংহকে ব্যাখ্যা করেছিলেন,_

+. 1272 দি: 508150 06 1010) 21] [71019 00005 9216 0176 20০86

মস

৫১০ চর্তীচরণ সেন, দেওয়ান গঙ্গাগোবিদ্দ সিংহ, ১২৯২।

৬9৪৭ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! পাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

৬71০1520, 602 20050 2000080059১ 610০ ৮০0106950, 002 20056 16366510108 1119118 0026 ০৮০: 606 জায় 56151080508 0086 ০0020051095 9:0৫00620",,

অপমান আমাদের জাতীয় চরিত্রের ওপরেই যেন আঘাত করেছে লেখকও মহাছংখে বলেছেন,

“আমাদের ভারতবর্ষের যে সকল লোকের বীরত্ব ছিল, শুরত্ব ছিল, তেজ ছিল, মনুষ্যত্ব ছিল, তাহার] প্রায় সকলেই মুসলমানদিগের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া সংগ্রামক্ষেত্রে প্রাণ বিসর্জন করিলেন। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্র হইতে যাহারা পলায়ন করিয়া প্রাণরক্ষা করিয়াছিলেন, আমর] তাহাদের সন্তান পলায়িতদের বংশাঁবলী বলিয়াই আমর এত কাপুরুষ হইয়। পড়িয়াছি |”

লেখকের স্বদেশচেতন] এখানে পূর্ণমাত্রায় প্রকাশ পেয়েছে | বাঙ্গালী চরিত্রে তিনি কাপুরুষতা দেখেছিলেন আত্মশক্তিতে জাগ্রত বাঙ্গালী চরিত্রের সামগ্রিক শুদ্ধতা কামন! করেছিলেন যে লেখকবৃন্দ চণ্ডীচরণ তাদেরই একজন | বাঙ্গালীর সামাজিক জীবনে যে অধংপতনের প্রসঙ্গ আলোচন। করেছেন লেখক--তাতেও উদ্দেশ্যই প্রকট রাজনৈতিক স্বাধীনতা পাওয়ার আগে নৈতিক স্বাধীনতা লাভ কর] দরকার, রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন যখন ঘনীভূত সেখানে লেখক আপন, মতামতই ব্যক্ত করেছিলেন উপন্যাসের একটি চরিত্র [ প্রেমানন্দ ] বলেছেন-_

“বাঙ্গালী জাতি যদি কাপুরুষতা নিবন্ধন কেবল রাজনৈতিক অত্যাচারে নিপীড়িত হইত, তবে সমবেত চেষ্টা দ্বারা রাজনৈতিক অধিকার প্রাপ্তির জন্য যত্ব করিতাম। কিন্ত ইহাদের বর্তমান সামাজিক অবস্থাও যারপরনাই দ্বণিত | জাতিভেদ, স্্রীজীতির অবরুদ্ধাবস্থা, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, কৌলিম্তপ্রথা, সহমরণ প্রভৃতি কুৎসিৎ দেশাচার ইহাদিগকে ক্রমেই অবনতাবস্থা হইতে সমধিক অবনতাবস্থায় পরিচালন করিতেছে |”

লেখক যে যুগে রাজনৈতিক অধিকার প্রাপ্তির প্রসঙ্গ কল্পনা করেছেন সে যুগে তা৷ ছিল অচিস্তিত-অভাবনীয়। লেখক তাঁর সমসাময়িক যুগের রাজনৈতিক অধিকার প্রাপ্তির আয়োজন প্রত্যক্ষ করেছিলেন, সমালোচনা তাঁর সাময়িক যুগের প্রকৃত অবস্থারই সমালোচনা বলে মনে করতে হবে

চগ্তীচরশ জাতীয় এ্রতিহাসিক উপন্তাস আরও লিখেছিলেন, _“ঝান্সীর রানী” উপন্যাসটি প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য ১৮৮৮ খুঃ ঝান্সীর রানী লক্ষমীবাঈ-এর জীবনচরিত রচনা করতে বসেছিলেন লেখক,- ইতিপুর্বেই উজ্ভ্বল ইতিহাসটি নিয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু রচনা হয়নি বলে লেখক ব্যাপারে যথেষ্ট মৌলিক দৃষ্টিত্গির পরিচয় দিয়েছেন ঝান্দীর রানী লক্ষীবাঈ তখনও এতিহাসিক চরিত্র হননি ১৮৫৭ থৃঃ সমগ্র ভারতে

উপস্তাস ৬৪১

যে সমরাশিল প্রজলিত হয়েছিল, ঝান্সীর রানী সেই সংগ্রামেই প্রাণত্যাগ করেন এই বীরাঙ্গনা নারীর অসীম বীরত্বকাহিনীর সম্যক প্রচারের প্রয়োজনও ছিল। গ্রন্থকার সে প্রয়োজন ছাড়াও আরও একটি কারণে গ্রস্থরচনার আয়োজন করেছিলেন ইংরেজ ইতিহাঁসলেখ হগণ ঝাঁ্পীর রানীর সঠিক মূল্যায়ন না করে কল্পিত অভিযোগ এনে চরিত্রটিকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করেছেন- শ্রস্থকার তারই প্রতিবাদে লেখনী

ধারণ করেছেন। প্ররচেষ্টাটিকে স্বদেশপ্রেমী লেখকের নির্ভীক রচনা বলেই

অভিনন্দিত করা প্রয়োজন। আমাদের ইতিহাসের সত্য সঠিকভাবে নির্ণয়ের দায়িত্ব আমাদেরই হাতে ইংরেজ এতিহাসিকের প্রদত্ত মিথ্যা বিবরণ প্রতিবাঁদযোগ্য বিবেচন!

করেছিলেন বলেই স্বদেশচেতনার প্রেরণায় গ্রস্থ রচনা করেছিলেন তিনি |

ভূমিকায় তার উদ্দোশ্যটি ব্যক্ত করছেন লেখক,-_-

“ইংরেজ ইতিহাললেখকগণ ঝান্সীর রানী বীরাগন। লক্ষমীবাঈয়ের চরিত্র অনর্থক কলঙ্কিত করিয়া রাখিয়াছেন। ত।হারা বলেন ঝান্সীর হত্য।কাও রানীর আদেশাহুপারে হয়। কিন্তু ঝান্সির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যে রানীর সংশ্রব ছিল, তাহার কিঞ্িংমাত্রও প্রমাণ নাই ।”

রানী লক্ষীবাঈয়ের স্যাঁয় বীরা্না ইংলণ্ে কিংবা আমেরিকাতে জন্মগ্রহণ করিলে প্রত্যেক লোক আপন আপন গৃহে যত্ব সহকারে তাঁহার প্রতিযৃতি রাখিতেন। কিন্ত ভারতবর্ষের লোঁক এখন পর্যন্তও রানী লক্ষমীবাঈয়ের গুণ গ্রহণ করিতে সমর্থ হয়েন নাই

লক্ষ্ষীবাঈয়ের চরিত্রের এই বৃথা কলঙ্ক নিবারণার্থ ঝান্সী বিদ্রোহের প্রক্কত ঘটনা অবলন্পূর্বক এই পুস্তক লিখিত হইয়াছে ।”৫২

ঝান্পীর রানী লক্মীবাঈয়ের স্বদেশপ্রাণতা, বীরত্ব কাহিনী বর্ণনাই গ্রন্থের উদ্দেশ্য হলেও পটভূমিকায় গুরুত্বপূর্ণ সিপাঁহীবিদ্রোহের বিষয়টি তিনি গ্রহণ করেছিলেন। সিপাহীবিদ্রোহ সম্বন্ধে গতানুগতিক ধারণার সঙ্গে চণ্ডীচরণের বর্ণনার মিল নেই। তিনি একে বর্ণশা করেছেন এতাবে।

*১৮৫৭ খ্রীষ্টান্বের মে মাসে ভারতে আবার দেশব্যাপী সমরানল প্রজলিত হইয়। উঠিল। এক বৎসর পূর্বে ভারতের অভ্যন্তরে বাহিরে সর্বত্রই শান্তি বিরাজ করিতেছে, ভারতে ইংরাজরাজত্ব চিরকালের নিমিত দূরীভূত হুইয়াছে-_-এই ধ্বনিতে দেশ নিনাদিত হইতেছিল। কিন্ত এক বৎসর অতিবাহিত হইতে না হইতে “ইংরাক্জ- রাজত্ব বিলোপপ্রাঁয়' এই ধ্বনিতে দেশ পরিপূর্ণ হইল

স্পষ্টতঃই বৌঝা। যায় সিপাহীবিক্লোছের যে ব্যাখ্যা তিনি দিতে চেয়েছিলেন,

৫২. চতীচরণ সেন, ঝাঙ্সীর রানী, ১৩০১ প্র

৬৪২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল সাহিত্যে শ্বদেশপ্রেম

সেটা! সার গভীর বিশ্বীসপ্রন্থত ধারণা সিপাহীবিদ্রোহ তীর দৃষ্টিতে ইংরাছ রাজন বিলোৌপের আন্দোলন | .

এই আন্দোলনের পটভূমিকায় রানী লক্ষীবাঈয়ের দেশপ্রাণতার মহিমা অনেক বেশী অর্থপূর্ণ হয়ে উঠেছে সহজেই। রানী লক্ষমীবাঈ স্বাধীনতা আন্দোলনের পুরোভাগে একটি উজ্জ্বল নারীচরিত্ররূপেই প্রতিভাত হয়েছেন লেখকের চোঁখে-_ এখানেই তাঁর কল্পনার বিশেষত্ব। লক্ষ্মীবাঈ তার সপত্বী গঙ্গাবাঈয়ের মধ্যে তিনি জলন্ত স্বদেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন গঙ্গাবাঈ বলেছেন,

“দেশের সমুদয় লৌকই যদ্দি ইংরাঁজদিগের সঙ্গে যুদ্ধ করিবার নিমিত্ত ক্ষেপিয়া উঠিয়া থাকে, তবে ইংরাজগণ এবার নিশ্চয়ই পরাজিত হইবে দেশের কোটি

কোঁটি লোক একত্র হইলে কি আর এই জনকয়েক ইংরাঁজকে তাঁড়াইয়া দিতে পারিবে না।”

এই অভিলাষ গঙ্গাবাঈয়ের মনে জলে উঠেছিল দেশাত্মবোধের প্রেরণায় এই প্রেরণায় লেখকও উদ্দীপিত। ঝান্দীর রানীর বীরত্ব কাহিনী বর্ণনীয় সিপাহী বিদ্রোহের উদ্দেশ্যও ব্যাখ্যা করেছেন লেখক,

“বর্তমান সিপাহী বিদ্রোহের কীজ ইংরাজরাঁজত্বের প্রারভ্ত হইতেই অস্কুরিত হইতেছিল। কিন্তু ততপ্রতি পর্যন্ত কাহীরও দৃষ্টি পড়ে নাই এখন সেই বিদ্রোহানল প্রজলিত হইয়া উঠিবামাত্র চতুদিক হইতে আহুতি পড়িতে লাগিল। যে সফল লোক পর্যন্ত নিতান্ত নিশ্চে্ট অবস্থায় জড়ের ম্যায় জীবন যাপন করিতেছিল, আজ তাঁহারাও ইংরাজদিগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে উত্তেজিত হইয়া উঠিল। তাহাদিগের অন্তরেও বীরত্বের সঞ্চার হইল ।”

ইংরাজ জাতির ব্যর্থ রাজনীতিই যে এই সংগ্রামের হুচনা করেছিল সেকথা লেখক বারংবার স্থরণ করিয়ে দিয়েছেন রাজ্য পরিচালনায় প্রজার স্বার্থ উপেক্ষিত হলে বিপ্লব অবশ্থাস্তাবী হয়ে ওঠে

যে দেশের রাজ প্রজাসাধারণের হিতাকণজ্ষী নহেন, প্রজার মঙ্গল সাধনে ধত্ববান নহ্থেন, যে দেশের রাজ শুদ্ধ কেবল প্রজাঁদিগের অর্থাপহরণের চেষ্টা করেন, সেদেশে নিশ্চয়ই রাজবিপ্লব উপস্থিত হইবে ৷»

এই শোচনীয় অবস্থার অবসান ধটেনি তখনও--কৃতরাঁং চণ্ডীচরণ উপপ্ভাসে যে সত্য পরিবেশন করেছিলেন তার বুগোৌপযোগী আবেদন তখনও শেষ হয়নি। স্বাধীনতার আন্দোলন একবার প্রজলিত হলে তার দাহ প্রতিটি মানুষের মনে উত্তেজন। সঞ্চার করবেই, _লিছ্ছিলাভ না হওয়া পর্যন্ত তা থেমে বামে বি

স্বিষ্তং বামিটিও লেখকেরই

উপস্তাঁস ৬৪৩

“দেশের স্বাধীনতা রক্ষার্থ কিম্বা সমগ্র মানব অগুলীর অধিকার রক্ষার্থ একবার সংগ্রামানল প্রজলিত হইয়া উঠিলে তাহা কখনও নির্বাপিত হয় না। পুরুষ পরম্পরায় এবং যুগঞজুগান্তর ব্যাঁপিয়া সে সংগ্রামানল জলিতে থাকে |

পঞ্চদশ অধ্যায়ে সিপাহী বিদ্রোহের মূল কারণ অনুসন্ধানে লেখক যথেষ্ট চিন্তা- শক্তি যুক্তির পরিচয় দিয়েছেন। সংগ্রামকে আত্মশক্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম রূপেই প্রতাক্ষ করেছিলেন লেখক উনবিংশ শতাব্দীর শেষাংশে ভারতবর্ষে আত্মশক্তি প্রতিষ্ঠার যে আয়োজন চলেছিল সেই মুহূর্তে গুঁপন্যাসিকের জাতীয় প্রচেষ্টাকে বিশেষভাবে অভিনন্পন জানাতে হয়। অনুরূপ দৃষ্টান্তের আলোচনায় কিছু রাজনৈতিক সচেতনতা সঞ্চারিত হোঁক এই শুভেচ্ছা লেখকের হৃদয়ে বর্তমান ছিল বলেই রচনাটির অপরিসীম মূল্য স্বীকার করতেই হবে। ঝান্পীর রানীর বীরত্ব বর্ণনাই লেখকের একম্নাত্র উদ্দেশ্য ছিলনা তিনি সমগ্র আন্বৌলন'টর যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা দিয়ে রানীর আত্মপধানের মহ্মাঁটর যূল্যায়ন করেছেন

ঝান্পীর রানী সম্পর্কে ইংরেজদের যে মিধ্যা ধারণা ছিল তাদুর করার জন্য লেখক ভাঁবাবেগে বলেছেন,

ইংরেজরা যদি ভারতবাপীদিগের স্বভাবচরিত্র বিশেষরূপে জাঁনিতেন, তবে কখনও তাঁহার! এই ভীষখ নরহত্যা, স্ত্রীহত্যা এবং শিশুহত্যার কলঙ্কে বীরাঙ্গনা! লক্ষমীবাঈয়ের পবিত্র নাম কলঙ্কিত করিতেন ন11৮

এই যুদ্ধে ঝান্সীর রাঁনী যেমন বীরত্ব প্রদর্শন করেছিলেন ইংরেজ সৈম্যরাও বীরত্বের সঙ্গে জীবন দান করেছিল। মেজর স্ষিনের একটি উক্তির মধ্যে ছুঃসাহসী আত্মদানে নির্ভীক ইংরাজের বীরত্ব কাহিনী প্রচার করেছেন লেখক,_

“ইংরাজের। আপন দেশের এবং স্বজাতির মঙলার্থে প্রাণ বিসর্জন করিতে সর্বদাই প্রস্তুত ভাহা ইহারা একবার চক্ষু মেলিয়া দেখুক। আমার্দিগের এই নির্ভীক মৃতু, আমাদ্দিগের জীবনের এই শেষ দৃষ্টান্ত এই অধঃপতিত জাতির মনে বীরত্বের ভাব আনয়ন করুক ।”

এখানে আত্মসমালোচনায় মুক্তকণ হয়েছেন লেখক। আমাদের স্বদেশচেতন! আত্মদানের প্রেরণা ঘে পরোক্ষভাবে ইংরাক্স চরিত্র থেকেই এসেছে সেকথা লেখক অস্বীকার করেননি আমাদের 780095590 যে বিলাতী আমদানি বস্কিমচন্দ্রই মে তথ্য পরিবেশন করেছিলেন,__তাঁতে চগ্ীচরণেরও স্পষ্ট সমর্থ আছে। ধদেশপ্রেমাত্মক রচনাতেও জাতীয় উদার মত অকপটে প্রচারের চেষ্টা সেযুগের ঘদেশপ্রেমী লেখকেরই বৈশিষ্ট্য ছিল। সেযুগের এই জাতীয় চেতনা একটা মুক্ত

্নদূর্শনেরই নামান্তর ছিল। পাশ্চাত্য দেশীয় ঘুক্রিবীদের আলোকে আমাদের

৬৪৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

সমস্ত ধারণাগুলোকে যাচাই করার প্রচেষ্টা ছিল বলেই জাতীয়চেতনা একট! দৃঢ় ভিত্তির ওপরেই প্রতিষ্ঠালাভ করেছিল

উপন্তাঁসে যোগীরাঁজ চরিত্রটি লেখকের নিজস্ব কল্পনা জাতীয় অন্তান্টি উপন্তাসেও আমরা একজন সর্বজ্ঞ, উদারচেতা মনস্বী পুরুষের সাক্ষাৎ পেয়েছি। “মহারাজা নন্দকুমারে বাঁপুদেব শাস্ত্রী, দেওয়ান গঙ্গাগোবিন্দ সিংহে" প্রেমাণন্দ ঝান্পীর রানীতে যোগীরাজ একই আদর্শজাত। এ'রা সম্ভবতঃ উপন্তাসিকের মনোভাবটি তুলে ধরেন উপন্যাসে যোগীরাজই রাজ রামমোহনের সমাজসংক্কীর ধর্মান্দোলনের সমালেশচনা করেছেন গ্রস্থটিতে বিংশতিতম অধ্যায়টিতে বাংলা দেশের সামাজিক চিত্র অঙ্কন করেছেন লেখক, যার বীভৎস রূপ দেখে আমর ভীত। যূল প্রতিহাসিক কাহিনীর সঙ্গে যোগিরাঁজের জীবন অভিজ্ঞতার কাহিনী পরিবেশনে কিছু ফললাভ হয়নি বটে, কিন্ত লেখকের মনেণভাবটি ধর] পড়েছে

যোগিরাজ ইংরাজী শিক্ষিত। স্যর হেনরি লরেন্স-এর মুখে আমর শুনি, ৮1) 73210521265 21:65 ৮21 10958] 60 0৩ 3055200060৮ | সিপাহীবিদ্রোহে ইংরেজের সাফাই গেয়েছেন হেনরি লরেন্ন। বাঙ্গীলী সম্পর্কে তার উক্তিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্ত মিথ্যা নয়। সিপাহীবিদ্রোহ সম্পর্কে সেযুগের বাঙ্গালীর মনোভাবের পরিচয় ঈশ্বরগুপ্ডের রচনায় মিলবে | ইংরাজ আহ্গগত্যের নিদর্শন স্বরূপ সে কবিতা সম্পর্কে আমাদের বক্তব্য পূর্বেই যথাস্থানে আলোচনা করেছি

যোগিরাজ সিপাহীবিদ্রোহ সম্পর্কে যে মতামত দিয়েছেন--সে মতবাদ লেখকেরই। যৌগিরাজই বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন যে ভারতবাপীর মনে স্বদেশাচুরাগ ছিল। তিনি বলেছেন,-_ |

911, 0015 15 306 8 50020. 00001629110 10595 105 01181 17 0106 861991) 001105 01 01:27:95 010012. 00100152105, 10176001105 0 700০1051010 8100 1৮001807015 1095 7261 006 08356 04 £16590 0152:760001 51906 5০00 556 000008101010 0৫ 006 00057 8120 006 01656150 000015505 080081 80091500]5 00610, 15 036 12951621019 0025601061)06 0 01026 জা106507680 0188:25০000, [পৃঃ ২০৬ |

এই অংশটি থেকেই লেখকের স্বদেশচেতনার পরিচয় যেমন .স্পষ্ট হয় তেমনি সিপাহী বিদ্রোহ সম্পর্কে বাঙ্গালীর ধারণার যে পরিবর্তন ঘটেছিল তাও বোবা। সহজ হয়।' সিপাহী বিদ্রোহ নিয়ে দীর্ঘ ইতিহাস রচন1 করেছিলেন রজনীকান্ত গুপ্ত। এখানে লেখক তীর নিজম্ব ধারণাঁটিই প্রেচার করেছেন, ছবিধাহীনভাবে ঘোষণা করেছেন যে, লিপাহী বিদ্রোহ স্বদেশপ্রেমী জনগণের প্রথম আত্মপ্রতিষ্ঠারই সংগ্রাম বান্সীর

উপন্যাস ৬৪৫

রানী লক্ষীবাঈ ছিলেন সেই প্রত্যক্ষ সংগ্রামের বীর নায়িকা। যুদ্ধক্ষেত্রে, প্রত্যক্ষ- সংগ্রামে আত্মবিসর্জন করে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ব্মরণীয় হয়ে আছেন পরবর্তী স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্ততি লে দৃষ্টান্তটি লেখকের মনে গতীর দেশাহুরাগের সঞ্চার করেছিল, উপন্যাসের আকারে ইতিহাসের এই উজ্জ্বল অধ্যাঁয়টি রচন! করে তিনি পরোক্ষভাবে তার দেশগ্রীতিরই পরিচয় দিয়েছেন

চণ্ডীচরণের এই স্বদেশপ্রেমসর্বস্ব উপন্যাস সম্পর্কে সাহিত্য সাধক চরিতমালাকার ব্রজেন্ত্রনাথের উক্তিটি ম্মরণযোগ্য।

“চগ্ডীচরণের গল্প বলিবাঁর অলাধারণ ক্ষমতা ছিল, ইহার সহিত তাহার তেজস্থিতা স্বদেশপ্রেমিকতা মিলিত হওয়াতে তাঁহার রচিত ধতিহাসিক উগন্তানগুলি একদিকে যেমন জনসাধারণের প্রিয় হইয়াছিল, অন্যদিকে তেমনি সরকারের বিরাগভাজন হইয়াছিল। 'নন্দকুমার, অযোধ্যার বেগম ঝান্পীর রানী'র-_কাহিনী প্রণেতাকে বাঙ্গালী কোনদিনই তুলিতে পারিবে না।'

এই শ্রদ্ধাগ্জলি লেখকের প্রাপ্য

সগুম অধ্যায় ব্যঙ্গাত্মক বচন!

উনবিংশ শতাব্দীতে গগ্চসাহিত্য হৃষ্টির অনতিকল পরেই ব্যঙ্গাত্মক রচনার সাক্ষাৎ পাই। ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের পণ্ডিতগোষ্ীর রচনায় বাংলা গন্ধ শুধু অবযব লাভ করেছে মাত্র, কিন্ত অতি অল্ল সময়ের মধ্যেই গছে নানা বৈচিত্র্য সম্পাদিত হয়েছিল, ব্যঙগাত্মক রচন! তাঁরই অন্যতম ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের পর্ডিতগো্ঠীর রচনাতেও আমরা সমজসচেতনতা৷ কিংবা স্বদেশগ্রীতির আভাস লক্ষ্য করেছি, মাতৃভাষাল্রীতির মাধ্যমে, স্বধর্মরক্ষার প্রয়াসের দ্বারা পরোক্ষভাবে সমাজসেবাই করেছিলেন তীরা। অবশ্য রামমোহনের বিশাল ব্যক্তিত্ব দেশসেবার আদর্শ প্রত্যক্ষভাবে প্রতিটি চিন্তাশীল মাচুষের মনেই প্রভাব ফেলেছিল। রামমৌহনের যুগ থেকেই রক্ষণশীলতার সঙ্গে উদার আদর্শের লড়াই ঘনীভূত হয়েছে, কিন্তু এদের উদ্দারতা বা রক্ষণশীলতা শুধু ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষার জন্যই সচেষ্ট ছিল না। উভয়পন্থীরাই আত্মচিন্তা বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর জনম্বার্থের কথা চিন্তা করেছেন। দেশপ্রেম আত্মস্বার্থবিরোধী বৃহত্তর ভাবনাকে কেন্দ্র করেই পুষ্টিলাভ করে। পারস্পরিক সংঘর্ষে আত্মরক্ষার জন্য শক্তিশালী রচনাকার ব্যঙ্গের আবরণেই আঘাতের ছুর্ভেছ্চ জাল বোনেন হৃতরাং কোন হ্বদেশপ্রেমিক লেখক হাতিয়ার হিসেবে ব্যঙ্গকে কাজে লাগানোর চেষ্টা যদি করেন তাঁদের প্রসঙ্গ বিশেষ ভাবে আলোচনার প্রয়োজন | বাংলা গণ্ভের শুরুতেই রাঁমমোঁহনের নবধর্মকে আক্রমণ করে রক্ষণশীল হিন্দুসমাজ যেদিন সক্কিয় হয়ে উঠেছিলেন, তীদের মধ্যে ব্যঙ্গীশ্রয়ী রচনার মাধ্যমে সমাজরক্ষ। স্বধর্মরক্ষার ব্রত গ্রহণ করেছিলেন ভবানীচরণ বন্যোপাধ্যায়। সেযুগের অদ্ধিতীয় ব্যন্শিল্প ভবাঁনীচরণের দেশপ্রেমও আজকের নিরপেক্ষ আলোচনায় স্থান পাঁওয়। দরকার ইংরাজীশিক্ষিত যুবসপ্রদীয়ের বিরুদ্ধে লেখনীধারণ করে ভবানীচরগ সেদিন সমাজের স্বাস্থ্যরক্ষার উপায় চিন্তা করেছিলেন বলেই ত্তীকে বিরাগভাজন হতে হয়েছিল আধুনিক সম্প্রদায়ের কাঁছে। কিন্ত ভবানীচরণের আদর্শের মূলে যে প্রবল দেশচিন্তাই বর্তমান ছিল সে বিষয়ে আমরা নিঃসদেহ। পরবর্তীকালে উদারপন্থী প্রগতিবাদীদের জয়গানে সকলেই খন মুখর, রক্ষণশীল স্বদেশপ্রেমিক ভবানীচরণের নাম সেখানে 'অনুচ্চারিত। সাহিত্য সাধক চরিতমালাকার সব্বদ্ধে বলেছেন,

শহিদ কলেজে ইংরাজী শিক্ষালাভের ফলে যুবরুদের মধ্যে হিন্ছু আচারের বন্ধন

4 শত

ব্যঙ্গাক্ষক রচন। ৬৪৭

শিথিল হইয়া আসিতেছে দেখিয়া তিনি নবীন আচার ব্যবহারের ক্রটি প্রতিপাদনের জন্য লেখনী ধারণ করিয়াছিলেন। এজজগ্ত তাহাকে সে যুগের ছাত্র সমাজের বিরাগ ভাঙন হইতে হইয়াছিল। হিন্দুকলেঞ্জের এই সকল ছাত্রই উত্তরকালে সমাজে প্রতিষ্ঠালাভ করিয়াছিলেন হুতরাং বিরোধী ভবানীচরণের কীতি গ্তাষ্য মূল্য প্রাপ্ত হয় নাই ।”

অবশ্য সাহিত্য সাধক চরিতম।লাকার তবানীচরণের সঠিক মূল্য বিচারে অশেষ যত্ব করেছেন | ভবানীচরণ বিপক্ষতা করেছিলেন কিন্তু মহৎ আদর্শই তাকে প্রেরণা দান করেছিল ব্যঙ্গাত্মক রচনার কোন আদর্শ তার সামনে ছিল না, সম্পূর্ণ তার স্বকীয় উদৃভাবন। সপ্স্থষ্ট বাংল! গণ্ঘলাহিত্যে এই মৌলিক সংযোজনের জন্ত যে অপরিসীম কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন ভবানীচরণ' তার যথার্থ মূল্য এখনও অণির্নাত। আমাদের আলোচনায় দেশপ্রেমী ভবানীচরণের ব্যঙ্গাত্মক রচনা- শৈলীর বিচারই স্থান পাবে, সেখানেও তার উদ্দেশ্যের সততা! উদ্‌ঘাটিত হয়েছে+ সেযুগের খাঙ্গালী স্বার্ধচিন্তার ক্ষুদ্রগণ্ডী অতিক্রম করে দেশভাবনার পরিচয় দিয়েছিল নানা ক্ষেত্রে, সম্ভবতঃ; যুগবর্ষই তাদের প্রেরণা যুগিয়েছে সমাজ, সংস্কৃতি, ধধ সাহিত্য রাষ্ট্র সম্বন্ধে এদের ভাবনাকে বিশেষভাবে আলোচনা করে দেখলে দেশপ্রেমের একটি স্বচ্ছধারা চোখে পড়বে ব্যঙ্গ সাহিত্যে ভবানীচরণ দেশপ্রেমের বক্তব্যটিই পরিবেশন করেছিলেন ১৮২৩ খ্রীষ্টাবে প্রকাশিত ভবানীচরণের প্রথম্ন ব্ঙ্জাত্বক রচনা “কলিকাতা কমলালয়ে" দেশপ্রসঙ্গ নানাভাবে ধরা পড়েছে। ব্যঙ্গাত্মক রচনার মূল লক্ষণ ভবানীচরণের রচনায় ঈষৎ প্রকাশিত হলেও ভবাঁনীচরণ মূলতঃ ব্যঙগগশিল্পী রূপেই আলোচিত হয়ে থাকেন। ফোর্ট উহলিয়ম কলেজের পণ্ডিতগোগ্ঠির পরই ছুন্ধহ বাংলাগন্ে লালিত্যসঞ্চার কৌতুকঞ্জনক ভঙ্গি আশ্রয় করেই ভবানীচরণ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। কিন্ত সমাজসংস্কারকের প্রচ্ছন্ন চেতনা, দেশসেবার আদর্শ যাকে প্রেরণ! দান করেছে তার পক্ষে নিছক ব্যঙগাশ্রয়ী হাস্যরস বিতরণ করা সম্ভব ছিল না। তবানীচরণের ব্যঙ্গাত্ক রচনাতেও সমাজচিন্তার গাস্তীর্য মাঝে মাঝে ধরা পড়েছে। বিদ্যাসাগরের কৌতুককর রচন] সম্পর্কেও কথ] সত্য ভবানীচরণ 'সমাচারচন্দ্রিকা” সম্পাদনাকালে “বাবু' প্রসঙ্গে একাধিক রচল] প্রকাশ করেছিলেন বাবুর উপাধ্যান, শৌকিন বাবু ইত্যাদি রচনাতেই কৌতুকঞ্জনক ব্যঙ্গ সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছেন, পরবর্তীকালে ছস্মনামে রচিত 'নববাঁরু বিলা” 'নববিবি বিলাস" গ্রন্থ ছুটিতেও ভবানীচরণ একই সঙ্গে সমাজ চেতনা- ৃষ্টির ব্যঙ্গ সৃষ্টির আয়োজন করেছেন তবে “কলিকাতা কমলালয়' গ্রস্থটিতে ভাষা প্রসঙ্গে ভবানীচরশ যে সুস্পষ্ট দেশস্রীতির পরিচয় দিয়েছেন তার অস্ভান্ত রচনায় ত)

৬৪৮ উনবিংশ শতাবীর বাংলা সাহিত্যে দেশপ্রেম

সলভ নয় | ব্যঙ্গ সৃষ্টির প্রয়াস এখানে স্তিমিত হলেও দেশক্রীতির প্রকাশ অনবছ, সেজন্ক আমাদের আলোচনায় গ্রন্থটি স্থান পেয়েছে সগ্ভ কল্সিকাতাঁয় আগত বিদেশীর প্রশ্ন নগরবাসীর উত্তরদানের ভঙ্গীতে গ্রন্থটি রচিত। বস্ততঃ প্রশ্ন দেশপ্রেমিক ভবানীচরণের এখানে ভাষাপ্রসঙ্গ নিয়েই আলোচনা শুরু হয়েছে দেশপ্রেমের প্রথম উচ্ড্বীস ভাষাপ্রীতিকে কেন্দ্র করেই দেখা গিয়েছিল। এখানে বিদেশীর বিস্মিত প্রশ্ন,

“কলিকাতার এমন অধখ্যাঁতি কেন হইল যে আপনার দিগের শাস্ত্রের অধ্যয়ন ত্যাগ করিয়া কেবল পাঁরসী ইংরাঁজী পড়েন বাংল! লিখিতে পড়িতে জানেন না এবং বাংলাশাস্ত্র হেয়জ্ঞান করিয়1 শিক্ষা করেন না।”১

বলাবাহুল্য যে, বিদেশীর ছল্মবেশে অভিযোগ এনেছেন স্বয়ং লেখক,--. মাতৃভাষার প্রতি অনাদর তিনি সা করতে পারেননি বলেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এখানে তবানীচরণ নগরবাসীর মুখে একটি যুক্তিপুর্ণ উত্তর শুনিয়েছেন। আত্মদোষ ক্ষাললের ক্ষীণ প্রচেষ্টা! নিয়ে নগরবাঁপী বলেছে,_

কেহ সংস্কত শান্্র অধ্যয়ন করেন না তুমি ইহাই শুনিয়াছ, কিন্তু সে ভ্রাস্তিমাত্র দেখ অমুক বাবু কত প্রকার সংস্কৃত গ্রন্থ করিয়ীছেন--আর অনেক ভদ্রলোকের সন্তানেরা অগ্রে সংস্কৃতান্থযায়ী বাংলা ভাষা লেখা পড়া অভ্যাঁস করিয়া পশ্চাঁৎ অর্থকরী ইংরাজী পালি বিগ্যাশিক্ষা করেন অর্থকরী বিদ্ভাশিক্ষা কর অবশ্য কর্তৃব্য-_-যখন ধিনি দেশাধিপতি হয়েন তখন তাহাদিগের বিদ্যাভ্যাস না করিলে কি প্রকারে রাঁজকর্ষ নির্বাহ হয় ।'

এই বুদ্ধিদীপ্ত উত্তরে লেখকের রক্ষণশীল মনোভাবের চেয়ে উদার উপলব্ধিই ব্যক্ত হয়েছে। ভাষাশিক্ষার উপযোগিতা বিচার করে তিনি সাম্প্রতিক শিক্ষা ধারার সমর্থনেই কথা বলেছেন

গ্রস্থটিতে ভাষা সম্পর্কে লেখকের স্বচ্ছ চিন্তাধারার পরিচয় পেয়েছি। বাংলা ভাষায় পারসী আরবী প্রভৃতি শব্দের অবাধ মিশশ ঘটেছিল প্রত্যক্ষভাবে মোঘল শাসনের ফলাফল এটা, বিদেশীর প্রশ্নে প্রসঙগটিই ব্যক্ত হয়েছে

“ভদ্রলোকের মধ্যে অনেক লোক স্বজাতীয় ভাষায় অন্ত জাতীয় ভাষা মিশ্রিত করিয়া কহিয়া থাকেন যথা কম, কবুল, কমবেশ, কয়লা, কর্জ, কষাকধি, কাজিয়া ইত্যাদি ককার অবধি ক্ষ কার পর্য্যত্ত, ইহাতে বোধ হয় সংস্কৃত শান্ত ইহারা পড়েন

১। ক্চবানীচন়দ বন্দ্যোপাধ্যায়, ফলিকাত। কসলালয়, ১৮২৩

ব্যঙাত্সক রচনা ৬৪৯

নাই তাহা হইলে এতাঁদুশ বাক্য ব্যবহার করিতেন না। স্বজ্াতীয় এক অভিপ্রায়ের অধিক ভাষা! থাকিতে যাবনিক ভাষা ব্যবহার করেন না যথা

যাবনিক ভাষা সাঁদুভাষা কমিনে অন্ত্যজ, ক্ষুপ্র, সামান্য, নীচ কল যন্ত্র, কসম শপথ, দিব্য কবুল স্বীকার, অঙ্গীকার, প্রতিশ্রুত থারাব মন্দ, কদর্ষযা,

এখানে সংস্কত শব্দসম্পদের বৈচিত্র্য প্রদর্শনের চেষ্টাটিও লক্ষণীয় লেখক বিশুদ্ধ ভাঁষা প্রয়োগের দাবী তোলেননি-_কিস্ত সংস্কৃত জ্ঞানের অভাব তাঁকে পীড়া দিয়েছে স্বভাষার সমৃদ্ধ শব্দভাগার উপেক্ষা করাকে তিনি প্রশংসা করতে পারেননি এভাবেই ভবানীচরণ দেশগ্রীতির আন্তরিক পরিচয় দিয়েছেন ভাঁষাপ্রীতির মাধ্যমে

সেযুগের সম্পন্ন কলকাতাবাসীদের দৃষ্টিভঙ্গীকেও সমালোচনা করেছিলেন লেখক এ'রা দেশাত্মবোধশুন্, আত্মমর্যাদাজ্ঞানহীন ভবানীচরণ এই 'মেরুদণ্ড- বিহীন বাঙ্গালীর চরিত্র রচনা করেছেন। গ্রন্থের সমালোচনামূলক অংশটুকু বিদেশীর প্রশ্নাকারে ব্যক্ত হয়েছে-লেখক নিজে নগরবাসীর পক্ষ সমর্থন চেষ্টা করেছেন। এখানে রচনা-কৌশলটি যথার্থ ব্যঙশিল্পীর বিদেশীর প্রশ্নেই দেশচেতনা প্রকাশ পেয়েছে,-নগরবাসী শুধু আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছে মাত্র। তৎকালীন কলিকাতার সম্পন্ন ব্যক্তিদের মনোভাব বিশ্লেষণ করে বিদেশী সবিষ্ময়ে প্রশ্ব করেছে,_

“কলিকাতার অনেক ভাগ্যবান লোক আপন সন্তানদিগ্যে অপূর্ব আভরণ বন্্রাদি দেন আর বিবাহাঁদি কর্মে কেহ একলক্ষ কেহ ছুই তিন চারি পাঁচ লক্ষও হইবেক অত্যানন্দে ব্যয় করিয়া থাকেন। কিন্ত শুনিতে পাই আপন সন্তানদিগের বিদ্কাবিষয়ে মনোযোগের অত্যন্ত অল্পতা যেহেতু স্বজাতী।য় ভাষা অক্ষর শিক্ষার্থে একজন ব্যাকরণাদি শাস্ত্রে ব্যুৎপন্নলৌককে কিঞিৎ অধিক বেতন দিয়া না রাখিয়া হম্বদ্রীর্ঘ ইত্যাদি বিবেচনাশুন্য কেবল অঙ্কশান্ত্রে কিঞ্চিৎ জ্ঞানাপন্ন লোককে কিঞ্চিৎ বেতন প্রদানে রাখিয়! তাহাই শিক্ষা করান। ইহাতে কি প্রকারে সেই সম্ভান দিগ্যের উত্তম বিদ্ভা হইতে পারে আর যদি স্বজাতীয় বিদ্যায় অপক্ক1 রহিল তবে অন্তা্ত জাতীয় বিগ্ভাতেই বা কি প্রকারে পারদর্শী হইবেন ।”

এই আলোচনা ভবানীচরণের দূরদশিতার পরিচায়ক,-_ইংরাজী শিক্ষার প্রারতে

৬৫৩ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

ভবানীচরণ ম্বজাতীয় বিস্তার অপকৃতাঁর পরিণাঁম চিন্তা করেছিলেন ;---অধুনাঁও ষে আলোচনা শেষ হয়নি। স্বজাতীয় বিদ্তা শব্দটি প্রয়োগ ফালে তিনি সঠিক কি বোঝাতে চেয়েছিলেন বোঝা ছুফর,__কিন্তু প্রগতির ০০০০০৯০০৪ নয়, সত্য তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছিলেন

ভবানীচরণের অস্তান্ত ব্যঙ্গাত্রক রচনায় দেশাত্মবোধের পরিচয় স্পষ্ট হয়নি কিস্ত তৎকালীন বিপথগামী বাবু সম্প্রদায়ের চরিত্রচিত্রণ করে তিনি বাঙ্গালীকে সচেতন করে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। সহমরণের মত বীভৎস প্রথাকে সমর্থন করে যিনি ধর্মসভার সদশ্যপদ অলংকৃত করেছিলেন তিনিও বিপথগামী বাঙ্গালীর পরিণাম চিন্তা করে ভীত হয়েছিলেন। উভয়ক্ষেত্রেই তিনি রক্ষণশীল কিন্ত দেশগ্রীতিই তার সমস্ত চিন্তাধারায় প্রতিফলিত। হিন্দু আচারের গতানুগতিকতা নিবিচারে মেনে নেবার মধ্যে যেমন অনুদারতা আছে তেমনি আছে অদ্ধদেশতক্তি। বিষয়টি প্রশংসনীয় নয় কিন্ত আদর্শের মধ্যে ব্যক্তিস্বার্থের স্পর্শ নেই। অন্ধআনুগত্যের সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠতে পারেননি বলেই ভবাঁনীচরণ অভিযুক্ত হুতে পারেন | কিন্তু ইংরাজী সভ্যতার শ্োতে ভেসে যাবার প্রবণতাকে কোন স্বদেশপ্রাণ মনীষীই সমর্থন জানাতে পারেননি, ভবানীচরণ এদের পুরোধা পরবর্তীকালে দেশপ্রীতির অন্ত একটি অর্থ দ্াড়িয়েছিল স্বসংস্কৃতিগ্রীতি | হিচ্দু সংস্কৃতি বিরোধী আচরণকে তীব্র নিন্দা করাটা স্বদেশপ্রেমিকের অবশ্যপালনীয় কর্তব্য হয়ে ধীড়িয়েছিল। ভবাঁনীচরণই শ্রথম সংরক্ষণীমনোবৃত্তির পরিচয় দিয়েছেন, এই কারণেই তিনি প্রগতিবাদীদের কাছে নিন্দিত কিন্ত পরবর্তীকালে জাতীয়তাবাদের উন্মাদনায় ধর্ম-সংস্কৃতি-সমাজরক্ষায় আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন ধার! সেই স্বদেশপ্রেমিক সম্প্রদায় ভবানীচরণকে অভ্যর্থনা জানাবেন

ব্যঙ্গসাহিত্যে ভবানীচরণের পথাহুসরণ করেছিলেন প্যারীঠাদ মিত্র কালীপ্রসন্ন সিংহ। “আলালের ঘরের ছুলাল' গ্রন্থে ভবাঁনীচরণের 'নববাবু বিলাসের” প্রভাব খুব স্পষ্ট কাহিনীগত সাদৃশ্যই শুধু নয় উভয়ের মধ্যে আদর্শগত মিলও রয়েছে কলকাতার সদ্ধ ধনীসম্প্রদায়ের আদর্শবিহীন জীবনযাত্রা তাদের বিপথগামী সন্তানের জীবনচরিত রচনার দ্বারা সমাজের কল্যাণসাধনের প্রচেষ্টাই উভয়ের মধ্যে বর্তমান দেশপ্রেমই সাহিত্য রচনার অন্যতম প্রেরণা ছিল এ'দের। প্রবন্ধে প্যারীঠাদের স্থান নির্ণয় প্রসঙ্গে সেকথা আলোচিত হয়েছে

কালীপ্রসন্ন সিংহের সাহিত্য প্রচেষ্টা প্রসঙ্গে যে কথা সর্বাগ্রে আলোচনা করা দরকার ত। হল, কালীপ্রসন্নের ব্যক্তিচর্িত্র আদর্শের প্রসঙ্গ | স্বপ্পাস্ধু জীবন, অমিত কার্যক্ষমতা সাহিত্যপ্রতিভ! নিয়ে তার আবির্ভাব কিন্তু অতি অল্প সময়ের মধ্যেই

বাঙ্গাত্বক রচনা ৬৫১

কালীপ্রসন্ন একটি বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন নানা জনহিতকর সভাঁসমিতি অনুষ্ঠানের সঙ্কে জড়িত কালীপ্রসন্ন আপন বদান্ততায়, লৌককল্যাণের আদর্শে দেশপ্রেমে উদ্বদ্ধ, সর্বদাই অগ্রগামী তীর সমগ্র কার্যাবলীর আলোচনা থেকে তীর স্বদেশপ্রেমিকত৷ নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয়। বাঙ্গালীর স্বার্থ সন্ত্রমরক্ষার দায়িত্ববোধ ছিল তার, নানা কাজে তার পরিচয় পেয়েছি 'নীলদর্পণ' প্রকাশক লঙঙ সাহেবের জরিমানার অর্থদীন করে কালীপ্রসম্ন দেশপ্রেমিকতারই পরিচয় দিয়েছিলেন, আবার সার মর্ডাণ্ট ওয়েলস যখন ধিচারাঁসনে বসে সমগ্র বাঙ্কালীকে মিথ্যাবাদী প্রতারক বলে অভিহিত করেন, কালীপ্রসম্নও অন্তান্ত গণ্যমান্য বাঙ্গালীদের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে তাঁর প্রতিবাদ জানান। জাতীয় দেশপ্রাণতার পরিচয় তীর জীবনের প্রতিটি কার্যাবলীতেই পাঁওয়া৷ যাবে৷ কিন্ত ব্যঙ্গসাহিত্যিক হিসেবে কালীপ্রসম্নের বিচারকালে স্বদেশপ্রেমের প্রকাশ কোথাও ঘটেছে কিন! আমাদের আঁলোচন। তাঁতেই সীমাবদ্ধ থাকবে

কালীপ্রসম্ের হুতোম পা্যাচার নক্সা বিশেষ সমাদর কথ্যরীতির সাহিত্যিক নিদর্শনরূপে, তাছাড়া ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিমায় সে যুগের সমাজ সমাঁলোঁচনামূলক রচনা হিসাবেও 'হুতোম প্যাচার নক্সা'র বিশেষ আলোচনা হয়ে থাকে কিন্তু স্বদেশপ্রেমিক কালীপ্রসন্্নের কলমে সমাজচিত্রণের এই প্রচেষ্টার মূলে যে প্রবল দেশচেতনাও বর্তমান ছিল, সেটুকু বিশেষভাবে তুলে ধরাই আমাদের উদ্দেশ্য |

নক্সা” নামাঙ্কিত এই গ্রন্থের ভঙ্গিটি অতীব সরস হাশ্যরসাত্মক। সমাজ সমালোচনার উদ্দেশ্য সমাঁজসংশোধন হলেও প্রত্যক্ষভাবে সমাজকে তীব্র আঘাত হাঁনলে অনেক ক্ষেত্রেই তা বিবময় ফলপ্রসব করতে পারে। স্তরাং রসিকতার আশ্রয়ে ব্যঙ্গের মোড়কে সমাজের দোষক্রটিকে মোটামুটিভাবে সহনীয় করে তোলার তির্যক ভক্তিটিই লেখক অবলম্বন করেছিলেন উচ্চাঙ্গের হাশ্থরস হৃষ্টির কোন প্রত্যক্ষ প্রেরণা ছিল না এর যুলে কিন্তু সমাজব্যবস্থার গলদ লোকচক্ষুর সামনে তুলে ধরার আগ্রহ ছিল পুরোমাত্রায় তবু হাঁশ্যরস তৃষ্টির চেষ্টায়, উদ্দেশ্যের সততায় স্বাভাবিক রচনাগুণেই “ছুতোমপ্যাচার নক্সা” ব্যঙ্গাত্রক রচনার উৎকৃষ্ট নিদর্শন হতে পেরেছিল ব্যক্ষের শাণিত অস্ত্র প্রয়োগ করেছেন লেখক এবং হাস্যরসিকের মতো নিজেকেও আঘাত করেছেন। অঙ্গীলতার অভিযোগে রুচিহীন প্রসঙ্গে পূর্ণ গ্রন্থটিকে অনেক সমালোঁচকের মত বঙ্কিমচন্দ্রও উচ্চ মর্যাদা দেননি | সেযুগের ক্যালকেশিয়ান ভাষার নিদর্শন গ্রন্থটির অশ্লীলতার অন্যতম হেতুরূপে ধর! হয়েছে, কিন্তু এজন্য লেখকের উদ্দেশ্টের সততা সমালোচিত হতে পারে না| তিনি বাস্তবের যথাথব্পই পরিবেশনের আয়োজন করেছিলেন শহর কলকাতার জ্বঘন্ত কুরুচিপূর্ণ পরিবেশ যথাযথ

৬৫২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে দেশপ্রেম

চিত্রণের জন্ত তিনি যে বাস্তবতার আদর্শ অনুসরণ করেছিলেন ভার জন্য কালীপ্রলন্ন ধন্তবাদ পাবেন। 'ছতোঁম প্্যাচার নজ্সায়” কালীপ্রসন্ননের নিজস্ব বক্তব্যটি অহুধীবন করলেই রচনার উদ্দেশ্য স্পষ্ট হবে,

“কি অভিগ্রায়ে এই নক্সা প্রচারিত হলো, নক্সাধানির প্রতি দেখলেই সহ্ৃদয় মাত্রেই তা অন্ুতব করতে সমর্থ হবেন

'"“নক্াখানিকে আমি একদিন আঁরসি বলে পেস কল্পেওকর্তে পারতেম কারণ পূর্বে জান! ছিল যে, দর্পণে আপনার মুখ গ্েখে কোন বুদ্ধিমানই আরসিথানি ভেঙ্গে ফেলেন না বরং যাতে ক্রমে ভালো দেখায় তারই তদবির করে থাকেন, কিন্তু নীলদর্পণের হাঙ্াম দেখে শুনে ভয়ানক জানোয়ারদের মুখের কাঁছে ভরসা ব্যেধে আরিসি ধরতে আর সাহস হয় না, স্থতরাং বুড়ো বয়সে সং সেজে রং কত্তে হলো পুজনীয় পাঠকগণ বেয়াদবী মাফ কর্বেন |”

এই স্পষ্ট স্বীকারোক্তির আলোকে কালীপ্রসন্নের মনোভাবটি বিশ্লেষণ করলে ক্লেখা যাবে সহ্ৃদয় বিবেচনাশীল পাঠকের উদ্দেশ্যেই তিনি গ্রন্থটি নিবেদন করেছেন। রচনাভঙ্গীর অভিনবত্ধ সৃষ্টির মূলেও লেখকের দূরদশিতা ছিল! যাদের সংশোধনের বাসনা নিয়ে লেখক নক্সাটির পরিকল্পনা করেছিলেন, তাদের চেহারণটি বিক্কৃত হলেও অবিকৃতভাবে তা তুলে ধরার ইচ্ছাটিই বর্তমান ছিল লেখকের মনে | ছুতোম প্যাচার নক্সা সেদিক থেকে একটি প্রামাণ্য দলিল এবং অবিরুতর়ূপে তা উপস্থিত করেছেন লেখক সে যুগের ধর্মান্দোলন, সামাজিক দুর্নীতি, অনাচারের বিরুদ্ধে খড়া উদ্ভত করেছিলেন ধিনি তাঁর দৃঢ় চিত্ততার প্রশংসা করতেই হয়। তাছাড়া সংস্কারমুক্ত দৃষ্টিতঙ্গি নির্ভীকতা! ছিল বলেই তিনি স্ভায় সত্যের সমর্থন করেছেন অন্ধ সংস্কারান্ুগ রক্ষণশীলতাঁর উধ্র্বে উঠতে পেরেছিলেন বলেই সত্য কথনের সাহ্‌স ছিল তার। রামমোহনের আদর্শকেও হৃদয়ঙ্গম করেছিলেন তিনি। অন্যদিকে নীলকরদের অত্যাচারের বর্ণনা, স্বার্থান্বেষী লোকের ক্ষুদ্রতার পরিমাপ করেছেন নিভীক চিত্তে বঙ্কিমচন্দ্র 'কমলাকান্তের দপ্তরে' সমাজ সমালোচনা করেছিলেন বিচিত্র পদ্ধতিতে কালীপ্রসন্্ন তারও বহু পূর্বে সমাজ শোধনের অক্লান্ত প্রয়াস চালিয়েছেন | সমাজসংস্কারের উদ্দেশ্যে হুতোমের বিদ্রপাত্মক রচনা সেযুগেই সমালোচিত হয়েছিল দেখে দ্বিতীয় সংস্করণে কালীপ্রসন্ন বলেছিলেন,

"পাঠক! কতগুলি আনাড়িতে রটান, ছতোমের নকসা অতি কদর্য বই, কেবল পরনিন্দা পরচর্চা খেঁউর পচালে পোর সুদ্ধ গায়ের জালা নিবারণার্থ কতিপয় 'দ্রলোককে গাল দেওয়া! হয়েছে এটি বাস্তবিক মহাপুরুষদের ভ্রম একবার

ব্যঙ্গাত্মক রচন। ৬৫৩

ক্যান, শতেকবার মুক্তকণ্ঠে বলবোভ্রম | হুতোমের তা উদ্দেশ্য নয়, তা অভিসন্ধি নয়, ছুতোম ততদূর নীচ নন যে দাদতোল! কি গালদেবার জন্য কলম ধরেন ।৮২

এই ভাবেই হতোম আপন উদ্দেশ্যের সতত বারবার স্বরণ করিয়ে দিয়েছিলেন কালীপ্রসঙ্নের স্বদেশগ্রীতির পরিচয় 'হুতোম প্যাচার নকসার কোন কোন অংশে প্রকাশ পেয়েছে সেযুগের উন্মাদনায় সাধারণ লোকেরও চিত্তবিকার ঘটেছিল, লেখক একটি বর্ণনায় বলেছেন,__

“গৌরবলাভেচ্ছা হিন্দুকুশ হিমালয় পর্বত থেকেও উঁচ্‌ হয়ে উঠলো--কখন বোধ হতে লাগলো! কিছু দিনের মধ্যে আমর দ্বিতীয় কালিদাস হবো। (ও শ্রীবিষুঃ কালিদাস বড় লম্পট ছিলেন ) তা হওয়া হবে না, তবে ব্রিটেনের বিখ্যাত পঞ্ডিত জনসন ? (তিনি বড় গরিবের ছেলে ছিলেন, সেটি বড় অসঙ্গত হয়) রামমোহন রায়? হ্যা একদিন রামমোহন রাঁয় হওয়া যায়--কিস্ত বিলেতে মর্তে পার্বো না। ক্রমে কি উপায়ে আমাদের পাঁচজনে চিনবে সেই চেষ্টাই বলবতী হলো, তারই সার্ঘকতার জন্যই যেন আমর] বিছ্োৎসাহী সাঁজলেম,- গ্রন্থকার হয়ে পড়লেম-_ সম্পাদক হতে ইচ্ছা! হোলো--সভা৷ কল্পেম__ত্রান্ঘ হলেম-_-তববৌধিনী সভায় যাই-- বিধবা বিয়ের দালাদলী করি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঈশ্বরচন্দ্র বিগ্ভাসাগর, অক্ষয় কুমার দত্ত, ঈশ্বরচন্ত্র গুপ্ত প্রভৃতি বিখ্যাত দলের লোকেদের উপাসনা করি আন্তরিক ইচ্ছে যে লোৌকে জানুক যে আমরাও দলের একজন ছোটখাট কে্টবিষ্,র মধ্যে ।”

কালীপ্রসন্ন সেযুগের সমস্ত সদনুষ্ঠানের বর্ণনা দিয়েছেন কিন্ত অযোগ্য লোকের ভানকে বরদাস্ত করতে পারেননি | যথার্থ সৎকর্ণেরই প্রয়োজন, অযোগ্য লোকের অকারণ ব্যস্ততা দেখে আসল নকল কর্মীর মধ্যে ষেন বিভ্রান্তি হৃষ্ঠি না! হয়, সে বিষয়ে সচেতন করে দিয়েছেন হুতোঁম। কালীপ্রসন্ন সে যুগের প্রগতির সমর্থক ছিলেন তার অজ্ঞতর প্রমাণ রয়েছে। রামমোহনের আদর্শের সঠিক মূল্য বিচার করা সে যুগে নিশ্চয়ই যথেষ্ট বিচক্ষণতার পরিচায়ক, কালীপ্রসম্ন হুতোম প্যাচার নক্মার' তরলাপ্্িত ভঙ্গিতেও শ্রদ্ধানিবেদন করেছিলেন রমিমোহনকে,_

*সহত্র সুত্র বৎসরে শত শত তত্বিৎ প্ররুতিজ্ঞ জ্ঞানীরা ধারে পাবার উপায় অবধারণে অসমর্থ হলো, আমরা যে সামান্য হীনবুদ্ধি হয়ে তার অন্ুগৃহীত বলে অহংকার অভিমান করি সে কতটা শিরুদ্ধির কর্ম? ব্হ্মগ্রানী যেমন পৌত্ুলিক, কৃণ্ঠান মোসলমানদের অপদার্থ অসার বলে জানেন, তারাও ত্রাহ্মাদের পাগল ভণ্ড বলে স্থির করেন ।......যে রামমোহন রায় বেদকে মান্য করে তার হতে

২। ক্বালীপ্রসপ্জ সিংহ, হুতোম গ্যাচার নল, ১৭৮৪ শকাবা।

৬৫৪ উনবিংশ শতা্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

ব্রাহ্মধর্মের শরীর নির্মাণ করেছেন, আজ একশ বছরও হয় নাই, এরই মধ্যে তার শিষ্তরা সেটা অস্বীকার করেন, ক্রমে কৃশ্চানীর ভড়ং ব্রান্ধধর্মের অলংকার করে তুলেছেন-_-আরও কি হয় 1” [ নাককাটা বন্ধ, পৃঃ ১০৩]

উদ্ধৃত অংশটুকু পাঠ করলে কালী প্রসন্্ের উদার ধর্মবোধ সত্যনিষ্ঠার পরিচয় মিলবে,-- তিনি ত্রাক্মমতের মধ্যে অসঙ্গতি থু'জে পান না, কিন্ত ত্রাঙ্গধর্মের বিক্কৃতিকেও সহ করতে পারেন না। এদিক থেকেই কালীপ্রসন্ন ন্যায় স্ুনীতির সমর্থক |

বাঙ্গালীর অধঃপতন 'হুতোমে” চিত্রিত হয়েছে সে যুগের প্রখ্যাত ধনী পরিবারের সন্তান কালী প্রসন্ন বাঙ্গালী বড়মান্ুষের চরিত্র প্রসঙ্গে উক্তি করেছেন,-_-

“এদের মধ্যে অনেকে এমন মাতলামি করে থাঁকেন যে অস্তরীক্ষ থেকে দেখলে পেটের ভেতর হাত পা সেধি'য়ে যায় বাঙ্গালী বড় মানুষদের উপর বিজ্বাতীয় ঘ্বণা উপস্থিত হয়।” তার আন্তরিক ক্ষোভ। বাস্বালীর উন্নতি অবনতির আলোচন1! করে যিনি আনন্দ লাভ করেছেন-_-তিনি পরোক্ষভাবে দেশপ্রীতিরই পরিচয় দিয়েছেন কালীপ্রসন্নের জীবনকাহিনীর পটভূমিকায় “হুতোম প্যাচার নক্সা'কে স্থাপন করলেই গ্রন্থের যথার্থ মহিমাটি নির্ণাত হতে পারে সামাজিক দুর্নীতির চিত্র রচনায় গোপনত বর্জন করেছিলেন বলে তাঁকে অভিনন্দন জানানো দরকার | বঙ্কিমচন্দ্রের বিরুদ্ব-সমালোচন! সত্বেও 'হতোম প্যাচার নক্মার' অনুকূল সমালোচনা! সে যুগে হয়েছিল। বঙ্কিম সমসাময়িক লেখক অক্ষয়চন্্র সরকার কোনে। এক সম্মিলনে সভাপতির ভাঁষণে বলেছিলেন,

“বন্গিমবাবু মিত্রজার [প্যারীটদ মিত্র ] গ্রন্থ দেখাইয়া রত্বোদ্ধার করিতেছিলেন তখন তাহার কালীপ্রসন্নের কথ। বলিবার প্রয়োজন নাই, আমাদিগকে এখন বলিতে হইবে। আমর! যখন নিতান্ত বালক, তখন হুতোম প্যাঁচার নক্সা প্রকাশিত হইল। তাহার ভাষার ভঙ্গীতে, রচনার রঙ্গেতে একেবারে মোহিত হইয়াছিলাম।৩

বঙ্কিমচন্দ্রের সমালোচনায় হুতোম অগ্রশংসিত হলেও পরবর্তী কালে ব্যঙ্কের মাধ্যমে সমাজ চিত্রণের যে আদর্শ বদ্ধিমচন্দ্র গ্রহণ করেছিলেন ত1 একমাত্র ছুতোমেই পাওয়া যায়। হয়ত ব্যাপারে বঙ্কিমচন্দ্র প্রত্যক্ষ প্রভাবিত নন, কিন্তু ব্যঙ্গাত্মক সাহিত্যধারার আলোচনায় ছুতোমের অব্যবহিত পরবর্তী লেখক হিসেবে বঙ্কিমচন্দ্রের নামই সর্বাগ্রে আলোচ্য জাতীয় রচনায় সমাজের যে অশেষ উপকার সাধিত হতে পারে বিদ্যাসাগর মত পোষণ করতেন এতে প্রত্যক্ষ স্বদেশপ্রেম হয়ত নেই কিন্ত উদ্দেশ্যের যূলেই স্বদেশগ্রীতি বর্তমান হুতোমের রচনার প্রেরণা হিসেবে

৩) অজিতকুমার দত্ত, বাংল1 সাহিত্যে হাস্রস থেকে উদ্ধত।

ব্যাস্সক রচন! ৬৫৫

'নীলদর্পণের” লামোল্পেখ করা চলে, তৃমিকায় প্রাসজিকভাবে সেকথা ব্যক্তও হয়েছে। 'নীলদর্পণ'কার সমাজের প্রকৃত ছবি তুলে ধরেছিলেন, হুতোমের প্রেরণাও ছিল তাই। দীনবন্ধুর হাম্তরসের মধ্যে কিন্তু ছতোমী ব্যঙ্গ অনুপস্থিত হুতোমী ব্যঙ্গ বাংলা সাহিত্যেরই অভিনব বস্ত একটি অংশ এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে: সে যুগেক্স ধর্মীলোচনা করতে গিয়ে হছুতোম সরস উক্তি করেছেন,

“ইংরাজী লেখাপড়ীর প্রাছর্তাবে, রামমোহন রায়ের জন্মগ্রহণেও সত্যের ভোভিতে হিন্দুধর্মের যে কিছু দুরবস্থা দাঁড়িয়েছিল, তিনি কায়মনে পুনরায় তার অপনয়নে কৃতসংকল্প হলেন |”

সেযুগের সমাজসংস্কার ব্রত পালনের সর্বজনীন আবেগকে হুতোম ব্যঙ্গ করেছেন এখানে প্রগতিবাদী প্রগতিবিরোধীদের সংঘর্ষে সেযুগের উত্তপ্ত আবহাওয়ায় হুতোমের মন্তব্যটি স্মরণযোগ্য। স্বদেশসেবার নামান্তর হিসেবে ধর্মসংস্কার কিংব। সমাজসংস্কারকে গণ্য করা হোতি, হুতোম সে কথাটিই ক্মরণ করিয়ে দিয়েছেন

ব্যঙ্গাত্বক রচনাধারাঁয় কালীপ্রসন্ন সিংহের পরেই বঙ্কিমচন্দ্রেরে আবির্ভাব হলেও উভয়ের মধ্যে প্রতিভাগত পার্থক্য বিরাট ব্যবধান রচনা করেছে বঙ্কিমচন্দ্র অপরিণত, অশালীন হাস্যরসকে প্রতিভার দৃগ্ততেজে শোঁধন করে ব্যঙ্কাত্ক রচনায় যে সাফল্য অর্জন করেছিলেন পৃথকভাবে তার আলোচনা কর! দরকার তবে হুতোমী ব্যঙ্গে যে স্বদেশভাবনার উৎসার দেখেছি, বঙ্কিমী ব্যঙ্গেও সেটুকু রয়েছে, সেদিক থেকে দুজনের মধ্যে সাধম্যও বর্তমান। বঙ্কিমচন্দ্র বাংলা প্রবন্ধকে একঘেয়েমি থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন, একথ। তার হাশ্যরসাত্মক ব্যন্গরচনা পাঠ করলেই বোঝা থায়। প্রবন্ধের নীরস শরীরে রসের নিঝ'র সৃষ্টি করে বঙ্কিমচন্দ্র বাংলাসাহিত্যে নতুনত্ব সজনের চেষ্টা করেছিলেন, আবার দেশপ্রেমিক বঙ্কিমচন্দ্র এই রচনারীতির আড়ালেই আত্মগোপনের একটা কৌশলও আবিফার করেছিলেন বল যেতে পারে দেশপ্রেমের যে আবেগ বঙ্কিমচন্দ্রের উপস্তাঁসে প্রতিফলিত হতে দেখেছি, ব্যঙ্গাত্বক রচনার আশ্রয়ে তা বিস্তৃত হয়েছে শতধারে। এখানে আত্মগোঁপন করার উপায়টি তারই আবিষ্কৃত, বক্তব্য প্রকাশের কুঠাও অনুপস্থিত। প্রবন্বশিল্পী বঙ্ধিম গুরুগণ্ভীর, কিন্তু ব্যক্গশিল্পী বন্কিম রসিক প্রসঙ্গে বঙ্গদর্শন পত্রিকার সম্পাদকরূপী বঙ্কিমচন্দ্রের বিচিত্র উদৃভাবনী ক্ষমতাটির কথাই বারবার মনে হয়। “বন্দর্শন” বন্কিমচন্দ্রের দেশদর্শন আত্মদর্শনের মাধ্যম | ব্যঙ্গাত্রক রচনায় দেশদর্শনের ক্গযোগও ঘটেছিল অনায়াসে 'বঙ্দর্শনের” নামকরণ বিশ্লেষণ করলেই বঙ্কিমচন্দ্রের উদ্দেশ্যের পরিচয় মিলবে সমীজচেতনা দেশচেতনার সমন্বয়ে যে মুক্তদৃ্টির অধিকার লাভ করেছিলেন 'বঙ্ধিমচন্দ্র, “বঙ্গদর্শনের" প্রত্যেকটি ব্যঙ্গাত্বক রচনায় তার প্রতিফলন পড়েছে।

৬৫৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

সেযুগে দেশপ্রেমের উচ্ছুসিত আঁবেগ যখন বাধাবন্ধহীন, বঙ্কিমচন্দ্র সেই উচ্দবাসের গতিরোধ করার সচেতন চেষ্টা করেছিলেন সমালোচপা ব্যঙের মাধ্যমে। দেশচিন্তাকে বাস্তবভূমিতে প্রতিষ্ঠ দিতে চেয়েছিলেন বলেই তাকে নির্মম সমালোচক হতে হয়েছিল। দেশধারণায় নিছক উচ্ছাস যখন মাত্রাঁহীন হয়ে উঠেছে, চিন্তার দৈন্ঠ যখন আমাদের অস্থির করে তুলেছে, বহ্িমচন্দ্রই আমাদের সচেতন করেছিলেন ব্যঙ্গের চাবুকে। আঘাত তার ইচ্ছারুত, আঘাত আমাদের সচেতন করারই অস্ত্র হিসেবে পরিকল্িত। স্বদেশপ্রেমের এই ভাবালুতা প্রসঙ্গে কোন ইংরেজ সমালোচক ঘথার্থই বলেছিলেন,

[02 ০0205, 52195391106 15610 00015, 25 11852 59218, 11 981৮1০6, 11) 50161706 92011502 01: 13 1055008] ৫০০961012, 15 560 0608195 117 17060101105 50 11001100865 200 02130217285. 10 0105 0898101 00০ 08600 €০9]15 001: 61০ 2ে 62,160 01 1015 9001119 1)91010,.,.., 48100 10 2 00210, 101)01176 100001776 06 0015 900061010, 081 16561: 19217. 006 00916 0011021965 08155 0:£ 198 00109] 02.001001572, 50111 1535 025 1১2 19217 23 006 ০1026] 0: 2. 50902 00 610101 109015 01 006 010122109 01 001)215

এই আবেগকে সঠিক পথে চালনার প্রয়োজন ছিল বঙ্কিমচন্দ্রই তা অনুধাবন করেছিলেন বাংল! প্রবন্ধের গুরুগন্ভীর উপদেশে' বক্তব্য যথেষ্ট আবেদন সৃষ্টিতে সক্ষম হবে না, বঙ্কিমচন্দ্র তা জানতেন হ্ুতরাঁং ব্ক্গাশ্রয়ী প্রবন্ধরচনার নতুন রীতিকেই তিনি অবলম্বন করলেন 'বঙ্গদর্শনের প্রথম দিকের সংখ্যায় বঙ্কিমসাহিত্যে এক অভিনব সংযোজন; নতুনরীতিতে লেখ প্রবন্ধসমষ্টি বাংলাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করল, বঙ্কিম প্রতিভার নতুন পরিচয় পেয়ে সমগ্র বঙ্গসমাঁজ তখন বিদ্মিত। “লোকরহস্য* সেই যুগেরহই রচনা “লোকরহ্ম্য” লোকচরিত্রের রহশ্য নির্ণয়েরই প্রচেষ্টা বঙ্কিমচন্দ্র সামগ্রিক প্রতিভার পরিচয় এখানেও আছে, কিস্তু তা আবিফারের চেষ্টা না করে 'লোকরহস্যে' স্বদেশপ্রেমিক বস্কিমচন্দ্রকে আবিফার করাই আমাদের উদ্দেশ্য হবে |

লোহরহস্যের আগাঁগোড়াই রসবিতরণ করেছেন বঙ্কিমচন্দ্র, কিন্ত সে রসটি সর্বদাই মধুর নয়--মাঝে মাঝে তিক্র-কটু-কষায়। দেশপ্রেমিকতা ব্যঙ্গের আবরণে নতুন মহিম! লাভ করেছে এখানে হাস্যরস যখন নকসাজ্াতীয় রচনাতেই সুলভ ছিল- বঙ্কিমচন্দ্র তখন প্রবন্ধের পর্যায়ে হাশ্থরসের অকৃপণ বর্ষণ শুরু করলেন।

৪1 017 [9771056515 52601061505 17 11650560755 170100025 2919) ৮৮৪ ০98

ব্যঙ্গাত্বক রচনা সি

প্রবন্ধসাহিত্যের বিচিত্রতা সম্পাদিত হুল, স্বদেশচিস্তার গাস্ভী্য ক্ষু না করেও বঙ্কিমচন্দ্র রসবৈচিত্র্য সাধন করলেন

এই সমালোচনার ফলে বঙ্কিমচন্দ্র দেশবাসীর প্রশংসা পাঁননি বরং বিরাঁগ- ভাজন হয়েছিলেন বছুলোকের এজাতীয় তীক্ষ ব্যঙ্গ অনেক সময়ই রুচিকর হয় না। সমাঁজের কল্যাণের আদর্শে অবিচলিত ছিলেন বলেই বঙ্কিমচন্দ্র দৃঢ়তার সঙ্গে এই প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই চাঁলিয়েছিলেন। সমাজের প্রবণতার প্রসঙ্গে একজন সমালোচক চমতকার বলেছেন,

১০০৫৪ 1083 00295 £1001509 0] 165 91911155 আন 0150890 88072. ট্ব0 17090050 ড71080 80956510002 60056), 100 209062] আয 10৮ 2000525 0106 52:0156 0085 09:595, 106 1085 150 118156 ( 50 £085 5 58012:1 000151 21501006106) 10 052০ 606 00000002150. 15100096100, 0: 00061 10210 1700 13151380050 60 566 101003611 0 23 2. 5210901 ০0% 886801151550 17536100010109 01 22300619 01 0219,51001৫

বঙ্কিমচন্দ্রেরে সযালোঁচনাঁও এই নিয়মেই নিন্দিত হয়েছিল, কিন্তু এর ভাবী ফলাফল হয়েছিল শুভপ্রদ |

“লোকরহন্তের* প্রথম প্রবন্ধ “ব্যাত্রাচার্যয বুহল্লাঞ্জুল' হাশ্যরসের অকৃত্তিম উৎসার,- দেশগ্রীতিও এখানে কম ছিল না। ব্যান্রসমার্জ সংঘবদ্ধ সভ্যস্মাজ সি করতে চায়,_বস্কিমচন্দ্র সেযুগের সংঘবদ্ধ স্থসভ্য ভারতসমাজ গঠনের প্রচেষ্টার চিত্রটিই যে পরোক্ষভাবে আরোপ করেছেন এখানে,-তাতে সন্দেহ করার কোন হেতু নেই। সভ্যসমাজ সৃষ্টির এই প্রচেষ্টার আবরণে বঙ্কিমচন্দ্রের যূল বক্তব্যটিও অস্পষ্ট হয়ে নেই। বুহল্লাঙ্গুলের স্যায়শান্ত্রে ব্যুৎপত্তি প্রসঙ্গে তিনি মোক্ষমূলর মিল-এর কথ প্রসঙ্গতঃ স্মরণ করেছেন উভয়ের বক্তব্যেও মিল রয়েছে ভারতবর্ষ ভারতবাসী সম্বন্ধে ইউরোপীয় গবেষণার বিবরণ-এর আভাস উক্ত প্রবন্ধে মিলবে কিন্ত পরাধীন ভারতবাসী জাতীয় গবেষণার প্রতিবাদ করেনি কোন দিন। স্বদেশপ্রেমিক বঙ্কিমচন্দ্রের প্রতিবাঁদও প্রকাশ্য বা প্রত্যক্ষ নয়-তরু দেশপ্রেমিকের মনোভাব থেকেই প্রবন্ধটির জন্ম হয়েছে বলা যেতে পারে

বৃহ্গানুলের দেশপ্রেমের বিস্তারিত পরিচয় প্রবন্ধে আছে লৌহজালাবৃত প্রকোন্ঠে বাস করার সখ ত্যাগ করার হেতুটি স্বদেশবাৎসল্য | বর্ণনার্টিও তুলনাহীন,_ "আহা! যখন এই জন্মভূমি আমার মনে পড়িত, তখন আমি হাউ হাউ করিয়া

1 ২০০০ ০, ৪11০, পু 20%67 06 920165 চ207০5608৮ 196০, ৮-27০271 ৪২

৫৮ উনবিংশ শতাব্বীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

ভাঁকিতে থাকিতাম | হে মাতঃ হুন্দরবন। আমি তোমাকে কখন তুলিতে পারিব ? '"*হে জন্মভূমি! যতদিন আমি তোমাকে দেখি নাই, ততদিন চিলি পাইলে

চিলি নিদ্রী না আসিলে নিদ্তা ধাই নাই ।»

হাস্যরসের মোড়কে দেশশ্ীতির সমালোচনা বলে উদ্ধৃত অংশটিকে ব্যাখ্যা করা বোধ হয় খুব অসঙ্গত হবে না। দেশশ্রীতির অতিমাত্রিক চর্চা নিবারণের এই কৌশলটি বঙ্কিমচন্দ্রেরইে আবিষ্কার বলা যায়। দেশপ্রেম যদি প্রক্কত না হয়-- দেশপ্রেমিকের আচরণ বক্তব্য তবে বৃহক্লাঙ্গুলের মতই শোনাবে। পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রবাহ এদেশে প্রবেশ করেছিল বলেই আমর। সভ্য হয়েছি,এ অসত্য ধারণাটি স্পষ্ট করার চেষ্টাও প্রবন্ধে আছে। সভাপতি অম্িতোদর বৃহল্লাঙ্গুলের বক্তব্য সমর্থন করে সার সংকলন করেছে,_

*মনুস্ব অতি অসভ্য পণ্ড | আমর অতি সভ্য পশু | স্থতরাং আমাদের কর্তব্য হইতেছে যে, আমরা মনুষ্যদিগকে আমাদের ম্থায় সভ্য করি। বোধ করি, মন্থষ্যদিগকে সভ্য করিবার জন্যই জগদীশ্বর আমাদিগকে এই ন্দরবন ভূমিতে প্রেরণ করিয়াছেন ।”

এই উদ্ধৃতাংশের মর্মার্থ ব্যঙ্ার্থ বিশ্লেষণ করলে বঙ্কিমচন্দ্রের নির্ভীক দেশগ্রীতিরই পরিচয় স্প হয়।” পরাধীনতা মানুষের সৎসাহস বিচারবুদ্ধিকে অনেক সময়ই আবৃত করে রাখে-_বাঙ্গালী জাতি উত্তরাধিকারন্বত্রেই এই জড়ত্ব লাভ করেছিল। বঙ্কিমচন্দ্র বাঙ্গালীর জড়ত্ব নাশ করার মন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন উপদেশের গাস্তীর্যে জড়ত্ব নাশ অসম্ভব জেনেই তিনি ব্যঙ্গের চাবুকে বক্তব্য পরিবেশনের চেষ্টা করেছেন। সেযুগের পরিস্থিতিতে প্রত্যক্ষ সমালোচনার অস্থবিধেও ছিল। বঙ্কিমচন্দ্র পাশ্চাত্য জাতির দত্ত, অহংকার, সভ্যতার আস্ফালনকে প্রবন্ধে যত স্পষ্টভাবে ব্যঙ্গ করেছেন, প্রত্যক্ষ কোন আলোচনায় ত1 সম্ভব ছিল না। দেশশ্্রীতি স্তাকে নির্ভীকতা দান করেছে- প্রতিভা দিয়েছে শক্তি। লোকরহন্যের প্রবন্ধ গুলিতে বঙ্িমচন্দ্রেরে এই বিশেষ ক্ষমতাঁটিই লক্ষ্য করি। ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় 'বজদর্শন পর্বের বঙ্কিম সাহিত্যের নাম দিয়েছেন যুদ্ধপর্ব এই যুদ্ধপর্ষের নিপুণ সৈনিক রূপে বঙ্কিমচন্দ্র 'লোকরহস্যেই' আবির্ভৃত হয়েছেন শ্রীহরপ্রসাদ মিত্র বলেছেন,-_-

'লোকরহস্যে' হাশ্য “পরিহাঁসের অন্রচালনায় কৌশল আতত্ত করে নিয়ে, “কমলাকান্তে' সে অস্ত্র বঙ্কিম যেন পূর্ণশক্তিতে প্রয়োগ করেছিলেন ।”৬

রহস্ত উদ্দেশ্য পরিপূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করলে বঙ্কিমচন্দ্রে মনোভাবটি পুরোপুরি

| হ্রপ্রসাদ হিঅ, বঞ্ছিম সাহিত্য পাঠ, ১৯৬৩, পুঃ

ব্যঙ্াত্বক রচনা

সৈনিকের মতই মনে হবে? সুন্দরবনের ব্যাপ্রসভার কল্পনায় হাস্যরসের অফুরন্ত অবকাশ আছে কিন্ত অন্তনিহিত অর্থ হুদয়্মের ক্ষমতা যাঁদের নেই বন্ধিমচন্ত্রের 'আবেদন সম্ভবত তাদের কাছে নয়। বঙ্কিমচন্ত্র শিক্ষিত বাঙ্গালীর চৈতগ্তসম্পাদনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন শিক্ষাগর্বে "্বীত বিকৃতবুদ্ধি বাঙ্গালীর সামনে বঙ্কিমচন্দ্র শাণিত বাক্যান্ত্র সমন্থিত সাহিত্য উপস্থিত করেছিলেন ছাড়া গত্যন্তরও ছিল না। জাতীয় তীক্ষ গভীর ব্যঙ্গরচনায় বস্কিমচন্দ্রের অপরিসীম দক্ষতা দেখেছি, রস বিতরণ চৈতন্য সম্পাদন একই সঙ্গে উভয় উদ্দেশ্য পালন করেছেন জাতীয় রস সাহিত্যের মাধ্যমে বৃহল্লাঙ্গুল সভ্যতার সংজ্ঞা নির্ণয় কাঁলে বলেছে,

"সন্ত্রান্ত লোকের আঁহারান্বেষণের নাম বিষয়কর্ম, অসন্ত্রান্তের আহারান্বেষণের নাম জুয়াচুরি, উচ্ছবৃত্তি এবং ভিক্ষা ধূর্তের আহারান্বেষণের নাঁম চুরি; বলবানের আহারান্বেষণ দন্থ্যতা ; লোকবিশেষে দন্থ্যত! শব্দ ব্যবহার হয় না; তৎপরিবর্তে বীরত্ব বলিতে হয়। যে দহ্যর দগুপ্রণেতা আছে, সেই দক্থ্যর কার্ষের নাম দস্থ্যতা, যে দৃহ্যর দণ্ডপ্রণেতা নাই, তাহার দহ্যতার নাম বীরত্ব। আপনারা যখন সভ্য লমাজে অধিষ্ঠিত হইবেন, তখন এই সকল নামবৈচিত্র্য স্মরণ রাখিবেন, নচেৎ লোকে অসভ্য বলিবে।”

সভ্য সমাজের এমন পূর্ণাঙ্গ তথ্যবহ বর্ণনা বঙ্কিমচন্দ্রের রচনাতেই পেয়েছি আমরা সভ্যতাভিমানী সম্প্রদায়ের মনে কিছু প্রতিক্রিয়া জাগানোর আঁশ! হয়ত ছিল লেখকের পাশ্চাত্য গর্বের যুলে কুঠারাঘাঁতের এমন নিখুত আয়োজন বাংলা প্রবন্ধে অচিন্তিত ছিল। বঙ্কিমচন্ত্রের দেশনিষ্ঠাই তাঁকে স্পষ্টবাক করেছে বলা চলে

পাশ্চাত্য প্রভাবে আমাদের সমীজের যে লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটেছে সে প্রসঙ্গেও বঙ্কিমচন্দ্র বু ভাবে আলোচনা! করেছেন। প্রবন্ধেও অর্থসর্বন্বতার মানদণ্ডে সামাজিক পদমর্যাদা নির্ণয়ের রীতিকে নিন্দা করেছেন তিনি। বৃহল্লাঙ্গুল মন্ুস্ত সমাজের বর্ণনাকালে বলেছে,

“মুদ্র। মনুষ্যদিগের পুজ্য দেবতা বিশেষ। '."'-" দেবতাও বড় জাগ্রত। এমন কাজই নাই যে, এই দেবীর অনুগ্রহে সম্পন্ন হয় না। পৃথিবীতে এমন সামগ্রী নাই যে, এই দেরীর বরে পাঁওয়া যায় না। এমন ছুক্র্মই নাই যে, এই দেবীর উপাসনায় সম্পন্ন হয় না। এমন দোষই নাই যে, ইহার অন্থকম্পায় ঢাকা পড়ে না।-""**-মুদ্রা খাঁকিলেই বিহ্বান হইল। মুদ্রা যাহার নাই, তাহীর বিগ্তা থাকিলেও মনত শান্াহুসারে সে মূর্খ বলিয়া গণ্য হয়।”-_বন্ধিমচন্ উনবিংশ শতাীর বাঁঞ্জালী সমাজের অর্থ- সর্বস্বতার বিকৃকার দিয়েছেন। চরিত্র বিদ্যার বিনিময়ে জড়ত্বের উপাসনা কোনে

৬৫

৬৬ উনবিংশ শতাবীর বাংলা সাহিত্যে শ্বদেশপ্রেম

জাতির চরিত্রে প্রকট হয়ে উঠলে তার ফলাফল ভালে! হতে পারে না। বঙ্ষিমচন্ত্ “বন্ধদর্শনের' পাতায় প্রসঙ্গ নিয়েও আলোচনা করেছেন বারংবার কমলাকান্তেও প্রসঙ্গ আছে, তাছাড়াও আছে আত্মস্বার্থবোধ বিসর্জন দিয়ে পরোপকারের মহিম। ব্যাখ্যার চেষ্টা।

বঙ্কিমচন্দ্র একটি বলিষ্ঠ বাঙ্গালী সমাজের স্বপ্ন দেখেছেন তাই সমাজের সর্বাঙ্গীণ হৃষ্থতাই ছিল তার কাম্য দেশপ্রেমী বঙ্কিমচন্দ্রের সমাজচিত্তার পরিচয় 'লোকরহম্ের” ' অগ্থত্রও আছে “লোকরহন্যের' “বাবু' প্রবন্ধটিতে এই চেষ্টাই লক্ষ্য করি। সেযুগের বাংলাদেশের বাবুর চরিত্র বর্ণনা করে বঙ্কিমচন্দ্র সামাজিক অন্স্থ ব্যক্তিদের প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করেছেন। সামাজিক প্রগতি সামাজিক মানুষের জন্যই, কিন্ত বাবুশ্রেণীর প্রাধান্য থাকলে তা কি সম্ভব হতে পারে? এদের চরিত্র মাহাত্্য রচনার প্রয়োজন শুধু সে যুগেই বিশেষ ভাবে দেখা দিয়েছিল কেন? কারণ বস্কিমচন্্রই বলেছেন পুর্ণ মনুষ্ত্ব পরস্থখ বর্ধনেই নিহিত। এছাড়া বাঁচাই অর্থহীন সামাজিক উন্নতিও অচিন্ত্যনীয় সেখানে বাবু মাহাত্ম্য সামশ্রিকভাবে জাতীয় চরিত্র রক্ষার প্রয়োজনেই লিখিত হয়েছে বলে আমাদের ধারণা | বাবুর বর্ণনা কালে বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন, .

“যাহারা বাক্যে অজেয়, পরভাষা পারদর্শী, মাতৃভাষা বিরোধী, তাহারাই বাবু মহারাজ! এমন অনেক মহাবুদ্ধিসম্পন্ন বারু জন্মিবেন যে, ত্বাহারা মাতৃভাষায় বাক্যালাপে অসমর্থ হইবেন»

বঙ্কিমচন্দ্রের ভবিষ্যৎ বাণীর মধ্যে যে স্থতীব্র ব্যঙ্গ নিহিত আছে মাতৃভাষা-বিরোধী বাবু সম্প্রদায় তাতে ভীত না! হলেও অপদস্থ হয়েছেন নিশ্চয়ই স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতিপর্ব তখনও আসেনি, বঙ্কিমচন্দ্র তখন চরিত্র স্বষ্রির চেষ্টা! করছেন সাধারণ মানুষের চরিত্ররচন। পর্ব সমাপ্ত করেই তিনি 'আনন্দমঠের" সংগ্রামী সেনার পরিকল্পন। করেছিলেন মসী যে অসির চেয়েও শক্তিশালী বঙ্কিমচন্দ্রের এই নিপুণ সমাজচিত্র সামাজিক চরিত্র রচনাই তা প্রমাণ করেছে। স্বদেশপ্রেম যে চরিত্রকে আন্দোলিত করবে সেই দেশসচেতন মনুষ্যুসমাজ গঠনের পরিকল্পনাটাই সর্বাগ্রে গ্রহণ করেছিলেন ভিনি। "বাবু, প্রবদ্ধটিতে ভাষার চাবুকে মনুষ্য চরিত্র সংশোৌধনচেষ্টাতেও বঙ্কিমচন্দ্রের ্বদেশপ্রেমই ব্যক্ত হয়েছে

“লোকরহশ্যের' কয়েকটি প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র পাশ্চাত্য সমালোচনার পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন। পাশ্চাত্য সমালৌচকের মানদণ্ডে ভারতবর্ষ ভারতবাসীর বিচারের ব্রসোঞজ্জল বিবরণ দিয়েছেন বঙ্কিমচন্দ্র নির্মল হাশ্যরসের অবতারণা করার উদ্দেশ্যই যে এখানে প্রধান উদ্দেশ্য নয় তা বলাই বাহুল্য কিন্তু আত্মসচেতনতা অর্জনের সন্ত 'জাতীয়. রহশ্যের যে অপরিসীম মূল্য আছে তা অস্বীকার করা যাক না।

ধ্ঙজাক্মক রচনা! ৬৬১

'রামায়ণের সমালোচনা” “কোন স্পেশিয়ালের পত্র'-এ জাতীয় রচনার উদ্দাহরখ | জাতীয় রচনায় যে স্বদেশচেতনা আত্মমর্যাদাবোধ সঞ্চারিত হতে পারে বস্িমচন্ত্ তা অন্মান করেছিলেন। কিন্তু রসসঞ্চারের চেষ্া না করে প্রতিবাদের ঝড় তুললে ব্যাপারটি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারত। হেমচন্দ্রের “ভারত সংগীতের" বক্তব্যেও এই তীব্রতা সঞ্চারিত হয়েছিল। হেমচন্দ্র রাজরোষ এড়াতে পারেননি, . বঙ্কিমচন্দ্র সকৌশলে আত্মরক্ষা করতে সমর্থ হয়েছেন। স্বদেশপ্রেমের প্রত্যক্ষ আবেদন ছিল না বলেই এটি সম্ভব হয়েছিল।

“লোকরহশ্যে'র ইংরাজস্তোত্র' নামক প্রবন্ধে বস্কিমচন্ত্র সে যুগের অন্ধ ইংরেজভক্তির চুড়ান্ত নিদর্শন রচনা করেছেন কিন্তু তাতেও যে ইংরেজপ্রীতির পরিবর্তে স্বদেশপ্রীতিই প্রাধান্ত লাভ করেছে সেটিও নিতান্তই রচনা গুণে মহাভারত থেকে ইংরাজন্তোত্রের বঙ্গীন্ুবাদে বঙ্কিমচন্দ্র অন্বাদকের নিষ্ঠা বজায় রেখেছেন 'আগাগোড়া। এই স্তোত্র রচনার উদ্দেশ্যটিও স্পষ্ট স্তৌত্র রচনা! কর! হয় সাধারণতঃ দেবতাকে কেন্দ্র করে। পরাধীন ভারতবর্ষে ইংরেজ যে দেবতার স্কান অধিকার করেছিল তাতে সন্দেহ কি। বঙ্কিমচন্ত্র এই স্তোত্র রচনায় তার রাজভক্তিরই নিদর্শন রক্ষা করেছেন প্রকাশ্য ব্যঙ্গে। বঙ্কিমচন্দ্র উপদেশক ছিলেন না, তিনি ছিলেন দ্রষ্টা। শাসকগোষ্ঠীর মনস্তষ্টি সাধন যুগধর্মেরই প্রেরণা, কিন্তু স্বাধীনচেতা বঙ্কিমচন্দ্র এতে সমর্থন জানাতে পারেননি 'ইংরাজন্তোত্রঁ রচনা করেই শেষ পর্যন্ত ত্বার বথার্থ মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। ব্যঙের চূড়ান্তরূপ প্রবন্ধে প্রকাশ পেয়েছে বলেই নির্মম আঘাতে সমস্ত জাতিকে তিনি সচেতন করে তুলেছেন প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র সর্বশ্রেণীর ইংরাঁজ তোষণকারীর আন্তরিক বাসনার ব্যক্ত করেছেন

'তুমি বেদ, আর খকযভুসাদি মানি না) তুমি স্মৃতি, মন্বাদি ভুলিয়া গিয়াছি ; তুমি দর্শন, গ্ভায়, মীমাংসা প্রভৃতি তোমারই হাত অতএব হে ইংরাকজ! তোমাকে প্রণাম করি |”

হে শুভঙ্কর! আমার শুভ কর। আমি তোমার খোশামোঁদ করিব, তোমার প্রিয্নকথ। কহিব, তোমার মন রাখা কাজ করিব-_আমায় বড় কর, আমি তোমাকে প্রণাম করি

হে মিষ্ট ভাষিশ ! আমি মাতৃভাষা ত্যাগ করিয়া তোমার ভাষা কহিব, পৈত্রিক ধর্ম ছাড়িয়া ব্রাহ্দধর্মাবলম্বন করিব বাঁবু নাম ঘুচাইয়া মিষ্টর লেখাইব 3; তুমি আমার প্রতি প্রসন্ন হও! আমি তোমাকে প্রণাম করি ৃ্‌

হে সর্ধদ, আমাকে ধন দাও, মান দাও, যশঃ দাও,--আমার সর্ব বাসনা সিদ্ধ কর। আঁমীকে বড় চাকরি দাও, রাঁজা কর, রায়বাহাছুর কর, কৌন্সিলের মেস্বর কর, আমি তোমাকে প্রণাম করি |”

৬৬২ উনবিংশ শতাব্ীর বাংলা সাহিত্যে দেশপ্রেম

বঙ্কিমচন্দ্র রাজকর্মচারী হয়ে রাঁজবন্দনা করেছিলেন-_বিস্ত এর অন্তদিহিত আবেদনটি যে ম্বদেশসচেতন বঙ্কিমেরই তাতে সন্দেহ নেই। অবশ্য 'এই দৃগুলিংহ বন্কিমকেও নিষ্ঠার সঙ্গে রাজকর্ম পালন করতে হয়েছে ইংরেজপ্রদত্ত সম্মান মাল্য কে ধারণ করতে হয়েছে। কোন সমালোচক . ছুঃখ করে বলেছিলেন, *লোঁক- রহম্য ধাহার তীব্র ব্যঙ্গময়ী লেখনীপ্রহুত যিনি 'ইংরাজন্তোত্রের' রচয়িতা, বিধি বিড়ম্বনায় তিনিই কি না আজ রাঁয়বাহাছুর যাহার তেজন্থিনী, রসময়ী প্রতিভায় বঙ্গদেশ অগ্ঠার্ধধি মুগ্ধ হইয়] রহিয়াছে, যিনি ছুর্গোৎসব হইলে অভাঁগিনী বঙ্গভূমির কলঙ্ক মোঁচনের দিন গণনা করেন, হুজলা সফলা শশ্য শ্যামলা জননী জন্মভূমির বন্দনা করিয়া যিনি বাঙ্গালীর চক্ষে অশ্রু প্রবাহিত করিয়াছেন, তাহার প্রতি অত্যাচার কেন ??

পরাধীন দেশের লেখকের এই অন্তর্দাহ থাকবেই বঙ্কিমচন্দ্রের ব্যঙ্গ বিদ্রপাত্মক রচনাসস্ভীর বঙ্কিমচিত্বের তীব্র অন্তর্দাহেরই পরিচয় বহন করছে। প্রত্যক্ষভাবে আঘাত করার কিংবা আক্ষেপ করার স্থযোগ ছিল না বলেই পরোক্ষভাবে বিদ্রুপাত্মক পম্থাই বেছে নিয়েছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র “লোকরহশ্য' “কমলাকান্তে” বঙ্কিমচন্দ্রের স্বদেশভাবনা ব্যঙ্গ বিন্ুপেই ব্যক্ত।

*লোঁকরহুন্যে” বহ্িম ক্ষমাহীন! আত্মদোষ সম্বন্ধে সচেতনতার অভাব আছে বলেই পরাজয়ের গ্লানি আমাদের স্পর্শ করে না,_নিবিকার ওুঁদাসীন্যে আমরা জড়ব।। বঙ্কিম তাই উত্তেজনা চান, আঘাতের তীব্রতাই উত্ভতেজন! সঞ্চারে সক্ষম, বঙ্কিমও তাই খড়াহস্তে উদ্ভত। 'গর্দভ প্রবন্ধে বঙ্কিমের সমালোচন1 নির্মম শাস্ত-পুরাণের মর্যাদা রক্ষার চেয়েও আত্মবোধ সঞ্চারের প্রতিই বঙ্কিমচন্দ্র অধিক মনোযোগী |! গর্দভ' স্তৃতিপ্রসঙ্গে বঙ্কিম বলেছেন,

“তুমি কলিযুগে বঙগদেশে বৃদ্ধ সেন রাজ] ছিলে, নহিলে বঙ্গদেশে মুসলমান কেন 1”

বঙ্গে যবনাধিকারের ঘটনাকে বঙ্কিমচন্দ্র নানা ভাবে সমালোচনা! করেছেন-_- কিন্ত জাতীয় ব্যক্গ অন্তত্র নেই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লক্ষমণসেনের 'আমলেই অন্তমিত হয়,--সে জঙ্য বৃদ্ধ লক্মণসেনকে বঙ্কিমচন্দ্র কোথাও ক্ষমা করেননি শ্বশালিনী'তে লক্ষণসেনের চরিত্রে তিনি অনায়াসে কলঙ্ক লেপন করেছিলেন দেশাত্মবোধই বঙ্কিমচন্ত্রকে ক্ষমাহীন করেছে_-এ অংশটিতে সেই বিক্ষুষ মনোভাবটিই প্রতিবিদ্বিত | ' লোকরহন্যের' কিছু প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র ইংরেজী বাংল দুটি

৭। হেযেব্রপ্রদাদ খোষ, বঙ্গিমচন্ত্র, ১৯৬২।

ব্যঙ্গাতক রচনা

ভাষারই সাহায্য নিয়েছেন-_রঙ্গরস কজন ছাড়াও সেযুগের ইংরেজীপ্রেমিকদের অপদস্থ করাই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল। সেযুগের শিক্ষিত বাঙ্গালীর মাতৃভাষাঁঅবহেল! অতিমাত্রায় বিস্তারলপাঁভ করেছিল। অশিক্ষিত ইংরেজীঅনভিজ্ঞ পত়্ীর সঙ্গে কখোঁপকথনেও তারা হাস্যকর মনোভাবের পরিচয় দিত। বাংল! ভাষার এই অনাঁদরে . বঙ্কিমচন্দ্র কতটা ক্ষুব্ধ বিরক্ত বোধ করতেন তার পরিচয় এই দ্বৈভাঁষিক প্রবন্ধপুঞ্জে মিলবে “হনুমদ্বাবুসংবাঁদের” বাবুটিও মাতৃভাষায় কথোপকথনে সম্পূর্ণ অনভ্যন্ত। হনুমানের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের মুহূর্তে ইংরাজীবুলির আধিক্যে বিরক্ত হয়ে হনুমান বলেছে,_“হে ট্ুপ্যাবৃত মহাপুরুষ ! মাতৃভাষায় কথা কও ।”

এই বাবুটির পরিচয় নির্ণয় কালে হনুমানের বর্ণনাটিও উপডোগ্য,_“মহাশয় ? দুঃখিত হইবেন না। আপনার বুলি ইংরেজি, বেশ কিক্ষিদ্ধ্যা, এবং মুখতা৷ পাহাড়ে রকম দেখিয়া! আপনার জাঁতি নিরূপণার্থ আপনাকে এতট! কষ্ট দিয়াছি

বঙ্কিমচন্দ্র এই বাৰুটির দেশ চর্চার পরিচয়ও দিয়েছেন, হম্ুমানকে বাবুটি বলেছে,

"তুমি রামের দাস আমি ইংরেজের দাস তোমার রাঁম বড়, কি আমার ইংরেজ বড় ?”

এই দেশচেতনাই সে যুগের চাকুরীপ্রাণ বাঙ্গালীর গর্বের বিষয় হয়েছিল। স্বাধীনতার অর্থব্যাধ্যায় বাবুরা কখনও পশ্চাৎপদ নন কিন্তু স্বাধীন মনোভাঁবটিই তার্দের চরিত্রে অনুপস্থিত হনুমানকে স্বাধীনতার ম্বাহাত্ব্য জ্ঞাপন করে বাবু বলেছে,

"স্বাধীনতাশুন্য মনুষ্যজন্মই পশুজন্ম। পরাধীনেরা গো-মহ্ষাদির ন্যায় রজ্জুবন্ধ হইয়া তাড়িত হয়। সৌভাগ্যক্রমে আমাদের রাঁজপুরুষের আজন্ম স্বাধীন-- 12501001005

আত্মদৈত্তের এমন অকপট স্বীকারোক্তি, মূর্থতার এমন উজ্ভরল দৃষ্টান্ত তুলে ধরাই বঙ্কিমচন্দ্রের যূল উদ্দেশ্য ছিল। বাবু: সম্প্রদায়ের চরিব্রালোচনায় বঙ্কিমচন্দ্র গভীর দেশচিন্তারই পরিচয় দিয়েছেন

432,505: প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র ইলবার্ট বিলের সমালোচনা করেছেন স্থকৌশলে। সমগ্র দেশব্যাপী এই আন্দোলনে বঙ্কিমচন্দ্রও অংশ নিয়েছিলেন। নেটিভ ডেপুটি জন ডিকসনকে শাস্তি দেওয়ায় ইংরাজীদৈনিকে এই সংবাদ প্রকাশিত হয়,_

%[90951315 61১০ 991১0. ৪9 01067 0136 10001653100, 608৮ 1400৫ [19003 ০102] 21201 156910005 (90552000606 1920 8115845 7985920 1৮০ [জা 022 911] 10101) 25 60 20000025 ভাসে গা আ$০০ 2 0805 5৮৫ 1969115 €0 ছাতা 800 13808 ৪৬৩5 008) আও আ13065 9036. ট9স

01820 025 02 01502065661”

৬৬৪ উনবিংশ শতাবীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

ডেপুটির আত্মরক্ষার একমাত্র পথ ব্রইল কৌশল অবলম্বন পরাঁধীনতা। মাহুষের পলায়নী মনোভাব তৃষ্টি করে | সত্য ন্যায় যেখানে লাঞ্ছিত, মচুস্বত্ব শুধু আত্মরক্ষার পথ খোঁজে ম্যাজিষ্রেট কৈফিয়ং তলব করলেন। বঙ্কিমচন্ত্র ভেপুটির তৎপরতার বর্ণন। দিয়েছেন,

“এখন ডিপুটি বাবুটি বহুকাঁলের ডিপুটি--জানিতেন যে, তর্কে তাহার জিত নিশ্চিত, কিন্ত তর্কে জিতিলেই বিপদ অতএব স্থচতুর দেশী চাকুরের যাহা কর্তব্য, তাহ। করিলেন, তর্ক ছাড়িয়া দিলেন বলিলেন, *[ 2:00 012501092 00 41557055 (13 10866 7100 5090, 91, 1 56611 85 ৬710108, 234 1 8100 ৪০ 101 ৮.৮ : বঙ্গিমচন্দ্র নিজে ডেপুটি ছিলেন,_-বিচারপ্রহসনের এই নমুনাটি থেকে আমরা আবত্মসচেতন হবার স্থুযোগ পেতে পারি বাঙ্গালী যতদিন অচেতন ছিল স্থকৌশলী ডেপুটিদের পদমর্যাদা বেড়েছে "যুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত” রচনা করে বৃস্কিমচন্্র সে তথ্য সম্বন্ধে আমাদের সচেতন করেছেন এক একটি প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র যথার্থই বজদর্শন করেছিলেন স্বদেশপ্রেমিকের বাসন] নিয়ে তিনি সমাজের রাজপথ পরিত্যাগ করে কানাগলিতে প্রবেশ করেছেন | যথার্থ সমাজদর্শন হয়েছেই উপরস্ত আ'ত্মদর্শনেরও হুযোগ পেয়েছি আমরা “লোকরহস্ত' পর্যায়ের প্রবন্ধগুচ্ছ সেদিক থেকেই মূল্যবান রচনা

বাংলা সাহিত্যের আদর"ও “ও 6০৪75 102%*--রচনা ছুটিতে তরল হাশ্তরসের মধ্যে কিঞ্চিৎ দেশচেতনাও মিশ্রিত আছে ছুটিই সংলাপাকারে [ ইঙ্গ বঙ্গ মিশ্রিত সংলাপে] রচিত। পাত্রী বাঙ্গালী ঘরের সাধারণ বধূ, পাত্র শিক্ষিত ব্যুবা। 'বাংল। সাহিত্যের আদরে" নায়িক। বঙসাহিত্য প্রেমিকা |! শিক্ষিতম্বামীর বাংলা- সাহিত্যে রুচি নেই,

“কি জান--বাঁংলা-ফাংলা! ওসব ছোঁটলোঁকে পড়ে ওসবের আমাদের মাঝখানে চলন নেই ওসবকি আমাদের শোভা পায় ?”

এই মনোভাবের হেতু বিশ্লেষণে শিক্ষিত যুবাঁটি আরও বলেছে,_

"আমাদের হলো! 90151)6৭ 5০০1১--ও সব বাঁজেলোঁকে লেখে--বাঁজে লোকে পড়ে--সাহেব লোকের কাছে ওসবের দর নেই--০০115120. $০০৪6স-তে কি ওসব চলে ?” | | |

এর উত্তরে ভার্যার মন্তব্যটি অনবস্য”_

“তা! মাতৃভাষার ওপর পাঁলিশয্ীর এত রাগ কেন ?”

জাতীয় রচনায় রঙ্গরসের ফোয়ারা শতধারে উচ্ছৃসিত হয়েছে এবং মাতৃভাঁষা-

ব্ঙ্গাত়ক রচন। ৬৬৫

প্রেমী বন্ধিমচন্ত্রকেও আমরা আবিষার করেছি মাতৃভাষার মহিম] সম্বন্ধে বছরচনা স্বদেশচেক্তনার প্রথম স্তরেই পাওয়া যায়। বঙ্গিমচন্দ্র যেযুগে বঙ্গসাহিত্যের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন, সেযুগেও যাতৃভাষা সম্পর্কে তথাকথিত ইংরাজী শিক্ষিতের উন্নাসিকতা৷ ঘোঁচেনি রবীন্দ্রনাথ *বস্কিমচন্ত্র” প্রবন্ধে সেকথাই বলেছেন,--

“অসম্মীনিত বজভাষাঁও তখন অত্যন্ত দীন মলিনভাবে কাঁলযাঁপন করিত তাহার মধ্যে যে কতটা সৌন্দর্য কতট। মহিমা প্রচ্ছন্ন ছিল তাহা তাহার দারিদ্র্য ভেদ-করিয়া স্ষুতি পাইত না। যেখানে মাতৃভাষার এত অবহেলা সেখানে মানবজীবনের শুতা- শৃন্যতা-দৈন্য কেহই দূর করিতে পারে না।

এমন সময়ে তখনকার শিক্ষিতশ্রেষ্ঠ বস্কিমচন্দ্র আপনার সমস্ত শিক্ষা সমস্ত অনুরাগ সমস্ত প্রতিভা উপহার লইয়া সেই সংকুচিতা বঙ্গভাষার চরণে সমর্পণ করিলেন; তখনকার কালে কী যে অসামান্য কাঁজ করিলেন তাহ তীাহারই প্রসাদে আজিকার দিনে আমরা সম্পূর্ণ অনুমান করিতে পারি না।” [ বঙ্কিমচন্দ্র ]

বঙ্কিমচন্দ্রের মাতৃভাষীপ্রীতির নিদর্শন হিসাঁবে 'লোৌকরহম্যের” উক্ত প্রবন্ধটির মূল্য স্বীকার করতে হবে। এই নির্মম সমালোচনায় শিক্ষিতযুখার শোচনীয় চরিত্র উদঘাটিত হয়েছে

৩৬ ০৪15 1089-তে ইংরেজীয়ানার মোঁহ সম্বন্ধে লেখক সতর্ক করে দিয়েছেন আমাদের | শিক্ষিত যুবা ইংরেজী নববর্ষ উৎসবের আয়োজন করেছে, স্ত্রী সমালোচনা করেছে,_-

"শুর ধরিতেন ১লা বৈশাঁখ থেকে, তুমি ধর ১লা জানুয়ারী থেকে, আমার ছেলে বোধ করি ধরিবে ১লা শ্রাবণ থেকে 1”__ এই পরাহ্ুকরণ ব্যাধির প্রতিকারের উপায় জানা ছিল না আমাদের,--কিন্ত উনবিংশ শতাব্দীর স্বদেশপ্রাণ মনীষঘাবৃন্দ চৈতগ্ঘয সম্পাদনের প্রচেষ্টা চাঁলিয়েছিলেন। বস্কিমচন্দ্রের রচনাটি তারই নিদর্শন | “লোকরহশ্য” 'কমলাকান্তের” মধ্যে বঙ্কিমমনীষীর যে বিচিত্র পরিচয় পাঁওয়। যায় তার পূর্ণাঙ্গ আলোচনার হযোগ আমাদের নেই। স্বদেশপ্রেমাত্মক ভাবনা “লোকরহশ্ঠের' বক্তব্যকে অর্থপূর্ণ করেছে-রসিকতার অন্তরালে স্বদেশপ্রেমী বঙ্কিমচন্দ্র আন্তর পরিচয়টি উদঘাটিত হয়েছে “লোকরহন্থের” রচনাভঙ্গি “কমলাকান্তে'ও অনুস্থত, কিন্তু কমলাকান্তের শরষ্টা বঙ্কিমচন্দ্র জনপ্রিয়তার তুঙগশীর্ষে আরোহণ করেছেন সর্ভবতঃ 'কমলাকান্ত' চরিত্রটির জদ্াই গ্রন্থটির একটি বিশেষ খূল্য স্বীকৃত হয়েছে। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ সংস্করণের ভূমিকায় “কমলাকান্ত' রচনার যুক্তিসঙ্গত হেতু নির্নয় করেছেন সম্পাদকদয়, “ভাবত: রহস্প্রিয় মন প্রেথমটা “লোকরহ্ে'র সহজ পথে একটা মুক্তির উপায় আবিফার করিয়া কতক সাব্বনা

৬৬৬... উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

লাভ করিয়াছিল। কিন্ত মাসের পর মাঁস নিছক রহম্য সৃষ্টি করিয়া তৃপ্ত থাঁকিবাঁর মত পল্লবগ্রাহী মন বঙ্কিমচন্দ্রের ছিল না। অর্ধোন্াদ নেশাখোর কমলাকান্তের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া তখন তাহার উপায় ছিল না। সোজাসুজি সজ্ঞজানে যে সকল কথা বলিতে তিনি সঙ্কোচ বোধ করিতেন, কমলাকান্তের মুখ দিয়! সেই সকল কথা তিনি অসঙ্কোচে বলিতে পারিতেন, এবং এই রহস্যময় পাগলকে কেন্ত্র করিয়া মাঁসের প্রর মীস পাঠক ভুলাইতে তাঁহার বেগ পাইতে হইত না। এক আধারে ব্যঙ্গের শর্করামণ্ডিত কাব্য, পলিটিকস, সমাঞ্জবিজ্ঞান এবং দর্শন পরিবেশনের উপায় সৃষ্টি করিয়া সম্পাদক এবং প্রচারক বঙ্কিমচন্দ্র নিজের কাঁজ অনেকটা সহজ করিয়। লইলেন। কমলাকান্ত জন্মের ইহাই ইতিহাস |”

[ “কমলাকান্ত- সম্পাদক ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সজনীকান্ত দাস] কমলাকান্ত নামক নেশাগ্রস্ত রহশ্যময় পাগলের বকলমে কবি, ভাবুক, স্বদেশপ্রাণ, দার্শনিক-রাঁজনীতিসমালোচক, সমাজব্যাখ্যাতা বঙ্কিমচন্তর আত্মপ্রকাশ করেও আত্মগোপন করে আছেন। স্বদেশপ্রেম উনবিংশ শতাব্দীর সাহিত্যে স্বতক্ফূর্ত 'অভিব্যক্ি, কিন্ত প্রকাশ্য ম্বদেশবন্দন1 উত্তেজিত স্বদেশাত্মক রচনার জহ্য রাঁজন্য- বর্গের কাছ থেকে অভিনন্দনের পরিবর্তে শীসনের হুমকি প্রাপ্য হোত লেখকের কপালে বঙ্কিমচন্দ্র শ্টাম কুল রাখার জন্যই যে এই অভিনব পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছিলেন _তাঁতে সন্দেহ নেই কোথাঁও তিনি যুক্তিবাদী ভাবুক, কোথাও তিনি অসংলগ্ন চিন্তার আশ্রয়ে নিশ্চিন্ত পরাধীনতা লেখকের স্বাধীনতা গ্রাস করে, কিন্ত তার প্রতিভাকে স্পর্শ করতে পারে না। নব নব প্রেরণায় উদ্ব,দ্ধ হয়ে স্বদেশপ্রেমিক লেখক অভিনব উপায়ে বিকশিত করেন নিজেকে সম্বন্ধে সমালোচক প্রমথনাথ বিশী স্বদেশীসাহিত্য সম্বন্ধে একটি মূল্যবান উক্তি করেছেন,

“পরাধীন জাতির সাহিত্য একদিক ভারী নৌকার মতো, আর সে অবস্থাটা যে কিছুতেই স্খকর নয়, তাহা তো সহজেই বুঝিতে পারা যায় পরাধীন জাতি কিছুতেই নিজের বাস্তব অবস্থা ভুলিতে পারে না, তাঁই সতত স্মত এই বান্তব অবস্থ1 তাহার জীবননৌকার এক পাশ চাপিয়া! বসিয়া তাহাতে কাত করিয়া! ফেলে ।.., বৃটিশ আমলের প্রত্যেক বাঙ্গালীলেখক এবং প্রায় প্রত্যেক উল্লেখষোগ্য পুস্তক অল্ল- বিস্তর পরিমাণে এই ক্রটিসম্পন্ন অল্প শক্তিমান লেখকের হাতে পড়িলে এই ত্রুটির পরিণামে হৃষ্ট হয় 'মেবার পতন", প্রতিভাধরের হাতে পড়িলে হৃষ্টি হইতে পারে “কমলাকাস্তের দপ্তর" মুল প্ররণা এক, তারতম্য প্রতিভাতে 1৮

৮1 প্রথমদাখ বিপী, বফিম সাহিত্যের ভূমিকণ, কমলাকান্তের দপ্তর,

ব্যঙ্গাত্বক রচনা | ৬৬প.

_. কিমলাকান্তত আলোচনা করলেই পরাধীন জাতির জাতীয়সাহিত্যের মূল উপাদান ভঙ্কি এতে মিলবে সেদিক থেকে প্রবন্ধ সাহিত্যে 'কমলাকান্ত” তুলনাহীন এবং কমলাকাত্তরষ্ট৷ বঙ্কিমচন্দ্রের তুলন। শুধু তিনিই

বঙ্কিমচন্জ্র “কমলাকান্ডতের ছদ্মবেশে কখনও উত্তেজিত সমালোচক, কখনও. অভিভূত দেশপ্রেমিক তীব্র ব্যঙ্গের চাবুকে ভিনি যখন সমগ্র বাঙ্গালীসমাজকে সচকিত করে তোলেন তখনও দেশপ্রেমিক বঙ্কিমচন্ত্র নীরবে অক্রবর্ষণ করেন আবার, চরম হতাশায় যখন তীকে মুহমান হতে দেখি তখনও তার স্বদেশপ্রেমিকতাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কখনও তিরস্কার, কখনও ভৎ“সনা, কখনও আক্ষেপে দুঃখে কমলাকান্তরূপী বঙ্কিমচন্দ্র এখানে জীবন্ত স্বদেশপ্রেমিক | স্বদেশচিন্তার এই স্থগভীর আন্তরিকতাই কমলাকান্তে' পৃথক রস সঞ্চার করেছে

কমলাকান্তেই, বঙ্কিমচন্দ্র বঙ্গপ্রেমে আত্মহীর হয়েছেন। ইতিহাসের নু, কাহিনী উদ্ধারের পূর্বাপর বাঁসনাঁকে “কমলা কান্তে' তিনি যত আবেগের সঙ্গে ব্যক্ত করেছেন অন্যাত্র 'তা পাই না। বিপথগাঁমী দেশবাসীকে সচেতন করে তোলার দায়িত্ব পালনে বঙ্ষিমচন্দ্র এখানে তৎপর | ছদ্ম দেশপ্রেমীদের মুখোশ খুলে দেওয়ার মত নির্তীকতা “কমলাকান্তে স্পষ্ট। কমলাকান্তেই বঙ্গজননীর জন্য আকুলভাবে ক্রন্দন করেছিলেন তিনি। কাজেই স্বদেশপ্রেমিক বঙ্কিমচন্দ্র সমগ্র জীবনের স্বদেশ সাধনা এই গ্রন্থটিতে স্থত্রাকারে ব্যক্ত হয়েছে বলা ঘায়।

সমগ্র “কমলাকান্ত” তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়েছে, দপ্তর, পত্র জোঁবানবন্দী | এই তিনটি ভাগের প্রবক্তাই কমলাঁকান্ত স্বয়ং। দগ্তর রচনার ইতিহাস প্রসঙ্গে কমলাকান্তেরও ইতিহাস খানিকটা পাঁওয়া যায়। স্বদেশপ্রেমিকতা কমলাকান্তের চারিত্রিক গুণ কমলাকান্তের সমগ্র জীবন পরার্থে উৎসর্গাকৃত, যদিও সার্থকতার মানদণ্ডে কমলাকান্ত কোথাও সমাদৃত হয়নি। কমলাকান্তের পরিচয় দাঁন করেছেন তী্বদেব খোশনবীস,_-চাকুরী পেয়েও কমলাকান্ত কেন শেষ পর্যন্ত চাকুরীকে জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করতে পারেনি তার বর্ণনাপ্রসঙ্গে বলা হয়েছে”_

"একবার সাহেব তাহাকে মাস্কাবারের পে-বিল প্রস্তুত করিতে বলিয়ছিলেন কমলাকান্ত বিলবহি লইয়া একটি চিত্র আঁকিল যে, কতকগুলি নাগা ফকির সাহেবের: কাছে ভিক্ষা চাঁহিতেছে, সাহেব দুই চারিটা পয়স৷ ছড়াইয়া ফেলিয়া দিতেছেন। নীচে লিখিয়! দিল শ্যথার্থ পে-বিল 1” সাহেব নূতনতর পে-বিল দেখিয়া কমলাকান্তকে মানে মীনে বিদায় দিলেন

এই অংশটিতেই কমলাকান্ত চরিত্রের স্পষ্ট পরিচয় উদ্‌াঁটিত হয়েছে, চীকুরী-. প্রাণ বাঁঙ্গালীলমাজে পাঁগুল কমলাকান্তকে ব্যতিক্রম বলতে পারি, কিন্তু চিত্রকর,

৬৬৮ উনবিংশ শতার্বীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

'কমলাকান্তের ছদ্নরূপ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাঁবে,_কমলাকান্তের পাগলামির উদ্দেশ্য কিন্তু অর্থপূর্ণ | যেচিত্র রচনা করে কমলাকান্ত বিতাড়িত হয়েছেন,--তার মূলে দেশপ্রাণতার অন্ুভূতিই তীব্রভাবে বর্তমান তিনি কমলাঁকান্ত বণিত চিত্রে একটি 'অর্মাত্তিক সত্যই বর্ণনা করেছিলেন। শাসক শাসিতের সম্পর্ককে এমন স্থৃতীক্ষ ব্যঙ্ষচিত্রে রূপদাঁনের কৌশলটি কিন্তু বস্িমচন্দ্রের | কমলাকান্তের অষ্টা বঙ্কিম এভাবেই গ্রস্থরচনার উদ্দেশ্যের আভাস দিয়েছিলেন

'কমলাকান্তের দপ্তরে” বঙ্কিমচন্দ্রের দেশস্ীতির উচ্ছ্বাস অন্ততঃ ছুটি প্রবন্ধে চূড়ান্ত রূপ পেয়েছে “আমার দুর্গোৎসব” “একটি গীত' নিছক স্বদেশপ্রেমিকের রচন|। “আনন্দমঠের” মাতৃবন্দনার মন্ত্র “আমার ছুর্গোৎসবে”-ই প্রথম স্ষচিত হয়েছে। কমলাকান্তের মাতৃপৃজ্জার আবেগ প্রবন্ধে একটি গভীর ব্যঞ্জনাতৃঙ্টি করেছে। কমলাকান্ত যে মাীকে দর্শন করেছেন তিনিই জন্মভূমি ) দুর্গামৃতির এই নতুন ব্যাখ্যা “আনন্দমঠে-ও' পেয়েছি-_

*চিনিলাম, এই আমার জননী জন্মভূমি--এই মৃন্ময়ী যৃত্তিকারূপিনী--অনস্তরত ভূষিত এক্ষণে কালগর্ভেনিহিতা |”

দুর্গামৃতির মধ্যে সাক্ষীৎ বঙ্গজননীকে আবিষ্কার টা তিনি উচ্ছৃসিত আবেগে আত্মহারা হয়েছেন ঘোর দুর্দিনের পটভূমিকায় কমলাকান্ত সমগ্র বঙ্গবাসপীকে আহ্বান জানিয়েছেন,

“এস, ভাই সকল! আমরা এই অন্ধকার কালস্রোতে ঝাঁপ দিই। এস, আমর দ্বাদশকোটি ভুজে প্রতিমা তুলিয়া, ছয়কোটি যাঁথায় বহিয়া ঘরে আনি। এস, অন্ধকারে ভয় কি? এঁধে নক্ষত্রসকল মধ্যে মধ্যে উঠিতেছে, নিবিতেছে, উহারা পথ দেখাইবে-_-চল |! চল! অসংখ্য বাহুর প্রক্ষেপে, কালসমুদ্র তাড়িত, 'মথিত, ব্যস্ত করিয়া, আমর] সম্ভরণ করি- সেই স্বর্ণপ্রতিমা মাথায় করিয়া আনি। ভয়কি? না৷ হয় ডুবিব, মাতৃহীনের জীবনে কাজ কি?”

এই আহ্বান দেশপ্রেমিক বস্কিমচন্দ্রের আকুল আহ্বান মাতৃরূপে ঈশ্বরদর্শন বাঙ্গালীর চির-আকাজ্কিত--ধর্মে, সাহিত্যে তারই প্রতিরূপ, সেখানেই বান্বালীর বিশিষ্টতা উনবিংশ শতাব্দীতেও সেই ভাঁবটিই ঈষৎ রূপান্তরিত হয়ে দেশপ্রেমে 'পরিণত হয়েছে ধর্ম মানুষের আন্তরিক আবেগেরই বহিঃপ্রকশি - দেশপ্রেমের মধ্যে এই ব্যঞ্জনাটুকু আরোপের চেষ্ট। করেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র ধর্মচেতনার সঙ্গে দেশচেতনাকে সঞীবিত করলে দেশপ্রেম একটি বিশেষ লক্ষ্যে পরিণত হবে, সার্থকতা পাঁভ কর। সম্ভব কবে তখনই তাই বন্গিমচন্দ্র স্বদেশপ্রেমকেও সাধনার পর্যায়ে তুলে ধরেছেন। ' 'আনন্দমঠের সন্তানরা দেশসাঞ্কনাকে ধর্মসাধনার সঙ্গে এক করে দেখেছে।

উপস্তাস ৬৬৯,

ধর্মসাধনায় সিদ্ধির জগ যে নিষ্ঠা, ত্যাগ সংযম পাঁলন করতে হয়,_দেশপ্রেমের সাধন তার চেয়ে কম কষ্টকর নয় “আননদমঠ' রচনারও বহু 'আগেই যে বঙ্কিমচন্দ্র দেশপ্রেমের এই জাতীয় মহিমা প্রচারের চেষ্টা করেছিলেন, 'আমার ছুর্গোৎসব* প্রবন্ধটি তার প্রমাণ এখানেও অবশ্যপালনীয় যে কর্তব্য নির্দেশ করেছেন বঙ্কিমচন্দ্র তা” এই,

“উঠ ম! হিরণ্য়ী বঙ্গভূমি ! উঠমা। এবার ক্সন্তীন হইব, সৎপথে চলিব-_ তোমার মুখ রাখিব | উঠ মা, দেবী দেবাহুগৃহীতে-_-এবার আপন] ভুলিব-_ভ্রাতৃবৎসল. হইব, পরের মঙ্গল সাঁধিব-অধর্ম, আলম্কা, ইন্ড্রিয়ভক্তি ত্যাগ করিব--উঠ মা-_একা রোদন করিতে ছ, কাদিতে কাদিতে চক্ষু গেল মা উঠ উঠ, উঠ মা বঙ্গ জননী |”

এই অংশে বঙ্কিমচন্দ্র স্বদেশপ্রেমিকের কর্তব্য নির্ণয় করেছেন বঙ্কিমচন্দ্র: দেশসাধককে পরার্থপর, ইন্দ্রিয়জযনী, কর্ঠঠ, এঁক্যপরাগণণ হবার উপদেশ দিয়েছেন “কমলাকান্তের দপ্তরের" অন্থান্ প্রবন্ধে প্রাচ্য পাশ্চাত্য সমাজতাব্বিকদের অনুসরণ করে বঙ্কিমচন্দ্র জাতীয় চরিত্র গঠনের মৃলহ্বত্র নির্ণয় করেছেন। দেশপ্রেমিককে দেশসাধক হবার উপদেশ দিয়েছেন তিনি

“একটি গীত' দেশপ্রেমিক বন্ধিমচন্দ্রের অনবগ্ধ একটি রচনা বৈষব-মহাঁজন পদ অবলঘ্নে বঙ্কিমচন্দ্র ষে অভিনব সৌন্দর্য ভাব আরোপ করেছেন- সেদিক থেকে প্রবন্ধটির স্ব্প কলাকৌশলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন সমালোচকবুন্দ তাছাড়া দেশপ্রেমের ব্যঞ্জনায় প্রবন্ধটি আরও উজ্জ্বল হয়েছে! পরাধীনতার দুঃখ আক্ষেপ প্রবন্ধে তীব্র আকারে প্রকাশিত মুক্তির আশা মানুষকে শান্ত করে,__কিস্ত, কমলাকাত্ত ভবিষ্যৎদর্শন করে আরও গভীর বিষাদে নিমজ্জিত হয়েছেন প্রচণ্ড হতাশার কাহিনী পাঠকের অন্তরে যে গভীর ক্ষোভের সঞ্চার করে--সেটুকুই রচনাটির স্থায়ী মূল্য। প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র অতীতপ্রীতির পরিচয় দিয়েছেন প্রচণ্ড বেদনার মধ্যে আলোকোজ্ছল অতীতের দিকে আমাদের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেবার চেষ্টা করেছেন বঙ্কিমচন্দ্র পরোক্ষতাবে সমগ্র বাঙ্গালীর প্রাণে গভীর ক্ষোভ উত্তেজনার সঞ্চার করতে পেরেছিলেন বলে প্রবন্টির বিশেষ মূল্য স্বীকার করতে হয়। কমলাকাস্তের আবেগ এই অংশটিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে,_

“আমার এক ছুঃখ, এক সন্তাপ, এক ভরসা আছে। ১২০৩ সাল হইতে দিবস: গণি। যে দিন বঙ্ধে হিন্দুনাম লোপ পাইয়াছে, সেই দিন হইতে দিন গরণি। যে দিব সঞ্চদশ অশ্বারোহী বন্জয় করিয়াছিল, সেই দিন হইতে দিন গণি। হাম! কত গণিব! দিন গণিতে গণিতে মাস হয়, মাস গণিতে গণিতে বৎসর হয়, বৎসর গণিতে গণিতে শতাবী হয়, শতাব্দীও ফিরিয়া ফিরিয়া সাতবার গশি।'--ষাহা।

৬৭০ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল। সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

চাই তাহা মিলাইল কই? মনুষ্যত্ব মিলিল কই? একজাতীয়ত্ব মিলিল কই, এঁক্য কই? বিদ্ভা কই? গৌরব কই? শ্রীহর্য কই? ভউনারায়ণ কই? হুলীম্ুধ কই? লক্ষমণসেন কই ? আর কি মিলিবে না? হায়! সবারই ঈপ্সিত মিলে, কমলাকান্তের মিলিবে ন1 1”

ইতিহাস চেতনাকে পুনর্জীবিত করলে বাঙ্গালী আবার বাঁচার আনন্দ ফিরে পাবে, উনবিংশ শতাব্দীর নবজাঁগরণের সঙ্গে বাঙ্গালীর ইতিহাস চেতনা যুক্ত করার প্রয়াস বঙ্কিমচন্দ্রের দুর'দশিতার পরিচায়ক কাব্যে-নাটকে-উপন্তাসে অতীতচারণ! স্বদেশপ্রেমিক সাহিত্যিকের অবলম্বন হয়েছিল, সে কারণেই আর্ধ্যগৌরব-_হিন্দুগ্রীতি সেযুগের শিক্ষিত-্বদেশপ্রাণ বাঙালীর একমাত্র অবলম্বন হয়েছিল। বঙ্িমচন্্ নিছক আর্যগরিমায় উচ্ছৃপিত হননি আর্য-সংস্কৃতির সঙ্গে বঙ্গসংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য ব্যবধান তার দৃষ্টি এড়ায়নি ; এনিয়ে “বিবিধপ্রবন্ধে আলোঁচনার ঝড় তুলেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র বঙ্কিমচন্দ্র প্রকৃত দেশাত্মবোধ জাগিয়ে তোলার জন্য যা চেয়েছিলেন--তা হল মনুষ্যত্ব, একজাতীয়ত্ব, এক্য। পাশ্চাত্য সমাজআন্দোলন-এর প্রকৃতির সঙ্গে এদেশের জাঁগরণলগ্রকে মেলাতে গিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র হতাশ হয়েছিলেন বঙ্গসমাঁজের অভ্যন্তরীণ জীর্ণত। ত্বকে ব্যথিত করেছিল,--তাঁই তীত্রভাবে এই সমাঞর্জকে তিনি আক্রমণ করেছিলেন কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্রের এই আক্রমণাত্মক মনোভাবের অন্তরালে 'ষে বাঁসনাটি সর্বদাই সক্রিয় হয়েছিল তার ব্যাখ্যাকালে সমালোচক যথার্থই বলেছেন,

হিন্দু জাতিকে স্বাধীন দেখিবার আকাকজ্ষা বহ্কিমের মনে কখনও নির্বাপিত হয় নাই; ঘদিচ পরিণত বুদ্ধির সহায়তায় তিনি ভাল করিয়াই বুঝিয়াছিলেন, বর্তমান অবস্থায় এই স্বাধীনতা হিন্দুর লক্ষ্য নয় ।”

[বঙ্কিম সাহিত্যের ভূমিকা,_-“সীতীরাম'-সজনীকান্ত দাঁস ]

এই” পরিস্থিতিতে” স্বাধীনতা অর্জন যে অসম্ভব এই ধারণা বঙ্কিমচন্দ্রের মনে বদ্ধমূল হয়েছিলো বলেই তিনি স্বাধীনতা লাভের প্রস্তুতির আয়োজন চালিয়েছিলেন। আবেদন-নিবেদন-ত্রন্দন আক্ষেপের সাহায্যে তা সম্ভব ছিলনা বলেই সৈনিকের বেশে যুদ্ধপর্বের লায়কত্থ করেছেন বঙ্কিমচন্দ্র “একটি গীতে' বঙ্ধিমচন্দ্রের রুদ্ধবরোধ 'ফেটে পড়েছে যেন, |

“আমার এই বঙ্গদেশের হুখের শ্বতি আছে-নিদর্শন কই? দেবপাঁলদেব, লাক্ণসেন, জয়দেব, শ্রীহ্ষ, প্রয়াগ পর্য্যস্ত রাঁজ্য, ভারতের অধীশ্বর নাম, গোঁড়ী-রীতি, এএ সকলের স্থিতি আছে, কিন্ধ নিদর্শন কই? হুথ মনে পড়িল, কিন্ত চাহ্বি কোন ধিকে ? নে গৌড় কই 1. লে যে কেবল যধন লাঞ্ছিত তপাবশেষ 1”:

ব্যজাতক রচনা ৬খ১

এই তীত্র আত্মজিজ্ঞাসার কোন সছুত্তর খু'ঞ্জে পাননি বঙ্কিমচন্দ্র, কিন্ত প্রতিটি বাঙ্গালীর মনে এই জিজ্ঞাসা জাগিয়েছিলেন তিনিই। অত্যন্ত ভাবাবেগপূর্ণ বর্ণনায় বঙ্গ ইতিহাসের অতীত পৃষ্ঠাটি হতাশাপীড়িত নির্জীব বাঙ্গালীর সামনে তুলে ধরেছিলেন তিনি কমলাকান্তের ছদ্মবেশ এখানে নেই, _স্বদেশপ্রেমিক বঙ্কিমচন্ত্ এখানে আমাদের সামনে এসে ধ্াড়িয়েছেন

কষলাকান্তের' কয়েকটি প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র নির্মম সমীলোচকের ভূমিকায় অবতীর্ণ “ঢে'কি' প্রবন্ধে বাঙালীর দেশচর্ঠার সমালোচন। করেছেন তিনি

“পরহিতেচ্ছা, দেশবাৎসল্য “সাধারণ আত্মা” অর্থাৎ ০0110 59870 বিশেষতঃ কার্ধ্য দক্ষতা, সকল খানায় পড়িলে হয় কি না?”

সমগ্র বাালীজাতির চরিত্র লক্ষণ নির্ণয়কালেও বঙ্কিমচন্দ্র নির্মম সত্য উদঘাটন করেন,”

“আয় ভাই, টেকির দল! তোমাদের সব বিছ্যাবুদ্ধি বুঝিয়াছি যখনই পিঠে রমণীপাদপন্ম ওরফে মেয়ে লাথি পড়ে, তখনই তোমরা ধান ভান,_-নহিলে কেবল কাঠ-দ।রুময়-_গর্তে শু'ড় লুকাইয়া, লেজ উঢু করিয়া, টেকিশালে পড়িয়া থাক। বিছ্ভার মধ্যে খানায় পড়া, আনন্দের মধ্যে “ধান”, পুরক্কারের মধ্যে সেই রান্ন। পা।

এই জাতীয় সমালোচনা নিছক রচনাগুণেই উপভোগ্য হয়েছিল। দেশবাৎসল্য জাতীয়চরিত্রে স্বতঃপ্রকাশিত হয়ে থাকে। কিস্ত ভণ্ড দেশপ্রেমীদের সাংখ্যাধিক্য লক্ষ্য করেই বঙ্কিমচন্ত্র ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় “পঞ্চানন্দ' ছদ্মনামে এই দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বিরূপ সমালোচনা সমাঁজের স্বাস্থ্যরক্ষার জন্যই প্রয়োজন বঙ্কিমচন্দ্রের কমলাঁকান্তী বিদ্রোহ সেদিক থেকে বাংলা সাহিত্যের এই অভাব পূর্ণ করেছে। বঙ্ৃদর্শনের অর্থনির্ঁয় কালে লেখকের কোন বন্ধু বলে- ছিলেন, ”"শকারের উপর যে রেফটি আছে, বোধ হয়, তাহা মুদ্রাকারের ভ্রম, শব্দটি “বঙ্জদশন”, অর্থাৎ “বাংলার দাত”

এই ব্যাখ্যায় বঞ্চিমচন্দ্র খুশী হননি কিন্তু আমাদের খুশী করেছেন, কারণ এই অদ্ভুত ব্যাখ্যাটি তীর নিজন্ব।- কমলাকান্ত স্বদেশহিতৈষণা বোঝেন কিন্তু ভণ্ডামির ঘোরতর শক্র তিনি 'মনুষ্তফলের' একটি অংশে সমালোচক কমলাকান্ত্ের বক্তব্য, -*এ দেশে এক জাতি লোক সম্প্রতি দেখা দিয়াছেন, তাঁহার দেশহিতৈষী বলিয়! খ্যাত। তাহাদের আমি শিমুল ফুল ভাবি যখন ফুল ফুটে, তখন দেখিতে শুনিতে বড় শোভা-_বড় বড়, রাঙ্গা রাঙ্গা, গাছ আলো করিয়া! থাকে ।"''কালক্রমে চৈত্র মাস 'আশিলে রৌন্রের তাপে, অস্ত লিঘু ফল, ফট করিয়। ফাটিয়া উঠে, তাহার ভিতর হইতে খানিক তুলা বাহির হইয়া! বহদেশময় ছড়াইয় পড়ে ।”

১৬২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

এই সমালোচনাটিও উপভোগ্য | বঙ্কিমচন্্র স্বদেশপ্রেমের সীধনার কথা! আলোচনা করেছেন “আনন্দমঠে',_-কমলাকান্ত' রচনাপর্বে তিমি স্বদেশপ্রেমের মৃল্যবিচার করার চেষ্টা করেছেন। “কমলাকান্তের দগ্তরে” পরার্থপরতাকেই মনুস্যজীবনের সর্বাপেক্ষা প্রশংসশীয় শ্ুণ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, স্বার্থলেশহীন ব্যক্তির পক্ষেই দেশপ্রেমী হওয়া সম্ভব ! সন্তানব্রতধারী পৈনিকেরাও আত্মস্থখভোঁগ, শ্বকীয়ত্ব বিসর্জন দিয়েই দেশসাঁধক হয়েছিল

কিন্ত বাঙ্গীলীচরিত্রে তিনি এজাতীয় গুণের অভাব লক্ষ্য করেছিলেন। ইউটিলিটি বা উদরদর্শনে বঙ্কিমচন্দ্র বাঙ্গালীর সামনে একটি মাত্র অনুসরণযেগ্য দর্শন প্রচার করেছেন. “দেশের হিতসাধনের দর্শন।” বিদ্যা, বুদ্ধি, পরিশ্রম, উপাসনা, বল

প্রতারণায় সিদ্ধিলাভ অসম্ভব স্ৃতরাং দেশের হিতসাধনের দ্বারাই পুরুষার্থ লাভ

সম্ভব। এখানে বঙ্কিমচন্দ্রের বাঙ্গালীচরিত্র সমালোচন। তীব্রতর আকার ধাঁরপ করেছে। দৈহিক মানসিক শক্তিতে ক্ষীশ বঙ্গবাসীকে তিনি উপহাস করেননি কিন্তু সচেতন করেছেন আক্রমণের লক্ষ্য বালী কিন্তু বাঙ্গালী তার স্বজাতি। কমলাকাস্ত মিজেই দুর্বল-অসহায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ অনেক ছুঃখেই বঙ্কিমচন্ত বলেছিলেন,

“কুখের কথাতেই বাঙ্গালির অধিকার নাই। গোপীর ছুঃখ, বিধাত। গোঁপীকে নারী করিয়াছেন কেন, আমাদের ছুঃখ, বিধাতা আমাদের নারী করেন নাই কেন, তাহা হইলে মুখ দেখাইতে হইত না।৮ একটি গীত

সমগ্র বাঙ্গালিকে তিনি পৌরুষহীন ক্লীবরূপে আবিষফার করে যে ছঃখ পেয়েছেন, তার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় তীর জানা ছিল না। কিন্ত আয্মোপলৰির অভাবটুকু তিনি মোচন করেছেন। ন্শিক্ষিত বাঙ্গালির কাছে বঙ্কিমচন্দ্র সময়োচিত আবেদন জানিয়েছিলেন |.

“কমলাকান্তের পত্র” পর্যায়ের 'পলিটিক্স' প্রবন্ধে রাজনীতি জ্ঞানশুন্য বাঙ্গালীকে তিনি স্বরণ করিয়ে দিয়েছেন,

*ভাই পলিটিকৃস্ওয়ালারা, আমি কমলাকান্ত চক্রবর্তী তোমাদিগের হিতবক্য

বলিতেছি, পিয়াদার শ্বশুরবাড়ী আছে, তবু সপ্তদশ অস্বীরোহী মাত্র যে জাতিকে জয়. করিয়াছিল, তাহাদের পলিটিকৃস্‌ নাই | “জয় রাধে কষ, ভিক্ষা দাও গে ?” ইহাই '

তাহাদের পলিটিকৃস্‌। তরদৃতিম্ন অন্ত পলিটিকৃস্‌ যে গাছে ফলে, তাহার বীজ দেশের বাটিতে লাগিবার শভ্ভাবন! নাই

ক্ষোভ-দুখ আত্মসমালোচনাই এখানে প্রকট বাঙ্গালীর ভোমাদোদ-পিভার তীত্রনিন্দা! 'কমলাকান্তের দগ্ডরে' অন্তত্বও আছে কিন রাজনীতিন ক্ষেত্র এই

ব্যঙ্জাত্ক রচনা ৬৭

নিন্দনীয় গুণটি যে কত কদর্যকূপেই প্রকটিত হতে পারে--'পলিটিকসে' বণিত কুকুর জাতীয় পলিটিশিয়ানের আচরণের মাধ্যমে তার ব্যাখ্যা করেছেন “উলসি হইতে আমাদের পরমাত্সীয় রাজা! মুচিরাম রায় বাহীছুর পর্যপ্ত অনেকে এই কুদধুরের দরের পলিটিশ্বান 1”

বাঙ্গালীর মনুষ্যত্ব প্রবন্ধে বাঙ্গালীর চরিত্র ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “তোঁমার বঙ্গভূমে জন্মগ্রহণ করিয়া ঘ্যান ঘ্যান করিব না তকি করিব? বাঙ্গালী হইয়া কে ঘ্যানঘ্যানানি ছাড়া? কোন বাঙ্গালির ঘ্যান্ধ্যানানি ছাড়া অন্য ব্যবসা আছে। তোমাদের মধ্যে ধিনি রাজা মহারাজা! কি এমনি একটা কিছু মাথায় পাগড়ি হইলেন, তিনি গিয়া বেলভিডিয়রে ঘ্যান্‌ ঘ্যান আরম্ভ করিলেন যিনি হইবেন উমেদ রাখেন, তিনি গিয়। রাত্রি দিবা রাজদ্বারে থ্যান্‌ ঘ্যান করেন ।-..কেহ বা মনে করেন, ঘ্যান ঘ্যানানির চোটে দেশোদ্ধার করিবেন সভাতলে ছেলে বুড়া জম করিয়। ঘ্যান্ত্যান করিতে থাকেন 1”

এখানে বঙ্কিমচন্দ্র রাজামহারাজা, সাধারণ-অসাধারণ সকলকেই লক্ষ্য করে বাঙ্গালী জাতির চরিত্রগত দুর্বলতার প্রতি ইঙিত করেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র নির্ভীক- স্বদেশপ্রাণ বাঙ্গালি জাতির স্বপ্ন দেখেছিলেন বলেই সমগ্র জাতির চরিত্র সংশোধনের উপায়ও চিস্তা করেছেন 'মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত” রচনার উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করলেও এই সত্যটিই প্রকট হয়ে ওঠে। আগাগোড়া হাশ্যের আবরণে বঙ্কিমচন্দ্র মুচিরাম গুড় নামক একটি বাঙ্গালীর জীবনকাহিনীই রচনা করেননি, তিনি একটি শ্রেণীর চরিব্রমাহাত্য উদ্‌ঘাটিত করেছেন মাত্র। নবজাগরণের ফলাফল হিসেবে সভাসমিতি, এসোসিয়েসন গঠন করতে শিখেছি আমরা কিন্তু মুচিরাম সে সভার বক্তা হলে পুলকিত হওয়ার কোন হেতু নেই। বঙ্কিমচন্দ্র মুচিরামের জীবননাট্যের সফল দৃশ্যটির বর্ণনা করেছেন, |

"মুচিরামও বুটিশ ইত্ডয়ান সভার একজন বক্তা হইয়া দীড়াইলেন। তিনি বকিতেন মাথা-মুণু, কিন্ত ছাঁপার বিজ্ঞীপনীতে যাহা বাহির হইত, সে আর একপ্রকার মুটিরাম নিজে তাহার কিছুই বুঝিতে পারিতেন না। যাহারা বুঝে তাহার! পড়িয়া) নিন্দা করিত না। ব্ৃতরাং মুচিরাম ক্রমে একজন প্রসিদ্ধ বক্তা বলিয়! খ্যাতিলাভ করিতে লাগিলেন যেখানে লোকে বড়লোক বলিয়! গণ্য হয়, মুচিরাম তাহার কোন জায়গায় ধাইতেই ছাঁড়িত না। গভর্নমেন্ট হৌসে বেলবিভীরে গেলে বড়লোক বলিয়া গণ্য.হয়, হতরাং সে গভর্নমেন্ট হৌসে বেলবিভীরে যাইত |”

কিন্ত পাঠক মুচিরামের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধিতে শঙ্কিত না হয়ে পারে না। মুচিরাম সম্প্রদায়ের আবিপত্য বর্ণন1 করে বঙ্কিমচন্দ্র বাংলাদেশের ভয়াবহ পরিস্থিতি সম্পর্কেই

৪৩

৬৭৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

দেশবাসীকে সচেতন করে দিতে চান। নিপুণ ব্য্গশিল্পী বন্কিমচন্্র রঙগরস দেশচিন্তা একই আঁধারে স্থাপন করে ছিলেন--এখাঁনেই তাঁর বিশেষত্ব 'কমলাকান্তের দগ্তরের” সঙ্গে “মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিতের” রচনাগত সামৃশ্যও আছে। নির্মল হাশ্যরসের অফুরন্ত আয়োজন কমলাকান্তের দপ্তরের মত রচনাটিতেও সুলত। কিন্তু হান্যের অন্তরালে চিন্তার অবতারণা করেছিলেন বলেই রচনাগুলির বিশেষ যূল্য স্বীকৃত হবে। জাতীয় উত্থানের প্রারস্তে বালী চরিত্রের সংশোধন কার্য- টুকই বঙ্কিমচন্দ্র করেছিলেন আত্মস্থ বিসর্জন স্বার্থত্যাগের মহৎ আদর্শ, সাম্যবাদের প্রচার সমগ্র বঙ্কিমসাহিত্যেই ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত সত্য--কমলাকান্তের দগ্ডুরে' অভিনব রচনাবৈচিত্র্যে তা উজ্জ্বল হয়ে আছে।

“কমলাকান্ত পর্যায়ের কোঁনো। রচনাতেই শাসকগো্ীর প্রতি তীব্র বিদ্বেষ ভাবের পরিচয় নেই। দেশসচেতন পরাধীনতাঁসচেতন লেখকের পক্ষে শাঁসকগোঁচী সম্বন্ধে নীরবতা পালন যে সত্যিই সংযমের পরিচায়ক, বঙ্কিমচন্দ্রের “কমলাকান্তের দর্তর" পাঠকালে কথা বার বার মনে হয়। আত্মদোষ নির্ণয়েই বঙ্কিমচন্দ্র অত্যন্ত মগ্ন কিন্তু পরিশিষ্টের “কাকাতুয়।” প্রবন্ধটিতে ইংরেজ জাতির চরিত্র সমালোচনা করেছেন অত্যন্ত কৌশলে অথচ রূপকের ঘনপর্দার আবরণ ভেদ করে বঙ্গিমচন্দ্রের ইংরেজবিঘ্বেষ আবিফার করা সত্যিই শক্ত ব্যাপার। কাকাতুয়ার জন্মকাহিনী শোনাবার জন্ তিনি হাস্যকর ঘটনা পরিস্থিতির যে বিবরণ দিয়েছেন--তাঁতেও বস্কিমচন্দ্রের উদ্দেশ্য চাঁপা থাকেনি কাকাতুয়া বলেছে,_“আমরা সাদা ডানা বিস্তার করিয়া: সমুদ্র পার হইয়া দেশে দেশে যাইতে লাগিলাম। যেখানে উত্তম আহারের সম্ভাবনা দেখিলাম, সেই থানে বাসানির্মাণ করিতে আরস্ত করিলাম ষে প্রতিবাদী হইল, তাহাকে মারিয়া ফেলিলাম, অথবা তাড়াইয়। দিলাম |”

এই পাখীটিকে বঙ্কিমচন্দ্র কোন একটি সাম্রাজ্যলোভী সম্প্রদায়ের প্রতীক হিসেবেই অঙ্কন করেছেন_-তাঁতে সন্দেহ নেই | এদেশীয় দ্বিপদবিশিষ্ট জস্তকে অবজ্ঞা মিশ্রিত করুণাপ্রদর্শন করাই পাঁখীটির বৈশিষ্ট্য বক্ষিমচন্দ্র বর্ণনা, দিয়েছেন পাখীর জবাঁনিতে,_

“আমার কাছে মাথ। খু'ড়িয়া খু'ড়িয়! উহারা মাথা ফুলাইয়া ফেলিয়াছে। উহাঁর'ই প্রন্কভ বুদ্ধিযান | দেখিতেছ না উহার! ক্ষুত্র চ্ষত্র শান্তশি্ শ্বজাতীয়দিগকে মারিয়া ধরিয়া, তাড়াইয়া দিয়! আমার ভাড়ের নীচে শ্রীড়াইিয়া মাথা নাড়ি! আমাকে কত সেলাম করিতেছে এবং আমার প্রসাদের সারাংশ সংগ্রহ কিয়? দূরস্ষিত ক্ষু্র ত্র বঙ্জের দলে প্রবেশ করিয়া নিট রা উদ্নত করিয়া

বেড়াইকেছে 1. . |

ব্যঙ্গাত্বক রচনা ৬৭৫

২০০৭৭ দেখ, আমি প্ররত পক্ষে কাহাঁকেও যত্ব কি অন্থগ্রহ করি না। আমার সমস্ত যত্ব এবং অন্ুুগ্রহ আমাতেই অপিত। তবে মোটা মাথাগুলো আমাকে খুব সেলাম করে এবং বিভীষণের স্তায় আপনাদের ঘরের সমস্ত কথা আমাকে বলিয়া দেয়, তাই উহ্াদদিগকে ছুধের উপর ছুই একটা ছোলার খোস দিয়া থাকি ।”

উদ্ধত বক্তব্যের অন্তনিহিত সত্য বিশ্লেষণ করলে শাসক ইংরেজের উদ্দেশ্য পরাধীন বঙ্গবাসীর অবস্থাটি আবিষ্কৃত হবে পরাঁধীনতা দুর্বল জাতির জীবনকে জড়ত্বপাশে বদ্ধ করে। তাহাড়। এক শ্রেণীর কপাভিক্ষ নিজের দেশের সর্বনাশ করেও শাসকগোঞ্গীর মনোরঞ্জন করে বেঁচে থাকতে চায়। এই দলের সংখ্যাবৃদ্ধিতে বঙ্কিমচন্দ্র অত্যন্ত ছুঃখিত হয়েছিলেন। সামগ্রিকভাবে জাতির চেতনা যতদ্দিন স্থপ্ত থাকবে ততই এই শ্রেণীর সংখ্যাঁধিক্য ঘটতে থাকবে বঙ্ছিমচন্ত্র বিশ্বাসঘাতক (ও শীসকসম্প্রদায়ের কৃপাপ্রার্থী এই সম্প্রদায় সম্পর্কে সচেতন করে তুলেছেন। কোনো সমালোচক বঙ্কিমচন্দরের মনোভাব খুব স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করেছেন,_

“ধহারা জয়ঠাদ বা মীরজাফরকে ভারতের পরাধীনতার কারণ বলিয়া শির্দেশ করেন, তাঁহাদের মতবাদও বঙ্ষিমচন্দ্র গ্রহণ করিতে পারেন নাই | তিনি মর্ষে মর্মে উপলব্ধি করিয়াছিলেন-__যে সমাজে বা রাষ্ট্রে প্রাণধারা অব্যাহত থাকে, সেখানে কখনও কৃতদ্রতা বা বিশ্বাসঘাতকতা আত্মপ্রকাশ করে না কিন্তু জাতীয় জীবনের যখন চরম দুর্গতি উপস্থিত হয়, তখন সহন্ন সহম্ন জয়টাঁদ, মীরজাফর লালসিংহে দেশ ছাইয়া ফেলে ।»

[ বঙ্কিম দর্শনের দিগদর্শন-ত্রিপুরাঁশংকর সেনশান্্রী | পৃঃ ১৬-১৭ ]

বাঙ্গালীর ভয়াবহ মানসিক অধঃপতনের চিত্ররচনাতে বঙ্ষিমচন্ত্র সফল্য অর্জন ঢরেছিলেন সাহিত্যতরষ্টার হাতে ঘেটুকু ক্ষমতা আছে-_তার . বঘ্যবহার চবেছিলেন তিনি কিন্ত আত্মসন্ত্ঠট অলস বাক্গালীকে তিনি আত্মসচ্েতন্দ হবার রামর্শ দিয়েছিলেন বলেই সমস্ত প্রচেষ্টার মধ্যেই স্বদেশপ্রেমিক স্বঞ্জাতিবৎসল বস্কিমচন্্রকে আবিঞার করি আমরা এই পর্বে বঙ্কিমচন্দ্র যত অকপট দেশপ্রেমের রিচয় দিয়েছেন অন্য পর্বে তা নেই। “কমলাকান্ত" পর্বের রচনায় বঙ্কিমচন্ত্র পাঠকের নর খুব কাঁছে এসেছেন, আন্তরিকতাই প্রবন্ধগুলোকে মর্স্পর্শা করেছে,-_হুতরাং

আখাত পেয়েও বাঙ্গ'লী 'কমলাকান্ত' পাঠের অনুরাগ প্রদর্শন করেছে।

বাংলা সাহিত্যের ব্যঙ্গাত্মক রচনাকার হিসেবে ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কেই

১৪600 5808৮ বলে অভিনন্দন জানিয়ে ছিলেন পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যঙ্গাশ্রস্বী রচনার যৃল প্রেরণ! নিঃসন্দেহে শ্বদেশপ্রেম, ইন্্রনাথের যে-কোন পাঠ করলেই ষে-কোন সমালোচক পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত এই সিদ্ধান্তেই

৬৭৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে শ্বদেশশ্রেম

আপবেন। ইন্দ্রনাথের সাহিত্যন্ষির যৃলে স্বদেশচিন্তা মুখ্য হলেও তার দৃষ্টিতজি ছিল তির্য্যক। গঘ্ভে কিংবা] কবিতায়, প্রবন্ধে কিংব] উপন্যাসের ছাঁচে আপন আবেগে তিনি যা লেখেন--তাই একটা তীব্র বিদ্রপাত্বক রচন? হয়ে ওঠে। বাংলা সাহিত্যে ইন্দ্রনাথের আবির্ভীরের অনেক আগেই বঙ্কিমচন্ত্র প্রতিষ্ঠ। অর্জন করেছেন, “বঙ্গদর্শন পত্রিকাঁও সমগ্র বাঙ্গালীর অন্তরে একটি স্থায়ী আসন লাভ করেছে ইন্দ্রনাথ বন্গদর্শনে' প্রকাশিত বঙ্কিমচন্দ্রের ধারাবাহিক ব্যন্গ রচনাগুলির আদর্শই সম্ভবতঃ গ্রহণ করেছিলেন “লোকরহ্ম্ক” “কমলাকাত্ত” 'মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত' রচনা) করে বঙ্কিমচন্দ্র শুফ গম্ভীর সাহিত্যখাতে হাস্যরসের অজ্র প্রবাহ সৃষ্টি করেছিলেন বাংলা সাহিত্যে এই স্বাদ অভিনব অনাস্বাদিতপূর্ব। আলালী কিংবা ছতোমী ব্যঙ্গের সঙ্গে নিশ্চয়ই বঙ্ষিমীব্যঙ্গের লক্ষণীয় পার্থক্য রয়েছে আর সেটুকুই বাংলা। সাহিত্যে নতুন সংযোজন | বঙ্কিমচন্দ্র নিজে নিপুণ হাস্যরসম্রষ্টা হলেও, তিনি খুব বেশীদিন জাতীয় রচনায় মনোনিবেশ করেননি “মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত” ত্বার পর্বের শেষ রচন1। বঙ্কিমপ্রবতিত হান্থরসাশিত স্বদেশপ্রেমাত্মক এই রচনা পরবর্তীকালে ষে কয়েকজনের অন্থশীলনে পরিপুষ্টি লাভ করেছিল ইন্দ্রনাথ তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য বঙ্কিমচন্দ্রের সুতীব্র গভীর স্বদেশভাঁবনা ব্যঙ্গাত্বক রচনায় যতো উদ্ছৃসিত হয়েছিল অন্য রচনায় তা হয়নি। ইন্দ্রনাথও গভীর স্বদেশচিন্তা ব্যঙ্গাকারে ব্যক্ত করেন। পরাধীন লেখকের আত্মগোঁপনের সহজ উপায় হিসেবেই ইন্দ্রনাথ ব্যঙ্গের আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। ইন্দ্রনাথের শ্বদেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটেছে তার গদ্য পদ্য উভয় ধরণের ব্যঙ্গাক্মক রচনায় ইন্ত্রনাথের ব্যঙ্গে আঘাত দানের উদ্দেশ্য সর্বত্রই অত্যন্ত প্রকট ইন্দ্রনাথ সাহিত্যের আদর্শ লংঘন করেও অনেক সময় তীব্র আঘাত হেনেছেন এক একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের উপরে | ইন্দ্রনাথের এই আঘাত- দানের উদ্দেশ্য যেখানে সমাজরক্ষা কিংবা এতিহারক্ষা' সেখানেই তিনি সার্থক শ্রঃ1 ব্যঙ্গ রচনাকারদের প্রবণতা থাকবেই প্রসঙ্গে কোন সমালোচক বলেছেন, 155 580111956 01211005১ জা 100018 10561907010158) 00 062 60০ 001050152805. [005391]5 (০৪৫০ 006 215255---0106515 216 51510190206 55০21000153 ) 176 00219065 আ100120 056 65080115060 221006৬02 ৪০০৫০, 200200108 15 1301229) 80621170660 16595015 ( 01:00 7109 0018 ৪0০19 850205 25 151201791 ) 29 006 565150210 8821350 108০1 00 15086 ৮১০ 20115 706 586৪. [তত 15 656 61556155006 2801000, 035 0:8০ (0841002 2000 10101) 0025 1095 02৩10 £16510ম5 911108 হস৪স,৯

২1. হি০0৩7৮ 0 £011106, 0৩ ০৬৩৮ 0৫ 980065 চর ০৩০০৫ 196০১ ৮7266,

বঙ্গাম্বক রচনা ৬২৭

ইন্দ্রনাঁথ এতিহাসচেতন সনাতন হিন্দুধর্মীশ্রয়ী বলে তার আঘাত সেঘুগের সংস্কারপন্থী ত্রাহ্ছদের উপরেই উদ্ধত হয়েছিল ইন্দ্রনাথের জাতীয় সৃি সম্পর্কে সমালোচকের আপতি থাঁকা স্বাভাবিক কিন্ত স্বদেশপ্রেমী ইন্দ্রনাথ ভও দেশহিতৈষী কিংবা ছূর্বল বাঙ্গালীকে তীব্র আঘাত হেনে পরোক্ষভাবে তাদের সচেতনতা ফিরিয়ে এলেছেন, সেখানে তিনি প্রশংসা পাবেনই। স্বদেশপ্রেমী ইন্ত্রনাথের পরিচয় “ভারতউদ্ধার' কাব্য, পাঁঢু ঠাকুর প্রবন্ধ গ্রন্থাবলী ক্ষুদিরাম [ গাঁলগল.প] ইত্যাদি গ্রন্থে বিশেষভাবে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সমগ্র রচনাসস্তারের ছু'একটি গ্রন্থ ছাড়! সবকটিতেই দেশচিন্ত! মুখ্যস্থান লাভ করেছে। ইন্দ্রনাথের স্বদেশপ্রেমের পরিচয় দান কালে পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন,

“তিনি খাঁটি বাঙ্গালী হইয়া থাকিতে পারিয়াছিলেন, খাঁটি বাঙ্গালীর গৌড়ীয় ভাষায় তিনি মনোভাব ব্যক্ত করিতে পারিতেন | ..**-* দেশ কালের প্রভাবকে অতিক্রম করিয়া, অতীতের ভঙ্গীকে এমন সাগ্রহে জড়াইয়া ধরিয়৷ থাকিতে তাহার হ্যায় ইংরাজিনবীশ কোনও বাঙ্গীলীকেই আমরা দেখি নাই ..'বাঙ্গালীর দুঃখে, বাংলার অধঃপতনে, তিনি অহঃরহ কাতরতা৷ প্রকাশ করিতেন তাই আমি তাহাকে “বাংলার ইন্দ্রনাথ আখ্যা দিয়াছি।” [ পাঁচকড়ি রচনাবলী ]

“বাঙ্গালীর ইন্ত্রনাথ বলে ধাঁকে- অভিনন্দিত করা হয়েছে,_-তিনি তীর সমগ্র সাহিত্যকর্ষেই বাঙ্গালীচিন্তা পোষণ করেছিলেন। ইন্দ্রনাথের দেশচিন্তায় জীতি- হিতৈষণাই মুখ্য, কিন্তু সে যুগের স্বদেশী সম্প্রদায়ের আদর্শবিহীন ভাবোচ্ছাসকে কেন্দ্র করে ইন্দ্রনাথই প্রথম ব্যঙ্গকাব্য রচনা করেন। ইন্দ্রনাথ স্বদেশী জোয়ারের আবর্তে পড়েও দিশশহার। হননি, এটাই আশ্চর্য একনজরে তাকালে দেখা যাবে, ১৮৭২ সালের মধ্যেই জাতীয় নাট্যশালা, হিন্দুমেলা 'বজদর্শন' বন্ধিমচন্দ্রের ম্বণালিনী? এএকইসজে সমগ্র দেশবাঁপীর চিত্তে একটি স্থগভীর আলোড়ন সৃজন করেছিল। ইন্দ্রনাথ এর দ্বারা আদর্শায়িত হয়েছিলেন সন্দেহ নেই-_তা যদি না হোত সপ্রগ্র সাহিত্যকর্মেই দেশচিস্তার এমন উচ্্াস নিশ্চয়ই প্রকাশ পেত না। কিন্ত ইন্্রনাথের প্রকাশভঙ্গি ছিল স্বতস্ত্র--গতানুগতিকতার ব্যতিক্রম | স্বদেশপ্রেমিক ছিলেন বলেই একটি স্থপরিকল্লিত আদর্শের দ্বারা সমগ্র জাতির দেশসাঁধন1 পরিচালিত হোক ছিল তাঁর আন্তরিক কামনা কিস্তু কিভাবে তা কর। সম্ভব সেটি ছিল তাঁর চিন্তার বাইরে কিন্তু সাহিত্যিক হিসেবে বিষয়ে ইন্দ্রনাথ স্বীয় দায়িত্ব পালন করেছিলেন ব্যঙ্গসাহিত্য রচনা করে। “ভারত উদ্ধার" কাব্যের বিষয়বন্ত আলোচনাকালে ইন্দ্রনাথের গভীর শ্বদ্দেশবোধ তার লবুপ্রকাশতঙ্গি আমাদের দি আকর্ষণ করে। এই খ্যঙ্গাত্বক দেশপ্রেমের কাব্য রচনা সম্পর্কে ইন্দ্রনাথ বলেছেন,-- |

৬৭৮ - উনবিংশ শতাব্দীর বাংল] সাহিত্যে ্বদেশপ্রেম

“ভারত উদ্ধার” বাঁজারে বাহির হইল, অমনি দেবগণ মুষলধারে পুষ্পবৃষ্টি করিতে লাগিলেন, মলয়জ গন্ধে দিগ্মগুল পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল, পক্ষাপক্ষ নিবৃত্ত হইয়া, দিবারাত্র কেবল কৌমুদী কেলি হইতে লাগিল, আমার শুভ্র যশেশরাঁশির ভয়ে ধরনী ভারাক্রান্তা হইয়! যেন ত্রাহি ত্রাহি করিতে লাগিলেন ধরিত্রীকে অভয় দিলাম, ভয় নাই, আর বোঁধ হয়, আমি লেখনী চালাইব ন11%

ইন্দ্রনাথের “ভারত উদ্ধার” কাব্যের বিষয়বস্তু সাময়িক দেশোচ্ছাীসের তীত্র সমালোচনা মাত্র ভারত উদ্ধারব্রত পালনের যোগ্যতা অর্জন না করেই ভগ হ্বদেশপ্রেমিক দীর্ঘ বক্তৃতা দেবার আগ্রহে অধীর হন। ইন্দ্রনাথ বাকপটু বাঙ্গালীকেই আঘাত করেছিলেন, যথার্থ দেশপ্রেমিক সম্বন্ধে তাঁর শ্রদ্ধ'র অভাব ছিল না। নিছক বক্তৃতায় সত্যকারের কোন ফললাভ হতে পারে না, ভারত উদ্ধার কাঁব্যের যূল বক্তব্য এটুকু অথচ দেশাত্ববোধ সমগ্র জাতির চেতনাকে আলোকিত করেছে_-এত সত্য ইন্দ্রনাথও বঙ্কিমচন্দ্রের মত বাঙ্গালীর বাহুবলের অভাব সম্পর্কে চিন্তা করেছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র বাঙালীর সামনে অতীতের গৌরব কাহিনী বণঙ্গালী বীরের যে চিত্র বর্ণনা

করেছিলেন, সেখানে বাঙ্গালীকে সচেতন করে তোলার বাঁসনাটিই প্রবল ছিল। ইন্দ্রনাথের সে ক্ষমতা ছিল না। তিনি মেরুদণ্ডহীন নব্যবাঙ্গালীযুবকের বাক্যবলের শক্তিটিই ব্যঙ্গাকারে পরিবেশন করেছিলেন ইন্দ্রনাথ ব্যঙ্গশিল্পী, যেখানে তিনি চারিত্রিক দুর্বলতা প্রত্যক্ষ করেন সেখানেই তার রচনা স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে ওঠে। হন্ত্রনাথের আক্রমণের লক্ষ্য ছিল সে যুগের দুর্বল বাঙ্গালী যুবকসম্প্রদায়। বঙ্কিমচন্দ্র প্রাবন্ধিকের দৃষ্টিতে 'বাঙ্গালীর বাহুবল" প্রবন্ধে যে আলোচনা করেছেন, ইন্দ্রনীথের বক্তব্যের সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই | বাঙ্গালীর চরিত্রে নবজাগরণের উন্মাদনা লক্ষ্য করে বঙ্কিমচন্দ্র বলেছিলেন,

“উদ্যম, এক্য, সাহস এবং অধ্যবসায়, এই চারিটি একত্রিত করিয়া শারীরিক বল ব্যবহার করার যে ফল, তাহাই বাহুবল। যে জাতির উদ্ভম, এঁক্য, সাহস এবং অধ্যবসায় আছে, তাহাদের শারীরিক বল যেমন হউক না কেন, তাহাঁদের বাহুবল আছে। এই চাঁরিটি বাঙ্গালীর কোন কালে নাই, এজন্য বাঙ্গালীর বাহুবল নাই। কিন্ত সামাজিক গতির বলে চারিটি বাঙ্গালী চরিত্রে সমবেত হওয়ার সম্ভাবনা ।*

ইন্দ্রনাঁথও বাঙ্গালীর চরিত্রে এই সম্ভাঁবন! প্রত্যক্ষ করতে চেয়েছিলেন, -কিস্ত বাস্তব অভিজ্পত। তাঁকে নিরাশ করেছিল। অজত্র বাক্যশক্তি কার্যক্ষেত্রে সামান্ততম বাহরলের পরিচয় দিতে অক্ষম বাঙ্গালীকে ভাই ইন্দ্রনাথ ব্যঙ্গের পাত্র করে তুলেছেন কিন্ত ইন্্রনাথের এই ক্মাক্রষণের অন্তনিহিত প্রেরণা যে অবিমিশ্র হ্দেশপ্রেম তাতে

ব্ঙ্গাত্বক রচনা ৬৭৯

আমরা নিঃসন্দেহ। বিকৃত বাঙ্গালী চরিত্র যিনি প্রকাশ্টে কীর্তন করেন তার মনে আশদর্শ বাঙ্গালীর ন্বপ্নটিই বর্তমান

শ্ররামদাস শষ ছদ্মনামে ইন্দ্রনাঁথ “ভারত উদ্ধার” রচনা করেন। ১২৮৪ থৃঃ মাঘ মাসে “ভারতীতে* “ভারত উদ্ধারের" সমালোচনায় লিখিত হয়েছিল,

“বাস্তবিক এরূপ সরস গ্রন্থ আমরা অনেকদিন পাঠ করি নাই এবং বোধ হয় এরূপ বিদ্রপাত্বক কাব্য (8৪7) বঙ্গভাঁষায় আর নাই। ভারতের স্বাধীনতাপ্রিয় বঙ্গ-যুবক কর্তৃক কিরূপে “পাও ইংরাজ" “বিটায়িত' নিরস্ত পরাস্ত হইবে তাহাই গ্রন্থকার ভবিস্তিধক্রীরূপে বর্ণনা] করিয়াছেন ।*

স্থতরাং “ভারত উদ্ধার কাব্যের সমালোচনীতেও গ্রন্থকারের আদর্শের প্রতি ইঙ্জিত করা হয়েছে “ভারত উদ্ধারের” সমালোচনাতে লেখকের আদর্শের প্রশংসা অগ্তত্রও মেলে সমালোচনার” লেখক যোগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন,

যাহাদিগের অন্তরে সেই স্বদেশানুরাগের ভাব জলদক্ষরে লিখিত হইয়াছে, তাহারা এরূপ বিল্রপোক্তিতে ভগ্রহৃদয় ন! হইয়। বরং দ্িগুণতর উৎসাহিত হইবেন কারণ বিদ্রপৌক্তির উদ্দেশ্য স্বদদেশীন্বরাগের মূলে কুঠারাঘাত করা নহে, ইহাকে উত্তেজিত কর মাত্র যে সকল স্বদেশানুরাগাভিমানী স্বদেশানুরাগকে শুদ্ধ বক্তৃতায় আবদ্ধ রাখিতে চাঁন, যে সকল তরলমতি যুবক ভারতোদ্ধার ব্রতের গুরুত্ব দায়িত্ব উপলম্ধি করিতে না পারিয়৷ হাস্াস্পদ কল্পনাজালে আবদ্ধ হন, এই বিদ্পবাঁন তাহাদিগের প্রতিই নিক্ষিপ্ত হইয়াছে ।»

ইন্দ্রনাথের “ভারত উদ্ধার কাব্যের অন্ত একটি ব্যাখ্যা করেছেন স্বয়ং লেখক তিনি বলেছেন গ্রন্থটি ভবিষ্যৎ ইতিহাসের এক পৃষ্ঠা ৫টি সর্গে বিভক্ত এই গ্রস্থটিতে অশ্রিত্রাক্ষর ছন্দে লেখক কাহিনীটি বর্ণনা করেছেন। বিপিন নামক কোন ইংরাজী শিক্ষিত যুবকের ভারতোদ্ধার ব্রতের বিস্তারিত কাহিনী স্থান পেয়েছে এতে | “আর্য- কার্ধকরী সভার' উদ্টোক্তা বিপিন নিরন্তর ভারতচিস্তায় মগ্ন। ভারতের স্বাধীনতা লাভের বাঁসনায় চঞ্চল হয়ে অবশেষে সে নিজেই কিছু গঠণাত্বক পরিকল্পন। করেছে, 'তারই বিস্তারিত বর্ণণা গ্রস্থটিতে স্থান পেয়েছে

প্রথম সর্গে অমিত্রাক্ষর ছন্দের অঙ্ট1 মধু্দনের ভঙ্গিমাতে লেখক বন্দনা করেছেন সর্বতী দেবীকে,

গাও মাতঃ স্বররমে, বানী বিধাপ্লিনী, কমল আসনে বসি, বীণা করি করে, কেমনে ইংরেজ-অরি দুর্দান্ত বাঙ্গালী ত্যাজিয়া বিলাস ভোগ, চাকুত্নীর মায়া,

৬৮৬ উনবিংশ শতাবীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

টান! পাখা, বাঁ হু'কা, তাকিয়ায় ঠেস উৎচৃজি সে মহাত্রতে, সাপটি গু'জিয়! কাচার অন্তরে নিজ লম্বা! ফুল ফোচা ভারতের নির্বাপিত গৌরব-প্রদীপ তৈলহীন, সলতেহীন, আভাহীন এবে-- আলম্য আরামের সুখশধ্যায় শুয়ে চাকুরীপ্রাশ বাঙ্গালীর দেশচিন্তার হ্বরূপ কি হতে পাঁরে সহজেই তা অহ্মেয় | ইন্দ্রনাথ দুর্বল আত্মহখপরায়ণ গৃহস্থ বাঙ্গালীর স্বদেশপ্রেমের চিত্ররচনা করেছেন। গৃহস্থখলালিত এই বাঙ্গালীকে উত্তেজিত করার চেষ্ট1 করেছিলেন বলে তারাই ভারত উদ্ধারের বিশিষ্ট চরিত্র রূপে কল্লিত। কাব্যের নায়ক বিপিনের দেশে দ্বারের হাশ্যকর পরিকল্পনা শ্বার্থচিন্তার নিদশন দেখিয়েছেন ইন্দ্রনাথ,

আমিত মরিব আগে, ক্রমে বংশ লোপ; এইরূপে ক্রমে ক্রমে সব যদি যায়, থাকিলেও বঙ্গ তার নাম কে করিবে?

ভারত উদ্ধারের নায়ক বিপিনের চারিত্রিক মানসিক দৃঢ়তার চিত্রটি হাশ্য- রসিকের লেখনীতে স্থঅস্কিত হয়েছে। সে যুগের সাহিত্যে দেশোদ্বারের সংকল্প উচ্চারিত হয়েছে বারবার, ইন্ত্রনাথ এর তাৎপর্য নির্ণয়ের চেষ্টা না করে ব্যঙ্গ করেছেন নিয়ে। বিপিন ভারতউদ্ধারের কোন উপায় না দেখে শেষ পর্যন্ত কাব্যালোচনায় স্বদেশপ্রেম জাগানোর ব্রত নিয়েছে,

ভাবি নিরুপায়, আসি সাহিত্যের হাটে, বিবিধ কল্পনা খেলা করিতে লাগিহ্, সাজাই নানামতে দ্রব্য অপরূপ,

ঘুমস্ত ভারতে ডাকি লক্ষ লক্বোধনে জাগাইতে গেন্ু-_-মা ! সকলেই জেগে, সকলেই ডাঁকিতেছে--ভারত! ভারত! সকলে বিক্রেতা হাটে, ক্রেতা কেহ নাই--- ভারতে ভারত-কখ। বিকায় না আর

অংশটিতে ইন্্রনাথের ব্যঙ্গ সে যুগের স্বদেশী সাহিত্যকে লক্ষ্য করে বধিত হয়েছে। ভারতকথার' অতি-আলোচনার ফলাফল সম্পর্কে ইন্্রনাথ হতাশ

বাঙাক্মক রচনা ৬৮ হয়েছিলেন, সেই সম্পর্কে আরও তীত্র ব্যঙ্গোক্তি করেছেন ইন্দ্রনাথ,

বঙজের পুত্র যত পত্র-সম্পাদক

কবি আর নাট্যকার, যেদিন লেখনী ধরিয়াছে, সেইদিন হইতে, তটস্থ কম্পমান-কলেবর ইংরাজের কুল। ভারত, ধরিলে অস্ত্র হেন বাঙ্গালী, কি হইবে কাপুরুষ ইংরেজের গতি!

আঘাত প্রত্যক্ষভাবে সমগ্র স্বদেণী সাহিত্যিকের প্রতি নিক্ষিপ্ত হয়েছে কিন্তু ইন্দ্রনাথ নিজেও যে এই অভিযোগে যুক্ত হয়ে পড়েছেন তা তিনি সাময়িকভাবে বিস্বত। পরাধীনতার যে চেতনা ইন্দ্রনাথের মনে তীব্র আলোড়ন তৃষ্টি করেছিল সেটিও পরোক্ষভাবে ম্বদেশী সাহিত্যপাঁঠেরই ফলাফল ইন্দ্রনাথ বাঙ্গালীর ভীরুতার নিন্দা করতে চান কিন্তু ধারা ভীরুতার বিরুদ্ধে লেখনী ধারণ করেছিলেন _ সেই লেখকগোষ্ী তাঁর আক্রমণের লক্ষ্য হতে পারে না। পরাধীন ভারতে স্বাধীনচেতন। জাগানোর এই একটি মাত্র পথই উন্মুক্ত ছিল, ইন্দ্রনাথ তা বিস্মত হয়েছিলেন তবে “ভারত উদ্ধারের” যে পরিকল্পনার চিত্র এখানে তুলে ধরেছেন লেখক তা আগাগোড়াই হাশ্যকর “আর্য-কার্ধকরী” সভার সদস্যবুন্দ দেশোদ্ধারের মহান উদ্দেশ্যের উদ্দশিপন। জাগিয়ে তোলেন বটে কিন্তু স্বার্থ ব্যাহত হলেই তাঁদের সমস্ত শুভচেতন। নির্বাপিত হয়। সভার কোন এক সদস্য আক্ষেপ করেছে,

তুমিও হবে না রাজা, আমিও হব না, আমাদের ইহজন্ম প্রজাতাবে যাবে

তবে কেন নিজ পায়ে মারিব কুঠার ? রাজার কল্যাশ কেন না চিন্তিব সদা?

এখানে সাধারণ লোকের দেশচিস্তা স্বার্থচিত্তার ঘন প্রদর্শন করেছেন ইন্দ্রনাঁথ | “আনন্দমঠে' মহান আদর্শের চিত্র অঙ্কন করে বঙ্কিমচন্দ্র প্রাণবিসর্জনকেও তুচ্ছ বলে মনে করেছিলেন, “প্রাণ তুচ্ছ, সকলেই ত্যাগ করিতে পারে ।” সেখানে বঙ্কিম আদর্শের কথাই প্রচার করেছিলেন,সে আদর্শের সঙ্গে বাস্তবের যোগাযোগ ছিল অতি ক্ষীণ ইন্দ্রনাথ অতি সাধারণ লোকের চিন্তাধারার কথাই অকপটে ব্যক্ষ করেছেন। স্বার্থচিস্তায় পীড়িত এই বাঙ্গালীর চরিত্র শৌধনের অন্য হন্দ্রনাথ যে ব্যঙ্গের আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন, তাতে পরবর্তীকালে কিছু সফল লাভ হয়েছিল, বিঃলন্দেহে কথ। বলা বায়। |

৬৮২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

“ভারত উদ্ধারের” নায়ক বিপিন তার বন্ধু কামিনীকুমার শেষ পর্যন্ত ভারত

উদ্ধারের স্থপরিকল্পনা করেছে_ পাঁরি যদি রণে পরাঁভবি দেশবৈরী মৌকরুসী ছশমন ইংরেজ-কবু'র কুলে, যশো-বৈজয়স্তী উড়াইতে ফরফরি ভারত আকাশে, তবে সে সফল জন্ম 1". উচ্ে ডাকি নিপ্রাগত ভারত সন্তানে জাগাও হে বঙ্গবাসি, জাগুক সকলে, উঠ সবে মুখ ধোঁও, পর নিজ বেশ, ভারত উদ্ধারে মন করহ নিবেশ

দেশবৈরী বিভাড়নের জন্য বিপিন সম্প্রদায়ের বিশাল পরিকল্পনার চিত্রটিতে যথার্থ হাস্যরস হৃষ্টি হয়েছে। ক্য়েজখালের জলে ছাতু ফেলে জাহাঁজ চলাচলের পথরোধ করার পরিকল্পনাও এর অন্তর্গত ছিল। অবশেষে চিৎপুরের খাল থেকে ফোর্ট উইলিয়ম পর্যন্ত মন্ত ক্ুড়ঙ্ষের মুখে প্রচুর লঙ্কা সংগ্রহ করে লঙ্কার সঁপে পট্‌কার সলতে লাগিয়ে দেওয়া হলো বাঁজালী বীরের বটি হস্তে অগ্রসর হল, কেউ আবার বালিগোলা জল পিচকিরি করে চোখে মুখে ছিটিয়ে দিয়ে ইংরাঁজবিতাড়নের চেষ্টা করে অবশেষে তারা,

কাসাইল শত্রদলে, ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ ফ্যাচে হাঁচাইল ভয়ঙ্কর, কাতরিল সবে ভারতউদ্ধার পর্ব শেষ হল। স্বাধীন বাংল! এবে, স্বাধীন ভারত, ভারতের জয় শব্ধ উঠিল চৌদিকে, বাঙ্গালী ভারত-প্রাণ হইল বিখ্যাত, ভারত উদ্ধার যবে হৈল হেন মতে এই ব্যঙ্গকাব্যে ইন্দ্রনাথের চূড়াস্তশক্তি প্রকাশ পেয়েছে 'বলে মনে কর যেতে পারে। ভারত উদ্ধারের অবাস্তব কল্পন। নিয়ে 'রঙ্গরস হৃষ্টি করার মধ্যেও লেখকের দেশপ্রেমেরই পরিচয় পাই আমর ভারতউদ্ধারের হাশ্যকর পরিকল্পনার চিত্র দেখে বিষয়টির গুরুত্ব সম্বন্ধে কেউ ' হয়ত সচেতন হবেন, আশ! বেখফের ছিল। ইন্্নাথের' প্রবন্রচনাতেও হাঁশ্যরসের অভ্যন্তরে তার স্থগভীর দেশপ্রেমের পরিচয়

ব্যঙাত্বক রচন! ৮৬

পাওয়া যার। পরাধীন ভারতবাসীর মনে কর্দমুখর উদ্দীপন! জাগিয়ে তোলাই ইন্দ্রনাথের বাসনা ছিল।

ইন্্রনাথের স্বদেশপ্রেম সম্পকিত ধারণার পরিচয় পেতে হলে 'বঙ্গবাসীতে' [ রা আষাঢ়, ১৩১৩ সাল ] প্রকাশিত শ্যদেশী, শীর্ষক প্রবন্ধটির সাহায্য নেওয়া! দরকার এখানেও ইন্দ্রনাথের ধারণা সমালোচনা ত্বক আলোচনার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। তথাকথিত শ্বদেশীদের ইন্দ্রনাথ নানা দোষে অভিযুক্ত করেছেন বথার্থ ্বদেশপ্রেম, ভারতের জলবাষু মাটির সঙ্গে একীভূত হওয়া দরকার-_-এ ছিল তাঁর অভিমত ইন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে সে যুগের স্বদেশীয়ানায় বিদেশী প্রভাব অত্যন্ত প্রকট এই বিদেশীয়ানার তীত্র সমালোচনা করে ইন্দ্রনাথ বঙ্কিমচন্ত্রের 'বন্দেমাতরম” সলীতেরও সমালোচনা করেছেন। অবশ্য জাতীয় সমালোচনায় ইন্দ্রনাথের নির্ভেজাল, গৌঁড়ামিই প্রকাশ পেয়েছে তাও প্রসঙ্গত স্বীকার করতে হবে ইন্দ্রনাথ বলেছেন,_

"উপস্থিত স্বদেশী আসল স্বদেশী নহে, ইহা নকল স্বদেশী, ইহা প্ররুত স্বদেশী নহে, ইহা বিকৃত বিদেশী তাহাই, যদি না হইবে, তবে জয়োচ্চারণের এত বাক্য থাকিতে, আমাদের সহত্র সহস্র মন্ত্র থাকিতে বন্দেমীতরং বলিয়া! গগন ফাঁটাইবাঁর চেষ্টা করিতে হইবে কেন? জয় জনার্দন” 'জয় জগদগ্বা', “জয় ভবানী" ইত্যাদি ধর্মসচক জয়ধ্বনি. কাহারও মনে 'ধরে না কেন? উপন্যাসের বন্দেমাতরং এত ভাল লাগে কেন 1”

এই সমালোচনার আলোকে ইন্দ্রনাথের দেশচর্চার স্বরূপ নির্ণাত হতে পারে। বঙ্কিমচন্দ্র বন্দেমাতরমূ সঙ্গীতের মাধ্যমে যে ভাবান্দোলন সৃজন করেছিলেন ইন্দ্রনাথ' তার প্রত অর্থ নির্ণয় করতে পারেননি ধর্মচেতনাকে বাদ দিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র দেশচেতনকে প্রতিষ্ঠা করতে চাননি, দেশচেতনার মধ্যেই ধর্মচেতনা সঞ্চার করেছিলেন ইন্দ্রনাথ শুধু রক্ষণশীল সমালোচিকমাত্র, তার দেশচিন্তায় বঙ্ধিমচন্দ্রের গভীরতা নেই।

তবে হইন্দ্রনাথের স্বদেশচিন্তায় আন্তরিকতার অভাব ছিল না। তিনি ব্যাঁপক" কোনো পরিকল্পনা করতে পারেননি কিন্তু আপন অন্তরের সীমিত দেশপ্রেমে মগ্ন, ছিলেন। দেশপ্রেমের মধ্যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার স্থান নেই কিন্তু বর্তমানের' ক্রটিটুকু রোধ করার মত ক্ষমতা আছে ইন্ত্রনাঁথ প্রবহ্ধেই বলেছেন,

“আমার যদি ক্ষমত] থাঁকিত, তাহ! হইলে আমি অন্যভাবে স্বদেশী চালাইতাম ।৮

কিন্তু এই “অস্যভাব'-টির স্বরূপ নির্ণয় কর! কঠিন কারণ তার সমশ্র রচনার কোথাও একটি বিশিষ্ট দেশপ্রেমের পরিকল্পনা নেই অথচ দেশের প্রতি অগাধপ্রেম তার রচনার' মূল্য বাঁড়িয়েছে নিঃসন্দেহে তিনি যে স্বদেশীভাব নিবন্ধ দেশপ্রেমের কথা বলেছেন: --তারও প্রকৃত অর্থ নির্ণয় করতে পারেননি, তরু সমালোচন! করেছেন তীব্র ভাবে ।'

৬৮৪ উনবিংশ শতাববীর বাংলা সাহিত্যে শ্বদেশপ্রেম

“আমার মনে হয় যে, উপস্থিত শ্বদেশীটি “পেত্রিযটিজমের' নকল স্বদেশী ধাতুটুক্ বিদেশী কিন্তু কেমিকেল সোনায় সত্যিকারের কাজ হয় কি? যিনি কেমিকেল পরিয়া বাহার দেন, তিনি মনে মনে কখনই ভুলিতে পারেন না যে, আমার কাছে খাটি মাল নাই।-"'আমাদের স্বধর্ম ছাড়িয়! “স্বদেশী” হওয়া আর খাঁটি সোনা ফেলিয়! কেমিকেল কেনা, একই কথা ।”

কিস্তু “পেট্রিয়টিজম' যে বিদেশী ভাবেরই অস্কুভব--যা আমাদের চিত্তে একটি স্থায়ী ভাবে পরিণত হয়েছিল একথাটি ইন্দ্রনাথ কোথাও বলেননি বঞ্চিমচন্দ্ স্বদেশগ্রীতি প্রবন্ধে বিলাতি 956000510-এর সমালোচনা করে আমাদের 'দেশাত্মবোধের স্বরূপ নির্ণয় করেছিলেন, ইন্দ্রনাথ সে বিষয়েও নীরব। কিন্তু স্বদেশপ্রেমে বিদেশীভাবের সমালোচনায় তিনি অকুণ্ঠ। একজাতের হ্বদেশী আতন্তরিকতাধিহীন দেশসেবা করে আত্মপ্রচার চালাচ্ছেন ইন্দ্রনাথ তাদের প্রতিও ইঙ্গিত করেছেন,_

“ম্বদেশকে ইহারা কোনও অংশেই বড় বলিয়! মনে করেন না, বরং ইহারা মনে করেন যে, এদেশ সর্বাংশেই দীনহীন কাঙ্গাল এবং কৃপারই পাত্র; আমাদের দেশ বলিয়! দেশকে আমরা কৃপা করিব, কৃপা করিয়া দেশটাকে স্বর্গে তুলিয়া! দিব, আমাদের কীতিতে এদেশের মুখ উজ্দ্রল হইবে, দেশের মাঝে এদেশ মুখ তুলিয়া চাহিতে পারিবে, চাহিয়া অনন্তকাল পর্যস্ত আমাদিগকে ধন্ত ধন্য করিতে থাকিবে বিদেশের উপরই ইহাদের ভক্তি ষোল আনা, এই স্বদেশকে বিদেশ করিয়া তুলিতে পারিলেই বুঝি, ইহারা কৃতকৃতার্থ হইবেন

ইন্দ্রনাথের স্বদেশচিত্তায় এই জাতীয় সমালোচনার আধিক্যই চোখে পড়ে। স্বদেশপ্রেমের যে বিকার সেযুগের সাধারণ বাঙ্গালীর চরিত্রে দেখা গেছে ইন্্রনাথ তারই সমালোচনা করেছেন। অনেক বড় ভাবাদর্শ প্রচার করার যৌক্তিকতা আছে দিশ্চয়ই-কিন্ত বিক্ৃতবুদ্ধি বাঙ্গালীকে সেই আদর্শের পথে পরিচালনার জন্য জাতীয় সমালোচনারও প্রয়োজন রয়েছে ইন্দ্রনাথ সমগ্র জাতির অধঃপতনের অন্তই 'বেদনাবোধ করেছিলেন, জাতীয় সমালোচনার মূলে লেখকের সেই মনোভাবের পরিচয় পেয়েছি

ক্ষুদিরাম" নামক ক্ষুদ্র গালগঞ্পজাতীয় রচনার শেষাঁংশে ইন্দ্রনাথের সমালোচনার একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত উদ্ধৃত করা যায়। নিবারণ নামে কোন বজযুবকের দৃিতে সে স্ুগের দেশপ্রেমের সমালোচনাটি এই,

শ্যতদিন বামুন ঠাকুর আছেন, ততদিন পলিত, গলিত, পরপদদলিত ' ভারততুষির ০১ 'আঁশ। যাহা আছে তাহা নিবারণকে লইয়া নিবারণ

বাঙ্গাত্বক রচণন। ৬৮৫

জানে যে ভারতবর্ষের বর্তমান অবস্থা নিতান্ত শোচনীয় কেননা ভারতবর্ষের আবাল- বৃদ্ব-বনিতা সকলেই ইংরেজী শিখিতে পারে নাই, সকল লোকেরই একটি একটি বড় চাকরি নাই, সকলে সভা করিতে পারে না, বক্তৃতা করিতে পারে না, প্রবন্ধ লিখিতে পারে না, আজিও অনেকে ধুতি ব্যবহার করে, খাঁগ্াখাছ্ের বিচার করে, হিমু মুসলমানে প্রভেদ দেখে, লঘুগডরু জ্ঞান করে নিবারণ ইহাও জানে যে, ইংরাজের অধীন বলগিয়াই ভারতবর্ষের এই দুর্গতি সর্বাপেক্ষা গুরুতর কথ নিবারণ জানে যে, উত্তম চোখা চোঁখা গুটিকতক প্রবন্ধ যদি সংবাদপত্রে বাহির হয়, তাহা হইলেই ইংরেজ যে সাঁতহাজার ক্রোশ অন্তর হইতে আসিয়া এদেশে আধিপত্য করিতেছে, সেই দিনই সেই সাতহাজার ক্রোশ অন্তরে ইংরেজকে পলাইতে হয় ।”

এখানে দেখি ইন্দ্রনাথের স্বদেশপ্রেমের অনুভূতিটি যতই আন্তরিক হোক ন৷ কেন, সেযুগের স্বদেশীসাহিত্যের প্রতি কটাক্ষপাত না করে তিনি পারেননি! ইন্দ্রনাথ অবশ্য জানতেন যে এই স্বদেশাত্মক রচনাবলীই পরবর্তীকালে স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্মদান করেছে পরাধীন জাতির বাহুবল প্রদর্শনের হযোগ নেই, _-বাকাবলই তার একমাত্র শক্তি ইন্দ্রনাথও স্বদেশীসাহিত্যের রচয়িতা, কিন্তু স্বদেশীসাহিত্যের প্রতি তার বিরূপতার কারণ ছিল সেযুগের অল্প শক্তিমান লেখকও বাহবা পাবার আশায় দুচার লাইন স্বদেশী সাহিত্য রচনার লোভ সংবরণ করতে পারেননি | কিন্তু উৎকৃষ্ট স্বদেশপ্রেমাত্রক রচনার শক্তি সম্পর্কে ইন্দ্রনাথ নিশ্চয়ই সচেতন ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর “বাহুবল বাক্যবল' প্রবন্ধটিণও বিষয়ে মূল্যবান আলোচন] করেছেন,

দ্বস্ততঃ বাহুবল অপেক্ষা বাক্যবল সর্বাংশে শ্রেষ্ঠ এপর্যন্ত বাছুবলে পৃথিবীর কেবল অবনতিই সাধন করিয়াছে-_যাহা কিছু উন্নতি ঘটিয়াছে, তাহা বাক্যবলে। সভ্যতার যাঁহা কিছু উন্নতি ঘটিয়াছে তাহা বাক্যবলে সমাজনীতি, রাজনীতি, ধর্মনীতি, সাহিত্য, বিজ্ঞান, শিল্প যাহারই উন্নতি ঘটিয়াছে, তাহা বাক্যবলে। যিনি বক্তা, যিনি কবি, যিনি লেখক,__দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, নীতিবেত্া, ধর্মবেতা, সকলেই বাক্যবলে বলী |”

ইন্্রনাথও স্বদেশী সাহিত্য রচনা! করে পরোক্ষভাবে স্বদেশচিস্তাই প্রচার করেছিলেন। ক্ষুদিরাম” নামক গালগল্প রচনা করতে বসেও দেশচিন্তা বিস্মৃত হওয়। ইন্দ্রনাথের পক্ষে সম্ভব হয়নি তার সমস্ত রচনাই দেশচিস্তায় আকীর্ণ। কোন না কোন ভাবে সমাজের দুর্নীতিকে আঘাত করার প্রবণতা্টিই স্বদেশপ্রেমিকের | তবে প্রগতিমাত্রকেই যিনি সমালোচনা করেন, তাঁর অন্থদার দৃষ্টিভঙ্গিটিও উল্লেখযোগ্য ্রা্মমতের প্রতি বিদ্বেষপৌধণ এবং তীব্রভাবে ব্রাহ্ম মতাবলঘীদের আক্রমণ ইন্দ্রনাথের

৬৮৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেষ

অন্থদার চিন্তাধারার পরিচায়ক | অবশ্য ব্যঙ্গশিল্পীর পক্ষে রক্ষণশীলতার প্রাতি পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন একটি সাধারণ ঘটনা | কোন সমালোচক বলেছেন, |

1175 580050, 16115 0006, 01210050002 5019961261৩, 6০ ০০ 05108 1015 00 813016 00 005 10010020005 ০% 0102 2902101151720 01067). 2130 12 3০ 829 0156 080. 01206 52:011056 00110521]5 1 50502000088. 19160 209301165 816 196 আা০এ] ০০ ০21160 ০01056152056,৯9

ইন্দ্রনাথকে সেদিক থেকে খুব বেশী দোষ দেওয়া যায় না। ব্যশিল্পীর প্রবণতাই তার রচনায় প্রতিফলিত হয়েছিল। বঙ্কিমচন্দ্রকেও ধরণের অভিযোগ করা হয়, তার ব্রাহ্মমতের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন কিংব৷ বিধবাবিবাহের প্রতি আস্থার অভাব ছিল বলে। কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্রে রক্ষণশীলতার মধ্যেও বিচারবুদ্ধি বা যুদ্তহীনতার অভাব ছিল না। বস্ততঃ ইন্দ্রনাথ যেখানে নিছক 5285 বঙ্কিমচন্দ্র সেখানে জীবনশিল্পী বঙ্কিমচন্দ্রের ব্যঙ্গীত্বক রচনার গঠনাত্মক ভঙ্গি আমাদের মুগ্ধ করে। বাঙ্গালীর জাতীয়চরিত্র শোঁধনের ষে প্রচেষ্টা বহ্কিমচন্দ্রের রচনার সম্পদ--ইন্দ্রনাথও তারই দ্বারা প্রভাবিত

ইন্দ্রনাথের ব্যজরচন। সম্পর্কে শ্রীপাচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের উক্তিটি তাঁর রচনার মূল্য নির্ণয়ে সহায়তা করবে,

*ইন্দ্রনাথের গ্লেষ ব্যঙ্গ উদ্দেশ্য শুন্য ছিল না। কেবল হাঁসাইবার জন্য তিনি হাঁসাইতেন না। তাহার হাসির নিম়স্তরে হতাশার দীর্ঘশ্বাস যেন ফুটিয়া উঠিত |". দেশের ছুঃখ সমাজের অধোগতি দেখিয়া! রোদনে কুলাইত ন1 বলিয়াই তিনি হাঁসিতেন [ ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, পাঁচকড়ি রচনাবলী ]

ইন্দ্রনাথের দেশপ্রেমের পরিচয় অনুসন্ধানের জন্য তাঁর লেখা “ভারতউদ্ধার কাব্য ক্ষুদিরাম” গালগল্পের সাহায্য নিয়েছি প্রবন্ধাকারে লেখ! তাঁর বিপুল রচনা, “চু ঠাকুর গ্রন্থাবলীতে”ও স্বদেশপ্রেমিক ইন্দ্রনাথকে সহজেই আবিষ্কার করা যাঁয়। পাঁচুঠাক্ুর পর্যায়ের রচনাবলী তিনটি খণ্ডে [ ১৮৮৪---১৮৮৫ ] খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। প্রথমে 'সাধারনী' পত্রিকায় পরে “পঞ্চানন্দ' পত্রিকায় প্রকাশিত এই রচনাবলী ইন্দ্রনাথের সমগ্র সৃষ্টির একটি বৃহৎ অংশ। এই প্রবন্ধ সমষ্টিতে ভিন্ন ভিন্ন বিষয় অবলম্বনে ইন্দ্রনাথ স্বত্ফুর্তভাবে আলোচন। করেছেন

পাচু ঠাকুরের রচনার উদ্দেশ্টটিও বণিত হয়েছে মুখপাতে--“রহস্য এবং রসিকতা এক পদার্থ নহে। আমি সরস রহস্য লিখিতে পাঁরিয়াছি কি না, বলিতে পারি না।

10040, 7৮223,

ব্ঙ্গাত্বক রচনা ৬৮৭

কিন্তু শুধু রসিকতার অনুরোধে কিছু লিখি নাই, ইহা যেন পাঠক মহাশয়দের-_ এখন আবার বলিতে হয়--পাঠিকা মহাশয়াদের মনে থাকে বাংলায় এখন হাসিবার কিছ! হাঁসাইবার দিন আইসে নাই তবুও যে লোঁকে হাসে সে আমার কপাল গুণে এবং হাঁসকদের বুদ্ধির অনুগ্রহে ।”

নিছক রসিকতা শক্তিমান ব্যঙগশিল্পীর উদ্দেশ্য হতে পারে না ইন্দ্রনাথের উদ্দেশ্য মহৎ_-কুতরাঁং পাঁচ ঠাকুরের রচনামূল্য নির্ধারণের অন্যতম মানদণ্ড হবে লেখকের এই স্বীকারোক্তি অবশ্ব "পঞ্চানন্দ” পত্রিকার আবির্তীব প্রসঙ্গে তিনি 'তামাস। নয়” প্রবন্ধে বলেছেন,__

“ষড়দর্শনের অভাব দূরীকরণ জন্য “বঙ্গদর্শন”, “আর্য্যদর্শন”, শ্যাম দেশোত্তব যমজ ভ্রাতার ষ্তায় কিঞ্চিৎ অগ্রপশ্চাৎ ধরাতলে অবতীর্ণ হইলেন এখন ত্াহাদেরও অস্ভিম দশা মুখব্যাদ1ন করেন বটে, কিন্তু সে খাঁবি খাইবার জন্য-_-আর কি নীরব থাকিবার সময় 1 অতএব উঠ বন্ধুগণ উঠ! জাগ ভাঁরতের হিতত্রত, জাগো ।'

পঞ্চানন্দ*কে বঙ্গদর্শন কিম্বা 'আর্্যদর্শনের” সমগোত্রীয় বলে দাবী করেছেন লেখক হাশ্যরস হৃজন পরোক্ষে সমাজসমালোচিনা করে ইন্দ্রনাথ বঙ্কিমচন্দ্রের ব্যঙ্গ রচনারই অনুশীলন করেছেন বল! যেতে পারে | বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্যাদর্শ স্বদেশপ্রেম ইন্জরনীথের রচনায় অনুতৃত হয়েছে তবে বঙ্কিমচন্দ্রের রচনাকে প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষে সমালোচনা করেছেন ইন্দ্রনাথ |

প্রাচীনত্বের গর্বকে ইন্দ্রনাথ তীব্র ব্যঙ্গাকারে পরিবেশন করেছেন,

"এখনকার ভারত, আর তখনকার ভারত ! মনে করিলেই দীর্ঘ নিশ্বাস না ফেলে এমন একটি বীরও জুওলজিক্যাল গার্ডেনে নাই এখন যে ভারত উন্নতির পথে অগ্রসর হইতে পাইতেছে না, সে কেবল সেই প্রাচীন ছু:খের স্বতি জন্য কাদ। চলাহয় বাটার বাহির হওয়া দায়, হুতরা ভারত কেমন করিয়৷ অগ্রসর হইবে ?” 1 প্রাচীন বাণিজ্য ]

প্রাচীনত্বের গর্ব নিয়ে স্ফীত হওয়াকেই চূড়ান্ত কর্তব্য বলে মনে করে নিশ্চিন্ত হয়ে শকাটা বিপজ্জনক এই মোহও ভবিষ্যতের যথার্থ কর্তব্য নির্ণয়ে সাহাঁষ্য করবে না। দেশগ্রীতির নামে এই অকারণ ভাববিলাস সে যুগের বাঙ্গীলীকে আরও নিক্কিয় মরে তুলেছিল, ইন্দ্রনাথ তাঁরই প্রতিবাদ করেছেন। ছাড়াও বক্তৃতার আধিক্যে রান্তিবোধ করেছেন লেখক কথার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছিল সেষুগে, কিন্তু যথার্থ চাঙ্ছের: কোন উদ্ভম দেখা যায়নি। বন্তৃতাপ্রিয় বাঙ্গালীর উপরেও আঘাত হনেছেন লেখক,_

“কে বলিবে বক্তা লাভজনক নয়? যে বাঙ্গালী, ইংরেজী ভাষায় বন্তৃতা করে,

৬৮৮ উনবিংশ শতাবীর বাংল। সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

অথচ “দেশের ছিতের জন্য আমার জীবন ধারণ” কথায় বা ব্যবহারে এই ভাব প্রকাশ করে, সেই প্রকৃত সারগ্রাহী ব্যক্তি দুর্পভ মানব জন্মে তাহার ন্যায় মানব ততোধিক স্ছুর্ণভ | যাহাকে বলিতেছি, সে আমার মনের ভাব জীনিতে পারিল না, যাহার হইয়া বলিতেছি, সে আঁমার কথার বিন্দুবিসর্গও বুঝিতে পারিল না বত্তৃতার ইহা অপেক্ষা বেশী বুজরুকী আর কি হইতে পারে বলো ?”

ইন্দ্রনাথের দেশগ্রীতি এমনি আন্তরিক অকপট ছিল দেশপ্রাণতা ইন্দ্রনাথের বহু প্রবন্ধের মূল্য বাঁড়িয়েছে। আলোচ্য প্রবন্ধের অ্ভাত্র ইংরেজ লিখিত ইতিহাসের প্রতি ইন্ত্রনাথের ব্যঙ্গোক্তি লক্ষণীয়,

"ভারতবর্ষ পূর্ব পূর্বকালে নিতান্ত অসভ্য ছিল, একথায় যে বিশ্বাস : করে না, সে ইংরাজী ইতিহাস পড়ে নাই | ইংলও তাহাকে সভ্য করিয়াছেন, ইহাও নিঃসংশয় ।*-- বঙ্কিমচন্দ্রও “বিবিধ প্রবন্ধে' বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন

ভারতবাসীর বীরত্বের বিষয়ে ইন্রনাথ উচ্চবাচ্য করেননি বটে কিন্তু ইংরেজের সঙ্গে যুদ্ধে কাবুলীরা যে বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিল ইন্দ্রনাথ খুব স্থন্দরভাবে তা! ব্যাখ্যা করেছেন। “কাবুলস্থ সংবাদদাতার পত্র” প্রবন্ধটিতে ইন্দ্রনীথের রসিকতা সংবাদদাতার মন্তব্যের ওপরে 3 সংবাঁদদাতার পরামর্শ,

“এমন করিয়া মরা অপেক্ষা যুদ্ধে ক্ষান্ত হইয়া ইংরাজের বশ্যত] স্বীকার করাই উচিত। তাহাতে সে অলভ্য মূর্খ আমাকে কতকগুল৷ কটুকাটব্য বলিয়া শেষে চিৎকার করিয়। উঠিল- কাবুল পরাধীন হইতে পারে, কিন্তু তাই বলিয়া কাবুলী কখনও হইবে না; যেমন ঘূর্থ তেমনি শান্তি) পাষণ্ডের ফাঁসি হইল ।৮

ইন্্নাথের রসিকতার সারার্থটি পরাধীন ভারতবাসীর চরিত্রে আরোপ করলেই যুল উদ্দেশ্য স্পষ্ট হবে। ইন্দ্রনাথ পরাধীন জাতির দাসমনোভাবের অন্থকৃলে মন্তব্য করেছেন বটে কিন্ত স্বদেশপ্রাণতার পরিচয় প্রবন্ধের শেষাঁংশে পাওয়া যাবে

“সাহেব আমাকে জিজ্ঞাসা! করেন যে, একটি স্বাধীন জাতিকে বশীভূত করিতে, চেষ্টা করা অন্কাঁয় বলিয়া যে সকলে এত গোলযোগ করিতেছে, তাহাতে তোমার মত কি? আমি বলিলাম,-যাহারা এমন কথ! বলে তাহারা বোকা, ইংরেজের মত স্বাধীনতাপ্রিয় জাতি জগতে আর লাই, হুতরাং ষেখাঁনে স্বাধীনতা পাইবে, ছলে হউক, বলে হউক, কৌশলে হউক, তাহা আত্মসাৎ করিবার বত্ব করিবে, ইহাতে দোষ কি ? বরং তাহা না করিলে স্বাধীনতাপ্রিয়তার প্রতি সনোহ জন্মিতে পাঁরে

শাসক ইংরেজের প্রশংসায় পঞ্চানন যখন উন্মুখ হয়ে ওঠেন,--তার অন্তনিহিভ বক্তব্য তখন চিন্তাশীল, স্বদেশসচেতন বাঙ্গালীকে ভাবিয়ে তোলে এখানেই ইন্দ্রনাখের সার্থকতা

ব্ঙ্গাত্মক রচন! ৬৮৯

ভীত্র সমাঁজসচেতনতা৷ সাময়িকতার প্রতি কটীক্ষপাত ইন্দ্রনাথের শ্বদেশচর্চার প্রধান অবলম্বন | “নেটিব সিভিল সাঁবিস' কিংবা “শোঁকশেল' প্রবন্ধে ইন্্রনাথ সাময়িক অবস্থার সমালোচনা করেছেন। ইংরাজের কৃপাদত্ত অবস্থাটিতে অসহায় বাঙ্গালীর জীবন যে ছুবিসহ হয়ে উঠেছিল-_শিক্ষিত বাঙ্গালীর। সে বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠেছিলেন। “নেটিভ সিবিল সাঁবিস, প্রবন্ধে ইন্দ্রনাথের সমালোচনাঁটি হাস্যরসের আধারে স্থাপিত-_“ইহাঁও নিয়ম করা যাইতেছে যে, সে সকল ব্যক্তি কাঁল৷ হইয়া গৌরাঙ্গ প্রাপ্ত হইবেক, তাহার] “নেটিব' রহিল অতএব দরবারে কিন্বা এজলাসে কি প্রকাশ্বস্থানে জুতা পায়ে দিয়া উপস্থিত হইতে পারিবেক না-.... ইহাও নিয় হইতেছে যে, যে সামাজিক ব্যবহারে ইহারা কদাচ সাহেবদের সহিত না মিশ্রিত হয় বা হইবার উপক্রম বা চেষ্টা করে; ফলতঃ যদি ইহার। কালা আদমিদের সহিত সামাজিকতা করে, তাহা হইলে “সিবিল সাঁবিস” হইতে আকছর খারিজ করা যাইবেক 1”

এমন বেদনাদায়ক পরিস্থিতি সম্বন্ধে সচেতনতার অভাব অন্ততঃ স্বদেশপ্রেমী সাহিত্যিকের ছিল না, ইন্দ্রনাথের রচনাই তার প্রমাণ |

বাংলাভাষাপ্রীতি প্রথম যুগের রচনায় হুলভ হলেও ইন্দ্রনাথের যুগে বাংলাভাষার মর্যাদা কিছুমাত্র বাড়েনি অবশ্য সংবাদপত্র লেখক সাহিত্যিকের কলমে বাংলা-ভাষা সমৃদ্ধ হলেও একশ্রেনীর ইংরেজীশিক্ষিত ব্যক্তি বাংলাভাষার প্রতি সর্ধদাই উপেক্ষা প্রদর্শন করতেন। যে কোন স্বদেশপ্রাণ ব্যক্তির কাছে আচরণ নিন্দিত হবেই। বঙ্কিমচন্দ্র “লোকরহস্যের কয়েকটি প্রবন্ধে মাতৃভাষাগ্রীতি প্রদর্শন করেছেন ইন্দ্রনাথও মাতৃভাষাপ্রেমিক বাংলা ভাষার যোগ্য সমাদর প্রতিষ্ঠার জন্তই ইন্্রনাথ রসিকতা করে বাংলা ভাষার অযোগ্যতা প্রমাণ করেছেন “বাংলা ভাষা উঠাইয়। দিতে আপত্তি আছে*-_এই শিরোনামে প্রবন্ধটি রচন। করেই ইন্দ্রনাথ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। বাংলা ভাষার প্রতিঘন্বী ভাষ। হিসেবে ইংরেজীর সঙ্গে বাংলার তুলনা করেছেন ইন্্রনাথ, সর্বত্রই তিনি ইংরাঁজীর প্রশংস1 করে বাংলার দোষ কীর্তন করেছেন | বলা বাহুল্য, অন্গুরাগের ভাষাটি বর্জন করে প্রবন্ধে তিনি যে রসসঞ্ার করেছেন ব্যঙ্গশিক্পীর পক্ষেই তা সম্ভব ইন্দ্রনীথ বলেছেন,

*এখন যে কারণে বঙ্গবাসীর হিতের কথা হইলে, কোন একট! দরকারী কথা হইলেই ইংরাজীতে বাদ, প্রতিবাদ, বিতর্ক, বিতগ্ডা, বিচার, বক্তৃতা কর! ঘায়, বাঙ্গাল? ভাষা উঠাইয়া দিলেও সে কারণের বিনাশ হইতেছে না। সাধারণ বাঙ্গালী যাহাতে না বুঝিতে পারে তাহাই উদ্দেশ্য, তা বাংলা উঠাইয়। দিলেই যে সকলেই ইংরাজীতে দখলীম্বত্ব বিশিষ্ট হইয়া উঠিবে, মারুন আর কাটুন এমন বিশ্বাস আমার

৪৪

৬৯০ উনবিংশ শতাববীর:বাংলা সাহিত্যে ঘদেশপ্রেম

হয়না। লোকে এখনও বোঝে না, তখনও বুঝিবে না এমত স্থলে সাম়াস্ত ব্যক্তিদের যৎসামান্য ভাঁববিনিময়ের পথে কাঁটা দেওয়াটা কি খুব স্বিবেচনার কাজ হইবে ?” [ বাঙ্গাল! ভাষ! উঠাইয়। দিতে আপতি আছে ] শিক্ষিত ব্যক্তিদের ইংরেজীপ্রীতির সমালোচনাও করেছেন ইন্দ্রনাথ, শিক্ষিত সম্প্রদায়ের এই অশিক্ষিতস্থলভ মনোভাবের কথাই বলেছেন ইন্দ্রনাথ,

“যাহারা ধনবান, জ্ঞানবন, বিদ্বান, স্বদেশবৎসল, বাক্যস্বচ্ছল, তাহারা এখনও বাংল শেখেন না, তখনও শিখিবেন না। স্থতরাং তাহাদের কোন কষ্ট নাই। তবে জোর করিয়া ভাষাটি উঠাইয়। দিয়া কাজ কি?

"০০০৯ কেহ কেহ বলেন যে বাংলায় শিখিবার কোনও কথ৷ নাই, পড়িবার কোনও পুস্তক নাই, তবে এমন ভাষা থাকিতে দিব কেন?

জাতীয় প্রত্যক্ষ ব্যঙ্গ নিশ্চয়ই ইংরেজ প্রেমিক সম্প্রদায়ের চৈতন্য সম্পাদনে সক্ষম | ইন্ত্রনাথ মেকির শক্র বলে প্রশংসিত হয়েছিলেন 7 ব্যঙ্গশিল্পী কোন অসঙ্গত আচরণ ক্ষম] করেন না, ব্যঙ্গের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে তিনি তাদের চেতনা সম্পাদন করার চেষ্ট। করেন বঙ্কিমচন্দ্রের ব্যঙ্গরচন্নায় আমর]! ঠিক এজাতীয় আদর্শ লক্ষ্য করেছি। ইন্দ্রনাথ যে বঙ্কিম প্রভাবিত সে সত্য তাঁর রচনরীতি, বক্তব্য- পরিবেশনে বারবারই ধর] পড়েছে।

বর প্রার্থনা প্রবন্ধটিতে বাঙ্গালীর স্বার্থমগ্ন হুখের চিত্র অংকন করেছেন ইন্দ্রনাথ | এই জড়ত্ব নিশ্চেষ্টতার হাত থেকে জাতিকে উদ্ধার করতে চেয়েছিলেন বলেই খানিকট। কমলাকান্তী ঢংএ ইন্দ্রনাথ বলেছেন,

*তোতাপাখী যাহা পারে না, আমি তাহা করিয়াছি, বিশ্ববিদ্ভালয়ের উপাধিগ্রস্ত হইয়াছি, ওকালতীর যোগ্য হইয়াছি, দয়াময়, আমাকে মোক্তারের ভগিনীপতি, জমিদারের ভাগিনেয়, আমলার শালিপতিভাই, কিম্বা! হাকিমের জামাতা যাহা হউক একটা করিয়া দাও, আমি লোক ভুলাইয় গ্রাসাচ্ছাদনের সংস্থান করিয়৷ লইব। দয়াময়, এখন যে তকৃমা অপেক্ষা হৃখতলার মূল্য বেশী তাহাতে আমার দোষ কি?

আমীকে দেশহিতৈষী করিয়া দাঁও, আমি যাহা ইচ্ছা বকিতে থাকিব, মাতৃভাষায় ্রীমুখ কনুধিত করিব না, তোমার কোনও অনিষ্ট করিব না, আমাকে পাগলাগারদে পাঠাইয়।! দিও ন1।”

এই প্রকাশ্য ব্যজে ইন্দ্রনাথ শিক্ষিত ররর রলরিটারিিডি ত৷ প্রায় তুলনারহিত। আত্মশক্তিহীনতা। শিক্ষিত বাঙ্গালীর চরিত্রের সমস্ত সদৃণ বিনষ্ট করে. ভাকে একটি জড়জীবে পরিণত করেছিল। ইন্না সমগ্র শিক্ষিত

বাঙ্গাক্মক রচন! ৬৯১

বাঙালীর উদ্দেশ্বেই এই বিদ্রপবাশ নিক্ষেপ করেছেন এই আঘাত যে কুফল প্রসব করেছিল স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙ্গালীই তা প্রমাণ করেছিল সেদিন

ইন্্নাথের সাময়িককালে হরেন্্রনাথের স্বদেশপ্রাণতা সমগ্র বঙ্গবাসীর মনপ্রাণ জয় করেছিল। স্বরেন্দ্রনাঁথ যখন কারারুদ্ধ হলেন ইন্দ্রনাথ তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ব্যন্ের আবরণে বাঙ্গালীর কাপুরুষতার ইতিহাসে করেন্দ্রনাথের নির্ভীকতা উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম অতীত ইতিহাসের পটভূমিকায় হুরেন্ত্রনাথের কৃতিত্ব প্রচার করেছেন লেখক ।-_-“যেদিন বেএক্তেয়ার খিলিজি সপ্তদশ অখ্বরোহীমাত্র সম্বল করিয়া, নীরবে নবদ্ধীপ প্রবেশপূর্বক বঙগদেশ করতলস্ব করিল, সেদিন এত গোল না হইবারই কথা কিন্তু পলাশীর যুদ্ধও শুনিয়াছি! [ শুনিয়াছি, কেন না চক্ষু চাহিয়া কষ্ট স্বীকার করিয়া কোনো কিছু দেখা আমার অভ্যাস নহে ; একটু কাঁন লম্বা হইলেই যে কাজ হয়, তাহার জন্য চক্ষুর অপব্যয় করাটা আমাদের মত বিরাট বুদ্ধিমন্ত দেবজাতির লক্ষণ নহে। ] পলাশীর যুদ্ধ শুনিয়াছি এত €গোল হয় নাই ।"..

'--আজি তবে কেন বাপু এমন? কথাটা কি, না, স্থরেন্্র কারাসাৎ হইয়াছে উত্তম হইয়াছে, তাহার এত গোল কেন 1...আমি বেশ ছিলাম, স্রেন্দ্র জেলে গেল, আমাকে একেবারে মাটি করিয়া গেল। সামান্য নরলোকে স্থরেন্দ্র, জেলে গিয়া বিশকোঁটি মানুষের বুকের উপর সিংহাসন পাতিয়া আমীকে টিটকারি করিতেছে ।”

[স্থরেন্জ্ায়ন ]

বাঙ্গালীর গৌরব হুরেন্্রনাথের সঙ্গে লেখক নিজের তুলনা দিয়েছেন, __স্থরেন্-

নাথের কারাবাসের মধ্যে তিনি যে সৌভাগ্যের মহিমা খুজে পেয়েছেন__ অন্য ষে

কোন কৃতিত্বও তার কাছে ম্লান হয়ে গেছে দেশের জন্য কারাবরণের গৌরব যার।

অর্জন করতে পারেননি, ইন্দ্রনীথের ভাষায় তাদের সবই মাটি হয়ে গেছে। ইন্ত্রনাথ ঘোষণা করেছেন;

*্মাঁটি হইবেন না স্বরেন্্রনাথের পরম পুজনীয়া জননী, আর মাটি হইবেন ন! আমাদের জননী জন্মভূমি কারণ উভয়ই স্বর্গাদপি গরীয়সী ।”

এভাবেই দেশের জন্য দুঃখ বরণের মহিমাকে প্রশংসা করে লেখক স্বদেশপ্রেমিকের ছিত্তে উৎসাহ উদ্দীপন] সঞ্চারের চেষ্টা করেছেন

স্বদেশের বন্য হুখবরণের মধ্যে তিনি ষে মহিমা আবিফ্ার করেছেন, বন্তৃতাপ্রিয় স্বদেশপ্রেমিকের চেষ্টার মধ্যে তা তিনি খু'ক্ষে পাননি পমাথ। নাই, বাকি সধই 'আছে*-_ প্রবন্ধে তিনি তাদের নিয়ে ব্যঙ্গ কৃষি করেছেন,

“ভারত মাতার জন্ত চিন্তা, সেতসহজ আগুন নৃম্ব। দিবাদিশি ধূ ধু করিয়!

৬৯২ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

জিতেছে ।".....তোমাদের চিত্তা আর তাহার চিন্তা অনেক তফাৎ বিলাতে ভারতে, পশ্চিমে পুর্বে যত তফাৎ ততই, বরং তাঁহ। হইতেও বেশী তফাৎ তোমাদের চিন্তায় শরীর শুকায়, তত কাজ ফলে না। কিন্তু তাহার চিন্তায়? আর্য ধমনীর ভিতর দিয় মহাবেগে আধ্য শোঁণিত প্রবাহিত করিতে থাকে ।:.-যখন বক্তৃতা রূপে কিম্বা সংবাদপত্রের প্রবন্ধমৃত্তিতে দেখা দেয়, তখনই আগ্নেয়গিরির উদগীর,- একি সামাগ্ চিন্তা 1”

ইন্দ্রনাথের এই মনোভাব তার বহু প্রবন্ধেই প্রতিফলিত হয়েছে দেশাত্মবোধের অশবেগে অসংখ্য রচনার জন্ম হয়েছিল সেযুগে প্রাণহীন শু দেশপ্রেমের স্থুলত গতানুগতিক অনুশীলনের প্রতিক্রিয়া হয়নি বিন্দুমান্র শুধু অসফল রচনায় সাহিত্যজগৎ ভারাক্রান্ত হয়েছে বিশেষ করে যশলোভীর তৃষ্ণা যে সব আচরণে প্রতিফলিত, ইন্্রনাথ তারই সমালোচনা করেছেন দ্ুভিক্ষ [তিরস্কার ] প্রবন্ধে ইন্দ্রনাথ যথার্থই বলেছেন,-_-

“লিখিতে হইলেই লাটসাহেবকে গালাগালি দিতে হয়। তাহাতে শর্মা নারাজ লাটকে যদি গালি দেওয়া না৷ হয়, তাহা হইলে দেশশুদ্ধলোকের বিরুদ্ধাচরণ করা হয়, তবেই একদিকে রাম একদিকে রাবণ, কাহার মন রাখিতে গিয়। কাহার কোপে পড়ি 1..*আমি দেশহিতৈষী, পরোপকার উপজীবিকাধারী, ধামিক ব্যক্তি; যে কাজে একা আমার খোঁপ নাম কিস্বা বাহাছুরি নাই, তাহাতে আমি কেন লিপ্ত হইব ?”

কমলাকান্তের মত পাঁচু ঠাকুরও নিজেকে হান্যাস্পদ করে অপরকে হাম্যরস বিতরণ করেছেন,-_কিন্তু জাতীয় চরিত্রের লক্ষণীয় ক্রটির সমালোচনাও করেছেন একই সঙ্গে

পঞ্চানন্দের চরিত্র বিশ্লেষণ করার উদ্দেশ্যে পাচ ঠাকুর “শ্রী পঞ্চানন্দ? প্রবন্ধ রচনা! করেছেন

«আশ্চর্যের বিষয় এই যে, পঞ্চানন্দ জগতে অদ্বিতীয় নামল হুইয়াও এই কুলপ্রথার অগ্যথাচরখ করেন নাই ধন্ত ইহার স্বদেশতক্তি |

পরপদদলিত, পাঁতশত বৎসরের দাঁসত্বে জর্জরিত, ছুঃখিনী ভারতবর্ষে জগ্থা গ্রহণ করিয়াও ইনি মুহূর্তের জন্তও স্বীয় চিরাভ্যন্ত স্বাধীনতা হারান নাঁই।”

পঞ্চানন্দ নামধারী ইন্দ্রনাথ আত্মপরিচয়েও. স্বদেশহিতৈষী বলেই চিক্িত করেছেন নিজেকে |

* পঞ্চাপন্দের ভায়েরীতে' পঞ্চানিজ নামধারী ইন্্রনাধ প্রশ্ন তুলেছেন।_-

“অনেকে আফাদিগকে ভাষার শক্ত, জাতির শত্রু, মনে ফরিতে পারেন, করিয়া

থাকেন এবং করিবেন, তাহা ছানি কিন্ত ভাঁষা কি-? জাতি কি? ধর্মকি?

ব্ঙ্গাতক রচনা ৬১৩

নীতি কি? দেশকি? কিছুইনহে! শুদ্ধ মায়া, অর্থাৎ রজ্ছুতে সর্পভ্রম মাত্র এখানে লেখক নিজেকে যখোচিত বিশেষণে ভূষিত করেছেন দেশের ছুর্নীতির সমালোচক ঘথার্থ দেশপ্রেমিক হয়েও 'ইন্দ্রনাথ ঘদি নিন্দিত হন,--তবে তার কারণ হবে সমগ্র দেশের স্বাস্থ্যরক্ষার দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা কিন্তু নিন্দাকে জয়মাল্য বলেই গ্রহণ করার সাহস ইন্দ্রনাথের ছিল। কারণ অপ্রতিহত গতিতে নতুন উগ্ভমে তিনি লেখনী চালনা করেছিলেন একই ভঙ্গিতে, রচনারীতি পরিবর্তন করার চেষ্টামাত্রও করেননি ব্যঙ্গশিল্পী ইন্দ্রনাথের অনবদ্য কবিতা। “ভারত ভক্কের গানে”__ ভণও দেশহিতৈষীদের মুখোশ খুলে দেওয়ার চেষ্টা,__ আমি অন্ুরক্ত ভারত-ভক্ত ভারত মাতার সসম্তাঁন [ আমার ] দাঁও তুলে নিশান বীরত্ব আমার যত, মুখ ফুটে বোলবো। কত, ভারত উদ্ধারের ব্রত নিয়ে, থাকি দিনমান শুধু রাত্রিকালে, ইয়ার পেলে, গড়ের মাঠে সথের প্রাণ ! পোড়া ভারতের তরে যখন আমায় শোকে ধরে, ডেকে ডুকে সভা কোরে ইংরেজীতে ছাড়ি তান ছার মাঁতভাষা, কর্মনাশা, সভাস্থলে অপমান |” উদ্ধৃত কবিতাটিতে ইন্দ্রনাথের বহু প্রবন্ধের সাঁরাংশই ব্যক্ত হয়েছে। বক্তৃতাপ্রিয় স্বদেশী, মাতৃভাষানিন্ুক স্বদেশী, ভারতভক্তির উচ্ছীসসর্বস্ব স্বদেশীকে আক্রমণ করতে চান ইন্দ্রনাথ | কিন্তু যথার্থ স্বদেশপ্রেমিকের জন্য সমস্ত শ্রদ্ধাটুকুই তিনি অর্পণ করেন, ক্ছরেন্দ্রায়ন” তার প্রমাণ। ক্ুরেন্দ্রনাথের কারাবাস বিচারের বিরুদ্ধে যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল ইন্দ্রনাথ একটি প্রবন্ধে তা ব্যক্ত করেছেন জাতীয় প্রকাশ্ঠ প্রত 'সেমুগের রচনায় খুব হুলভ ছিল না। অবশ্য অভাত রচনার তঙজি এই প্রর্ি «

৬৯৪ উনবিংশ শতাকীর বাংল! সাহিত্যে ত্বদেশপ্রেম

ছু'একজন যো নির্ভীক দেশপ্রাণ ছিলেন, ইন্্রনাথের সাত্বন। সেটুকুই। 'কার্যকারণ ত্র প্রবন্ধটিতে ইন্দ্রনাথের বিক্ষুন্ধ মনোভাবেরও পরিচয় স্পষ্ট হয়েছে। কার্য কারণ ব্যাখ্যা করেছেন তিনি,

যেহেতু-_ অতএব-_

বিচারকের চক্ষে বর্ণভেদ ধর্মভেদ বা আদালতের অবজ্ঞা করা অপরাধে, জাতিভেদ নাই, সকলেরই প্রতি এক টেলর ফেনিক সাহেবের সম্বন্ধে যে বিচার, সমান বিচার হইয়া থাকে। আদেশ হইয়াছিল, হ্বরেন্্রনাথের সথদ্ধে

সে না হইয়া অগ্তরূপ হইল। যেহেতু-_ অতএব--.

ভারতবর্ষে সাধারণের কোন একট স্ুরেন্দ্রনাথের কারাদণ্ড হওয়াতে হিন্দু মত নাই, রাঁজনীতিঘটিত কথায় শ্রদ্ধা বা মুসলমান, উড়ে পাশি, পাঞ্জাবী আপামী অনুরাগ নাই, স্বজাতীয়তার মূলে ভিন্ন সমস্বরে মনোবেদন। প্রকাশ করিতেছে ভিন্ন জাতি, ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়, ভিন্ন ভিন্ন হাটে, মাঠে, সহুরে, পাড়ার্গায়ে সভা প্রদেশবাঁসীদের কোনও প্রকার একতা বা করিতেছে চাদা করিয়া টাকা তুলিতেছে সমসংযোগ নাই। ইত্যাদি।

পরাঁধীন জাঁতির অসহায় অবস্থার চিত্রটি ফুটিয়ে তোলাই ইন্দ্রনাথের উদ্দেশ্য ছিল। শাসকের হাতে শীসনদণ্ড থাকলে ন্যায় নীতির প্রচলিত মানদণ্ডে বিচার আশা করা যায় না_-পরাধীনতার অভিশাপ এখানেই | ইন্দ্রনাথ সেই চেতনাটুকুই জাগাতে চান বিচারব্যবস্থায় জাতীয় অবিচারের নিদর্শন শুধু একটি ক্ষেত্রেই নয্ব--প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যেতো। বিচারক বঙ্কিমচন্দ্রও বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন আমাদের | ইংরাজপ্রধতিত আদালতের আইনের অপপ্রয়োগ যে-কোন সচেতন মনকেই বিক্ষুন্ করে তুলবে ইন্দ্রনাথের আলোচনা থেকে সেযুগের ধুমায়িত অসন্তোষের খানিকটা পরিচয় মিলবে সেযুগের কবিতাতেও এই ধরণের বিক্ষু অসন্তুষ্ট মনৌভাবের পরিচয় আছে। ইংরেজ শাসকের প্রতি ইন্দ্রনাথের মনোভাব অন্তান্ত প্রবন্থেও ব্যক্ত হয়েছে তিনি বলেছেন,

“ইংলণ্ডের রাজত্ব উপলক্ষে কোনও কথা বলিতে হইলে বৃটিশসিংহ বলিয়া তাহার উল্লেখ হয়, সিংহই ইংলগ্ডের রাঁজচিহ। সকলে রূপকের সম্পূর্ণ ভাব গ্রহণ করিতে পারে ন। বলিয়া, বুঝাইয়া দিতে পঞ্চানন্দের বাঁসনা হইয়াছে সিংহ পশুরাজ আর ইংলও বাহাদের উপর রাজত্ব করেন, তাহির পশুরাজ হইলেও সিংহ নিজেও পণ, ইংলগ্ডের আচরণে ইংলগের আস্ফাীি/ংলণ্ডের হস্কারে ইহার প্রমাণ ।”

ব্যঙ্গাত্বক রচন। ৬৯৫

জাতীয় ব্যঙ্গ দৃপ্ততজিতে প্রকাশ করেছেন ইন্দ্রনাথ। অবশ্য ব্যঙ্গশিল্পী যেমন নিজেকেও ব্যঙ্গের পাত্র করে তোলেন ইন্দ্রনাথও সে পথই অবলম্বন করেছেন। বুটশকে সিংহরূপে বর্ণনা করে নিজেদের পশুরূপে ব্যাখ্যা করতেও তার দিধ। নেই কিন্তু এই সরস ব্যাখ্যার মূলেও স্বদেশপ্রেমিক ইন্দ্রনাথের পরিচয়টিই দীপ্যমাঁন

ইন্দ্রনাথের গঠনমূলক আলোচনাও কিছু কিছু আছে। আত্মনির্ভরতা, স্বাবল্বন, ব্যবসায়িক জ্ঞানঅর্জনের উপদেশ দিয়েছেন ইন্দ্রনাথ। প্রথম যুগের হ্বদেশাত্মক রচনায় নিছক ভাবোচ্ছাসের আধিক্য ঘটলেও ধীরে ধীরে এই স্বদেশচেতনাকে একটি সাংগঠনিক তৃমিতে স্থাপন করার চেষ্টা করেছেন উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের লেখকবৃন্দ স্বদেশপ্রেম নিয়ে ধার! ব্যঙ্গ করেছেন তারাই যথার্থ স্বদেশচর্চার পথটিও নির্দেশ করেছেন

বস্ততঃ স্বদেশপ্রেমের সার্থকতা একদিন সংগঠনের মাধ্যমেই আসবে, বিশ্বাস দু হয়েছে কালক্রমে! “পরকালের উপদেশ" প্রবন্ধটিতে ইন্দ্রনাথের উপদেশও অত্যন্ত মূল্যবান

ত্রান্ত নর! আর কতকাল মোহ-জালে আচ্ছন্ন হইয়া, ইহকালের ইন্দ্রজালে বঞ্চিত হইয়া রহিবে? একবার ভাবিয়া দেখো, প্রকা প্রশস্ত সংসারে তোমার কেহই নাই. তোমার কিছুই নাই ।-..এ যে দিব্যবস্ত্রে তোমীর কলেবর আচ্ছাদিত করিয়৷ রাখিয়াছ তাহা তোমার নহে, মাঞ্চে্টারের | উহাতে তোমার শীত নিবারণ হইতেছে বটে, কিন্তু লঙ্ঞা নিবারণ হইতেছে না। এখনই যদি মাঞ্চে্টারের কোপ হয় কিম্বা বিরক্তি জন্মে, এখনই যদি মাঞ্চেষ্টার তোমাকে বলে আর দিব না-_-তাহ।? হইলে তোমার গতি কি হইবে? এমন ক্ষণিকপ্রেমে মুগ্ধ হইয়া থাঁকিও না) অবিনশ্বর আচ্ছাঁদনের উপায় করো

'"*তুমি বিজাতীয় মুক্্রযন্ত্রের সাহাঁ্ে চিরস্থায়িনী কীতি সম্পাদনের প্রলোতনে অচৈতন্য হইয়া রহিয়াছ, জাহাঁজে পেষ্টবোর্ড আমদানি করাইয়া তদ্বারা তোমার গ্রন্থের আবরণ দ্র করিবাঁর ভান করিতেছ--সত্য ; কিন্তু ভ্রমান্ধ নর ! সমুদয়ই ফক্কিকার।.ওকি করিতেছ? দেরশশলাই জালিলে কি হইবে? আলোকে অন্ধকার দূরীভূত হইবার নহে তাহার পর, তুমি যে দেশলাই জাঁলিতেছ তাহাও যে তোমার নহে অজ্ঞান! একথা এখনও বুঝিতে পারিলে ন1?*

ইন্দ্রনাথের গভীর দেশচেতনার রূপটিই এখানে উদঘাটিত হয়েছে স্বাতন্ত্র্য অর্জন করতে গেলে স্বাবলম্বী হওয়া দরকার। জীবনযাপনের জগ্য প্রতিযৃহূর্তে পরনির্ভর হলে ম্বাতন্ত্য অর্জনের কল্পনাটাই অবান্তর হয়ে ধ্াড়ায়, ইন্দ্রনাথ সেই সত্যটিই ত্বরণ করিয়ে দিয়েছিলেন হিন্ুমেলার উদ্বোঁককারা একযোগে ইতিপূর্বে জাতীয়

৬৯৬ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্দেশপ্রেম

আলোচনার হ্ষত্রপাত করেছিলেন,-_প্রসঙ্গতঃ বলা যেতে পারে যে দেশলাই তৈরীর প্রচেষ্টাও চালিয়ে ছিলেন প্রথমে এরাই রবীন্দ্রনাথের 'জীবনস্বতিতে' সে প্রসঙ্গে যে সরস বর্ণনা পাই সেটি উদ্ধার করলেই বোবা! যাবে বাণিজ্য করার পরিকল্পনাতেও ভাববিলাসের চেয়ে গুরুতর কিছু ছিল না, রবীন্দ্রনাথ দেশলাই তৈরীর পর্ব সম্বন্ধে বলেছেন,

স্বদেশে দেশলাই প্রভৃতির কারখাঁন! স্থাপন কর] আমাদের সভার উদ্দেশ্যের মধ্যে একটি ছিল।.*.অনেক পরীক্ষার পর বান্স কয়েক দেশলাই তৈরি হইল। ভারত সন্তানদের উৎপাহের নিদর্শন বলিয়াই যে তাহার! মুল্যবান ভাহা নহে-_ 'আমাদের এক বাক্সে যে খরচ পড়িতে লাগিল তাহাতে একটা পল্লীর সম্বংসরের চুলা ধরানো চলিত। আরও একটু সামান্য অস্থবিধা এই হইয়াছিল যে, নিকটে 'অগ্রিশিখা না থাকিলে তাহাদিগকে আলাইয়! তোল! সহজ ছিল না। দেশের প্রতি জলত্ত অন্থরাগ যদি তাহাদের জলনশীলতা বাড়াইতে পারিত, তবে আজ পর্য্যন্ত তাহার! বাজারে চলিত ।*

ইন্দ্রনাথ ষথার্থ স্বাবলম্বনের উপায় অনুসন্ধানের প্রেরণা দিয়েছিলেন ভাবাত্মক উদ্ভমের নিক্ষল অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি নয়,_যথার্থ গঠনমূলক বাণিজ্য গড়ে তোলার ঘপদেশ দিয়েছিলেন তিনি বাঙ্গালীর ব্যবসা বিমুখতা৷ সেযুগের অগ্রগতির পথে প্রচণ্ড অন্তরায় হয়ে ধাড়িয়ে ছিল।

ইন্দ্রনীথের সমগ্র সাহিত্য আলোচনার স্বযোগ আমাদের নেই। হাস্যরসের ক্ষেত্রেও ইন্দ্রনাথের সাফল্যের সর্বাঙ্গীণ ইতিহাস আমাদের আলোচনায় অন্ুপস্থিত। কিন্ত দেশাত্মবোধ সম্বল করে ইন্দ্রনাথ ব্যঙ্গাকারে বক্তব্য পরিবেশনের ঘষে আয়োজন করেছিলেন তার বিষ্ল্েষণ করলে ইন্দ্রনাথের গভীর শ্বদেশপ্রেমের পরিচয় পাওয়া যায় অধিকাংশ রচনাতেই তিনি ব্যঙ্গাকারে আঘাত হেনেছেন সমগ্র বাঁঙগালীসমাঁজকে দেশাত্মবোধের নিন্দনীয় দিকটিই ছিল তাঁর অবলঘন,_সমালোচনার দ্বারা তাঁর এই ক্রটি সংশোধনের চেষ্টাটি নিশ্চয় প্রশংসিত হবে। ব্যঙ্শিল্পী হিসেবে তার কিছু ক্রটি থাকতে পারে, কিন্তু দেশপ্রেমিক িসেবে তার প্রচেষ্টার একটি বিশেষ মৃল্য স্বীকৃত হওয়া দরকার | | |

ব্যঙ্ষ সাহিত্যিক ইন্ত্রনাথের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছিল “বঙ্গবাসী' সম্পাদক যোগেন্- চন্দ্র বন্র [ ১৮৫৪---১৯০৫ ] ব্যঙ্গ রচনায়। ইন্দ্রনাথ যোগেন্দ্রচন্্র ঘনিষ্ঠভাবে সংঘুক্ত ছিলেন। পাঁচ্ঠাকুর প্রবদ্ধাবলী শেষের দিকে 'বজবাসী' পঞ্রিকাতেই প্রকাশিত হোত। ইন্ত্রনাথের সঙ্গে যোগেম্্রচন্দ্ের আদর্শগত সাবর্য ছিল। রক্ষণ- শীলভা উভয়েরই সমগ্র আদর্শের মুলে বিরাজমান | ইন্দরনাথের দ্বারা সামগ্রিক

ব্যঙ্গাত্সক. রথ]: টী সি ৬৯৭

ভাবে প্রভাবিত হলেও যোগেন্্রন্দ্রের রচনার . মির্নাথের সমপর্যায়ভূক্ত ছিল না। তাছাড়া স্বদেশপ্রেমীত্বরক রচনায় ইন্দ্রনাথের যে গভীর চিন্তা, আন্তরিকতা সদিচ্ছার পরিচয় পাওয়া যায় যোগেন্দ্রন্দের রচনায় তা অনুপস্থিত যে যুগের উদ্দার আবহাঁওয়াতেও যোগেন্দ্রন্দ্রের দৃষ্টি ছিল সম্পূর্ণ প্রাচীন। কোনে! কোনো রচনায় যোগেন্দ্রন্দ্র তীক্ষ ব্যঙ্গের আঘাতে সামাজিক প্রগতিকে ধিক্কার দিয়েছেন ্ত্রীশিক্ষার কোন উপযোগিতাই তিনি স্বীকার করেননি স্ত্রীশিক্ষার কুফল প্রদর্শনের অন্য চারথণ্ডে তিনি একটি ব্যঙ্গকাহিনীই রচনা করেছিলেন

ইন্্রনীথের আদর্শে দেশপ্রেমাত্সক কিছু রচনাও লিখেছিলেন যোগেন্্রন্্র। “জন্মভূমি” নামে একটি মাসিক পত্রিকার সম্পাদনা করে ইব্বি-ুীর্দ দেশপ্রেমিকের কর্তব্য পালন করেছেন। জন্মভূমি” পত্রিকার প্রথম ভাগের উদ্দেশ্য অংশটিতে যোগেন্দ্রচন্দ্র ্বদেশপ্রেমিকের মতই বলেছিলেন,

"এই ভারতভূমিই মানব জীবন সফল করিবার ভূমি। কিন্তু যুগধর্মে ভারত এখন ধোরঘুমে অভিভূত; বল নাই, কেবল শুন্য ভূমিখণ্ড পড়িয়া আছে আজ কালবশে এই জন্মভূমি, -এই ভারতভূমি ইংরেজের করতলগত !

আমর] নিদ্রাতুর ; দিশাহীরা, ভূমিহারা | স্বধর্মরক্ষা করিতে আমরা আগাইয়। যাইতেছি | রাজাই ধর্মের রক্ষক | কিন্তু রাজা আমাদের নিজের নহে। রাজা শ্পেচ্ছ ইংরেজ) দুদিনেও এই হুখ- রাজ! শ্রেচ্ছ হইলেও আমাদের ধর্মে সাক্ষাৎ সম্বন্ধে হস্তক্ষেপ করিতে অভিলাষী নহেন। বিজিত জাতি এমন রাজা বহু পুণ্যে পাইয়া থাকে। ইংরেজ রাজা আছেন, রাজাই থাকুন, এই প্রার্থনা হিন্দুর ধর্মে যেন তিনি করক্ষেপ ন! করেন

রাজ বিধর্মী, স্থতরাং রাজা যখন ভ্রমক্রমে হিন্দুর সনাতন ধর্মের উপর হস্তক্ষেপ করিবার চেষ্ট1। করিবে, তখন আমরা উপদেশ দিব, সতর্ক করিয়া পথ দেখাইব। ইহাই আমাদের প্রধান ব্রত।৮

এই দীর্ঘ উক্তির মধ্যে যোগেন্দ্রন্দ্রের দেশ সম্পকিত ধারণার একটি স্পষ্ট রূপ খু'জে পাঁওয়া যাবে ইন্দ্রনাথের পরবর্তী যুগের লেখক হয়েও যোগেন্দ্রন্দ্র সে যুগের দেশাত্মবোধের প্রবণতাকেই হুদয়ঙ্গম করতে পারেননি বস্ততঃ পরাধীনতার সুতীব্র চেতনা বা বেদনা! কোনটিই তাঁর রচনায় প্রকাশিত হয়নি। সমন্ত আন্দোলনের মধ্যে একটি তাৎপর্যই তিনি আবিফার করেছিলেন তা হল-_ন্বধর্মরক্ষাঁ | স্বধর্মরক্ষা স্বদেশগ্রীতির মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে যোগেন্দ্রন্দ্র তা বুঝতে পারেননি ইংরেজ রাজত্বে তিনি অশ্নখী নন-_বরং খানিকটা আত্মসান্বনাও লাভ করেন এই বলে যে, “এমন রাজ] বহু পুণ্যে পাইয়। থাকে ।'

৬০৮

তবু স্বদেশচর্চা করেছিলেঈ বলেই হিন্দুর পনাতন ধর্ণরক্ষার জন্ত তিনি সচেষ্ট মনোভাবের পরিচয় দিহেছিলেন ইন্দ্রনাথের মত দেশপ্রেমের গভীরতা হয়ত ছিল না কিন্ত যোগেন্দ্রন্্র দেশসেবকের তূমিকাপাঁলনের জন্য যে সর্বদাই সচে ছিলেন তাঁর রচন] পাঠে ধারণাটি স্পষ্ট হয়।

যোগেন্দ্রন্দ্রের তিন ভাগে লেখা “বাঙ্গালী চরিত' [ ১৮৮৫-৮৬] গ্রস্থটিতে স্বদেশ- চিন্তার পরিচয় পাওয়া যাঁয়। গ্রন্থের পরিচয়দান কালে লেখক বলেছেন, “সামাজিক বিষয়ে ছোট ছোট প্রবন্ধ” ইন্দ্রনাথের পীচুঠাকুর প্রবন্ধাবলীতেই সামাজিক বিষয় অবলম্বনে ছোট. 'ট প্রবন্ধ রচিত হয়েছিল যোগেন্ত্রন্্র সেই রীতিটিই অনুসরণ করেছিলেন দিিষকরণের সাহায্যে তিনি বিষয়টির আভাস দিয়েছিলেন। সে যুগের বাঙ্গালীর চরিত্র চিত্রণের প্রয়াঁস হিসেবেই গ্রস্থটিকে গণ্য কর] যায়।

প্রথমেই দেখি এম. এ. পাঁশ একটি বঙ্গীয় যুবক চাকরীর চেষ্টায় রত। কিন্তু চাকরী সুলভ ছিল না সে যুগেও কিস্তু শিক্ষিত বাঙ্গালী যুবক চাকরী ছাড়া অন্ত কোন জীবিকার সন্ধান জানত না।

গ্রন্থের অন্যতম একটি চরিত্র কাঁতিকবাবু বি. এল পাশ করেও চাকরী পাঁননি বলে যৃত্যুবরণের চেষ্টা করেন অবশ্য শিক্ষিত বঙ্গযুবক শেষ পর্যন্ত হৃদয়ঙম করেছেন,

“বহু দশিতার দ্বারা জানিয়াছি, পরাধীনতা বড় কষ্ট পরের তোষাঁমোদ করিব না। স্বাধীন ব্যবসায় অবলম্বন করিব 1৮

এই উপলব্ধিটি যে লেখকের--তা৷ বুঝতে অসুবিধে হয় না। হইন্ত্রনাথের মত যোগেন্দরন্দ্রও বক্তৃতাপ্রিয় বঙ্ষযুবকের নিন্দা করেছেন নানাভাবে “কাল্পনিক হদেশীন্ুরাগ' প্রবন্ধটিতে শ্বদেশপ্রেমিকের আশ্ফীলনের চিত্র রচন। করেছেন,

“সেই গারিবল্ভীর অবড়ার, ওয়াশিংটনের প্রপৌত্র, কসথের মাস্তুত ভাই, আরাকী পাশার সন্বন্ধী-_-তখন শ্লেচ্ছভাষায় চিৎকার করিতে লাগিলেন,-“কোন হৃর্ঘ বলে, ভারত নির্জাব 1-_আমি যে বক্তৃতা দিয়া, ভারতকে সজীব করিয়। তুলিয়াছি!-_ বক্তৃতা বক্তৃতা, বন্তৃতা, অচিরে ভারত উদ্ধার হইবে | ভারতবাসি ! ভয় নাই, আমি আছি, বক্তৃতা দিয়া তোমাদের সকল অভাব মোচন করিব 7 বক্ৃতাঁয় তোমাদের শত শত সহত্র সহত্র কলের জাহাজ সমুক্রবক্ষে ভাঁসিয়া উঠিবে ১”

এই জাতীয় বাকৃপটুর সংখ্যাবদ্ধিতে আশারৃদ্ধি হয় না, বরং একটা চরম নৈরাশ্যে গীড়িতবোধ করেন লেখক |. বখার্থ শ্বদেশপ্রেমিকের সঙ্গে এই শ্রেনীর বাক্সর্বস্ব ছয় স্বদেশপ্রেমিকের পার্ধক্যটি লেখক বোঝাতে চান আমাদের | যথার্থ প্রকৃত স্বদেশপ্রেমিক সন্বদ্ধে লেখকের ধারণারও পরিচয় পাই আমর! এখানে--তিনি বলেন,

ব্ঙ্গাত্বক রচনা ৬৯৯,

“স্বদেশান্ুরাগ বড় শক্ত পদার্থ সহজে দেশের প্রতি মমতা জন্মে না_শিক্ষা চাই, সচরাচর একপুরুষে প্রকৃত দেশহিতৈষিতা জন্মে না। ছুঃখ এই, আমাদের দেশে অনেক বিড়ালতপন্বী হইয়াছেন,_আগাছা জন্মিয়া অঙলময় দেশকে আরও জজলময় করিতেছেন স্বদেশের জন্ত প্রাণ দিতে হয়, হৃদয়ের শোঁণিত দিতে হয়, ্বার্থত্যাগ করিতে হয় আমাদের দেশের স্বদেশীন্ুরাগী পুরুষের আত্মত্যাগ দূরে যাঁউক, ছই পয়সার জন্ঘ কাতর | ম্যাটসিনি জীবনের আশা পরিত্যাগ করিয়া, সংসার সখ ছাড়িয়, অর্থলোভ দমন করিয়া কতকাল অন্ন কষ্টে থাকিয়া, স্বদেশের কার্ধে ঘুরিয়াছিলেন | তেমনটি এখানে কে আছেন 1%

যোগেন্দ্রন্্র এই আশাবাদ শিক্ষিত বঙ্গযুবকের কাছেই পেশ করেছেন স্বদেশপ্রেমের কোন আদর্শ যোগেন্দ্রচন্দ্রের ছিল না, তিনি স্বাধীনতা অর্জনের চিন্তাও করেননি, কিন্তু খাঁটি স্বদেশপ্রেমিক অনুসন্ধান করে ফিরেছেন বঙ্কিমচন্দ্র বা ইন্জরনাথ স্বাধীনতা অর্জনের জন্য অভিলাষ ব্যক্ত করেন, যোগেন্দ্রন্দ্র ব্যাপারে নীরব

“ভারত মাতার শ্রাদ্ধ' শীর্ষক কবিতাকারে রচিত 99616-টিতে যোগেন্দ্রন্র চরম আঘাঁত হেনেছেন ভারতমাতার প্রেমে উন্মত্ত গয়ারাম চীৎকার করে কীদে,_-

কাদে গয়ারাম, গুরু গভীর গর্জনে, £১72155, 09117006061, ৪0192) ৪.৮৮৪1:০,

উত্তর না পেয়ে গয়ারাঁম ভাবে মাতার সম্ভবতঃ মৃত্যু ঘটেছে বাংলা-ইংরেজীতে ব্যক্ত ভারতপ্রেমের এই নমুনাটি যোগেন্দ্রন্দ্রের কল্পনার চূড়ান্ত শক্তি প্রকাশ করেছে গয়াঁরাঁম ভারত মাতার মৃত্যু ঘটেছে এই সিদ্ধান্ত করার পর ভজহরি নামক অন্য একটি: হ্বদেশপ্রেমিকের বিস্মিত প্রশ্ন,

পুড়াবে কি মাতৃঅঙ্গ জাহুবীর কূলে?

ছি ছি ছি, ছি ছি ছি ধ্বনি করে গয়ারাম,

কি কহিলি, রে বর্বর | বাঙ্গালী কুলের কালী উনবিংশ শতাব্দীর এই শেষ ভাগ-_

আলোকিত দেশ যত সভ্যতা আলোকে, অসভ্যতা-পনা, এবে, দাহি দেহ ! শুধু

দাহ নহে--গঙ্গা উপকূলে [1 0151001০6 !

শুশ)০ 28106 15171510011 গুনিবে যখন, ইংলগুবাসী একথ1; কাটি করি কালী

দিবে মুখে 3) --**** গোর দিব মাকে, সার কথ! এই

৭০০ , + উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্য স্বদেশপ্রেম

জাতীয় হাশ্যরসের দৃষ্টান্ত অন্তাত্র নেই। স্বদেশীয়ানার বিক্কতিকে এমন সরস করে প্রকাশ করার কল্পনাটিতেও যোগেন্দরন্দ্রে মৌলিকত্ব প্রকাশ পেয়েছে। বিদেশীয়ানার সম্পূর্ণ মোহ নিয়ে ভারতপ্রেম প্রকাশের হাশ্যকর প্রবণতা সে ঘুগেই 'দেখ! দিয়েছিল, যোগেন্দ্রচন্দ্রের প্রতিবাদ এদের বিরুদ্ধেই

যোগেন্দ্রন্দ্ের স্বদেশগ্রীতির আঁলোচনাকালেও এই সত্যিই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে প্রথম যুগের ব্যঙ্গরচনায় যে পদ্ধতি অনুস্থত হয়েছে পরবর্তীকাঁলের রচনায় তার অনুকরণ চেষ্টাটাই প্রকট তাছাড়া মৌলিক হৃজনী প্রতিভার অভাব থাঁকলে মহাঁজনপন্থা অবলম্বনের স্বাভাবিক প্রবণতাঁকে এড়ানো যায় ন1। যোগেন্দ্রচন্দ্রের ব্য সম্পর্কে যে রক্ষণশীলতা৷ অশ্লীলতার সমালোচন। হয়ে থাঁকে-_তার স্বদেশপ্রেমমূলক রচনা সম্পর্কে একথা প্রযোজ্য হতে পারে না। স্বদেশপ্রেমিকের আন্তরিকতাটুকু ন৷ থাকলে ভগ স্বদেশহিতৈষীর মুখোঁল খুলে দেওয়ার গতাচুগতিক প্রচেষ্টাটুকুই বা করবেন কেন যোগেন্দ্রন্্র? শুধু এদিক থেকেই তার স্বদেশপ্রেমাত্মক রচনার কিছু মূল্য স্বীকার করতে হয় যৌগেন্দ্রচন্দ্রের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে অধ্যাপক ললিতকুমাঁর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন,

যোগেন্দ্রচন্দ্রের হৃদয় ছিল--তীক্ষ দৃষ্টি ছিল। তিনি দেখিয়াছিলেন, আমাদের ধর্মে ভেল, আমাদের কর্মে ভেল, আমাদের সমাজসংক্কারে ভেল, আমাদের সাহিত্য সাধনায় ভেল, আমাদের ব্যবসায়-বাণিজ্য ভেল, আমাদের বিজ্ঞাপনে ভেল, আমাদের রাষই্নৈতিক আন্দোলনে ভেল, আমাদের দেশহিতৈষিণায় ভেল। তাই তিনি সাহিত্য 'গুরু ইন্দ্রনাথের ন্যায়, এই ভেল নিবারণের জন্য এই ভেল উড়াইবাঁর পুড়াইবার তাড়াইবার ছাঁড়াইবার জন্য, সুতীব্র বিজ্রপবাণ নিক্ষেপ করেন এই চোখ! চোথ। শরে অনেক রকম ভণ্ডামি দেশ হইতে বিতাড়িত হইয়াছে) কিন্তু এখনও বোধ হয় অনেকগুলি ভেল মরিয়৷ না মরে [সাহিত্য সাধক চরিতমালা থেকে উদ্ধৃত

যোঁগেন্দ্রচন্দ্রের প্রাপ্য সম্মান তিনি পেয়েছেন রচনায়

ইন্্নাথের সঙ্গে যোগেন্দ্রন্দ্রের নাম ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত বলে উভয়ের রচনাগত আদর্শেরও মিল খুঁজে পাওয়া] যায়। কিন্ত ছাড়াও কোনও কোনও লেখক বাংলাদেশের সামাজিক দুর্নীতির পমালোচনা করে কিছু কিছু ব্যঙ্ষচিত্র রচন! করেছেন, প্রসঙ্গতঃ পরাধীনতার বেদনায় লেখকের দুঃখও প্রকাশ পেয়েছে জাতীয় একটি গ্রস্থ হরিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রচিত “বিচিত্র বঙ্গ চিত্প'

ব্য সাহিত্যের লক্ষণ এই গ্রস্থটিতে পরিস্ফুট | গ্রন্থের নাম উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে "লেখক বলেছেন-

“সত্য ঘটনা অবলম্বন করিয়া ইহাতে বঙ্গসমাজের আত্যস্তরিক কুসংস্কার

ব্যাত্মক রচনা ৭০১

ছুর্নাতিপরায়ণ ব্যক্তিগণের রীতিনীতি অতি বিচিত্ররূপে বিশদতাবে বিবর্ণাত হইয়াছে .»৮ লেখক প্রগতির উপাঁসক উদীরপন্থী, কিন্তু জাতীয় অধঃপতনের প্রসঙ্গ সমালোচনা করেছেন নির্ভীকভাবে চাকুরীপ্রাণ বাঙ্গালীর সমালোচনা! এখাঁনেও কবিতাকারে ব্যক্ত করেছেন লেখক,__

“চাঁকরী চাকরী রবে, ফিরে দেশবাসী সবে, চাকরী যে কবে হবে, গেল কত ঘুস।

কেহ চির উমেদার, চাকরী যুটে না আর, খাটনী হইল সার,

বৎসর একুশ ॥.

লেখক এর মধ্যে দাস মনোভাবের পরিচয় পেয়েছেন যে জাতি স্বাবলম্বী নয়, তারা স্বাধীনতা অর্জনে অক্ষম, একথা স্পষ্টভাঁবে বলেছেন লেখক,__

«এই আম।দের দেশের সভ্যতা অভিমানীদিগের মনের ভাব | কেবল বাহা চাঁকচিক্যতেই মুগ্ধ যে দেশের ব্যক্তির পরের চাকর হওয়া শ্লাঘার বিষয় জ্ঞান করেন সে দেশ আর কোনো কালে উন্নত পদবীতে পদীর্পণ করিবেক। ভ্রমেও ভাবেন না৷ যে পরাধীনতার ম্বায় কষ্টকর বিষয় আর কিছুই নাই।”

লেখকের মনোভাবটি স্বদেশপ্রেমিকের | পরাধীনতার বেদনা! কবিতাকারে প্রকাশ করেছেন তিনি,

ধিক ধিক শতধিক পরাধানতায়। দেশের জনগণ, মান্য করে তায় স্বাধীনের শাক অন্ন, স্বাছ অতিশয় পরাঁধীনে পরমান্ন, মান্য কতু নয়।

কিন্তু পরাধীনতার অভিশাপটুকু অস্থভব কর! ছাড়া লেখকের স্বাধীনচেতনার অন্ধ কোন পরিচয় গ্রন্থে নেই স্বদেশচেতনার চেয়ে সমাঁজচেতনাই লেখকের রচনার প্রেরণা দান করেছে। কিন্তু প্রসঙ্গতঃ স্বদেশপ্রেমের মনোভাবটিও ব্যক্ত করেছেন সে যুগের সমাঁজততযূলক আলোচনা অন্গসন্ধান করলে দেখা যাবে, দেশাত্মবোধের প্রসঙ্গ সেখানে অবলীলাক্রমে উচ্ছৃসিত হয়ে উঠেছে। জাতীয় আরেকটি গ্রন্থে স্বদেশপ্রেমিকতার পরিচয় পাওয়া গেছে। গ্রস্থটির নাম “হুরলোকে বন্ধের পরিচয় গ্রস্থকর্তা হরনাথ ভঞ্জ। বিখ্যাত পরলোকগত ব্যক্তিদের জবানিতে বাংলাদেশের অবস্থার পর্যালোচনা করেছেন লেখক হরলোকে গিয়েও বাংলার ছর্দশ! তার! বিস্বত হতে পারেননি জীবিতকাঁলে দেশসেবাই ধাদের ব্রত ছিল লেখক তীঁদের বক্তব্যই পরিবেশন করেছেন। বিজাপনে লেখকের দেশপ্রেমিকচিতের প্রতিফলন দেখতে পাই,

৭০২ উনবিংশ শতাবীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

“অধুনাতনকালের বঙ্গসমাঁজে ঘে সকল মহাদোষ প্রবেশ করিয়াছে, ভাহা দর্শন করিয়া মধ্যে মধ্যে মনে অতিশয় দুঃখের উদয় হয়। সেই ছঃখই আমাকে এই গ্রন্থ প্রকাশে প্রবৃত্ত করিয়াছে বন্ধুভাবে স্মিষ্ট স্বরূপাখ্যান বর্ণনা, সেই দোষ সকল প্রতিকারের গুধান উপায় মনে করিয়। গ্রন্থের সকল স্থানে আমি তাহ। অবলম্বন করিতে চেষ্টা করিয়াছি ।”

গ্রন্থটির পরিকক্পনাগত মৌলিকত্ব প্রথমেই চোখে পড়ে। স্বৃত মহাত়াদের বজ সমালোচনায়ও স্বদেশগ্রীতি প্রকাশিত হয়েছে দেশপ্রেমিক পরলোকে গিয়েও দেশচিন্তা বিসর্জন দিতে পারেননি এ'র] বর্তমানের বেদনায় মর্মাহত | বিখ্যাত সাংবাদিক কাশীপ্রসাদ ঘোষ দুংখ করেছেন,

“নিদারুণ দুঃখের কথা কি কহিব, বাঙ্গালি বাবুর বাঙ্গালীর সভাতে নিরবচ্ছিন্ন ইংরাজী বক্তৃতা করিয়া, মাতৃভাষার প্রতি অরুচির পরাকাষ্ি প্রদর্শন করিয়া থাঁকেন। ১৮০০৭ ইংরাজীর প্রাদুর্ভাব হইয়া বঙ্গীয় পুরুষের! প্রায় সকলেই স্বজাতীয় ভাব বিসর্জন দিয়াছেন।”

ংরাজীয়ানার প্রা ভাবে স্বজ্ঞাতীয়ভাবের ধিলুণ্ডি ঘটেছে বলেই মৃত স্বদেশপ্রেমিক মহাত্মা আক্ষেপ করেছেন। বস্ততঃ আক্ষেপ লেখকের | ইংরাজীয়ানার সমালোচন। সেযুগে স্বদেশপ্রেমিক সমালোচকের রচনায় সর্বত্রই পাঁওয়া যাঁয়। একই বিষয়ে 'আরও একজন মৃত মহাত্সার উক্তি উদ্ধৃত কর! হয়েছে গ্রন্থে জাষ্টিস শঙ্ুনাঁথ পঙ্ডিতের মৃত আত্ম! আক্ষেপ করেছেন,-_

"ইংরাজী শিক্ষিতেরা আপনার পিতামহ মাতামহ্র নাম হঠাৎ বলিতে পারেন না। কিন্ত বেঞজামিন ফ্রাঙ্কলিনের সাত পুরুষের নাম চক্ষের নিমিষে উচ্চারণ করেন। ইংরাজী পুস্তক সমাচারপত্র ভপাঁকার পাঠ করিতে অরুচি জন্মে না, কিন্তু দুই চারি পংক্তি বাংল পড়িতে মুখমণ্ডল বিকৃত সর্বা্গ ঘর্মাক্ত হয়।” [ইংরাজী শিক্ষিত]

স্বদেশীয়ানার নিদর্শন জাতীয়ভাবের প্রতি শ্রদ্ধাপ্রদর্শমের দ্বারাই নির্ণীত হবে। স্বদেশসেবার প্রথম আবেগ জাতীয়তার প্রতি সত্যকারের প্রেমেই প্রকাশিত হয়, ধারণাটি লেখকের মনে বদ্ধমূল

বিখ্যাত ম্বদেশপ্রেমিক রামগোপাল ঘোষের মৃত আ'ত্বার উক্তি--“দাসত্ব এক প্রকার জীবন্মতের অবস্থা, তাহাতে লঘুতার একশেষ, এই দাসত্ব উপলক্ষে কত জ্ঞান বিঘৃঢ় প্রভুর সম্মুখে কৃতাঞ্জলি হুইয়। কালক্ষেপ করিতে হয়, দাসত্বের স্ুদ্রত্ব বৃহত্ব নাই, সকল দাসই প্রভুর পদানত )” [দাসত্ব]

যে কোন হ্বদেশপ্রেমিকই স্বাধীন জীবনের প্রতি অন্ধ্র হুবেন,--এটাছি

ব্যঙ্গাত্মক রচনা ৭৩৩

স্বাভীবিক | বাঙ্গালীর দাসমনোভাব বিনষ্ট ন! হলে স্বাধীন জীবনের প্রতি আকাঙ্কাই জাগবে ন। _-এজন্াই মৃত ত্বদেশপ্রেমিক আক্ষেপ করেছেন

গ্রন্থের সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীম আলোচনাটি করেছেন সেযুগের খ্যাতনামা ব্যক্তি ৃঙ প্রসন্নকুমার ঠাকুরের আত্মা। জাতীয় ভাবান্ুরাগের আলোচনা কালে তিনি হিন্দুমেলার সমালোচনা করেছেন হিন্দুমেলাই সেষুগের প্রথম জাতীয় মেলা,_ কিন্তু বাহিক আড়ম্বরই যদি এই মেলায় প্রধান হয়ে ওঠে তবে উদ্দেশ্য সফল হবে না__এই ছ্বিল তাঁর অভিমত তিনি বলেছেন,__

“স্বদেশী নুরাগী স্থধীর মহাশয়গণের যত্বে জাতীয় ভাবের উন্নতি সাধনার্থ জাতীয় সভা, জাতীয় বিদ্যালয়, জাতীয় সম্বাদপত্র, জাতীয় মেলা, ইত্যাদির সৃষ্টি হইয়াছে সেই সকলের নাম জাতীয়, কিন্তু অগ্াবধি তত্তাবতের কার্য্যের অনেকাংশে জাতীয় ভাঁব নিবি হইবার কালবিলম্ব আছে ।..'স্থলতঃ কি কি উপায়ে জাতীয়ভাব রক্ষা পাঁয় নিন্দিত বিজাতীয় ভাব দূরীভূত হয়, স্থযোগ্য বঙ্গলেখক কর্তৃক তাহার প্রবন্ধ নিচয়, বিরচিত হইয়া মেলা স্থানে পাঠ হয়। কেবল অসংখ্য স্বজাতি একত্র হইয়া এদিক ওদিক ছুটাঁছুটী, রৈ রৈ নিনাদ দ্ুমদাম বোমা বাজিশবায়মান করিলে জাতীয় মেলার অভিসন্ধি সফল হইতে পারে না। যাহা হউক, ভরসা হয় ক্রমশঃ মেলার অধ্যক্ষ মহাশয়ের মুযুর্ু জাতীয়ভাবকে পুনরুদ্দীপন করিতে সক্ষম হইবেন সংপ্রতি কি করিলে জাতীয় ভাবের শিক্ষা হয়, কাহাকে জাতীয় ভাব বলে অধ্যক্ষের অগ্যাঁপি তাহ! নির্ণয় করিতে পারেন নাই ।” [ অনুরাগ তত্ব ]

এই আলোচনা থেকেই বোঝা যায় যে লেখক হিন্দুমেলার সাফল্য সম্বন্ধে সন্দিহান ছিলেন। জাতীয় ভাবের শিক্ষাগত সম্পূর্ণতা ঘটেনি বলেই বাহিক আড়ম্বরই প্রাধান্য পেয়েছে হিন্দুমেলায়,__কিন্তু যথার্থ জাতীয় ভাবটি যে কী লেখক তা বলেননি

গ্রন্থের *শ্রিন্দের আক্ষেপ" প্রবন্ধটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কালীপ্রসন্ন কিশোরী চাদ বর্ধরস্থানে গমন করলে প্রিন্সের সঙ্গে সাক্ষাৎ হল। প্রিন্স দুঃখিত চিত্তে বললেন,

“বজের উন্নতি হইতেছে, বর্গের উন্নতি হইতেছে। উনবিংশ শতাব্দী, অদ্ভুত উন্নতির সময়। ইত্যাকার চীৎকার বহুদিনাবধি আকাশ ভেদ করিয়া স্থুরলোকেও উত্থিত হইতেছে উনবিংশ শতাবীর উন্নতি ইউরোপ খণ্ডে হইতেছে, বন্ধের সহিত তাহার কোন সংশ্রবই দেখিতে পাই না। আপনাদের নিকট বঙ্গের যৎকিক্কিৎ উন্রতির পরিচয় পাইলাম, তদ্ভিন্ন সকলেই তাহার অবনতির চিহ্ন, ভ্রান্ত ব্যক্ষিরা যাহা উন্নতি বলিয়] মানিতেছেন, তাহা উন্নতি নহে

৭০৪ উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

অংশে বাংলার অগ্রগতির ইতিহাসকে ইউরোপের অপ্রত্যাশিত অগ্রগতির সঙ্গে তুলনা করে লেখক হতাশ হয়েছেন উনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার জাতীয়জীবনে, সমাজজ্ীবনে যে অপ্রত্যাশিত অগ্রগতি ঘটেছিল পরোক্ষভাবে লেখক তা স্বীকার করেছেন। প্রিন্সের জবানিতে বিষয়টি আক্ষেপে পরিণত হলেও হাশ্যরসিক লেখকের পরিস্থিতি রচনার মৌলিকত্ব স্বীকার করতেই হয়।

হিরলোকে বঙ্গের পরিচয়” [২য় খণ্ডে]-এর বিজ্ঞাপনে পাশ্চাত্য .দেশের নব জাগরণের হেতু নির্ণয়কালে লেখক সমাজতত্বমূলক রচনাকারদের অবদান সম্পর্কে আলোচন করে বলেছেন,_-

“্লগুন নগরের বিখ্যাত লেখকের পমাজ সম্বন্ধে এরূপ বহু সংখ্যক পুস্তক লিখিয়া৷ সমাজের যথেষ্ট উপকার সাধন করিয়াছেন। অনেক ব্যক্তির অনুচিত রীতি পদ্ধতি দূরে প্রস্থান করিতেছে আঁমারদিগের দেশে এরূপ পুস্তক উপকারী হইবে আশ! করিয়া এই দ্বিতীয় খণ্ডেও সমস্ত স্বরূপ বিবরণ প্রকাশ স্থচাঁু গদ্ধ পদ্ধ লেখক মহাত্রাগণকে যথাযোগ্য প্রশংসা করিতে ক্রটি করি নাই, যাঁহাতে তাঁহাদিগের উৎসাহ বর্ধন হইতে পারে |”

'স্বরলোকে বঙ্গের পরিচয়” অষ্টার উদ্দেশ্যের সততাটি এই মন্তব্যে পরিশ্মুট হয়েছে সামগ্রিক সামাজিক উন্নতিই লেখকের কাম্য এবং এই জাতীয় আলোচনার দ্বারা কিছু লক্ষমীয় পরিবর্তন ঘটবে এমন আশাও পোষণ করতেন লেখক, স্বতরাং তার যথাশক্তি প্রচেষ্টা হিসেবে এই আলোচন] গ্রন্থটির মূল্য স্বীকার করতেই হবে। দেশালোচন] সমাজসমালোচনার যূলে যে গভীর স্বদেশ ভাবনার প্রেরণ রয়েছে, সে কথাও স্মরণ রাখতে হবে

শব্দসূচী

অজিতকুমীর দত্ত ৬৫৪

অতি অল্প হইল ৬৯

অনন্তমাঁণিক্য ১৫, ১৮

অনুরূপ] দেবী ১১৬

অন্নদীমঙ্গল ২১

অবকাশ রঞ্জিনী ৩১৭-২১, ৩২৩-২৫, ৩২৭, ৩৩১৩৩, ৩০৮, ৩৪০, ৩৪ ৫, ৩৬২৩০. ৬৭, ৩৭০, ৩৭৩-৭৪, ৩৮১, ৩৮৯

অভিজ্ঞান শকুন্তলম্‌ ৪৩৮

অমৃতবাজীর পত্রিকা ৩০৭, ৩৪৬, ৪১০, ৪১৩, ৪১৫) ৪২০১ ৪৩৫, ৪৯৩

অক্ষয়কুমীর দর্ত ৭২, ৭৪-৮৪, ৯০১ ৯১, ১৪৯, ১৬৮১ ৫১৯১ ৫৯০

অক্ষয়কুমীর মৈত্রেয় ৩৫৭

অক্ষয়চন্ত্র দত্তপগুপ্ত ১৩১, ৫৩৮, ৫৭8

অক্ষয়চন্জ চৌধুরী ৪৫৬

অক্ষয়চন্ত্র সরকার ১৫৩, ২৬৪, ২৬৬, ২৮৪, ২৮৯-৯০১ ৬৫৪

অশ্রমতী ৪৫৭-৫৯, ৪৬৩-৬৫

আওরঙ্গজেব ২২

আকবর ১৫, ১৭, ৪৪, ৬১৬

আখড়াই ৪৯

আচারপ্রবন্ধ ১২১

আত্মচরিত ( দেবেন্দ্রনাথ ) ৮৬, ৯২

আত্মীয় সভীর সভ্যদিগের বৃত্প্ত ৯২-৯৩

আধুনিক বাংলা কাব্য ১৭৮, ২১৩, ২১৬

আননামঠ ৩৩, ৩৬, ৯২, ১০৫১ ১১০১ ১১৩, ১৭৫, ৫৪৬, ৫৪৯-৬৭, ৫৭8-98, ৫৮৯, ৬১১১ ৬২১১ ৬২৩, ৬২৭, ৬২৯- ৩০, ৬৩২, ৬৬০) ৬৬৮৬০, ৬৭২, ৬৮১ ৪৫

আনন্দমোহন বস্থ ২৭১

আবার অতি অল্প হইল ৬৯

আমার জীবন ৩১৭, ৩১৯, ৩২২, ৩৪০, ৩৫৫, ৩৬৭

আমার অভিনেত্রীজীবন ৪৫৬

আবুল হুসন ২০

আবুল ফজল ৬১৬

আর্যকীতি : ৪৬-৪৭

আর্ধদর্শন ২১৩, ৩৭০, ৬৮৭

আর্ধামি সাহেবিআনা ১৬২-৬৩

আলালের ঘরের দ্বলাল ২৩৩, ৫০৩-০৬ ৬৫০

আলীবর্দী ২৬-২৭

আশাকাঁনন ২৬২

আযানী বেশান্ত ১৭৫

ইন্দ্রনীথ বন্দ্যোপাধ্যায় ৬৭১, ৬৭৫ ৭০০

ইণ্ডিয়ান ম্যাশনাল কংগ্রেস ৩১৪

ইলবার্ট বিল ২৭০, ৩০৮, ৩১৫, ৬৬৩

ইসলাম খাঁন ১৯-২০

ইসাখান ১৫, ১৬

ইয়ং বেঙ্গল ৭৫, ৮৩-৮৪, ১০২, ২৩১-৩২, ২৪৯, ৩৯৬, ৩৯৯-৪০১, ৪০৩, ৪১২৯ ৫০৭১ ৫২২

ইংলিশম্যানি ৩১৫

$

ঈশ্বরচন্ত্র বিদ্ধাসাঁগর ৬১-৬২, ৬৪-২০, 7৪- ৭৫, ৭৪, ৯০১ ৯৪১ ১০০১ ১০৫১ ১২৫. ২৬, ১২৯, ১৩১, ১৪৬, ১৪৯১ ১৬০ ২০৯, ২৬২, ৩১৫-১৬) ৩৩০১ ৩৯৪, ৫৯০, ৬৫৪

৭০৬

ঈশ্বরচন্তর গুপ্ত ৮০, ৯৯, ১৪৫, ১৭৭-১৮৪, ১৮৬, ২০১-০৩১ ২০৮, ২১৪-১৭) ২১৯-২০, ২২২-২৩১) ২২৭, ২৩২, ২৩৪-৩৬, ২৪০, ২৪৫, ২৫১, ২৫৭, ২৬৬-৬৭, ২৭৩-৭৪, ৩০৭, ৩১৪, ৩১৯, ৩২৯-৩০) ৩৩২, ৩৪৫, ৩১২-৯৩, ৫০৪১ ৫১৯, ৫২৩-২৪,

৫৬৪, ৬৪৪, ৬৪৭

উইলিয়ম কেরী ৪২ উপেন্দ্রনাথ দীস ৪৮২-৮৪, ৪৮৬, ৪৮৮-১১, ৪৯৩-৯৫, ৬২২

উমেশচন্দ্র মিত্র ৩১৬, ৪০৬ উমেশচন্দ্র গুপ্ত ৪৯৪

এই কি সেই ভারত ? ৪২৪

একেই কি বলে সভ্যতা ? ৮৬, ৩৯৯-৪ ০২, ৪১২

গ্রড়ুকেশন গেজেট ১০৬, ১৪৫, ২৮৯-০, ৩১৭, ৩২২

এঁতিহাঁসিক উপন্যাস ১২২,৫০৩, ৫০৫-৫০৬,

৫০৮, ৫১১১ ৫৮৭

৩০৩,

৫৫৯

5

ওসমান ১৫, ১৮ ওয়াহাবী আন্দোলন ১৯৪

কনকপন্ম ৪৩৮

কপালকুগ্ডলা ৬২৩

কবিওয়ালা ৪৯, ১৭৭

কবি শ্রীমধুস্দন ২৩৬

কবি হেমচন্দ্র ২৬৪, ২৬৬, ২৮৯ কবিতাঁবলী ২৬১

কবিতাসংগ্রহ ১৮২

কলিকাতা কমলাঁলয় ৬৪৭-৪৮

কমলাকান্ত ১২০, ১৩২, ১৩৪, ৬০১, ৬৫৮,

উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

৬৬০১ ৬৬২

৬৭৪-৭৬

কমলাকান্তের দপ্তর ৬৮, ৭৯, ১৩২, ৪১৮) ৫৪৫, ৫৫৯, ৬৫২, ৬৬৬, ৬৬৮-৬৯, ৬৭২, ৬৭৪

কর্মদেবী ২২৪-২৭

কালিদীস ২১৫, ২৭০, ৪৩৮

কালীপ্রসন্ন সিংহ ১৬৮, ২৪৯, ৫০২-৫০৬, ৬৫ ০-"৫

কাশীরাঁম দাঁস ২৫৭

কিঞ্চিৎ জলযোগ ৪৪২

কিরণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ৪১৪-১৭, ৪২০- ২৪, ৪৩২, ৪৯৭

কিশোরীমোহন দীস ৫৩১

কুঞ্জবিহারী বস্থ ৪২৩-২৪

কুরুক্ষেত্র ৩৪৪

কুলীনকুল সর্বস্ব ৩৯৫-৯৬, ৪৮২

কষ্ণকান্তের উইল ৫৩৯

কষ্ণকুমারী নাটক ৩৯২, ৪০৩, ৪০৫-০৬, ৫৮৭

কষ্ণদাস পাল ৩৩৭

কষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় ৭৫, ১০৪

কত্তিবাঁস ৪, ২৫৭

কেদার রায় ১৫, ১৭, ২২, ২৩

কেশবচন্দ্র সেন ৭২

কোৌলিন্য প্রথা] ৪, ৬,

কঃ পন্থা ১৬৫, ১৬৭

ক্ষীরোদপ্রসাঁদ বিদ্যাবিনোদ ৬০৫

ক্ষুদিরাম ৬৭৭, ৬৮৪-৮৬

৬৬৫-৬৭, ৬৭১-৭২,

2

খোঁজা ওসমান ১৮

গদাঁধর সিংহ গণেন্দ্রনাঁথ ঠাকুর ৪৪০ গঙ্গাধর ভট্টাচার্য ৪৯১৯

শবস্থচী

গাক্ষিজী ১৩১ গিরীশচন্দ্র ঘোষ ৩৫৫ গ্যেটে ৮৮

গৌড়ীয় ব্যাকরণ ৬৩ গৌরদাস বসাক ২৬০ গ্রাণ্ট ডফ ৫৮৭

ঘনরাম চক্রবর্তী ১০-১৩

চতুর্দশপদী কবিতাঁবলী ৯৮, ২৩৮, ২৪৯-৫১ ২৫৩-৬০, ২৮৭, ৩২৪

চগ্ডাদাস ২৩৬

চণ্ডীমঙ্গল ৯-১০

চণ্তীচরণ সেন ৬৩৩-৩৬, ৬৩৮-৪৩, ৬৪৫

চন্দ্রনাথ বস্থ ১৬৫-৬৮, ২৯৫

চন্দ্রশেখর ৫৩৯, ৫৪ ১-৫৪৫, ৫৫২, ৫৬৭

চরিত চিত্র ৫২৩

চরিতাঁধলী ১৪৬

টাঁদরায় ১৮, ২০, ২২, ২৫

টাদকাঁজি

চাদেকান ১৭

চারুচন্দ্র রায় ৪৬৮

চীরুপাঠ ৭০, ৮৮

চিতোর আক্রমণ নাটক ৪৫৩, ৪৫৮

চিন্তাতরঙ্গিনী ২৬২-৬৩, ২৭৪

চিন্তানায়ক বঙ্কিমচন্দ্র ৫২৩, ৫৬১

চৈতন্যদেব ৪-৯, ১২৮

চেত্রমেলা ৮৬, ৪৩৯

চোয়াড় ৩৬) ৩৭

ছিন্নমুঝুল ৬০৯, ৬১১, ৬১৫ জর্জ কুম্ব ৮১

জন্মভূমি ৬৯৭ জয়দেব ৩, ১২৮১ ২১৫, ২৫৭

জয়পাল ৪৯৬-৪৯৮

জাতীয় গৌরব সম্পাঁদনীসভা ৯২

জাতীয় গৌরবেচ্ছা সঞ্চারিণীসভা৷ ৮৬, ৪০-৯৪১ ১০৩

জাতীয় সাহিত্যের আবশ্যকতা উন্ততি ১৬৭

জামাই বারিক ৪১৩, ৪১৫

জাহাঙ্গীর ১৫, ১৭

জীবনস্থতি ৭১, ৮৩) ৯৪, ৪৩৮-৩৯, ৪৪১, ৫৫০-৫১, ৬২১-২২, ৬৯৬

জীবেন্দ্রসিংহ রাঁয় ২৪৪

জ্ঞান তরঙ্গিণী ৪০১ জ্যোতিরিন্দ্রনীথ ঠাকুর ৩২৭, ৩২৯, ৩৯৪, ৪৩৩-৪৩, 8৪৫১ ৪৪৮, ৪৫১-৫৩,

৪৫৬-৬৩, ৪৬৫-৬৮, ৪৭০-৭১১ 8৭৫, ৪৭৯-৮৩, ৪৯৪-৯৫) ৫৫০১ ৫৮৭১ ৬০৭ জ্যোতিরিন্্রনাথের জীবনস্থতি ৩৯৪-৯৫,

৪৩৯১-৪৪১ ঝান্সীর রানী ৬৪০-৪১, ৬৪৪-৪৫

টড ৪০৩-০৪, ৫০৮, ৫১১১ ৫৮৭, ৬১৬-১৭, ৬২৩-২৫

টমাস মুর ৪৩৩৬

টম কাঁকার কুটির ৬৩৩

ডিরোজিও ৬৩, ৮৩, ১৩৩, ২৩১, ৩২৮

তন্ববোধিনী পত্রিকা ৭০-৭১, ৭৪১ ৭৫ তন্ববোধিনী পাঠশালা ৭৫

তন্ববোধিনা সভা ৮৪

তারাপদ যুখোপাধ্যায় ১৭৮, ১৯৮০১৮৩১২১৩ ভারাবাঁগ ১৪৬, ৪৯৯

ভাঁরিণীচরণ মিত্র ৪৭

তিতুমীর ১৯৪-৯৫

তিলোত্তমা সম্ভব কাব্য ২৩৮

৭০৮

তুলসীদাস ২১৫ ত্রিপুরাশংকর সেনশান্ত্রী ১৩৪, ১৪৪, ৬৭৫

দশমহাবিদ্যা ২৬২

দামোদর মুখোপাধ্যায় ৬২৩-২৪

দীনবন্ধু মিত্র ৯৮, ২০৩, ২৩৩, ৩৯৫-৯৬, ৪০৬-১৩, ৪৩২, ৪৮২, ৪৯১, ৪৯২, ৫১৯, ৫২৪, ৬৫৫

দীপনির্বাণ ৬০৮১১

দুর্গেশনন্দিনী ৯৮, ১২৯, ১৩৬, ৫০০, ৫২১- ২৮১ ৫৩৯, ৫8৪, ৫৭৯

দেওয়ান গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ ৬৩৯, ৬৪৪

দেবী চৌধুরাঁণী ২৭, ৩৩, ৩৭) ৯২, ১১০ ৫৫৩, ৫৫৫, ৫৬৬, ৫৬৮-৭ ১, ৫৭৪

দেবেন্দ্রনাথ ঠাঁকুর ৬২, ৭০-৭৫, ৮৩, ৯৭ ১০৪, ১৩৩, ৪৩৮, ৫১৯, ৬০৭

দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ১৬৭-৭০

দ্বারকান1থ ঠাকুর ৫৬

দ্বিজেন্দ্রনীথ ঠাকুর ১৬২-৬৪, ১৬৮, ৪৪৯) ৪৪৭, ৬০৭

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ২১২, ৩৭৫, ৪৪৫, ৫৭৬, ৬১৫, ৬২৯

দ্য জারিক ১৬

ধর্মক্ষেত্র ৪২৪ ধর্মতত ১৩৪ ধর্মমঙ্গল ৯-১১, ১৩ ধর্মপাল ১০, ১১

, ধূর্মঘভা ৪৮

' মগনলিনী ৪৯৩-৯৫

' নগেন্্রণীথ সোম ২৩৬, ২৫৩, ২৫৫, ২৬০ | ৩৯৮) ৪০৩

নজরুল ২৯২, ৩৫৪, ৩৬৬

মটেন্ত্রনাথ ঠাকুর ৪২৩-২৪

উনবিংশ শতাবীর বাংলা সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

নব নাটক ৩৯৪-৯৫

নবগোপাল মিত্র ৯২. ৪০৯-১০, ৪৩৯-৪

নববাবু বিলাস ৬৪৭, ৬৫০

নববিবি বিলাস ৬৪৭

নবযুগের বাংলা ৫৮, ৬৪

নবীনচন্দ্র সেন ১৭৪, ২১২, ২১৪, ২২৮, ২৩৮, ২৫১, ২৬২, ৩০২, ৩১৬-৩৫, ৩৩৭-৪৯, ৩৫১, ৩৫৩-৩৭৭, ৩৭৯-৮২, ৩৮৪-৯০) ৪১৩, ৬৩২, ৬৩৯

নবীন তপস্থিনী ৪১৩

নবীনচন্ত্র বিদ্ভারত্ব ৪৮১

শরেশচন্দ্র সেনপ্ঞু ৫৮-৫৯

নারায়ণ ১৪২

নিখিলনাথ রাঁয় ৬৭৫

নিশিকান্ত বস্থুরায় ২৭

নীলদর্পণ ৯৮, ২০৩, ২৩৩, ২৪৮, ৩৯৬, ৪০০১ ৪০৬-১৩, ৪১৯) ৪২২, ৪৮২, ৪৯০, ৪১১, ৬৫১-৫২, ৬৫৫

হযাশনীল পেপার ৪০৯-১০

পঞ্চানন্দ ৬৮৬-৮৭

পল্মিনী উপাখ'ান ২১৩-১৬, ২২১-২৬, ২৪০) ২৪৮-৭৯, ৩১৯, ৩৪৬, ৫১০-১১

পলাশীর যুদ্ধ ৩১৯, ৩২১ ৩২৭, ৩৪৫-৫১, ৩৫৩-৫৫) ৩৫৭-৬০১ ৩৬২, ৩৬৪-৬৭, ৩৮১১ ৩৮৪১ ৩৮৯-৯০

পশুপতি সংবাদ ২৯৫

পারিবারিক প্রবন্ধ ১০৪, ১০৮, ১২১

পাত্রী লঙ্‌ ২৩৩, ২৪৯, ৪১০) ৬৫১

পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় ৬৭৫, ৬৭৭, ৬৮৬

পাঁচুঠাকুর প্রবন্ধ গ্রস্থাবলী ৬৭৭, ৬৮৬

পুরুবিক্রম ৪৪২-৪৯, ৪৫১-৫২, ৪৬৫, ৪৮১-৮৩) ৪৯০১ ৪৯৫) ৪৯৭, ৬১১

পুম্পাঞ্জলি ১২২, ১২৬-২৮

প্যারীঠাদ মিত্র ২৩৩) ৫০১-০৬১ ৬৫৬

শবস্চী

প্রচার ১৩২

প্রতাপচন্দ্র ঘোষ ৬০৩-০৬, ৬২৬-২৭

প্রতাপাদিত্য রায় ১৫-২৩, ২৫, ২৮, ৪৩, ৫৭১১ ৬০৪

প্রতাপাদিত্য (ক্ষীরোদপ্রসাদ ) ৬০৫

প্রতাপসিংহ ৬২৩, ৬২৪

প্রতিভা ৭৭, ৮৩, ১১৮, ৫০৮

প্রবন্ধমালা ১৪৮-৪৯, ১৬৪

প্রবন্ধপুস্তক পুরাবুস্তস+র ৫০৬

প্রবাসী ২০

প্রভাস ৩৪৪

প্রমথনাঁথ বিশী ১০৩, ১১৬, ১২২, ১২৫ ২৬) ২৩০, ৫০৯, ৫9৯-৫০, ৪৮৬, ৬৬৬

প্রমথনাথ মিত্র ৪৯৩, ৪৯১৫-৯৮

প্রিয়নাথ শাস্ত্রী ৭৩

প্রেমেন্দ্র মিত্র ৫২১

প্লেটো ৮৭

৫৮৩)

ফোট উইলিয়ম কলেজ ৪১-৪৩, ৪৭, ৪৮,

৬০) ১৮৩) ৬৪৬-৪৭ ফুলের মাল ৬০৯, ৬২৪০

বখতিয়ার খিলিজি ৫২৯-৩০

বঙ্গভঙ্গ ১১১

বজদর্শন ১৩২, ৩০৯, ৩১৬, ৩৪৬-৪৭, ৪৩৩, ৪৪২) ৫৪৫, ৫৭৪-৭৫, ৬১৫, ৬২৬, ৫-৫৬, ৬৫৮) ৬৬০১ ৬৭৬-৭৭, ৬৮৭

বঙ্গবাঁসী ১৪৫, ৬৮৩, ৬৯৬

বঙ্গসাঁহিত্যে উপন্তাঁদের ধারা ২১৬, ৫৩৩, ৫৪৫, ৫৫?

বঙ্গাধিপ পরাজয় ব1 বঙ্গেশবিজয় ৬০৩-৬০৬, ৬২৬

বঙ্গীয় নাট্যশালার ইতিহাস ৩৯৫, ৪০৯-১১,

৪১৪-১৫

৭০৪

বঙ্গবিজেতা ৫৭৯, ৫৮১

বঙ্গে বর্গী ২৭

বের পুনরুদ্ধার ৪৮১

বঙ্গের শেষ বীর ৬০৭, ৬২৬-৬২৮

বঙ্কিমচন্দ্র ২৩, ২৪, ২৭-২৮, ৩৩, ৩৬, ৩৭, ৬৬, ৬৮, ৭৮-৭৯, ৮৩, ৯০, ৯২, ৯৬

১১২-১৩,

১২০) ১২৮-১৪৫, ১৫১, ১৫৩

৯৮৯৯) ১০৫-০৮) ১১৭, ১৬২০ ১০১৮১ ২০৯, ২৫৪) ২৭৩, ২৮৭, ৩০৬, ৩০৯১,

৩১৪-১৫, ৩৩২, ৩৪৬-৪৮) ৩৫৫, ৩৫৭,

ঠক

৬৬, ১৬৮৭১, ১৭৫, ১৭৯-৮৩,

৩৫৯, ৩৬৮১ ৩৯৩) ৪১৮, ৪২৬, ৪৩১, ৪৪২-৪৩, ৪৭৮, ৫০১-০৫, ৫১৮-৫৭৯, ৫৮১১ ৫৮৫-৭১০, ৫৯৪ ৬০৩) ৬০৫) ৬০৯, ৬১১১২,

৪৩৩,

৬০১১ ৬১৫-১৬, ৬২১) ৬২৩, ৬২৬, ৬৩০, ৬৩২-৩৩, ৬৩৫, ৬৩৮, ৬৪৩, ৬৫১০২, ৬৫৪১ ৬৭৮, ৬৮১, ৬৮৩-৬৯০), ৬৯৪, ৬৯৭৯

বঙ্কিমচন্দ্র ( অক্ষয়চন্ত্র দত্তগুপ্ত ) ৫৩৮, ৫৭৪

বঙ্কিমচন্দ্র ( হেমেন্ত্রপ্রপাদ ঘোষ ) ৫৪৯,

৫৬৬, ৬৬২ বঙ্কিম প্রসঙ্গ ৫৬৭ বঙ্কিম সাহিত্যের ভূমিকা ৫৫০, ৫৫৮, ৬৬৬, ৬৭০ বঙ্কিম সাহিত্য পাঠ ৬৫৮ বঙ্কিমচন্দ্রের দিগ.দর্শন ১৩৪. ১৪৪, ৬৭৫ বঙ্ধিমচন্দ্রের জীবন সাহিত্য ৫২১ বর্তমান বালা সাহিত্যের প্রকৃতি ১৬৫ বল্লালসেন ২-৪, ১৩৯ বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায় ৩৯৪, ৪৩৯

বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা, এতঘিষয়ক বিচার ৬৭ ববিবাহ ৬৫-৬৭, ৬৯

৭১৩

বাঙলার ইতিহাস ১২১, ১২২

বাঁঙল। সাহিত্যে হাস্যরস ৬৫৪

বাংলা কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধ ২১৩, ২১৫

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (২য় খণ্ড) ৯৩, ৪০৯, ৪৩৩) ৪৩৬১ 8৪৪, ৪৫২, ৪৮৩, ৪৮৫, ৪৯৪১ ৫৭৯

বাংলা সাহিত্যে এতিহাসিক উপচ্যাস ৪০৪, ৫০৮১ ৫১৭১ ৫৫৪১ ৫৭২ ৬০০১ ৬০৮-১১

বাংল? ভাষা সাহিত্য বিষয়ক বক্তৃতা ৭১, ৮৮, ৮৯, ৯৮

বাংল! ভাষা সাহিত্য বিষয়ক পত্রিকা ৮৭, ৯৬-০১৭

বাংলার নবযুগ ৫৫৩

বাল্সীকি ২১৫, ২৩১, ২৪৬

বায়রণ ২২১, ২৪৯, ২৫৪, ২৮১

বারোতুইঞা ৩, ১০, ১১, ১৪-২০): ২২, ৬০৭

বাল্যবিবাহের দোষ ৬৫

বাহ্বস্তর সহিত মানবপ্রকৃতির সম্বন্ধ বিচার ৮০, ৮১

বিচিত্রা ৬২০

বিচিত্র বঙগচিত্র ৭০০

বিজিতকুমার দত্ত ৪০৪১ ৫০৮) ৫১৭১ ৫৫৪, ৫৭২১ ৬০০১ ৬০৮) ৬১১

বিদ্রোহ ৬০৯, ৬১৬, ৬১৮

বিদ্যোৎসাহিনী সভা ২৩৩

বিনোদিনী ৪৫৬

বিধবাবিবাহ ৬৮, ৩৯৬

বিধবাবিবাহ প্রচল্গিত হওয়। উচিত কিনা

এতছিষয়ক প্রস্তাব ৬৮

বিপিনবিহারী পাল ৪৮১

বিপিনচন্দ্র পাল ৫৮, ৬৩, ৫২২-২৩

বিবিধ প্রবন্ধ ( রাজনারায়ণ ) ৮৮১ ৯০-৯১,

উনবিংশ শতাবীর বাংল সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

বিবিধ প্রবন্ধ ( ভূদেব ) ১০৮, ১১৪, ১১৫, "

১২৫, ১২৮

বিবিধ প্রবন্ধ (বঙ্কিমচন্দ্র) ১৩২, ১৩৫, ১৪০, ১৪১, ১৪৪, ৫২০, ৬৭০, ৬৮৮

বিবিধার্ঘ সংগ্রহ ৩৯৯

বিয়ে পাগলা বুড়ো ৪১৩

বিবেকানন্দ ৫৩, ৯৫, ১০৮, ১১৭, ১৩৬. ১৬২, ৫৯৩

বিষবৃক্ষ ৫৩৯

বিহারীলাল চক্রবর্তী ২১৩

বীরমহিমা ১৪৮-৪৯

বীর হীমীর ১৮

বীরভাঁন বা চন্দ্রভাঁন ১৮

বীরবাঁলা ৪৯৪

বীরবাহু কাব্য ২৬৫, ২৬৮, ২৭৪-৭৬, ২৭৯- ৮২, ২৮৫

বীরাঙ্গনা কাব্য ২৩৮

বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রৌ! ৩৯৮-৪০০

বৃত্রসংহার কাব্য ৯৮, ২৬২, ২৬৮, ২৭৩, ২৮১-৮৮১ ৩২৩

বৌঠীকুরানীর হাট ৬০৪, ৬০৭

ব্রজবিলাস ৬৯১

ব্রজবাবু ৫৫১

ব্রজাঙ্গণ। কাব্য ২৩৮

ব্রজেন্ত্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ৪৭, ৫৪, ১২৯, ২১৪, ২৬৯, ৩৯৫, ৪০৯-১১১ ৪১৪, ৪১৫) ৫৩৯, ৬০৮, ৬৪৫) ৬৫৮; ৬৬৬

ব্যাক ্যান্ট ২৭০

ভবতোষ দত্ত ৫২৩, ৫৬১

ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৬৪৬-৬৫০ ভারতচন্দ্র ২১, ১৬৮, ১৮৩, ২৩৬

ভারত কাহিনী *৫০-১৫৩

ভারত কাহিনী (হরিমোহন ) ১৭৬-৭২,

রি...

শব্দস্চী

ভারতমাতা ৪১৪-৪ ১৭, ৪২০-২৩, ৪৩৭, ৪৪৬, ৪৯৭

ভারত মাতার শ্রাদ্ধ ৬৯৯

ভারত উদ্ধার কাব্য ৬৭৭-৮২, ৬৮৬

ভারতদতা৷ ২৭১

ভারত প্রসঙ্ষ ১৫০-৫১

ভারত সংগীত ৪২২, ৪৮৬, ৬৬১

ভারত অধীন ? ৪২৪

ভারতী ৬০৮,৬৭৯

ভারতী ছুঃখিনী ৪২৩-২৫, ৪৩০

ভারতে যবন ৪২১-২২, ৪২৪, ৪৩৭, ৪৪৬

ভারতের স্থখশশী যবন কবলে ৪৮১

ভূদেব মুখোপাধ্যায় ৮৩, ৮৫, ৯৬, ১০১২৮, ১৩০-৩১, ১৩৬, ১৪৩, ২৮৯-৯১, ২৯৩, ৩২৮, ৫০১-১৯, ৫৮৭

ভূদেব চরিত ১০২-০৩, ১০৫-০৬, ১১১ ১১৬, ১২৬

£

মধু রায় ১৮

মধুহদন দত্ত ৮৩, ৮৬, ৯৬-৯৯১ ১০১-০২, ১০৪, ১৬৮, ২১১) ২১৪, ২২৪-২৫, ২২৮-৬১১২৬৮-৭ ০১২৭২-৭৩, ২৮১৮২, ২৮৪, ২৮৭১ ৩১৬, ৩১৯-২০১ ৩২৩-২৪, ৩২৯, ৩৪৫, ৩৭২-৭৩, ৩৯১) ৩৯৫- ৪০৬, ৪১২-১৯৩, ৪৩০১ ৪৩২১ ৪৫৩, ৪৯৬-৯৭, ৫০৭১ ৫১১১ ৫১৯, ৫২১১ ৫২৪, ৫৪৭, ৫৫৯

মধুস্থতি ২৩৩, ২৩৬, ২৪৫, ২৫১, ২৫৩, ২৬০১ ৩৯৮ ৪০৩

মধুস্দনের কাব্যবৃত্ত ২৪৪

মনসামঙ্গল ৯, ১৩

মন্মঘনাথ ঘোষ ২৬৩, ২৭২, ২৯৫, ৩০৭) ৩১২, ৩৪১

অপ্টোগোমারি মার্টিন ৫৬

মন্ত্রের সাধন ৬৩০-৩১

৭১৯১

মনোৌমোহন বনু ৪১৭

মধ্যস্থ ৪১৪

মহধি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বরচিত জীবন- চরিত ৭০-৭৩

মহারাজ কষ্ণচন্ত্র রায়স্য চরিত্রং ৪৪-৪৬

মহারাষ্ট্র জীবনপ্রভাত ৫১৭, ৫৮৬-৮৯, ৫৯১, ৫৯৪, ৫৯৯-৬০১, ৬২৩

মহারাদ্তরীয় জাতির ইতিহাস ৫৮৭

মহারাজ! নন্দকুমার ৬০৪, ৬৪৪

মহারাজা নন্দকুমার ( শতবর্ষ পূর্বে বঙ্গের, সামাজিক অবস্থা ) ৬৩৪, ৬৪৫

মহীপাঁল ১৩৯

মসনদ-ই-আলি ১৫

মাধবীকঙ্কণ ৫৮১, ৫৮৪-৮৫) ৫৯২) ৬০১

মাঁসার অল অমরা৷ ৬১৬

মান্ম কাবুলি :৫, ১৮

মালাধর বস্তু

মিনহাজউদ্দীন ৫৩০, ৫৩২, ৫৩৬

মিবাররাঁজ ৬০৯, ৬১৬-১৭

মিল ৬৫৭

মিপ্টন ৭৭, ২৩১, ২৪৯

মিলন রাত্রি ৬২০-২১

মুকুন্দরাম ১৩, ১৬৮১ ২৩৬

মুকুন্দদেব মুখোপাধ্যায় ১০৩, ১০৭

মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত ১৩২, ৬৬৪ ৬৭৩-৭৪, ৬৭৬

মুশিদকুলী খাঁ ২২

মুসাখান ১৮

মৃত্যুঞ্জয় বিদ্ভালংকার ৪৭. ৬০-৬১

বণাঁলিনী ৯৮, ১৩৬, ৫২১, ৫২৮-৩৯ ৫৭৭ ৭৮) ৬৬১, ৬৭৭

মেকলে ৬৩৭

মেধনাদবধ কাব্য ৯৮, ২৩১, ২৩৮৮৪ ২৪৪-৪৮, ২৭২-৭৩, ২৮২, ২৮৪, ২৮" ৩১৯, ৩২৩, ৪০৬, ৪৯৬, ৪৯৮, ৫২৫

৭১২

'মেবার পতন ৪৪৫, ৪৪৭, ৬৬৬ মোহিতলাল ২৩৬, ৫৫৩

'মোক্ষমূলর ৬৫৭ ম্যাকবেখ ৪৩৮

যদুনাথ সরকার ২, ৮, ১৬, ২০, ২৩, ২৪, ২৯, ৪১, ৪৮, ৩৪৮) ৪৬৯-৭০) ৫৯১ ৭২

যতীন্দ্রমোহন মভ্ুমদার ৫০

যোগেন্্র চন্দ্র বস্থ ৬৯৬-৭ ০০

যোগেন্দ্রনাঁথ বন্দ্যোপাধ্যায় ৬৭৯

যোগেশচন্দত্র বাগল ৮৫, ১৩৫) ৫৫৫-৫৬, ৫৭৮

রংপুর দর্পণ ৫৩১-৩২

রঙ্গমতীকাঁব্য ৩২১, ৩৮১-৮২, ৩৮৪, ৩৮৬, ৩৮৮০৯

রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ৯৩, ১৬২, ১৯৫, ২১২-২৮ ২৩২, ২৩৪, ২৩৬-৩৭, ২৪০, ২৪৫-৪৬, ২৫১, ২৫৬, ২৬২, ২৬৬, ২৬৮) ২৭৪; ২৭৯, ৩০৩) ৩১৯, ৩২৯, ৩৩২, ৩৪২, ৩৯০, ৪০৩, ৪১৩, ৪:০১ ৫১০-১১১ ৫১৯, ৫২৫, ৫৪৭

রজনীকান্ত গুধু ৭৭, ৮৩, ১১৮) ১৪৫-১৫৮, ১৬০-৬১, ১৬৮, ৫০৮ ৬৪৪

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৭১, ৮৩, ৯৩; ১৯৮, ১১৭, ১৩৬, ২৭০১ ২৯২, ৩২৭, ৩৬৬, ৪৩৮ ৩৯, ৪৪০-৪১১ ৪৫৭, ৫৫০-৫১১ ৫৭৬, ৬০৪-৬৯৫, ৬০৭, ৬২১-২২,৬৬৫,৬৯৬

রমেশচন্দ্র দর্ত ১৭৪, ২৬২, ৫০৪, ৫১৬, ৫৪৭, ৫৫৯, ৫৬৪, ৫৭৭-৯৫, ৫৯৭- ৬০৩, ৬০৮, ৬১১, ৬১৬) ৬২৩

রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ১৪২

বাঁজনারায়ণ বন্ধ ৬২-৬৩, ৭১,

৮৩-

উনবিংশ শতাব্দীর বাংল! সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

১০৪, ১০৮, ১২৯, ১৩১, ১৩৩, ১৬২, ১৬৮, ২৩১, ২৫৩, ৩২৮) ৩৯৭) ৪৩৬, ৪৩৯-৪০) ৫৫০

রাজপুত জীবন সন্ধ্যা ৫১৬, ৫৪৭, ৫৮৬-৮৭, ৬৩ ১০৬০৩, ৬২৩

রাজসিংহ ৫৪ ৫-৪৯, ৫৬৭, ৫৭৮, ৫৮৭, ৬০৩

রাজস্থান ৪০৩-০৪১ ৫০৮, ৫১১, ৫৮৭ ৬১৬, ৬২৩-২৪

রাজা রামচন্দ্র ১৭, ১৮

রাজা রাঁয় ১৮

রাজ! রঘুনাথ

রাজ। প্রতাপাদিত্য চরিত্র ৪২, ৪৪-৪৫

রাঁজীবলোচন মুখোপাধ্যায় ৪৪, ৪৬

রাজেন্্রলাল মিত্র ৩৯৯

রামকৃষ্খদেব ৫৩

রামরাম বস্থ ৪২, ৪৪-৪৭

রামমোহন রায় ৪৭-৬৪, ৭০১ ৭৪১ ৭৭১ ৯০, ৯৪৯, ১০৫, ১২৫-২৬, ১২৯, ১৩১, ১৬৪, ১৬৮, ১৭৯, ২০০১, ২৩৪, ২৬২ ৩১৩, ৩৪৩, ৩৯৩, ৫৯০) ৬৪৪, ৬৪৬,

৬৫২-৫৩

রামনারায়ণ তর্করত্ব ৩৯২-৯৬, ৪০৬, ৫০৪

রাঁমতন্ু লাহিড়ী তৎকালীন বঙ্গসমীজ ৫২২

রামগোপাল ঘোষ ১০৩, ১৭৯

রামায়ণ ২৪৬

রামেন্তরস্ন্দর ত্রিবেদী ১৪৫, ১৬০

রীপন ৩১১-১২

রেভারেও হিল ১০৬

রুদ্রপাল ৪৩৮

রৈবতক ৩৪৪

লক্ষমণসেন ২-৩, ১৩৯, ৫৩০৩২, ৫৩৫-৩৬, ৬৬২

শব্বসৃচী

লর্ড ডাঁলহৌসী ১৫৪, ১৫৭, ১৬০

লতীফ ২০

ললিতচন্দ্র মিত্র ৪০৭

ললিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ৭০০

লীলাবতী ৪০৯, ৪১৩

লোকরহস্য ১৩২, ১৭০, ৬৫৭-৫৮) ৬৬০-৬২, ৬৬৪-৬৫১ ৬৭৬, ৬৮৯

হরনাথ ভঙঞ্জ ৭০১

হরলাল রায় ৪৩৩-৩৮

হরপ্রপাদ মিত্র ৬৫৮

হরিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ৭০০

হরিশচন্দ্র ৪১৭

হরিশ্ন্দ্র মুখোপাধ্যায় ১৭৯

হরিমোহন বন্দোপাধ্যায় ১৭৪-৭৬

হাঁফ আখড়াই ৪৯

হারাঁণচন্দ্র ঘোষ ৪২৩-২৬, ৪৩০, ৪৩২

হারাণচন্দ্র রক্ষিত ৬০৭, ৬২৬-২৮, ৬৩০-৩২

হিন্দু কলেজ ৮৩, ১০৩, ২৪

হিন্দু বা প্রেসিডেন্সপী কলেজের ইতিবৃত্ত ৯০-৯

হিম্মেলা ৮৬১ ৯২১ ১৬১১ ১১০, ২৯৫, ৩২১, ৩২৬-২৭, ৩৪৪, ৪১৫, ৪১৭) ৪২৫, ৪৩৯-৪ ৪৬২, ৫৪৬, ৬০৭-০৮১ ৬১১১

৬৯৫১ ৭০৩

হীরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৫০

হুতোম প্যাচার নকসা ৬৫১-৫৪

হ্মচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় ৯৮, ১৬৮১ ১৭৪, ১৯৭, ২১২-১৪১ ২২৮১ ২৩৮, ২৫১, ২৬০-৭৭, ২৭৯-৩১৬, ৩২০-২৪১ ৩২৭, ৩২৯, ৩৩২, ৩৩৪-৩৫, ৩৪২, ৩৪৬, ৩৭০-৭১, ৩৭৫), ৩৯১০১। ৪৫৭, ৪৮৬, ৫৫২, ৬৬১

১৭০-৭২)

১৬২, ৪১৩, ৪৪০) ৬৭৭

2

2১৬

হেমলতা ৪৩৪-৩৭

হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ ৫৪৯, ৫৬৬ ৬৬২ হোসেন শাহ

হোঁমর ৮৭, ২৩১

শকুন্তলা ৩৯৪

শচীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১২৯

শমরিষ্ঠা ৩৯১-৩৯৭

শরৎ সরোজিনী ১১০, ৪৮২-৮৬, ৪৯২-৩, ৪৯৫, ৬২২

শশাঙ্কমোৌহন সেন ৩৮২

শিক্ষা বিধায়ক প্রস্তাব ১০৫

শিক্ষাদর্পণ ১০৬, ১১১, ১২১

শিবনাথ শাস্ত্রী ১৬২, ৫২২

শিলর ৮৮

শুরস্থন্দরী ২২৫

শোতাঁসিংহ ২৪, ৪৬৬-৬৭, ৪৭৭

শোভাসিংহের বিদ্রোহ ৪৬৮

শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ২১৬, ৫৩৩, ৫৪৫, ৫৫৫

শ্রীযুক্ত হেভিড হেয়ার সাহেবের নামন্মরণার্থ তৃতীয় সাম্বংসরিক সভার বক্তৃতা ৭৬, ৮৮

শ্রীশচন্ত্র মজুমদার ৫৬৭

সজনীকান্ত দীপ ২৭৪, ৫৩৯, ৫৫৮, ৬৬৬. ৬৭০

সত্যেন্্রনীথ ঠাকুর ৪৪০, ৪৪৮, ৫৭৬

সত্রাজিং ১৮

সধবাঁর একাদশী ৪০৭, ৪১২-১৩১'৪৮২

সন্গ্যাসীবিদ্রোহ ৩৪-৩৫, ৫৫৩, ৫৬৬

সফোরিস ৮৭

সংবাদ প্রভাকর ১৯১, ২০১১ ২১১১ ২১৪), ২৩২, ২৬৭) ৩৯৪১ ৫২৩, ৫২৪

সমাচার চন্দ্রিকা ৬৪৭

৭১৪

সমালোচনা ৬৭৯

সরফরাজ ২৬

সরোজিনী নাটক ৪৫৩-৫৪, ৪৫৬ -৫৭

সাঁধারণী ৬৮৬

সামাজিক প্রবন্ধ ১০৮-১১৫) ১১৮১ ১২২-২৩

সাহিত্য ১০৪

সাহিত্যসাধক চরিতমাঁলা ৪৭, ৫৪, ৬১, ৭৫১ ৮৪, ৮৫, ১৫০) ২৬৯১ ৫০৫, ৩০৮, ৬২৪, ৬৪৫-৪৭১ ৭০০

সিবিল সাঁবিস সভা ২৭০

সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস ১৪৫, ১৪৯-৫০, ১৫৫-৫৬, ১৫৮, ১৬০-১৬১

সিরাজউদ্দৌলা ২৬-২৯, ৩৫৫

সীতারাম রায় ২৩-২৫, ২৮, ৬০৪

সীতারাঁম ১১০) ১২৯, ১৫৩, ৪৭৮১ ৫৬৬, ৫৭১-৭৬

সুকুমার সেন ৯৩, ২০০১ ৩৪৬, ৪০৯, ৪৩৩, ৪৩৬, ৪৪৪, ৪৫২, ৪৫৬, ৪৮৩-৮৫, ৫৭৭

স্থনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ৬৫, ৬৯

সুরদাঁস ২১৫

স্ুরলোকে বঙ্গের পরিচয় ৭০১, ৭০৪

স্বরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৫১, ৫৮১, ৫৯৭, ৬৯১

স্বরেন্দ্রবিনোঁদিনী ১১০১ ৪৮৩, ৪৮৮-৯৩, ৪৯৫, ৬২২

স্থুরেশচন্দ্র সীজপতি ১০৪

সেকাল আর একাল ৬২-৬৩, ৮৪-৮৭, ৯৫, ৯৮১ ২৩১

সৌমপ্রকীশ ৩৪৫

হুট ২২১-২২

স্কুলবুক সৌঁদাইটি ৪৭

্ব্ময়ী দেবী ৪১৬

্বণকুমারী দেবী ৬০৭-২৩

্বগ্নময়ী নাটক ৪৬৫-৭০, ৪৭৯-৮১১ ৪৯৫

১৭৪

2

উনবিংশ শতাব্দীর বাংল। সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম

স্বগ্রলন্ধ ভারতবর্ষের ইতিহাঁস ১২২-২৬ স্বপ্নবাণী ৬২০ সেহলতা। ৬০৯, ৬২০-২১) ৬২৩

/&11000 17, 10, 99101817 ২১১

9360789] 19190150 03826605619 ৩২৩৩, ৩৫-৩৬, ৪৬৭, ৪৭৮

8০088] 17850 & 171650176 ১৫

1321158106 ৫৯৭

01791165 ১/5৬121 ২৭, ৫৮১ (01511 1২906111010 11) 1116 11101910 1৬100107165 ১৫৯

[01191719001 06 0165 ৬৪151000 7910) 910 1৬009167111 3610881 ৫, ১৬

12850 117019. (০017119271% ৫৫

12017100170 93001106 ৬৩৮-৩৯

[700%190960129 16901)102 ৫২১, ৫৫৯, ৫৬৪

12106115111781) ৪১০১ ৪২২

89855 81 11661201168 ০027 (06

[২61151010 01119 17711100105 ৮২ 1, ৯১ ১৪০০56 ৩৪ 0100020 ১৬৮-৬৯

112102170 1£151761 ২২৩-২৪

[117000 70811101৫০৫

[119101% 01 17301092] (13200108101) ) ৬০] |] ৮১ ২৩, ১৯১ ৪১১ ৪৮) ৩৪৮১ ৪৬৯-৭৩১ ৪৭৯

শব্বন্চী ৭১.

[71500 01 89088191681) ২৭, ৫৮১

এ. 0, ৮. 50561900৪৭৮

এ, 0. 010051) ৫৬-৫৮) ২০০ খু. বি. 90008 ৬০০

এ. ৩৬050 ৩৫৭

4010 08106810101) ১১২১ ৫৭২

[06 2110 ৬/01105 01 1২.010991। 0), [0800 ৬০০

[,. ৪. ৯, 0, 178119% ৩১-৩২, ৩৫-৩৬, ৪৬৭

91110) 191718, 81796555811 ১৫

011811791 1810919 1২61811%6 60 1106 [015110811095 11) 13017581 ৩৫৭

[8111005]) 10. 17106156016 ১৮১১ ২১১০ ১২, ২৩৭, ২৫২) ৬৫৬

[১6151110016 ৬৩৯

[91955 400 ৫৫, ৫৬) ৯৯

চ২৪০০ 84 ৪01009119--/7 [10001791100 0105 01811) 200. 01011) 01 78601061910 ১১২, ৫০২

[8]8. 1২101701107 1২05 810 170-

111558156 1৬10৮61761108 10 100199৯

1২৬৮, 7702] 020101 ৫৩৬১ ৫০৮১০)

1১8 ১৭-১৮, ৫৮৭

[19920-5-981911 ৩৫

[00910 ০. 12111900৩৫৭ ৬৭৬

[২01181) 11019176 ১৬৮

[01951 01). 10805. ২৬২, ৫৯৪

[01078100606 171190019 ৫০৬, €০৮, ৫০৯১ ৫১৩

05107 ২১১

9.7. 0011001201৮ ১৫১৯

91%8]1 8100 17191117195 ৫৯১

৯, 1,199

91066011635 810 [219915 02. 11701917 (306961010$ ৫৭১৪

[116 0910009 02250066 ৪৮৯

[116 08108062 1২6৬19৬/ ৫৯

[116 001017701 /98] ২২৪

1179 0০017101616 1৯096108] ৬/0118 ০0? 1, 93. 91361169 ২৭১

11761208119) ০15 0 1২৪) [810101101) 1২09 ৫৬-৫৮, ২০০

719 11091900156 01 301788] ২৬২ |

[17615100910 1২6%15%/ ৫৫-৫৬

11278001060 ৮০090 ০0 ৬/০01:৫$- ৮1010) ২১১

116 20%/6] ০01 981116 ৬৫৭) ৬৭৬

71701095 17 10011117901 ২৭১

00170191010)5 02010 ৬৩৩

&৬1190107 ৮২ ৬01৫0510101) ২১১